গোলটুপি ব্যতীত অন্যান্য টুপি মাকরূহ হওয়ার ফতওয়া ( ২ নং )

খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামাজ ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাজে বা অন্যান্য সময় কোরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামাজ বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ও দোয়াল্লাীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফত্ওয়া প্রকাশ করার পর ১৭তম ফতওয়া হিসেবে খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াশুরু করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।] মাসিক আল বাইয়্যিনাতে টুপি সম্পর্কে পুণরায় ফতওয়া দেয়ার কারণ বাতিলের আতঙ্ক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যায় টুপি সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক ফতওয়া প্রদান করা হয়েছিল। যাতে প্রায় ৫০টিরও অধিক নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে খাছ সুন্নতী টুপির বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছিল।      টুপির উক্ত ফতওয়াটি সত্বান্বেষী ও সুন্নতের আশেক্ব মুসলমানগণের নিকট এতই সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য হয় যে, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই টুপির ফতওয়া সম্বলিত কপিখানার মজুদ সংখ্যাগুলিও ফুরিয়ে যায়। যার ফলে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগণিত পাঠক, টুপি সম্পর্কিত মুল্যবান ফতওয়াটি সংগ্রহে রাখতে ব্যর্থ হয়। তাই তারা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অন্যতম বিভাগ- ফতওয়া বিভাগেটুপি সম্পর্কিত ফতওয়াটি পুণরায় প্রকাশ করার জন্য পুনঃ পুনঃ আবেদন জানায়।             এতদ্বপ্রেক্ষিতে অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগনিত পাঠকের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং হক্ব তালাশী ও সুন্নতের আশেক্ব, মুসলমানগণের ঈমান ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে সর্বপোরি মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিলের উদ্যেশ্যে টুপি সম্পর্কিত ফতওয়াটি কিছুটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও সংশোধনের মাধ্যমে এবং আরো অধিক দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রকাশ করা হলো। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে এরশাদ করেন,
فاشئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থঃ- যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।      অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,   

من سئل عن علم علمه ئم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.         
অর্থঃ- যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)       অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।”         কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকারঅগণিত পাঠক, গ্রাহক ও হক্ব তালাশী বা সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কেশরীয়তসম্মত তথা কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে ফতওয়া দেয়া হলো।       এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)       বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।           কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “খাছ সুন্নতী টুপি ও তার  সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্র্কে”  সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন  প্রত্যেকেই খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।       মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে
المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থঃ- এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)       এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মোহাজির (রাঃ)গণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ) দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ (রাঃ) বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মাআরেফ)   অতএব, খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীস শরীফের মেছদাক হওয়াই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে টুপি সম্পর্কিত ফতওয়া পুণরায় প্রকাশ করার মূল কারণ।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) কোরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে  সুন্নত পালনের গুরুত্ব তথা  চার টুকরা বিশিষ্ট সুন্নতী টুপি  পরিধানের প্রয়োজনীয়তা 
            উল্লেখ্য, অনেকে সুন্নতী টুপি পরিধানের ব্যাপারে আপত্তি করে বলে থাকে যে, টুপি পরিধানের ব্যাপারে সুন্নত পালনের এত কি জরুরত রয়েছে? যে কোন একটি টুপি পরিধান করলেই তো হয়। তারা আরো মন্তব্য করে থাকে যে, টুপির সুন্নত পালনের উপর জোর দেয়ার কোন দরকার নেই, কারণ এটা সুন্নত মাত্র।     অথচ কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের অসংখ্য স্থানে সুন্নত পালন করার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক-এর মারিফত-মহব্বত তথা রেজামন্দী হাছিলের প্রধান ও একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সুন্নতে রসূল”-এর পরিপূর্ণ বা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুসরণ-অনুকরণ করা।       এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ্ পাক যখন মানুষ সৃষ্টি করার কথা ফেরেশ্তাদেরকে জানালেন, ফেরেশ্তারা বললেন,
 اتجعل فيها من يفسد فيها ويسفك الدماءونحن نسبح بحمدك ونقدس لك. অর্থঃ- আপনি কি এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যারা মারামারি করবে, কাটাকাটি ও রক্ত প্রবাহিত করবে? অথচ আমরা সবসময় আপনার প্রশংসার সাথে তাস্বীহ্-তাহ্লীল পাঠ করছি ও পবিত্রতা বর্ণনা করছি।” (সূরা বাক্বারা/৩০)             অর্থাৎ যদি তাস্বীহ্-তাহ্লীল ও যিকির-আয্কারের জন্যে হয় তবে তো আমরাই রয়েছি, তাহলে বণী আদম সৃষ্টি করার কি কারণ রয়েছে?              এ কথার জবাবে আল্লাহ্ পাক বললেন, انى اعلم مالاتعلمون.               অর্থঃ- নিশ্চয়ই আমি যা জানি, তোমরা তা জাননা।” (সূরা বাক্বারা/৩০)          অর্থাৎ আমি জমিনে খলীফা কেন পাঠাবো, তা তোমাদের জানা নেই। উক্ত গুপ্তভেদ জানানোর উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ পাক সূরা জারিয়াতের ৫৬নং আয়াত শরীফে বলেন,
 وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون
অর্থঃ- আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।”     উল্লেখ্য, ইবাদত হলো দুপ্রকার। (১) ইবাদতে জাহেরাহ (২) ইবাদতে বাতেনাহ। ইবাদতে জাহেরাহ হচ্ছে নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত, মুয়ামেলাত, মুয়াশেরাত ইত্যাদি। আর ইবাদতে বাতেনাহ হচ্ছে ইরফানে খোদাওয়ান্দী বা আল্লাহ্ পাক-এর মারিফত, মহব্বত। শুধু ইবাদতে জাহেরাহ করার জন্যে হলে তো ফেরেস্তারাই ছিল।      মূলতঃ আল্লাহ্ পাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ইবাদতে জাহেরার সাথে সাথে ইবাদতে বাতেনাহ অর্থাৎ ইরফানে খোদাওয়ান্দী বা আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত, মারিফত হাছিল করার জন্যে। এ প্রসঙ্গে তাফসীরে ليعبدون শব্দের ব্যাখ্যায় মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরামগণ বলেন, ليعرفون  অর্থাৎ   ইরফানে খোদাওন্দী বা আল্লাহ্ পাক-এর মারিফাত ও মহব্বত হাছিল করার জন্য জ্বিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন। আর সেই মহব্বত-মারিফাত হাছিল করা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন,
 
قل انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفور رحيم. অর্র্থঃ- হে হাবীব, আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ্ পাককে মহব্বত কর বা আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত হাছিল করতে চাও, তবে তোমরা আমার অনুসরণ কর। আল্লাহ্ পাক তোমাদের মহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুণাহ্খাতা ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ্ পাক অত্যাধিক ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা ইমরান/৩১)             উপরোক্ত আয়াত শরীফে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত হাছিল করতে হলে আল্লাহ্র রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করতে হবে।              কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেন,
 لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.
 অর্থঃ- নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর রসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহ্যাব/২১)       সুতরাং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করতে হবে। আর ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ মজুসী-মোশরেকদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা থেকে সম্পূর্ণই বেঁচে থাকতে হবে। কোন বিষয়েই তাদেরকে অনুসরণ করা যাবেনা। কারণ এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে-

عن جابر عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمربن الخطاب فقال انا نسمع احاديث من يهود تعجبنا افترى ان نكتب بعضها- فقال امتهوكون انتم كما تهوكت اليهود والنصارى- لقد جئت كم بها بيضاء نقية ولو كان موسى حيا ماوسعه الا اتباعى.
অর্থঃ- হযরত জাবের (রাঃ), সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করে বলেন, একদিন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে এসে বলেন, (ইয়া রাসূলাল্লাহ্) আমরা ইহুদীদের কাছ থেকে আশ্চর্য্যজনক অনেক কথা শুনি, আপনি সেগুলো থেকে কিছু লিখে রাখার অনুমতি দেন কি? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রাহ্মাতুল্লিল আলামীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা কি ইহুদী-নাছারাদের ন্যায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছো? অথচ আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট ও পরিপূর্ণ দ্বীন নিয়ে এসেছি। যদি হযরত মুসা (আঃ) জীবিত থাকতেন, তবে তাঁকেও আমার ইত্তেবা বা অনুসরণ করতে হতো।” (আহ্মদ, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)             আর তাই মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে বান্দাদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেন
وما اتاكم الرسول فخذوه وما نها كم عنه فانتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب. অর্থঃ- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে যা আদেশ করেন তা পালন কর, আর তোমাদেরকে যা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন, তা থেকে বিরত থাকো। আর আল্লাহ্ পাককে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।আর হাদীস শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন,

لايؤمن احدكم حتى يكون هواه تبعالما جئت به. অর্থঃ- তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিনে কামেল হতে পারবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তার নফ্স, আমি যে আদর্শ এনেছি তার অনুগত না হবে।” (শরহুস্ সুন্নাহ্, আরবাঈন, কিতাবুল হুজ্জাহ্, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিআতুল মানাযীহ্)   উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দ্বীন বা আদর্শ আমাদের জন্য এনেছেন, তার মূলই হচ্ছে- কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ। মূলতঃ হাদীস শরীফ বা সুন্নাহ্ সমূহ যেরূপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ। তদ্রুপ কোরআন শরীফের সম্পূর্ণটাই তাঁর অনুপম আদর্শ। যেমন- এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, একবার কিছু সংখ্যক হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ)কে জিজ্ঞাসা করলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র বা আদর্শ মোবারক কিরূপ ছিল? জবাবে উম্মুল মুমিনীন, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন, “কেন তোমরা কি কোরআন শরীফ পাঠ করনি ?”
كن خلقه القران.
            “মূলতঃ সমগ্র কোরআন শরীফই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র বা আদর্শ মোবারক।”           আর তাই আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্বের সময়, আরাফাতের ময়দানে লক্ষ, লক্ষ সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের উপস্থিতিতে বলেন, হযরত মালেক বিন আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন,
 تركت فيكم امرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنتى.
 অর্থঃ- আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে গেলাম, যতদিন তোমরা এ দুটি জিনিস আঁকড়িয়ে থাকবে, ততদিন তোমরা গোমরাহ্ হবেনা। একটি হলো- আল্লাহ্ পাক-এর কিতাব, আর দ্বিতীয়টি হলো- আমার সুন্নত।” (মুয়াত্তায়ে মালেক, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)             অতএব, প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ্ পাক-এর কিতাব কোরআন শরীফকেঅনুসরণ-অনুকরণ করা যেরূপ সকলের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য, তদ্রুপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফ তথা সুন্নাহ্কে অনুসরণ-অনুকরণ করাও সকলের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।       কাজেই সুন্নত বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কোরআন শরীফকে অনুসরণ করলে যেরূপ হিদায়েতের উপর কায়েম থাকা সম্ভব নয়, তদ্রুপ কোরআন শরীফকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সুন্নত অনুসরণ করলেও হিদায়েতের উপর থাকা সম্ভব নয়। বরং কোরআন ও সুন্নাহ্ উভয়কেই অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। অথচ কিছু সংখ্যক লোক রয়েছে, যারা শুধুমাত্র কোরআন শরীফকেই গুরুত্ব দেয় বা অনুসরণ-অনুকরণ করে কিন্তু হাদীস শরীফ বা সুন্নতকে গুরুত্ব দেয়না এবং অনুসরণ-অনুকরণ করেনা। মূলতঃ এরা বাতিল ও জাহান্নামী ফেরকাহ- কোরআনিয়াফেরকাহ্র অন্তর্ভূক্ত। এদের সম্পর্কে কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে কঠোর হুশিয়ার বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।  যেমন আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন বলেন,         
فليحذر الذين يخالفون عن امره ان تصيبهم فتنة اويصيبهم عذاب اليم.
অর্থঃ- সুতরাং যারা তাঁর (রাসূলের ) আদেশের বিরোধীতা করে, তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের উপর এসে পড়বে কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”  (সূরা নূর/৬৩) আর এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عن ابى رافع- لا الفئن احدكم متكئا على اريكته يا تيه الامر من امرى مما امرت به او نهيت عنه.فيقول لا ادرى- ماوجدنا فى كتاب الله اتبعناه. অর্থঃ- হযরত আবু রাফে (রাঃ) হতে বর্ণিত- রাসূলে মকবুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি তোমাদের কাউকে যেন এরূপ না দেখি যে, সে তার গদীতে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে। আর তার নিকট আমার আদেশাবলীর কোন একটি আদেশ পৌঁছাল, যাতে আমি কোন বিষয়ে আদেশ বা নিষেধ করেছি। তখন সে বলবে, আমি এসব কিছু জানিনা, আল্লাহ্র কিতাবে যা পাবো, তাই অনুসরণ করবো।” (তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, বায়হাক্বী, মেশকাত, মায়ারেফুস্ সুনান, বযলুল মাজহুদ, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব) হাদীস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে,

عن العرباض بن سارية- قام رسول الله صلى الله عليه وسل فقال- ايحسب احدكم متكئا على اريكته يظن ان الله لم يحرم شيئا الامافى القران الا وانى والله قد امرت ووعظت ونهيت عن اشياء- انها لمثل القران. অর্থঃ- হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার গদীতে ঠেস দিয়ে একথা মনে কর যে, আল্লাহ্ পাক যা এ কোরআন শরীফে অবতীর্ণ করেছেন, তা ব্যতীত তিনি আর কিছুই হারাম করেননি? তোমরা জেনে রাখ, আমি খোদার কছম করে বলছি- নিশ্চয় আমি তোমাদের অনেক বিষয়ে আদেশ দিয়েছি, উপদেশ দিয়েছি এবং নিষেধও করেছি, আমার এরূপ বিষয়ও নিশ্চয়ই কোরআন শরীফের বিষয়ের ন্যায়।” (আবূ দাউদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)         উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই বুঝা গেল যে, কোরআন শরীফকে অনুসরণ ও বিশ্বাস করা যেরূপ ফরজ, তদ্রুপ হাদীস শরীফ তথা সুন্নতের প্রতি বিশ্বাস রাখা ও অনুসরণ-অনুকরণ করাও ফরজ। কেননা হাদীস শরীফ কোরআন শরীফের মতই ওহীর অন্তর্ভূক্ত। কোরআন শরীফ যেরূপ আল্লাহ্ পাক-এর কালাম, হাদীস শরীফও তদ্রুপ আল্লাহ্ পাক-এর কালাম। অর্থাৎ কোরআন শরীফ হচ্ছে- ওহীয়ে মাত্লু। আর হাদীস শরীফ হচ্ছে ওহীয়ে গায়রে মাত্লু। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেন,
  وما ينطق عن الهواء ان هوا الاوحى يوحى.
অর্থঃ- “(সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথাই বলেন না।”             এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ), একদিন একটি বোর্ড বা কাগজের মধ্যে কিছু কোরআন শরীফের আয়াত ও হাদীস শরীফ লিখে দেয়ালে ঝুলিয়ে দেন। লেখাগুলোর হেডিং ছিল- আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ।”         জনৈক ব্যক্তি লেখাগুলো পাঠ করে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর দরবার শরীফে আসলো এবং বললো, হে আমীরুল মুমিনীন! শিরোণামে লেখা হয়েছে- আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশঅথচ সেখানে হাদীস শরীফও স্থান পেয়েছে। হাদীস শরীফও কি আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ? জবাবে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, “হে ব্যক্তি! তুমি কি কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করেছো?” সে ব্যক্তি বললো- হুজুর বেয়াদবী মাফ করবেন, আমি একজন কোরআনে হাফেজ। জবাবে হযরত ওমর ইবনুর খাত্তাব (রাঃ) বলেন, “তুমি কি কোরআন শরীফের সেই আয়াত শরীফখানা তিলাওয়াত করনি?” যেখানে আল্লাহ্ পাক বলেন,

وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا واتقوالله ان الله شديد العقابঅর্থঃ- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের যা আদেশ করেন, তা আঁকড়িয়ে ধর। আর যার থেকে বিরত থাকতে বলেন, তার থেকে বিরত থাক। আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর/২১)     এ আয়াত শরীফ শুনে সে ব্যক্তি বললো- হে আমীরুল মুমিনীন! এখন আমি বুঝতে পেরেছি। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ পালন করা আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ পালন করারই নামান্তর।        আর তাই হাম্বলী মায্হাবের ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা, ইমামুল মুহাদ্দেসীন, ফখরুল ফুক্বাহা হযরত ইমাম আহ্মদ বিন হাম্বল (রঃ) উক্ত আয়াত শরীফের ভিত্তিতে ফতওয়া দিয়েছেন যে, “সমস্ত সুন্নতগুলোই পালন করা ফরজ।”        অতএব, স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, সুন্নতের গুরুত্ব অপরিসীম। অর্থাৎ হিদায়েত বা দ্বীনের উপর থাকতে হলে, প্রতিক্ষেত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুক্ষ্ম অনুসরণ-অনুকরণ করা অবশ্য কর্তব্য।    উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত পালন করার দ্বারাই যে, হক্ব মত হক্ব পথে কায়েম থাকা এবং বিদ্য়াত-বেশরা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব, নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা তা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়। যেমন হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
 عن عرباض بن سارية قال صلى بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم ثم اقب علينا بوجهه فو عظنا موعظة بليغة ذرقت منها العيون ووجلت منها القلوب- فقال رجل يا رسول الله! كان هذه مو عظة مؤدع فاوصينا- فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم-
اوصيكم بتقوى الله والسمع والطاعة وان كان عبدا حبشيا فانه من يعش منكم بعدى فسيرى اختلافا كثيرا- فعليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ ...    অর্থঃ- হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাদের সাথে নামাজ আদায় করলেন, নামাজ শেষে মর্মস্পর্ষী ওয়াজ করলেন, যদ্দরুণ চক্ষু হতে পানি নির্গত হলো, অন্তরগুলো কেঁপে উঠলো। এক ব্যক্তি (দাঁড়িয়ে) বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার এ ওয়াজ কোন বিদায়ী ব্যক্তির ওয়াজের ন্যায় মনে হচ্ছে। সুতরাং আমাদেরকে (আরো) উপদেশ দান করুন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি- আল্লাহ্ পাককে ভয় করার ব্যাপারে, আর তোমাদের নেতা (খলীফা) যদি হাবশী কৃতদাসও হয়, তার কথা শ্রবণ করবে এবং তাকে অনুসরণ করবে। আর নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য হতে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। সুতরাং তখন তোমাদের উপর আমার সুন্নত ও আমার হিদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফাগণের সুন্নত অনুসরণ-অনুকরণ করা সর্বোতভাবে ওয়াজিব। তোমরা উক্ত সুন্নতকে মাড়ীর দাঁত দিয়ে মজবুত করে আঁকড়িয়ে ধর।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, আহ্মদ, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)     হাদীস শরীফের উক্ত আলোচনা দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, ফিৎনা-ফাসাদ, মতভেদ-মতবিরোধ ও বাতিল পন্থীদের বাতিল মতবাদ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করার একটাই মাধ্যম, আর তা হচ্ছে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের মত ও পথকে তথা সুন্নাহ্কে পরিপূর্ণভাবে আঁকড়িয়ে ধরা। আর তাই আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
ستفترق امتى على ثلاث وسبعين فرقه كلهم فى النار الاملة واحدة قالوا من هى يا رسول الله قال ما انا عليه واصحابى.

অর্থঃ- অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সবগুলো দল জাহান্নামে যাবে। হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নাযাতপ্রাপ্ত দল কোনটি? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি ও আমার সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের মত পথ তথা সুন্নাহ্র উপর যারা প্রতিষ্ঠিত।” (আহ্মদ, আবূ দাউদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)    সুতরাং নাযাতপ্রাপ্ত বা জান্নাতী তারাই, যারা ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করে। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করার অর্থই হচ্ছে তাঁর রেসালতকে স্বীকার করে নেয়া। আর তার ব্যতিক্রম করার অর্থ হচ্ছে রেসালতকে অস্বীকার করা। যার ফলে হাদীস শরীফে স্পষ্টভাবে এরশাদ হয়েছে,  
           
عن ابى هريرة رضى الله عنه  قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل امتى يدخلون الجنة الامن ابى قيل ومن ابى قال من اطا عنى دخل الجنة ومن عصانى فقد ابى.
অর্থঃ- হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে যাবে, তবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে আমাকে অস্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসা করা হলো- ইয়া রাসূলাল্লাহ্! কে আপনাকে অস্বীকার করেছে? জবাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ করেছে, সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে। আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করেছে (আমাকে অনুসরণ করেনি), সে ব্যক্তিই আমাকে অস্বীকার করেছে।” (বোখারী, মেশকাত, ফাতহুলবারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, হরহে কিরমানী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)    অতএব, কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, বান্দা তখনই জান্নাত তথা মহান আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী লাভ করতে পারবে, যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত সমূহের পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে। আর এটাই মূলতঃ বান্দার জন্য সবচেয়ে বিরাট সফলতা। তাই মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে  এরশাদ করেন,
من يطع الله ورسوله فقد فازفوزا عظيما.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূলকে অনুসরণ করলো, সে ব্যক্তি বিরাট সফলতা অর্জন করলো।” (সূরা আহ্যাব/৭১)        তবে প্রশ্ন হলো- সুন্নতের কতটুকু এবং কিরূপ অনুসরণ করতে হবে? মূলতঃ মাথার তালু হতে পায়ের তলা, হায়াত হতে মউত পর্যন্ত, প্রতিটি ক্ষেত্রে ও প্রতিটি বিষয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হুবহু অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কোন বিষয়ই যেমন বাড়ানো যাবেনা, তদ্রুপ কমানোও যাবেনা। যেমন- এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
 وعن انس قال جاء ثلاثة رهط الى ازواج النبى صلى الله عليه وسلم يسئلون عن عبادة النبى صلى الله عليه وسلم. فلما اخبروا بها كانهم تقالوها. فقالوا اين نحن من النبى صلى الله عليه وسلم وقد غفرالله له ماتقدم من ذنبه وما تأخر فقال احدهماما انا فاصلى الليل ابدا وقال الاخر انا اصوم الدهر ولا افطر وقال الاخر انا اعتزل النساء فلا اتزوج ابدا فجاء النبى صلى الله عليعه وسل اليهم فقال انتم الذين قلتم كذا وكذا؟ اما والله انى لاخشا كم لله واتقاكم له لكنى اصوم وافطر واصلى وارقد واتزوج النساء فقال النبى صلى الله عليه وسلم فمن رغب عن سنتى فليس منى.  
 অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদিন তিনজন সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) আসলেন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন (রাঃ)গণের কাছে, আল্লাহ্র রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইবাদত বা আমল সম্পর্কে জানার জন্যে।        যখন তাঁদেরকে আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইবাদত বা আমল সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হলো, তখন তাঁরা ইবাদতগুলোকে (নিজেদের জন্য) কম মনে করলেন এবং তাঁরা বললেন, আল্লাহ্র রাসূলের তুলনায় আমরা কোথায়? কারণ আল্লাহ্র রাসূলের পূর্বের এবং পরের সমস্ত কিছু ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (সে কারণে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য কম ইবাদত করলেও চলবে কিন্তু আমাদেরকে এর চাইতে বেশী ইবাদত করতে হবে এরূপ চিন্তা করে) তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, আমি সারা রাত্রি নামাজ পড়বো, কখনো ঘুমাবো না। আরেকজন বললেন, আমি সারা জীবন রোজা রাখবো, কখনো রোজা ভঙ্গ করবো না। আরেকজন বললেন, আমি সারা জীবন স্ত্রীর থেকে দূরে থাকবো। কখনো বিয়ে-শাদী করবো না। এমন সময় আল্লাহ্র রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের কাছে এসে বললেন,  “তোমরা কি সেই লোক, যারা একথা বলেছ যে, সারা রাত্র নামাজ পড়বো, সারা জীবন রোজা রাখবো, আর স্ত্রীর কাছে যাবনা, বিয়ে-শাদী করবো না।”     আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সাবধান! তোমরা সতর্ক হয়ে যাও। আমি আল্লাহ্ পাককে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে বেশী মোত্তাকী, তথাপি আমি নামাজ পড়ি, ঘুমাই, রোজা রাখি, রোজা ভঙ্গ করি, স্ত্রীর কাছে যাই। (বিয়ে-শাদী করেছি)”   আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যে আমার সুন্নতের খেলাফ করবে, সে আমার উম্মত থেকে খারিজ হয়ে যাবে।” (বোখারী, মুসলিম, মেশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে কেরমানী, শরহে নববী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, তালীকুছ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)             উপরোক্ত হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রতিক্ষেত্রে অর্থাৎ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ইত্যাদি সকল অবস্থাতেই হুবহু অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কোন প্রকার ইফরাত ও তাফরীত (কম-বেশী) করা যাবেনা।             কোরআন ও সুন্নাহ্র উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে, সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং হুবহু অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। টুপির ব্যাপার বলে তাকে হাল্কাভাবে গ্রহণ করা যাবেনা অথবা ছেড়ে দেয়া যাবেনা, কারণ সুন্নতের খেলাফ আমল করে কখনোই মহান আল্লাহ্ পাক-এর মারিফত মহব্বত তথা রেজামন্দী অর্জন করা সম্ভব নয়। সুতরাং টুপির সুন্নত পালন করার ক্ষেত্রে চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি পরিধান করলেই কোরআন-সুন্নাহ্র নির্দেশ পালিত হবে। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিব্যবহার করতেন। সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম সুন্নত দৃঢ়ভাবে অনুসরণে  হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের অবিস্মরনীয় ঘটনাসমূহ             উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম উম্মত, মিয়ারে হক, হিদায়েতের আলোক বর্তিকা, ইসলামের বীর সেনানী, হিদায়েতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হচ্ছেন- হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) আজমাইনগণ। হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের কতটুকু অনুসরণ-অনুকরণ করতেন, সে সম্পর্কিত আলোচনার পূর্বে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের ফাযায়েল-ফযীলত ও মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করা একান্তই কর্তব্য।       উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের অশেষ ও সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করেছেন, যা কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের প্রায় সর্বত্র সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তন্মধ্যে নিম্নোক্ত আয়াত শরীফখানাই আক্বলমন্দের জন্যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের মর্যাদা-মর্তবা অনুধাবনে যথেষ্ট। যেমন মহান আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন,
والسابقون الاولون من المهاجرين والانصار والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه واعد لهم حنت تجرى تحتها الانهار خالدين فيها ابدا ذالك الفوز العظيم.

অর্থঃ- “(ঈমান ও আমলে) সর্বপ্রথম প্রথম স্থান অধিকারী আনছার ও মুহাজির অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ এবং ইখলাছের সাথে উক্ত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের অনুসরণকারী সকলের প্রতিই আল্লাহ্ পাক সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট। হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) ও তাঁদের অনুসারীদের জন্য আল্লাহ্ পাক এরূপ বেহেশ্ত নির্ধারিত করে রেখেছেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে, তারা চিরদিন সে বেহেশ্তে অবস্থান করবেন, যা তাঁদের বিরাট সফলতা।” (সূরা তওবা/১০০)        এ আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ সকলের প্রতিই আল্লাহ্ পাক পূর্ণ সন্তুষ্ট এবং তাঁরা সকলেই নিশ্চিত জান্নাতী। শুধু তাই নয়, সাথে সাথে যারা তাঁদেরকে অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণকে ইখলাছের সাথে অনুসরণ করবে, তাঁদের প্রতিও আল্লাহ্ পাক তদ্রুপ সন্তুষ্ট এবং তাঁদের জন্যেও তদ্রুপ বেহেশ্ত নিশ্চিত। (সুবহানাল্লাহ্)             আর তাই হাদীস শরীফে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের মর্যাদা-মর্তবা যথাযথভাবে অবগত হয়ে, তাঁদেরকে ইখলাছের সহিত পরিপূর্ণ অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,   
عن عبد الله بن مشعود قال- من كان مستنا فليستن بمن قدمات فان الحى لا تؤمن عليه الفتنة اولئك اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم كانوا افضل هذه الامة- ابرها قلوبا واعمقها علما واقلها تكلفا- اختارهمالله لصحبة نبيه ولاقامة دينه- فاعرقوالهم فضلهم واتبعوا على اثر هم وتمسكوا بما استطعتم من اخلاقهم وسير هم فانهم كانوا على الهدى المستقيم.

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত- যে ব্যক্তি শরীয়তের সঠিক তরীক্বা অনুসরণ করতে চায়, তার উচিত হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের অনুসরণ করা। সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণই উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম, তাঁরা আত্মার দিক দিয়ে অধিক পবিত্র, ইল্মের দিক দিয়ে গভীর ইল্মের অধিকারী, তাঁরা লোক দেখানো কোন আমল করতে জানেন না। আল্লাহ্ পাক তাঁদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথী হিসাবে মনোনীত করেন। সুতরাং তাঁদের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়েল-ফযীলত, শান-শওকত সম্পর্কে অবগত হও এবং তাঁদের কথা ও কাজের অনুসরণ কর এবং যথাসম্ভব তাঁদের সীরত-ছূরতকে গ্রহণ কর, কারণ তাঁরা হিদায়েত ও সিরাতুল মুস্তাক্বীম”-এর উপর দৃঢ়চিত্ত ছিলেন।” (রজীন, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়্যাতুল লুময়াত, তালীক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানজীহ্) স্মরণযোগ্য যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের অশেষ ও অবর্ণনীয় ফাযায়েল-ফযীলত ও মর্যাদা-মর্তবার কারণেই শরীয়ত তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ্ শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
 ان الذين يؤذون الله ورسوله لعنهم الله فى الدنيا والاخرة واعد لهم عذابا مهينا.
  অর্থঃ- নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আহ্যাব/৫৭)      মূলতঃ উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তিরস্কার করা, সমালোচনা করা, গালি দেয়া ইত্যাদি সবই আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়ার শামিল। যেমন হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে,
  الله الله فى اصحابى لا تتخذوهم غرضا من بعدى فمن احبهم فبحبى احبهم ومن ابغضهم فببغضى ابغضهم ومن اذاهم فقد اذانى ومن اذانى فقد اذى الله ومن اذى الله فيوشك ان يأخذه.
 অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। আমার সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। আমার ওফাত মোবারকের পরে তাঁদেরকে তোমরা তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল করনা। যে ব্যক্তি তাঁদেরকে মহব্বত করলো, সে আমার প্রতি মহব্বত করার কারণেই করলো। আর যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তা করলো। আর যে ব্যক্তি তাঁদেরকে কষ্ট দিল, সে যেন আমাকেই কষ্ট দিল। আর যে ব্যক্তি আমাকে কষ্ট দিল, সে মূলতঃ আল্লাহ্ পাককেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহ্ পাককে কষ্ট দিবে, আল্লাহ্ পাক তাকে অতি শীঘ্রই পাকড়াও করবেন।” (তিরমিযী, মেশকাত, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারেফুস্ সুনান, উরফুশ্ শাজী, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)              এ আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাঁদেরকে তিরস্কার করা, গালি দেয়া, আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ হতে লানত প্রাপ্তি ও জাহান্নামের আযাবের উপযুক্ত হওয়ার কারণ। শুধু তাই নয়, এ ধরণের লোকদের প্রতি লানতের বদ্দোয়া করার নির্দেশ বান্দাদেরকেও দেয়া হয়েছে। যেমন হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن عمر- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- اذا رأيتم الذين يسبون اصحابى فقولوا لعنة الله على شركمঅর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যখন তোমরা দেখ যে, কেউ আমার সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণকে গালি দিচ্ছে, তখন তোমরা বল- তোমার এ জঘন্যতম কাজের জন্য তোমার প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর লানত।” (তিরমিযী, মেশকাত, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারেফুস্ সুনান, উরফুশ্ শাজী, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব) আর তাই হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষিত হয়েছে,
 فمن سبهم فعليه لعنة الله وا لملائكة والناس اجمعين ولا يقبل الله منه صرفا ولا عدلا.
  অর্থঃ- যে ব্যক্তি হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণকে গালি দেয়, তাদের প্রতি শুধু আল্লাহ্ পাক-এর লানত নয় বরং ফেরেশ্তা, মানুষ এমনকি সকল মাখলুকাতের পক্ষ থেকেই তাদের প্রতি লানত বর্ষিত হয়। (যার ফলে) তাদের কোন ফরজ ও নফল ইবাদত আল্লাহ্ পাক কবুল করেননা।” (মোযাহেরে হক্ব)       অতএব প্রমাণিত হলো যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাঁদের কোন প্রকার সমালোচনা করা, তাঁদেরকে নাক্বেছ বা অপূর্ণ বলা, তাঁদেরকে অশালীন ভাষায় গালি দেয়া হারাম ও নাজায়েয। সাথে সাথে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহ সকল মাখলুকাতের পক্ষ হতে লানত বর্ষণের কারণ। যা জাহান্নামী হওয়ার কারণও বটে।         উল্লেখ্য কিছু লোক রয়েছে, যারা কোরআন-সুন্নাহ্র প্রতি অজ্ঞতাহেতু, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের অশেষ ও অবর্ণনীয় মর্যাদা-মর্তবা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে এবং কিছু সংখ্যক ইসলাম ও সাহাবী বিদ্বেষী ঐতিহাসিকদের কোরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী, মনগড়া, ইতিহাস পাঠ করে, আর সে দলীল দিয়ে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সবচেয়ে অধিক প্রিয়পাত্র, ন্যায়ের মূর্তপ্রতীক, সত্যের চরম নিদর্শন, হক্বের পূর্ণ মাপকাঠি, দ্বীন ইসলামের ভিত্তি স্থাপনকারী এবং আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত, সম্মানিত, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সমালোচনা করে, তিরস্কার করে ও অশালীন ভাষায় গালি দেয়। মূলতঃ এ সকল লোক যেরূপ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শত্রু, তদ্রুপ দ্বীন ইসলামেরও শত্রু। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়েল-ফযীলত অপরিসীম। তাঁদেরকে মহব্বত করা ঈমানের অঙ্গ, আর তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী। শুধু তাই নয়, তাঁদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা মহান আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী হাছিলের বিশেষ উপায়।      উল্লেখ্য, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ এত বিরাট কামিয়াবী তথা ফাযায়েল-ফযীলত ও মর্যাদা-মর্তবা হাছিল করেছেন শুধুমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তথা হুবহু অনুসরণ-অনুকরণ করার কারণেই। নিম্নে মেছালস্বরূপ কতিপয় সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের সুন্নত অনুসরণের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো- আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর  ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর সুন্নত  পালনের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা    ইসলামের দ্বিতীয় খলীফায়ে রাশেদ, নবীদের পর দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, যাঁর সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক বলেন,
اشداء على الكفار
অর্র্থাৎ কাফেরদের প্রতি কঠোর।           আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الحق ينطق على لسان عمر.
 অর্থঃ- স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর জবানে কথা বলেন।”           সেই হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর খেলাফতকালে জেরুজালেম তথা বায়তুল মোকাদ্দাস ইহুদীদের হাত থেকে মুক্ত করেন, মুসলিম সেনাপতি, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবূ উবায়দাহ্ ইবনুল র্জারাহ্ (রাঃ)। বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়ের পর তিনি আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট এই বলে চিঠি লিখেন যে, বায়তুল মোকাদ্দাস ইহুদী কবল থেকে মুক্ত হয়েছে, তবে তাদের ইচ্ছা- বায়তুল মোকাদ্দাসের চাবি আমীরুল মুমিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীনের হাতে হস্তান্তর করবে। সুতরাং অনুগ্রহ পূর্বক আপনি জেরুজালেমে আসুন।    চিঠি পেয়ে আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নিজ সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। উল্লেখ আছে যে, তখন আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর পরিধানে নতুন কোন বস্ত্র ছিলনা। বরং তাঁর পরিধানে যে বস্ত্রটি ছিল, তম্মধ্যে তের থেকে চৌদ্দটি পট্টি ছিল, তার মধ্যে একটি পট্টি ছিল চামড়ার। জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার পরিধেয় পট্টিযুক্ত বস্ত্রটি পরিবর্তন করে নিলে ভাল হতো। জবাবে আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন,
نحن قوم اعزناالله بالاسلام.
অর্থঃ- আমরা তো এমন সম্প্রদায়, যাদেরকে আল্লাহ্ পাক ইসলামের দ্বারা সম্মাণিত করেছেন।কাজেই আমাকে এরূপ অবস্থায়ই যেতে দাও।             আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) উক্ত অবস্থাতেই জেরুজালেম গিয়ে পৌঁছলেন। যখন তিনি জেরুজালেম পৌঁছলেন, তখন তিনি ছিলেন উটের লাগাম ধরা অবস্থায় যমীনে, আর তাঁর খাদেম ছিল উটের উপর সাওয়ার অবস্থায়। ইহুদীরা তাওরাত কিতাব খুলে তার বর্ণনার সাথে সব মিলাচ্ছিল। যখন দেখলো- তাওরাত কিতাবের বর্ণনার সাথে সব মিলে যায়, তখন তারা আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট বায়তুল মোকাদ্দাসের চাবি হস্তান্তর করলো। চাবি হস্তান্তরের পর ইহুদীরা আরজ করলো- হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি এতদূর থেকে এসেছেন, আপনার সম্মানার্থে আমরা ইসলামী কায়দায় কিছু মেহ্মানদারীর ব্যবস্থা করতে চাই, যদি আপনি সম্মতি প্রকাশ করেন। সম্মতি পেয়ে ইহুদীরা মেহ্মানদারীর ব্যবস্থা করলো।      আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সকলকে নিয়ে যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হলেন। তাঁর সম্মুখে চামড়ার (সুন্নতী) দস্তরখানা বিছিয়ে দেয়া হলো এবং তাতে রুটি ও একটি পাত্রে গোশ্ত দেয়া হলো। আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) দস্তরখানা থেকে রুটি নিয়ে গোশ্ত দিয়ে খেলেন, খাওয়া শেষে দস্তরখানায় পড়ে থাকা রুটির টুকরাগুলো টুকিয়ে টুকিয়ে অর্থাৎ দস্তরখানা পরিস্কার করে খাচ্ছিলেন। এটা দেখে জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এখানে অনেক রাজা-বাদশা, আমীর-ওমরা উপস্থিত, আপনি যদি তাদের সম্মুখে এরূপভাবে রুটির টুকরা টুকিয়ে টুকিয়ে খান, তবে কেমন দেখা যায়? জবাবে আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন,
 ااترك سنة حبيبى لاجل هذه الحمقاءঅর্থঃ- আমি কি এসকল আহ্মকদের (রাজা-বাদশাদের) জন্য আমার হাবীব (সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নতকে পরিহার করবো।” (সুবহানাল্লাহ্) অর্থাৎ খাওয়ার পর দস্তরখানা বা প্লেট পরিস্কার করে খাওয়া সুন্নতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সে সুন্নত যথাযথ পালন করেছেন। তিনি সব কিছুর উপর সুন্নতকে প্রাধান্য দিয়েছেন বা দিতেন, উক্ত ঐতিহাসিক ঘটনাই তার বাস্তব প্রমাণ। সুন্নত অনুসরণে আশেক্বে রাসূলহযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ)    আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর যোগ্য পুত্র, অসংখ্য হাদীস শরীফ বর্ণনাকারী, সুন্নতের একনিষ্ঠ অনুসরণকারী, বিশিষ্ট সাহাবী ছিলেন- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ)।          সেই হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ), সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিদায়ের পর তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ পথিমধ্যে কোন এক জায়গায় তিনি তাঁর মাথা মোবারক নিচু করে দিলেন। তাঁর সঙ্গীদের মধ্য হতে একজন বললেন, হে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ)! আপনি এখানে মাথা নিচু করলেন, তার কি কারণ? জবাবে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, “আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে এ রাস্তায় কোথাও যাচ্ছিলাম, এখানেই রাস্তার পাশে একটি বড় গাছ ছিল, গাছের একটি ডালা বাঁকা হয়ে রাস্তার উপরে এসেছিল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথা মোবারকে লাগবে বিধায় তিনি মাথা মোবারক নিচু করে ডালাটি অতিক্রম করেন। এখানে যদিও সে ডালাটি নেই, তথাপি আমি শুধুমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতআদায় করার জন্য নিজ মাথা নিচু করে দিয়েছি।” (সুবহানাল্লাহ্)           হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্নে ওমর (রাঃ) সেখান থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর এক স্থানে ইস্তেঞ্জা করতে বসলেন। এক ব্যক্তি বললো- হুজুর আপনি এইমাত্র বাড়ী থেকে ইস্তেঞ্জা করে এসেছেন, তারপর আবার এখানে ইস্তেঞ্জা করতে বসার কারণ কি? জবাবে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, “আমি দেখেছি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে ইস্তেঞ্জা করতে বসেছিলেন, আমার যদিও ইস্তেঞ্জার তেমন হাযত হয়নি, তথাপি আমি এখানে ইস্তেঞ্জা করতে বসেছি শুধুমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতেরঅনুসরণের জন্য।” (সুবহানাল্লাহ্)             অতএব, ফিকির করে দেখুন, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) তথা হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ সুন্নতের কতটুকু অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। সুন্নত পালনে খাদেমে রাসূল.  হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ)          যিনি একাধারে দশ বৎসর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেদমত করেছেন। অসংখ্য হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দোয়ার বরকতে একশত বৎসর হায়াত লাভ করেছেন। (সুবহানাল্লাহ্)         সেই হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন- একদিন এক দর্জি সাহাবী (রাঃ), সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর বাড়ীতে দাওয়াত করলেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে গেলেন, আমিও সাথে গেলাম।   দর্জি সাহাবী (রাঃ) গোশ্তের সাথে লাউ বা কদু দিয়ে তরকারী পাকিয়েছিলেন। আমি দেখলাম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত তরকারীর পাত্র থেকে লাউ বা কদুগুলো বেছে বেছে খাচ্ছেন। অর্থাৎ লাউ বা কদু খাওয়াকে আখেরী রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব পছন্দ করতেন।           হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেন, যখন আমি দেখলাম- আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদু খাওয়া পছন্দ করেন, তখন থেকে আমি যত দিন হায়াত পেয়েছি, আমার সাধ্যমত আমি সর্বদা কদু খাওয়ার চেষ্টা করেছি শুধুমাত্র সুন্নতে রাসূলপালন করার উদ্দেশ্যে। (সুব্হানাল্লাহ্)         সুতরাং চিন্তা এবং ফিকিরের বিষয় যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ তথা সুন্নতের কতটুকু অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। মূলতঃ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ তথা সুন্নত পালন করার ক্ষেত্রে পাগলের ন্যায় হয়ে যেতেন।        এ প্রসঙ্গে ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত, হযরত হাসান বছরী (রঃ)কে প্রশ্ন করা হলো- হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ কিরূপ ছিলেন? জবাবে ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত, হযরত হাসান বছরী (রঃ) বলেন, দেখ- যদি তোমরা হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণকে দেখতে, তবে পাগল মনে করতে। আর যদি হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ তোমাদেরকে দেখতেন, তবে তোমাদের ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতেন। কারণ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ জীবনের বিণিময়ে হলেও হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ পালনের জন্য সদা প্রস্তুত থাকতেন। আর তোমরা মুখে বলো- রাসূলকে মহব্বত করি কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার সম্পূর্ণ বিপরীত।             উল্লেখ্য, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ যে পাগলের ন্যায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ তথা সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণ করতেন, উপরোল্লিখিত ঘটনা সমূহের সাথে সাথে নিম্মোক্ত ঘটনাটিও তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। বিশিষ্ট সাহাবী, হযরত আবুজর গিফারী (রাঃ) একদিন সব্জা নামক স্থানে নিজ যমীতে পানি সেচ করছিলেন, এমতাবস্থায় হঠাৎ করে এক ব্যক্তি এসে হযরত আবুজর গিফারী (রাঃ)কে কিছু এলোমেলো কথা বললো। সে ব্যক্তির এলোমেলো কথা শুনে হযরত আবুজর গিফারী (রাঃ) কিছুটা গোস্সা হন। পরক্ষণেই তিনি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও নতুন কাপড় পরিহিত অবস্থায় প্রথমে সেই কাদাযুক্ত যমীতে বসে যান, অতঃপর সেই কাদাযুক্ত যমীতে শুয়ে পড়েন। সে ব্যক্তি বললো- হে আবুজর গিফারী (রাঃ)! আপনি একি করলেন? আপনার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও নতুন কাপড়গুলো নিয়ে কাদাযুক্ত যমীতে শুয়ে পড়লেন? জবাবে হযরত আবুজর গিফারী (রাঃ) বলেন, হে ব্যক্তি! আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, “হে আবুজর! তোমার মধ্যে যখন গোস্সা পয়দা হবে, তখন তুমি বসে যেও, তথাপিও যদি গোস্সা দূর না হয়, তবে শুয়ে যেও, তোমার গোস্সা দূর হয়ে যাবে।কাজেই তুমি যখন আমাকে এলোমেলো কথা বললে, তখন আমার ভিতর গোস্সা পয়দা হয়, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ পালন করার জন্যই প্রথমে বসে গেলাম, তাতেও আমার গোস্সা দমন হলোনা, অতঃপর আমি মাটিতে শুয়ে পড়লাম,আমার গোস্সা দূর হয়ে গেল। (সুব্হানাল্লাহ্)             উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ তথা সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, পুঙ্খানুপুঙ্খ ও পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। বরং নিজ জীবনের চেয়েও অধিক প্রাধান্য দিতেন রাসূলের সুন্নতকে। আর তাই তো মহান আল্লাহ্ পাক সার্টিফিকেট দিয়েছেন এই বলে,
رضى الله عنهم ورضوا عنه.
 অর্থঃ- মহান আল্লাহ্ পাক হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের প্রতি সন্তুষ্ট, তাঁরাও মহান আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট।শুধু কি তাই? হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিপূর্ণ মেছদাক্ব বা নমুনা। যার ফলে মহান আল্লাহ্ পাক ঘোষণা দিয়েছেন,

والذين اتبعو هم باحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه.
 অর্থঃ- যারা হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণকে ইখলাসের সাথে অনুসরণ করবে, মহান আল্লাহ্ পাক তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, তারাও আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট।”         আর আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,

اصحابى كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم.
 অর্থঃ- আমার (প্রত্যেক) সাহাবী তারকা সাদৃশ্য, তাঁদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়েত প্রাপ্ত হবে।”         কেননা হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণকে অনুসরণ করার অর্থই হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করা। যেহেতু হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত সমূহের পরিপূর্ণ অনুসরণকারী। কাজেই টুপির ক্ষেত্রেও যে তাঁরা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করেছেন অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ যে, চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি ব্যবহার করেছেন, তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।          সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ, টুপিসহ প্রতি ক্ষেত্রে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের ন্যয় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত সমূহের অনুসরণ করা, তবেই মহান আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী লাভ করা সম্ভব।