ছবি ও
তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়া সম্পর্কে ফতওয়া
গবেষণা
কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
(পূর্ব
প্রকাশিতের পর)
بسم
الله الرحمن الرحيم
গত
সংখ্যায়ও আমরা ছবির ফতওয়া ছাপিয়েছিলাম, কিন্তু ফতওয়াটি সম্পূর্ণ না হওয়ায়
ধারাবাহিকভাবে ছাপাতে হচ্ছে। যেহেতু অনেকে গত সংখ্যাটি নাও পেতে পারেন, সে জন্য
গত সংখ্যার দলীলগুলো বাদে শুধু মূল ফতওয়াটি আবারও ছাপানো হলো, যাতে করে
সবার পক্ষে অন্ততঃ মূল ফতওয়াটি জানা সম্ভব হয়, আর সম্পূর্ণ দলীল পেতে হলে সব
সংখ্যারই দরকার।
মহান
আল্লাহ পাক উনার অসীম শুকরিয়া ও রহমত যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ উনার গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে যথাক্রমে টুপি, অঙ্গুলী চুম্বনের
বিধান ও নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারতের পর বর্তমানে ‘ছবি’ সংক্রান্ত
বিষয়ে চতুর্থ ফতওয়া প্রকাশ করার তাওফিক এনায়েত করেছেন। প্রদত্ত ফতওয়াটি বিভিন্ন
আকলী এবং নকলী দলিল-আদীল্লার ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে। ছবি সম্পর্কে যাদের সহিহ বুঝ
নেই তাদের উচিৎ হবে প্রদত্ত ফতওয়া বুঝে তদানুযায়ী আমল করা। কেননা মহান আল্লাহ পাক
তিনি বলেন-
فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون
অর্থ: “সুতরাং
অভিজ্ঞ লোকদের নিকট জিজ্ঞাসা করে দেখ, যদি তোমাদের জানা না থাকে।” (পবিত্র সুরা নহল শরীফ, ৪৩ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
কিছু কিছু লোক কিল্লাত ইলম
কিল্লাত ফাহম (কম জ্ঞান,
কম বুঝ)-এর কারণে ছবি সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না
পেরে সমাজে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে, অথচ মহান আল্লাহ পাক উনার রসুল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
عن
ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من افتى بغير
علم كان اثمه على من افتا (رواه ابو داود)
অর্থ: “হযরত আবু
হুরাইরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “যে
ব্যক্তিকে ইলম ব্যতীত ফতওয়া দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তদানুযায়ী কাজ করেছে, তার
গোনাহ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে তার উপরই পড়বে।” (আবু দাউদ শরীফ)
সুতরাং
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা বোঝা যাচ্ছে ফতওয়া সব সময় পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র
হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস উনাদের ভিত্তিতে দিতে হবে। মনগড়াভাবে দেয়া
যাবেনা। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
قل هاتوابرها نكم ان كنتم صدقين.
অর্থ: “আপনি বলে
দিন, নিজ নিজ দলীল পেশ করুন,
যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক ।”
আমাদের আলোচ্য ফতওয়ার মূল বিষয় হচ্ছে ‘ছবি’। কোন্টা
ছবি আর কোন্টা ছবি নয়;
অনেকে অনেক ইখতিলাফ (মতভেদ) করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার
খাছ রহমত উনার মধ্যে আমরা ছবির একটি শরীয়ত সম্মত সংজ্ঞা দিতে সক্ষম হয়েছি।
আলোর
প্রতিফলন বা প্রতিসরণ ব্যতীত অন্য যে কোন পদ্ধতিতেই হোক না কেন, যদি কোন
বস্তু বা প্রাণী (যেমন মানুষ,পশু পাখি, মাছ ইত্যাদি) যে কোন স্থানে আকার আকৃতিতে দৃশ্যমান হয়, তবে সেই
আকার আকৃতিটিকে পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে উহার ছবি বলে। পক্ষান্তরে পবিত্র শরীয়ত
উনার দৃষ্টিতে কোন বস্তু বা প্রাণী (যেমন মানুষ, পশু পাখি, মাছ ইত্যাদি)
যেখানেই যে অবস্থায়ই থাকুক,
আলোর প্রতিফলন বা প্রতিসরণ বা উভয়ের মাধ্যমে যদি তা যে কোন
স্থানে আকার আকৃতিতে দৃশ্যমান হয় তবে সেই আকার আকৃতিটি ছবি নয়। কোন জানদার বা প্রাণীর ছবি আকাঁ, ছবি তোলা, ছবি তৈরী
করা, রাখা, দেখা ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী নাজায়িয, হারাম। ছবির ধারনাকে ভালভাবে
বোঝানোর জন্য আনুষাঙ্গিক কিছু আলোচনা করা হলো।
(ক) আলোর প্রতিফলন:
আলোকরশ্মি যখন বায়ু বা অন্য কোন স্বচ্ছ মাধ্যমের
ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য কোন মাধ্যমে বাধা পায়, তখন দুই মাধ্যমের বিভেদ তল থেকে
কিছু পরিমাণ আলো প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে। আলোর বাধা পেয়ে এই ফিরে আসাকে আলোর
প্রতিফলণ বলে।
আরও
সুক্ষ্মভাবে ব্যাখ্যা করলে বলা যায় যে, আলো হচ্ছে এক প্রকার --- এই ---
এর নির্দিষ্ট --- থাকে। আলোর ক্ষুদ্রতম অংশকে বলে ফোঁন ----। এই আলো যখন কোন
বস্তুর উপর পড়ে তখন সেই বস্তু থেকে অসংখ্য প্রতিফলিত ফোঁন বের হয়। যাদের ---
ভিন্ন রকম। ফলে আমরা বস্তুটির বিভিন্ন অংশকে বিভিন্ন রকম দেখতে পাই। অর্থাৎ
বস্তুটিকে আমরা হুবহু ঐ বস্তুর মত দেখতে পাই। আলোর এই প্রতিফলন নির্ভর করে
প্রতিফলকের গুণাগুণের উপর। এগুলো হল (১) প্রতিফলকের স্বচ্ছতা ও মসৃনতা (২) আলোর
গতিপথে বাধা সৃষ্টি করা এবং (৩) প্রতিফলকটির আলো শোষন না করার ক্ষমতা। অর্থাৎ কোন
বস্তু যত বেশী স্বচ্ছ ও মসৃণ হবে এবং সেটাতে যদি আলো ভেদ না করতে পারে এবং আলো
শোষন করার ক্ষমতা যত কম হবে, সেই বস্তু তত ভাল আলোর প্রতিফলণ ঘটাতে পারে। আলোর প্রতিফলণ
যত ভাল হবে প্রতিফলিত আলোর ঋৎবয়ঁবহপু তত কাছাকছি হবে।
(খ) আলোর প্রতিসরণ:-
আলোকরশ্মি
এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করার সময় দুই মাধ্যমের বিভেদ
তলে আলোকরশ্মি দিক পরিবর্তন করে। একে আলোর প্রতিসরণ বলে। একই মাধ্যমে ঘনত্বের
তারতম্যের কারণেও প্রতিসরণ হয়ে থাকে।
আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরনের ব্যবহার:
(১) আয়না, স্থির পানি, মসৃণ
ধাতবপৃষ্ঠ ইত্যাদিতে আলোর প্রতিফলন হয়। স্থির পানি, মসৃন ধাতবপৃষ্ঠ (যেমন: চকচকে
লোহা) ইত্যাদি প্রতিফলকের চেয়ে রূপালী প্রলেপ দেয়া আয়না বেশী ভাল প্রতিফলকের কাজ
করে। ফলে সূর্যের আলো আয়নার মধ্যে পড়ে অনেকটা একই ---- তে প্রতিফলিত হয়। (অবশ্য
১০০% নয়)। মূলতঃ আয়না এত ভাল প্রতিফলক, যার মধ্যে অল্প আলো পড়লেও সেটা
প্রতিফলিত হতে পারে। ফলে সূর্যের আলো যখন কোন বস্তুর উপর পড়ে, তখন সে
বস্তু থেকে যে বিভিন্ন ---- এর ফোঁন বের হয়। সেটা যদি আবার আয়নার মধ্যে পড়ে, তবে এই
পুণরায় প্রতিফলিত আলোর ফোঁনের ঋৎবয়ঁবহপু একই হয়। ফলে কোন বস্তুকে সরাসরি যে রকম
দেখি, আয়নার মধ্যে সেটাকে একই রকম দেখি।
মূল কথা
হল, কোন বস্তুকে সরাসরি দেখা এবং আয়নার মধ্যে দেখার মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই।
এক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রতিফলণের সংখ্যা একবার বৃদ্ধি পায়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে বর্ণিত আছে,
মহান আল্লাহ পাক উনার রসুল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গামলার পানির মধ্যে এবং দর্পনে নিজ
চেহারা মুবারক দেখেছেন।
কাজেই
আয়না, পানি এবং এ জাতীয় মসৃণ পৃষ্ঠে আামরা যা দেখি, তা কখনও ছবি হতে পারেনা।
(২)
পেরিস্কোপের মাধ্যমে দূরবর্তী বস্তু বা জীবকে কাছে বা বড় এবং স্পষ্ট দেখা যায়। এই
যন্ত্র আলোর প্রতিফলণ ও প্রতিসরণ উভয়টিই ব্যবহৃত হয়। ম্যাগনিফাইং গ্লাসে এবং চশমার
মাধ্যমে যথাক্রমে ক্ষুদ্র বস্তুকে বড় করে দেখা এবং অস্পষ্ট বস্তুকে স্পষ্ট করে
দেখা হয়। এখানেও আলোর প্রতিসরণ ব্যবহৃত হয়।
অনুবীক্ষণ যন্ত্রেও আলোর প্রতিসরণের কারণে বস্তুর আসল আকারের চেয়ে অনেক বড়
একটি চুড়ান্ত অবাস্তব প্রতিবিম্ব পাওয়া যায়।
দূরবীক্ষণ যন্ত্র যার দ্বারা অনেক দূরবর্তী বস্তু খালী চোখে দেখা যায়, তাতে
আলোর প্রতিফলণ ও প্রতিসরণ দু’পদ্ধতিই প্রয়োগ করা যায়।
এজন্য দূরবীক্ষণ যন্ত্র দু’প্রকার:
(১) প্রতিসরণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র। (২) প্রতিফলক
দূরবীক্ষণ যন্ত্র।
(গ) প্রতিবিম্ব: কোন বিন্দু থেকে নিঃসৃত আলোক-
রশ্মিগুচ্ছ প্রতিফলিত বা প্রতিসরিত হয়ে যদি দ্বিতীয় কোন বিন্দুতে মিলিত হয় বা
দ্বিতীয় কোন বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয়, তাহলে ঐ দ্বিতীয় বিন্দুকে প্র্রথম
বিন্দুর প্রতিবিম্ব (ওসধমব) বলে।
(ঘ) ক্যামেরা:
এই যন্ত্রের মাধ্যমে প্রথমে বস্তুর নেগেটিভ চিত্র পাওয়া যায়। যাকে পরে রাসায়নিক
প্রক্রিয়ার দ্বারা পজিটিভ বা প্রকৃতচিত্র তৈরী করা হয়।
(ঙ) টেলিভিশন:
টেলিভিশনের মাধ্যমে শব্দ শোনার সাথে সাথে বস্তুর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। বৃটিশ
বিজ্ঞানী লজি বেয়ার্ড ১৯২৩ সালে প্রথম টেলিভিশন আবিষ্কার করেন। ১৯৪০ সালে টি,ভি
বর্তমান অবস্থায় উন্নত হয়। ---ইত্যাদির কার্যাবলীকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা: (১)
প্রেরন (২) মাধ্যম (৩) গ্রহন -- এবং -- এর ক্ষেত্রে প্রথমে কোন বস্তুর ছবি তুলে
সেই ছবির বিভিন্ন অংশের,
আর --- এর ক্ষেত্রে কোন বস্তুর সরাসরি বিভিন্ন অংশের
প্রতিফলিত ফোঁনের --- আনুযায়ী একধরনের -- তৈরী হয়। সেই ঝরমহধষ কে আরও -- এর পর --
করা হয়। -- এর ক্ষেত্রে --- করা হয় বাতাসে। আর --- এবং -- এর ক্ষেত্রে তারের
মধ্যে। মাধ্যম বাতাসই হোক আর তারই হোক সেটা --- এ যখন আসে তখন সেটা --- করার পর
কিছু --- করা হয়,
এই --- গুলো -- তে অবস্থিত একটি ---- কে নিয়ন্ত্রন করে। ফলে
এই --- এর পর্দার যে অংশে যতটুকু --- ছাড়লে হুবহু --- করা ছবির মত হবে সে অংশে
ততটুকু ইলেকট্রন ছাড়ে। এই --- গুলো রাসায়নিক প্রলেপ পতিত হয়ে উজ্জল ও অনুজ্জল
বিন্দুর সমম্বয়ে ছবি তৈরী করে। এই ছবি -- এর পর্দায় দেখা যায়। অর্থাৎ ---
সবক্ষেত্রেই পর্দায় যা আসছে সেটা সুস্পষ্ট এবং বিশেষভাবে অঙ্কিত ছবি।
অনেকে
টেলিভিশনকে পানি ও আয়নার সাথে তুলনা করেছেন। মূলতঃ টেলিভিশন পানি ও আয়নার মত নয়।
তারা টেলিভিশনে কিভাবে ছবি আসে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা না থাকার কারণে
অজ্ঞতাপ্রসূত ফতওয়া দিয়েছেন। তাদের ফতওয়া নেহায়েতই গ্রহনযোগ্য নয়।
সিনেমা/চলচ্চিত্র/ছায়াছবি: মুই ব্রীজ নামক বিজ্ঞানী ১৮৭২
সালে প্রথম চলচ্চিত্র তৈরী করেন। তিনি একটি চলমান ঘোড়ার বিভিন্ন অবস্থানের ২৪টি
ছবি তৈরী করেন। ছবিগুলোকে যখন দ্রুত চালানো হত, তখন ঘোড়া দৌড়াচ্ছে বলে মনে হত।
১৮৯৩ সালে টমাস এডিসন মুইব্রীজের আবিষ্কারকে আরও উন্নত করেন। তিনিই সর্বপ্রথম সবাক
চলচ্চিত্র আবিষ্কার করেন। চলচ্চিত্র
প্রকৃতপক্ষে আলোকচিত্রেরই উন্নত সংস্করণ। কোন জিনিসের অনেকগুলো স্থির ছবি
ধারাবাহিকভাবে ঋরষস বা এক প্রকার স্বচ্ছ পদার্থের উপর সাজান হয়। যন্ত্রের মাধ্যমে
আলোর প্রক্ষেপণের দ্বারা এই সকল ছবি বৃহত্তররূপে প্রতিবিম্বত হয়ে পর্দার উপর পড়ে। প্রতিটি ছবি সেকেন্ডের সামান্যতম অংশ
সময়ের জন্য স্থিরভাবে পর্দায় পড়ে এবং এটা মুছে যাওয়ার সাথে সাথে আর একটা পর্দার
উপর পড়ে এবং এভাবে ক্রমাগত পড়তে থাকে। চোখের মাধ্যমে যদি আমাদের মস্তিষ্কে কোন
বস্তুর প্রতিবিম্ব অনুভূত হয়, তবে সেটা মুছে যেতে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন তার পূর্বেই যদি
আর একটা প্রতিবিম্ব তৈরী হয়, তবে এই প্রতিবিম্বগুলোর পার্থক্য নির্ণয় করা আমাদের পক্ষে
সম্ভব নয়। একারণেই চলচ্চিত্রের স্থির ছবিগুলোর পার্থক্য দর্শকের কাছে ধরা পড়েনা।
দর্শকের কাছে মনে হয় একই ছবি এবং ছবিতে যা দেখান হয় তা বুঝি চলমান।
মূলতঃ তা
ঠিক নয়, বরং স্থির ছবিই একটার পর একটা আসে যায়। যে জন্য একে চলচ্চিত্র বলে। ছবির উপর
আলোর প্রক্ষেপণের মাধ্যমে এর (ছবির) ছায়া পর্দার উপর নিক্ষিপ্ত হয়, সেজন্য
চলচ্চিত্রকে ছায়াছবিও বলে। উপরোক্ত
আলোচনার পর বলা যায় যে,
পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সচলতা বা স্থিরতা, --- এর
দ্বারা তৈরী বা ঋরষস ব্যতীত তৈরী, স্থায়ীত্বতা বা অস্থায়িত্বতা ইত্যাদি কোনটাই ছবি হওয়ার জন্য
শর্ত নয়। ছবিকে আরবীতে تصوير ইংরেজীতে --- ইত্যাদি বলা
হয়। কিন্তু যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, এবং যে কোন পদ্ধতিতেই তৈরী, আঁকা বা
তোলা হোক না কেন- পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র
ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা
মোতাবেক সমস্ত প্রাণীর ছবিই তৈরী করা, তোলা, আঁকা, দেখা, রাখা
ইত্যাদি নাযায়েয,
হারাম। প্রাণীর
ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনাদের মধ্যে কোন প্রকার
ইখতিলাফ (মতভেদ) নেই। কেননা ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে একাধিক ছহীহ পবিত্র হাদীছ
শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শরাহ, সমস্ত মশহুর ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবে সরাসরি উল্লেখ রয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে
অনেকে বলতে পারেন যে,
আমাদের ব্যবহারিক জীবনের ক্ষেত্রে যেমন- চাকরী, ব্যবসার
প্রয়োজনে, পড়াশোনার জন্য,
ব্যাঙ্কে একাউন্ট করতে, জমি ক্রয়-বিক্রয়ে, ড্রাইভিং
এবং অনেক প্রকার লাইসেন্স,
পারমিট ও পাসপোঁর্ট করতে ছবির প্রয়োজন হয়। তার মাসআলা কি? আলোচ্য
মাসআলার জবাবে অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, বর্তমান বিশ্বের কোথাও খিলাফত বা
ইসলামী শাসন ব্যবস্থা নেই। খিলাফত না থাকাতে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মাজুর হতে হয়।
পবিত্র কুরআন শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র
ক্বিয়াস উনার দৃষ্টিতে যে সকল কাজ ফরজ-ওয়াজিবের অর্ন্তভূক্ত তা পালন করার
পূর্বশর্ত হিসাবে যদি কোন ব্যক্তিকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও শরীয়তের খেলাফ কাজ করতে বাধ্য
করা হয়, তখন সে পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাজুর (অপারগ) বলে গন্য হয়।
শরীয়ত
বিরোধী রাষ্ট্রীয় ও আর্ন্তজাতিক ব্যবস্থার কারণে আমরা বহুক্ষেত্রে মাজুর।
আর্ন্তজাতিক ব্যবস্থার কারণে আজকাল বিদেশে যেতে হলে ছবিসহ পাসপোর্ট করতে হয়। অথচ
ছবি তোলা শরীয়তের আইনে সম্পূর্ণ নাজায়েয হারাম। কাজেই কোন ব্যক্তির উপর যখন হজ্ব
ফরজ হয়, তখন রাষ্ট্রীয় ও আর্ন্তজাতিক পবিত্র শরীয়ত বিরোধী আইন অনুযায়ী সে ব্যক্তি
ছবিসহ পাসপোর্ট করতে বাধ্য হয়। আবার যেহেতু হালাল উপার্জন করা ফরজ, সেহেতু
আজকাল চাকরী বা ব্যবসা বাণিজ্যে ছবির বাধ্যবাধকতার কারণে ছবি তোলা মাজুর হিসেবে
গণ্য হবে। যেহেতু চাকরী,
ব্যবসা ইত্যাদির জন্য যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজকাল
লেখাপড়া করতে ছবির দরকার হয়, তাই এক্ষেত্রেও ছবি তোলা মাজুরের হুকুম হবে। এ প্রসঙ্গে
কিতাবে একটা উসুল উল্লেখ করা হয়-
الضر ورات تبح المحطو رات.
অর্থঃ জরুরত হারামটাকে
হালাল করে দেয়।
একইভাবে
নিরাপত্তার জন্য ব্যাঙ্কে একাউন্ট খুলতে, জমি ক্রয়-বিক্রয়ে ইত্যাদি
আবশ্যকীয় বিবিধ ক্ষেত্রে পবিত্র শরীয়ত উনার বিরোধী আইনের কারণে আমাদেরকে ছবি তুলতে
বাধ্য করা হয়। এগুলো মাজুরের হুকুমেই পড়বে। এসবক্ষেত্রে
ইসলামী শরীয়ত বিরোধী আইন প্রণেতাগণও আইন প্রয়োগকারী প্রশাসন যারা পবিত্র কুরআন
শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিপক্ষে আইন প্রণয়ন করেছেন, করেন ও
করবেন তারা প্রত্যেকেই কঠিণ গুনাহে গুনাহগার হবেন। এবং সমুদয় গুনাহই তাদের উপর
বর্তাবে। যদি মাজুর না হয় তবে যারা ছবি সংক্রান্ত বিষয়ে জড়িত থাকবে, গুনাহ
তাদের উপরও বর্তাবে। এরপর বলা যায় যে, টেলিভিশনে অনেক ইসলামী প্রোগ্রাম
হয় বা ওয়াজ ভিডিও করে দেখা যায়, তাতে কি আমাদের ইলমে দ্বীণ হাছিল হয়না?
এসব কথার জাওয়াব মূলতঃ
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই উল্লেখ আছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান
আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يسعلو
نك عن الخمر والميسر قل فيهما اثم كبير ومنا فع للناس.
অর্থঃ “হে আমার
হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে প্রশ্ন করা হয় মদ ও জুয়া সম্পর্কে।
আপনি বলে দিন, মদ ও জুয়ার মধ্যে মানুষের জন্য ফায়দা রয়েছে। তবে ফায়দার চেয়ে গুনাহই বড়। কাজেই
এগুলি হারাম।” এখানে লক্ষণীয় যে, মহান
আল্লাহ পাক তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মদ ও জুয়ার মধ্যে ফায়দা রয়েছে। মদ
পান করলে স্বাস্থ্য ভাল হয়,
জুয়া খেললে রাতারাতি অনেক টাকা পাওয়া যায়। তথাপি এগুলোর
মধ্যে ফায়দার চেয়ে গুনাহ বেশী বলে এগুলোকে হারাম করা হয়েছে। সুতরাং মদ ও জুয়ার
মধ্যে উপকারীতা থাকা সত্ত্বেও এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়, এগুলো হারাম। মদ ও জুয়ার মধ্যে
উপকারীতার জন্য কেউ যদি এটাকে জায়েয মনে করে তবে সে কুফরী করল। ঠিক তদ্রুপ ছবির
উপকারীতার জন্য যদি কেউ এটাকে (ছবিসহ ইসলামী প্রোগ্রামকে) জায়েয মনে করে, তবে সেও
কুফরী করল।
সুতরাং
টেলিভিশন, ভি.সি.আর ইত্যাদির মধ্যে যদি ইসলামী প্রোগ্রাম হয়ও কিন্তু তার মূলই হল ছবি যা
স্পষ্টত হারাম, নাজায়েয। (এছাড়াও বর্তমানে টেলিভিশনের অন্যান্য অশ্লীলতার কারণেও এগুলো পবিত্র
ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হারামের পর্যায়ে পড়ে) কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
ولا تلبس الحق با لباطل.
অর্থঃ তোমরা সত্যকে
মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করোনা। অন্যত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
افتؤ منون ببعض الكتاب وتكفرون بيعض.
অর্থঃ তোমরা কিতাবের কিছু
অংশ মানবে, আর কিছু অংশ মানবে না,
তা হবেনা।
সুতরাং
টিভিতে বা ভি.সি.আর এ ইসলামী বা জ্ঞানমূলক অনুষ্ঠান প্রচার বা দেখার মধ্যে কিছু
উপকারীতা থাকা সত্ত্বেও যেহেতু এসবের মূল হচ্ছে ছবি; যার ফায়দার চেয়ে গুনাহই বড়। তাই
টি.ভি এবং ভি.ডি.ওতে কোন অনুষ্ঠান করা বা দেখা অবশ্যই হারাম, নাজায়েয।
তবে
হ্যাঁ টেলিভিশন, ভি.সি.আর ইত্যাদির মাধ্যমে কোন জানদার প্রাণীর ছবি ব্যতীত যদি ইসলামী তালিম বা
ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া হয়,
তবে তা নাজায়েয নয়। যেমন এখানে নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত
বা কারিগরি শিক্ষা পদ্ধতি দেখানো যেতে পারে। বলা বাহুল্য, কাফেররা
হল মুসলমানের খাদেম। তারা অনেক কিছু আবিষ্কার করে থাকে।
যেমন, (ফ্যান, মাইক, টি.ভি, ভি.সি.আর)
ইত্যাদি। মুসলমানগণ যখন দেখেন কাফেরদের খেদমত ইসলামী শরীয়ত উনার খেলাফ নয়, তখন তারা
ইচ্ছা করলে তা গ্রহণ করতে পারেন। আর ইসলামী শরীয়ত উনার খেলাফ হলে অবশ্যই তা বর্জন
করতে হবে। অবশ্য কোন মুসলমানও যদি পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার খেলাফ কিছু আবিষ্কার
করে তবে সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
تعا
نوا على البر والتقوى ولا تعا ونو على الاثم والعد وان (২ الماء
ده)
অর্থঃ “তোমরা
নেকী এবং পরহেযগারীর মধ্যে পরস্পর পরষ্পরকে সাহায্য কর। পাপ এবং শত্রুতার মধ্যে
পরষ্পর পরষ্পরকে সাহায্য করো না।”
শুধু তাই
নয়। বরং কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা বা সমর্থনও করা যাবে না। তাই মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন,
اذا
عملت الخطيئة فى الارض من شهدها فكر هها كان كمن غاب عنها- ومن غاب فر ضيها كان
كمن شهدها.
অর্থঃ “পৃথিবীতে
যখন কোন অন্যায় বা পাপ সংগঠিত হয়, তখন যে ব্যক্তি ঐস্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও উহাকে ঘৃণা
করে সে যেন সেস্থানে উপস্থিত ছিল না। আর যে ব্যক্তি অনপুস্থিত থাকিয়াও পাপের প্রতি
সন্তুষ্ট থাকে, সে যেন তথায় উপস্থিত ছিল।”
অনেকে
বলে থাকেন যে, আজকাল অনেক পীর সাহেব,
মুফতী সাহেব, মুফাচ্ছের সাহেব, মুহাদ্দেছ
সাহেব, মাওলানা সাহেব,
হাফেয সাহেব, ক্বারী সাহেব, ওয়ায়েয, ইসলামী
চিন্তাবিদ, ইসলামী রাজনৈতিক নেতা,
আলেম, জালেম, সুফি, দরবেশ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ টেভিভিশন, ভিসিআর
বা ছবি সংশ্লিষ্ট পদ্ধতিতে ইসলামী প্রোগ্রাম করেন এবং পেপারে পত্রিকায় ছবি তোলেন।
তাদের সম্পর্কে ফায়সালা কি?
