ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল
ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের মূর্ত প্রতিক,
হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা
জাহান থেকে কুফরী,
শেরেকী ও বিদ্য়াতের মুলৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক
মূখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে, তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মকছুদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব
লিখাই পত্রস্থ করা হয়,
যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করনে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”-
ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য বা মকছুদও ঠিক তাই। কারণ অধিকাংশ মুসলমানই পাগড়ীর সঠিক
আহ্কাম ও ফযীলত সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। যার ফলে তারা পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক
আক্বীদা পোষণ করতে যেরূপ ব্যর্থ, তদ্রুপ পাগড়ীর ন্যায় একখানা গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ
দায়িমী সুন্নত পালনেও ব্যর্থ। যা অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর রেজামন্দী হাছিলের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়।
স্মরণযোগ্য যে,
অনেকেই পাগড়ীর সঠিক আহ্কাম ও ফযীলত না জানার কারণে পাগড়ীকে
অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকে এবং পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিকে ঠাট্টা বা বিদ্রুপ
করে থাকে। অথচ এটা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কেননা আক্বাইদের ইমামগণের মতে
শুধু পাগড়ী নয় বরং যে কোন সুন্নতের অবজ্ঞাই কুফরীর কারণ। এ প্রসঙ্গে আক্বাইদের
কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
اهانة السنة كفر.
অর্থঃ- “সুন্নতের
অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।”
পাগড়ী পরিধান করা নামাযের বাইরে ও ভিতরে উভয়
অবস্থায়ই সুন্নত ও ফযীলতের কারণ। যেমন, নামাযের বাইরে পাগড়ী পরিধান করা
সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে হাদীস শরীফের সহীহ্ কিতাব “তিরমিযী শরীফের” হাশিয়ায়
উল্লেখ আছে,
ان لبس العمامة سنة.
অর্থঃ- “নিঃসন্দেহে
পাগড়ী পরিধান করা (দায়িমী) সুন্নত।”(হাশিয়ায়ে শামাইলুত্ তিরমিযী/৮)
আর নামাযের মধ্যে পাগড়ী
পরিধান করার ফযীলত সম্পর্কে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে,
ان ركعتين مع العمامة افضل من سبعين ركعة بدونها.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
পাগড়ী পরিধান করে দু’রাকায়াত নামায আদায় করা, পাগড়ী ছাড়া ৭০ রাকায়াত নামায আদায় করার চেয়ে অধিক
ফযীলতপূর্ণ।” (হাশিয়ায়ে শামাইলুত্ তিরমিযী/৮)
পাগড়ীর উল্লিখিত ফযীলত থেকে যেন উম্মত মাহরুম না হয়, সে জন্যে
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উম্মতদেরকে নির্দেশ
দিয়েছেন যে,
عليكم بالعمائم فانها سيماء الملئكة.
অর্থঃ- “তোমাদের
জন্যে পাগড়ী অবধারিত,
কেননা তা ফেরেশ্তাগণের নিদর্শন স্বরূপ।” (মিশকাত
শরীফ/৩৩৭, ফাইদুল ক্বদীর ৪র্থ জিঃ ৪৫৪ পৃষ্ঠা, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী ৫ম
জিঃ ১৭৬ পৃষ্ঠা)
অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পাগড়ী পরিধান করা যেরূপ দায়িমী
সুন্নত, তদ্রুপ অশেষ ফযীলত লাভেরও কারণ। নামাযের সময় যেরূপ পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত, নামাযের
বাইরেও তদ্রুপ পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত। অর্থাৎ পাগড়ী পরিধান করা হচ্ছে- “দায়িমী সুন্নত।”
বস্তুতঃ পাগড়ী পরিধান করা যদিও “সুন্নত”, তবে
সুন্নতের অনুসরণই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি
হাছিলের একমাত্র মাধ্যম। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- “হে হাবীব
(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর
ভালবাসা চাও, তবে আমাকে (আমার সুন্নতকে) অনুসরণ কর, তবেই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে
ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল গুণাহ্-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল ও
দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)
অতএব বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর আমলের দ্বারা বান্দা
অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী লাভ করতে পারবে।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান
করা দায়িমী সুন্নত হওয়ার বিস্তারিত নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীল-আদিল্লাসমূহ
আজকাল অনেকেই পীর,
ছুফী, দরবেশ, মুফতী, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, আল্লামা, আশেকে রসূল কত কি দাবি করে। কিন্তু “পাগড়ী” দায়িমীভাবে
পরিধান করা তো দূরের কথাই নামাযের সময়ও পরিধান করেনা।
অথচ পাগড়ী পরিধান করা হচ্ছে, আখেরী নবী ও রসূল, দু’জাহানের বাদশাহ্, ফখরে
মওজুদাত, সরকারে কায়েনাত,
নূরে মুজাস্সাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ তথা দায়িমী সুন্নত। শুধু তাই নয়, পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল
আলাইহিমুস্ সালামগণ সকলেই পাগড়ী পরিধান করেছেন এবং মহান আল্লাহ্ পাক-এর
ফেরেশ্তাগণও দায়িমীভাবে পাগড়ী পরিধান করে থাকেন।
অতএব, পাগড়ী পরিধান করা (১) ফেরেশ্তাগণের সুন্নত, (২) সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্
সালামগণের সুন্নত,
(৩) ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে
মুজাস্সাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সুন্নত, (৪) হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সুন্নত ও (৫) হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম
রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সুন্নত। তাঁরা প্রত্যেকেই দায়িমীভাবে অর্থাৎ অধিকাংশ সময়
পাগড়ী পরিধান করেন বা করতেন।
নিম্নে উল্লিখিত বিষয়ে পর্যায়ক্রমে ও বিস্তারিতভাবে নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য
দলীল-আদিল্লাসমূহ উল্লেখ করা হলো-
হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ দায়িমীভাবে ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করতেন
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল
আলামীন, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং দায়িমীভাবে
ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করতেন এবং সমস্ত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণকে পাগড়ী পরিধান করতে আমর বা নির্দেশ দিতেন। যা আমরা ইতিপূর্বে ২৯১ থেকে
৩৩১ নম্বর অর্থাৎ ৪০টি নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লার মাধ্যমে প্রমাণ করেছি।
স্মর্তব্য, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ী পরিধানের ব্যাপারে
বরকতপূর্ণ আমর বা নির্দেশ পাওয়া এবং তাঁরই ইত্তিবা তথা অনুসরণ-অনুকরণের গুরুত্ব
উপলব্ধি করে সমস্ত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ দায়িমীভাবে
ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করতেন। যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে রয়েছে,
[৩৩২-৩৩৫]
عن ثوبان رضى الله تعالى عنه قال بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم سريته فاصابهم البرد فلما قدموا على رسول الله صلى الله عليه وسلم امرهم ان يمسحوا على العصائب والتساخين- (ابو داؤد ج ১ ص ২১- بذل المجهود ج ১ ص ৮৭- عون المعبود ج ১ ص ৫৬- شرح ابى دواد لبدر الدين العينى)
অর্থঃ- “হযরত
সাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা সারিয়া (ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের একটি দল জ্বিহাদের উদ্দেশ্যে) প্রেরণ করেন। এমতাবস্থায় তাঁেদরকে ঠান্ডা
আক্রান্ত করে, যাতে তাঁদের শর্দী লেগে যায়। অতঃপর যখন ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আগমন করলেন, তখন তিনি
তাঁদের পাগড়ী ও মোজা সমূহের উপর মাসেহ্ করতে নির্দেশ দিলেন।” (আবু দাউদ
শরীফ ১ম জিঃ ২১ পৃষ্ঠা,
বযলুল মাজহুদ ১ম জিঃ ৮৭ পৃষ্ঠা, আউনুল মা’বূদ ১ম
জিঃ ৫৬ পৃষ্ঠা,.শরহু আবী দাউদ লি বদ্রিদ্দীন আইনী)
[৩৩৬]
عن سليمان بن أبى عبد الله قال ادركت المهاجرين الاولين يعتمون بعمائم كرابيس سود وبيض وحمر وخضر وصفر- (مصنف ابن ابى شيبة ج ৮ ص ২৪১)
অর্থঃ- “হযরত
সুলাইমান ইবনে আবী আব্দুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
(ইসলামের) প্রথম দিকের সকল মুহাজিরীন (হিজরতকারী ছাহাবী) রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণকে কালো, সাদা, গন্ধম, সবুজ ও ঘিয়া রংয়ের সুতী কাপড়ের পাগড়ী পরিধান করতে দেখেছি।” (মুছান্নাফু
ইবনে আবী শাইবাহ্ ৮ম জিঃ ২৪১ পৃষ্ঠা)
[৩৩৭]
قال عبيد الله اخبرنا اشياخنا أنهم رأوا اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم يعتمون ويرخونها بين اكتافهم. (مصنف ابن ابى شيبة ج ৮ ص ২৩৯)
অর্থঃ- “হযরত
উবাইদুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাকে আমার শায়খ বা উস্তাদগণ
বলেছেন যে, নিশ্চয়ই তাঁরা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে যত জনেরই সাক্ষাত লাভ করেছেন, তাঁদের
প্রত্যেককেই পাগড়ী পরিধান করতে দেখেছেন। আর তাঁরা পাগড়ীর শামলা তাঁদের দু’কাঁধের
মাঝামাঝি ঝুলিয়ে রাখতেন।”
(মুছান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ্ ৮ম জিঃ ২৩৯ পৃষ্ঠা)
[৩৩৮]
عن الحسن قال ادركنا القوم وهم يسجدون على عمائمهم. (المصنف عبد الرزاق ج১ ص৪০০)
অর্থঃ- “হযরত
হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের এমন এক সম্প্রদায়ের সাক্ষাত পেয়েছি, যাঁরা
তাঁদের পাগড়ীর উপর (অপরারগতা বশতঃ) সিজদাহ্ করতেন।” (আল্ মুছান্নাফু লি আব্দির
রয্যাক১ম জিঃ ৪০০ পৃষ্ঠা)
উল্লিখিত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, হুজুর
পাক ছল্লাল্লহু আলাইিহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহাজিরীন (হিজরতকারী) এবং আনছার
(হিজরতকারীগণকে সাহায্যকারী) তথা সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ
দায়িমীভাবে পাগড়ী পরিধান করতেন। নিম্নে বিশেষ বিশেষ কয়েকজন ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পাগড়ী পরিধানের নির্ভরযোগ্য, অকাট্য ও
অখন্ডনীয় দলীল-আদিল্লা উল্লেখ করা হলো -
আল্খলীফাতুল্ উলা, আফজালুন্
নাস্ বা’দাল আম্বিয়া,
হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইমামাহ্
বা পাগড়ী মুবারক
[৩৩৯]
عن مرثد بن عبد الله اليزنى عن حميدبن غسيلة الصنابحى قال رأيت ابا بكر يمسح على الخمار. (مصنف ابن ابى شيبة ج ১ ص ২২)
অর্থঃ- “হযরত
মারসাদ ইবনে আব্দুল্লাহ্ আল্ ইয়ায্নী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হুমাইদ ইবনে
গুসাইলাহ্ আছ্ছনাবিহী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, আমি
আমীরুল্ মু’মিনীন, খলীফাতুল্ মুসলিমীন,
খলীফাতু রসূলিল্লাহ্ হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুকে পাগড়ীর উপর মসেহ্ করতে দেখেছি।” (মুছান্নাফু ইবনে আবূ শাইবাহ্ ১ম
জিঃ ২২ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য যে,
উল্লিখিত হাদীস শরীফখানায় خمار (খিমার) দ্বারা عمامة (ইমামাহ্) বা পাগড়ীকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। কারণ, হাদীস
শরীফটির শিরোনাম من كان يرى المسح على العمامة হিসেবে আছে।
আল্ খলীফাতুস্ ছানিয়াহ্, লিসানুল্লাহ্, হযরত ওমর
ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারক
[৩৪০]
عن السائب بن يزيد قال رايت عمربن الخطاب يوم عيد معتما قدارخى عمامته من خلفه. (شعب الايمان للبيهقى ج৫ ص ১৭৪)
অর্থঃ- “হযরত
সাইব ইবনে ইয়াযীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ঈদের
দিনে হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে পাগড়ী পরিহিত অবস্থায়
দেখেছি যে, তাঁর পাগড়ীর শামলা পিছনে (পিঠের উপর) প্রলম্বিত ছিল।” (শুয়াবুল
ঈমান লিল্ বাইহাক্বী ৫ম জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠা)
[৩৪১]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “(আমীরুল মু’মিনীন
হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) অধিকাংশ সময় বা দায়িমীভাবে মাথায় পাগড়ী
বাঁধতেন।” (সিয়ারুছ ছহাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ১ম জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠা)
আল্ খলীফাতুছ্ ছালিছাহ্, জামিউল্
কুরআন, হযরত ওসমান যুন্ নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারক
[৩৪২]
عن سليمان بن ابى عبد الله قال ادركت المهاجرين الاولين يعتمون بعمائم كرابيس سود وبيض وحمر وخضر وصفر. (مصنف ابن ابى شيبة ج৮ ص২৪১)
অর্থঃ- “হযরত
সুলাইমান ইবনে আবু আব্দুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
(ইসলামের) প্রথম দিকের সকল মুহাজিরীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে কালো, সাদা, গন্ধম, সবুজ ও
ঘিয়া রংয়ের সূতী কাপড়ের ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করতে দেখেছি।” (মুছান্নাফু
ইবনে আবী শাইবাহ্ ৮ম জিঃ ২৪১ পৃষ্ঠা)
অত্র হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণীত হয় যে, হযরত ওসমান যুন্ নূরাইন
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও সার্বক্ষনিকভাবে পাগড়ী পরিধান করতেন। কারণ, তিনি
প্রথম হিজরতকারী ছাহাবীগণের মধ্যে একজন ছিলেন। নিম্নে তার প্রমাণ পেশ করা হলো-
নবুওয়তের ৫ম বছরে হাবশা
বা আবিসিনিয়ায় হিজরত
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ”নিশ্চয়ই হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু পরিবার-পরিজনসহ এই উম্মতের মধ্যে প্রথম হিজরতকারী। অর্থাৎ আমার
উম্মতের মধ্যে হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর পরিবার-পরিজনকে নিয়ে
প্রথম (হাবশায়) হিজরতকারী ছাহাবী।” (সিয়ারুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুম ১ম জিঃ ১৭৮ পৃষ্ঠা,
ইছাবা ৮ম জিঃ হযরত রুক্বাইয়্যাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর
সম্পর্কে পরিচ্ছেদ,
আছহাবে রসূলের জীবন কথা ১ম খন্ড ৪১ পৃষ্ঠা)
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশে হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
তাঁর স্ত্রী হযরত রুকাইয়্যাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে সঙ্গে নিয়ে হাবশায়
হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। (সিয়ারুছ্ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ১ম জিঃ ১৭৮
পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ পাক-এর নবী হযরত লূত্ব আলাইহিস্ সালাম-এর পর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু আল্লাহ্র রাস্তায় পরিবার-পরিজন সহ প্রথম হিজরতকারী। (আল ইছাবা ফী
তাময়ীযিছ্ ছাহাবা,
আছহাবে রসূলের জীবন কথা ১ম খন্ড ৪১ পৃষ্ঠা)
মদীনা বা ইয়াসরিবে হিজরত
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “উক্ত
বৎসর (হাবশায় হিজরতের অর্থাৎ নুবুওওতের ৫ম বৎসর) মদীনা শরীফে হিজরতের প্রস্তুতি
চলল এবং হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনমগণকে হিজরত করতে নির্দেশ প্রদান করলেন। হযরত ওসমান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (নির্দেশ পেয়ে) তাঁর পরিবার-পরিজনকে সঙ্গে নিয়ে মদীনায়
হিজরত করে হযরত আউস ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মেহমান হলেন। সেখানে
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর (অর্থাৎ হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু) এবং হযরত আউস ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর মধ্যে সহোদর ভাইয়ের
সম্পর্ক গড়িয়ে দিলেন। (সিয়ারুছ্ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ১ম জিঃ ১৭৮ পৃষ্ঠা, ত্ববাকাতু
ইবনে সা’দ ১ম খন্ড ৩৮ পৃষ্ঠা,
আছহাবে রসূলের জীবন কথা ১ম খন্ড ৪১ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে এ বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠল
যে, হযরত লূত্ব আলাইহিস্ সালাম-এর পর সর্ব প্রথম পরিবার-পরিজনসহ হিজরতকারী হচ্ছেন, হযরত ওসমান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তাছাড়াও মদীনা শরীফে প্রথম হিজরতকারী ছাহাবীগণের মধ্যে
তিনিও একজন ছিলেন। অপর দিকে “মুছান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ্” এর হাদীসে প্রথম দিকের মুহাজিরীন
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পাগড়ী পরার কথা উল্লেখ্য আছে।
অতএব, প্রমাণিত হল যে,
হযরত ওসমান যুন্ নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সর্বদাই
বা দায়িমীভাবে ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করতেন।
আল্ খলীফার্তু রাবিয়াহ্, আসাদুল্লাহ্, হযরত আলী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারক
[৩৪৩-৩৪৪]
عن عبد الله بن بشر رضى الله عنه قال بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم على بن ابى طالب رضى الله عنه يوم خيبر فعممه بعمامة سوداء ارسلوها من ورائه وعن منكبه اليسرى. (عمدة القارى ج২১ ص৩০৭- نيل الا وطار ج২ ص১১২)
অর্থঃ- “হযরত
আব্দুল্লাহ্ ইবনে বাশ্শার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাইবার যুদ্ধের দিবস (খাইবারের উদ্দেশ্যে) হযরত
আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে পাঠানোর সময় তাঁকে কালো পাগড়ী বেঁধে দেন। যার এক
প্রান্ত (শামলা) পিছনে (পিঠের উপর) আর অপর প্রান্ত (শামলা) সামনে বাম কাঁধে ঝুলিয়ে
দিয়েছিলেন। (উমদাতুল ক্বারী ২১ জিঃ ৩০৭ পৃষ্ঠা, নাইলুল আউতার ২য় জিঃ ১১২ পৃষ্ঠা)
[৩৪৫-৩৪৬]
عن عبد الرحمان بن عدى البهرانى عن اخيه عبد الاعلى بن عدى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم دعا على بن ابى طالب رضى الله عنه يوم غد يرخم فعممه وارخى عذبة العمامة من خلفه ثم قال هكذا فاعتموا فان العمائم سيماء الاسلام وهى الحاجز بين المسلمين والمشركين. (عمدة القارى ج২১ ص৩০৮- تحفة الاحوذى ج৫ ص৪১২)
অর্থঃ- “হযরত
আব্দুর রহমান ইবনে আদিয়্যিল বাহরানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর ভাই হযরত
আব্দুল আ’লা ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা
বৃষ্টির দিনে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী ইবনে আবু
ত্বালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ডেকে তাঁর মাথায় পাগড়ী বেঁধে দিলেন এবং
পাগড়ীর শামলা পিছনে তাঁর পিঠের উপর ঝুলিয়ে রাখলেন। অতঃপর বললেন, অনুরুপভাবে
পাগড়ী বাঁধ। কেননা,
নিশ্চয়ই পাগড়ী ইসলামের বিশেষ নিদর্শণ এবং ইহা মুসলমান ও
মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী। (উমদাতুল ক্বারী ২১তম জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল
আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১২ পৃষ্ঠা)
[৩৪৭]
قال اسماعيل وحدثنى محمد بن يوسف عن (ابى رزين) قال شهدت على بن ابى طالب يوم عيد معتما قدارخى عمامته من خلفه والناس مثل ذلك. (شعب الايمان للبيهقى ج৫ ص১৭৪)
অর্থঃ- “হযরত
ইসমাঈল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে ইউসুফ
রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি (হযরত আবু রযীন রহমতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন।
হযরত আবু রযীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত আলী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঈদের দিনে পাগড়ী পরিহিত ছিলেন। এমনকি তাঁর পাগড়ীর শামলা
তাঁর পিছনে (পিঠের উপর) ঝুলছিল। (রাবী বলেন) এবং অন্যান্য মানুষগণ (মুসলমানগণ)ও
অনুরুপভাবে পাগড়ী বেঁধেছিলেন।” (শুয়াবুল ঈমান লিল্ বাইহাক্বী ৫ম জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠা)
[৩৪৮]
عن ابى لبيد قال رأيت عليا اتى الغيط على بغلة له وعليه ازار ورداء وعمامة وخفان فرأيته بال ثم توضأ فحسر العمامة. (مصنف ابن ابى شيبة ج১ ص২৩)
অর্থঃ- “হযরত আবু
লবীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দেখলাম, তিনি তাঁর খচ্চরে আরোহন করে এক
বাগানের দিকে আসলেন এমতাবস্থায় যে, তাঁর লুঙ্গি (পড়নে), চাদর
(গায়ে), পাগড়ী (মাথায়) এবং মোজা (পায়ে) ছিল। (রাবী বলেন) অতঃপর আমি তাঁকে দেখলাম, তিনি
পেশাব করলেন, তৎপর ওযু করলেন এবং পাগড়ী খুলে ফেললেন।”(মুছান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ্ ১ম
জিঃ ২৩ পৃষ্ঠা)
[৩৪৯-৩৫১]
عن ابى جعفر الانصارى قال رأيت على على عمامة سوداء يوم قتل عثمان رضى الله عنه. (مصنف ابن ابى شيبة ج৮ ص২৩৪- غزاء الالباب ج২ ص২৪৪- طبقات ابن سعد ج১-৩ ص১৯)
অর্থঃ- “হযরত
জাফর আল্ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত
ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদতের দিবস হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুকে কালো পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। (মুছান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ্ ৮ম জিঃ
২৩৪ পৃষ্ঠা, গিযাউল্ আলবাব ২য় জিঃ ২৪৪ পৃষ্ঠা, ত্ববাকাতু ইবনে সা’দ ১ম ও
৩য় জিঃ ১৯ পৃষ্ঠা)
[৩৫২]
حدثنا ابو العنبس عمروبن مروان عن ابيه قال رأيت على على عمامة سوداء قد ارخى طرفها من خلفه. (مصنف ابن ابى شيبة ج৮ ص২৩৪)
অর্থঃ- “হযরত
আবুল্ আম্বাস আমর ইবনে মারওয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা (হযরত মারওয়ান
রহমতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর মাথায় কালো পাগড়ী দেখেছি, যার প্রান্ত (শামলা) তাঁর পিছনে
(পিঠের উপর) ঝুলন্ত ছিল।”
(মুছান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ্ ৮ম জিঃ ২৩৪ পৃষ্ঠা)
[৩৫৩]
عن ابى العنبس عمروبن مروان عن ابيه قال رأيت على على رضى الله عنه عمامة قد ارخر طرفها من خلفه نحوا من زراع. (مصنف ابن ابى شيبة ج৮ ص ২৩৯)
অর্থঃ- “হযরত
আবুল্ আম্বাস আমর ইবনে মারওয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, আমি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে পাগড়ী পরিহিত দেখেছি। যার প্রান্ত
বা শামলা তাঁর পিছনে (পিঠের উপর) এক হাত পরিমাণ প্রলম্বিত ছিল। (মুছান্নাফু ইবনে
আবী শাইবাহ্ ৮ম জি ২৩৯ পৃষ্ঠা)
[৩৫৪-৩৫৫]
عن جابر رضى الله عنه قال اخبرنى من رأى عليا قداعتم بعمامة سوداء قد ارخاها من بين يديه ومن خلفه. (مصنف ابن ابى شيبة ج৮ ص২৩৫- طبقات ابن سعدج১-৩ ص১৯)
অর্থঃ- “হযরত
জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যিনি
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দেখেছেন, তিনিই আমার কাছে খবর দিয়েছেন যে, তিনি
(হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) কালো পাগড়ী পরিধান করতেন। যার একটি শামলা
তার সামনে এবং অপরটি পিছনে (পিঠের উপর) ঝুলিয়ে রাখতেন।” (মুছান্নাফু
ইবনে আবী শাইবাহ্ ৮ম জিঃ ২৩৫ পৃষ্ঠা, ত্ববাকাতু ইবনে সা’দ ১ম ও
৩য় জিঃ ১৯ পৃষ্ঠা)
[৩৫৬-৩৫৮]
রসুলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাব নামে একটি ইমামাহ্ বা
পাগড়ী ছিল। যা নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুকে দান করেছিলেন। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তা নিয়মিত
ব্যবহার করতেন।”
(আয্ যুরক্বানী ৬ষ্ঠ জিঃ ২৬৯ পৃষ্ঠা, যাদুল
মায়াদ ১ম জিঃ, ১৫৬ পৃষ্ঠা, আখলাকুন্ নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
[৩৫৯-৩৬০]
قال علماء السير ........ عمروبن عبد ود- فجعل عمرو يدعو الى البراز وهوابن تسعين سنة- فقال على رضى الله عليه عنه ان أبارزه- فاعطاه النبى صلى الله عليه وسلم سيفه وعممه وقال (اللهم اعنه عليه فضربه على فقتله. (المنتظم فى تاريخ الملوك والامم ج৩ ص২৩২- طبقات ابن سعد ج১-২ ص৪৮-৪৯)
অর্থঃ- “সীরাত
বিশারদ উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেন ... (খন্দক যুদ্ধে এক কাফির ছিল)
আমর ইবনে আবদে উদ্ নামে। সেই আমর (যে বিধর্মী) মুসলমানগণের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিল
প্রকাশ্য মুখোমুখী যুদ্ধ করতে। আর তখন তার বয়স ছিল ৯০ (নব্বই) বৎসর। এ ঘোষণা শুনে
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঘোষণা দিলেন, আমি তার সাথে প্রকাশ্য মুখোমুখী
যুদ্ধকারী। তখন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে তাঁর তরবারী
প্রদান করলেন এবং পাগড়ী বেঁধে দিলেন। অতপর দোয়া করলেন, اللهم اعنه عليه অর্থাৎ হে আল্লাহ্ পাক! তাঁকে সাহায্য করুন। (এই তরবারী প্রদান, পাগড়ী
বেঁধে দেয়া এবং দোয়ার বরকতে) তৎপর হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে
(বিধর্মী আমরকে) ধরাশায়ী করলেন, অতপর হত্যা করলেন।” (আল্ মুনতাযাম ফী তারীখিল মুলুকি
ওয়াল উমাম ৩য় জিঃ ২৩২ পৃষ্ঠা, ত্ববাক্বাতু ইবনে সা’দ ১ম ও ২য় জিঃ ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠা)
[৩৬১]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “(আমীরুল
মু’মিনীন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) ইমামাহ্ বা পাগড়ী খুবই পছন্দ
করতেন। যার কারণে তিনি বলতেন যে, ইমামাহ্ বা পাগড়ী আরববাসীদের তাজ বা মুকুট।” (সিয়ারুছ
ছহাবা ১ম জিঃ ৩৪৬ পৃষ্ঠা)
হযরত যুবাইর ইবনে আউওয়াম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারক
হযরত যুবাইর ইবনে আউওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যে ইমামাহ্ বা পাগড়ী
পরিধান করতেন, তা পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। যেমন, আল্লাহ্
পাক বলেন,
يمددكم ربكم بخمسة الاف من الملئكة مسومين-
অর্থঃ- “তোমাদের
পালনকর্তা চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশতা তোমাদের সাহায্যে পাঠাবেন।” (সূরা আলে
ইমরান/ ১২৫)
উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হযরত যুবাইর ইবনে আউওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু-এর পাগড়ী সম্পর্কে “তাফসীর গ্রন্থ সমূহে”
বিশদ আলোচনা এসেছে। নিম্নে তার কতিপয় দলীল পেশ করা হলো-
[৩৬২-৩৬৬]
قال القرطبى ...... نزل جبريل عليه الصلاة والسلام متعمما بعمامة صفراء على مثل الزبيربن العوام رضى الله عنه. (تفسير القرطبى ج২ ص১৯৬-১৯৭- تفسير روح البيان ج২ ص৯০- تفسير ابى السعود ج২ ص৮০- تفسير المحرر الوجيز ج১ ص৫০৪- حاشية محى الدين شيخ زاده على البيضاوى ج১ ص৬৬৯)
অর্থঃ- “হযরত
ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, (বদর যুদ্ধে) হযরত জিব্রাঈল
আলাইহিস্ সালাম হযরত যুবাইর ইবনে আউওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পাগড়ীর
ন্যায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরিধান করে এসেছিলেন।” (তাফসীরুল্ কুরতুবী ২য় জিঃ ১৯৬ ও
১৯৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরু রুহুল বয়ান ২য় জিঃ ৯০পৃষ্ঠা, তাফসীরু আবী সাউদ ২য় জিঃ ৮০
পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ মুর্হারারিল্ ওয়াজীয ১ম জিঃ ৫০৪ পৃষ্ঠা, হাশিয়াতু
মুহ্ইদ্দীন শায়খ যাদাহ্ আলাল বাইযাভী ১ম জিঃ ৬৬৯ পৃষ্ঠা)
[৩৬৭-৩৬৮]
قال عباد بن عبد الله بن الزبير وهشام بن عروة والكلبى نزلت الملائكة فى سيمأ الزبير عليهم عمائم صفر مرخاة على اكتافهم- (تفسير القرطبى ج২ ص১৯৬- تفسير المحرر الوجيز ج১ ص৫০৪)
অর্থঃ- “হযরত
ইবাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, হিশাম ইবনে উরওয়াহ্ ও কালবী
রহমতুল্লাহিম আলাইহি বলেন,
(বদর যুদ্ধে) ফেরেশ্তাগণ আগমণ করেন হযরত যুবাইর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ন্যায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরিহিত অবস্থায়। এমতাবস্থায়
তাঁদের পাগড়ীর শামলা ছিল দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে। (তাফসীরুল কুরতুবী ২য় জিঃ
১৯৬পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ মুর্হারারিল্ ওয়াজীয ১ম জিঃ ৫০৪ পৃষ্ঠা)
[৩৬৯-৩৭৮]
عن عبد الله عن الزبير رضى الله عنه ان الزبير كانت عليه عمامة صفراء معتجرا بها فنزلت الملائكة وعليه عمائم صفر. (تفسير القرطبى ج২ ص১৯৬- تفسير الخازن ج১ ص২৮০- تفسير البغوى ج১ ص২৮০- تفسير روح المعانى ج২ ص৪৬- تفسير احكام القران لابن العربى ج১ ص৩৯৭- تفسير القران العظيم ج১ ص৬০১- تفسير ابن كثير ج১ ص৬০১- حاشية محى الدين شيخ زاده على البيضاوى ج১ ص৬৬৯- فتح القدير ج১ ص৩৭৯- حاشية الجلالين ص৬০)
অর্থঃ- “হযরত
আব্দুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নিশ্চয়ই
(বদর যুদ্ধে) হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মাথায় ঘিয়া বর্ণের পাগড়ী
বাঁধা ছিল। এমনকি ফেরেশ্তাগণ এসেছিলেন তাঁদের মাথায়ও ঘিয়া বর্ণের পাগড়ী ছিল।
(তাফসীরুল্ কুরতুবী ২য় জিঃ ১৯৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ খাযিন ১ম জিঃ ২৮০
পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ বাগবী ১ম জিঃ ২৮০ পৃষ্ঠা, তাফসীরু রুহুল মায়ানী ৩য় জিঃ ৪৬
পৃষ্ঠা, তাফসীরু আহকামিল কুরআন লি ইবনিল্ আরাবী ১ম জিঃ ২৯৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্
কুরআনিল আ’যীম ১ম জিঃ ৬০১ পৃষ্ঠা,
তাফসীরু ইবনে কাসীর ১ম জিঃ ৬০১ পৃষ্ঠা, হাশিয়াতু
মুহইদ্দীন শায়খ যাদাহ আলাল্ বাইযাভী ১ম জিঃ ৬৬৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরু ফতহুল
ক্বদীর ১ম জিঃ ৩৭৯ পৃষ্ঠা,
হাশিয়ায়ে জালালাইন ৬০ পৃষ্ঠা)
[৩৮০]
ان الزبير كان يتعصب بعصابة صفراء وان ابا دجانة كان يعلم بعصابة حمراء- (حاشبة الجلالين ص৬০)
অর্থঃ- “(বদর
যুদ্ধের দিন) হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর মাথায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী
বাঁধা ছিল। কিন্তু হযরত আবু দাজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর চিহ্ন ছিল গন্ধম
রংয়ের পাগড়ী। (হাশিয়ায়ে জালালাইন ৬০ পৃষ্ঠা)
[৩৮০-৩৮১]
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
একবার হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হলাম এবং
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে বসলাম। অতঃপর হযরত
রসূলুল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ইমামাহ্ বা পাগড়ীর পিছনের অংশ ধরে ইরশাদ
করলেন, “হে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আমি আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে, বিশেষ
করে তোমার নিকট ও সাধারণভাবে সকল মানুষের কাছে রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” (দুররে
মানসূর, ফাযায়িলে ছদাক্বাত ৭৯ পৃষ্ঠা)
(অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment