ক্বিয়ামতের সময় শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে ২টি, প্রথম ফুঁৎকারের সাথে সাথে আসমান ও যমীনের সমস্ত জীব অচেতন বা অজ্ঞান হয়ে যাবে এবং এই অজ্ঞান অবস্থায় সবাই মারা যাবে আর দ্বিতীয় ফুঁৎকারের সাথে সাথে সমস্ত মৃত যার যার স্থানে জীবিত হয়ে দণ্ডায়মান হয়ে যাবে।

ক্বিয়ামতের সময় শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে ২টি, প্রথম ফুঁৎকারের সাথে সাথে আসমান ও যমীনের সমস্ত জীব অচেতন বা অজ্ঞান হয়ে যাবে এবং এই অজ্ঞান অবস্থায় সবাই মারা যাবে আর দ্বিতীয় ফুঁৎকারের সাথে সাথে সমস্ত মৃত যার যার স্থানে জীবিত হয়ে দণ্ডায়মান হয়ে যাবে।

 নাস্তিকদের আপত্তি ৫ : কেয়ামতের সময় কতগুলো শিঙ্গায় ফুঁঁ দেওয়া হবে? - দুটোয় (Quran 79:7)  নাকি একটায় (Quran 69:13)!

খণ্ডন : ক্বিয়ামতের সময় শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে ২টি। প্রথম ফুঁৎকারকে বলা হয় نَفْخَةٌ صَعِقَ আর দ্বিতীয় ফুঁৎকারকে বলা হয় نَفْخَةٌ بعث, কেননা, প্রথম ফুঁৎকারের সাথে সাথে আসমান ও যমীনের সমস্ত জীব অচেতন বা অজ্ঞান হয়ে যাবে এবং এই অজ্ঞান অবস্থায় সবাই মারা যাবে আর দ্বিতীয় ফুঁৎকারের সাথে সাথে সমস্ত মৃত যার যার স্থানে জীবিত হয়ে দণ্ডায়মান হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاءَ اللَّـهُ ۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَىٰ فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنظُرُونَ

অর্থ : “আর শিংগায় ফুঁঁক দেয়া হবে, ফলে আসমান ও যমীনে যারা আছে সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে, তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা করেন। অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দ-ায়মান হয়ে দেখতে থাকবে।” (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৮)

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ اَرْبَعُوْنَ قَالَ اَرْبَعُوْنَ يَوْمًا قَالَ اَبَيْتُ قَالَ اَرْبَعُوْنَ شَهْرًا قَالَ اَبَيْتُ قَالَ اَرْبَعُوْنَ سَنَةً قَالَ اَبَيْتُ قَالَ ثُـمَّ يُنْزِلُ اللهُ مِنْ السَّمَاءِ مَاءً فَيَنْبُتُوْنَ كَمَا يَنْبُتُ الْبَقْلُ لَيْسَ مِنَ الاِنْسَانِ شَيْءٌ اِلَّا يَبْلَى اِلَّا عَظْمًا وَاحِدًا وَهُوَ عَجْبُ الذَّنَبِ وَمِنْهُ يُرَكَّبُ الْـخَلْقُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রথম ও দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুৎকারের মধ্যে চল্লিশের ব্যবধান হবে। (হযরত আবূ হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার) জনৈক ছাত্র বললেন, চল্লিশ বলে- ৪০ দিন বোঝানো হয়েছে কি? তিনি বলেন, আমি অস্বীকার করলাম। তারপর পুনরায় তিনি জিজ্ঞেস করলেন, চল্লিশ বলে ৪০ মাস বোঝানো হয়েছে কি? তিনি বলেন, এবারও অস্বীকার করলাম। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ৪০ বছর বোঝানো হয়েছে কি? তিনি বলেন, এবারও আমি অস্বীকার করলাম। এরপর মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করবেন। এতে মৃতরা জীবিত হয়ে উঠবে, যেমন বৃষ্টির পানিতে উদ্ভিদরাজি উৎপন্ন হয়ে থাকে। তখন শিরদাঁড়ার হাড় ছাড়া মানুষের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পচে গলে শেষ হয়ে যাবে। ক্বিয়ামতের দিন ঐ হাড়খ- থেকেই আবার মানুষকে সৃষ্টি করা হবে।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুত তাফসীর : হাদীছ শরীফ নং ৪৯৩৫)

অত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দুই ফুঁৎকারের মধ্যবর্তী সময়কাল স্পষ্টভাবে বর্ণিত না হলেও, এই হাদীছ শরীফ খানা হযরত আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “আলবা’ছ” কিতাবে উল্লেখ করেছেন। সেখানে স্পষ্ট করেই ৪০ বছরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এই দুই ফুঁৎকারের মধ্যে প্রথম ফুঁৎকার হঠাৎ শুরু হয়ে একযোগে সারা পৃথিবীতে একটানা এর আওয়াজ চলতে থাকবে এবং সবার মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আর তাই এই প্রথম ফুঁৎকারকে نَفْخَةٌ وَاحِدَةٌ ‘নাফখ¦তুঁও ওয়াহিদাহ্’ বলা হয়েছে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ (Quran 69:13)  উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

فَاِذَا نُفِخَ فِى الصُّوْرِ نَفْخَةٌ وَاحِدَةٌ

অর্থ : “যখন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে, একটি মাত্র ফুঁৎকার।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)

এছাড়াও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে প্রথম ফুঁৎকারকে رَاجِفَةُ ‘রযিফাহ্’ বলা হয়েছে আর দ্বিতীয় ফুঁৎকারকে رَادِفَةُ ‘রদিফাহ্’ বলা হয়েছে। 

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ (Quran 79:6-7)  উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ. تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ.

অর্থ : “যেদিন প্রকম্পিত করবে প্রকম্পিতকারী। অতঃপর পশ্চাতে আসবে পশ্চাদগামী।” (পবিত্র সূরা নাযি‘আত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬-৭)

অত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে প্রথম ফুঁৎকারকে رَاجِفَةُ ‘রযিফাহ্’ বলার কারণ হলো, ওই ফুঁৎকারে শুরু হবে ভূকম্পন। সকল প্রাণী ঢলে পড়বে মৃত্যুর কোলে। আর দ্বিতীয় ফুঁৎকারকে رَادِفَةُ ‘রদিফাহ্’ বলার কারণ হলো, ওই ফুঁৎকার হবে প্রথম ফুঁৎকারের অনুগামী।

এছাড়াও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে দ্বিতীয় ফুঁৎকারকে زَجْرَةٌ وَاحِدَةٌ ‘যাজ্বরাতুঁও ওয়াহিদাহ্’ বা ‘এক বিকট আওয়াজ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَاِنَّـمَا هِىَ زَجْرَةٌ وَاحِدَةٌ

অর্থ : “অতএব, এটি নিশ্চয়ই হবে একটি মহানাদ বা মহাগর্জন।” (পবিত্র সূরা নাযি‘আত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)

الزجر ‘যাজ্বর’ শব্দ মুবারক উনার একটি অর্থ হুঙ্কার দেয়া। যেমন বলা হয়-  زجرته فانزجر‘যাজ্বরাতুহু ফাআনযাজ্বার’ অর্থাৎ আমি তার প্রতি হুঙ্কার ছেড়েছি, ফলে সে বের হয়ে গিয়েছে। অত্র আয়াত শরীফ উনার মর্মার্থও তদ্রুপ। অর্থাৎ শিঙ্গার বিকট আওয়াজ শুনে তখন মানুষেরা বের হয়ে পড়বে তাদের আপন আপন সমাধি থেকে।

আবার কখনো কখনো الزجر ‘যাজ্বর’ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয় শুধু আওয়াজের ক্ষেত্রে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا

অর্থ : “অতঃপর আওয়াজের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শনকারীদের।” (পবিত্র সূরা ছফ্ফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

আবার কখনো الزجر ‘যাজ্বর’ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয় বের করে দেয়া বা প্রত্যাখ্যান করা বা অবজ্ঞা করা অর্থে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 

كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ فَكَذَّبُوا عَبْدَنَا وَقَالُوا مَجْنُونٌ وَازْدُجِرَ

অর্থ : “তাদের পূর্বে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার সম্প্রদায়ও মিথ্যারোপ করেছিল। তারা মিথ্যারোপ করেছিল আমার বান্দা হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি এবং বলেছিল- এ তো উম্মাদ। উনাকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল।” (পবিত্র সূরা ক্বামার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯) 

বস্তুত, পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ উনার ১৩ নং আয়াত শরীফ (Quran 69:13)  উনার মধ্যে وَاحِدَةٌ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হতে দেখে ফিতনা বিস্তারকারী নাস্তিকরা ইচ্ছাকৃতভাবে পবিত্র সূরা নাযি‘আত শরীফ উনার ৭ নং আয়াত শরীফ (Quran 79:7)  উনার সাথে তুলনা করে বুঝাতে চাচ্ছে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে। নাঊযূবিল্লাহ।

কিন্তু পবিত্র সূরা নাযি‘আত শরীফ উনার ৭ নং আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় অপর আয়াত শরীফ- পবিত্র সূরা নাযি‘আত শরীফ উনার ১৩ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যেও وَاحِدَةٌ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, যা ফিতনাবাজ নাস্তিকরা সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছে। আর এর মাধ্যমে নাস্তিকদের ফিতনা বিস্তারের অপকৌশলের মুখোশ উন্মোচিত হলো।


0 Comments: