গবেষণা কেন্দ্র
মুহম্মদীয়া জামিয়া
শরীফ
[সমস্ত প্রশংসা
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র,
“মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে,
বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী,
বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া,
অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা,
ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামাজ ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া,
কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ
ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর
নামাজে বা অন্যান্য সময় কোরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামাজ বিশ রাকায়াত ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া ও দোয়াল্লাীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফত্ওয়া
প্রকাশ করার পর ১৭তম ফতওয়া হিসেবে “খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ্
পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]
মাসিক আল বাইয়্যিনাতে
টুপি সম্পর্কে পুণরায় ফতওয়া দেয়ার কারণ
(বাতিলের আতঙ্ক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী,
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতের
১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যায় টুপি সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক ফতওয়া প্রদান
করা হয়েছিল। যাতে প্রায় ৫০টিরও অধিক নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে খাছ সুন্নতী টুপির
বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছিল।
টুপির উক্ত ফতওয়াটি সত্বান্বেষী ও সুন্নতের আশেক্ব মুসলমানগণের নিকট এতই সমাদৃত
ও গ্রহণযোগ্য হয় যে, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই টুপির ফতওয়া
সম্বলিত কপিখানার মজুদ সংখ্যাগুলিও ফুরিয়ে যায়। যার ফলে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগণিত
পাঠক, টুপি সম্পর্কিত মুল্যবান ফতওয়াটি সংগ্রহে রাখতে ব্যর্থ
হয়। তাই তারা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অন্যতম বিভাগ- “ফতওয়া বিভাগে” টুপি সম্পর্কিত ফতওয়াটি পুণরায়
প্রকাশ করার জন্য পুনঃ পুনঃ আবেদন জানায়।
এতদ্বপ্রেক্ষিতে অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগনিত পাঠকের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের
প্রেক্ষিতে এবং হক্ব তালাশী ও সুন্নতের আশেক্ব, মুসলমানগণের ঈমান ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে সর্বপোরি মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিলের উদ্যেশ্যে টুপি সম্পর্কিত ফতওয়াটি কিছুটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন
ও সংশোধনের মাধ্যমে এবং আরো অধিক দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রকাশ করা হলো। কেননা মহান
আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফেএরশাদ করেন,
فاسئلوا
اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- “যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের
নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ
তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে
নাও।
অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা।
কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে,
তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
من سئل
عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থঃ- “যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়, জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন
করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের
বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ,
উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।”
কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে
“মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার” অগণিত পাঠক, গ্রাহক ও হক্ব তালাশী বা সত্যান্বেষী
সমঝদার মুসলমানগণের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে “খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে” শরীয়তসম্মত তথা কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে ফতওয়া দেয়া হলো।
এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে
কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের
আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ
নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র
আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
من احب
لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে,
বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী,
তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন,
মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্র্কে” সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ
হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে
তোলা। যেন প্রত্যেকেই খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কে
অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ
করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
المؤمن
مرأة المؤمن.
অর্থঃ- “এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে
আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে
সমবেত আনছার এবং মোহাজির (রাঃ)গণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান
করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ) দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার
একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ (রাঃ) বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো,
যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।” এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব
(রাঃ) বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু,
দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মা’আরেফ)
অতএব, খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে
রয়েছে, তাদের সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীস
শরীফের মেছদাক হওয়াই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে টুপি সম্পর্কিত ফতওয়া পুণরায় প্রকাশ করার
মূল কারণ।)
(পূর্ব প্রকাশিতের
পর) টুপির ফতওয়া সম্পর্কিত কতিপয় বিষয়ের সংশয় নিরসন (১)
কেউ কেউ বলে
থাকে যে, গোল টুপি সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে হযরত আবূ কাব্শা (রাঃ)
হতে তিরমিযী শরীফের একমাত্র যে হাদীস শরীফখানা দলীল হিসেবে পেশ করা হয়, তা দলীল হিসেবে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ইমাম তিরমিযী (রঃ) উক্ত হাদীসের শেষে
বলেছেন, هذا حديث منكر অর্থাৎ এ হাদীসখানা “মুনকার।” তাছাড়া উক্ত হাদীস শরীফের শেষে উল্লেখ করা হয়েছে-
بطح يعنى
واسعة.
অর্থাৎ বুত্হুন
শব্দের অর্থ হচ্ছে- প্রশস্ত। যদ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপি গোল ছিলনা! তাদের উক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, হযরত আবু কাব্শা (রাঃ) হতে বর্ণিত উক্ত হাদীস শরীফ খানাই গোল টুপির এক মাত্র দলীল
নয়। এছাড়াও আরো হাদীস শরীফে গোল টুপির বর্ণনা রয়েছে। যেমন হাদীস শরীফে রয়েছে হযরত আয়েশা
(রাঃ) বর্ণনা করেন,
كانت له
كمة بيضاء.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর টুপি মোবারক ছিল গোল-সাদা।”
(আদ্দিমিয়াতী, মাওয়াহেব, শরহে মাওয়াহেব) আর হাদীস শরীফের
কিতাব নেহায়া ইব্নুল আছীর ৪র্থ জিঃ ২০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
كانت
كمام اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم بطحا وفى رواية (اكمة) هما جمع كثرة وقلة
للكمة- القلنسوة، يعنى انها كانت منبطحة غير منتصبة.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবী (রাঃ)গণের টুপি গোল ছিল,
মাথার সাথে মিলিত থাকতো। অন্য বর্ণনায় (اكمة) শব্দ উল্লেখ আছে। উক্ত শব্দ দু’টি (كمة)-এর জমা
কাছরত ও জমা কিল্লত। যার অর্থ হচ্ছে- টুপি। অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপি
মাথার সাথে লেগে থাকতো, উঁচু হয়ে থাকতোনা। অনূরূপ শাব্দিক
কিছু পার্থক্য সহ “নেহায়া ইব্নুল আছীরের ১ম জিঃ ১৩৫
পৃষ্ঠায়ও উল্লেখ আছে।” এছাড়াও গোল টুপির বহু প্রমাণ হাদীস শরীফ ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় কিতাব
সমুহে রয়েছে। কাজেই প্রমাণিত হলো যে, হযরত আবু কাব্শা
(রাঃ) হতে বর্ণিত- তিরমিযী শরীফের উক্ত হাদীস শরীফ খানাই গোল টুপির একমাত্র দলীল নয়,
বরং এছাড়াও বহু দলীল রয়েছে। দ্বিতীয়তঃ
বলতে হয় যে, ইমাম তিরমিযী (রঃ) উক্ত হাদীস শরীফকে মুনকার বা জঈফ বলেছেন
সত্য কথাই, তবে অবশ্যই তা রাবীর দুর্বলতার কারণে। নচেৎ সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফ মুনকার বা জঈফ হওয়ার
প্রশ্নই উঠেনা যেমন, উক্ত হাদীস শরীফ সম্পর্কে কিতাবে
উল্লেখ আছে,
قال
الامام التر مذى هذا حديث منكر وعبد الله ابن يسر بصرى ضعيف عند اهل الحديث وضعفه
يحيى بن سعيد.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম তিরমিযী
(রঃ) বলেন, এ হাদীস শরীফ খানা মুন্কার আর আব্দুল্লাহ বিন ইয়াসার
বছরী (রঃ) মুহাদ্দিসগণের নিকট রাবী হিসেবে দুর্বল। হযরত ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ (রঃ) তাকে
বর্ণনা করার ক্ষেত্রে জঈফ বা দুর্বল বলেছেন।” অতএব প্রমাণিত হলো যে, ইমাম তিরমিযী (রঃ) রাবী হিসেবে জঈফ হওয়ার কারণেই উক্ত হাদীস শরীফকে জঈফ বলেছেন।
তাই বলে সকল মুহাদ্দিসগণের নিকটই এ হাদীস শরীফখানা জঈফ নয়। অর্থাৎ এ হাদীস শরীফখানা
জঈফ হওয়ার ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিসগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন বলে কোন প্রমাণ কেউ পেশ করতে
পারবেনা। কেননা হাদীস শরীফ সমূহের মধ্যে এরূপ
অনেক হাদীস শরীফ রয়েছে, যাকে কোন মুহাদ্দিস জঈফ বলেছেন,
আবার কোন মুহাদ্দিস সহীহ্, মারফূ ও মওকুফ ইত্যাদি বলেছেন।
তাছাড়া তিরমিযী শরীফে বর্ণিত উক্ত হাদীসকে
যদি জঈফও ধরে নেয়া হয়, তথাপিও উক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা
গোল টুপি সুন্নত বা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। কেননা আমাদের হানাফী মায্হাবের উছূল মোতাবেক
জঈফ হাদীস শরীফ দ্বারা সুন্নত বা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয় এবং ফযীলত লাভের উদ্দেশ্যে
জঈফ হাদীসের উপর আমল করা জায়েয। যেমন এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ফক্বীহ্ ইমাম ইব্নে হুমাম
(রঃ) তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব ফতহুল ক্বাদীরে উল্লেখ করেন,
الاستحباب
يثيت بالضعيف.
ৃঅর্থঃ-“জঈফ হাদীস শরীফ দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।” আর ইমামুল মুহাদ্দিসীন,
হযরত মুল্লা আলী ক্বারী (রঃ) তাঁর মওজুয়াতুল কবীর ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
الضعيف يعمل به فى
فضائل الاعمال اتفاقا. অর্থঃ- “সকলেই একমত যে, ফযীলত লাভের উদ্দেশ্যে জঈফ হাদীস শরীফের উপর আমল করা জায়েয।” আর তাই অনেক অনুসরণীয় ইমাম-মুজ্তাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরাম (রাঃ)গণকে ফযীলত লাভের উদ্দেশ্যে
জঈফ হাদীস শরীফের উপর আমল করতে দেখা যায়। যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে,
হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
عن ابى
الدرداء قال سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم فقيل يارسول الله ماحد العلم الذى
اذا بلغه الرجل كان فقيها؟
فقال
رسول الله صلى الله عليه وسلم- من حفظ على امتى اربعين حديثا فى امر دينها بعثه
اللله فقيها وكنت له يوم القيامة شافعا وشهيدا- رواه البيهقى فى شعب الايمان وقال
الامام الا حمد هذا متن مشهور بين الناس وليس له اسناد صحيح.
অর্থঃ- “হযরত আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
ইল্মের কোন স্তরে পৌঁছলে এক ব্যক্তি ফক্বীহ হতে পারে? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের জন্য তাদের দ্বীনের ব্যপারে ৪০টি হাদীস মুখস্থ করবে (এবং
তা অপরের নিকট পৌঁছিয়ে দিবে) ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ্ পাক তাকে ফক্বীহ হিসাবে উঠাবেন
এবং ক্বিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী ও সাক্ষিদাতা হবো।” ইমাম বায়হাক্বী (রঃ) তাঁর “শো’বুল ঈমানে” উক্ত হাদীস শরীফ
খানা বর্ণনা করেন এবং বলেন, ইমাম আহমদ (রঃ) বলেন, এ হাদীস শরীফখানা মানুষের মধ্যে মশহুর বা প্রসিদ্ধ তবে এ হাদীস শরীফের কোন সহীহ
সনদ নেই। স্মরণীয় যে, উক্ত হাদীস শরীফখানা জঈফ হওয়া সত্ত্বেও ইমাম নববী (রঃ), ইমাম গাজ্জালী (রঃ) ও ইমাম ইব্নে হাজর আসক্বালানী (রঃ) সহ আরো অসংখ্য বিখ্যাত ও
অনুসরণীয় ইমাম মুজ্তাহিদগণ উক্ত হাদীস শরীফের ফযীলত হাছিলের উদ্দেশ্যে “হাদীসে আরবাঈন” নামক কিতাব লিখেছেন। অতএব,
ফিকিরযোগ্য যে, ইমাম মুজ্তাহিদগণ জঈফ হাদীস শরীফের
উপর কতটুকু গুরুত্ব সহকারে আমল করতেন। শুধু তাই নয়, জঈফ হাদীস শরীফ যদি হাসান লি গায়রিহী হয়, তবে তা আহ্কামের ক্ষেত্রেও গ্রহণযোগ্য। যেমন উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে,
হাদীস শরীফে আছে-
عن انس قال قال رسول
الله صلى الله عليه وسلم- طلب العلم فريضة على كل مسلم ..... رواه ابن ماجه وروى
البيهقى فى شعب الايمان الى قوله مسلم وقال هذا حديث متنه مشهور واسناده ضعيف.
অর্থঃ- “হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ইল্ম অর্জন
করা ফরজ।” ইবনে মাযাহ ইহা বর্ণনা করেন এবং ইমাম বায়হাক্বী (রঃ)
তাঁর “শো’বুল ঈমানে” বর্ণনা করার পর বলেন, এ হাদীস শরীফের মতন মশহুর কিন্তু
সনদ জঈফ।” স্মর্তব্য যে, উক্ত হাদীস শরীফখানা জঈফ হওয়া সত্বেও প্রায় প্রত্যেক কিতাবেই ইল্মের আহ্কাম বর্ণনার
ক্ষেত্রে এর উদ্ধৃতি এসেছে। ইল্মের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বুঝানোর জন্য মুহাদ্দিসীনে
কিরামগণ “ইল্মের অধ্যায়ে” এ হাদীস শরীফের অবতারনা করেছেন এবং ইল্ম অর্জনের উৎসাহ ও তাকীদ প্রদানের জন্যে
এ হাদীস শরীফখানা বর্ণনা করেছেন। অতএব প্রমাণিত
হলো যে, শরীয়তে জঈফ হাদীস শরীফের উপর আমল করার গুরুত্ব অবশ্যই
রয়েছে। জঈফ হাদীস বলে তার আমল পরিত্যাগ করা বা তাকে অবজ্ঞা করা কশ্মিনকালেও শরীয়তসম্মত
হবেনা। বরং মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গযব বা অসন্তুষ্টি প্রাপ্তির কারণ।
যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, বুধবার ও শনিবার
দিনে শিঙ্গা লাগানো জঈফ হাদীসের দ্বারা নিষেধ আছে। যেমন হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
قال رسول
الله صلى الله عليه وسلم من احتجم يوم الاربعاء ويوم السبت فاصابه برص.
অর্থঃ- “হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি বুধবার ও শনিবারে শিঙ্গা লাগাবে তার শ্বেত কুষ্ঠ রোগ হবে।” এ প্রসঙ্গে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী (রঃ) তাঁর লালী ও তা’আক্কুবাত কিতাবে “মস্নদুল ফিরদাউসে দায়লামী”
শরীফ হতে বর্ণনা করে বলেন,
سمعت ابى
يقول سمعت ابا عمرو محمد بن جعفربن مطر النيشافورى قال قلت يوما ان هذا الحديث ليس
بصحيح فافتصدت يوم الاربعاء فاصابنى البرص فرأيت رسول الله صلى الله تعالى عليه
وسلم فى النوم فشكوت اليه حالى فقال اياك
والاستهانة بحديثى فقلت بست رسول الله صلى الله عليه وسلم فا نتبهت وقد عافانى
الله تعالى وذالك عنى.
অর্থঃ- “আমি আমার পিতার নিকট শুনেছি, তিনি আবু ওমর মুহম্মদ জাফর নিশাপুরীকে
বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন- আমি একদিন খেয়াল করলাম
(উক্ত) হাদীসখানা সহীহ্ নয়। তাই জরুরতবশতঃ বুধবার দিন আমি শিঙ্গা লাগালাম, অতঃপর আমার শ্বেত কুষ্ঠ হয়ে গেল। এরপর স্বপে¦ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে আমি আমার অবস্থা সম্পর্কে অভিযোগ
করলাম। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সাবধান! আমার হাদীসকে হালকা মনে কর না (হাদীস যদিও জঈফ হয়েছে রাবীর কারণে,
তথাপিও আমার নামের সাথে সম্পর্কযুক্ত)।” অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল আমি তওবা করছি
(আমার অপরাধ হয়েছে। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষমা করে দিলেন) অতঃপর
আমি ঘুম থেকে জেগে দেখি আল্লাহ্ পাক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং উক্ত রোগের চিহ্ন মাত্র
আমার শরীরে নেই। হযরত ইমাম গাজ্জালী (রঃ) তাঁর আরবাঈন কিতাবেও এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।”
আল্লামা তাহতাবী (রঃ) হাশিয়ায়ে
দুররে মুখতারে বলেন,
النهى عن
قص الاظفار يوم الاربعاء فانه يورت البرص. অর্থঃ- “হাদীস শরীফে বুধবার দিন নখ কাটা নিষেধ করা হয়েছে। নিশ্চয়ই এতে শ্বেত কুষ্ঠ হয়।”
এ প্রসঙ্গে আল্লামা শিহাবুদ্দীন
খাফফাজী মিসরী হানাফী (রঃ) নাসিমুর রিয়াজ ফি শরহে ইমাম কাজী আয়াজ কিতাবে বলেন,
قص
الاظفار وتقليمها سنة وورد النهى عنه فى يوم الاربعاء وانه يورث البرص وحكى بعض
العلماء انه فعله فنهى عنه فقال لم يشت هذا الله فلحقه الرص من ساعته فراى النبى
صل عليه وسلم فى منا مه فشكى اليه فقال له الم تسمع نهى عنه ففال لم يصح عندى فقال
صلى الله عليه وسلم يكفيك انه سمع ثم مسح بدنه بيده الشر يفة فذهب مابه فتاب عن
مخالفة ما سمع. অর্থঃ- “নখ কাটা বা ছোট করা সুন্নত। তবে হাদীস শরীফে বুধবার নখ
কাটা নিষেধ করা হয়েছে, কেননা তাতে শ্বেত কুষ্ঠ হয়। বর্ণিত
আছে কোন একজন আলেম (ইমাম ইবনুল হজ্ব মক্কী মালেকী (রঃ)) বুধবার দিন নখ কাটলে তাঁকে
হাদীস শরীফের বরাত দিয়ে নিষেধ করা হলো। তিনি বলেন, ইহা সহীহ্ হাদীস বলে প্রমাণিত নয়। অতঃপর তাঁর শ্বেত কুষ্ঠ হয়ে গেল। তিনি স্বপে¦
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে তাঁর অবস্থা সম্পর্কে অভিযোগ
করলেন। তখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলেন, “তুমি কি এ সম্পর্কে আমার নিষেধ বাণী শুননি?” তিনি বলেন, এই হাদীস আমার নিকট সহীহ্ হিসেবে
পৌঁছেনি। তারপর হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ ছিল যে, তুমি শুনেছ এই
হাদীস আমার নাম মোবারকের সাথে সম্পর্কযুক্ত।” আর হাত মোবারক দ্বারা তাঁর শরীর মসেহ্ করে দিলেন। তৎক্ষণাৎ সেই রোগ নিশ্চিহ্ন হয়ে
গেল। তৎপর তিনি তওবা করলেন যে, জীবনে আর কখনো হাদীস শরীফের বিরোধিতা
করবনা।” উপরোক্ত দু’খানা হাদীস শরীফ দ্বারা এ কথাই
বুঝা গেল যে, হাদীস শরীফের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব আরোপ না করলে ভয়ংকর
পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। এখানে আরো উল্লেখ্য যে শরহে আক্বায়েদে নস্ফী ও অন্যান্য
আক্বায়েদের কিতাবের বর্ণনা মোতাবেক হাদীস শরীফের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা প্রদর্শন
করা কুফরী। সুতরাং তিরমিযী শরীফে বর্ণিত উক্ত হাদীস শরীফখানা গোল টুপি সুন্নত হওয়ার
ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে নিশ্চিতরূপেই গ্রহণযোগ্য। জঈফ হওয়ার কারণে উক্ত হাদীস শরীফের
আমল পরিত্যাগ করা বা উক্ত হাদীস শরীফের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হারাম ও কুফরী। উল্লেখ্য, কেউ যদি গোল টুপির উক্ত হাদীস শরীফকে রদ্ করতে চায় বা গোল টুপি ব্যতীত অন্য কোন
টুপি সুন্নত প্রমাণ করতে চায়, তবে তাকে উক্ত হাদীস শরীফের চেয়েও
শক্তিশালী অথবা উক্ত হাদীস শরীফের সমকক্ষ একখানা হাদীস শরীফ অবশ্যই পেশ করতে হবে,
যা কারো পক্ষে কস্মিণকালেও পেশ করা সম্ভব নয়। অতএব, যদি তাই হয়ে থাকে, তবে একথা কি করে বলা যেতে পারে যে, গোল টুপি সম্পর্কিত
উক্ত হাদীস শরীফখানা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়? মূলতঃ তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অবান্তর ও পরিত্যাজ্য। উল্লেখ্য,
আমাদের হানাফী মায্হাব মোতাবেক কোন বিষয় ফরজ-ওয়াজিব ছাবেত করতে হলে অবশ্যই সহীহ্
ও হাসান হাদীস শরীফের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু মুস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণ করতে ও ফযীলত
বর্ণনা করতে জঈফ হাদীস শরীফই যথেষ্ট। কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে টুপিকে ফরজ-ওয়াজিব
ছাবেত করা হয়নি, বরং সুন্নত হিসেবেই বর্ণনা করা
হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে হযরত আবূ কাব্শা (রাঃ) হতে বর্ণিত উক্ত হাদীস শরীফ ও তার অনুরূপ
বর্ণিত অন্যান্য হাদীস শরীফই দলীল হিসেবে যথেষ্ট। তৃতীয়ত বলতে হয় যে, তিরমিযী শরীফের উক্ত হাদীস শরীফের
শেষে “বুত্হুন” অর্থ واسعةঅর্থাৎ প্রশস্ত বলা হয়েছে সত্য
কথাই। তাই বলে একথা বলা কখনোই শুদ্ধ হবেনা যে, এর দ্বারা গোল টুপি সুন্নত প্রমাণিত হয়না। বরং بطح শব্দের অর্থ যদি واسعةও ধরা হয়, তবুও এর দ্বারা গোল টুপিই যে সুন্নত,
তা আরো সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়। কারণ واسعةশব্দের অর্থ হলো- প্রশস্ত, এর দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে,
হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রঃ)গণের টুপি মোবারক এমন গোল ছিল, যা উপর দিক থেকে প্রশস্ত ছিল, চিপানো বা টাইট ছিলনা। যার ফলে
টুপিটি মাথায় পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করতো এবং মাথার সাথে সব দিক থেকে লেগে থাকতো। অতএব واسعةশব্দ দ্বারা একথাই জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রঃ)গণ এরূপ টুপি পরিধান করতেন না, যে টুপি পরিধান করলে মাথায় পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করেনা এবং সব দিক থেকে মাথার সাথে
লেগে থাকেনা বা উঁচু হয়ে থাকে। মুহাদ্দিসীনে কিরাম (রাঃ)গণواسعةএর ব্যাখ্যায় ইহার প্রতিই ইঙ্গিত
করেছেন। যেমন واسعةএর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত কিতাব মিরকাতুল মাফাতীহ-এর ৮ম জিঃ ২৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
والمرد
انها ما كانت ضيقة رومية او هنديه بل كان وسعها مقدار شبر.
অর্থঃ- واسعة) শব্দের দ্বারা) উদ্দেশ্যে এই যে,
নিশ্চই হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রঃ)গণের টুপি রোমী অথবা হিন্দী (টুপির) ন্যায় সঙ্কুচিত
ছিলনা। বরং তাঁদের টুপি এক বিঘত পরিমান প্রশস্ত ছিল।” উপরোক্ত ইবারতের দ্বারা স্পষ্টই
বুঝা গেল যে, রোম দেশে ব্যবহৃত রোমী টুপি, যা উপর দিকে উঁচু ও চোখা ও হিন্দুস্থানে ব্যবহৃত দোপাট্টা টুপি যেরূপ উপর দিকে
সঙ্কুচিত, তদ্রুপ সঙ্কুচিত টুপি হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ পরিধান
করেননি। মুলতঃ চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি পরিধান করলেই واسعة
-এর হুকুম পূর্ণরূপে আদায় হবে। কারণ উক্ত টুপির উপরে একটি আলাদা টুকরা থাকার
কারণে যেরূপ উপর দিকে সঙ্কুচিত থাকে না, তদ্রুপ প্রায়
এক বিঘত পরিমান প্রশস্ত থাকে। যার ফলে টুপিটা সব দিক থেকে ভালরূপে মাথার সাথে লেগে
থাকে। এছাড়াও কিতাবে واسعة এর আরো একটি ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, তাহলো- যারা بطح অর্থ واسعةগ্রহণ করেছেন, তারা মূলতঃ كمام কে টুপির অর্থে গ্রহণ না করে আস্তিনের অর্থে গ্রহণ করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে মেশকাত
শরীফের নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা গ্রন্থ মোযাহেরে হক্বের ৩য় জিঃ ৫৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اور
بعضوں نے کھا کمام جمع کمہ کی ھے بمعنی استین کے جیسے قفاف ساتہ زیر قاف کے جمع قف
مذموم القاف کی ھے بمعنی زمین بلند کے اور بطحا کے معنی اس صورت میں فراخ و کشادکی
ھونگےاس لئے کہ زمین بطحا کشادہ بھی ھوتی ھے یعنی استینیں ان کی نھیں تھیں رومی یاھندی
بلکہ چوری تھیں مقدار بالشت کے-
অর্থঃ- “কেউ কেউ বলেন,
كمام হলো كمة এর বহুবচন, যার অর্থ হলো উঁচু যমীন। এক্ষেত্রে
(বুতহুন) এর অর্থ হবে প্রশস্ত। কেননা যমীন প্রশস্তও হয়ে থাকে। অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম
(রাঃ) গণের কোর্তার আস্তিন রোমী বা হিন্দীদের ন্যায় সঙ্কুচিত ছিলনা বরং চওড়া বা প্রশস্ত
ছিল এক বিঘত পরিমাণ।” মূলতঃ واسعة এর যে অর্থই গ্রহণ করা হোক না কেন, তা কখনো গোল টুপির বিপরীত বা বিরুদ্ধ নয়। বরং
واسعةএর দ্বারা এটা আরো স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপি উপর দিকে প্রশস্ত থাকার কারণে সব দিক থেকে
মাথার সাথে ভালভাবে লেগে থাকতো। তাছাড়া
এখানে আরো উল্লেখ করা যেতে পারে যে, শুধুমাত্র “বুতহুন” অর্থ واسعةবা প্রশস্ত একথা বলে বসে থাকলেই
চলবেনা বরং মুহাদ্দিসীনে কিরাম (রাঃ)গণ “বুতহুন”
এর কি অর্থ বা ব্যাখ্যা করেছেন তাও আমাদের দেখতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে। তাই
মুহাদ্দিসীনে কিরাম “বুতহুন”-এর যে অর্থ বা ব্যাখ্যা করেছেন, নিম্নে তা উল্লেখ
করা হলো। যেমন- بطح এর ব্যাখ্যায় ইমামুল মুহাদ্দিসীন, হাদীস শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী (রঃ) তাঁর সবর্জন মান্য
কিতাব মেশকাত শরীফের শরাহ মেরকাত শরীফের ৮ম জিঃ ২৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
(بطحا)
بضم الموحدة فسكون المهملة جمع بطحاء اى كانت مبسوطة على رؤسهم لازقة غير مر تفعة
عنها.
অর্থঃ- “বুতহুন” বা এর উপর পেশ ত্বোয়া এর উপর সাকিন। বুতহুন এর বহুবচন
হচ্ছে “বুতহাউন” অর্থাৎ হযরত
সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপি তাদের মাথার সাথে লেগে থাকতো। এমন ভাবে লেগে থাকতো যে,
তা মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকতো না।” “বুতহুন” এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমামুল কাবীর,
হযরত শরফুদ্দীন হুসাইন ইব্নে মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ত্বীবী (রঃ) তাঁর মশহুর কিতাব
মেশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ শরহুতত্বীবী ৮ম জিঃ ২১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
(وبطحا)
بضم الياء وسكون الطاء- معناه انها كانت مسوطة لازؤسهم غير مر تفعة عنها.
অর্থঃ- “বুতহুন”
এর অর্থ হচ্ছে নিশ্চই হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপি তাঁদের মাথার সাথে সব
দিক থেকে লেগে থাকতো, মাথা থেকে উচু হয়ে থাকতো না।”
পাক ভারত উপমহাদেশে যিনি সর্ব প্রথম
হাদীস শরীফের প্রচার-প্রসার করেন, যিনি ইমামুল মুহাদ্দিসীন হযরত আব্দুল
হক মুহাদ্দিস দেহলবী (রঃ) তাঁর আলোড়ন সৃষ্টি কারী ফার্সী কিতাব “আশয়াতূল লুময়াত” ৩য় জিঃ ৫৪৩ পৃষ্ঠায় “বুতহুন” এর ব্যাখ্যায় লিখেন,
وبطح
......... یعنی بود کلاہ ھائے ایشان مدور و مبسوط
چپیدہ بسرنہ دراز ویلند رفتہ بجانب ھوا-
অর্থঃ- “বুতহুন” অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপি ছিল গোল।
এমন গোল, যা মাথার সাথে
লেগে থাকতো, মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকতো না এবং বাতাসের কারণে উঠে যেতনা।”
“বুতহুন”-এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা কুতুবুদ্দীন শাহজাহান আবাদী (রঃ) তাঁর
বিখ্যাত কিতাব মোযাহেরে হক্বের ৩য় জিঃ ৫৩৩ পৃষ্ঠায় লিখেন-
بطح
.......... یعنی تھین نوپیان ان کی مدور اور مبسوط لگی ھوئین سر سے نہ دراز ویلند
کی ھوئیین اوپر ھوا کی طرف-
অর্থঃ- “বুত্হুন”
....... অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপি গোল ছিল এবং
তা মাথার সাথে লেগে থাকতো, মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকতোনা। এবং
বাতাসের কারণে উঠে যেতনা।” উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, “বুত্হুন” শব্দের অর্থ হচ্ছে গোল টুপি যা সবদিক থেকে মাথার সাথে
লেগে থাকে এবং মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকেনা। মুলতঃ বুত্হুন-এর উল্লিখিত অর্থই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য,
সহীহ ও গ্রহণযোগ্য। স্মরণযোগ্য যে,
উল্লিখিত মুহাদ্দিসীনে কিরাম (রাঃ)গণ তাঁদের স্ব স্ব কিতাবে তিরমিযী শরীফের উক্ত
হাদীস শরীফখানা উল্লেখ করেছেন ঠিকই কিন্তু بطح
يعنى واسعة
এ অংশটুকু তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ কিতাবে উল্লেখ করেননি। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত
হয় যে, “বুত্হুন” অর্থ- واسعةএ অর্থ মুহাদ্দিসগণের নিকট তেমন গুরুত্বপূর্ণ বা গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব যারা বলে- বুতহুন অর্থ واسعة এ অর্থ গ্রহণ করলে গোল টুপি সুন্নত প্রমাণিত হয়না। তাদের সে বক্তব্য সম্পুর্ণ ভুল
অবান্তর ও অজ্ঞতামুলক। বরং উক্ত অর্থ গ্রহণ করার কারণে লম্বা বা দোপাট্টা, উঁচু ও পাঁচ কল্লি টুপি যে সুন্নত নয়, তাই স্পষ্ট প্রমাণিত
হয়। কেননা উক্ত টুপিগুলো প্রশস্ত না হওয়ার কারণে উপরের দিকে সঙ্কুচিত হয়ে থাকে। যার
ফলে মাথার সাথে লেগে থাকেনা বা মাথায় ভালরূপে প্রবেশ করেনা।
(২)
কেউ কেউ বলে
থাকে যে, সব ধরণের টুপিই পরিধান করা জায়েয বা সুন্নত। কারণ হাদীস
শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপির
ক্ষেত্রে(قلنسوة) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আর (قلنسوة) নিদিষ্ট প্রকারের কোন টুপির নাম নয়।
বরং বিভিন্ন প্রকারের টুপিকেই(قلنسوة) বলে। আর হাদীস শরীফে রয়েছে,
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন প্রকারের টুপি ব্যবহার করেছেন।
যেমন মেরকাত শরীফে উল্লেখ আছে-
(ا) كان يلبس قلنسوة بيضاء-
(২) وكانيلبس القلانس اليمانية
(৩) ويلبس ذوات الاذان فى الحرب
(৪) كان ربما نزع قلنسوته فجعلها سترة بين يديه وهو يصلى.
এছাড়াও “
মোছান্নেফ ইব্নে আবী শায়বা ও আল মুখ্তাছারুল ওফা” নামক কিতাবদ্বয়ে নিন্মোক্ত হাদীস শরীফসমূহ উল্লেখ আছে-
(ا) عن
عبد الله بن سعيد قال رأيت على بن حسين قلنسوة بيضاء مصرية-
(২) عن ابن عمر قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يلبس
القلنسوة البيضاء-
(৩) عن ابى ههريرة قال- رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم- قلنسوة
بيضاء شامية.
উল্লিখিত হাদীস শরীফ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন প্রকারের টুপি পরিধান করেছেন।
আর হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন বিশেষ প্রকারের টুপি পরিধান করেছেন
বলে কোন হাদীস শরীফে উল্লেখ নেই বিধায় সব ধরণের টুপিই পরিধান করা জায়েয। অতএব,
কিস্তি, পাঁচ কল্লি টুপিও পরিধান করা জায়েয। তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে,
জায়েয ও সুন্নত এক কথা নয়। জায়েয তাকেই
বলা হয়- যে বিষয়ে শরীয়তে স্পষ্ট কোন আদেশ বা নিষেধ নেই। আর সকল জায়েয আমলই সুন্নত নয়।
যেমন ভাত খাওয়া জায়েয। তাই বলে তাকে সুন্নত বলা যাবেনা। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুলসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ কখনো ভাত খাননি। অনুরূপ প্যান্ট-সার্ট পরিধান
করলে সতর ঢাকে অর্থাৎ ফরজ আদায় হয়, কেউ প্যান্ট-সার্ট পরিধান করলে
কাফের হবেনা। কিন্তু প্যান্ট-সার্টকে যদি কেউ সুন্নত বলে, তবে অবশ্যই কুফরী হবে। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম কখনো প্যান্ট-সার্ট পরিধান করেননি। অতএব,
সুন্নত ঐ আমলকেই বলে- যে আমল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর ক্বাওল (কথা), ফে’ল (কাজ) অথবা তাকরীর (মৌন সম্মতী) দ্বারা প্রমাণিত। ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব তাহতাবীতে
উল্লেখ আছে-
والسنة
ما فعل النبى صلى الله عليه وسلم او واحد من اصحابه.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা তাঁর সাহাবীগণের মধ্য হতে কোন
একজন যে কাজ করেছেন, তাহাই সুন্নত।” অতএব, প্রমাণিত হলো যে, জায়েয ও সুন্নত এক কথা নয়। কাজেই
মাসিক আল বাইয়্যিনাতে টুপির যে ফতওয়া দেয়া হয়েছে, তা খাছ সুন্নতী টুপির ফতওয়াই দেয়া হয়েছে, জায়েয টুপির নয়। কেননা সুন্নত পালনের মধ্যেও আম ও খাছ রয়েছে। যেমন খাওয়ার সময় দস্তরখানা
ব্যবহার করা সুন্নত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দস্তরখানা মোবারক ছিল চামড়ার ও খয়েরী
রং-এর। এখন কেউ যদি কাপড়ের দস্তরখানা ব্যবহার করে, তবেও আমভাবে দস্তরখানার সুন্নত আদায় হবে। আর কেউ যদি খয়েরী রং-এর চামড়ার দস্তরখানা
ব্যবহার করে, তবে তাতে দস্তরখানার খাছ সুন্নত আদায় হবে। অনুরূপ কেউ
যখন গোল টুপি পরিধান করবে, তখন আমভাবে টুপির সুন্নত আদায় হবে।
আর যখন উক্ত টুপিখানা গোল হওয়ার সাথে সাথে সাদা সুতি কাপড়ের ও চার টুকরা বিশিষ্ট হবে,
তখন টুপির খাছ সুন্নত আদায় হবে। কেননা হাদীস শরীফের বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত
হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপি মোবারক যেমনিভাবে গোল ছিল,
তেমনিভাবে সাদা রং-এর সুতি কাপড়ের ও চার টুকরা বিশিষ্ট ছিল এবং তা সবদিক থেকে মাথার
সাথে লেগে থাকতো। সুতরাং চার টুকরা
বিশিষ্ট গোল টুপি ব্যতীত অন্যান্য টুপি, টুপি হিসেবে
আমভাবে জায়েয হলেও তা অবশ্যই খেলাফে সুন্নত। কারণ সহীহ্ হাদীস শরীফ তো দুরের কথা একখানা
জঈফ বা মুনকার হাদীস শরীফও কেউ পেশ করতে পারবেনা যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিস্তি বা পাঁচ কল্লি টুপি পরিধান করেছেন।
তাছাড়া আমভাবে সব ধরণের টুপি পরিধান করাকেও
জায়েয বলা যায়না। কারণ ইসলামী শরীয়ত ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, মজুসী-মোশরেকদের অনুসরণ-অনুকরণ
করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। যেমন পোশাক বা লেবাসের ক্ষেত্রে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে-
اياكم
ولبوس الرهبان فانه من تزيا بهم او تشبه فليس منى اخرجه الطبر انى فى الاوسط.
অর্থঃ- “ইমাম তিবরানী (রঃ) তাঁর “আওসাত’ কিতাবে বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, “সাবধান” তোমরা খ্রীষ্টান সন্নাসীদের পোশাক হতে বাঁচ। নিশ্চয়ই যারা খ্রীষ্টানী পোশাক দ্বারা
নিজেদের সুসজ্জিত করে অথবা তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়।” হাদীস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে,
عن عبد
الله بن عمر قال- قال رسول الله صلى الله وسلم- من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রাখবে, যে ব্যক্তি তাদেরই দলভুক্ত হবে।” (আবু দাউদ,
মসনদে আহমদ) সুতরাং ইহুদী-নাছারা,
হিন্দু-বৌদ্ধ ও মজুসী মোশরেকরা তথা কাফের বেদ্বীনরা খাছভাবে যে টুপি পরিধান করে,
সে টুপি মুসলমানদের জন্য ব্যবহার করা কি করে জায়েয হতে পারে? যেমন-কিস্তি বা লম্বা টুপি কাফের তথা হিন্দু মারওয়াবীদের খাছ টুপি বা শেয়ার। এ
লম্বা টুপি সম্পর্কে তাফসীরে বায়জাবীর বিখ্যাত শরাহ্ “হাশিয়ায়ে মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ্ ১ম জিঃ ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
لبس الغيار وشد الزنار
ونحو هما كفرا.
অর্থঃ- “গিয়ার” পরিধান করা ও পৈতা বাধা এবং এতদুভয়ের ন্যায় পোশাক পরিধান
করা কুফরী। আর "الغيار" (গিয়ার)
শব্দের ব্যাখ্যায় উক্ত কিতাবের উক্ত স্থানে উল্লেখ আছে,
الغيار
...... علامة اههل الذمة وقيل هو قلنسوة طويلة كانت تلبس فى ابتداء الاسلام وهى
الان من شعار اهل الكفر مختصة بهم كالزنار المختصة بالنصرى.
অর্থঃ- “গিয়ার, তা হলো- জিম্মিদের শেয়ার। কেউ কেউ বলেন, “গিয়ার” হলো- লম্বা টুপি, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ব্যবহার করা হতো এবং তা বর্তমানে কাফেরদের খাছ শেয়ার
বা আলামত। যেরূপ নাছারাদের খাছ আলামত হচ্ছে- টাই।” আর এ প্রসঙ্গে বাহ্রুল উলুম, ফখরুল ফুক্বাহা, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, হাফিজুল হাদীস, মুফতিয়্যুল আ’যম, শায়খুল মিল্লাতে ওয়াদ্দীন, মুবাহিছুল আ’যম, হযরতুল আল্লামা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীরহাটি
(রঃ) কর্তৃক প্রণীত- বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য দলীল সমৃদ্ধ ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আমীনিয়াতে” উল্লেখ করেন, “কিস্তি (লম্বা) টুপি খাছ মারওয়ারিদের (হিন্দুদের) পোশাক ..........।” অতএব,
প্রমাণিত হলো যে, সব ধরণের টুপিই যেরূপ সুন্নত বা
খাছ সুন্নত নয়, তদ্রুপ সব ধরণের টুপিও পরিধান করা
জায়েয নয়। বরং যে টুপি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ পরিধান করেছেন বলে হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত,
সে টুপিই সুন্নতী বা খাছ সুন্নতী টুপি। আর
যে টুপি হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত সুন্নতী বা খাছ সুন্নতী টুপি নয় এবং বেদ্বীন-বদ্দ্বীন
তথা কাফেরদের শেয়ার বা খাছ টুপিও নয়, সে টুপি পরিধান
করা জায়েয। তবে অবশ্যই সুন্নতের খেলাফ। সুতরাং এটাই সাব্যস্ত হলো যে, জায়েয ও সুন্নত এক কথা নয়, বরং এর মধ্যে আসমান-যমীন পার্থক্য
রয়েছে। দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে,
যারা (قلنسوة)“ক্বলান্সুওয়াহ্” শব্দের উপর ভিত্তি করে সব ধরণের
টুপিকে সুন্নত বলে, তারা মুলতঃ এ ব্যপারে নেহায়েতই
অজ্ঞ এবং তারা(قلنسوة) “ক্বলান্সুওয়াহ্”
শব্দের হাক্বীক্বত মোটেও বুঝেনি। কারণ প্রথমতঃ হাদীস শরীফে টুপির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র
(قلنسوة) “ক্বলান্সুওয়াহ্” শব্দই ব্যবহৃত হয়নি, বরং অন্য শব্দও ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন- كمة ও كمام (কুম্মাতুন এবং কিমামুন)। কাজেই যারা বলে হাদীস শরীফে টুপির ক্ষেত্রে কেবল
মাত্র (قلنسوة) শব্দই ব্যবহৃত
হয়েছে। তাদের সে দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হাদীস শরীফ বিরোধী। দি¡তীয়তঃ হাদীস
শরীফে যেখানে টুপির ক্ষেত্রে (قلنسوة) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানেই উক্ত
টুপির আকৃতি প্রকৃতি বা গুণাগুণ বর্ণনার জন্য অন্য একটি শব্দও ব্যবহৃত হয়েছে। যদ্বারা
স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, উক্ত টুপিটি কিরূপ ছিল। যেমন মেশকাত
শরীফের শরাহ্ মেরকাতে উল্লেখ আছে-
كان يلبس
قلنسوة بيضاء.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদা রং-এর টুপি পরিধান করেছেন।”
উক্ত হাদীস শরীফের দিকে যদি আমরা
ভালভাবে লক্ষ্য করি, তবেই ব্যপারটি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
যেমন, দেখুন উক্ত হাদীস শরীফে (قلنسوة) শব্দের সাথে (بيضاء) শব্দও উলেখ আছে, যদ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি রং-এর টুপি পরিধান করতেন,
তা বর্ণনা করা হয়েছে। নচেৎ শুধু (قلنسوة) শব্দের দ্বারা সাদা রংয়ের
টুপি কখনোই প্রমাণিত হয়না। যেমন হাদীস শরীফে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের জামা বা কোর্তার ক্ষেত্রে (قميص) “ক্বামীছ” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আর সে (قميص)
কি রং-এর কি ধরণের বা কি প্রকারের ছিল, তা স্পষ্ট করে দেয়ার জন্য (قميص) শব্দের সাথে (قميص الابيض)সাদা রং-এর ক্বামীছ (قميص انصاف الساقيه)
নিছফুস্সাক্ব ক্বামীছ (فى قميص واحد) অর্থাৎ এক ক্বামীছে নামাজ পড়েছেন। অর্থাৎ তাঁর ক্বামীছ গোল ছিল ইত্যাদি
শব্দ বা বাক্যও উল্লেখ করা হয়েছে। এখন
যারা (قلنسوة) শব্দের
ব্যাপক অর্থের উপর ভিত্তি করে সব ধরণের টুপি সুন্নত প্রমাণ করতে চায়, তারা কি (قميص) শব্দের
ব্যাপক অর্থের উপর ভিত্তি করে শার্ট পরিধাকেও সুন্নত ফতওয়া দিবে? যদি (قميص) শব্দের
ব্যাপক অর্থের উপর ভিত্তি করে শার্টকে সুন্নত বলা না যায়, তবে (قلنسوة) শব্দের
ব্যাপক অর্থের উপর ভিত্তি করে সব ধরণের টুপিকে কি করে সুন্নত বলা যাবে? মুলতঃ শুধু মাত্র (قلنسوة) শব্দের উপর ভিত্তি করে কিস্তি বা লম্বা টুপি ও পাঁচ কল্লি টুপিকে
সুন্নত বলা জেহালত বৈ কিছুই নয়। কেননা তারা এমন একখানা হাদীস শরীফও পেশ করতে পারবেনা,
যে হাদীস শরীফে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম
(রাঃ)গণের টুপির বর্ণনার ক্ষেত্রে (قلنسوة)শব্দের সাথে ((طوبلة) লম্বা অথবা “পাঁচ কল্লি” সম্পর্কিত কোন শব্দ উল্লেখ আছে। পক্ষান্তরে হাদীস শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপির ক্ষেত্রে সাদা গোল ও চার টুকরা
ইত্যাদি শব্দ ঠিকই উল্লেখ আছে। যেমন হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عن عائشة رضى الله
عنها قالت- كانت له كمة بيضاء-
অর্থঃ- “হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাদা রংয়ের গোল টুপি ছিল।”
(আদ্দিমিয়াতী, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া লিল কুস্তলানী,
শরহে মাওয়াহেব লিয্যুরক্বানী) আর হযরত
সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপি মোবারক সম্পর্কে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
عن ابى
كبشة قال- كان كمام اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم بطحا. অর্থঃ- “হযরত আবু কাব্শা (রাঃ) বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবী (রাঃ)গণের টুপি ছিল গোল।” (তিরমিযী, মেশকাত, মেরকাত,
লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব।) হাদীস শরীফের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও
অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপি ছিল গোল। এমন গোল, যা সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকতো। অর্থাৎ মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকতো না। আর চীশ্তিয়া তরীক্বার ইমাম, বিখ্যাত ও সর্বজনমান্য আলেম ও বুযুর্গ, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্তরীক্বত, সুলতানুল হিন্দ, মুঈনুল মিল্লাত, ওয়ারিছুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন,
মোক্তাদায়ে আরবাবে দ্বীন, পেশওয়ায়ে আরবাবে ইয়াক্বীন,
ছাহিবুল আসরার, মাহ্বাতুল আনওয়ার, বোরহানুল আছফিয়া, আলিমু ইলমুয যাহেরী ওয়াল বাতেনী,
কোদওয়াতুছ সালেক্বীন, ওয়াক্বেফে রুমূযে ছুয়ারী ও মা’নুবী, মুঈনুল হক্ব, মুহিব্বে আউলিয়ায়ে যামান, রাহ্নুমায়ে কামেলীন, মুহিউস্ সুন্নাহ্, মাহিয়ুল বিদ্য়াত, হাবীবুল্লাহ্, শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুঈনুদ্দীন
চীশ্তি, সাঞ্জেরী, আজমেরী আল হাসানী,
ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কোরাঈশী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব “আনীসুল আরওয়াহতে” বর্ণনা করেন, “....... হযরত খাজায়ে আলম (রাসুলুল্লাহ্) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রথম এই ‘কুল্লাহ্ চাহার তর্কী’ (চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি) জিব্রাঈল
আলাইহি ওয়াস্ সালাম আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রদান করেন এবং বলেন, ‘আপনি এটা পরিধান করুন এবং যাকে খুশী দান করে খলীফা নিযুক্ত করুন।’ অনুরূপ দলীলুল আরেফীন ও ইস্রারুল আওলিয়া নামক কিতাবেও উল্লেখ আছে। উল্লেখ্য, প্রথম দু’টি হাদীস শরীফে টুপির ক্ষেত্রে كمة ও كمام শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ হলো- গোল টুপি। যেমন উক্ত
كمة ও كمام -এর ব্যাখ্যায়
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমামুল মুহাদ্দিসীন, হযরত ইমাম মুল্লা
আলী ক্বারী (রঃ) তাঁর বিখ্যাত কিতাব মেরকাত শরহে মিশকাত-এর ৮ম জিঃ ২৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ
করেন-
(كمام)
بكسر الكاف جمع كمة بالضم كقياب وقبة وهى قلنسوة المدورة سميت بها لانها تغطى
الرأس.
অর্থঃ- (كمام)ِ কিমামুন কাফের নীচে যের দিয়ে ইহা মুলতঃ (كمام) (কাফের উপর পেশ) কুম্মাতুন-এর বহু বচন। আর কুম্মাতুন মুলতঃ গোল টুপি
উহা যেহেতু মাথাকে ঢেকে ফেলে তাই এ নামকরণ করা হয়েছে।” এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত আরবী লোগাত আল ক্বামুসুল মুহীত ও লিসানুল আরবে উল্লেখ আছে,
الكمة- قلنسوة مدورة
لا نها تغطى الرأس.
অর্থঃ- “কুম্মুতুন”
হলো- গোল টুপি, কেননা তা মাথাকে ঢেকে রাখে।” আর আরবী মশহুর ও বিখ্যাত অভিধান
গ্রন্থ মিছবাহুল লোগাত ও আল মুনজিদে উল্লেখ আছে-
الکمۃ –
گول پوپی – دھکنا-
অর্থঃ- (الكمة)(আল কুম্মাতু) অর্থ হলো- গোল টুপি, আবৃত করা।” আর (كلاه جهار تركى) চার টুকরার
কথা তো সুলতানুল হিন্দ খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ) বর্ণিত হাদীস শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ
আছে। অতএব
প্রমাণিত হলো যে, (قلنسوة) শব্দের ব্যপক অর্থের ভিত্তিতে লম্বা ও পাঁচ কল্লি টুপিসহ অন্যান্য টুপিকে জায়েয
বা সুন্নত বলা সম্পূর্ণ অজ্ঞতামুলক ও শরীয়ত বিরোধী কাজ। কেননা কোন হাদীস শরীফেই(قلنسوة)
শব্দের সাথে লম্বা বা পাঁচ কল্লি সম্পর্কিত কোন শব্দ উল্লেখ নেই। আর তা উল্লেখ
থাকার প্রশ্নই উঠেনা। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ জীবনে কখনো কিস্তি বা লম্বা ও পাঁচ কল্লি
টুপি পরিধান করেননি। এছাড়া (قلنسوة) শব্দের ব্যাপক অর্থের কারণে যদি লম্বা
টুপি পরিধান করা জায়েযই হতো, তবে ইমাম-মুজ্তাহিদ ও ফক্বীহ্গণ
লম্বা টুপিকে কাফেরদের শেয়ার বলে আখ্যায়িত করলেন কেন? এর দ্বারা কি এটাই বুঝা যায়না যে, তাঁরা একটি জায়েয
বা সুন্নত আমলকে কাফেরদের শেয়ার বলে আখ্যায়িত করেছেন? মূলতঃ তারা কোন সুন্নত আমলকে কাফেরদের শেয়ার বলে আখ্যায়িত করেননি। সুন্নত আমল তো
দূরের কথাই, কোন জায়েয আমলকেও ইমাম-মুজ্তাহিদগণের পক্ষে কাফেরদের
শেয়ার বলে আখ্যায়িত করা সম্ভব নয়। বরং লম্বা টুপি যেহেতু কাফেরদের খাছ টুপি। আর হুজুর
পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ কিস্তি,
দোপাট্টা বা লম্বা টুপি পরিধান করেছেন বলে দুর্বল কোন প্রমাণও পাওয়া যায়না। তাই
তারা লম্বা টুপিকে কাফেরদের শেয়ার বলে আখ্যায়িত করেছেন। তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে,
যারা কিস্তি বা লম্বা ও পাঁচ কল্লি টুপিসহ সব ধরণের টুপিকে জায়েয বা সুন্নত প্রমাণ
করতে গিয়ে মেরকাত, মুছান্নেফ ইব্নে আবী শায়বা ও আল
মুখতাছারুল ওফা-এর উল্লিখিত হাদীস শরীফসমূহের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকে। তাদের উল্লিখিত উক্ত
হাদীস শরীফসমূহ দ্বারা লম্বা ও পাঁচ কল্লিসহ সব ধরণের টুপি কখনোই জায়েয বা সুন্নত প্রমাণিত
হয়না। বরং উক্ত হাদীস শরীফগুলো তাদের বিপক্ষেই দলীল হিসেবে যুক্তিযুক্ত। কারণ তাদের
উল্লিখিত প্রথম হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদা টুপি পরিধান করেছেন। এ হাদীস শরীফে টুপির রং বর্ণনা করা হয়েছে।
লম্বা বা পাঁচ কল্লির কথা মোটেও বলা হয়নি।
দ্বিতীয় হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদা রং-এর ইয়ামেনী টুপি পরিধান করেছেন।
এ হাদীস শরীফ দ্বারা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়ামেন দেশের টুপিও
ব্যবহার করেছেন, তা বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন অন্যান্য
হাদীস শরীফে রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম রোমী জুব্বা, ইয়ামেনী চাদর ও মিশরীয় সুতী কাপড়ের
কোর্তা ব্যবহার করেছেন। এখানেও লম্বা বা পাঁচ কল্লি টুপির কোন অস্তিত্ব নেই। তৃতীয়
হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম যুদ্ধের সময় কানওয়ালা টুপি ব্যবহার করেছেন। এ
হাদীস শরীফে যুদ্ধের পোশাকের কথা বলা হয়েছে। আর এটা সকলেরই জানা যে, যুদ্ধের পোশাক যুদ্ধের জন্যই খাছ। যেমন যুদ্ধের সময় হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম শিরস্ত্রাণ বা মাথায় লোহার হেলমেট ব্যবহার করতেন। শরীর মোবারকে লোহার পোশাক
ব্যবহার করতেন। অতএব, বুঝা গেল যে, যুদ্ধের পোশাকের আকার-আকৃতি আর অন্য সময়ের পোশাকের আকার-আকৃতি এক নয়। তাছাড়া উক্ত
হাদীস শরীফে একথা উল্লেখ নেই যে, কানওয়ালা টুপিটি লম্বা বা পাঁচ
কল্লি ছিল। আর চতুর্থ হাদীস শরীফে উল্লেখ
আছে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কখনো
তাঁর টুপি মোবারক খুলে সম্মুখে সুত্রা হিসেবে রেখে নামাজ আদায় করতেন। এ
হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর উক্ত টুপিটি কমপক্ষে এক হাত পরিমাণ উঁচু ছিল। নচেৎ উহা দ্বারা সুত্রা
হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। মুলতঃ এ ধরণের উঁচু টুপিকেই বুরনুস টুপি বলা হয়। আর সহীহ্ মত
এই যে, এ ধরণের টুপি ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান করা হতো।
যেমন- এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত আরবী অভিধান “আল মুনজিদে”
উল্লেখ আছে-
البرنس
- وہ لمبی طوپی جو آغاز اسلام مین پھنی
جاتی تھی-
অর্থঃ- ‘বুরনুস’ -ঐ লম্বা বা উঁচু টুপিকে বলে, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান
করা হতো।” সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এরূপ অনেক আমলই রয়েছে, যা তিনি প্রথম দিকে করেছেন কিন্তু পরবর্তিতে তা পরিহার করেছেন। বুরনুস টুপির ব্যাপারটিও
তদ্রুপ। কাজেই
যারা প্রথম যামানার আমলকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে লম্বা টুপিকে জায়েয করতে চায়, তারা কি তবে নামাজে কথা বলাকেও জায়েয ফতওয়া দিবে? পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করাকেও কি তারা জায়েয ফতওয়া দিবে? কেননা প্রথম যুগে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজে কথা বলতেন
এবং স্বর্ণ ব্যবহার করতেন। তাছাড়া এরপরও যদি তারা উক্ত হাদীসকে লম্বা
টুপির দলীল হিসেবে পেশ করতে চায়, তবে তাদেরকে অবশ্যই এক হাত পরিমাণ
লম্বা টুপি পরিধান করতে হবে, যা বর্তমানে খৃষ্টানদের টুপি। কাজেই
তারা যে লম্বা বা কিস্তি টুপি পরিধান করে, তার সাথে উক্ত হাদীস শরীফে বর্ণিত
টুপির কোনই মিল নেই। মুলতঃ উক্ত হাদীস শরীফ দ্বারাও যেরূপ কিস্তি বা লম্বা ও পাঁচ কল্লি
টুপি জায়েয বা সুন্নত প্রমাণিত হয়না, তদ্রুপ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন ধরণের টুপি পরিধান করেছেন তাও প্রমাণিত হয়না। যেহেতু উক্ত হাদীস
শরীফখানা প্রথম যুগের আমল। সুতরাং যারা মেরকাত শরীফে বর্ণিত উক্ত হাদীস শরীফ
সমূহের বরাত দিয়ে বলে থাকে যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম সব ধরণের টুপি পরিধান করেছেন। তাদের সে বক্তব্য সম্পুর্ণই অবান্তর ও মিথ্যা, যা ইতিপূর্বের বিস্তারিত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, যারা বলে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন বিশেষ প্রকারের টুপি পরিধান
করেছেন বলে হাদীস শরীফে উল্লেখ নেই, তারা মুলতঃ হাদীস শরীফ সম্পর্কে
নেহায়েতই অজ্ঞ। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর টুপি মোবারক সাদা, গোল ও চার টুকরা বিশিষ্ট ছিল এবং তা সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকতো, যা ইতি পূর্বের আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। কিস্তি, পাঁচ কল্লি ও জালী বা নেট ইত্যাদি টুপির কথা হাদীস শরীফের কোথাও উল্লেখ নেই। সুতরাং
এগুলো জায়েয বা সুন্নত ও খাছ সুন্নত হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা।