সুন্নতের মূর্ত প্রতিক, হক্বের
অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শেরেকী ও বিদ্য়াতের মুলৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক
মূখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছুদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব
লেখাই পত্রস্থ করা হয়,
যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করনে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”-
ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য বা মাকছুদও ঠিক তাই। কারণ অধিকাংশ মুসলমানই পাগড়ীর সঠিক
আহ্কাম ও ফযীলত সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। যার ফলে তারা পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক
আক্বীদা পোষণ করতে যেরূপ ব্যর্থ, তদ্রুপ পাগড়ীর ন্যায় একখানা গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ
দায়েমী সুন্নত পালনেও ব্যর্থ। যা অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর রেজামন্দী হাছিলের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়।
স্মরণযোগ্য যে,
অনেকেই পাগড়ীর সঠিক আহ্কাম ও ফযীলত না জানার কারণে পাগড়ীকে
অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকে এবং পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিকে ঠাট্টা বা বিদ্রুপ
করে থাকে। অথচ এটা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কেননা আক্বাইদের ইমামগণের মতে
শুধু পাগড়ী নয় বরং যে কোন সুন্নতের অবজ্ঞাই কুফরীর কারণ। এ প্রসঙ্গে আকাইদের
কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
“কদু খাওয়া সুন্নত।
কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদু পছন্দ করতেন এবং খেয়েছেন। তাই কেউ যদি বলে
যে, আমি কদু খাওয়া পছন্দ করিনা তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেটা পছন্দ করেছেন সেটা সে অপছন্দ করলো।”
আর তাই আকাইদের কিতাবে লিখা হয় যে,
اهانة السنة كفر.
অর্থঃ- “সুন্নতের
অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।”
সুতরাং বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর ন্যায় মহান সুন্নতের প্রতি
অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল্য করা নিঃসন্দেহে ঈমান হানীর কারণ। অথচ বান্দার
ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা
শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা।
কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত। তাই মহান আল্লাহ্ পাক, পবিত্র
কালামে পাকে এরশাদ করেন,
والعصر ان الانسان لفى خسر الا الذين امنوا وعملوا الصالحات.
অর্থঃ- “আছরের
সময়ের কছম! সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে, একমাত্র তারা ছাড়া, যারা
ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।” (সূরা আছর)
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক মানব জাতির ধ্বংস হতে নাযাত পাওয়ার প্রথম উপায়
হিসাবে ঈমান (আক্বীদা)কে আখ্যায়িত করেছেন। অতঃপর আমলের প্রশ্ন। কারণ ঈমানহীন
ব্যক্তির নেক আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট নেই। কাজেই বান্দার জন্যে
প্রধানতম ফরজ এই যে,
সে সর্ব প্রথম তার ঈমান বা আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করবে অর্থাৎ
ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে,
আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা পোষণ করবে।
কেননা আক্বীদাগত কারণেই ইসলামে ৭২টি বাতিল ফেরকার আবির্ভাব হয়েছে। যদিও তাদের
কথাবার্তা, চাল-চলন, ছূরত-সীরত ইত্যাদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানের ন্যায় বা
ইসলামসম্মত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীস
শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত
আক্বীদা পোষণ করে থাকে,
যা সুস্পষ্ট কুফরী। যেমন- ক্বদরিয়া সম্প্রদায়- তারা
তক্বদীরকে অবিশ্বাস করে,
অথচ তক্বদীরের উপর ঈমান আনা ফরজ।
খারেজী সম্প্রদায়- তাদের
আক্বীদা হলো, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ কাফির। (নাউযুবিল্লাহ্), অথচ হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহুমগণের প্রতি সুধারণা পোষণ করা ঈমানের অঙ্গ বা ফরজ।
রাফেজী বা শিয়া সম্প্রদায়-
তাদের আক্বীদা মতে শিয়াদের ইমামদের মর্যাদা নবী-রাসূল আলাইহিস্ সালামগণের চেয়েও
বেশী, বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তীত, হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু ব্যতীত
খোলাফা-ই-রাশেদীনের সকলেই মুরতাদ। (নাউযুবিল্লাহ)
মুশাব্বিহা বা মুনাব্বিরা
সম্প্রদায়ঃ- তাদের আক্বীদা হলো, মহান আল্লাহ্ পাক “নূর বা আলো” মহান
আল্লাহ্ পাক-এর দেহ বা আকার-আকৃতি রয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত সকল বিষয়
থেকেই সম্পূর্ণ বেনিয়াজ ও পবিত্র।
অনুরূপ বর্তমান যামানার ভয়ঙ্কর ফিৎনা- কাদিয়ানী সম্প্রদায়, তাদের
আক্বীদা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী নন, তাঁর পর আরো নবী পৃথিবীতে আসবে, তাই তারা
গোলাম কাদিয়ানীকে নবী বলে বিশ্বাস করে, যা অকাট্য কুফরী।
অথচ তারা প্রত্যেকেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাতের
কথা বলে, টুপি, কোর্তা, পাগড়ী পরিধান করে। এতকিছুর পরও তারা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া
মোতাবেক কাফির বা অমুসলিম। কারণ তাদের উপরোক্ত আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণই কুফরী।
আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীস
শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
ستفترق امتى على ثلاث وسبعين فرقة كلهم فى النار الا ملة واحدة قيل من هى يارسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما انا عليه واصحابى.
অর্থঃ- “অতি
শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে
যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- যে দলটি (নাযাত পাবে) সেটা কোন দল? ইয়া
রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে (মত-পথের) উপর আমি আমার
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ রয়েছি, তার উপর যারা থাকবে, তারাই
সেই নাযাত প্রাপ্ত দল।”
(আহ্মদ, আবু দাউদ, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ
ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের যেকোন আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না
কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়, তবে তা
গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন-
খারেজী, রাফেজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল।
অতএব, প্রতিটি মুসলমানকেই পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক বা বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করতে
হবে। কোন ভাবেই পাগড়ীকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবেনা।
দ্বিতীয়তঃ অনেকেই অজ্ঞতা
হেতু বলে থাকে যে,
পাগড়ী পরিধান করা দায়েমী সুন্নত নয় বরং শুধুমাত্র নামাজের
মধ্যে পরিধান করলেই চলে। আবার কেউ কেউ সুন্নত স্বীকার করলেও নামাজের মধ্যে পাগড়ী
পরিধান করার সুন্নত ও ফযীলতকে অস্বীকার করে থাকে।
অথচ তাদের উল্লিখিত বক্তব্য শুধু শরীয়ত বিরোধীই নয় বরং মনগড়া, অজ্ঞতামূলক
ও বিভ্রান্তিকরও বটে। কারণ পাগড়ী পরিধান করা নামাজের বাইরে ও ভিতরে উভয় অবস্থায়ই
সুন্নত ও ফযীলতের কারণ। যেমন, নামাজের বাইরে পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে
হাদীস শরীফের সহীহ্ কিতাব “তিরমিযী শরীফের”
হাশিয়ায় উল্লেখ আছে, ان لبس العمامة سنة.
অর্থঃ- “নিঃসন্দেহে
পাগড়ী পরিধান করা (দায়েমী) সুন্নত।”(হাশিয়ায়ে শামায়েলে তিরমিযী/৮)
আর নামাজের মধ্যে পাগড়ী
পরিধান করার ফযীলত সম্পর্কে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে,
ان ركعتين مع العمامة افضل من سبعين ركعة بدونها.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
পাগড়ী পরিধান করে দু’রাকায়াত নামাজ আদায় করা, পাগড়ী ছাড়া ৭০ রাকায়াত নামাজ আদায় করার চেয়ে অধিক
ফযীলতপূর্ণ।” (হাশিয়ায়ে শামায়েলে তিরমিযী/৮)
পাগড়ীর উল্লিখিত ফযীলত থেকে যেন উম্মত মাহরুম না হয় সে জন্যে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উম্মতদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে,
فاعتموا فان العمامة سيماء الاسلام وهى الحاجز بين المسلمين والمشركين.
অর্থঃ- “তোমরা
পাগড়ী পরিধান কর। নিশ্চয়ই পাগড়ী ইসলামের নির্দশন এবং তা মুসলমান ও মুশরিকদের মাঝে
পার্থক্যকারী।” (যারকানী, উমদাতুল ক্বারী)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো এরশাদ করেন যে,
عليكم بالعمائم فانها سيماء المئكة.
অর্থঃ- “তোমাদের
জন্যে পাগড়ী অবধারিত,
কেননা তা ফেরেশ্তাগণের নিদর্শন স্বরূপ।” (মেশকাত
শরীফ/৩৩৭)
অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পাগড়ী পরিধান করা যেরূপ দায়েমী
সুন্নত। তদ্রুপ অশেষ ফযীলত লাভেরও কারণ। নামাজের সময় যেরূপ পাগড়ী পরিধান করা
সুন্নত, নামাজের বাইরেও তদ্রুপ পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত। অর্থাৎ পাগড়ী পরিধান করা
হচ্ছে- “দায়েমী বা সার্বক্ষণিক সুন্নত।”
এছাড়াও পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাতের
অগণিত পাঠকের পক্ষ হতে প্রেরিত অসংখ্য চিঠিও পাগড়ী ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া
দেয়ার একটি কারণ।
কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে এরশাদ করেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون-
অর্থঃ- “যদি
তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা
নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা
যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
অতএব, যাঁরা জানেন,
তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের
শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের
জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন
আখেরী রসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থঃ- “যাকে
দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়, জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা
গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে
মাযাহ্, আহ্মদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ,
উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্
সুনান, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী,
তা’লীকুছ্ ছবীহ্,
আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল
মানাজীহ্ ইত্যাদি)
অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।”
কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে
বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে এবং বিদ্য়াতীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের
কারণে সাধারণ মুসলমানগণ যেন পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে কুফরী আক্বীদা পোষণ না করে
অর্থাৎ পাগড়ীর ন্যায় মহান সুন্নতকে যেন অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে এবং
তাদের প্ররোচনায় যেন এ মহান সুন্নত ত্যাগ করতঃ অশেষ ফযীলত ও রেজায়ে মাওলা অর্জনে
ব্যর্থ না হয় বরং পাগড়ী সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ে সঠিক ও সহীহ্ আক্বীদা পোষণ করতে
পারে এবং পাগড়ীর ন্যায় অশেষ ফযীলতপূর্ণ সুন্নত পালন করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর
হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যেই “মসিক আল
বাইয়্যিনাতে” পাগড়ী মোবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করা হলো।
এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব
নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের
সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা
বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র
আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- “যে
ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ
পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।”
(আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল
আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান,
মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে
হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
বস্তুতঃ মাসিক আল
বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত
ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল
বাইয়্যিনাত পত্রিকায়”
“পাগড়ী ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্র্কে” সঠিক, বিশুদ্ধ
ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী
সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন প্রত্যেকেই পাগড়ী সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং
সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর
মু’মিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থঃ- “এক মু’মিন অপর
মু’মিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর
ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে
সমবেত আনছার এবং মোহাজির রদিয়াল্লাহু আনহুমগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি
দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে
তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু দ্বিতীয়
এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ রদিয়াল্লাহু
আনহু বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন,
তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ
তীরকে সোজা করা হয়।”
এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “তোমরাই
আমার প্রকৃত বন্ধু,
দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মা’আরেফ)
অতএব, পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে
ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীস শরীফের মেছদাক হওয়াই মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে পাগড়ী সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করার মূল কারণ।
বস্তুতঃ পাগড়ী পরিধান করা যদিও “সুন্নত” তবে
সুন্নতের অনুসরণই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি
হাছিলের একমাত্র মাধ্যম। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেছেন,
قل انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلك ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- “ হে
হাবীব! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, যদি
তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর ভালবাসা চাও তবে আমাকে (আমার সুন্নতকে) অনুসরণ কর তবেই
আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল গুণাহ্-খতা ক্ষমা করে দিবেন।
আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)
আর উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় “হাদীসে কুদসীতে” এরশাদ
হয়েছে,
لايزال العبد يتقرب الى بالنوافل حتى احبه-
অর্থঃ- “মহান
আল্লাহ্ পাক বলেন,
আমার বান্দারা নফল অর্থাৎ সুন্নত বা মুস্তাহাব আমলের দ্বারা
আমার এতটুকু নৈকট্য বা সন্তষ্টি হাছিল করে যে, স্বয়ং আমি আল্লাহ্ পাক তাকে
মুহব্বত করি বা ভালবাসি।”
অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর আমলের দ্বারা বান্দা অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর
হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী লাভ করতে পারবে।
কারণ পাগড়ী আখেরী রাসূল,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতসমূহের মধ্যে একখানা বিশেষ
গুরুত্বপূর্ণ ও অশেষ ফযীলতপূর্ণ সুন্নত।
তাই পাগড়ী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে “সুন্নতের গুরুত্ব ও ফযীলত” সম্পর্কে
কিঞ্চিত আলোচনা করা একান্তই জরুরী। আর তখনই মূলতঃ সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, শরীয়তে
পাগড়ীর কতটুকু গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছে এবং পাগড়ী পরিধানকারী ব্যক্তি মহান আল্লাহ্
পাক-এর নিকট কতটুকু প্রিয়।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আমীরুল মু’মিনীন, জামিউল
কুরআন, সাইয়্যিদুনা হযরত ওছমান জিন্ নূরাইন রদিয়াল্লাহু আনহু-এর সুন্নতের প্রতি
একাগ্রতা
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ওছমান জিন্ নূরাইন রদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে মহান আল্লাহ্
পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেন,
رحماء بينهم.
অর্থঃ- “পরস্পর
পরস্পরের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল।” অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত ওছমান রদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের মধ্যে অত্যন্ত দয়াশীল।
আর আখেরী রসূল,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ওছমান রদিয়াল্লাহু আনহু
সম্পর্কে এরশাদ করেন,
لكل نبى رفيق فى الجنة ورفيقى فى الجنة حضرت عثمان ذو النورين رضى الله عنه.
অর্থঃ- “প্রত্যেক
নবীরই বেহেশ্তে একজন বন্ধু থাকবেন, আর বেহেশ্তে আমার বন্ধু হলেন, হযরত
ওছমান জিন্ নূরাইন রদিয়াল্লাহু আনহু।”
বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, শুধুমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ
পরিপূর্ণভাবে পালন করার কারণে তথা সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম অনুসরণ-অনুকরণ করার
কারণেই তিনি এত মর্যাদা ও ফযীলত লাভ করেছেন। তিনি যে কতটুকু সুন্নতের ইত্তেবা
করতেন নিম্নোক্ত বর্ণনা থেকেই তা প্রতীয়মান হয়।
হুদায়বিয়ার সন্ধির ব্যপারে আলোচনা করার জন্য সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ওছমান জিন্
নূরাইন রদিয়াল্লাহু আনহুকে কুরাঈশদের নিকট পাঠিয়েছিলেন। তারা হযরত ওছমান জিন্
নূরাইন রদিয়াল্লাহু আনহুকে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করতে বললো তখন হযরত ওছমান জিন্ নূরাইন
রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন,
وماكنت لافعل حتى يطوف به رسول الله صلى الله عليه وسلم
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তাওয়াফ না করা পর্যন্ত আমি তাওয়াফ করতে পারিনা।”
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর সুন্নত তথা আদেশ-নিষেধ আমিরুল মু’মিনীন হযরত ওছমান রদিয়াল্লাহু
আনহু জীবনের বিনিময়ে হলেও পালন করার চেষ্টা করতেন। এর বাস্তব প্রমাণ হলো নিম্নোক্ত
ঘটনাটি-
একদিন এক ব্যক্তি তার মেয়ের বিবাহের সাহায্যের জন্য সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে
আসলো এবং সাহায্য প্রার্থনা করলো। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে ব্যক্তিকে
বললেন, তুমি হযরত ওছমান জিন্ নূরাইন রদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট যাও। গিয়ে বলবে, আমি
তোমাকে তাঁর নিকট সাহায্যের জন্য পাঠিয়েছি। সে ব্যক্তি হযরত ওছমান জিন্ নূরাইন
রদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট গেল। গিয়ে দেখলো হযরত ওছমান জিন্ নূরাইন রদিয়াল্লাহু
আনহু, এক পয়সার হিসাব মিলছে না, তা মিলানোর চেষ্টা করছেন। সে ব্যক্তি মনে করলো, যিনি
একটি পয়সারও হিসাব নিয়ে থাকেন তিনি কি করে আমাকে সাহায্য করবেন। এই ভেবে সে পুনরায়
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ফিরে আসলো। হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, হযরত ওছমান জিন্ নূরাইন
রদিয়াল্লাহু আনহু তোমাকে সাহায্য করেছেন কি? সে ব্যক্তি বললো, ইয়া
রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যিনি এক পয়সার হিসাবও ছাড়েন না, তিনি কি
করে আমাকে সাহায্য করবেন?
আখেরী রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি
তাঁকে বলেছিলে যে, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি? সে
ব্যক্তি বললো না,
আমি তা বলিনি। হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, পুনরায় তাঁর নিকট যাও এবং আমার কথা বলো, তিনি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য
করবেন। সে ব্যক্তি পুনরায় হযরত ওছমান রদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট গেল এবং বললো, আমাকে
আখেরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার নিকট পাঠিয়েছেন, আমার
মেয়ের বিবাহের সাহায্যের জন্য। একথা শুনার পর সাথে সাথে হযরত ওছমান জিন্ নূরাইন
রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন ঐ দেখ, সিরিয়া থেকে একশত উট বোঝাই সম্পদ আসছে, সেখান
থেকে যে উটটি তোমার পছন্দ হয় সে উটটি সম্পদসহ তুমি নিয়ে যাও। সে ব্যক্তি এ কথা
শুনে উক্ত কাফেলার নিকট গিয়ে কাফেলার প্রধান ব্যক্তিকে বললো, আমাকে
হযরত ওছমান জিন্ নূরাইন রদিয়াল্লাহু আনহু পাঠিয়েছেন এবং বলেছেন, কাফেলার
যে উটটি আমার পছন্দ হয় সে উটটি সম্পদসহ নিয়ে যেতে। এ কথা শুনে কাফেলা প্রধান বললো, ঠিক আছে
তুমি দেখ কোন উটটি তোমার পছন্দ হয়। সে ব্যক্তি ঘুরে ঘুরে সবগুলো উট দেখে একেবারে
সম্মুখ্যের উটটি পছন্দ করলো। কাফেলার প্রধান বললো, সম্মুখ্যের উটটি তোমাকে কোন মতেই
দেয়া সম্ভব নয়। কারণ সম্মুখ্যের উটটি যদি তুমি নিয়ে যাও তবে কাফেলার সমস্ত উট
তোমার সাথে চলে যাবে। সে ব্যক্তি বললো, হযরত ওছমান রদিয়াল্লাহু আনহু
বলেছেন, আমার যে উটটি পছন্দ হয় সেই উটটি নিতে। কাজেই আমার সম্মুখ্যের উটটি পছন্দ হয়েছে
তাই আমি এই উটটিই নিব। কাফেলা প্রধান বললো, আমি হযরত ওছমান জিন্ নূরাইন
রদিয়াল্লাহু আনহু-এর অনুমতি ব্যতীত তোমাকে এই উটটি দিতে পারি না। কাফেলা প্রধান ঐ
ব্যক্তিসহ হযরত ওছমান রদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট আসলো। কাফেলা প্রধান বললো, হে হযরত
ওছমান রদিয়াল্লাহু! আপনি এ ব্যক্তিকে উটসহ সম্পদ নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন, সে তো
প্রথম উটটি পছন্দ করেছে! জবাবে হযরত ওছমান জিন্ নূরাইন রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তাকে
সেটাই দিয়ে দাও। কাফেলা প্রধান বললো, প্রথম উটটি তাকে দিয়ে দিলে
কাফেলার সমস্ত উটগুলোই তার সাথে চলে যাবে। হযরত ওছমান জিন্ নূরাইন রদিয়াল্লাহু
আনহু বললেন, তুমি কি জান?
এ ব্যক্তিকে কে পাঠিয়েছেন? এ ব্যক্তিকে পাঠিয়েছেন, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম। কাজেই শুধু সমস্ত উটগুলো কেন এই
ব্যক্তি যদি আমাকেসহ নিয়ে যেতে চায় তবে আমিও তার সাথে যেতে বাধ্য। সুতরাং সমস্ত
উটগুলোই তাকে দিয়ে দাও। সে ব্যক্তি সম্পদসহ সমস্ত উটগুলো সাথে নিয়ে চলে গেল।
(সুবহানাল্লাহ্)
আমীরুল মু’মিনীন, আসাদুল্লাহ্
সাইয়্যিদুনা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদিয়াল্লাহু আনহু-এর সুন্নতের প্রতি
দৃঢ়তা
ইসলামী খেলাফতের চতুর্থ খলীফায়ে রাশেদ সাইয়্যিদুনা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু
ওয়াজহাহু রদিয়াল্লাহু আনহু যার সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে
এরশাদ করেন, ركعا سجدا.
অর্থঃ- “অধিক
পরিমাণে রুকু ও সিজদাকারী।”
আর আখেরী রাসূল,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু-এর
শানে এরশাদ করেন,
انا مدينة العلم وعلى بابها
অর্থঃ- “আমি হলাম
ইল্মের শহর আর হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু হচ্ছেন- সেই শহরের দরজা।”
বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, তিনি এত মর্যাদা-মর্তবা ও ফযীলত লাভ করেছেন শুধুমাত্র আখেরী
রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতসমূহের পরিপূর্ণ ইত্তেবা বা
অনুসরণ-অনুকরণ করার মাধ্যমে। তিনি যে প্রতি ক্ষেত্রে ও প্রতি মুহুর্তেই সুন্নতের
ইত্তেবা করতেন তার বহু প্রমাণ কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে। তবে তাঁর নিম্নোক্ত ক্বওলটিই
সুস্পষ্টরূপে প্রমাণ করে যে সুন্নতের প্রতি তাঁর কতটুকু দৃঢ়তা ছিল। যেমন- তিনি
এরশাদ করেন,
انى لست بنبى ولايوحى الى ولكنى اعمل بكتاب الله تعالى وبسنة نبيه محمد صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুনা
হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নিঃসন্দেহে আমি কোন নবীও নই, আর আমার নিকট কোন ওহীও আসেনা। তবে
আমি আল্লাহ্ তা’য়ালার কিতাব এবং তাঁর নবী হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সুন্নতের উপর আমল করি।”
আমীরুল মু’মিনীন, আসাদুল্লাহ্ হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু যে, মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব-এর
আদেশ-নিষেধ সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করতেন নিম্নোক্ত ঘটনাটিও
তাঁর বাস্তব প্রমাণ।
কিতাবে উল্লেখ যে,
আফদালুন্ নাস্ বা’দাল আম্বিয়া, হযরত আবূ
বকর সিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু, আসাদুল্লাহ্ হযরত আলী কাররমাল্লাহু ওযাজহাহু রদিয়াল্লাহু
আনহু, ফক্বীহুল উমাম,
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লাহু আনহু, উনারা
তিনজন একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর দরবার শরীফে এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম,
আমরা মনস্থির করেছি যে, আজ থেকে চট পরিধান করবো, গোশ্ত
খাবোনা ইত্যাদি বলতে লাগলেন। একথা শুনে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিশ্চুপ থাকলেন, কারণ,
وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى.
অর্থাৎঃ- আল্লাহ্ পাক-এর
হাবীব, ওহী ব্যতীত কোন কথাই বলেন না।”
আর তখনই আল্লাহ্ পাক নিম্নোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করেন যে,
يا ايهالذين امنوا لاتحرموا طيبات ما احل الله لكم ولا تعتدوا ان الله لا يحب المعتدين.
অর্থঃ- “হে
ঈমানদারগণ! আল্লাহ্ পাক তোমাদের জন্যে পবিত্র বস্তু হতে যা হালাল করেছেন, তোমরা তা
হারাম করোনা। আর সীমালঙ্ঘন করোনা। কেননা নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক সীমালঙ্ঘনকারীকে
ভালবাসেন না।”
উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার সাথে সাথেই হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহুসহ সকলেই
খাছিল ইস্তেগ্ফার করে চট খুলে ফেললেন এবং সুন্নতী লেবাস পরিধান করে পুনরায়
সুন্নতের উপর দায়েম-কায়েম হয়ে গেলেন।
সুন্নত অনুসরণে আশেকে
রাসূল,
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর
রদিয়াল্লাহু আনহু
আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু-এর যোগ্য পুত্র, অসংখ্য
হাদীস শরীফ বর্ণনাকারী,
সুন্নতের একনিষ্ঠ অনুসরণকারী, বিশিষ্ট ছাহাবী ছিলেন- হযরত
আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদিয়াল্লাহু আনহু।
সেই হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদিয়াল্লাহু আনহু, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিদায়ের পর
তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ পথিমধ্যে কোন এক জায়গায় তিনি
তাঁর মাথা মোবারক নিচু করে দিলেন। তাঁর সঙ্গীদের মধ্য হতে একজন বললেন, হে হযরত
আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদিয়াল্লাহু আনহু! আপনি এখানে মাথা নিচু করলেন, তার কি
কারণ? জবাবে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর সাথে এ রাস্তায় কোথাও যাচ্ছিলাম, এখানেই রাস্তার পাশে একটি বড় গাছ
ছিল, গাছের একটি ডালা বাঁকা হয়ে রাস্তার উপরে এসেছিল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর মাথা মোবারকে লাগবে বিধায় তিনি মাথা মোবারক নিচু করে ডালাটি অতিক্রম
করেন। এখানে যদিও সে ডালাটি নেই, তথাপি আমি শুধুমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “সুন্নত” আদায়
করার জন্য নিজ মাথা নিচু করে দিয়েছি।” (সুবহানাল্লাহ্)
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্নে ওমর রদিয়াল্লাহু আনহু সেখান থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর
এক স্থানে ইস্তেঞ্জা করতে বসলেন। এক ব্যক্তি বললো- হুজুর আপনি এইমাত্র বাড়ী থেকে
ইস্তেঞ্জা করে এসেছেন,
তারপর আবার এখানে ইস্তেঞ্জা করতে বসার কারণ কি? জবাবে
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি দেখেছি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে ইস্তেঞ্জা করতে বসেছিলেন, আমার
যদিও ইস্তেঞ্জার তেমন হাযত হয়নি, তথাপি আমি এখানে ইস্তেঞ্জা করতে বসেছি শুধুমাত্র সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “সুন্নতের” অনুসরণের
জন্য।” (সুবহানাল্লাহ্)
অতএব, ফিকির করে দেখুন,
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদিয়াল্লাহু আনহু তথা হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ সুন্নতের কতটুকু অনুসরণ-অনুকরণ করতেন।
সুন্নত পালনে খাদেমে
রাসূল.
হযরত আনাস বিন মালেক
রদিয়াল্লাহু আনহু
যিনি একাধারে দশ বৎসর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেদমত করেছেন। অসংখ্য হাদীস শরীফ বর্ণনা
করেছেন এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর দোয়ার বরকতে একশত বৎসর হায়াত লাভ করেছেন। (সুবহানাল্লাহ্)
সেই হযরত আনাস বিন মালিক
রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন- ‘একদিন এক দর্জি ছাহাবী রদিয়াল্লাহু আনহু, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর বাড়ীতে
দাওয়াত করলেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে গেলেন, আমিও সাথে গেলাম।
দর্জি ছাহাবী রদিয়াল্লাহু আনহু গোশ্তের সাথে কদু দিয়ে তরকারী পাকিয়েছিলেন। আমি
দেখলাম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উক্ত তরকারীর পাত্র থেকে কদুগুলো বেছে বেছে খাচ্ছেন। অর্থাৎ কদু খাওয়াকে
আখেরী রাসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব পছন্দ করতেন।
এটা দেখার পর হযরত আনাস বিন মালিক রদিয়াল্লাহু আনহু-এর অবস্থা এরূপ হয়ে গেল যে, তিনি
নিজেই বর্ণনা করেন,
فمازلت احب الدباء من يومئذ.
অর্থঃ- “অতঃপর
সেদিনের পর থেকে আমিও কদু খাওয়া পছন্দ করে ফেলি।”
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
ماصنع لى طعام ويوجد الدباء الاوقد جعل فيه.
অর্থঃ- “সেদিনের
পর থেকে আমার জন্য এমন কোন খানা তৈরী করা হয় নাই যে, কদু সংগ্রহ করা সম্ভব অথচ আমার
খানায় কদু দেয়া হয় নাই।”
(সুব্হানাল্লাহ্)
সুতরাং চিন্তা এবং ফিকিরের বিষয় যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু
আনহুমগণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ তথা সুন্নতের কতটুকু অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। মূলতঃ হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ তথা সুন্নত পালন করার
ক্ষেত্রে পাগলের ন্যায় হয়ে যেতেন।
এ প্রসঙ্গে ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি
আলাইহিকে প্রশ্ন করা হলো- হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ কিরূপ ছিলেন? জবাবে
ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন দেখ, যদি
তোমরা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণকে দেখতে, তবে পাগল
মনে করতে। আর যদি হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ তোমাদেরকে দেখতেন, তবে
তোমাদের ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতেন। কারণ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু
আনহুমগণ জীবনের বিণিময়ে হলেও হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
আদেশ-নিষেধ তথা সুন্নত পালনের জন্য সদা প্রস্তুত থাকতেন। আর তোমরা মুখে বলো-রাসূলকে
মুহব্বত করি কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার সম্পূর্ণ বিপরীত।
উল্লেখ্য, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ যে পাগলের ন্যায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ তথা সুন্নতের
অনুসরণ-অনুকরণ করতেন,
উপরোল্লিখিত ঘটনা সমূহের সাথে সাথে নিম্মোক্ত ঘটনাটিও তার
সুস্পষ্ট প্রমাণ।
বিশিষ্ট ছাহাবী,
হযরত আবুজর গিফারী রদিয়াল্লাহু আনহু একদিন সব্জা নামক
স্থানে নিজ জমিতে পানি সেচ করছিলেন, এমতাবস্থায় হঠাৎ করে এক ব্যক্তি
এসে হযরত আবুজর গিফারী রদিয়াল্লাহু আনহুকে কিছু এলোমেলো কথা বললো। সে ব্যক্তির
এলোমেলো কথা শুনে হযরত আবুজর গিফারী রদিয়াল্লাহু আনহু কিছুটা গোস্সা হন। পরক্ষণেই
তিনি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও নতুন কাপড় পরিহিত অবস্থায় প্রথমে সেই কাদাযুক্ত জমিতে
বসে যান, অতঃপর সেই কাদাযুক্ত জমিতে শুয়ে পড়েন। সে ব্যক্তি বললো- হে আবুজর গিফারী
রদিয়াল্লাহু আনহু! আপনি একি করলেন? আপনার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও নতুন
কাপড়গুলো নিয়ে কাদাযুক্ত জমিতে শুয়ে পড়লেন? জবাবে হযরত আবুজর গিফারী
রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
হে ব্যক্তি! আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, “হে
আবুজর! তোমার মধ্যে যখন গোস্সা পয়দা হবে, তখন তুমি বসে যেও, তথাপিও
যদি গোস্সা দূর না হয়,
তবে শুয়ে যেও, তোমার গোস্সা দূর হয়ে যাবে।” কাজেই
তুমি যখন আমাকে এলোমেলো কথা বললে, তখন আমার ভিতর গোস্সা পয়দা হয়, আমি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর নির্দেশ পালন করার জন্যই প্রথমে বসে গেলাম, তাতেও
আমার গোস্সা দমন হলোনা,
অতঃপর আমি মাটিতে শুয়ে পড়লাম,আমার গোস্সা দূর হয়ে গেল।
(সুব্হানাল্লাহ্)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু
আনহুমগণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ তথা সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, পুঙ্খানুপুঙ্খ
ও পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। বরং নিজ জীবনের চেয়েও অধিক প্রাধান্য দিতেন
রসূলের সুন্নত তথা আদেশ-নিষেধকে। আর তাই তো মহান আল্লাহ্ পাক সার্টিফিকেট দিয়েছেন
এই বলে,
رضى الله عنهم ورضوا عنه.
অর্থঃ- “মহান
আল্লাহ্ পাক হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতি সন্তুষ্ট, তাঁরাও
মহান আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট।”
শুধু কি তাই?
হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ ছিলেন সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিপূর্ণ
মেছদাক্ব বা নমুনা। যার ফলে মহান আল্লাহ্ পাক ঘোষণা দিয়েছেন,
والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه.
অর্থঃ- “যারা
হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণকে ইখলাসের সাথে অনুসরণ করবে, মহান
আল্লাহ্ পাক তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, তারাও আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি
সন্তুষ্ট।”
আর আখেরী রাসূল,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
اصحابى كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم-
অর্থঃ- “আমার
(প্রত্যেক) ছাহাবী তারকা সাদৃশ্য, তাঁদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়েত
প্রাপ্ত হবে।”
কেননা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণকে অনুসরণ করার অর্থই হলো-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে অনুসরণ করা। যেহেতু হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতসমূহের
পরিপূর্ণ অনুসরণকারী। কাজেই পাগড়ীর ক্ষেত্রেও যে তাঁরা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করেছেন অর্থাৎ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু
আনহুমগণ যে, দায়েমীভাবে পাগড়ী ব্যবহার করেছেন, তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত, পাগড়ীসহ প্রতি ক্ষেত্রে হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের ন্যয় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত সমূহের অনুসরণ করা, তবেই
মহান আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী লাভ করা সম্ভব।
সুন্নত অনুসরণে হযরত
আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি
হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ যেরূপ সুন্নতের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম-পুঙ্খানুপুঙ্খ
অনুসরণ করে মহান আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি হাছিল করেছেন। তদ্রুপ
তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন,
ইমাম-মুজ্তাহিদ তথা আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণও
শুধুমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর সুন্নতসমূহের পরিপূর্ণ ও সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম অনুসরণ ও অনুকরণ করেই মহান
আল্লাহ্ পাক-এর খাছ রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি হাছিল করেছেন।
মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করা ব্যতীত কস্মিনকালেও মহান আল্লাহ্ পাক-এর
রেজামন্দী হাছিল করা সম্ভব নয়। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ
করেন,
قل انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم-
অর্থঃ- “হে হাবীব
আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভালবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলেই
আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে মহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুণাহ্খাতা সমূহ ক্ষমা করবেন।
আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক শর্তারোপ করেছেন এই বলে যে, যদি
আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত লাভ করতে হয়, তবে তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরিপূর্ণ
অনুসরণ করতে হবে। নচেৎ কখনো মহান আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত লাভ করা সম্ভব নয়। কেননা
উছূল রয়েছে,
اذا فات الشرط فات المشروط.
অর্থাৎ- যখন শর্ত বাতিল
হয়ে যায়, তখন মাশ্রুতও বাতিল হয়ে যায়।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে,
যাঁরাই মহান আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত বা ভালবাসা লাভ করেছেন, তাঁরা
মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে তথা তাঁর সুন্নতসমূহকে পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করার কারণেই লাভ করেছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয় যে, বিশ্ব
বিখ্যাত ও মশহুর আল্লাহ্ পাক-এর ওলী, সুলতানুল আরিফীন হযরত বিশর হাফী
রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপে¦ দেখেন।
স্বপে¦ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি
আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“হে বিশর হাফী! তোমার কি জানা রয়েছে যে, মহান
আল্লাহ্ পাক তোমাকে বর্তমান জামানার সমসাময়িক সকল আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণের উপর অধিক মর্যাদা দান করেছেন?” হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার তা জানা নেই।
অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, “কি কারণে তোমাকে সকল আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব
দেয়া হয়েছে, তা কি তোমার জানা রয়েছে?” হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমার তাও
জানা নেই। জবাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হ্যাঁ, কয়েকটি
কারণে মহান আল্লাহ্ পাক তোমাকে সমসাময়িক সকল আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যেমন- (১) তুমি আমার আহ্লে বাইত, উম্মুল মু’মিনীন ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতি পরিপূর্ণ মুহব্বত রাখ এবং তা’যীম কর, (২) তুমি
সকল আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে তা’যীম-তাকরীম কর, (৩) তুমি
সাধারণ লোকদের নসীহত করে থাক এবং (৪) তুমি আমার সুন্নত সমূহের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও
পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুরসণ-অনুকরণ কর। তাই মহান আল্লাহ্ পাক তোমাকে সমসাময়িক সকল
আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।” (সুবহানাল্লাহ্)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে,
সুন্নত সমূহের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ
অনুসরণ-অনুকরণ করাই হচ্ছে মহান আল্লাহ্ পাক-এর খাছ রেজামন্দী হাছিলের একমাত্র
মাধ্যম। আর তাই সকল আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ সুন্নত সমূহের
সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন এবং করছেন। নিম্নে হযরত
আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সুন্নত পালনের কতিপয় ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করা হলো-
সুন্নত অনুসরণে হানাফী
মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা,
ইমামুল আইম্মা, ইমামে আ’যম হযরত
আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি
বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বাহের কিতাব “জামিউর রুমুযে” উল্লেখ
আছে যে, ইমামুল আইম্মা,
ইমামুল মুজ্তাহিদীন, হাকীমুল হাদীস, ইমামুল আ’যম হযরত
আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথম জীবনে প্রায় বিশ বৎসর ওযুর সময় পায়ের
অঙ্গুলীসমূহ উপর দিক থেকে খিলাল করেছেন। পরবর্তীতে যখন তাহ্ক্বীক্ব হলো যে, ওযু করার
সময় পায়ের অঙ্গুলীসমূহ নীচের দিক থেকে খিলাল করা সুন্নত বা মুস্তাহাব। তখন থেকে
পিছনের প্রায় বিশ বৎসরের নামাজ পুণরায় ক্বাযা আদায় করেন। (সুবহানাল্লাহ্)
উল্লেখ্য, শরীয়তে সুন্নত বা মুস্তাহাব তরকের কারণে নামাজ দোহ্রানো ওয়াজিব না হওয়া
সত্ত্বেও শুধুমাত্র সুন্নতের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ
করার উদ্দেশ্যেই অঙ্গুলী খিলালের উক্ত সুন্নত বা মুস্তাহাব আদায় করা সহ প্রায় ২০
বৎসরের নামাজ দোহ্রায়ে আদায় করেছেন।
মালেকী মাযহাবের
প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম ইমামুল আইম্মা হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সুন্নতে
রসূলের প্রতি অভাবনীয় মুহব্বত
মালেকী মাযহাবের ইমাম, ইমামুল
আইম্মা, মুহিয়্যূস্ সুন্নাহ্,
রঈসুল মুহাদ্দিসীন, ফক্বীহুল আছর হযরত ইমাম মালেক
রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন সুন্নতের একনিষ্ঠ অনুসারী। আখেরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি তাঁর
ছিল অভাবনীয় মুহব্বত। নিম্নোক্ত ঘটনাতেই তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
“মদীনা শরীফে ইন্তেকাল করা খাছ সুন্নত।” এ সুন্নত পালনের লক্ষ্যে হযরত
ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর হায়াত মোবারকের শেষ দিকে তিনি মদীনা শরীফেই
দায়েমীভাবে অবস্থান করতে লাগলেন। মসজিদে নববীতে অবস্থান করতেন এবং সেখানেই হাদীসের
দরস দিতেন। মদীনা শরীফ হতে এক মূহুর্তের জন্যেই অন্যত্র যেতেন না। একবার মদীনা
শরীফ হতে অন্যত্র যাওয়ার বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিল। কিন্তু তিনি চিন্তা করলেন যে, আমি যদি
মদীনা শরীফ হতে বের হই আর তখন আমার ইন্তিকাল হয়ে যায় তবে তো আমার জীবনের সমস্ত
সাধনাই বৃথা যাবে। এই ভেবে তিনি মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে আরজ করলেন, “আয়
আল্লাহ্ পাক! আমার হায়াত কতদিন রয়েছে দয়া করে যদি তা আমাকে জানিয়ে দিতেন।”
এ দোয়া করার পর রাত্রি বেলায় ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বপ্নে একখানা
পাঞ্জা দেখলেন। পাঞ্জা দেখে হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি নিশ্চিত হতে
পারলেন না যে, পাঁচ অঙ্গুলী দ্বারা মহান আল্লাহ্ পাক কি বুঝিয়েছেন। পাঁচ সেকেন্ড, পাঁচ
মিনিট, পাঁচ দিন, পাঁচ সপ্তাহ,
পাঁচ মাস, না পাঁচ বছর কোনটা বুঝানো হয়েছে? উক্ত
স্বপ্নের সঠিক তা’বীর বা
ব্যাখ্যা জানার জন্য তাঁর খাদেমকে সে জামানার বিখ্যাত তা’বীরবীদের
নিকট পাঠালেন এবং খাদেমকে বলে দিলেন, তাঁর নিকট আমার নাম বলবেনা। খাদেম
উক্ত তা’বীরবীদের নিকট এসে বললো, এক ব্যক্তি স্বপ্নে একখানা পাঞ্জা দেখেছেন, তাই তার
তা’বীর জানার জন্য আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন।
জবাবে তা’বীরবীদ বললেন,
যিনি এ স্বপ্ন দেখেছেন তাঁর নাম বলতে হবে। খাদেম নাম বলতে
অস্বীকার করলো। তিনি পরিস্কার জানিয়ে দিলেন যে, নাম না বললে এ স্বপ্নের তা’বীর আমার
পক্ষে করা সম্ভব নয়। খাদেম পুনরায় হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট
ফিরে এসে জানালেন যে,
নাম না বললে তিনি স্বপ্নের তা’বীর
করবেন না। হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ঠিক আছে
তাঁকে আমার নাম বলে দাও। খাদেম পুনরায় এসে তা’বীরবীদকে জানালো যে, হযরত ইমাম
মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি এ স্বপ্ন দেখেছেন। তখন তা’বীরবীদ বললেন, হ্যাঁ, তার মত
আলেমের পক্ষেই এরূপ স্বপ্ন দেখা সম্ভব। আমি প্রথমেই বুঝতে পেরেছি যে, নিশ্চয়ই
কোন বড় আলেম এ স্বপ্ন দেখেছেন তাই আমি নাম জানতে চেয়েছি। অতঃপর তা’বীরবীদ
বললেন, এ স্বপ্নের তা’বীর বা ব্যাখ্যা হলো,
মহান আল্লাহ্ পাক উক্ত পাঞ্জা দ্বারা পবিত্র কালামে পাকে
বর্ণিত পাঁচটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ্ পাক এরশাদ করনে,
ان الله عنده علم الساعة وينزل الغيث ويعلم ما فى الارحام وماتدرى نفس ماذا تكسب غدا وما تدرى نفس باى ارض تموت ان الله عليم خبير.
অর্থাৎ- মহান আল্লাহ্
পাক-এর নিকট পাঁচটি বিষয়ের ইল্ম রয়েছে। (১) ক্বিয়ামত কখন হবে, (২)
বৃষ্টি কখন বর্ষিত হবে,
(৩) মায়ের পেটের সন্তান ছেলে না মেয়ে, (৪) আগামী দিন বান্দা কি খাবে ও (৫) কোথায় তার
মৃত্যু হবে।” (সূরা লোকমান/৩৪)
হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি মহান আল্লাহ্ পাক-এর নিকট জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর
হায়াত কত দিন রয়েছে। তাই মহান আল্লাহ্ পাক উক্ত পাঞ্জার দ্বারা এটাই জানিয়ে দিলেন
যে, বান্দার মৃত্যু কখন ও কোথায় হবে তা আল্লাহ্ পাকই জানেন। স্বপ্নের এ তা’বীর
শোনার পর হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি মদীনা শরীফ থেকে আর কখনো অন্যত্র না যাওয়ার
সিদ্ধান্ত নিলেন। এর কিছুদিন পর তিনি মদীনা শরীফেই ইন্তিকাল করেন এবং মদীনা শরীফে
তাঁকে দাফন করা হয়।
উপরোক্ত ঘটনাই প্রমাণ করে যে, “সুন্নতে রসূলের” প্রতি হযরত ইমাম মালেক
রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কত গভীর ভালবাসা, মুহব্বত ও আকর্ষণ ছিল।
শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম, ইমামুল
মুহাদ্দিসীন, আওলাদে রসূল,
হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সুন্নতের প্রতি
একাগ্রতা
শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম,
হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রতিক্ষেত্রেই সুন্নত
তথা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। আর সুন্নতের অনুসরণকেই সবচেয়ে
বেশী প্রাধান্য দিতেন এবং মহান আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী হাছিলের মাধ্যম মনে
করতেন। ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবনী থকে উল্লেখকৃত নিম্নোক্ত আলোচনা
থেকে এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে “নাসেরুল হাদীস বা হাদীসের
সাহায্যকারী” বলা হতো। হাদীস শরীফ সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল অতি উচ্চে। অন্যান্য ফক্বীহদের
মত তিনিও যদি ক্ষেত্র বিশেষে ক্বিয়াসের সাহায্যে ফতওয়া প্রদান করতেন। কিন্তু
এতদ্বসম্পর্কে কোনও সহীহ্ হাদীস শরীফ পাওয়া গেলে এবং তা তাঁর ফতওয়ার খেলাফ
প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রদত্ত ফতওয়া বাতিল ঘোষণা করতেন। তিনি বলতেন, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর পূর্ণ পা-বন্দী করা অর্থাৎ তাঁর প্রতিটি কাজ ও কথা মেনে চলা আমাদের
জন্য ফরজ। কারণ তিনি আমাদেরকে এমন কোন নির্দেশ দেননি, যা কুরআন
শরীফে নেই। এজন্যই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতিটি আদেশ-নিষেধ মেনে চলা উম্মতের জন্য
ফরজ।
নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ইজতিহাদ সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলেন, তাঁদের ইজতিহাদ কাওসারের পানি স্বরূপ। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের হৃদয় উৎস
হতে তা প্রবাহিত হয়ে থাকে। যেমন, আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রতি ঠিকভাবে
কিতাব নাযিল করেছি। এজন্য যে, আল্লাহ্ পাক আপনাকে যা বুঝতে দিয়েছেন তদনুযায়ী লোকদের মধ্যে
মীমাংসা করবেন।”
আল্লাহ্ পাক-এর এই “বুঝায়ে দেয়াই”
“ওহীয়ে গায়রে মাতলূ।”
তাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলতেন, যে বিষয়ে আমার নিকট ওহী আসে না, সে বিষয়ে
আমি ইজতিহাদ করে দধা ওহীয়ে গায়রে মাতলু দ্বারা তোমাদের মধ্যে মীমাংসা করি।
হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বর্তমানে আমাদের যা সর্বাধিক
গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য তা হলো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সহীহ্ হাদীস শরীফ এবং তার পবিত্র সুন্নতসমূহের সঠিক বিবরণ সংগ্রহের জন্য
সর্বশক্তি নিয়োগ করা। কারণ এভাবেই আমরা পূর্ণ ঈমানদার হয়ে আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি
পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করতে পারি। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের পরিপূর্ণ
আদর্শ। তাঁর চিন্তাধারা, আদেশ-নিষেধ
ও আমল-আখলাক তথা সুন্নতসমূহ সকল প্রকার ত্রুটি হতে মুক্ত। উহা অসুসরণ করেই শুধু
আমরা আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি আনুগত্য দেখাতে পারি। কুরআন শরীফে এ কথাই এভাবে বলা
হয়েছে, “যে ব্যক্তি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করে সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ পাক-এর
অনুকরণ করে।”
সুন্নতের ইত্তেবা করার
কারণে হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রতি
সুসংবাদ
ইমামুল মুহাদ্দিসীন,
ফখরুল ফুক্বাহা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি
আলাইহি ছিলেন, সুন্নতে নববীর একনিষ্ঠ অনুসারী। সুন্নত অনুসরণের একটি চমকপ্রদ ঘটনা তিনি নিজেই
বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,
আমি একদিন একটি জামায়াতের সাথে এক জায়গায় ছিলাম। জামায়াতের
লোকেরা তাদের পরিধেয় কাপড় খুলে গোছল করার জন্য পানিতে নামে। তখন আমি একখানা হাদীস
শরীফের ব্যপক অর্থের উপর আমল করলাম এবং কাপড় খোলা থেকে বিরত রইলাম।
হাদীস শরীফ খানা এই-
من كان يؤمن بالله واليوم الاخر فلا يدخل الحمام بغيرازار.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি
আল্লাহ্ পাক ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন লুঙ্গী ব্যতীত গোছলখানায়
প্রবেশ না করে।”
সেদিন রাতেই আমি স্বপে¦ দেখলাম জনৈক ব্যক্তি বলছেন,
يااحمد ابشر فان الله قدغفرلك باستعمالك السنة وجعلك اماما.
অর্থঃ- “হে আহমদ!
সুসংবাদ গ্রহণ কর। সুন্নতের উপর আমল করার কারণে আল্লাহ্ পাক তোমাকে ক্ষমা করে
দিয়েছেন এবং তোমাকে ইমাম বানিয়ে দিয়েছেন।”
আমি সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কে! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হযরত
জিব্রাঈল আলাইহিমুস্সালাম।
সুন্নতকে এত গুরুত্ব দেয়ার
কারণেই হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি ফতওয়া দিয়েছেন যে, “সমস্ত
সুন্নতগুলোই পালন করা ফরজ।”
হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন এ ফতওয়া দিলেন, তখন
অন্যান্য ইমাম-মুজতাহিদগণ বললেন, হে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি কোন্
দলীলের ভিত্তিতে এরূপ ফতওয়া দিলেন? জবাবে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কেন? মহান
আল্লাহ্ পাকই তো বলেছেন,
وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا واتقوالله ان الله شديد العقاب-
অর্থঃ- “রাসূল
(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের যা আদেশ করেন, তা
আঁকড়িয়ে ধর। আর যার থেকে বিরত থাকতে বলেন, তার থেকে বিরত থাক। আল্লাহ্ পাককে
ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর/২১) উক্ত জবাব শুনে
সকলেই লা-জাওয়াব হয়ে গেলেন।
সুন্নত পালনে ক্বাদেরীয়া
তরীক্বার ইমাম সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দৃঢ়তা
কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আ’যম বড়
পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একজন মুরীদ ছিলেন, যিনি বাদশার পোশাক বা কোর্তা
সেলাই করতেন। বাদশাহ্ তাঁকে যে পরিমাণ বিণিময় প্রদান করতেন, তাতে
তাঁর সংসার এক বৎসর চলে যেত।
উক্ত মুরীদ একবার বাদশার জন্য একখানা কোর্তা সেলাই করলেন, কিন্তু
কোর্তাটি কিছুটা ছোট হয়ে যায়। তাই বাদশা উক্ত কোর্তাটি গ্রহণও করলোনা এবং তাকে কোন
বিনিময়ও প্রদান করলোনা। এতে উক্ত মুরীদ খুব ব্যথিত ও চিন্তিত হলেন। কারণ বাাদশার
দেয়া বিনিময় দ্বারাই তিনি এক বৎসর সংসার চালিয়ে থাকেন। এদিকে হযরত বড় পীর সাহেব
রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আরেকজন মুরীদ উক্ত মুরীদকে এই বলে পরামর্শ দিল যে, তুমি
হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট এ ব্যাপারটি খুলে বলো। তাই উক্ত
মুরীদ ব্যাপারটি হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট খুলে বললো। তখন
হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ঠিক আছে কোর্তাটি আমাকে দিয়ে দাও।
অতঃপর তিনি নিজ পকেটে হাত ঢুকালেন এবং হাতে যা আসলো, তা সবই উক্ত মুরীদকে প্রদান
করলেন। দেখা গেল যে,
বাদশা উক্ত মুরীদকে কোর্তার বিনিময়ে যে মূল্য প্রদান করতেন
তার চেয়েও বহুগুণ বেশী মূল্য হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে দিয়েছেন।
তারপর সাইয়্যিদুল আওলিয়া, হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি কোর্তাটি গায়ে দিয়ে
দেখেন যে, কোর্তাটি নিছফুস্সাক্ব থেকে ছোট, তাই তিনি উক্ত মুরীদকে বললেন, আমার
নিকট চট রয়েছে, তুমি চট জোড়া দিয়ে কোর্তাটি নিছফুস্সাক্ব করে দাও। কারণ নিছফুস্সাক্ব না হওয়া
পর্যন্ত এ কোর্তা দ্বারা কখনোই সুন্নত আদায় হবেনা। (সুবহানাল্লাহ্)
এবার ফিকির করে দেখুন,
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, গাউসুল আ’যম হযরত
বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি সুন্নতের কতটুকু অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। মূলতঃ
সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার কারণেই তিনি এত বিরাট মর্যাদা বা সফলতা লাভ করেছেন।
সুন্নত অনুসরণের ক্ষেত্রে
চিশ্তিয়া তরীক্বার ইমাম সুলতানুল হিন্দ খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি রহমতুল্লাহি
আলাইহি-এর একনিষ্ঠতা
সুলতানুল হিন্দ,
গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্ খাজা মুঈনুদ্দীন
চীশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন সুন্নতের একনিষ্ঠ অনুসারী। তিনি যে
সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পরিপূর্ণ সুন্নতের অনুসরণ করতেন। নিন্মোক্ত ঘটনাই তার বাস্তব
প্রমাণ-
গরীবে নেওয়াজ,
খাজা হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বয়স মোবারক যখন
নব্বই, তখন তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশেষ সাক্ষাত লাভ করলেন। যদিও আল্লাহ্
ওয়ালাগণ সর্বদাই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাক্ষাত লাভ করে
থাকেন। যখন বিশেষ সাক্ষাত লাভ করলেন, তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, “হে
মুঈনুদ্দীন (দ্বীনের সাহায্যকারী)! তুমি তো সত্যিই আমার দ্বীনের সাহায্যকারী, তুমি
আমার সকল সুন্নতই পালন করলে, তবে একটি সুন্নত এখনো বাকী রয়ে গেল কেন ?”
গরীবে নেওয়াজ,
খাজা হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি পরক্ষণে চিন্তা করে
বুঝতে পারলেন যে,
আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দ্বীনের খেদমতে ব্যস্ত থাকার কারণে তখনো
বিবাহ করেননি। তাই তিনি নব্বই বৎসর বয়স মোবারকে পর পর দু’টি বিবাহ
করে এ সুন্নতও আদায় করলেন। (সুবহানাল্লাহ্)
সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করার কারণে মহান আল্লাহ্ পাক সুলতানুল হিন্দ
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে লক্বব দিয়েছেন, “হাবীবুল্লাহ্।” তাই উনার
ইন্তিকারের পর কপাল মোবারকে নূরানী অক্ষরে লিখা ছিল, “হাজা হাবীবুল্লাহ্, মাতা ফী
হুব্বিল্লাহ্।” অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বতেই ইন্তিাকল করেছেন।
সুন্নত অনুসরণে
নক্শবন্দীয়া তরীক্বার ইমাম,
আশেকুল্লাহ্ ও আশেকে রসূল আল্লামা বাহাউদ্দীন নক্শবন্দ
বোখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি
চারিখানা মশহুর ও প্রধান
তরীকার মধ্যে অন্যমত একখানা তরীক্বা হচ্ছে- “নক্শবন্দীয়া তরীকা” এ তরীক্বারই
ইমাম বা বাণী হচ্ছেন,
হযরত বাহাউদ্দীন নক্শবন্দ বোখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি
যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করতেন তা আর বলার
অপেক্ষাই রাখেনা। কারণ সুন্নতের পূর্ণ অনুসরণ করার কারণেই তিনি মহান আল্লাহ্ পাক ও
তাঁর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিল
করেছেন। তিনি যে কতটুকু গুরুত্ব সহকারে সুন্নতের ইত্তেবা করতেন নিম্নোক্ত ঘটনা
থেকেই তা অনুমান করা যায়।
কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
হযরত বাহাউদ্দীন নক্শবন্দ বোখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি
সুন্নতের ইত্তেবার লক্ষ্যে সর্বদাই আটা না ছেঁকেই তদ্বারা রুটি বানিয়ে খেতেন। কারণ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো আটা ছাঁকতেন না। এজন্যে কিতাবে উল্লেখ
করা হয় যে, পৃথিবীতে যে বিদ্য়াত গুলো সর্বপ্রথম শুরু হয়েছে তন্মধ্যে একটি হচ্ছে আটা ছেঁকে
খাওয়া। তাই হযরত বাহাউদ্দীন নক্শবন্দ বোখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি সুন্নত পালনের
উদ্দেশ্যেই আটা না ছেঁকে তদ্বারা রুটি বানিয়ে খেতেন। (সুবহানাল্লাহ্)
সুন্নত অনুসরণে
মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার ইমাম কাইউমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি
আলাইহি
কাইউমে আউয়াল আফযালুল আউলিয়া মুহিউস্ সুন্নাহ, মাহিউল বিদ্য়াত, হযরত
মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও
পূঙ্খানুপূঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করতেন এবং সুন্নতের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করতেন। এ
প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে যে,
কাইউমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি
আলাইহি একদিন তাঁর এক খাদেমকে কিছু লবঙ্গ বা লং আনার নির্দেশ দিলেন। তাঁর খাদেম
লবঙ্গ এনেছে, কিন্তু জোড় সংখ্যক। আফযালুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি
আলাইহি বললেন, আফসূস! আমার খাদেম সুন্নতের আমলও শিখল না। বেজোড় সংখ্যক হলো সুন্নত আর আমার
খাদেম জোড় সংখ্যক লবঙ্গ নিয়ে এসেছে।
কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, কাইউমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি
আলাইহি যখন পানি পান করতেন,
তখন খেয়াল করতেন তা ডান দিক দিয়ে ভিতরে যাচ্ছে কিনা। আর কোন
খাদ্যদ্রব্য চিবানোর সময় খেয়াল করতেন তা ডান দিক দিয়ে চিবানো হচ্ছে কিনা। এবার
ফিকির করে দেখুন হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি সুন্নতের কতটুকু
তাহ্ক্বীক্ব করেছেন। আর তাই কাইউমে যামান, আফজালুল আওলিয়া, হযরত
মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ও মশহুর কিতাব “মকতুবাত
শরীফে” ও অন্যান্য কিতাবে ক্বামীছ গোল, নেছ্ফেসাক্ব ও গুটলীযুক্ত হওয়া
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি আরো লিখেছেন, পুরুষ ও
মহিলার ক্বামীছের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য থাকবে। বিস্তারিত আলোচনার পর উল্লেখ করেন-
পুরুষের গেরেবান বা গুটলী হবে সম্মুখে সিনার দিকে। আর মহিলাদের গুটলী হবে কাঁধের
উপর। তিনি নিজেও উক্ত ক্বামীছ ব্যবহার করতেন এবং অন্যকেও ব্যবহার করতে বলেছেন।
তিনি আরো বলেন যে,
হাদীস শরীফে রয়েছে,
من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجر مائة شهيد.
অর্থঃ- “আমার
উম্মতের ফিৎনার সময় আমার যে উম্মত আমার কোন একটি সুন্নত আঁকড়িয়ে ধরবে, সে
ব্যক্তি একশত শহীদের সওয়াব পাবে।”
উল্লেখ্য, কাইউমে আউয়াল,
হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা
করা হলো- হুজুর একটি সুন্নত আদায় করলে একশত শহীদের সওয়াব পাওয়া যাবে, না
সবগুলো সুন্নত আদায় করলে?
জবাবে হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যদি কেউ
একটি সুন্নত মৃত্যু পর্যন্ত আঁকড়িয়ে থাকতে পারে, তবেই তাকে একশত শহীদের সওয়াব দেয়া
হবে।” (সুবহানাল্লাহ্)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, ইমাম-মুজ্তাহিদ তথা
আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ প্রতি ক্ষেত্রেই সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম
ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন। আর সুন্নত সমূহের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার
কারণেই তাঁরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী লাভ করেছেন তথা হাবীবুল্লাহ্ বা
আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত লাভ করেছেন।
সুন্নতের আমল ব্যতীত
আল্লাহ্ পাক-এর ওলী হওয়া সম্ভব নয়
সুতরাং বর্তমানেও যদি কেউ হক্কানী ওলী হতে চায়, তবে তাকে
অবশ্যই সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। সুন্নতের খেলাফ কাজ করে কারো পক্ষেই
হক্কানী ওলী হওয়া সম্ভব নয়। তাই দেখা যায় ওলী আল্লাহ্গণ ভুলবশতঃ বা
অনিচ্ছাকৃতভাবেও কোন সুন্নত তরক করেছেন, আল্লাহ্ পাক সাথে সাথেই তাঁদের
স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে কুতুবুল আকতাব, হযরত
কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব দলীলুল আরেফীনে
উল্লেখ করেন, সুলতানুল হিন্দ গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, বিখ্যাত
বুযুর্গ, সাইয়্যিদুত্ ত্বইফা হযরত ফুযায়েল বিন আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার ওযুর সময়
হাত ধৌত করতে গিয়ে তিনবারের স্থলে দু’বার ধুয়েছিলেন। রাতে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বপে¦ তাঁকে বললেন, “হে ফুযায়েল নিশ্চয়ই তুমি জান আমার
সুন্নতের অবহেলার অর্থ কি?”
হযরত ফুযায়েল বিন আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহিবললেন, স্বপে¦ দেখার পর আতঙ্কে উঠে দাঁড়ালাম এবং নতুন করে ওযু করলাম এবং
সুন্নত তরকের প্রায়শ্চিত স্বরূপ এক বছর পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচশত রাকায়াত করে নামাজ
পড়া অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে রেখেছিলাম। অন্যত্র বর্ণিত আছে, এক বৎসর
নফল রোজা আদায় করেছেন। (সুবহানাল্লাহ্)
তিনি উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ করেন যে, আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত, হযরত
ইমাম ছুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার মসজিদে প্রবেশ করার সময় ডান পায়ের
স্থলে বাম পা প্রথমে প্রবেশ করালেন, আর সাথে সাথেই গায়েবী নেদা বা
আওয়াজ হলো- “হে ছাওর (ষাঁড়)। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক তাঁকে জানিয়ে দিলেন যে, আমার
রসূলের সুন্নতের খেলাফ আমল করে আমার ওলী হওয়া সম্ভব নয়।”
কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, বিখ্যাত বুযুর্গ হযরত আজল সিরাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি এক দিন
অজু করছিলেন, অজুর মধ্যে হাত ধৌত করার সময় হাতের অঙ্গুলী খিলাল করেননি। সাথে সাথে গায়েবী
আওয়াজ হলো- হে আজল সিরাজী! তুমি আমার মহব্বতের দাবীদার হয়ে কেন আমার হাবীবের
সুন্নত তরক করলে?
এতে তিনি এত ভীত হলেন যে, পরবর্তীতে কখনো আকাশের দিকে
তাকাননি। এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, অজুর সময় সুন্নত তরক করায় আমার
প্রতি নেদা করা হয়েছে,
তাই আমি লজ্জায় আকাশের দিকে তাকাই না।
কাজেই বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, যারা প্রতি ক্ষেত্রে সুন্নতের অনুসরণ করেনা বরং অনেক
ক্ষেত্রেই ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় দায়েমীভাবে সুন্নতের খেলাফ আমল করে, অথচ মহান আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ হতে তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া
হয়না। তারা নিশ্চিতরূপে হক্কানী ওলী নয়। মূলকথা হলো- মহান আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত ও
খাছ রেজামন্দী হাছিল করতে হলে সুন্নতের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম অনুসরণ করতে হবে।
(অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment