গোলটুপি ব্যতীত অন্যান্য টুপি মাকরূহ হওয়ার ফতওয়া ( ৪ নং )


খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
গবেষণা কেন্দ্র
মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামাজ ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাজে বা অন্যান্য সময় কোরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামাজ বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া,  প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ও দোয়াল্লাীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফত্ওয়া প্রকাশ করার পর ১৭তম ফতওয়া হিসেবে খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রকাশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]

মাসিক আল বাইয়্যিনাতে টুপি সম্পর্কে পুণরায় ফতওয়া দেয়ার কারণ
            (বাতিলের আতঙ্ক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যায় টুপি সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক ফতওয়া প্রদান করা হয়েছিল। যাতে প্রায় ৫০টিরও অধিক নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে খাছ সুন্নতী টুপির বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছিল।
            টুপির উক্ত ফতওয়াটি সত্বান্বেষী ও সুন্নতের আশেক্ব মুসলমানগণের নিকট এতই সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য হয় যে, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই টুপির ফতওয়া সম্বলিত কপিখানার মজুদ সংখ্যাগুলিও ফুরিয়ে যায়। যার ফলে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগণিত পাঠক, টুপি সম্পর্কিত মুল্যবান ফতওয়াটি সংগ্রহে রাখতে ব্যর্থ হয়। তাই তারা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অন্যতম বিভাগ- ফতওয়া বিভাগেটুপি সম্পর্কিত ফতওয়াটি পুণরায় প্রকাশ করার জন্য পুনঃ পুনঃ আবেদন জানায়।
            এতদ্বপ্রেক্ষিতে অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগনিত পাঠকের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং হক্ব তালাশী ও সুন্নতের আশেক্ব, মুসলমানগণের ঈমান ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে সর্বপোরি মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিলের উদ্যেশ্যে টুপি সম্পর্কিত ফতওয়াটি কিছুটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও সংশোধনের মাধ্যমে এবং আরো অধিক দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রকাশ করা হলো। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফেএরশাদ করেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.

অর্থঃ- যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
            অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.                     
অর্থঃ- যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়,  জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
            অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।
            কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকারঅগণিত পাঠক, গ্রাহক ও হক্ব তালাশী বা সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কেশরীয়তসম্মত তথা কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে ফতওয়া দেয়া হলো।
            এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,

من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
            বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
            কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “খাছ সুন্নতী টুপি ও তার  সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্র্কে  সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন  প্রত্যেকেই খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
            মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থঃ- এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
            এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মোহাজির (রাঃ)গণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ) দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ (রাঃ) বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মাআরেফ)
            অতএব, খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীস শরীফের মেছদাক হওয়াই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে টুপি সম্পর্কিত ফতওয়া পুণরায় প্রকাশ করার মূল কারণ।)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
সুন্নত অনুসরণে হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণ
            হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) যেরূপ সুন্নতের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম-পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করে মহান আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি হাছিল করেছেন। তদ্রুপ তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, ইমাম-মুজ্তাহিদ তথা আউলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণও শুধুমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত সমূহের পরিপূর্ণ ও সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম অনুসরণ ও অনুকরণ করেই মহান আল্লাহ্ পাক-এর খাছ রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি হাছিল করেছেন।
            মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করা ব্যতীত কস্মিনকালেও মহান আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী হাছিল করা সম্ভব নয়। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেন,
قل انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفوررحيم.
অর্থঃ- হে হাবীব আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভালবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলেই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে মহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুণাহ্খাতা সমূহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)
            উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক শর্তারোপ করেছেন এই বলে যে, যদি আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত লাভ করতে হয়, তবে তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। নচেৎ কখনো মহান আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত লাভ করা সম্ভব নয়। কেননা উছূল রয়েছে,

اذا فات الشرط فات المشروط.
অর্থাৎ যখন শর্ত বাতিল হয়ে যায়, তখন মাশ্রুতও বাতিল হয়ে যায়।
            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, যাঁরাই মহান আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত বা ভালবাসা লাভ করেছেন, তাঁরা মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তথা তাঁর সুন্নতসমূহকে পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করার কারণেই লাভ করেছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয় যে, বিশ্ব বিখ্যাত ও মশহুর আল্লাহ্র ওলী, সুলতানুল আরেফীন হযরত বিশর হাফী (রঃ) একবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপে¦ দেখেন। স্বপে¦ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত বিশর হাফী (রঃ)কে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে বিশর হাফী! তোমার কি জানা রয়েছে যে, মহান আল্লাহ্ পাক তোমাকে বর্তমান যামানার সমসাময়িক সকল আউলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণের উপর অধিক মর্যাদা দান করেছেন?” হযরত বিশর হাফী (রঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার তা জানা নেই।
            অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “কি কারণে তোমাকে সকল আউলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, তা কি তোমার জানা রয়েছে?” হযরত বিশর হাফী (রঃ) বললেন, আমার তাও জানা নেই। জবাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে মহান আল্লাহ্ পাক তোমাকে সমসাময়িক সকল আউলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যেমন- (১) তুমি আমার আহ্লে বাইত, উম্মুল মোমেনীন ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের প্রতি পরিপূর্ণ মহব্বত রাখ এবং তাযীম কর।
(২) তুমি সকল আউলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণকে তাযীম-তাকরীম কর।
(৩) তুমি সাধারণ লোকদের নসীহত করে থাক।
(৪) এবং তুমি আমার সুন্নত সমূহের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুরসণ-অনুকরণ কর। তাই মহান আল্লাহ্ পাক তোমাকে সমসাময়িক সকল আউলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।” (সুবহানাল্লাহ্)
            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, সুন্নত সমূহের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করাই হচ্ছে মহান আল্লাহ্ পাক-এর খাছ রেজামন্দী হাছিলের একমাত্র মাধ্যম। আর তাই সকল আউলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণ সুন্নত সমূহের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন এবং করছেন। নিম্নে হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণের সুন্নত পালনের কতিপয় ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ উল্লেখ করা হলো-
সুন্নত অনুসরণে ইমামে আযম হযরত আবূ হানীফা (রঃ)
            বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বাহের কিতাব জামিউর রুমুযেউল্লেখ আছে যে, ইমামুল আইম্মা, ইমামুল মুজ্তাহিদীন, হাকীমুল হাদীস, ইমামুল আযম হযরত আবূ হানীফা (রঃ) প্রথম জীবনে প্রায় ২০ বৎসর ওযুর সময় পায়ের অঙ্গুলীসমূহ উপর দিক থেকে খিলাল করেছেন। পরবর্তীতে যখন তাহ্ক্বীক্ব হলো যে, ওযু করার সময় পায়ের অঙ্গুলীসমূহ নীচের দিক থেকে খিলাল করা সুন্নত বা মুস্তাহাব। তখন থেকে পিছনের প্রায় বিশ বৎসরের নামাজ পুণরায় ক্বাযা আদায় করেন। (সুবহানাল্লাহ্)
            উল্লেখ্য, শরীয়তে সুন্নত বা মুস্তাহাব তরকের কারণে নামাজ দোহ্রানো ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র সুন্নতের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করার উদ্দেশ্যেই অঙ্গুলী খিলালের উক্ত সুন্নত বা মুস্তাহাব আদায় করা সহ প্রায় ২০ বৎসরের নামাজ দোহ্রায়ে আদায় করেছেন।
সুন্নত পালনে সাইয়্যিদুল
আউলিয়া হযরত বড় পীর
সাহেব (রঃ)-এর দৃঢ়তা
            কিতাবে উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আযম বড় পীর সাহেব (রঃ)-এর একজন মুরীদ ছিলেন, যিনি বাদশার পোশাক বা কোর্তা সেলাই করতেন। বাদশাহ্ তাঁকে যে পরিমাণ বিণিময় প্রদান করতেন, তাতে তাঁর সংসার এক বৎসর চলে যেত।
            উক্ত মুরীদ একবার বাদশার জন্য একখানা কোর্তা সেলাই করলেন, কিন্তু কোর্তাটি কিছুটা ছোট হয়ে যায়। তাই বাদশা উক্ত কোর্তাটি গ্রহণও করলোনা এবং তাকে কোন বিনিময়ও প্রদান করলোনা। এতে উক্ত মুরীদ খুব ব্যথিত ও চিন্তিত হলেন। কারণ বাাদশার দেয়া বিনিময় দ্বারাই তিনি এক বৎসর সংসার চালিয়ে থাকেন। এদিকে হযরত বড় পীর সাহেব (রঃ)-এর আরেকজন মুরীদ উক্ত মুরীদকে এই বলে পরামর্শ দিল যে, তুমি হযরত বড় পীর সাহেব (রঃ)-এর নিকট এ ব্যাপারটি খুলে বলো। তাই উক্ত মুরীদ ব্যাপারটি হযরত বড় পীর সাহেব (রঃ)-এর নিকট খুলে বললো। তখন হযরত বড় পীর সাহেব (রঃ) বললেন, ঠিক আছে কোর্তাটি আমাকে দিয়ে দাও। অতঃপর তিনি নিজ পকেটে হাত ঢুকালেন এবং হাতে যা আসলো, তা সবই উক্ত মুরীদকে প্রদান করলেন। দেখা গেল যে, বাদশা উক্ত মুরীদকে কোর্তার বিনিময়ে যে মূল্য প্রদান করতেন তার চেয়েও বহুগুণ বেশী মূল্য হযরত বড় পীর সাহেব (রঃ) তাকে দিয়েছেন।
            তারপর সাইয়্যিদুল আওলিয়া, হযরত বড় পীর সাহেব (রঃ) কোর্তাটি গায়ে দিয়ে দেখেন যে, কোর্তাটি নিছফুস্সাক্ব থেকে ছোট, তাই তিনি উক্ত মুরীদকে বললেন, আমার নিকট চট রয়েছে, তুমি চট জোড়া দিয়ে কোর্তাটি নিছফুস্সাক্ব করে দাও। কারণ নিছফুস্সাক্ব না হওয়া পর্যন্ত এ কোর্তা দ্বারা কখনোই সুন্নত আদায় হবেনা। (সুবহানাল্লাহ্)
            এবার ফিকির করে দেখুন, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, গাউসুল আযম হযরত বড় পীর সাহেব (রঃ) সুন্নতের কতটুকু অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। মূলতঃ সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার কারণেই তিনি এত বিরাট মর্যাদা বা সফলতা লাভ করেছেন।
সুন্নত অনুসরণের ক্ষেত্রে সুলতানুল হিন্দ খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ)-এর একনিষ্ঠতা
            সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্ খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ) ছিলেন সুন্নতের একনিষ্ঠ অনুসারী। তিনি যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পরিপূর্ণ সুন্নতের অনুসরণ করতেন। নিন্মোক্ত ঘটনাই তার বাস্তব প্রমাণ-
            গরীবে নেওয়াজ, খাজা হাবীবুল্লাহ্ (রঃ)-এর বয়স মোবারক যখন নব্বই, তখন তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশেষ সাক্ষাত লাভ করলেন। যদিও আল্লাহ্ ওয়ালাগণ সর্বদাই হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাক্ষাত লাভ করে থাকেন। যখন বিশেষ সাক্ষাত লাভ করলেন, তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, “হে মুঈনুদ্দীন (দ্বীনের সাহায্যকারী)! তুমি তো সত্যিই আমার দ্বীনের সাহায্যকারী, তুমি আমার সকল সুন্নতই পালন করলে, তবে একটি সুন্নত এখনো বাকী রয়ে গেল কেন ?”
            গরীবে নেওয়াজ, খাজা হাবীবুল্লাহ্ (রঃ) পরক্ষণে চিন্তা করে বুঝতে পারলেন যে, আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দ্বীনের খেদমতে ব্যস্ত থাকার কারণে তখনো বিবাহ করেননি। তাই তিনি নব্বই বৎসর বয়স মোবারকে পর পর দুটি বিবাহ করে এ সুন্নতও আদায় করলেন। (সুবহানাল্লাহ্)
সুন্নত অনুসরণে কাইউমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী (রঃ)
            কাইউমে আউয়াল আফযালুল আউলিয়া মুহিউস্ সুন্নাহ, মাহিউল বিদ্য়াত, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী (রঃ) সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পূঙ্খানুপূঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করতেন এবং সুন্নতের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করতেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে যে, কাইউমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী (রঃ) একদিন তাঁর এক খাদেমকে কিছু লবঙ্গ বা লং আনার নির্দেশ দিলেন। তাঁর খাদেম লবঙ্গ এনেছে, কিন্তু জোড় সংখ্যক। আফযালুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী (রঃ) বললেন, আফসূস! আমার খাদেম সুন্নতের আমলও শিখল না। বেজোড় সংখ্যক হলো সুন্নত আর আমার খাদেম জোড় সংখ্যক লবঙ্গ নিয়ে এসেছে।
            কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, কাইউমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফেছানী (রঃ) যখন পানি পান করতেন, তখন খেয়াল করতেন তা ডান দিক দিয়ে ভিতরে যাচ্ছে কিনা। আর কোন খাদ্যদ্রব্য চিবানোর সময় খেয়াল করতেন তা ডান দিক দিয়ে চিবানো হচ্ছে কিনা। এবার ফিকির করে দেখুন হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী (রঃ) সুন্নতের কতটুকু তাহ্ক্বীক্ব করেছেন। আর তাই কাইউমে যামান, আফজালুল আওলিয়া, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী (রঃ) তাঁর বিখ্যাত ও মশহুর কিতাবমকতুবাত শরীফেও অন্যান্য কিতাবে ক্বামীছ গোল, নেছ্ফেসাক্ব ও গুটলীযুক্ত হওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি আরো লিখেছেন, পুরুষ ও মহিলার ক্বামীছের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য থাকবে। বিস্তারিত আলোচনার পর উল্লেখ করেন- পুরুষের গেরেবান বা গুটলী হবে সম্মুখে সিনার দিকে। আর মহিলাদের গুটলী হবে কাঁধের উপর। তিনি নিজেও উক্ত ক্বামীছ ব্যবহার করতেন এবং অন্যকেও ব্যবহার করতে বলেছেন। তিনি আরো বলেন যে, হাদীস শরীফে রয়েছে,

من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجر مائة شهيد.
অর্থঃ- আমার উম্মতের ফিৎনার সময় আমার যে উম্মত আমার একটি সুন্নত আঁকড়িয়ে ধরবে, সে ব্যক্তি একশত শহীদের সওয়াব পাবে।
            উল্লেখ্য, কাইউমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী (রঃ)কে জিজ্ঞাসা করা হলো- হুজুর একটি সুন্নত আদায় করলে একশত শহীদের সওয়াব পাওয়া যাবে, না সবগুলো সুন্নত আদায় করলে? জবাবে হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী (রঃ) বলেন, “যদি কেউ একটি সুন্নত মৃত্যু পর্যন্ত আঁকড়িয়ে থাকতে পারে, তবেই তাকে একশত শহীদের সওয়াব দেয়া হবে।” (সুবহানাল্লাহ্)
            উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, ইমাম-মুজ্তাহিদ তথা আউলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণ প্রতি ক্ষেত্রেই সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন। আর সুন্নত সমূহের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার কারণেই তাঁরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী লাভ করেছেন তথা হাবীবুল্লাহ্ বা আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত লাভ করেছেন।
সুন্নতের আমল ব্যতীত আল্লাহ্ পাক-এর ওলী হওয়া সম্ভব নয়
 সুতরাং বর্তমানেও যদি কেউ হক্কানী ওলী হতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। সুন্নতের খেলাফ কাজ করে কারো পক্ষেই হক্কানী ওলী হওয়া সম্ভব নয়। তাই দেখা যায় ওলী আল্লাহ্গণ ভুলবশতঃ বা অনিচ্ছাকৃতভাবেও কোন সুন্নত তরক করেছেন, আল্লাহ্ পাক সাথে সাথেই তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে কুতুবুল আকতাব, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী (রঃ) তাঁর বিখ্যাত কিতাব দলীলুল আরেফীনে উল্লেখ করেন, সুলতানুল হিন্দ গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ) বর্ণনা করেন, বিখ্যাত বুযুর্গ, সাইয়্যিদুত্ ত্বইফা হযরত ফুযায়েল বিন আয়াজ (রঃ) একবার ওযুর সময় হাত ধৌত করতে গিয়ে তিনবারের স্থলে দুবার ধুয়েছিলেন। রাতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বপে¦ তাঁকে বললেন, “হে ফুযায়েল নিশ্চয়ই তুমি জান আমার সুন্নতের অবহেলার অর্থ কি?” হযরত ফুযায়েল বিন আয়াজ (রঃ) বললেন, স্বপে¦ দেখার পর আতঙ্কে উঠে দাঁড়ালাম এবং নতুন করে ওযু করলাম এবং সুন্নত তরকের প্রায়শ্চিত স্বরূপ এক বছর পর্যন্ত প্রতিদিন ৫০০ রাকায়াত করে নামাজ পড়া অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে রেখেছিলাম। অন্যত্র বর্ণিত আছে, এক বৎসর নফল রোজা আদায় করেছেন। (সুবহানাল্লাহ্)
            তিনি উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ করেন যে, আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত, হযরত ইমাম ছুফিয়ান ছাওরী (রঃ) একবার মসজিদে প্রবেশ করার সময় ডান পায়ের স্থলে বাম পা প্রথমে প্রবেশ করালেন, আর সাথে সাথেই গায়েবী নেদা বা আওয়াজ হলো- হে ছাওর (ষাঁড়)। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক তাঁকে জানিয়ে দিলেন যে, আমার রাসূলের সুন্নতের খেলাফ আমল করে আমার ওলী হওয়া সম্ভব নয়।
            কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, বিখ্যাত বুযুর্গ হযরত আজল সিরাজী (রঃ) এক দিন অজু করছিলেন, অজুর মধ্যে হাত ধৌত করার সময় হাতের অঙ্গুলী খিলাল করেননি। সাথে সাথে গায়েবী আওয়াজ হলো- হে আজল সিরাজী! তুমি আমার মহব্বতের দাবীদার হয়ে কেন আমার হাবীবের সুন্নত তরক করলে? এতে তিনি এত ভীত হলেন যে, পরবর্তীতে কখনো আকাশের দিকে তাকাননি। এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, অজুর সময় সুন্নত তরক করায় আমার প্রতি নেদা করা হয়েছে, তাই আমি লজ্ঝায় আকাশের দিকে তাকাই না।
            কাজেই বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, যারা প্রতি ক্ষেত্রে সুন্নতের অনুসরণ করেনা বরং অনেক ক্ষেত্রেই ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় দায়েমীভাবে সুন্নতের খেলাফ আমল করে, অথচ মহান আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ হতে তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়না। তারা নিশ্চিতরূপে হক্কানী ওলী নয়। মূলকথা হলো- মাহান আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত ও খাছ রেজামন্দী হাছিল করতে হলে সুন্নতের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম অনুসরণ করতে হবে, তথা মাথায় ব্যবহারকৃত টুপি খানাও সুন্নত মোতাবেক হতে হবে।
লম্বা, উঁচু ও পাঁচ কল্লি টুপির
ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা
            হাদীস শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত যে, “চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিই হচ্ছে খাছ সুন্নতী টুপি।কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি ব্যবহার করতেন।
যেমন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর টুপি মোবারক সম্পর্কে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عن عائشة رضى الله عنها قالت- كانت له كمة بيضاء.
অর্থঃ- হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাদা রংয়ের গোল টুপি ছিল।” (আদ্দিমিয়াতী, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া লিল কুস্তলানী, শরহে মাওয়াহেব লিয্যুরক্বানী)
            আর হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) গনের টুপি মোবারক সম্পর্কে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,

عن ابى كبشة قال- كان كمام اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم يطحا.
অর্থঃ- হযরত আবু কাবশা (রাঃ) বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবী (রাঃ)গণের টুপি ছিল গোল।” (তিরমিযী, মেশকাত, মায়ারেফুস্ সুনান, মায়ারেফে মাদানী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব।)
            হাদীস শরীফের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্য ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের টুপি ছিল গোল। এমন গোল, যা সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকতো। অর্থাৎ মাথা হতে উচু হয়ে থাকতো না।
আর চীশ্তিয়া তরীক্বার ইমাম, বিখ্যাত ও সর্বজনমান্য আলেম ও বুযুর্গ, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্তরীক্বত, সুলতানুল হিন্দ, তায়ে রাসূল, খাজায়ে আজমীর, খাজায়ে বুযুর্গ, হিন্দুল ওলী, গরীবে নেওয়াজ, নায়েবে রাসূল ফিল হিন্দ, তাজুল মোক্বাররেবীন ওয়াল মোহাক্বেকীন, সাইয়্যিদুল আবেদীন, তাজুল আশেক্বীন, বোরহানুল ওয়াছিলীন, আফতাবে জাঁহা, পানাহে বে কাসা, দলীলুল আরেফীন, মাখজানুল মারেফত, কোদওয়াতুল আউলিয়া, সুলতানুল আরেফীন, কুতুবে দাওরান, কুতুবুল মাশায়েখুল র্বারে ওয়াল বাহ্র, মুঈনুল মিল্লাত, ওয়ারিছুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, মোক্তাদায়ে আরবাবে দ্বীন, পেশওয়ায়ে আরবাবে ইয়াক্বীন, ছাহিবুল আসরার, মাহ্বাতুল আনওয়ার, বোরহানুল আছফিয়া, আলিমু ইলমুয যাহেরী ওয়াল বাতেনী, কোদওয়াতুছ সালেক্বীন, ওয়াক্বেফে রুমূযে ছুয়ারী ও মানুবী, মুঈনুল হক্ব, মুহিব্বে আউলিয়ায়ে যামান, রাহ্নুমায়ে কামেলীন, মুহিউস্ সুন্নাহ্, মাহিয়ুল বিদ্য়াত, হাবীবুল্লাহ্, শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুঈনুদ্দীন চীশ্তি, সাঞ্জেরী, আজমেরী আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কোরাঈশী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব আনীসুল আরওয়াহতেবর্ণনা করেন, “....... হযরত খাজায়ে আলম (রাসুলুল্লাহ্) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রথম এই কুল্লাহ্ চাহার তর্কী’ (চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি) জিব্রাঈল আলাইহি ওয়াস্ সালাম আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রদান করেন এবং বলেন, ‘আপনি এটা পরিধান করুন এবং যাকে খুশী দান করে খলীফা নিযুক্ত করুন।হযরত রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ টুপি পরিধান করার পর দরিদ্রতা ও উপবাসকে (রোযাকে) সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এ টুপি যখন হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু পরিধান করেছিলেন। তিনি তখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মতো দরিদ্রতা ও রোযাব্রত পালন করতেন। এভাবেই তরীক্বার বংশ পরম্পরায় এ টুপি তাঁর হক্ব অর্থাৎ দাবি নিয়ে আমার নিকট পৌঁছেছে এবং আমি তোমার নিকট পৌঁছালাম, তুমিও পূর্বসুরীদের পথ অনুসরণ করবে।অনুরুপ দলীলুল আরেফীন ও ইস্রারুল আওলিয়া নামক কিতাবেও উল্লেখ আছে।
            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিই হচ্ছে- খাছ সুন্নতী টুপি। এছাড়া অন্যান্য টুপি যেমন লম্বা বা কিস্তি, উঁচু বা বুরনুস ও পাঁচ কল্লি ইত্যাদি টুপি কখনোই সুন্নত ও খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত নয়। বরং কোনটা হারাম, কোনটা মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও কোনটা বিদ্য়াত।
লম্বা বা কিস্তি টুপি
            শরীয়তের দৃষ্টিতে লম্বা বা কিস্তি টুপি পরিধান করা হারাম। কারণ লম্বা টুপি কাফের, বেদ্বীন ও হিন্দু মারওয়ারীদের খাছ টুপি। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুফাস্সির তাজুল মুফাস্সিরীন, ইমাম ক্বাজী বায়জাবী (রঃ) তাঁর প্রশিদ্ধ তাফসীরে বায়জাবীর মধ্যে সূরা বাক্বারার এ আয়াত শরীফ     
(ان الذين كفروا سواء عليهما)-এর তাফসীরে উল্লেখ করেন,
لبس الغيار وشد الزنار ونحوهما كفرا.

অর্থঃ- গিয়ার বা লম্বা টুপি পরিধান করা ও পৌতা বাধা এবং এতদুভয়ের অনুরূপ পোশাক পরিধান করা কুফরী।” (তাফসীরে বায়জাবী পৃষ্ঠা-২৩)
            উল্লেখ্য, অন্যান্য কিতাবে গিয়ার (الغيار) শব্দের বিস্তারিত ব্যখ্যা ও আহ্কাম বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন তাফসীরে বায়জাবীর বিখ্যাত শরাহ্ হাশিয়ায়ে মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ্ ১ম জিঃ ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الغيار .............. هو قلئسوة طويلة كانت تليس فى ابتداء الاسلام وهى الان من شعار اهل الكفر مختصة بهم كالز نار المختصة بالنصرى.
           
অর্থঃ- গিয়ার, তা হলো- লম্বা টুপি, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ব্যবহার করা হতো এবং তা বর্তমানে কাফেরদের খাছ শেয়ার বা আলামত। যেরূপ নাছারাদের খাছ আলামত হচ্ছে- টাই।
            অনুরূপ হাশিয়াতুল শিহাব আল মুসাম্মাহ্ ইনায়াতুল ক্বাজী ওয়া কিফাইয়াত্তুর রাজী আলা তাফসীরিল বায়জাবী ১ম জিঃ ২৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
الغيار- قلنسوة طويلة كانت تلبس قبل الاسلام وهى من شعار الكفرة.

অর্থঃ- গিয়ার হচ্ছে- লম্বা টুপি, যা ইসলাম পূর্ব যুগে ব্যবহার করা হতো। আর তা কাফেরদেরই শেয়ার বা আলামত।অনুরূপ তাক্রীরুল হাবী ফী হল্লে বায়জাবী ২য় জিঃ ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
            আর এ প্রসঙ্গে বাহ্রুল উলুম, ফখরুল ফুক্বাহা, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, হাফিজুল হাদীস, মুফতিয়্যুল আযম, শায়খুল মিল্লাতে ওয়াদ্দীন, মুবাহিছুল আযম, হযরতুল আল্লামা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীরহাটি (রঃ) কর্তৃক প্রণীত- বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য দলীল সমৃদ্ধ ফতওয়ার কিতাব ফতওয়ায়ে আমীনিয়াতেউল্লেখ করেন, “কিস্তি (লম্বা) টুপি খাছ মারওয়ারিদের (হিন্দুদের) পোশাক ..........।
            হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী (রঃ) তাঁর বিখ্যাত কিতাব আল মুর্শিদুল আমীনকিতাবে লিখেন, ইবলীস যখন হযরত মুসা (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে, তখন ইবলীসের মাথায় লম্বা টুপি ছিল। লম্বা বা কিস্তি টুপি হিন্দুদের মাঝে বিস্তার লাভ করার বা লম্বা টুপির উৎপত্তি সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, বাদশা আকবরের সময় যখন হিন্দুরা তার দরবারে আসা-যাওয়া করতো, তখন তারা সাধারণতঃ ধুতি, পৈতা ও টিকলী পরিধান করেই আসতো। বাদশা দেখলো এরূপ পোশাকহীন বা উলঙ্গ অবস্থায় বাদশাহ্র দরবারে প্রবেশ করা বাদশাহ্র শানের খেলাফ। তাই বাদশাহ্ তাদেরকে পোশাক পরিধান করে আসার নির্দেশ দেয় এবং মুসলমানদের খেলাফ পোশাক ব্যবহার করতে বলে। হিন্দুরা তখন কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী, ধুতি ও লম্বা টুপি পরিধান করতে লাগলো। মুসলমানরা যেহেতু গোল টুপি ব্যবহার করতো সেহেতু তারা লম্বা টুপিকে গ্রহণ করলো, আর কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করার কারণ দুটি- (১) মুসলমনদের কোর্তা গোল বিধায়, তারা কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করে, যেন মুসলমানদের সাথে মিল না হয়। (২) তারা যেহেতু ধুতি পরিধান করে, আর ধুতির লেজকে পাঞ্জাবীর পকেটে ঢুকিয়ে রাখে, তাই পাঞ্জাবীর কোনা যদি ফাড়া না হয় তবে ধুতির লেজ পকেটে ঢুকানো হলে পাঞ্জাবী উঠে থাকে তাই তারা কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করে। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, লম্বা বা কিস্তি টুপি ও কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী হিন্দুদেরই পোশাক এবং তারাই এর উৎপত্তিকারক।
            অপরদিকে কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ও লম্বা বা কিস্তি টুপি দেওবন্দ সিলসিলার লোকদের মধ্যে বিস্তার লাভ করার কারণ সম্পর্কে বলা হয় যে, দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাসেম নানুতুবী সাহেব একজন মজ্জুব হালের লোক ছিলেন। তার জীবনীতে উল্লেখ আছে যে, তিনি এক মাহ্ফিলে যাওয়ার পর মাহ্ফিল শেষে লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করলো- আপনার নাম কি? তিনি বললেন, খুরশীদ হাসান! জিজ্ঞাসা করা হলো- আপনার বাড়ী কোথায়? তিনি বললেন, এলাহাবাদ! সকলে চলে যাওয়ার পর তার এক ছাত্র বললো- হুজুর! এটা কি মিথ্যা কথা হলো না? কারণ আপনার নাম কাসেম নানুতুবী অথচ আপনি বললেন, খুরশীদ হাসান। আর আপনার বাড়ী হলো- নানুতুবে। অথচ আপনি বললেন, এলাহাবাদ। তখন মাওলানা কাসেম নানুতুবী সাহেব বলেন, আমি সত্যই বলেছি, কারণ আবযাদ অক্ষর অনুযায়ী আমার নাম খুরশীদ হাসান। তাই আমি বলেছি আমার নাম খুরশীদ হাসান। আর এলাহাবাদ অর্থ হলো- আল্লাহ্র আবাদ। দুনিয়ার প্রতিটি স্থানই মূলতঃ আল্লাহ্র আবাদ। তাই আমি বলেছে আমার বাড়ী এলাহাবাদ। এরূপ বলার কারণ হলো লোকে যেন আমাকে না চিনে। মূলতঃ তিনি নিজেকে গোপন রাখার জন্যই এরূপ করতেন। যার পেছনে  দুটো কারণ ছিল। প্রথমতঃ উনি মজ্জুব ছিলেন এবং নিজেকে চুপিয়ে রাখতে চাইতেন এবং দ্বিতীয়তঃ যেহেতু তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন সেহেতু ব্রিটিশগণ যাতে তাকে সনাক্ত করতে না পারে।
            ঠিক এজন্য তিনি লম্বা টুপি ও কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী পরিধান করতেন। আর তখন থেকেই দেওবন্দ মাদ্রাসার ছাত্ররা তাকে অনুসরণ করে, লম্বা টুপি ও কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী পরিধান করতে থাকে। যা এখনো পর্যন্ত তাদের মধ্যে জারী রয়েছে।        উল্লেখ্য মাওলানা কাসেম নানুতুবী যেহেতু মজ্জুব এবং অবস্থার শিকার ছিলেন সুতরাং তাকে মাজুর হিসেবে গণ্য করে সুন্নতী পোশাক পরিধান করাই ওলামায়ে দেওবন্দের উচিৎ এবং কোরআন-সুন্নাহ্কে বাদ দিয়ে এ ব্যাপারে মাওলানা কাসেম নানুতুবী সাহেবকে অনুসরণ করা তাদের জন্য আদৌ শুদ্ধ নয়। মূলতঃ ওস্তাদের অনুসরণ তখনই ফায়দাকর যখন ওস্তাদের অনুসৃত কাজটি সুন্নত হয়ে থাকে। 
            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, লম্বা টুপি হিন্দু মারওয়ারী বা বিধর্মীদের খাছা টুপি। লম্বা টুপি পরিধান করাতে বিধর্মীদের সাথে সদৃশ হয় বিধায় তা পরিধান করা হারাম।        কেননা হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر رضى الله عنه قال- قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রাখবে, সে ব্যক্তি তাদেরই দলভুক্ত হবে। অর্থাৎ তাঁর হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। (আবু দাউদ, মসনদে আহমদ)
            সুতরাং কেউ যদি কিস্তি বা দোপাট্টা টুপি পরিধান করে, তাতে সুন্নতের অনুসরণ তো হবেইনা বরং তা হিন্দু মারওয়ারীদের সাথে সাদৃশ হওয়ার কারণে কাট্টা হারাম। কেননা বেদ্বীন বা বিধর্মীদের সাথে কোন ব্যাপারে সাদৃশ্য রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পুর্ণ হারাম। যেমন এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব তাহ্তাবী ৩য় জিঃ ৪৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে -        

والتسبه بهم حرام.
অর্থাৎ- ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ ও বেদ্বীন-বদ্দ্বীনদের সাথে সাদৃশ্য রাখা হারাম।
            উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, লম্বা বা কিস্তা টুপি পরিধান করা হারাম ও কুফরী। কেননা তাতে কাফের ও হিন্দু মারওয়ারীদের সাথে সাদৃশ হয় ও তাদের খাছ শিয়ার বা আমলকে অনুসরণ করা হয়, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই হারাম।
উঁচু বা বুরনুস্ টুপি
            উঁচু বা উপরের দিকে লম্বা টুপি যাকে আরবীতে বুরনুস্বলা হয়। এ টুপি পরিধান করাও হারাম।। কেননা বুরনুস টুপি খৃষ্টান সন্নাসীদের খাছ টুপি। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফিজে হাদীস, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বোখারী শরীফের শরাহ্ ফাতহুল বারী ফী শরহে বোখারী ১০ম জিঃ ২৭২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
وقد كره بعض السلف لبس البر نس لانه كان من اللباس الرهبان ......... اياكم ولبوس الرهبان فانه من تزيا يهم او تشبه فليس منى اخر جه الطبر ائى فى الاوسط بسنده لابأس به.
অর্থঃ- সলফে সালেহীনগণের অনেকেই উঁচু টুপি পরিধান করাকে মাকরূহ্ বলেছেন। কেননা এটা খ্রষ্টান সন্যাসীদের পোশাক। .......... ইমাম তিবরানী (রঃ) তাঁর আওছাতকিতাবে বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সাবধান!তোমরা খৃষ্টান সন্নাসীদের পোশাক হতে বাঁচ। নিশ্চয়ই যারা খৃষ্টানী পোশাক দ্বারা নিজেদের সুসজ্জিত করে অথবা খৃষ্টানদের অনুরূপ পোশাক পরিধান করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়।এ হাদীস শরীফের সনদে কোন সন্দেহ নেই।
            উল্লেখ্য, সল্ফে সালেহীনগণের কেউ কেউ যদিও আম অর্থে বুরনুস টুপি পরিধান করাকে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলেছেন। নচেৎ খাছ অর্থে বুরনুস টুপি পরিধান করা হারাম। কারণ প্রমাণিত হয়েছে যে, বুরনুস টুপি খৃষ্টানদের টুপি। আর হাদীস শরীফে খৃষ্টান তথা বিধর্মীদের সাথে তাশ্বীহ্ বা সাদৃশ রাখতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং খৃষ্টান বা বিধর্মীদের সাথে সদৃশ হওয়ার ক্ষেত্রে বুরনুস টুপি পরিধান করা হারাম।
            আর বুরনুস টুপি খৃষ্টান তথা বিধর্মীদের টুপি বিধায় এবং সুন্নতের খেলাফ হওয়ায় বিখ্যাত সকল ফিক্বাহের কিতাবে বুরনুস টুপি পরিধান করে নামাজ পড়াকে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলা হয়েছে। যেমন ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে উল্লেখ আছে,
تكره الصلوة مع البرنس.                 
অর্থঃ- বুরনুস টুপি পরিধান করে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।অনুরূপ তাতার খানিয়া ও এতাবিয়াতে উল্লেখ আছে।
            এখন কথা হলো- বুরনুস টুপি কাকে বলে এবং কোন্ ধরণের টুপি বুরনুস? মূলতঃ লম্বা বা উপরের দিকে উঁচু টুপিকেই বুরনুস টুপি বলে। বিখ্যাত সকল লোগাত বা আরবী অভিধান সমূহে তাই উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- বুরনুসশব্দের তাহ্ক্বীক্বে বিখ্যাত আরবী অভিধান লিসানুল আরবসহ অন্যান্য অভিধানে উল্লেখ আছে,
البرنس- قلنسوة طويلة- وكان النساك يلبسونها فى صدر الاسلام.

অর্থঃ- বুরনুসলম্বা টুপিকে বলে, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে আবিদ ও যাহিদ লোকেরা পরিধান করত।” (লেসানুল আরব, ১ম জিঃ- ২৭০ পৃষ্ঠা)
برنس- لنبی ٹوپی جو راھب پھنتے ھین (لغات ھیرا، لغات کشوری)-
অর্থঃ- বুরনুস লম্বা টুপি যা খৃষ্টান রাহিবগণ (খৃষ্টান পাদ্রি) পরিধান করে।” (লোগাতে হীরা, লোগাতে কিশওয়ারী)
برنس  ایک قسم کی پوپی جواتش پرست استعمال کرتے ھین (لغبت سعیدی)
অর্থঃ- বুরনুস এক প্রকার টুপি, যা অগ্নি উপাসকগণ ব্যবহার করে।” (লোগাতে সাঈদী)

البرنس- وہ لنبی پوپی جواغاز اسلام میی پھنی جاتی تھی (المنجد)
অর্থঃ- বুরনুস ঐ লম্বা টুপিকে বলে, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান করা হতো।” (আল মানজিদ) অনুরূপ কামুসূল মুহীত, আল মুগরিব ও আর রাইদ নামক আভিধানেও বুরনুসঅর্থ লম্বা টুপি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
            উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, বুরনুস বা উঁচু টুপি পরিধান করা খৃষ্টান সন্যাসীদের সাথে সাদৃশ হওয়ার ক্ষেত্রে হারাম। আর আমভাবে সুন্নতের খেলাফ হওয়ার ক্ষেত্রে মাকরূহ্ তাহ্রীমী। শুধু তাই নয়, বুরনুস টুপি পরিধান করে নামাজ পড়াও মাকরূহ্ তাহ্রীমী। আর শরীয়তের ফায়সালা হলো- নামাজ মাকরূহ্ তাহ্রীমীর সাথে আদায় হলে নামাজ দোহ্রানো ওয়াজিব।

পাঁচ কল্লি টুপি

            হাদীস শরীফের কোথায়ও উল্লেখ নেই যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) তথা খাইরুল কুরুনের কেউ পাঁচ কল্লি টুপি পরিধান করেছেন। মূলতঃ খাইরুল কুরুনে পাঁচ কল্লি টুপির কোন অস্তিত্বই ছিলনা।
            উল্লেখ্য, পাঁচ কল্লি টুপির উৎপত্তিকারক হচ্ছে- আকাবিরে দেওবন্দ। মূলতঃ তাদের মাধ্যমেই পাঁচ কল্লি টুপির রেওয়াজ চালু হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে দেওবন্দের মুহাদ্দিস মাওলানা আছগর হোসাইন দেহ্লভী সাহেব তাঁর গুলজারে সুন্নতকিতাবে লিখেন,

اسی غرض سے اکابر دین مین پانچ کلی کی طوپی کا رواج ھوا ھے-
অর্থঃ- এ উদ্দেশ্যেই আকাবিরে দ্বীনগণের মধ্যে পাঁচকল্লি টুপির রেওয়াজ চালু হয়।
            অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পাঁচ কল্লি টুপি নতুন উদ্ভুত আমল, যাকে শরীয়তে বিদ্য়াত বলা হয়। যে বিদ্য়াত সম্পর্কে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احدث فى امرنا هذا ماليس منه فهو رد.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন আমলের প্রবর্তন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনের ভিতরে নেই, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।” (বোখারী, মুসলিম, ফাতহুল বারী, ওমদাতুল কারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল কারী, শরহে কিরমানী, শরহে নববী)
            তাছাড়া যেখানে হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি ব্যবহার করেছেন, সেখানে উক্ত আমল বা সুন্নতের খেলাফ পাঁচ কল্লি টুপির আবিস্কার ও আমল কি করে শরীয়তসম্মত হতে পারে?
            বস্তুতঃ নতুন উদ্ভুত পাঁচ কল্লি টুপি ব্যবহার করার কারণে মানুষ খাছ সুন্নতের আমল থেকে মাহ্রুম হবে নিঃসন্দেহে। তাই হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- مااحدث قوم بدعة الا رفع مثلها من السنة فتمسك بسنة خيرمن احداث بدعة.

অর্থ’- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখনই কোন ক্বওম বা সম্প্রদায় একটি বিদ্য়াতের উদ্ভব ঘটায়েছে, তখনই একটি সুন্নত লোপ পেয়েছে। সুতরাং একটি সুন্নত অনুসরণ করা (যদিও ওটা ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর হয়) একটি বিদ্য়াত উদ্ভব করা হতে উত্তম।
(যদিও ওটা বিদ্য়াতে হাছানা হয়)।” (আহ্মদ)
            মূলকথা হলো- পাঁচ কল্লি টুপির প্রমাণ যেহেতু হাদীস শরীফে নেই, আর খাইরুল কুরুনের কারো আমলের দ্বারাও তা প্রমাণিত নেই এবং নতুন করে পাঁচ কল্লি টুপির আবিস্কার চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিসম্পর্কিত হাদীস শরীফের মুখালিফ, সেহেতু পাঁচ কল্লি টুপি পরিধান বা ব্যবহার করা বিদ্য়াত।
            তাছাড়া পাঁচ কল্লি টুপি পাঁচ কোন্ বিশিষ্ট হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই মাথা থেকে চোখা বা উঁচু হয়ে থাকে, উপর দিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকেনা। এ ক্ষেত্রে পাঁচ কল্লি টুপি মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকার কারণে বুরনুস টুপির অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়, যা পরিধান করা এবং পরিধান করে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।
            সুতরাং সকলেরই উচিৎ নতুন উদ্ভুত পাঁচ কল্লি টুপি পরিহার করে হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত চার টুকরা বিশিষ্ট খাছ গোল সুন্নতী টুপি পরিধান করা। তাতে যেরূপ একখানা সুন্নত আদায় করার কারণে একশত শহীদের সাওয়াব পাওয়া যাবে, তদ্রুপ বিদ্য়াতের ন্যায় গর্হিত কাজ থেকে বেঁচে থেকে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিল করা সম্ভব হবে।