পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক ব্যবহার করা হারাম- পর্ব-১










“হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” 

দশুরু করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ খালিছ হক্ব মত-পথ তালাশ করা বা ছহীহ ও সুন্নতী আমলের মাধ্যমে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেজামন্দি বা সন্তুষ্টি হাছিল করা। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লেখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের ছহীহ আক্বীদা লাভ ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
প্রসঙ্গতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।
স্মর্তব্য যে, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে সূরা মায়িদা৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,

لتجدن اشد الناس عداوة للد ين امنوا اليهود والذين اشر كوا.

অর্থঃ-তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।
মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুনাফিক সেজে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লামকে কষ্ট দিয়েছিল, তাঁকে শহীদ করার চক্রান্ত করেছিল। এই ইহুদীরাই মুনাফিকী করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। আর মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল  বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মুতাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী, দেওবন্দী, মওদুদী, লা-মাযহাবী, তাবলীগী, ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো মূলতঃ ইহুদীদেরই এজেন্ট।
বিশেষতঃ বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ওহাবী সম্প্রদায়
উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ছূরা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে।
যেমন, তারা প্রচার করছে- ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদয়াত ও হারাম। নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা শিরক। কদমবুছী করা নাজায়িয ও শিরক।
মাযহাব মানার কোন প্রয়োজন নেই। পীর-মুরীদী শরীয়ত বিরোধী প্রথা। মীলাদ ক্বিয়াম করা র্শিক-বিদ্য়াত। শবে বরাত পালন করা বিদ্য়াত। তারাবীহ নামায জরুরী কোন নামায নয়, আট রাকায়াত তারাবীহ পড়লেই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাঊযুবিল্লাহ)
অথচ উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা শরীয়তসম্মত এবং তন্মধ্যে কোনটা সুন্নত আবার কোনটা  ফরয।
পক্ষান্তরে উলামায়ে ছূতথা দুনিয়াদার মাওলানারা ছবি, টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, নোবেল, হরতাল, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা, ভোট দেয়া, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, মহিলাদের  জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া, মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত ও মুখ খোলা রাখা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবী করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি নাজায়িয কাজগুলোকে জায়িয বলে প্রচার করছে।  (নাঊযুবিল্লাহ)
অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে সরিয়ে, ইবাদত থেকে সরিয়ে অনৈসলামিক ও হারাম কাজে মশগুল করে দিয়ে বেঈমান করে দেয়া।
মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।
বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক তথা উদাহরণ।
দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা নাজায়িয ও হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে নাজায়িয ও হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।
যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هر يرة رضى الله عنه قال قال ر سول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى ا خر الز مان دجا لون كذابون يأ تو نكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فا يا كم واياهم لا يضلو نكم ولا يفتنو نكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম, মিশকাত শরীফ)
উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ছূরা উল্লিখিত বিষয়গুলোর ন্যায় লাল রংয়ের পোশাক বা রুমালসম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
তারা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, ‘পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান বা ব্যবহার করা জায়িয।’ (নাউযুবিল্লাহ)
বিশেষ করে সিলেট কাসেমুল উলূম ওহাবী মাদ্রাসার ওহাবী মৌলভী দ্বারা লিখিত একটি ফতওয়া কিছুদিন পূর্বে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফে পৌঁছেছে। ওহাবীরা উক্ত ফতওয়ায় মনগড়া দলীলের ভিত্তিতে, কিতাবের ইবারত কারচুপি, কাটছাট ও অপব্যাখ্যা করে এবং শাফিয়ী মাযহাবের মতগুলোকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে লাল রংয়ের পোশাককে পুরুষের জন্য জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।
অথচ অসংখ্য, নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীলের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হানাফী মাযহাবের মুখতার বা গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম তথা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ সম্পূর্ণটা লাল হলে হারাম, অধিকাংশ লাল হলে মাকরূহ তাহরীমী ও কম লাল হলে মাকরূহ তানযীহী। যেমন এ প্রসঙ্গে আবূ দাঊদ শরীফ ও ছহীহ তিরমিযী শরীফেবর্ণিত হযরত আব্দুল্লাহ  বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  থেকে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে,

عن عبد الله بن عمرو رضى الله عنه قال مر رجل و عليه ثوبان احمران فسنم على النبى صلى الله عليه وسلم فلم يرد عليه النبى صلى الله عليه وسلم السلام. هذا  حد يث حسن. غريب من هذا الوجه.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লাল বর্ণের দুটি কাপড় (ইযার ও চাদর) পরিহিত এক ব্যক্তি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে সালাম দিল। কিন্তু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের জাওয়াব দেননি। হযরত আবূ ঈসা তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদীছ শরীফখানা হাসান এবং উপরোক্ত সনদে গরীব।” (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, নাইলুল আওতার)
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মুসলিম শরীফের শরাহ ফতহুল্ মুলহিম লিত্তক্বী উছমানী৪র্থ জিঃ ৫৫৩, ৫৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والمشهور عند الحنفة انهم يكر هون لبس الا حمر الخا لص للر جال. وذلك لما اخر جه ابو داؤد والتر مذى وحسنه.
অর্থঃ- মাশহুর মতে, হানাফীগণের নিকট পুরুষদের জন্য পূর্ণ লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী বা হারাম। যেমনটি হাসান সনদে আবূ দাঊদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফেবর্ণিত আছে।” (অনুরূপ আউনুল মাবুদ কিতাবেও বর্ণিত আছে)
قال الشوكا نى فى النيل: ..................... وذهبت الحنفيت الى الكر اهة واحتجوا بحد يث عبد الله بن عمرو قال مر با لنبى صلى الله عليه وسلم رجل و عليه ثو بان احمران فسلم عليه فلم يرد عليه اخر جه التر مذى وابو داؤد.
অর্থঃ-  শাওকানী তাঁর নাইলুল্ আওতারকিতাবে বলেছেন, .......... হানাফী মাযহাবে পুরুষদের জন্য লাল পোশাক পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী বা হারাম। তাঁরা দলীল পেশ করে থাকেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফকে। তিনি বলেছেন, একদা এক ব্যক্তি দুটি লাল কাপড় পরিহিত অবস্থায় হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে সালাম দেয়, কিন্তু তিনি তার সালামের জাওয়াব দেননি। হাদীছ শরীফখানা তিরমিযী শরীফ ও আবূ দাঊদ শরীফে বর্ণিত আছে।
আবূ দাঊদ শরীফ’-এর ২য় জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
وقال على القا رى فى المر قاة فهذا اى قو له صلى الله عليه وسلم فلم يرد عليه دليل صر يح على تحر يم لبس الثوب الا حمر للر جال
অর্থঃ- হযরত আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখা মিশকাত শরীফের শরাহ মিরক্বাত শরীফেবলেছেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীঃ তিনি লাল পোশাক পরিহিত ব্যক্তির সালামের জাওয়াব দেননি।এই হাদীছ শরীফখানা পুরুষদের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা হারাম হওয়ার স্পষ্ট নির্ভরযোগ্য দলীল।
  ‘আশয়াতুল্ লুময়াত৩য় জিঃ ৫৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ومختار در مذهب هنفى كراهت تحر بمی ست ونمازگزاردن بان مکروه ودر ر ںگ سر خ ازغیر معصنر نیز خلاف ست و شیخ فا سم حںںی کہ ازاعاظر علما مے منا خر ین مصر واستاد فسطلانی سن تحقیف نمو ده وفنوی داده کہحر مت از بهت لون ست نہ صبغ پس هر سرخ حرام ومکروه باشد.
অর্থঃ- হানাফী মাযহাবের মুখতার তথা গ্রহণযোগ্য মতে লাল কাপড় পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। নামাযেও পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। লাল রং উছফুর মিশানোর শর্ত ছাড়াই হারাম। ইহা তাহক্বীক্ব করে ফয়সালা দিয়েছেন আল্লামা শাইখ ক্বাসিম হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি উলামায়ে মুতায়াখ্খিরীনগণের মধ্যে মিশর এলাকার একজন উচ্চ দরজার আলিম ছিলেন এবং হযরত কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উস্তায ছিলেন। তিনি তাহক্বীক্ব করে ফতওয়া দিয়েছেন যে, লাল কাপড় পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ, তা লাল রংয়ের কারণেই উছফুর মিশানোর কারণে নয়। সুতরাং প্রত্যেক লাল রংই হারাম ও মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভূক্ত।
পক্ষান্তরে শাফিয়ী বা অন্যান্য মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা জায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ২য় জিঃ ৮৭০ পৃষ্ঠায় ১নং টিকায় উল্লেখ আছে,
الثو ب الا حمر اختلف فى لبس الثياب  المصبو غة احمر با لعصفر او غيره فا با حها جما عة من الصحا بة والتا بعين وبه قال الشا فعى
অর্থঃ- উছফুর বা অন্য রং দ্বারা রঞ্জিত লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লািহ আলাইহি-এর মতে ছাহাবী ও তাবিয়ীনদের এক জামায়াত তা মুবাহ বলেন।
 ‘ফতহুল্ মুলহিম লিত্তক্বী উছমানী৪র্থ জিঃ ৫৫৩, ৫৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وقد استدل به من ذهب الى جواز لبس الا حمر للر جال وهو قول الشا فعيه والما لكية
অর্থঃ-  حلة حمراء  হাদীছ শরীফ দ্বারা দলীল দেয়া হয় যে, পুরুষদের জন্য লাল পোশাক জায়িয। ইহা শাফিয়ী ও মালিকী মাযহাবের অভিমত। ... ... (অনুরূপ আউনুল মাবুদ কিতাবেও বর্ণিত আছে)
কাজেই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সিলেট খারিজী মাদ্রাসার ওহাবী মৌলভী ও তাদের সমগোত্রীয়দের বক্তব্য হানাফীরে জন্য ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অর্থাৎ তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে হানাফীগণ যেরূপ ঈমানী বা আক্বীদাগত দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তদ্রুপ আমালী বা আমলগত দিক থেকেও ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
ঈমান বা আক্বীদাগত ক্ষতি
ওহাবীদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে কেউ কেউ হয়তো বিশ্বাস করবে যে, “নবীজী লাল কাপড় পরিধান করেছেন বা হানাফী মাযহাব মতে লাল কাপড় পরিধান করা জায়িয।” (নাউযুবিল্লাহ)
অথচ শরীয়তের ফায়ছালা হলো- নবীজি যেটা করেননি, সেটা করেছেন বলা ও নাজায়িযকে জায়িয বলা বা বিশ্বাস করা কুফরী তথা ঈমান বিনষ্ট ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من  النار
অর্থঃ-  যে  ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার নামে মিথ্যা কথা বলবে, সে যেন তার স্থান (দুনিয়ায় থাকতেই) জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেল যে, সাইয়্যিদূল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পোশাক পরিধান করেননি, তা পরিধান করেছেন বলা সুষ্পষ্ট কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। অনুরূপভাবে হারামকে হালাল বা নাজায়িযকে জায়িয বলার পরিণাম সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
استحلال المعصية كفر.
অর্থাৎ- কোন গুণাহ্ বা নাজায়িয কাজকে হালাল বা জায়িয মনে করা কুফরী।”  (শরহে আক্বায়িদে নাসাফী)
অতএব বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য চরমভাবে হুমকীস্বরূপ। অথচ বান্দার ইবাদত-বন্দিগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা। কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত।
তাই মহান আল্লাহ পাক, পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
والعصر ان الا نسا ن افى خسر الا الذ ين امنوا و عملوا الصا لحات.
অর্থঃ- আছরের (সময়ের) কছম! সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে, একমাত্র তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।” (সূরা আছর)
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক মানব জাতির ধ্বংস হতে নাযাত পাওয়ার প্রথম উপায় হিসেবে ঈমান (আক্বীদা)কে আখ্যায়িত করেছেন। অতঃপর আমলের প্রশ্ন। কারণ ঈমানহীন ব্যক্তির নেক আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ পাক-এর নিকট নেই। কাজেই বান্দার জন্যে প্রধানতম ফরয এই যে, সে সর্ব প্রথম তার ঈমান ও আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করবে অর্থাৎ ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা  পোষণ করবে।
কেননা আক্বীদাগত কারণেই ইসলামে ৭২টি বাতিল ফিরক্বার আবির্ভাব হয়েছে। যদিও তাদের কথাবার্তা, চাল-চলন, ছূরত-সীরত ইত্যাদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানের ন্যায় বা ইসলামসম্মত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামের মৌলিক ও আনুসাঙ্গিক বিষয়ে ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত আক্বীদা পোষণ করে থাকে, যা সুস্পষ্ট কুফরী।
 যেমন- ক্বদরিয়া সম্প্রদায়- তারা তক্বদীরকে অবিশ্বাস করে, অথচ তক্বদীরের উপর ঈমান আনা ফরয।
খারিজী সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা হলো- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কাফির (নাউযুবিল্লাহ্), অথচ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি সুধারণা পোষণ করা ঈমানের অঙ্গ বা ফরয।
রাফিজী বা শিয়া সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা মতে শিয়াদের ইমামদের মর্যাদা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের চেয়েও বেশী, বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তীত, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ব্যতীত খুলাফায়ে রাশিদীনের সকলেই মুরতাদ। (নাউযুবিল্লাহ)
অনুরূপ বর্তমান যামানার ভয়ঙ্কর ফিৎনা- কাদিয়ানী সম্প্রদায়। তাদের আক্বীদা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী নন, তাঁর পর আরো নবী পৃথিবীতে আসবে, তাই তারা গোলাম কাদিয়ানীকে নবী বলে বিশ্বাস করে, যা অকাট্য কুফরী।
অথচ তারা প্রত্যেকেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতের কথা বলে, টুপি, ক্বমীছ, পাগড়ী পরিধান করে। এতকিছুর পরও তারা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মোতাবেক কাফির বা অমুসলিম। কারণ তাদের উপরোক্ত আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণই কুফরী।
আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
ستفتر ق امتى على ثلاث وسبعين فر قة كلهم فى النار الا ملة وا حدة قيل من هى يار سول الله صلى الله عليه و سلم قال ما  انا عليه واصحا بى.
অর্থঃ- অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- যে দলটি (নাযাত পাবে) সেটা কোন দল? ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে মত-পথের উপর আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ রয়েছি, তার উপর যারা থাকবে, তারাই সেই নাযাত প্রাপ্ত দল।” (আহ্মদ শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের  যে কোন আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন খারিজী, রাফিযী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল।
মালী বা আমলগত ক্ষতি
ওহাবীদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে হানাফীদের যারা লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল পরিধান করবে তারা আমলের ক্ষেত্রেও বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
কারণ পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক জায়িয এটা হানাফীদের মত নয় বরং শাফিয়ী মাযহাবের মত। আর হানাফীদের জন্য শাফিয়ী মাযহাবের অনুসরণ করা হারাম।
এ প্রসঙ্গে তাফসীরে আহমদীএর ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
لايجوز للحنفى العمل على مذ هب الشا فعى رحمة الله عليه.
অর্থঃ- হানাফীদের জন্য শাফিয়ী মাযহাবের (মাসয়ালার উপর) আমল করা নাজায়িয তথা হারাম।
দুররুল মুখতারকিতাবের ১ম খণ্ডের ৬ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,
ان حكم الملفق با طل بالا جماع.
অর্থঃ- সর্বসম্মতিক্রমে শরীয়তে মুলফিক বাতিল তথা ভ্রষ্ট ও পরিত্যাজ্য।” (আর মুলফিক ঐ ব্যক্তিকে বলে, যে দুই মাযহাবের মাসয়ালাকে একত্র করে আমল করে।)
দুররুল মুখতারকিতাবে তাযিরের অধ্যায়ে আরো উল্লেখ আছে,
من ار تحل الى مذهب الشافعى يعزر.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি নিজ মাযহাবের আমল পরিত্যাগ করে শাফিয়ী (কিংবা অন্যান্য) মাযহাবের অনুসরণ করে সে শাস্তির উপযুক্ত।
তাফসীরে আহমদীকিতাবের ৩৪৫ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,
لايجوز الا نتقال من مذهب الى مذ هب اخر كذ لك لا يجوز ان يعمل فى مسئلة على مذ هب و فى ا خرى على اخر.
অর্থঃ- এক মাযহাবের পক্ষে যেমন অন্য মাযহাবে প্রত্যার্বতন করা নাজায়িয তথা হারাম। ঠিক তেমনিভাবে যে কোন একটি মাসয়ালায় এক মাযহাবের অনুসরণ আবার অন্য একটি মাসয়ালায় অন্য এক মাযহাবের অনুসরণ করা জায়িয নেই বরং হারাম।
দ্বিতীয়তঃ হানাফী মাযহাব মতে লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা পুরুষের জন্য হারাম। এখন যারা তা পরিধান করবে তারা দায়িমীভাবেই হারাম কাজে লিপ্ত থাকবে। অর্থাৎ তারা হারাম কাজ করার গুণাহে গুণাহ্গার হবে। সাথে সাথে সাদা রংয়ের রুমাল ব্যবহার করা খাছ সুন্নতএ মহান সুন্নতের আমল থেকে সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাবে। অথচ সুন্নতের ইত্তিবাই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র মাধ্যম।
যেমন এ প্রসঙ্গে কুরআন শরীফের সূরা আলে ইমরান”-এর ৩১নং আয়াত শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
قل ان كنتم تحنون الله فا تبعو نى يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি সারাবিশ্বের মানুষ ও জ্বিনদেরকে বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহ পাককে ভালবাসতে চাও তাহলে আমাকে অনুসরণ-অনুকরণ করো। তাহলে আল্লাহ পাক তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুণাহ্খতাগুলো ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল, দয়ালু করুণাময়।
মিশকাত শরীফে” ‘কিতাবুল ঈমানেবর্ণিত আছে,
عن ابى هر يرة رضى الله تعا لى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل امتى يد خلون الجنة الا من ابى قيل ومن ابى قال من اطا عنى دخل الجنة ومن عصا نى فقد ابى. رواه البخارى.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার সকল উম্মতই জান্নাতে যাবে, যে জান্নাতে যেতে অসম্মত সে ব্যতীত। জিজ্ঞাসা করা হলো, কে অসম্মত? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে আমাকে ইত্তিবা (অনুসরণ-অনুকরণ) করে সে জান্নাতে যাবে আর যে আমার অবাধ্য হয়েছে সে জান্নাতে যেতে অসম্মত। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটা বর্ণনা করেছেন।
মিশকাত শরীফ”-এর কিতাবুল ঈমানেবর্ণিত আছে,
عن انس رضى الله تعا لى عنه قا ل قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احب سنتى فقد احبنى ومن احبنى كان معى فى الجنة. رواه التر مذى.
অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে (অনুসরণের মাধ্যমে) ভালবাসে যে যেন আমাকেই ভালবাসে। আর যে আমাকে ভালবাসে, সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটা বর্ণনা করেছেন।
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجر ما ئه شهيد. رواه البيهمى فى كتاب الجهاد.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ফিৎনা-ফাসাদের যুগে একটি সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে, তার জন্য একশত শহীদের ছওয়াব রয়েছে। হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি কিতাবুল জিহাদেএটা বর্ণনা করেছেন।
অতএব, যারা লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল সম্পর্কে ভুল, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর ফতওয়া দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আমল ধ্বংস করছে তাদের সেই ঈমান-আমল বিধ্বংসী ফতওয়া থেকে সাধারন মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাজতের লক্ষে ও লাল রুমাল সম্পর্কিত সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো। যাতে করে পোশাক বা রুমাল সম্পর্কিত সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা অবগত হয়ে সে অনুযায়ী আমল করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। সাথে সাথে যারা লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছে তারা বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে হক্বের উপর দায়িম-ক্বায়িম থাকতে পারে। কারণ, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্র্কেসঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়ছালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন  প্রত্যেকেই হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কের্অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পরলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
অতএব, সে লক্ষ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে বর্তমান সংখ্যা থেকে ধারাবাহিকভাবে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের নিয়মিত পাঠক সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট আলিমে দ্বীন, মুফতী মুহম্মদ মাহমূদ বিন হাসান ছাহেবের পক্ষ থেকে গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফে প্রেরিত সিলেট খারিজী মাদ্রাসর তথাকথিত মুফতী কর্তৃক প্রদত্ত্ব ফতওয়াটি খন্ডন করার সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা হানাফী মাযহাবের দৃষ্টিতে নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীল-আদিল্লাহ্র ভিত্তিতে হানাফী মাযহাবের মুখতার বা মুফতাবিহী বা ফতওয়াগ্রাহ্য মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল নিষিদ্ধ হওয়াসম্পর্কিত সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ।
হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক নিষিদ্ধ হওয়ার প্রমাণ ও সিলেট খারিজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী!ছাহেবের মনগড়া বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
আমাদের হানাফী মাযহাব মতে, পুরুষের জন্য সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ লাল রংয়ের রুমাল বা কাপড় পরিধান করা হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী, আর লালের ভাগ কম হলে মাকরূহ তানযীহী”- বাতিলের আতঙ্ক, যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর এ ফতওয়াই ছহীহ, গ্রহণযোগ্য, দলীলভিত্তিক ও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত।
বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, বুযূর্গ ও আলিমে দ্বীন, হযরতুল আল্লামা মুফতী মুহম্মদ মাহমূদ বিন হাসান ছাহেবের সংকলিত ফতওয়াটিও ছহীহ, গ্রহণযোগ্য, দলীলভিত্তিক ও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত। কারণ তিনি উক্ত ফতওয়ায় নিজস্ব কোন মত পেশ করেননি। বরং মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর বক্তব্যই হুবহু সংকলন করেছেন মাত্র।
পক্ষান্তরে সিলেট কাসেমুল উলূম খারিজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) আবুল কালাম মুহম্মদ যাকারিয়া ছাহেব লাল রংসম্পর্কিত উক্ত ফতওয়াটি খণ্ডন করতে গিয়ে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও জিহালতপূর্ণ হয়েছে। কথিত মুফতী ছাহেব ক্ষেত্র বিশেষে নিজের মনগড়া মতকে ছাবেত করার লক্ষ্যে কোন কোন হাদীছ শরীফ ও কিতাবের ইবারতের মনগড়া ও ভুল তরজমা ও ব্যাখ্যা দিয়েছে। অর্থাৎ তথাকথিত উক্ত মুফতী ছাহেব তার উক্ত ফতওয়ার মাধ্যমে ধোকা ও প্রতারণার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মূলত: তথাকথিত উক্ত খারিজী মুফতী (!) ছাহেব লাল রং সম্পর্কিত আরবী শব্দের সঠিক অর্থ ও তাহক্বীক্ব সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারণে এবং হাদীছ শরীফ ও কিতাবের ইবারতসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা ও মর্ম অনুধাবনে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই লাল রং সম্পর্কে এরূপ অশুদ্ধ ও বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রদান করেছে এবং আল বাইয়্যিনাতে প্রদত্ত লাল রং সম্পর্কিত ছহীহ ও দলীলভিত্তিক ফতওয়াটি হৃদয়াঙ্গম করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
হানাফী মাযহাবের মুখতার বা গ্রহণযোগ্য
 মতে পুরুষের জন্য সর্বপ্রকার লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করা হারাম বা মাকরূহ
তাহরীমী তবে শাফিয়ী মাযহাবে জায়িয
আমাদের হানাফী মাযহাবের মুখতার বা গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়া গ্রাহ্য মতেঃ সর্ব প্রকার লাল কাপড় তথা উছফুর, জাফরান ও ওয়ারস দ্বারা রঙ্গানো লাল এবং সাধারণ লাল কাপড় পুরুষের জন্য পরিধান করা যদি তা সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ লাল হয় তবে তা হারাম বা মাকরূহ তাহরীমী। আর যদি হালকা বা কম লাল হয় তবে মাকরূহ তানযীহী। এ ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের মূল দলীল হচ্ছে ছহীহ আবূ দাঊদ শরীফ ও ছহীহ তিরমিযী শরীফেবর্ণিত হযরত আব্দুল্লাহ  বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  থেকে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফঃ
(১-৪)
عن عبد الله بن عمرو رضى الله عنه قا ل مر رجل وعلبه شو بان ا حمر ان فسلم على النبى صلى الله عليه وسلم فلم يرد عليه النبى صلى الله عليه وسلم السلام. هذا حد يث حسن. غر يب من هذا الوجه.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লাল বর্ণের দুটি কাপড় (ইযার ও চাদর) পরিহিত এক ব্যক্তি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে সালাম দিল। কিন্তু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের জাওয়াব দেননি। হযরত আবূ ঈসা তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদীছ শরীফখানা হাসান এবং উপরোক্ত সনদে গরীব।” (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, নাইলুল আওতার)
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মুসলিম শরীফের শরাহ ফতহুল্ মুলহিম লিত্তক্বী উছমানী৪র্থ জিঃ ৫৫৩, ৫৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(৫-৮)
والشهور عند الحنفية انهم يكر هون لبس الا حمر الخا لص للر جال. وذلك لما اخر جه ابوداؤد  والترمذى وحسنه.
অর্থঃ- মাশহুর মতে, হানাফীগণের নিকট পুরুষদের জন্য পূর্ণ লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী বা হারাম। যেমনটি হাসান সনদে আবূ দাঊদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফেবর্ণিত আছে।” (অনুরূপ আউনুল মাবুদ কিতাবেও বর্ণিত আছে)
(৯-১২)
قال الشو ك نى فى النيل: .............. وذهبت الحنفية الى الكرا هة واحتجو: بحد يث عبد الله بن عمرو قال مر با لنبى صلى الله عليه وسلم ر جل و عليه ثو بان احمر ان فسلم عليه فلم يرد عليه اخر جه التر مذى وابوداؤد.
অর্থঃ-  শাওকানী তাঁর নাইলুল্ আওতারকিতাবে বলেছেন, .......... হানাফী মাযহাবে পুরুষদের জন্য লাল পোশাক পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী বা হারাম। তাঁরা দলীল পেশ করে থাকেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফকে। তিনি বলেছেন, একদা এক ব্যক্তি দুটি লাল কাপড় পরিহিত অবস্থায় হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে সালাম দেয়, কিন্তু তিনি তার সালামের জাওয়াব দেননি। হাদীছ শরীফখানা তিরমিযী শরীফ ও আবূ দাঊদ শরীফে বর্ণিত আছে।
আবূ দাঊদ শরীফ’-এর ২য় জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
(১৩-১৪)

وقال على القارى فى المر قاة فهذا اى قو له صلى الله عليه وسلم فلم يرد خليه دليل صريح عنى تحر يم لبس لبس الشوب الاحمر للر جال
অর্থঃ- হযরত আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখা মিশকাত শরীফের শরাহ মিরক্বাত শরীফেবলেছেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীঃ তিনি লাল পোশাক পরিহিত ব্যক্তির সালামের জাওয়াব দেননি।এই হাদীছ শরীফখানা পুরুষদের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা হারাম হওয়ার স্পষ্ট নির্ভরযোগ্য দলীল।
 ‘আশয়াতুল্ লুময়াত৩য় জিঃ ৫৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(১৫)
ومختار در مذھت حتی کر اھت تحر بمی سن رماز گزاردن بان مکرره ردررنگ سرخ لز غیر معصفر نیز خلاف ست و شیخ قلسہ حننی کہ:عا فر علماے  منا خرین مصر واستاد قسطلا نی من محقیق نمر ده وفنوی داده کہ حر مت ازبهت ون سن نہ صبغ پں هر سر خ حر ام ومکر وه با شد
অর্থঃ- হানাফী মাযহাবের মুখতার তথা গ্রহণযোগ্য মতে, লাল কাপড় পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। নামাযেও পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। লাল রং উছফুর মিশানোর শর্ত ছাড়াই হারাম। এটা তাহক্বীক্ব করে ফয়সালা দিয়েছেন আল্লামা শাইখ ক্বাসিম হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি উলামায়ে মুতায়াখ্খিরীনগণের মধ্যে মিশর এলাকার একজন উচ্চ দরজার আলিম ছিলেন এবং হযরত কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উস্তায ছিলেন। তিনি তাহক্বীক্ব করে ফতওয়া দিয়েছেন যে, লাল কাপড় পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ, তা লাল রংয়ের কারণেই উছফুর মিশানোর কারণে নয়। সুতরাং প্রত্যেক লাল রংই হারাম ও মাকরুহ তাহরীমীর অন্তর্ভূক্ত।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হানাফীগণ পুরুষের জন্য লাল রংয়ের কাপড় হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত  ثوبان احمران  হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং ফতওয়া দিয়েছেন যে, হানাফী মাযহাবের মুখতার বা গ্রহণযোগ্য  ও ফতওয়া গ্রাহ্য মতে পুরুষের জন্য সর্বপ্রকার লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করা হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী।
তবে হ্যাঁ শাফিয়ী মাযহাবে লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করা জায়িয। শাফিয়ীগণ এক্ষেত্রে বুখারী শরীফেবর্ণিত  حلة حمراء  সম্পর্কিত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
(১৬-২২)
حد ثنا ابو الو ليد قال حدثنا شنا شعبة عن ابى اسحا ق سمع البراء رضى الله عنه يقول كان النبى صلى الله عليه وسلم مر بو عا وقد رايته فى حلة حمر اء ما رايت شيئا احسن منه. (بخارى شري يف كتاب اللباس با ب الثوب الا حمر المجلد الثا نى ص ০৭৮০ مسلم شر يف كتاب الفضائل با ب فى صفة النبى صلى الله عليه وسلم وانه كان احسن الناس وجها الجلد الثا نى ص ৮৫২০  تر مذى شر يف ابو اب اللباس باب ما جاء فى الر خصة فى الثوب الا حمر للر جال الجند الاول ص ২০৫، نسا ئى شر يف كتا ب الزينة باب الحلل الجلد الثا نى ص ৩৯৭ ، مسند احمد بن حنبل، شما ئل التر مذى باب ما جاء فى لباس رسول الله صلى الله عنيه وسلم صء. ابوداؤد شريف كتاب اللباس باب فى الرخصة الجلد الثا نى ص৮০২)
অর্থঃ- হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আবুল ওয়ালীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত শুবা রহমতুল্লাহি আলাইহি  হযরত আবূ ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  থেকে শুনেছেন। হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  বলেন। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বেশী লম্বাও ছিলেন না আবার বেশী খাটোও ছিলেন না) মধ্যম আকৃতির ছিলেন। আমি তাঁকে এক জোড়া আহ্মাররং-এর পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। তাঁর চেয়ে অধিক সুন্দর আর কিছুই আমি দেখেনিট্টঞ্জ(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, শামায়িলুত তিরমিযী ও আবূ দাউদ)
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায়  বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৮৭০ পৃষ্ঠায় ১নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
(২৩)
الثوب الا حمر- اختلف فى لبس الثياب المصبو غة احمر بالعصفر او غيره فا با حها جما عة من الصحا بة والتا بعين وبه قال لشا فعى
অর্থঃ- উছফুর বা অন্য রং দ্বারা রঞ্জিত লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লািহ আলাইহি-এর মতে ছাহাবী ও তাবিয়ীনদের এক জামায়াত তা মুবাহ বলেন।
 ‘ফতহুল্ মুলহিম লিত্তক্বী উছমানী৪র্থ জিঃ ৫৫৩, ৫৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(২৪-২৫)
وقد استدل به من ذهب الى جواز لبس الا حمر  للر جال وهو قول الشا فعية والما لكية.
==================

অর্থঃ-  حلة حمراء হাদীছ শরীফ দ্বারা দলীল দেয়া হয় যে, পুরুষদের জন্য লাল পোশাক জায়িয। এটা শাফিয়ী ও মালিকী মাযহাবের অভিমত। ... ... (অনুরূপ আউনুল মাবুদ কিতাবেও বর্ণিত আছে)
(২৬-২৭)

قال الشو كا نى فى النيل: قد احتج بهذه الا حاد يث من قال بجواز لبس الاحمر وهم الشا فعية والما لكية وغيرهم.

অর্থঃ-  শাওকানী তাঁর নাইলুল্ আওতারকিতাবে বলেছেন, যারা পুরুষদের জন্য লাল পোশাক জায়িয বলেন, তাঁরা হচ্ছেন শাফিয়ী, মালিকী ও অন্যান্যগণ।  حلة حمراء  সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ তাঁদেরই দলীল ... ... ... ।
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, শাফিয়ী মাযহাবে উছফুর সহ সর্বপ্রকার লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা জায়িয। আর এক্ষেত্রে তাদের দলীল হলো حلة حمراء সম্পর্কিত হাদীছ শরীফখানা। একথা তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবেও তার কথিত ফতওয়ায় নিজেই স্বীকার করেছে।
যেমন সে তার কথিত ফতওয়ার ১১ পৃষ্ঠায় বজলুল মাজহুদেরবরাতে লিখেছে,
قال القا ضى عيا ض ولهذا حجة لماذهب اليه الشا فعى وفيره ان لبس الثوب الا حمر اذا لم يكن حر ير لاكر هة فيه
অর্থঃ হযরত ক্বাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেনحلة حمراء  সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ খানা একথার দলীল যে, লাল রংয়ের কাপড় যদি তা রেশমী না হয় তবে তা মাকরূহ নয় বরং জায়িয। শাফিয়ী ও অন্যান্যগণ এমতই গ্রহণ করেছেন।
আর সে তার কথিত ফতওয়ার ১৩ পৃষ্ঠায় শরহুল মুহাযযাবেরবরাতে লিখেছে,
يجوز لبس الثوب الا بيض والا حمر والا صفر والا خضروالمخطط و غير ها من الالو ان الثيا ب ولاخلاف فى هذاولا كراهة فى شئ منه قاله الشا فعى والاصحاب.
অর্থাৎ- সাদা, লাল, হলুদ, সবুজ ও রেখা বিশিষ্ট এবং অন্যান্য যে কোন রংয়ের পোশাক পরিধান করা জায়িয। এতে কোন দ্বিমত নেই। কোন রংয়ের কাপড়ই মাকরূহ নয়। ইমাম শাফিয়ী ও তার মাযহাবের ইমামগণ তা বলেছেন।” (শরহুল মুহাযযাব ৪ জিঃ ৪৫২ পৃষ্ঠা)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, খোদ তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব নিজেই স্বীকার ও প্রমাণ করেছে যে, শাফিয়ী মাযহাবে সর্বপ্রকার লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা জায়িয।
আর এক্ষেত্রে তারা  حلة حمراء  সম্পর্কিত হাদীছ শরীফকেই দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
স্মর্তব্য যে, শাফিয়ীগণ যেহেতু লাল রং জায়িযের পক্ষে তাই তাদের কেউ কেউ লাল রং নিষিদ্ধ সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ সমূহকে জঈফ বলে মত পেশ করেছেন। কিন্তু হানাফীদের মতে লাল রং নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কিত হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণিত হাদীছ শরীফ খানা অবশ্যই ছহীহ। আর ছহীহ বলেই তারা উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা লাল রং হারাম হওয়া সম্পর্কিত আহকাম ছাবেত করেছেন। কেননা, একথা সকলেরই জানা যে, জঈফ হাদীছ শরীফ দ্বারা কখনোই হুকুম ছাবেত হয় না বা হালাল-হারাম প্রমাণিত হয়না।
পক্ষান্তরে হানাফীগণ যেহেতু লাল রং নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষে তাই হানাফীগণ  حلة حمراء  সম্পর্কিত হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফকে তাবীলী অর্থে গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ ব্যাখ্যা সাপেক্ষে গ্রহণ করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে  বুখারী শরীফ১ম জিঃ ৫৪ পৃষ্ঠার ১০নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
(২৮-২৯)
قال فى الفتح يشير ذلكى الى الجواز. والخلاف فى ذلكى مع الحنفية فا نهم قا لوا يكره و تاو لوا حد يث الباب.
অর্থঃ হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ফতহুল্ বারীকিতাবে লিখেন, এই হাদীছ শরীফ ইঙ্গিত করে লাল পোশাক জায়িযের ব্যাপারে (এটা শাফিয়ী মাযহাবের মত)। এতে হানাফীগণের বিপরীত মত রয়েছে। তাঁরা বলেন, লাল পোশাক পুরুষদের জন্য মাকরূহ তাহরীমী। হানাফীগণ অত্র বাবের  حلة حمرء  হাদীছ শরীফখানার ব্যাখ্যামূলক অর্থ করেন।অর্থাৎ  حلة حمراء   অর্থ হল গন্ধম বা সোনালী রংয়ের একজোড়া পোশাক।
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বুখারী শরীফের শরাহ ফতহুল বারী১ম জিঃ ৪৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(৩০-৩২)
يشير الى الجواز، والخلاف فى ذلك مع الحنفية فا نهم قالوا يكره وتاو لوا حد يث البا ب با نهم كا نت حلة من بر ود فيها خطو ط حمر، ومن ادلتهم ما ا خر جه ابوداؤد من حد يث عبد الله بن عمرو قال مر با لنبى صلى الله عليه وسلم رخل و عليه ثو بان احمر ان فسلم عليه فلم يرد عليه.
অর্থঃ- এই হাদীছ শরীফ লাল পোশাক জায়িযের ব্যাপারে ইঙ্গিত করে (ইহা শাফিয়ী মাযহাবের মত) এতে হানাফীগণের বিপরীত মত রয়েছে, কেননা তাঁরা বলেন, লাল পোশাক পুরুষদের জন্য মাকরূহ তাহরীমী। তাঁরা অত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা করেন যেحلةহুল্লাহএমন পোশাক যাতে গন্ধম বা সোনালী রংয়ের রেখা থাকে।
তাঁদের (হানাফীগণের) দলীল হচ্ছে; যা হযরত ইমাম আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু-এর হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একদা দুটি লাল পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে সালাম দেয় কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের জাওয়াব দেননি। (অনুরূপ উমদাতুল ক্বারী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী কিতাবে বর্ণিত রয়েছে।)
মিশকাত শরীফের শরাহ মিরকাত শরীফ৮ম জিঃ ২৪৩ পৃষ্ঠায় হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন,
(৩৩-৩৪)

قلت: هو مؤول عند ابى حنيفق واصحا به با نها منسو جة بخطوط حمر كما هو شان البرود اليما نية.
অর্থঃ- আমি বলিঃ ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর অনুসারীগণের মতে,   حلة حمراء   সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ খানা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কেননা তা সোনালী গন্ধম রংয়ের রেখা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এটাই ইয়ামানী পোশাকের বিশেষ বৈশিষ্ট।
وحملوا الا حاد يث ا لتى تدل على لبس النبى صلى الله عليه وسلم الثوب الا حمر على انه كان مخططا بخطوط حمر، ولم يكن احمر بحتا.
অর্থঃ- যে সকল হাদীছ শরীফ দ্বারা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক الثوب الاحمر   পরিধানের বিষয়টি প্রমাণীত হয়, ইহা দ্বারা গন্ধম বা সোনালী রংয়ের রেখা বিশিষ্ট পোশাক উদ্দেশ্য। এর দ্বারা খাঁটি লালকে বুঝানো হয়নি। (অনুরূপ ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী কিতাবেও বর্ণিত আছে)
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় তিরমিযী শরীফের শরাহ তুহফাতুল আহওয়াযী’  ৫ম জিঃ ৩৯০, ৩৯১, ৩৯২, ৩৯৩, ৩৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(৩৫)
قال ابن همام: الحلةالحمراء عبارة ثوبين من اليمن فيها خطوط حمر وخضر لاانه احمر بحت.
অর্থঃ- হযরত ইমাম ইবনু হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেনحلة حمراء  বলে ইয়ামানী দুটি (ইযার ও চাদর) কাপড়কে বুঝানো হয়েছে, যাতে গন্ধম রং ও সবুজ রংয়ের ডোরাকাটা থাকে। যা খাঁটি লাল নয়।           
অর্থাৎ হানাফীদের মতে যেহেতু লাল রং ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তাই হানাফীদের মতে  حلة حمراء  অর্থ লাল জোড়া নয়। বরং  حلة حمراء  এর অর্থ হচ্ছে সোনালী বা গন্ধম রংয়ের এক জোড়া পোশাক। অথবা সোনালী বা গন্ধম, সবুজ ও কালো রেখাযুক্ত একজোড়া পোশাক। উপরে বর্ণিত ইবারত সমূহের মর্ম বা অর্থ মুলতঃ এটাই। কেননা  احمر  শব্দটি সোনালী ও গন্ধমসহ আরো অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর সোনালী ও গন্ধম রংয়ের পোশাক জায়িয হওয়ার ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। احمر আহমার সহ লাল রং সম্পর্কিত শব্দগুলোর লুগাতী বা আভিধানিক তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ তুলে ধরলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।
লাল রং সম্পর্কিত আরবী শব্দগুলোর লুগাতী বা আভিধানিক তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ
 احمر  ‘আহমার’’ শব্দের তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ:
 احمر  ‘আহমারএর স্ত্রীলিঙ্গ  حمراء  ‘হামরাউ’,  حميراء  ‘হুমাইরাশব্দটি হামরাউশব্দের তাছগীর। احمر  ‘আহমার’  حمراء  ‘হামরাশব্দ দুটি লাল, গন্ধম, সাদা, ফর্সা, জাফরানী, সোনালী, রক্ত, গোশ্ত ইত্যাদি রংয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
(১) বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য লুগাতের কিতাব আল মুজামুল্ ওয়াজীয”-এর ১৭০ ও ১৭১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
(৩৬)
(حمر) الشئ: صبغه بالحمرة.و- اللهم: قلاه با لسمن ونحوه حتى احمر.
অর্থঃ- “(সে লাল রং করলো) জিনিসটিকে: এটা লাল রং দ্বারা রঞ্জিত করলো। সে গোশ্ত পাক করলো: সে ঘি দিয়ে কড়াইতে গোশ্ত ভুনা করলো, এমনকি এটা লাল রং ধারণ করলো।
(৩৭)
(الاحمر) من الا شياء: مالو نه الحمرة: حمر. واحامر
অর্থঃ- “(আল আহমার) কোন জিনিসের: যা লাল গন্ধম, ফর্সা বা সাদা রং। الحمرةআল হুমরাহশব্দের বহুবচন  حمرহুমরুনএবং  احامرআহামিরুবলা হয়।
(৩৮)
(الاحمران): الذ هب والز عفران.
অর্থঃ- “(দুটি আহমার) হলো: একটি স্বর্ণ এবং অপরটি জাফরান। অর্থাৎ সোনালী রং এবং জাফরানী রং।
(৩৯)
(الحمر): نوع من العص فير
অর্থঃ- “(আল হুমমারু) হলো: উছফুর তথা কুসূম রংয়ের বা চড়ূই পাখির একটি প্রকার।
(৪০)
(الحميراء) وصف للسيدة عا ئشة ورد فى قول الر سول صلى الله عليه وسلم خذوا نصف دينكم عن هذه الحميراء.
অর্থঃ- “(আল হুমাইরা) হচ্ছে: সাইয়্যিদাতুনা হরযত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ছিফাত বা লক্বব মুবারক। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা (আমার পর) অর্ধেক দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করবে এই হুমাইরা তথা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে।” (যেহেতু তিনি গন্ধম রংয়ের সুদর্শনা ফর্সা ছিলেন, তাই তাঁকে حميراءহুমাইরাবলা হয়েছে।)
(৪১)
(الحمر): التمر الهندى. و.: نوع من العصا فير.
অর্থঃ- “(আল হুমারু) হচ্ছে: হিন্দুস্থান বা ভারতবর্ষের খেজুর। এবং (আল হুমারু) হচ্ছে: উছফুর তথা কুসূম রং বা চড়ূই পাখির একটি প্রকার।
(৪২)
(الحمراء): شدة الظهيرة-: السنة الشد يدة. (ج) حمر.
অর্থঃ- “(আল হামরা) হচ্ছে: দুপূরের রোদ। (আল হামরা) হচ্ছে: তীব্র গরমকাল বা বছর।   الحمراء  ‘আল হামরাউ’-এর  বহুবচন  حمر  ‘হুমরুন।
উল্লিখিত ইবারতগুলো থেকে প্রমাণিত হলোاحمر  ‘আহমারঅর্থ লাল, গন্ধম, সাদা, ফর্সা, স্বর্ণ, জাফরানী, কুসূম, চড়ূই পাখি, রোদ, হিন্দুস্থান তথা ভারতবর্ষের খেজুরের রং ইত্যাদি।
(২) সাঈদুল খাওরী আশ্ শারতূনী আল বানানী-এর লিখিত আফরাতুল্ মাওয়ারিদ ফী ফুছাহিল্ আরাবিয়্যাহ ওয়াশ্ শাওয়ারিদনামক বিশ্ববিখ্যাত আরবী অভিধানের ১ম জি: ২২৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে,
(৪৩)
(الحمراء): مو نث الا حمر. والسنة الشد يدة.د- شدة الحر. و- اسم غر نا طة بالا ند لس ومنه ر عى الله با لحمراء عيشا قطعته، واسم فاس الجد يدة (وطاة حمراء) اى جد يدة
অর্থঃ- “( الحمراء  ‘আল হামরাউফর্সা) শব্দটি  احمرআহমারুশব্দের স্ত্রীবাচক শব্দ। (আল হামরাউ) অর্থঃ গরমকাল বা বছর। (আল হামরাউ) অর্থ: অত্যাধিক গরম বা রোদ। (আল হামরাউ) হচ্ছে: আন্দালুস্ তথা মুসলিম স্পেন-এর গ্রানাডা  নামক একটি নগরীর নাম। যেমন, বর্ণিত আছে, “আল্লাহ পাক আন্দালুস তথা মুসলিম স্পেনের গ্রানাডা নগরীকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর বসবাসের জন্য হিফাযত করেছেন।” (আল হামরাউ) হচ্ছে: ফাস তথা মরক্কোর একটি নতুন নগরী। (হামরাউ- পদক্ষেপ) অর্থাৎ নতুন পদক্ষেপ।
(৪৪)
(الحمير والحميرة) سير ابيض مقشور ظاهره نؤ كد به السروج يسمى الا شكز ايضا.
অর্থঃ- “(আল হামীরু ওয়াল হামীরাতু) হচ্ছে: সাদা রংয়ের চামড়ার ফিতা। যা দ্বারা ঘোড়ার পিঠের জিন বাঁধা হয়। যাকে উশকুযও বলা হয়।
(৪৫)
(الحو مر) التمر الهندى
অর্থঃ- “(আল হাউমারু) হিন্দুস্থান তথা ভারতবর্ষের খেজুরকে বলা হয়।
(৪৬)
(الاحمر) ما لو نه الحمرةج احا مر... و-الا بيض اللون منه الحد يث "بعثت الى الا حمر والاسود" ........ قيل اراد بلاا حمر الا بيض مطلقا لان العرب تقول امراة حمير اة حميراء اى بيضاء. ومنه الحد يث قال على لعا ئشة ايا ك ان تلو نيها يا حميراء اى يا بيضاء (والاحمر) ايضا: الذ هب والز عفر ان واللحم  والخمر.
অর্থঃ- “(আল আহমারু) হচ্ছে: যার রং গন্ধম বা সাদা। احمرআহমারুএর বহুবচন احامرআহামিরু। ... (আল আহ্মারু) হচ্ছে: সাদা রং। যেমন, হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি আহমার এবং আসওয়াদের কাছে হিদায়েতের জন্য প্রেরিত হয়েছি।”  কেউ কেউ বলেন, ..... সাধারণত আহমার দ্বারা  আবইয়াদবা গন্ধম ও সাদা রংকেই উদ্দেশ্য করা হয়। কেননা, আরবগণ গন্ধম ও সাদা বর্ণের সুদর্শনা মহিলাকে বলে  امراة حمراء  অর্থাৎ গন্ধম বা সাদা বর্ণের মহিলা। হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, “খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বলেছেন, বিশেষভাবে আপনি উত্তম রংয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত হে হযরত হুমাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।অর্থাৎ হে সাদা বা গন্ধম রংয়ের অধিকারীনী। (আল আহমার) বলতে আরো বুঝায়: স্বর্ণ, জাফরান, গোশ্ত ও খামর বা মদ-এর রংকে।
উপরোক্ত ইবারতগুলো থেকে অকাট্টভাবে প্রমাণিত হলো: احمرআহমারঅর্থ লাল, সাদা, ফর্সা, গন্ধম, স্বর্ণ, জাফরান, খেজুর, রোদ, গোশ্ত ও মদের রং ইত্যাদি।  অর্থাৎ  احمر শব্দটি যেমন লাল অর্থে ব্যবহৃত হয় তেমনিভাবে সাদা, ফর্সা, সোনালী ও গন্ধম অর্থেও ব্যবহৃত হয়।     (চলবে)

0 Comments: