গোলটুপি ব্যতীত অন্যান্য টুপি মাকরূহ হওয়ার ফতওয়া ( ৭ নং )

খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
গবেষণা কেন্দ্র
মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামাজ ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাজে বা অন্যান্য সময় কোরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামাজ বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ও দোয়াল্লাীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফত্ওয়া প্রকাশ করার পর ১৭তম ফতওয়া হিসেবে খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রকাশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]

মাসিক আল বাইয়্যিনাতে টুপি সম্পর্কে পুণরায় ফতওয়া দেয়ার কারণ
            (বাতিলের আতঙ্ক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যায় টুপি সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক ফতওয়া প্রদান করা হয়েছিল। যাতে প্রায় ৫০টিরও অধিক নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে খাছ সুন্নতী টুপির বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছিল।
            টুপির উক্ত ফতওয়াটি সত্বান্বেষী ও সুন্নতের আশেক্ব মুসলমানগণের নিকট এতই সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য হয় যে, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই টুপির ফতওয়া সম্বলিত কপিখানার মজুদ সংখ্যাগুলিও ফুরিয়ে যায়। যার ফলে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগণিত পাঠক, টুপি সম্পর্কিত মুল্যবান ফতওয়াটি সংগ্রহে রাখতে ব্যর্থ হয়। তাই তারা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অন্যতম বিভাগ- ফতওয়া বিভাগেটুপি সম্পর্কিত ফতওয়াটি পুণরায় প্রকাশ করার জন্য পুনঃ পুনঃ আবেদন জানায়।
            এতদ্বপ্রেক্ষিতে অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগনিত পাঠকের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং হক্ব তালাশী ও সুন্নতের আশেক্ব, মুসলমানগণের ঈমান ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে সর্বপোরি মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিলের উদ্যেশ্যে টুপি সম্পর্কিত ফতওয়াটি কিছুটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও সংশোধনের মাধ্যমে এবং আরো অধিক দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রকাশ করা হলো। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফেএরশাদ করেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.

অর্থঃ- যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
            অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.                     
অর্থঃ- যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
            অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।
            কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকারঅগণিত পাঠক, গ্রাহক ও হক্ব তালাশী বা সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কেশরীয়তসম্মত তথা কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে ফতওয়া দেয়া হলো।
            এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,

من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
            বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
            কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “খাছ সুন্নতী টুপি ও তার  সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্র্কে”  সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন  প্রত্যেকেই খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
            মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থঃ- এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
            এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মোহাজির (রাঃ)গণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ) দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ (রাঃ) বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মাআরেফ)
            অতএব, খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীস শরীফের মেছদাক হওয়াই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে টুপি সম্পর্কিত ফতওয়া পুণরায় প্রকাশ করার মূল কারণ।)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

টুপির ফতওয়া সম্পর্কিত কতিপয় বিষয়ের সংশয় নিরসন
(৬)
কিস্তি বা লম্বা টুপি কাফেরদের শিয়ার হিসেবে প্রমাণ করতে গিয়ে الغيار শব্দের ব্যাখ্যায় হাশিয়ায় শায়খ যাদাহ্ এর উদ্ধৃতি পেশ করা হয়েছে। অথচ হাশিয়াতুশ শিহাবে বলা হয়েছে, “যারা বলবে গিয়ার অর্থ লম্বা টুপি, তারা গিয়ার শব্দের হাক্বীক্বত বুঝেনি।এখন কোনটি গ্রহণযোগ্য? আবার কেউ কেউ এও বলে থাকে যে, শায়খ যাদাহ্ (রঃ)-এর যামানায় হয়তো লম্বা টুপি কাফেরদের           شعار
শেয়ার ছিল, কিন্তু আমাদের যুগেতো ব্যাপারটি তেমন রয়নি বরং এটি ব্যাপকভাবে মুসলমানরাই পরিধান করে থাকে, তাই সে যুগের সাথে মিলিয়ে এ যুগের লম্বা টুপিকে কাফেরদের শিয়ার বলার যৌক্তিকতা কি?
            উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, তাফসীরে বায়জবীতে যে উল্লেখ করা হয়েছে,
لبس الغيار وشد الزنار ونحو هما كفرا.
অর্থঃ- গিয়ারপরিধান করা ও পৈতা বাঁধা এবং এতদুভয়ের ন্যায় পোশাক পরিধান করা কুফরী।
            উল্লেখ্য, তাফসীরের কিতাবে গিয়ারশব্দের বিভিন্ন অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- গিয়ারশব্দের ব্যখ্যায় তাফসীরে বায়জবীর বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য শরাহ হাশিয়ায়ে শায়খ যাদাহ ১ম জিঃ ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(قوله- ليس الغيار) وهو بكسر الغين علامة اهل الذمة- وقيل هو قلنسوة طويلة كانت تلبس فى ابتداء الاسلام وهى الان من شعار اهل الكفر مختصة بهم.
অর্থঃ- গাইনএর নীচে যের দিয়ে غيار শব্দের অর্থ হলো- জিম্মীদের চিহ্ন বিশেষ। আর কেউ কেউ বলেন, غيار হলো- লম্বা টুপি, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান করা হতো এবং বর্তমানে লম্বা টুপি কাফেরদের শেয়ার বা চিহ্ন ও লম্বা টুপি তাদের খাছ টুপি।
            আর হাশিয়াতুশ্ শিহাবের মুছান্নিফ গিয়ারশব্দের অর্থে জিম্মীদের বিশেষ চিহ্নকে স্বীকার করলেও গিয়ারশব্দের অর্থ যে, লম্বা টুপি, তা তিনি অস্বীকার করেছেন। মূলতঃ এটা সম্পূর্ণই তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত। তাঁর ব্যাক্তিগত অভিমতের দ্বারা হাশিয়ায়ে শায়খ যাদার উক্ত বক্তব্য ভুল বা পরিতাজ্য হতে পারেনা। কারণ হাশিয়াতুশ্ শিহাবের বর্ণনার চাইতে হাশিয়ায়ে শায়খ যাদার বর্ণনার গুরুত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা কম নয়।
            তাছাড়া হাশিয়াতুশ্ শিহাবের বক্তব্য মোতাবেক যদি গিয়ারশব্দের অর্থ লম্বা টুপি গ্রহণ নাও করা হয়, তথাপিও কিস্তি টুপি বা লম্বা টুপি ব্যবহার করা অবৈধ প্রমাণিত হয়। কারণ হাশিয়ায়ে শায়খ যাদার ন্যয় হাশিয়াতুশ্ শিহাবেও উল্লেখ করা হয়েছে-
الغيار- وهو علامة اهل الذمة.
অর্থঃ- জিম্মি বা কাফেরদের চিহ্ন বিশেষকেই গিয়ারবলে।
            আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কিস্তি টুপি কাফের তথা হিন্দুদের শেয়ার বা খাছ টুপি। যেমন এ প্রসঙ্গে বাহ্রুল উলুম, ফখরুল ফুক্বাহা, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, হাফিজুল হাদীস, মুফতিয়্যুল আযম, শায়খুল মিল্লাতে ওয়াদ্দীন, মুবাহিছুল আযম, হযরতুল আল্লামা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীরহাটি (রঃ) কর্তৃক প্রণীত- বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য দলীল সমৃদ্ধ ফতওয়ার কিতাব ফতওয়ায়ে আমীনিয়াতেউল্লেখ করেন, “কিস্তি (লম্বা) টুপি খাছ মারওয়ারিদের (হিন্দুদের) ব্যবহৃত টুপি ..........।
            তাছাড়া কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে কিস্তি বা দোপাট্টা টুপির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়না। অনুসরণীয় ইমাম মুজতাহিদ বা আউলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণ কিস্তি বা দোপাট্টা লম্বা টুপি পরিধান করেছেন, এরূপ দূর্বল থেকে দূর্বলতম বর্ণনাও নজরে পড়েনা। আর না পড়াটাই স্বাভাবিক, যেহেতু কিস্তি বা দোপাট্টা টুপি কাফের তথা হিন্দুদের খাছ টুপি। অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ বা আউলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণের পক্ষে এটা কস্মিনকালেও সম্ভব নয় যে, তাঁরা গোল টুপির খাছ সুন্নতকে বাদ দিয়ে বেদ্বীন-বদ্দ্বীনদের খাছ টুপি পরিধান করবেন।
            অতএব, “গিয়ারশব্দের যে অর্থই গ্রহণ করা হোক না কেন, তদ্বারা কিস্তি বা দোপাট্টা লম্বা টুপি পরিধান করা নাজায়েয প্রমাণিত হয়। কারণ কিস্তি টুপি কাফেরদের খাছ টুপি বা শেয়ার।অর্থাৎ চিহ্ন বিশেষ। আর উক্ত তাফসীরদ্বয়ে মূলতঃ কাফেরদের খাছ শেয়ার বা আমল অর্থাৎ চিহ্ন বিশেষ অনুসরণ করাকেই কুফরী বলা হয়েছে। সুতরাং হাশিয়ায়ে শায়খ যাদাহ্ ও হাশিয়াতুশ্ শিহাবের বক্তব্যের ভিত্তিতে এটাই ছাবেত হয় যে, কাফের তথা হিন্দুদের শেয়ার বা খাছ টুপি কিস্তি বা দোপাট্টা লম্বা টুপি ব্যবহার করা নাজায়েয, আর তা সুন্নত মনে করে পরিধান করা কুফরী।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, যারা বলে- লম্বা টুপি শায়খ যাদাহ্র সময়ে কাফেরদের শেয়ার থাকলেও বর্তমানে তা কাফেরদের শেয়ার নয়, যেহেতু মুসলমানরা ব্যাপকভাবে তা ব্যবহার করছে।
            তাদের উক্ত বক্তব্য শুধু জেহালত বা মূর্খতাসুচকই নয়, বরং তা কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণই বিপরীত। কারণ যে আমল শরীয়তের খেলাফ বা কাফেরদের শেয়ার বা খাছ আমল হিসেবে প্রমাণিত, তা ক্বিয়ামত পর্যন্তই কাফেরদের শেয়ার বলে গণ্য হবে। কাফেরদের কোন শেয়ার বা খাছ আমলকে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে অনুসরণ করলেই যে তা আর কাফেরদের শেয়ার থাকবেনা বা তা আমল করা জায়েয হবে, শরীয়তের কোথাও এ ধরণের কোন বর্ণনার উল্লেখ নেই বরং এটা বিদ্য়াতীদের সম্পূর্ণ মনগড়া বক্তব্য।
            কেননা শরীয়ত বিরোধী ও কাফেরদের কোন আমল মুসলমানরা ব্যাপকভাবে আমল করলেই যদি তা জায়েয হয়ে যায়, তবে তাদের বক্তব্য মোতাবেক গান-বাজনা করা, বেপর্দা চলা, সুদ-ঘুষ খাওয়া ইত্যাদি হারাম কাজগুলোও জায়েয। যেহেতু মুসলমানরা ব্যাপকভাবে তা আমল করে থাকে। এখানে দাড়ী মুন্ডনের ব্যপারটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। কারণ দাড়ী মুন্ডন করাও বেদ্বীন-বদ্দ্বীনদের খাছ শেয়ার বা চিহ্ন বিশেষ। যেমন এ প্রসঙ্গে আবূ দাউদ শরীফের ব্যখ্যা গ্রন্থ বযলুল মাজহুদ -১ম জিঃ ৩৩ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে যে,
وقص اللحية من سنن الاعاجم وهو اليوم شعار كثير من المشر كين والافر نج والهنود ومن لا خلاق له فى الدين ........
অর্থঃ- দাড়ী কাটা আজ্মী (মজুসী)দের নীতি। আর তা বর্তমানে মোশরেক, ফিরিঙ্গী হিন্দু ও দ্বীনের সাথে সম্পর্কহীন অধিকাংশ বাতিল ফেরকার শেয়ার বা খাছ আমল।
            অথচ মুসলমানরা ব্যাপকভাবে দাড়ী কেটে বা মুন্ডন করে থাকে। তাই বলে কি দাড়ী মুন্ডন করাকে বেদ্বীনদের শেয়ার বলা যাবেনা? বা মুসলমানরা ব্যপকভাবে দাড়ী মুন্ডন করার কারণে কি দাড়ী মুন্ডন করাকে তারা জায়েয বলবে? দাড়ী মুন্ডন করা কাফেরদের খাছ আমল বা শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানরা তা ব্যাপকভাবে আমল করার কারণে যদি দাড়ি মুন্ডন করা জায়েয না হয়, তবে কিস্তি বা লম্বা টুপি যা কাফেরদের খাছ আমল বা শেয়ার, তা মুসলমানরা ব্যাপকভাবে পরিধান করার কারণে কি করে জায়েয হবে?
            অতএব, কাফেরদের শেয়ার সম্পর্কিত তাদের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, মনগড়া ও শরীয়ত বিরোধী। মূলতঃ কিস্তি বা লম্বা টুপি পূর্বেও যেমন কাফেরদের শেয়ার ছিল, বর্তমানেও তা কাফেরদের শেয়ার এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তা কাফেরদের শেয়ার হিসেবেই থাকবে। মুসলমানরা অজ্ঞতাহেতু তা ব্যাপকভাবে পরিধান করে বলে তা কাফেরদের শেয়ার নয়, একথা চরম জেহালতের নিদর্শন।
(৭)
            কেউ কেউ কিস্তি টুপির দলীল হিসেবে বোখারী শরীফে বর্ণিত বুরনুসশব্দের ব্যখ্যায় হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী (রঃ) তাঁর বিখ্যাত কিতাব ফাতহুল বারীতে যে বর্ণনা পেশ করেছেন, তা উল্লেখ করে থাকে এবং বলে থাকে যে, ‘বুরনুসকোন জাতি বা সম্প্রদায়ের সুনির্দিষ্ট পোশাক নয় বরং তা মুসলমান ও খৃষ্টান উভয় সম্প্রদায়ের মাঝেই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো।
            উপরোক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, ফাতহুল বারীর উক্ত বক্তব্য কিস্তি টুপির দলীল হিসেবে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সেখানে কিস্তি টুপির কোন আলোচনাই নেই বরং আমভাবে বুরনুসেরকথাই বলা হয়েছে। যেমন ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করা হয়েছে,
وقد كره بعض السلف لبس البر نس لا نه كان من لباس الر هبان وقد سئل مالك عنه فقال لا يأس به- قيل فانه من لبوس النصارى- قال كان يلبس ههنا وقال عبد الله بن ابى بكر- ما كان احد من القراء الا له بر نس- واخرج الطبر انى من حديث ابى قر صافة- قال كساتى رسول الله صلى الله عليه وسلم بر نسا فقال- البسة وفى سنده من لا يعرف ولعل من كرهه اخذ بعموم حديث على رفعه اياكم ولبوس الر هبان فانه من تزيابهم او تشبه فليس منى اخرجه الطبر انى فى الاو سط بسند لا بأس به.

অর্থঃ- সল্ফে ছালেহীনগণের অনেকেই বুরনুসপরিধান করাকে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলেছেন। কেননা তা খৃষ্টান পাদ্রীদের পোশাক, আর ইমাম মালেক (রঃ)কে বুরনুসসম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এতে কোন দোষ নেই। বলা হলো বুরনুস খৃষ্টানদের পোশাক। তিনি বলেন, এখানে তা পরিধান করা হচ্ছে। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আবূ বকর বলেন, প্রত্যেক ক্বারী সাহেবের বুরনুসছিল। তিবরানী শরীফে বর্ণিত আছে- হযরত আবূ কিরছাফাহ (রাঃ) বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে একটি বুরনুসপরিয়ে দিয়েছেন এবং বলেছেন, এটি পরিধান করবে। এ হাদীসের সনদে একজন অপরিচিত ব্যক্তি রয়েছে। আর সম্ভবতঃ যাঁরা বুরনুসপরিধান করাকে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলেছেন, তাঁরা হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত একখানা মারফূ হাদীস শরীফের আম অর্থ গ্রহণ করে বলেছেন। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- তোমরা রাহেব বা খৃষ্টান পাদ্রীদের পোশাক থেকে বেঁচে থাক। কারণ যে ব্যক্তি তাদের পোশাক দ্বারা সুসজ্জিত হবে অথবা তাদের সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।ইমাম তিবরানী (রঃ) তাঁর মুজামুল আওসাতকিতাবে এ হাদীস শরীফ খানা বর্ণনা করেছেন এবং এ হাদীস শরীফের সনদের ব্যাপারে কোনই আপত্তি নেই।
            উল্লেখ্য, ‘ফাতহুল বারীরবুরনুস সম্পর্কিত উক্ত বক্তব্য স্পষ্ট নয়, কারণ হযরত ইবনে হাজর (রঃ) আমভাবে বুরনুসের আলোচনা করেছেন। অথচ বুরনুসএকাধিক অর্থবিশিষ্ট একটি শব্দ। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরণের বস্তুকে বুরনুসবলা হয়। যেমন- টুপি সংযুক্ত জুব্বাকেও বুরনুসবলে। আবার উপরের দিকে একহাত পরিমাণ লম্বা টুপিকেও বুরনুসবলে। তাই সব ধরণের বুরনুসপরিধান করা যেরূপ নাজায়েয বা মাকরূহ্ নয়, তদ্রুপ সব ধরণের বুরনুসপরিধান করা জায়েয বা বৈধও নয়। বরং যে বুরনুসখৃষ্টানরা খাছভাবে পরিধান করে থাকে, সে বুরনুস পরিধান করাকে সল্ফে ছালেহীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণ মাকরূহ্ তাহরীমী বা নাজায়েয বলেছেন। আর তা হলো- উপরের দিকে একহাত পরিমান লম্বা টুপি নামক বুরনুস। লম্বা টুপি নামক বুরনুস যে খৃষ্টান বা বিধর্মীরা খাছভাবে পরিধান করে থাকে, তার বহু প্রমাণ নির্ভরযোগ্য কিতাব সমুহে রয়েছে। যেমন, এ প্রসঙ্গে সহীহ্ নাসাঈ শরীফের ২য় জিঃ ৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
البرنس- بالضم- كلاه دراز كه تر سايار مى ..وشند.
অর্থঃ- ‘‘বা এর উপর পেশ দিয়ে বুরনুসশব্দের অর্থ হলো লম্বা টুপি, যা অগ্নি উপাসকরা পরিধান করে।
            ফার্সী মশহুর লোগাত, লোগাতে হীরা ও কিশওয়ারীতে উল্লেখ আছে,
برنس لمبی ٹوپی جو راھب پھنتے ھیں-

অর্থঃ-বুরনুস”- লম্বা টুপিকে বলে যা খৃষ্টান পাদ্রীরা পরিধান করে থাকে।
            বিখ্যাত লোগাত, “গিয়াছুল লোগাত”-এর ৭৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
البرنس ....... بمعنی کلاہ دراز کہ کشیشاں می پوشند-

অর্থঃ- বুরনুস’ ..... অর্থ লম্বা টুপি, যা খৃষ্টান পাদ্রী বা মুর্তিপুজকরা পরিধান করে থাকে।
            আর লোগাতুল হাদীস ১ম জিঃ ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
..... مجمع البرحین میں ھے برنس نصاری کی ٹوپی جو وہ سرپر رکھتے ھیں-
অর্থঃ- ........ মাজমাউল বাহরাইননামক কিতাবে উল্লেখ আছে, বুরনুস অর্থাৎ লম্বা টুপি নাছারা অর্থাৎ খৃষ্টানদের টুপি, যা তারা মাথায় দিয়ে রাখে।
            এছাড়া আরো অনেক কিতাবে বুরনুসবা লম্বা টুপিকে বিধর্মী বা খৃষ্টানদের টুপি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর তাই আমাদের হানাফী মায্হাবের নির্ভরযোগ্য ও বিখ্যাত ফিক্বাহের কিতাব এতাবিয়া, তাতার খানিয়া ও আলমগীরীতে বুরনুস অর্থাৎ লম্বা টুপি পরিধান করে, নামাজ পড়াকে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলা হয়েছে। সুতরাং ফাতহুল বারীতেযে বলা হয়েছে,

وقد كره بعض السلف لبس البرنس.
অর্থাৎ সল্ফে ছালেহীনদের অনেকেই বুরনুসপরিধান করাকে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলেছেন।
            এ কথার দ্বারা লম্বা টুপি নামক বুরনুসকেইবুঝানো হয়েছে। কারণ এর পরেই উল্লেখ আছে,
لانه كان من لباس الرهبان.
অর্থাৎ- কেননা বুরনুস’ (লম্বা টুপি) খৃষ্টানদের পোশাক।
            আর ফাতহুল বারীর উক্ত বর্ণনায় ইমাম মালেক(রঃ) কর্তৃক বুরনুস পরিধানের যে সমর্থন পাওয়া যায়, সকল ক্বারী সাহেবের বুরনুসছিল বলে যে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক হযরত আবু কিরছাফাহ্ (রাঃ)কে বুরনুস পরিয়ে দেয়ার যে বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে, তা টুপি সংযুক্ত জুব্বা নামক বুরনুসকেই বুঝানো হয়েছে।
            কেননা টুপি সংযুক্ত জুব্বা নামক বুরনুসহযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের কেউ কেউ পরিধান করেছেন বলে বোখারী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ ও ইবনে মাজা শরীফের কোন কোন বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়। আর টুপি সংযুক্ত জুব্বাকেও যে বুরনুস বলা হয়, তার প্রমাণ বোখারী শরীফ সহ বহু কিতাবেই উল্লেখ আছে। যেমন- বুরনুসশব্দের ব্যখ্যায় বোখারী শরীফের ২য় জিঃ, ৮৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

و لا ابرانس – بضم موحدہ و نون ھو کل ثوب رأسہ منہ ملتذق بہ من دراعۃ او جبہۃ اور غیرہ-

অর্থঃ- বাএবং নূনেরউপর পেশ দিয়ে বুরনুসশব্দের অর্থ হচ্ছে- প্রত্যেক ঐ কাপড় বা পোশাক, যার মাথার দিক তার সাথে সংযুক্ত বা লাগানো।
            আর লোগাতুল হাদীস ১ম জিঃ ৫৪ পৃষ্ঠায় বুরনুসশব্দের অর্থে লিখা হয়েছে-
برنس – ھر وہ کپڑا جس میں پوپی لگی ھو جبہ ھو یا قمیص یا باران کوپ و غیرہ-
অর্থঃ- বুরনুস প্রত্যেক ঐ কাপড়, যার সাথে টুপি সংযুক্ত থাকে, জুব্বা হোক অথবা কামিছ অথবা রেইন কোর্ট ইত্যাদি হোক।অনুরূপ নাসাঈ, আবু দাউদ, লিসানুল আরব, ক্বামূছুল মুহীত, আল মুগরিব ও আর রাইদ ইত্যাদি বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহেও উল্লেখ আছে।
            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা ক্বামিছকেও বুরনুস বলা হয়। আর এ ধরণের বুরনুসসকলের মতেই জায়েয, যেহেতু হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)সহ অনেকেই এ ধরণের বুরনুসপরিধান করেছেন বলে প্রমাণিত রয়েছে এবং এ ধরণের বুরনুসকে খ্রীষ্টান বা বিধর্মীদের খাছ পোশাক বলে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। যেরূপ উল্লেখ করা হয়েছে লম্বা টুপি নামক বুরনুসের ক্ষেত্রে। তবে মুসলমানদের ন্যায় বিধর্মী বা খ্রীষ্টানরা টুপি সংযুক্ত জুব্বা ইত্যাদি পরিধান করাও অস্বাভাবিক কিছু নয়, কারণ বিধর্মী বা খ্রীষ্টানদের মধ্যে এরূপ অনেক আমলই রয়েছে, যা মুসলমানদের খাছ আমল। যেমন মুসলমানদের ন্যায় বিধর্মীরাও দাড়ী রেখে থাকে, পাগড়ী পরিধান করে ও খৎনা ইত্যাদি করিয়ে থাকে। কাজেই মুসলমানদের কোন খাছ আমল বিধর্মীরা পালন করলেও তা বিধর্মীদের আমল বলে বিবেচিত হবেনা। হযরত ইমাম মালেক (রঃ) উক্ত বক্তব্য দ্বারা এদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। অর্থাৎ তিনি এটাই বলতে চেয়েছেন যে, টুপি সংযুক্ত জুব্বা নামক বুরনুস খ্রীষ্টানরা পরিধান করলেও তা মূলতঃ মুসলমানদেরই পোশাক। কেননা এখানকার মুসলমানরা তা পরিধান করে আসছে।
            সুতরাং যারা বলে বুরনুসকোন সম্প্রদায়ের সুনির্দিষ্ট পোশাক নয়, তাদের এ বক্তব্য অপূর্ণ ও অশুদ্ধ। কারণ লম্বা টুপি নামক বুরনুসঅবশ্যই বিধর্মী বা খ্রীষ্টানদের সুনির্দিষ্ট পোশাক, যা মুসলমানদের জন্য পরিধান করা বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার ক্ষেত্রে নাজায়েয ও হারাম, আর সাধারণভাবে তা পরিধান করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী। আর টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা ক্বামিছ মুসলমানদের সুনির্দিষ্ট পোশাক, বিধর্মী বা খ্রীষ্টানরা মুসলমানদের অন্যান্য আমলের ন্যায় তা আমল করলেও মুসলমানদের জন্য তা পরিধান করা জায়েয বা বৈধ। বুরনুস সম্পর্কিত ফাতহুল বারীর ব্যাখ্যা বা সারমর্ম এটাই।
            কাজেই কিস্তি বা দোপাট্টা টুপির দলীল হিসেবে ফাতহুল বারীর উক্ত বর্ণনাকে উল্লেখ করা চরম জেহালত ও প্রতারনা বৈ কিছুই নয়। কারণ বুরনুসশব্দের একটি অর্থ- লম্বা টুপি হলেও তা যে বিধর্মী বা খ্রীষ্টানদের টুপি, তা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া কিস্তি টুপি কশ্মিনকালেও বুরনুসটুপির অনুরূপ নয়, কেননা বুরনুস টুপি হলো উপরের দিকে এক হাত পরিমান লম্বা, আর কিস্তি টুপি হচ্ছে- দোপাট্টা ও আড়াআড়িভাবে লম্বা।
            স্মর্তব্য যে, কোন আমলের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে স্পষ্ট কোন বর্ণনা না পাওয়া গেলেও আম বা ব্যাপক অর্থবোধক বর্ণনাকেও তার দলীল হিসেবে পেশ করা যায় বা তদ্বারাও যে উক্ত আমল নিষিদ্ধ প্রমাণিত হয়, তার বহু প্রমাণ শরীয়তে রয়েছে। যেমন-দাদী-নানীকে বিবাহ করা যে হারাম, তা কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে  স্পষ্ট উল্লেখ নেই। ইমাম মুজতাহিদগণ কোরআন শরীফের
حرمت عليكم امها تكم-

অর্থঃ- তোমাদের উপর তোমাদের মাতাগণকে(বিবাহ করা) হারাম করা হলো।”)
            এ আয়াত শরীফের ব্যাপক অর্থ গ্রহণ করে দাদী-নানীকে বিবাহ করা হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
            কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে ধুমপানের ব্যাপারে স্পষ্ট কোন  নিষেধাজ্ঞা নেই। ইমাম মুজতাহিদগণ এ হাদীস শরীফ                
من اككرهذه الشجرة المنتنة فلا يقر بن مسجدنا فان الملئكة تتئاذ مما يتئاذ منه الا نس-
অর্থঃ- যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধময় গাছের কিছু খায়, সে যেন মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কেননা মানুষ যে কারণে কষ্ট পায় ফেরেশ্তারাও সে কারণে কষ্ট পায়।”) এর ব্যাপক অর্থ গ্রহণ করে ধুমপান করাকে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলে ফতওয়া দিয়েছেন। অনুরূপ শরীয়তে এমন অনেক বিষয়ই রয়েছে, যা জায়েয বা না জায়েয হওয়ার ব্যাপারে কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে স্পষ্ট কোন বর্ণনা নেই। কিন্তু ইমাম মুজতাহিদগণ কোন ক্ষেত্রে কোরআন শরীফ আর কোন ক্ষেত্রে হাদীস শরীফের ব্যাপক অর্থ গ্রহণ করে তা জায়েয বা নাজায়েয সাব্যস্ত করেছেন।
            তদ্রুপ অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, লম্বা টুপি নামক বুরনুসلباس النصرى অর্থাৎ খ্রীষ্টানদের পোশাক।
            আর হাদীস শরীফে সহীহ্ সনদে বর্ণিত হয়েছে-
اياكم ولبوس الر هبان فانه من تزيا بهم او تشبه فليس منى.
অর্থঃ- তোমরা রাহেব বা খ্রীষ্টান পাদ্রীদের পোশাক থেকে বেঁচে থাক, কারণ যে ব্যক্তি তাদের পোশাক দ্বারা নিজেকে সুসজ্জিত করবে অথবা তাদের সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে, সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়।” (মুজামুল আওসাত)
            অন্য হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-                           
من تشبه بوم فهو منهم.
অর্থঃ-যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে, সে ব্যক্তি তাদেরই দলভুক্ত।’’ (আহ্মদ, আবু দাউদ)
            উল্লিখিত ব্যাপক অর্থবোধক হাদীস শরীফের উপর ভিত্তি করে ইমাম মুজতাহিদগণ ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, মুজূসী-মোশরেক তথা বেদ্বীন বদ্দ্বীনদের সাথে সাদৃশ্য রাখাকে হারাম বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন- ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব তাহ্তাবী ৩য় জিঃ ৪৬০ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-والتشبه بهم حرام.           
অর্থঃ- ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, মজূসী-মোশরেক তথা বেদ্বীন-বদ্দ্বীনদের সাথে সাদৃশ্য রাখা হারাম।
            তাই হাদীস শরীফে লম্বা টুপি নামক বুরনুসঅবৈধ হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট কোন বর্ণনা না থাকলেও, উল্লিখিত ব্যাপক অর্থবোধক হাদীস শরীফের ভিত্তিতে লম্বা টুপি নামক বুরনুসপরিধান করা নাজায়েয প্রমাণিত হয়। কিস্তি বা দোপাট্টা টুপির ব্যাপারটিও তদ্রুপ, কারণ কিস্তি টুপি হিন্দু মারওয়ারীদের খাছ  টুপি, যা ইতি পুর্বে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে।
(৮)
            কেউ কেউ বলে থাকে যে, কিস্তি বা লম্বা টুপি পরিধান করলে কখনোই বিধর্মীদের সাদৃশ্য বা অনুসরণ হয়না। কারণ কিস্তি টুপি মুসলমানদেরই টুপি। আর বিধর্মীদের শেয়ার হলো- ঐ কাজ, যা বিধর্মীরাই আবিস্কার করেছে বা পুর্ব থেকেই পালন করে আসছে। তাছাড়া হাদীস শরীফে যে সাদৃশ্যতার নিষেধ এসেছে, তাহলো- কোন জাতির বিশেষ চিহ্নকে গ্রহণ করার ব্যাপারে যার প্রচলন অন্য কোন জাতির মাঝে নেই। অথচ কিস্তি টুপির প্রচলন মুসলমানদের মাঝে রয়েছে। কাজেই কিস্তি টুপি কি করে বিধর্মীদের শেয়ার হতে পারে?
            তাদের উল্লিখিত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, কিস্তি টুপি কস্মিনকালেও মুসলমানদের টুপি নয়। কারণ কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের কোথাও কিস্তি টুপির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়না। আর কোন ইমাম-মুজতাহিদ বা অনুসরণীয় কোন বুযুর্গ কিস্তি টুপি আবিস্কার করেছেন বা পরিধান করেছেন বলে কোন প্রমাণ কেউই পেশ করতে পারবেনা।
            পক্ষান্তরে দলীল দ্বারা প্রমাণ করা সম্ভব যে, কিস্তি টুপির আবিস্কারক বা উৎপত্তিকারক হচ্ছে বিধর্মীরা অর্থাৎ হিন্দুরা। যেমন, এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে, বাদশা আকবরের সময় যখন হিন্দুরা তার দরবারে আসা-যাওয়া করতো, তখন তারা সাধারণতঃ ধুতি, পৈতা ইত্যাদি পরিধান করেই আসতো। বাদশা দেখলো এরূপ পোশাকহীন বা উলঙ্গ অবস্থায় বাদশাহ্র দরবারে প্রবেশ করা বাদশাহ্র শানের খেলাফ। তাই বাদশাহ্ তাদেরকে পোশাক পরিধান করে আসার নির্দেশ দেয় এবং মুসলমানদের খেলাফ পোশাক ব্যবহার করতে বলে। হিন্দুরা তখন কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী, ধুতি ও কিস্তি বা লম্বা টুপি পরিধান করতে লাগলো। মুসলমানরা যেহেতু গোল টুপি ব্যবহার করতো সেহেতু তারা কিস্তি বা লম্বা টুপিকে গ্রহণ করলো, আর কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করার কারণ দুটি- (১) মুসলমানদের কোর্তা গোল বিধায়, তারা কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করে, যেন মুসলমানদের সাথে মিল না হয়। (২) তারা যেহেতু ধুতি পরিধান করে, আর ধুতির লেজকে পাঞ্জাবীর পকেটে ঢুকিয়ে রাখে, তাই পাঞ্জাবীর কোনা যদি ফাড়া না হয়, তবে ধুতির লেজ পকেটে ঢুকানো হলে পাঞ্জাবী উঠে থাকে, তাই তারা কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করে।
            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, লম্বা বা কিস্তি টুপি ও কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী হিন্দুদেরই পোশাক এবং তারাই এর উৎপত্তিকারক।
            অপরদিকে কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ও লম্বা বা কিস্তি টুপি দেওবন্দ সিলসিলার লোকদের মধ্যে বিস্তার লাভ করার কারণ সম্পর্কে বলা হয় যে, দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাসেম নানুতুবী সাহেব একজন মজ্জুব হালের লোক ছিলেন। তার জীবনীতে উল্লেখ আছে যে, তিনি এক মাহ্ফিলে যাওয়ার পর মাহ্ফিল শেষে লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করলো- আপনার নাম কি? তিনি বললেন, খুরশিদ হাসান। জিজ্ঞাসা করা হলো- আপনার বাড়ী কোথায়? তিনি বললেন, এলাহাবাদ। সকলে চলে যাওয়ার পর তার এক ছাত্র বললো- হুজুর! এটা কি মিথ্যা কথা হলো না? কারণ আপনার নাম কাসেম নানুতুবী অথচ আপনি বললেন, খুরশিদ হাসান। আর আপনার বাড়ী হলো- নানুতুবে। অথচ আপনি বললেন, এলাহাবাদ। তখন মাওলানা কাসেম নানুতুবী সাহেব বলেন, আমি সত্যই বলেছি। কারণ আবযাদ অক্ষর অনুযায়ী আমার নাম খুরশিদ হাসান। তাই আমি বলেছি আমার নাম খুরশিদ হাসান। আর এলাহাবাদ অর্থ হলো- আল্লাহ্র আবাদ। দুনিয়ার প্রতিটি স্থানই মূলতঃ আল্লাহ্র আবাদ। তাই আমি বলেছি আমার বাড়ী এলাহাবাদ। এরূপ বলার কারণ হলো লোকে যেন আমাকে না চিনে। মূলতঃ তিনি নিজেকে গোপন রাখার জন্যই এরূপ করতেন। যার পেছনে  দুটো কারণ ছিল- প্রথমতঃ উনি মজ্জুব ছিলেন এবং নিজেকে চুপিয়ে রাখতে চাইতেন এবং দ্বিতীয়তঃ যেহেতু তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন সেহেতু বৃটিশরা যাতে তাকে সনাক্ত করতে না পারে।
            ঠিক এজন্য তিনি কিস্তি বা লম্বা টুপি ও কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী পরিধান করতেন। আর তখন থেকেই দেওবন্দ মাদ্রাসার ছাত্ররা তাকে অনুসরণ করে লম্বা টুপি ও কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী পরিধান করতে থাকে, যা এখনো পর্যন্ত তাদের মধ্যে জারী রয়েছে।  
            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কিস্তি বা লম্বা টুপি বিধর্মীদেরই খাছ টুপি, যা তারাই নিজেদের শেয়ার বা চিহ্ন বিশেষ হিসেবে সর্বপ্রথম পরিধান করে। পরবর্তীতে কতিপয় দেওবন্দী আলেমের কারনে তা সাধারণ মুসলমানদের মধ্যেও বিস্তৃতি লাভ করে। তথাপিও লম্বা টুপিকে কাফেরদের খাছ শেয়ার বলেই সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন- হাশিয়ায়ে শায়খ যাদাহ্র- ১ম জিঃ ১০৮ পৃষ্ঠায় লম্বা টুপি সম্পর্কে আলোচনা করার পর বলা হয়েছে যে,
وهى الان من شعار اهل الكفر مختصة بهم.
অর্থঃ-“(লম্বা টুপি) বর্তমানে কাফেরদের খাছ শেয়ার বা আলামত।
            আর এ প্রসঙ্গে বাহ্রুল উলুম, ফখরুল ফুক্বাহা, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, হাফিজুল হাদীস, মুফতিয়্যুল আযম, শায়খুল মিল্লাতে ওয়াদ্দীন, মুবাহিছুল আযম, হযরতুল আল্লামা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীরহাটি (রঃ) কর্তৃক প্রণীত- বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য দলীল সমৃদ্ধ ফতওয়ার কিতাব ফতওয়ায়ে আমীনিয়াতেউল্লেখ করেন, “কিস্তি (লম্বা) টুপি খাছ মারওয়ারিদের (হিন্দুদের) ব্যবহৃহ টুপি  ..........।
            উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কিস্তি বা লম্বা টুপি বিধর্মীরাই আবিস্কার করেছে এবং তা তারা প্রথম থেকেই পরিধান করে আসছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে কি করে বলা যেতে পারে যে, কিস্তি টুপি মুসলমানদের টুপি? মূলতঃ কিস্তি টুপি পরিধান করলে বিধর্মীদের সাদৃশ্য ও অনুসরণ করা হবে নিঃসন্দেহে। কারণ কিস্তি টুপি বিধর্মীদের খাছ টুপি। আর হাদীস শরীফ বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রাখতে অর্থাৎ তাদের কোন খাছ বিষয়কে অনুসরণ-অনুকরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রাখবে তার হাশর-নশর তার সাথেই হবে। এ প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়, যা এক্ষেত্রে অত্যন্ত নছীহতপূর্ণ। ঘটনাটি এই- হিন্দুস্থানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ্ পাক-এর ওলী ছিলেন। যিনি ইন্তেকালের পর অন্য একজন বুযুর্গ ব্যক্তি স্বপে¦ তাকে দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহ্ পাক-এর ওলী, আপনি কেমন আছেন?” তখন সেই আল্লাহ্ পাক-এর ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাতত আমি ভালই আছি  কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমার ইন্তেকালের পর আমাকে ফেরেশ্তারা সরাসরি আল্লাহ্ পাক-এর সম্মুখে পেশ করেন। আল্লাহ্ পাক ফেরেশতাদের বলেন, “হে ফেরেশ্তাগণ তোমরা কেন তাকে এখানে নিয়ে এসেছ”? ফেরেশ্তাগণ বলেন, হে আল্লাহ্ পাক আমরা তাকে খাস বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য নিয়ে এসেছি। এটা শ্রবণ করে আল্লাহ্ পাক বললেন, “তাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেননা সে পূঁজা করেছে। এটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগল। তখন আমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট আরজু পেশ করলাম, “হে আল্লাহ্ পাক আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সব সময় আপনার এবং হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি এবং কখনো পুঁজা করিনি আর মন্দিরেও যাইনি।তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, “তুমি সেই দিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূঁজা হচ্ছিল। তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে সমস্ত গাছ-পালা, তরুলতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ সবকিছুকে রঙ দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ যাচ্ছিল, যাকে রঙ দেয়া হয়নি। তখন তুমি পান  চিবাচ্ছিলে, তুমি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলে- হে গর্দভ তোমাকে তো কেউ রঙ দেয়নি, এই হোলি পূঁজার দিনে আমি তোমাকে রঙ দিয়ে দিলাম। এটা কি তোমার পূঁজা করা হয়নি?” তুমি কি জাননা-
من تشبه تقوم فهو منهم.
           
অর্থঃ- যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভূক্ত এবং তার হাশর॥নশর তাদের সাথে হবে।সুতরাং তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে।
            যখন আল্লাহ্ পাক এই কথা বললেন, তখন আমি লা জওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে বললাম, “হে আল্লাহ্ পাক আমি এটা বুঝতে পারিনি।কিছুক্ষণ পর আল্লাহ্ পাক বললেন, “হ্যাঁ তোমাকে অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করা হয়েছে।
            দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, যারা বলে বিধর্মীদের কোন খাছ আমল বা শেয়ার অন্য কোন  জাতি বা মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত থাকলেই তা বিধর্মীদের শেয়ার নয়, বা তা মুসলমানদের জন্য আমল করা জায়েয। তাদের এ কথা সম্পূর্ণই জেহালতপূর্ণ ও শরীয়ত বিরোধী। কারণ বিধর্মীদের এমন অনেক শেয়ার বা খাছ আমল রয়েছে, যা অন্য জাতি বা মুসলমানদের মাঝেও প্রচলিত রয়েছে। যেমন- দাড়ী মুন্ডন করা অথচ ইমাম- মুজতাহিদগণ বিধর্মীদের মাঝে দাড়ী মুন্ডনের প্রচলন থাকা সত্ত্বেও দাড়ী মুন্ডন করাকে বিধর্মীদের শেয়ার বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন-আবূ দাউদ শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ বযলূল মাজ্হুদ-১ম জিঃ ৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وقص اللحية من سنن الاعاجم وهو اليوم شعار كشير من المشر كين والافرنج والهنود ومن لا خلاق له فيى الدين.
অর্থঃ- দাড়ী কাটা আজমী (মুজসীদের) নীতি, আর তা বর্তমানে মোশরেক, ফিরিঙ্গি হিন্দু ও দ্বীনের সাথে সম্পর্কহীন অধিকাংশ বাতীল ফেরকার শেয়ার।
            এখন কথা হলো-মুসলমানদের মাঝে বিধর্মীদের খাছ শেয়ার দাড়ী মুন্ডনের আমল প্রচলিত আছে বলে কি দাড়ী মুন্ডন করাকে বিধর্মীদের শেয়ার বলা যাবেনা? যদি দাড়ী মুন্ডনের আমল মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত থাকার পরও তাকে বিধর্মীদের শেয়ার বলে আখ্যায়িত করা যায়, তবে কিস্তি টুপির আমল মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত থাকা সত্ত্বেও তাকে বিধর্মীদের শেয়ার বলে আখ্যায়িত করা যাবেনা কেন?
            মূলকথা হলো- বিধর্মীদের কোন শিয়ার বা খাছ আমল, তা অন্য কোন জাতি বা মুসলামানদের মাঝে প্রচলিত থাকুক বা না থাকুক তা মূলতঃ বিধর্মীদের শেয়ার বলেই সাব্যস্ত হবে। অতএব, কিস্তি টুপি মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত থাকলেও তা মূলতঃ বিধর্মীদেরই শিয়ার বা খাছ পোশাক। কাজেই বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ হওয়ার ক্ষেত্রে কিস্তি টুপি পরিধান করা নাজায়েয। কারণ হাদীস শরীফে সাদৃশ্যতার ব্যাপারে যে নিষেধ এসেছে, তা এ ধরণের আমলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।