সুওয়াল :
আপনাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকার ৩য় বর্ষ ১ম ও ২য় সংখ্যা অর্থাৎ ১০ম
সংখ্যায় ফতওয়া দিয়েছেন যে,
জুমুয়া ও দুই ঈদের “খুৎবা” আরবী
ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় দেয়া নাযায়িয, অর্থাৎ “মাকরূহ
তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।” অথচ আজকাল বাজারে প্রকাশিত ব্যবসায়ীক মনবৃত্তি সম্পন্ন কিছু
কিতাবাদী ও পত্র-পত্রিকায় একথা প্রচার করা হচ্ছে যে, “জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী
ভাষায় না দিয়ে বাংলা অর্থাৎ মাতৃ ভাষায় দিতে হবে।”
সাথে
সাথে সমাজে ভুঁইফোড়ের মত গজে উঠা কোন কোন নামধারী তথাকথিত পীর, সূফী, ইসলামী
দলের নেতা, আমীর ও তাদের সমগোত্রিয় কেউ কেউ জুমুয়া ও ঈদের খুৎবা মাতৃ ভাষায় (বাংলায়) পাঠ
করে থাকে। আর বাংলা বা মাতৃ ভাষায় খুৎবা পাঠের জন্যে জোর প্রচারাভিযান চালাচ্ছে।
এখন আমার
প্রশ্ন হচ্ছে- আরবী ভাষায় খুৎবা পাঠ করার ব্যাপারে শরীয়ত উনার চূড়ান্ত ফায়সালা কি? আর যারা
বাংলা বা মাতৃ ভাষায় খুৎবা পাঠ করে এবং এ ব্যাপারে প্রচারাভিযান চালায়, তাদের
ব্যাপারেই বা শরীয়ত উনার হুকুম কি? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র
হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের অকাট্য, নির্ভরযোগ্য দলীলের দ্বারা জবাব
দানে বাধিত করবেন।
আর মাসিক
আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকা কর্তৃপক্ষের নিকট আমার বিশেষ অনুরোধ এই যে, “আরবী
ভাষায় খুৎবা পাঠ করা সংক্রান্ত ফতওয়াটি পূণরায় ছাপিয়ে দিয়ে সমাজ থেকে উক্ত বিদয়াত
তথা ফিৎনা দূরীকরণে সাহায্য করবেন।
জাওয়াব :
হ্যাঁ, আমাদের প্রকাশিত “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকার ১০ম সংখ্যায় অসংখ্য, অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের
ভিত্তিতে প্রমাণ করেছি যে,
“জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া সুন্নতে
মুয়াক্কাদাহ। আর আরবী ব্যতীত পৃথিবীর অন্য যেকোন ভাষায় খুৎবা পাঠ করা মাকরূহ
তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। এ ব্যাপারে উলামায়ে উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
মূলতঃ
আমরা প্রায়ই বলে বা লিখে থাকি যে, সমাজে নানাবিধ ফিৎনা বা বিভ্রান্তী সৃষ্টির প্রধানতম কারণ
হচ্ছে-
قلت فهم
قلت علم
অর্থাৎ
কম জ্ঞান ও কম বুঝ।
মহান
আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন তিনি দয়া করে যাদেরকে ইলম ও সঠিক বুঝ বা সহীহ সমঝ দান করেছেন, একমাত্র
তাদের পক্ষেই সম্ভব হক্ব মত ও হক্ব পথে কায়িম থাকা এবং সঠিক ও বিশুদ্ধ ফতওয়া
প্রদান করা। কেননা যাদের ইলম ও সহীহ সমঝের অভাব রয়েছে, তারা
কিতাব না বুঝে শুধুমাত্র জল্পনা-কল্পনার ভিত্তিতে আমল করে এবং সে ব্যাপারে ফতওয়া
প্রদান করে সমাজের মধ্যে ফিৎনা সৃষ্টির মাধ্যমে সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার
অপচেষ্টা করে।
এ ধরণের
লোকদের সম্পর্কেই মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার
মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وما
لهم به من علم- ان يتبعون الظن وان الظن لا يغنى من الحق شيأ= (نجمظ
/২৮)
অর্থ : “এ বিষয়ে
তারা একেবারেই জাহিল,
তারা শুধু জল্পনা-কল্পনার অনুসরণ করে এবং সত্যের মুকাবেলায়
জল্পনা-কল্পনা মোটেও ফলপ্রসূ নহে।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ : পবিত্র
আয়াত শরীফ, ২৮)
সুতরাং
প্রমাণিত হলো যে,
মনগড়া বা জল্পনা-কল্পনা ভিত্তিক কোন আমল বা বক্তব্য শরীয়তে
গ্রহণযোগ্য নয় বরং যে কোন আমল বা বক্তব্যের পিছনে শরীয়ত উনার দলীল থাকতে হবে। কারণ
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন,
هاتوا بر ها نكم انكنتم صادقين.
অর্থ : “যদি
তোমরা সত্যবাদী হও,
তবে দলীল পেশ কর”
আর
আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার দলীল হলা- পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র
হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস।
অতএব, কোন আমল
করতে হলে অথবা কোন কিছু বলতে হলে উপরোক্ত চারটি দলীলের যেকোন একটির ভিত্তিতেই করতে
বা বলতে হবে। নচেৎ উক্ত আমল বা বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হবেনা। আর যে ব্যক্তি উক্ত চার
দলীলের বিপরীত আমল করবে বা বক্তব্য প্রদান করবে, তারা মূলতঃ শিয়া, খারিজী, কাদিয়ানী
ইত্যাদি সম্প্রদায়ের ন্যায় বাতিল ফিরকার অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ উল্লেখিত বাতিল
ফিরকাগুলোর আমল ও বক্তব্যগুলোও পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও
ক্বিয়াস উনাদের খিলাফ অর্থাৎ মনগড়া।
আর এ
ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থ : “যে ব্যক্তি
যে সম্প্রদায়ের সাথে (আক্বীদা ও আমলগতভাবে) মিল রাখবে, সে
তাদেরই দলভুক্ত।”
সুতরাং
যারা আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় খুৎবা পাঠ করে বা পাঠ করার কথা বলে, তারা
নিজস্ব ক্বিয়াস বা জল্পনা-কল্পনা ব্যতীত পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র
হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের থেকে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল পেশ করতে পারবে কি? কস্মিনকালেও
সম্ভব নয়।
তাদের
মধ্যে আবার কেউ কেউ বাংলা বা মাতৃ ভাষায় খুৎবা পাঠ করা জায়েয হওয়াকে নিজস্ব
ইজতিহাদ বলে দাবী করে থাকে। মূলতঃ এটা তাদের অজ্ঞতা ও গোমরাহী ব্যতীত কিছুই নয়।
কারণ ইজতিহাদ তো হয়ে থাকে শরীয়ত উনার ঐ সকল বিষয়ে, যার বর্ণনা পবিত্র কুরআন শরীফ ও
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়নি।
অথচ আরবী
ভাষায় খুৎবা পাঠ করার আমল,
স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অসংখ্য পবিত্র ফে’লী হাদীছ
শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত। সাথে সাথে হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম, হযরত খোলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম, ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের আমল দ্বারাও
তা স্পষ্ট প্রমাণিত।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে তো স্পষ্টভাবেই বলে দেয়া হয়েছে যে,
عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين.
অর্থ : “তোমাদের
জন্যে আমার সুন্নত ও হযরত খোলাফায়ে রাশিদীন উনাদের সুন্নত অবশ্য পালনীয়।”
এ কারণেই
পূর্ববর্তী অনুসরণীয় সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও উলামায়ে উম্মত এ ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমতে
পৌঁছেছেন যে, আরবী ভাষায় খুৎবা পাঠ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। আর আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায়
খুৎবা পাঠ করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।”
অতএব, যে বিষয়
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত এবং যার উপর উম্মতের ইজমা বা
ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত,
সে বিষয়ে ইজতিহাদ সম্পূর্ণই মূল্যহীন ও বাতিল। সুতরাং বাংলা
বা মাতৃ ভাষায় খুৎবা পাঠ করা জায়িয হওয়া সংক্রান্ত ইজতিহাদও সম্পূর্ণ বাতিল ও
ভ্রান্ত। কারণ উক্ত ইজতিহাদ সম্পূর্ণই শরীয়ত উনার উসূলের খিলাফ। তাছাড়া যেকোন
ইজতিহাদই হোক না কেন,
তা যদি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস
উনাদের খেলাফ বা বিপরীত হয়,
তবে তা বাতিল ও ভ্রান্ত ইজতিহাদ বা ক্বিয়াস হিসাবে সাব্যস্ত
হবে।
এখানে
আরো উল্লেখ্য যে,
যে কেউ ইজতিহাদ করলেই যে, তা গ্রহণযোগ্য হবে তা নয়, বরং যিনি
মুজতাহিদ হবেন, উনাকে অবশ্যই ছালেহীন উনাদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ সুন্নতের পূর্ণ
পাবন্দ হতে হবে। অথচ আজকাল কুফরী আক্বীদা সম্পন্ন ও হারাম কাজে লিপ্ত ব্যক্তিরাও
মুজতাহিদ দাবী করে থাকে। মূলতঃ যারা হারাম কাজে লিপ্ত থাকে, যেমন-
ছবি তোলে, গণতন্ত্র করে,
তারা কখনো মুজতাহিদ হওয়ার যোগ্য নয় এবং তাদের কৃত কোন
ইজতিহাদই শরীয়ত উনার মধ্যে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য।
মূলতঃ
আখিরী যামানা হলো ফিৎনার যামানা, এ সময়ে ঈমান ও আমলকে হিফাযত করা খুবই কঠিন। আর তাই
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم- يكون فى اخرالزمان دجالون الكذابون ياتون كم من
الاحاديث لم تسمعوا انتم ولا ابا ئكم اياكم رايا هم لا يصلو نكم ولا يفتنو نكم.
অর্থ : “আখেরী
যামানায় কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদেরকে এমন এমন কথা বলবে, যা তোমরা
ও তোমাদের পূর্ব পুরুষগণও শুনেনি। তোমরা তাদের নিকট থেকে দূরে থাক এবং তাদেরকে
তোমাদের নিকট থেকে দূরে রাখ, তবে তারা তোমাদেরকে তোমরাহ করতে ও ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (পবিত্র
মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত
পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, যারা বিনা দলীলে, মনগড়া
তথা জল্পনা-কল্পনার ভিত্তিতে আমল করে, তারা মূলতঃ দাজ্জালের চেলা, মিথ্যাবাদী
ও ভ্রান্ত পথের অনুসারী। তাদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার জোরালো তাকীদ করা হয়েছে।
মোটকথা
হলো- জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় পাঠ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। আর আরবী
ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা পাঠ করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।
সুতরাং
যারা আরবী ভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় খুৎবা পাঠ করে, যেমন- বাংলা, উর্দূ
ইত্যাদি। তারা মূলতঃ চরম পর্যায়ের বিদয়াতী। যাদের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়ছে,
كل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار.
অর্থ : “প্রত্যেক
বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ তোমরাহী, আর প্রত্যেক তোমরাহ লোক (অর্থাৎ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ আমলকারী
ব্যক্তি) জাহান্নামী।”
পাঠকগণের
বিশেষ অনুরোধের কারণে এবং সমাজ থেকে উক্ত বিদয়াতের মূলৎপাটন ও বিদয়াতীদের
হাক্বীক্বী মুখোশ উম্মোচনের লক্ষ্যে আরবী ভাষায় খুৎবা পাঠ করা সংক্রান্ত ফতওয়াটি
সামান্য পরিবর্তন,
পরিবর্ধন ও সংযোজন করে পূণরায় ছাপিয়ে দেয়া হলো-
আরবী
ভাষায় খুৎবা পাঠ করা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
এখানে
আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো- খুৎবার ভাষা নিয়ে অর্থাৎ কোন ভাষায় “জুমুয়া ও
দুই ঈদের” খুৎবা দিতে হবে,
আরবী ভাষায় না (অনারবী) মাতৃভাষায়?
আমাদের
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার সমস্ত হযরত ইমাম-মুজতাহিদ উনারা এ ব্যাপারে
(ইজমায়) ঐক্যমতে পৌঁছেছেন যে, খুৎবা আরবী ভাষায়ই দিতে হবে। আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় খুৎবা
দেয়া নাযায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ অর্থাৎ মাকরূহ তাহরীমী।
এমনিভাবে
দুই খুৎবার একটি আরবী ভাষায় অপরটি অন্য কোন ভাষায় অথবা এক খুৎবার অংশ বিশেষ আরবী
ভাষায় এবং অংশ বিশেষ অন্য
কোন ভাষায় দেয়া অথবা আরবী খুৎবা প্রদানকালে বাংলা, উর্দু, ইংরেজী, ফার্সী
অর্থাৎ এক কথায় পৃথিবীর অন্য যে কোন আজমী (অনারবী) ভাষায় অনুবাদ করা বা আরবীতে
খুৎবা দেয়াকালে অন্য কোন ভাষায় মাঝে মধ্যে শে’র বা ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করাও
শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সুন্নতের পরিপন্থী, নাজায়িয ও বিদয়াত। সুতরাং জুমুয়া
ও ঈদাইনের উভয় খুৎবা সম্পূর্ণটাই আরবী ভাষায় দিতে হবে।
“খুৎবার
পূর্বে ওয়াজ করার বিধান”
তবে
মুছল্লীদেরকে খুৎবার বিষয়বস্তু বুঝানোর জন্য প্রথম আযানের পূর্বে বা পরে এবং ছানী
আযানের অবশ্যই পূর্বে ওয়াজ নছীহত করা জায়িয এবং হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। (তবে ওয়াজের পর খুৎবার
আযানের পূর্বে অবশ্যই মুছল্লীদেরকে ক্বাবলাল জুমুয়া পড়ার সময় দিতে হবে) যেমন
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়-
(১) হযরত
আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জুমুয়ার দিন খুৎবার পূর্বে মিম্বরের
সম্মুখে দাঁড়ায়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করতেন। অতঃপর হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খুৎবা প্রদান করতেন। (মুস্তাদরেকে হাকীম ১ম জিঃ, ১০৮
পৃষ্ঠা)
(২) হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে বুছর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জুমুয়ার দিন লোকদিগকে ওয়াজ নছীহত
মুবারক করতেন এবং খতীব খুৎবার জন্য আগমন
করলে তিনি উনার ওয়াজ নছীহত বন্ধ করে দিতেন। (মুস্তাদরেকে হাকীম)
(৩) হযরত উমর
ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সলাম ও হযরত উসমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের
খিলাফতকালে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত তামীমদারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খুৎবার
পূর্বে ওয়াজ নছীহত করতেন। (মসনদে আহমদ ইবনে হাম্বল, ৩য় জিঃ পৃষ্ঠা ৪৪৯)
এছাড়াও
অনুরূপ বর্ণনা উনার জুয়াতে কবীর, ইক্বামাতুল হুজ্জাহ, ইছাবাহ, ফতওয়ায়ে
রহীমীয়া ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। (কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় ইবারত দেয়া
হলো না)
কাজেই
খুৎবার বিষয়বস্তু বুঝানোর জন্য খুৎবার পূর্বে অর্থাৎ ছানী আযানের পূর্বে ওয়াজ করা
যেতে পারে, কিন্তু তথাপিও ছানী আযানের পর অর্থাৎ খুৎবাতে আরবী ভাষা ব্যতীত অন্য কোন ভাষা
ব্যবহার করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।
যারা
জুমুয়ার খুৎবা আরবী ভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় দেয়ার পক্ষে, তাদের
বক্তব্য হলো- (خطبه)
খুৎবা
শব্দের লোগাতী বা শাব্দীক অর্থ হলো বক্তৃতা, ভাষণ বা ওয়াজ। সুতরাং বক্তৃতা, ভাষণ বা
ওয়াজ যেমন যে কোন ভাষায় দেয়া যেতে পারে, তদ্রুপ জুমুয়ার খুৎবাও যেকোন
ভাষায়ই দেয়া যেতে পারে। এর উপর ক্বিয়াস করে আমাদের দেশের কোন কোন স্থানে জুমুয়ার
খুৎবা বাংলা ভাষায় দেয়া হয়ে থাকে। মূলতঃ তাদের উক্ত ক্বিয়াস সম্পূর্ণই ভ্রান্ত ও
বাতিল।
কেননা
শরীয়তে এমন কতক শব্দ রয়েছে,
যাদের শুধু লোগাতী বা শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করলে তা যথার্থ
হবে না বরং তার প্রচলিত শরয়ী অর্থের উপরই আমল করতে হবে। তার মধ্যে একটি হলো
জুমুয়ার খুৎবা। লোগাতে খুৎবা শব্দের অর্থ যদিও বক্তৃতা, ভাষণ বা
ওয়াজ কিন্তু শরীয়ত উনার মধ্যে খুৎবা শব্দের অর্থ ব্যাপক।
এখন যদি
আমরা খুৎবার আহকাম,
গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি, তাহলে
আশা করি সকলের নিকট এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, খুৎবা শুধু বক্তৃতা, ভাষণ বা
ওয়াজ নয় বরং জুমুয়ার নামাযের একটি বিশেষ অঙ্গ।
“আহকামে খুৎবা” (احكام
خطبة)
মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন
তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে খুৎবাকে ذكر বলে সম্বোধন করেন। যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
يا يها الذين امنوا اذانودى للصلوة من
يوم الجمعة فا سعوا الى ذكر الله ... الخ. (سوره ء جمعه(
অর্থ : “হে
ইমানদারগণ, যখন জুমুয়ার দিন নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার
যিকর উনার দিকে ধাবমান হও।”
(অর্থাৎ খুৎবা শুনার জন্য আস)
উক্ত
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অধিকাংশ মুফাসসিরিনয়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা একমত
যে, (ذكر) যিকর
শব্দ দ্বারা খুৎবাকে বুঝানো হয়েছে। তাফসীরে ইবনে কাছীর ৯ম খন্ড পৃঃ৪৫৬, বোখারী
শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ১২৭,
মাবছুত লিস সারাখসী ২য় জিঃ পৃঃ ২৬-৩১, কবীরী
পৃঃ৮৭, হেদায়া ১ম জিঃ পৃঃ১৩৯)
এমনিভাবে
ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা অনেকেই খুৎবাকে মহান আল্লাহ পাক উনার
যিকর ও ইবাদতের দিক দিয়ে নামাযের ন্যায় বলেছেন। যেমন হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম
তিনি বলেন,
انما قصرت الجمعة لا جل الخطبة. (الازالة الخفاء(
অর্থ : “জুমুয়ার
নামাযকে (চার রাকায়াতের স্থলে দুই রাকায়াতে) সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে একমাত্র খুৎবার
কারণেই।” (ইযালাতুল খফা)
হযরতুল
আল্লামা আলাউদ্দীন আল কাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আল বাদায়ে”-উনার
হাওলা “আল বাহর” এ উল্লেখ করেন যে,
“জুমুয়ার খুৎবা হলো দুই রাকায়াত জুমুয়ার নামাযের
স্থলাভিষিক্ত।” অনুরূপভাবে আলমগীরী,
বাহরুর রায়েক, নিযামুল ফতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে।
আবার খোলাছাতুল ফতওয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে,
كل
ما حرم فى الصلاة حرم فيها اى فى الخطبة فيحرم اكل وشرب وكلام ولو تسبياحا او رد
سلام
অর্থ : “যে সকল
কাজ-কর্ম নামাযের মধ্যে হারাম, সেগুলো খুৎবার মধ্যেও হারাম ও নিষিদ্ধ। সুতরাং খুৎবা
দানকারী ও শ্রবণকারীদের জন্য খাওয়া, পান করা, কথা-বার্তা
বলা যদিও তা তাসবীহ হোক না কেন এবং সালামের জবাব দেয়াও জায়িয নয়। (খোলাছাতুল ফতওয়া
আর এ
প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন মজীদ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
واذا قراء القران فا ستمعوا له وانصتوا لعلكم تر
حمون.
অর্থ : “যখন
পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা অতি মনোযোগ সহকারে তা
শ্রবণ করো। সম্ভবতঃ তোমরা রহমত প্রাপ্ত হবে।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ
শরীফ)
অনেক
হযরত মুফাসসিরীনয়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি এ অভিমত ব্যাক্ত করেন যে, উক্ত
পবিত্র আয়াত শরীফ খুৎবাকে উদ্দেশ্য করে অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাফসীরে কামালাইনের লিখক
আল্লামা সালামুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতেও উক্ত অভিমত নকল করেন। অনুরূপভাবে তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআনের
উল্লেখ রয়েছে।
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ রয়েছে যে,
اذا خرج الامام فلا صلاة ولا كلام. (ابو داؤد(
অর্থ : “ইমাম
সাহেব যখন খুৎবা দেয়ার জন্য হুজরা হতে বের হবেন, তখন কোন নামায ও কথাবার্তা বলা নিষিদ্ধ।” (পবিত্র
আবূ দাউদ শরীফ)
অন্য
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে,
من
قال فى صلا حبه يوم الجمعة والامام يخطب انصت فقد لغا. (نسائ شريف(
অর্থ : “জুমুয়ার
দিন ইমামের খুৎবা প্রদানকালে যদি কেউ অন্যকে বলে চুপ কর, তবে
সেটাও অন্যায় হবে।”
(নাসাঈ শরীফ)
এছাড়া
সমস্ত ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, জুমুয়ার খুৎবা দেয়া ওয়াজিব, বিনা
খুৎবায় জুমুয়ার নামায দুরস্ত হবে না।
এমনিভাবে
জুমুয়ার নামায যেমন ওয়াক্ত হবার পর পড়তে হয়, খুৎবাও তদ্রুপ ওয়াক্ত হবার পর
দিতে হয়। ওয়াক্ত হবার পূর্বে বা পরে খুৎবা দিলে খুৎবা দুরস্ত হবে না এবং জুমুয়ার
নামাযে যেরূপ ফরয,
ওয়াযিব ও সুন্নাতসমূহ রয়েছে, জুমুয়ার খুৎবায়ও তদ্রুপ ফরয, ওয়াযিব ও
সুন্নতসমূহ রয়েছে।
সুতরাং
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণীত হয় যে, খুৎবা জুমুয়ার নামাযেরই একটি অংশ
বিশেষ এবং নামাযের ন্যায় একটি ইবাদত। কাজেই নামাযে যেরূপ আরবী ব্যতীত অন্য
কোন ভাষা
ব্যবহার করা জায়িয নেই, তদ্রুপ খুৎবার মধ্যেও আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষা ব্যবহার করা জায়িয নেই। বরং
আরবী ব্যতীত অন্যকোন ভাষায় খুৎবা পাঠ করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।
“খুৎবার
ফরজ ও সুন্নতসমূহ”
খুৎবার
ফরযসমূহ : খুৎবার ফরয দু’টি।
(১)
জুমুয়ার ওয়াক্ত হওয়া অর্থাৎ জুমুয়ার ওয়াক্তের মধ্যে খুৎবা দিতে হবে। এর পূর্বে ও
পরে খুৎবা দিলে খুৎবা দুরস্ত হবে না।
(২) ذكر الله
মহান
আল্লাহ পাক উনার যিকির করা। যেকোন আরবী শব্দে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করলে
খুৎবার ফরয আদায় হয়ে যাবে।
হযরত ইমাম
আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে উক্ত যিকির দীর্ঘ না হয়ে সংক্ষিপ্ত হলেও
ফরয আদায় হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে
ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে
যিকির কমপক্ষে এতটুকু দীর্ঘ হতে হবে, যাকে সাধারণভাবে খুৎবা বলে
আখ্যায়িত করা যায়।
খুৎবার
সুন্নতসমূহ :
(১) ওযূ
সহকারে খুৎবা দিতে হবে। ওযূ ছাড়া খুৎবা দেয়া মাকরূহ। ইমাম আবু ইউসূফ রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার মতে নাযায়িয।
(২)
দাঁড়ায়ে খুৎবা দিতে হবে। বিনা ওজরে বসে খুৎবা দেয়া মাকরূহ।
(৩)
উপস্থিত মুসল্লীদের দিকে মুখ করে খুৎবা দিতে হবে।
(৪)
খুৎবার পূর্বে চুপে তা’উয পাঠ করা।
(৫)
এতটুকু আওয়াজে খুৎবা দেয়া,
যাতে করে উপস্থিত সকলেই শুনতে পায়।
(৬) মহান
আল্লাহ পাক উনার হামদ حمد)) প্রশংসা দ্বারা খুৎবা আরম্ভ করা।
(৭) মহান
আল্লাহ পাক উনার সানা-সিফত অর্থাৎ গুণাবলী বর্ণনা করা।
(৮)
কালেমা শাহাদত পাঠ করা।
(৯) নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দরূদ শরীফ
পাঠ করা।
(১০)
ওয়াজ-নছীহত করা।
(১১) দুই
খুৎবার মধ্যে অল্প সময় বসা।
(১২)
দ্বিতীয় খুৎবায় পূণরায় হামদ, ছানা ও দরূদ শরীফ পাঠ করা।
(১৩)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কোন আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করা।
(১৪) সকল
মুসলিম নর॥নারীর জন্য দোয়া করা।
(১৫)
খুৎবা দেয়ার সময় লাঠী
ব্যবহার করা, কেউ কেউ খুৎবার সময় লাঠী ব্যবহার
করা বিদয়াত বলে থাকে। তাদের উক্ত মন্তব্য সম্পূর্ণ ভ্রান্ত, কেননা
সহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুৎবার সময় লাঠী মুবারক ব্যবহার
করেছেন। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
ان
النبى صلى الله عليه وسلم قام اى متو كئا على عصاء او قوس. (ابو دؤد شريف(
অর্থ : “নিশ্চয়
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (খুৎবার সময়) লাঠী মুবারক অথবা ধনুকের উপর ভর করে
দাঁড়াতেন।” (আবু দাউদ শরীফ) এবং ফিক্বাহের নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাব গায়াতুল
আওতারে উল্লেখ করা হয়,
جیسے
کھرا ھونا خطبہ مین سنت ھے اسی طرح عصاء کا لینا بھی مسنون ھے- (غایۃ الا و طار ج
১ صف ৩৮১ ، رد المحتار ج ১ صف ৮৬২ ، شامی محیط ، امداد الفتاوے و غیرہ(
অর্থ : “খুৎবার
মধ্যে দাঁড়ানো যেরূপ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত, তদ্রূপ খুৎবার সময় লাঠী ব্যবহার
করাও সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। (গায়াতুল আওতার ১ম জিঃ পৃঃ৩৮১, রদ্দুল
মোহতার ১ম জিঃ পৃঃ ৮৬২,
শামী, মুহীত্ব, ইমদাদুল ফতওয়া ইত্যাদি আরো অনেক ফিক্বাহের কিতাবসমূহে
খুৎবার সময় লাঠী ব্যবহার করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং এটাকে বিদয়াত বলা গোমরাহী ছাড়া কিছুই নয়।
(১৬)
নামায বড় করা ও উভয় খুৎবা নামাজের তুলনায় ছোট করা।
(১৭) পর
পর দু’টি খূৎবা দেয়া।
(১৮)
বিম্বরের উপর দাঁড়ায়ে খুৎবা দেয়া।
(১৯)
মুছল্লীগণ খুৎবা শুনার জন্য ইমামের দিকে মুখ করে বসা।
(২০)
দ্বিতীয় খুৎবায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম,
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত
খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য দোয়া করা।
(২১)
উপরোল্লিখীত সুন্নতসমূহ ছাড়াও আরো একটি সুন্নত রয়েছে, যা উক্ত
সুন্নতসমূহের মতই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল ও আদর্শের
ভিত্তিতে নির্ভরযোগ্য দলীল প্রমাণের মাধ্যমে সূদৃঢ় ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত। তা হলো
একমাত্র আরবী ভাষায়ই খুৎবা দেয়া।
আর
যেহেতু আরবী ভাষায় খুৎবা দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
খাছ সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত,
সেহেতু উক্ত সুন্নাতের খিলাফ অন্য ভাষায় খুৎবা দেয়া বিদয়াত
ও মাকরূহ তাহরীমী।
পবিত্র
সুন্নত উনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মনে
রাখতে হবে যে, মুসলমান শব্দের অর্থ হলো- আনুগত্যতার সাথে আত্ম সমর্পণকারী। অর্থাৎ
মুসলমানদেরকে প্রতিটি অবস্থায়ই মহান আল্লাহ পাক উনার মতে ও উনার রাসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পরিপূর্ণ
ক্বায়িম থাকতে হবে। এর ব্যতিক্রম করলে কখনো পরিপূর্ণ মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়। যেমন
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
يا ايها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة- الخ
অর্থ : “হে
ঈমানদারগণ, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর।”
অন্য
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه
فانتهوا واتقوا الله. الخ
অর্থ : “আমার
রাসূল নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যে আদর্শ নিয়ে এসেছেন,
তা আঁকড়িয়ে ধর এবং যা নিষেধ করেছেন, তার থেকে
বিরত থাক এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর।”
কাজেই
আমাদেরকে নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সুন্নাতসমূহের পুঙ্খানুপূঙ্খভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ মহান আল্লাহ পাক উনার
মুহব্বত, মারিফাত ও সন্তুষ্টি অর্জনের পূর্ব শর্ত। মহান আল্লাহর রাসূলের অনুসরণ করা
ব্যতীত আল্লাহ পাক-উনার সন্তুষ্টি অর্জন করা কোন দিনও সম্ভব নয়।”
এ
প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক ফরমান,
قل
انكنتم تحبون الله فا تبعوانى يحبب كم الله ويغفر لكم ذنو بكم والله عفور رحيم.
অর্থ : “হে
হাবীব! আপনি বলে দিন,
যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ভালবাসা পেতে চাও, তাহলে
আমাকে অনুসরণ কর। (তবে) মহান আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন এবং তোমাদের
গুণাহখাতা ক্ষমা করবেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাকারী ও দয়াশীল।”
আর
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين
المهديين. (مشكوة(
অর্থ : “তোমাদের
জন্য আমার সুন্নাত ও আমার হিদায়েত প্রাপ্ত হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত অবশ্যই পালনীয়।” (পবিত্র মিশকাত শরীফ)
কাজেই
আরবী ভাষা ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা পাঠ করে উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের
উপর আমল করা ও তার জাযা হাছিল করা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সম্ভব নয়।
তদুপরি মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
احيوا
العرب لثلثة لا نى عربى ولسان القران عربى ولسان اهل الجنة عربى.
অর্থ : “তোমরা
আরবীকে তিন কারণে ভালবাস। কেননা আমি আরবী, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষা আরবী
এবং বেহেস্তবাসী উনাদের ভাষা আরবী।”
অন্ততঃ এ
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ফযীলত ও গুরুত্বের দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের প্রত্যেকের
উচিৎ আরবী ভাষাকে সমস্ত ভাষার উপর প্রাধান্য দেয়া। কেননা আরবী ভাষা সরাসরি নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউনার সাথে সম্পর্কিত।
উনাকে সৃষ্টি না করলে কোন ভাষারও সৃষ্টি হতো না। সুতরাং আরবী ভাষাকে আমাদের অবশ্যই
প্রাধান্য দেয়া ও মুহব্বত করা উচিত। কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং আরবী ভাষাকে মুহব্বত করার
আদেশ করেছেন।
যদিও
মাতৃ ভাষাকে মুহব্বত করা ঈমানের অঙ্গ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وما ارسلنا من رسول الا بلسان قومه.
অর্থ : “আমি কোন
রাসূলকেই উনার গোত্রীয় ভাষা ছাড়া অর্থাৎ মাতৃ ভাষা ছাড়া প্রেরণ করিনি।”
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
حب اللسان من الايمان.
অর্থ : “নিজের
ভাষাকে (মাতৃভাষা) মুহব্বত করা ঈমান উনার অঙ্গ।”
আর এর
অর্থ এই নয় যে, আরবী ভাষাকে বাদ দিয়ে মাতৃভাষাকে মুহব্বত করতে হবে। বরং সমস্ত ভাষার উপর
আরবীকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ আমাদের প্রিয় রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
ভাষা আরবী, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষা আরবী এবং বেহেস্তবাসী উনাদের চিরস্থায়ী ভাষা হবে আরবী।
কাজেই প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আমাদের আরবী ভাষাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
এখানে
উল্লেখ্য যে, এই আরবী ভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য না বুঝার কারণে এবং তাকে প্রাধান্য না দেয়াতে
আজ আমরা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক বুঝ থেকে দূরে সরে আছি।
আর এই
আরবী না বুঝার কারণেই কিছু লোক খুৎবা মাতৃভাষায় দিতে হবে বলে ফতওয়া ছাপিয়ে সমাজে
ফিৎনা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। শুধু তাই নয়, এভাবে মাতৃভাষা করতে করতে দেখা
যাবে একদিন তারা ফতওয়া দেবে আযান, নামাযের সূরা-কিরায়াত ইত্যাদি বাংলা বা মাতৃভাষায় হতে হবে।
আর এটাই স্বাভাবিক,
কেননা ইসলামের শত্রুরা সবসময় চায় মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ, ফিৎনা-ফাসাদ
ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে। কাজেই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ হবে, ইসলাম
উনার শত্রুদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা।
সুতরাং
উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, খুৎবা
হলো জুমুয়ার নামাযের একটি অংশ বিশেষ। নামাযে যেরূপ আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষা
ব্যবহার করা জায়িয নেই,
খুৎবাও তদ্রুপ আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় দেয়া জায়িয নেই।
বরং আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় খুৎবা পাঠ করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।
আর এটার উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা অস্বীকার করা গুমরাহীর
নামান্তর। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মাজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক পূণ্যতার
সাক্ষ্য প্রদত্ত তিন যুগে (খাইরুল ক্বরুনে) অর্থাৎ স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস
সালাম, হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন
ও তাবে তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম যুগে আরবী ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় জুমুয়ার
খুৎবা দিয়েছেন বলে এমন কোন নযীর কেউ পেশ করতে পারবেনা। এমনকি পরবর্তীতে কোন ইমাম, মুজতাহিদ
উনাদের যুগেও আরবী ভাষা ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দিয়েছেন বলে পরিদৃষ্ট হয় না।
সুতরাং
এটার উপর হযরত ইমাম উনাদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিধায় ওটার বিরোধিতা করে আরবী
ভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় খুৎবা পাঠ করা প্রকাশ্য গুমরাহী ও পবিত্র কুরআন শরীফ-
পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী কাজ।
এ
প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ومن
يشاقق الرسول من بعد ما تبين له الهدى ويتبع غير سبيل المؤمنين هوله ما تولى. الخ
অর্থ : “যদি কারো
নিকট হিদায়েত প্রকাশ হবার পরও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করে, আর মু’মিনদের
পথ রেখে ভিন্ন পথের অনুসরণ করে, তবে আমি তাকে সেদিকেই ফিরাবো, যেদিকে সে ফিরেছে।”
শায়খ
আহমদ ইবনে আবূ সাঈদ মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার
তাফসীর উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
فجعلت مخالفة المؤمنين مثل مخالفة
الرسول فيكون اجماعهم كخبرالرسول حجة قطعية. (نورالانوار(
অর্থ : “এ পবিত্র
আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মু’মিনদের বিরোধিতাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা হিসাবে আখ্যায়ীত করা হয়েছে। অতএব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মতো তাদের
ইজমাও অকাট্য ও প্র্রামান্য দলীল বলে পরিগণিত হবে।” (নুরুল আনোয়ার)
সুতরাং
মু’মিনদের প্রচলিত পথের বিরোধিতা করে আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় খুৎবা প্রদান করা, মহান
আল্লাহ পাক তিনি ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনারই বিরোধিতা করার নামান্তর। যার থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী
দায়িত্ব, অর্থাৎ ফরয।
মোটকথা
হলো- জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবীতে দেয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এর বিপরীতে অন্য
ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। এর উপর সমস্ত ইমাম, মুজতাহিদ
উনারা একমত।
“আরবী
ব্যতীত অন্য ভাষায় (বাংলায়) খুৎবা পাঠ করা মাকরূহ তাহরীমীও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ
হওয়ার অকাট্য দলীলসমূহ”
নিম্নে
যে সমস্ত কিতাবসমূহে আরবী ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও
বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বলে উল্লেখ আছে, তার অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য
দলীলসমূহ পেশ করা হলোঃ-
(১-৩)
خطبۃء
جمعہ و عیدین کا عربی مین ھونا اور اس کے خلاف روسری زبانون مین پرھنا بدعت ھے-
(مصفی شرح مؤطا للشاہ ولی اللہ کتاب الاذکار للنووی- ودر مختار(
অর্থ : “জুমুয়া
এবং দুই ঈদের খুৎবা আরবীতে দিতে হবে। এর বিপরীতে অন্য ভাষায় দেয়া বিদয়াত।” (মুছাফফা
শরহে মুয়াত্তা লিশশাহওয়ালী উল্লাহ, কিতাবুল আজকার লিন্নুবুবী এবং
দোররুল মুখতার)
(৪)
اردو
فارسی و غیرہ مین خطبہ پرھے تو نماز ھوجائے گی مگر بکراھت تحریمی- اس لئے کہ سنت
متوارثہ کے اشعار مکروہ ھے- (شرح و قایہ ج ১ صفہ ১৭২)
অর্থ : “উর্দু-ফার্সী
ভাষায় খুৎবা দিলে নামায হয়ে যাবে, কিন্তু মাকরূহ তাহরীমী হবে। কেননা এটা প্রচলিত সুন্নতের খেলাফ।
এমনিভাবে ফার্সী এবং উর্দু পবিত্র ক্বাছিদা শরীফ উনার মধ্যে বলাও মাকরূহ।” (শরহে
বেকায়া ১ম জিঃ পৃঃ১৭২)
(৫)
فانا
لاشك فى ان الخطبه بغير العربية خلاف السنه التوارثه من النبى صلى الله عليه وسلم
والصحابة رضى الله عنه اجمعين فيكون مكروها تحريما وكذا قرائة الاشعار الفارسية
والهند يه فيها. (عمدة الرعابه ج ১ صفه ২৪২)
অর্থ : “কেননা
এতে কোন সন্দেহ নেই যে,
আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সকল হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সুন্নতের খেলাফ। সুতরাং এভাবে দেয়া মাকরূহ
তাহরীমী। অনুরূপভাবে উর্দু বা ফার্সী ক্বাছিদা শরীফ বা শের বলাও খুৎবার মধ্যে
মাকরূহ তাহরীমী।”
(ওমদাতুর রেয়ায়া ১ম জিঃ পৃঃ২৪২)
(৬)
پھر
عربی مین خطبہء جمعہ پرھہ کر اسکا ترجمہ ملکی زبان مین قبل از نماز سنانما بدعت ھے
جس سے بچنا ضروری ھے- ( درس ترمزی ج২ صفہ ২৮)
অর্থ : “অতঃপর
আরবীতে জুমুয়ার খুৎবা দিয়ে নামাযের পূর্বে তার অনুবাদ শুনানো বিদয়াত, যার থেকে
বাঁচা জরুরী।” (দরসে তিরমীযী ২য় জিঃ পৃঃ২৮১)
(৭)
غیر
عربی مین خطبہ پرھنا یا عربی کے ساتھ دوسری زبان حطبہ مین خلط کرنا خلاف سنت ھے (بھار
شریعت ج ৪ صفہ ৮০)
অর্থ : “আরবী
ছাড়া খুৎবা দেয়া অথবা আরবীর সাথে খুৎবায় অন্য ভাষা মিশানো সুন্নতের খেলাফ (বা
বিপরীত)।” (বাহারে শরীয়ত ৪র্থ জিঃ পৃঃ৮০)
(৮)
واما
كونها عربية فلاستمرار عمل المسلمين فى المشارق والمغارب به مع ان فى كثير من
الاقاليم كان المخاطبون اعجميين. (المسوى صفه ১৫৪)
অর্থ : “আরবী
ভাষায় খুৎবা এ জন্যেই দিতে হয় যে, সুচনা হতে পরবর্তী যুগসমূহে সমগ্র মুসলিম জাহানে এ নিয়ম চলে
আসছে। অথচ বহু দেশে অনারব লোকজনই খুৎবার শ্রোতা হিসাবে উপস্থিত থাকতেন।” (আল
মুসাওয়া পৃঃ১৫৪)
(৯)
عربی
کے علاوہ ھرایک زبان مین خطبہ دینا خواہ فارسی ھون یا غیر فارسی بغیر عذر و عجز کے
امام اعظم کے نزدیک جائز ھے البتہ خلاف افضل ھے (یعنی مکروہ تحریمی ھے) اور صاحبین
کے نزدیک جائز نھین؟
(فتاوی عبد
الحی) صفہ ২২৪)
অর্থ : “আরবী
ছাড়া অন্য যে কোন ভাষায়,
ফার্সী হোক অথবা ফার্সী ছাড়া যে কোন ভাষা হোক, বিনা
অপারগতায় এবং ওজরে হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকটে জায়িয, তবে
অবশ্যই উত্তমতার বিপরীত (অর্থাৎ মাকরূহ তাহরীমী) সাহেবাইনের নিকট জায়িয নেই।”(ফতওয়া আঃ
হাই, পৃঃ২২৪)
(১০)
يشترط
كونها بالعربية. (شرح الاحياء لزبيدى ج ৩ صفه ৩২৬)
অর্থ : “খুৎবা
সঠিক হওয়ার শর্ত আরবী ভাষায় হওয়া।” (শরহে এহইয়া লিয যুবাইদী ৩য় জিঃ
পৃঃ৩২৬)
(১১)
اگر
خطبہ عربی کی جگہ اردو فارسی مین پرھا جاوے تو امام صاحب کے نزدیک مکروہ تحریمی
ھوگا اور صاحبین کے نزدیک ایک قول مین خطبہ صحیح نہ ھوگا اور جبکہ خطبہ ادا نہ
ھوگا تو نماز جمعہ بھی نہ ھوگی کیونکہ جمعہ کی ادا کے شرائط مین سے خطبہ بھی ھے-
(فتاوی دار
العلوم دیوبند ج১ صفہ ২৭০)
অর্থ : “খুৎবা
যদি আরবীর স্থলে উর্দু-ফার্সী ভাষায় দেয়া হয়, তা ইমাম সাহেবের নিকটে মাকরূহ
তাহরীমী হবে এবং সাহেবাইনের অভিমতে খুৎবা শুদ্ধ হবে না এবং আদায়ও হবে না। আর খুৎবা
যখন আদায় হবে না তখন জুমুয়ার নামাজও হবে না। কেননা জুমুয়া আদায়ের শর্তসমূহের মধ্যে
একটি শর্ত হলো খুৎবা।”
(ফতওয়ায়ে দারুল উলুম ১ম জিঃ পৃঃ২৭০)
(১২-১৩)
دونون
خطبون کا عربی زبان مین ھونا اور کسی اور زبان کے اشعار و عیرہ ملادینا جیسا کہ
ھمارے زمانہ مین بعض عوام کا دستور ھے خلاف سنت مؤکدۃ اور مکروہ تحریمی ھے ( بھشتی
زیور ج ১১ صفہ ৭১ ، امداد الاحکام ج
১ صفہ ৬৩২)
অর্থ :
উভয় খুৎবা আরবী ভাষায় হতে হবে। অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া অথবা তার সাথে অন্য কোন
ভাষার ক্বাছীদা শরীফ যোগ করা যেটা আমাদের এ যুগে প্রচলিত আছে এটা সুন্নতে
মুয়াক্কাদার খেলাফ এবং মাকরূহ তাহরীমী।” (বেহেস্তী জিওর জিঃ১১ পৃঃ৮১, এমদাদুল
আহকাম ১ম জিঃ পৃঃ৬৩২)
(১৪-১৫)
خطبہ
صرف عربی نشر مین مسنون ھے اور بھی صوت سلف صالحیں اور ائمہ متبو عین سے منقول ھے
اس کا خلاف مکروہ ھے- (کفایۃ المفتی ج ৩ صفہ ১৭২، فتاوی رشیدیہ صفہ ৩৭৭)
অর্থ : “খুৎবা
শুধু আরবীতে দেয়া সুন্নত এবং এই নিয়মেই সলফে সালেহীন এবং আইম্মায়ে মাতবুইন থেকে
বর্ণিত, উনার বিপরীত করা মাকরূহ ও বিদয়াত।” (কিফায়াতুল মুফতী ৩য় জিঃ পৃঃ১৭২, ফতওয়ায়ে
রশীদিয়া পৃঃ৩৭৭)
(১৬)
خطبۃء
جمعہ عربی کے سوا کسی زبان مین پرھنا یا عربی یا عربی مین پرہ کردوسری زبان مین
اس وقت ترجمہ کرنا بدعت و ناجائز ھے-
(جواھر الفقہ
ج ১ صفہ ৩৫৮)
অর্থ : “জুমুয়ার
খুৎবা আরবী বাদে অন্য কোন ভাষায় দেয়া অথবা আরবীতে দিয়ে সাথে সাথে অন্য ভাষায়
তর্জমা করা বিদয়াত এবং নাযায়িয।” (জাওয়াহিরুল ফিকাহ ১ম জিঃ পৃঃ৩৫৮)
(১৭)
حضرت
فقھاء کرام ک فیصلہ ھے کہ خطبہء جمعہ و عیدین
عربی مین ھونا چاھے- عربی کے فلاوہ کسی اور زبان مین خطبہ پرھنا مکروہ
تحریمی ھے (فتاوی رحیمیہ ج১ صفہ ২৬১)
অর্থ :
ফিকাহবিদ উনাদের ফায়সালা হলো- জুমুয়া এবং উভয় ঈদের খুৎবা আরবী ভাষাতেই হওয়া উচিৎ।
আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী।” (ফতওয়ায়ে
রহীমিয়া ১ম জিঃ পৃঃ২৬১)
(১৮)
دو
نون خطبون کا عربیزبان مین ھونا کسی اور زبان مین خطبہ پرھنا یا اس کے ساتھ کسی
اور زبان کے اشعار و غیرۃ ملا دینا خلاف سنت مؤکدہ اور مکروہ تحریمی ھے-
)علم الفقہ ج
২ صفہ ২৮২(
অর্থ : “উভয়
খুৎবা আরবী ভাষায় দিতে হবে,
অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া অথবা অন্য কোন ভাষার ক্বাছীদা
শরীফ ইত্যাদি যোগ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদার খেলাফ এবং মাকরূহ তাহরীমী।” (ইলমুল
ফিক্বাহ ২য় জিঃ পৃঃ২৮২)
(১৯)
خطبہء
جمعہ اور عیدین و غیرہ کا عربی مین ھونا سنت اور اسکے خلاف دوسری زبانون مین پرھنا
بدعت ھے- (احسن الفتاوی صفہ ২৯৮)
অর্থ : “জুমুয়া
এবং উভয় ঈদের খুৎবা আরবীতে দেয়াই সুন্নত। এটার বিপরীতে অন্য ভাষায় দেয়া বিদয়াত।” (আহসানুল
ফতওয়া পৃঃ২৯৮)
(২০-২১) “জুমুয়ার
খুৎবা এবং ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় হওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। আরবী ব্যতীত অন্য
কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া বিদয়াত এবং মাকরূহ তাহরীমী।” (খুৎবাতুল আহকাম পৃঃ২, বেহেস্তী
গাওহার, পৃঃ৮১)
(২২-২৩) “খুৎবার
মধ্যে উর্দু ক্বাছিদা শরীফ বা বাংলা অনুবাদ করা মাকরূহ তাহরীমী।” (মজমুয়ায়ে
ফতওয়া, বাহরুল মাসায়েল,
পৃঃ৮৪)
(২৪) “অধিকাংশ
ফিক্বাহবিদ হানাফীদের মতে আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী।” (ইসলামী
ফেকাহ ১ম খন্ড, পৃঃ১২৯)
(২৫) “খুৎবা
আরবী ভাষায় দেয়া সুন্নত,
অন্য ভাষায় দেয়া মাকরূহ তাহরীমী।” (ওমদাতুল
ইসলাম পৃঃ১৪২)
(২৬) “আরবী
ব্যতীত অন্য ভাষার খুৎবা দেয়া বা অন্য ভাষার ক্বাছিদা শরীফ ইত্যাদি মিলায়ে বলা
মাকরূহ তাহরীমী।”
(সিরাতুন নাযাত পৃঃ২০৫)
উপরোক্ত
অসংখ্য, অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের বরাত দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, জুমুয়া ও
ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় পাঠ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, উনার
বিপরীত আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় যেমন- বাংলা, উর্দূ, ইংরেজী
ইত্যাদি ভাষায় জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা পাঠ করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ, এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত সুপ্রতিষ্ঠিত।
সাথে
সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে,
এ ব্যাপারে যে কারো যেকোন ইজতিহাদ বা ক্বিয়াস বাতিল ও
ভ্রান্ত হিসাবে গণ্য। আর যারা আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় (বাংলায় ভাষায়) খুৎবা পাঠ
করে এবং এ ব্যাপারে প্রচারাভিযান চালায়, তারা মিথ্যাবাদী দাজ্জালের চেলা, নফস ও
ভ্রান্ত পথের অনুসরণকারী চরম পর্যায়ের বিদয়াতী। এদের সাথে সম্পর্ক রাখা, এদের
পিছনে নামাজ পড়া ও এদেরকে সালাম দেয়া সম্পূর্ণই নাযায়েয।
মহান
আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া মোতাবেক আমল করার তৌফিক দান করুন ও
বিদয়াতীদের ফিৎনা ও সংশ্রব থেকে আমাদেরকে হিফাযত করুন। (আমীন)
[বিঃদ্র :
উপরোক্ত দলীলসমূহ ছাড়াও আমাদের নিকট আরো দলীল রয়েছে, প্রয়োজনে আমরা তা পেশ করবো
ইনশাআল্লাহ]
0 Comments:
Post a Comment