গবেষণা কেন্দ্র
মুহম্মদীয়া জামিয়া
শরীফ
[সমস্ত প্রশংসা
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র,
“মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে,
বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী,
বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া,
অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা,
ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামাজ ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া,
কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ
ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর
নামাজে বা অন্যান্য সময় কোরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামাজ বিশ রাকায়াত ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া ও দোয়াল্লাীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফত্ওয়া
প্রকাশ করার পর ১৭তম ফতওয়া হিসেবে “খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ্
পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]
মাসিক আল বাইয়্যিনাতে
টুপি সম্পর্কে পুণরায় ফতওয়া দেয়ার কারণ
(বাতিলের আতঙ্ক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী,
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতের
১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যায় টুপি সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক ফতওয়া প্রদান
করা হয়েছিল। যাতে প্রায় ৫০টিরও অধিক নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে খাছ সুন্নতী টুপির
বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছিল।
টুপির উক্ত ফতওয়াটি সত্বান্বেষী ও সুন্নতের আশেক্ব মুসলমানগণের নিকট এতই সমাদৃত
ও গ্রহণযোগ্য হয় যে, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই টুপির ফতওয়া
সম্বলিত কপিখানার মজুদ সংখ্যাগুলিও ফুরিয়ে যায়। যার ফলে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগণিত
পাঠক, টুপি সম্পর্কিত মুল্যবান ফতওয়াটি সংগ্রহে রাখতে ব্যর্থ
হয়। তাই তারা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অন্যতম বিভাগ- “ফতওয়া বিভাগে” টুপি সম্পর্কিত ফতওয়াটি পুণরায়
প্রকাশ করার জন্য পুনঃ পুনঃ আবেদন জানায়।
এতদ্বপ্রেক্ষিতে অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগনিত পাঠকের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের
প্রেক্ষিতে এবং হক্ব তালাশী ও সুন্নতের আশেক্ব, মুসলমানগণের ঈমান ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে সর্বপোরি মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিলের উদ্যেশ্যে টুপি সম্পর্কিত ফতওয়াটি কিছুটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন
ও সংশোধনের মাধ্যমে এবং আরো অধিক দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রকাশ করা হলো। কেননা মহান
আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফেএরশাদ করেন,
فاسئلوا
اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- “যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের
নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ
তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে
নাও।
অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা।
কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে,
তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
من سئل
عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থঃ- “যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়, জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন
করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের
বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ,
উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।”
কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে
“মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার” অগণিত পাঠক, গ্রাহক ও হক্ব তালাশী বা সত্যান্বেষী
সমঝদার মুসলমানগণের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে “খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে” শরীয়তসম্মত তথা কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে ফতওয়া দেয়া হলো।
এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে
কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের
আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ
নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র
আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
من احب
لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে,
বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী,
তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন,
মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্র্কে” সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ
হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে
তোলা। যেন প্রত্যেকেই খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কে
অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ
করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
المؤمن
مرأة المؤمن.
অর্থঃ- “এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে
আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে
সমবেত আনছার এবং মোহাজির (রাঃ)গণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান
করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ) দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার
একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ (রাঃ) বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো,
যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।” এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব
(রাঃ) বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু,
দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মা’আরেফ)
অতএব, খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে
রয়েছে, তাদের সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীস
শরীফের মেছদাক হওয়াই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে টুপি সম্পর্কিত ফতওয়া পুণরায় প্রকাশ করার
মূল কারণ।)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) টুপির ফতওয়া
সম্পর্কিত কতিপয় বিষয়ের সংশয় নিরসন (৩)
কারো কারো বক্তব্য এই যে, “সাদা রংয়ের চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি” সুন্নত প্রমাণ করতে “আদ্দিমিয়াত্বী” নামক কিতাব হতে ‘হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বর্ণিত’
ও আনীসুল আরওয়াহ, দলীলুল আরেফীন ইত্যাদি কিতাব হতে
সুলতানূল হিন্দ, খাজা হাবীবুল্লাহ্ (রঃ) বর্ণিত
যে হাদীস শরীফদ্বয় উল্লেখ করা হয়েছে, তা দলীল হিসেবে
গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ উল্লিখিত হাদীস শরীফদ্বয়ের কোন সনদ ও বরাত উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া “আনীসুল আরওয়াহ, দলীলুল আরেফীন ইত্যাদি কিতাব সমূহ
মাশায়েখগণের নিকট কতটুকু গ্রহণযোগ্য, তাও চিন্তার
বিষয় এবং “আনীসুল আরওয়াহ” কিতাব সুলতানুল হিন্দ, খাজা হাবীবুল্লাহ্ (রঃ)-এর কিনা
ও চার টুকরা সম্পর্কিত বর্ণনা তাঁর কিনা তাতেও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।” এর জবাবে বলতে হয় যে, হাদীস শরীফের উপর আমল করার জন্য তার সনদ বা বরাত জানা শর্ত নয়। ফাযায়েলের কিতাব
সমূহে এরূপ অনেক হাদীস শরীফ রয়েছে, যার সনদ ও বরাত কোনটাই উল্লেখ নেই,
তাই বলে কি তা আমল করা যাবেনা? যেমন বিখ্যাত মুহাদ্দিস,
হাফিজুল হাদীস, হযরত ইমাম ইব্নে হাজর আস্কালানী
(রঃ)-এর আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব “আল মুনাব্বেহাত” কিতাবে বর্ণিত হাদীস শরীফ সমূহের কোনই সনদ বা করাত উল্লেখ করা হয়নি। তাই বলে কি
উল্লিখিত কিতাবসমূহে বর্ণিত হাদীস শরীফসমূহ জঈফ বা মাওজূ? তাছাড়া সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত সকল হাদীস শরীফ সমূহ কিতাবে সংরক্ষিত হয়নি। কোন হাদীস শরীফের
সনদ বা বরাত উল্লেখ না থাকলেই যে তার সনদ নেই বা তা গ্রহণযোগ্য নয়, শরীয়তের কোথাও তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে হ্যাঁ, হাদীস শরীফখানা সহীহ্ না জঈফ, না মওজূ ইত্যাদি জানার জন্য অবশ্যই
সনদের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে বলতে হয় যে,
كا نت له
كمة بيضاء)
অর্থাৎ সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাদা রংয়ের গোল টুপি ছিল।”)
এ হাদীস শরীফখানা
বর্ণনা করেছেন, বিখ্যাত ও সর্বজনমান্য ও নির্ভরযোগ্য
মুহাদ্দিস, হযরত দিমিয়াত্বী (রঃ)। যিনি ইমাম ও হাফিজুল হাদীস ছিলেন এবং হাদীস শরীফ বর্ণনার
ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণের নিকট সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত ছিলেন। এ
প্রসঙ্গে তাযকেরাতুল মুহাদ্দিসীন ও বোস্তানুল মুহাদ্দিসীনে বিখ্যাত ও বিশ্বস্ত মুহাদ্দিস
হযরত ইমাম দিমিয়াত্বী (রঃ) সম্পর্কে বলা হয়- শায়খুল মুহাদ্দিসীন, হাফিজুল হাদীস, ছহিবুত্ তাছানীফ, হাফিজুল কাবীর, হাফিজুল ওয়াক্ত, ইমাম দিমিয়াত্বী (রঃ) ৬১৩ হিজরীতে বেলাদত লাভ করেন। তিনি ইল্মে হাদীসে সুউচ্চ পদমর্যাদা
সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। উচ্চ শ্নেণীর বহু মুহাদ্দিসগণ তাঁর ভূয়সী তা’রীফ বা প্রশংসা করেছেন। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী (রঃ) তাঁকে
মিশরের উচ্চ শ্রেণীর “হাফিজুল হাদীস” ও “হাদীস তদন্তকারী বিশ্বাসযোগ্য মুহাদ্দিস বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লামা
হাফিজ যাহাবী (রঃ), তাঁকে শায়খুল মুহাদ্দিসীন,
হাফিজ ও হুজ্জাত লক্ববে ভূষিত করেছেন।
আর হাফিজ ইবনে কাছীর (রঃ)
তাঁকে উচ্চ শ্রেণীর সনদ সমূহের জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি এবং অধিক হাদীস বর্ণনাকারী ‘হাফিজুল কাবীর’ বলে সম্বোধন করেছেন। বিখ্যাত
মুহাদ্দিস ও শারেহ্ হাফিজ ইবনে হাজর আসক্বালানী (৮৫২) (রঃ) তাঁকে “হাফিযুল হাদীস” ও ইল্মে হাদীসে কামালত বা পূর্ণতাপ্রাপ্ত
এবং অগাধ জ্ঞানের ভান্ডার বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মুহাদ্দিস ইয়াফেয়ী (৭৬৮ হিঃ) এবং
ইব্নে হাম্মাদ (রঃ) (১০০০ হিঃ) তাঁকে “হাফিজুল ওয়াক্ত”
বলেছেন। হযরত আবুল হাজ্জাজ (রঃ) বলেন, মুহাদ্দিসগণের মধ্যে হাদীস কণ্ঠস্থে তাঁর সমতুল্য আমি কাকেও দেখিনি। উল্লেখ্য,
তিনি ছিলেন ইল্মে হাদীসের শায়খ বা ওস্তাদ, একদা তিনি হাদীস শরীফের দরস শেষ করার পর হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং এ অবস্থায়ই ৭৫০
হিঃ জিলক্বদ মাসের ১০ অথবা ১৫ তারিখে ওফাত লাভ করেন। তিনি বহু কিতাবের মুছান্নিফ বা
লেখক বলে, তাঁকে ছহিবুত্ তাছানীফও বলা হয়। মোটকথা হলো- হযরত ইমাম দিমিয়াত্বী (রঃ)-এর প্রতি
মুহাদ্দিস ও জিবনী লেখকগণ কোন প্রকার অনাস্থা প্রকাশ করেননি, বরং সকলেই তাঁকে হাদীস শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত বা বিশ্বাসযোগ্য বলে উল্লেখ
করেছেন। সুতরাং হযরত ইমাম দিমিয়াত্বী (রঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীস শরীফখানা নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য।
আর তাই বিখ্যাত ও সর্বজনমান্য ও অনুসরণীয়
আলেম ও মুহাদ্দিস, হযরত ইমাম কুস্তলানী ও যুরকানী
(রঃ) তাঁদের স্ব স্ব কিতাব “মাওয়াহেব ও শরহে মাওয়াহেবে”
টুপির দলীল হিসেবে উক্ত হাদীস শরীফখানা উল্লেখ করেছেন। যদি উক্ত হাদীস শরীফখানা দলীল বা আমলের উপযুক্ত
না হতো, তবে তাঁরা উক্ত হাদীস শরীফকে নিজ কিতাবে দলীল হিসেবে
উল্লেখ করতেননা। অথবা উক্ত হাদীস শরীফখানা উল্লেখ করার পর বলতেন যে, এই হাদীস শরীফখানা জঈফ, মওজু ইতাদি। কেননা তাঁরা এ যামানার
ওলামায়ে “ছূ” বা তথাকথিত শায়খুল হাদীস,
মুহাদ্দিস ও মাশায়েখদের চেয়েও হাদীস শরীফের উছূল বা রীতি-নীতি সম্পর্কে অনেক অধিক
জ্ঞাত ছিলেন। স্মর্তব্য যে, বিখ্যাত আলেম ও হাদী আল্লামা রইস উদ্দীন আহ্মদ তাঁর লিখিত দলীল সমৃদ্ধ কিতাব “তাহ্ক্বীকুল মাসায়েল” ১২৯ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীস শরীফের
বিস্তারিত আলোচনার পর বলেন ইমাম দিমিয়াত্বী (রঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীস শরীফখানা নিশ্চয়ই
সহীহ্ হাদীস। আর যেহেতু উক্ত হাদীস শরীফখানা জঈফ বা মওজু হওয়ার সুস্পষ্ট কোন প্রমাণ
পাওয়া যায়না, সেহেতু উক্ত হাদীস শরীফখানা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। অতএব,
কেউ যদি উক্ত হাদীস শরীফখানা দলীল হিসেবে গ্রহণ করতে না চায়, তবে তাকে প্রমাণ করতে হবে যে, উক্ত হাদীস শরীফখানা মওজু। মূলকথা হলো- ইমাম কুস্তলানী ও যুরক্বানী (রঃ)
যেহেতু ইমাম দিমিয়াত্বী (রঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীস
শরীফ সম্পর্কে কোন চু-চেরা করেননি বরং টুপির বর্ণনার ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন,
আর উক্ত হাদীস শরীফখানা মওজু হওয়ারও সুস্পষ্ট কোন প্রমাণ নেই, সেহেতু উক্ত হাদীস শরীফখানা আমাদের নিকট টুপির ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য
ও অনুসরণীয়। আর “চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির” হাদীস শরীফখানা যেহেতু সুলতানুল
হিন্দ, হাবীবুল্লাহ্ খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত,
সেহেতু উক্ত হাদীস শরীফের সনদ তালাশ করা সম্পূর্ণই নিঃস্প্রয়োজন। কারণ সুলতানুল
হিন্দ, হাবীবুল্লাহ্ খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ) নিঃসন্দেহে
একজন ছেক্বাহ্ রাবী। কেননা উছূলের কিতাবে ছেক্বাহ্ রাবীর যে গুণ বর্ণনা করা হয়েছে,
তা সম্পূর্ণরূপেই সুলতানুল হিন্দ, খাজা মুঈনুদ্দীন
চীশ্তি (রঃ)-এর মধ্যে বিদ্যমান। অতএব, তাঁর বর্ণিত
হাদীস শরীফ আমলের ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য। যদিও তা সনদ বা বরাত
বিহীন হোক না কেন। এ ছাড়াও যাঁরা
ওলী আল্লাহ্, তাঁরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ হতে খাছ ইল্মে লাদুন্নী
প্রাপ্ত এবং তাঁদের সাথে রয়েছে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রূহানী তায়াল্লুক বা সম্পর্ক। যার
ফলে তাঁরা অবলিলাক্রমেই জেনে নিতে পারেন, কোন্টা হাদীস,
কোন্টা হাদীস নয়। কোন্টা সহীহ্, কোন্টা জঈফ এবং
কোন্টা মাওজু ইত্যাদি। যেমন এ প্রসঙ্গে ‘ইবরিজ’
কিতাবের ১ম ভাগে শায়খ ইবনুল মোবারক (রঃ) বলেন, “আমি আমার শায়খ, আব্দুল আজীজ দাব্বাগ (রঃ)কে রাসুলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস-
القران
انزل هلة سبهو تجرف.
(অর্থাৎ কোরআন শরীফ সাত হরফের উপর
নাজেল হয়েছে) এর প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য জিজ্ঞাসা করলাম। এ হাদীস সম্বন্ধে কাজী বাকেলানী
(রাঃ) তাঁর কিতাবুল ইনতেসার’ কিতাবে, ইমাম ইবনুল জাজরী (রঃ) তাঁর ‘কিতাবুন নাসার’ কিতাবে, হাফেজ ইবনে হাজ্র (রঃ) তাঁর শরহুল বোখারী ফি কিতাবে ফাজায়েলুল
কোরআন’ কিতাবে এবং হাফেজ সুয়ুতী (রঃ) তাঁর ‘ইতকান’ কিতাবে যা বলেছেন, তাও তাঁর নিকট বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন “রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করে আগামীকাল ইনশাল্লাহুতায়ালা
এর তাৎপর্য বর্ণনা করব।” পরদিন তিনি বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এর তাৎপর্য জিজ্ঞাসা করেছিলাম।
তিনি এরূপই বলেছেন” এরপর এ হাদীসের যে ব্যাখ্যা তিনি
দিয়েছেন তা কল্পনাতীত, যা এ কিতাবে বর্ণনা করা অসম্ভব।
কোন জাহেরী আলেম উহার নিকট দিয়েও যায়নি। শায়খে আকবর (রঃ) ও আব্দুল আজীজ দাব্বাগ (রঃ)
এরূপভাবে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করে কোরআন ও হাদীসের
কত অনিচন্তনীয় ব্যাখ্যা দিয়েছেন যা শুনলে হৃদয় মন তৃপ্ত হয়ে যায়। শায়খে আকবর
(রঃ) ‘ফুতুহাতে মক্কীয়া-এর মধ্যে এমনও বলেছেন “সহীহ্ ও জঈফ হাদীস নির্ধারণের জন্য রাবীদের সনদ আমার নিকট মাপকাঠি নয়। আমার মাপকাঠি
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই।” তিনি এটাও বলেছেন, “আমি রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ্-
মুহাদ্দেসীনগণ
من عرف
نفسه فقد عرف ربه. (অর্থাৎঃ যে নিজেকে চিনেছে সে আল্লাহ্কে চিনতে সক্ষম হয়েছে) এ হাদীস শরীফকে মাওজূ
অর্থাৎ মিথ্যা হাদীস বলে সাব্যস্ত করেছেন। তবে কি এ হাদীস শরীফ মিথ্যা? আপনি কি ইহা বলেননি?” তিনি বললেন, “নিশ্চয় আমি বলেছি। এটা সহীহ্ হাদীস।” এরূপ আলোচনা
অনেক হাদীস সম্বন্ধে তিনি করেছেন। যাঁদের হৃদয় দ্বার উম্মোচিত তাঁদের সমঝের কাছে কোন
সমঝই নাই, কারণ তাঁদের সমঝ যে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর দ্বারা সমর্থিত ও পরিমার্জিত।
তাযকেরাতুল আউলিয়া দ্বিতীয় খন্ডের
৫৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, একবার হযরত আবূল হাছান খারকানী
(রঃ)-এর একজন মুরীদ ইল্মে হাদীস শিক্ষা করার জন্য ইরাক গমন করার অনুমতি চেয়েছিলেন।
তখন হযরত আবুল হাছান খারকানী (রঃ) বললেন,
তুমি কেন ইরাক যাবে, এখানে কি হাদীস শিক্ষা দেয়ার মত
কোন লোক নেই? মুরীদ জবাব দিলেন, না- খারকান শহরে কোন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস নেই। তখন হযরত খারকানী (রঃ) বললেন,
কেন আমিই তো রয়েছি, আমি উম্মী (কোন মাদ্রাসায় না পড়া)
হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ্ তায়ালা স্বীয় অনুগ্রহবশতঃ আমাকে সব রকম ইল্ম শিক্ষা দিয়েছেন।
আর হাদীস শাস্ত্র তো আমি খোদ হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
নিকট থেকে শিক্ষা করেছি। মুরীদের কিন্তু হযরত আবুল হাছান খারকানী (রঃ)-এর এ কথাটির
প্রতি এয়াক্বীন হলোনা। রাত্রে মুরীদ স্বপে¦ দেখলেন, হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে
বলছেন, ওহে! খাঁটি লোকগণ সত্য কথাই বলে থাকেন। এরূপ স্বপ¦
দেখে ভোর থেকেই তিনি হযরত খারকানী (রঃ)-এর দরবার শরীফে হাদীস পড়তে যেতে লাগলেন।
হাদীস শরীফ শিক্ষা দেয়ার কালে হযরত আবুল হাছান খারকানী (রঃ) মাঝে মাঝে বলতেন,
এই হাদীস শরীফখানা হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিজের
নয়, বরং এটা মাওজু হাদীস। মুরীদ প্রশ্ন করতেন, হুজুর তা আপনি কি করে জানলেন,? তিনি জবাব দিলেন, তুমি যখন হাদীস শরীফ পড়তে থাক, আমি তখন হযরত রাসূলে করীম সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বচক্ষে দেখে থাকি, যদি হাদীস শরীফ
খানা সহীহ হয় তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ললাট মোবারকে খুশীর
রেখা ফুটে উঠে। আর যদি সহীহ্ না হয়, তাহলে তাঁর চেহারা
মোবারক বিষন্ন হয়ে পড়ে। এর দ্বারা আমার নিকট পরিস্কার হয়ে যায়, কোন্টি সহীহ্ আর কোন্টি গায়েরে সহীহ্ অর্থাৎ জঈফ হাদীস। (সুবহান্নালাহ্) কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে,
তেরশত হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ আহ্মদ বেরলভী
(রঃ) কোন এক পর্যায়ে বললেন- “আমি যখন কোন হাদীস শরীফ বর্ণনা
করি, তখন তা স্বয়ং হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
কাছ থেকে জেনে বর্ণনা করি। আর যখন কোন মাসয়ালা বর্ণনা করি, তখন তা স্বয়ং ইমামে আ’যম আবূ হানীফা (রঃ) থেকে জেনে বলে
থাকি।” অর্থাৎ যখন তাঁর কোন মাসয়ালা ও হাদীস শরীফ স্মরণ না থাকত,
তখন তিনি তাঁদের থেকে জেনে তারপরে বর্ণনা করতেন। ফিকির করে দেখুন, যাঁরা এরূপভাবে শরীয়তের জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ, তাঁদের বর্ণিত হাদীস শরীফকে গ্রহণ করা উচিৎ, না যাদের জ্ঞান শুধু পুস্তিকা বা পুঁথিগত অথবা নিজ মস্তিস্ক নিঃসৃত তা গ্রহণ করা
উচিৎ? প্রথম প্রকারের জ্ঞানের আলোকে দেখতে পাবেন সাম্য,
ঐক্য, প্রশস্ততা এবং উদারতা। দ্বিতীয় প্রকারে দেখতে পাবেন অনৈক্যের
ঝাঞ্জাবত, সঙ্কীর্ণতার পঙ্কিলতা, কোন্দলের ঘোরঘটা, তুমুল বাকযুদ্ধের ধ্বংসলীলা এবং
পরস্পরের মধ্যে হিংসাদ্বেষ মিশ্রিত বিচ্ছিন্নতা। যাদের ক্বাল্বের দ্বার অবরুদ্ধ,
তাদের নিকট কোরআন হাদীস থাকলেও কোরআন-হাদীসের প্রকৃত জ্ঞান সম্পূর্ণই অনুপস্থিত।
অতএব, সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্, খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ) বর্ণিত-
“চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি”-এর হাদীস শরীফখানা অবশ্যই সঠিক ও অনুসরণীয়। হ্যাঁ কেউ যদি সুলতানুল হিন্দ,
হাবীবুল্লাহ্ (রঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীস শরীফের প্রতি সন্দেহ পোষণ করে বা উক্ত হাদীস
শরীফকে অস্বীকার করতে চায়, তবে তাকে নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে
প্রমাণ করতে হবে যে, উক্ত হাদীস শরীফখানা মাওজূ। যা
তাদের পক্ষে কস্মিনকালেও প্রমাণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং সুলতানুল হিন্দ, হাবীবুল্লাহ্, খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ)-এর
প্রতি ইহানত করে উক্ত হাদীস শরীফের আমলকে পরিহার করা বা উক্ত হাদীস শরীফকে দলীল হিসেবে
গ্রহণ না করা সুস্পষ্ট কুফরী। কারণ তা হাদীস শরীফ অস্বীকার করারই নামান্তর। দ্বিতীয়তঃ
বলতে হয় যে, যারা বলে- “আনীসুল আরওয়াহ্,
দলীলুল আরেফীন ইত্যাদি কিতাব মাশায়েখগণের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়” তাদের এ বক্তব্য নেহায়েতই অজ্ঞতামূলক ও মিথ্যা। কারণ প্রকৃত অর্থে যাঁরা মাশায়েখ,
তাঁদের নিকট আনীসুল আরওয়াহ, দলীলুল আরেফীন ইত্যাদি কিতাবসমূহ
অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। পক্ষান্তরে যারা তথাকথিত মাশায়েখ এবং শুধুমাত্র যৎসামান্য ইলমে
জাহেরের অধিকারী, তাদের নিকট “আনীসুল আরওয়াহ্, দলীলুল আরেফীন” ইত্যাদি কিতাব সমূহ গ্রহণযোগ্য না হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং উল্লিখিত কিতাব সমূহের
ক্বদর বা গুরুত্ব তারা কস্মিনকালেও অনুধাবন করতে সক্ষম হবেনা। কেননা তারা নিজেদেরকে
আলেম বা মাশায়েখ বলে দাবী করলেও হাক্বীক্বতে তারা আলেম বা মাশায়েখ নয়। কারণ হাক্বীক্বতে
আলেম বা মাশায়েখ তো ঐ ব্যক্তিই, যিনি ইল্মে জাহেরে পূর্ণতায় পৌঁছার
সাথে সাথে ইল্মে বাতেন বা তাসাউফেও পূর্ণতায় পৌঁছেছেন। হাক্বীক্বী আলেম বা মাশায়েখগণের পরিচয় দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ্ পাক
পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেন,
انما
يخشى الله من عباده العلماء.
অর্থঃ- “নিশ্চয় আল্লাহ্
পাক-এর বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলেমগণই আল্লাহ্ পাককে ভয় করে।” (সূরা ফাতির/২৮) এ আয়াত শরীফের তাফসীর জিজ্ঞাসা
করা হয়েছিল, হাম্বলী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মা, শায়খুল মুহাদ্দিসীন, হযরত আহ্মদ বিন হাম্বল (রঃ)কে। তিনি এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, “যাঁর ভিতর যত বেশী খোদাভীতি রয়েছে, তিনি ততবড় আলেম।” উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে খোলাছায়” উল্লেখ আছে যে,
"العماء"
سے اصطلاحی عالم یعنی کتابیں پرہ لینے و الے مراد
نھیں- بلکہ کبریائے ذات و عظمت صفات کونور ایمان شمع عرفان سے دیکھنے والے اسلئے
کہ اصحاب رسول صلی اللہ علیہ وسلم و ارباب ولایت و قبول سبکے سب علماء کتابی نہ تھی
گو اونکا علم نافع اعلی درجے کا تھا-
অর্থঃ- উক্ত
আয়াত শরীফে العلماء শব্দ দ্বারা কিতাব সমূহ পাঠকারী তথা দাওরা বা টাইটেল পাসকারীদেরকে বুঝানো হয়নি।
বরং কোরআন শরীফে বর্ণিত “আলেম” তাঁরাই, যাঁরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর মহিমাময় জাত ও অসীম গৌরবময়
ছিফাত সমূহকে ঈমান ও মা’রিফতের নূরের আলোকে অবলোকন করেছেন।
কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয়তম সাহাবী আজমাঈন (রাঃ)গণ ও
(পূর্ববর্তী) বেলায়েতপ্রাপ্ত ও মকবুল ওলী আল্লাহ্গণ কিতাবী তথা দাওরা বা টাইটেল পাস
আলেম ছিলেন না। তথাপিও তাঁরা সর্বোচ্চ স্তরের উপকারী ইল্মের অধিকারী ছিলেন। অর্থাৎ
তারাই কোরআন শরীফে বর্ণিত প্রকৃত আলেম ছিলেন। উল্লিখিত
আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত আলেম, ইমামুল মুফাস্সিরীন,
হযরত ইবনে কাছীর (রঃ) তাঁর প্রসিদ্ধ “তাফসীরে ইবনে
কাছীরে উল্লেখ করেন,
عن ابن
مسعود رضى الله عنه انه قال ليس العلم عن كثرة الحديث ولكن العلم عن كثرة الخشية
وقال احمد بن صالح المصرى عن ابن وهاب عن مالك قال ان العلم ليس لكثرة الرواية
وانما العلم نوريجعله الله تعالى فى القلب.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে মাসউদ
(রাঃ) বলেন- যে ব্যক্তি অধিক হাদীস জানে, সে ব্যক্তি আলেম
নয়। বরং যাঁর মধ্যে আল্লাহ্ ভীতি অধিক, সে ব্যক্তিই
আলেম। আর আহ্মদ বিন ছালেহ্ মিছরী (রঃ) বলেন, অধিক রেওয়ায়েত শিক্ষা করলেই আলেম হওয়া যায়না। মূলতঃ ইল্ম হচ্ছে- নূর বা জ্যোতি
স্বরূপ। আল্লাহ্ পাক তা মানুষের অন্তকরণে দান করেন।” উক্ত “তাফসীরে ইবনে কাছীরে” উল্লেখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায়
আরো উল্লেখ আছে যে,
قال
سفيان الثورى ....... العلماء ثلانة عالم بالله وعالم بامر الله وعالم بالله ليس
بعالم بامر الله وعالم بامر الله ليس بعالم بالله. فالعالم بالله وبامر الله الذى
يخشى الله تعالى ويعلم الحدود والفرائض.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম সুফিয়ান
সাওরী (রঃ) বলেন, আলেমগণ তিনভাগে বিভক্ত- (১) আলেম
বিল্লাহ্ অর্থাৎ যারা শুধু আল্লাহ্ পাককেই জানে। কিন্তু তাঁর হুকুম-আহ্কাম সম্পর্কে
অজ্ঞ। (২) আলেম বিআমরিল্লাহ্। অর্থাৎ যারা শুধু হুকুম-আহ্কাম সম্পর্কে জানে। কিন্তু
আল্লাহ্ পাক সম্পর্কে অজ্ঞ বা আল্লাহ্ ভীতি নেই। (৩) আলেম বিল্লাহ্ ওয়া বিআমরিল্লাহ্।
অর্থাৎ যাঁরা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর শরীয়তের হুকুম-আহ্কাম ও ফারায়েজ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত
এবং আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন। (তাঁরাই হাক্বীক্বী বা প্রকৃত আলেম।)” আর হাক্বীক্বী আলেম-মাশায়েখ সম্পর্কে
হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন,
العلماء
ورثة الانبياء وان الانبياء لم يورثوا دينارا ولادرهما وانما ورثوا العلم. অর্থঃ “নিশ্চয় আলেমগণ নবী (আঃ)গণের ওয়ারিস। আর নিশ্চয় নবী (আঃ)গণ কোন দীনার-দিরহাম রেখে
যাননি। বরং ইল্ম রেখে গেছেন।” (তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মেশকাত, বজলুল মাযহুদ,
মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত,
শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব) উল্লেখ্য যে, নবী-রাসূল (আঃ)গণ ওয়ারিছ স্বত্ব হিসাবে দু’প্রকার ইল্ম রেখে গেছেন। অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফ। যে প্রসঙ্গে হাদীস
শরীফে এরশাদ হয়েছে,
العلم علمان ه علم فى
القلب فذاك العلم النافح وعلم على للسان فذالك حجة الله عزوجل على ابن ادم.
অর্থঃ-“ইল্ম দু’প্রকার- (১) ক্বাল্বী ইল্ম (ইল্মে তাসাউফ), যা উপকারী ইল্ম, (২) জবানী ইল্ম (ইল্মে ফিক্বাহ্),
যা আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল স্বরূপ।” (দারেমী, বায়হাক্বী, দায়লামী,
তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব) উপরোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো
যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফ উভয়টিই রেখে গেছেন।
কাজেই যে ব্যক্তি উভয়টিই শিক্ষা করলো, সে ব্যক্তিই
নায়েবে রসূল বা হাক্বীক্বী আলেম। উপরোল্লিখিত
হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় ইমামে রব্বানী, মাহ্বুবে সুবহানী,
কাইয়ুমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী (রঃ)
তাঁর বিখ্যাত কিতাব “মকতুবাত শরীফে” উল্লেখ করেন,
العلماء
ورثة الانبياء- علميكه از انبياء عليهم الصلوات والتسليمات باقى منده است دونوع
است علم احكام وعلم اسرار وورث كشسى هست كه اوراهردونوع علم سهم بود نه أنكه اورا
ازيك نوع نصيب بود نه ازنوع ديكر كه أن منافى ورائت است- ...ه ورائت را از جميع
انواع ترك مورث نصيب است نه ازبعض وانكه اورا ازمعين نصيب است داخل غرما است كه
نصيب اوبجنس حق او نعلق كرفته است.
অর্থঃ- “আলেমগণ নবী
(আঃ)গণের ওয়ারিস” এ হাদীস শরীফে বর্ণিত আলেম তারাই,
যাঁরা নবী (আঃ)গণের রেখে যাওয়া ইল্মে আহ্কাম (ইল্মে ফিক্বাহ্) ও ইল্মে আসরার (ইল্মে
তাসাউফ) উভয় প্রকার ইল্মের অধিকারী। অর্থাৎ তিনিই প্রকৃত ওয়ারিস বা স্বত্বাধিকারী।
আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র এক প্রকার ইল্মের অধিকারী, সে ব্যক্তি নবী (আঃ)গণের প্রকৃত ওয়ারিস নন। কেননা পরিত্যক্ত সম্পত্তির সকল ক্ষেত্রে
অংশিদারী হওয়াকেই ওয়ারিস বলে। আর যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন নির্দিষ্ট অংশের
অধিকারী হয় তাকে গরীম বলে। অর্থাৎ সে ওয়ারিস নয় গরীমের অন্তর্ভূক্ত।” হাক্বীক্বী আলেম বা মাশায়েখ সম্পর্কে
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী (রঃ) তাঁর মিশকাত শরীফের বিখ্যাত শরাহ্ “মেরকাত শরীফে” উল্লেখ করেন যে, মালেকী মায্হাবের ইমাম হযরত ইমাম মালেক (রঃ) বলেন,
من تفقه
ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق- ومن جمع بينهما فقد تحقق. অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসেক। আর
যে ব্যক্তি ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করলো কিন্তু ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো না,
সে যিন্দিক (কাফের)। আর যে ব্যক্তি উভয়টি শিক্ষা করলো, তিনি মুহাক্কিক তথা হক্কানী আলেম।” অর্থাৎ যে ইল্মে ফিক্বাহ্ শিখলো, কিন্তু ইল্মে
তাসাউফ শিখলোনা, সে হচ্ছে ফাসেক। আর যে বলে আমি
মা’রিফাত করি বা ইল্মে তাসাউফ করি কিন্তু শরীয়ত বা ফিক্বাহ্
স্বীকার করেনা, সে হচ্ছে যিন্দীক। আর যিনি উভয়টাই
শিক্ষা করলেন, তিনি হচ্ছেন- মুহাক্কিক অর্থাৎ
হাক্বীক্বী আলেম বা মাশায়েখ। সুতরাং যারা হাক্বীক্বী আলেম বা মাশায়েখ নয়,
বরং ইল্মে তাসাউফহীন তথাকথিত আলেম বা মাশায়েখ, তাদের পক্ষেই একথা বলা সম্ভব যে, “আনীসুল আরওয়াহ্,
দলীলুল আরেফীন” ইত্যাদি কিতাব গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ
তাদের সাথে আল্লাহ্ পাক, তাঁর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ওলী আল্লাহ্গণের কোনরূপ তায়াল্লুক
বা সম্পর্ক থাকেনা, যার ফলে তারা যেরূপ হক্কানী ওলী
আল্লাহ্গণকে মূল্যায়ন করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়, তদ্রুপ ব্যর্থ হয়- তাদের লেখনী, বক্তব্য ও আমল
সমূহকে মূল্যায়ন করতে। তাই মহান আল্লাহ্ পাক হাদীসে কুদ্সীদে বলেন,
ان
اوليائى تحت قبائى لا يعر فوئم الا اوليائى.
অর্থঃ- “নিশ্বয়ই আমার ওলীগণ আমার ক্ববা (কুদরত)-এর মধ্যে থাকেন, আমার ওলীগণ ব্যতীত তাঁদেরকে কেউ হাক্বীক্বীভাবে চিনেনা।” আর যাঁরা হাক্বীক্বী আলেম বা মাশায়েখ, তাঁরা ইল্মে
তাসাউফের অধিকারী হওয়ার কারণে মহান আল্লাহ্ পাক-এর ওলীগণকে ও তাঁদের লেখনী,
বক্তব্য, আমল ও কিতাব সমূহকে পূর্ণভাবে মূল্যায়ন করেন। কেননা তাঁরা
জানেন, হাক্বীক্বী আলেম বা মাশায়েখগণ যা বলেন, করেন ও লিখেন সবই মহান আল্লাহ্ পাক অথবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ বা পরামর্শক্রমে। অর্থাৎ আল্লাহ্র ওলীগণ সর্বদাই তাঁদের জিয়ারতে
মশগুল থাকেন। এ প্রসঙ্গে শায়খ আবুল মাওয়াহেব শাজলী (রঃ) বলেন,
ان اولياء الله يطعون
على امور لم يطع عليها العلماء فلا يسع الخائف على دينه الا الادب والتسليم.
অর্থঃ- “আল্লাহ্র ওলীগণ এমন সমস্ত বিষয় জানতে পারেন, যা (জাহেরী) আলেমদের ক্ষমতাতীত। এমতাবস্থায় যিনি নিজের দ্বীনের ভয় রাখেন তাঁর উচিৎ
যে তাঁদের সম্মান করা এবং তাঁদের বাণী মেনে নেয়া। অর্থাৎ আওলিয়া-ই-কিরামগণের বাণী মেনে
নেয়ার মধ্যেই নিজের দ্বীনকে বাঁচিয়ে রাখার প্রধান উপায় নিহিত।” (তাবাকাত ২য় খন্ড ৭০ পৃষ্ঠা) এটা যথার্থ সত্য। কারণ চক্ষুষ্মান ব্যক্তি যা অনুভব
করতে পারে অন্ধ যে তা পারে না এটা সর্বজনস্বীকৃত। আওলিয়া-ই- কিরামগণের অবস্থা সম্পূর্ণ
ভিন্ন। তাঁরা শরীয়তের প্রত্যেকটি বিষয়ে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
অনুমতি গ্রহণ করে থাকেন। শুধু পুঁথিগত বিদ্যার উপর নির্ভর করে কাজ করেন না। তাই হযরত
আলী খাওয়াস (রঃ) বলেন,
لا يكمل
الفقير فى باب الاتباع لرسول الله صلى الله عليه وسلم حتى يصير مشهودا له فى كل
عمل مشروع ويستاذنه فى جميع اموره من اكل ولبس وجماع ودخول وخروج.
অর্থাৎ কোন ফকীর
(অর্থাৎ ওলী আল্লাহ্) রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর (শুধুমাত্র
বাহ্যিক) অনুসরণেই কামেল হতে পারেন না, যে পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শরীয়তের প্রতিটি কাজের মধ্যে তাঁর নিকট দৃশ্যমান না
হন। এমনকি তাঁর খাওয়া, পরা, বাহিরে যাওয়া, ভিতরে প্রবেশ করা ইত্যাদি যাবতীয়
ব্যাপারে তিনি তাঁর অনুমোদন গ্রহণ করতে সক্ষম হন।” (তাবাকাত ২য় খন্ড ১৩৭ পৃষ্ঠা) এ প্রসঙ্গে আবুল আব্বাস মারাসী (রাঃ) বলেন,
لى اربعون سنة ما حجبت
عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ولو حجبت طرفة عين ما اعددت نفسى من جملة
المسلمين.
অর্থাৎ “আজ চল্লিশ বৎসরব্যাপী আমি রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর (যিয়ারত)
হতে বঞ্চিত হইনি। যদি এক মুহুর্তও তাঁর যিয়ারত হতে বঞ্চিত হতাম, তবে আমি নিজেকে মুসলমান বলে গণ্য করতাম না।” (তাবাকাত ২য় খন্ড ১৩ পৃষ্ঠা) দেখুন,
যাঁরা সত্যিকার কামেল ওলী, তাঁদের অবস্থা কিরূপ? আল্লাহ্ তায়ালা তাঁদের হৃদয়ের দ্বার এমনভাবে উন্মুক্ত করেছেন যে, তাঁদের নিকট কোন কিছুই লুকায়িত থাকেনা। এমন হওয়াই তো স্বাভাবিক। কারণ ওলী আল্লাহ্
মানে আল্লাহ্র বন্ধু। বন্ধুর নিকট বন্ধু যে কোন বিষয় লুকায়িত রাখেন না, এটা তো জানা কথা। এটা বন্ধুত্বেরই দান। সেজন্য আবু সাঈদ খাররাজ (রঃ) বলেছেন,
فلا يغيب
عنه شئ ولا يخفى عليه شيى.
অর্থাৎ তাঁর
(ওলীগণের) নিকট কোন কিছু অবিদিত অথবা লুকায়িত থাকেনা।” (“তাবাকাত” ১ম খন্ড ৭৯ পৃষ্ঠা) এমনি ধরণের হাক্বীক্বী আলেম বা শায়খ হলেন- সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ) ও কুতুবুল আক্তাব, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী (রঃ), যাঁদের উছীলায়
পরবর্তী সকলেই চীশ্তিয়া তরীক্বার নিয়ামত প্রাপ্ত হয়েছে। তাঁদের বরকতময় “মালফূযাত” সম্বলিত কিতাব “আনীসুল আরওয়াহ্, দলীললুল আরেফীন” যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে কাদেরটা গ্রহণযোগ্য হবে?
ওলামায়ে “ছূ” বা যৎসামান্য ইল্মে জাহের বা পঁথিগত
বিদ্যার অধিকারী তথাকথিত আলেম বা মাশায়েখদেরটা? কাজেই যৎসামান্য ইল্মে জাহের বা পঁথিগত বিদ্যার অধিকারী
তথাকথিত আলেম বা মাশায়েখরা বললেই যে উল্লিখিত কিতাব সমূহ গ্রহণযোগ্য হবেনা,
তা নয়। বরং তথাকথিত আলেম বা মাশায়েখদের উক্ত বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য,
সেটাই চিন্তার বিষয়। মূলকথা
হলো- হাক্বীক্বী আলেম বা মাশায়েখগণের নিকট “আনীসুল আরওয়াহ্, দলীললুল আরেফীন” ইত্যাদি কিতাবসমূহ পূর্বে যেরূপ গ্রহণযোগ্য ছিল, বর্তমানেও গ্রহণযোগ্য রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও গ্রহণযোগ্য হিসেবেই থাকবে ইন্শাআল্লাহ্।
উল্লেখ করা জরুরী যে, চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির কথা শুধু “আনীসুল আরওয়াহ্ ও দলীললুল আরেফীন” কিতাবদ্বয়েই
উল্লেখ করা হয়নি, বরং ইমামুল আইম্মা, হযরত ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর (রঃ)-এর ইসরারুল আউলিয়া ও সুলতানুল আউলিয়া,
হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রঃ)-এর রাহাতুল কুলুব ও রাহাতুল মুহিব্বীন ইত্যাদি কিতাব
সমূহেও উল্লেখ আছে। তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে,
“আনীসুল আরওয়াহ্” কিতাব ও চার টুকরা বিশিষ্ট গোল
টুপির বর্ণনা খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ)-এর কিনা, তাতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।” তাদের এ বক্তব্যটুকু নিহায়েতই আপত্তিকর
ও জিহালতপূর্ণ। কারণ চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির কথা সুলতানুল হিন্দ, হাবীবুল্লাহ্, খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ) একাই
বর্ণনা করেননি বরং চীশ্তিয়া খান্দানের আরো অনেকেই চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির আমল
করেছেন এবং তার বর্ণনা দিয়েছেন। যেমন- বিখ্যাত বুযুর্গ, হযরত হাজী শরীফ জিন্দানী (রঃ), হযরত ওসমান হারুনী (রঃ),
হযরত সহল তশ্তরী (রঃ), হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী
(রঃ), হযরত ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর (রঃ) ও বিখ্যাত মুহাদ্দিস,
হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রঃ)। যাঁরা সারা বিশ্বের মানুষের নিকট সুপরিচিত,
সর্বজন মান্য, সর্বজন স্বীকৃত ও অনুসরণীয়,
চীশ্তিয়া তরীক্বার ধারক-বাহক। তাঁদের বক্তব্যের প্রতি সন্দেহ পোষণ করা গোমরাহী
নয় কি? এছাড়া উনাদের কিতাব বা বক্তব্যের বেলায় যদি এ ধরণের প্রশ্ন উত্থাপন করা হয় বা সন্দেহ
পোষণ করা হয়, তবে অন্যান্যদের বেলায়ও এ ধরণের প্রশ্ন উত্থাপন বা সন্দেহ
পোষণ করা স্বাভাবিক। আর স্বাভাবিকভাবেই তাদের ন্যায় কিছু অজ্ঞ, জাহেল ও নাদান লোক প্রশ্ন করবে বা বলে ফেলবে- বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ইত্যাদি মানা যাবেনা। কারণ তা সত্যিকার অর্থেই ইমাম বোখারী (রঃ) ও
ইমাম মুসলিম (রঃ)-এর লিখা? না তাঁদের নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে,
তাতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক) উল্লেখ্য, তাদের এ ধরণের বক্তব্যের কারণেই, অধুনা কিছু তথাকথিত
নব্য বুদ্ধিজীবীর প্রকাশ ঘটেছে। যারা বলে- হাদীস শরীফ মানা ঠিক হবেনা, কারণ তা মানুষ লিপিবদ্ধ করেছে। আর মানুষের ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। অনুরূপ কিছু
দিন পর হয়তো বা দেখা যাবে- একটি দল বের হয়েছে, যারা বলবে- কোরআন শরীফও মানা যাবেনা, কারণ তাও মানুষেই
লিপিবদ্ধ করেছে। (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক) যদি
তাই হয়, তবে তাদের বক্তব্য মোতাবেক প্রশ্ন আর সন্দেহের কারণে
দ্বীন ইসলামকেই বাদ দিতে হবে। কারণ দ্বীন ইসলাম তো আমরা মানুষের কাছেই পেয়েছি। দ্বীন
ইসলাম আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দ্বীন কিনা?
তাতেও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ্) অতএব, এ ধরণের প্রশ্ন উত্থাপন ও সন্দেহ
পোষণ অনেক ক্ষেত্রেই করা সম্ভব, কিন্তু এ ধরণের জিহালতপূর্ণ প্রশ্ন
ও অহেতুক সন্দেহ মোটেও শরীয়ত সমর্থিত নয়। বরং যারা ইসলামের ব্যাপারে এ ধরণের প্রশ্ন
ও সন্দেহের অবতারণা করে, তারা গোমরাহ্, ফিৎনাবাজ ও ইসলাম ধ্বংসে নিয়োজিত। মূলকথা
হলো- আনীসুল আরওয়া কিতাব ও ুচার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির বর্ণনা অবশ্যই অবশ্যই সুলতানুল
হিন্দ, খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ)-এর নিজস্ব। এর মধ্যে বিন্দুমাত্রও
সন্দেহের অবকাশ নেই।
(৪)
কেউ কেউ برنس" বুরনুস শব্দের উপর ভিত্তি করে
বলে থাকে যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) ও বিশেষজ্ঞ আলেমগণ কিস্তি
টুপি পরিধান করেছেন। কেননা برنس শব্দের একাধিক অর্থের মধ্যে একটি
অর্থ হলো- “লম্বা টুপি”। সুতরাং কিস্তি
টুপি পরিধান করাও সুন্নত। তাদের বক্তব্যের
জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, برنس)
বুরনুস শব্দের উপর ভিত্তি করে কিস্তি টুপিকে সুন্নত বলা জিহালত বা মূর্খতার চরম
বহিঃপ্রকাশ। মূলতঃ যারা এরূপ বলে, তারা “বুরনুস” শব্দের হাক্বীক্বত মোটেও বুঝেনি। কারণ برنس) “বুরনুস” শব্দের একাধিক অর্থের মধ্যে একটি অর্থ, যদিও লম্বা টুপি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তা কস্মিনকালেও কিস্তি টুপির অনুরূপ
নয়। অর্থাৎ কিস্তি টুপি হচ্ছে- আড়াআড়িভাবে লম্বা, আর বুরনুস টুপি উপরের দিকে একহাত পরিমান লম্বা। যেমন বিখ্যাত আরবী লোগাত আল মুন্জিদে
طوبيلة শব্দের অর্থে লিখা হয়েছে,
تطاول
تمدد قائما لينظر الى بعيد.
অর্থঃ- “(বুরনুস টুপি হলো) খাড়াই লম্বা বা উপরের দিকে লম্বা, যা দূর থেকেও দেখা যায়।” তাছাড়া মেশকাত শরীফের শরাহ্ মেরকাত শরফে উল্লেখ আছে,
كان رمما
نزع قلنسوته فجعلها سترة بين يديه وهو
يصلى.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কখনো নিজ টুপি মোবারক সম্মুখে
সুত্রা হিসেবে রেখে নামাজ আদায় করতেন।” (ইহা প্রথম যুগের
আমল) উক্ত হাদীস শরীফে যে টুপির কথা বলা হয়েছে,
সে টুপিটিও বুরনুস টুপি ছিল, যা কমপক্ষে একহাত পরিমান খাড়াই
লম্বা বা উপরের দিকে লম্বা ছিল। নচেৎ তদ্বারা সুত্রা হওয়া কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। এখন আমাদের জিজ্ঞাস্য হলো- তারা যে কিস্তি টুপিকে
“বুরনুস” টুপির উপর ভিত্তি
করে সুন্নত বলছে, সে কিস্তি টুপি কি উপরের দিকে কমপক্ষে
একহাত পরিমাণ লম্বা? সে কিস্তি টুপি নামাজ আদায় করার
সময় সুত্রা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কি? নিশ্চয়ই জবাব
আসবে- না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে “বুরনুস” টুপির উপর ভিত্তি করে কিস্তি টুপিকে সুন্নত বলা কি করে
শরীয়তসম্মত বা যুক্তিসম্মত হতে পারে? যেখানে “বুরনুস” টুপি এবং কিস্তি টুপির মধ্যে রয়েছে আসমান-যমীন পার্থক্য।
যেমন- “বুরনুস” টুপি আকৃতির
দিক দিয়ে গোল ও উপরের দিকে কমপক্ষে একহাত পরিমান লম্বা। আর কিস্তি টুপি আকৃতির দিক
দিয়ে দোপাট্টা ও আড়াআড়িভাবে লম্বা। অতএব,
প্রমাণিত হলো যে, যারা “বুরনুস” টুপির উপর ভিত্তি করে বলে থাকে যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) ও বিশেষজ্ঞ আলেমগণ কিস্তি টুপি পরিধান করেছেন,
তাদের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, মনগড়া ও প্রতারণামূলক
এবং সর্বোপরি হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) ও ওলামা-ই-কিরাম (রঃ)গণের প্রতি মিথ্যা তোহ্মত
দেয়ার নামান্তর। সাথে সাথে হিন্দু মারওয়ারী বা বেদ্বীন-বদ্দ্বীনদের খাছ টুপি কিস্তি
টুপিকে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের সুন্নত বলে আখ্যায়িত করার কারণে সুস্পষ্ট কুফরী
হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে,
সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, কিস্তি টুপি
“বুরনুস” টুপির অনুরূপ
নয়। তারপরও যদি ধরে নেই যে, কিস্তি টুপি “বুরনুস” টুপি, তথাপিও কিস্তি
টুপি পরিধান করা সুন্নত প্রমাণিত হয়না। কারণ বুরনুস টুপির উক্ত আমল প্রথম যামানার সাথে
সম্পৃক্ত। অর্থাৎ ইসলামের প্রথম যুগেই এ ধরণের “বুরনুস” টুপি পরিধান করা হতো। আর তাই হাদীস শরীফের কিতাবে “বুরনুস” শব্দের হাশিয়ায় ও বিখ্যাত লোগাত সমূহে “বুরনুস” শব্দের অর্থে বলা হয়েছে, “বুরনুস লম্বা টুপি, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান
করা হতো। আর প্রকৃতপক্ষে “বুরনুস” টুপি হচ্ছে- বেদ্বীন-বদ্দ্বীন তথা খৃষ্টানদের খাছ টুপি। নিম্নে এর কতিপয় প্রমাণ
পেশ করা হলো- যেমন বোখারী শরীফের ২য় জিঃ ৮৬২ ও ৮৬৩ পৃষ্ঠায় ৫ ও ৬নং হাশিয়াতে উল্লেখ
আছে,
البرنس .......... قال
الجوهرى هو قلنسوة طويلة كان النساك يلبسونها فى صدر الاسلام كذا فى المجمع.
অর্থঃ- ““বুরনুস” ...... জাওহারী (রঃ) বলেন, বুরনুস হচ্ছে- লম্বা টুপি, যা আবিদ ও যাহিদ লোকেরা ইসলামের
প্রাথমিক যুগে পরিধান করতেন। অনুরূপ “মাজমা”
কিতাবেও উল্লেখ আছে।” সহীহ্ আবূ দাউদ শরীফের ১ম জিঃ ১৫৩ ও ২৬৯ পৃষ্ঠায় যথাক্রমে ৮ ও ৪নং হাশিয়াতে উল্লেখ
আছে,
البرنس
......... وقال الجوهرى قلنسوة طويلة كان النساك يلبسونها فى صدر الاسلام.
অর্থঃ- “বুরনুস ...... ইমাম জাওহারী বলেন, বুরনুস শব্দের
অর্থ হলো- লম্বা টুপি, যে টুপি আবিদ-যাহিদ লোকেরা ইসলামের
প্রাথমিক যুগে পরিধান করতেন।” সহীহ্ নাসাঈ শরীফের ২য় জিঃ ৮-৯ পৃষ্ঠায় ৫নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
" البرنس
........ وقال الجوهرى قلنسوة طويلة كان النساك يلبسونها فى صدر الاسلام.
অর্থঃ- “বুরনুস ..... জাওহারী (রঃ) বলেন, ‘বুরনুস’
লম্বা টুপিকে বলে, যা আবিদ-যাহিদ লোকেরা ইসলামের প্রাথমিক
যুগে পরিধান করতেন।” অনুরূপ বিখ্যাত আরবী লোগাত “লিসানুল আরব” ১ম জিঃ ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
البرنس،
وه لميى ثويبى جو أغاز اسلام مير ..هنى جاتى تهى.
অর্থঃ- “বুরনুস লম্বা টুপিকে বলে, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে আবিদ-যাহিদ
লোকেরা পরিধান করতেন।” মশহুর লোগাত “আল মুগ্রিব্” ১ম জিঃ ৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
البرنسء
قلنسوة طويلة كان النساك يلبسونها فى صدر الاسلام.
অর্থঃ- “বুরনুস অর্থ লম্বা টুপি, যা আবিদ ও যাহিদ লোকেরা ইসলামের
শুরু যুগে পরিধান করতেন।” প্রখ্যাত ও মশহুর লোগাত আল মুনজিদে উল্লেখ আছে,
البرنس،
وہ لمبی پوپی جو آغاز اسلام میں پھنی جاتی تھی-
অর্থঃ- “বুরনুস ঐ লম্বা টুপিকে বলে, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান
করা হতো।” শুধু তাই নয়, কিতাব সমূহে “বুরনুস” টুপিকে বেদ্বীন-বদ্দ্বীন, বিশেষ করে খৃষ্টানদের টুপি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যেমন- সহীহ নাসাঈ শরীফের ২য় জিঃ ৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
البرنس،
بالضم- کلاہ دراز کہ ترسایار می پوشند-
অর্থঃ- বা-এর
উপর পেশ দিয়ে ‘বুরনুস’ শব্দের অর্থ হলো- লম্বা টুপি, যা অগ্নি উপাসকরা পরিধান করে।”
বিশ্ববিখ্যাত
ফার্সী লোগাত “লোগাতে সাঈদী”তে উল্লেখ আছে,
برنس، ایک
قسم کی ٹوپی جو آتش پرست استعمال کرتے ھیں-
অর্থঃ- “বুরনুস এক প্রকার টুপি, যা অগ্নি উপাসকরা ব্যবহার করে।’
অনুরূপ ফার্সী মশহুর লোগাত “লোগাতে হীরা ও কিশ্ওয়ারী”তে উল্লেখ আছে,
برنس،
لمبی ٹوپی جو راھب پھنتے ھیں
অর্থঃ- “বুরনুস হলো- লম্বাটুপি, যা খৃষ্টান রাহিব বা পাদ্রীরা পরিধান
করে।” আর বিখ্যাত লোগাত “গিয়াছুল লোগাত” ৭৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
البرنس،
....... بمعنی کلاہ دراز کہ کشیشاں می پوشند-
অর্থঃ- “বুরনুস ..... অর্থ লম্বা টুপি, যা খৃষ্টান পাদ্রী বা মূর্তি পুজকরা
পরিধান করে থাকে।” আর লোগাতুল হাদীস ১ম জিঃ ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
برنس- ھر
وہ کپرا حبس میں ٹوپی لگی ھو جبہ ھو یا قمیص
یا باران کوٹ و غیرہ بعضوں نے کھا لمبی ٹوپی جسن کو لوگ شروع زمانہ اسلام میں پھنا
کرتے تھے .......... مجمع البرین میں ھے برنس نصاری کی ٹوپی جو وہ سرپر رکھتے ھیں-
অর্থঃ- ‘বুরনুস’-
প্রত্যেক ঐ কাপড়, যার সাথে টুপি সংযুক্ত থাকে,
জুব্বা হোক অথবা কামীছ হোক অথবা রেইন কোর্ট ইত্যাদি হোক। কেউ কেউ বলেন,
বুরনুস হচ্ছে- লম্বা টুপি, যা লোকেরা ইসলামের শুরু যুগে পরিধান
করতো। ............ “মাজ্মাউল বাহ্রাইন” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, ‘বুরনুস’ নাছারাদের টুপি, যা তারা মাথায় দিয়ে থাকে। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত
হলো যে, ‘বুরনুস” টুপি ইসলামের
প্রথম যুগে পরিধান করা হতো, যা বর্তমানে বেদ্বীন-বদ্দ্বীন তথা
খৃষ্টানদের খাছ টুপি। আর
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম, ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরামগণ
সর্বদাই গোল টুপি ব্যবহার করতেন, যা সবদিক থেকে মাথার সাথে ভালভাবে
লেগে থাকতো বা মাথা হতে কিঞ্চিৎ পরিমানও উঁচু হয়ে থাকতো না। যার ফলে সকলে গোল টুপিকেই
সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যার প্রমাণ আমরা
দেখতে পাই, তিরমিযী, মেশকাত,
দিমিয়াত্বী, মাওয়াহেব, শরহে মাওয়াহেব, নেহায়া ইবনুল আছীর, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, তা’লীকুছ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, মাদারেজুন নুবুওওয়াত, সীরাতুন নবী, ফতওয়ায়ে আমীনিয়া, গুলজারে সুন্নত, আনীসুল আরওয়াহ্, দলীলুল আরেফীন, ইসরারুল আওলিয়া, রাহাতুল কুলূব, রাহাতুল মুহিব্বীন ইত্যাদি কিতাব সমূহে। উল্লিখিত
কিতাব সমূহে উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপি ছিল- সাদা, গোল, চার টুকরা বিশিষ্ট, যা সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকতো, কখনো মাথা হতে
উঁচু হয়ে থাকতো না। উল্লেখ্য,
ইসলামে এমন অনেক আমলই রয়েছে, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম প্রথম দিকে করেছেন কিন্তু পরবর্তীতে তা পরিহার করেছেন। যেমন- মাগরিব নামাজের
ফরজের পূর্বে দু’রাকায়াত সুন্নত নামাজ, যা তিনি প্রথম দিকে পড়েছেন, কিন্তু পরবর্তীতে তা পরিহার করেছেন।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
صلوا قبل
صلاة المغرب ركعتين.
অর্থঃ- “তোমরা মাগরিবের
(ফরজের) পূর্বে দু’রাকায়াত নামাজ আদায় কর।”
উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মেশকাত
শরীফের ১০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
محمول
على الابتداء.
অর্থঃ- “উক্ত আমল প্রথম যুগের জন্য প্রযোজ্য ছিল।” আর মেশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “তানযীমুল আশতাত” ১ম জিঃ ৪০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
يه حكم
ابتداء اسلام ميى.
অর্থঃ- “(মাগরীবের পূর্বে দু’রাকায়াত সুন্নত পড়ার) হুকুম ইসলামের
প্রাথমিক যুগে ছিল।” অনুরূপ ‘বুরনুস’ টুপি
يلبسونها
فى صدر الاسلام.
ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান করা হতো।, যা ইতিপূর্বে বিশ্ববিখ্যাত কিতাব সমূহের ইবারতের দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে
প্রমাণিত হয়েছে। মূলকথা হলো- “বুরনুস” টুপি বেদ্বীন-বদ্দ্বীন তথা খৃষ্টানদের খাছ টুপি,
যা খৃষ্টানরা এখনো পরিধান করে থাকে। আর কিস্তি বা দোপাট্টা টুপি হচ্ছে- হিন্দু
মারওয়ারীদের খাছ টুপি, যা হিন্দুরা তাদের বিশেষ বিশেষ
অনুষ্ঠানে বর্তমানেও পরিধান করে থাকে। বুরনুস টুপি উপরের দিকে কমপক্ষে একহাত পরিমাণ
লম্বা, আর কিস্তি টুপি দোপাট্টা ও আড়াআড়িভাবে লম্বা। আর যে সকল
বর্ণনায় বুরনুস টুপি পরিধানের প্রমাণ পাওয়া যায়, তা ইসলামের প্রথম যুগের আমল। কাজেই বুরনুস টুপির উপর ভিত্তি করে কিস্তি টুপিকে
সুন্নত বলা ও প্রথম যুগের আমলকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) ‘বুরনুস’ তথা কিস্তি টুপি পরিধান করেছেন বলে বক্তব্য পেশ করা ডাহা মিথ্যা, জিহালত ও কুফরী বৈ কিছুই নয়।
(৫)
ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে উল্লেখ করা হয়েছে- “বুরনুস”
পরিধান করে নামাজ পড়া মাকরূহ্। অথচ বোখারী শরীফে বর্ণিত হাদীস শরীফ দ্বারা “বুরনুস” পরিধান করার বৈধতা প্রমাণিত হয়। এ ব্যাপারে ফায়সালা কি?
কেউ কেউ বলে থাকে, ফত্ওয়ায়ে আলমগীরীতে যে উল্লেখ করা
হয়েছে- ‘বুরনুস’ পড়ে নামাজ পড়া
মাকরূহ্, তা মূলতঃ রেশম মিশ্রিত বুরনুস। আবার কেউ কেউ বলে থাকে,
ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে বুরনুস সম্পর্কিত উক্ত বর্ণনাটি তাতার খানিয়া থেকে নেয়া হয়েছে,
আর তাতার খানিয়ায় নেয়া হয়েছে- “এতাবিয়া” থেকে। অথচ এ মাসয়ালাটি হানাফী ইমামদের কারো থেকে বর্ণিত নেই। তাছাড়া এতাবিয়ার এ
কথা একদম দলীলবিহীন। এমনকি হাদীস শরীফের খেলাফ, কেননা আবূ দাউদ শরীফে উল্লেখ আছে- হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ), হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে ‘বুরনুস’ পরিধান করে নামাজ আদায় করেছেন। উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে,
ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে যে বলা হয়েছে-
تكره
الصوة مع البرنس.
অর্থাৎ ‘বুরনুস’ সহ নামাজ আদায় করা মাকরূহ। ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্য
দ্বারা মূলতঃ লম্বা বা উঁচু টুপি ও রেশম মিশ্রিত ‘বুরনুস’ উভয়টাকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ রেশম মিশ্রিত ‘বুরনুস’ সহ নামাজ আদায় করা যেরূপ মাকরূহ, তদ্রুপ বুরনুস বা উঁচু টুপি পরিধান করেও নামাজ পড়া মাকরূহ্। যেহেতু বুরনুস টুপি
খৃষ্টানদের টুপি, আর পুরুষের জন্য রেশম ব্যবহার নিষিদ্ধ।
মূলতঃ
বোখারী শরীফে বর্ণিত হাদীস শরীফের সাথে ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্যের কোন প্রকার
দ্বন্দ্ব নেই। কারণ ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে যে ‘বুরনুস’
সহ নামাজ আদায় করাকে মাকরূহ্ বলা হয়েছে তা হলো উচু টুপি ও রেশম মিশ্রিত ‘বুরনুস’। আর বোখারী শরীফে যে ‘বুরনুস’ পরিধানের বৈধতা প্রমানিত হয় তাহলো- “টুপী সংযুক্ত জুব্বা বা পশমী চাদর ইত্যাদি।” যেমন এ প্রসঙ্গে বোখারী শরীফে উল্লেখ আছে,
عن ابن
عمر ان رجلا قال يا رسول الله ما يلبس المحرم من الثياب فقال النبى صلى الله عليه
وسلم لا يلبس المحرم القميص ولا السر اويل ولا البرنس ولا الخفين الا ان لا يجد
النعلين فليلبس ما اسفل من الكعبين.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত- এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! মুহ্রিম (হজ্বের সময়) কোন কোন পোশাক পরিধান করবে? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুহ্রিম ব্যক্তি ক্বামীছ, সেলোয়ার, ‘বুরনুস’ ও মোজা পরিধান করবেনা। তবে কারো যদি জুতা-সেন্ডেল না
থাকে, সে মোজা পরিধান করতে পারবে, তবে মোজা টাখনুর নীচে থাকতে হবে।” উক্ত হাদীস শরীফের ‘বুরনুস’ শব্দের ব্যাখ্যায় বোখারী শরীফ ২য় জিঃ- ৮৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,
قوله ولا
البرنس- بضم موحده ونون- هوكل ثوب راسه منه ملتذق به من دراعة اوجبة او غيره قال
الجوهرى هو قلنسوة طويلة كان النساك يلبسوتها فى صدر الاسلام.
অর্থঃ- “বা এবং নুনের উপর পেশ দিয়ে “বুরনুস” শব্দের অর্থ হচ্ছে- প্রত্যেক ঐ পোশাক, যার মাথার দিক
তার সাথে সংযুক্ত বা লাগানো। তা কোট হোক অথবা জুব্বা। অর্থাৎ টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা
কোট। জাওহারী বলেন, “বুরনুস” হলো- লম্বা টুপি, যা আবিদ-যাহিদ লোকেরা ইসলামের প্রাথমিক
যুগে পরিধান করতেন।” অনুরূপ নাসাঈ, আবু দাউদ, লিসানুল আরব, ক্বামুসুল মুহীত, আল মুগরিব ও আর-রাইদ ইত্যাদি কিতাব
সমূহেও উল্লেখ আছে। বোখারী শরীফ
ও অন্যান্য কিতাব সমূহে বর্ণিত ‘বুরনুস’ শব্দের ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, উক্ত হাদীস শরীফে যে বুরনুস-এর কথা বলা হয়েছে, তাহলো- টুপি সংযুক্ত জুব্বা ইত্যাদি। লম্বা টুপির কথা মোটেও বলা হয়নি। তাছাড়া জাওহারীর
বক্তব্য দ্বারা ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট হয়ে যায়, কেননা জাওহারী বলেছেন, লম্বা টুপি ইসলামের প্রাথমিক যুগে
ব্যবহার করা হতো। তাই এক্ষেত্রে ‘বুরনুস’ অর্থ লম্বা টুপি গ্রহণ করার কোন প্রশ্নই উঠেনা। এছাড়াও উক্ত হাদীস শরীফে “বুরনুস” শব্দ দ্বারা টুপিকে বুঝানো হয়নি, কারণ যদি টুপিই উদ্দেশ্য হতো, তবে আমভাবে (قلنسوة) “কলানসুওয়াহ্” শব্দই উল্লেখ করা হতো, কেননা এহ্রাম অবস্থায় যে কোন ধরণের টুপিই মাথায় দেয়া নিষিদ্ধ। সুতরাং এক্ষেত্রে
“বুরনুস” শব্দের অর্থ-
লম্বা টুপি গ্রহণ করা হলে, এহ্রাম অবস্থায় অন্যান্য টুপি পরিধান
করা বৈধ প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ এটাই প্রমাণিত হয় যে, এহ্রাম অবস্থায় ‘বুরনুস’ টুপি ব্যতীত সব টুপিই পরিধান করতে পারবে। অতএব
এক্ষেত্রে ‘বুরনুস’ শব্দের অর্থ
টুপিসহ জুব্বা ইত্যাদি গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত ও সঠিক। কারণ এহ্রাম অবস্থায় যেরূপ টুপি
মাথায় দেয়া বৈধ নয় তদ্রুপ জুব্বা পরিধান করাও বৈধ নয়। অর্থাৎ সেলাই যুক্ত সব ধরণের
পোশাকই এহ্রাম অবস্থায় পরিধান করা নিষেধ। তাছাড়া
আবুদাউদ শরীফের একটি বর্ণনা দ্বারাও প্রমানিত হয় যে, বোখারী শরীফে এহ্রাম অবস্থায় যে বুরনুস পরিধান করতে নিষেধ করা হয়েছে তাহলো টুপি
সংযুক্ত জুব্বা বা পশমী চাদর ইত্যাদি। যেমন আবু দাউদ শরীফের ১ম জিঃ ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ
আছে,
عن ابن عمر- انه وجد
القر فقال الف على ثوبا يانا فع فالقيت عليه برنسا- فقال تلقى على هذا وقد نهى
رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يلبسه
المحرم.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে ওমর
(রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি শীতে আক্রান্ত হয়ে বললেন, হে নাফে! আমার উপর কোন কাপড় ঢেলে দাও। আমি তাঁর উপর একটি বুরনুস দিয়ে দিলাম। তিনি
বলেন, তুমি আমার উপর ‘বুরনুস’ ঢেলে দিলে অথচ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম মুহ্রিমদের জন্য তা নিষেধ করেছেন।” উক্ত হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) শীতে আক্রান্ত হয়ে শীত নিবারণের জন্য কিছু গায়ে দেয়ার নির্দেশ
দিলে ইমাম নাফে (রঃ) তাঁকে বুরনুস পরিধান করিয়ে দেন। এখন প্রশ্ন হলো- লম্বা টুপি পরিধান
করলে শীত নিবারণ হবে কি? কখনো নয়। বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা
বা চাদর পরিধান করলেই শীত নিবারণ হয়। অতএব
বোখারী শরীফের বর্ণনা দ্বারা ‘বুরনুস’ পরিধান করা বৈধ প্রমাণিত হয়, এটা সত্য কথাই তবে লম্বা টুপি নয়,
বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা, পশমী চাদর ইত্যাদি কারণ পূর্বেই
প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘বুরনুস’ টুপি বেদ্বীন-বদ্দ্বীন তথা খৃষ্টানদের খাছ টুপি আর ইসলামের প্রাথমিক যুগে বুরনুস
টুপি পরিধান করা হলেও পরে তা পরিহার করা হয়েছে। কাজেই
স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, বোখারী শরীফে বর্ণিত হাদীস শরীফের
সাথে ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্যের সাথে মূলতঃ কোন ইখতেলাফ বা মতভেদ নেই। দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বর্ণনা অবশ্যই হানাফী মাযহাবের। কারণ এটা সকলেরই জানা যে,
ফতওয়ায়ে আলমগীরী ও তাতারখানিয়া উভয় কিতাবই হানাফী মাযহাব অনুযায়ী লেখা বিশ্ববিখ্যাত
ও সর্বজনমান্য ফতওয়ার কিতাব। এতাবিয়াতে এ ব্যাপারে কোন দলীল উল্লেখ না থাকলেও ফতওয়ায়ে
আলমগীরী ও ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া ইত্যাদি কিতাবদ্বয়ই দলীল হিসেবে যথেষ্ট। তাছাড়া
প্রথম যামানার ফিক্বাহের কিতাব সমূহে অন্য কোন কিতাবের বরাত বা দলীল না থাকাটাই স্বাভাবিক।
কারণ তখন তো আর এত ফিক্বাহের কিতাব ছিলনা। কাজেই
এতাবিয়া কিতাবে কোন দলীল পেশ করা হয়নি, একথা বলে ফতওয়ায়ে
আলমগীরী ও তাতার খানিয়ার উক্ত মাসয়ালাকে অস্বীকার করা নিতান্তই জেহালতপূর্ণ ও শরীয়ত
বিরোধী। হ্যাঁ, কেউ যদি ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্যকে অস্বীকার করতে চায় বা ভুল প্রমাণ করতে
চায় তবে তাকে অন্ততঃ পক্ষে ফতওয়ায়ে আলমগীরীর সমকক্ষ কোন কিতাব থেকে দলীল পেশ করতে হবে,
যেখানে উল্লেখ আছে, ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্য
সঠিক নয় বরং ভুল। নচেৎ ফুটপাতের নীম মোল্লাদের মনগড়া বক্তব্যের কারণে প্রায় সাতশত বুযুর্গ
হানাফী আলেম দ্বারা লিখিত বিশ্বখ্যাত ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হতে
পারেনা। তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্য কস্মিনকালেও আবু দাউদ শরীফের হাদীসের খেলাফ নয়।
যা ইতিপূর্বে বোখারী শরীফের হাদীসের আলোচনা দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে। মূলতঃ আলমগীরীতে যে ‘বুরনুস’সহ নামাজ পড়া মাকরূহ্ বলা হয়েছে, তা মূলতঃ উঁচু বা লম্বা টুপি ও রেশম মিশ্রিত বুরনুস। কারণ উঁচু বা লম্বা টুপি খৃষ্টানদের
খাছ টুপি আর রেশম তো এমনিতেই পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ। আর আবু দাউদ শরীফে যে, উল্লেখ আছে হযরত
সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) বুরনুস পরিধান করে নামাজ পড়েছেন। তা মূলতঃ টুপি সংযুক্ত জুব্বা
বা চাদরকেই বুঝানো হয়েছে, যার প্রমাণ নাসাঈ শরীফেই রয়েছে,
যেমন নাসাঈ শরীফ ১ম জিঃ- ১৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن وائل
بن حجر قال- اتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فرأيته ير فع يديه اذا افتتح
الصلوة ....... ثم ........... فرأ يتهم ير فعون ايديهم فى الترا نس.
অর্থঃ- হযরত ওয়ায়েল ইব্নে হাজ্র (রঃ) বলেন,
আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে দেখলাম - তিনি নামাজ শুরু
করার সময় উভয় হাত মোবারক উত্তলন করেছেন। .......... অতঃপর পরবর্তী দিনে এসে দেখলাম
হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) গণ তাঁদের উভয় হাত বুরনুসের মধ্য হতে উঠিয়েছেন। উক্ত হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) বুরনুসের ভিতর থেকে হাত উঠালেন” এর দ্বারা কি এটাই প্রমাণিত হয়না যে, উক্ত বুরনুসটি
ছিল টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা চাদর। কারণ টুপির ভিতর থেকে তো আর হাত উঠানো সম্ভব নয়,
কেননা নামাজের সময় হাত কখনো টুপির ভিতর থাকেনা। তাছাড়া আবু দাউদ শরীফের একখানা হাদীস শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত
হয় যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ যে বুরনুস পরিধান করেছেন,
তাহলো-টুপিসহ জুব্বা বা চাদর। যেমন আবু দাউদ শরীফের ১ম জিঃ ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ
আছে,
عن ابن
عمر- انه وجد القر فقال الف على ثوبا ي نافع
فالقيت عليه بر نسا- فقال تلقى على هذا وقد نهى رسول الله صلى الله عليه
وسلم ان يلبسه المحرم.
অর্থঃ “হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি শীতে আক্রান্ত হয়ে বললেন, হে নাফে! আমার উপর কোন কাপড় ঢেলে দাও। আমি তাঁর উপর একটি বুরনুস দিয়ে দিলাম। তিনি
বলেন, তুমি আমার উপর ‘বুরনুস’ ঢেলে দিলে অথচ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহ্রিমদের জন্য তা নিষেধ করেছেন।” উক্ত হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) শীতে আক্রান্ত হয়ে শীত নিবারণের জন্য কিছু গায়ে দেয়ার নির্দেশ
দিলে ইমাম নাফে (রঃ) তাঁকে বুরনুস পরিধান করিয়ে দেন। এখন প্রশ্ন হলো- লম্বা টুপি পরিধান
করলে শীত নিবারণ হবে কি? কখনো নয়। বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা চাদর পরিধান করলেই শীত নিবারণ হয়। তাছাড়া
বুরনুস (برنس) শব্দের তাহ্ক্বীক দ্বারাও প্রমাণিত
হয় যে, ‘বুরনুস’ হলো- টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা চাদর। কারণ (برنس) বুরনুস শব্দটি ((برس) বিরনুস থেকে এসেছে, আর তার মধ্যে যে নূন রয়েছে তা হলো
অতিরিক্ত। برس শব্দের অর্থ হচ্ছে- الفطن অর্থাৎ তুলা। টুপি সংযুক্ত
জুব্বা ও চাদর তুলার তৈরী বিধায় হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ শীত নিবারণের জন্য তা
পরিধান করতেন। কারণ শীত নিবারণের জন্য তুলার তৈরী পোশাকই অধিক উপযুক্ত। সুতরাং অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ যে বুরনুস পরিধান করেছেন বলে আবূ দাউদ শরীফে উল্লেখ
আছে, তা কস্মিনকালেও লম্বা টুপি নয়। বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা, পশমী চাদর ইত্যাদি কারণ এগুলোকেও বুরনুস বলা হয়। কাজেই ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বর্ণনা
আবু দাউদ শরীফের উক্ত বর্ণনার মোটেও মুখালিফ বা বিপরীত নয়।