গবেষণা
কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ
نحمده ونصلى على رسوله الكريم.
মহান
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উনার অসীম শুকরিয়া, তিনি আমাদেকে মুহম্মদীয়া জামিয়া
শরীফ উনার পক্ষ থেকে গবেষণা কেন্দ্র খোলার তাওফীক ইনায়েত করেছেন। বিশ্ব মুসলিম তথা
সমস্ত উম্মত কুরআন শরীফ,
হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াস অনুযায়ী তাদের ঈমান, আমল, আকীদা ও
ইখলাসকে যাতে শুদ্ধ করতে পারে সে জন্যে আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ফতওয়া বিভাগে উক্ত
গবেষণা কেন্দ্রের ফতওয়াগুলি পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মহান
আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদের এ প্রচেষ্টায় কামিয়াবী দান করেন। (আমীন)
মুহম্মদিয়া
জামিয়া শরীফ রাজারবাগ, ঢাকা
মহান
আল্লাহ পাক তিনি মানুষকে সৃষ্টি করে, তাদের সৌন্দর্য বিকাশের জন্য
বিভিন্ন যুগ ও কালে নবী রসূলদের প্রেরণ করে মানুষকে সার্বিক বিষয়ের শিক্ষা
দিয়েছেন। নবী রসূলগণ উনাদের এ শিক্ষা হতে যারাই দূরে সরে সাম্প্রদায়িক ও পৈতৃক
রীতি নীতিকে গ্রহণ করেছে তারাই মহান আল্লাহ পাক উনার সত্য দ্বীন হতে বিচ্যুত
হয়েছে। ইসলামী উপকরণে এমন কোন বিষয় নেই যে সম্বন্ধে বর্ণনা নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেননি। নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা করেছেন তা অনুসরণ করার
মধ্যেই নির্ভর করে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি, একটি বিষয়ে স্মর্তব্য যে সুন্নাতে
যায়েদাহ তার হাদীছ শরীফ যতই যঈফ হোক না কেন আমলে সন্নিবেশ করা অন্য যে কোন
ব্যক্তিত্বের দ্বারা উদ্ঘাটিত বিষয় হতে উত্তম। এ দিকটা স্মরণ করে যদি আমরা আমল করি
তাহলে কোন বিতর্কের প্রশ্নই ওঠে না। আর অনুসরণ করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার, অন্য কারোর নয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حضرت جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ
رضى الله تعالى عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حِينَ أَتَاهُ عُمَرُ عليه
السلام، فَقَالَ : إِنَّا نَسْمَعُ أَحَادِيثَ مِنْ يَهُودَ تُعْجِبُنَا، أَفَتَرَى
أَنْ نَكْتُبَ بَعْضَهَا، فَقَالَ: أَمُتَهَوِّكُونَ أَنْتُمْ كَمَا تَهَوَّكَتِ الْيَهُودُ
وَالنَّصَارَى ، لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيَّةً ، وَلَوْ كَانَ مُوسَى
حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلا اتِّبَاعِي
অর্থ :
হযরত যাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, একদিন
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, হুযূর!
আমরা ইহুদীদের নিকট তাদের অনেক ধর্মীয় ঘটনা শুনে থাকি যা আমাদের নিকট অত্যান্তু
আশ্চর্য্যবোধ হয়;
উহা লিখে রাখার জন্য (আপনি) আমাদেরকে অনুমতি দেন কি? নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “তোমরাও
কি দ্বিধাগ্রস্থ রয়েছ (তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে)? যে ভাবে ইহুদী নাছারাগণ
দ্বিধাগ্রস্থ রয়েছে?
নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট সম্পূর্ণ উজ্জল ও পরিষ্কার দ্বীন
এনেছি। হযরত মুসা আলাইহিস সালামও যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনিও আমাকে অনুসরণ
করতেন।” (আহমদ বায়হাকী,
মেশকাত শরীফ) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণের গুরুত্বারোপের জন্য মহান আল্লাহ পাক
উনার নির্দেশ ও হাদীছ শরীফগুলো এখানে তুলে ধরা হলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
قل
ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور الرحيم-
অর্থ : “(হে নবী)
আপনি বলুন, তোমরা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার ভালবাসা পেতে চাও, তাহলে
আমার অনুসরণ কর। তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে ভালবাসবেন ও তোমাদের
গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন,
মহান আল্লাহ পাক তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
এখানে
মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি পাওয়ার শর্ত হলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিটি সুন্নতের অনুসরণের চেষ্টা করা।
কোন একটা সুন্নতের ক্ষেত্রেও যদি কি কেন প্রশ্ন উত্থাপন করা হয় তাহলে উক্ত আয়াত
শরীফ-এর সাথে বিরোধীতা করা হবে। কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুম মহান আল্লাহ পাক উনারই হুকুম। এ
প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক উনার সনদ হলো-
وما انكم الرسول فخذوه ومانماكم عنه فانتحوا-
অর্থ : “তোমাদের
রসূল যা নির্দেশ দিয়েছেন তা গ্রহণ কর, আর যা হতে নিষেধ করেছেন তা হতে
বিরত থাক।” এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার বাণী হলো-
عن ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله
عليه وسلم من اطاعنى فقد اطاع الله و من عصانى فقد عصى الله (بخارى شريف(
অর্থ :
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত তিনি বলেন- নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে আমার
আনুগত্য করল সে মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য করল, আর যে আমার নাফরমানী করল সে মহান
আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করল।” (বোখারী শরীফ) অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে-
قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم كل انى يدخلون الجنة الامن ابى فيل ومن ابى يا رسول
الله قال من اطانئ دخل الجنة ومن عضانى فقد انى-
অর্থ : “আমার
সমস্ত উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করল অস্বীকারকারী ব্যতীত। ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা জিজ্ঞেস করলেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কে সে
অস্বীকারকারী? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
উত্তর দিলেন “যে আমার অনুসরণ করল সেই জান্নাতে প্রবেশ করল, আর যে নাফরমানী করল সেই
অস্বীকারকারী।” (বোখারী শরীফ) অন্য পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে আছে-
عن
ابن عباس رضى الله تعالى عنه مرفوعا من تمسك بسنتى عند فساد امتى
فله اجر مئة شهيد.
অর্থ :
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ফিৎনা ও
ফাসাদের জামানায় আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতের উপর দৃঢ় থাকবে, বিনিময়ে
সে একশত শহীদের সওয়াব প্রাপ্ত হবে।” (বায়হাকী শরীফ) আরও বর্ণিত আছে-
عن
انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احب سنتى فقد
احبنى ومن احبنى كان معى فى الجنة (ترمذى شريف(
অর্থ :
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে
ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে মহব্বত করেছে সে ব্যক্তি মূলত আমাকেই মুহব্বত করেছে, আর যে
ব্যক্তি আমাকে মহব্বত করেছে সে আমার সাথেই বেহেস্তে থাকবে (তিরমিজি শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র
কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আলোকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, মহান
আল্লাহ রব্বুল আলামিন উনার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ
মানবিক জীবনের সর্বক্ষেত্রেই করা আবশ্যক। আর এতেই নিহীত রয়েছে মহান আল্লাহ পাক
উনার নৈকট্য হাসিলের চাবিকাঠি।
টুপি
যেহেতু মুসলমানীত্ব প্রকাশের বিশেষ চিহ্ন। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি টুপি সর্ববস্থায়ই পরিধান করেছেন, ইহার
নিশ্চয়ই অবকাঠামো বা নিয়ম পদ্ধতি রয়েছে, আর ইহাই আমাদের জন্য করণীয়। ইহার
বাইরে কিছু করার অর্থই হলো ইসলামী জিন্দেগী প্রতিপালনের ক্ষেত্রে নিজের আমিত্বকে
বজায় রাখা। টুপি সম্বন্ধে যেহেতু বিভিন্ন বক্তব্য পরিলক্ষিত তাই ইহার প্রকৃত আহকাম
বর্ণনা করে মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ-এর গবেষণা কেন্দ্র কুরআন শরীফ, হাদীছ
শরীফ বিভিন্ন ফিক্বহের কিতাব ও শব্দগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফতওয়া প্রদান করেছেন, যার ফলে
বিভিন্ন মত পার্থক্যের অবসান হবে। এখানে ফতওয়াটি তুলে ধরা হলো। প্রশ্নঃ গোল-লম্বা, উঁচু
কিস্তি, পাঁচকল্লি, জালি (নেট) দোপাট্টা,
জিন্নাহ উটয, লিয়াকত উটয, গান্ধি
ইত্যাদির মধ্যে কোন ধরণের টুপি পরিধান করা খাছ সুন্নত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন ধরণের টুপি পরিধান করতেন, অনেকে
বলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সব
ধরণের টুপি পরিধান করতেন ইহা কতটুকু সত্য? উত্তরঃ চারি টুকরা বিশিষ্ট গোল
টুপি পরিধান করা খাছ সুন্নত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা গোলটুপি
ব্যবহার করতেন। ইহার দলিল হলো-
عن ابى كبشة قال كان اصحابى رسول الله صلى الله عليه وسلم بلما فلنسوة
مدورة ميسكة مع الرأس ان كانت مبسوطة لازقة بروسهم غير مرتفعة عنها (ترمذى مشكوى
مرفاه(
অর্থ :
হযরত আবু কাবশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুগণ উনার টুপি ছিল গোল (মাথার সাথে উপরিদিক থেকে মিলিত), এমন
গোলাকার যা মাথার সাথে মিলে থাকত, মাথা হতে উঁচু বা ফাঁক ছিল না। (তিরমিযী, মেশকাত, মেরকাত)
عن
عائشة رضى الله تعالى عنه كانت له كمه بيضاء (الدمياتى، مواهب اللدنية قسطلانى، شك
مواهب الزرقانى(
অর্থ :
হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাদা গোল টুপি ছিল। (আদদিমিয়াতি
মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া কুসতুলানী, শাহে মাওয়া হেবুল যুরকানী)
كانت
كمام الصحابة نطح بطحا ائى لازقة بالر ائس غير ذاحبة فى الموأ الكمام جمع كمة و هى الفلنسوهة-
অর্থ :
ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের টুপি ছিল মাথার সাথে মিলিত গোল। তা
বাতাসে উড়ে যেত না। কিমাম এর জমা হল কম্মতুন আর ইহাই হল কালানসূয়া। (ইবনুল আছীর)
الکمۃ- گول ٹوپی
(المنجد، مصباح اللغات(
শব্দের
তাহকিকী অর্থ- আল কুম্মাহ শব্দের অর্থ গোলটুপি (আল মানজেদ মেছবাহুল লোগাত) كمام শব্দের বহুবচন كماة হলো এ সম্বন্ধে আল্লামা মাজদুদ্দিন ফিরোজাবাদী বলেন-
كان
كمام الصحابة بطعا ائى لازقة بالرائس غير ذاهبة فى المواء والكمام القلانس
(القلموس المحيط لسان العرب)
অর্থ : হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের টুপি ছিল গোল যা মাথার সাথে
লেগে থাকত। ফলে বাতাসে উড়ে যেত না, এবং কিমাম কালানিসকে বলে।
(কামুসুল মুহিত, লেসানুল আরব)
الكماة
القلنسوة المدورة لانما تغطى الرأس (الفاموس، لسان العرب مصباح الملغات(
অর্থ কু’ম্মাহ
শব্দের অর্থ হলো গোলটুপি। কেননা উহা মাথাকে ঢেকে রাখে। (আল কামুস, লেসানুল
আরব, মেছবাহুল লোগাত) মাথা যেহেতু
গোল যুক্তি হলো টুপিও গোল হওয়া উচিৎ। ফলে মাথার সাথে আটষাট হয়ে লেগে থাকবে বাতাসেও
টুপি উড়ে যাবে না। কিন্তু কিসতী টুপি মাথায় দিয়ে যদি কেউ বাতাসে দাঁড়ায় তাহলে তার
টুপি উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। আর পাঁচকল্লি টুপি পঞ্চ সেলাইয়ের কারণে উপরিদিকে
উঁচু হয়ে থাকে, মাথার সাথে লেগে থাকে না। যদিও লেগে থাকে তাই ইহা গোল হওয়া সত্ত্বেও খাছ
সুন্নত হবে না। কেননা হাদীছ শরীফ-এর সাথে ব্দম্ভ্রম্নব্জ শব্দও যুক্ত আছে। যার
অর্থ উপর দিক থেকে মাথার সাথে মিলে থাকা, চেপে থাকা। চোখা হয়ে থাকলে, ঢিলা
থাকলে, ফাঁক থাকলে তা এ শব্দের সাথে অর্থগত মিল থাকবে না। بطحا শব্দের তাহকীক- আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি بطحا শব্দের ব্যাখ্যায় বলেন-
چپیدہ
یسرنہ بلند رفتہ در ھوا بطحا نیز گویند بعنی بود کلاہ ہاے ایشان مدور و بسوط چپیدہ بسرنہ دراذو بلند بر رفتہ بجانب هوا
অর্থ :
বুতহুন শব্দের অর্থ মাথার সাথে লেগে থাকা উঁচু নহে যা বাতাসে উড়ে যায়, এবং এ
অর্থও করা যায়- এমন ধরণের টুপি উপর দিক থেকে মাথার তালুর সাথে চাপানো গোলাকার যা
মাথার সাথে লেগে থাকে এমন উঁচু নহে যা বাতাসে উড়ে যায়।
আশআতুল
লুমআত শরহে মিশকাত (৩য় খন্ড) শব্দগত তাহক্বীকী দ্বারাও প্রমাণিত হল যে, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের টুপি ছিল গোল যা মাথার চতুস্পার্শ্বেই লেগে
থাকত। শায়খুল হাদীছ হযরত আসগর হুসাইন
দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে-
حدیث می ہے کہ صحابئے
کرام رضی اللہ تعالی عنہ کی ٹوپی سر سے لگی ہوئی تھی (گلزار سنت)
অর্থ :
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ
উনাদের টুপি মাথার সাথে লেগে থাকত। (গোলজারে সুন্নাত)
ٹوپیا
آحضرت صلی اللہ علیہ و سلم کی صحابیوں کے سرسے لگی جوئی نہ بلند (مظاھر حق شرح
مشکوة)
অর্থ :
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনার গোল টুপি মাথার সাথে লেগে থাকত, উঁচু ছিল
না। (মোজাহেরে হক শরহে মিশকাত)
كان
له صلى الله عليه وسلم الفلانس يلبسما تحت العمانم وبغير العماثم (تاريخ الخلميس(
অর্থ :
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাগড়ীর
নীচে এবং পাগড়ী ব্যতীত টুপি পরিধান করতেন। (তারীখুল খামীস) শায়খ আব্দুল হক
মোহাদ্দেছ হযরত দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
اور
عمامہ کہ نیچ سر مبارک سے چمٹی سرسے پست و پیوست تھی بلند نہ تھی طاقیہ (جسے اجکل
کلاہ کہتے ہے) کی مانند اور حضور صلی اللہ
علیہ وسلم کی ٹوپی سفید تھی
অর্থ :
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার টুপি
পাগড়ীর নীচে মাথা মুবারক উনার সাথে আঁকড়িয়ে থাকত। এ টুপি মাথা হতে উঁচু ছিল না
লেগে থাকত। তাকিয়ার ন্যায় অর্থাৎ ঐ টুপি ছিল আজকাল কুলাহযা বলা হয়। আর হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার টুপি ছিল সাদা। (মাদারেজুন নবুওত ৬ষ্ঠ খন্ড)
عمامہ
کی نیچ سر سے لپٹی ہوئی ٹوپی ہوتی تھی انچی ٹوپی کبھی استعمال نہی فرمائی (سبرۃ
النبی(
অর্থ :
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার টুপি
(মাথা মুবারক উনার সাথে) চেপে থাকত, উঁচু টুপি কখনও ব্যবহার করেননি।
(সিরাতুন নবী, ২য় খন্ড)
عن
عبد الله بن سعيد قال رائت على بن الحسين فلنسوة بيضاء مصرية (مصنف ابن ابى شيبة(
হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন- আমি, হযরত আলী
ইবনে হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার (মাথার উপর) সাদা (মিশরী) টুপি দেখেছি। (মোছান্নেফ
ইবনে আবিশায়বা)
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাদা টুপি
পরিধান করতেন। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে-
عن
ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يلبس القلنسوة
البيضاء وعن ابى هريرة قال رائت رسول الله صلى الله عليه وسلم فلنسوة بيضاء شابة
(المختاصر الوفاء(
অর্থ :
হযরত ইবনে উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার হতে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাদা টুপি পরিধান
করেছিলেন। হযরত আবু হুরাইরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- তিনি
বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার মাথা মুবারক উনার মধ্যে শাম দেশীয় সাদা টুপি দেখেছি। (মোখতাছারুল ওফা) নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাদা (মাথার
সাথে) চাপানো টুপি পরতেন এবং সুজনীর ন্যায় মোটা কাপড়ের টুপিও পড়তেন। (সিরাজুল
মুনীর, উসওয়ায়ে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ উনারা যে সমস্ত টুপি পরিধান করতেন এতক্ষন উনার বর্ণনা পেশ করা হলো। যে
সমস্ত টুপি পরিধান করা নিষেধ, মকরূহ বা খাছ সুন্নত নহে তার বিবরণ এখানে দেয়া হলো- কিসতি
টুপি বা যে কোন উঁচু টুপি যা মাথার সাথে মিশে থাকে না তা পরা মকরূহ বিখ্যাত ফতওয়ার
কিতাব আলমগীরিতে উল্লেখ আছে-
تكره
الصلوة مع البرنس (فتاوى عتابية تتارخانية، فتاوى علمكيريه، صر ১০৬)
অর্থ :
বুরনুস (উঁচু, লম্বা যা মাথার সাথে এঁটে থাকে না) টুপি পরিধান করে নামাজ পড়া মকরূহ (তাহরীমি)
(ফতোয়া এতাবিয়া, তাতারখানিয়া,
ফতোয়ায়ে আলমগীরি ১ম খন্ড ১০৬ পৃষ্ঠা) البرنس শব্দের তাহকিকী।
البرنس
قال الجوھری- البرنس طویلۃ و کان النسالا یلبسونھا فی صرر الاسلام انہ غیر غربی و
فی حدیث حضرت عمر فاروق علیہ السلام سقط
البرنس عن رأس (لسلان العرب(
অর্থ :
ইমাম জাওহারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, বুরনুস লম্বা টুপিকে বলে, যা
ইসলামের প্রাথমিক যুগে আবিদ ও যাহিদ লোকেরা পরিধান করত, ইহা আরবী
টুপি নয়। হযরত উমর আলাইহিস সালাম তিনি আমার মাথা হতে বরনুস টুপি ফেলে দিয়েছেন
(লেসানুল আরব)
برنس
لنبی ٹوپی جوراھب پہنئے (لغات ھرا، لغات کشوری)
অর্থ :
বুরনুস লম্বা টুপি যা খৃষ্টান রাহিবগণ (পাদ্রি) পরিধান করে। (লোগাতে হীরা, লোগাতে
কিশওয়ারী)
برنس
ایک قسم کی ٹوپی جوانش پرست استعمال کرتے ہے (لغات سعیدی)
অর্থ :
বুরনুস এক প্রকার টুপি,
যা অগ্নি উপাসকগণ ব্যবহার করে। (লোগাতে সাঈদী)
البرنس-
وہ لنبی ٹوپی جو اغاز اسلام میی پینتی جائی تھی (المنجد(
অর্থ :
বুরনুস ঐ লম্বা টুপিকে বলে,
যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান করা হতো। (আল মানজিদ) হাফেজে
হাদীছ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
و
فذكره بعض السلف ليس البرنس لانه كان من لباس الرصبان و قد سئل مالك عنه فقال لا
بائس به قيل فانه من لبرنس النصارى قال كان يلبس ههنا و قال حضرت عبد الله بن ابى
بكر رضى الله تعالى عنه ما كان احد من القراء الا له برنس و اخر الطبرانى من حديث
حضرت ابى قرصافة رضى الله تعالى عنه قال كسان رسول الله صلى الله عليه وسلم برنسا
فقال البسه وسنره من لا يعرف و لعل من كره اخذ بعموم حديث على رفعه اباكم و لبرنس
الرهبان فانه من تزيابهم او تشبه فليس منى اخرجه الطبرانى فى الاوسط بسنده لا بائس
به (فتح البارى-১/২৭২)
অর্থ :
সলফে সালেহীনগণ উনাদের কেহ কেহ বুরনুস (লম্বা ও উঁচু) টুপি পরিধান করাকে মকরূহ মনে
করতেন। কেননা এটা খৃষ্টান সন্নাসীদের পোশাক। এ ব্যাপারে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এতে কোন অসুবিধা নাই। বলা হল, নিশ্চয়ই
এটা খৃষ্টানদের পোশাক। তিনি বলেন, এ পোশাক এখানে ব্যবহৃত হচ্ছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর
তিনি বলেন, এমন কোন ক্বারী সাহেব ছিলেন না যার বুরনুস টুপি ছিল না। ইমাম তিবরানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত আবু কুরছাফাহ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি বলেন- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বুরনুস টুপি পরিধান করায়েছেন। অতঃপর বললেন, পরিধান
কর। এর সনদ অপরিচিত এবং যারা একে মকরূহ বলেছেন সম্ভবত উনারা পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার গুরুত্বের কারণে আম অর্থ গ্রহণ করে বলেছেন। (নতুবা খাছ অর্থ গ্রহণ করলে
হারামের অন্তুর্ভূক্ত হয়ে যায়)। ইমাম তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আওছাত’ কিতাবে
বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সাবধান!
তোমরা খৃষ্টান সন্নাসীদের পোশাক হতে বাঁচ। নিশ্চয়ই যারা খৃষ্টানী পোশাক দ্বারা
নিজেদেরকে সুসজ্জিত করে অথবা খৃষ্টানদের অনুরূপ পোশাক পরে, তারা
আমার উম্মতের অন্তুর্ভূক্ত নয়।” এ হাদীছ শরীফের সনদের কোন সন্দেহ নেই। (ফতহুল বারী ফি শরহে
বোখারী ১০ম খন্ড,
২৭২ পৃষ্ঠা)
قد
لبس الرنس جماعة من السلف منهم الصديق وابن عباس وابو قناده وابن ابى اوفى وغيره
وكره اخرون (لكونه يشبه النصارى) منهم ابن عمر وسالم والحسان و محمد وابن جبير
(عمدة القارى فى شرح البخارى(
অর্থ :
সলফে ছালেহীনদের এক জামাত বুরনুস টুপি পরিধান করেছেন তন্মধ্যে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক
আলাইহিস সালাম, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবু কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, হযরত ইবনে আবু আওকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য। আর অন্যান্যদের
বুরনুস টুপিকে (নাছারাদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে) মকরূহ জেনেছেন। উনাদের মধ্যে
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ছালীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু, হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুহম্মদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু এবং হযরত ইবনে জোবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা রয়েছেন। (উমদাতুল
কারী ফি শরহে বোখারী) কিস্তি টুপি বা দ্বোপাট্টা টুপি সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলাম
ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- ইবলিস শয়তান একবার হযরত মুসা আলাইহিস
সালাম উনার মজলিসে একটি লম্বা টুপি পরিধান করে উপস্থিত হয়েছিল। (আল মুরশিদুল আমিন)
হযরত শায়খুল ইসলাম ইমামুল আইম্মা
ফরিদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জেশকর রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনাদের মতে টুপি দু’প্রকার। লাতিয়া ও নাশেজা। লাতিয়াঃ- যে টুপি মাথার সাথে লেগে থাকে উহাকে লাতিয়া
বলে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাতিয়া
টুপি পরিধান করতেন। সুফী সম্প্রদায়ও এ টুপি পরিধান করে থাকেন। নাশেজাঃ- আর যে টুপি
উঁচু ও খাড়া তাকে নাশেজা বলে। কোন কোন বুজুর্গ এও পরে থাকেন। এর রং কালো। নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহা; পরিধান
করা পরিহার করেছেন।
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার বিখ্যাত কিতাব ‘নববী আল লাইল ওয়ান নাহার’ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি সফরের সময় এমন টুপি পরিধান করতেন, যা মাথা মুবারক হতে উপরে উঁচু হয়ে
থাকত এবং প্রয়োজনবোধে উহা সামনে রেখে নামাজ পড়তেন (ইহাও গোল টুপি ছিল)। নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথম দিকে
ইহা পরিধান করতেন। ইহার নাম বুরনুস টুপি। পরবর্তীতে ইহা পরিধান করা পরিহার করেছেন।
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তিনটি টুপি
ছিল। একটি সাদা এবং সুঁচি কাজ করা ছিল। দ্বিতীয়টি ইয়েমানী চাদর দ্বারা তৈরী ছিল।
তৃতীয়টি কানওয়ালা ছিল। তিনি উহা সফরে ব্যবহার করতেন। আবার কখনও কখনও নামাজ পড়ার
সময় খুলে সম্মুখে রেখে দিতেন। (তিবরানী ও বায়হাকী) (বিঃদ্রঃ) পরবর্তীতে তিনি উহা
পরিধান করা পরিহার করেছেন। কোট, প্যান্ট, আলবাট, টেরী কলার ওয়ালা জামা, ওয়াছ কোট, পার্সী কোট, সাহেবী টুপি, ইংরেজী
জুতা এবং কাছামারা ইত্যাদি নাজায়েজ কাজ করবেন না। কিস্তি টুপি আমি পছন্দ করি না।
(মলফুজাত ফুরফুরা শরীফ-এর মোজাদ্দীদে জামান, কুতুবুল আলম শায়খুল মিল্লাত, আমীরুশ
শরীয়ত ও তরিকত হযরত মাওলানা পীর আবু বকর ছিদ্দীকি রহমতুল্লাহি আলাইহি সাহেব) ফুরফুরা শরীফ উনার পীর সাহেব কিবলা
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের প্রতি বিশেষভাবে জোর দিতেন। এ গোলটুপি সুন্নত হিসেবে
তখন অখণ্ড বাংলার মুসলমানদের মধ্যে প্রচলন করেন। হুযূর কিবলা সর্বদা গোল টুপি
পরতেন। দু’পাট্টা টুপি কখনও পরেননি। মারওয়ারীদের সাথে অনুকরণ হয় বলে উনার মুরীদদেরকে
ঐরূপ টুপি পরতে নিষেধ করতেন। (ফুরফুরা শরীফের পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
মত ও পথ) হাফেজে হাদীছ হযরত আল্লামা মাওলানা রুহুল আমীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
বলেন, “গোল কল্লীদার এ সমস্ত টুপি ব্যবহার করা জায়েজ হবে। কিস্তি টুপি এখন কতক
মুসলমান ব্যবহার করে থাকেন। উহাতে হিন্দুদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার আশংকা হয়, তারা উহা
লম্বালম্বিভাবে মাথায় দিয়ে থাকে।”
এ বিষয়ে
গোল টুপি পরতে হবে,
না দু’পাট্টা এবং গোল টুপি মাসনুন হ্যায় ইয়া দুপাল্লা (নামক উর্দু
ফতওয়া) বের হয়েছে। তাতে হাদীছ শরীফ হতে বহু প্রমাণ রয়েছে এবং বাংলার ও
হিন্দুস্থানের মুফতীগণের ফতওয়াসহ প্রচার হয়েছে। তাতে আরো লেখা আছে যে, মক্কা
শরীফ ও মদীনা শরীফ এবং সমগ্র আরবে গোলটুপি ব্যবহার হয়। দু’পাটা
টুপি ব্যবহার হয় না।
মোটকথা
মাথা গোল তাই টুপিও গোল হওয়া চাই। (ফতোয়ায়ে আমিনীয়া ২য় খন্ড) হযরত খাজা
কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকি আউসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পীর সাহেব ইমামুল হিনদ
খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমেরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হতে বলে দেন, হে
দরবেশগণ! চার টুকরা নির্মিত টুপিই প্রকৃত টুপি। হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম উনার
বেহেস্ত হতে এ টুপি এনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে পরিধান করতে দিয়ে বললেন, আপনি পরিধান করুন এবং আপনি যাকে
ইচ্ছা তাকে দিয়ে খলিফা নিযুক্ত করুন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহা পরিধান করতেন। (ইসরারুল আউলিয়া, আনিসুল
আরওয়াহ, দলিলুল আরেফিন)
রশীদ
আহম্মেদ গাঙ্গুহী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
گول
ٹوپی درست بے مگر جس میی شابہت کسی قوم ہے دین کی ہو وہ درست نہیں فنادی
رشیدیۃ ص:৪৮৩
অর্থ :
গোল টুপি পরা জায়িয। কিন্তু যদ্বারা কোন বিজাতীয় সম্প্রদায়ের সহিত মোশাবাহ হয়ো যায়
উহা পরা জায়েজ নহে। (ফতোয়ায়ে রাশেদীয়া ৪৮৩ পৃষ্ঠা)
عن
ابن عمر قال قال رسول الله من تشبه بقوم فتو منهم (ابوداؤد شريف(
অর্থ :
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “যে
ব্যক্তি কওম বা সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের অন্তুর্ভূক্ত হবে।” (আবু দাউদ, আহমদ
শরীফ) কিস্তি (লম্বা) টুপি খাছ মারওয়ারীদের পোশাক কিন্তু এখন কতেক মুসলমান উহা
ব্যবহার করে থাকেন। ইহাতে হিন্দুদের সাথে তাসবীহ হওয়ার আশংকা হয়, গোল টুপি
জায়িয। (ফতোয়ায়ে আমিনীয়া,
২য় খন্ড)
উপরোক্ত
দলীলসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, চারি টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম তিনি
বেহেস্ত থেকে এনে দিয়েছিলেন তাই খাছ সুন্নত। গোল টুপি যা মাথার সাথে চেপে থাকে তা
ব্যবহার করা সুন্নত। এছাড়া কিস্তি টুপি, উঁচু টুপি ইত্যাদি মকরূহ। আর
গান্ধী টুপি, নেহেরু টুপি,
জিন্নাহ টুপি ইত্যাদি ধরণের টুপি যেহেতু বিধর্মীদের সাথে
তাশবীহ অর্থাৎ সাদৃশ্য থাকে তাই ইহা জায়িয নেই। তবে হ্যাঁ, যদি কারো
নিকট টুপি না থাকে তবে খালি মাথায় নামাজ হয়ে যাবে, সর্বাবস্থায় এরূপ করা মকরূহ। যারা
একথা বলে যে, যে কোন একটি টুপি হলেই চলে বা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সব ধরণের টুপিই ব্যবহার করেছেন, তাদের এ
কথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ ব্যতীত আর কিছুই নয়। এ সমস্ত লোকদের সম্পর্কে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
من
كذب على مقعمد انلبنبوا مقعده من النار (بخارى شريف(
অর্থ :
যে ব্যক্তি মিথ্যা অপবাদ দেবে অর্থাৎ আমি যা বলি নাই তা বলেছি বলবে ও যা বলেছি তা
বলি নাই বলবে, তাদের কর্তব্য তারা যেন দুনিয়ায় থাকা অবস্থায় তাদের ঠিকানা জাহান্নামে ঠিক করে
নেয়। (বোখারী শরীফ) মুসলমান হয়ে নিজের ব্যক্তিগত মত খাটিয়ে যা ইচ্ছা তা গ্রহণ ও
বর্জন করতে তা কখনই গ্রহণীয় হবে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী হলো-
ومن
يبنع غير الاسلام دينا فلن يغبل منه و هو فى الاخرة من الخلدربن.
অর্থ : “কেহ
ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন বা নিয়মনীতি গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনই কবুল করা হবে
না। এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তুর্ভূক্ত হবে।” মহান আল্লাহ পাক তিনি আরও বলেন-
بابما الذين امنوا اد خلوا فى السلم كافة
অর্থ : “হে
ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পুরোপুরিভাবে দখিল হয়ে যাও।” ইহা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি যে নীতিতে চলেছেন ঠিক সে নীতি অনুযায়ীই আমাদের চলা উচিৎ। তিনি
যেহেতু গোল টুপি বিশেষ করে চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি ব্যবহার করেছেন, তাই আমাদের অনুরূপ মত গ্রহণ করা বাঞ্চনীয় ভিন্ন কোন মত
গ্রহণ করার মাধ্যমে নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতের পরিচয় পাওয়া যাবে না। (আমীন)