হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ( ১৪ নং )


হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া। 


হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।  তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেহিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। কেননা, প্রথমতঃ কিছু লোক কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্মঅর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক) পাশাপাশি কিছূ বাতিল ফিরকাভূক্ত অখ্যাত নামধারী ইসলামী মাসিকেও অনুরূপ মন্তব্য করা হয়। এছাড়া অনেক নামধারী ওয়ায়েযও  এরূপ বলে থাকে। অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।  খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিলাদের খাছ পর্দা হলো- ১. মহিলারা সর্বদাই ঘরে অবস্থান করবে। ২. ঘরে অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই গায়রে মাহ্রামদের সাথে দেখা দিতে পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। ৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭. প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে কথা বলবে, নরম সূরে কথা বলবে না। এটাই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা। আর এটাই শরীয়তের নির্দেশ।  অতএব, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুনাহে গুনাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ) মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল। বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤيكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী) স্মর্তব্য যে, ঐ সকল দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে? অতএব, উল্লিখিত উলামায়ে ছূদের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো।  আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)


কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্  শরীফ,  ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন        
            ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্জ (৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয অর্থাৎ ফরযে আইন।     কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে।       নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হাদীছ শরীফের আলোকে হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ

পুর্ববর্তী সংখ্যাগুলো উল্লেখকৃত যে সমস্ত আয়াত শরীফ সমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দাফরয প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা এটাই প্রামণিত হয়েছে যে, শুধু বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা পর্দা নয়। বরং  তার সথে সাথে সংশ্লিষ্ট আয়াত শরীফের মত হাদীছ শরীফ সমূহে উল্লিখিত সকল হুকুম-আহকাম সমূহ মেনে চলার নামই হচ্ছে শরয়ী হিজাব বা পর্দা।
যেমন, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা, মাহরামদের সামনেও শালীনতা বজায় রাখা, চলাচলের সময় পুরুষ মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকে অবনত রাখা, নিজেদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করা, বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পরপুরুষকে না শুনানো, প্রয়োজনে কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা বলা, গাইরে মাহরামের সামনে মহিলাদের চেহারা হাত ও পা সহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা, ঘরে-বাইরে যে কোন খানে পরপুরুষ থেকে পূর্ণ সংরক্ষণে থাকা ইত্যাদী সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ কুরআন শরীফের আলোকে যেরূপ উল্লিখিত বিষয়গুলো ফরযে আইন গ্রমাণিত হয়েছে। তদ্রুপ হাদীছ শরীফের আলোকেও তা ফরযে আইন প্রমাণিত হয়।
যে সকল হাদীছ শরীফ সমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার উল্লেখসহ বিস্তারিত তাশরীহ বা ব্যাখ্যা
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে আয়াত শরীফ ও তাফসীরের মত হাদীছ শরীফ ও তাশরীহ্ বা ব্যাখ্যা তুলে ধরলে শরয়ী হিজাব বা পর্দার পরিচয় ও হুকুম-আহকাম আরো উজ্জলভাবে ফুটে উঠবে। তাই নিম্নে নির্ভরযোগ্য, অকাট্য, প্রামাণ্য ও সর্বজনমান্য হাদীছ শরীফ ও তার শরাহ বা ব্যাখ্যা গ্রন্থ থেকে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে হাদীছ শরীফ উল্লেখসহ তার তাশরীহ বা ব্যাখ্যাপৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো।

কারো ঘরের ছিদ্র দিয়ে ভিতরে
দৃষ্টি দেয়া হারাম
কারো ঘরের ছিদ্র দিয়ে ভিতরে দৃষ্টি দেয়া হারাম। কেননা এতে পর্দার ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সুতরাং কারো ঘরের ছিদ্র  দিয়ে ভিতরে দৃষ্টি না দেয়াটাও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
[১৪৬২-১৪৬৭]
عن ابن شهاب ان سهل بن سعد الانصارى اخبره ان رجلا اطلع من جحر فى باب رسول الله صلى الله عليه وسلم ومع رسول الله صلى الله عليه وسلم مدرى يرجل به رأسه فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم لو اعلم انك تنظر طعنت به فى عينك انما جعل الله الاذن من اجل البصر. (مسلم شريف كتاب الادب باب تحريم النظر فى بيت غير. شرح النووى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى شرح الابى والسنوسى، مسند احمدبن حنل ج ص ২৬৬)

অর্থঃ- হযরত ইবনে শিহাব যুহরী রহমুতল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত সাহ্ল বিন সাদ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে খবর দিয়েছেন যে, জনৈক এক ব্যক্তি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুজরা শরীফে ছিদ্র দিয়ে তাকালো। তখন হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারকে একটি চিরণী ছিল, যা দিয়ে তিনি তাঁর মাথা মুবারক আঁচড়াচ্ছিলেন। তখন হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, আমি যদি জানতাম যে, তুমি দেখছ, তাহলে তা দিয়ে তোমার চোখে আঘাত করতাম। চোখের দৃষ্টি হিফাযতের জন্য আল্লাহ্ পাক অনুমতির বিধান জারী করেছেন। (মুসলিম শরীফ কিতাবুল আদাব বাবু তাহরীমিন নাযরি ফী বাইতি গাইরিন, শরহুন্ নববী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল মুলহিম লিত্ তক্কী উছমানী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল ২য় জিঃ ২৬৬ পৃষ্ঠা)
[১৪৬৮-১৪৭৩]

عن ابى هريرة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال من اطلع فى بيت قم بغير اذنهم فقد حل لهم ان يفقؤا عينه. (مسلم شريف كتاب الادب باب تحريم النظر فى بيت غير، شرح الابى والسنوسى، شرح النووى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمائى، سمند احمدبن حنبل ج ص ৩৬৬)
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন কাওমের ঘরে তাদের অনুমতি ছাড়াই উঁকি-ঝুঁকি মারে, তাহলে ঘড়ওয়ালার জন্য বৈধ হবে তার চোখ ফুটা করে দেয়া।” (মুসলিম শরীফ কিতাবুল আদাব বাবু তাহরীমিন্ নাযরি ফী বাইতি গাইরিন, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনুসী, শরহুন্ নববী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্কী উছমানী, মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল ২য় জিঃ ২৬৬ পৃষ্ঠা)
[১২৭৪-১৪৭৯]

عن ابى هريرة رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لو ان رجلا اطلع عليك بغير اذن فحذفته بحصاة ففقأت عينه ما كان عليك من جناح. (مسلم شريف كتاب الادب باب تحريم النظر فى بيت غير، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، مسند احمد بن حنبل ج ص ২৬৬)
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কোন ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে তোমার প্রতি উঁকি-ঝুকি মারে, আর তুমি তাকে কংকর-পাথর মেরে তার চোখ নষ্ট করে বা ফুড়ে দাও, তাহলে তোমার উপর কোন গুণাহ্ হবেনা।” (মুসলিম শরীফ কিতাবুল আদাব বাবু তাহরীমিন্ নাযরি ফী বাইতি গাইরিন, শরহুন্ নববী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফহুল্ মুলহিম লিত্ তক্কী উছমানী, মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল ২য় জিঃ ২৬৬ পৃষ্ঠা)

উল্লিখিত হাদীছ শরীফ গুলোর ব্যাখ্যায় ইমাম মুজতাহিদগণ যা বলেছেন তার বিস্তারিত বর্ণনা
[১৪৮০]

قوله صلى الله عليه وسلم انما جعل الاذن من اجل البصر معناه ان الاستئذان مشروع ومأموربه وانما جعل لئلا يقع البصر على الحرام فلا يحل لاحد ان ينظر فى جحر باب ولا غيره مما هو متعرض فيه لوقوع بصره على امرأة اجنبية. (شرح النووى ج ص ১৩৭. ১৩৮)
অর্থঃ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীঃ চোখের দৃষ্টিকে হিফাযতের জন্য অনুমতির বিধান দেয়া হয়েছে। এর অর্থ হলো অনুমতি চাওয়া শরীয়তের হুকুম, এবং নির্দেশ হয়েছে, যাতে হারাম কোন কিছুর দিকে চোখের দৃষ্টি না পড়ে। কারো ঘরের দরজায় উঁকি ঝুঁকি মারা হালাল বা জায়িয নয়। কেননা এতে সন্দেহ থাকে যে কোন বেগানা মহিলার উপর দৃষ্টি পড়ে যায় কিনা। (শরহুন্ নববী ৭ম জিঃ ১৩৭, ১৩৮ পৃষ্ঠা)
[১৪৮১-১৪৮৩]


قوله صلى الله عليه وسلم (من اطلع فى بيت قوم بغير اذنهم فقد حل لهم ان يفقوا عينه) قال العلماء محمول على ما اذا نظر فى بيت الرجل فرماه بحصاه ففقأ عينه. (شرح النووى ج ص ১৩৮)

অর্থঃ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীঃ (যদি কোন ব্যক্তি কোন কওমের ঘরে অনুমতি ছাড়া উঁকি-ঝুঁকি মারে, তবে ঘর ওয়ালার জন্য বৈধ হবে তার চোখ ফুটা করে দেয়া) হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির ঘরে দৃষ্টি দেয়, তখন যেন পাথর নিক্ষেপ করে তার চোখ ফুটা বা নষ্ট করে দেয়।” (শরহুন্ নববী ৭ম জিঃ ১৩৮ পৃষ্ঠা)
 বুখারী শরীফ কিতাবুদ্ দিয়াত বাবু মান ইত্তালায়া ফী বাইতি কাওমিন ফাফাকাঊ আইনাহু ফালা দিয়াতালাহু, কিতাবুল লিবাস বাবুল্ ইমতিশাত্ব, কিতাবুল ইসতিসান বাবুল ইসতিযানি মিন আজলিল্ বাছার, তিরমিযী শরীফ কিতাবুল ইসতিযান বাবু মান ইত্তালায়া ফী বাইতি কাওমিন বিগাইরি ইযনিহিম, নাসায়ী শরীফ কিতাবুল্ ক্বাসামাহ্ বাবু ফিল উকূল।ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উছমানী ৪র্থ জিঃ ২৩৬ পৃষ্ঠা।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ সমূহ এবং তার তাশরীহ বা ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, বিনা অনুমতিতে কারো ঘরে দৃষ্টি দেয়া বা উঁকি-ঝুঁকি মারা জায়িয নেই। বরং হারাম, নাজায়িয। কেননা তা বেপর্দা হওয়ার নামান্ত। আর যদি কেউ উঁকি-ঝুঁকি মারে, এঞ্জকারণে বাড়ীর মালিক চোখ ফুটা করে দেয় তাও জায়িয হবে। তাই মানুষের বাড়ীর দিকে অযথা দৃষ্টি দিয়ে পর্দার খিলাফ করা বা পর্দার ব্যাঘাত ঘটানো উভয়েই শরীয়তের খিলাফ কাজ।
অন্যের ঘরে প্রবেশের পূর্বে ঘর ওয়ালার নিকট
অনুমতি তলবের সুন্নত তরীক্বা বা পদ্ধতি
মূলতঃ হিজাব বা পর্দা রক্ষার স্বার্থেই কারো ঘরে প্রবেশের পূর্বে ঘরওয়ালার অনুমতি তলবের বিধান দেয়া হয়েছে। কেননা, বিনা অনুমতিতে কারো ঘরে প্রবেশ করার মধ্যে বেপর্দা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
[১৪৮৪-১৪৮৬]


عن ربعى قال نا رحل من بنى عامر انه استأذن على النبى صلى الله عليه وسلم وهو فى بيت فقال الج فقال النبى صلى اله عليه وسلم بخادمه اخرج الى هذا فعلمه الاستيذان فقال له السلام عليكم اادخل فسمعه الرجل فقال السلام عليكم اادخل فاذن له النبى صلى الله عليه وسلم فدخل. (ابوداؤد شريف كتاب الادب باب فى الاستنذان، بذل المجهود، عون المعبود)

অর্থঃ- হযরত রিবয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বণী আমের গোত্রের এক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন যে, একবার তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হতে অনুমতি চান, আর সে সময় তিনি তাঁর ঘরে অবস্থান করছিলেন। সে ব্যক্তি বললো, আমি কি প্রবেশের অনুমতি পেতে পারি? এ সময় হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর খাদিমকে বললেন, তুমি ঘরের বাইরে লোকটার কাছে গিয়ে তাকে অনুমতির সুন্নত পদ্ধতি জানিয়ে দাও। অতঃপর তিনি লোকটিকে বললেন তুমি বলো السلام عليكم اادخلআস্ সালামু আলাইকুমআমি কি প্রবেশ করতে পারি? লোকটি তা শুনলো এবং বললো السلام عليكم اادخلআস্সালামু আলাইকিুম আমি কি প্রবেশ করতে পারি? তখন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকটিকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। আর লোকটি প্রবেশ করলো।” (আবূ দাউদ শরীফ কিতাবুল আদাব বাবুন ফিল্ ইসতিযান, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মাবূদ)
[১৪৮৭-১৪৮৯]

عن هزيل قال جاء رحل قال عشمان سعدبن ابى وقاص فوقف على باب النبى صلى الله عليه وسلم يستأذن فقام على الباب قال عثمان مستقبل الباب فقال له النبى صلى الله عليه وسلم هكذا عنك وهكذا فانما الاستيذان من النظر. (ابوداود شريف كتاب الادب باب فى الاستئدان، بذل المجهود، عون المعبود)
অর্থঃ- হযরত হুযাইল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আসে। রাবী উছমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি হলেন হযরত সাদ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু। তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে অনুমতি প্রার্থনা করছিলেন। রাবী উছমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তাঁর চেহারা ছিল দরজার দিকে। তখন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলেন, তুমি এভাবে দাঁড়াবে। কেননা ভিতরে দৃষ্টি দেয়া থেকে বাঁচার জন্য অনুমতি প্রার্থনা।” (আবূ দাউদ শরীফ কিতাবুল আদাব বাবুন ফিল ইসতিযান, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মাবূদ)
উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দুখানা থেকে প্রমাণিত হলো যে, কারো কাছে অনুমতি নেয়ার পূর্বে তাকে সালাম দিতে হবে। আর কারো দরজায় দাড়িয়ে বাড়ী বা ঘরের ভিতরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা যাবে না। বরং দরজার ডান অথবা বাম দিকে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে দেখতে হবে।
হিজাব বা পর্দা রক্ষার্থে মহিলারা তাদের মাথায়
ওড়না তাদের বুকের উপর ঝুলিয়ে রাখবে
মাহরাম পুরুষদের সামনে মহিলারা তাদের মুখম-ল, হাত পা খোলা রাখতে পারবে। কিন্তু গায়রে মাহরামদের সামনে মুখম-ল, হাত পাসহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখতে হবে। তবে পর্দা রাক্ষার স্বার্থে মাহরাম পুরুষদের সামনেও মহিলারা তাদের মাথায় ওড়না তাদের বুকের উপর ঝুলিয়ে রাখবে। এটাই  কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের নির্দেশ। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
[১৪৯০-১৪৯৪]

حدثنا احمد بن شبيب حدثنا ابى عن يونس عن ابن شهاب عن عروة عن عائشة رضى الله عنها قالت: يرحم الله نساء المهاجرات الاول لما انزل الله وليضربن بخمرهن على جيوبهن شققن مروطهن فاختمرن بها. (بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى)

অর্থঃ- আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আহমদ বিন শাবীব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আমার পিতা হযরত ইউনূছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইবনু শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে। হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আল্লাহ্ পাক সেই মহিলাগণের উপর রহম করেছেন যারা প্রথম প্রথম হিজরত করেছিলেন। যখন আল্লাহ্ পাক তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বুকের উপর ফেলে রাখেআয়াত  শরীফ নাযিল করলেন, তখন তারা তাদের চাদর ফেড়ে তা দ্বারা ওড়না বানিয়েছিলেন। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী)
[১৪৯৫-১৪৯৯]

حدثنا ابو نعيم حدثنا ابراهيم بن نافع عن الحسن بن مسلم عن صفية بنت شيبة ان عائشة رضى الله عنها كانت تقول لما نزلت هذه الاية وليضربن بخمرهن على جيوبهن اخذن ازرهن فشققنها من قبل الحواشى فاختمرن بها. (بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى)
অর্থঃ- আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ নঈম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইবরাহীম বিন নাফিরহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান বিন মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ছুফিয়া বিনতে শাইবা রহমতুল্লাহি আলাইহা থেকে। তিনি বলেন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, যখন এ আয়াত শরীফ তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের  বুকের উপর ফেলে রাখেনাযিল হলো, তখন তারা তাদের তহবন্দ ছিড়ে তার এক অংশ দিয়ে মাথার ওড়না তৈরি করে নেন। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল্ ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী)
মহিলাদের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে
গায়রে মাহরামদের নিকট যাওয়া এবং
রাস্তায় চলাচল করা হারাম
[১৫০০-১৫০৯]

قال ابو عيسى الترمذى حدثنا محمد ابن بشار حدثنا يحيى بن سعيد القطان عن ثابت بن عمارة الحنفى عن غنيم بن قيس عن ابى موسى رضى اله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم انه قال كل عين زانية والمرأة اذا استعطرت فمرت بالمجلس فهو كذا وكذا يعنى زانية. وفى الباب عن ابى هريرة وهذا حسن صحيح. رواه ابو داود والنسائى من حديث ثابت عمارةبه. (ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، ابوداؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، نسائ شريف، ستن الكبرى تفسير ابن كثير ج ص ৪৫৭)
অর্থঃ- হযরত আবূ ঈসা তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ ইবনে বাশ্শার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ ক্বত্তান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ছাবিত বিন আম্মারাতাল্ হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি গানীম বিন কায়েছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আবূ মুসা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে, তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক চোখ ব্যভিচারী, যখন মহিলা আতর বা সুগন্ধি মেখে পুরুষদের কোন মজলিসের পাশ দিয়ে গমণ করে তখন সে এরূপ এরূপ।অর্থাৎ ব্যভিচারিনী। একইভাবে হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে। এটি হাসান ছহীহ্। আবূ দাঊদ এবং নাসায়ী হযরত ছাবিত বিন আম্মারা থেকে বর্ণনা করেছেন। (তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ,  নাসায়ী শরীফ, সুনানুল্ কুবরা, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৭ পৃষ্ঠা)
 [১৫১০-১৫১৪]
قال ابو داؤد حدثنا محمد بن كثير اخبرنا سفيان عن عاصم بن عبيد الله عن عبيد مولى ابى رهم عن ابى هريرة رضى الله عنه قال: لقيته امرأة شم منه ريح الطيب ولذيلها اعصار. فقال: يا امية الجبار جئت من المسجد؟ قالت نعم. قال لها: تطيب؟ قالت نعم قال انى سمعت حبى ابا القاسم صلى الله عليه وسلم يقول لايقبل الله صلاة امرأة طيبت لهذا المسجد حتى ترجع فتغسل غسلها من الجنابة. رواه ابن ماجة عن ابى بكربن ابى شيبة عن سفيان هو ابن عيينة به. (ابوداؤد شسريف، بذل المجهود، عون المعبود، ابن ماجة، تفسير ابن كثير ج ص ৪৫৭)

অর্থঃ- হযরত আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ বিন কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আছিম বিন উবাইদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি উবাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে যিনি আবূ রহম-এর মনীব। তিনি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে। তিনি বলেন, এমন একজন মহিলার সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো যে সুগন্ধি ছড়িয়ে চলছিল। তিনি বললেন, হে প্রতাপশালী আল্লাহ্ পাক-এর দাসী! তুমি কি মসজিদ থেকে আসছো? মহিলা বললো, হ্যাঁ। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি সুগন্ধি মেখেছো? সে উত্তরে বললো হ্যাঁ। এবার  তিনি  বললেন, আমি আমার প্রাণ প্রিয় আবূল্ কাসিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, “আল্লাহ্ পাক এমন মহিলার নামায কবুল করবেন না, যে এ মসজিদে আসার জন্য সুগন্ধি  মেখেছে। যে পর্যন্ত না সে ফিরে গিয়ে অপবিত্রতার তথা ফরয গোসলের ন্যায় গোসল না করবে।ইবনু মাজাহ হাদীছ শরীফটি হযরত আবূ বকর বিন  আবী শাইবাহ থেকে, তিনি সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। যিনি ইবনু উয়াইনা হিসেবে পরিচিত। (আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবূদ, ইবনু মাজাহ শরীফ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৭ পৃষ্ঠা)
মাহরাম ব্যতীত অন্য পুরুষের নিকট মহিলাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করা, স্বামীর অনুমতি ব্যতীত পর পুরুষের সাথে কথা বলা ও পুরুষের জন্য স্ত্রী ব্যতীত বেগানা মহিলার সাথে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলা হারাম
 [১৫১৫-১৫১৯]

عن ميمونة بنت سعد ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال "الرافلة فى الزينة فى غير اهلها كمثل ظلمة يوم القيامة لا نور لها. (ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، تفسير ابن كثير ج ص ৪৫৮)
অর্থঃ- হযরত মাইমূনা বিন সাদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ্  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “অস্থানে (মাহরাম  ছাড়া অন্যস্থানে) সৌন্দর্য প্রদর্শন কারিনী নারী কিয়ামতের  দিনের ঐ অন্ধকারের মত যেখানে কোন আলো নেই।
(তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী,  উরফুশ্ শাযী, তাফসীরে ইবনে  কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৮ পৃষ্ঠা)
 [১৫২০-১৫২১]

روى الطبرانى بسند حسن عن عمروبن العاص ان النبى صلى الله عليه وسلم نهى ان يكلم لنساء الا باذن ازواجهن. (طبرانى شريف، التفسير المظهرى ج ص ৩৩৭)
অর্থঃ- হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাসান সূত্রে হযরত আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামীর বিনা অনুমতিতে পর পুরুষের সাথে মহিলাদেরকে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। (ত্ববারানী শরীফ, আত্ তাফসীরুল মাযহারী ৭ম জিঃ ৩৩৭  পৃষ্ঠা)
 [১৫২২-১৫২৪]

روى الدار قطنى فى الافراد عن ابى هريرة انه صلى الله عليه وسلم نهى ان يتمطى الرجل فى الصلوة او عند النساء الاعند امراته وجواريه. (دار قطنى. افراد، التفسير امظهرى ج ص ৩৩৭)

অর্থঃ- হযরত ইমাম দারা কুতনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার আফরাদনামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদেরকে নামাযের মধ্যে অশুভ কথা বলতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে নিজ স্ত্রী ও ক্রীতদাসীঞ্জছাড়া অন্য মহিলাদের সাথেও আকর্ষনীয় কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
(দারু কুতনী, আফরাদ, আত্ তাফসীরুল মাযহারী ৭ম জিঃ ৩৩৭ পৃষ্ঠা)

মহিলাদের জন্য কোন জিহাদ নেই, হিজাব
বা পর্দা রক্ষার্থে ঘরে অবস্থান করাই হচ্ছে মহিলাদের জিহাদ
[১৫২৫]
عن انس رضى الله عنه قال جئن النساء الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقلن يا رسول الله ذهب الرجال بالفضل والجهاد فى سبيل الله تعالى، فمالنا عمل ندرك به عمل المجاهدين فى سبيل الله تعالى، فقال رسول الله صلى اله عليه وسلم، من قعدت او كلمة نحوها منكن فى بيتها فانها تدرك عمل المجاهدين فى سبيل الله تعالى. (تفسير ابن كثير ج ص ৭৬৮)
অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা মহিলারা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পুরুষ লোকেরা আল্লাহ্ পাক-এর পথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করে তার ফযীলত লাভ করছেন। আমাদের জন্য কি এমন আমল আছে যার দ্বারা আমরা মুজাহিদগণের মত ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা লাভ করতে পারি? উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যারা নিজেদের ঘরে পর্দার সাথে বসে থাকবে তারা আল্লাহ্ পাক-এর পথে জিহাদকারী মুজাহিদগণের সমমর্যাদা-ফযীলত লাভ করবে।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ২য় জিঃ ৭৬৮ পৃষ্ঠা)

 যে মহিলা প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে
বের হয়না বরং সর্বদাই ঘরে অবস্থান  করে সে  মহিলাই আল্লাহ পক-এর নিকট উত্তম
[১৫২৬-১৫৩৮]

عن عبد الله رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال "ان المرأة عورة فاذا خرجت استشرفها الشيطان واقرب ما تكون بروحة ربها وهى فى قعر بيتها" ورواه الترمذى عن بندار عن عمرو  بن عاصم به نحوه. (ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، مشكوة شريف، مرقاة. شرح الطيبى، التعليق الصبيح، مظاهر حق، لمعات، اشعة المعات، مرأة المناجيح، تفسير ابن كثير ج ص ৭৬৮، ৭৬৯)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই মহিলা পর্দার অধিন, যখন সে ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি ঝুঁকি মারে। সে তার রব আল্লাহ্ পাক-এর রহমতের নিকটবর্তী হয় তখনই যখন ঘরের প্রকোষ্টে অবস্থান করতে থাকে। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফটি বিনদার রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি আমর বিন আছিম  রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। (তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ২য় জিঃ ৭৬৮, ৭৬৯ পৃষ্ঠা)
 [১৫৩৯-১৫৪৭]

عن النبى صلى الله عليه وسلم قال "صلوة المرأة فى مخدعها افضل من صلاتها فى بيتها وصلاتها فى بيتها افضل من صلاتها فى حجرتها. وهذا اسناد جيد. ( بزار، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، تفسير ابن كثير ج ص ৭৬৮، ৭৬৯)
অর্থঃ- হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “মহিলা মানুষের অন্দর মহলের নামায তার ঘরের নামায হতে উত্তম, তার ঘরের নামায হুজরার-আঙ্গিনার নামায হতে উত্তম।এ সনদটি উৎকৃষ্ট। (বায্যার, আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, তাফসীরে ইবনে কাছীর ২য় জিঃ ৭৬৮, ৭৬৯ পৃষ্ঠা)
 [১৫৪৮-১৫৪৯]

اخرج البيهقى فى سننه عن ابى اذينة الصدفى رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه سلم قا شر النساء المتبرجات وهن المنافقات لايدخل الجنة منهن الامثل الغراب الاعصم. (بيهقى شريف، الدر المنثور ج ص ১৯৭)
অর্থঃ- হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সুনানের মধ্যে হযরত আবূ আযীনা ছদাফী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বাইরে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী মহিলারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, তারাই মুনাফিক মহিলা। তাদের থেকে কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেঞ্জনা।  তবে যে মহিলার রং কাকের মত কালো সে ব্যতীত।” (বাইহাক্বী শরীফ, আদ্ দুররুল মানছুর  ৪র্থ জিঃ ১৯৭ পৃষ্ঠা)
[১৫৫০-১৫৫৫]

اخرج الترمذى والبزار عن ابن مسعود عن النبى صلى الله عليه وسلم قال: ان المرأة عورة فاذا خرجت من بيتها استشرفها الشيطان واقرب ما تكون من رحمة ربها وهى فى قعر بيتها، (ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، بزار، تفسير روح المعانى ج ১২ ص ৬)
অর্থঃ- হযরত ইমাম তিরমিযী ও আবূ বকর বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে, তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই মহিলা পর্দার অধিন, যখন সে ঘর থেকে বাইরে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি-ঝুঁকি মারে। সে তার রব আল্লাহ পাক-এর রহমতের নিকটবর্তী হয় তখনই যখন ঘরের প্রকোষ্টে অবস্থান করতে থাকে।” (তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, বাযযার, তাফসীরে রূহুল মায়ানী ১২ জিঃ ৬পৃষ্ঠা)

ইচ্ছাকৃতভাবে পুরুষ-মহিলা একে অপরের প্রতি দৃষ্টি করা হারাম বা লানতপ্রাপ্তির কারণ, তাই সর্বদাই দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে
 [১৫৫৬-১৫৫৭]
عن الحسن مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناطر والمنظور اليها. (بيهقى فى فى شعب الايمان، التفسير المظهرى ج ص ৪৯১)

অর্থঃ- হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমার কাছে সংবাদ পৌছেছে যে, নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালার লানত ঐ সকল পুরুষের  প্রতি যারা পর নারীকে দেখে এবং ঐ সকল নারীদের প্রতি যারা দেখা দেয়। (বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান, আত্ তাফসীরুল মাযহারীঞ্জ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯১ পৃষ্ঠা)
 [১৫৫৮-১৫৬৭]

عن بريدة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى يا على لاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليس لك الاخرة. (مسند احمد بن حنبل، الفتح الربانى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود. دارمى)
অর্থঃ- হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, হে  আলী! প্রথম বার তাকানোর পর পুনরায় তাকাবে না। কেননা, তোমার প্রথমবারের (অনিচ্ছাকৃতভাবে দেয়া) দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে কিন্তু দ্বিতীয়বারের দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না। (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, আল্ ফতহুর রব্বানী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, আবূ দাঊদ শরীফ,বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, দারিমী)
 [১৫৬৮-১৫৭২]

عن جرير بن عبد الله قال سالت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن نظرة الفجاة فامرنى ان اصرف. (مسلم شريف، شرح النووى، فتح الملهم للتقى عثمانى. فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، شرح الابى والسنوسى)
অর্থঃ-  হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে কি করবো, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ করেছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে। (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উছমানী, ফতহুল মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী)
 [১৫৭৩-১৫৭৪]

عن ابى امامة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ما من مسلم ينظر الى محاسن امرأة اول مرة ثم يغض بصره الا احدث الله له عبادة يجد حلاوتها. (مسند احمد بن حنبل، الفتح الربانى)

অর্থঃ- হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কোন মুসলমান অন্য নারীর সৌন্দর্যের প্রতি প্রথম দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে চক্ষু ফিরিয়ে নিবে, আল্লাহ পাক তার ইবাদতে স্বাদ ও আনন্দ সৃষ্টি করে দিবেন। (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, আল্ ফতর্হু রব্বানী)
[১৫৫৭-১৫৮৮]
عن ابى سعيد قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اياكم والجلوس على الطرقات قالوا يا رسول الله لابدلنا من مجالسنا نتحدث فيها، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان ابيتم فاعطوا الطريق حقه قالوا وما حق الطريق يا رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ فقال غض البصر وكف الاذى ورد السلام والامر بالمعروف والنهى عن المنكر. (بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى، مشكوة شريف، مرقاة، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهر حق، مراة المناجيح، تفسير ابن كثير ج ص ৪৫০)

অর্থঃ- হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বেঁচে থাকো। ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের কোন গতি নেই। আমরা সেখানে বসে প্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলে থাকি। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, যদি তোমাদের বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক্ব আদায় কর। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! রাস্তার হক্ব কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দৃষ্টি নিম্নগামী করা, কাউকে কষ্ট না দেয়া, সালামের উত্তর দেয়া, সৎ কাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকা ও রাখা।” (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫০ পৃষ্ঠা)
[১৫৮৯-১৬০৩]

عن ابى امامة يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اكفلوا لى بست اكفل لكم بالجنة اذا حدث احدكم فلا يكذب واذا اوتمن فلايخن واذا وعد فلا يخلف وغضوا ابصاركم وكفوا ايديكم واحفظوا فروجكم. وفى صحيح البخارى من يكفل لى ما بين لحييه وما بين رجليه اكفل له الجنة. (مشكوة شريف، مرقاة، شرح الطيبى، التعليق الصبح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهر حق، مرأة المنا جيح، تفسير ابن كشير ج ص ৪৫১، تفسير البغوى، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى،
অর্থঃ- হযরত আবূ উমামাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি। তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা ছয়টি জিনিষের দায়িত্ব নাও, তাহলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নিচ্ছি। ছয়টি জিনিষ হলো- (১) তোমাদের মধ্যে যখন কেউ কথা বলবে, তখন মিথ্যা বলবে না, (২) যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয়,  তখন তা খিয়ানত করবে না, (৩) যখন ওয়াদা করবে, তখন তা ভঙ্গ করবে না, (৪) তোমাদের দৃষ্টিকে নিম্নগামী করবে, (৫) যুলুম করা থেকে হাতকে সংযত রাখবে এবং (৬) তোমাদের নিজেদের ইজ্জত আবরুকে হিফাযত করব।
ছহীহ বুখারী শরীফে আরো বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি তার জিহবা এবং ইজ্জত আবরু হিফাযতের দায়িত্ব নিবে, আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নিবো। (মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫১ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল বাগবী, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল বারী)
[১৬০৪-১৬০৫]

عن عبد الله بن مسغود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم النظر سهم من سهام ابليس مسموم من تركه مخافتى ابد لته ايمانا يجد حلاوتها فى قلبه. (طبرانى شريف، تفسير ابن كثير ج ص ৪৫২)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই কুদৃষ্টি শয়তানী তীর সমূহের মধ্যে একটি তীর। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর ভয়ে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখে, আল্লাহ পাক তাঁর অন্তরে এমন ঈমানী নূর দৃষ্টি করে দেন। যার স্বাদ বা মজা সে উপভোগ করে থাকে। (ত্ববারানী শরীফ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫২ পৃষ্ঠা)
[১৬০৬-১৬২৬]

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل عين باكية يوم القيامة الاعينا غضت عن محارم الله وعينا سهرت فى سبيل الله وعينا يخرج منها مثل رأس الذباب من خشية الله عزوجل. (تفسير ابن كشير ج ص ৪৫৬)
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আদম সন্তানের জন্য ব্যভিচারের একটি অংশ লিখে দেখা হয়েছে, সে অবশ্যই তা পাবে, অন্যথা হবে না। দুটি চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি দেয়া, জিহ্বার ব্যভিচার কথা বলা, কানদ্বয়ের ব্যভিচার শ্রবণ করা, হাতদ্বয়ের ব্যভিচার ধরা এবং পাদ্বয়ের ব্যভিচার ধাবিত হওয়া বা চলা। নফস্ বা অন্তর আকাঙ্খা বা কামনা করে থাকে, আর লজ্জাস্থান এগুলোকে সত্যে পরিণত করে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনুসী, ফতহুল মুলহিম লিত্ তক্বী উছমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, আল্ মুফহিম, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ্, লুময়াত, আশয়াতুল লুমায়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫২  পৃষ্ঠা)
[১৬২৭]

عن ابى هريرة رضى الله عنهه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل عين باكية يوم القيامة الا عينا غضت عن محارم الله وعينا سهرت فى سبيل الله وعينا يخرج منها مثل رأس الذباب من خشية الله عز وجل. (تفسير ابن كشير ج ص ৪৫২)

অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চোখই কাঁদবে।  শুধু ঐ চোখ কাঁদবেনা যে চোখ আল্লাহ তায়ালার হারামকৃত জিনিষ দেখা থেকে সংযত থেকেছে, আর ঐ সমস্ত চোখ যা আল্লাহ তায়ালার পথে রাত্রি জেগেছে এবং ঐ সমস্ত চোখ যে আল্লাহ তায়ালার ভয়ে কেঁদে অশ্রু বের করেছে। যদিও চোখের পানি মাছির মাথার সমান হয়। (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫২ পৃষ্ঠা)

সতর না ঢেকে বস্ত্রহীন অবস্থায় থাকা অথবা কোন
পুরুষ অন্য পুরুষের সতরের দিকে, কোন মহিলা অন্য মহিলার সতরের দিকে দৃষ্টি দেয়া নিষেধ

[১৬২৮-১৬৩৩]

عن ابى سعيد الخدرى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا ينظر الرجل الى عورة الرجل ولا المرأة الى عورة المرأة ولا يفضى الرجل الى الرحل فى ثوب واحد ولاتفضى المرأة الى المرأة فى ثوب واحد. (تفسير الخازن ج ه ص ৬৮، ৬৯، مسلم شريف، شرح النووى، فتح الملهم، شرح الابى والسنوسى، المفهم.)
অর্থঃ- হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন পুরুষ অন্য কোন পুরুষের ছতরের দিকে তাকাবে না। অনুরূপভাবে কোন মহিলা অন্য কোন মহিলার ছতরের দিকে তাকাবে না। কোন পুরুষ অপর কোন পুরুষের সাথে একই চাদরের নিচে যেন না শোয়। অনুরূপভাবে একজন মহিলা অপর মহিলার সাথে যেন একই চাদরের নিচে না শোয়। (তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম জিঃ ৬৮, ৬৯ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল মুলহিম, ফতহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল্ মুফহিম।)
 [১৬৩৪]
عن على رضى الله تعالى عنه قلا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا على ان لك كنزا فى الجنة وانك ذو وفر منها فلا تتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الثانية. (احكام القران للشفيح والتهانوى ص ৪২০)

অর্থঃ- হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু! নিশ্চয়ই আপনার জন্য জান্নাতে বিশেষ ধন ভা-ার রয়েছে, আর আপনিই সেই ধন ভান্ডারের মালিক। তাই আপনি প্রথম দৃষ্টির পর পুনরায় দৃষ্টি দিবেন না। কেননা, আপনার প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না। (আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত থানুবী ৩য় জিঃ ৪২০ পৃষ্ঠা)
 [১৬৩৫-১৬৪৪]

عن ام سلمة انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة رضى الله عنهما اذ اقبل ابن ام مكتوم فدخل عليه (وذلك بعد ما امرنا بالحجاب) فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى لايبصرنا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما الستما تبصرانه. (مسند احمد بن حنبل الفتح الربانى ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، التفسير المظهرى ج ص ৪৯২)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হজ্বের বছর খাছয়াম গোত্রের একজন মহিলা ছাহাবী এসে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাগণের উপর যে হজ্ব ফরয করেছেন, তা আমার পিতার উপরেও ফরয হয়েছে। কিন্তু তিনি অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়েছেন। কোন বাহনে আরোহী হওয়ার সামর্থ ও শক্তি তার নেই।  এখন আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে হজ্ব সম্পন্ন করি। তাহলে তা কি আদায় হবে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন হ্যাঁ, হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, সে সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে আরোহী হযরত ফযল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মহিলাটির দিকে দেখছিলেন, আর মহিলাটিও তাঁর দিকে দেখছিলেন। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফযল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর মুখম-ল বা চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল্ বারী, শরহুল কিরমানী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, আত্ তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ
৪৯২ পৃষ্ঠা)
[১৬৫৬-১৬৬৪]

عن ام سلمة انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة رضى الله عنهما اذ اقبل ابن ام مكتوم فدخل عيه( وذلك بعد ما امرنا بالحجاب) فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى لايبصرنا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما الستما تبصرانه. (مسند احمدبن حنبل الفتح الربانى ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، التفسير المظهرى جص ৪৯২)
অর্থঃ-হযরত বাহ্য বিন হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তুমি তোমার স্ত্রী এবং দাসী ব্যতিত অন্যান্য নারীদের থেকে ইজ্জত-আবরু তথা সতরকে হিফাযত করো। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি কোন ব্যক্তি একাকী থাকে তাহলে তার হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, আল্লাহ পাক অধিক হক্বদার, যেন তাঁকে এ বিষয়ে লজ্জা করা হয়। (তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, ইবনে মাজাহ শরীফ, আত্ তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯১ পৃষ্ঠা)
[১৬৬৫-১৬৬৯]
عن ابن عباس قال جائت امرأة من خثعم عام حجة الوداع قالت يا رسول الله ان فريضة الله على عباده فى الحج ادركت ابى شيخا كبيرا لايستطيع ان يستوى على الراحلة فهل يقضى عنه ان احج عنه قال نعم قال ابن عباس كان الفضل ينظر اليها وتنظر اليه فجعل النبى صلى الله عليه وسلم يصرف وجه الفضل الى الشق الاخر. (بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى ارساد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، التفسير المظهرى ج ص ৪৯২)

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের বস্ত্রহীনতা থেকে নিজেদের রক্ষা কর। কেননা, নিশ্চয়ই তোমাদের সাথে সর্বাবস্থায় রহমতের ফেরেশতা বিদ্যমান থাকেন। তাঁরা তোমাদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও স্ত্রীর নিকটবর্তী হওয়ার সময় ছাড়া পৃথক হন না। তাই তোমরা তাঁদেরকে লজ্জা করো এবং তাদেরকে সম্মান দেখাও। (তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফূশ শাযী, আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯১ পৃষ্ঠা)
[১৬৭০-১৬৭১]
عن بهز ابن حكيم عن ابيه عن جده معاوية بن حيدة القشيرى قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم عوراتنا ما ناتى منها وما نذر؟ قال احفظ عورتك الا من زوجك او ما ملكت يمينك فقال الرجل يكون مع الرجل؟ قال ان استطعت الا يراها احد فافعل قلت فالرجل يكون خاليا؟ قال الله احق ان يستحيا منه. وقد ذكرت عائشة رسول الله صلى الله عليه وسلم وحالها معه فقالت ما رايت ذلك منه ولا رأى ذلك منى. (احكام القران لابن العربى ج ص ১৩৬، احكام القران للقرطبى جص ২২৪)

অর্থঃ হযরত বাহ্য ইবনে হাক্বীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা হযরত মুয়াবিয়া বিন হাইদা আল কুশাইরাী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কাছে আমাদের কিছু মহিলা আসেন। আমরা কি সতর্ক থাকবো? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, তুমি তোমার স্ত্রী ও অধিকারভূক্ত দাসী ছাড়া অন্যান্যদের থেকে ইজ্জত ও আবরুকে হিফাযত করো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এক পুরুষের সাথে অন্য পুরুষের হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, চেষ্টা করবে যাতে কেউ সতর না দেখে। অতএব, এটাই করবে। আমি আরজ করলাম যদি কোন পুরুষ একাকীত্বে অবস্থান করে তাহলে  তার হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ পাক অধিক হক্বদার, যেন মানুষেরা তাকে লজ্জা করে চলে।
হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে যখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা একান্তবাস করতেন তাঁর বর্ণনা দিয়ে তিনি নিজেই বলেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেইনি এবং তিনিও আমার সতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেননি। (আহকামুল্ কুরআন লি ইবনিল আরাবী ৩য় জিঃ ১৩৬৫ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন লিল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠজিঃ ২২৪ পৃষ্ঠা)
[১৬৭২-১৬৭৯]

عن ابن عمر انه قال اطيب ما انفق الرجل درهم يعطيه للحمام فى خلوة. (ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عرضة الاحوذى، عرف الشذى، تفسير القرطبى ج ص ২২৪)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নির্জন গোসলের জন্য নির্জন গোসলখানা তৈরি করতে এক দিরহাম ব্যয় করে তা অতি পবিত্র। (আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, তাফসীরুল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২৪পৃষ্ঠা)
হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার  ব্যাপারে হাদীছ শরীফ থেকে এবং তার তাশরীহ্ বা ব্যাখ্যা থেকে যে সমস্ত মাসয়ালা বের হলো, তা হচ্ছে-
(১) কোন ব্যক্তির  ঘরের ছিদ্র বা ফাঁক দিয়ে ভিতরে দৃষ্টি দেয়া হারাম বা নাজায়িয।
(২) এতে যদি ঘরওয়ালা দৃষ্টিকারীর চোখ পাথর বা লৌহখ- দিয়ে ফুটা করে দেয়, তাতে কোন গুণাহ হবে না।
(৩) কারো দরজায় উঁকি-ঝুঁকি মারাও জায়িয নেই বরং হারাম ও নাজায়িয।
(৪) কারো ঘরে প্রবেশের পূর্বে ঘরওয়ালার অনুমতি নেয়া ফরয।
(৫)  অনুমতির জন্য প্রথমে সালাম দেয়া এবং এরপর অনুমতি চাওয়া খাছ সুন্নত।
(৬) তিন বার সালাম দেয়ার পর ঘরওয়ালা যদি ফিরে যেতে  বলে, তবে ফিরে যেতে হবে। জোড়পূর্বক প্রবেশ করা যাবে না।
(৭) দরজার ডানে বা বাম দিকে দাঁড়িয়ে সালাম দিতে হবে এবং অনুমতি নিতে হবে। সোজা-সুজি দরজা বরাবর দাড়ানো যাবেনা।
(৮) গাইরে মাহ্রাম তথা পরপুরুষের সামনে মহিলাদের হাত, পা ও মুখম-লসহ শরীরের কোন অঙ্গই খোলা জায়িয নেই বরং হারাম। আর মাহরামদের সামনে হাত, পা ও মুখম-ল খুলে রাখা জায়িয আছে। তবে তাদের সামনেও নিজ ওড়না বুকের উপর ঝুলিয়ে রাখবে।
(৯)  সুগন্ধি ব্যবহার করে গায়রে মাহরামদের নিকট যাওয়া এবং রাস্তায় চলাচল করা বেপর্দা হওয়ারই নামান্তর যা হারাম ও কবীরা গুণাহ।
(১০) মহিলাদের জন্যে কোন জিহাদ নেই পর্দা রক্ষার্থে ঘরে অবস্থান করাই হচ্ছে তাদের জিহাদ।
(১১) স্বামীর বিনা অনুমতিতে স্ত্রীর জন্য পরপুরুষের সাথে কথা বলা জায়িয নেই।
(১২) কোন পুরুষের জন্য পর স্ত্রীর সাথে এবং স্ত্রীর জন্য পর পুরুষের সাথে আকর্ষণীয় কক্তে বা ভাষায় কথা বলা জায়িয নেই।
(১৩) বিনা ওজরে কোন মহিলার জন্য ঘরের  বাইরে বের হওয়া হারাম বা নাজায়িয।
(১৪) মহিলাদের গহিন কোটরীর নামায সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ ও অধিক ছওয়াবের কারণ।
(১৫) অনিচ্ছা সত্ত্বে প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা যোগ্য। কিন্তু ইচ্ছাকৃত প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা যোগ্য নয়, এতে কবীরা গুনাহ হবে এবং লানত বর্ষিত হবে।
(১৬) পুরুষ হোক অথবা মহিলা হোক উভয়ের দৃষ্টি নিম্নগামী তথা সংযত করণের মধ্যে ঈমানী নূর এবং ইবাদতের স্বাদ বিদ্যমান রয়েছে।
(১৭) দুজন স্ত্রী একই চাদরের নিচে এবং দুজন পুরুষ একই চাদরের নিচে শুয়ে থাকা জায়িয নেই।
(১৮) নির্জনে সতরকে খোলা যাবেনা। এতে আল্লাহ পাককে লজ্জা করা দরকার।
(১৯) লজ্জা-শরম ঈমানের অঙ্গ। আর হাক্বীক্বী পর্দা  পালনের মধ্যে লজ্জা-শরম অর্জিত হয় এবং মুমিনে কামিল  ও মুসলমানে কামিল হওয়া যায়।
(অসমাপ্ত)

0 Comments: