সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয ( ৪২ নং )


পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-
পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।


সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শাখছী’ অর্থাৎ নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ উনার অনুসরণ করা জরুরী সম্পর্কিত দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ

নিম্নে দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ ও আকলী দলীল সমূহ যে কিতাব থেকে নেয়া হয়েছে, সেখানে লেখক তৎকালীন ভাষা প্রয়োগ করেছেন। জনসাধারণের বুঝার সুবিধার্থে আমরা বর্তমান ভাষায় রূপান্তরিত করে তা প্রকাশ করছি। এতে মূলকথা, ভাব ও মাসয়ালা হুবহু একই থাকবে। যাতে ভাষা প্রয়োগ ছাড়া মৌলিক কোন পরিবর্তন হবে না।
(৯৪২)
পাঠক, যদি কোন মাযহাব বিদ্বেষী ব্যক্তি বলে যে, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি অমুক মাসয়ালায় পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খিলাফ করেছেন, তবে আপনি নিম্বে দু’টি দৃষ্টান্ত পাঠ করুন। এতে প্রতিপক্ষগণের ভ্রান্ত বিশ্বাসের জাল একেবারে ছিন্ন হয়ে যাবে।
দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ নম্বর: ১
প্রথম দৃষ্টান্ত: আমাদের এদেশে একজন কাবূলী মুসলিম আগমণ করে ক্ষুধার্ত হয়ে কোন গৃহস্থের (বাড়ীর মালিকের) বাড়ীতে কিছু খাদ্য সামগ্রী চাচ্ছিলো। গৃহস্থ তাকে একটি নারিকেল সাথে একখানি অস্ত্রসহ প্রদান করলো। সরলচেতা বিদেশী কাবূলী মুসলিম নারিকেলের উপরস্থিত ত্বক (ছোবড়া) চিবিয়ে তাতে কোন স্বাদ না পেয়ে দূরে নিক্ষেপ করে বলতে লাগলো, বাঙ্গালীরা স্বাদবিহীন খাদ্য দ্রব্য কি জন্য খেয়ে থাকে? গৃহস্থ নারিকেলটি দূরে পড়ে রয়েছে দেখে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলো। কাবূলী মুসলিম লোকটি বলতে লাগলো, ভাই! তোমাদের দেশের লোকেরা এরূপ স্বাদবিহীন খাদ্য দ্রব্য কি জন্য খেয়ে থাকে? তখন গৃহস্থ অস্ত্র দ্বারা নারিকেলটি কেটে তার ভিতরে পানি ও শাঁস বের করে কাবূলী মুসলিমকে খেতে দিল। কাবূলী মুসলিম তা খেয়ে বলতে লাগলো- বাঙ্গালীরা সুস্বাদু খাদ্য খেয়ে থাকে, কিন্তু আমি অনভিজ্ঞতার কারণে তার প্রতি দোষারোপ করেছি।
পাঠক, আমাদের মহাবিজ্ঞ চারি ইমাম আরবী ভাষী হওয়ায় পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের নিগূঢ় মর্ম্ম জানতেন। বিদেশী কাবূলীর ন্যায় মাযহাব অমান্যকারীরা পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের প্রকাশ্য ভাব ও শব্দ দেখে এবং এতদুভয়ের মূলতত্ত্ব জ্ঞাত হতে না পেরে উপরোক্ত ইমাম উনাদের নিন্দাবাদ করে থাকে। কিন্তু তারা যদি এতদ্ সম্বন্ধে প্রকৃত জ্ঞানী অর্থাৎ অহলে যিকির উনাদের উপদেশ গ্রহণ করতো, তবে কাবূলীর ন্যায় তাদের অজ্ঞতার বিভ্রান্তি একেবারে দূরীভূত হয়ে যেত। সুবহানাল্লাহ! (বোরহানোল মোকাল্লেদীন বা মজহাব মীমাংসা লেখক: আল-মুবাহিছুল আ’যম, আল-ওয়ায়িযুল আ’যম, কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, খাদিমুল ইসলাম আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ রূহুল আমীন বশীরহাটী হানাফী মাতুরীদী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৭-৮ পৃষ্ঠা)
উক্ত দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, মহাবিজ্ঞ মাযহাব চতুষ্ঠয়ের হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনুসরণের মধ্যেই প্রকৃত ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ্’ উনার নির্দেশিকা আছে। যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পরিপূর্ণ সন্তষ্টি অর্জন করা সহজ ও সম্ভব হয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ নম্বর: ২
(৯৪৩)
দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত: সামুদ্রিক (সাবমেরিন) টেলিগ্রাফিক তার সমুদ্রের অগাধ পানির তলদেশ অতিক্রম করে আয়ারল্যান্ড দেশ হতে আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এ টেলিগ্রামের প্রধান কর্মচারীর মাসিক বেতন ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা এবং নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের বেতন ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা হতে ১০ (দশ হাজার) টাকা পর্যন্ত ছিল। এ নিম্নপদস্থ কর্মচারীদল কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলেন যে, আমরা প্রধান কর্মচারী হতে অতি নিম্ন কর্মচারী পর্যন্ত একই সমান কাজ করে থাকি, তবে কি জন্য আমাদের বেতন এত অল্প ও তার বেতন এত অধিক হলো? কর্তৃপক্ষগণ এ রহস্য ভেদ করার জন্য প্রধান কর্মচারীকে কিছু দিবসের জন্য স্থানান্তরিত করলেন এবং  নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের উপর এই সমস্ত কাজের ভার অর্পণ করলেন। ইতিমধ্যে কোন কারণ বশত: টেলিগ্রামের তার কেটে যাওয়ায় সংবাদ আদান-প্রদান রহিত হয়ে গেল। কর্তৃপক্ষ কর্মচারীবৃন্দকে এর কারণ অনুসন্ধান করতে বললেন। তারা অনেক চেষ্টা করেও উহা নির্ণয় করতে পারলো না। তৎপরে কর্তৃপক্ষ উক্ত প্রধান কর্মচারীকে আনয়ণ করে তার উপর এ কর্মের ভারার্পণ করলেন। তিনি অভিজ্ঞতাবলে বললেন যে- এত ক্রোশ, এত ফুট ও এত ইঞ্চি পরে তারটি কেটে গিয়েছে। তারা সে স্থানটি অনুসন্ধান করে তারটি কাটা পেলেন। তখন কর্তৃপক্ষ সেই সকল নিম্নপদস্থ কর্মচারীদেরকে বললেন, এ কারণে তার বেতন লক্ষ টাকা এবং তোমাদের বেতন এত অল্প।
পাঠক, উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা বেশ বুঝা যাচ্ছে যে, উক্ত নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের ন্যায় আধুনিক মাযহাব অমান্যকারীরা নিজেদেরকে বিজ্ঞ ইমাম চতুষ্ঠয়ের সমতুল্য ধারনা করে। যা তাদের অন্যায় ধারনা। ক্ষুদ্র কীটানুকীট হয়ে পর্বতের সাথে যুদ্ধ করার বাসনা করলে কি জ্ঞানীগণের নিকট হাস্যাস্পদ হতে হয় না?” (বোরহানোল মোকাল্লেদীন বা মাযহাব মীমাংসা লেখক: আল-মুবাহিছুল আ’যম, আল-ওয়ায়িযুল আ’যম, কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, খাদিমুল ইসলাম আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ রূহুল আমীন বশীরহাটী হানাফী মাতুরীদী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৮-৯ পৃষ্ঠা)
উক্ত দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ ফিকির করলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাবিজ্ঞ হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য এক মহান নিয়ামত। তাই উনাদেরকে ব্যতীত অন্য কোন কাউকে অনুসরণ করা মানায় না। সুবহানাল্লাহ!
দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ নম্বর: ৩
(৯৪৪)
আধুনিক চিকিৎসা ব্যবসায়িগণের মধ্যে অনেকে দু’ চারি খ- পুস্তক পাঠ করে চিকিৎসা কার্য্যে ব্রতী হয়ে থাকেন। এ চিকিৎসা কার্য্য প্রাচীন চিকিৎসক মণ্ডলীর উল্লেখিত উপদেশ সমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার উপর নির্ভর করে। এরূপ বিশ্বাসে জগৎ পরিচালিত হচ্ছে। অপরের মত গ্রহণ না করলে জগতে অনেক কার্য্য সম্পাদন হয় না। এক একজন অতি প্রাচীন কালের পণ্ডিত আজীবন ব্যাপী গভীর গবেষণার ফলে কেউবা নাড়ী বিজ্ঞান, কেউবা রোগ নির্ণয়, কেউবা ঔষধ নির্ণয়, কেউবা ঔষধ প্রস্তুত প্রণালী ও উহার প্রয়োগ প্রণালী আপন আপন গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। উক্ত পন্ডিতগণের লিখিত উপদেশ সমূহের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবসায়ীগণ জগতের স্বাস্থ্যরক্ষা সম্পাদন করে আসছেন। স্বমতে নতুন উপায়ে চিকিৎসা কার্য্য সম্পাদন করা সুদূর পরাহত।
পাঠকগণ, আমাদের চার ইমাম তাবিয়ী ও তাবে’ তাবিয়ীন শ্রেণীভুক্ত ছিলেন। তখন নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত ছহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের সময় কেবলমাত্র অতীত হয়েছিলেন। এই ইমাম উনাদের মধ্যে প্রত্যেকেই সহস্রাধিক শিক্ষকের অধীন থেকে শিক্ষালাভ করেছিলেন এবং নিজেও বহু সংখ্যক শিষ্যকে শিক্ষাদান করতঃ জগতে সম্মানিত ইসলাম উনার হাদী হিসেবে মশহূর হয়েছেন। এই ইমাম উনাদের শিক্ষকগণের মধ্যে প্রত্যেকে বহু সংখ্যক হাদীছ শরীফ সংগ্রহ করেছিলেন। হযরত ছহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের ও হযরত তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সঞ্চিত হাদীছ শরীফসমূহ অতি অল্প সময়ে আমাদের উক্ত বিজ্ঞ ইমাম উনাদের হৃদয়ে স্থান লাভ করেছিল। চার ইমাম আরবী ভাষাভাষী ছিলেন এবং উনারা প্রত্যেকেই পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের নিগূঢ় তত্ত্ব সংগ্রহে পারদর্শী ছিলেন। উনারা অতি অল্প সময়ে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, ক্রয়-বিক্রয়, দান, ওয়াছীয়ত, বিবাহ, তালাক, মোহর ও ফারায়িয ইত্যাদী প্রত্যেক প্রয়োজনীয় বিষয়ের মাসয়ালা সমূহ তন্ন তন্ন করে লিখেছেন। পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের নিগূঢ় সাংকেতিক শব্দ সমূহের বিস্তৃত সরল ব্যাখ্যা দ্বারা ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, হালাল, হারাম, মাকরূহ ও মুফসিদ প্রভৃতি বিষয় পৃথকভাবে বর্ণনা করেছেন।
উনারা পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের নাসিখ, মানসূখ, আম, খাছ, মুশতারিক, মুওয়াব্বিল, যাহির, নছ, মুহকাম, মুফাস্সার, খফী, মুশকিল, মুজমাল ও মুতাশাবিহ ইত্যাদী বিষয়ের বিশদ ব্যাখ্যা করে মুসলিম সমাজের অশেষ উপকার সাধন করে গেছেন। পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণিত আদেশ সমূহের ১৬ (ষোল) প্রকার মর্ম এবং নিষেধ সূচক শব্দ সমূহের ৮ (আট) প্রকার মর্ম পৃথকভাবে বর্ণনা করেছেন।
পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বহু অর্থবাচক শব্দের সত্য মর্ম উদঘাটন করেছেন। পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের পরস্পরের বিভিন্ন ভাবের সরল অর্থ প্রকাশ করেছেন।
যে সমস্ত মাসয়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়নি, বিজ্ঞ বিদ্বানগণের ইজমা’ (ঐক্যমত) দ্বারা তৎসমুদয়ের ব্যবস্থা বিধান করেছেন।
উল্লেখিত তিন দলীল (পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ) উনাদের মধ্যে যে সমস্ত মাসয়ালার ব্যবস্থা স্পষ্টভাবে পাওয়া যায় না, উক্ত পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ্ উনাদের নযীর ধরে তৎসমস্তের সঠিক ফায়সালা প্রকাশ করেছেন। ইহার নাম পবিত্র ‘ফিক্হ’ শাস্ত্র। শিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত, অশিক্ষিত ও সর্বপ্রকার মুসলমান ব্যক্তি মাত্রই বার শত বছর ধরে এই ফায়সালাগুলি পালন করে আসতেছেন। প্রধান প্রধান আলিম-উলামা, হাদীছ তত্ত্ববিদ, তাফসীর তত্ত্ববিদ ও পীর-আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সকলেই এই চার ইমাম উনাদের মাযহাবকে সত্য জেনে উহার কোন একটি অবলম্বন করে আসতেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আধুনিক কোন ব্যক্তি নিজ জ্ঞানে কখনোই শরীয়ত পালন করতে পারবেন না। কেননা, শরীয়ত উনার মাসায়ালা সমূহের দশ ভাগের একভাগ স্পষ্টভাবে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পাওয়া যায়, আর নয় ভাগ উক্ত দুই দলীল (পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ) উনাদের অস্পষ্টাংশে প্রাপ্ত হওয়া যায়। ঐ একভাগ মাসয়ালা জানতে গেলে, প্রথমে তাকে অপরের সাহায্য ব্যতীত নাহু, ছরফ, ফিক্হ, উছূলুল ফিক্হ, হাদীছ, উছূলুল হাদীছ, তাফসীর, বালাগাত, আসমাউর রিজাল ও ইতিহাস ইত্যাদি শিক্ষা করতে হবে। তৎপর কারো সাহায্য ব্যতীত শরীয়তের অস্পষ্ট মাসয়ালা সমূহ বের করতে হবে। যা কারো সাহায্য ব্যতীত অর্জন করা কখনোই সম্ভব নয়।
পাঠক, যদি কোন ব্যক্তি নিজ জ্ঞানে সমস্ত বিষয়ের মিমাংসা করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন, তাহলে তাকে হয়ত সংখ্যক স্থানে ভ্রান্তিজালে আবদ্ধ হতে হবে, তদ্ব্যতীত তিনি সহস্রাধিক বছর পরমায়ু বিশিষ্ট হলেও কিছুতেই এই দূরহ বিষয়ের সরল সত্য মিমাংসা করতে পারবেন না। অগত্যা তাকে চার মাযহাব উনার ইমাম উনাদের যেকোন একজনের মাযহাব গ্রহণ করতেই হবে। প্রত্যক্ষ স্বীকার করুন বা না-ই করুন, পরোক্ষভাবে সকল মুসলমান ভাই-বোনেরা এই চার মাযহাব উনাদের নিকট আশ্রয় নিয়ে থাকেন। হিংসা-বিদ্বেষ বিবর্জিত অন্তরে শত্রুতাভাব পরিত্যাগ পূর্বক পরস্পর ভ্রাতৃভাবে যদি একবার সরল প্রাণে ভেবে দেখেন, তবে প্রত্যেক ভাই-বোনের অন্তরে এই অকাট্য সত্যের জ্বলন্ত প্রমাণ সাক্ষ্য দিবে।
পাঠক, কোন নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার জন্য শতাধিক পথ নির্বাচিত ছিল, কালক্রমে তন্মধ্যস্থ অনেকগুলি পথ ধ্বংসমুখে পতিত হয়ে কণ্টকাকীর্ণ হয়ে গেল, এক্ষণে কেবল মাত্র কয়েকটি পথ বর্তমান আছে, বর্তমানে ইহার কোনো একটি অবলম্বন করলে গন্তব্য স্থানে যেতে পারা যায়। পূর্বকালে সহস্রাধিক ইমাম ও উনাদের মাযহাব বর্তমান ছিল, কালক্রমে উপরোক্ত ইমাম উনারা ইহলোক পরিত্যাগ করলেন। তৎপরে এই সমস্ত ইমামের মতামত মাযহাবের চার ইমাম আপন আপন শিষ্যগণের দ্বারা লিপিবদ্ধ করলেন। এক্ষণে স্বীকার করতে হবে যে, পূর্ববর্তী ইমাম উনাদের মাযহাব সমূহ এই চারি মাযহাবের ভিতরেই অন্তর্গত রইল। আরো চারি ইমাম যেরূপ শরীয়তের প্রয়োজনীয় মাসয়ালাসমূহ বিস্তারিতরূপে লিখে বিধিবদ্ধ করেছেন, এরূপ অন্য কোন ইমাম তৎসমুদয় বিস্তারিতরূপে লিপিবদ্ধ করেননি, যার প্রকৃত কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং স্বীকার করতে হবে যে, চার মাযহাবের ইমাম ব্যতিত অন্যান্য ইমামের গ্রহণযোগ্য মাযহাব জগতে নেই।
কেউ নামায পড়তে ইচ্ছা করলে আমাদের বিজ্ঞ ইমাম উনাদের ফিক্হ গ্রন্থের আশ্রয় নিতে হবে। কারণ, নামাযের ১৩টি ফরয, ১৪টি ওয়াজিব এবং অনেক সংখ্যক সুন্নত, মুস্তাহাব, মাকরূহ ও মুফসিদ-এর বিষয় ৩০ পারা পবিত্র কুরআন মাজীদ ও বহু সংখ্যক হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। এই ত্রিশ পারা পবিত্র কুরআন মাজীদ ও বহুসংখ্যক হাদীছ শরীফ বিশদরূপে বুঝতে গেলে কমপক্ষে বিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের আবশ্যক।
এইরূপ রোযা, যাকাত, হজ্জ, দান, ওয়াছীয়ত, ক্রয়-বিক্রয়, বিবাহ, তালাক ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ জ্ঞাত হতে গেলে আমাদের স্বল্পস্থায়ী জীবনে উহা সম্পন্ন হওয়া অসম্ভব। আর যদি কেউ আধুনিক বিদ্বানদের স্বকল্পে কল্পিত মত ধরে কার্য্য করতে চায়, তবে বলি পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের ইজমা’ অনুযায়ী স্বল্পশিক্ষিত লোকের মত ধর্তব্য হতে পারে না। আর যদি তারা নিজেরাই ইমাম উনাদের মত ধরে থাকেন, তবে এক্ষেত্রে প্রকৃতভাবে চার ইমাম উনাদের মধ্যে কোন এক ইমাম উনার মাযহাব ধারণ করতেই হলো।
পাঠক, মাযহাব বিদ্বেষীগণ যে যে দলীলে শিক্ষক, আরববাসী ক্বারী, টিকাকার, হাদীছ সংগ্রাহক, ইতিহাসবেত্তা, অভিধান লেখক, ছরফ ও নাহু প্রবর্তক ও উছূলুল হাদীছ নির্ধারক আলিম উনাদের মতালম্বন করা ওয়াজিব করেছে; চার ইমামের মধ্যে কোন এক ইমামের মাযহাব ধারণ বা গ্রহণ করা সেই দলীলেই ফরয-ওয়াজিব হবে। (বোরহানোল মোকাল্লেদীন বা মজহাব মীমাংসা লেখক: আল-মুবাহিছুল আ’যম, আল-ওয়ায়িযুল আ’যম, কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, খাদিমুল ইসলাম আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ রূহুল আমীন বশীরহাটী হানাফী মাতুরীদী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৪১-৪৫ পৃষ্ঠা)
আত-তাক্বলীদুশ শাখছী তথা নির্দিষ্ট ইমাম মুজতাহিদ উনার অনুসরণ’ উনার আবশ্যকতা ও প্রয়োজনীয়তা
মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে যামানার ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া, মুজাদ্দিদ, ইমাম, মুজতাহিদ, আউলিয়া, উলামা, মাশায়িখ, আছফিয়া, ফুক্বাহা ও মুছান্নিফূন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের প্রতি ইলহাম-ইলক্বা উনার মাধ্যমে অবারিত ইল্ম মুবারক যাহির করা হয়। তার ভিত্তিতে হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, যামানার পরিবর্তনের কারণে মানুষের জীবনের নৈতিকতা ও দ্বীনদারী আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পড়ছে। আর তাক্বওয়া, ইখলাছ ও পারলৌকিক চিন্তার স্থানে শিকড় গেড়ে বসেছে শয়তানী, ইবলীসী, ফিস্ক-ফুজূরী, মুনাফিকী ও গোমরাহী। নফসের ঘৃণ্য চাহিদা পূরণে দ্বীনী শরীয়ত উনাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেও মানুষ দ্বিধাবোধ করছে না। এমতাবস্থায় সীমিত পর্যায়েও যদি ‘আত-তাক্বলীদু গইরুশ্ শাখছী তথা মুক্ত তাক্বলীদ বা একেক সময় একেক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনুসরণ’ উনার অনুমতি দেয়া হয়; তাহলে কোনো সন্দেহ নেই যে, মানুষ নিজ নফসের ধোকায় সেই ছিদ্র পথে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় জড়িয়ে পড়বে। যা তার ঈমান-আক্বায়িদ, আমল, আখলাক, তাক্বওয়া ইত্যাদীকে ধ্বংস করে দিয়ে লা’নতগ্রস্থ করবে। নাঊযু বিল্লাহ! আর এমন লা’নতী জিন্দেগী থেকে বেঁচে থাকার জন্যই ‘আত-তাক্বলীদুশ শাখছী তথা নির্দিষ্ট ইমাম মুজতাহিদ উনার অনুসরণ’ করা জরুরী আবশ্যক ও অতিব প্রয়োজন। অর্থাৎ মাযহাব চতুষ্টয়ের মধ্যে যে কোন এক মাযহাব উনার সামগ্রিক ফায়সালা মতো ইন্তিকাল পর্যন্ত চলাই ফরয-ওয়াজিব ও দায়িত্ব-কর্তব্য। কেননা, একেক সময় একেক মাযহাব অনুসরণ করার মধ্যে অনেক কুফল রয়েছে।    প্রবৃত্তি বশতঃ একেক সময় একেক ইমাম উনাদের ফাতাওয়ার উপর আমল করা পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে খুবই কঠিন ও জঘণ্য অপরাধ।
হযরত ছহাবাহ্ কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ও হযরত তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পূণ্য যুগে সমাজ জীবনের সর্বস্তরে যেহেতু ইখলাছ, তাক্বওয়া-পরহেযগারীতা ও পরকাল চিন্তা বিদ্যমান ছিলো। সেহেতু মুক্ত তাক্বলীদের ছদ্মাবরণে প্রবৃত্তি সেবা ও ইন্দ্রীয় পরায়নতার কথা  সে যুগে সহজেই কল্পনা করা যেতো না। তাই তখন মুক্ত তাক্বলীদের উপর বিধি-নিষেধ আরোপেরও কোন প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু পরবর্তী উম্মাহ্র শীর্ষস্থানীয় আলিম ও ফক্বীহ উনারা যখন সমাজ জীবনের সর্বস্তরে বিবেক ও নৈতিকতার অবক্ষয়ের সুস্পষ্ট আলামত দেখতে পেলেন, তখন দ্বীনী শরীয়ত উনাকে হিফাযতের স্বার্থেই উনারা ‘ইজমাউল উম্মাহ তথা সর্বসম্মতভাবে’ সিদ্ধান্ত দিলেন যে, ‘আত-তাক্বলীদু গইরুশ্ শাখছী তথা মুক্ত তাক্বলীদ’ উনার পরিবর্তে এখন থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ‘আত-তাক্বলীদুশ শাখছী তথা নির্দিষ্ট মাযহাব উনার ইমাম উনার অনুসরণ’ অনুযায়ীই আমল করতে হবে। সুবহানাল্লাহ!
মাযহাব চতুষ্টয়ের মধ্যে যেকোনো একটি মাযহাব উনার মাসয়ালা অনুযায়ী আজীবন চলা আবশ্যক হওয়ার ব্যাপারে এখানে দু’টি বাস্তব ও বিপরীতমুখী মাসয়ালা আলোচনা করা হলো:
(১) ইমাম আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফাতাওয়া মতে, দেহের কোন অংশ থেকে রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে উযূ ভেঙ্গে যায়। আর বিপরীতদিকে হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, এটা উযূ ভঙ্গের কারণ নয়। (২) হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফাতাওয়া মতে, নিজ আহলিয়াকে স্পর্শ করলে উযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তার বিপরীতে ইমাম আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, তা উযূ ভঙ্গের কারণ নয়।
মনে করুন, প্রচন্ড শীতের রাতে কারো দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়লো আবার সে তার আহলিয়াকেও স্পর্শ করলো; এমতাবস্থায় প্রবৃত্তি তাড়িত দূর্বল মুসলমান এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই সুবিধা লাভের জন্য হানাফী অথবা শাফিয়ী মাযহাব উনার অনুসরণের অজুহাতে উযূ ছাড়াই নামায পড়বে। যদিও সে তার জন্মলগ্ন থেকে যেকোন নির্দিষ্ট একটি মাযহাব উনার অনুসরণ করে আসছে।
এ রকম আরো অনেক উদাহরণ শরীয়তে বিদ্যমান আছে। আমরা তা যথাস্থানে আলোচনা করবো। ইন্শা আল্লাহ!
নিম্নেআত-তাক্বলীদুশ্ শাখছী তথা নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ বা নির্দিষ্ট মাযহাব উনার অনুসরণ’ উনার আবশ্যকতা, অপরিহার্যতা ও  প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দলীলভিক্তিক আলোচনা উপস্থাপন করা হলো: 
(৯৪৫)
ব্যক্তি তাক্বলীদের অপরিহার্যতা সম্পর্কে ‘ছহীহ মুসলিম শরীফ’ উনার ব্যাখ্যাদাতা শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,
ووجهه انه لو جاز اتباع اى مذهب شاء لافضى الى ان يلتقط رخص المذاهب متبعا هواه ويتخير بين التحليل التحريم والوجوب الوجواز، وذلك يؤدى الى انحلال ربقة التكليف بخلاف العصر الاول فانه لم تكن المذاهب التوافية باحكام الحوادث مهذبة وعرفت فعلى هذا يلزمه ان يجتهد فى اختيار مذهب يقلده على التعيين.
অর্থ: ব্যক্তি তাক্বলীদ অপরিহার্য হওয়ার কারণ এই যে, মুক্ত তাক্বলীদের অনুমতি দেয়া হলে প্রবৃত্তি তাড়িত মানুষ সকল মাযহাবের অনুকূল বিষয়গুলোই শুধু বেছে নিবে। ফলে হারাম-হালাল ও বৈধাবৈধ নির্ধারণের ইখতিয়ার এসে যাবে তার হাতে। প্রথম যুগে অবশ্য ব্যক্তি তাক্বলীদ সম্ভব ছিলো না। কেননা, ফিক্হ বিষয়ক মাযহাবগুলো যেমন সুবিন্যস্ত ও পূর্নাঙ্গ ছিলো না, তেমনি সর্বত্র সহজলভ্যও ছিলো না। কিন্তু এখন তা সুবিন্যস্ত ও পূর্নাঙ্গ আকারে সর্বত্র সহজলভ্য।
সুতরাং যে কোন একটি মাযহাব বেছে নিয়ে একনিষ্ঠভাবে উনার অনুসরণ করাই এখন অপরিহার্য। (শরহুল মুহায্যাব ১ম খ- ১৯ পৃষ্ঠা)
(৯৪৬)
لو ان رجلا اخذ بقول اهل المدينة فى استماع الغناء واتيان النساء فى ادبارهن، وبقول اهل المكة فى المتعة والصرف، وبقول اهل الكوفة فى المسكر كان شر عباد الله.
অর্থ: কেউ যদি সঙ্গীত শ্রবণ ও গুহ্যদ্বারে আহলিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে (কতিপয়) মদীনা শরীফবাসী (মুজতাহিদের) ফাতাওয়া অনুসরণ করে এবং মুতয়াহ্ বিবাহের ক্ষেত্রে কতিপয় মক্কা শরীফবাসী মুজতাহিদের ফাতাওয়া অনুসরণ করে। আর মাদকদ্রব্য সেবনের ক্ষেত্রে কতিপয় কূফাবাসী মুজতাহিদের ফাতাওয়া অনুসরণ করে; তাহলে নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকৃষ্টতম বান্দারূপে পরিগণিত হবে। (তালখীছুল হাবীব ৩য় খ- ১৮৭ পৃষ্ঠা)
এ হলো প্রবৃত্তিতাড়িত সুযোগসন্ধানী মানুষের অবস্থা। কিন্তু বাস্তব সত্য এই যে, ব্যক্তি তাক্বলীদের নিয়ন্ত্রণ অস্বীকার করলে যাদের আমরা ধর্মপ্রাণ বলি তাদেরও প্রতি মুহূর্তে পদঙ্খলনের সমূহ আশংকা থেকে যাবে। কেননা, নফসের কুমন্ত্রণা ও শয়তানের প্ররোচনা এতো সুক্ষ্ম ও ভয়ংকর যে, মানুষের অচেতন মনও তার নাগালের বাইরে নয়। তাই, নির্দিষ্ট মাযহাব উনার যেকোনো একজন ইমাম উনার অনুসরণ করা ফরয উনার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে পরিগণিত হয়। 
(৯৪৭)
আল্লামা হযরত আব্দুর রঊফ মানাবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ প্রসঙ্গে অত্যন্ত সারগর্ভ আলোচনা করেছেন। অতপর তিনি আল্লামা হযরত ইবনুল হুমাম হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে-
الغالب ان مثل هذه الالتزامات لكف الناس عن تتبع الرخص.
অর্থ: সম্ভবতঃ সুযোগসন্ধানী মানুষের সহজাত মনোবৃত্তিকে প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যেই এ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। (মাযহাব কী শরয়ী হাইসিয়ত বা মাযহাব কি ও কেন? ৬৩ পৃষ্ঠা)
(৯৪৮-৯৪৯)
ولست ممن يحمل الناس على غير المعورف المشهور من مذهب مالك رحمة الله عليه واصحابه لان الورع قلَّ، بل كاد يعدم والتحفظ على الديانات كذلك، وكثرت الشهوات وكثر من يدعى العلم ويتجاسر على الفتوى فيه فلو فتح لهم باب فى مخالفة المذاهب لاتسع الخرق على الراقع، وهتكوا حجاب هيبة المذاهب وهذا من المفسدات التى لاخفاء بها.
অর্থ: ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ও উনার শিষ্যগণের গইরে মাশহূর ক্বওলের উপর আমল করার জন্য মানুষকে আমি কিছুতেই উৎসাহ যোগাতে পারি না। কেননা, এমনিতেই তাক্বওয়া ও দ্বীনদারীর অনুভূতি লোপ পেতে বসেছে এবং মানুষের পাশববৃত্তি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সেইসাথে ইল্মের এমন সব দাবীদার গজিয়েছে যে, যারা ফাতাওয়া দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে কোন ভয় করে না। তাদের জন্য মালিকী মাযহাবের বিরুদ্ধাচরণের দুয়ার একবার খুলে দেয়া হলে সংশোধনের কোন চেষ্টাই আর কাজে আসবে না। (মানুষ ও তার প্রবৃত্তির মাঝে) মাযহাবের যে আড়াল এখনও বিদ্যমান রয়েছে তা খান্খান্ হয়ে যাবে। আর এটা যে হবে চরমভাবে ফিতনার কারণ, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। (আল-মুওয়াফাক্বাত লিশ্ শাতিবী ৪র্থ খ- ১৪৬ পৃষ্ঠা, কিতাবুল ইজতিহাদ আত-ত্বরফুল আউওয়াল মাসয়ালা নম্বর: ৩ পরিচ্ছেদ নম্বর: ৫)
(৯৫০-৯৫১)
فانظر كيف لم يتجز وهو الـمتفق على امامته، الفتوى بغير مشهور الـمذهب، ولا بغير ما يعرف منه بناء على قاعدة مصلحية ضرورية، اذ قل الورع والديانة من كثير ممن ينتصب لبث العلم والفتوى، كما تقدم تمثيله فلو فتح لهم هذا الباب لا نحلت عرى المذهب بل جميع الـمذاهب.
অর্থ: লক্ষ্য করুন, সর্বজনমান্য ইমাম হয়েও আল্লামা মাযারী মালিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি মাযহাবের একটি গইরে মাশহূর ক্বওলের উপর ফাতওয়া প্রদানের দাবী কেমন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অস্বীকার করেছেন। প্রয়োজন ও বাস্তবতার নিরিখে তার এ সিদ্ধান্ত ছিলো খুবই যুক্তিযুক্ত। কেননা, (সাধারণ লোকের কথা বাদ দিয়ে খোদ) আলিম সমাজের মাঝেও তাক্বওয়া ও আমানতদারী আশংকাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। কিছু কিছু উদাহরণ ইতিপূর্বে আমরা উল্লেখও করেছি। সুতরাং এই দায়িত্বজ্ঞানহীনদের জন্য সুযোগ সন্ধানের অর্গল একবার খুলে দেয়া হলে অনিবার্যভাবে মালিকী মাযহাব সহ সকল মাযহাবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (আল-মুওয়াফাক্বাত লিশ্ শাতিবী ৪র্থ খ- ১৪৬ পৃষ্ঠা, কিতাবুল ইজতিহাদ আত-ত্বরফুল আউওয়াল মাসয়ালা নম্বর: ৩ পরিচ্ছেদ নম্বর: ৫)
(৯৫২)
আধুনিক সমাজ বিজ্ঞানের জনক আল্লামা ইবনে খালদূন রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যক্তি তাক্বলীদের নিরংকুশ প্রসারের কার্যকারণ বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে লিখেছেন-
ووقف التقليد فى الامصار عند هؤلاء الاربعة ودرس المقلدون لـمن سواهم وسد الناس باب الخلاف وطرفه لَمَّا كثر تشعب الاصطلاحات فى العلوم ولما عتق عن الوصول الى رتبة الاجتهاد ولما خشى من اسناد ذلك الى غير اهله ومن لا يوثق برأيه ولا بدينه فصرحوا بالعجز والاعواز وردوا الناس الى تقليد هؤلاء كل من اختص به من المقلدين وحظروا ان يتداول تقليدهم لما فيه من التلاعب.
অর্থ: অন্যান্য ইমাম উনাদের মুক্বাল্লিদগণের অস্তিত্ব লোপ পেয়ে বর্তমানে তাক্বলীদ চার ইমাম উনাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। আর আলিম উনারা চার ইমামের সাথে ভিন্নমত পোষণের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন। কেননা, প্রথমত: ইল্মের সকল শাখায় পারিভাষিক জটিলতা ও ব্যাপকতাসহ বিভিন্ন কারণে ইজতিহাদের যোগ্যতা অর্জন দুরূহ হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয়ত: ইজতিহাদের ধারালো অস্ত্র এমন সকল অযোগ্য লোকদের দখলে চলে যাওয়ার আশংকা পুরোমাত্রায় বিদ্যমান ছিলো যাদের ইল্ম ও ধার্মিকতার উপর কোন অবস্থাতেই আস্থা রাখা সম্ভব নয়। উপরোক্ত বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আলিমগণ ইজতিহাদের জটিল অঙ্গনে নিজেদের দীনতা ও অপারগতার অকপট স্বীকৃতি দিয়ে সর্বসাধারণকে চার ইমাম উনাদের মধ্যে যে কোনো একজনের তাক্বলীদের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে বারবার ইমাম বদলের স্বাধীনতার উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। যাতে শরীয়ত নিয়ে মানুষ ছিনিমিনি খেলার সুযোগ না পায়। সুবহানাল্লাহ! (আল-মুক্বাদ্দিমা লেখক: আল্লামা হযরত ইবনে খালদূন রহমতুল্লাহি আলাইহি ৪৪৮ পৃষ্ঠা)
(৯৫৩)
হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন-
واعلم ان الناس كانوا فى المائة الاولى والثانية غير مجتمعين على التقليد لمذهب واحد بعينه وبعد المائتين ظهر فيهم التمذهب للمجتهدين باعيانهم وقل من كان لايعتمد على مذهب مجتهد بعينه وكان هذا هو الواجب فى ذلك الزمان.
অর্থ: প্রথম ও দ্বিতীয় শতকে নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের একক তাক্বলীদ সাধারণতঃ প্রচলন ছিলো না। কিন্তু দ্বিতীয় শতকের পর থেকেই মূলতঃ এক মুজতাহিদ কেন্দ্রিক তাক্বলীদের ধারা শুরু হয়। ব্যক্তি তাক্বলীদের তুলনায় মুক্ত তাক্বলীদের অনুসারী সংখ্যায় তখন খুবই কম ছিলো। সে যুগে এটাই ছিলো ওয়াজিব বা ফরয। (আল-ইনছাফ ফী বায়ানি সাবাবিল ইখতিলাফ লেখক: হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৫৭-৫৯ পৃষ্ঠা)
(৯৫৪)
কোনো কোনো লোক এ বলে প্রশ্ন তুলেছেন যে, হযরত ছহাবাহ্ কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ও হযরত তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যুগের মুক্ত তাক্বলীদ’ পরবর্তী যুগে এসে  রূপান্তরিত হয়ে “নির্দিষ্ট তাকলীদ” হিসেবে ওয়াজিব ও বাধ্যতামূলক হয় কি করে? হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অনেক আগেই কিন্তু এ ধরনের স্থুল আপত্তির সন্তোষজনক জওয়াব দিয়ে গেছেন। যেমনটি, তিনি উনার কিতাবে লিখেছেন-  
قلت الواجب الاصلى هو ان يكون فى الامة من يعرف الاحكام الفرعية من ادلتها التفصيلية، اجمع على ذلك اهل الحق ومقدمة الواجب واجبة، فاذا كان للواجب طرق متعددة وجب تحصيل طريق من تلك الطرق من غير تعيين، واذا تعيين له طريق واحد وجب ذلك الطريق بخصوصه، ... وكان السلف لايكتبون الحديث واجبة، لان رواية الحديث لاسبيل لها اليوم الا معرفة هذه الكتب وكان السلف لايشتغلون بالنحو واللغة وكان لسانهم عربيا لايحتاجون الى هذه الفنون، ثم صار يومنا هذا معرفة اللغة العربية واجبة لبعد العهد عن العرب الاول، وشواهد ما نحن فيه كثيرة جدا، وعلى هذا ينبغى ان يقاس وجوب التقليد لامام بعينه فانه قد يكون واجبا وقد لايكون واجبا.
অর্থ: এ প্রশ্নের জওয়াবে আমার বক্তব্য হলো- আহলে হক্ব তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ উনার আলিমগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই যে, প্রত্যেক যুগেই উম্মাহ্র এমন কতক লোকের উপস্থিতি একান্ত জরুরী যাঁরা দলীল ও উৎস সমেত যাবতীয় মাসায়িলের আলিম হবেন (যাতে সাধারণ লোকের পক্ষে মাসায়িল জেনে আমল করা সম্ভব হয়)। আর এও এক স্বীকৃত সত্য যে, ওয়াজিব বিষয়ের পূর্ব শর্তটিও ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোন ওয়াজিব বিষয় পালনের পথ ও পন্থা একাধিক হলে যে কোনো একটি গ্রহণ করাই ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে একটি মাত্র পন্থা হলে সুনির্দিষ্টভাবে সেটাই ওয়াজিব হবে। উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের সকল (পূর্বসূরীগণ) হাদীছ শরীফ লিপিবদ্ধ করতেন না, অথচ আমাদের সময়ে তা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে। কেননা, সংকলন গ্রন্থের আশ্রয় নেয়া ছাড়া হাদীছ শরীফ বর্ণনার অন্য কোন উপায় এখন নেই। তদ্রুপ মাতৃভাষা আরবী হওয়ার সুবাদে তাদেরকে ভাষা ও ব্যাকরণ শিখতে হয়নি। অথচ আমাদের সময়ে তা এক গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব। কেননা, আদী আরবদের সাথে আমাদের ব্যবধান দুস্তর। মোটকথা, (সময়ের ব্যবধানে ঐচ্ছিক বিষয় ওয়াজিব হয়ে যাওয়ার) হাজারো নযীর রয়েছে। ব্যক্তি তাক্বলীদ তথা নির্দিষ্ট মুজতাহিদ কেন্দ্রিক তাক্বলীদের বিষয়টিও একই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা উচিত। এটাও সময়ের ব্যবধানে ঐচ্ছিক, নতুবা বাধ্যতামূলক হতে পারে। (আল-ইনছাফ ফী বায়ানি সাবাবিল ইখতিলাফ লেখক: হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৫৭-৫৯ পৃষ্ঠা)
অত্র ইবারত থেকে ‘আত-তাক্বলীদুশ শাখছী তথা নির্দিষ্ট মাযহাব উনার ইমামের অনুসরণ’ যে ফরয ও অবশ্যম্ভাবি, সে বিষয়টিই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
(৯৫৫)
হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো লিখেছেন-
فاذا كان انسان جاهل فى بلاد الهند وما وراء النهر وليس هناك علم شافعىّ ولا مالكى لا حنبلى ولا كتاب من كتب هذه المذاهب وجب عليه ان يقلد لمذهب ابى حنيفة رحمة الله عليه ويحرم عليه ان يخرج من مذهبه لانه حينئذ يخلع من عنقه ربقة الشريفة ويبقى سدى مهملا، بخلاف ما اذا كان فى الحرمين.
অর্থ: সুতরাং হিন্দুস্থান কিংবা এশিয়া মাইনরের সাধারণ লোকের জন্য যদি সেখানে অন্যান্য মাযহাব শাফিয়ী, মালিকী ও হাম্বলী উনাদের ফিক্হ গ্রন্থ না থাকে; তবে হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাক্বলীদ ওয়াজিব হয়ে যাবে। কেননা, হানাফী মাযহাব বর্জন করার অর্থ হবে শরীয়তের গ-িচ্যুত হয়ে ধ্বংসের শ্রোতে ভেসে যাওয়া। পক্ষান্তরে হারামাইন শরীফাইনে অন্যান্য মাযহাবের ফক্বীহ ও ফিক্হ গ্রন্থ বিদ্যমান থাকার কারণে যে কোন এক মাযহাবের তাক্বলীদ করার অবকাশ থাকবে। (আল-ইনছাফ ফী বায়ানি সাবাবিল ইখতিলাফ লেখক: হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৫৯-৭১ পৃষ্ঠা)
(৯৫৬)
মুক্ত তাক্বলীদের স্থানে ব্যক্তি তাক্বলীদকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে পরবর্তী আলিমগণ যে বিরাট সম্ভাব্য ফিতনার মূলোৎপাটন করেছেন সে সম্পর্কে হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মন্তব্য হলো-
وبالجملة فانه مذهب للمجتهدين سر الـهمه الله تعالى العلماء وجمعهم عليه من حيث يشعرون او لايشعرون.
অর্থ: মূলতঃ এক মুজতাহিদ কেন্দ্রিক তাক্বলীদের বাধ্যতামূলক নির্দেশটি খুবই তাৎপর্যম-িত। যা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পক্ষ থেকে আলিমগণের অন্তরে ইলহাম (ঐশী উপলব্ধি) স্বরূপে অবতীর্ণ। ফলে সচেতনভাবে কিংবা অবচেতনভাবে সকলেই ঐক্যমত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছেন। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ্ লেখক: হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি ১ম খ- ১৫৪ পৃষ্ঠা)
(৯৫৭)
অন্যত্র হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো লিখেছেন- 
ان هذه الـمذاهب الاربعة المدونة المحررة قد اجتمعت الامة او من يعتد به منها على جواز تقليدها الى يومنا هذا وفى ذلك من المصالح ما لايخفى، لا سيما فى هذه الايام التى قصرت فيها الهمم جدا، واشربت النفوس الهوى، واعجب كل ذى رأى برأيه.
অর্থ: গোটা উম্মাহ্র সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই যে, বর্তমানে মাযহাব চতুষ্টয়ের (যে কোন একটির একক) তাক্বলীদই শুধু বৈধ হবে। কেননা, মানুষের মনোবলে যেমন ভাটা পড়েছে তেমনি প্রবৃত্তির গোলামী হৃদয়ের পরতে পরতে শিকড় গেড়ে বসেছে। আর (অহংকার এমন প্রবল যে, দলীলের বদলে) নিজস্ব মতামতই এখন মুখ্য হিসেবে দেখা দিয়েছে। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ্ লেখক: হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি ১ম খ- ১৫৪ পৃষ্ঠা)
উল্লেখিত ইবারত উনাদের থেকে এটাই স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে যে, তৃতীয় হিজরী শতক হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সর্বশ্রেণী লোকের জন্য মাযহাব চতুষ্টয় তথা হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী উনাদের যেকোনো একটিকে নিজ জীবনের শেষ পর্যন্ত অনুসরণ করা ফরয। চাই সেই মুক্বাল্লিদ বা অনুসারী পরবর্তী মুজতাহিদ, ফক্বীহ, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, আদীব, মুয়াররিখ, মুছান্নিফ, মুহাক্কিক্ব, আমীর-উমারা ইত্যাদী যেকোনো পদস্থ হোন না কেন?
অতএব, মাযহাব চতুষ্টয়ের যেকোনো একটি মাযহাব উনার অনুসরণ করার অপরিহার্যতা, প্রয়োজনীয়তা ও আবশ্যকতা কতখানি; তা উল্লেখিত আলোচনা থেকেই পরিস্কার হয়ে গেল। এখন মাযহাব বিদ্বেষী ও অমান্যকারীরা এসমস্ত দলীলের বিপক্ষে কি জবাব দিবে? আসলে তাদের দালীলিক কোন জবাব নেই।