মূলতঃ এর জবাবে সংক্ষেপে
এতটুকু বললেই চলে যে,
ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে কোন ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র
বা অধিকাংশ লোককে দলীল (আদর্শ) হিসেবে গ্রহণ করা যাবেনা। যতক্ষণ পর্যন্ত সে
ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোক পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র
ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস উনার উপর কায়েম না থাকবে। অর্থাৎ যে কেউ ইসলাম উনার
খেদমত করলেই যে, সে ইসলাম উনার আদর্শ বা দলীল বলে গণ্য হবে তা নয়।
বরং ছবি
ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িত ব্যক্তি মাত্রই ফাসেক হিসেবে গণ্য হবে। এ ধররে
ব্যক্তির পিছনে যদি কেউ নামায পড়ে তবে তার নামায দোহরানো বা পুনরায় আদায় করা
ওয়াজিব। সুতরাং কোন মতেই এ ধরণের ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া উচিৎ নয়।
একইভাবে, যে
ব্যক্তি ছবি ও তর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িত, তাকে হিদায়েতের দায়িত্বে, দ্বীন
ইসলাম উনার প্রচার,
প্রসারে অথবা যে কোন শরয়ী কাজে নিয়োগ করা মাকরূহ। পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اتظروا عن من تاخذون دينكن.
অর্থ: “তোমরা
লক্ষ্য করো, কার নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছে।”
কাজেই
যদিও তিনি পীর সাহেব,
ওয়ায়েয, রাজনীতিবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ বা আলেম হন আর
ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িত থাকেন, তবে তাদের অনুগত, অনুসারী, বাইয়াত
বা মুরীদ হওয়া নাজায়েয বা হারাম হবে। এতটুকুই নয় বরং তাদের নিকট বাইয়াত হয়ে থাকলেও
তা পরিহার করা ওয়াজিব,
কেননা তারা ফাসিক। তাছাউফের সমস্ত কিতাবে ফাসেকের নিকট
বাইয়াত হওয়াকে নিষেধ করা হয়েছে।
আরও
উল্লেখ আছে, তিন কারণে পুনরায় পীর ছাহেব গ্রহণ করা আবশ্যক বা জরুরী- (১) পীর ছাহেব যদি দূর
দেশে থাকেন, যার সাথে কোন যোগাযোগ রাখা সম্ভব নয়। (২) যদি পীর সাহেব ইন্তেকাল করে থাকেন, আর মুরীদ
তাকমীলে (পূর্ণতায়) পৌঁছে না থাকে। (৩) পীর সাহেব যদি বিদায়াতী হয় বা ইসলামী
শরীয়ত উনার খেলাফ চলে,
তাকে পরিহার করা ওয়াজিব।) উপরোক্ত ব্যক্তিদের সাথে শরয়ী কোন
কাজে অন্য কোন ব্যক্তির জড়িত হওয়াও মাকরূহ।
আর যদি
কেউ ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহকে হালাল বা জায়িয মনে করে- তবে তা হবে কুফরী।
ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে তার ফায়সালা হল যদি সে বিবাহ করে থাকে তবে তার বিবাহ
দোহরাতে হবে, যদি বিবাহ না দোহরায় তবে স্ত্রীর সাথে বসবাস করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয ও হারাম
এবং বিবাহ দোহরানো ব্যতীত যদি কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করে তবে অবশ্যই তা হালাল
সন্তান হিসেবে গণ্য হবে না। আর হজ্জ করে থাকলে হজ্জ বাতিল হবে। তওবা করার পর
ছাহেবে নেছাব হলে পূর্ণরায় হজ্জ করা ওয়াজিব বা ফরজ হবে। তদুপরি ইসলামী খিলাফত
কায়িম থাকলে তাকে তওবা করার জন্য ৩ (তিন) দিন সময় দেয়া হবে। যদি সে তওবা করে তাবে
তাকে ক্ষমা করা হবে,
অন্যথায় তার শাস্তি মৃত্যুদ-।
অনেকে
বলতে পারেন যে, কোন ব্যক্তি ছবি হালাল নয়; জানা থাকা সত্ত্বেও এটা তোলা চরম গুমরাহী ও কবীরা
গুনাহ, তা জানা না থাকার কারণে ছবি তুলতো বা ছবি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িত থাকতো অথবা কোন
ব্যক্তি, যার ছবি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার দরুন অর্থাৎ কোনটা ছবি আর কোনটা ছবি
নয় এ সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞান না থাকার কারণে ছবিকে হালাল মনে করতো বা ছবি সংশ্লিষ্ট
বিষয়ে জড়িত থাকতো এখন “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়া সম্পর্কে
বিস্তারিত ফতওয়া প্রকাশ হবার পর উপরোক্ত ব্যক্তি যদি তাদের ভুল বুঝে তওবা করে তবে
তাদের ফয়সালা কি?
পবিত্র
ইসলামী শরীয়ত উনার আইনে তাদের ফয়সালা হলো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
السر بالنسر والعلا نية با لعلانية
অর্থাৎ গোপন পাপের তওবা
গোপনভাবে আর প্রকাশ্য ভাবে পাপের তওবা প্রকাশ্যভাবে পাপের তওবা প্রকাশ্যভাবে করতে
হবে। আর যদি কেউ পত্রিকায় বা হ্যান্ডবিল ইত্যাদিতে বিবৃতি দিয়ে প্রকাশ্য পাপ করে, তবে তাকে
পুনরায় পত্রিকা, হ্যান্ডবিল ইত্যাদিতে প্রকাশ্যভাবে বিৃবতি দিয়ে তওবা করতে হবে। কারণ পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
كل
بنى ادم خطانون خير الحطا ئين التوابون.
অর্থাৎ- “প্রত্যেক
আদম সন্তান গুনাহগার;
তবে উত্তম গুনাগার ঐ ব্যক্তি যে তওবার উপর কায়িম থাকে।”
কাজেই
কোন ব্যক্তি যদি খালিছভাবে তওবা করে এবং এর থেকে পরহেয বা বিরত থাকে, তবে
পূর্ববর্তী পাপের দরুন তাকে তিরষ্কার করা বা মন্দ বলা যাবে না। এবং তাকে পুনরায়
ইমামতিতে, হিদায়েতের দায়িত্বে,
দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসারে অথবা যে কোন শরয়ী কাজে
নিয়োগ করা জায়েয হবে।
আর যদি
তিনি পীর সাহেব, ওয়ায়েয, রাজনীতিবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ বা আলেম হন, তাহলেও তাদের অনুগত অনুসারী, বাইয়াত বা মুরীদ হওয়া জায়িয।
অন্যথায় কখনই জায়িয নয়। আর উপরোক্ত ব্যক্তির সাথে শরয়ী কোন কাজে অন্য কোন ব্যক্তির
জড়িত হওয়াও জায়েয। আর যদি কেউ তওবা করার পরেও পূর্ব উল্লিখিত পাপে লিপ্ত হয় অর্থাৎ
মৌখিকভাবে ছবি তোলা হালাম স্বীকার করা সত্ত্বেও আমলে তার বিপরীত করে। মূলতঃ এটা
মুনাফেকী।
আর মহান
আল্লাহ পাক তিনি মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন,
واذاقيل
لهم امنوا كما امن الناس قالوا انؤمن كما امن السفهاء ط الا انهم هم السفهاء ولكم
لا يعلمون.
واذ
القوا الذين امنوا قالوا امناح واذا خلوا الى شيا طينهم قالوا انا معكم انما نحمن
مستهزئون. الله يستهزى بهم ويمد هم فى طغينهم يعمهون. او لئك الذين اشتروا الضللة
با لهدى ص فما ريحت تجرتهم وما كانوا مهتدين.
অর্থ: এবং যখন তাদেরকে বলা
হয় তোমরা ঈমান আন,
যেমন অন্যান্যরাও ঈমান এনেছে; তখন তারা বলে আমরা কি বোকাদের মত
ঈমান আনবো? সতর্ক হও নিশ্চয়ই প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা। কিন্তু তা তারা জানে না। আর যখন
তারা ঈমানদাদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তারা তাদের শয়তানদের
(দলের) সাথে নিরিবিলিতে মিলিত হয় তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি।
নিশ্চয়ই আমরা মুসলমানদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ বা উপহাস করি। বরং তারাই মহান আল্লাহ
পাক উনার নিকট পরিহাস্কৃত হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের নাফরমানীর মধ্যে ছেড়ে
দিয়েছেন। তারা অন্ধের মত ঘুরপাক খাচ্ছে। তারা ঐ সমস্ত লোক যারা হিদায়েতের বিনিময়ে
গোমরাহীকে খরিদ করে। তারা তাদের এ ব্যবসায় লাভবান হতে পারেনি। এবং তারা হিদায়েতও
লাভ করতে পারেনি। (পবিত্র সূরা বাকারাহ শরীফ, ১৩-১৬ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ।)
অতএব
যেহেতু পবিত্র কুরআন শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র
ক্বিয়াস শরীফ উনার অকাট্য দলীল দ্বারা ছবি আঁকা, তৈরী করা, দেখা, রাখা
ইত্যাদি সব হারাম প্রমাণিত। কাজেই এর বিপরীত কোন মত পথ গ্রহণ করা যাবেনা। আমাদের
একটা কথা মনে রাখতে হবে যে,
পবিত্র ইসলাম উনার কাজ অনেক সময় ফাসেক ও কাফির লোকদের
দ্বারাও হয়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ان الله ليو يد هذ الدين يرجل فاجر.
অর্থঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ
পাক তিনি এই দ্বীনের খেদমত নিবেন ফাছেক ফুজ্জার (কাফির) লোকের দ্বারা।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,
আবু তালেব সুদীর্ঘ ৪২ বৎসর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খেদমত করেছিল। কিন্তু তার ঈমান
নসীব হয় নাই। অর্থাৎ সে কাফির অবস্থাতেই ইসলামের খেদমত করেছিল। অনুরূপ হিন্দু
গিরিশ চন্দ্র সেন সম্পূর্ণ পবিত্র কুরআন শরীফ বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে এবং প্রথম
প্রকাশ করে ইসলাম উনার খেদমত করে। আবার পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে হরকত সংযোজন
করেছিল হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ। সে চরম জালিম হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহ পাক তিনি তার
দ্বারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার খিদমত নিয়েছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
বর্ণিত আছে-
السعيد من وعط بغيره (الحديت (
অর্থঃ “নেককার ঐ
ব্যক্তি, যে অপরকে নসীহত করা হলে- সেই নছীহত নিজে গ্রহণ করে।”
মুহম্মদিয়া
জামিয়া শরীফ উনার গবেষণা কেন্দ্র থেকে যে ফতওয়াগুলো দেয়া হয় এবং বর্তমানে ছবি ও
তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হারাম হওয়া সম্পর্কে যে ফতওয়া দেয়া হয়েছে তাতে কোন নিজস্ব কথা
বা অমূলক বক্তব্য পেশ করা হয়নি। বরং ফতওয়াগুলোতে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র
হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ তথা ইসলামের কথাই হয়েছে।
কাজেই
প্রদত্ত ছবির ফতওয়া অস্বীকার করার মানে হল প্রকৃতপক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র
হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র কিয়াস তথা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকেই অস্বীকার করা।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- “হে
ঈমানদারগণ! তোমরা পরিণূর্ণভাবে দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রবেশ কর এবং শয়তানের
পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেননা শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।”
অতএব
মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই আমাদের ছবি হারাম হওয়ার ফতওয়া মেনে নিতে
হবে। বাংলাদশ তথা সারাবিশ্বের ছবি সম্পর্কে যে ফিৎনা পয়দা হয়ে এখনও জারি আছে এবং
তাতে মানুষের পবিত্র ঈমান উনার যে ক্ষতি হচ্ছে- আমরা আশা করি, আমাদের এ
ফতওয়া প্রদানের পর ইনশাল্লাহ তার অবসান ঘটবে ও এর উছিলায় মানুষ ইসলাহ (সংশোধন)
প্রাপ্ত হবে এবং তাদের পবিত্র ঈমান হিফাজ হবে। মূলত আমাদের আলোচ্য ফতওয়ায়
জ্ঞানীগণের জ্ঞানমূলক জিজ্ঞাসার জবাব রয়েছে অর্থাৎ সমঝদারের জন্য ইশারাই যথেষ্ট :
العاقل تكفيه الا شارة
এখানে আমরা মহান আল্লাহ
পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শরাহ, মশহুর ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে
প্রাণীর ছবি আঁকা,
তৈরী করা, দেখা, রাখা, তোলা, ছাপান ইত্যাদি হারাম হবার ব্যাপারে ধারাবাহিকভাবে দলীল
বর্ণনা করে আসছি ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের রহমত করুন ও তাওফীক
ইনায়েত করুন। (আমীন)
(২৬৭-২৭৬)
عن
ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اتانى جبرا ئيل عليه السلام قال
ايتك البارحة- فلم يمنعنى ان يكون دخلت الا انه كان على الباب تما ثيل وكان فى
البيت قرام ستر فيه تماثيل وكان فى اليت كلب فمر رأس التمثال الذ على باب البيت
فيقطع فيصير كهيئة الثجرة. ومر بالبيت فيقطع فليجعل وساد تين منبو ذتين تؤطان- ومر
با لكلب فليخرج- فغعل رسول الله صلى الله عليه وسلم. (بخارى شريف ج ২
صفه ৮৮৭থ
مشكوة
صفه ৩৮৭، ابو داؤد ج
২
صغ ৪-
১، عمدة القارى- فتحالبارى- فيض البارى- مرقاة اشع المعات-
مظاهرحق)
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত
জিব্রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট এসে বললেন- আমি গত রাত্রে আপনার নিকট
আসিয়া ছিলাম। কিন্তু আমি আপনার ঘরে প্রবেশ করতে পারি নাই। কারণ, আপনর
ঘরের দরজায় এবং পর্দায় প্রাণীর ছবি ছিল। এবং একটি কুকুর ছিল। আপনি আদেশ করুন
ছবিটির মাথা কেটে দিতে,
তবে উহা গাছের ন্যায় হয়ে যাবে। পর্দাটি ছিঁড়ে উল্টিয়ে দু’টি বালিশ
তৈরী করার আদেশ দিন এবং কুকুরটি বের করে দেয়ার আদেশ দিন।” নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাই করলেন। (বুখারী
শরীফ ২য় জি: ৮৮৬ পৃ: মিশকাত শরীফ ৩৮৬ পৃ: তিরমীযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ,
উমদাতুল ক্বারী শরীফ, ফাতহুল
বারী শরীফ,
ফায়জুল বারী শরীফ, মিরকাত
শরীফ, আশয়াতুল লুমআত শরীফ, মোযাহেরে হক্ব শরীফ।)
এ পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার আমলের হুকুম সম্বন্ধে আমরা মূল ফতওয়াতেই উল্লেখ করেছি অর্থাৎ মাথা
কাটলে যদি ছূরত না বোঝা যায় তবে ছবির হুকুমে পড়বে না। আর যদি ছূরত বোঝা যায় তবে তা
ছবি হিসাবেই গণ্য হবে।
(২৭৭)
تصوير
بنانا يا بنوانابهر حال حرام ھے خواه دستى هويا عكسى- دنون كا ايك
حكم ھے (بهارشريعت ج ৩ صفه ১২৩-
অর্থ:- প্রাণীর ছবি তৈরী
করা বা তৈরী করানো প্রত্যেক অবস্থায় হারাম। চাই হাতে হোক অথবা ক্যামেরায় উভয়ের একই
হুকুম অর্থাৎ হারাম। (বাহারে শরীয়ত ৩য় জি: পৃ: ১২৩)
وان
كان وردفى حق عاض فيكون اشد عذابا من غيره من العصاة ويكون ذلك ذالا على المعصية
المذكورة- وفى التر ضيح قال اصحا بنا وعير هم صورة الحيو ان حرام اضد التحريم وهم
من الكبائر- صواء صنعه الما يمتهن او لغيره هحرام بكل حال- لان فيه مضا هاة لخلق
اللهথ وسواء كان فى ثوت او بساط او درهم او فلس
او اناء او حائطথ (عمدة القارى- فتاوى صديقيه صفه ৩৮৭، الزواجر عن اقراف الكبائرথ ج ২ صفه ৩৩.
অর্থ:- যদিও অন্যান্য
গুরুতর পাপের জন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু
ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণকারীর শাস্তি সর্বাপেক্ষা কঠিন হবে এবং কঠোর শাস্তিই
পাপের গুরুত্ব প্রমাণ করছে। তাওজীহ কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব
জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা নিষেধ, বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ (অর্থাৎ
হারাম) এটা কবীরাহ গুনাহ। চাই ওটাকে যত বা সম্মান প্রদর্শন করুক কিংবা
অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই বানায়ে থাকুক। কেননা এরূপ কাজে মহান আল্লাহ পাক উনার
সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। ওটা বস্ত্রে, বিছানায় মোহরে মুদ্রায় পয়সায়, পাত্রে
কিংবা প্রাচীর গাত্রে যে কোন স্থানে আঁকা বা নির্মাণ করা হারাম। (উমদাতুল
ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া পৃ: ৩৭৮, আব জাওয়াজির ২য় জি: পৃ: ৩৩)
(২৮১-২৮২)
وهذه
الا حاديث صريحة فى تحريم تصوير الحيوان انه غليطة التحريم ايضا فيه- ومامن لم
بقصد بها العبادة ولمضاهاة فهو فا سق صاحب ذنب كبير. (شرح نووى- فتاوى صديقه صيفه ৩৮৭)
উক্ত পবিত্র হাদীছ
শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা মূর্তি ণির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্বন্ধে
প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরী বা ণির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারাম ও বটে।
উক্ত কিতাবে আরও আছে- যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর চবি পূঁজা বা সৃষ্টির অনুকরণের
জন্য না-ও বানায়ে থাকে তবুও সে ফাসেক হবে এবং কবীরাহ গুনাহে গুনাহগার হবে। (শরহে
নববী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ পৃ: ৩৭৮)
(২৮৩-২৮৫)
قال
اصحابنا وعيرهم من العلماء تصوير صورة للحيو ان حرام شديد التحريم- وهو من
الكبائر- لا نه متو عد عليه بهدا الوعيد الشديد المد كورفى الا حاديث- سواء صنعه
فى ثوب او بساط ا دينار او درهم. (شح ج مرقاتا، فتاوى صديغيه صفه ৩৮৯،
نيل الا وطار ج ২ صفه ১০৫)
অর্থ:- আমাদের মাশায়েখগণ ও
ওলামাগণ উনারা বলেছেন যে,
প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম। এটা কবীরাহ
গুনাহ। কেননা এরূপ কাজের জন্য বিমেষ ভীতিপ্রদ অবস্থা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
উল্লেখ করা হয়েছে। ওটা কাপড়ে, বিছানায়, মোহরে কি টাকা-পয়সায় কিংবা যে কোনও স্থানে আঁকা থাকনা কেন
তা সমান কথা। (শরহে মিরকাত শরীফ, ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ শরীফ পৃ: ৩৭৯, নাইলুল আওতায় শরীফ ২য় জি:, পৃ: ১০৫)
(২৮৬-২৮৮)
واما
اتخاذ المصور بحيو ان فان كان معلقا على جائط صواء كان له ظل اولا- اوثوبا ملبو سا
اوعمامة او نحوذلك فهو حرام. (شرح مر قات- فتاوى صديقيه صفه ৩৮৩- نيل
الا وطار ج৬ صفه ১০৫)
অর্থ: প্রাণীর ছবি চাই ওটা
প্রাচীর গাত্রে ঝুলান থাকুক, চাই ওটা দেহ বিশিষ্ট হোক কিংবা আঁকা হোক অথবা পরিধেয় বস্তু
অথবা পাগড়িতে আঁকা থাকুক সর্বাবস্থায় ব্যবহার করা হারাম। (শরহে মিরকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ শরীফ পৃ: ৩৮৩, নাইলুল আওতার শরীফ ২য় জি:. পৃ:
১০৫)
(২৮৯)
جاندار
كى تصوير كسى حالت مين يهى ركه نهيى مكتى كه داندار كى تصوير شرعا حرام هى يهر
جاهى وه راق كى هو يا يير ي.......)
অর্থ: প্রাণীর ছবি কোন
অবস্থাই ঘরে রাখা জায়িয নেই। কেননা প্রাণীর ছবি তৈরী করা রাখা ইসলামী শরীয়ত উনার
মধ্যে হারাম। চাই ওটা বোরাকের হোক আর পীর, পয়গম্বরদের হোক। (ফতওয়ায়ে
রহীমিয়াহ শরীফ ২য় জি: পৃ: ২২৭)
(২৯০)
جاءت
الا جاديث الصحيحة الصربت با لنهى عن صناعه التما ثيل وعن تصوير ما فيه روح- سواء
اكان انسانا ام حيو انا ام طيرا. (فقه السنه ج ৩ صفه ৪৯৭)
ছহীহ পবিত্র হাদীছ
শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি বা মূর্তি তৈরী করা সম্বন্ধেই প্রকাশ্যেই নিষেধ করা হয়েছে।
ওটা মানুষের হোক বা জানোয়ারের কি পাখীর হোক সমান কথা অর্থাৎ হারাম। (ফিজহুস
সুন্নাহ ৩য় জি:,
পৃ: ৪৯৮)
(২৯১)
جاندار
كى صورت بنانا حرام هى اور هرايك تصوير بنانى والا دوزخ مين جائيكا. مشارق الا
نوار صفه ৪৪৪)
অর্থ: প্রাণীর ছবি তৈরী
করা হারাম। এবং প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে। (মাশারিফুল
আনওয়ার পৃ: ৪৪৪)
(১৯২)
واما
تصوبر الحميوان ان كانت كاملة الا عضاء فانها لا تحل (يعنى حرام) كتاب الغقه على
مذاهب الا ريعه ج ২ صفه ১৪.
অর্থ: প্রাণীর ছবি তৈরী
করা হারাম, যদি তা পূর্ণ দেহ বিশিষ্ট হয়। (কিতাবুল ফিকহ, আলা মাযাহিবিল আরবাহ, ২য় জি:, পৃ: ৪১)
(২৯৩)
واما
فعل التصوير فهو غير جائز مطلقا لان فيه مضا هاة لخلق الله تعالى وسواء كان فى ثوب او بساط او درهم
او اناء او حائط وغيرها (كفا ية المفتى ج ৯ صفة ২২২)
অর্থ: প্রাণীর ছবি তৈরী
করা নাজায়েয-হারাম। কেননা এটাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়।
প্রাণীর ছবি বস্ত্রে,
বিছানায়, মুদ্রায়, পাত্রে এবং প্রাচীর গাত্রে কিংবা অন্য কোন স্থানে থাকা একই
কথা অর্থাৎ হারাম। (কিফায়াতুল মুফতী- ৯ম হিজরী, পৃ: ২২২)
(২৯৪)
جاندار
كى تصوير بنانا اوربنوانا نا دائز اور حرام هى- خواه دستى هو يا عكسى دونون تصويرين هين اور تصوير كا
حكم ركهتى هين. كفاية المفتى ج ৯ صفه ২২৭.
অর্থ: প্রাণীর ছবি তৈরী
করা এবং তৈরী করানো নাজায়েয এবং হারাম, চাই হাতে হোক অথবা অন্য কোন
পদ্ধতিতে হোক উভয়ের একই হুকুম অর্থাৎ উভয়েই ছবি। (কিফায়াতুল মুফতী ৯ম জি:. পৃ:
২২৮)
(২৯৫)
فوطو
اور تصويرين قصدا مكان مين ركهنا حرام هين- بلافد كسى اخبار يا كتاب مين ره دائى
تويهحرام نهين مكريه بهى مكروه هى. كفاية المفتى ج ৯ صفه ২২৮.
অর্থ: ইচ্ছাকৃতভাবে ঘরের
মধ্যে প্রাণীর ছবি রাখা হারাম। এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি প্রাণীর চবি কোন খবরের কাগজ
অথবা বই পুস্তকে থেকে যায় তবে তা হারাম নয়, বরং তা মাকরূহ তাহরিমী। (যদি ঢেকে
রাখা হয় তবে মাকরূহ হবে না) (কিফায়াতুল মুফতী ৯ম জি:. পৃ: ২২৭)
(২৯৬)
تصويرونكا
خريدنا بيثا نجانزهى خواه وه ههوطى هو يا برى لاور بثون كا كهيلنى كى هون يا
كسىغرض كى لئ-
.........................
অর্থ: ছোট হোক বড় হোক
প্রাণীর চবি ক্রয়-বিক্রয় করা নাজায়েয হারাম। বাচ্চাদের খেলার জন্য অথবা যে কোন
উদ্দেশ্যেই হোক না কেন তা নাজায়েয। কিন্তু প্রাণীর ছবিযুক্ত এমন কোন জিনিস যার ছবি
ক্রয়-বিক্রয় মাকছুদ নয়,
তা ক্রয় করা নাজায়েয নয়। যেমন দিয়াশলাই বা ছবি যুক্ত কিন্তু
ছবি ক্রয় করা মাকছুদ নয়,
দিয়াশলাই ক্রয় করাই মাকছুদ। (কিফায়াতুল মুফতী ৯ম জি:, পৃ: ২২৩)
(বি:
দ্র:- যেহেতু প্রাণীর ছবি ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম সেহেতু হারাম থেকে বাঁচার জন্যে
নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র, খবরের কাগজ, বই-পুস্তক ইত্যাদি ক্রয়ের পূর্বে
যার মধ্যে প্রাণীর চবি নেই তা ক্রয় করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টার
পরও যদি ছবি বিহীন জিনিসপত্র না পাওয়া যায়, তখন মাযুর হিসাবে প্রাণীর
ছবিযুক্ত আসবাবপত্র কেনা যেতে পারে। কেননা জরুরত হারামকে মোবাহ করে দেয়)
(২৯৭)
تصوير بنانى كانوكرى كرنا دائز نهين. امداد الفتاوى ج ৪ صفه ১৩৮.
অর্থ: প্রাণীর ছবি তৈরী
করার চাকরী করা জায়িয নেই। (ইমদাদুল ফতওয়া ৪র্থ জি:, পৃ: ১৩৮)
(২৯৮)
....................................................................................................
অর্থ: ক্যামেরার দ্বারা
প্রাণীর ছবি আঁকা বা করানো এবং ওটার পেশাও নাজায়েয। কেননা ক্যামেরার ছবিও
উচ্চমানের পরিপূর্ণ ছবি। তাই ছবির হুকুমসমূহ ওটার উপর বর্তাবে। (কিফায়াতুল মুফতী
৯ম জি:, পৃ: ২৩৪)
(২৯৯)
الصور يحرم صنعها ويحرم اشتعمال الثوب حجة الله البا لغه ج ২ صفه ১৩০.
অর্থ: প্রাণীর ছবি তৈরী
করা হারাম এবং (প্রাণীর ছবি) কপড়ে ব্যবহার করাও হারাম। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ
২য় জি: পৃ: ১৩০)
..............................................
অর্থ: পূর্বে বর্ণিত
পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা এবং ওটা ঘরে
রাখা সব হারাম। (আকসি আশরাফী বেহেস্তি জিওর ৬ষ্ঠ জি:। পৃ: ৫)
(৩০১)
..........................................................................................................................
অর্থ: প্রাণীর ছবি তৈরী
করা পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে হারাম। কেননা প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার
ব্যাপারে সকলেই একমত,
সুতরাং ওটা তৈরী করা সর্বাবস্থায় হারাম। (ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ
পৃ: ১০)
(৩০২)
...........................................................................................................
অর্থ: ছোট হোক বড় হোক
প্রাণীর ছবি ক্রয়-বিক্রয় করা নাজায়েয হারাম। বাচ্চাদের খেলার জন্য অথবা যে কোন
উদ্দেশ্যেই হোক না কেন তা নাজায়েয। কিন্তু প্রাণীর ছবিযুক্ত এমন কোন জিনিস যার ছবি
ক্রয়-বিক্রয় মাকছুদ নয়,
তা ক্রয় করা নাজায়েয নয়। যেমন দিয়াশলাই যা ছবি যুক্ত কিন্তু
ছবি ক্রয় করা মাকছুদ নয়,
দিয়াশলাই ক্রয় করাই মাকছুদ। (কেফায়াতুল মুফতী ৯ম জি:, পৃ: ২২৩)
(বি: দ্র:- যেহেতু প্রাণীর ছবি
ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম সেহেতু হারাম থেকে বাঁচার জন্যে নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র, খবরের
কাগজ, বই-পুস্তক ইত্যাদি ক্রয়ের পূর্বে যার মধ্যে প্রাণীর চবি নেই তা ক্রয় করার জন্য
যথাসাদ্য চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টার পরও যদি ছবি বিহীন জিনিসপত্র না পাওয়া যায়, তখন
মাযুর হিসাবে প্রাণীর ছবিযুক্ত আসবাবপত্র কেনা যেতে পারে। কেননা জরুরত হারামকে
মোবাহ করে দেয়।)
(২৯৭)
تصوير بنانى كانو كرى كرنا جائز نهين. امداد الفتاوىج ৪ صفه ১৩৮)
অর্থ: প্রাণীর ছবি তৈরী
করার চাকরী করা জায়িয নেই। (এমদাদুল ফতওয়া ৪র্থ জি:, পৃ: ১৩৮)
(২৯৮)
...........................................................................................................................
অর্থ:- ক্যামেরার দ্বারা
প্রাণীর ছবি আঁকা বা করানো এবং ওটার পেশাও নাজায়েয। কেননা ক্যামেরার ছবিও
উচ্চমানের পরিপূর্ণ ছবি। তাই ছবির হুকুমসমূহ ওটার উপর বর্তাবে। (কিফায়াতুল মুফতী
৯ম জি:, পৃ: ২৩৪)
(২৯৯)
الصوريحرم صنعها ويحرم استعمال الثوب حجة الله البالغه ج ২ صفه ১৩০.
অর্থ: প্রাণীর ছবি তৈরী
করা হারাম এবং (প্রাণীর ছবি) কাপড়ে ব্যবহার করাও হারাম। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ
২য় জি: পৃ: ১৩০)
(৩০০)
...........................................................................................................................
অর্থ: পূর্বে বর্ণিত
পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা এবং ওটা ঘরে
রাখা সব হারাম। (আকসি আশরাফী বেহেস্তি জিওর ৬ষ্ঠ জি: পৃ: ৫)
(৩০১)
...........................................................................................................................
অর্থ: প্রাণীর ছবি তৈরী
করা পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে হারাম। কেননা) প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার
ব্যাপারে সকলেই একমত,
সুতরাং ওটা তৈরী করা সর্ববস্থায় হারাম। (ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ
পৃ: ১০)
(৩০২)
.......................................................................................................................
অর্থ: প্রাণীর ছবি তৈরী
করা বা করানো সাধারণত: হারাম। কলম দ্বারা হোক অথবা ক্যামেরার মাধ্যমে অর্থাৎ যে
পদ্ধতিতেই হোক না কেন সকলের একই হুকুম অথ্যাৎ হারাম। কেননা) ছহীহ হাদীছ শরীফসমূহ
এবং ফেকহি ইবারতসমূহের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়েয ও
হারাম। (ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ পৃ: ৪৮)
(৩০৩-৩০৪)
رسول
كريم صلى الله عليه وسلم على رضى الله تعالى عنه راقرستاد كه هرجا كه تصو ير بينند
او رامحو كنند. (ارشاد الطا لبين صفه ২০، اختلاف امة اور صراط مستقيم صفه ২৯)
অর্থ:- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ
আলাইহিস সালাম উনাকে (এই বলে) পাঠালেন যে, যেখানেই প্রাণীর ছবি দেখতে পাবে
ওটা ধ্বংস করে ফেলবে। (ইরশাদুত তালিবীন পৃ: ২০, ইখতেলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুসতাক্বীম পৃ: ৬৯)
(৩০৫)
..................................................
অর্থ: কিছু লোকের ধারণা, পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হাত দ্বারা প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম করা হয়েছে ক্যামেরার
দ্বারা নয়। এটা তাদের ভুল এবং ভ্রান্ত ধারণা। মূলত: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা
প্রাণীর ছবি হওয়ার মূল উদ্দেশ্য ওটা যে পদ্ধতিতেই তৈরী করা হোক না কেন। (তোহফায়ে
খাওয়াহতীন পৃ: ৯১২)
(৩০৬)
...........................................................................................................................
অর্থ: কলম দ্বারা যেরূপ
প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়েয (ও হারাম) তদ্রুপ ক্যামেরা, প্রেস, ছাঁচ, মেশীন
ইত্যাদির দ্বারাও প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়েয (ও হারাম) (জাদীদ মাসায়েলকে
শরয়ী আহকাম পৃ: ৪৪)
(৩০৭)
প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম, কঠিন
হারাম। ছবি ভক্তি মুহব্বতের পাত্রের হোক অথবা অন্য কোন কারণেই হোক, ওটা
প্রাণীর হলেই হারাম হবে। ওটা কাপড়ে, বিছানায়, দেয়ালে
অথবা যে স্থানেই হোক না কেন হারাম হবে। তদ্রুপ প্রাণীর মূর্তি ও পুতুল ঘরে রাখা ও
তা নিয়ে খেলা করা ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হারাম। (বাংলা- ছিরাজুছ সালেক্বীন
পৃ: ২১২)
(৩০৮) প্রাণীর ছবি কলম দ্বারাই
আঁকা হোক আর ছাপাখানায় ছাপাই হোক অথবা ক্যামেরাতেই ফটো তোলা হোক সকলেরই এক হুকুম
অর্থাৎ জায়িয নয়। (বাংলা বে ফায়দা গুনাহ পৃ: ৭৭)
(৩০৯) ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে
ছবি তোলা ও ফটোর ব্যবহারকে হারাম বলে সাব্যস্ত করেছে। চিত্রাঙ্কন ও ফটোগ্রাফিদের
একই বিধান। অর্থাৎ কোন প্রাণীর ফটো তোলা হারাম। প্রাণহীন বস্তুর মধ্যে যা পূঁজা
করা হয়, ওটার ছবি তোলাও হারাম। ছবি তোলা, রাখা ও প্রচার করা নাজায়েয। (আধুনিক
যন্ত্রপাতির ইসলামী আহকাম পৃ: ১০২)
উক্ত
কিতাবের ১০৮ নং পৃষ্ঠায় হযরত মাওলানা মুফতী মুহম্মদ শফী সাহেব আরো উল্লেখ করেন যে, বহু
আধুনিক আলিম যারা এককালে ছবি তোলা জায়িয বলে তার প্রতি মানুষকে কার্যত উৎসাহ
প্রদান করেছেন, তারা বর্তমানে স্বীয় কৃতকর্ম হতে তওবা করে ছবি তোলা নাজায়েয বলেছেন।
আমরা অতি
আনন্দের সাথে মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে (কংগ্রেস সভাপতি) ধন্যবাদ জানাচ্ছি- তিনি
বহুদিন পর্যন্ত স্বীয় পত্রিকা ‘আল হেলাল’কে ছবিসহ প্রকাশনার পর, পরে স্বীয় অভিমত পূর্ণবিবেচনা
করেছেন। উনার কোন ভক্ত উনার জীবনী লিখে ওটাতে উনার ছবি দিতে চাইলে তিনি অস্বীকার
করেন এবং জবাবে বলেন- ছবি তোলা, ওটা রাখা ও প্রচার করা নাজায়েয।
“আমি
নিতান্ত ভুলক্রমে ‘আল হেলাল’ পত্রিকাকে ছবিসহ প্রচার করেছিলাম। এ ভুল হতে এখন তওবা করছি।” উনার
নিকট ছবি তোলার দরখাস্ত করা হলে তিনি জবাবে ওটা চিত্রঙ্কনের অন্তর্ভুক্ত বলে
লিখেছেন, ছবি তোলা, ছবি রাখা, প্রচার করা সব নাজায়েয।
এটা
দ্বারা হযরত মাওলানা সোলায়মান নদভী সাহেবের দলীলের রহস্য ফাঁস হয়ে গেছে। নদভী
সাহেব রওশন খেয়াল আলেমদের কথা নকল করে বলেছেন, “ফটো তাসবীর নহে, ফটোকে
তাসবীর বলা যায় না।”
অবশ্য
মাওলানা নদভী সাহেবও মৃত্যুর পূর্বে মত পরিবর্তন করে ফটোকে নাজায়েয বলেছেন।
আমার শেষ আরয হলো- যে সকল
দলীলের উপর ভিত্তি করে ফটোকে জায়েয বলা হয় ওটার একটিও গ্রহণযোগ্য নয়। এমন দলীলের
পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট হারামকে হালাল বলা মহান আল্লাহ ভীরু কোন মুসলমানের জন্য
সম্ভব নয়।
এবং এটা
উক্ত কিতাবের প্রথমে উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্তুর্ভুক্ত হবে, যাতে
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন- “আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক পয়দা হবে, তারা নাম বদলায়ে মদ পান করবে।” অনুরূপভাবে
তারা তাসবীরের নামে ফটো রেখে ওটাকে হালাল করতে চায়।
মহান
আল্লাহ পাক তিনি মুসলমানদিগকে এ মুসীবত হতে রক্ষা করুন। আমীন। “লা-হাওলা
ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” -মুফতী মুহম্মদ শফী
(৩১০)
হাতে
আঁকা হোক কিংবা কোন যন্ত্রাদির সাহায্যে কোন প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকা সর্বোতভাবে
নিষিদ্ধ ও হারাম। (বাংলা ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ পৃ: ৩৭৭)
(৩১১)
...........................................................................................................................
অর্থ: বর্তমান আধুনিক যুগে
যাকে ছবি বলা হয়,
ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহের আলোকে ওটা আঁকা বা তৈরী করা
এবং ঘরে রাখা সম্পূর্ণ হারাম। (প্রাণীর ছবি) ওটা নিঃচিহ্ণ করে ফেলা ওয়াজিব। (ইমদাদুল
ফতওয়া ২য় জি: পৃ: ১৫১)
(৩১২)
........................................................................................................
অর্থ: আধুনিক যে কোন
পদ্ধতিতে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো, হাতে তৈরী করা বা তৈরী করানোর
মতোই হারাম ও নাজায়েয এবং প্রাণীর ছবি রাখাও তদ্রুপ হারাম।
উক্ত
আমলকারী ব্যক্তি ফাসিক এবং তাকে ইমাম নিযুক্ত করা হারাম। এবং তার পিছনে নামায পড়া
মাকরূহ তাহরিমী। (ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ, ১ম জি: পৃ: ৭৪২)
(৩১৩-৩২১)
...........................................................................................................................
অর্থ:- প্রাণীর ছবিযুক্ত
কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমী। এবং নামাযীর মাথার উপর, সামনে, ডানে, বাঁয়ে
এবং জুতোর মধ্যে এবং সিজদার স্থানে প্রাণীর ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহরিমী হবে। (রদ্দুল
মোহতার ১ম জি: পৃ: ৬৪৮, ইমদাদুল ফতওয়া জাদীদ ১ম জি: পৃ: ৪৪০, দুররুল মুখতার,
ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ পৃ: ৩৮৬, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম জি: পৃ: ১১৯, তোহফাতুল আযম পৃ: ৩৬, নূরুদদেরায়া ২য় জি: পৃ: ৬০, খোলাছাতুল ফতওয়া ১ম জি: পৃ: ৫৮, মা-দানুল হাকায়িক ১ম জি: পৃ: ১৫২)
(৩২২-৩৩৫)
ويكره
ان يكون فوق راسه فى السقف او بين يديه او بحذا ائه تصاو ير او صورة معلقة- واشدها
كراهة ان تكون امام المصلى ثم من قوق راسه- ثم على يمينه ثم على شماله ثم خلفه= (
فتح القدير ج ১ صفه ৩২৬، غينى شرح هدايه ج ১ صفه ১৪২،
شرح وقاية ج ১ صفه ১২ شرح
النقاية ج১ صفه ২১৫،
كتاب الفقه على مذاهب الاربح ج১، صفه ২৫৮، مراقى الفلاح صفه ২৪০، الجامع الصغير صفه ২৫،
منية المصلى صفه ১৪৩، زهر الفقه صفه ২৬،
مالابد منه صفه ২১، انوار محمود صفه ৫২)
অর্থ:- নামায মাকরূহ
তাহরিমী হবে: নামাযীর মাথার উপর, ছাদের মধ্যে অথবা সামনে অথবা জুতোর মধ্যে অথবা ঝুলন্ত
অবস্থায় প্রাণীর ছবি থাকলে। এবং নামায শক্ত মাকরূহ তাহরিমী হবে- প্রাণীর ছবি
নামাযীর সামনে, বা মাথার উপরে,
বা ডানে, বা বাঁয়ে, বা পেছনে থাকলে। (ফাতহুল কাদীর ১ম জি: পৃ: ৩৬২, আইনী শরহে হেদায়া ১ম জি: পৃ: ৮০৭, বাহরুর রায়েক ২য় জি: পৃ: ২৭, লিসসুরুখছিল মাবছুত ১ম জি: পৃ: ২১১, হেদায়া ১ম জি: পৃ: ১৪২, শরহে বেকায়া ১ম জি: পৃ: ১২৮, শরহে নেকায়া ১ম জি: পৃ: ২১৭
কিতাবুল ফেকাহ আলা মাযাহিবিল আরবা ১ম জি: পৃ: ২৭৮, মারাকিউল ফালায় পৃ: ২৪০, জামেউছ ছগীর পৃ: ২৬, মালাবুদ্দা মিনহু পৃ: ৬১, আনোয়ারে মাহমূদ পৃ: ৫৬)
(৩৩৬-৩৫০)
.................................................................................................
অর্থ:- প্রাণীর ছবিযুক্ত
কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমী।
নামাযের
বাইরেও উক্ত কাপড় পরিধান করা নাজায়েয। এবং প্রাণীর চবি নামাযীর মাথার উপর ছাদের
মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায়,
অথবা সিজদার স্থানে থাকলে নামায মাকরূহ তাহরিমী হবে।
এবং নামাযীর সামনে, ডানে, বায়ে এবং
পেছনে প্রাণীর ছবি থাকলেও নামায মাকরূহ তাহরিমী হবে। (বাহারে শরীয়ত ৩য় জি: পৃ:
১২৩, ফতওয়ায়ে আ: হাই পৃ: ২০৬, নূরুল হেদায়া ১ম জি: পৃ: ১০৯, সুন্নী বেহেস্তী জিওর ১ম জি: পৃ: ৮৯, আহসানুল
মাসায়েল পৃ: ৪২ রোকনুদ্দিন পৃ: ৭০, আইনুল হেদায়া ১ম জি: ৫১২, এলমুল ফেকাহ ২য় জি: পৃ: ২৪১, ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ৪র্থ
জি: পৃ: ১৩৭,
আশ্রাফী বেহেস্তি জিওর ২য় জি: পৃ: ২৫, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১ম জি: পৃ: ১৭০, তরীকুল ইসলাম ৭ম খ- পৃ: ৪০, নুরুল ইজাহ,
গায়াতুল আওতার, হাশিয়ায়ে তাহতাবী)
(৩৫১-৩৫৩)
...........................................................................................................................
অর্থ:- প্রাণীর ছবিযুক্ত
স্থানে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমী এবং উক্ত নামায দোহরানো ওয়াজিব। কেননা আলমগীরি, ফতহুল
কাদীর কিতাবে মাকরূর বয়ানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নামাযের মধ্যে মাকরূহ তাহরিমী হলে
নামায দোহরানো ওয়াজিব,
আর মাকরূহ তানযীহ হলে নামায দোহরানো মোস্তাহাব। (আহসানুল
ফতওয়া ৩য় জি: পৃ: ৪২৭, আলমগীরি, ফতহুল
ক্বাদীর ইত্যাদি)
মুহম্মদিয়া
জামিয়া শরীফ “গবেষণা কেন্দ্র”
উনার তরফ থেকে ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হালাল হওয়া
সম্পর্কে ফতওয়া মাসিক “আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে পরপর তিন সংখ্যায় (১ম বর্ষ ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ২য় বর্ষ ১ম ও ২য়) প্রকাশ করা হলো।
পবিত্র
হাদীছ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শরাহ উনাদের কিতাব, পবিত্র ফিকাহ শরীফ, পবিত্র
ফতওয়া শরীফ, পবিত্র তাসাউফ শরীফ ও অন্যান্য ইসলামী কিতাবসমূহ থেকে আকলী ও নকলী
দলীল-আদিল্লার দ্বারা পবিত্র শরীয়ত উনাদের দৃষ্টিতে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র
হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস উনাদের ভিত্তিতে প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, তৈরী করা, ছাপানো, রাখা, দেখা
হারাম প্রমাণ করা হয়েছে। ফতওয়াগুলোতে প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার পক্ষে এ পর্যন্ত মোট
৩৫৩টি দলীল দেয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলোই শেষ নয়। এ ছাড়াও আরো অনেক দলীল দেয়া যেত।
কিন্তু স্থান ও সময়ের কারণে সবগুলো দলীল দেয়া সম্ভব হলো না। অবশ্য মহান আল্লাহ পাক
উনার রহমতে আমরা যেভাবে ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ হারাম প্রমাণ করেছি, তার জন্য
আর কোন দলীলের প্রয়োজন হবে না। তথাপিও যদি কখনও কোন প্রয়োজন পড়ে, তবে আমরা
আরো বিস্তারিতভাবে ও অধিক দলীল-আদিল্লাসহ প্রাণীর ছবি হারাম প্রমাণ করার সামর্থ
রাখি ইনশাআল্লাহ।
0 Comments:
Post a Comment