পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ
পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া। হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের
অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক
তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে
এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” এমন সব লিখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক। তদ্রুপ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” হিজাব বা
পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ
বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। কেননা, প্রথমতঃ কিছু লোক “কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্ম” অর্থাৎ
কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ
বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে
আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা
খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক) পাশাপাশি কিছু বাতিল ফিরকাভূক্ত
অখ্যাত নামধারী ইসলামী মাসিকেও অনুরূপ মন্তব্য করা হয়। এছাড়া অনেক নামধারী
ওয়ায়েযও এরূপ বলে থাকে। অথচ তাদের উক্ত
বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও
ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও
ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে। খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা মূলতঃ শরীয়তের
দৃষ্টিতে মহিলাদের খাছ পর্দা হলো- ১. মহিলারা সর্বদাই ঘরে অবস্থান করবে। ২. ঘরে
অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই গায়রে মাহ্রামদের সাথে দেখা দিতে
পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা
পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। ৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল
ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে
মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭. প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা
বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে কথা বলবে, নরম সূরে কথা বলবে না। এটাই খাছ
শরয়ী হিজাব বা পর্দা। আর এটাই শরীয়তের নির্দেশ।
অতএব, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুনাহে গুনাহ্গার
হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, কতিপয়
নামধারী পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ,
মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের
সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে,
ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা
ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ‘ছূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার
উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে
আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ‘ছূ’ আবুল ফযল, ফৈজী ও
মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের
উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম
ফতওয়া দিয়েছিল। বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘ছূ’ তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল
হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক।
দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম
কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া
দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা। যেমন হাদীছ শরীফে
ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى اله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذا بون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤيكم فاياكم واياهم لا يضلونكم وا يفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ
হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের
নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের
বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের
থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে
পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ,
শরহুন্ নববী) স্মর্তব্য যে, ঐ সকল দাজ্জালের চেলা নামক
তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ,
মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে
আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই।
যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে? অতএব, উল্লিখিত
উলামায়ে ‘ছূ’দের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের
ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। অতএব, সকলেই
যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম
অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি
ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার
ভিতর আসতে পারে, তাই “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”
“হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”
দেয়া হলো। আল্লাহ
পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা
প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্জ
(৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে
হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন।
কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু
স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি
বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা
পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও
লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) ফিক্বাহ ও ফতওয়ার আলোকে হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ
পুর্ববর্তী
সংখ্যাগুলোতে উল্লেখকৃত যে সমস্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা ‘হিজাব বা
পর্দা’ ফরয প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু
বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা পর্দা নয়। বরং তার সাথে সাথে
আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহে উল্লিখিত এবং সংশ্লিষ্ট সকল হুকুম-আহকাম সমূহ মেনে
চলার নামই হচ্ছে ‘শরয়ী হিজাব বা পর্দা।’
যেমন, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম
ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা, মাহরামদের সামনেও শালীনতা বজায়
রাখা, চলাচলের সময় পুরুষ মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকে অবনত রাখা, নিজেদের
লজ্জাস্থানকে হিফাযত করা,
বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পরপুরুষকে না শোনানো, প্রয়োজনে
কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা
বলা, গাইরে মাহরামের সামনে মহিলাদের চেহারা হাত ও পা সহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা, ঘরে-বাইরে
যে কোন খানে পরপুরুষ থেকে পূর্ণ সংরক্ষণে থাকা ইত্যাদি সবই হিজাব বা পর্দার
অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ কুরআন শরীফের আলোকে যেরূপ উল্লিখিত বিষয়গুলো ফরযে আইন
প্রমাণিত হয়েছে। তদ্রুপ হাদীছ শরীফের আলোকেও তা ফরযে আইন প্রমাণিত হয়। শুধু তাই নয়, ফিক্বাহ
বা ফতওয়ার কিতাবের বর্ণনা দ্বারাও হিজাব বা পর্দা এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ
ফরযে আইন প্রমাণিত হয়। হিজাব বা পর্দা সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহের
বর্ণনা বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ
ও ফতওয়ার কিতাব সমূহ থেকে হিজাব বা পর্দা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহের বর্ণনা তুলে
ধরলে ‘শরয়ী হিজাব বা পর্দার’
পরিচয় ও হুকুম-আহকাম আরো উজ্জলভাবে ফুটে উঠবে। তাই নিম্নে
বিশ্বখ্যাত, নির্ভরযোগ্য,
অকাট্য, প্রামাণ্য ও সর্বজনমান্য ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে হিজাব বা পর্দা ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। গাইরে মাহরামদের সামনে মহিলাদের সমস্ত শরীর
ঢেকে রাখা ফরযে আইন গাইরে মাহরাম তথা যাদেরকে বিবাহ করা হালাল কিন্তু দেখা করা
হারাম, এমন মহিলার মাথা থেকে পাঁ পর্যন্ত কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গাইরে মাহরামকে দেখানো
জায়িয নেই। কারণ বেগানা পুরুষদের সামনে মহিলাদের সমস্ত শরীর আবরণীয় বা পর্দার
অধীন। ঘরে হোক বা বাইরে হোক, প্রকাশ্যে হোক বা নির্জনে হোক, কোন
অবস্থাতেই বেগানা পুরুষের সামনে কোন অঙ্গ প্রকাশ করা জায়িয নেই। বরং সম্পূর্ণ
হারাম ও নাজায়িয। নিম্নে এ সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলোঃ [১৭৭৬]
يايها انبى قل لازواجك وبنتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن ذلك ادنى ان يعرفن فلايؤذين وكان الله غفورا رحيما. (سورة الاحزاب ৫৯) অর্থঃ- “হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল
মু’মিনীনগণকে, কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের মুখমণ্ডলের উপর
ঝুলিয়ে রাখে। এতে তাদেরকে চিনা সহজ হবে। ফলে তাঁদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্
পাক ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।”
(সূরা আহযাব/৫৯) [১৭৭৭]
جلابيبهن: جمع جلباب، وهو الثوب الذى يستر جميع البدن ........ وقيل: هو الملحفة و كل ما يغطى سائر البدن. (تفسير ايات الاحكام للصابونى ج ২ ص ৩৭৪)
অর্থঃ- “جلابيب"‘জালাবীব’ শব্দটি
ভ্রব্দৈব্জব্দ ‘জিলবাব’ শব্দের جمعø বা বহুবচন। ‘জিলবাব’ এমন
কাপড়কে বলা হয়, যা সমস্ত শরীর ঢেকে নেয়। কারো মতেঃ তা এমন বড় ধরণের চাদর, যা সমস্ত
দেহ আবৃত করে নেয়।”
(তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ৩৭৪ পৃষ্ঠা)
[১৭৭৮]
قال ابن عباس: امر المؤمنين ان يغطين رعو سهن ووجوههن بالجلابيب الا عينا واحدة ليعلم انهن حرائر. والخلاصة: فان الجلباب هو الذى يستر جميع بدن المرأة، وهو يشبه الملاءة (الملحفة) المعروفة فى زماننا. (تفسير ايات الاحكام ج ২ ص ৩৭৫)
অর্থঃ- “হযরত
আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন; মু’মিনগণের
স্ত্রীগণকে নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা যেন তাদের মাথা, চেহারা এবং সমস্ত শরীর চাদর
দ্বারা আবৃত করে বাইরে বের হয়। তবে একটি চক্ষু খোলা রাখতে পারবে। যাতে বুঝা যায় যে, তারা
স্বাধীনা। মূল বক্তব্য হচ্ছে; নিশ্চয়ই ‘জিলবাব’ হচ্ছে এমন কাপড় যা দ্বারা মহিলাদের সমস্ত শরীর আবৃত হয়ে
যায়। আর তা আমাদের যামানায় বোরকা হিসেবে পরিচিত।” (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম ২য় জিঃ ৩৭৫
পৃষ্ঠা) [১৭৭৯-১৭৮২]
الحكم الثانى: ماهى كيفية الحجاب؟ امر الله المؤمنات بالحجاب وارتداء الجلباب صيانة لهن وحفظا. وقد اختلف اهل التأويل فى كيفية هذا التستر على اقوال: فاخرج ابن جرير الطبرى عن ابن سيرين انه قال: سالت عبيدة السلمانى عن هذه الاية (يدنين عليهن من جلابيبهن) فرفع ملحفة كانت عليه فتقنع بها. وغطى راسه كله حتى بلغ الحاجبين. وغطى وجهى (تفسير ايات الاحكام ج ২ ص ৩৮১، تفسر الطبرى. تفسير الخازن، حاشية الجمل على الجلالين)
অর্থঃ- “দ্বিতীয়
হুকুমঃ হিজাব বা পর্দা করার পদ্ধতি কি? জাওয়াবঃ আল্লাহ্ পাক মু’মিনা
মহিলাগণকে হিজাব বা পর্দার নির্দেশ এবং বাইরে বের হওয়ার সময় পুরো শরীর ঢেকে থাকে
এমন কাপড় পরিধান করার নির্দেশ দিয়েছেন তাদের ইজ্জত-সম্মান, মর্যাদা
রক্ষা বা হিফাযত করার জন্যই। ব্যাখ্যা কারকগণ এই পর্দার পদ্ধতি সম্পর্কে ইখতিলাফ
করেছেন। অর্থাৎ এ ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে। হযরত
ইবনু জারীর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনু সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে
বর্ণনা করেছেন যে,
তিনি (ইবনু সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন: আমি হযরত
উবাইদা সালমানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে يدنين عليهن من جلابيبهن এ আয়াত শরীফের তাফসীর
জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি একটি বড় ধরণের চাদর নিয়ে যা নিজের কাছে ছিলো তা মাথায়
দিলেন, তা দ্বারা পুরো মাথা আবৃত করলেন এবং তাঁর পুরো শরীর আচ্ছাদিত হয়ে গেল এবং তার
মুখমণ্ডলও ঢাকলেন। (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ৩৮১ পৃষ্ঠা, তাফসীরুত্
ত্ববারী, তাফসীরুল্ খাযিন,
হাশিয়াতুল জামাল্ আলাল্ জালালাইন) [১৭৮৩]
(১) الجاب مفروض على جميع نساء المؤمنين وهو واجب شرعى محتم. (২) بنات الرسول ونساؤه الطاهرات هن الاسوة والقدوة لسائر النساء. (৩) الجلساب الشرعى يجب ان يكون ساترا للزينة والثياب واجميع البدن. (৫) فى ارتداء الحجاب الشرعى صيانة للمرأة، وحماية للمجتمع من ظهور الفساد، وانتشار الفاحشة. (৬) على المسلمة ان تتمسك باوامر الله، تتأدب بالادب بالادب الا جتماعية التى فرضضضها الاسلام. (৭) الله رحيم بعباده يشرع لهم من الاحكام مافيه خيرهم وسعادتهم فى الدارين. (تفسير ايات الا حكام للصابونى ج ২ ص ৩৮২، ৩৮৭)
অর্থঃ- “(১) সকল মু’মিনগণের
স্ত্রীগণের অর্থাৎ মহিলাগণের জন্য পর্দা করা ফরযে আইন। এটা শরীয়তের স্থির
সিদ্ধান্তে ওয়াজিব। (২) হযরত রসূলুল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
কন্যাগণ এবং তাঁর স্ত্রী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ সমস্ত মহিলাদের জন্য
আদর্শ এবং নমুনা। (৩) ‘শরয়ী জিলবাব’
বা আবরণ বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক মহিলার জন্য
ওয়াজিব। যা মহিলার সৌন্দর্য, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে বা ঢেকে রাখে।
(৫) শরয়ী হিজাব পালন করার মধ্যে মহিলাদের জন্য সতীত্ব সংরক্ষণ রয়েছে। আর
ফিৎনা-ফাসাদ ছড়ানো থেকে এবং অশ্লীলতা-অশালীনতার প্রসার থেকে সমাজ হিফাযত হয়ে থাকে।
(৬) মুসলমান মহিলার জন্য আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশসমূহ আকড়ে ধরা ফরয। আর সেগুলো
আদবের সাথে পালন করা,
যা দ্বীন ইসলামে ফরয করা হয়েছে। (৭) আল্লাহ্ পাক তাঁর
বান্দাগণের প্রতি দয়াশীল যে, তাদেরকে এমন সমস্ত শরয়ী আহকাম দিয়েছেন যাতে তাদের জন্য
কল্যাণ এবং ইহ্কাল ও পরকালের মঙ্গল নির্দিষ্ট রয়েছে। (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্
ছাবূনী ২য় জিঃ ৩৮৬,
৩৮৭ পৃষ্ঠা) [১৭৮৪-১৭৮৬]
الجلابيب جمع جلباب وهو على ماروى عن ابن عباس رضى الله عنه الذى يستر من فوق على اسفل. وقال ابن جبير: المقنعة (ماتغطى به المرأة راسها- قاموس) وقيل: الملحقة (اللباس فوق سائر اللباس من دثار البرد وهحوه كاللحاف- قاموس) وقال ابن حزم فى المحلى (৩: ২১৭) والجلباب فى لغة العرب التى خاطبنا بها رسول الله صلى الله عليه وسلم هوما غطى جميع الجسم لابعضه. قيل: كل ثوب تلبسه المراة فوق ثيابها. ......... وقيل: وهى الملحفة وكل ما يستربه- اى يغطين بها وجوههن وابدانهن اذا برزن لداعية من الدواعى. (احكام القران للشفيع والتهانوى ج ৩ ص ৪১০، ৪১১، محلى ج ৩ ص ২১৭، قاموس)
অর্থঃ- جلابيب ‘জালাবীব’ শব্দটি جلباب ‘জিলবাব’ শব্দের
বহুবচন। আর তা হচ্ছে যা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বর্ণনা করেছেন, জিলবাব হচ্ছে যা মাথা থেকে পাঁ পর্যন্ত ঢেকে রাখে। হযরত ইবনু জুবাইর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, জিলবাব হলো, যার দ্বারা মহিলারা তাদের মাথা
ঢেকে রাখে- কামূস। কেউ কেউ বলেন, এমন পোশাক যা শরীরের সমস্ত কাপড়ের উপর পড়া হয়, যেমন
ঠাণ্ডার দিনে কম্বল পড়া হয়। কামূস। ইবনু হাযম
তাঁর ‘মাহাল্লী’ নামক কিতাবে ৩য় জিঃ ২১৭ পৃষ্ঠায় বলেন, আরবী পরিভাষায় ‘জিলবাব’ হলো- যা
পরিধান করে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে খুত্ববা
দিতেন। যা সমস্ত শরীর ঢেকে নিত। আংশিক নয়। কারো মতেঃ প্রত্যেক ঐ কাপড়কে ‘জিলবাব’ বলে, মহিলারা
যা তাদের পোশাকের উপর পরিধান করে থাকে। অর্থাৎ বোরকা। ..... আবার কারো মতে, তা হচ্ছে
যা দ্বারা ঢাকা হয় অর্থাৎ আবৃত করে রাখা হয় তাদের মুখমণ্ডল এবং সমস্ত শরীর। যখন
বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বেড়োতেই হয়।” (আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত
থানুবী ৩য় জিঃ ৪১০,
৪১১ পৃষ্ঠা, মাহাল্লী ৩য় জিঃ ২১৭ পৃষ্ঠা
কামূস) [১৭৮৭]
دلت الاية على مسائل: الاولى: وجوب التجلبب او التبر قع للنساء بحيث يستر جميع البدن اذا مست الحاجة الى الخروج من اليت. الثانى وجوب ستر الوجه للنساء اذا خيف الفتنة. الثالثة: جواز الخروج من البيت للنساء عند عند الضرورات الطبعية او الشرعية. (تفسير احكام القران للشفيع والتهانوى ج ৩ ص ৪১৬، ৪১৭)
অর্থঃ- “এই আয়াত শরীফ যে সমস্ত মাসয়ালা
দালালত করে তা হচ্ছে,
প্রথম মাসয়ালাঃ- যখন বিশেষ কোন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার
জরুরত হবে, তখনই মহিলাদের জন্য সমস্ত শরীর আপাদমস্তক ঢেকে বের হওয়া ওয়াজিব। দ্বিতীয়
মাসয়ালাঃ যদি ফিৎনার আশঙ্কা হয়, (কোন সময়েই মহিলাদের চেহারা ফিৎনা থেকে খালি নয়) তবে
মহিলাদের মুখ ঢেকে রাখা ওয়াজিব। তৃতীয় মাসয়ালাঃ মহিলাদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনে অথবা
শরয়ী প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া জায়িয।” (তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন লিশ্ শফী
ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪১৬,
৪১৭ পৃষ্ঠা) আল্লাহ্
পাক রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, [১৭৮৮]
وقرن فى بيوتكن ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى. واقمن الصلنة واتين الزكوة واطعن اله ورسول له انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويططهر كم تطهيرا.
অর্থঃ- “আপনারা
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবেন। জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করবেন না।
নামায কায়িম করবেন,
যাকাত প্রদান করবেন এবং আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য করবেন। হে আহলে বাইতগণ! আল্লাহ্ পাক
চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” (সূরা
আহযাব/৩৩) [১৭৮৯]
(وقرن فى بيوتكن) اى الزمن بيوتكن ولاتخرحن لغير حاجة. ولا تفعلن كما تفعل الغافلات، المتسكعات فى الطرقات لغير ضرورة (ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى) اى لاتظهرن زينتكن ومحاسنكن للاجانب مثل ماكان نساء الجاهلية يغعلن، حيث كانت تخرج المراة الى الاسواق مظهرة لمحا سنها، كاشفة مالا يليق كشفه من بدنها، قال قتادة: كانت لهن مشية فيها تكشر ةتغنخ فنهى الله تعالى عن ذلك. (صفوة التفاسير للصابونى ج ২ ص ৪৮১)
অর্থঃ- “(আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন)
অর্থাৎ ঘরে অবস্থান আপনাদের জন্য ফরয করে নেন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেড়াবেন না।
গাফিল মহিলারা যেরকম করে সেরকম করবেন না। জরুরত ছাড়া রাস্তায় বেড়াবেন না।
(জাহিলিয়াত যুগের নারীদের মত নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবেন না) অর্থাৎ
নিজেদের রূপ, সৌন্দর্য পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করবেন না, যেমনিভাবে জাহিলিয়াত যুগের
মহিলারা করেছিল। সেসময়ের মহিলারা প্রকাশ্যভাবে সেজে-গুঁজে, সৌন্দর্য
প্রদর্শন করে বাজারে যেত। তাদের শরীরের আবরণীয় অঙ্গগুলো খোলা রাখতো। হযরত ক্বতাদা
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
সেসময়ের মহিলারা রূপ চর্চা করে অহংকার-গর্বভরে চলাচল করতো।
আল্লাহ্ তায়ালা আয়াত শরীফ নাযিল করে এগুলো থেকে মুসলিম নারীদেরকে নিষেধ করলেন।
অর্থাৎ সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বাইরে বের হওয়া হারাম বা নাজায়িয করে দিলেন।” (ছাফওয়াতুত্
তাফাসীর ২য় জিঃ ৪৮১ পৃষ্ঠা) [১৭৯০]
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروحهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. (سورة النور ৩০ اية)
অর্থঃ- “(হে আমার
হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’মিনগণকে বলুন, তারা যেন
তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত ও আবরু হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক
পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ্ পাক তা অবহিত রয়েছেন।” (সূরা
নূর/৩০) [১৭৯১]
وغضه واجب عن جميع المحرمات، وكل ما يخشى الفتنة من اجله. (تفسير القرطبى ج ৬ ص ২২৩)
অর্থঃ- “সকল
বেগানা মহিলা থেকে চক্ষুকে নিম্নগামী করা বা সংযত করা ওয়াজিব। আর প্রত্যেক সেই
বিষয় থেকে যাতে ফিৎনা-ফাসাদের ভয় আছে।” (তাফসীরুল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২৩
পৃষ্ঠা) [১৭৯২]
ان غض الابصار مستعمل فى التحريم الان غضها عن الحلال لايلزم وانما يلزم غضها عن الحرام. (احكام القران لابن الاعربى ج ৩ ص ১৩৬৫)
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
দৃষ্টি নিচু করণ,
হারাম জিনিষের প্রতি ব্যবহৃত হবে। কেননা, হালালের
থেকে নিম্নগামী করণ আবশ্যিক নয়। নিশ্চয়ই হারাম থেকে চক্ষু নিম্নগামী করণ ফরয, ওয়াজিব।” (আহকামুল
কুরআন লিইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৩৬৫ পৃষ্ঠা) [১৭৯৩-১৮০৫]
ماهو حكم النظر الى الاجنبيات؟
حرمت الشريعة الاسلامية النظر الى الاجنبيات فلايحل لرجل ان ينظر الى امرأة غير
زوجته او محارمه من النساء. امانظرة الفجأة فلااثم فيها ولاموأخذة لانها خارجة عن
ارادة الانسان. .... وقد قال النبى صلى الله عليه وسلم لعلى: يا على لا تتبع النظرة النظرة فانما لك الاولى وليست لك الثانية" وعن جرير بن عبد الله البجلى قال سالت رسول الله صلى اله عليه وسلم عن نظرة الفجاة فامرنى ان أصرف بصرى. (تفسير ايات الاحكام ج ২ ص ১৫১، مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، فتح اللهم للشبير احمد عثمانى، فتح المللهم للتقى عثمانى، المفهم. مشند احمدبن حنبل، الفتح الربانى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشاذى)
অর্থঃ- “বেগানা
নারীদের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার হুকুম কি? জাওয়াবঃ ইসলামী শরীয়ত বেগানা
নারীদের প্রতি তাকানোকে হারাম করেছে। পুরুষের জন্য তার স্ত্রী এবং মাহ্রামা মহিলা
(যাদেরকে দেখা জায়িয কিন্তু বিবাহ করা হারাম) ব্যতীত অন্যান্য সকল মহিলার প্রতি তাকানো
হারাম। হঠাৎ প্রথম দৃষ্টিতে কোন গুনাহ্ নেই। আর এটা ধর্তব্য নয়। কেননা এটা মানুষের
ইচ্ছার বাইরে। ........... হযরত নবী
করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে লক্ষ্য
করে বলেছেন, “হে আলী! প্রথম দৃষ্টির পর পুনরায় দৃষ্টি দিবে না। কেননা তোমার প্রথম দৃষ্টি
ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবেনা।” হযরত জারীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ
করলেন, আমি যেন আমার দৃষ্টিকে সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে নেই। (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ
ছাবূনী ২য় জিঃ ১৫১ পৃষ্ঠা,
মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল্
উবাই ওয়াস্ সিনূসী,
ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল্
মুলহিম্ লিত্ তক্বী উছমানী,
আল্ মুফহিম, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, আল্
ফতর্হু রব্বানী, তিরমিযী শরীফ,
তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্
শাযী) [১৮০৬]
فامر الله سبحانه وتعالى المؤمنين والمؤمنات يغض الابصار عمالايحل، فلا يحل للرجل ان ينظر الى المرأة ولا المرأة الى الرجل. (تفسير القرطبى ج ৬ ص ২২৭)
অর্থঃ- “আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা মু’মিন
পুরুষ ও মহিলাগণকে যা হালাল নয় এমন কিছু থেকে চক্ষুকে ফিরিয়ে রাখতে নির্দেশ
দিয়েছেন। কোন পুরুষের জন্য বেগানা নারীর প্রতি তাকানো হালাল বা জায়িয নয়। আর কোন
মহিলার জন্য পরপুরুষের দিকে তাকানোও জায়িয বা হালাল নয়।” (তাফসীরুল্
কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২৭ পৃষ্ঠা) [১৮০৭-১৮১১]
(وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن) فلا ينظرن الى مالايحل لهن النظر اليه كالعورات من الرحال والنساء وهى مابين السرة والركبة. وفى الزواحر لابن حجر المكى كما يحرم نظر الرجل للمرأة يحرم نظر ها اليه ولو بلا شهوة ولاخوف فتنة. (تفسير روح المعانى ج ১০ ص ১৪০، الزواحر لابن حجر المكى، تفسير البيضاوى ج ৩ ص ৭৮، شيخ زاده، حاشية الشهاب. احكام القران للشفيع والتهانوى ج ৩ ص ৪২৩)
অর্থঃ- “(হে আমার
হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মু’মিনা মহিলাগণকে বলুন, তারা যেন
তাদের দৃষ্টিকে নিচু করে রাখে) তারা সেদিকে বা তাদের দিকে দেখবে না যাদের দিকে
দেখা হালাল নয়। যেমন পুরুষ এবং মহিলাগণের আওরাত তথা ছতরের দিকে, আর
তাহচ্ছে নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত স্থান। হযরত ইবনে হাজার মাক্কী
রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ‘যাওয়াজির’ নামক কিতাবে আছে,
পুরুষ বেগানা মহিলার দিকে আর বেগানা মহিলা পুরুষের দিকে
তাকানো হারাম, যদিও শাহ্ওয়াতের সহিত না হয় এবং ফিৎনার আশঙ্কা না থাকে। (তাফসীরে রুহুল্
মায়ানী ১০ম জিঃ ১৪০ পৃষ্ঠা,
আল্ যাওয়াজির লিইবনে হাজার মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাফসীরুল্
বাইযাবী ৩য় জিঃ ৭৮ পৃষ্ঠা,
শাইখ যাদাহ, হাশিয়াতুশ্ শিহাব, আহকামুল্
কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪২৩ পৃষ্ঠা) [১৮১৩]
قوله (ويحفظوا فروجهم) ... وقال ابو العالية: المراد به ها هنا حفظها عن الابصار حتى لايراها احد وقد تقدم وجوب سترها وشئ من احكامها ..... (احكام القران لابن العربى ج ৩ ص ১৩৬৬)
অর্থঃ- “আল্লাহ্
পাক-এর বাণীঃ (তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) ............ হযরত আবুল
আলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অত্র আয়াত শরীফ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সতরকে
দৃষ্টি থেকে হিফাযত করা যাতে কেউ তা দেখতে না পারে। সতর ঢাকা ফরয, ওয়াজিব
..........।” (আহকামুল কুরআন লিইবনিল আরাবী ৩য়
জিঃ ১৩৬৫ পৃষ্ঠা) [১৮১৪-১৮১৫]
واما عورة المرأة بالنسبة للرجل: فجميع بدنها عورة على الصحيح وهو مذهب (الشافعية والحنابلة) وقدنص الامام احمد رحمه الله على ذلك فقال: (وكل شئ من المراة عورة حتى الظفر)، وذهب (مالك وابو حنيفة) الى ان بدن المرأة كله عورة، (تفيسر ايات الاحكام ج ২ ص ১৫৪، تفسير ابن الحوزى ج ৬ ص ৩১)
অর্থঃ- “পুরুষের
কাছে সম্পর্কের দিক থেকে মহিলাদের সতর বা আবরণঃ পুরুষের সামনে বেগানা মহিলার ছতর
ছহীহ্ মত অনুসারে সমস্ত শরীর। এটি (শাফিয়ী ও হাম্বলী) মাযহাব মতে। হযরত ইমাম আহমদ
বিন হাম্বল রহিমাহুল্লাহ-এর দলীল হলো, তিনি বলেছেন,(মহিলার
সমস্ত শরীর পরপুরুষের সামনে আবরণীয়, এমনকি হাত-পাঁয়ের নখও।) তাফসীরে
ইবনে জাওযী ৬ষ্ঠ জিঃ ৩১ পৃষ্ঠা। আর (ইমাম
মালিক ও ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর) মাযহাব মতেও মহিলার সমস্ত শরীর আবরণীয়।” (তাফসীরে
আয়াতুল আহকাম ২য় জিঃ ১৫৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে জাওযী ৬ষ্ঠ জিঃ ৩১ পৃষ্ঠা) হানাফী মাযহাব মতে, পুরুষ এবং মহিলার নামাযের ছতর পুরুষদের নামাযের ছতর
হলো নাভির নিচ থেকে হাটু পর্যন্ত অঙ্গ। অর্থাৎ এ পরিমাণ অঙ্গ নামাযের সময় ঢাকা
ফরয। আর মহিলাদের নামাযের ছতর হলো মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জির উপর অর্থাৎ হাতের পাতা ব্যতীত সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ। অর্থাৎ
নামাযের সময় মুখমণ্ডল ও হাতের পাতা ছাড়া সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরয। যদি পুরুষ এবং
মহিলার ছতর ঢাকার জন্য কাপড় না থাকে, তবে যে কাপড় আছে তা পড়েই নামায
আদায় করতে হবে। আর যখন কোন কাপড়ই থাকবে না, তখন বসে ইশারার সাথে নামায আদায়
করবে। নিম্নে নামাযের ছতর সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবের
দলীল-আদিল্লাহ প্রদান করা হলোঃ [১৮১৬-১৮২২]
ويستر عورته والعورة من الرجل ما تحت السرة الى الركبة والركبة عورة دون السرة، وبدن المرأة الحرة كله عورة الاوجهها وكفيها وما كان عورة من الرحل فهو عورة من الامة وبطنها وظهرها عورة وما سوى ذلك من بد نها ليس بعورة ومن لم يجد مايريل به النجاسة صلى معها ولم يعد ومن لم يجد ثوبا صلى عريانا قاعدا يومى بالركوع والسجود. فان صلى قائما اجزاه والاول افضل. (قدورى ص ২৩، التنقيح الضرورى ص ৩৩، الهداية مع الدراية ج১ ص ৯৩، فتح القدير، كفاية، شرح العناية، جاشية ..لبى ج ১ ص ২২৩، ২২৪)
অর্থঃ- “নামাযের
সময় ছতর ঢাকতে হবে। পুরুষের ছতর হলো নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ। হাটু
ছতরের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু নাভী ছতর নয়। স্বাধীনা নারীর মুখমণ্ডল ও হাতদ্বয়ের পাতা
ছাড়া সমস্ত শরীর ছতর। দাসীর ছতর পুরুষের ছতরের মতই, তবে তার পেট ও পিঠ ছতরের মধ্যে
শামিল। ইহা ছাড়া দাসীর আর কোন দেহের স্থান
ছতর নয়। যে ব্যক্তি নাজাসাত বা নাপাকী দূর করার জন্য কোন কিছু না পায়, সে ঐ
নাপাকীসহ নামায পড়বে,
এতে নামায পুনরায় দোহরাতে হবে না। যার কোন কাপড় নেই, সে বসে
নামায পড়বে এবং ইশারার মাধ্যমে রুকূ’ ও সিজদা করবে। যদি দাঁড়িয়ে নামায
পড়ে, তবে জায়িয হবে। কিন্তু প্রথম মতটিই উত্তম, অর্থাৎ বসে ইশারার সাথে রকূ’, সিজদা
করে নামায পড়াই উত্তম বা আফযাল। (কুদূরী ২৩ পৃষ্ঠা, আত্ তানক্বীহুয্ যুরূরী ২৩ পৃষ্ঠা, হিদায়াহ্
মায়াদ দিরায়াহ ১ম জিঃ ৯২,
৯৩,
৯৪,
৯৫,
৯৬ পৃষ্ঠা, ফতহুল ক্বদীর, কিফায়াহ্, শরহুল্
ইনায়াহ, হাশিয়ায়ে চলপী ১ম জিঃ ২২৩, ২২৪ পৃষ্ঠা) [১৮২৩-১৮৪২]
العورة للرجل من تحت السرة حتى تجاوز ركبتيه فسرته ليس بعورة عند علمائنا الثلاثة، وركبته عورة عند علمائنا جميعا هكذا فى المحيط. بدن الحرة عورة الا وجهها وكفيها وقد ميها كذا فى المتون. (الفتاوى العالمكيرية ج ১ ص ৫৮، محيط. متون)
অর্থঃ- “পুরুষের নামাযের ছতর হলো নাভির
নিচ থেকে দু’হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ। নাভী ছতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। ইহা আমাদের তিন ইমাম তথা
হযরত ইমাম আবূ হানীফা,
আবূ ইউসূফ ও মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম-এর অভিমত। আমাদের
সকল ইমামগণের মতে হাটু ছতরের অন্তর্ভুক্ত। যেমনটি ‘মুহীত’ নামক
কিতাবে আছে। স্বাধীনা মহিলার মুখমণ্ডল, হাতদ্বয় এবং দু’পায়ের
পাতাদ্বয় ছাড়া সমস্ত শরীর ছতরের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপ ‘মাতূন’ নামক
কিতাবে আছে। (আল ফাতাওয়াল্ আলমগীরিয়া ১ম জিঃ ৫৮ পৃষ্ঠা, মুহীত, মাতূন)
এছাড়াও নিম্নবর্ণিত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে অনুরূপভাবে ছতরের বর্ণনা দেয়া
হয়েছে, “তানবীরুল্ আবছার,
আদ্ দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, শামী, হাশিয়াতুত্
তাহতাবী, কাযীখান, তাতারখানিয়া,
বায্যাযিয়া, আইনুল হিদায়াহ, নূরুল
হিদায়াহ, শরহে বিকায়া,
কানযুদ্ দাকাইক, আল বাহরুর রাইক, মিনহাতুল
খালিক, নূরুল ঈযাহ, মারাকিউল ফালাহ,
মালাবুদ্দা মিনহু ইত্যাদি। মহিলাদের বিনা ওযরে বাইরে বের হওয়া জায়িয নেই মহিলাদের জন্য বিনা প্রয়োজনে
বাইরে বের হওয়া জায়িয নেই। বরং হারাম ও নাজায়িয। কেননা আল্লাহ পাক এবং আল্লাহ
পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদেরকে অযথা বাইরে বের
হতে নিষেধ করেছেন। যেমন,
আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, [১৮৪৩]
وقرن فى بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجا هلية الاولى. (سورة الاحزاب ৩৩ اية)
অর্থঃ- “আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান
করবেন। জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করবেন না। (সূরাতুল্ আহযাব ৩৩ নং
আয়াত শরীফ) এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় তাফসীরের কিতাবসমূহে মুফাস্সিরীনে কিরামগণ
লিখেন- [১৮৪৪]
قوله تعالى: (وقرن فى بيوتكن) يعنى اسكن فيها ولا تتحركن، ولاتبرجن منها. (احكام القران لابن العربى ج ৩ ص ১৫৩৫)
অর্থঃ- “আল্লাহ্
তায়ালার বাণীঃ (আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) এর অর্থ হলো, ঘরের
ভিতরেই বসবাস করুন,
সেখান থেকে বের হবেন না, সেখান থেকে বেরিয়ে সৌন্দর্য
প্রদর্শন করবেন না।”
(আহকামুল কুরআন লি ইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৫৩৫ পৃষ্ঠা) [১৮৪৫]
قوله تعالى: (وقرن فى بيوتكن) . واخرج ابن ابى حاتم عن ام نائلة رضى الله عنها قالت جاء ابو برزة فلم يجد ام ولده فى البيت وقالوا اذهبت لى المسجد فلما جائت صاح بها فقال ان الله نهى النساء ان يخرجن وامرهن يقرن فى بيوتهن ولايتبعن جنازة ولاياتين مسجدا ولا يشهدن جمعة. (الدر المنثور ج ৪ ص ১৯৬)
অর্থঃ- “আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (আপনারা
আপনাদের ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) ..... হযরত ইবনু আবী হাতিম রহমতুল্লাহি
আলাইহি হযরত উম্মু নাইলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, একদা আবু বারযা এসে বাড়ীতে তার সন্তান ওয়ালা দাসীকে পেলেন না। তারা বললেন, তিনি
মসজিদে গেছেন। যখন তিনি মসজিদ থেকে ফিরে আসলেন, তখন আবু বারযা রহমতুল্লাহি আলাইহি
তার সাথে জোরে চিৎকার করলেন অতঃপর বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক মহিলাগণকে
বাড়ী থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন এবং তাদেরকে তাদের ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে
নির্দেশ জারী করেছেন। তারা জানাযা নামাযে যাবে না, মহিলারা মসজিদে নামাযের জন্য আসবে
না এবং জুমুয়ার জন্যও উপস্থিত হবে না।” (তাফসীরে আদ্ দুররুল্ মানছূর ৪র্থ
জিঃ ১৯৬ পৃষ্ঠা) [১৮৪৬-১৮৪৭]
قوله تعالى (ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى) ...... واخرج التيهقى فى سننه عن ابى اذينة الصدفى رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال شر النساء المتبر جات وهن المنافقات لايدخل الجنة منهن الامثل الغراب الاعصم. (الدر المنثور ج ৪ ص ১৯৭، بيهقى)
অর্থঃ- “আল্লাহ্
তায়ালার বাণীঃ (জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবেন না) ........
ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘সুনানের’ মধ্যে
হযরত আবু আযীনা ছদাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই হযরত
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বাইরে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী
মহিলারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট,
তারাই মুনাফিক মহিলা। তাদের থেকে কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবে না। তবে যে মহিলার রং কাকের মত কালো সে ব্যতীত।” (তাফসীরে
দুররুল্ মানছূর ৪র্থ জিঃ ১৯৭ পৃষ্ঠা, বাইহাক্বী শরীফ) [১৮৪৮]
(وقرن فى بيوتكن) ....... والمراد على جميع القرا ءات امرهن رضى الله عنهن بملازمة البيوت وهو امر مطلوب من سائر النساء. اخرج الترمذى. والبزار عن ابن مسعود عن النبى صلى الله عليه وسلم قال: ان المرأة عورة فاذا خرجت من بيتها استشرفها الشيطان واقرب ماتكون من رحمة ربها وهى فى فعر بيتها. (تفسير روح المعانى ج ১২ ص৬)
অর্থঃ- “(আপনারা
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) ..... ল্ফ॥শু শব্দের সমস্ত কিরয়াত থেকে মুরাদ বা
উদ্দেশ্য হচ্ছে- উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে নির্দেশ
দেয়া। এ আমল বা নির্দেশ সমস্ত মু’মিনা মহিলাদের জন্য। ঘরের ভিতরে প্রকোষ্ঠে অবস্থান করা ফরযে
আইন। তিরমিযী এটা বর্ণনা করেছেন। আবূ বকর বায্যার রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি
হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন.“নিশ্চয়ই মহিলা পর্দার অধীন, যখন সে
ঘর থেকে বাইরে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি-ঝুকি মারে। সে তার রব আল্লাহ্
পাক-এর রহমতের নিকটবর্তী হয় তখনই যখন ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে থাকে।” (তাফসীরে
রুহুল্ মায়ানী ১২ জিঃ ৬ পৃষ্ঠা) [১৮৪৯]
وقد يحرم عليهن الخروج بل قديكون كبيرة كخروجهن لزيارة القبور اذا عظمت مفسدته وخروجهن ولو الى المسجد وقد استعطرن وتزين اذا تحققت الفتنة اما اذا ظنت فهو حرام غير كبيرة، وما يجوز من الخروج كالخروج كالخروج للحج وزيارة والوالدين وعيادة المرضى، وتعزية الاموات من الاقارب وهحو ذلك، فانما يجوز بشروط مذكورة فى محلها. (تفسير روح المعانى ج ১২ ص ৬)
অর্থঃ- “মহিলাদের
জন্য বাইরে বের হওয়া হারাম করা হয়েছে। কেননা এটা কবীরা গুনাহ্, যেমন
অনেক ফিৎনার আশঙ্কা নিয়ে কবর যিয়ারত করতে যাওয়া, আতর মেখে সেজে-গুঁজে মসজিদে যাওয়া
যাতে ফিৎনার সম্ভাবনা আছে,
এগুলো সবই কবীরা গুনাহ্। হজ্জের উদ্দেশ্যে, পিতা-মাতার
সাক্ষাতের জন্য, অসুস্থ্য ব্যক্তির সেবা করতে এবং নিকটাত্মীয়ের ইন্তিকালে শোকপ্রকাশ করার
জন্য পর্দার সাথে বাইরে বের হওয়া জায়িয
রয়েছে। এগুলো স্থান-কাল পাত্রের শর্ত সাপেক্ষে জায়িয হবে।” (তাফসীরে
রুহুল্ মায়ানী ১২ জিঃ ৬ পৃষ্ঠা) [১৮৫০]
(ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى) قيل معناة لا تتكسرن ولا تتغنجن، ويحتمل ان يكون المراد لاتظهرن زينتكن. (اتفسير الكبير للامام الفخر الرازى ج ২৪ ص ২০৯)
অর্থঃ- “(জাহিলিয়াত
যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবেন না) কেউ বলেন, সৌন্দর্য
নিয়ে গর্ব ভরে বেড়াবেন না। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, তোমরা
তোমাদের সৌন্দর্য-রূপ প্রকাশ করোনা।” (আত্ তাফসীরুল্ কবীর লিল্ ইমাম
ফখরির রাযী ২৪ জিঃ ২০৯ পৃষ্ঠা) [১৮৫১]
(وقرن فى بيو تكن) ....... لان سبودة رضى الله عنها قيل لها لما لاتخرجين فقالت امرنا الله بان نقر فى بيتنا، وكانت عائشة اذا قرات هذه الاية نبكى على خروجها ايام الجمل، وحينئذ قال لها عمر: ان الله امرك ان تفرى فى بيتك. (التسهيل لعلوم التنزيل ج ২ ص ১৮৮)
অর্থঃ- “(আপনারা
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) ..... হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে
জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- আপনারা কেন ঘর থেকে বের হননা। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ্
পাক আমাদেরকে ঘরের কোণে- প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছেন এ জন্যই। হযরত
আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যখন এ আয়াত শরীফ পাঠ করতেন, তখন
জঙ্গে জামাল তথা উষ্ট্রের যুদ্ধে বের হওয়ার কথা স্মরণ করে কাঁদতেন। সে সময় হযরত
উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বলতেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক আপনাকে আপনার
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছেন।” (আত্ তাসহীল লিউলূমিত্ তানযীল ২য়
জিঃ ১৮৮ পৃষ্ঠা) [১৮৫২]
(وقرن فى بيوتكن) اى الزمن بيوتكن ولا تخرجن لغير حاجة. ولاتفعلن كما تفعل الغافلات، المتسكعات فى الطرقات لغير ضرورة (ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى) اى لاتظهرن زينتكن ومحاسنكن للاجانب مثل ماكان نساء الجاهلية يفعلن، حيث كانت تخرج المراة الى الاسواق مظهرة لمحاسنها، كاشفة مالايليق كشفه من بدنها، قال قتادة: كانت لهن مشية فيها تكسر ةتغنخ فنهى الله تعالى عن ذلك. (صفوة التفاسير للصابونى ج ২ ص ৪৮১)
অর্থঃ- “(আপনারা
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) অর্থাৎ ঘরে অবস্থান আপনাদের জন্য ফরয, প্রয়োজন
ছাড়া বাইরে বেড়াবেন না। গাফিল মহিলারা যেরকম করে সেরকম করবেন না। জরুরত ছাড়া
রাস্তায় বেড়াবেন না। (জাহিলিয়াত যুগের নারীদের মত নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে
বেড়াবেন না) অর্থাৎ নিজেদের রূপ, সৌন্দর্য পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করবেন না, যেমনিভাবে
জাহিলিয়াত যুগের মহিলারা করেছিল। সে সময়ের মহিলারা প্রকাশ্যভাবে সেজে-গুঁজে, সৌন্দর্য
প্রদর্শন করে বাজারে যেত। তাদের শরীরের আবরণীয় অঙ্গগুলো খোলা রাখতো। হযরত ক্বতাদা
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
সেসময়ের মহিলারা রূপ চর্চা করে অহংকার-গর্বভরে চলাচল করতো।
আল্লাহ্ তায়ালা আয়াত শরীফ নাযিল করে এগুলো থেকে মুসলিম নারীদেরকে নিষেধ করলেন।
অর্থাৎ সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বাইরে বের হওয়া হারাম বা নাজায়িয করে দিলেন।” (ছাফওয়াতুত্
তাফাসীর ২য় জিঃ ৪৮১ পৃষ্ঠা) [১৮৫৩-১৮৭৫] হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عائشة رضى الله عنها قالت خرجت سودة بعد ماضرب الحجاب لحاجتها وكانت امرة جسيمة لاتخفى على من يعرفها فرأ ها عمربن الخطاب فقال يا سودة اما والله ما تخفين علينا فانظرى كيف تخرجين، قالت فانكفأت راجعة ورسول الله صلى الله عليه وسلم فى بيتى وانه ليتعثى وفى يده عرق، فدخلت فقالت يارسول الله انى خرجت لبعض حاجتى فقال لى عمر كذا وكذا. قالت فاوحى اله اليه، ثم رفع عنه، وان العرق فى يده ما وضعه فقال انه قد اذن لكن ان تخرجن لحاجتكن قوله: ان تبدوا شيئا او تخفوه فان الله كان بكل شئ عليما لاجناح عليهن فى ابانهن ولا ابنا ئهن ولا اخوانهن ولا ابناء اخوانهن ولا ابناء اخواتهن ولا نسائهن ولا ما ملكت ايمانهن واتقين الله ان الله كان على كل شئ شهيدا.
(بخارى شريف كتاب التفسير سورة الاحزاب، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح النووى، المفهم، فتح الملهم، احكام القران للقرطبى، تفسير ابن كشير، تفسير المظهرى، تفسير الخازن، تفسير البغوى، تفسير مدارك التنزيل، تفسير روح المعانى، تفسير السمر قندى، شيخ زاده، حاشية الجمل على الجلالين)
অর্থঃ- “হযরত
আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পর্দার
বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে
বাইরে যান। হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এমন স্বাস্থ্যবতী ছিলেন যে, পরিচিত
লোকদের থেকে তিনি নিজকে গোপন রাখতে পারতেন না। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে দেখে বললেন, হে হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা! জেনে রাখুন,
আল্লাহ্ পাক-এর কসম, আমাদের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকতে
পারবেন না। এখন দেখুন,
কেমন করে বাইরে যাবেন? হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, (এ কথা শুনে) হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ফিরে
আসলেন। আর এসময় হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে রাতের
খানা খাচ্ছিলেন। তাঁর হাতে এক ছিল টুকরা হাড্ডি। হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহা ঘরে প্রবেশ করে বললেন,
ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি
প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলাম। তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
আমাকে এমন এমন কথা বলেছেন। হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, এসময়
আল্লাহ্ পাক তাঁর উপর ওহী নাযিল করেন। ওহী অবতীর্ণ হওয়া শেষ হল, হাড়
টুকরা তখনও তাঁর হাতেই ছিল,
তিনি তা রাখেননি। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, অবশ্যই প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যেতে অনুমতি দেয়া হয়েছে। (অপ্রয়োজনে নয়) আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ তোমরা কোন বিষয় প্রকাশ কর
অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ্ পাক সকল বিষয় জ্ঞাত। নবী পত্মীগণের জন্য কোন গুণাহ্ নাই, তাদের
পিতা, পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, সাধারণ মহিলা,
এবং দাসীদের ব্যাপারে। তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই
আল্লাহ্ পাক সব কিছুর উপর দৃষ্টিবান।” (বুখারী শরীফ কিতাবুত্ তাফসীর
সূরাতুল্ আহযাব, ফতহুল্ বারী,
উমদাতুল্ ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্
কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী,
মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, আল্
মুফহিম, ফতহুল্ মুলহিম,
আহকামুল্ কুরআন লিল্ কুরতুবী, তাফসীরুত্ ত্ববারী, তাফসীরে
ইবনে কাছীর, তাফসীরুল্ মাযহারী,
তাফসীরুল্ খাযিন, তাফসীরুল্ বাগবী, তাফসীরে
মাদারিকুত্ তানযীল,
তাফসীরে রূহুল্ মায়ানী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরুল্
মানার, তাফসীরুস্ সামরকন্দী,
শাইখ যাদাহ, হাশিয়াতুল্ জামাল আলাল জালালাইন)
অত্র হাদীছ শরীফ এবং অনুরূপ অন্যান্য হাদীছ শরীফ থেকে জানা যায় যে, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ প্রয়োজনে বাহিরে যেতে অনুমতি প্রদান
করেছেন। অর্থাৎ বিনা প্রয়োজনে বাহিরে বের হওয়া হারাম ও নাজায়িয। ইল্ম অর্জনের জন্য
মহিলাদের বাইরে বের হওয়া জায়িয প্রত্যেক
মুসলমান নর ও নারীর জন্য ফরয পরিমাণ ইল্ম অর্জন করা ফরযে আইন। হাদীছ শরীফে ইরশাদ
হয়েছে, [১৮৭৬-১৮৮৫]
عن انس رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم طلب العلم فريضة على كل مسلم وواضع العلم عند غير اهله كمقلد الخنازير الجوهر واللؤلؤ واللذهب. (مشكوة شريف كتاب العلم الفصل الثانى، مرقاة، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات. مظاهرحق، مراة المناجيح، ابن ماجة شريف، بيهقى فى شعب الايمان)
অর্থঃ- “হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর জন্য ইল্ম আর্জন
করা ফরয। অপাত্রে ইল্ম রাখা যেন শুকরের গলায় জহরত, মুক্তা এবং স্বর্ণ রাখা।” (মিশকাত
শরীফ কিতাবুল্ ইল্ম আল ফাছলুছ ছানী, মিরক্বাত, শরহুত্
ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত,
মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানজীহ, ইবনু
মাজাহ শরীফ, বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান) হাদীছ শরীফে স্পষ্টভাবে ইল্ম অর্জন করাকে ফরয বলা
হয়েছে। আর এই ফরয ইল্ম দু’প্রকার যেমন,
ইলমে শরীয়ত ও ইল্মে মা’রিফত। অর্থাৎ ইলমে শরীয়ত অর্জন করা যেমনিভাবে একজন
লোকের জন্য ফরয তেমনিভাবে ইলমে মা’রিফত বা তাছাউফ অর্জন করাও ফরয বা
ফরযে আইন। চাই পুরুষ হোক অথবা মহিলা হোক। এ বিষয়ের প্রতি নির্দেশ করে হাদীছ শরীফে
আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, [১৮৮৬-১৮৯৪]
وعن الحسن قال العلم علمان فعلم فى القلب فذاك العلم النافع وعلم على اللسان فذاك حجة الله عز وجل على ابن ادم. (مشكوة شريف كتاب العلم الفصل الثالت شرحالطيبى مرقاة، التعليق الصبيح، لمعت، اشعة اللمعات، مظاهر حق، مرأة المناجيح، سنن الدارمى)
অর্থঃ- “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, ইল্ম
দু’প্রকার। এক. ক্বলবী ইল্ম, যা উপকারী ইল্ম। দুই. জবানী ইল্ম, যা আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা-এর পক্ষ থেকে আদম সন্তানের জন্য
দলীল স্বরূপ। (মিশকাত শরীফ কিতাবুল ইল্ম আল্ ফাছলুছ ছালিছ, শরহুত্ ত্বীবী, মিরক্বাত, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল্
লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, সুনানুদ্ দারিমী) অত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইল্মে শরীয়ত ও ইল্মে মা’রিফত বা ইল্মে তাছাউফ উভয় প্রকার ইল্মই অর্জন করা ফরযে আইন।
তাই ইল্ম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নারীর জন্য ফরয হওয়ায়, উহা অর্জন করতে প্রয়োজনে বাড়ীর বাইরে যাওয়া জায়িয রয়েছে।
তবে কয়েকটি শর্ত স্বাপেক্ষে। শর্তগুলো
হলোঃ ১. পূর্ণ পর্দার সাথে বের হতে হবে, ২. মুসাফিরী পথ হলে মাহরাম সাথে থাকতে হবে, ৩. যেখানে শিক্ষা করতে যাবে সেখানে পূর্ণ পর্দার ব্যবস্থা
থাকতে হবে, ৪. শিক্ষাদানকারী মহিলা
হতে হবে, ৫. পুরুষ মুয়াল্লিম বা
শিক্ষাদানকারী হলে খাছ পর্দার সাথে তথা পর্দার আড়াল থেকে শিক্ষা প্রদান করতে হবে
এবং শিক্ষা নিতে হবে, ৬. মুয়াল্লিম তথা
শিক্ষাদানকারীগণকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় পূর্ণভাবে বিশ্বাসী হতে
হবে, ৭. মহিলা শিক্ষিকার আমল
শরীয়তের অনুকুলে হতে হবে, ৮. নিজ বাড়ীর ভিতরেই ছহীহ
শিক্ষার ব্যবস্থা উপস্থিত না থাকলে, ৯. আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের দরবার শরীফ হলে, ১০. মুয়াল্লিমা বা শিক্ষিকা সকলকেই পূর্ণ পর্দানশীন হতে
হবে। সুতরাং ইল্মে ফিক্বাহ অর্জন করার
জন্যে যেরুপ বাইরে বের হওয়া জায়িয; তদ্রুপ ইল্মে তাছাইফ অর্জন করার জন্যেও পীর-মাশায়েখ তথা
ওলীআল্লাহ্গণের দরবারে যাওয়া জায়িয। তবে প্রত্যেক অবস্থাতেই শরয়ী হিজাব বা পর্দা
রক্ষা করা ফরযে আইন। (অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment