ইসলাম বিগত জীবনের সমস্ত পাপরাশিকে ক্ষমা করে দেয়-পর্ব-৫১
আরবে অন্ধকার যুগে তথা আইয়্যামে জাহিলিয়াহ বিরাজমান অবস্থায় মেয়ে সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়ার প্রথা ছিল। সেই জীবন্ত মেয়ে সন্তানদের কবর দেয়া দলের প্রধান ছিলেন হযরত দাহিয়াতুল কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে আইয়্যামে জাহেলিয়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসলেন এবং নিজ হাত দু'টি বাড়িয়ে দিলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক ধরবেন এমন সময় তিনি আবার হাত দু'টি গুটিয়ে নিলেন এবং বললেন, "হুযূর আমি আরবের বুকে মেয়ে সন্তানকে জীবিত কবর দেওয়া দলের প্রধান। আমার স্ত্রী আমার অজান্তে আমার একটি মেয়ে সন্তানকে লালন পালন করছিল। সে চলাচল করার মত বয়সে উপনীত হলে বিষয়টি আমার কাছে প্রকাশ পায়। মেয়েটির চেহারায়-কথাবার্তায় আমিও পিতৃস্নেহে অভিভূত হয়ে গেলাম। জাহেলিয়ার নীতি আমাকে বার বার তাড়া করতে লাগলো যে, তুমি আরবের বুকে মেয়ে সন্তান জীবন্ত কবর দেওয়া দলের সর্দার হয়ে পিতৃস্নেহের কাছে হেরে গেলে? পরিশেষে বাধ্য হয়ে মিথ্যে ছলনায় স্ত্রীকে বললাম, 'মেয়েকে সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজিয়ে দাও। তাকে নিয়ে দাওয়াতে যাবো।' তারপর মেয়েটিকে নিয়ে মরুময় পথ ধরে চলতে আরম্ভ করলাম। মরুময় পথে আমি ও আমার সন্তানই যাত্রী। মেয়েটির প্রতি স্নেহ-মমতা আমাকে অত্যন্ত বিচলিত করে তুলছিল। কিন্তু আমি জাহিলিয়ার নীতির কাছে হেরে গেলাম।
মেয়েটি বললো, 'আব্বা আমাকে একটু পানি দেন।' আমি বললাম, 'মা! একটু অপেক্ষা করো।' এ সুযোগেই আমার কাপড়ের নিচে লুকানো কবর দেয়ার যন্ত্রপাতি বের করে মাটি খুঁড়তে শুরু করলাম। অনেক গভীর করে উপরে উঠে এলাম। মেয়েটি তৃষ্ণার্ত নয়নে আমার পানে তাকিয়ে দেখছিল। মেয়েকে বললাম, 'দেখতো মা, পানি উঠছে কিনা?' মেয়েটি অধীর আগ্রহে তাকাতেই দু'চোখ বন্ধ করে মেয়েকে কূপের মধ্যে ফেলে দিয়ে মাটি দিতে শুরু করি। হুযূর! মেয়েটির সে কান্না আর আমাকে আব্বা! আব্বা! বলে আকুলভাবে ডাকার শব্দ আমার কানে আজও ভেসে উঠে। বলুন হুযূর! এমন পাপাত্মা
পিতা, মেয়ে সন্তানদের জীবিত কবর দেয়ার যে পাপ আমি করেছি, এমন পাপ নিয়ে ইসলাম কি আমাকে গ্রহণ করবে?"
হযরত দাহিয়াতুল কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা শুনে রহমাতুল্লিল আলামীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু'চোখ মুবারক অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। কিন্তু তিনি যেহেতু ওহী মুবারক ব্যতীত নিজ থেকে কোনো কথা বলেন না, কাজ করেন না, তাই চুপ করে থাকলেন। এমন সময় হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম আগমন করেন এবং বলেন, 'হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করুন, আল ইসলামু ইয়াহদিমু মাকানা ক্বাবলাহু, অর্থাৎ ইসলাম বিগত জীবনের সমস্ত পাপরাশিকে ক্ষমা করে দেয়।' এ ঘোষণার পর হযরত দাহিয়াতুল কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলামে দাখিল হলেন। তিনি এমন সুন্দর ও সুদর্শন ছিলেন যে, অধিকাংশ সময়ই হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম উনার সুরতে ওহী মুবারক নিয়ে আসতেন। সুবহানাল্লাহ!
0 Comments:
Post a Comment