কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল ও আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ১৩ নং )


কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল ও আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
গবেষণা কেন্দ্র
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
            [সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর ১৯তম ফতওয়া হিসেবে ইমামাহ্ বা  পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটিশেষ করতে পারায় মহান আল্লাহ্  পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]
ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল ও
তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া দেয়ার কারণ
            সুন্নতের মূর্ত প্রতীক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শেরেকী ও বিদ্য়াতের মুলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে, তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ করা হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমল ইসলাহ্ করনে একান্ত আবশ্যক।
            এ ধারাবাহিকতায় মাসিক আল বাইয়্যিনাতেইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার পেছনেও একই কথা। কারণ অধিকাংশ মুসলমানই পাগড়ীর সঠিক আহ্কাম ও ফযীলত সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। যার ফলে তারা পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে যেরূপ ব্যর্থ, তদ্রুপ পাগড়ী পরার ন্যায় একখানা গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ দায়িমী সুন্নত পালনেও ব্যর্থ। যা অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেজামন্দী হাছিলের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়।
            এছাড়া অনেকে পাগড়ীকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার কারণে পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিকে ঠাট্টা বা বিদ্রুপ করে থাকে। অথচ এটা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কেননা আক্বাইদের ইমামগণের মতে শুধু পাগড়ী নয় বরং যে কোন সুন্নতের অবজ্ঞাই কুফরীর কারণ। এ প্রসঙ্গে আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ আছে যে, اهانة السنة كفر
অর্থঃ- সুন্নতের অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
 পাগড়ী পরিধান করা নামাযের বাইরে ও ভিতরে উভয় অবস্থায়ই সুন্নত ও ফযীলতের কারণ। যেমন, নামাযের মধ্যে পাগড়ী পরিধান করার ফযীলত সম্পর্কে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে,
ان ركعتين مع العمامة افضل من سبعين ركعة بدونها.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই পাগড়ী পরিধান করে দুরাকায়াত নামায আদায় করা, পাগড়ী ছাড়া ৭০ রাকায়াত নামায আদায় করার চেয়ে অধিক ফযীলতপূর্ণ।” (হাশিয়ায়ে শামাইলুত্ তিরমিযী/৮)
            আর নামাযের বাইরে পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে হাদীস শরীফের সহীহ্ কিতাব তিরমিযী শরীফেরহাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
ان لبس العمامة سنة.
অর্থঃ- নিঃসন্দেহে পাগড়ী পরিধান করা (দায়িমী) সুন্নত।”(হাশিয়ায়ে শামাইলুত্ তিরমিযী/৮)
            পাগড়ীর উল্লিখিত ফযীলত থেকে যেন উম্মত মাহরুম না হয়, সে জন্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উম্মতদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে,
عليكم بالعمائم فانها سيماء الملئكة.
অর্থঃ- তোমাদের জন্যে পাগড়ী অবধারিত, কেননা তা ফেরেশ্তাগণের নিদর্শন স্বরূপ।” (মিশকাত শরীফ/৩৩৭, ফাইদুল ক্বদীর ৪র্থ জিঃ ৪৫৪ পৃষ্ঠা, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী ৫ম জিঃ ১৭৬ পৃষ্ঠা)
মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- হে হাবীব (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর ভালবাসা চাও, তবে আমাকে (আমার সুন্নতকে) অনুসরণ কর, তবেই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল গুণাহ্-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান/৩১) অতএব বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামাযের ভিতরে ও বাইরে পাগড়ীর মত দায়িমী সুন্নতের আমলের দ্বারা বান্দা অবশ্যই মহান  আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী লাভ করতে পারবে। অথচ আজকাল অনেকেই পীর, ছুফী, দরবেশ, মুফতী, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, আল্লামা, আশেকে রসূল কত কি দাবি করে। কিন্তু পাগড়ীদায়িমীভাবে পরিধান করা তো দূরের কথাই নামাযের সময়ও পরিধান করেনা।

ইমামাহ বা পাগড়ীর আনুষঙ্গিক মাসয়ালা-মাসায়েল ও হুকুম-আহকাম

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের
আদব ও সুন্নত তরীক্বা
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তিনি হচ্ছেন প্রত্যেকের জন্য প্রত্যেক আমলের ব্যাপারে আদর্শ স্বরূপ। তাই পাগড়ী পরিধানের ব্যাাপারেও উনারই তরীক্বা অনুসরণ-অনুকরণ করে সে অনুযায়ী পাগড়ী বাঁধতে হবে। নি¤œ পাগড়ী পরিধানের সুন্নত তরীক্বা এবং সে সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহ বর্ণিত হলো-
প্রতিটি কাজ যেরূপ তাসমিয়াপাঠ করে করা সুন্নত তদ্রুপ ইমামাহ বা পাগড়ী বাঁধার সময়ও তাসমিয়াপাঠ করা সুন্নত। যেমন, এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে,
১২১৩-১২১৪
بسم الله الرحمن الرحيم.
(বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম) বলে পাগড়ী পরা সুন্নত।” (সিফরুস সায়াদাত, যুরকানী ৬ষ্ঠ জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠা)
[১২১৫]
পাগড়ী সূতী কাপড়ের হওয়া উত্তম (সুন্নত)। (শামাইলুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
[১২১৬]
ওজুর সহিত ইমামাহ বা পাগড়ী বাঁধা উত্তম (সুন্নত)। (হুজ্জাতুত তাম্মাহ ফী লুবসিল ইমামাহ ৫৬ পৃষ্ঠা)
[১২১৭]
ক্বিবলামুখী হয়ে পাগড়ী বাঁধা উত্তম (সুন্নত)। (হুজ্জাতুত তাম্মাহ ফী লুবসিল ইমামাহ ৫৬ পৃষ্ঠা)
[১২১৮-১২২১]
পাগড়ী ডান দিক থেকে বাঁধা শুরু করা সুন্নত। কেননা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক কাজ ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী)
[১২২২-২১২৩]
            ইমামাহ্ বা পাগড়ী বাঁধার সময় কোন বক্রতা বা অসৌন্দর্য দৃষ্টিগোচর হলে তা আয়না দেখে ঠিক করে নেয়া আফযল। (কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ১৯৬ পৃষ্ঠা, হুজ্জাতুত্ তাম্মাহ্ ফী লুবসিল ইমামাহ্ ৫৬ পৃষ্ঠা)
ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান
করে দুয়া পাঠ করা সুন্নত
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন জামা ও পাগড়ী পরিধান করে দুয়া পাঠ করতেন। যেমন, হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
[১২২৪-১২৪০]
عن ابى سعيدن الخدرى رضى الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا استجد ثوبا سماه باسمه اما قميصا اوعمامة ثم يقول اللهم لك الحمد انت كسوتنيه اسئالك من خيره وخير ما صنع له واعوذ بك من شره وشر ما صنع له. (ابو داؤد الجلد الثانى ص ২০২- بذل المجهود المجلد السادس ص৩৯- عون المعبود الجلد الرابع ص৭৪- ترمذى الجلد الاول ص২০৯- تحفة الاحوذى المجلد الخامس ص৪৬০- عارضة الاحوذى الجزء السابع ص ২৬৭- شمائل الترمذى ص ৬- جمع الوسائل الجزء الاول ص ১৩৯- شمائل بشرح المناوى الجزء الاول ص ১৩৯ خصائل نبوى صلى الله عليه وسلم ص ৫২ مسند احمد بن حنبل الجلد الثالث ص ৩০، ৫০ مشكوة ص ৩৭৫- مرقاة الجلد الشامن ص ২৫২- شرح الطيبى الجلد الثامن ص২১৭ التعليق الصبيح الجزء الرابع ص ৩৮৯- اشعة اللمعات الجلد الثالث ص৫৪৫- مظاهر حق جلد سوم ص ৫৩৫)
অর্থঃ- হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নতুন কাপড় পরিধান করতেন। তখন তার জামা অথবা পাগড়ী ইত্যাদি উল্লেখ করে এই দোয়া পাঠ করতেন।
اللهم لك الحمد انت كسوتنيه اسألك من خيره وخير ما صنع له واعوذ بك من شره وشر ما صنع له.
অর্থঃ- আয় আল্লাহ্ পাক! সমস্ত প্রশংসা আপনারই, আপনিই আমাকে এই কাপড় পরিধান করিয়েছেন। আমি আপনার কাছে এর কল্যাণ এবং ঐ সমস্ত কল্যাণ কামনা করছি, যে উদ্দেশ্যে একে তৈরি করা হয়েছে। অনুরূপভাবে এর অকল্যাণ এবং ঐ সমস্ত অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যে উদ্দেশ্যে তা তৈরি করা হয়েছে।
             (আবু দাউদ ২য় জিঃ ২০২পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ জিঃ ৩৯ পৃষ্ঠা, আউনুল মাবুদ ৪র্থ জিঃ ৭৪ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ ১ম জিঃ ২০৯পৃষ্ঠা, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম জিঃ ৪৬০ পৃষ্ঠা, আরিদাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম জিঃ ২৬৭ পৃষ্ঠা, শামাইলুত্ তিরমিযী ৬পৃষ্ঠা, জামউল ওয়াসাইল ১ম জিঃ ১৩৯ পৃষ্ঠা, শামাইল বি শরহিল্ মানাবী ১ম জিঃ ১৩৯ পৃষ্ঠা, খছাইলে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৫২ পৃষ্ঠা, মুসনাদু আহমদ ইবনে হাম্বল ৩য় জিঃ ৩০,৫০ পৃষ্ঠা, মিশকাত ৩৭৫ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৮ম জিঃ ২৫২ পৃষ্ঠা, শরহুত তীবী ৮ম জিঃ ২১৭ পৃষ্ঠা, আত্ তালীকুছ ছবীহ্ ৪র্থ জিঃ ৩৮৯ পৃষ্ঠা, আশ্য়াতুল্ লুময়াত ৩য় জিঃ ৫৪৫ পৃষ্ঠা, মুযাহিরে হক্ব ৩য় জিঃ ৫৩৫ পৃষ্ঠা)
[১২৪১]
নতুন পাগড়ী হলে তা পরিধান করে দুয়া পড়া সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। (যুরকানী ৬ষ্ঠ জিঃ, ২০৮ পৃষ্ঠা)
নতুন পাগড়ী জুমুয়ার দিন থেকে
পরিধান শুরু করা সুন্নত
[১২৪২]
            নতুন পাগড়ী জুমুয়ার দিন থেকে শুরু করা সুন্নত। (যাদুল্ মায়াদ)
[১২৪৩-১২৪৭]
عن انس رضى الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا استجد ثوبا لبس يوم الجمعة وكذا رواه الخطيب والبغوى فى شرح السنة فالمعنى اذا اراد ان يلبس ثوبا جديدا لبسه يوم الجمعة. (تحفة الاحوذى جص ৪৬১، شرح السنة للبغوى جص ১৭৪، شرح الطيبى جص২১৭، العلل المتناهية لابن الجوزى جص ৬৮২، جمع الوسائل جص ১৩৯)
অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন কাপড় শুক্রবার দিন পরিধান শুরু করতেন।
            খতীব ও ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা বলেন, অর্থাৎ কেউ যদি নতুন পোশাক (কামীছ, ইমামাহ্ ইত্যাদি) পরিধান করতে চায় তবে যেন জুমুয়ার দিন থেকে পরিধান করা শুরু করে।
            (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪৬১ পৃষ্ঠা, শরহুস্ সুন্নাহ্ লিল বাগবী ৬ষ্ঠ জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠা, শরহুত্ ত্বীবী ৮ম জিঃ ২১৭ পৃষ্ঠা, আল্ ইলালুল্ মুতানাহিয়া লিইবনিল জাওযী ২য় জিঃ ৬৮২ পৃষ্ঠা, জামউল ওয়াসাইল  ১ম জিঃ ১৩৯পৃষ্ঠা)
ইমামাহ্ বা পাগড়ী দাঁড়িয়ে বাঁধা সুন্নত
[১২৪৮-১২৫০]
            ইমামাহ্ বা পাগড়ী দাঁড়িয়ে বাঁধাই খাছ সুন্নত ও আদব। আর বসে বসে পাগড়ী বাঁধা সুন্নত ও আদবের খিলাফ। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে,
قال صاحب المدخل وعليك ان تسرول قاعدا وتتعمم قائما. (مرقاة جص২৫০، جمع الوسائل جص২০৪، المدخل جص ১০৬)
অর্থঃ- মাদখালের মুছান্নিফ বলেন, তোমার জন্য সেলোয়ার বসে পরা এবং পাগড়ী দাঁড়িয়ে বাঁধা অপরিহার্য।
(মিরকাত ৮ম জিঃ ২৫০ পৃষ্ঠা, জামউল ওয়াসাইল ১ম জিঃ ২০৭ পৃষ্ঠা, আল মাদখাল ১ম জিঃ ১০৬ পৃষ্ঠা)
[১২৫০-১২৫২]
            হাফিয বুরহানুদ্দীন নাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি কালাইদুল ইকয়াননামক কিতাবে উল্লেখ করেন যে, “বসে পাগড়ী বাঁধা এবং দাঁড়িয়ে সেলোয়ার পরিধান দারিদ্রতা ডেকে আনে এবং মেধা শক্তি দুর্বল করে দেয়।
             (যুরকানী ৬ষ্ঠ জিঃ ২৫৮ পৃষ্ঠা, গিযাউল আলবাব ২য় জিঃ ২৫২ পৃষ্ঠা)
টুপির উপর পাগড়ী পরা সুন্নত
            ইমামাহ্ বা পাগড়ীর নিচে টুপি পরা সুন্নত। আমরা মুসলমানগণ টুপিসহ পাগড়ী পরিধান করি। আর মুশরিকরা টুপি ছাড়া পাগড়ী পরিধান করে থাকে। যেমন, কিতাবে বর্ণিত আছে যে,
[১২৫৪-১২৭৪]
عن ابى جعفر بن محمد بن على بن ركانة عن ابيه ان ركانة صارع النبى صلى الله عليه وسلم فصرعه النبى صلى الله عليه وسلم قال ركانة وسمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول فرق ما بيننا وبين المشركين العمائم على القلانس. (ابو داود شريف جص ২০৯، بذل المجهود جص৫২، عون المعبود جص ৯৬-৯৫ شرح ابى داؤد لبدر الدين العينى ترمذى شريف جص ২১০، تحفة الاحوذى جص ৪৮২، عارضة الاحوذى جص ২৭৯، فتح البارى ج১০ ص ২৭৩، عمدة القارى ج২১ ص৩০৮، ارشاد السارى جص ৪২৮، شعب الايمان للبيهقى جص ১৭৫، مشكوة ص ৩৭৪، مرقاة جص ২৫০، شرح الطيبى جص ২১৬، التعليق الصبيح جص ৩৮৮، اشعة اللمعات جص ৫৪৫، تنظيم الاشتات جص ১৬৭، مراة المناجيح جص ১০৫، درس مشكوة جص ১৫৫، جمع الوسائل جص ২০৭، نيل الاووطار جص ১১২)
অর্থঃ- হযরত আবূ জাফর ইবনে মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে রুকানা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই রুকানা নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কুস্তি করেছিলেন এবং নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাঁর সাথে কুস্তি করেছিলেন। সেই রুকানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন- আমাদের (মুসলমানগণের) ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে টুপির উপর পাগড়ী পরিধান। (অর্থাৎ আমরা মুসলমানগণ টুপিসহ পাগড়ী পরিধান করি আর মুশরিকরা টুপি ছাড়া শুধু পাগড়ী পরিধান করে)।
(আবূ দাউদ শরীফ ২য় জিঃ ২০৯ পৃষ্ঠা, বযলুল মাযহুদ ৬ষ্ঠ জিঃ ৫২ পৃষ্ঠা, আউনুল মাবুদ ৪র্থ জিঃ ৯৫ ও ৯৬ পৃষ্ঠা, শরহু আবী দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী, তিরমিযী শরীফ ১ম জিঃ ২১০ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪৮২ পৃষ্ঠা, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী ৭ম জিঃ ২৭৯ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ১০ম জিঃ ২৭৩ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী ২১তম জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী ৮ম জিঃ ৪২৮ পৃষ্ঠা, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী ৫ম জিঃ ১৭৫ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ৩৭৪ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৮ম জিঃ ২৫০ পৃষ্ঠা, শরহুত্ ত্বীবী ৮ম জিঃ ২১৬ পৃষ্ঠা, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ্ ৪র্থ জিঃ ৩৮৮ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল্ লুময়াত ৩য় জিঃ ৫৪৫ পৃষ্ঠা, তানযীমুল্ আশতাত ৪র্থ জিঃ ১৬৭ পৃষ্ঠা, মিরয়াতুল মানাজীহ্ ৬ষ্ঠ জিঃ ১০৫ পৃষ্ঠা, দরসে মিশকাত ৩য় জিঃ ১৫৫ পৃষ্ঠা, জামউল ওয়াসাইল ১ম জিঃ ২০৭ পৃষ্ঠা, নাইলুল আউতার ২য় জিঃ ১১২ পৃষ্ঠা)
            উল্লিখিত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিছীন-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাদের স্ব-স্ব কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
[১২৭৫-১২৭৭]
ومراد الحديث ان المشركين كانوا يعممون على رؤسهم من غير ان يكون تحت العمامة قلنسوة ونحن نعمم على القلنسوة. (بذل المجهود جص ৫২، تنظيم الاشت
اتص ১৬৭، اشعة اللمعات جص৫৪৫)
অর্থঃ- উক্ত হাদীস শরীফের দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, নিশ্চয়ই মুশরিকরা তাদের মাথায় পাগড়ী টুপি ছাড়া পরে থাকে আর আমরা মুসলমানগণ টুপির উপর পাগড়ী পরিধান করে থাকি।” (বযলুল মাযহুদ ৬ষ্ঠ জিঃ ৫২ পৃষ্ঠা, তানযীমুল্ আশতাত ৪র্থ জিঃ ১৬৭ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল লুময়াত ৩য় জিঃ ৫৪৫ পৃষ্ঠা)
অধিকাংশ সময় শুধু টুপি পরিধান
করে থাকা সুন্নতের খিলাফ
            টুপি ছাড়া পাগড়ী পরিধান করা যেরূপ নিষেধ তদ্রুপ পাগড়ী ব্যতীত শুধু টুপি পরে বাইরে যাওয়াও সুন্নতের খিলাফ। আলিমগণ এটাকে বিধর্মীদের নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে যে,
[১২৭৮-১২৮০]
وعن الجزرى قال بعض العلماء السنة ان يلبس القلنسوة والعمامة فاما لبس القلنسوة وحدها فهو زى المشركين. ( مرقاة جص২৫০، عارضة الاحوذى ج، ص ৬৪৪، تحفة الاحوذى جص ৪৮৩، عون المعبود جص ৯৬)
অর্থঃ- ইমাম জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, অনেক উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, টুপি এবং পাগড়ী একই সঙ্গে পরিধান করা সুন্নত। আর শুধু টুপি পরিধান করা মুশরিকদের নিদর্শন।” (মিরকাত ৮ম জিঃ ২৫০ পৃষ্ঠা, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী ৭ম জিঃ ২৪৪ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪৮৩ পৃষ্ঠা)
            মূলত পাগড়ী ব্যতীত শুধু টুপি পরিধান করার প্রচলন ইয়েমেনবাসীদের থেকে শুরু হয়। যেমন, এ প্রসঙ্গে মিরকাতশরীফের ৮ম জিঃ ২৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
وكذا المبتدعة فى بعض البلدان- لكن صار شعار لبعض مشائخ اليمن-
অর্থঃ-অনুরুপ কোন কোন শহরের বিদ্য়াতীরা শুধু টুপি পরিধান করত। তবে ইহা ইয়েমেনের কিছু সংখ্যক (বিদয়াতী) মাশায়েখের নিদর্শন হিসেবে গণ্য হয়।
ইমামাহ্ বা পাগড়ী বাঁধার সুন্নত তরীক্বা
[১২৮১-১২৯০]
رواية ابى عبد السلام عن ابن عمر رضى الله عنهما قال قلت لابن عمر كيف كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يعتم؟ قال كان يدير كور العمامة على رأسه ويغرزها من ورائه ويرخى له ذوابة بين كتفيه. (عمدة القارى ج২১ ص৩০৮- ارشاد السارى جص৪২৮- تحفة الاحوذى جص৪১২-৪১৩- جمع الوسائل جص২০৬- مرقاة جص২৪৯- التعليق الصبيح جص৩৮৮ شعب الايمان للبيهقى جص১৭৪- الزرقانى جص২৭৬- اللباس والزينة ص১৩৪- مجمع الزوائد جص১২০)
অর্থঃ- হযরত আবু আব্দুস্ সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (আবু আব্দুস্ সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে পাগড়ী বাঁধতেন? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাগড়ীর একটি প্রান্ত মাথা মুবারকে পেঁচাতেন এবং তাঁরই শেষ প্রান্ত পিছনে উপরে গুঁজে দিতেন। আর পাগড়ীর শামলা উভয় কাঁধের মাঝখানে ঝুলিয়ে রাখতেন।
(উমদাতুল কারী ২১জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী ৮ম জিঃ ৪২৮ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১২ ও ৪১৪ পৃষ্ঠা, জামউল ওয়াসাইল ১ম জিঃ ২০৬ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৮ম জিঃ ২৪৯ পৃষ্ঠা, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ ৪র্থ জিঃ ৩৮৮ পৃষ্ঠা, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী ৫ম জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠা, আয্ যুরক্বানী ৬ষ্ঠ জিঃ ২৭৬ পৃষ্ঠা, আল্ লিবাসু ওয়ায্ যীনাহ্ ১৩৪ পৃষ্ঠা, মাজমাউয্ যাওয়াইদ ৫ম জিঃ ১২০ পৃষ্ঠা)
সিজদার স্থানকে পেঁচ থেকে মুক্ত রাখা
            পাগড়ী বাঁধার সময় সিজদার স্থানকে অবশ্যই উন্মুক্ত রাখতে হবে। কেননা, আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক পাগড়ীর উপর সিজদা করা মাকরূহ। আর এর দলীল হচ্ছে নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ
[১২৯০]
عن نافع ان ابن عمر كان يكره ان يسجد على كور عمامته حتى يكشفها. (المصنف لعبد الرزاق جص৪০১)
অর্থঃ- হযরত ইমাম নাফেরহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তাঁর পাগড়ীর পেঁচের উপর সিজদাহ করতে অপছন্দ (মাকরূহ মনে) করতেন। যতক্ষণ না (ললাট বা কপালকে) পেঁচ হতে উন্মুক্ত করা না হত।” (আল মুছান্নাফু লি আব্দির রায্যাক ১ম জিঃ ৪০১ পৃষ্ঠা)
ইমামাহ্ বা পাগড়ী শক্ত বা
মজবুত করে বাঁধা সুন্নত
            পাগড়ী মজবুত করে বাঁধা সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। যাতে সহজে খুলে না যায়। যেমন, হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
[১২৯২-১৯৯৯]
عن انس بن مالك رضى الله عنه قال رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يتوضأ وعليه عمامة قطرية فادخل يده من تحت العمامة فمسح مقدم رأسه فلم ينقض العمامة. (ابو داؤد الجلد الاول ص ২২- بذل المجهود الجلد الاول ص ৮৮- عون المعبود الجزء الاول ص৫৬- شرح ابى داؤد لبدر الدين العينى المجلد الاول ص ৩৪৬- معالم السنن الجزء الاول ص৫০ ابن ماجة ص৪১- فتح المنان الجلد الرابع ص ২৪৭- اخلاق النبى صلى الله عليه وسلم)
অর্থঃ-হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওযু করতে দেখেছি যখন তাঁর মাথা মুবারকে কাতারের পাগড়ী বাঁধা ছিল। অতঃপর তিনি তাঁর হাত মুবারক পাগড়ীর নীচ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে মাথার সম্মুখভাগ মাসেহ করলেন। কিন্তু এতে পাগড়ী ভেঙ্গে যায়নি।
(আবু দাউদ শরীফ ১ম জিঃ ২২ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ১ম জিঃ ৮৮ পৃষ্ঠা, আউনুল মাবুদ ১ম খন্ড ৫৬ পৃষ্ঠা, শরহু আবী দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী ১ম জিঃ ৩৪৬ পৃষ্ঠা, মায়ালিমুস্ সুনান ১ম খন্ড ৫০ পৃষ্ঠা, ইবনে মাজাহ শরীফ ৪১ পৃষ্ঠা, ফতহুল মান্নান ৪র্থ জিঃ ২৪৭ পৃষ্ঠা, আখলাকুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
গোলাকার করে মাথার উপরিভাগকে
ফাঁকা রেখে পাগড়ী বাঁধা মাকরূহ্
            ইমামাহ্ বা পাগড়ী সুন্নত তরীক্বা অনুসারে বাঁধা কর্তব্য। যেমন, পাগড়ী বাঁধার একটি সুন্নত তরীক্বা হচ্ছে, পাগড়ী বাঁধার সময় তা একটু লম্বা করে বাঁধতে হবে। যাতে কপালের উপরিভাগে চুল গজানোর স্থান থেকে শুরু করে পিছনে কানের নীচ পর্যন্ত স্থান ঢেকে নেয় এবং মাথার চুল দেখা না যায়। এর বিপরীত গোলাকার করে এবং উপরি অংশ ফাঁকা রেখে বাঁধা মাকরূহ।
যেমন, ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে,
[১৩০০]
ويكره ان يصلى معتجرا لمأ روى عن النبى صلى الله عليه وسلم انه نهى عن الاعتجار. (بدائع الصنائع جص২১৬)
অর্থঃ- তিজার (পাগড়ী গোলাকার করে বেঁধে মাথার উপরি অংশকে সম্পূর্ণ খোলা রাখাকে ইতিজার বলা হয়) এর সাথে নামায আদায় করা মাকরূহ। যেহেতু বর্ণিত আছে যে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিজার করতে নিষেধ করেছেন।
(বাদাইউস্ সানায়ে ১ম জিঃ ২১৬ পৃষ্ঠা)
[১৩০১-১৩০৩]
ويكره الاعتجار وهو ان يكور عمامته ويترك وسط رأسه مكشوفا كذا فى التبين ... وهو يكره خارج الصلاة ايضا هكذا فى البحر الرائق. ( الفتاوى العالمكيرية جص১০৬، التبيين، البحر الرائق)
অর্থঃ- পাগড়ী বাঁধার সময় ইতিজার করা মাকরূহ। ইতিজার হচ্ছে, পাগড়ী গোলাকার করে বেঁধে মাথার উপরি অংশকে সম্পূর্ণ খোলা রাখা। তাবয়ীনে অনুরূপ রয়েছে। এটা শুধু নামাযের মধ্যে মাকরূহ্ নয় বরং নামাযের বাইরে (সব সময়ের জন্য) মাকরূহ্। অনুরূপভাবে আল্ বাহরুর রাইক নামক কিতাবে উল্লেখ আছে।
(আল্ ফাতাওয়াল্ আলমগীরিয়া ১ম জিঃ ১০৬ পৃষ্ঠা, আত্ তাবয়ীন, আল বাহরুর রাইক)
[১৩০৪]
ويكره ان يصلى وهو معتجر وهو ان يشد العمامة حول رأسه ويدع هامته كما يفعله الشطار. (خلاصة الفتوى جص৫৭)
অর্থঃ- তিজারের সাথে নামায আদায় করা মাকরূহ্। ইতিজার হচ্ছে, মাথার চারদিকে গোলাকার করে পেঁচিয়ে মাথার উপরিঅংশ সম্পূর্ণ খোলা রেখে পাগড়ী বাঁধা। যে রকমভাবে দুষ্ট ও ফাঁকিবাজ লোকেরা বেঁধে থাকে।
(খুলাছাতুল ফতওয়া ১ম জিঃ ৫৭ পৃষ্ঠা)
            উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, গোলাকার করে এবং মাথার উপরিঅংশ খোলা রেখে পাগড়ী বাঁধা মাকরূহ। যা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন।
            দিস্তারবন্দী তথা পাগড়ী বেঁধে দেয়া সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
            বর্তমানে আমাদের দেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহে মাদ্রাসায় ইল্ম শিক্ষা সমাপ্তির নিদর্শনস্বরূপ যে দিস্তারবন্দীর প্রচলন দেখা যায়, মূলতঃ তা সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্তর্ভূক্ত। কেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিজের হাত মুবারক দ্বারা পাগড়ী বেঁধে দিয়েছিলেন। নিম্নে এ সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহ্ উল্লেখ করা হলো-
[১৩০৫-১৩৩৩]
عن عبد الله بن بشر رضى الله عنه قال بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم على بن ابى طالب رضى الله عنه يوم خيبر فعممه بعمامة سوداء. (عمدة القارى ج২১ ص ৩০৭ نيل الاوطار جص১১২)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে বিশর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাইবার যুদ্ধের দিবস (খাইবারের উদ্দেশ্যে) হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে পাঠানোর সময় তাঁকে কালো পাগড়ী বেঁধে দেন। 
(উমদাতুল ক্বারী ২১ জিঃ ৩০৭ পৃষ্ঠা, নাইলুল আউতার ২য় জিঃ ১১২ পৃষ্ঠা, অনুরূপ উমদাতুল ক্বারী ২১তম জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১২ পৃষ্ঠা, আল্ মুনতাযাম ফী তারীখিল মুলুকি ওয়াল উমাম ৩য় জিঃ ২৩২ পৃষ্ঠা, ত্ববাক্বাতু ইবনে সাদ ১ম ও ২য় জিঃ ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠা, আবু দাউদ ২য় জিঃ ২০৯ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ জিঃ ৫২ পৃষ্ঠা, আউনুল মাবুদ ৪র্থ জিঃ ৯৬ পৃষ্ঠা, শরহু আবী দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী, মিশকাত শরীফ ৩৭৪ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৮ম জিঃ ২৪৯ পৃষ্ঠা, শরহুত ত্বীবী ৮ম জিঃ ২১৬ পৃষ্ঠা, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ্ ৪র্থ জিঃ ৩৮৮ পৃষ্ঠা, লুময়াত ৩য় জিঃ ৫৪৪ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল্ লুময়াত ৩য় জিঃ ৫৪৪ পৃষ্ঠা, মুযাহিরে হক্ব ৩য় জিঃ ৫৩৪ পৃষ্ঠা, মিরয়াতুল্ মানাজীহ্, শুয়াবুল ঈমান লিল্ বাইহাক্বী ৫ম জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠা, আল্ লিবাসু ওয়ায্ যীনাহ্ ১২৬ পৃষ্ঠা, মাজমাউয্ যাওয়াইদ ৫ম জিঃ ১২০ পৃষ্ঠা, আল্ আওসাত, আল্ মুনতাযাম ফী তারীখিল মুলূকি ওয়াল উমাম ৩য় জিঃ ২৫৯ পৃষ্ঠা, আল্ মাগাযী লিল্ ওয়াকিদী ২য় জিঃ ৫৬০ পৃষ্ঠা, ত্ববাকাতু ইবনে সাদ ১ম ও ২য় জিঃ ৬৪ পৃষ্ঠা, তারীখুত্ ত্ববারী ২য় জিঃ ৬৪২ পৃষ্ঠা, আল্ কামিল ২য় জিঃ ৯৩ পৃষ্ঠা, সীরাতু ইবনে হিশাম ১২০ পৃষ্ঠা, আশারায়ে মুবাশ্শারাহ ২৩০-২৩১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)           
            উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহ্র মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, দিস্তারবন্দী তথা পাগড়ী বেঁধে দেয়া সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যেহেতু আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনেককেই বিশেষ করে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে পাগড়ী বেঁধে দিয়েছিলেন। তাই দিস্তারবন্দী তথা পাগড়ী বেঁধে দেয়া খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।
[১৩৩৪]
            এজন্য আবূ দাউদ শরীফেরহাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
عممنى رسول الله صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “(হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন) আমাকে রসূলুল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাগড়ী বেঁধে দিয়েছেন।
এই হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে,
[১৩৩৫]
هذا عندى اصل فى اللباس الخرقة. (حاشية ابى داؤد جص২০৯)
অর্থঃ- “(হাশিয়াকারক বলেন) আমার নিকট দিস্তারবন্দী প্রমাণিত হওয়ার জন্য এই হাদীস শরীফটি দলীল হিসেবে যথেষ্ট।” (হাশিয়ায়ে আবূ দাউদ ২য় জিঃ ২০৯ পৃষ্ঠা)
মাথার রুমাল, গামছা, তোয়ালে বা
কোন কাপড়ের টুকরা দিয়ে
পাগড়ীর সুন্নত আদায় হবেনা
            মাথার রুমাল, গামছা, তোয়ালে বা কোন কাপড়ের টুকরা ইত্যাদি দিয়ে পাগড়ীর মত বাঁধলে তাদ্বারা পাগড়ীর সুন্নত আদায় হবেনা। সুন্নত আদায় না হওয়ার কয়েকটি কারণ পরিলক্ষিত হয়। যেমন,
            ১. দৈর্ঘ্যরে তারতম্যগত কারণঃ পাগড়ীর দৈর্ঘ্য হতে হবে তিন হাত, সাত হাত এবং বার হাত লম্বা। উল্লেখ্য যে, মাথার রুমাল, গামছা, তোয়ালে এবং কাপড়ের টুকরায় পাগড়ীর দৈর্ঘ্যরে পরিমাপ উপস্থিত না থাকায় তা পাগড়ীও হবেনা এবং তাদ্বারা মাথা বাঁধলে পাগড়ী বাঁধার সুন্নতও আদায় হবেনা।
            ২. প্রস্থের তারতম্যগত কারণঃ আর তা হচ্ছে, অর্ধ হাত, এক হাত, দেড় হাত, দুই হাত।
            উল্লেখ্য যে, মাথার রুমাল, গামছা, তোয়ালে ও কাপড়ের টুকরায় একইসঙ্গে পাগড়ীর মত দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের পরিমাপ উপস্থিত না থাকায় তদ্বারা পাগড়ীর সুন্নত আদায় হবেনা।
            ৩. রং-এর তারতম্যঃ পাগড়ী সাদা, সবুজ ও কালো এই তিন রংয়ের হতে হবে। এই তিন রং ব্যতীত অন্যান্য রং যেমন, লাল, কুসূম, হলুদ, জাফরানী ইত্যাদি রংয়ের পাগড়ী হারাম ও মাকরূহ্ তাহরীমী।
            পক্ষান্তরে রুমাল, গামছা, তোয়ালে বা কাপড়ের টুকরায় কোন রংকে নির্দিষ্ট করা হয়নি যদিও রুমাল খাছভাবে সাদাই হবে। উল্লেখ্য, লাল রুমাল পড়া হারাম। আর অধিকাংশ লাল মিশ্রিত থাকলে তা মাকরূহ্ তাহরীমী।
            ৪. ব্যবহারিক তারতম্যঃ পাগড়ীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তা মাথায় বাঁধতে হবে। পাগড়ী মাথায় বাঁধার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন, কিতাবে বর্ণিত আছে যে,
[১৩৩৬]
عمامة سميت بذلك لانها تعمم جميع الراس بالتغطية. (ارشاد السارى جص১০৯)
অর্থঃ- ইমামাহ্কে এজন্য ইমামাহ্ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। কেননা, তাদ্বারা সম্পূর্ণ মাথা শক্তভাবে বাঁধা হয়।” (ইরশাদুস্ সারী ৩য় জিঃ ১০৯ পৃষ্ঠা)
            কিন্তু গামছার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাদ্বারা হাত, মুখ অর্থাৎ শরীর মুছা হবে। তোয়ালের উদ্দেশ্য একই। তাছাড়া তোয়ালে অনেক ভারী ও মোটা হয়ে থাকে। আর কাপড়ের টুকরা দ্বারা পট্টি বা কোন ক্ষত স্থান অথবা কোন প্রয়োজনীয় জিনিস বাঁধা হয়ে থাকে। মাথার রুমাল যদিও মাথায় পরিধানের জন্য খাছ। তারপরেও দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ও রং-এর ব্যাপারে পাগড়ীর সঙ্গে তার পুরোপুরি সাদৃশ্য নেই।
            লক্ষ্যণীয় যে, উল্লিখিত কাপড়সমূহের ব্যবহারগত উদ্দেশ্য পাগড়ীর ব্যবহারগত উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। তাহলে কি করে বলা যেতে পারে যে, রুমাল, তোয়ালে, গামছা দ্বারা পাগড়ীর সুন্নত আদায় হবে? মূলতঃ এগুলো দিয়ে পাগড়ীর সুন্নত আদায় হবেনা।
কেননা, আরবী ভাষায় একটি উছূল বর্ণিত রয়েছে যে,
وضع الشئ فى محله عدلووضع الشئ فى غير محله ضلم.
অর্থাৎ- যে জিনিস যে জন্য তৈরী করা হয়েছে সে কাজে ব্যবহার করাই হচ্ছে ইনছাফ বা আদব। আর তার বিপরীত করাই হচ্ছে জুলুম বা অন্যায়।
            উল্লিখিত কারণসমূহ এবং আরো বিবিধ কারণে গামছা, মাথার রুমাল, তোয়ালে, কাপড়ের টুকরা, লুঙ্গি ইত্যাদি দ্বারা মাথা বাঁধলে তা পাগড়ীও হবেনা, এমনকি পাগড়ীর সুন্নতও আদায় হবেনা।
পুরুষদের জন্য পাগড়ী পরা দায়িমী সুন্নত কিন্তু মহিলাদের জন্য নাজায়েয ও হারাম
            মহান আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
الرجال قومون على النساء بما فضل الله بعضهم على بعض. (نساء ২৩)
অর্থঃ- পুরুষরা মহিলাদের উপর কর্তৃত্বশীল। এজন্য যে, আল্লাহ্ পাক তাদের একজনের উপর অন্যজনের মর্যাদা বা ফযীলত দিয়েছেন।” (সূরা নিসা/৩৪)
            উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ পুরুষদের অনেক বৈশিষ্ট্যের কথা ব্যক্ত করেছেন। তন্মধ্যে অন্যতম একটি হলো যে,
[১৩৩৭]
هم اصحاب اللحى والعمائم. (تفسير مدارك جص৩৮১)
অর্থঃ- তারা (অর্থাৎ পুরুষ জাতি) দাড়ী ও ইমামাহ্ বা পাগড়ী বিশিষ্ট।” (তাফসীরে মাদারিক ১ম জিঃ ৩৮১ পৃষ্ঠা)
            এটা থেকে স্পষ্ট হয় যে, পুরুষ লোকের নিদর্শন হচ্ছে পাগড়ী। যা মহিলাদের নিদর্শন নয়। তাই পুরুষদের জন্য পাগড়ী ছেড়ে দেয়া সুন্নত  পরিপন্থী। আর মহিলাদের জন্য পাগড়ী পরিধান করা শরীয়ত পরিপন্থী। যেমন, হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
[১৩৩৮-১৩৪৩]
عن ابن عباس رضى الله عنه قال لعن النبى صلى الله عليه وسلم المتشبهين من الرجال بالنساء والمتشبهات من النساء بالرجال. (بخارى شريف جص ৮৭৪ فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলা সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষদের উপর এবং পুরুষ সাদৃশ্য গ্রহণকারীনি মহিলাদের উপর লানত বা অভিসম্পাত বর্ষণ করেছেন।
             (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৮৭৪ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারী)
            তাছাড়া আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের জন্য পাগড়ী পরতে নিষেধ করেছেন। আর পুরুষদের জন্য পাগড়ী নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। যেমন, হাদীস শরীফে রয়েছে,
[১৩৪৪]
كان صلى الله عليه وسلم ينهى عن النساء عن لبس العمائم ...... ويقول انما العمائم للرجال.
অর্থঃ- হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদেরকে পাগড়ী পরিধান করতে নিষেধ করেছেন ...। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই পাগড়ী পুরুষদের জন্য নির্ধারিত।
            অত্র হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, পাগড়ী পুরুষদের জন্য দায়িমী সুন্নত। আর মহিলাদের জন্য নাজায়েয বা হারাম।
            উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, তাফসীর শরীফ, ফিক্বাহ্রে কিতাবের দলীল-আদিল্লাহ্ থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, “পুরুষদের জন্য পাগড়ী নির্দিষ্ট। যা তাদের জন্য দায়িমী সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। আর মহিলাদের জন্য পাগড়ী সুন্নত তো নয়ই বরং নাজায়েয ও হারামের অন্তর্ভূক্ত।
পাগড়ীর উপর রুমাল পরিধান করা এবং পাগড়ী ছাড়া রুমাল পরিধান করা উভয়টাই সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
            পাগড়ীসহ অর্থাৎ পাগড়ীর উপর রুমাল পরিধান করা ও পাগড়ী ছাড়া রুমাল পরিধান করা উভয়টাই আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত। অর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই মাথা মুবারকে পাগড়ীর উপর রুমাল পরিধান করতেন এবং পাগড়ী ছাড়াও রুমাল পরিধান করতেন। যেমন, হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
[১৩৪৫-১৩৫৪]
قالت عائشة رضى الله عنها فينا نحن يوما جلوس فى بيتنا فى نحر الظهيرة قال قائل لابى بكر رضى الله عنه هذا رسول الله صلى الله عليه وسلم مقبلا متقنعا. (بخارى شريف جص৮৬৪، فتح البارى ج১০ ص২২৪، عمدة القارى ج২১ ص ৩০৯، ارشاد السارى، تيسير البارى، ابو داؤد شراف ص ৫৬৪، بذل المجهود جص৫৩ : عون المعبود : شرح ابى داؤد لبدر الدين العينى، مسند احمدبن حنبل)
অর্থঃ- হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, একদা দ্বিপ্রহরের সময় আমরা আমাদের গৃহে বসা ছিলাম। তখন একজন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে বললেন যে, ঐ যে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পাগড়ীর উপর) রুমাল পরিধান করে মাথা মুবারক আবৃত করে আগমণ করছেন।
(বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৮৬৪ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ১০ জিঃ ২২৪ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী ২১ জিঃ ৩০৯ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল বারী, আবূ দাউদ শরীফ ৫৬৪ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ জিঃ ৫৩ পৃষ্ঠা, আউনুল মাবূদ, শরহু আবী দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী, মুসনাদু আহমদ ইবনে হাম্বল)
            উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হাদীস শরীফে متقنعا শব্দটি تقنع শব্দ থেকে এসেছে। আর تقنع শব্দের অর্থ হলো,
[১৩৫৫-১৩৫৮]
وضع شيئ الزائد على الرأس فوق العمامة. (حاشية بخارى شريف جص ৮৬৪، فتح البارى ج১০ ص২২৪، عمدة القارى ج২১ ص৩০৯، ارشاد السارى جص ৪২৮)
অর্থঃ- تقنع (তাক্বান্নু) হলো মাথায় পাগড়ীর উপরে অতিরিক্ত একটি কাপড় (রুমাল) পরিধান করা।
(হাশিয়ায়ে বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৮৬৪ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ১০ জিঃ ২২৪ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী ২১ জিঃ ৩০৯ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী ৮ম জিঃ ৪২৮ পৃষ্ঠা)
تقنع শব্দের ব্যাখ্যায় অন্যত্র বলা হয়েছে,
[১৩৫৯-১৩৬১]
تغطية الرأس واكثر الوجه برداء اوغيره. (حاشية بخارى شريف جص৮৬৪، فتح البارى ج১০ ص২২৪، عمدة القارى ج২১ ص৩০৮)
অর্থঃ- মাথা এবং চেহারার অধিকাংশ স্থান কোন চাদর অথবা অন্য কোন কাপড় (রুমাল) দিয়ে ঢেকে রাখা।
(হাশিয়ায়ে বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৮৬৪ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ১০ম জিঃ ২২৪ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী ২১ জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা)
            অন্য হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
[১৩৬২-১৩৬৩]
عائشة رضى الله عنها قالت ما اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم احدا من نسائه الا متقنعا يرخى الثوب على رأسه حياء. (مسند عائشة رضى الله عنها، حاشية ابى داؤد ص ২০৯)
অর্থঃ- হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই তাঁর স্ত্রীগণের কারো নিকট আসতেন তখন (রুমাল দিয়ে) মাথা মুবারক ঢেকে আসতেন। তিনি হায়া বা লজ্জাশীলতার কারণে স্বীয় মাথা মুবারকের উপর কাপড় (রুমাল) পরিধান করতেন।
            (মুসনাদু আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হাশিয়ায়ে আবূ দাউদ ২০৯ পৃষ্ঠা)
            এছাড়া অনেক হাদীস শরীফে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের রুমাল ব্যবহারের কথাও বর্ণনা করা হয়েছে।
            উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহ্ভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, পাগড়ীর উপরে রুমাল পরিধান করা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।
[১৩৬৪-১৩৯৪]
            এছাড়াও বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল বারী, আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, শরাহু আবী দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী, ইবনু মাজাহ্, সুনানুদ্ দারিমী, মুসনাদু আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, মুসনাদু আহমদ ইবনে হাম্বল, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ্, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ্, আল ফতহুর রব্বানী, আর বাঈন ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল মুরশিদুল্ আমীন, নিহায়া, লুগাতুল্ হাদীস, লিসানুল আরব, লুগাতে হিরা, মিছবাহুল লুগাত, মুজামুল ওয়াসীত, কামূছ ইত্যাদি কিতাবে রুমাল পরিধানের কথা উল্লেখ আছে।
দাড়ীবিহীন ছেলেদেরও পাগড়ী
পরিধান করা সুন্নতের আওতাভুক্ত
            অনেকে বলে থাকে, দাড়িবিহীন, কম বয়সী ছেলেদের পাগড়ী পরিধান করা মাকরূহ। তারা যুক্তি দিয়ে থাকে যে, পাগড়ী পরলে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায় আর এতে তার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায় এতে কুচিন্তা, কুভাব এসে থাকে। তাই দাড়িবিহীন ছেলেদের পাগড়ী পরিধান করা অনুচিত বা মাকরূহ।
            আসল কথা হচ্ছে, ছেলেদের পাগড়ী পরিধানে কোন অসুবিধা নেই। কেননা, তা সুন্নতসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি ফযীলতপূর্ণ সুন্নত। সুন্দর দেখালেই যদি পাগড়ী পরিধান করা বাদ দিতে হয় তবে সুন্দর, পরিস্কার, নতুন পোশাক পরিধান করাও বাদ দিতে হবে। কারণ এতেও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায়। যার কারণে দর্শকের কুভাব, কুচিন্তা আসা স্বাভাবিক। বিষয়টি হচ্ছে, পাগড়ী যদি কালো বা সবুজ রংয়ের হয় তাহলে তা দাড়িবিহীন ছেলেদের জন্য মাকরূহ তানযীহী হবে। কারণ এতে বালককে মহিলাদের মত দেখা যায়। যার কারণে পুরুষদের তাদের প্রতি আকর্ষণ হতে পারে এজন্য সবুজ বা কালো পাগড়ী দাড়িবিহীন ছেলেরা পরিধান করবেনা। তারা দাড়ি উঠার পূর্ব পর্যন্ত সাদা রংয়ের পাগড়ী পরিধান করে সুন্নত আদায় করবে।
            আমভাবে সকল প্রকার পাগড়ী ছোটদের জন্য মাকরূহ ও অনুচিত সাব্যস্ত করলে তা হাদীস শরীফের খিলাফ হয়ে যায়। কেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাগড়ী পরিধানের ব্যাপারে যত নির্দেশ দিয়েছেন তাতে ছেলে বা কম বয়সী দাড়িবিহীনদেরকে নির্দেশ থেকে আলাদা করা হয়নি।
            যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
[১৩৯৫-১৪১২]
عن عبادة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم عليكم بالعمائم فانها سيماء الملائكة وارخوها خلف ظهوركم. (مشكوة شريف ص৩৭৭- مرقاة جص ২৬৫- شرح الطيبى جص২২৮- التعليق الصبيح جص ৩৯৫- اشعة اللمعات جص ৫৫৬- مظاهر حق جص ৫৪৩- مرأة المناجيح- تحفة الاحوذى جص ৪১৪- شعب الايمان للبيهقى جص ১৭৬- فيض القدير جص৪৫৪- المعجم الكبير ج১২ ص ২৯৩- جامع المسانيد والسنن ج২৯ ص ৩৮৩- اللباس والزينة ص ১২৭ مجمع الزوائد جص১২০- الكبير ج১২ ص ৩৮৩- الميزان جص ৩৯৬- الضعيفة جص ১১৯- كشف الخفاء ومزيل الالباس جص৬৭)
অর্থঃ- হযরত উবাদা ইবনে সামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের জন্য পাগড়ী পরিধান অবধারিত। কেননা তা ফেরেশ্তাগণের নিদর্শণ স্বরূপ। আর এর (পাগড়ীর) শামলা তোমাদের পিছনে পিঠের উপর ছেড়ে দাও।
(মিশকাত শরীফ ৩৭৭ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৮ম জিঃ ২৬৫ পৃষ্ঠা, শরহুত্ ত্বীবী ৮ম জিঃ ২২৮ পৃষ্ঠা, আত্ তালীকুছ ছবীহ ৪র্থ জিঃ ৩৯৫ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল্ লুময়াত ৩য় জিঃ ৫৫৬ পৃষ্ঠা, মুযাহিরে হক্ব ৩য় জিঃ ৫৪৩ পৃষ্ঠা, মিরয়াতুল মানাজীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১৪ পৃষ্ঠা, শুয়াবুল ঈমান লিল্ বাইহাক্বী ৫ম জিঃ ১৭৬ পৃষ্ঠা, ফাইদ্বুল ক্বদীর ৪র্থ জিঃ ৪৫৪ পৃষ্ঠা, আল মুজামুল কবীর ১২ জিঃ ২৯৩ পৃষ্ঠা, জামিউল্ মাসানীদি ওয়াস্ সুনান ২৯ জিঃ ৩৮৩ পৃষ্ঠ্,া আল্ লিবাসু ওয়ায্ যীনাহ্ ১২৭ পৃষ্ঠা, মাজমাউয্ যাওয়াইদ ৫ম জিঃ ১২০ পৃষ্ঠা, আল কবীর ১২ জিঃ ৩৮৩ পৃষ্ঠা, আল মীযান ৪র্থ জিঃ ৩৯৬ পৃষ্ঠা, আদ্ দ্বঈফাহ ২য় জিঃ ১১৯ পৃষ্ঠা, কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস ২য় জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠা)
            উল্লিখিত হাদীস শরীফটিতে এবং অপরাপর কোন হাদীস শরীফেই পাগড়ী পরিধানের নির্দেশে ছেলে, বালক বা কমবয়সী দাড়িবিহীনদেরকে বাদ দেয়া হয়নি। তাই প্রমাণিত হলো যে, দাড়িবিহীন কম বয়সী বালকদের জন্য পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত ও ফযীলতের কারণ। তবে সতর্কতার জন্য তারা শুধু সাদা রংয়ের পাগড়ী পরিধান করতে পারবে। তাদের জন্য কালো বা সবুজ রংয়ের পাগড়ী পরিধান করা মাকরূহ তানযীহী-এর অন্তর্ভূক্ত।
ইমামাহ্ বা পাগড়ী মওজুদ থাকা স্বত্ত্বেও পাগড়ী ছাড়া নামায আদায় করা মাকরূহ্
ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করা দায়িমী সুন্নত। নামাযের বাইরে যেমন পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত। তেমনি নামাযের ভিতরেও পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত। পাগড়ীসহ নামায আদায় করার অনেক ফযীলত রয়েছে। যার উপর ভিত্তি করে ফিক্বাহ্র কিতাবে- পাগড়ী থাকা স্বত্ত্বেও আলস্য বশতঃ পাগড়ী ছাড়া নামায আদায় করাকে মাকরূহ তাহ্রীমী বলা হয়েছে। যেমন, কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
[ ১৪১৩ ]
وتكره الصلاة حاسرا راسه اذا كان يجد العمامة. (الفتاوى العالمكيرية جص১০৬)
অর্থঃ- পাগড়ী উপস্থিত থাকার পরও পাগড়ী মাথায় না বেঁধে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।
(আল ফাতাওয়াল আলমগীরিয়াহ্ ১ম জিঃ ১০৬)
            উল্লিখিত ইবারত থেকে স্পষ্ট প্রতিভাত হয় যে, “পাগড়ী মওজুদ থাকা সত্ত্বেও পাগড়ী ছাড়া নামায আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।
ইমামাহ্ বা পাগড়ী নিয়ে কাফির,
মুশরিক ও ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্র
            কাফির-মুশরিক ও ইহুদী-নাছারা তথা সমস্ত বিধর্মীরাই মুসলমানগণের শত্রু। যেমন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, الكفر ملة واحدة.
অর্থঃ- “(মুসলমানগণের ক্ষতি সাধনে) সকল কুফরীদল একই দলভূক্ত।
            তাই দেখা যায়, মুসলমানগণের ঈমানের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে তারা সূক্ষ্মভাবে অসম্মানিত ও অবহেলিত করার জন্য অনেক কৌশল অবলম্বন করে থাকে। হাদীস শরীফে রয়েছে, ইমামাহ্ বা পাগড়ী হচ্ছে,
[১৪১৪-১৪১৭]
سيماء الاسلام.
অর্থাৎ- ইসলামের তথা মুসলমানগণের নিদর্শণ।” (উমদাতুল ক্বারী ২১ জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা, তুহফাতুর আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১২পৃষ্ঠা, যুরকানী ৬ষ্ঠ জিঃ ২৭ পৃষ্ঠা, খছাইলে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৭৮ পৃষ্ঠা)
            মুসলমানগণের নিদর্শন সম্মানিত বস্তু পাগড়ীকে অসম্মান ও হেয় প্রতিপন্ন করার উদেশ্যে বিধর্মীরা তাদের ঘোড়ার সহিস  ও হোটেলের চাকর, বয়-বেয়ারাদের মাথায় পাগড়ী উঠিয়ে দেয় যেন মুসলমানগণ পাগড়ীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য মনে করে ঈমানকে নষ্ট করে এবং পাগড়ীর ন্যায় ফযীলতপূর্ণ আমল থেকে বিরত থাকে।
            যেমনিভাবে বিধর্মীরা মুসলমানগণের সম্মানের বস্তু যেমন কাবা শরীফ, মদীনা শরীফ যার মধ্যে রওজা শরীফ অবস্থিত এবং মসজিদ ইত্যাদির ছবি জায়নামাযের মধ্যে এনে দিয়েছে। তাছাড়া চাবির রিং ও ব্রেসলেটের মধ্যে আল্লাহ্ শব্দ,মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শব্দ, রওজা শরীফের ছবি ইত্যাদি দিয়ে থাকে। যাতে করে মুসলমানগণ উল্লিখিত জায়নামাযে নামায আদায় করার সময় পা দিয়ে মাড়ায়, মাটিতে পায়ের নিচে বিছিয়ে রেখে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অসম্মান ও অবজ্ঞা করে নিজেদের ঈমানকে হারায়।
            সুতরাং পাগড়ীর ব্যাপারে ইহুদী-খৃষ্টানদের অপতৎপরতা ও কুটকৌশল এড়িয়ে চলতে হবে। হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে পাগড়ী পরতে বলেছেন সেভাবে পাগড়ী পরতে হবে। পাগড়ী শুধু আলিমগণ বা রাজা-বাদশাহ্গণ পরবে তা নয় বরং প্রত্যেক শ্রেণীর ও প্রত্যেক পদস্থ মুসলমানেরই পাগড়ী পরিধান করা দায়িমী সুন্নত।
সাদা, সবুজ ও কালো রংয়ের পাগড়ী
নিয়ে ভ্রান্তবাদীদের বক্তব্য খন্ডন
            অনেকে বলে থাকে, ১। সাদা পাগড়ী ওহাবী, খারিজীরা পরিধান করে, ২। সবুজ পাগড়ী অতি সুন্নীরা পরিধান করে, আর ৩। কালো পাগড়ী শিয়াদের নিদর্শণ। শিয়ারা কালো পাগড়ী পরিধান করে থাকে। এমনকি কাদিয়ানীরাও কালো পাগড়ী পরিধান করে থাকে। তাই আমরা কোন পাগড়ী পরিধান করিনা!
            এর জাওয়াব হচ্ছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন রংয়ের পাগড়ী পরিধান করেছিলেন, সাদা, সবুজ ও কালো। এখন যদি খারিজী, ওহাবী বা নজদী, শিয়া এবং অন্যান্য বিধর্মী উক্ত রংয়ের পাগড়ী তাদের নিজেদের জন্য খাছ করে নেয় তাহলে কি তা পরিত্যাগ করতে হবে? না, কখনো ত্যাগ করা যাবেনা বরং আমরা আমল করব আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণার্থে। কে পরিধান করলো বা পরিধান করলোনা সেটা দেখার বিষয় নয়। ওহাবী, খারিজীরা সাদা পাগড়ী, অতি সুন্নীরা সবুজ পাগড়ী এবং শিয়া, কাদিয়ানীরা কালো পাগড়ী পরিধান করার কারণে যদি তা পরিত্যাগ করতেই হয় তাহলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ফয়সালা কি হবে?
            (১) দাড়ি রাখা সুন্নত। ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ অনেকেই দাড়ি রাখে। সেজন্য কি মুসলমানদের দাড়ি রাখা ছেড়ে দিতে হবে?
            (২) টুপি পরিধান করা সুন্নত। খারিজী, ওহাবী, কাদিয়ানী, শিয়া, হিন্দু-বৌদ্ধ, ইহুদী-নাছারা এবং অন্যান্য অনেক জাতি টুপি পরিধান করে। যদিও তাদের অনেকেরই টুপি সুন্নত মুতাবিক নয়। তাহলে কি আমাদেরকে টুপির মত একটি খাছ দায়িমী সুন্নতের আমল ছেড়ে দিতে হবে?
            উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোন জাতি, দল, গোত্র মুসলমানগণের শরীয়তের কোন বিষয় আমল করলেই তা মুসলমানদের জন্য তাদের অনুসরণের ছলনা, বাহানা দিয়ে ছেড়ে দেয়া শরীয়তসম্মত হবে না। বরং আমাদের মুসলমানগণকে দেখতে হবে, বিষয়টি শরীয়তসম্মত কিনা। যদি হয় তাহলে তা আমলে বাস্তব রূপ দিতে হবে। নাহক্ব দল এবং অন্য ধর্ম মতাবলম্বীরা তা আমল করুক আর না করুক সে দিকে আমাদের নজর দেয়ার প্রয়োজন নেই।
সহীহ্ হাদীস শরীফের দৃষ্টিতে
ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফযীলত
            ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করা দায়িমী সুন্নত। কেননা, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দায়িমীভাবে পাগড়ী পরিধান করতেন। সেহেতু পাগড়ীর মধ্যে অনেক ফযীলত, মর্যাদা, মর্তবা পরিলক্ষিত হয়। হাদীস শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ্, শরাহ্, তাছাউফ ইত্যাদি কিতাবসমূহে পাগড়ীর বিভিন্ন মুখী ফযীলতের বর্ণনা পাওয়া যায়। নিম্নে পাগড়ীর ফযীলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো হলো-
১। পাগড়ী পরিধানকারীগণের উপর আল্লাহ্ পাক-এর খাছ রহমত এবং ফেরেশ্তাগণের খাছ দোয়া বর্ষণ হয়-  যেমন, এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
[১৪১৮-১৪২৪]
روى الطبرانى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله وملائكته يصلون على صاحب العمائم يوم الجمعة. (بذل المجهود شرح ابى داؤد جص৫১- انوار المحمود جص ৪৪৬- اللباس والزينة ص ১৩৫- مجمع الزوائد جص ১২০، ১২১- الجمعة جص ১৭৬- الميزان جص ২৯৩- كشف الخفاء ومزيل الالباس جص৬৮)
অর্থঃ- ইমাম তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত (তিনি বলেন) নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ্ পাক পাগড়ী (দায়িমীভাবে) পরিধান কারীগণের উপর প্রতি জুমুয়ার দিবসে ছলাত বা খাছ রহমত এবং ফেরেশ্তাগণ খাছ দোয়া বর্ষণ করেন।
            (বযলুল মাজহুদ শরহে আবী দাউদ ৬ষ্ঠ জিঃ ৫১ পৃষ্ঠা, আনওয়ারুল মাহমুদ ২য় জিঃ ৪৪৬ পৃষ্ঠা, আল্ লিবাসু ওয়ায্ যীনাহ্ ১৩৫ পৃষ্ঠা, মাজমাউয্ যাওয়াইদ ৫ম জিঃ ১২০, ১২১ পৃষ্ঠা, আল জুমুয়াহ্ ২য় জিঃ ১৭৬ পৃষ্ঠা, আল মীযান ১ম জিঃ ২৯৩ পৃষ্ঠা, কাশফুল্ খফা ওয়া মুযীলুল্ ইলবাস ২য় জিঃ ৬৮ পৃষ্ঠা)
২। পাগড়ীসহ নামাযের ফযীলতঃ পাগড়ীসহ এক রাকায়াত নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামায অপেক্ষা উত্তম। এ ছাড়াও বিভিন্ন রেওয়ায়েতে  বিভিন্নমূখী ফযীলতের কথা বর্ণিত আছে। সেগুলো হচ্ছে,
[১৪২৫]
روى انه عليه السلام قال صلاة بعمامة افضل من سبعين صلاة بغير عمامة. (مرقاة جص ২৫০)
অর্থঃ- বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পাগড়ীসহ এক ওয়াক্ত নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর ওয়াক্ত নামাযের থেকে উত্তম।
(মিরকাত ৮ম জিঃ, ২৫০ পৃষ্ঠা)
[১৪২৬-১৪২৭]
ان ركعتين مع العمامة افضل من سبعين ركعة بدونها. (حاشية سمائل الترمذى ص، هداسة العباد ص৬৮)
অর্থঃ- নিশ্চয়ই পাগড়ী পরিধান করে দুরাকায়াত নামায আদায় করা, পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামায আদায় করার চেয়ে অধিক ফযীলতপূর্ণ।
(হাশিয়ায়ে শামাইলুত্ তিরমিযী ৮ পৃষ্ঠা, হিদায়াতুল ইবাদ ৬৮ পৃষ্ঠা)
[১৪২৯]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামাযের সওয়াব পাগড়ীসহ এক রাকায়াত নামাযের সমপরিমাণ সওয়াবতূল্য।” (মিরয়াতুল্ মানাজীহ্ ৬ষ্ঠ জিঃ ১০৬ পৃষ্ঠা)
[১৪২৯-১৪৩২]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- পাগড়ী মাথায় বেঁধে রাখা (দায়িমী) সুন্নত। অসংখ্য হাদীস শরীফে এর ফযীলত আলোচিত হয়েছে। যেমন, পাগড়ীসহ দুরাকায়াত নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামাযের চেয়ে উত্তম।
(হাশিয়ায়ে তিরমিযী ১ম জিঃ ২০৭ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল লুময়াত ৩য় জিঃ, ৫৮৩ পৃষ্ঠা, তরজমাতুল  মিশকাত, উরফুশ্ শাজী)
[১৪৩৩-১৪৩৪]
فى الحديث جمعة بعمامة افضل من سبعين صلاة بلا عمامة. (هداية العباد ص৬৯، كشف الخفاء ومزيل الالباس جص৬৭)
অর্থঃ- হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, পাগড়ীসহ এক জুমুয়ার নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর জুমুয়ার নামায অপেক্ষা উত্তম।
            (হিদায়াতুল ইবাদ ৬৯ পৃষ্ঠা, কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস ২য় জিঃ, ৬৭ পৃষ্ঠা)
[১৪৩৫-১৪৩৮]
رواه ابن عساكر والديلمى عن ابن عمر مرفوع : صلاة تطوع او فريضة بعمامة تعدل خمسا وعشرين صلاة بلا عمامة وجمعة بعمامة تعدل سبعين جمعة بلا عمامة فهذا كله يدل على فضيلة العمامة مطلقا. (تحفة الاحوذى جص ৪১৫، مرقاة جص ২৫০، كشف الخفاء ومزيل الالباس جص ৬৭، الديلمى)
অর্থঃ- হযরত ইবনে আসাকির ও দাইলামী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে মারফুসূত্রে বর্ণনা করেন যে, পাগড়ীসহ একটি ফরয অথবা নফল নামাযে পাগড়ী ছাড়া পঁচিশটি ফরয অথবা নফল নামাযের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে পাগড়ীসহ একটি জুমুয়া আদায় করলে পাগড়ী ছাড়া সত্তরটি জুমুয়া আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। সাধারণতঃ এটা দ্বারা পাগড়ী পরিধানের ফযীলতের দলীল সাব্যস্ত হয়।
(তুহ্ফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১৫ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৮ম জিঃ ২৫০ পৃষ্ঠা, কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস ২য় জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠা, দাইলামী শরীফ)
[১৪৩৯]
عن جابر رضى الله عنه ركعتان بعمامة افضل من سبعين من غيرها. (كشف الخفاء ومزيل الالباس جص৬৮)
অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, পাগড়ীসহ দুরাকায়াত নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামায থেকে উত্তম।
            (কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস ২য় জিঃ, ৬৮ পৃষ্ঠা)
[১৪৪০]
ان الملائكة يشهدون الجمعة معتمين وتصلون على اهل العمائم حتى تغيب الشمس. (كشف الخفاء ومزيل الالباس جص৬৭)
অর্থঃ- (হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,) নিশ্চয়ই ফেরেশ্তাগণ পাগড়ী পরিধানকারীগণের উপর জুমুয়ার দিবসে সাক্ষ্য দেন এবং পাগড়ী পরিধানকারীগণের  উপর ছলাত (মাগফিরাত) কামনা করতে থাকেন যতক্ষণ না সূর্য ডুবে যায়।
(কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস ২য় জিঃ, ৬৭ পৃষ্ঠা)
৩। পাগড়ী পরিধানকারীগণের উপর ক্বিয়ামতের দিন বিশেষ নূর প্রদান করা হবেঃ
[১৪৪১]
العمامة على القلنسوة فصل ما بيننا وبين المشركين يعطى يوم القيامة لكل كورة يدورها على رأسه نورا. (مرقاة جص২৫০)
অর্থঃ- টুপির উপর পাগড়ী পরিধান আমাদের (মুসলমানগণের) ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্যকারী (অর্থাৎ মুসলমানগণ টুপির উপর আর মুশরিকরা টুপি ছাড়া পাগড়ী পরিধান করে থাকে)। পাগড়ী পরিধানকারীগণের পাগড়ীর প্রতি পেঁচের বদলে ক্বিয়ামতের দিন পাগড়ী পরিধানকারীগণের মাথায় বিশেষ একটি নূর প্রদান করা হবে।” (মিরকাত শরীফ ৮ম জিঃ, ২৫০ পৃষ্ঠা)
৪। পাগড়ী ইসলামের নিদর্শন এবং মুসলমান ও কাফিরদের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারীঃ
            এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে,
[১৪৪২-১৪৪৫]
عن عبد الرحمن بن عدى البهرانى عن اخيه عبد الاعلى بن عدى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم دعا على بن ابى طالب رضى الله عنه يوم غد يرخم فعممه وارخى عذية العمامة من خلفه ثم قال هكذا فاعتموا فان العمائم سيماء الاسلام وهى الحاجز بين المسلمين والمشركين. (عمدة القارى ج২১ ص ৩০৮- تحفة الاحوذى جص ৪১২، الزرقا نى جص ২৭২، خصائل نبوى صلى الله عليه وسلم ৭৮)
অর্থঃ- হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আদিয়্যিল বাহরানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর ভাই হযরত আব্দুল আলা ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা বৃষ্টির দিনে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী ইবনে আবু ত্বালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ডেকে তাঁর মাথায় পাগড়ী বেঁধে দিলেন এবং পাগড়ীর শামলা পিছনে তাঁর পিঠের উপর ঝুলিয়ে রাখলেন। অতঃপর বললেন, অনুরূপভাবে পাগড়ী বাঁধ। কেননা, নিশ্চয়ই পাগড়ী ইসলামের বিশেষ নিদর্শণ এবং এটা মুসলমান ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী।
(উমদাতুল ক্বারী ২১তম জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১২ পৃষ্ঠা, যুরকানী ৬ষ্ঠ জিঃ ২৭২ পৃষ্ঠা, খছাইলে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৭৮ পৃষ্ঠা)
[১৪৪৭-১৪৫৬]
عن ركانة رفعه "فرق ما بيننا وبين المشركين العمائم" اخرجه ابو داؤد والترمذى. (فتع البارى ج১০ ص ২৭৩، ارشاد السارى جص ৪২৮، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، شرح ابى داؤد لبدر الدين العينى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، كشف الخفاء ومزيل الافباس جص ৬৮، حاشية احياء علوم الدين جص ৩৭৬)
অর্থঃ- হযরত রুকানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমাদের মধ্যে ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে পাগড়ী পরিধান। (অর্থাৎ আমরা মুসলমানগণ পাগড়ী পরিধান করি আর মুশরিকরা তা পরিধান করেনা।)
(ফতহুল বারী ১০ জিঃ, ২৭৩ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী ৮ম জিঃ, ৪২৮ পৃষ্ঠা, আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, শরহু আবী দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস ২য় জিঃ, ৬৮ পৃষ্ঠা, হাশিয়ায়ে ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন ২য় জিঃ ৩৭৬ পৃষ্ঠা)
[১৪৫৭]
عن على رضى الله عنه العمامة حاجز بين المسلمين والمشركين. (كشف الخفاء ومزيل الالباس جص৬৮)
অর্থঃ- হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পাগড়ী মুসলমানগণ ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী।
 (কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস ২য় জিঃ ৬৮ পৃষ্ঠা)
৫। পাগড়ী পরিধানের মাধ্যমে সহনশীলতা ও গাম্ভীর্যতা বৃদ্ধি পায়ঃ
            যেমন, হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে,
[১৪৫৮-১৪৬৫]
عن ابى المليح بن اسامة عن ابيه رفعه اعتموا تزدادوا حلما. (فتح البارى ج১০ ص ২৮৩- خصائل النبوى ص ৭৮- المستدرك جص ১৯৩- كشف الغمة جص ৯৪- اللباس والزينة ص ১২৫- مجمع الزوائد جص ১১৯- الكبير جص ১৯৪- كشف الخفاء ومزيل الالباس جص৬৭)
অর্থঃ- হযরত আবুল মুলাইহ্ ইবনে উসামাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা পাগড়ী পরিধান কর। এতে সহনশীলতা ও গাম্ভীর্যতা বৃদ্ধি পাবে।
(ফতহুল বারী ১০ম জিঃ ২৮৩ পৃষ্ঠা, খছাইলে নববী ৭৮ পৃষ্ঠা, আল্ মুসতাদ্রক ৪র্থ জিঃ ১৯৩ পৃষ্ঠা, কাশফুল গুম্মাহ্ ১ম জিঃ ৯৪ পৃষ্ঠা, আল্ লিবাসু ওয়ায্ যীনাহ্ ১২৫ পৃষ্ঠা, মাজমাউয্ যাওয়াইদ ৫ম জিঃ ১১৯ পৃষ্ঠা, আল্ কবীর ১ম জিঃ ১৯৪ পৃষ্ঠা, কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল্ ইলবাস ২য় জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠা)
[১৪৬৬-১৪৬৮]
عن ابن عباس رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه واله وسلم اعتموا تزدادوا حلما. (اللباس والزينة ص১২৪- مجمع الزوائد جص ১১৯- الكبير ج১২ ص ২২১)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা পাগড়ী পরিধান কর। এতে সহনশীলতা ও গাম্ভীর্যতা বৃদ্ধি পায়।
(আল্ লিবাসু ওয়ায্ যীনাহ্ ১২৪ পৃষ্ঠা, মাজমাউয্ যাওয়াইদ ৫ম জিঃ ১১৯ পৃষ্ঠা, আল্ কবীর ১২তম জিঃ ২২১ পৃষ্ঠা)
            মূলতঃ ইমামাহ্ বা পাগড়ীর সবচেয়ে বড় ফযীলত হচ্ছে,  ইমামাহ্ বা পাগড়ী সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।আর সুন্নতের ফযীলত সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে,
من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجر مأة شهيد.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ফাসাদের সময়ে একটি সুন্নত আঁকড়িয়ে ধরবে তাকে একশত শহীদের সওয়াব দেয়া হবে।
(মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীক্বছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)
            অতএব, সকলের উচিত সুন্নতের ইত্তেবা করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই দায়িমীভাবে ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করা।
পরিশিষ্ট
            মহান আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন-এর  অসংখ্য শুকরিয়া। তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শাহী দরবারে অশেষ ছলাত ও সালাম।
            আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহমতে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে প্রদত্ত কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল ও আহকাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়ানামক ফতওয়াটি অত্র সংখ্যায় শেষ করা সম্ভব হলো। মূলতঃ এ ফতওয়াটি মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ৮৩তম সংখ্যা থেকে প্রচারিত হয়ে আসছে। এ ফতওয়াটি প্রদান করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, পাগড়ীর মত একটি দায়িমী সুন্নতের আমল প্রত্যেক মুসলমানের জন্য পালন করার সুযোগ করে দেয়া।  যারা বলে, পাগড়ী পরা দায়িমী সুন্নত নয় অথবা পাগড়ী পরিধানের ব্যাপারে হাদীস শরীফে তত গুরুত্ব দেয়া হয়নি, তাদের এ বক্তব্যগুলো খন্ডন করে দেয়া। আল্লাহ্ পাক-এর রহমতে যা আমরা পূর্ববর্তী সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্র ভিত্তিতে খন্ডন করে দিয়েছি।
            আমাদের কাছে পাগড়ীর ব্যাপারে অসংখ্য দলীল-আদিল্লাহ্ মওজুদ রয়েছে। ফতওয়ার কলেবর অনেক বৃদ্ধি পাবে এজন্য সব দলীল উল্লেখ করা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরো অসংখ্য দলীল পেশ করা যাবে। (ইনশাআল্লাহ্)
            মাসিক আল বাইয়্যিনাতে ইমামাহ্ বা পাগড়ী সম্পর্র্কিত ফতওয়ায় যে বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে তার সারমর্ম নিম্নে পেশ করা হলো-
            ১। আল্লাহ্ পাক ও আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে বান্দা ও উম্মতের প্রতি সুন্নত পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
            ২। সুন্নতকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা কুফরী।
            ৩। চার খলীফা এবং অন্যান্য ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ও আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের পাগড়ীর মত দায়িমী সুন্নত বটেই বরং সূক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম সুন্নতের প্রতি একাগ্রতা, মুহব্বত ও জজবা অত্যাধিক পরিমাণে ছিল।
            ৪। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দায়িমীভাবে ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করতেন।
            ৫। পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণও পাগড়ী পরিধান করতেন। যা সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের খাছ সুন্নত।
            ৬। ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান ফেরেশ্তা আলাইহিমুস্ সালামগণের নিদর্শণ। যা সুন্নতে মালাইকা-এর অন্তর্ভূক্ত।
            ৭। ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধানের ব্যাপারে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসংখ্য আমর বা নির্দেশ রয়েছে।
            ৮। পাগড়ী পরিধান করা সুন্নতে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভূক্ত। কেননা, তারা সকলেই দায়িমীভাবে পাগড়ী পরিধান করেছিলেন।
            ৯। সমস্ত তাবিঈন, তাবে তাবিঈন এবং আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম (দায়িমীভাবে) পাগড়ী পরিধান করেছিলেন। যা তাদের সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।
            ১০। মাযহাবের ইমাম এবং তরীক্বার ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণও দায়িমীভাবে পাগড়ী পরিধান করতেন।
            ১১। সাদা, সবুজ ও কালো এই তিন রংয়ের পাগড়ী পরিধান করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।
            ১২। লাল, কুসুম, হলুদ ও জাফরানী রংয়ের ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করা হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী।
            ১৩। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাগড়ী ছিল তিন ধরণের। যথা- (ক) তিন হাত, (খ) সাত হাত, (গ) বার হাত লম্বা। আর প্রস্থ ছিল অর্ধ হাত, একহাত, দেড় হাত এবং দুই হাত। কোন কোন বর্ণনায় পাগড়ীর প্রস্থ ছিল অর্ধ হাত বা এক বিঘত।
            ১৪। পাগড়ী বেঁধে তার শামলা ঝুলানো খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পাগড়ীর শামলা কমপক্ষে চার আঙ্গুল আর উর্ধ্বে এক হাত পরিমাণ হওয়াই সুন্নত। এর চেয়ে কম-বেশী হওয়া সুন্নতের খিলাফ। তবে একহাত পরিমাণ ঝুলানোই আফযল বা সর্বোত্তম।
            ১৫। পাগড়ীর শামলা পিছনে পিঠের উপর উভয় কাঁধের মাঝখানে ও সামনে ডান দিকে ছিনার উপর ঝুলিয়ে দেয়া সুন্নত। তবে আফযল তথা অধিক উত্তম হলো, দুকাধের মাঝখানে পিঠের উপর ঝুলানো। মনে রাখতে হবে, সামনে বাম ছিনার উপর শামলা ঝুলানো বিদ্য়াত।
            ১৬। বিসমিল্লাহির রহমানির রহীমবলে পাগড়ী পরিধান করা, পাগড়ী পরিধান করে দোয়া পরা, নতুন পাগড়ী বাঁধতে হলে জুমুয়ার দিন থেকেই শুরু করা, পাগড়ী দাঁড়িয়ে বাঁধা, টুপির উপর পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত।
            ১৭। অধিকাংশ সময় শুধু টুপি পরিধান করে থাকা ও পাগড়ী ছাড়া শুধু টুপি পরে বাইরে বের হওয়া সুন্নতের খিলাফ। যা মুশরিকদের নিদর্শণ।
            ১৮। সিজদার স্থানকে পাগড়ীর পেঁচ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। কেননা, আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক পাগড়ীর উপর সিজদা করা মাকরূহ।
            ১৯। গোলাকার করে মাথার উপরিভাগকে ফাঁকা রেখে পাগড়ী বাঁধা মাকরূহ। যাকে ইতিজার বলা হয়।
            ২০। দিস্তারবন্দী তথা পাগড়ী বেঁধে দেয়া সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর পাগড়ী বেঁধে নেয়া সুন্নতে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।
            ২১। মাথার রুমাল, গামছা, তোয়ালে বা কোন কাপড়ের টুকরা দিয়ে পাগড়ীর সুন্নত আদায় হবেনা। কেননা, তাতে একই সাথে পাগড়ীর মত দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও রং উপস্থিত থাকেনা।
            ২২। পাগড়ীর উপর রুমাল পড়া খাছ সুন্নত।
            ২৩। পাগড়ী মওজুদ থাকা সত্ত্বেও আলস্যবশতঃ পাগড়ী ছাড়া নামায আদায় করা মাকরূহ।
            ২৪। পাগড়ী পরিধান করে নামায আদায় করলে সত্তর গুণ ফযীলত পাওয়া যায়।
            ২৫। অসংখ্য দলীলের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, পাগড়ী পরিধান করা দায়িমী সুন্নত। কেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হায়াত মুবারকের অধিকাংশ সময়েই পাগড়ী মুবারক পরিধান করেছেন।
            মহান আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে উক্ত সকল ফতওয়া তথা ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফযীলত উপলব্ধি করে, পাগড়ী পরিধান দায়িমী সুন্নত জেনে এবং তার সূক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম সকল মাসয়ালা-মাসায়েল সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হয়ে যথাযথভাবে তা আমলে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দিন। (আমীন) (সমাপ্ত)

0 Comments: