“হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার
প্রমান ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ
পাক উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন
হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের
অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদয়াতের মলোৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্গ এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক
তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে
এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছুদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” এমন সব লিখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যেও ঠিক তাই। কেননা, প্রতমতঃ কিছু লোক “কিল্লতে
ইলম ও কিল্লতে ফাহম”
অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনির মাধ্যমে
পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি
দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা,
হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাউযুবিল্লাহি
মিন যালিক)
অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য
সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন শরীফ,
সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা
মূলতঃ কুরআন শরীফ উনার একখানা আয়াত শরীফ উনার সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার
কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।
খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা
মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে
মহিলাদের খাছ পর্দা হলো-
১. মহিলারা সর্বদাই ঘরে
অবস্থান করবে। ২. ঘরে অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই গায়রে
মাহরামদের সাথে দেখা দিতে পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা
পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। ৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল
ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নি¤œগামী রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭.
প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে
কথা বলবে, নরম সূরে কথা বলবে না। এটাই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা। আর এটাই শরীয়তের
নির্দেশ।
অতএব, তাদের
উক্ত বক্তব্যের কারনে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুণাহে গুণাহগার হবে তা আর
বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, কতিপয়
নামধারী পীর. আমীর,
খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাসসিরে
কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার
করে, ঘরোয়া বৈঠক করে,
মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের
দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাউযুবিল্লাহ)
মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া
লোভী উলামায়ে ‘সূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে
আসছে। যেমন, কাইয়্যুমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যামানায়
উলামায়ে ‘সূ’ আবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু
ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের মনগড়া
অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।
বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘সূ’ তথাকথিত
পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ,
মুফতী, মুফাসসিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই
পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায়
তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে
ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।
যেমন হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنوتكم.
অর্থ: “হযরত আবূ
হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী
যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব
(মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের
বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের
থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে
পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ,
শরহুন নব্বী, ফতহুল মুলহিম)
স্মর্তব্য যে, ঐসকল
দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাসসিরে
কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে।
সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা
বেপর্দা হয় কি করে?
অতএব, উল্লিখিত
উলামায়ে ‘সূ’দের বেপর্দা হওয়ার কারনে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের
ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
অতএব, সকলেই
যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ আহকাম
অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফসের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি
ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার
ভিতর আসতে পারে, তাই “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”
হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”
দেয়া হলো।
মহান আল্লাহ পাক তিনি
আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দি হাছিল
করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ
শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন
দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা
প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্জ
(৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্য
হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন।
কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ
উনাদের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি
বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে।
নি¤েœ হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ
শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ
করা হলো-
যে সকল আয়াত শরীফসমূহ
দ্বারা হিজাব বা পর্দার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত ‘তাফসীর
বা ব্যাখ্যা’
যে সকল আয়াত শরীফসমূহ
দ্বারা ‘হিজাব বা পর্দা’
ফরয প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু
বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা পর্দা নয়। বরং তার সাথে সাথে
সংশ্লিষ্ট ও আয়াত শরীফসমূহে উল্লিখিত সকল হুকুম-আহকামসমূহ মেনে চলার নামই হচ্ছে “শরয়ী
হিজাব বা পর্দা”।
যেমন, কারো ঘরে
প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা, মাহরামদের
সামনেও শালীনতা বজায় রাখা,
গায়রে মাহরামদের সামনে চেহারা, হাত, পাসহ
সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা,
চলাচলের সময় পুরুষ-মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকেই অবনত রাখা, নিজেদের
লজ্জাস্থানকে হিফাযত করা,
বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কণ্ঠস্বর পরপুরুষকে না শুনানো
প্রয়োজনে কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত
ভাষায় কথা বলা, নরম ভাষায় কথা না বলা ইত্যাদি সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ
পাক তিনি উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে এ বিষয়গুলোই মূলতঃ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে ‘তাফসীর
বা ব্যাখ্যা’ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরলে বিষয়গুলো আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং শরয়ী ‘হিজাব বা
পর্দার” পরিচয় সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। তাই নি¤েœ নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের তাফসীর বা ব্যাখ্যা পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো-
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত
সূরা নূরের ৩১নং আয়াত শরীফ الا ماظهر منها এর সঠিক তাফসীর বা ব্যাখ্যা
ولايبدين زينتهن الا ما ظهر منها.
অর্থ: “(হে আমার
হাবীব নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন) তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শন না করে। তবে চলাচলের
কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।” (সূরা নূর/৩১)
গাইরে মাহরামদের সামনে
মহিলাদের মুখম-ল,
হাত ও পা খোলা রাখা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম অত্র আয়াত
শরীফ উনার زينة শব্দ দ্বারা মহিলাদের যাবতীয়
সৌন্দর্য যেমন, মাথার মুকুট,
কানের দুল, গলার হার বা মালা, হাতের আংটি, চুড়ি বা
বালা, বাজু বন্ধ, পায়ের ঝুমুর বা নুপুর ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। যার প্রদর্শন বা প্রকাশ হারাম
বা নাজায়িয।
আর الا ما ظهر منها. এর ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ ও সর্বজনমান্য তাফসীরগুলোতে কাপড়, চাদর, বোরকা
ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মহিলাদের উপরের চাদর বা বোরকার উপর দৃষ্টি পরলে
মহিলাদের গুণাহ হবেনা। তবে বেগানা পুরুষ কোন বেগানা মহিলার বোরকার উপরও ইচ্ছাকৃত
দৃষ্টি দিতে পারবেনা।
নি¤েœ উক্ত আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যে ফায়সালা
দিয়েছেন তা বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হলো-
[১৩১৪]
واخرج عبد الرزاق والفريانى وسعيدبن منصور وابن ابى شيبة وعبد الله بن حميد وابن جرير وابن المنذر وابن ابى حاتم والطبرانى والحاكم وصححه وابن عردويه عن ابن مسعود فى قوله ولايبدين زينتهن قال الزينة السوار والدملج والخلخال والقرط والقلادة الا ما ظهر منها قال الثياب والجلباب. (الدر المنثور ج৪ ص৪১)
অর্থ: “হযরত
আব্দুর রাজ্জাক ফারইময়ানী,
সাঈদ বিন মানছুর, ইবনু আবী শাইবাহ, আব্দুল্লাহ
বিন হুমাইদ, ইবনে জারীর, ইবুনল মুনযির,
ইবনু আবী হাতিম, তাবারানী, হাকিম, ইবনু
মারদুবিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমা উনাদের থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমা মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী-
(ولا يبدين زيتهن) “তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে”-এর মধ্যে زينة ‘যীনাতুন’-এর
তাফসীরে বলেন, তারা যেন প্রকাশ না করে হাতের চুড়ি বা বালা, বাজবন্ধ, পায়ের
গহনা বা নুপুর-ঝুমুর,
কানের দুল, গলার হার বা মালা ইত্যাদি। (الا ما ظهر منها) “তবে যা অনিচ্ছাসত্ত্বে প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।” -এর তাফসীরে বলেন, কাপড় বা
পোশাক এবং চাদর বা বোরকা ইত্যাদির বাহ্যিক প্রকাশ দোষণীয় নায়। (যা চুপানো সম্ভব
নয়)” (তাফসীরে আদ দুররুল মানছুর ৪র্থ জিঃ ৪১ পৃষ্ঠা)
[১৩১৫]
واخرج ابن ابى شيبة وابن جرير وابن المنذر عن ابن مسعود رضى الله عنه قال الزينة زينتان زينة ظاهرة وزينة باطنة لايراها الا الزوج فاما الزينة الظاهرة فالشياب واما الزينة الباطنة فالكحل والسوار والخاتم. ولفظ ابن جرير فالظاهرة منها الثياب وما يخفى فالخلخالان والقرطان والسواران. (الدر المنثور ج৪ ص৪১)
অর্থ: “হযরত
ইবনু আবী শাইবাহ,
ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহিম
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি
বলেছেন, সৌন্দর্য দু’প্রকার। এক ‘যীনাতুয যাহিরাহ’
বাহ্যিক সৌন্দর্য, দুই. ‘যীনাতুন
বাতিনাহ গুপ্ত সৌন্দর্য। এই গুপ্ত সৌন্দর্য স্বামী ছাড়া কেউ দেখবে না বা দেখা
জায়িয হবেনা। ‘যীনাতুয যাহিরাহ’
বা বাহ্যিক সৌন্দর্য হলো কাপড় বা পোশাক বোরকা। ‘যীনাতুল
বাতিনাহ’ বা গুপ্ত সৌন্দর্য হলো চোখের সুরমা, হাতের চুড়ি বা বালা এবং হাতের
আংটি ইত্যাদি। হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য এ রকম- বাহ্যিক
সৌন্দর্য হলো কাপড় বা বোরকা আর চুপানো সৌন্দর্য হলো, দু’পায়ের গহনা, দু’কানের দু’হাতের
চুড়ি বা বালা।” (তাফসীরে আদ দুররুল মানছুর ৪র্থ জি: ৪১ পৃষ্ঠা)
[১৩১৬-১৩১৭]
(ولايبدين زيتهن) اى مايتزين به من الحلى ونحوه (الا ما ظهر منها) ... وروى الطبرانى والحاكم وصححه وابن المنذر وجمع اخرون عن ابن مسعود ان ما ظهر الشياب والجلباب وفى رواية الاقتصار على الثياب وعليها اقتصر ايضا الامام احمد. وقد جاء اظلاق الزينة عليها فى قوله تعالى (خذوا زينتكم عند كل مسجد) على ما فى البحر. (تفسير روح المعانى ج১০ ص১৪০، ১৪১، البحر)
অর্থ: “(তারা যেন
তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে।)” অর্থাৎ যে উপকরণ দ্বারা তারা
সৌন্দর্য প্রকাশ করে যেমন,
সাজসজ্জা, অলংকার এবং অনুরুপ অন্যান্য সৌন্দর্যের জিনিস যেন তারা
প্রকাশ না করে। (তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত) ....
হযরত ইমাম তাবারানী,
হাকিম, ইবনুল মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহিম এবং অন্যান্যগণ হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি যা
প্রকাশে অসুবিধা নেই’-এর ব্যাখ্যায় কাপড় ও চাদর বা বোরকার চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু রিওয়ায়েতে কাপড় বা
বোরকার কথাই বলা হয়েছে। এর উপর হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
একমত হয়েছেন। সৌন্দর্য্যরে এই অর্থ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বানী দ্বারা প্রমাণিত।
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি বলেছেন। (তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় আবরণ গ্রহণ কর।) এ
রকম ‘বাহর’ নামক কিতাবেও আছে।”
(তাফসীরে রূহুল মায়ানী ১০ জি: ১৪০, ১৪১
পৃষ্ঠা, আল বাহর)
[১৩১৮]
قوله تعالى (ولايبدين زينتهن) اى لا يظهرنها لغير محرم. وزينتهن على ضربين خفية كالسوارين والقرطين والدملج والقلائد ونحو ذلك وظاهر وهى المشار اليها بقوله تعالى (الا ما ظهر عنها) وفيه سبعة اقوال احدها انها الثياب رواه ابوالاحوص عن ابن مسعود وفى لفظ اخر قال هو الرداء ...... قال القاضى ابو يعلى والقول الاول اشبة وقد نص عليه احمد فقال الزينة الظاهرة الثياب وكل شئى منها عورة حتى الظفر وفيد هذا تحريم النظر الى شئى من الاجنبيات لغير عذر مثل ان يريد ان يتزوجها اويشهد عليها فانه ينظر فى الحالين الى وجهها خاصة فاما النظر اليها لغير عذر فلايحور لالشهوة والالغيرها وسواء فى ذلك الوجه والكفان وغيرهما من اليدن.
(زاد المسير فى علم التفسير ج৫ ص৩৫৫، ৩৫৬)
অর্থ: “মহান
আল্লাহ পাক উনার বাণী,
(তারা যেন তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে।) অর্থাৎ তারা
মহিলারা গাইরে মাহরামদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না। তাদের সৌন্দর্য দু’প্রকার।
এক চুপানো সৌন্দর্য। যেমন, দু’হাতের
চুড়ি বা বালা, দু’কানের দুল, বাজু বন্ধ, গলার হার বা মালা এবং অনুরূপ অন্যান্য সৌন্দর্যের বস্ত। দুই বাহিরের সৌন্দর্য
যার দিকে ইঙ্গিত করেছে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বাণীর (الا ما ظهر منها তবে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত)। এ অংশটি। এ অংশের
ব্যাখ্যায় সাতটি মত রয়েছে।
প্রথম মতটি হলো- অনিচ্ছা
সত্ত্বেও যা প্রকাশ পায় তা হলো ‘কাপড় বা পোশাক।” হযরত আবূ আহওয়াছ রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি এটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার
থেকে বর্ণনা করেছেন। অন্য রিওয়ায়েতে আছে, তিনি বলেছেন, অনিচ্ছা
সত্ত্বে প্রকাশমান সৌন্দর্য হলো উপরের চাদর বা বোরকা। .... হযরত কাযী আবূ ইয়ালা
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, প্রথম মতটিই গ্রহণযোগ্য ও প্রাধান্য প্রাপ্ত। হযরত আহমদ বিন
হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ বিষয়ে দলীল প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বাহ্যিক
সৌন্দর্য হলো কাপড় বা বোরকা। “মহিলার শরীরের সবকিছুই আবরণীয় বা পর্দাযোগ্য। এমনকি হাতের
নখও।” -এ দলীল এই ফায়দা দেয় যে, বিনা ওজরে বেগানা মহিলার যে কোন অঙ্গের দিকে দৃষ্টি দেয়া
হারাম। ইচ্ছা করলে মহিলাকে বিবাহের পূর্বে পছন্দের জন্য এবং তার থেকে সাক্ষ্য
নেয়ার সময় এ দু’অবস্থায় খাছভাবে শুধু চেহারা বা মুখম-ল দেখতে পারবে। কোন ওযর ছাড়াই মহিলার
দিকে দৃষ্টি দেয়া নিষেধ। তাই মহিলার দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। শাহওয়াত বা
কুচিন্তর সাথে হোক,
অথবা শাহওয়াত বা কুচিন্তা ছাড়া হোক। এ হুকুমের মধ্যে শরীরের
মুখম-ল, হাত এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ শামীল। অর্থাৎ মুখম-ল, হাত, পাসহ
সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরযে আইন। যার প্রকাশ নাজায়িয ও হারাম।”
(যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর ৫ম
জি:, ৩৫৫, ৩৫৬ পৃষ্ঠা)
[১৩১৯]
والاظهار ان هذا فى الصلوة لا فى النظر فان كل بدن الحرة عورة لايحل لغير الزوج والمحرم النظر الى شئ منها الا لضرورة كالمعالجة وتحمل الشهادة. থ (تفسير الييضاوى ج৩ ص৭৮)
অর্থ: “এ ফতওয়া
সুস্পষ্ট যে, এখানে হাত ও মুখ খোলা রাখার যে কথা বলা হয়েছে তার সম্পর্কে শুধু নামাযের সাথে, দৃষ্টির
পর্দার ক্ষেত্রে নয়। তাই স্বামী ও মাহরাম পুরুষ ছাড়া অন্য কাউকে মহিলারা শরীরের
কোন অংশ দেখাতে পারবে না। তবে ব্যতিক্রমের কথা আলাদা। যেমন, চিকিৎসা
ও সাক্ষ্যগ্রহণ ইত্যাদি।”
(তাফসীরুল বাইযাবী ৩য় জি: ৭৮ পৃষ্ঠা)
[১৩২০-১৩২৪]
(قوله بدن الحرة عورة) كما فى الحديث المراة عورة مستورة رواه الترمذى.
(حاشية الشهاب على البيضاوى ج৬ ص৩৭৩، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى)
অর্থ: “(হযরত
ইমাম বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্তি: স্বাধীনা মহিলার সম্পূর্ণ শরীর
আবরণীয়) যেমন, হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, মহিলারা আবরণীয়, পর্দার
অধীন। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটি রিওয়ায়েত করেছেন।”
(হাশিয়াতুশ শিহাব আলাল বাইযাবী
৬ষ্ঠ জি: ৩৭৩ পৃষ্ঠা,
তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল
আহওয়াযী, উরুফুশ শাযী।)
[১৩২৫]
(ولايبدين) يظهرن (زينتهن الا ما ظهر منها) ....... والثانى يحرم لانه مظنة الفتنة. (تفسير الجلالين)
অর্থ: “(তারা যেন
প্রকাশ না করে) প্রদর্শন না করে (তাদের সৌন্দর্য, তবে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ
পায় তা ব্যতীত) .... দ্বিতীয় মতে, মুখম-ল ও হাতের দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম। কেননা, এতে
ফিৎনার আশঙ্ক রয়েছে।”
(তাফসীরুল জালালাইন)
[১৩২৬]
(قوله ولايبدين زينتهن) المراد بها هنا البدن الذى هو محل الزينة وهى فى الاصل ما يتزين به كالحلى ...... وكذالك يرادنها البدن فى قوله ولا يبدين زينتهن الا لبعولتهن الخ واما فى قوله ليعلم مايخفين من زينتهن فالمراد بها ما يتزين به بدليل قوله من خلخال.
(حاشية الجمل على الجلالين ج৩ ص২১৯)
অর্থ: “(মহান
আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী: তারা যেন তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে।) زينة ‘যীনাতুন’-এর
দ্বারা মুরাদ বা উদ্দেশ্য হলো সমস্ত শরীর যা সৌন্দর্য্যরে স্থান। তার মুলে এটাও যে, যার দ্বারা
সৌন্দর্য ম-িত করা হয়। যেমন, অলঙ্কার, সাজসজ্জা। .... অনুরূপভাবে তা দ্বারা সমস্ত শরীরকে বুঝানো
হয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী: “তারা যেন তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে। তবে তাদের
স্বামীর সামনে প্রদর্শন করতে পারবে। ...” মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী: “যাতে
তাদের চুপানো সৌন্দর্য প্রকাশ না হয়।” এ আয়াত শরীফ দ্বারা মুরাদ হলো যার
মাধ্যমে সৌন্দর্যম-িত হয়। যেমন, পায়ের অলঙ্কার বা নুপুর-ঝুমুর ইত্যাদি।”
(হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাইন ৩য়
জি: ২১৯ পৃষ্ঠা)
[১৩২৭-১৩২৮]
(ولايبدين زينتهن الا ما ظهر منها) فالزينة ما تزينت به المرأة من حلى وكحل وغير ذلك .... مواضع الزينة كالراس والاذن والعنق والصدر والعضدين والدراعين والساق فانها مواضع للاكليل والقرط والقلادة والوشاح والدملج والسوار والخلخال على ماصرح به فى المدارك فالمعنى لايظهرن هذه المواضع الا ما ظهر منها ضرورة وذلك مثل الوجه والكف فقط لان فى سترها حرجا بينا خصوصا فى الشهادات والمحاكمات والنكاح وغير ذلك لايجوز اظهار القدم على الاصح. (التفسيرات الاحمدية ص ৩৭২، تفسير المدارك)
অর্থ: “(তারা যেন
তাদের সৌন্দর্যকে প্রদর্শন না করে। তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ
পায় তা ব্যতীত)। زينة ‘যীনাতুন’ হচ্ছে এমন সৌন্দর্যের উপকরণ যা মহিলাকে সৌন্দর্যম-িত করে
তুলে। যেমন, অলঙ্কার, চোখের সুরমা এবং সৌন্দর্য্যরে উপকরণ ইত্যাদি। .... “মাওয়াদ্বিউয
যীনাহ” তথা সৌন্দর্য্যরে অন্যান্য স্থানগুলো হলো মাথা, কান, ঘাড়, গলা, বুক, দু’বাহু, দু’হাত এবং
পায়ের গোছা ইত্যাদি। এগুলো যথাক্রমে নি¤œবর্ণিত সৌন্দর্য্যরে স্থান তাহচ্ছে মাথার মুকুট, কানের দুল, গলার
হারা বা মালা, মুক্তার তৈরি হার,
বাজু বন্ধ, হাতের চুড়ি বা বালা এবং পায়ের গহনা বা ঝুমুর-নুপুর ইত্যাদি।
এ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ‘তাফসীরে মাদারিকে’
বর্ণিত আছে। এর অর্থ হলো মহিলারা এ স্থানগুলো প্রকাশ
করবেনা। তবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত। বিশেষ প্রয়োজনে মুখম-ল ও
হাতের কব্জি পর্যন্ত প্রকাশ করা যাবে। যেমন, সাক্ষ্য গ্রহণের সময়, বিচার
ফায়সালা করার সময় এবং বিবাহ করার পূর্বে পছন্দের জন্য দেখানো। এজন্য এ সমস্ত অঙ্গই
খাছ এর অতিরিক্ত দেখাতে পারবে না। অধিক ছহীহ মতে মহিলার পায়ের পাতাও প্রকাশ করা
জায়িয নেই।” (আত তাফসীরাতুল আহমদিয়াহ ৩২৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল মাদারিক।)
[১৩২৯-১৩৩০]
ولذلك ترى صاحب البيصاوى ولم يجوز النظر الى الوجه والكف .... والاظهر ان هذا فى الصلوة لافى النظر فان كل بدن الحرة عورة لايحل لغير الزوج والمحرم النظر الى شئ منها الا لضرورة كالمعالجة وتحمل الشهادة.
(التفسيرات الاحمدية ص ৩৭২، تفسير البضاوى)
অর্থ: “তাফসীরে
বাইযাবীর মুছান্নিফের অভিমত হলো, মহিলার চেহারা এবং হাতের কব্জি পর্যন্ত স্থানের দিকে দৃষ্টি
দেয়া জায়িয নেই। ... এটা সুস্পষ্ট মত যে, এখানে হাত ও মুখ খোলা রাখার যে
কথা বলা হয়েছে তার সম্পর্ক নামাযের সাথে। দৃষ্টির পর্দার ক্ষেত্রে নয়। কেননা, স্বাধীনা
মহিলার সমস্ত শরীর আবরণীয়। তাই স্বামী ও মাহরাম পুরুষ ছাড়া অন্য কাউকে মহিলারা
শরীরের কোন অংশ দেখাতে পারবে না। তবে ব্যতীক্রমের কথা আলাদা। যেমন, চিকিৎসা
ও সাক্ষ্য গ্রহণ ইত্যাদি।”
(আত তাফসীরাতু আহমদিয়া ৩৭২ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল
বাইযাবী)
[১৩৩১]
(ولايبدين زينتهن) اى مايتزين به من الحلية وغيرها وفى النهى عن ابداء الزينة نهى عن ابداء مواضعها من ابدانهن بالاولى ثم استثنى سبحانه من هذا النهى فقال (الا ما ظهر منها) واختلف الناس فى ظاهر الزينة ماهو؟ فقال ابن مسعود وسعيد بن جبير ظاهر الزينة هو الثياب. (فتح القدير للشوكانى ج৪ ص ২৩)
অর্থ: “(তারা
মহিলারা যেন তাদের সৌন্দর্যকে প্রদর্শণ না করে)। অর্থাৎ যার মাধ্যমে সৌন্দর্যম-িত হয়
যেমন, অলঙ্কার, সাজসজ্জা এবং অনুরূপ অন্যান্য উপকরণ। আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সৌন্দর্যের
স্থানগুলোকে প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অতঃপর মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা
আয়াত শরীফ উনার পরবর্তী অংশ দ্বারা এই নিষেধ কোন কোন ব্যাপারে রুখছত দিয়েছেন। মহান
আল্লাহ তায়ালা তিনি বলেছেন,
(তবে অনিচ্ছা সত্ত্বে চলাচলের কারণে যা প্রকাশ পায় তা
ব্যতীত।)
এই বাহ্যিক সৌন্দর্য (যার
প্রকাশ ক্ষমাযোগ্য) দ্বারা কি উদ্দেশ্য? এ বিষয়ে উলামায়ে কিরাম
রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ইখতিলাফ করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমা এবং হযরত সাঈদগ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, প্রকাশমান
সৌন্দর্য (যা ক্ষমাযোগ্য) হলো, উপরেরর কাপড়, চাদর বা বোরকা।” (তাফসীরে
ফতহুল ক্বদীর লিশ শাওক্বানী ৪র্থ জি: ২৩ পৃষ্ঠা)
[১৩৩২]
(ولايبدين زينتهن) اى كاالحلى والفاخر من الثياب فكيف بما وراءها. (الاما ظهر منها) .... فانها لابدلها من مزاولة حاجتنها بيدها ومن كشف وجهها فى الشهادة وبحوها.
অর্থ: “(তারা যেন
তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে)। অর্থাৎ সৌন্দর্যের অলঙ্কার এবং গর্ব অহঙ্কারের
পোষাক প্রকাশ না করে। তারা কিভাবে সৌন্দর্য প্রকাশ করে বেড়ায়? (তবে চলাচলের
কারণে অনিচ্ছাসত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত) ... যখন বিশেষ প্রয়োজনে হাত থেকে
কাপড় সরিয়ে নেয়া ছাড়া গত্যান্তর থাকবে না এবং সাক্ষ্য প্রদান ও অন্যান্য জরুরতে
মুখম-ল খোলা রাখার প্রয়োজন হবে তবে তা জরুরতের কারনে মুবাহ হবে।”
(নাযমুদ দুরার ৫ম জি: ২৫৮ পৃষ্ঠা)
[১৩৩৩]
(ولايبدين زينتهن الا ما ظهر منها) نهى عن اظهار الزينة بالجملة ثم استثنى الظاهر منها ... فقيل الا ما ظهر منها يعنى الثياب فعلى هذا يجب ستر جميع جسدها، وقيل الثياب والوجه والكفان، وهذا مذهب مالك لانه اباح كشف وجهها وكفيها فى الصلاة وزاد ابو حنيفة القدمين. (التسهيل لعلوم التنزيل ج৩ ص ৮৯)
তবে চলাচলের কারণে
অনচ্ছিাসত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।)। মহান আল্লাহ পাক তিনি এখানে সর্বপ্রকার
সৌন্দর্যকে প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। অতঃপর অনিচ্ছাসত্ত্বেও প্রকাশমানকে তার থেকে
আলাদা করেছেন। ..... কেউ বলেছেন, “অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত” অর্থাৎ
কাপড়, পোশাক বা বোরকা উপর থেকে দেখা গেলে মহিলার কোন গুণাহ নেই। মহিলার সমস্ত শরীর
ঢেকে রাখা ওয়াজিব বা ফরয। কেউ কেউ বলেছেন, পোশাক, মুখম-ল ও
হাতের কব্জি প্রকাশে অসুবিধা নেই। এটি ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযহাব
মতে। কেননা, নামাযের মধ্যে মুখম-ল,
হাত খোলা রাখা জায়িয। হযরত ইমাম আ’যম আবূ
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি দু’পায়ের পাতার উপরের অংশকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অর্থাৎ এ
অংশগুরো নামাযে খুলে রাখা জায়িয কিন্তু নামাযের বাইরে খোলা জায়িয নেই।” (আত
তাসহীল লিউলূমিত তানযীল ২য় জি: ৮৯ পৃষ্ঠা)
[১৩৩৪-১৩৩৬]
(ولايبدين زينتهن) يعنى لايظهرن مواضع زينتهن (الا ما ظهر منها) .... وروى عن ابن عباس فى رواية اخرى الا ما ظهر منها اى فوق الثياب وروى ابو اسحاق عن ابن مسعود انه قال ثيابها. وروى عن ابن مسعود رواية اخرى انه سئل عن قوله (الا ما ظهر منها) فتقنع عبد الله بن مسعود وغطى وجهه وابدى عن احدى عينيه.
(تفسير السمرقندى ج২ ص৪৩৭، تفسير الطبرى ج১৭ ص ৯২، ৯৩، تفسير ابن كثير ج৬ ص৪৭)
অর্থ: “(তারা যেন
তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।) অর্থাৎ তারা যেন তাদের সৌন্দর্যের স্থানসমূহকে
প্রদর্শন না করে। (তবে অনিচ্ছা সত্ত্বে চলাচলের কারণে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।)
..... হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে অপর এক
রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে,
“তবে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।” অর্থাৎ
কাপড় বা বোরকার উপর যা আকার-আকৃতি প্রকাশ পায়। হযরত আবূ ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি
আনহুমা উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন যা অনিচ্ছা সত্ত্বে
প্রকাশ পায় তাহলো মহিলার উপরের কাপড় বা বোরকা। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে অন্য রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, উনাকে
মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী (الا ما ظهر منها তবে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত) এর তাফসীর জিজ্ঞাসা
করা হলে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা একটি বড়
চাদর নিয়ে উনার সমস্ত শরীর এবং উনার মুখম-ল ঢেকে নিলেন। তবে রাস্তা দেখার জন্য
একটি চোখ খুলে রাখলেন।”
(তাফসীরুস সমরকন্দী ২য় জি: ৪৩৭
পৃষ্ঠা, তাফসীরুত ত্ববারী ১৭ জি: ৯২, ৯৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৬ষ্ঠ জি: ৪৭ পৃষ্ঠা)
[১৩৩৭]
(الايبدين زينتهن) للناظرين الا ما استثناه من الناظرين فى باقى الاية، ثم استثنى ما يظهر من الزينة، فاختلف الناس فى قدر ذلك، فقال ابن مسعود ظاهر الزينة هو الثياب .... قال الفقيه الامام القاضى ويظهر لى فى محكم الفاظ الاية ان المرأة ما مورة بان لاتبدى والن تجتهد فى الاخفاء لكل ماهو زينة. (المحرر الوجيز فى تفسير الكتاب العزيز ج৪ ص১৭৮)
অর্থ: “(তারা যেন
তাদের সৌন্দর্যকে প্রদর্শন না করে)। দর্শক তথা দৃষ্টিকারীদের সামনে। অবশিষ্ট আয়াত
শরীফ উনার মধ্যে দৃষ্টির ব্যাপার ব্যতিক্রম করা হয়েছে। অতঃপর প্রকাশমান সৌন্দর্য
এর থেকে আলাদা করা হয়েছে। অর্থাৎ তার প্রকাশে অসুবিধা নেই। ইমাম-মুজতাহিদ
রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা এ ব্যাপারে ইখতিলাফ করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেছেন, প্রকাশমান সৌন্দর্য (যার প্রকাশে
গুণাহ নেই) হলো কাপড়,
পোশাক বা বোরকা। ..... ফক্বীহ, ইমাম, ক্বাযী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, আমার কাছে আয়াত শরীফ উনার শব্দের হুকুম স্পষ্ট হয়েছে যে, এখানে
মহিলারা পর্দার ব্যাপারে নির্দেশপ্রাপ্ত। তাই সে সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না বরং
প্রত্যেক সৌন্দর্য থেকে নিজেকে হিফাযত রাখার জন্য চেষ্টা করবে।”
(আল মুহাররারুল ওয়াজীয ফী তাফসীরিল
কিতাবিল আযীয ৪র্থ জিঃ ১৭৮ পৃষ্ঠা)
[১৩৩৮-১৩৩৯]
(ولايبدين زينتهن الا ما ظهر منها) قال الزمخشرى الزينة ماتزينت به المرأة من حلى اوكحل او خضاب .... وماخفى منها كالسوار الخلخال والدملج والقلادة والاكليل والوشاع وانقرط، فلا تبديه الا لهؤلاء المذكورين ..... لان هذه الزينة واقعة على مواضع من الجسد لا يحل النظر اليها لغير هؤلاء وهى الذراع والساق والعضد والعنق والرأس والصدر والاذن.
(تفسير القاسمى ج৫ ص ৩০২، تفسير الزمخشرى)
অর্থ: “(তারা যেন
তাদের সৌন্দর্যকে প্রদর্শন না করে, তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা
সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।) হযরত যমখশরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, زينة ‘যীনাতুন’ ‘সৌন্দর্য’ হলো
মহিলারা অলঙ্কার,
সুরমা এবং রং ইত্যাদির দ্বারা সজ্জিত হওয়া। যা প্রকাশ করতে
নিষেধ করা হয়েছে। ... চুপানো সৌন্দর্য হলো হাতের চুড়ি বা বালা, পায়ের
গহনা বা ঝুমুর-নুপুর,
বাজু বন্ধ, গলার হার বা মালা, মাথার মুকুট, মুক্তার
হার এবং কানের দুল ইত্যাদি। আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আত্মীয়গণ ছাড়া অন্যদেরকে
দেখানো হালাল নয় বা জায়িয নয়। সে অঙ্গগুলো হলো হাতের কনুই পর্যন্ত, পায়ের
গোছা, হাতের বাহু, গলা, ঘাড়, বুক এবং কান ইত্যাদি। বুক স্বামী ছাড়া কাউকে দেখানো জায়িয নেই।”
(তাফসীরুল কাসিমী ৫ম জি: ৩০২
পৃষ্ঠা, তাফসীরুয যমখশরী)
[১৩৪০-১৩৪২]
(ولايبدين زينتهن الا ما ظهر منها) اى ولا يكشفن زينتهن للاجانب الا ما ظهر منها بدون قصد ولانية للاجانب الا ما لايمكن اخفاؤه كما قال ابن مسعود الزينة زينتان فزينة لايراها الا الزوج الخاتم والسوار وزينة يرها الاجائب وهى الظاهر من الثياب .... النظر، فان كل بدن الحرة عورة لايحل لغير الزوج المحرم النظر الى شئ منها الا لضرورة كالمعالجة وتحمل الشهادة.
(صفوة النفاسير ج২ ص৩০৭، مختصر ابن يشير ج২ ص৬০০، تفسير البيضاوى ج২ ص৫৮)
তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা
সত্ত্বেও যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।) অর্থাৎ তারা যেন বেগানা পুরুষের সামনে তাদের
সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তবে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় এবং খারাপ নিয়ত থাকে না
তা ব্যতীত। হযরত ইমাম ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, অর্থাৎ
তারা মহিলারা যেন তাদের সৌন্দর্য্যরে কোন অংশ পরপুরুষের সামনে প্রকাশ না করে, তবে যার
গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব নয় তা ব্যতীত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমা তিনি বলেছেন,
সৌন্দর্য দু’প্রকার- (এক) এমন গুপ্ত সৌন্দর্য
যা স্বামী ছাড়া কেউ দেখবে না বা দেখা জায়িয হবেনা। যেমন আংটি ও হাতের চুড়ি বা
বালা। (দুই) এমন বাহ্যিক সৌন্দর্য পর-পুরুষও দেখে থাকে। যেমন, মহিলার
কাপড়ের উপরের প্রকাশমান চাদর বা বোরকা ইত্যাদি।
... হযরত ইমাম বাইযাবী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি বলেছেন,
সুস্পষ্ট ফতওয়া হলো, কোন কোন তাফসীরে হাত ও মুখ খোলা
রাখার যে কথা বলা হয়েছে তার সম্পর্ক নামাযের সাথে। পর্দার ক্ষেত্রে ধর্তব্য নয়।
কেননা, স্বাধীনা মহিলার সমস্ত শরীর আবরণীয়। তাই স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া অন্য
কাউকে মহিলারা শরীরের কোন অংশ দেখাতে পারবেনা। তবে জরুরতের কথা আলাদা। যেমন, চিকিৎসা
ও সাক্ষ্য প্রদানের সময় ইত্যাদি।”
(ছাফওয়াতুত তাফাসীর ২য় জি: ৩০৭
পৃষ্ঠা, মুখতাছার ইবনে কাছীর ২য় জিঃ ৬০০ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল বাইযাবী ২য় জি: ৫৮
পৃষ্ঠা)
[১৩৪৩-১৩৪৫]
......
অর্থ: “মহান
আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী: ‘(তারা যেন তাদের সৌন্দর্যকে প্রদর্শন না করে...)’ মহিলাদের শরীরের সমস্ত
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি চোখে যা চমকপ্রদ ও সুন্দর দেখায়
তাও সৌন্দর্য। যার প্রকাশকে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন, অলঙ্কার, সজ্জিত
কাপড় বা পোষাক, চোখের সুরমা এবং রং ইত্যাদি। মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী: (তোমরা প্রত্যেক
নামাযের সময় আবরণ গ্রহণ করো।) .... সৌন্দর্য দু’প্রকার- (এক) বাহ্যিক সৌন্দর্য, (দুই)
গুপ্ত সৌন্দর্য। বাহ্যিক যার আবরণ ওয়াজিব নয়। তাই তার দিকে অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টি পড়ায়
হারাম হবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি বলেছেন: (তারা যেন তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ
না করে, তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।) এ আয়াত শরীফ
উনার মধ্যে ব্যাখ্যায় তিনটি মত আছে।
প্রথম মতটি হলো- নিশ্চয়ই
বাহ্যিক সৌন্দর্য (যার প্রকাশ দোষণীয় নয়) হলো উপরের পোশাক বা কাপড়। যা হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেছেন। .......
গুপ্ত সৌন্দর্য হলো- হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেছেন, কানের
দুল, গলার হার বা মালা,
বাজু বন্ধ এবং পায়ের ঝুমুর-নুপুর বা গহনা ইত্যাদি। হাতের
চুড়ি বা বালার ব্যাপারে ইখতিলাফ রয়েছে। হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার
থেকে বর্ণিত আছে যে,
চুড়ি বা বালা হলো বাহ্যিক সৌন্দর্য। আর অপর সকল তাফসীরবিদগণ
উনারা বলেছেন হাতের চুড়ি বা বালা হলো গুপ্ত সৌন্দর্য। ..... এই গুপ্ত সৌন্দর্যকে
পরপরুষ থেকে আবরণে বা পর্দায় রাখা ওয়াজিব বা ফরয। পরপুরুষের জন্য মহিলার প্রতি
ইচ্ছাকৃত দৃষ্টি দেয়াও হারাম বা নাজায়িয। আর মাহরামের মধ্যে স্বামীর জন্য তার
স্ত্রীর সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ দেখা ও স্বাদ উপভোগ করা জায়িয। তবে মাহরামদের মধ্যে
পিতা, পুত্র এবং ভাই ইত্যাদির জন্য মহিলার নির্দিষ্ট অঙ্গ দেকা জায়িয কিন্তু তার
থেকে স্বাদ উপভোগ করা জায়িয নেই।”
(তাফসীরুল মাওয়ারাদী ৪র্থ জিঃ ৯০, ৯১
পৃষ্ঠা, ফতহুল ক্বদীর ৪র্থ জি: ২৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরুত তাবারী ১৮ জি: ১১৯ পৃষ্ঠা)
[১৩৪৬]
فجميع هذه النصوص تفيد حرمة النظر الى الاجنبية ولاشك ان الوجه مما لايجوز النظر اليه فهو اذا عورة. (تفسير ايات الاحكام للصابونى ج২ ص১৫৬)
অর্থ: “এ সমস্ত
দলীল-আদিল্লাহ থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত হলো, বেগানা মহিলার দিকে দৃষ্টি দেয়া
হারাম। কোন সন্দেহ নেই যে,
নিশ্চয়ই মহিলার চেহারার দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। যখন
প্রমানিত হয়েছে চেহারা আওরাত বা আবরণীয়।” (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ ছাবূনী
২য় জি: ১৫৬ পৃষ্ঠা)
[১৩৪৭]
واما المعقول فهو ان المرأة لايجور النظر اليها خشية الفتنة والفتنة فى الوجه تكون اعظم من الفتنة بالقدم وال شعر والساق فاذا كانت حرمة النظر الى الشعر والساق بالاتفاق فحرمة النظر الى الوجه تكون من باب اولى باعتبار انه اصل الجمال ومصدر الفتنة ومكمن الخطر.
(تفسير ايات الاحكام للصابونى ج২ ص১৫৬)
অর্থ: “আক্বলী
ফয়সালা: মহিলাদের দিকে ফিতনার আশঙ্কায় দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। চেহারা বা মুখম-লের
দিকে দৃষ্টি দেয়ার ফিৎনা সবচেয়ে বড় ফিৎনা। পা, চুল এবং পায়ের গোছা ইত্যাদির
ফিৎনা থেকে। যখন মাথার চুল,
পায়ের গোছার দিকে দৃষ্টি দেয়া সকলের ঐক্যমতে হারাম তখন
চেহারার দিকে দৃষ্টি দেয়াও হারামই হবে। কেননা এ চেহারা হচ্ছে মূল সৌন্দর্য্যরে
স্থল, ফিৎনার মূল এবং বিপদের কারণ।” (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ ছাবূনী ২য় জি: ১৫৬ পৃষ্ঠা)
[১৩৪৮]
فى زماننا من الاصباغ والمساحيق على وجوههن واكفهن بقصد التجميل ويظهرن به امام الرجال فى الطرقات فلاشك فى تحريمه عند جميع الائمة ثم ان قول بعضهم ان الوجه والكفين ليسا بعورة ليس معناه انه يجب كشفهما اوانه ستة وسترهما بدعة فان ذلك مالايقول به مسلم وانما معناه انه لاحرج فى كشفهما عند الضرورة وبشرط أمن الفتنة امافى مثل هذا الزمان الذى كثر فيه اعوان الشيطان وانتشر فيه الفسق والفجور، فلايقول احد بجواز كشفه، لامن العلماء ولامن العقلاء.
(تفسير ايات الاحكام للصابونى ج২ ص১৫৮)
অর্থ: “আমাদের এ
বর্তমান যামানায় রং,
মুখের ব্যবহৃত পাউডার এবং হাতের অলঙ্কার মহিলারা ব্যবহার
করে রূপ-সৌন্দর্য প্রকাশের নিয়তে। এগুলো দিয়ে সজ্জিত হয়ে পুরুষদের সামনে প্রদর্শণ
করে পথে বের হওয়া সকল ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের মতে বিনা
সন্দেহে হারাম। কোন কোন ইমাম ও মুজতাহিদ উনাদের মতে- মুখম-ল ও দু’হাত
আবরণীয় নয়। এর অর্থ এ নয় যে, এটা প্রকাশ করা ওয়াজিব, সুন্নত বা এর আবরণ বিদয়াত। বরং এর
অর্থ হলো বিশেষ জরুরতে হাত ও চেহারা উন্মুক্ত করতে অসুবিধা নেই। তবে এখানেও ফিৎনা
মুক্ত হওয়া শর্ত। এ যামানায় এ হুকুমের কারণ হলো, সমাজে শয়তানি কাজ-কারবার বেড়ে
গেছে এবং ফিসক তথা গুণাহ ও ফুযূর তথা খারাপ কাজের ব্যপকতা ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য কেউ
চেহারা বা মুখম-ল খোলাকে জায়িয বলেন না। আলিম-উলামা রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারাও
এটাকে জায়িয বলেন না এবং উক্বালা-ছূফী, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণ উনারাও চেহারাকে উন্মুক্ত রাখা জায়িয বলেন না।” (তাফসীরে
আয়াতুল আহকাম লিছ ছাবূনী ২য় জি: ১৫৭ পৃষ্ঠা)
[১৩৪৯]
الحكم الثالث ماهى الزينة التى يحرم ابداؤها؟ دلت الاية الكريمة وهى قوله تعالى (ولايبدين زينتهن) على حرمة ابداء المرأة زينتها امام الاجانب تتزين به المرأة وتتجمل من انواع الثياب والحلى والخضاب وغيرها ثم قد تطلق على ما هو اعم واشمل من اعضاء البدن.
(تفسير ايات الاحكام للصابونى ج২ ص১৫৮)
অর্থ: “তৃতীয়
হুকুম বা বিধান: সে সৌন্দর্য কি যার প্রকাশ হারাম করা হয়েছে? (উত্তর)
মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী (তারা মহিলারা যেন তাদের সৌন্দর্যকে প্রদর্শন না করে) এ
আয়াতে কারীমা প্রমাণ করে যে, ফিৎনার আশঙ্কায় পরপুরুষের সামনে মহিলাদের সৌন্দর্য প্রকাশ
করা হারাম। মূলে সৌন্দর্য হলো যার মাধ্যমে মহিলারা সৌন্দর্যম-িত হয়। যেমন, কাপড় বা
পোশাকের চমকপ্রদ সৌন্দর্যতা, অলঙ্কার, খিযাব বা রং এবং অন্যান্য উপকরণ। এর দ্বারা শরীরের সমস্ত
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে এ হুকুমের মধ্যে শামিল করা হয়েছে।” (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ ছাবূনী
২য় জি: ১৫৮ পৃষ্ঠা)
[১৩৫০]
واما الزينة الباطنة فلايحل ابداؤها الا لمرسما هم الله تعالى فى هذه الاية (ولايبدين زينتهن الا لبعولتهن) الاية وهم الزوج والمحارم من الرجال. (تفسير ايات الاحكام للصابونى ج২ ص১৫৯)
অর্থ: “زينة باطنة ‘যীনায়ে
বাতিনাহ’ তথা গুপ্ত সৌন্দর্য প্রকাশ করা হালাল নয় বা জায়িয নয়। তবে (তারা যেন তাদের
সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে,
তবে তাদের স্বামীর কাছে প্রকাশ করতে পারবে।) মহান আল্লাহ
পাক তিনি এ আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্বামী এবং পুরুষদের মধ্যে যারা মাহরাম তাদের কথা
ব্যতিক্রম বর্ণনা করেছেন।”
(তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ ছাবূনী
২য় জি: ১৫৯ পৃষ্ঠা)
[১৩৫১]
لايجوز للمسلمة از تبدى زينتها الا امام الزوج او المحارم من اقاربها على المسلمة ان تستر رأسها ونحرها وصدرها بخمارها لنلا يطلع عليها الاجانب.
تفسير ايات الاحكام للصابونى ج২ ص১৬৮)
অর্থ: “মুসলিমা
মহিলাদের জন্য স্বামী এবং নিকটাত্মীয়দের মধ্যে মাহরামগণ ব্যতীত অন্যান্য সকলের
সামনে সৌন্দর্যকে প্রকাশ করা জায়িয নেই। মুসলিমা মহিলার জন্য ফরয-ওয়াজিব হলো, সে তার
গলা, ঘাড়, বুক ইত্যাদি খিমার বা উড়না দ্বারা ঢেকে রাখবে। যাতে পরপরুষের সামনে তা প্রকাশ
না হয়।” (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ ছাবূনী ২য় জি: ১৬৮ পৃষ্ঠা)
[১৩৫২]
والثالث ان ستر العورة فرض على كل مؤمن ومؤمنة الرجل والمرأة فيه سواء والحجاب مخصوص بالنساء.
(احكام القران لشفيع والتهانوى ج৩ ص৪০৭)
অর্থ: “তৃতীয়
হুকুম: প্রত্যেক মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আওরাত বা ছতর ঢেকে রাখা ফরয। এ হুকুমে পুরুষ ও
মহিলা সমান। অর্থাৎ সকলেরই জন্য ছতর ঢাকা ফরয। তবে ‘হিজাব’ শব্দটি
শুধু মহিলাদের ব্যাপারেই খাছ।”
(আহকামুল কুরআন লিশ শফী ওয়াত
থানুবী ৩য় জি: ৪০৭ পৃষ্ঠা)
[১৩৫৩]
الرابع ان المرأة عورة مستورة كل بدنها سوى الوجه والكفين، فالوجه والكفان ليسا من العورة بالاتفاق حتى جازت الصلوة مع كشفهما اجماعا واما الحجاب فى الوجه والكفين فمختلف فيه، قيل حجاب الوجه والكفين فرض كسائر البدن الا فى موضع الضرورة.
(احكام القران للشفيع والتهانوى ج৩ ص৪০৭)
অর্থ: “চতুর্থ
হুকুম: নিশ্চয়ই মহিলার মুখম-ল ও দু’হাতসহ সমস্ত শরীর আবরণীয়, পর্দাযোগ্য।
সকলের ঐক্যমতে মুখম-ল এবং দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত নামযের ছতর নয়। ইজমা বা উম্মতের
ঐক্যমতে হাত ও চেহারা খুলে নামায পড়া জায়িয। মুখ ও হাতের পর্দার বিষয়ে ইখতিলাফ
রয়েছে। বিশুদ্ধ মত হলো,
মুখম-ল বা চেহারা ও দু’হাতের পর্দা সমস্ত শরীরের
অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পর্দার মত ফরযে আইন। তবে জরুরতের অবস্থা ব্যতিক্রম।”
(আহকামুল কুরআন লিশ শফী ওয়াত
থানুবী ৩য় জি: ৪০৭ পৃষ্ঠা)
0 Comments:
Post a Comment