“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র
ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে
কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া”-
পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ
শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
সম্মানিত ও
পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব উনার
উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয
পূর্ব প্রকাশিতের পর
পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের মধ্যে ‘আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী অর্থাৎ অনির্দিষ্ট বা একাধিক
ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করা’ প্রয়োজন সাপেক্ষে জরুরী
সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহ
প্রয়োজনে অনির্দিষ্ট বা একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে
অনুসরণ করাকেই ‘আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী’ বলা হয়। উনাকে ‘আত-তাক্বলীদুল মুতলাক্ব অর্থাৎ
আম বা সাধারণ অনুসরণ’ ও ‘আত-তাক্বলীদুল আম বা একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনুসরণ’ও বলা হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র তাফসীর শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে অনেক
দলীল-প্রমাণ রয়েছে। তবে এ তাক্বলীদের জন্য শর্ত হল: এ মাসয়ালা গুলো মাযহাব চতুষ্ঠয়
অর্থাৎ হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বালী মাযহাব উনাদের ইখতিলাফী বা মতানৈক্য
বিশিষ্ট মাসয়ালার বাইরের মাসয়ালা হতে হবে। যেমন: যার যার হক্কানী-রব্বানী মুরশিদ
বা শায়েখ উনার কর্তৃক আদিষ্ট ওয়াযীফাহ বা নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা প্রত্যেক মুরীদ বা
সালিক-এর জন্য ফরয-ওয়াজিব। কেননা, এ ব্যাপারগুলো মাযহাব চতুষ্ঠয়ের
ইখতিলাফী মাসয়ালার আওতাভুক্ত নয়। যেহেতু এ ব্যাপারে সমস্ত উলামা কিরাম
রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা’ তথা একমত পোষণ করেছেন যে, যে ব্যক্তি যে মাযহাবের অনুসারী সে ব্যক্তি ইখতিলাফী
মাসয়ালায় সে মাযহাব উনার ফায়সালা অনুযায়ীই ইন্তিকাল পর্যন্ত আমল করবে। তার জন্য
লাগামহীনভাবে স্বেচ্ছাচারীতার সাথে অনির্দিষ্ট, মুক্ত বা
একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনুসরণ-অনুকরণ করা জায়িয নেই এবং নিজের নাফসানিয়াতের
কারণে একেক সময় একেক মাযহাবের মাসয়ালা অথবা নিজের সুবিধা মতো মাযহাব পরিবর্তন করাও
জায়িয নেই। নি¤েœ উদ্ধৃত বিষয় সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হল:
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ১
(৬৭২-৬৮২)
اهدنا الصراط الـمستقيم صراط الذين انعمت عليهم.
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ তায়ালা! আপনি
আমাদেরকে সঠিক পথ দান করুন। এমন পথ যে পথের পথিক উনাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন।” (পবিত্র সূরাতুল ফাতিহাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫-৬)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৩১ ও ২৩২ তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ১১ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, আমভাবে বা অনির্দিষ্টভাবে প্রয়োজনের তা’কীদে একাধিক বা অনির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ ও ওলীআল্লাহ
উনাদের অনুসরণ করতে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি স্বয়ং নির্দেশ মুবারক করেছেন। আর ইহাই
তো আত-তাক্বলীদু গাইরুশ শাখছী বা আত-তাক্বলীদুল মুতলাক্ব অর্থাৎ অনির্দিষ্ট বা
একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনুসরণ। ইহা দ্বারা যার যার মুরশিদ বা শায়েখ উনার
অনুসরণ করার অকাট্যতা প্রমাণিত হয়। সুবহানাল্লাহ।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ২
(৬৮৩-৬৯০)
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ امِنُوْا كَمَا امَنَ النَّاسُ قَالُوْا اَنُؤْمِنُ كَمَا امَنَ السُّفَهَاءُ اَلَا اِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلكِنْ لَّا يَعْلَمُوْنَ.
অর্থ: যখন তাদেরকে বলা হয়- তোমরা পবিত্র ঈমান আনো, যেরকম অন্যান্য ব্যক্তিত্ব (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) উনারা ঈমান এনেছেন। তখন তারা বলে- আমরা কি নির্বোধদের মতো
ঈমান আনবো? মনে রাখুন! প্রকৃতপক্ষে তারাই
নির্বোধ, কিন্তু তারা তা বুঝে না।
(পবিত্র সূরাতুল বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৩২তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ৮ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, আমভাবে প্রয়োজন সাপেক্ষে একাধিক ইমাম-মুজাতাহিদ ও ওলীআল্লাহ
উনাদেরকে অনুসরণ করার নির্দেশ স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি দান করেছেন। এছাড়াও
প্রমাণিত হয়েছে যে, হযরত ছাহাবা কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি। উনাদেরকে পবিত্র ঈমান ও আমলের ব্যাপারে
অনুসরণ করা মূলত: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও উনার রসূল হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশ মুবারক। চার মাযহাবের ইমামগণ উনাদেরকে
উত্তমভাবে অনুসরণ করতেন এবং উনাদের আলোকেই নিজ নিজ মাযহাবকে অকাট্য দলীলের মাধ্যমে
ছাবিত করেছেন।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ৩
(৬৯১-৬৯২)
اَلَّذِىْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ فِرَاشًا وَّالسَّمَاءَ بِنَاءً وَّاَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَاَخْرَجَ بِه مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ فَلَا تَجْعَلُوْا للهِ اَنْدَادًا وَّاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.
অর্থ: তিনিই পবিত্র সত্ত্বা, যিনি তোমাদের
জন্য যমীনকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন। আর আকাশ থেকে পানি
বর্ষণ করে তোমাদরে খাদ্যের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন। অতএব, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সাথে অন্য কাকেও সমকক্ষ মনে করো
না। আসলে তোমরা তা জানো। (পবিত্র সূরাতুল বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২২)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৩২ তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ২ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, আমভাবে প্রয়োজন সাপেক্ষে একাধিক ইমাম-মুজাতাহিদ ও ওলীআল্লাহ
উনাদেরকে অনুসরণ করার নির্দেশ স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি দান করেছেন। ইলমুশ শারীয়াত উনার মতো ইলমুত্ ত্বরীক্বত
শিক্ষা করা ফরয। আর এজন্য ইজমাউল্ উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াস উনাদেরকে মেনে নেয়া এবং
উনাদের মাসয়ালা অনুযায়ী আমল করা দায়িত্ব-কর্তব্য।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ৪
(৬৯৩)
قُلْ صَدَقَ الله فَاتَّبِعُوْا مِلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ.
অর্থ: হে হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সত্য
বলেন। সুতরাং তোমরা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সঠিক মিল্লাত উনার
অনুসরণ করো। আর তিনি তো মুশরিক ছিলেন না। (পবিত্র সূরাতু আলে ইমরান শরীফ- ৯৫)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৩৪তম সংখ্যায় প্রদত্ত ১ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, আমভাবে বা অনির্দিষ্টভাবে সত্যনিষ্ঠ ঈমানদার উনাদের পথ
অনুসরণ করা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার আদেশ।
পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ৫
(৬৯৪-৭৫৮)
ياَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوا اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِىْ شَىْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاخِرِ ذلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَاْوِيْلًا.
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার আনুগত্য
করো, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার অনুসরন-অনুকরণ করো এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা উলিল আমর (আদেশদাতা)
উনাদের অনুসরণ করো। তোমাদের মধ্যে যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ হয়, তাহলে উক্ত বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করো অর্থাৎ যেই উলিল আমর
উনার পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল বেশি সেই উলিল আমর উনাকেই
অনুসরণ করো। যদি তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
করে থাকো। এটাই কল্যানকর ও পরিনতির দিক দিয়ে উত্তম। (পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ:
পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৫৯)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৩৫তম সংখ্যা থেকে ২৪০তম মোট ৬টি সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ৬৪ খানা ইবারত
থেকে বুঝা গেছে যে, ‘উলিল আমর’ অর্থাৎ আমভাবে তথা ব্যাপকভাবে আদেশদাতা অনেকেই। যেমন উনারা
হলেন যথাক্রমে: সাইয়্যিদুনা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস্ সালাম, হযরত খুলাফার্উ রাশিদীন আলাইহিমুস্ সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম, হযরত তাবিয়ীন-তাবে’ তাবিয়ীন রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, সাত ক্বারী চৌদ্দ রাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, চার মাযহাব উনার সম্মানিত ইমাম-মুজতাহিদ মুতলাক
রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, আক্বায়িদ উনার সম্মানিত ইমাম
রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, চার ত্বরীক্বা উনাদের ইমাম
মুজতাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, যার যার মুরশিদ ক্বিবলা বা
শায়েখ আলাইহিমুস সালাম, হক্কানী-রব্বানী হযরত উলামায়ে
কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, হক্কানী-রব্বানী হযরত আউলিয়া
কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম ও হযরত ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা।
উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই নির্দেশ মুবারক করেছেন। তাই ‘উলিল্ আমর’ উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা সকল
মু’মিন-মুসলমান আলিম ও সর্বসাধারণ সকলের জন্য ফরদ্ব। আর এ
অনুসরণকেই মাযহাব মান্য করা বলা হয়ে থাকে। তাই মাযহাব মান্য করাও ফরয।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ৬
(৭৫৯-৭৬৫)
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاُولئِكَ مَعَ
الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ
وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَحَسُنَ اُولئِكَ رَفِيْقًا.
অর্থ: যে কেউ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার হুকুম মুবারক এবং
উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হুকুম মুবারক মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি নিয়ামত মুবারক
হাদিয়া করেছেন, সে উনাদের সঙ্গী হবেন। মহান
আল্লাহ তায়ালা তিনি নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করেছেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু
ওয়াস সালাম উনাদেরকে, হযরত ছিদ্দীক্বীন রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদেরকে, হযরত শুহাদা রহমতুল্লাহি
আলাইহিম উনাদেরকে ও হযরত ছলিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে। আর উনারা কতই না
উত্তম সঙ্গী। (পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ: ৬৯)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৪০তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ৭ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, হযরত নাবী-রসূল আলাইহিমুছ্ ছলাতু ওয়াস্ সালাম এবং হযরত
ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা, ছালিহীন তথা হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, উলামা ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে মহান
আল্লাহ তায়ালা তিনি যে অবারিত নিয়ামত মুবারক দিয়েছেন তা বর্ণনা করা হয়েছে। আর
উনাদের পথটিই হচ্ছে আছ্ ছিরাতুল্ মুস্তাক্বীম তথা সরল-সঠিক পথ। আরো প্রমাণীত হচ্ছে
যে, হযরত নাবী-রসূল আলাইহিমুছ্ ছলাতু ওয়াস্ সালাম এবং হযরত
ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা, ছলিহীন তথা হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, উলামা ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের
অনুসরণ-অনুকরণ করা মহান আল্লাহ তায়ালা উনারই নির্দেশ মুবারক। আর এ আদেশ মুবারক
আমভাবে বা ব্যাপকভাবে প্রয়োজন সাপেক্ষে একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করার
ব্যাপারে।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ৭
(৭৬৬-৭৬৮)
اُولئِكَ الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمُ
اقْتَدِهْ قُلْ لَّا اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِنْ هُوَ اِلَّا ذِكْرى
لِلْعَالَمِيْنَ.
অর্থ: উনারা এমন ছিলেন, যাঁদেরকে
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পথ প্রদর্শন করেছিলেন। অতএব আপনি অর্থাৎ আপনারা (এখানে
মূলত: উম্মাত উদ্দেশ্য) উনাদের পথ অনুসরণ করুন। অর্থাৎ উম্মতদেরকে বলুন তারা যেন
হিদায়েতপ্রাপ্ত উনাদেরকে অনুসরণ করে। আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের
কাছে এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না। এটি সারা বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ বাণী। (পবিত্র
সূরাতুল্ আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৯০)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৪৪তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ৩ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, পবিত্র ঈমান-আক্বায়িদ উনার ব্যাপারে সমস্ত নাবী-রসূল
আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদের বিধান একই। তাই এখানে আমভাবে বা ব্যাপকভাবে
একাধিক ব্যক্তিত্ব উনাদেরকে অনুসরণের ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু পবিত্র শরীয়াত
অর্থাৎ ফিক্বহ উনার মাসয়ালার ব্যাপারে অবস্থাভেদে হুকুম ভিন্ন-ভিন্ন হতো। তাই
পূর্ববর্তী উম্মাত উনাদের সময়ের বিধানসমূহ আমাদের জন্য পালন করা জায়িয নেই।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ৮
(৭৬৯-৭৭৪)
ياَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوا اتَّقُوا اللهَ
وَابْتَغُوْا اِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ وَجَاهِدُوْا فِىْ سَبِيْلِه لَعَلَّكُمْ
تُفْلِحُوْنَ.
অর্থ: হে মু’মিনগণ! তোমরা মহান আল্লাহ
তায়ালা উনাকে ভয় করো এবং উনার নৈকট্য লাভের জন্য ওয়াসীলা তালাশ করো। আর উনার পথে
জিহাদ করো। এতে তোমরা অবশ্যই সফলকাম হতে পারবে। (পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ:
পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৩৫)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৪৪তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ৬ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নৈকট্য অর্জন করার জন্য মূল
ওয়াসীলাহ হচ্ছেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। অতঃপর হক্কানী-রব্বানী হযরত উলামায়ে কিরাম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম এবং যার যার হক্কানী-রব্বানী শায়েখ তথা
মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনারা। এখানে ‘আল-ওয়াসীলাহ’ দ্বারা একাধিক ব্যক্তিত্ব উনাদেরকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে।
তাই প্রমাণিত হয় যে, একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে
প্রয়োজন সাপেক্ষে অনুসরণ করা জরুরী।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ৯
(৭৭৫-৭৭৬)
وَالسَّابِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ
الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاحْسَانٍ رَضِىَ
اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ وَاَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِىْ تَحْتَهَا
الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا اَبَدًا ذلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ.
অর্থ: মুহাজিরীন (হিজরতকারী) ও আনছার (হিজরতকারী উনাদেরকে
সাহায্যকারী) হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে যাঁরা পূর্ববর্তীদের
মধ্যে অগ্রগামী এবং পরবর্তীতে উত্তমভাবে উনাদেরকে যাঁরা (ইমাম, মুজতাহিদ, উলামা-আউলিয়া রহমাতুল্লাহি
আলাইহিম) অনুসরণ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর উনারাও উনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা
উনাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত আছে, উনারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবেন। এটাই হলো মহান সফলতা।
(পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ১০০)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৪৪তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ২ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত যাঁরা দুনিয়ায় আসবেন উনাদের সকলের জন্য
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা অনুসরনীয়। এটাও প্রমানীত হলো যে, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা অগ্রগামী ও
অনুসরনীয়। এখানে দেখাই যাচ্ছে যে, একাধিক মহান ব্যক্তিত্ব উনাদেরকে
ইত্তিবা বা অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। যা আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী বা অনির্দিষ্ট
ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণের দলীল।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ১০
(৭৭৭-৭৮০)
يايها الذين امنوا اتقوا الله و كونوا مع الصادقين.
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করো
এবং ছাদিক্বীন (চরম-পরম সত্যবাদী) উনাদের সঙ্গী হয়ে যাও। (পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ
শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ১১৯)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৪৫তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ৪ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ছাদিক্বীন উনারা হচ্ছেন- হযরত
ইমাম, মুজতাহিদ, আউলিয়া, মুরশিদ উনারা। উনাদেরই ছুহবত অর্জন করার জন্য বিশেষভাবে
আদেশ মুবারক করা হয়েছে। আরো প্রমানিত হয়েছে যে, পবিত্র
ইজমাউল্ উম্মাহ পবিত্র শরীয়াত উনার অকাট্য দলীল। এখানে দেখাই যাচ্ছে যে, একাধিক মহান ব্যক্তিত্ব উনাদেরকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করার
কথা বলা হয়েছে। যা আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী বা অনির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ অনুসরণের
দলীল।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ১১
(৭৮১-৭৮৫)
وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنْفِرُوْا كَافَّةً فَلَوْ لَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَائِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوْا فِى الدِّيْنِ وَلِيُنْذِرُوْا قَوْمَهُمْ اِذَا رَجَعُوْا اِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُوْنَ.
অর্থ: সমস্ত মু’মিনগণের সমষ্টিগতভাবে অভিযানে (জিহাদে) বের হওয়া উচিত
নয়। তাই, তাদের প্রত্যেক দল হতে কেন
কয়েকজন বের হয় না এই জন্য যে, উনারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম
সম্বন্ধে ফক্বীহ হবেন এবং স্বজাতির কাছে ফিরে এসে তাদেরকে (জাহান্নামের ভয়াবহতা ও
জাহান্নামী আমল সম্পর্কে) ভীতি প্রদর্শন করবেন, যাতে তারা (পাপ হতে) বিরত থাকে। (পবিত্র সূরাতুত্
তাওবাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ১২২)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৪৫তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ৫ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিষয়ক ইল্ম অর্জন করা মুসলিম পুরুষ ও
মহিলা জিন ইনসান সকলের জন্য ফরয। সচরাচর নিত্যপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর ইল্ম অর্জন করা
সাধারণভাবে সকলের জন্য ফরযে আইন। আর দন্ডবিধি ও বিচার-ফায়সালা বিষয়ক ইল্ম অর্জন
করা ফরযে কিফায়াহ। আরো প্রমাণীত হয়েছে যে, খবরে ওয়াহিদ শরয়ী অকাট্য দলীল
এবং উনার উপর আমল করা ফরয হিসেবে সাব্যস্ত। এখানেও প্রয়োজন সাপেক্ষে আল-মুজতাহিদুল
মুতলাক্ব অর্থাৎ অনির্দিষ্ট বা একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনুসরণের ইঙ্গিত
রয়েছে।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ১২
(৭৮৬-৭৯৮)
وَمَا اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ اِلَّا رِجَالًا
نُّوْحِىْ اِلَيْهِمْ فَاسْالُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا
تَعْلَمُوْنَ.
অর্থ: আপনার পূর্বেও আমি পবিত্র ওহী মুবারকসহ পুরুষদেরকেই
তাঁদের প্রতি রসূল রূপে পাঠিয়েছিলাম। অতএব, তোমরা যদি না জান তাহলে আহলে
যিকির অর্থাৎ আল্লাহওয়ালা বা ওলীআল্লাহ উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও। (পবিত্র
সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৪৩)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৪৬-২৪৭তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ১২ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো
যে, আহলুয্ যিক্র হচ্ছেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরুম মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ওয়ালিদার রসূল আলাইহিমাছ
ছলাতু ওয়াস সালাম উনারা, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা, হযরত আউলিয়া কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা অর্থাৎ
হক্কানী ও রব্বানী হযরত উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। এখানে যখন
আহলুয যিক্র দ্বারা ব্যাপকভাবে মহান ব্যক্তিত্ব উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে, তখন প্রয়োজন সাপেক্ষে আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী অর্থাৎ
একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করাও জরুরী।
আরো প্রমাণীত হয়েছে যে, ‘ইজমাউল
উম্মাহ’ ও ‘ছহীহ ক্বিয়াস’ সম্মানিত শরীয়াত উনার অকাট্য
দলীল। আর চার মাযহাবের ইমাম উনাদের যে কোন একজনকে মান্য করা ইজমাউল উম্মাহ মতে
ফরয।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ১৩
(৭৯৯-৮০৪)
يَوْمَ نَدْعُوْ كُلَّ اُنَاسٍ بِاِمَامِهِمْ فَمَنْ
اُوْتِىَ كِتَابَه بِيَمِيْنِه فَاُولئِكَ يَقْرَءُوْنَ كِتَابَهُمْ وَلَا
يُظْلَمُوْنَ فَتِيْلًا.
অর্থ: যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের ইমামের (যাকে তারা
অনুসরণ করতো তাদের) নামে ডাকবো। অত:পর যাঁদেরকে ডান হাতে তাঁদের আমলনামা দেয়া হবে, তাঁরা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে। আর তাদের প্রতি সামান্য
পরিমাণও অবিচার করা হবে না। (পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং
৭১)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৪৮তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ৫ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনারা উনাদের
উম্মতের ইমাম, আসমানী কিতাব সমূহ তাঁর
অনুসারীদের ইমাম, যার যার আমলনামা তার ইমাম, হক্ব মাযহাবের ইমামগণ তাদের অনুসারীদের ইমাম, যামানার ইমাম তথা মুজাদ্দিদ উনার অনুসারীদের জন্য ইমাম, অনুসরনীয় মুরশিদ বা শায়েখ হচ্ছেন উনার মুরীদ বা অনুসারীগণের
ইমাম, আউলিয়ায়ে কিরাম তথা হযরত উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি
আলাইহিম উনারা হচ্ছেন উনাদের অনুসারীদের জন্য ইমাম এবং কোন জনপদের নামাযের
মুছাল্লীদের জন্য ইমামই হচ্ছেন তাদের ইমাম। যাদেরকে সহ ক্বিয়ামতের দিন আহ্বান করা
হবে। এতে হক্বপন্থী ইমাম উনার সাথে হক্বপন্থী অনুসরণকারীগণ উপস্থিত হবেন, আর বাতিলপন্থী ইমাম বা নেতার সাথে বাতিলপন্থী অনুসারীরা
উপস্থিত হবে। এভাবে হক্ব ও নাহক্ব সুস্পষ্টভাবে আলাদা হয়ে যাবে। এখানেও প্রয়োজন
সাপেক্ষে একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ, ওলীআল্লাহ, আলিম, ছূফী প্রমুখ উনাদেরকে অনুসরণ
করার কথা বলা হয়েছে।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ১৪
(৮০৫-৮০৯)
وَمَا اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ اِلَّا رِجَالًا
نُّوْحِىْ اِلَيْهِمْ فَاسْاَلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا
تَعْلَمُوْنَ.
অর্থ: আপনার পূর্বেও আমি পবিত্র ওহী মুবারকসহ মানবকেই
তাঁদের প্রতি রসূল রূপে পাঠিয়েছিলাম। অতএব, তোমরা যদি না জান তাহলে আহলে
যিক্র (ইমাম, মুজতাহিদ, ওলীআল্লাহ) উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও। (পবিত্র
সূরাতুল্ আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৪৯তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ৫ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, আহলুয যিক্র হচ্ছেন- হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, ইলহাম-ইলক্বা প্রাপ্ত হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমাতুল্লাহি
আলাইহিম, হক্কানী-রব্বানী হযরত আউলিয়া
কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, হক্কানী-রব্বানী হযরত উলামা
কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম ও হক্কানী-রব্বানী হযরত ফুক্বাহা কিরাম রহমাতুল্লাহি
আলাইহিম উনারা। উনাদেরকেই অনুসরন-অনুকরণ করতে হবে। এখানে যখন আহলুয যিক্র দ্বারা
ব্যাপকভাবে মহান ব্যক্তিত্ব উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে, তখন প্রয়োজন
সাপেক্ষে আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী অর্থাৎ একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ
করাও জরুরী।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ১৫
(৮১০-৮১৪)
اَلَّذِىْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ وَمَا
بَيْنَهُمَا فِىْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ الرَّحْمٰنُ
فَاسْاَلْ بِه خَبِيْرًا.
অর্থ: যিনি আসমান জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা ছয়
দিনেই অর্থাৎ ছয় ধাপে তৈরি করেছেন। অতপর তিনি আরশের দিকে ইস্তাওয়া হয়েছেন, তিনিই রহমান। উনার সম্পর্কে যিনি অবগত, উনাকেই জিজ্ঞাসা করুন। (পবিত্র সূরাতুল ফুরক্বান শরীফ:
পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৫৯)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৪৯তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ৫ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, আলিম ব্যক্তি ও আরিফ বিল্লাহ তথা ওলীআল্লাহ ব্যক্তিত্ব
উনাদের কাছ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সম্পর্কে সঠিক ইল্ম অবগত হতে হবে। এতে
বুঝা যায় যে, যার যার মুরশিদ বা শায়েখ উনাকে
অনুসরণ করা মুরীদদের জন্য ফরয ও দায়িত্ব-কর্তব্য। ইহাই তো প্রয়োজন সাপেক্ষে একাধিক
ইমাম-মুজতাহিদ বা ওলীআল্লাহ উনাদের অনুসরণ। যা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার থেকে
প্রমাণিত হয়।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ১৬
(৮১৫-৮১৭)
وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَىَّ ثُمَّ
اِلَىَّ مَرْجِعُكُمْ فَاُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ.
অর্থ: তুমি উনার পথ অনুসরণ করো, যিনি আমার দিকে রুজূ’ হয়েছেন। অতপর তোমাদের
প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে। আমি তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো সে বিষয়ে, যা তোমরা করতে। (পবিত্র সূরাতু লুক্বমান শরীফ: পবিত্র আয়াত
শরীফ ১৫)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় মাসিক আল
বাইয়্যিনাত ২৫০তম সংখ্যায় প্রদত্ত মোট ৩ খানা ইবারত থেকে বুঝা গেছে যে, যিনি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দিকে রুজূ’ হয়েছেন উনারই পথ অনুসরণ করতে হবে। উনারা হলেন: সাইয়্যিদুল
মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরুম মুজ্সাসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবাহ কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা, হযরত মুহসিনূন তথা আউলিয়া কিরাম
রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, ছালিহীন তথা নেককার-পরহেযগার
ব্যক্তিত্ব উনারা, মুখলিছীন তথা একনিষ্ঠভাবে
ইবাদতকারী বান্দাগণ উনারা। উনাদেরকে অনুসরণ করতে আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ করা
হয়েছে। এখানেও প্রয়োজন সাপেক্ষে আত-তাক্বলীদুল মুতলাক্ব অর্থাৎ অনির্দিষ্ট বা
একাধিক ইমাম-মুজতাহিদ বা ওলীআল্লাহ উনাদেরকে অনুসরণ করতে নির্দেশ করা হয়েছে।
উল্লেখিত ১৬ খানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের তাফসীর থেকে
প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘আত-তাক্বলীদু গাইরুশ শাখছী বা
আত-তাক্বলীদুল মুতলাক্ব’ অর্থাৎ অনির্দিষ্ট তথা মুক্ত বা
একাধিক খলীফা, ইমাম-মুজতাহিদ, ওলীআল্লাহ, যার যার মুরশিদ বা শায়েখ, আলিম, ফক্বীহ, মুফতী, ক্বাযী, নেককার সুলতান বা বাদশাহ, পবিত্র নামায
উনার মুত্তাক্বী ইমাম উনাদেরকে প্রয়োজন সাপেক্ষে অনুসরণ করাও জরুরী ও
দায়িত্ব-কর্তব্য। ইহাও মাযহাব মান্য করা।
পরবর্তী সংখ্যায় “পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ‘আত-তাক্বলীদু গইরুশ শাখছী অর্থাৎ অনির্দিষ্ট বা একাধিক
ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে অনুসরণ করা’ প্রয়োজন সাপেক্ষে জরুরী
সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহ” শিরনামে আলোচনা শুরু হবে। ইনশা
আল্লাহ।