“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র
মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ
করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-
পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ
পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব
চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত
ও পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত
পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয
পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র
তাফসীর শরীফ উনাদের মধ্যে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শাখছী’ অর্থাৎ নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ উনার অনুসরণ করা জরুরী
সম্পর্কিত
দলীল-আদিল্লাহ
পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ১০
يَوْمَ نَدْعُوا كُلَّ
أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ فَمَنْ أُوتِيَ كِتَابَه بِيَمِيْنِه فَأُولئِكَ يَقْرَءُوْنَ
كِتَابَهُمْ وَلَا يُظْلَمُوْنَ فَتِيْلًا.
অর্থ: সেদিন আমি প্রত্যেককে
তাদের ইমামসহ (যাকে তারা অনুসরণ করতো তাদেরকেসহ) ডাকবো। অত:পর যাঁদেরকে ডান হাতে
তাঁদের আমলনামা দেয়া হবে, তাঁরা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে। আর তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও অবিচার করা
হবে না। (পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭১)
অত্র পবিত্র আয়াত উনার
বিশুদ্ধ
তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
(৮৮২)
وقيل: بمذاهبهم، فيدعون
بمن كانوا يأتمون به فى الدنيا: يا حنفى يا شافعى يا معتزلى يا قدرى ونحوه، فيتبعونه
في خير او شر او على حق او باطل، وهذا معنى قوله ابى عبيدة رحمة الله عليه.
অর্থ: কেউ কেউ বলেন: তাদের
মাযহাবের নামে ডাকা হবে। দুনিয়ায় তারা যে মাযহাবের অনুসারী ছিল সেই নামে ডাকা হবে।
যেমন: হে হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ! হে শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারীগণ! হে মু’তাযিলাহ
বাত্বিল ফিরক্বার অনুসারীরা! হে ক্বদরিয়া বাত্বিল ফিরক্বার অনুসারীরা! অনুরূপভাবে।
তারা যাকে ভাল ব্যাপারে অনুসরণ করেছে অথবা মন্দ ব্যাপারে অনুসরণ করেছে অথবা হক্ব
মাযহাবকে অনুসরণ করেছে অথবা বাত্বিল মাযহাবকে অনুসরণ করেছে সে সংশ্লিষ্টতার সাথে
তাদেরকে ডাকা হবে। এ ব্যাখ্যা হযরত আবূ উবাইদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার।
(আল-জামিউ লিআহকামিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল কুরতুবী পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল
শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭১ লেখক: হযরত আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন
আবূ বকর বিন ফারাহ আনছারী খযরাযী শামসুদ্দীন কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত:
৬৭১ হিজরী)
অত্র ইবারত থেকে স্পষ্টই
প্রমাণিত হচ্ছে যে, হক্বপন্থীদের ইমাম নির্দিষ্ট। তেমনি বাতিল ৭২ ফিরক্বার ইমামরাও নির্দিষ্ট।
অতএব নির্দিষ্ট হক্বপন্থী ইমাম উনাদেরকে অনুসরণ করা ফরয।
(৫৫৬-৫৫৭)
{بامامهم} اى بمن ائتموا به من نبى
عليه السلام فيقال يا امة موسى عليه السلام ويا امة عيسى عليه السلام ونحو ذلك او مقدم
فى الدين فيقال يا حنفى ويا شافعى ونحوهما او كتاب فيقال يا اهل القران ويا اهل الانجيل
وغيرهما او دين فيقال يا مسلم ويا يهودى ويا نصرانى ويا مجوسى وغير ذلك. وفى التأويلات
النجمية يشير الى ما يتبعه كل قوم وهو امامهم.
অর্থ: (ইমামকে সহ ডাকা হবে)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি যে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার উম্মত তাকে
সেই নামে ডাকা হবে। যেমন: বলা হবে- হে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার
উম্মত, হে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উম্মত এবং অনুরূপভাবে
অন্যান্যদেরকেও ডাকা হবে। অথবা দ্বীন ইসলাম পালনের ব্যাপারে যাঁদের অনুগামী উনাদের
নামে ডাকা হবে। যেমন: বলা হবে- হে হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ! হে শাফিয়ী মাযহাবের
অনুসারীগণ! এবং অনুরূপ অন্যান্যদেরকে ডাকা হবে। অথবা কিতাবের নামে ডাকা হবে। যেমন:
বলা হবে- হে পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার অনুসারীগণ! হে পবিত্র ইনজীল শরীফ উনার
অনুসারীগণ! এবং অনুরূপভাবে অন্যান্যদেরকে ডাকা হবে। অথবা দীন বা ধর্মের নামে ডাকা
হবে। যেমন: বলা হবে- হে সম্মানিত মুসলিমগণ! হে ইয়াহূদীরা! হে নাছারা বা
খ্রীস্টানরা! হে মাজূসী বা অগ্নী উপাসকরা! এবং অনুরূপভাবে অন্যান্যদেরকে ডাকা হবে।
‘তা’বীলাতুন্ নাজমিয়াহ’ কিতাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কোন সম্প্রদায় যে ব্যক্তিকে
নেতৃস্থানীয় মনে করে তাকেই ইমাম বলা হয়। আর সেই ইমামের নামসহ ক্বিয়ামতের দিন তার
অনুসারীদেরকে ডাকা হবে। (রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল হাক্কী
পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭১ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী
বিন মুছতফা ইস্তাম্বূলী হানাফী খালওয়াতী বারূসাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত:
১১২৭ হিজরী)
অত্র ইবারত থেকেও স্পষ্টই
প্রমাণিত হচ্ছে যে, হক্বপন্থীদের ইমাম নির্দিষ্ট। তেমনি বাতিল ৭২ ফিরক্বার ইমামরাও নির্দিষ্ট।
অতএব নির্দিষ্ট হক্বপন্থী ইমাম উনাদেরকে অনুসরণ করা ফরয। হক্বপন্থী ইমাম উনারা
হলেন- হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের ১২ ইমাম আলাইহিমুস সালাম, ইল্মুল ক্বিরায়াত উনার প্রতিষ্ঠাতা মূল সাত ক্বারী, মাযহাব চতুষ্ঠয়ের ইমাম, আক্বায়িদ উনার ইমামদ্বয়, চার ত্বরীক্বা উনাদের ইমাম এবং
প্রত্যেক হিজরী শতকের মূল মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। তাই নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ
উনাদেরকে অনুসরণ করা ওয়াজিব বা জরুরী সাব্যস্ত হয়। লক্ষনীয় যে, আমাদের হানাফী মাযহাব উনার মূল ক্বারী হলেন হযরত ইমাম আছিম কূফী রহমতুল্লাহি
আলাইহি, ফিক্হ বিষয়ক মূল ইমাম হলেন আল-ইমামুল আ’যম নূ’মান বিন ছাবিত আবূ হানীফাহ
রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হানাফী মাযহাব উনার আক্বায়িদ বিষয়ক ইমাম হলেন হযরত ইমাম
আবূ মানছূর মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ১১
قُلْ كُلٌّ يَّعْمَلُ
عَلٰى شَاكِلَتِه فَرَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَنْ هُوَ اَهْدٰى سَبِيْلًا.
অর্থ: (হে হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, প্রত্যেকেই (হযরত ছহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু আন্হুম) স্বীয় ইজতিহাদ-ফিক্র আদত অনুযায়ী আমল করেন। তবে, আপনাদের রব মহান আল্লাহ তায়ালা তিনিই ভালো জানেন যে, কে হক্ব পথে আর কে অধিক হক্ব পথে রয়েছেন। (পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ:
পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৪)
অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ
তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
(৫৫৮)
قال تعالى: قُلْ كُلٌّ
يَّعْمَلُ عَلٰى شاكِلَتِه قال الزجاج رحمة الله عليه: الشاكلة الطريقة والمذهب.
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা
উনার ক্বওল মুবারক: ‘আপনি বলুন, প্রত্যেকেই স্বীয় ইজতিহাদ-ফিক্র
আদত অনুযায়ী আমল করেন’ হযরত যুজাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এখানে শাকিলাহ অর্থ ত্বরীক্বাহ তথা নিয়ম-নীতি ও সম্মানিত মাযহাব। (মাফাতীহুল
গইব অর্থাৎ আত-তাফসীরুল কবীর অর্থাৎ তাফসীরুর রাযী পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল
শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৪ লেখক: আল-ইমামুল আলিমুল আল্লামা, আল-হিবরুল বাহরুল ফাহ্হামাহ ফখরুদ্দীন
মুহাম্মাদ বিন উমর তামীমী রাযী শাফিয়ী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত:
৬০৬ হিজরী)
(৫৫৯)
{قُلْ كُلٌّ} اى كل احد {يَعْمَلُ
على شَاكِلَتِه} على مذهبه وطريقته التي تشاكل حاله في الهدى والضلال {فَرَبُّكُمْ
اَعْلَمُ بِمَنْ هُوَ اهدى سَبِيلًا} اسد مذهبًا وطريقةً.
অর্থ: (আপনি বলুন, প্রত্যেকেই) প্রত্যেকেই (স্বীয় ইজতিহাদ-ফিক্র আদত অনুযায়ী আমল করেন।) সম্মানিত
মাযহাব ও ত্বরীক্বা তথা নিয়ম-পদ্ধতি অনুযায়ী চলে। সেই পদ্ধতি হিদায়াতের পথে হোক
অথবা গোমরাহীর পথে হোক। (তবে, আপনাদের রব মহান আল্লাহ তায়ালা
তিনিই ভালো জানেন যে, কে হক্ব পথে আর কে অধিক হক্ব পথে রয়েছেন।) অর্থাৎ সঠিক মাযহাব ও ত্বরীক্বায়
আছেন। (মাদারিকুত্ তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত্ তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন নাসাফী পবিত্র
পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৪ লেখক: হযরত আবুল বারাকাত
আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী)
(৫৬০-৫৬১)
قال فى القاموس الشاكلة
الشكل والناحية والنية والطريقة والمذهب.
অর্থ: ‘ক্বামূস’
গ্রন্থকারের ভাষায় শাকিলাহ অর্থ: দৃষ্টিকোন, নিয়্যাত, ত্বরীক্বাহ বা নিয়ম-পদ্ধতি ও সম্মানিত মাযহাব বা মুসলমান উনাদের চলার পথ।
(রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল হাক্কী পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল
শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৪ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছতফা ইস্তাম্বূলী
হানাফী খালওয়াতী বারূসাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)¬
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং
উনার তাফসীর থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, প্রত্যেকেই তার শাকিলাহ, ত্বরীক্বাহ, পদ্ধতি, নিয়ম-নীতি ও সম্মানিত মাযহাব অনুযায়ী চলে। অর্থাৎ এখানে সঠিক মাযহাব অনুযায়ী
চলার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ১২
وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَابِّ وَالْأَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُه
كَذلِكَ إِنَّمَا يَخْشَى الله مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ إِنَّ الله عَزِيزٌ
غَفُورٌ.
অর্থ: অনুরূপভাবে বিভিন্ন
বর্ণের মানুষ, সৃষ্টিজীব ও চতুষ্পদ প্রাণী রয়েছে। তবে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার
বান্দাদের মধ্যে আলিম উনারাই মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করেন। নিশ্চয়ই মহান
আল্লাহ তায়ালা তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। (পবিত্র সূরাতু ফাতির শরীফ: পবিত্র
আয়াত শরীফ নং ২৮)
অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ
তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
(৫৮৮)
{انَّما يخشى اللهَ مِنْ عِباده
العُلَماءُ} يعنى العلماء بالله عزَّ وجل. قال ابن عباس رضى الله عنهما: يريد انَّما
يخافُنى مِنْ خَلْقى مَنْ عَلِم جبروتى وعِزَّتى وسلطانى. وقال مجاهد رحمة الله عليه
والشعبى رحمة الله عليه: العالِم من خاف اللهَ. وقال الربيع بن انس رحمة الله عليه:
من لم يَخْش الله فليس بعالِم.
অর্থ: (নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ
তায়ালা উনার বান্দাদের মধ্যে আলিম উনারাই মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করে) অর্থাৎ
মহান আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা উনার সন্তুষ্টির জন্য যাঁরা আলিম হন। হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা তিনি বলেন: আয়াত শরীফ উনার দ্বারা
উদ্দেশ্য হচ্ছে: যে বা যাঁরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রভাব-প্রতিপত্তি, সম্মান-ইজ্জত ও মালিকানা সম্পর্কে জ্ঞানী তাঁরাই উনার সৃষ্টির মধ্যে উনাকে ভয়
করেন। হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত শা’বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা
বলেন: আলিম ঐ ব্যক্তি যিনি মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করেন। হযরত বরী’ বিন আনাস
রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করে না সে
আলিম হিসেবে বিবেচিত নয়। (যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর অর্থাৎ তাফসীরুল জাওযী
পবিত্র সূরাতু ফাতির শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৮ লেখক: হযরত জামালুদ্দীন আব্দুর
রহমান বিন আলী বিন মুহাম্মাদ জাওযী হাম্বালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৯৭
হিজরী, তাফসীরুল কুরতুবী, তাফসীরুত ত্ববারানী, তাফসীরু ইবনি আতিয়্যাহ)
(৫৮৯)
قال سفيان الثورى رحمة
الله عليه عن ابى حيان التميمى رحمة الله عليه عن رجل قال: كان يقال: العلماء ثلاثة:
عالم بالله وعالم بامر الله، وعالم بالله ليس بعالم بامر الله، وعالم بامر الله ليس
بعالم بالله. فالعالم بالله وبامر الله: الذى يخشى الله ويعلم الحدود والفرائض، والعالم
بالله ليس بعالم بامر الله: الذى يخشى الله ولا يعلم الحدود ولا الفرائض، والعالم بامر
الله ليس بعالم بالله: الذى يعلم الحدود والفرائض ولا يخشى الله عز وجل.
অর্থ: হযরত সুফইয়ান ছাওরী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবূ হাইয়ান তামীমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি একজন বর্ণনাকারী থেকে বর্ণনা করে বলেন, তিনি বলেছেন: হযরত উলামা কিরাম
তিন শ্রেণীর: ১. মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মা’রিফত সম্পর্কে জ্ঞানী এবং মহান আল্লাহ
তায়ালা উনার প্রদত্ত বিধান সম্পর্কেও জ্ঞানী ২. মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মা’রিফত
সম্পর্কে জ্ঞানী, কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রদত্ত বিধান সম্পর্কে জ্ঞানী নয় ৩. মহান
আল্লাহ তায়ালা উনার প্রদত্ত বিধান সম্পর্কে জ্ঞানী, কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা উনার
মা’রিফত সম্পর্কে জ্ঞানী নয়। ১. মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মা’রিফত সম্পর্কে জ্ঞানী
এবং মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রদত্ত বিধান সম্পর্কেও জ্ঞানী ঐ আলিম যিনি মহান
আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করেন, হদ্দ বা দন্ডবিধি ও যাবতীয়
ফরয-ওয়াজিব সম্পর্কে পারদর্শী। ২. মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মা’রিফত সম্পর্কে
জ্ঞানী, কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রদত্ত বিধান সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ঐ আলিম যিনি
মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করেন, কিন্তু তিনি হদ্দ বা দন্ডবিধি ও
যাবতীয় ফরয-ওয়াজিব সম্পর্কে পারদর্শী নন। ৩. মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রদত্ত
বিধান সম্পর্কে জ্ঞানী, কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মা’রিফত সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ঐ আলিম যিনি হদ্দ বা
দন্ডবিধি ও যাবতীয় ফরয-ওয়াজিব সম্পর্কে জ্ঞানী, কিন্তু তিনি মহান আল্লাহ আয্যা
ওয়া জাল্লা উনাকে ভয় করেন না। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম অর্থাৎ তাফসীরু ইবনি কাছীর
পবিত্র সূরাতু ফাতির শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৮ লেখক: হযরত জামালুদ্দীন আব্দুর
রহমান বিন আলী বিন মুহাম্মাদ জাওযী হাম্বালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৯৭
হিজরী লেখক: আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন উমর বিন কাছীর কুরাশী দামিশক্বী শাফিয়ী আশয়ারী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৭০০ হিজরী ওয়াফাত: ৭৭৪ হিজরী)
অত্র আয়াত শরীফ এবং উনার
তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে, হক্কানী-রব্বানী আউলিয়া কিরাম
রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারাই হচ্ছেন মূলত: উলামা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম।
উনারাই মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে হাক্বীক্বী ভাবে ভয় করেন। আর এমন ব্যক্তিত্ব
উনাদেরকেই ইত্তিবা বা অনুসরণ-অনুকরণ করতে মহান আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য আয়াত শরীফ
উনাদের মধ্যে নির্দেশ মুবারক করেছেন। যা পূর্বে অনেক আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে
আলোচনা করা হয়েছে। হাক্বীক্বতান ইমাম-মুজতাহিদ উনারাই এই ছিফাত বা বৈশিষ্ট্য
উনাদের অধিকারী। উনাদের ইত্তিবাকেই মাযহাব উনার তাক্বলীদ বা অনুসরণ করা বলা হয়ে
থাকে।
পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ১৩
فَاعْتَبِرُوا يَا اولِى
الْابْصَارِ.
অর্থ: অতএব, হে চক্ষুস্মান (জ্ঞানী) ব্যক্তিগণ আপনারা গবেষণা (ইজতিহাদ, ক্বিয়াস) করুন। (পবিত্র সূরাতুল্ হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২)
অত্র পবিত্র আয়াত উনার
বিশুদ্ধ
তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
وقد استدل بالاية على
حجية القياس.
অর্থ: অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ
দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র ক্বিয়াস শরীয়াত উনার দলীল। (রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ
তাফসীরুল হাক্কী পবিত্র সূরাতুল্ হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২ লেখক: হযরত
ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছতফা ইস্তাম্বূলী হানাফী খালওয়াতী বারূসাবী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী, ইরশাদুল আক্বলিস সালীম ইলা
মাযাইয়াল কিতাবিল কারীম অর্থাৎ তাফসীরু আবিস সাঊদ, মাফাতীহুল গইব অর্থাৎ তাফসীরুল
কবীর অর্থাৎ তাফসীরুর রাযী)
وهذا دليل على جواز القياس.
অর্থ: অত্র পবিত্র আয়াত
শরীফ ক্বিয়াস বা ইজতিহাদ করা জায়িয হওয়ার সপক্ষে দলীল বা প্রমাণ। (মাদারিকুত
তানযীর ওয়া হাক্বায়িকুত তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন নাসাফী পবিত্র সূরাতুল্ হাশর শরীফ:
পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২ লেখক: হযরত আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ
নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী)
واشتهر الاستدلال بالاية
على مشروعية العمل بالقياس الشرعى.
অর্থ: অত্র পবিত্র আয়াত
শরীফ দ্বারা প্রসিদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ক্বিয়াসুশ শারয়ী উনার উপর আমল
করা শরীয়াত উনার আদেশ। (রূহুল মায়ানী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবইল মাছানী
অর্থাৎ তাফসীরুল আলূসী পবিত্র সূরাতুল্ হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২ লেখক:
হযরত শিহাবুদ্দীন আবুছ ছানা সাইয়্যিদ মাহমূদ বিন আব্দুল্লাহ আলূসী বাগদাদী শাফিয়ী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২৭০ হিজরী)
استدل الذين اثبوا القياس
فى الفقه بهذه الاية.
অর্থ: অত্র পবিত্র আয়াত
শরীফ দ্বারা ফিক্হ শাস্ত্রে পবিত্র ক্বিয়াস উনাকে দলীল হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
(আত-তাসহীল লিউলূমিত তানযীল অর্থাৎ তাফসীরু ইবনি জুযী পবিত্র সূরাতুল্ হাশর শরীফ:
পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন জুযী
কালবী গরনাত্বী মালিকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৬৯৩ হিজরী ওয়াফাত: ৭৪১ হিজরী)
উক্ত চার খানা ইবারত থেকে
জানা যায় যে, ছহীহ ক্বিয়াস উনার উপর আমল করা জরুরী। সকল আলিম ইজতিহাদ বা ক্বিয়াস করার
ক্ষমতা রাখেন না। বরং ক্বিয়াস বা ইজতিহাদ
করার ক্ষমতা যাঁরা রাখেন উনারা নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ হয়ে থাকেন। মাযহাব
চতুষ্ঠয়ের মধ্যেই ছহীহ ক্বিয়াসকে শরীয়তের দলীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া
লা-মাযহাবী ও সালাফীরা ক্বিয়াসকে অস্বীকার করে থাকে। তাই ছহীহ ক্বিয়াসের উপর আমল
করার অর্থই হলো মাযহাব চতুষ্ঠয়কে মেনে নেয়া এবং তার অনুসরণ করা।
আর ছহীহ ক্বিয়াস বা ইজতিহাদ
উনার যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব উনারা হলেন- হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম
উনাদের ১২ ইমাম আলাইহিমুস সালাম, ইল্মুল ক্বিরায়াত উনার
প্রতিষ্ঠাতা মূল সাত ক্বারী, মাযহাব চতুষ্ঠয়ের ইমাম, আক্বায়িদ উনার ইমামদ্বয়, চার ত্বরীক্বা উনাদের ইমাম এবং প্রত্যেক হিজরী শতকের মূল মুজাদ্দিদ
রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। তাই নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করা
ফরয-ওয়াজিব হিসেবে ফাতাওয়া দেয়া হয়েছে। লক্ষনীয় যে, আমাদের হানাফী মাযহাব উনার মূল
ক্বারী হলেন তাবিয়ী হযরত ইমাম আছিম কূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ফিক্হ বিষয়ক মূল ইমাম হলেন তাবিয়ী আল-ইমামুল আ’যম নূ’মান বিন ছাবিত আবূ
হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হানাফী মাযহাব উনার আক্বায়িদ বিষয়ক ইমাম হলেন হযরত
ইমাম আবূ মানছূর মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
উল্লেখিত ১৩ খানা পবিত্র
আয়াত শরীফ উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হল যে, ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শাখছী বা
নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ উনাকে অনুসরণ করা’ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও উনার হাবীব
নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশ
মুবারক। শরীয়তের দৃষ্টিতে যার হুকুম হচ্ছে ফরযে আইন। তাই যারা নির্দিষ্ট
ইমাম-মুজতাহিদ তথা ক্বিরায়াত, আক্বায়িদ, ফিক্হ ও ক্বাদ্বা ইত্যাদী বিষয়ে নির্দিষ্ট মাযহাব উনাদের ইমাম উনাদেরকে মেনে
নিবে না তারা ইজমাউল উম্মাহকে অস্বীকার করার কারণে কাফির হয়ে যাবে। যেহেতু পবিত্র
কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অস্বীকার করার মতোই পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ
ও ছহীহ ক্বিয়াসকে অস্বীকার করাও কুফরী।