“হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” শুরু করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ খালিছ হক্ব মত-পথ তালাশ করা বা ছহীহ ও সুন্নতী আমলের মাধ্যমে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেজামন্দি বা সন্তুষ্টি হাছিল করা। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের ছহীহ আক্বীদা লাভ ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
প্রসঙ্গতঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।
স্মর্তব্য যে, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা মায়িদা’র’ ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذ ين امنوا اليهود والذ ين اشر كوا.
অর্থঃ-“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।”
মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুনাফিক সেজে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দিয়েছিল, তাঁকে শহীদ করার চক্রান্ত করেছিল। এই ইহুদীরাই মুনাফিকী করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। আর মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী, দেওবন্দী, মওদুদী, লা-মাযহাবী, তাবলীগী, ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো মূলতঃ ইহুদীদেরই এজেন্ট।
বিশেষতঃ বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’।
উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে।
যেমন, তারা প্রচার করছে- ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদয়াত ও হারাম। নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা শিরক। কদমবুছী করা নাজায়িয ও শিরক।
মাযহাব মানার কোন প্রয়োজন নেই। পীর-মুরীদী শরীয়ত বিরোধী প্রথা। মীলাদ ক্বিয়াম করা র্শিক-বিদ্য়াত। শবে বরাত পালন করা বিদ্য়াত। তারাবীহ নামায জরুরী কোন নামায নয়, আট রাকায়াত তারাবীহ পড়লেই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাঊযুবিল্লাহ)
অথচ উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা শরীয়তসম্মত এবং তন্মধ্যে কোনটা সুন্নত আবার কোনটা ফরয।
পক্ষান্তরে উলামায়ে ‘ছূ’ তথা দুনিয়াদার মাওলানারা ছবি, টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, নোবেল, হরতাল, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা, ভোট দেয়া, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, মহিলাদের জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া, মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত ও মুখ খোলা রাখা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবী করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি নাজায়িয কাজগুলোকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে সরিয়ে, ইবাদত থেকে সরিয়ে অনৈসলামিক ও হারাম কাজে মশগুল করে দিয়ে বেঈমান করে দেয়া।
মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ‘ছূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ‘ছূ’ আবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।
বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘ছূ’ তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক তথা উদাহরণ।
দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা নাজায়িয ও হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে নাজায়িয ও হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।
উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা উল্লিখিত বিষয়গুলোর ন্যায় ‘লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল’ সম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
তারা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, ‘পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান বা ব্যবহার করা জায়িয।’ (নাউযুবিল্লাহ)
বিশেষ করে সিলেট কাসেমুল উলূম ওহাবী মাদ্রাসার ওহাবী মৌলভী দ্বারা লিখিত একটি ফতওয়া কিছুদিন পূর্বে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফে পৌঁছেছে। ওহাবীরা উক্ত ফতওয়ায় মনগড়া দলীলের ভিত্তিতে, কিতাবের ইবারত কারচুপি, কাটছাট ও অপব্যাখ্যা করে এবং শাফিয়ী মাযহাবের মতগুলোকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে লাল রংয়ের পোশাককে পুরুষের জন্য জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।
অথচ অসংখ্য, নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীলের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হানাফী মাযহাবের মুখতার বা গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম তথা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ সম্পূর্ণটা লাল হলে হারাম, অধিকাংশ লাল হলে মাকরূহ তাহরীমী ও কম লাল হলে মাকরূহ তানযীহী। যেমন এ প্রসঙ্গে ‘আবূ দাঊদ শরীফ ও ছহীহ তিরমিযী শরীফে’ বর্ণিত হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে,
عن عبد الله بن عمرو رضى الله عنه قال مر رجل وعليه ثو بان احمر ان فسلم على النبى صلى الله عليه وسلم فلم يرد عليه النبى صلى الله عليه وسلم السلام. هذا حديت حسن. غريب من هذا الوجه.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লাল বর্ণের দু’টি কাপড় (ইযার ও চাদর) পরিহিত এক ব্যক্তি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে সালাম দিল। কিন্তু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের জাওয়াব দেননি। হযরত আবূ ঈসা তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদীছ শরীফখানা হাসান এবং উপরোক্ত সনদে গরীব।” (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, নাইলুল আওতার)
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ‘আবূ দাঊদ শরীফ’-এর ২য় জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
وقال على القارى فى المر قاة فهذا اى قوله صلى الله عليه وسلم فلم يرد عليه دليل صريح على تحر يم لبس الثوب الا حمر للرجال
অর্থঃ- “হযরত আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখা মিশকাত শরীফের শরাহ ‘মিরক্বাত শরীফে’ বলেছেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীঃ তিনি লাল পোশাক পরিহিত ব্যক্তির সালামের জাওয়াব দেননি।” এই হাদীছ শরীফখানা পুরুষদের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা হারাম হওয়ার স্পষ্ট নির্ভরযোগ্য দলীল।”
‘আশয়াতুল্ লুময়াত’ ৩য় জিঃ ৫৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ومختار در مذھب حنفی کراھت تحر یمی ست و نماز گزاردن بان مکروہ و درر نگ سرخ ازغیر معصفر نیز خلاف ست وشیخ قا سم حنفی کہ ازاعاظم علماے متا خرین مصر واستاد قسطلانی ست تحقیق نمودہ وفتوی دادہ کہ حر مت از بھت لون ست نہ صبغ پس ھر سرخ حرام ومکروہ با شد.
অর্থঃ- “হানাফী মাযহাবের মুখতার তথা গ্রহণযোগ্য মতে লাল কাপড় পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। নামাযেও পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। লাল রং উছফুর মিশানোর শর্ত ছাড়াই হারাম। ইহা তাহক্বীক্ব করে ফয়সালা দিয়েছেন আল্লামা শাইখ ক্বাসিম হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি উলামায়ে মুতায়াখ্খিরীনগণের মধ্যে মিশর এলাকার একজন উচ্চ দরজার আলিম ছিলেন এবং হযরত কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উস্তায ছিলেন। তিনি তাহক্বীক্ব করে ফতওয়া দিয়েছেন যে, লাল কাপড় পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ, তা লাল রংয়ের কারণেই উছফুর মিশানোর কারণে নয়। সুতরাং প্রত্যেক লাল রংই হারাম ও মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভূক্ত।”
পক্ষান্তরে শাফিয়ী বা অন্যান্য মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা জায়িয।
যেমন এ প্রসঙ্গে ‘ফতহুল্ মুলহিম লিত্তক্বী উছমানী’ ৪র্থ জিঃ ৫৫৩, ৫৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وقد استدل به من ذهب الى جواز لبس الا حمر للر جال وهو قول الشا فعية والما لكية
অর্থঃ- حلة حمراء হাদীছ শরীফ দ্বারা দলীল দেয়া হয় যে, পুরুষদের জন্য লাল পোশাক জায়িয। ইহা শাফিয়ী ও মালিকী মাযহাবের অভিমত। ... ... (অনুরূপ আউনুল মা’বুদ কিতাবেও বর্ণিত আছে)
কাজেই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সিলেট খারিজী মাদ্রাসার ওহাবী মৌলভী ও তাদের সমগোত্রীয়দের বক্তব্য হানাফীরে জন্য ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অর্থাৎ তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে হানাফীগণ যেরূপ ঈমানী বা আক্বীদাগত দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তদ্রুপ আ’মালী বা আমলগত দিক থেকেও ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
কারণ পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক জায়িয এটা হানাফীদের মত নয় বরং শাফিয়ী মাযহাবের মত। আর হানাফীদের জন্য শাফিয়ী মাযহাবের অনুসরণ করা হারাম।
এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদী”এর ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
لايجوز للحنفى العمل على مذ هب الشا فعى ر حمة الله عليه.
অর্থঃ- “হানাফীদের জন্য শাফিয়ী মাযহাবের (মাসয়ালার উপর) আমল করা নাজায়িয তথা হারাম।”
আর যেহেতু হানাফী মাযহাব মতে লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা পুরুষের জন্য হারাম। তাই এখন যারা তা পরিধান করবে তারা দায়িমীভাবেই হারাম কাজে লিপ্ত থাকবে। অর্থাৎ তারা হারাম কাজ করার গুণাহে গুণাহ্গার হবে। সাথে সাথে ‘সাদা রংয়ের রুমাল ব্যবহার করা খাছ সুন্নত” এ মহান সুন্নতের আমল থেকে সম্পূর্ণ মাহরূম হয়ে যাবে। অথচ সুন্নতের ইত্তিবাই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র মাধ্যম।
অতএব, যারা লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল সম্পর্কে ভুল, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর ফতওয়া দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আমল ধ্বংস করছে তাদের সেই ঈমান-আমল বিধ্বংসী ফতওয়া থেকে সাধারন মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাজতের লক্ষে ও লাল রুমাল সম্পর্কিত সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়া হলো।
যাতে করে পোশাক বা রুমাল সম্পর্কিত সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা অবগত হয়ে সে অনুযায়ী আমল করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। সাথে সাথে যারা লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছে তারা বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে হক্বের উপর দায়িম-ক্বায়িম থাকতে পারে। কারণ, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ।
অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে
من احب لله وا بغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্র্কে” সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়ছালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন প্রত্যেকেই “হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কের্” অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পরলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
অতএব, সে লক্ষ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে বর্তমান সংখ্যা থেকে ধারাবাহিকভাবে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের নিয়মিত পাঠক সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট আলিমে দ্বীন, মুফতী মুহম্মদ মাহমূদ বিন হাসান ছাহেবের পক্ষ থেকে গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফে প্রেরিত সিলেট খারিজী মাদ্রাসর তথাকথিত মুফতী কর্তৃক প্রদত্ত্ব ফতওয়াটি খন্ডন করার সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা হানাফী মাযহাবের দৃষ্টিতে নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীল-আদিল্লাহ্র ভিত্তিতে ‘হানাফী মাযহাবের মুখতার বা মুফতাবিহী বা ফতওয়াগ্রাহ্য মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল নিষিদ্ধ হওয়া’ সম্পর্কিত সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ।
হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক নিষিদ্ধ হওয়ার প্রমাণ ও সিলেট খারিজী মাদ্রাসার ‘তথাকথিত মুফতী!’ ছাহেবের মনগড়া বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
“আমাদের হানাফী মাযহাব মতে, পুরুষের জন্য সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ লাল রংয়ের রুমাল বা কাপড় পরিধান করা হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী, আর লালের ভাগ কম হলে মাকরূহ তানযীহী”- বাতিলের আতঙ্ক, যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর এ ফতওয়াই ছহীহ, গ্রহণযোগ্য, দলীলভিত্তিক ও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত।
বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, বুযূর্গ ও আলিমে দ্বীন, হযরতুল আল্লামা মুফতী মুহম্মদ মাহমূদ বিন হাসান ছাহেবের সংকলিত ফতওয়াটিও ছহীহ, গ্রহণযোগ্য, দলীলভিত্তিক ও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত। কারণ তিনি উক্ত ফতওয়ায় নিজস্ব কোন মত পেশ করেননি। বরং মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর বক্তব্যই হুবহু সংকলন করেছেন মাত্র।
পক্ষান্তরে সিলেট কাসেমুল উলূম খারিজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব ‘লাল রং’ সম্পর্কিত উক্ত ফতওয়াটি খণ্ডন করতে গিয়ে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও জিহালতপূর্ণ হয়েছে।
কথিত মুফতী ছাহেব ক্ষেত্র বিশেষে নিজের মনগড়া মতকে ছাবেত করার লক্ষ্যে কোন কোন হাদীছ শরীফ ও কিতাবের ইবারতের মনগড়া ও ভুল তরজমা ও ব্যাখ্যা দিয়েছে। অর্থাৎ তথাকথিত উক্ত মুফতী ছাহেব তার উক্ত ফতওয়ার মাধ্যমে ধোকা ও প্রতারণার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মূলত: তথাকথিত উক্ত খারিজী মুফতী (!) ছাহেব লাল রং সম্পর্কিত আরবী শব্দের সঠিক অর্থ ও তাহক্বীক্ব সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারণে এবং হাদীছ শরীফ ও কিতাবের ইবারতসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা ও মর্ম অনুধাবনে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই লাল রং সম্পর্কে এরূপ অশুদ্ধ ও বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রদান করেছে এবং আল বাইয়্যিনাতে প্রদত্ত লাল রং সম্পর্কিত ছহীহ ও দলীলভিত্তিক ফতওয়াটি হৃদয়াঙ্গম করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
লাল রং সম্পর্কিত আরবী শব্দগুলোর লুগাতী বা আভিধানিক তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ
عصفر উছফুর শব্দের তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ
عصفر ‘উছফুর’ শব্দটির বহুবচন عصافر ‘আছাফিরু। এর অর্থ কুসুম রং। কুসুম রং দু’প্রকার। যথাঃ লাল ও হলুদ। এজন্য লাল ও হলুদ রংকেও উছফুর’ রং বলা হয়ে থাকে।
(১) বিশ্ব বিখ্যাত লুগাত ‘আল্ মু’জামুল্ ওয়াজীয’ এর ৪২১ পৃষ্ঠায় আছে,
[১০৬]
(العصفر) نيات صيفى من المر كبة انبو بية الزهر، يستعمل زهره تا بلا، ويستتخرج منه صبح احمر يصبغ به الحرير ونحوه.
অর্থঃ (আল্ উছ্ফুরু)ঃ একপ্রকার গ্রীষ্মকালীন তৃণ বা ঘাস যার ফুল হয়। সে ফুল দ্বারা মসলার কাজ হয়। সে ফুল থেকে লাল রং বের করা হয়, যা দ্বারা রেশমী কাপড়কে ও অন্যান্য কাপড়কে রং করা হয়ে থাকে।
(২) বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য ‘আল্ মুনজিদ ফিল্ লুগাহ’-এর ৫০৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১০৭]
العصفر: هو صبغ اصفر اللون.
অর্থঃ আল্ উছফুরুঃ হলুদ রংকে উছফুর বলা হয়।
(৩) সাঈদুল খাওরী আশ্শারতূনী আল্ বানানী-এর লেখা ‘আফরাতুল মাওয়ারিদ ফী ফুছাহিল্ আরাবিয়্যাহ্ ওয়াশ্ শাওয়ারিদ’ কিতাবের ২য় জিঃ ৭৯০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১০৮]
عصفر الثوب: صبغه با لعصفر فهو (معففر)
অর্থঃ কাপড়টি হলুদ রং করলঃ সে উহাকে উছফুর রং দ্বারা রঞ্জিত করল। এমনকি তা (মুয়াছ্ফার বা কুসুম) রংয়ে রঞ্জিত হল।
[১০৯]
(تعصفر) الثوب: انصبغ بالعصفر.
অর্থঃ (হলুদ বা কুসুম রং) দ্বারা কাপড়টি রঙ্গিন হলঃ উছফুর দ্বারা রঙ্গিন হল।
(৪) আল্লামা ক্বাযী যয়নুল্ আবিদীন সাজ্জাদ মীরাঠী-এর ‘বয়ানুল্ লিসান’ লুগাতের কিতাবের ৫২২ পৃষ্ঠায় আছে,
[১১০]
عصفر: كسم
অর্থঃ উছফুর অর্থঃ কুসুম রং।
[১১১]
عصفرۃ: کپڑے کو کسم سے رنگنا.
অর্থঃ ‘আছফারাহ অর্থঃ- কাপড়কে কুসুম রং দিয়ে রঙ্গানো।
(৫) বিশুদ্ধ বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য লুগাতের কিতাব ‘লুগাতে সাঈদী’-এর ৫২৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১১২]
عصفر: (ع) سرخ جامہ. کسنبہ، اس کے پھول کو گل معصفر کھتے ھیں.
অর্থঃ উছফুর শব্দটি (আরবী)ঃ এর অর্থ লাল পোশাক, কুসুম রং, উছফুর গাছের ফুলকে ‘মুয়াছফার গুল’ বলা হয়।
[১১৩]
عصفرت: (ع) کسنبہ کے رتگ میں کپڑےرنگنا
অর্থঃ ‘আছফারাত’ শব্দটি (আরবী)ঃ এর অর্থ, কসুম রং দ্বারা কাপড় বা পোশাক রঙ্গানো।
(৬) লুগাতে হীরা-এর ৬৪৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১১৪]
عصفر: بمعنى كسنبه
অর্থঃ উছফুরঃ অর্থ কুসুম রং।
[১১৫]
معصفر وہ کپڑا جواس رنگ میں رنگا جانے
অর্খঃ মুয়াছফার ঐ কাপড়কে বলে, যা উছফুর বা কুসুম রং দ্বারা রঙ্গানো হয়।
(৭) আল্হাজ্ব মাওলুবী ফীরোযুদ্দীন ছাহেব-এর লেখা ‘ফীরোযুল্ লুগাত’ (ফারসী)-এর ৬১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১১৬]
عصفر: کسنبہ جو مشھور رنگ ھے
অর্থঃ উছফুরঃ হচ্ছে, কুসুম রং। যা মাশহুর বা প্রসিদ্ধ রং।
অতএব, প্রমাণিত হল যে, عصفر উছফুর শব্দটি লাল রং, কুসূম রং এবং হলুদ রং ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ উছফুর অর্থ কুসুম লাল এবং উছফুর অর্থ কুসুম হলুদ।
زعفران ‘যাফারানুন’ শব্দের তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ
زعفران‘যা’ফারানুন’ একবচন, এর বহুবচন زعافر ‘যায়াফিরু’। এর অর্থঃ হলুদ রং, লাল রং, যাফরানী রং, লোহার জংয়ের রং, পিঁয়াজের রং, যর্দা রং ইত্যাদি।
(১) আল্লামা সাঈদুল খাওরী আশ্ শারতূনী আল বানানী-এর লেখা ‘আফরাতুল মাওয়ারিদ ফী ফুছাহিল আরাবিয়্যাহ ওয়াশ্ শাওয়ারিদ’-এর ৪৬৪ পৃষ্ঠায় আছে,
[১১৭]
(الز عفران) نبات له اصل البصل وز هره احمر الى الصفرة.
অর্থঃ (আয্ যা’ফারানু) হচ্ছে পিঁয়াজের গাছের মত এক প্রকার গাছ। যার ফুল লাল থেকে হলুদ হয়ে থাকে।
(২) আল্লামা কাযী যয়নুল আবিদীন সাজ্জাদ মীরাঠী-এর লেখা ‘বয়ানুল লিসান’ কিতাবের ৩৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৮]
زعفران: زعفران، کیسر. لوھے کا رنگ
অর্থঃ যা’ফারানঃ যাফরানী রং, কায়সার বা হলুদ রং, লোহার রং বা লোহার জং।
(৩) আল মুনজিদ ফিল লুগাহ কিতাবের ২৯৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১১৯]
زعفران: جنس نبسات بصلى زهره ا لى الصفرة.
অর্থঃ যা’ফারানুন হচ্ছে পিঁয়াজের গাছের মত এক প্রকার গাছ। যার ফুল লাল থেকে হলুদ হয়ে থাকে।
[১২০]
بنوع خاص لتلوينها بالاصضر.
অর্থঃ যা’ফরান এমন একটি বিশেষ রং, যেন তা হলুদ রং দ্বারা রঞ্জিত করা হয়েছে।
(৪) লুগাতে সাঈদী-এর ৩৭৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১২১]
زعفرا ن: کیسر، مثھور خوشبو دار گھاس، لوھے کار نگ
অর্থঃ যা’ফারান হচ্ছে, কায়সার বা হলুদ রং, প্রসিদ্ধ খুশবু বিশিষ্ট গাছ, লোহার রং।
[১২২]
زعفران ريز بهت زرد.
অর্থঃ ‘যা’ফারান রেয’ হচ্ছে গাঢ় যর্দা রং বা হলদে রং
(৫) ফরহঙ্গে আমেরা-এর ২৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১২৩]
زعفران: كيسر جمع زعا فر.
অর্থঃ যা’ফারান অর্থঃ হলদু রং। এর বহুবচন যায়াফিরু।
[১২৪]
زعفران: كيسر যা’ফারান অর্থঃ হলুদ রং।
[১২৫]
زعفرانى: كيسرى
অর্থঃ যা’ফারানী অর্থ হলুদ রং বিশিষ্ট।
(৬) আলহাজ্ব মাওলুবী ফীরোযুদ্দীন ছাহেব-এর লেখা ‘ফীরোযুল লুগাত’ (ফার্সী)-এর ৪৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১২৬]
زعفران: كيسر، زعفران: نها يت زرد
অর্থঃ যা’ফারান অর্থঃ কায়সার তথা হলুদ রং। যা’ফারান অর্থঃ খাঁটি যর্দা রং।
(৭) ‘ফীরোযুল লুগাত (ঊর্দু)’-এর ৭৪৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১২৭]
زعفران: كيسر، ايك قسم كا زردپھول.
অর্থঃ ‘যা’ফারান’ হচ্ছে- হলুদ রং, এক প্রকারের যর্দা রংয়ের ফুল।
(৮) ‘আল আফছাহ ফী ফিক্বহিল্ লুগাহ’ এর ১৭৩ ও ১৭৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১২৮]
الزعفران: شعر معروف، احمر اللون، وثوب مز عفر، مصبوغ بالز عفر ان وقد زعفرت الثوب.
অর্থঃ আয্ যা’ফারানুঃ পরিচিত একটি রং, যা লাল রং। যাফরান দ্বারা রঞ্জিত কাপড়কে ‘ছাওবুন মুযা’ফারুন’ বলা হয়। সে তার কাপড়কে যা’ফারনী রং দ্বারা রঞ্জিত করল।
উল্লেখিত ইবারতগুলো থেকে প্রমাণিত হল যে, যাফরানী রং অনেক অর্থে ব্যবহার হয়। তন্মধ্যে লাল ও হলুদ রং অন্যতম। অর্থাৎ زعفران ‘যা’ফারান’ দ্বারা লাল রং, যর্দা রং ও হলুদ রংকে বুঝানো হয়।
اصفر ‘আছফারু’ শব্দের তাহক্বীক বা বিশ্বেষণ
اصفر ‘আছফারু’ শব্দটি একবচন, এর বহুবচন صفر ‘ছুফরুন’-এবং স্ত্রীবাচক হচ্ছে دهفراء ‘ছাফরাউ’। অর্থ হচ্ছেঃ হলদে রং, হলুদ বর্ণ, স্বর্ণ, পিতল, ফ্যাকাশে, বিবর্ণ, পিত্ত, শূন্য ইত্যাদি। الاصفران ‘আল্ আছফারানি’ অর্থ যা’ফরান ও স্বর্ণ।
(১) সাঈদুল খাওরী আশ্ শারতূনী আল বানানী-এর লেখা ‘আফরাতুল্ মাওয়ারিদ ফী ফুছাহিল্ আরাবিয়্যাহ ওয়াশ শাওয়ারিদ’ কিতাবের ৬৫০, ৬৫১ পৃষ্ঠায় আছে,
[১২৯]
(الصفر) بالضم ايضا: الذهب. و. النحاس
অর্থঃ (আছ্ছুফরু) শব্দটি صاد ‘ছোয়াদ বর্ণে পেশসহ পড়তে হবে। এটি স্বর্ণ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া ইহা পিতল ও তামা অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
[১৩০]
(الصفراء) مؤنث الاصفر. و. الذهب
অর্থঃ (আছ্ ছফরাউ) শব্দটি ‘আল আছফারু’ শব্দের স্ত্রীবাচক শব্দ। صفراء ‘ছাফরাউ’ অর্থ স্বর্ণ তথা সোনা।
[১৩১]
(الصفرة) بالضم: لون الاصفر كالز عفران والذهب.
অর্থঃ (আছ্ছুফরাতু) শব্দটির صاد ‘ছোয়াদ’ বর্ণে পেশসহ পড়তে হবে। যা’ফারান ও স্বর্ণের রংয়ের মত হলুদ রংকেও ‘ছুফরাতু’ বলে।
[১৩২]
(الاصفر) مالونه الصفرةهى (صفراء ج صفر) و
(الصفر) ايضا: الد نانير الدراهم "اتيته بالصفر والبيض".
অর্থঃ (আল্ আছফারু) হলুদ রংকে বলা হয়। যার স্ত্রীবাচক শব্দ হচ্ছে (ছাফরাউ, আর বহুবচন হচ্ছে ‘ছুফরুন’) (আছ ছুফরু) দ্বারা আরো স্বর্ণমুদ্রা ও রৌপ্য মুদ্রাকে বুঝানো হয়। যেমন বলা হয় “আমি তাকে স্বর্ন মুদ্রা ও রৌপ্য মুদ্রা থেকে দান করলাম।”
[১৩৩]
(الاصفران) الز عفران والذ هب. وقيل والورس
অর্থঃ (আল আছফারানি) বলা হয় যাফরান ও স্বর্ণকে। কেউ কেউ বলেন, আছফার হচ্ছে, ওর্য়াস তথা হলুদ।
(২) ইবনু মানযুর-এর লেখা ‘লিসানুল আরব’ ৪র্থ জিঃ ২৪৫৮. ২৪৫৯. ২৪৬০ ২৪৬১ পৃৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১৩৪]
الصفرةمن الا لوان معروفة. تكون فى الحيوان والنبات و غير ذلك مما يقبلها.
অর্থঃ আছ ছুফরাতু’ হচ্ছে হলুদ রংয়ের একপ্রকার রং। যা প্রাণী, শস্য ও অন্যান্য জিনিষে থাকে।
[১৩৫]
والاصفران: الذهب والزعفران. وقيل الورس والذهب. اهلك النساء الاصفران: الذهب والزعفران. ويقال: الورس والز عفران.
অর্থঃ ‘আল্ আছফারানি’ হচ্ছে, সোনা ও যাফরান। কেউ কেউ বলেন, ওর্য়াস (হলুদ) ও সোনা হচ্ছে ‘আছফারানি’। মহিলাদেরকে দুটি আছফার ধ্বংস করেছে। একটি সোনা অপরটি যা’ফারান।
কেউ কেউ বলেন, ওর্য়াস (হলুদ) ও যাফরান।
[১৩৬]
والصفرة. لون الاصفر.
অর্থঃ হলুদ রংকে ‘আছ ছুফরাহ’ বলা হয়।
(৩) বিশ্ববিখ্যাত লুগাতের কিতাব ‘আল মু’জামুল ওয়াজীয’ কিতাবের ৩৬৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১৩৭]
(اصفر): صار اصفر اللون ... فهو اصفر، وهى صفراءج صفر.
অর্থঃ হলুদ রংয়ে পরিণত হল ... উহাই হলুদ রং।ঞ্জএর স্ত্রীবাচক শব্দ صفراء ‘ছাফরাউ’। আর বহুচন ‘ছুফরুন’।
(৪) মুহম্মদ ইবনে আবূ বকর ইবনে আব্দুল ক্বাদির আর রাযী-এর লেখা ‘আল্ মুখতারুছ ছিহাহ্’ কিতাবের ১৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৩৮]
(الصفرة) لون الا صفر.
অর্থঃ (‘আছ্ ছুফরাহ’) হচ্ছে, হলুদ রং।
(৫) আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে আলী আল্ মুক্বরী আল্ ফাইয়্যূমী-এর লেখা ‘আল মিছবাহুল মুনীর ফী গরীবিশ্ শরহিল কবীর লির রাফিয়ী’ কিতাবের ৩৪২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১৩৯]
الصفر: الد نانير، الذهب. النحاس الا صفر.
অর্থঃ (আছ ছূফরাহ হলুদ রং) হচ্ছে যা লাল রং নয়।
(৬) আল মুনজিদ ফিল্ লুগাহ-এর ৪২৭, ৪২৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১৪০]
الصفر: الد نانير، الذهب. النحاس الا صفر.
অর্থঃ ‘আছ ছুফরু অর্থ স্বর্ণমুদ্রা, স্বর্ণ, হলুদ রংয়ের পিতল।
[১৪১]
الصفرة: لون الاصفر كالذ هب.
অর্থঃ ‘আছ্ ছুফরাহ’ হল- স্বর্ণের রংয়ের মত হলুদ রং।
(৭) লুগাতে সাঈদী-এর ৪৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৪২]
صفراء: زردرنگ
অর্থঃ ‘ছাফরাউ’ অর্থ- যর্দা রং বা হলুদ রং।
উল্লেখিত ইবারতগুলো থেকে প্রমাণীত হল যে, اصفر ‘আছফার’ রং হচ্ছে- হলুদ রং, যর্দা রং, যা’ফরানী রং, স্বর্ণ রং ইত্যাদি। তবে ইহা বিশেষভাবে হলুদ রং অর্থে ব্যবহৃত হয়।
ورد‘ওয়ারদুন’ শব্দের তাহক্বীক্ব বা বিশ্বেষণ
ورد ‘ওয়ারদুন্’ শব্দটি একবচন, এর বহুবচন ورود‘বুরুদুন’। স্ত্রীবাচক শব্দ وردة ‘ওয়ারদাতুন’, এর বহুবচন وردات ওয়ারদাতুন। অর্থ হচ্ছে গোলাপ ফুল। وردى ‘ ওয়ারদিয়্যুন’ শব্দটির স্ত্রীবাচক শব্দ وردية ‘ওয়ারদিয়্যাতুন’। এর অর্থ গোলাপী রং, লাল রং ইত্যাদি।
(১) সাঈদুল খাওরী আশ্ শারতূনী আল্ বানানী-এর লেখা ‘আফরাতুন মাওয়ারিদ ফী ফুছাহিল আরাবিয়্যাহ ওয়াশ্ শাওয়ারিদ” কিতাবের ২য় জিঃ ১৪৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৪৩]
وردت المراة: حمرت خد ها.
অর্থঃ মহিলাটি গোলাপী হলঃ অর্থাৎ তার গাল লাল বর্ণ ধারণ করল।
[১৪৪]
(الورد) من كل شجرة: نورها .... له ز هر احمر وابيض واصفر ذو رائحة عطرية.
অর্থঃ- (আল ওয়ারদ) এমন গাছকে বলে, যার ফুল আছে . যার ফুল লাল, সাদা ও হলুদ রংয়ের সুঘ্রান-সুগন্ধ বিশিষ্ট হয়।
(২) আল্লামা ইবনু মানযূর-এর লেখা ‘লিসানুল আরব’ ৮ম জিঃ ৪৮১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৪৫]
قال ابو حنيفة ر حمة الله عليه: الورد نور كل شجرة وزهر كل نبتة واحد ته وردة، قال: الورد ببلاد العرب كثير
অর্থঃ হযরত ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: ওয়ারদ হচ্ছে প্রত্যেক গোলাপ গাছের ফুল। এর স্ত্রীবাচক একবচন ‘ওয়ারদাতুন’। তিনি বলেন: গোলাপ ফুল আরব দেশে বেশী পরিমানে পাওয়া যায়।
[১৪৬]
ابن سيده. الورد لون احمر.
অর্থঃ- “হযরত ইবনু সীদাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: গোলাপ লাল রংয়ের হয়ে থাকে।
(৩) ‘আল মু’জামুল ওয়াজীয’ কিতাবের ৬৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৪৭]
الورد وحد ثه وردة. و-لون احمر
অর্থঃ ورد ওয়ারদুন শব্দটির একবচন وردة ওয়ারদাতুন। লাল রংয়ের গোলাপ।
(৪) আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে আলী আল্ মুক্বরী আল্ ফাইয়্যূমী-এর ‘আল্ মিছবাহুল মুনীর ফী গরীবিশ্ শরহিল কবীর লির রাফিয়ী’র ৬৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৪৮]
(ورودة) وهى حمرة.
অর্থঃ (বুরূদাতুন গোলাপী হওয়া শব্দটি বাবে كرم থেকে ورد ওয়ারুদা শব্দের মাছদার বা ক্রিয়ামূল) গোলাপী রং হচ্ছে লাল রং। (অনুরূপ আল্ মুনজিদ ফিল্ লুগাহ কিতাবেও আছে)
(৫) আল্লামা ক্বাযী যয়নুল আবিদীন সাজ্জাদ মীরাঠী-এর লেখা ‘বয়ানুল লিসান’ কিতাবের ৮৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৪৯]
وردگلاب کا پھول. زعفر ان.
অর্থঃ- ‘ওর্য়াদ’ অর্থ গোলাপ ফুল, যাফরান।
[১৫০]
ورد: زردی ما نل. سرخ ر نگ کا گھو ڑا.
অর্থঃ ‘ওর্য়াদ’ অর্থ: যর্দা বা গাড়ো হলুদ, লাল রংয়ের ঘোড়া।
[১৫১]
وردۃ گلا بی. بھت سرخ.
অর্থঃ ‘ওর্য়াদাহ’ অর্থঃ গোলাপী রং, গাড়ো লাল রং।
(৬) লুগাতে সাঈদী-এর ৮৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে
[১৫২]
ورد:گلاب کا پھول، کل سرخ
অর্থঃ ওর্য়াদ অর্থঃ গোলাপ গাছের ফুল, লাল ফুল।
(৭) ওয়াহীদুয্ যামান-এর লেখা “লুগাতুল হাদীছ’ কিতাবের ৪র্থ জিঃ واو অধ্যায়ের ৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৫৩]
تورید: پھول نکلنا، سرخ ھو نا، گلا بی ر نگنا.
অর্থঃ তাওরীদ অর্থঃ ফুল ফুটা, লাল রং ধারণ করা, গোলাপী রংয়ে রঞ্জিত হওয়া।
উল্লেখিত ইবারতগুলো থেকে প্রমানিত হল যে, ‘ওয়ারদ’ হচ্ছে গোলাপী রং। যা লাল, হলুদ ও সাদা হয়ে থাকে। যা লাল রংয়েরই বেশী হয়ে থাকে।
উপরোক্ত লুগাত বা অভিধানের দৃষ্টিতে শাব্দিক তাহক্বীক্ব বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, আহমার احمر , ওয়ারস ورس, জাফরান زعفران , উছফুর عصفر , আছফার اصفر ও ওয়ারদورد শব্দগুলো একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, লাল, গন্ধম, সোনালী, রূপালী, সাদা, কুসূম, হলুদ, জাফরানী, গোলাপী ইত্যাদি। সুতরাং ‘আহমার’ احمر শব্দটি যেরূপভাবে ‘লাল’ অর্থে ব্যবহৃত হয় অনুরূপভাবে গন্ধম, সোনালী, ফর্সা-সাদা ইত্যাদি অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যা সিলেট খারিজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) নিজেও স্বীকার করেছে। যেমন, সে তার মনগড়া ফতওয়ায় লিখেছে, “..... احمر ‘আহমার’ শব্দটি একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয় সত্য কথাই .... ।”
এ প্রেক্ষিতে তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের নিকট আমাদের প্রথম প্রশ্ন হলো, যদি احمر‘আহমার’ শব্দটি একাধিক অর্থ প্রদান করে থাকে তবে তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব সবস্থানেই احمر ‘আহমার’ শব্দের অর্থ ‘লাল’ নিল কিভাবে? কোন যুক্তিতে?
দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, যদি احمر ‘আহমার’ শব্দের একাধিক অর্থ হয়ে থাকে তবে حلة حمراء ‘হুল্লাতুন হামরা’-এর অর্থ ‘গন্ধম বা সোনালী জোড়া’ করা ঠিক হবে না কেন? নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবে একথা উল্লেখ আছে কি যে, ‘হুল্লাতুল হামরা’ অর্থ গন্ধম বা সোনালী জোড়া নেয়া ঠিক নয়।
তৃতীয় প্রশ্ন হলো, যদি احمر ‘আহমার’ শব্দটির একাধিক অর্থই থেকে থাকে তবে হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখগণ তাঁদের কিতাবে باب الثوب الا حمر বলে যে বাব বেঁধেছেন। উক্ত احمر ‘আহমার’ শব্দ দ্বারা তাঁরা যে শুধু লালকেই বুঝিয়েছেন এরই বা দলীল কোথায়? উক্ত احمر ‘আহমার’ শব্দ দ্বারা তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্থও তো মুরাদ নিতে পারেন। যেহেতু احمر ‘আহমার’ শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে।
মূলকথা হলো, যেহেতু আমাদের হানাফী মাযহাব মতে ‘লাল’ অর্থে যে ‘আহমার’ রয়েছে তা হারাম বা মাকরূহ তাহরীমী অর্থাৎ নিষিদ্ধ। সেহেতু যে সকল হাদীছ শরীফ দ্বারা احمر ‘আহমার’ নিষিদ্ধ হওয়া প্রমাণিত হয় সে সকল হাদীছ শরীফে বর্ণিত احمر ‘আহমার’ দ্বারা লাল রংকেই বুঝতে হবে। আর যে সকল হাদীছ শরীফ দ্বারা احمر ‘আহমার’ বৈধ প্রমাণিত হয় সে সকল হাদীছ শরীফে বর্ণিত احمر ‘আহমার’ দ্বারা গন্ধম, সোনালী ইত্যাদি রংকে বুঝতে হবে। কেননা, গন্ধম, সোনালী ইত্যাদি রং ব্যবহার জায়িয হওয়ার ব্যাপারে কারোই কোন দ্বিমত নেই।
অতএব, আবূ দাউদ শরীফের’ বর্ণিত ثوبان احمران -এর সঠিক অর্থ হলো, ‘দুটি লাল রংয়ের কাপড়।’ যেহেতু অত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা احمر ‘আহমার’ নিষিদ্ধ হওয়া প্রমাণিত হয়। আর হানাফী ফক্বীহগণও লাল রং অর্থে احمر ‘আহমার’কে পুরুষের জন্য হারাম, মাকরূহ বা নিষিদ্ধ বলে ফতওয়া দিয়েছেন। আর ‘বুখারী শরীফে’ বর্ণিত حلة حمراء-এর সঠিক অর্থ হলো ‘গন্ধম বা সোনালী রংয়ের এক জোড়া পোশাক।’ যেহেতু অত্র হাদীছ শরীফের দ্বারা الحمر ‘আহমার’ বৈধ হওয়া প্রমাণিত হয়। আর ফক্বীহগণও গন্ধম বা সোনালী রং অর্থে احمر ‘আহমার’কে জায়িয বা বৈধ বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
অতএব, সিলেট খারিজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী যে লিখেছে حلة حمراء ‘হুল্লাতুল হামরা’ অর্থ গন্ধম বা সোনালী জোড়া করা সঠিক হয়নি’ এবং হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি احمر ‘আহমার’ শব্দ দ্বারা ‘লাল’কেই বুঝেছেন”- তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণই মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন।
(অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment