হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ( ১৮ ক নং )


হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন

হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- æমাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ æমাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
        তদ্রুপ æমাসিক আল বাইয়্যিনাতেহিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। কেননা, প্রথমতঃ কিছু লোক æকিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্মঅর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, æ....... মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক) পাশাপাশি কিছু বাতিল ফিরকাভূক্ত অখ্যাত নামধারী ইসলামী মাসিকেও অনুরূপ মন্তব্য করা হয়। এছাড়া অনেক নামধারী ওয়ায়েযও  এরূপ বলে থাকে।
        অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।
খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা
        মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিলাদের খাছ পর্দা হলো-
১. মহিলারা সর্বদাই ঘরে অবস্থান করবে। ২. ঘরে অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই গায়রে মাহ্রামদের সাথে দেখা দিতে পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। ৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭. প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে কথা বলবে, নরম সূরে কথা বলবে না। এটাই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা। আর এটাই শরীয়তের নির্দেশ।
অতএব, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুনাহে গুনাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
        প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
        মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।
        বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক।
দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।
        যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول اله صلى الله عيه وسلم يكون فى اخر الزعان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤيكم فاياكم واياهم ايضلونكم ولا يفتنونكم.
অর্থঃ- æহযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবেতবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
স্মর্তব্য যে, ঐ সকল দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে? উল্লিখিত উলামায়ে ছূদের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
        অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই æমাসিক আল বাইয়্যিনাতেæহিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্  শরীফ,  ইজ্মা ও
ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন         
        ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্জ (৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন।
        কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
মহিলাদের জিহাদ বা আন্দোলনের
জন্য বাহিরে বের হওয়া হারাম
        যদি দেশে সশস্ত্রহিনী থাকে তাহলে তারাই যুদ্ধ করবে। আর সৈন্যের অনুপস্থিতিতে খলীফার আহবানে পুরুষরা জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। শুধু পুরুষ দিয়েই যদি মুকাবিলা করা সম্ভব না হয় তবে মহিলারাও প্রয়োজনে জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। প্রয়োজন ছাড়া মহিলাদের জিহাদে যোগ দেয়া হারাম।
        আমাদের বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে জিহাদের নামে হরতাল, লংমার্চ, মিটিং-মিছিল, জনসভায় পুরুষদের সাথে যে মহিলারা বাইরে বের হচ্ছে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম।
        নিম্নে মহিলাদের জিহাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হলো-
[২০২৯-২০৪৬]

عن عائشة قالت استأذنت انبى صلى الله عليه وسلم فى الجهاد فقال جها دكم الحج. (مشكوة شريف كتاب المنا سخ الفصل الاول، مرقاة، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، معات، اشعة اللعات، مظاهرحق، مرأة المناجيح، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح النبوى، شرح الابى والسنوسى، المفهم، فتح الملهم)

অর্থঃ- æহযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। উত্তরে তিনি বললেন,তোমাদের জিহাদ হচ্ছে হজ্ব।” (মিশকাত শরীফ কিতাবুল মানাসিখ আল ফাছলুল্ আউয়াল, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল্ মুফহিম, ফতহুল মুুলহিম)
[২০৪৭-২০৫৫]

عن عائشة رضى الله عنها قالت قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم على النساء جهاد؟ قال نعم عليهن جهادلا قتال فيه الحج والعمرة. (مشكوة شريف كتاب المناسخ الفص الثالث، مرقاة، شرح الطيبى، اتعليق الصبيح،  لمعات، اشعة اللمعات، مظاهرحق، مرأة امناجيح، ابن ماجة شريف)
অর্থঃ- æহযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! স্ত্রীলোকের উপর কি জিহাদ ফরয? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁদের উপর জিহাদ ফরয। তবে সেখানে কাটাকাটি নেই, তাহচ্ছে হজ্ব ও উমরাহ। অর্থাৎ হজ্ব ও উমরা-ই মহিলাদের জন্য ফরয কিন্তু জিহাদ ফরয নয়।” (মিশকাত শরীফ কিতাবুল মানাসিখ আল ফাছলুছ ছালিছ, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকছু ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, ইবনু মাজাহ শরীফ)
[২০৫৬]
عن انس رضى الله عنه قال جئن النساء الى رسول الله صى الله عليه وسلم فقلن يا رسول الله ذهب الرجال بالفضل والجهاد فى سبيل اله تعاى، فمانا عمل ندرك به عمل المجاهدين فى سبيل الله تعالى، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قعدت او كلمة نحوها منكن فى بيتها فانها تدرك عم المجاهدين فى سبيل الله تعالى. (تفسير ابن كثير ج ص ৭৬৮)

অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা মহিলারা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পুরুষ লোকেরা আল্লাহ পাক-এর পথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করে তার ফযীলত লাভ করছেন। আমাদের জন্য কি এমন আমল আছে যার দ্বারা আমরা মুজাহিদগণের মত ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা লাভ করতে পারি? উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, æযারা নিজেদের ঘরে পর্দার সাথে বসে থাকবে তারা আল্লাহ পাক-এর পথে জিহাদকারী মুজাহিদগণের সমমর্যাদা-ফযীলত লাভ করবে।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ২য় জিঃ ৭৬৮ পৃষ্ঠা)
[২০৫৭]

(وقرن فى بيوتكن) ..... لان سودة رضى الله عنها قيل لها لما لاتخر جين فقالت امرنا الله بان نقرفى بيتنا، وكانت عائشة اذا قرات هذه الاية تبكى على خروجها ايام الجمل. (التسهيل لعلوم التنزيل ج ص ১৮৮)
অর্থঃ- æ(আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) ..... হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনারা কেন ঘর থেকে বের হননা। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ পাক আমাদেরকে ঘরের কোণে- প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছেন এ জন্যই। হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যখন এ আয়াত শরীফ পাঠ করতেন, তখন জঙ্গে জামাল তথা উষ্ট্রের যুদ্ধে বের হওয়ার কথা স্মরণ করে কাঁদতেন।” (আত্ তাসহীল লিউলূমিত্ তানযীল ২য় জিঃ ১৮৮ পৃষ্ঠা)
        উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মহিলাদের জন্য কোন জিহাদ বা আন্দোলন নেই। মহিলাদের জিহাদ বা আন্দোলনের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া সম্পূর্ণই হারাম। বরং তাদের সর্বাবস্থায়ই ঘরে অবস্থান করা বা পর্দায় থাকা ফরযে আইন।
মহিলাদের জন্যে মাহরাম ব্যতীত হজ্ব
 বা ছফর করা জায়িয নেই, বরং হারাম
        মহিলাদের জন্য ছফরে তথা ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার পথে গেলে বা হজ্বে গেলে মাহরাম তথা স্বামী, ভাই, পিতা, পুত্র ইত্যাদি কাউকে সঙ্গে নেয়া ফরয। মাহরাম ছাড়া হজ্বে যাওয়া বা ছফর করা জায়িয নেই, বরং নাজায়িয ও হারাম। কেননা এতে ফিত্না-ফাসাদের বা বেপর্দা হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
        মাহ্রাম ছাড়া ছফর করা এবং হজ্বে যাওয়া নাজায়িয সম্পর্কিত হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
[২০৫৮-২০৭৪]

عن ابن عباس رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لايخلون رجل بامرأة ولا تسافرن امرأة الا ومعها محرم فقال رجل يا رسول الله صلى اله عيه وسلم اكتتبت فى غزوة كذا وكذا وخرجت امراتى حاجة قا اذهب فاج حجج مع امرأتك. (مشكوة شريف كتاب المناسخ الفصل الاول، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد اسارى، مسلم شريف، شرح النووى، فتح المهم، شرح الابى والسنوسى، المفهم، مرقاة، شر الطيبى، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهرحق، مرأة المتاجيح)
অর্থঃ- æহযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোন পুরুষ যেন কখনো কোন বেগানা স্ত্রীলোকের সাথে এক জায়গায় না হয় এবং কোন স্ত্রীলোক যেন কখনো কোন মাহরাম ব্যতীত একাকি ছফরে বের না হয়। তখন এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ওমুক যুদ্ধে আমি নাম লিখিয়াছি, আর আমার স্ত্রী একাকি হজ্বে রওয়ানা হয়েছে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যাও তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্ব কর।” (মিশকাত শরীফ কিতাবুল্ মানাসিখ আল ফাছলুল আউয়াল, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল মুলহিম, শরহুল উবাই উয়াস্ সিনূসী, আল মুফহিম, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ)
[২০৭৫-২০৯১]
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صى الله عليه وسلم لاتسافر امرأة مسيرة يوم وليلة الا ومعها ذومحرم. (مشكوة شريف كتاب المناسخ الفصل الاول، مرقاة، شرح الصطيبى، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهر حق، مرأة المناجيح، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، تسيراليارى، مسلم شريف، شرح النبوى، شرج الابى والسنوسى، المفهم، فتح الملهم)
অর্থঃ- æহযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন স্ত্রীলোক যেন একদিন এক রাত্রির পথ ছফর না করে কোন মাহরাম ব্যতীত।” (মিশকাত শরীফ কিতাবুল মানাসিখ আল ফাছলুল্ আউয়াল, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত,মুযাহিরে হক্বু, মিরয়াতুল মানাজীহ, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল মুফহিম, ফতহুল মুলহিম)
        এ সম্পর্কে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহে উল্লেখ আছে যে,
[২০৯২-২০৯৪]
ويعتبر فى حق المراة ان يكون لها محرم يحج بها او زوج ولا يجوز لها ان تحج بغير هما اذا كان بينها وبين مكة مسيرة ثاثة ايام. (قدورى ص ৫৬، التنقيح الضرورى، الجوهرة النيرة)

অর্থঃ- æমহিলাদের ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য বিধান হলো, তার সাথে তার কোন মাহ্রাম যেমন পিতা, ভাই, ছেলে ইত্যাদি অথবা তার স্বামী হজ্ব করবে। মহিলার জন্য তার মাহ্রাম ছাড়া হজ্ব করা জায়িয হবে না। যখন তাদের বাড়ী এবং মক্কা শরীফের মধ্যে তিন দিনের (৪৮ মাইল) বা তার বেশী সময়ের দূরত্ব হয়।” (কুদূরী ৫৮ পৃষ্ঠা, আত্ তানকীহুয্ যরূরী, আল্ জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্)
[২০৯৫-২০৯৮]
قال (ويعتبر فى المراة ان يكون لها محرم تحج به اوزوج ولايجوز لنا ان تحج بغيرهما اذا كان بينها وبين مكة ثلاثة ايام) ........ ولنا قوله عليه السلام لا تحجن امرأة الا ومعها محرم، ولانها بدون المحرم يخباف عليها الفتنة ......(واذا وجدت محرما لم يكن للزوج منعها) ........... ونا ان حق الزوج لا يظهر فى حق القرائض والحج منها حتى لوكان الج نفلا له ان يمنعها ولو كان المحرم فاسقا. قالوا لا يجب عليها لان امقصود لا يحصل به ..... ولا عيرة بالصبى والمجنون لانه لاتتاتى منهما الصيانة واصبية التى بلغت حد الشهوة بمنزله البالغة حتى لايسافر بها من غير محرم. (الهداية مع الدراية ج ص ২৩৩، فتح القدير، كفاية، شرح العناية، حاشية ....)

অর্থঃ- æইমাম কুদূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, (মহিলাদের ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য বিধান হলো, তার সাথে তার কোন মাহরাম যেমন পিতা, ভাই ছেলে ইত্যাদি অথবা তার স্বামী হজ্ব করবে। মহিলার জন্য তার মাহরাম ছাড়া হজ্ব করা জায়িয হবে না। যখন তার বাড়ী এবং মক্কা শরীফের মধ্যে তিন দিনের (৪৮ মাইল) বা তার বেশী সময়ের দুরত্ব হয়) .... আমাদের হানাফীদের দলীল হলো, আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
لاتحجن امرأة الا ومعها محرم.
অর্থাৎ- কোন স্ত্রীলোক যেন মাহ্রাম  ছাড়া হজ্ব করতে না যায়। কেননা এতে ফিতনা-ফাসাদের আশঙ্কা রয়েছে। .... (মহিলা যদি মাহরাম পেয়ে যায়, তবে স্বামীর পক্ষ থেকে তাকে বাধা দেয়ার অধিকার থাকবে না।) .... আমাদের হানাফীগণের দলীল হলো, স্বামীর অধিকার ফরয সমূহ পালনের ক্ষেত্রে প্রকাশ পাবে না। আর হজ্ব ফরয সমূহের  অন্তর্ভুক্ত। তবে নফল হজ্বের ক্ষেত্রে স্বামীর বাধা প্রদানের অধিকার রয়েছে। মাহরাম যদি ফাসিক হয় সেক্ষেত্রে ফক্বীহগণ বলেছেন, মহিলার উপর হজ্ব ফরয হবে না। কেননা সফর সঙ্গী হওয়ার উদ্দেশ্য এমন ফাসিক মাহরামের দ্বারা হাছিল হবে না। ...... শিশু, বালক এবং পাগল মাহরাম গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, তার  পক্ষ থেকে হিফাযত হাছিল হবে না। যে বালিকা প্রাপ্ত বয়ষ্কার সীমায় উপনীত হয়েছে, সে প্রাপ্ত বয়ষ্কার সমতুল্য। কাজেই মাহরাম ছাড়া তাকে নিয়ে সফর করা জায়িয নেই।” (আল হিদায়া মায়াদ দিরায়া ১ম জিঃ ২৩৩ পৃষ্ঠা, ফতহুল ক্বদীর, কিফায়া, শরহুল ইনায়া)
        উল্লিখিত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্য  ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহিলাদের জন্য মাহরাম ব্যতীত হজ্ব বা শরয়ী ছফরে যাওয়া জায়িয নেই; বরং হারাম। কারণ, এতে বেপর্দা হওয়ার বা ফিৎনা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মহিলাদের লিবাস বা পোশাকও
 হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত
        মহিলাদের লিবাস বা পোশাক যেমন, মাথার ওড়না, ক্বামীছ, কাপড়, সেলওয়ার ইত্যাদিও পরপুরুষের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে হবে। কেননা, মহিলাদের লিবাস বা পোশাককেও ঢেকে রাখা বা পুরুষের চোখের আড়ালে রাখা ফরয, ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
[২০৯৯]

الحجاب مفروض على جميع نساء المؤمنين وهو واجب شرعى محتم .... الجلباب اشرعى يجب ان يكون ساترا للزينة والثياب ولجميع البدن. (تفسير ايات الاحكام للصابونى ج ص ৩৮৬، ৩৮৭)
অর্থঃ- æসকল মুমিনগণের স্ত্রীগণের অর্থাৎ মহিলাগণের জন্য পর্দা করা ফরযে আইন। এটা শরীয়তের স্থির সিদ্ধান্তে ওয়াজিব। ..... শরয়ী জিলবাববা আবরণ বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক মহিলার জন্য ওয়াজিব। যা মহিলার সৌন্দর্য, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে বা ঢেকে রাখে। (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ৩৮৬, ৩৮৭ পৃষ্ঠা)
[২১০০-২১০১]

وان كان على المرأة بيان فلا بأس بان يتأمل جسدها وهذا اذا لم تكن ثيابها ملتزمة بها بحيث تصف ما تحتها ولم يكن دقيقها بحيث تصف ما تحته فان كانت بخلاف ذلك فينبغى له ان يغض بصره. (فتاوى شامى بيان النظر ومس ج ه ২৪১)
অর্থঃ- æযে মহিলার শরীরে মোটা কাপড় এরূপ ঢিলা থাকে যে, তার শরীরের বাধন দেখা যায় না। তার প্রতি অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টি জায়িয় আছে। (বোরকার উপর ইচ্ছাকৃত দৃষ্টি দেয়াও জায়িয নেই) কিন্তু যদি কাপড় মোটা না হয় বরং পাতলা হয় যাতে ভিতরের শরীর প্রকাশ পায় অথবা কাপড় যদি পাতলা না হয় বরং কাপড় মোটা কিন্তু কাপড় এমন আটো-সাটো বা চিপানো যে যাতে শরীরের গঠন প্রকাশ পায়, এমতাবস্থায় চক্ষুর দৃষ্টিকে নিম্নগামী করা বা ফিরায়ে নেয়া ওয়াজিব। অর্থাৎ এমন কাপড়ের উপর দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই, বরং হারাম ও নাজায়িয।” (ফতওয়ায়ে শামী বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ ২৪১ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৭ পৃষ্ঠা)
[২১০২-২১০৩]

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من تامل خلف امرأة وراء ثيابها حتى تبين له حجم عظامها لم يرح رأئحة اجنة. (فتاوى شامى بيان النظر ومس ج ه)
অর্থঃ- æহযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি মহিলার প্রতি দৃষ্টি করতঃ তার কাপড়ের উপর দিয়ে শরীরের গঠন অনুভব করল। সে জান্নাতের সুবাস পর্যন্ত পাবেনা। (ফতওয়ায়ে শামী বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৮ পৃষ্ঠা)
[২১০৪-২১০৫]

اقول مفاده ان روية الثوب بحيث يصف حجم العضو لممنوء ولو كشفعا لاتروا بشرة منه. (شامى ج ه)
অর্থঃ- æপূর্ব উল্লেখিত হাদীছ শরীফ অবলম্বনে ফতওয়ায়ে শামীর মুছান্নিফ লিখেছেন যে, মোটা কাপড়ের উপর দিয়ে যদি স্ত্রী লোকের শরীরের গঠন ও রূপ-সৌন্দর্য্য প্রকাশ পায়, তাহলে তার উপর দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। বরং হারাম ও নাজায়িয।” (ফতওয়ায়ে শামী বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ, ফওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৮ পৃষ্ঠা)
        উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে,মহিলাদের লিবাস বা পোশাকও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোন মহিলার জন্যে তার লিবাস বা পোষাক পরপুরুষকে দেখানো যেরূপ নিষিদ্ধ; তদ্রুপ পুরুষদের জন্য বেগানা মহিলাদের লিবাস বা পোশাকের দিকে দৃষ্টি দেয়াও হারাম বা নিষিদ্ধ।
মহিলাদের কণ্ঠস্বরও
 হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত
        মহিলাদের গলার আওয়াজ বা কক্তস্বরও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। কণ্ঠস্বরকে নিচু করা এবং পরপুরুষের থেকে হিফাযত করা ফরয। তবে যদি বিশেষ প্রয়োজনে কথা বলতেই হয় তবে কর্কষকণ্ঠে, শক্তভাবে কথা বলতে হবে।
        নিম্নে এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ এবং অন্যান্য দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-
[২১০৬]

ينساء النبى لستن كاحسد من النساء ان اتقيتن فلا تخضعن بالقول فيطمع الذى فى قلبه مرض وقلن قولا معروفا.
অর্থঃ- æহে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ! আপনারা অন্য নারীদের মত নন। যদি আল্লাহ পাককে ভয় করেন, তবে পুরুষগণের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না, ফলে যার অন্তরে ব্যাধি বা রোগ রয়েছে সে ব্যক্তি কু-বাসনা করবে। আপনারা শক্ত স্বরে কথা-বার্তা বলবেন।” (সূরা আহযাব/৩২)
        মহিলাদের গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পর্দার অন্তর্ভুক্ত। তবে বিশেষ জরুরতে বেগানা বা পরপুরুষের সাথে কথা বলতে হলে কঠোর বা শক্তস্বরে কথা বলতে হবে, কোমল ও আকর্ষণীয় স্বরে কথা বলা জায়িয নেই। অত্র আয়াতে কারীমায় বিশেষ প্রয়োজনে পর পুরুষের সাথে যদি কথা বলতেই হয়, তাহলে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা না বলার; বরং কঠোরভাবে, শক্তভাবে কথা বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উক্ত আয়াত শরীফের হুকুম পালনের জন্য জরুরতে কথা বলার সময় নিজ হাত মুবারক মুখে রেখে কথা বলতেন, যেন কক্তস্বর কোমল ও আকর্ষণীয় না হয়ে কঠোর ও শক্ত হয়।
        এ হুকুম বা নির্দেশ শুধু উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের জন্যই খাছ নয়। বরং আমভাবে সকল মুমিন-মুসলমান মহিলাগণের জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য। যা পালন করা ফরযে আইন। কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের নুযূল তথা যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে বা যাকে উপলক্ষ করে অবতীর্ণ হয়েছে তা খাছ। কিন্তু এর হুকুম আমভাবে সকলের জন্যই প্রযোজ্য। আলোচ্য আয়াত শরীফটিও সে পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
   অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম তথা ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যা যেভাবে করেছেন, তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
[২১০৭]
اى لا تخاطب المراة الاجانب كما تخاطب زوجها. (تفسير ابن كثير ج ص ৭৬৮)

অর্থঃ- æমহিলারা নিজ স্বামীর সাথে যেভাবে আকর্ষণীয় সূরে কথা বলে তেমনি অন্য পুরুষের সাথে কথা বলবে না।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৭৬৮ পৃষ্ঠা)
[২১০৮]

والمرأة مندوبة الى الغلظة فى المقالة اذا خاطبت الاجانب لقطع الاطماع (وقلن قولا معروفا) مايوجبه الدين والاسلام بتصريح وبيان من غير خضوع. (تفسير البغوى ج ه ص ২৫৭-২৫৮)
অর্থঃ- æমহিলাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য যে, বিশেষ প্রয়োজনে পরপুরুষের সাথে কথা বলার সময় কর্কশ কণ্ঠে, শক্তভাবে কথা বলবে। যাতে পুরুষের আকর্ষণ বিকর্ষণে পরিণত হয়। (আপনারা শক্ত করে কথা-বার্তা বলবেন।) দ্বীন ইসলামের কোন প্রয়োজনীয় বয়ান করতে হলে কোমলতা ত্যাগ করে তথা কঠোরভাবে করুন। (তাফসীরুল বাগবী ৫ম জিঃ ২৫৭, ২৫৮ পৃষ্ঠা)
[২১০৯-২১৩০]

قال البيضاوى وهو ابلغ من النهى عن ابداء الزينة وادل على المنع من رفع الصوت ها ولذا صرح فى النوازل بان نغمة المرءة عورة وبنى عليها ان تعمها القران من المرءة احب الى لان نغمتها عورة ولذا قال عليه السلام التسبيح للرجال والتصفيق للنساء. متفق عليه من حديث سهل بن سعد فلايحسن ان يسمعها الرجل قال ابن همام وعلى هذا لوقيل اذا جهرت المرءة بالقراءة فى الصلوة فسدت كان متجها. (التفسير المظهرى ج ص ৫০২. بخارى شريف. فتح البارى. عمدة القارى. ار شاد السارى. شرح اكر مانى، تيسير البارى، مسلم شيرف، شرح النووى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، شرح الابى والسنوسى، المفهم،  مشكوة شريف، شرح الطيبى، مر قاة، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهرحق، تنظيم الاشتات، مراة المناجيح، تفسير البغوى، تفسير البيضاوى)
অর্থঃ- æহযরত বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সৌন্দর্য, সাজ-সজ্জা প্রকাশ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা উচ্চ আওয়াজ-এর ব্যাপারেও দলীলসম্মত। এজন্য বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর, ‘আন্ নাওয়াযিলনামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন, নিশ্চয়ই নারীদের কণ্ঠস্বর পর্দার অন্তর্ভুক্ত। এর উপর ভিত্তি করে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, নারীদের কুরআন শরীফ শিক্ষা করা নারীদের নিকট থেকেই উত্তম। কেননা, মহিলার কণ্ঠস্বরও পর্দার অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পুরুষেরা তাছবীহ্ (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে এবং মহিলারা হাতের উপর হাত মারবে। বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ। হাদীছে সাহ্ল ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, পুরুষের জন্য মহিলার কণ্ঠস্বর শোনা শোভনীয় নয় বা জায়িয নয়। হযরত ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যদি মহিলা নামাযের কিরায়াত উচ্চস্বরে পাঠ করে তাহলে তার নামায ফাসিদ বা নষ্ট হয়ে যাবে।” (আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৫০২ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ কারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উছমানী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল্ মুফহিম, মিশকাত শরীফ, শরহুত্ ত্বীবী, মিরকাত, আত্ তালীকুছ ছবীহ্, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, তানযীমুল্ আশতাত, মিরয়াতুল্ মানাজীহ)
[২১৩১-২১৩২]

هل صوت المرأة عورة؟ فاجاب: نعم، المرأة مامورة بتجنب الفتنة، فاذا كان يترتب على سماع صوتها افتتان الرجال بها فا نها تخفيه. ولذلك فانها لا ترفع صوتها باتلبية وانما تلبى سرا. (فتوى المرأة امسلمة ج ص ৪৩১، المنتقى من فتاوى فضيلة الشيخ صالح بن فوزان جص ১৯৩، ১৯৪)

অর্থঃ- æমহিলাদের কণ্ঠস্বর কি পর্দার অন্তর্ভুক্ত?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, মহিলাদের কণ্ঠস্বর পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহিলারা ফিতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার ব্যাপারে নির্দেশিত বা আদিষ্টিত। যদি মহিলাদের গলার আওয়াজ শুনে তাতে পুরুষদের মধ্যে ফিতনা-ফাসাদের ভয় থাকে, তবে মহিলা আস্তে চুপে চুপে কথা বলবে। এজন্যই মহিলা হজ্বের সময় তালবিয়াপাঠে আওয়াজ উচ্চ করবে না। বরং চুপে চুপে তালবিয়াপাঠ করবে। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল্ মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৪৩১ পৃষ্ঠা, আল মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়া ফাযীলাতিশ্ শাইখ ছালিহ্ বিন ফাওযান ৩য় জিঃ ১৯৩, ১৯৪ পৃষ্ঠা)
[২১৩৩]

المرأة لا يجوزلها مخاطبة الرجال الذين ليسوا محارم لها الا عند الحاجة .............. اما الخضوع فى القول المنهى عنه فهو ترخيم الصوت وتحسينه بحيث يثير الفتنة فلايجوز للمرأة ان تكلم الرجل الاجنبى يصوت رخيم ولا ان تكلمه بمث ما تكلم به زوجها. (فتاوى المراة امسمة ج ص ৪৩২)
অর্থঃ- যারা মাহরাম নয় এমন পুরুষদের সাথে মহিলাদের জন্য কথা-বার্তা বলা জায়িয নেই। তবে বিশেষ প্রয়োজনের সময় আলাদা কথা। ....... সূললিত ভাষায় কথা বলা নিষেধ। তা হচ্ছে ভাঙ্গা আওয়াজ এবং সুন্দর, মধুর কথা যা ফিতনার সৃষ্টি করে। মহিলাদের জন্য পরপুরুষদের সাথে আকর্ষণীয় মধুর কণ্ঠে আলাপ-আলোচনা করা জায়িয নেই। আর স্বামীর সাথে যেভাবে আকর্ষণীয় কথা বলে সেভাবে কথা বলাও জায়িয নেই। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল মুসলিমাহ ১ম জিঃ ৪৩২ পৃষ্ঠা)
[২১৩৪]
صوت المرأة عورة عند الرجا الاجانب على الصحيح ولذلك لا تسبح فى الصلاة. (فتاوى المرأة امسلمة ج ص ৪৩৪)
অর্থঃ- æছহীহ বা বিশুদ্ধ মতে পরপুরুষের কাছে মহিলাদের গলার আওয়াজ পর্দার আওতাভুক্ত। এজন্য মহিলারা নামাযে জোড়ে তাসবীহ পড়বেনা। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল্ মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৪৩৪ পৃষ্ঠা)
        উল্লিখিত বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহিলাদের কণ্ঠস্বর বা গলার আওয়াজও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। তাই কোন মহিলা কোন বেগানা পুরুষের সাথে বিনা জরুরতে কথা বলা জায়িয নেই। জরুরতে কথা বলতে হলে মুখে আঙ্গুল রেখে শক্তভাবে বা কর্কশ ভাষায় কথা বলতে হবে। এ তরীক্বায় কথা বলা তাদের জন্য সুন্নতে উম্মুল মুমিনীন।
বাইরে বের হওয়ার সময় মহিলাদের
জন্য আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার
করা জায়িয নেই
        মহিলারা তাদের স্বামীর সামনে আতর, সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার সময় আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা জায়িয নেই। কেননা এতে পরপুরুষরা আকৃষ্ট হয়ে ফিতনার, কু-চিন্তার সৃষ্টি হয়। এটাও এক প্রকার ব্যভিচার।
        নিম্নে এ সম্পর্কে দলীলভিত্তিক আলোচনা করা হলো-
[২১৩৫-২১৪৭]
لقوله تعالى (ولا يضربن بارجلهن) الى اخره ومن ذلك انها تنهى عن التعطر والتطيب عند خروجها من بيتها فيشم الرجال طيبها. فقد قال ابو عيسى الترمذى: حدثنا محمد ابن بشنار حدثنا يحى بن سعيد القطان عن ثابت بن عمارة الحنفى عن غنيم بن قيس عن ابى موسى رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم انه قال ّكل عين زانية والمرأة اذا استعطبت فمرت بالمجلس فهى كذا وكذا" يعنى زانية. وفى الباب عن ابى هريرة: وهذا حسن صحيح. رواه ابوداود والنسائى من حديث ثابت بن عمارةبه. وقال ابو داود حدثنا محمد بن كثير اخبرنا سفيان عن عاصم بن عبيد الله عن عبيد مولى ابى رهم عن ابى هريرة رضى الله عنه قال: لقيته امراة شم منها ريح الطيب ولذيلها اعصار، فقال: يا امية الجبار جئت من المسجد؟
قالت: نعم. قال لها: تطيت؟ قالت نعم قال: انى سمعت حبى ابا القاسم صلى الله عليه وسلم يقول: "لايقبل الله صاة امراة طيبت لهذا امسجد حتى ترجع فتغسل غسلها من الجنابة." ورواه ابن ماجة عن ابى بكر بن ابى شيبة عن سفيان هوابن عيينة به. (تفسير ابن كثير ج ص ৪৫৭، ৪৫৮، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشاذى، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، شرح بدر الدين العينى، نسائى شيريف، ذخيرة عقبى، حاشية السيوطى، ابن ماجة شريف)

অর্থঃ- æএ বিষয়টি আয়াত শরীফে নিষেধ করা হয়েছে যে, ‘(তারা যেন এমনভাবে পদচারণা না করে যাতে তাদের চুপানো সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ে।)আয়াত শরীফের শেষ পর্যন্ত। এ আয়াত শরীফের ভিত্তিতে মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় আতর, সুগন্ধি মেখে বের হওয়া নিষেধ তথা হারাম করা হয়েছে। যাতে পুরুষেরা ঘ্রান নিতে না পারে।
        হযরত আবূ ঈসা তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন মুহম্মদ ইবনে বাশ্শার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ ক্বত্তান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ছাবিত বিন আম্মারাতাল্ হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি গানীম বিন কায়েছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আবূ মুসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, æপ্রত্যেক চোখ ব্যভিচারী, যখন মহিলা আতর, সুগন্ধি মেখে পুরুষদের কোন মজলিসের পাশ দিয়ে গমন করে তখন সে এরূপ এরূপ।অর্থাৎ ব্যভিচারিনী। একই ভাবে হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। এটি হাসান ছহীহ্। আবূ দাউদ এবং নাসায়ী হযরত ছাবিত বিন আম্মারা থেকে বর্ণনা করেছেন।
        হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ বিন কাছীর। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আছিম বিন উবাইদুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি উবাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে যিনি আবূ রহম এর মনীব। তিনি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি বলেন, এমন একজন মহিলার সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো যে সুগন্ধি ছড়িয়ে চলছিল। তিনি বললেন, হে প্রতাপশালী আল্লাহ পাক-এর দাসী! তুমি কি মসজিদ হতে আসছো? মহিলা বললো, হ্যাঁ। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি সুগন্ধি মেখেছো? সে উত্তরে বললো, হ্যাঁ। এবার তিনি বললেন, আমি আমার প্রাণ প্রিয় আবুল্ কাসিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন; æআল্লাহ পাক এমন মহিলার নামায কবুল করেন না যে এ মসজিদে আসার জন্য সুগন্ধি মেখেছে। যে পর্যন্ত না সে ফিরে গিয়ে অপবিত্রতার তথা ফরয গোসলের ন্যায় গোসল না করে।ইবনু মাজাহ্ হাদীস শরীফটি হযরত আবূ বকর বিন আবী শাইবাহ্ থেকে, তিনি সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। যিনি ইবনু উয়াইনা হিসেবে পরিচিত।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৭, ৪৫৮ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, আবু দাউদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মাবূদ, শরহু বদরিদ্দীন আইনী, নাসায়ী শরীফ, যখীরায়ে উক্ববা, হাশিয়াতুস্ সুয়ূতী, ইবনু মাজাহ্ শরীফ)
[২১৪৮-২১৪৯]
لايجوز للمراة ان تخرج من بيتها متزينة او متطيبة. (فتاوى المراة المسلمة ج ص ৪৭০، المنتقى من فتاوى فضيلة الشيخ صالح بن فوزان جص ১৯৩)

অর্থঃ- æমহিলাদের জন্য রূপ সজ্জা করে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে বাড়ী থেকে বাইরে বের হওয়া জায়িয নেই।” (ফাতাওয়াল মারওয়াতিল মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৪৭০, আল মুনতাক্বা মিন ফাযীলাতিশ্ শাইখ ছালিহ বিন ফাওযান ৩য় জিঃ ১৯৩)
[২১৫০]

يجوز لها الطيب اذا كان خروجها الى مجمع النساء ولا تمر فى الطريق على الرجال، اما خروجها باطيب الى ااسواق التى فيها الرجل فلايجوز ........ لقوله حل وعلا. (قرن فى بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهية الاولى) الا حزاب: ৩৩ ومن اتبرج اظهار المفاتن وامحاسن كالوجة والرأس وغيرهما. (فتاوى امراة المسلمة جص ৪৭১)
অর্থঃ- æমহিলা যখন মহিলাদের কাছে মহিলাদের মজলিসে যাবে তখন সুগন্ধি ব্যবহার করা জায়িয হবে। তবে রাস্তায় পুরুষদের পাশ দিয়ে যেতে পারবে না। মহিলা যদি সুগন্ধি মেখে বাজারের দিকে যায়, সেখানে পুরুষেরা থাকে, তবে সেক্ষেত্রে সুগন্ধি মাখা জায়িয নেই। ... আল্লাহ জাল্লা ওয়া আল্লা এর বাণীঃ (তোমরা তোমাদের ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করো, প্রথম জাহিলিয়াত যুগের মত সৌন্দর্য প্রকাশ করে বের হয়ো না) সূরা আহযাব ৩৩ নং আয়াত শরীফ। আয়াত শরীফে تبرجতাবাররুজশব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ ফিতনা ও রূপ-সৌন্দর্যের প্রকাশ যেমন মুখমণ্ডল, মাথা খুলে এবং অন্যান্য তন্মধ্যে আতর বা সুগন্ধি মেখে বাইরে বের হওয়া যাবেনা। (ফাতাওয়াল মারয়াতিল মুসলিমাহ ১ম জিঃ ৪৭১ পৃষ্ঠা)
        অতএব, প্রমাণিত হলো যে, মহিলাদের জন্য আতর বা সুগন্থি মেখে বেগানা বা পরপুরুষের সামনে যাওয়া বাইরে বের হওয়া হারাম। তবে স্বামীর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ঘরের ভিতরে আতর বা সুগন্থি ব্যবহার করা জায়িয রয়েছে।
মহিলাদের চাকুরী বা
 ব্যবসা করার হুকুম
        আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন,
[২১৫১]

وقرن فى بيوتكن ولاتبرج الجاهلية الاولى. (سورة الاحزاب ৩৩ اية)
অর্থঃ- æতোমরা তোমাদের ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবে। জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। (সূরাতুল আহযাব ৩৩নং আয়াত শরীফ)
        এ আয়াত শরীফের তাফসীরে তাফসীরের কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে যে, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া নিষেধ তথা হারাম। বাইরে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারীনী মহিলারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
[২১৫২]

(وقرن فى بيوتكن) اى الزمن بيوتكن ولا تخرجن لغير جاجة. ولا تفعلن كما تفعل الغافلات، المتسكعات فى الطرقات لغير ضرورة. (ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى) اى لا تظهرن زينتكن ومحاسنكن للاجانب مثل ماكان نساء الجاهلية يفعلن. (صفوة التفاسير للصابونى ج ص ৪৮১)

অর্থঃ- æ(আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) অর্থাৎ ঘরে অবস্থান করা আপনাদের জন্য ফরয। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেড়াবেন না। গাফিল মহিলারা যেরকম করে সেরকম করবেন না। জরুরত ছাড়া রাস্তায় বেড়াবেন না। (জাহিলিয়াত যুগের নারীদের মত নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবেন না) অর্থাৎ নিজেদের রূপ, সৌন্দর্য পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করবেন না, যেমনিভাবে জাহিলিয়াত যুগের মহিলারা করেছিল।  (ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর লিছ্ ছাবূলী ২য় জিঃ ৪৮১ পৃষ্ঠা)
[২১৫৩]
وقد يحرم عليهن الخروج بل قد يكون كبيرة كخروجهن لزيارة القبور اذا عظمت مفسدته وخروجهن ولو الى المسجد وقد استعطرن وتزين اذا تحققت الفتهة اما اذا ظنت فهو حرام غير كبيرة، وما يجوز من الخروج كالخروج للحج وزيارة والوالدين وعيادة المرضى، وتعزية الاموات من الاقارب ونحو ذلك، فانما يجوز بشروط مذكورة فى محلها. (تفسيرروح المعانى ج ১২ ص ৬)

অর্থঃ- æমহিলাদের জন্য বাইরে বের হওয়া হারাম করা হয়েছে। কেননা এটা কবীরা গুণাহ্, যেমন অনেক ফিৎনার আশঙ্কা নিয়ে কবর যিয়ারত করতে যাওয়া, আতর মেখে সেজে-গুঁজে মসজিদে যাওয়া যাতে ফিৎনার সম্ভাবনা আছে, এগুলো সবই কবীরা গুণাহ্। হজ্বের উদ্দেশ্যে, পিতা-মাতার সাক্ষাতের জন্য, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করতে এবং নিকটাত্মীয়ের ইন্তিকালে শোকপ্রকাশ করার জন্য  পর্দার সাথে বাইরে বের হওয়া অনুরূপ অন্যান্য জরুরতে বাইরে বের হওয়া জায়িয রয়েছে। এগুলো স্থান-কাল পাত্রের শর্ত সাপেক্ষে জায়িয হবে।” (তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১২ জিঃ ৬ পৃষ্ঠা)
[২১৫৪-২১৫৫]

قوله تعالى (ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى) ......... واخرج البيهقى فى سنته عن ابى اذينة الصدفى رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال شر النساء المتبرجات وهن المنافقات لاتدخل الجنة منهن الامثل الغراب الاعصم. (الدر المنثور ج ص ১৯৭، بيهقى)
অর্থঃ- æআল্লাহ তায়ালার বাণীঃ (জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবেন না) ..... ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সুনানেরমধ্যে হযরত আবু আযীনা ছদাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বাইরে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী মহিলারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, তারাই মুনাফিক মহিলা। তাদের থেকে কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে যে মহিলার রং কাকের মত কালো সে ব্যতীত।” (তাফসীরে দুররুল্ মানছূর ৪র্থ জিঃ ১৯৭ পৃষ্ঠা, বাইহাক্বী শরীফ)
        উল্লিখিত দলীল থেকে প্রমাণিত হলো, মহিলারা বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হতে পারবেনা। তাই মাজুর না হওয়া পর্যন্ত চাকুরী ও ব্যবসার জন্য বের হওয়া যাবে না। কেননা আম বা সাধারণভাবে মেয়েদের চাকুরী করা জায়িয নেই। বরং সম্পূর্ণ হারাম।
        মূলতঃ ছেলে হোক মেয়ে হোক সকলেই নাবালিগ বা নাবালিগা অবস্থায় পিতার অধীনে থাকে। তখন পিতার উপর ওয়াজিব উক্ত সন্তানদের লালন-পালন করা। আর মেয়ে যখন বালিগা হয়, তখন পিতার উপর ফরয হয়ে যায় মেয়েকে পাত্রস্থ করা তথা দ্বীনদার পরহিযগার, আল্লাহওয়ালা ছেলে দেখে বিবাহ দেয়া এবং মেয়েদের যখন বিবাহ হয়ে যায়, তখন মেয়েদের ভরণ-পোষণ, দেখাশুনা ইত্যাদির দায়িত্ব পিতার পরিবর্তে স্বামীর উপর বর্তাবে। কারণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
[২১৫৬-২১৫৮]

الاكلكم راع وكلكم مسئول عن رعيته (بخارى شريف، مسلم شريف، مشكوة شريف)
অর্থঃ- æতোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক। আর প্রত্যেকেই তার অধিনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
        তাই, স্বামীর অবর্তমানে মেয়েদের দেখা-শুনা ভরণ-পোষণের জিম্মাদার হয় তাদের ছেলেরা। ছেলে যদি না থাকে, তাহলে উক্ত মহিলার ভাই, ভাতিজা বা অন্য কোন ঘনিষ্ঠ মাহরাম আত্মীয়-স্বজন দেখা শুনা, ভরণ-পোষণের জিম্মাদার হবে।  আর যদি কোন মহিলা এমন হয় যে, তার উপরোল্লিখিত কোন প্রকার অভিভাবক বা আত্মীয়-স্বজন না থাকে। তবে উক্ত মহিলার বিবাহ বসার বয়স অর্থাৎ বিবাহের উপযুক্ততা থাকলে, তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামীর মাধ্যমে দেখা শুনা ও ভরণ-পোষণের কাজ সমাধা করতে হবে। আর যদি বিবাহের বয়স না থাকে, তাহলে খিলাফত থাকলে খলীফার তরফ থেকে উক্ত মহিলার ভরণ-পোষণ, দেখা শুনার দায়িত্ব পালিত হবে।
        আর যদি অভিভাবক বা আত্মীয়-স্বজন, বিবাহের বয়স এবং খিলাফত ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে শর্ত সাপেক্ষে উক্ত মহিলার চাকুরী করা জায়িয রয়েছে। শর্তগুলো হলো, ১. অভাবগ্রস্থা হতে হবে। অর্থাৎ চাকুরী করা ব্যতীত স্বীয় ভরণ-পোষণের ব্যয় বহন করা কোন মতেই সম্ভব নয়। ২. তাকে শরয়ী পর্দা রক্ষা করে চাকুরী করতে হবে।
পুরুষ ও মহিলার পর্দা
ফরয হওয়ার বয়স
        প্রত্যেক পুরুষ মহিলার উপর পর্দা করা ফরযে আইন। যা শরীয়তের বিধান। প্রাপ্ত বয়স্ক ও বয়স্কা তথা বালিগ ও বালিগা হওয়ার পূর্বে কারো উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়না। তাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
[২১৫৯-২১৮০]

عن على رضى الله عنه ان رسول الله صلى اله عليه وسلم قال رفع القلم عن ثلاثة عن النائم حتى يستيقظ وعن الصبى حتى يشب وعن المعتوه حتى يعقل. (ترمذى شريف كتاب الحدود باب ما جاء فيمن لا يجب عليه الحد. تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، بخارى شريف كتاب الحدود، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، تيسير البارى، ابو داؤد شريف كتاب الحدود، بذل المجهود، عون المعبود، مسند احمد بن حنبل، مشكوة شريف، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، مرقاة، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهرحق، مراة المناجيح، المعجم المغهرس ا لفاظ الحديث ج ص ২৪৬)
অর্থঃ- æহযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শরীয়তের বিধান তিন ব্যক্তির উপর থেকে তুলে নেয়া হয়েছে, ১. ঘুমন্ত ব্যক্তি, জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত, ২. শিশু বা বালক-বালিকা, বালিগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত এবং ৩. পাগল ব্যক্তি, আক্বল বা হুশ ফিরা পর্যন্ত। (তিরমিযী শরীফ কিতাবুল্ হুদূদ বাবু মা জায়া ফীমান লা ইয়াজিবু আলাইহিল হদ্দ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, বুখারী শরীফ কিতাবুল্ হুদূদ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল্ বারী, আবূ দাঊদ শরীফ কিতাবুল হুদূদ, বযলুল মাজহুদ,  আউনুল মাবূদ, মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, মিশকাত শরীফ, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ, মিরক্বাত, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ, আল মুজামুল্ মুফাহ্রাস লিআলফাযিল হাদীছ ৩য় জিঃ ২৪৬ পৃষ্ঠা)
        অত্র হাদীছ শরীফের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কারো উপর পর্দা ফরযে আইন হওয়ার জন্য বালিগ বা বালিগা তথা প্রাপ্তবয়স্ক বা বয়স্কা হওয়া অপরিহার্য। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের সূরা নিসার ৬নং আয়াত শরীফে এবং এর তাফসীরে মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মতামত প্রদান করেছেন যে, æআমাদের হানাফী মাযহাব মতে, পুরুষ এবং মহিলা সাধারণতঃ ১৫ বছর বয়সে বালিগ ও বালিগা হয়ে থাকে। তবে মহিলা যদি তাড়াতাড়ি বড় হয় এবং অল্প বয়সেই শারীরিক উন্নতি সাধিত হয় তবে কোন কোন সময় ৯ (নয়) বছর বয়সেই বালিগা হয়ে থাকে। এছাড়াও কোন কোন পুরুষ, মহিলা স্বাভাবিকভাবে ১৫ (পনের) বছরের থেকে কম বয়সেও বালিগ বা বালিগা হতে পারে।
         ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
[২১৮১-২১৮২]

وفى الاشباه: تد خل على النساء الى خمس عشر سنة حسب. (الدر امختارج ص ৮১)
অর্থঃ- æআশবাহনামক কিতাবে আছে, মহিলারা প্রাপ্ত বয়সে উপনিত হয় তথা বালিগা হয় ১৫ (পনের) বছর বয়সে। (আদ্ দুররুল মুখতার ২য় জিঃ ৮১ পৃষ্ঠা, আশবাহ)
[২১৮৩]
قوله: (الى خمسة عشر) صوابه خمس عشرة، لان المعدود مؤنث مذكور. (فتاوى شامى ج ص ৯১)

অর্থঃ- æআদ্ দুরুল মুখতারগ্রন্থকারের উক্তিঃ (পনের (১৫) বছর বয়সে) সঠিক, নির্ভুল তথা বিশুদ্ধ  মতে ১৫ (পনের) বছর বয়সে পুরুষ এবং মহিলা বালিগ ও বালিগা হয়ে থাকে।” (ফতওয়ায়ে শামী ২য় জিঃ ৮১ পৃষ্ঠা)
        মনে রাখা প্রয়োজন যে, পুরুষ বা মহিলা যে বয়সেই বালিগ বা বালিগা তথা প্রাপ্ত বয়স্ক বা বয়স্কা হোক না কেন তখন থেকেই তাকে শরয়ী পর্দা করতে হবে। পর্দার খিলাফ করলে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।
হিজাব বা পর্দার বিধান শুধু
মহিলাদের জন্যই নয়; বরং
পুরুষদেরও পর্দা করতে হবে
        প্রত্যেক মুমিনা, মুসলিমা নারীদের পর্দা করা হলো ফরযে আইন। পর্দার খিলাফ করা নাজায়িয ও হারাম। অনুরূপভাবে প্রত্যেক মুমিন, মুসলমান পুরুষদের জন্যও পর্দা রক্ষা  করা ফরযে আইন। তবে পুরুষদের পর্দা নারীদের পর্দার থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। পুরুষদের পর্দা বলতে বুঝায় হারাম কিছুর দিকে নযর না করা, পরনারী থেকে ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করা, পর নারীর সাথে নিরিবিলী সাক্ষাৎ না করা, কথা না বলা এবং বিনা অনুমতিতে কারো ঘর বা বাড়ীতে প্রবেশ না করা ইত্যাদি।
        যেমন, পুরুষদের চক্ষুকে হিফাযত করা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
[২১৮৪]
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. (سورة انور ৩০ اية)

অর্থঃ- æ(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মুমিন পুরুষগণকে বলুন, তারা যেন, তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে, আল্লাহ পাক তা অবহিত আছেন।” (সূরাতুন্ নূর ৩০নং আয়াত শরীফ)
        

0 Comments: