সুন্নতের মূর্ত প্রতিক,
হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা
জাহান থেকে কুফরী,
শেরেকী ও বিদ্য়াতের মুলৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক
মূখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছুদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব
লেখাই পত্রস্থ করা হয়,
যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করনে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”-
ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য বা মাকছুদও ঠিক তাই। কারণ অধিকাংশ মুসলমানই পাগড়ীর সঠিক
আহ্কাম ও ফযীলত সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। যার ফলে তারা পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক
আক্বীদা পোষণ করতে যেরূপ ব্যর্থ, তদ্রুপ পাগড়ীর ন্যায় একখানা গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ
দায়েমী সুন্নত পালনেও ব্যর্থ। যা অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর রেজামন্দী হাছিলের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়।
স্মরণযোগ্য যে,
অনেকেই পাগড়ীর সঠিক আহ্কাম ও ফযীলত না জানার কারণে পাগড়ীকে
অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকে এবং পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিকে ঠাট্টা বা বিদ্রুপ
করে থাকে। অথচ এটা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কেননা আক্বাইদের ইমামগণের মতে
শুধু পাগড়ী নয় বরং যে কোন সুন্নতের অবজ্ঞাই কুফরীর কারণ। এ প্রসঙ্গে আক্বাইদের
কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
“কদু খাওয়া সুন্নত।
কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদু পছন্দ করতেন এবং খেয়েছেন। তাই কেউ যদি বলে
যে, আমি কদু খাওয়া পছন্দ করিনা তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেটা পছন্দ করেছেন সেটা সে অপছন্দ করলো।”
আর তাই আক্বাইদের কিতাবে লিখা হয় যে,
اهانة السنة كفر.
অর্থঃ- “সুন্নতের
অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।”
সুতরাং বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর ন্যায় মহান সুন্নতের প্রতি
অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা নিঃসন্দেহে ঈমান হানীর কারণ। অথচ বান্দার
ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা
শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা।
কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত। তাই মহান আল্লাহ্ পাক, পবিত্র
কালামে পাকে এরশাদ করেন,
والعصر ان الانسان لفى خسر الا الذين امنوا وعملوا الصالحات.
অর্থঃ- “আছরের
সময়ের কছম! সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে, একমাত্র তারা ছাড়া, যারা
ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।” (সূরা আছর)
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক মানব জাতির ধ্বংস হতে নাযাত পাওয়ার প্রথম উপায়
হিসাবে ঈমান (আক্বীদা)কে আখ্যায়িত করেছেন। অতঃপর আমলের প্রশ্ন। কারণ ঈমানহীন
ব্যক্তির নেক আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট নেই। কাজেই বান্দার জন্যে
প্রধানতম ফরজ এই যে,
সে সর্ব প্রথম তার ঈমান বা আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করবে অর্থাৎ
ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে,
আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা পোষণ করবে।
কেননা আক্বীদাগত কারণেই ইসলামে ৭২টি বাতিল ফেরকার আবির্ভাব হয়েছে। যদিও তাদের
কথাবার্তা, চাল-চলন, ছূরত-সীরত ইত্যাদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানের ন্যায় বা
ইসলামসম্মত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীস
শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত
আক্বীদা পোষণ করে থাকে,
যা সুস্পষ্ট কুফরী।
যেমন- ক্বদরিয়া সম্প্রদায়-
তারা তক্বদীরকে অবিশ্বাস করে, অথচ তক্বদীরের উপর ঈমান আনা ফরজ।
খারেজী সম্প্রদায়- তাদের
আক্বীদা হলো, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ কাফির। (নাউযুবিল্লাহ্), অথচ হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতি সুধারণা পোষণ করা ঈমানের অঙ্গ বা ফরজ।
রাফেজী বা শিয়া সম্প্রদায়-
তাদের আক্বীদা মতে শিয়াদের ইমামদের মর্যাদা নবী-রাসূল আলাইহিস্ সালামগণের চেয়েও
বেশী, বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তীত, হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু ব্যতীত
খোলাফা-ই-রাশেদীনের সকলেই মুরতাদ। (নাউযুবিল্লাহ)
মুশাব্বিহা বা মুনাব্বিরা
সম্প্রদায়ঃ- তাদের আক্বীদা হলো, মহান আল্লাহ্ পাক “নূর বা আলো” মহান
আল্লাহ্ পাক-এর দেহ বা আকার-আকৃতি রয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত সকল বিষয়
থেকেই সম্পূর্ণ বেনিয়াজ ও পবিত্র।
অনুরূপ বর্তমান যামানার ভয়ঙ্কর ফিৎনা- কাদিয়ানী সম্প্রদায়, তাদের
আক্বীদা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী নন, তাঁর পর আরো নবী পৃথিবীতে আসবে, তাই তারা
গোলাম কাদিয়ানীকে নবী বলে বিশ্বাস করে, যা অকাট্য কুফরী।
অথচ তারা প্রত্যেকেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাতের
কথা বলে, টুপি, কোর্তা, পাগড়ী পরিধান করে। এতকিছুর পরও তারা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া
মোতাবেক কাফির বা অমুসলিম। কারণ তাদের উপরোক্ত আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণই কুফরী।
আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
ستفترق امتى على ثلاث وسبعين فرقة كلهم فى النار الا ملة واحدة قيل من هى يارسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما انا عليه واصحابى.
অর্থঃ- “অতি
শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে
যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- যে দলটি (নাযাত পাবে) সেটা কোন দল? ইয়া
রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে (মত-পথের) উপর আমি আমার
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ রয়েছি, তার উপর যাঁরা থাকবে, তাঁরাই
সেই নাযাত প্রাপ্ত দল।”
(আহ্মদ, আবু দাউদ, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ
ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের যেকোন আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না
কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়, তবে তা
গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন-
খারেজী, রাফেজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল।
অতএব, প্রতিটি মুসলমানকেই পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক বা বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করতে
হবে। কোন ভাবেই পাগড়ীকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবেনা।
দ্বিতীয়তঃ অনেকেই অজ্ঞতা
হেতু বলে থাকে যে,
পাগড়ী পরিধান করা দায়েমী সুন্নত নয় বরং শুধুমাত্র নামাজের
মধ্যে পরিধান করলেই চলে। আবার কেউ কেউ সুন্নত স্বীকার করলেও নামাজের মধ্যে পাগড়ী
পরিধান করার সুন্নত ও ফযীলতকে অস্বীকার করে থাকে।
অথচ তাদের উল্লিখিত বক্তব্য শুধু শরীয়ত বিরোধীই নয় বরং মনগড়া, অজ্ঞতামূলক
ও বিভ্রান্তিকরও বটে। কারণ পাগড়ী পরিধান করা নামাজের বাইরে ও ভিতরে উভয় অবস্থায়ই
সুন্নত ও ফযীলতের কারণ। যেমন, নামাজের বাইরে পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে
হাদীস শরীফের সহীহ্ কিতাব “তিরমিযী শরীফের”
হাশিয়ায় উল্লেখ আছে, ان لبس العمامة سبنة.
অর্থঃ- “নিঃসন্দেহে
পাগড়ী পরিধান করা (দায়েমী) সুন্নত।” (হাশিয়ায়ে শামায়িলে তিরমিযী/৮)
আর নামাজের মধ্যে পাগড়ী
পরিধান করার ফযীলত সম্পর্কে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে,
ان ركعتين مع العمامة افضل من سبعين ركعة بدونها.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
পাগড়ী পরিধান করে দু’রাকায়াত নামাজ আদায় করা, পাগড়ী ছাড়া ৭০ রাকায়াত নামাজ আদায় করার চেয়ে অধিক
ফযীলতপূর্ণ।” (হাশিয়ায়ে শামায়িলে তিরমিযী/৮)
পাগড়ীর উল্লিখিত ফযীলত থেকে যেন উম্মত মাহরুম না হয় সে জন্যে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উম্মতদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে,
فاعتموا فان العمامة سيماء الاسلام وهى الحاجز بين المسلمين والمشركين.
অর্থঃ- “তোমরা
পাগড়ী পরিধান কর। নিশ্চয়ই পাগড়ী ইসলামের নির্দশন এবং তা মুসলমান ও মুশরিকদের মাঝে
পার্থক্যকারী।” (যারকানী ৬ষ্ঠ জিঃ,
২৭২ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী, ২১ জিঃ, ৩০৮
পৃষ্ঠা, খাছায়িলুন্ নবী ৭৮ পৃষ্ঠা, তুহ্ফাতুল আহওয়াজী ৫ম জিঃ, ৪১২ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো এরশাদ করেন যে,
عليكم بالعمائم فانها سيماء الملئكة.
অর্থঃ- “তোমাদের
জন্যে পাগড়ী অবধারিত,
কেননা তা ফেরেশ্তাগণের নিদর্শন স্বরূপ।” (মিশকাত
শরীফ/৩৩৭, ফাইদুল ক্বদীর ৪র্থ জিঃ, ৪৫৪ পৃষ্ঠা, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী ৫ম
জিঃ, ১৭৬ পৃষ্ঠা)
অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পাগড়ী পরিধান করা যেরূপ দায়েমী
সুন্নত। তদ্রুপ অশেষ ফযীলত লাভেরও কারণ। নামাজের সময় যেরূপ পাগড়ী পরিধান করা
সুন্নত, নামাজের বাইরেও তদ্রুপ পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত। অর্থাৎ পাগড়ী পরিধান করা
হচ্ছে- “দায়েমী বা সার্বক্ষণিক সুন্নত।”
এছাড়াও পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাতের
অগণিত পাঠকের পক্ষ হতে প্রেরিত অসংখ্য চিঠিও “পাগড়ী ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে” ফতওয়া
দেয়ার একটি কারণ।
কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে এরশাদ করেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- “যদি
তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা
নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা
যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
অতএব, যাঁরা জানেন,
তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের
শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের
জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন
আখেরী রসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থঃ- “যাকে
দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়, জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা
গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে
মাযাহ্, আহ্মদ, মিশকাত, বযলুল মাজহুদ,
উরফুশ্শাজী, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারিফুস্
সুনান, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী,
তা’লীকুছ্ ছবীহ্,
আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরআতুল
মানাজীহ্ ইত্যাদি)
অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।”
কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে
বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে এবং বিদ্য়াতীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের
কারণে সাধারণ মুসলমানগণ যেন পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে কুফরী আক্বীদা পোষণ না করে
অর্থাৎ পাগড়ীর ন্যায় মহান সুন্নতকে যেন অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে এবং
তাদের প্ররোচনায় যেন এ মহান সুন্নত ত্যাগ করতঃ অশেষ ফযীলত ও রেজায়ে মাওলা অর্জনে
ব্যর্থ না হয় বরং পাগড়ী সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ে সঠিক ও সহীহ্ আক্বীদা পোষণ করতে
পারে এবং পাগড়ীর ন্যায় অশেষ ফযীলতপূর্ণ সুন্নত পালন করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর
হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যেই “মসিক আল
বাইয়্যিনাতে” পাগড়ী মোবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করা হলো।
এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব
নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের
সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা
বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র
আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان-
অর্থঃ- “যে
ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ
পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।”
(আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তুহ্ফাতুল
আহ্ওয়াজী, মায়ারিফুস্ সুনান,
মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে
হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত
ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “পাগড়ী ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্র্কে” সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা
হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন প্রত্যেকেই পাগড়ী সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং
সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর
মু’মিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে, المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থঃ- “এক মু’মিন অপর
মু’মিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর
ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে
সমবেত আনছার এবং মুহাজির রদিয়াল্লাহু আনহুমগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি
দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে
তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওমর ইব্নুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু দ্বিতীয়
এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ রদিয়াল্লাহু
আনহু বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন,
তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ
তীরকে সোজা করা হয়।”
এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “তোমরাই
আমার প্রকৃত বন্ধু,
দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মা’আরেফ)
অতএব, পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে
ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীস শরীফের মেছদাক হওয়াই মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে পাগড়ী সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করার মূল কারণ।
বস্তুতঃ পাগড়ী পরিধান করা যদিও “সুন্নত” তবে
সুন্নতের অনুসরণই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি
হাছিলের একমাত্র মাধ্যম। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেছেন,
قل انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم ولله غفور رحيم.
অর্থঃ- “ হে
হাবীব! (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর
ভালবাসা চাও তবে আমাকে (আমার সুন্নতকে) অনুসরণ কর তবেই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে
ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল গুণাহ্-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল ও
দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)
আর উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় “হাদীসে কুদসীতে” এরশাদ
হয়েছে,
لايزال العبد يتقرب الى بالنوافل حتى احبه-
অর্থঃ- “মহান
আল্লাহ্ পাক বলেন,
আমার বান্দারা নফল অর্থাৎ সুন্নত বা মুস্তাহাব আমলের দ্বারা
আমার এতটুকু নৈকট্য বা সন্তষ্টি হাছিল করে যে, স্বয়ং আমি আল্লাহ্ পাক তাকে
মুহব্বত করি বা ভালবাসি।”
(বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফতহুল
বারী, উমদাতুল ক্বারী,
ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, মিরকাত, শরহুত্
ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্,
আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মোজাহেরে
হক্ব)
অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর আমলের দ্বারা বান্দা অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর
হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী লাভ করতে পারবে।
কারণ পাগড়ী আখেরী রাসূল,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, ুহুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতসমূহের মধ্যে একখানা বিশেষ
গুরুত্বপূর্ণ ও অশেষ ফযীলতপূর্ণ সুন্নত।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
“ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করা
দায়েমী সুন্নত হওয়ার বিস্তারিত নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীল-আদিল্লাসমূহ
গত কয়েক সংখ্যার আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, খোলাফা-ই-রাশেদীন
রদিয়াল্লাহু আনহুমসহ সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুম এবং চার মাযহাব ও চার
তরীক্বার ইমামসহ সকল আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতসমূহ বা আদেশ-নিষেধসমূহ সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম
বা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করতেন। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, ইমামাহ্
বা পাগড়ীর ক্ষেত্রেও তারা আখেরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, শাফিউল
মুজনেবীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। অর্থাৎ
হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুম ও হযরত আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণ দায়েমীভাবে পাগড়ী পরিধান করতেন।
অথচ আজকাল অনেকেই পীর,
ছুফী, দরবেশ, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সীর, আল্লামা, আশেকে রসূল কত কি দাবি করে। কিন্তু “পাগড়ী” দায়েমীভাবে
পরিধান করাতো দূরের কথাই নামাযের সময়ও পরিধান করেনা।
অথচ পাগড়ী পরিধান করা হচ্ছে, আখেরী নবী ও রসূল, দো’জাহানের বাদশাহ্, ফখরে
মওজুদাত, সরকারে কায়েনাত,
নূরে মুজাস্সাম হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ তথা দায়েমী সুন্নত। শুধু তাই নয় পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল
আলাইহিমুস্ সালামগণ সকলেই পাগড়ী পরিধান করেছেন এবং মহান আল্লাহ্ পাক-এর
ফেরেশ্তাগণও দায়েমীভাবে পাগড়ী পরিধান করে থাকেন।
অতএব, পাগড়ী পরিধান করা ফেরেশ্তাগণের সুন্নত, সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিস্
সালামগণের সুন্নত,
ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে
মুজাস্সাম হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সুন্নত, হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের সুন্নত ও হযরত আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণের সুন্নত। তাঁরা প্রত্যেকেই দায়েমী বা সার্বক্ষণিকভাবে অর্থাৎ অধিকাংশ
সময় পাগড়ী পরিধান করেন বা করতেন।
নিম্নে উল্লিখিত বিষয়ে পর্যায়ক্রমে ও বিস্তারিতভাবে নির্ভরযোগ্য ও অকাট্ট
দলীল-আদিল্লাসমূহ উল্লেখ করা হলো-
ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান
করা
ফেরেশ্তাগণের নিদর্শন
আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, শাফিউল
উমাম, রাউফুর রাহীম,
রহমাতুল্লিল আলামীন, সাইয়্যিদুল বাশার, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে “পাগড়ী”কে “ফেরেশ্তাগণের” নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ ফেরেশ্তাগণের সর্দার
হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালামসহ সকল ফেরেশ্তাগণই পাগড়ী পরিধান করেন। ফেরেশ্তাগণ যে
পাগড়ী পরিধান করেন তা পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। যেমন, মহান
আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে “সূরায়ে আলে ইমরান”-এর ১২৫নং আয়াত শরীফে এরশাদ করেন,
يمددكم ربكم بخمسة الاف من الملئكة مسومين.
অর্থঃ- “তোমাদের
পালনকর্তা চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাচঁ হাজার ফেরেশ্তা তোমাদের সাহায্যে পাঠাবেন।” (সূরা আলে
ইমরান/১২৫)
উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায়
ফেরেশ্তাগণের পাগড়ী সম্পর্কে “তাফসীরগ্রন্থসমূহে” বিশদ
আলোচনা এসেছে তন্মধ্যে গত সংখ্যায় ৪৫টি দলীল উল্লেখ করা হয়েছে, বাকীগুলো
নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
[৪৬]
قال على رضى الله عنه وابن عباس رضى الله عنهما كانت عليهم عمائم بيض قد ارسلوها بين اكتافهم. (تفسير المظهرى جلد دوم ص ১৩৩)
অর্থঃ- “হযরত আলী
রদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ইবনে আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, (বদর
যুদ্ধে) ফেরেশ্তাগণের পাগড়ী ছিল সাদা এবং তার শামলা ছিল তাঁদের দু’কাঁধের
মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত।”
(তাফসীরুল মাযহারী ২য় জিঃ ১৩৩ পৃষ্ঠা)
[৪৭]
قال هشام بن عروة والكلبى عليهم عمائم صفر مرخاة على اكتافهم. (تفسير المظهرى جلد دوم ص ১৩৩)
অর্থঃ- “হযরত
হিশাম ইবনে উরওয়াহ্ ও কালবী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা বলেন, তাঁদের
(বদর যুদ্ধে ফেরেশ্তাগণের) মাথায় ছিল ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী আর উহার শামলা তাঁদের দু’কাঁধের
মধ্যবর্তীস্থানে ঝুলানো ছিল।” (তাফসীরুল মাযহারী ২য় জিঃ ১৩৩ পৃষ্ঠা)
[৪৮]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “উক্ত সময়
অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন তোমাদের রব তোমাদের সাহায্যের জন্য পাঁচ হাজার ফেরেশ্তা
পাঠিয়েছিলেন। যাঁদের মাথায় (সাদা অথবা ঘিয়া রংয়ের) পাগড়ী বাঁধা ছিল।” (তাফসীরে
ইবনে আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু ১ম জিঃ ২৭৪ পৃষ্ঠা)
[৪৯]
قوله وعليهم عمائم صفرأوبيض اى فيهما روايتان وجمع بان جبريل كانت عمامته صفراء وباقيهم بيض. (حاشية الصاوى على الجلالين الجلد الاول ص ১৭৭)
অর্থঃ- “মুফাস্সির-ই-কিরাম
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
অর্থাৎ তাঁদের (ফেরেশ্তাগণের) পাগড়ী ছিল ঘিয়া অথবা সাদা
রংয়ের। উভয় প্রকার রেওয়ায়েতের সমাধান হচ্ছে, হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর
পাগড়ী ঘিয়া রংয়ের আর অন্যান্য ফেরেশ্তাগণের পাগড়ী ছিল সাদা রংয়ের।” (হাশিয়াতুছ্
ছাবী আলাল জালালাইন”১ম জিঃ ১৭৭ পৃষ্ঠা)
[৫০]
قوله عليهم عمائم صفرالخ روى عن عروة بن الزبير كانت عمامة الزبير يوم بدر صفراء فنزلت الملائكة كذلك. (حاشية الجلالين ص ০৬)
অর্থঃ- “মুফাস্সির
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
তাঁদের মাথায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী ছিল। যেমন হযরত উরওয়াহ্ ইবনে
যুবাইর রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন হযরত যুবাইর
রদিয়াল্লাহু আনহু-এর পাগড়ী ছিল ঘিয়া রংয়ের। অনুরূপভাবে ফেরেশ্তাগণ ঘিয়া রংয়ের
পাগড়ী পড়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।” (হাশিয়ায়ে জালালাইন” ৬০ পৃষ্ঠা)
[৫১]
قوله اوبيض روى ابن اسحاق والطبرانى عن ابن عباس رضى الله عنهما قال كانت سيماط الملائكة يوم بدر عمائم بيضاء والتطبيق بين الروايتين بان جبرئيل كانت عمامته صفراء وغير كانت عمامته بيضاء وهكذا فى روح البيان وغيره. (حاشية الجلالين ص০৬)
অর্থঃ- “মুফাস্সির
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
অথবা সাদা পাগড়ী ফেরেশ্তাগণের মাথায় ছিল। যেমনটি হযরত ইবনে
ইছহাক ও তিরবানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত ইবনে আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে
বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
বদর যুদ্ধে ফেরেশ্তাগণের বিশেষ চিহ্ন ছিল সাদা পাগড়ী। উক্ত
দু’বর্ণনার সমাধান হচ্ছে- হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর পাগড়ী ছিল ঘিয়া রংয়ের
আর অন্যান্য ফেরেশ্তাগণের পাগড়ী ছিল সাদা। অনুরূপভাবে তাফসীরে রুহুল বয়ান ও
অন্যান্য তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে।” (হাশিয়ায়ে জালালাইন ৬০ পৃষ্ঠা)
[৫২]
ان الزبير كان يتعصب بعصابة صفراء وان ابا دجانة كان يعلم بعصابة حمراء. (حاشية الجلالين ص ৬০)
অর্থঃ- “(বদর
যুদ্ধের দিন) হযরত যুবাইর রদিয়াল্লাহু আনহু-এর মাথায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী বাঁধা ছিল।
কিন্তু হযরত আবু দাজানা রদিয়াল্লাহু আনহু -এর মাথায় গন্ধম রংয়ের পাগড়ী বাঁধা ছিল।” (হাশিয়ায়ে
জালালাইন ৬০ পৃষ্ঠা)
[৫৩]
قوله صفر ولابن حاتم نزلت الملائكة يوم بدر وعليهم عمائم صفر ولابن مردوية عمائم سود. (حاشية الجلالين ص ৬০)
অর্থঃ- “মুফাস্সির
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
অর্থাৎ ফেরেশ্তাগণের মাথায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী ছিল। হযরত ইবনে
আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে বদর যুদ্ধের দিন ফেরেশ্তাগণ ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী
পরিধান করে আগমন করেছিলেন। হযরত ইবনে মারদুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে কালো
পাগড়ী পরিধান করে এসেছিলেন।” (হাশিয়ায়ে জালালাইন ৬০ পৃষ্ঠা)
“সূরা আলে ইমরান”-এর ১২৫ নং আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থসমূহে
ফেরেশ্তাগণের পাগড়ী সম্পর্কে যা বর্ণিত রয়েছে তা উল্লেখপূর্বক প্রমাণ করা হলো যে, ফেরেশ্তাগণের
সকলেই পাগড়ী পরিধান করেন। কাজেই পাগড়ী পরিধান করা শুধু ফেরেশ্তাগণের চিহ্নই নয় বরং
তাদের সুন্নতও বটে। আর তা পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফের আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
যার প্রমাণ উপরোক্ত ৫৩টি নির্ভরযোগ্য দলীল।
ইমামাহ্ বা পাগড়ী
ফেরশ্তাগণের নিদর্শন হওয়ার ব্যাপারে হাদীস শরীফের বর্ণনা
ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করা ফেরেশ্তাগণের নিদর্শণ। তা যেরূপ কুরআন শরীফের
আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত তদ্রুপ অসংখ্য সহীহ্ হাদীস শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত।
অর্থাৎ হাদীস শরীফের বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, ফেরেশ্তাগণ পাগড়ী পরিধান করেন।
নিম্নে তার প্রমাণ পেশ করা হলো-
[৫৪-৫৯]
عن عبادة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم عليكم بالعمائم فانها سيماء الملائكة وارخوها خلف ظهوركم. (مشكوة شريف ص৩৭৭، تحفة الاحوذى الجلد الخامس ص৪১৪، شعب الايمان للبيهقى الجلد الخامس ص ১৭৬، فيض القدير الجلد الرابع ص ৪৫৪، المعجم الكبير الجلد الثانى عشر ص২৯৩، جامع المسانيد والسنن الجلد التاسع والعشرون ص ৩৮৩)
অর্থঃ- “হযরত
উবাদাহ্ রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমাদের
উপর পাগড়ী পরিধান অবধারিত। কেননা উহা ফেরেশ্তাগণের প্রতীক এবং তার শামলা তোমাদের
পিঠের উপর ছেড়ে দাও।”
(মিশকাত শরীফ/৩৭৭, তুহফাতুল আহওয়াজী ৫ম জিঃ, ৪১৪পৃষ্ঠা, শুয়াবুল
ঈমান লিল বাইহাক্বী ৫ম জিঃ,
১৭৬ পৃষ্ঠা, ফাইদুল কাদীর ৪র্থ জিঃ ৪৫৪ পৃষ্ঠা, মুজামুল
কবীর ১২ জিঃ, ২৯৩ পৃষ্ঠা, জামিউল মাসানীদি ওয়াস্ সুনান ২৯ জিঃ ৩৮৩ পৃষ্ঠা)
[৬০]
(فانها سيماء الملائكة) اى علامتهم يوم بدر قال الله تعالى يمددكم ربكم بخمسة الاف من الملائكة مسومين قال الكلبى معتمين بعمائم صفر مرخاة على اكتافهم. (شرح الطيبى الجلد الثامن ص৮)
অর্থঃ- “(নিশ্চয়ই
পাগড়ী ফেরেশ্তাগণের নিদর্শন)।” অর্থাৎ বদরের ময়দানে তা তাঁদের বিশেষ চিহ্ন ছিল। আল্লাহ্
পাক বলেন, “(হে মু’মিনগণ) তোমাদের পালনকর্তা চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশ্তা তোমাদের
সাহায্যে পাঠাবেন।”
কালবী বলেন, তাঁরা ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরিহিত
এবং শামলা কাঁধের উপর প্রলম্বিত অবস্থায় ছিলেন।” (শরহুত্ ত্বীবী ৮ম জিঃ, ৮
পৃষ্ঠা)
[৬১]
نزول الملائكة يوم بدر بعمائم صفر. (مواهب اللدنية على الشمائل المحمدية ص ১০০)
অর্থঃ- “বদরের
যুদ্ধের দিন ফেরেশ্তাগণ ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় এসেছিলেন।” (মাওয়াহিবুল্
লাদুন্নিয়াহ্ আলাশ্ শামায়িলিল মুহম্মদিয়া ১০০ পৃষ্ঠা)
[৬২]
كان سيماء الملائكة عمائم قد ارخوها بين اكتافهم خضر وصفر وحمر من نور. (المنتظم فى تاريخ الملوك والامم الجلد الثالث ص ১১৭)
অর্থঃ- (বদর যুদ্ধে)
ফেরেশ্তাগণের নিদর্শন ছিল সবুজ, ঘিয়া ও গন্ধম রংয়ের নুরানী বা আলোকিত পাগড়ী। যার শামলা
তাঁদের দু’কাধের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত ছিল।” (আল মুনতাযাম ফী তারীখিল মুলুকি
ওয়াল উমাম”-৩য় জিঃ, ১১৭ পৃষ্ঠা)
হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস
সালাম-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী
[৬৩-৬৭]
روى ان الملائكة كانوا بعمائم بيض الا جبريل عليه السلام فانه كان بعمامة صفراء على مثل الزبير بن العوام نزلوا على الخيل البلق.
(تفسير القرطبى الجلد الثانى ص১৯৬/১৯৭، تفسير روح البيان الجلد الثانى ص ৯০، تفسير ابى السعود الجلد الثانى ص ৮০، تفسير المحرر الوجيز الجلد الاول ص ৪. ৫، حاشية محى الدين شيخ زاده على تفسير البيضاوى الجلد الاول ص ৬৬৯)
অর্থঃ- “বর্ণিত
রয়েছে যে, (বদর যুদ্ধের দিন) হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম ব্যতীত অন্যান্য ফেরেশ্তাগণ “সাদা পাগড়ী” পরিহিত
ছিলেন। কেননা হযরত জিবরাইল আলাইহিস্ সালাম হযরত যুবাইর ইবনে আউওয়াম রদিয়াল্লাহু
আনহু- এর পাগড়ীর অনুরূপ ঘিয়া পাগড়ী পরিহিত ছিলেন। যাঁরা সাদা ডোরা বিশিষ্ট ঘোড়ায়
আরোহণ করে এসেছিলেন।”
(তাফসীরে কুরতুবী ২য় জিঃ ১৯৬/১৯৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
রুহুল বয়ান ২য় জিঃ ৯০ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আবু সাউদ
২য় জিঃ, ৮০ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মুর্হারারুল ওয়াজীয ১ম জিঃ ৫০৪ পৃষ্ঠা, হাশিয়াতু মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ
আলা তাফসীরিল বাইযাভী”-এর ১ম
জিঃ, ৬৬৯ পৃষ্ঠা)
[৬৮-৭৩]
عن عروة بن الزبير كانت عمامة جبريل يوم بدر صفراء. (تفسير الدر المصون الجلد الثانى ص ২০৬، التسهيل لعلوم التنزيل الجلد الاول ص ১০৮، حاشية محى الدين شيخ زاده على تفسير البيضاوى الجلد الاول ص ৬৬৯، حاشية الجمل على الجلالين الجلد الاول ص ৩১২، حاشية الصاوى على الجلالين الجلد الاول ص ১৭৭، حاشية الجلالين ص ৬০)
অর্থঃ- “হযরত
উরওয়াহ্ ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর
যুদ্ধের দিন হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর মাথায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী ছিল।” (তাফসীরে
দুররুল মাছুন ২য় জিঃ,
২০৬ পৃষ্ঠা, তাসহীলু লি উলুমীত্ তানযীল ১ম জিঃ
১৫৮ পৃষ্ঠায়, হাশিয়াতু মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ আলা তাফসীরিল বাইযাভী”-এর ১ম
জিঃ, ৬৬৯ পৃষ্ঠা, হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাইন ১ম জিঃ ৩১২ পৃষ্ঠা, হাশিয়াতুছ্
ছাবী আলাল জালালাইন ১ম জিঃ ১৭৭ পৃষ্ঠা, হাশিয়ায়ে জালালাইন ৬০ পৃষ্ঠা)
[৭৪]
سعد بن ابى وقاص المروى فى (الصحيحين) انه قال رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم احد ومعه رجلان يقاتلان عنه عليهما ثياب بيض كأشد القتال مارأيتهما قبل ولا بعد يعنى جبريل وميكائيل. (تفسير القاسمى الجلد الثانى ص ১৩৫)
অর্থঃ- হযরত সা’দ ইবনে
আবী ওয়াক্কাছ মারবী রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (সহীহাইনে রয়েছে) “আমি
রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উহুদের দিন দেখেছি এ অবস্থায় যে, তাঁর
সঙ্গে দু’জন লোক তাঁর পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করছেন, তাঁরা সাদা পোশাক (পাগড়ী)ধারী
ছিলেন। তাঁরা তুমুল যুদ্ধ করছিলেন, যাঁদেরকে আমি পূর্বে ও পরে কোনদিন
দেখিনি।” উল্লিখিত দু’জন ছিলেন হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম ও হযরত মিকাঈল আলাইহিস্ সালাম।
(তাফসীরুল কাসিমী ২য় জিঃ,
১৩৫ পৃষ্ঠা)
[৭৫]
عن عائشة رضى الله عنها ان جبريل عليه السلام اتى النبى صلى الله عليه وسلم على برذون وعليه عمامة طرفها بين كتفيه فسألت النبى صلى الله عليه وسلم فقال رأيته ذاك جبريل عليه السلام- (مسند احمد ين حنبل الجلد السادس ص ১৪৮)
অর্থঃ- “হযরত
আয়েশা সিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন যে, একদা হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্
সালাম, হযরত নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে “বারজুন
নামক স্থানে” আসলেন। যখন তাঁর মাথায় পাগড়ী ছিল, যার প্রান্ত বা শামলা তাঁর দু’কাঁধের
মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলছিল। (হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু আনহা বলেন), এ বিষয়ে
আমি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বললেন, আমি
অনুরূপভাবে (পাগড়ী পড়তে) জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালামকে দেখেছি। (মুসনাদে আহমদ ইবনে
হাম্বল ৬ষ্ঠ জিঃ ১৪৮ পৃষ্ঠা)
[৭৬]
عن عائشة رضى الله عنها ان رجلا اتى النبى صلى الله عليه وسلم على برذون وعليه عمامة طرفها بين كتفيه فسألت النبى صلى الله عليه وسلم عنه فقال رائيته ذالك جبريل عليه السلام- (مسند احمد بن حنبل الجلد السادس ص ১৫২)
অর্থঃ- “হযরত
আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন। একদা একব্যক্তি নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ‘বারজুন’ নামক স্থানে আসল,
যখন তাঁর মাথা মোবারকে পাগড়ী ছিল, যার
শামলা তাঁর দু’কাঁধের মাঝখানে ঝুলছিল। (হযরত আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা বলেন) আমি এ বিষয়ে নবী
করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বললেন আমি
অনুরুপ ভাবে (পাগড়ী পড়তে) হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালামকে দেখেছি।” (মুসনাদে
আহমদ ইবনে হাম্বল ৬ষ্ঠ জিঃ ১৫২ পৃষ্ঠা)
[৭৭]
عن عائشة رضى الله عنها انها قالت رأيت رجلا يوم الخندق على صورة دحية بن خليفة الكلبى على دابة يناجى رسول الله صلى الله عليه وسلم وعليه عمامة قد اسدلها خلفه فسألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عنه قال كان ذلك جبريل عليه السلام امرنى ان أخرج الى بنى قريظة- (شعب الايمان للبيهقى الجلد الخامس ص ১৭৫)
অর্থঃ- “হযরত
আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, আমি
খন্দক যুদ্ধের দিবসে হযরত দাহ্ইয়া ইবনে খুলাইফা আল্কালবী রদিয়াল্লাহু আনহু -এর মত
আকৃতি (ছুরত) বিশিষ্ট এক ব্যক্তিকে আরোহী অবস্থায় দেখলাম এ অবস্থায় যে তিনি
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে পারস্পরিক গোপনীয় কথা বলছেন।
আর তাঁর (উক্ত ব্যক্তির) মাথায় পাগড়ী বাঁধা ছিল, যার শামলা তাঁর পিছনে (পিঠের উপর)
ঝুলছিল। (হযরত আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা
বলেন) আমি,
অন্য সময় রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঐ
ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করায় তিনি উত্তরে বললেন,
كان ذلك جبريل عليه السلام امرنى أن أخرج الى بنى قريظة-
অর্থঃ- ঐ ব্যক্তি ছিলেন
হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম। যিনি আমাকে বণী কুরাইযা গোত্রের উদ্দেশ্যে বের
হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। (শুয়াবুল ইমান লিল্ বাইহাকী ৫ম জিঃ ১৭৫ পৃষ্ঠা)
[৭৮]
عن سعيد بن جبير قال كانت عمامة جبريل يوم غرق فرعون سوداء. (مصنف ابن ابى شيبة الجلد الثامن ص ২৩৬)
অর্থঃ- “হযরত
সাঈদ ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যেদিন
ফিরআউন ডুবে মরেছিল ঐদিন হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর মাথায় কালো পাগড়ী বাঁধা
ছিল।” (মুসান্নিফে ইবনে আবী শাইবাহ্ ৮ম জিঃ ২৩৬ পৃষ্ঠা)
হযরত মিকাঈল আলাইহিস্
সালাম-এর ইমামাহ্্ বা পাগড়ী
[৭৯]
هضرت سعد بن ابى وقاص المروى فى (الصحيحين) انه قال "رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم احد ومعه رجلان يقاتلان عنه-
عليهما ثياب بيض كاشد القتال مارايتهما قبل ولابعد" يعنى جبريل وميكائيل عليهما السلام- (تفسير القاسمى الجلد الثانى ص ১৩৫)
অর্থঃ- “হযরত সা’দ ইবনে
আবী ওয়াক্কাছ মারবী রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (সহীহাইনে রয়েছে) “আমি
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উহুদ যুদ্ধের দিন এ অবস্থায় দেখেছি
যে, তাঁর সঙ্গে দ’ুজন লোক তাঁর পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করছেন, তাঁরা সাদা পোশাকধারী (পাগড়ী
পরিহিত) ছিলেন। তাঁরা তুমুল যুদ্ধ করছিলেন, যাঁদেরকে আমি পূর্বে ও পরে কোনদিন
দেখি নাই।” উল্লেখিত দু’জন ছিলেন হযরত জিব্রাঈল ও হযরত মিকাঈল আলাইহিমাস্ সালাম।” (তাফসীরুল
ক্বাসিমী ২য় জিঃ ১৩৫ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত তাফসীর,
হাদীস ও হাদীসের বিশ্ব বিখ্যাত শরাহ ইত্যাদি সর্বজন মান্য
কিতাব সমূহের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ইমামাহ্
বা পাগড়ী পরিধান করা سيماء الملائكة অর্থাৎ ফেরেশ্তাগণের খাছ নিদর্শন বা চিহৃ। শুধু তাই নয়, ইমামাহ্
বা পাগড়ী পরিধান করা ফেরেশ্তাগণের খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। কারণ ফেরেশ্তাগণ
দায়েমী বা সার্বক্ষনিকভাবে পাগড়ী পরিধান করে থাকেন। ফেরেশ্তাগণের সরদার হযরত
জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর পাগড়ী ঘিয়া রংয়ের ছিল। তবে ফিরাউন ডুবে মরার দিন হযরত
জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর মাথায় ছিল কালো পাগড়ী। হযরত মিকাঈল আলাইহিস্ সালামসহ
অন্যান্য ফেরেশ্তা আলাইহিমুস্ সালামগণের পাগড়ী যথাক্রমে সাদা, কালো, সবুজ এবং
গন্ধম রং বিশিষ্ট ছিল। হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালামসহ সমস্ত ফেরেশ্তাগণের পাগড়ীর
শামলা তাঁদের পিঠের উপর দু’কাঁধের মধ্যবর্তীস্থানে একহাত পরিমাণ ঝুলন্ত বা প্রলম্বিত অবস্থায় ছিল।
ইমামাহ্ বা পাগড়ী বাঁধা
নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের খাছ সুন্নত হওয়ার অকাট্য দলীল-আদিল্লাহ্সমূহ
তাফসীর ও হাদীস শরীফের ৭৯টি নির্ভরযোগ্য ও অখন্ডনীয় দলীল দ্বারা সুস্পষ্ট ও
অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, ফেরেশ্তাগণ দায়েমী বা সার্বক্ষণিকভাবে পাগড়ী পরিধান করেন।
পাগড়ী যে শুধু ফেরেশ্তাগণেই পরিধান করেন তা নয় বরং মহান আল্লাহ্ পাক-এর সবচেয়ে
প্রিয় এবং তাঁর নিকট সবচেয়ে বেশী সম্মানের অধিকারী নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ
সকলেই পাগড়ী পরিধান করতেন। অর্থাৎ পাগড়ী পরিধান ছিল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের
খাছ আদত বা অভ্যাসগত আমল। যেমন, এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে,
[৮০]
العمامة سنة الرأس وعادة الانبياء والسادة- (عارضة الاحوذى شرح ترمذى الجلد السابع ص ২৪৩)
অর্থঃ- পাগড়ী মাথায় পরিধান
করা সুন্নত এবং সমস্থ আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণের বিশেষ অভ্যাসগত আমল। (আরিদাতুল
আহওয়াজী শরহে তিরমিযী ৭ম জিঃ ২৪৩ পৃষ্ঠা)
উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, প্রথম
নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম হতে শুরু করে আমাদের নবী আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সকল
নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করেছেন। যার প্রমাণ স্বরূপ
নিম্নে বিশেষ বিশেষ কয়েকজন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পাগড়ী সম্পর্কে আলোচনা
করা হল।
হযরত আদম আলাইহিস্
সালাম-এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারক
হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম যখন বেহেস্ত থেকে দুনিয়ায় আসলেন তখন তাঁর মাথা
মোবারকে পাগড়ী বাঁধা ছিল। এ প্রসঙ্গে তাফসীরে উল্লেখ আছে,
[৮১-৮২]
خرج ادم من الجنة للساعة التاسعة او العاشرة- فاخرج ادم معه غصنا من شجر الجنة على راسه تاج من شجر الجنة وهو الاكليل من ورق الجنة- (تفسير ابن كثير الجلد الاول ص ১২২. تفسير الدر المنثور الجلد الاول ৫৬)
অর্থঃ- “হযরত আদম
আলাইহিস্ সালাম নয় অথবা দশ ঘটিকায় জান্নাত হতে বের হয়ে আসেন। তখন তাঁর হাতে ছিল
জান্নাতী গাছের একটি শাখা বা ডাল এবং মাথায় ছিল জান্নাতী গাছের পাতায় তৈরি তাজ (যা
পাগড়ীর মত) ছিল।”
(তাফসীরে ইবনে কাসীর ১ম জিঃ ১২২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
দুররে মানসূর ১ম জিঃ ৫৬ পৃষ্ঠা)
হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম দুনিয়ায় আসার সময় মাথায় যে জান্নাতী গাছের পাতায় তৈরি
তাজ বা পাগড়ী মোবারক ছিল,
তার প্রমাণ নিম্নোক্ত হাদীস শরীফটিতেও পাওয়া যায়-
[৮৩]
“হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওওয়াত প্রকাশের পর আল্লাহ্ পাক-এর আদেশ
হল পৃথিবীর অমুসলিম বাদশাহদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিন। অতঃপর হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্র উপর ঈমান গ্রহণের জন্য পত্রাবলী লিখে
তাতে নিজের সিলমহর লাগিয়ে খাইবরের ইহুদীদের নিকট পাঠিয়েছিলেন। খাইবরের ইহুদীগণ
তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলিম হযরত আব্দূল্লাহ্ ইবনে সালাম রদিয়াল্লাহু আনহু (ইসলাম
গ্রহণের পূর্বে যার নাম ছিল আশ্শামাবিল) এর নিকট হযরত নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর চিঠি মোবারক পেশ করল। চিঠি পড়ে তারা এ সিদ্ধান্তে আসলো যে, আমরা
তাঁকে তাওরাত কিতাব থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন করব। যদি তিনি সঠিক জাওয়াব দিতে পারেন, তবে
তাঁকে নবী হিসেবে মানব। অতঃপর আশ্ শামাবিল অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম
রদিয়াল্লাহু আনহু কিছু লোক নিয়ে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
নিকট আসলে, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছিল
এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশে ঐসব প্রশ্নাবলী
এবং উত্তরসমূহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানিয়ে দিলেন।
প্রশ্নাবলীর মধ্যে একটি প্রশ্ন এরুপ ছিল যে, বেহেশ্ত থেকে জমিনে আসার সময় হযরত
আদম আলাইহিস্ সালাম-এর শরীরে কোন পোশাক ছিল? তার উত্তর এই ছিল যে, হযরত আদম
আলাইহিস্ সালাম বেহেশ্তের বৃক্ষের তিনটি পাতায় আবৃত ছিলেন। তার মধ্যে একটি চাদরের
মত, একটি লুঙ্গির মত এবং অপরটি ইমামাহ্ বা পাগড়ী মত ছিল।”
হযরত ইদ্রীস আলাইহিস্
সালাম-
এর ইমামাহ্ বা পাগড়ী
মোবারক
আল্লাহ্ পাক -এর নবী হযরত ইদরীস আলাইহিস্ সালাম-এর মর্যাদা সম্পর্কে মহান
আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে বলেন,
واذكر فى الكتاب ادريس انه كان صديقا نبيا ورفعناه مكانا عليا- سورة مريم (৫৬ – ৫৭)
অর্থঃ- “স্বরণ
করুন! কুরআন শরীফে হযরত ইদ্রীস আলাইহিস্ সালামকে, তিনি ছিলেন একজন সত্যবাদী নবী। আর
আমি তাঁকে উচ্চে উন্নীত করেছিলাম।” (সূরা মারইয়াম/৫৬-৫৭)
[৮৪]
উল্লেখিত আয়াত শরীফ থেকে জানা যায় যে, হযরত ইদ্রীস আলাইহিস্ সালাম একজন
মর্যাদা সম্পন্ন নবী ছিলেন। সেই হযরত ইদ্রীস আলাইহিস্ সালাম জানাযার নামাযের সময়
যেই ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারক বাঁধতেন, তাতে নিম্ন বাক্যটি লিপিবদ্ধ থাকত,
السعيد من نظر لنفسه وشفاعته عند ربه اعماله الصالحة (قصص القران الجلد الاول ص ৮৭)
অর্থঃ- “ভাগ্যবান
সেই ব্যক্তি যে নিজের নফসের প্রতি দৃষ্টি রাখে। আর পরওয়ারদিগারের (আল্লাহ্ পাক-এর)
কাছে মানুষের সুপারিশকারী হলো তাদের নেক আমলসমূহ।” (ক্বছাছুল কুরআন ১ম খন্ড ৮৭
পৃষ্ঠা)
(অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment