পবিত্র সূরা ইনশিক্কাক্ক শরীফ উনার ১০ নং আয়াত শরীফ ও পবিত্র সূরা হাক্কাহ্ শরীফ উনার ২৫ নং আয়াত শরীফ উনাদের বর্ণনার মধ্যে কোন বৈপরিত্য নেই। বরং গণ্ডমূর্খ নাস্তিকরা ফিতনা বিস্তারের উদ্দেশ্যে এ ধরণের প্রশ্নের অবতারণা করেছে।

পবিত্র সূরা ইনশিক্কাক্ক শরীফ উনার ১০ নং আয়াত শরীফ ও পবিত্র সূরা হাক্কাহ্ শরীফ উনার ২৫ নং আয়াত শরীফ উনাদের বর্ণনার মধ্যে কোন বৈপরিত্য নেই। বরং গণ্ডমূর্খ নাস্তিকরা ফিতনা বিস্তারের উদ্দেশ্যে এ ধরণের প্রশ্নের অবতারণা করেছে।

নাস্তিকদের আপত্তি ৭ : শেষ বিচারের দিনে অবিশ্বাসির দেহের কোথায় তার নিবন্ধগ্রন্থ রাখা হবে? - কাধে (Quran 84:10)  নাকি বাম হাতে (Quran 79:25)!

খণ্ডণ : মূর্খ নাস্তিকরা শেষ বিচারের দিনে কাফিরদের আমলনামা দেহের কোন অংশে প্রদান করা হবে এ বিষয়ে ফিতনা তৈরীর উদ্দেশ্যে যে ২ খানা আয়াত শরীফ উল্লেখ করেছে, তার প্রথম আয়াত শরীফ হচ্ছে পবিত্র সূরা ইনশিক্কাক্ক শরীফ উনার ১০ নং আয়াত শরীফ (Quran 84:10), আর দ্বিতীয় আয়াত শরীফ হচ্ছে পবিত্র সূরা নাযিয়াত শরীফ উনার ২৫ নং আয়াত শরীফ (Quran 79:25) । কিন্তু পবিত্র সূরা নাযিয়াত শরীফ উনার ২৫ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আমলনামা প্রদানের বিষয়ে কোন বর্ণনাই নেই। বরং উক্ত আয়াত শরীফ খানা হবে পবিত্র সূরা হাক্কাহ্ শরীফ উনার ২৫ নং আয়াত শরীফ (Quran 69:25)

পবিত্র সূরা নাযিয়াত শরীফ উনার ২৫ নং আয়াত শরীফ নিচে অর্থ সহ উল্লেখ করা হলো-

فَأَخَذَهُ اللهُ نَكَالَ الْاٰخِرَةِ وَالْاُوْلَ

অর্থ : “অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে পরকালের ও ইহকালের শাস্তি দিলেন।”

এখানে ফেরাউনের শাস্তি সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে, পরকালে আমলনামার দেহের কোথায় প্রদান করা হবে সে বিষয়ে আলোচিত হয়নি।

পরকালে আমলনামার দেহের কোথায় প্রদান করা হবে সে বিষয়ে পবিত্র সূরা ইনশিক্কাক্ক শরীফ উনার ১০ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ظَهْرِهِ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ নাস্তিকরা করেছে “কাঁধ”। সাধারণভাবে কাঁধ বুঝাতে আরবীতে كتف ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বস্তুত এর অর্থ হবে পিছন দিক থেকে বা পিঠের দিক থেকে। আবার পবিত্র সূরা হাক্কাহ্ শরীফ উনার ২৫ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে (যদিও তারা পবিত্র সূরা নাযিয়াত শরীফ উনার ২৫ নং আয়াত শরীফ উল্লেখ করেছে) شِمَالِهِ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে “বাম হাত”। যদিও আরেকটি অর্থ “উত্তর দিক” বুঝায়।

নিম্নে আয়াত শরীফদ্বয় অর্থ সহ উল্লেখ করা হলো-

وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ

অর্থ : “এবং যাকে তার আমলনামা তার পৃষ্ঠের পশ্চাৎদিক হতে দেওয়া হবে।” (পবিত্র সূরা ইনশিক্কাক্ক শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১০)

وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِشِمَالِهِ فَيَقُوْلُ يَا لَيْتَنِيْ لَـمْ أُوْتَ كِتَابِيَهْ

অর্থ : “আর যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, হায়! আমাকে যদি দেওয়াই না হতো আমার আমলনামা।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৫)

অত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে-

وَيَنْقَلِبُ إِلى أَهْلِهِ مَسْرُوراً وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتابَهُ وَراءَ ظَهْرِهِ أخرج البيهقي عن مجاهد فى هذه الآية قال يجعل شماله وراء ظهره فياخذ بها كتابه قال ابن السابت بلوى يده اليسرى من صدره انى خلف ظهره.

অর্থ : “ وَيَنْقَلِبُ إِلى أَهْلِهِ مَسْرُوراً وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتابَهُ وَراءَ ظَهْرِهِ এই আয়াত শরীফ উনাদের ব্যাখ্যায় হযরত বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন, পৃষ্ঠের পশ্চাৎ দিক থেকে আমলনামা দেওয়ার ব্যাপারটি হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে- পাপিষ্ঠদের বাম হাত নিয়ে যাওয়া হবে তাদের পিঠের পশ্চাতে। তারপর ওই হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে তাদের আমলনামা। ইবনে সায়েব বলেছেন, তাদের বাম হাত তাদেরই বক্ষভেদ করে নিয়ে যাওয়া হবে পিঠের দিকে। তারপর ওই হাতে দেওয়া হবে তাদের আমলনামা।” (তাফসীরে মাজহারী : সূরা ইনশিক্কাক্ক শরীফ উনার ১০ নং আয়াত শরীফ উনার তাফসীর)

وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتابَهُ بِشِمالِهِ وهو الكافر يجعل شماله وراء ظهره فياخذ بها كتابه كذا أخرج البيهقي عن مجاهد قال ابن اسائب يلوى يده اليسرى خلف ظهره ثم يعطى كتابه وقيل ينزع يده اليسرى من صدره إلى خلف ظهره فَيَقُولُ لقبيح ما يرى فيه من الأعمال وسوء العاقبة يا لَيْتَنِي المنادى محذوف أى يا قوم ليتنى

 অর্থ : وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتابَهُ بِشِمالِهِ এই আয়াত শরীফ উনার মর্মার্থ হচ্ছে- যাদেরকে বাম হতে আমলনামা দেওয়া হবে তারা মনের দুঃখে বলতে থাকবে, হায়! আমাদেরকে আমলনামা যদি দেওয়াই না হতো। বায়হাক্বী বলেছেন, তখন সত্যপ্রত্যাখ্যানকারীদের বাম হাত পিঠের পশ্চাতে নিয়ে তাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে তাদের আমলনামা। ইবনে সায়েব বলেছেন, তাদের বাম হাত মুচড়ে পিছনের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, তারপর ওই হাতে গুঁজে দেওয়া হবে তাদের অপকর্মসমূহের বিবরণলিপি। এরকমও বলা হয়েছে যে, তখন তাদের বাম হাত তাদের বক্ষ ভেদ করে পিঠের পশ্চাতে বের করে তাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে তাদেরই কৃতকর্মের বিবরণী।” (তাফসীরে মাজহারী : সূরা হাক্কাহ্ শরীফ উনার ২৫ নং আয়াত শরীফ উনার তাফসীর)

সুতরাং উক্ত আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের ব্যাখ্যায় বুঝা যাচ্ছে যে, পরকালে কাফিরদেরকে তাদের বাম হাত পশ্চাতে নিয়ে বা বাম হাত মুচড়ে পিছনের দিকে নিয়ে কিংবা বাম হাত তাদের বক্ষ ভেদ করে পিঠের পশ্চাতে বের করে তাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে তাদের আমলনামা। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ظَهْرِهِ শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন। এর দ্বারা এটা বুঝায় না যে, পরকালে কাফিরদেরকে তাদের কাঁধের উপরে আমলনামা রাখা হবে।

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র সূরা ইনশিক্কাক্ক শরীফ উনার ১০ নং আয়াত শরীফ ও পবিত্র সূরা হাক্কাহ্ শরীফ উনার ২৫ নং আয়াত শরীফ উনাদের বর্ণনার মধ্যে কোন বৈপরিত্য নেই। বরং গণ্ডমূর্খ নাস্তিকরা ফিতনা বিস্তারের উদ্দেশ্যে এ ধরণের প্রশ্নের অবতারণা করেছে।


0 Comments: