“হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” শুরু করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ খালিছ হক্ব মত-পথ তালাশ করা বা ছহীহ ও সুন্নতী আমলের মাধ্যমে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেজামন্দি বা সন্তুষ্টি হাছিল করা। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের ছহীহ আক্বীদা লাভ ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
প্রসঙ্গতঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।
স্মর্তব্য যে, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা মায়িদা’র’ ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عد اوذ لنذ ين امنوا اليهود والذين اشر كوا.
অর্থঃ-“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।”
বিশেষতঃ বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- উলামায়ে ‘ছু’। উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট বাতিল মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে।
যেমন, তারা প্রচার করছে- ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদয়াত ও হারাম, নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা শিরক, কদমবুছী করা নাজায়িয ও শিরক, মাযহাব মানার কোন প্রয়োজন নেই, পীর-মুরীদী শরীয়ত বিরোধী প্রথা, ঈদে মীলাদুন্ নবী পালন করা বিদ্য়াত, মীলাদ ক্বিয়াম করা র্শিক-বিদ্য়াত। শবে বরাত পালন করা বিদ্য়াত। তারাবীহ নামায জরুরী কোন নামায নয়, আট রাকায়াত তারাবীহ পড়লেই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাঊযুবিল্লাহ)
অথচ উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা শরীয়তসম্মত এবং তন্মধ্যে কোনটা সুন্নত আবার কোনটা ফরয।
পক্ষান্তরে উলামায়ে ‘ছূ’ তথা দুনিয়াদার মাওলানারা ইসলামের নামে ছবি, টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, নোবেল, হরতাল, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা, ভোট দেয়া, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, মহিলাদের জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া, মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত ও মুখ খোলা রাখা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র ও ভোট-নির্বাচন করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবী করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি নাজায়িয কাজগুলোকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ) অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে সরিয়ে, ইবাদত থেকে সরিয়ে অনৈসলামিক ও হারাম কাজে মশগুল করে দিয়ে বেঈমান করে দেয়া।
উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট, বাতিল মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা উল্লিখিত বিষয়গুলোর ন্যায় ‘লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল’ সম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
তারা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, ‘পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান বা ব্যবহার করা জায়িয।’ (নাউযুবিল্লাহ)
অথচ অসংখ্য, নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীলের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হানাফী মাযহাবের মুখতার বা গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম তথা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ সম্পূর্ণটা লাল হলে হারাম, অধিকাংশ লাল হলে মাকরূহ তাহরীমী ও কম লাল হলে মাকরূহ তানযীহী। আর যেহেতু হানাফী মাযহাব মতে লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা পুরুষের জন্য হারাম। তাই এখন যারা তা পরিধান করবে তারা দায়িমীভাবেই হারাম কাজে লিপ্ত থাকবে। অর্থাৎ তারা হারাম কাজ করার গুণাহে গুণাহ্গার হবে। সাথে সাথে ‘সাদা রংয়ের রুমাল ব্যবহার করা খাছ সুন্নত” এ মহান সুন্নতের আমল থেকে সম্পূর্ণ মাহরূম হয়ে যাবে। অথচ সুন্নতের ইত্তিবাই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র মাধ্যম।
অতএব, যারা লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল সম্পর্কে ভুল, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর ফতওয়া দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আমল ধ্বংস করছে তাদের সেই ঈমান-আমল বিধ্বংসী ফতওয়া থেকে সাধারন মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাজতের লক্ষে ও লাল রুমাল সম্পর্কিত সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়া হলো। যাতে করে লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল সম্পর্কিত সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা অবগত হয়ে সে অনুযায়ী আমল করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। সাথে সাথে যারা লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছে তারা বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে হক্বের উপর দায়িম-ক্বায়িম থাকতে পারে।
হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক নিষিদ্ধ হওয়ার প্রমাণ ও সিলেট খারিজী মাদ্রাসার ‘তথাকথিত মুফতী!’ ছাহেবের মনগড়া বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
“আমাদের হানাফী মাযহাব মতে, পুরুষের জন্য সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ লাল রংয়ের রুমাল বা কাপড় পরিধান করা হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী, আর লালের ভাগ কম হলে মাকরূহ তানযীহী”- বাতিলের আতঙ্ক, যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর এ ফতওয়াই ছহীহ, গ্রহণযোগ্য, দলীলভিত্তিক ও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত।
বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত থেকে সংকলিত ফতওয়াটিই ছহীহ যা গ্রহণযোগ্য, দলীলভিত্তিক। অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত। কারণ উক্ত ফতওয়ায় নিজস্ব কোন মত পেশ করা হয়নি। বরং মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর বক্তব্যই হুবহু সংকলন করা হয়েছে মাত্র।
পক্ষান্তরে সিলেট কাসেমুল উলূম খারিজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) ‘লাল রং’ সম্পর্কিত উক্ত ফতওয়াটি খণ্ডন করতে গিয়ে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও জিহালতপূর্ণ হয়েছে।
কথিত মুফতী ছাহেব ক্ষেত্র বিশেষে নিজের মনগড়া মতকে ছাবেত করার লক্ষ্যে কোন কোন হাদীছ শরীফ ও কিতাবের ইবারতের মনগড়া ও ভুল তরজমা ও ব্যাখ্যা দিয়েছে। অর্থাৎ তথাকথিত উক্ত মুফতী ছাহেব তার উক্ত ফতওয়ার মাধ্যমে ধোকা ও প্রতারণার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মূলত: তথাকথিত উক্ত খারিজী মুফতী (!) ছাহেব লাল রং সম্পর্কিত আরবী শব্দের সঠিক অর্থ ও তাহক্বীক্ব সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারণে এবং হাদীছ শরীফ ও কিতাবের ইবারতসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা ও মর্ম অনুধাবনে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই লাল রং সম্পর্কে এরূপ অশুদ্ধ ও বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রদান করেছে এবং আল বাইয়্যিনাতে প্রদত্ত লাল রং সম্পর্কিত ছহীহ ও দলীলভিত্তিক ফতওয়াটি হৃদয়ঙ্গম করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের ১০ম বক্তব্য
সিলেট খারেজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব ইবনে হাজার আসক্বালানী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “ফতহুল বারী” থেকে একখানা ইবারত উল্লেখ করে লিখেছে যে, অনেক ছাহাবী থেকেও লাল কাপড় জায়িয হওয়ার বিবরণ পাওয়া যায়।”
“তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের
১০ম বক্তব্যের খণ্ডন মুলক জবাব”
তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব “ফতহুল বারী” থেকে উক্ত ইবারত তার বক্তব্যের স্বপক্ষ্যে দলীল হিসেবে পেশ করে চরম প্রতারণা করেছে ও জিহালতীর পরিচয় দিয়েছে। কারণ-
প্রথমতঃ শরীয়তের অনেক বিষয়েই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে ইখতিলাফ বা মতভেদ হয়েছে। আর এ মতভেদের কারণেই একাধিক মাযহাব হয়েছে। অর্থাৎ একেক মাযহাবের ইমামগণ একেক ছাহাবীর বর্ণনা বা মতকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কাজেই কোন বিষয়ে কোন কোন ছাহাবীর মত পাওয়ার অর্থ এই নয় যে, এটা সকল ছাহাবীর মত। বরং অন্যান্য ছাহাবী থেকে এর বিপরীত মতও থাকতে পারে। অনুরূপ কোন কোন ছাহাবী থেকে লাল কাপড় জায়িয হবার বিবরণ পাওয়া গেলেও অনেক ছাহাবী থেকে নাজায়িয হওয়ার প্রমাণও রয়েছে। আর তা তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের উদ্ধৃত ‘ফতহুল বারীর’ ইবারত দ্বারাই প্রমাণিত হয়। যেমন উল্লেখ আছে,
[৩৪১]
الجواز (جواز الا حمر) مطلقا جاء عن طلحة وعلى وعبد الله بن جعفر والبراء وغير واحد من الصحا بة.
অর্থাৎ হযরত তালহা, আলী, আব্দুল্লাহ বিন জা’ফর ও বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমসহ একাধিক ছাহাবী থেকে ‘আহমার’ রং জায়িয হওয়ার অভিমত পাওয়া যায়। (ফতহুল বারী ১০/৩৭৬)
উক্ত ইবারতের কোথাও একথা উল্লেখ নেই যে, সকল ছাহাবী লাল কাপড় জায়িয হওয়ার পক্ষে বরং কিছু সংখ্যক ছাহাবীর কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বুঝা গেল যে, অনেক ছাহাবীই লাল কাপড় জায়িয হওয়ার পক্ষে নন বরং নাজায়িয হওয়ার পক্ষে।
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৮৭০ পৃষ্ঠায় ১নং টিকায় উল্লেখ আছে,
[৩৪২-৩৪৩]
الثوب الاحمر اختلف فى لبس الثياب المصبو غة احمر بالعصفر او غيره فا با حها جماعة من الصحابه والتالعين وبه قال الشافعى منعهما اخرون مطلقا قال الببيهفى والصواب تحريم المعصفر عليه للاحاديث الصحيحة التى لوبلغت الشا فعى لقال بها وقد اوصا الناس العمل بالحديث الصحيح ذكرذالك فى الروضة.
অর্থঃ- “উছফুর বা অন্য রং দ্বারা রঞ্জিত লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লািহ আলাইহি-এর মতে ছাহাবী ও তাবিয়ীনদের এক জামায়াত তা মুবাহ বলেন। ছাহাবী ও তাবিয়ীনদের অপর জামায়াত مطلقا বা আমভাবে সর্বপ্রকার লাল কাপড় নিষিদ্ধ হওয়ার মত পেশ করেন। হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সঠিক ও বিশুদ্ধ মত হচ্ছে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা উছফুর দ্বারা রঞ্জিত লাল কাপড় হারাম প্রমাণিত হয়। ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট যদি এ বর্ণনাগুলো পৌঁছতো তবে তিনিও তা হারাম ফতওয়া দিতেন। যেহেতু তিনি আমাদেরকে ছহীহ হাদীছ শরীফের উপর আমল করার ব্যাপারে ওছীয়ত করেছেন। অনুরূপ ‘রওযা’ কিতাবেও উল্লেখ আছে।
সুতরাং নাজায়িযের মতটি উল্লেখ না করে শুধু মাত্র জায়িযের মতটি উল্লেখ করা প্রতারণা নয় কি?
দ্বিতীয়তঃ “ফতহুল বারীর” উক্ত মতটি হচ্ছে, শাফিয়ী মাযহাবের মত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি যেহেতু শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী তাই তিনি শাফিয়ী মাযহাবের অনুসরণে উক্ত মতটি উল্লেখ করেছেন। শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি "حلة حمراء" হাদীছ শরীফের সরাসরী অর্থ গ্রহণ করে লাল কাপড়কে জায়িয বলে মত পেশ করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে ‘তিরমিযী শরীফের’ ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘তুহফাতূল আহওয়াযী’ ৫ম খণ্ডে উল্লেখ আছে,
[৩৪৪-৩৪৫]
قال الشو كانى فى النيل قد احتج بهذا الاحديث من قال بجواز لبس الا حمر وهم الشافعة والما لكية. وغير هم. ......ـ
অর্থঃ “শাওকানী তার ‘নাইলুল আওতারে’ লিখেছে, যারা লাল কাপড় জায়িয হওয়ার ব্যাপারে "حلة حمراء" সম্পর্কিত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন তাঁরা হচ্ছেন হযরত ইমাম শাফিয়ী ও ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণ।”
অর্থাৎ লাল কাপড় জায়িয এ মতটি মুলতঃ শাফেয়ী মাযহাবের মত হানাফী মাযহাবের মত নয়। কেননা উক্ত কিতাবের উক্ত স্থানেই অতঃপর উল্লেখ আছে,
[৩৪৬]
وذهيت الحنفية الى الكراهة واحتجوا بحديث عبد لله بن عمرو........ـ
অর্থঃ হানাফী মাযহাব মতে লাল কাপড় মাকরূহ তাহরীমী বা নিষিদ্ধ। আর এ ব্যাপারে হানাফীদের দলীল হলো হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত ثوبان احمران" সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ খানা। ... ...”
অতএব, সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ‘ফতহুল বারীতে’ উল্লেখিত মতটি মুলতঃ শাফিয়ী মাযহাবেরই মত। হানাফী মাযহাবের মত নয়। সুতরাং তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব শাফিয়ী মাযহাবের মতকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে চরম প্রতারণা ও জিহালতীর পরিচয় দিয়েছে।
তৃতীয়তঃ ‘ফতহুল বারী’র উক্ত মতটি যেহেতু حلة حمراء হাদীছ শরীফ সম্পর্কিত আর ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তথা হানাফীগণ যেহেতু উক্ত হাদীছ শরীফকে তা’বীলী অর্থে গ্রহণ করেছেন তাই ‘ফতহুল বারী’র উক্ত ইবারত বা বক্তব্যকেও তা’বীলী অর্থে গ্রহণ করতে হবে। তাহলে হানাফীদের মতে ‘ফতহুল বারী’র উক্ত ইবারতের সঠিক অর্থ হয়। হযরত তালহা, হযরত আলী, হযরত আব্দুল্লাহ বিন জা’ফর ও হযরত বারা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমসহ একাধিক ছাহাবী থেকে احمر বা حلة حمراء তথা সোনালী বা গন্ধম রংয়ের কাপড় পরিধান করা জায়িয হওয়ার অভিমত পাওয়া যায়। কেননা আহমার শব্দের সোনালী বা গন্ধম অর্থও রয়েছে। আর সোনালী বা গন্ধম রং জায়িয হওয়ার ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই।
উল্লেখ্য, হানাফীগণ যে, "حلة حمراء" সম্পর্কিত হাদীছ শরীফকে তাবীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থে গ্রহণ করেছেন, সে সম্পর্কে তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের উদ্ধৃত ‘ফতহুল বারী’তেই উল্লেখ আছে যে,
[৩৪৭]
يشيسر الى الجواز والخلاف فى ذالك مع الحنفية فالهم قالوا يكره وناو لوا حديث البا ب بانهم كانت حلة من برود فيها خطوط حمر.
অর্থঃ- উক্ত "حلة حمراء" সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ ইঙ্গিত করে যে লাল রং জায়িয (শাফিয়ী মাযহাব মতে)। আর হানাফীগণ এর বিপরীত মত পেশ করে থাকেন। হানাফীগণ বলেন, লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। তারা অর্থাৎ হানাফীগণ "حلة حمراء" সম্পর্কিত হাদীছ শরীফকে তা’বীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থে গ্রহণ করেছেন। হানাফীদের মতে উক্ত হাদীছ শরীফের অর্থ হলো ‘হুল্লাতুল হামরা’ এমন পোষাক যা (লাল ছিলনা) সোনালী বা গন্ধম রংয়ের রেখা বিশিষ্ট ছিল। (অথবা উক্ত পোষাকটি সোনালী বা গন্ধম রংয়ের ছিল)(ফতহুল বারী ১ম জিঃ ৪৮৫ পৃষ্ঠা, অনুরূপ বুখারী শরীফের ১ম জিঃ ৫৪ পৃষ্ঠায় ১০নং টিকাতেও উল্লেখ আছে)
তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব অনেক ছাহাবী থেকে লাল কাপড় জায়িয হওয়ার বিবরণ পাওয়া যায়” একথা প্রমাণ করতে গিয়ে ‘ইলাউস্ সুনান’ থেকে যে ইবারত উল্লেখ করেছে তার জাওয়াবও মুলতঃ ফতহুল বারীর বক্তব্যের জবাবের অনুরূপ। যেমন,
قلت: ....... الا حاديث فى لبسه صلى الله عليه وسلم "الحلة الحمراء" اصح واقوى وقد ذهب الى جوازه جماعة من الصحا بة والثا بعين كما مر فا لقول بجوازه ارجح واصح كما قاله الشر نبلالى لا سيما وهو منصوص عن الا مام ايضا.
উক্ত ইবারত সম্পর্কে আমাদের প্রথম বক্তব্য হলো “উক্ত বক্তব্যখানা একান্তই জাফর আহমদ ওছমানী ছাহেবের নিজস্ব। এটা ফতওয়াগ্রাহ্য বা গ্রহণযোগ্য কোন বক্তব্য নয়। তাই উক্ত বক্তব্য দলীল হিসেবেও গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয় বক্তব্য হলো, “উক্ত মতটি মুলতঃ শাফিয়ী মাযহাবের মত।” অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে লাল কাপড় জায়িয। আর এক্ষেত্রে তাঁর দলীল হলো "حلة حمراء" সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ। এসম্পর্কে ফতহুল বারীর বক্তব্যের জবাবে উপরে দলীলভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং শাফিয়ী মাযহাবের বক্তব্য হানাফীদের জন্য মোটেও দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
তৃতীয় বক্তব্য হলো, হানাফীগণ যেহেতু "حلة حمراء" বা احمر বৈধ হওয়া সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ সমূহকে তা’বীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থে গ্রহণ করেছেন, তাই “ই’লাউস সুনানের” উক্ত বক্তব্যকে যদি দলীল হিসেবে গ্রহণ করতে হয় তবে অবশ্যই তা’বীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থে গ্রহণ করতে হবে।
অতএব, তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব উদ্ধৃত “ফতহুল বারী ও ই’লাউস্ সুনানের” উক্ত ইবারতের খণ্ডনমূলক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণীত হলো যে, লাল রং জায়িয হওয়ার ব্যাপারে উক্ত ইবারতদ্বয় মোটেও দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয় যেহেতু তা ব্যাখ্যা স্বাপেক্ষ ও হানাফী মাযহাবের মুখতার বা ফতওয়াগ্রাহ্য মতের খিলাফ। অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাবের মত। উক্ত মতকে দলীল হিসেবে পেশ করে তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব চরম জালিয়াতী, জেহালতী ও প্রতারণার পরিচয় দিয়েছে।
তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের ১১শ বক্তব্য
সিলেট খারেজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “শরহুল মুহায্যাব” শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “আশয়াতুল লুময়াত” ও ফতওয়ায়ে শামী থেকে যাহিদীর মত উল্লেখ সহ মোট তিন খানা ইবারত উল্লেখ করে প্রমাণ করার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছে যে, লাল রংয়ের পোষাক মাকরূহ নয়। বরং লাল রংয়ের কাপড় সর্বসম্মতিক্রমে মাথায় পড়াও জায়িয।”
তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের
১১শ বক্তব্যের খণ্ডনমূলক জবাব
প্রথমেই তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের উদ্ধৃত “শরহুল মুহায্যাব”-এর বক্তব্যের খণ্ডনমূলক আলোচনা করা হবে। মূলতঃ তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের জিহালতী এখানেও প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। কারণ “শরহুল মুহায্যাব”-এর লিখক আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি যেহেতু শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী তাই শাফেয়ী মাযহাবের অনুসরণে তিনি উক্ত কিতাবে লাল রং জায়িয হওয়ার বা নাজায়িয না হওয়ার মতটি উল্লেখ করেছেন।
তাছাড়া উক্ত মতটি যে, হানাফী মাযাহাবের নয় বরং শাফিয়ী মাযহাবের তা উক্ত ইবারতেই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যেমন-
[৩৪৮]
يجوز لبس الثوب الا بيض والا حمر والا صفر والاخصر والمخطط وغيرها من الالو ان الثياب ولاخلاف فى هذا ولاكراهة فى شئ منه قاله الشا فعى والاصحاب.
অর্থাৎ সাদা, লাল, হলুদ, সবুজ ও রেখা বিশিষ্ট এবং অন্যান্য যে কোন রংয়ের পোশাক পরিধান করা জায়িয। এতে কোন দ্বিমত নেই। কোন রংয়ের কাপড়ই মাকরূহ নয়। ইমাম শাফিয়ী ও তার মাযহাবের ইমামগণ তা বলেছেন। (শরহুল মুহাযযাব ৪ জিঃ ৪৫২ পৃষ্ঠা)
দেখুন! উক্ত ইবারতের শেষে একথা সুস্পষ্ট ভাবেই উল্লেখ আছে যে,
قاله الشافعى والا صحاب.
অর্থাৎ “শরহুল মুহায্যাবের” লাল রং জায়িয হওয়া সম্পর্কত মতটি ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং শাফেয়ী মাযহাবের অন্যান্য ইমামগণের মত।
তবে তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব ও তার গুরু জা’ফর আহমদ উছমানী ছাহেব জোড় করেই উক্ত মতটিকে হানাফী মাযহাবের মত বলে সাব্যস্ত করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত ইবারতও উল্লেখ করেছে। যেমন-
وروى ايضا مثله من رواية ابى حنيفة.
“শরহুল মুহায্যাবের” উক্ত ইবারতের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, উক্ত বর্ণনাটি ইমাম নববীর একান্তই নিজস্ব। হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় কোন কিতাবে এরূপ বর্ণনা উল্লেখ নেই।
দ্বিতীয়তঃ যদিও ধরে নেই যে, কিতাবে এরূপ একটি মত উল্লেখ আছে। কিন্তু এমতটি যেহেতু ফতওয়া গ্রাহ্য বা মুখতার মত নয়। তাই এ মতটি দলীল হিসেবে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা হানাফী মাযহাবের ফতওয়াগ্রাহ্য বা মুখতার মতে লাল পোষাক মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন এ প্রসঙ্গে আবূ দাঊদ শরীফের ২য় জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও হানাফী ফক্বীহ হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “আশয়াতুল লুমায়াতের” বরাতে লিখা হয়েছে,
[৩৪৯]
والمختار من المذهب ان الكراهة انما هى لاجل اللون لا لمعصفر بخصوصه كذا حققه الشيخ قاسم الحنفى احد اعاظم علماء مصر من المتاخرين معاصر السيخ ابن حخر العسقالنى.
অর্থঃ- “হানাফী মাযহাবের ‘মুখতার’ বা গ্রহণযোগ্য মত হলো, উছফুরের শর্ত ছাড়াই শুধু লাল রং হওয়ার কারণেই তা পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। এটা মিশরের মুতায়াখখিরীন আলিমগণের মধ্যে একজন অন্যতম বড় হানাফী আলিম যিনি আল্লামা ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সমসমায়িক ছিলেন সেই আল্লামা শায়খ কাসেম হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর তাহক্বীক্ব বা ফতওয়া।”
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও হানাফী ফক্বীহ আল্লামা শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মিশকাত শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘আশয়াতুল লুময়াত” এর ৩য় জিঃ ৫৪২ পৃষ্ঠায় লিখেন,
[৩৫০]
ومختاردر مذھب حنفی کراھت تحریمی ست ونماذ گز اردن باں مکروہ ودررنگ سرخ اذ غیر معصفر نیز خلاف ست وشیخ قاسم حنفی کہ از اعاظم علماء متا خرین مصر واستاد قسطلانی ست تحقیق نمودہ ونتوی دادہ کہ حرمت ازبھت لون ست نہ صبغ یس ھر سر ج حرام ومکروہ باشد.
অর্থঃ- “হানাফী মাযাহাবের মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতে, লাল কাপড় পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী এবং লাল কাপড় বা রুমাল পরিধান করে নামায পড়াও মাকরূহ তাহরীমী। উছফুর ব্যতীত লাল রংয়ের ব্যাপারেও মতভেদ রয়েছে। তবে শায়খ কাসেম হানাফী যিনি মিশরের মুতায়াখখিরীন আলিমগণের মধ্যে একজন অন্যতম বড় আলিম এবং ইমাম কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উস্তাদ তিনি তাহক্বীক্ব করে ফতওয়া দিয়েছেন যে, লাল রংয়ের কাপড় শুধু মাত্র লাল রং এর কারণেই হারাম। উছফুর মিশানোর কারণে নয়। সুতরাং প্রত্যেক প্রকার লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করাই হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী হবে।”
এবারে তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের উদ্ধৃত “আশয়াতুল লুময়াতের” বক্তব্যের আলোচনায় আসা থাক।
মুলতঃ তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব “আশয়াতুল লুময়াতের” বক্তব্য কাট-সাট করে এবং নিজের মন মত উল্লেখ করে উক্ত বক্তব্যকে নিজের পক্ষে দলীল হিসেবে দাড় করানোর একেবারই ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। অথচ “আশয়াতুল লুময়াতের” উক্ত বক্তব্যে তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের পক্ষে কোনই দলীল নেই। বরং লাল রং নাজায়িয হওয়ার পক্ষেই দলীল রয়েছে। যেমন তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের কাট-সাটকৃত ইবারতটি হলো-
دز لبس معصفر علماء را اختلاف است ..... ومختار در مذھب حنفی کراھت تحریمی ست.... دررنگ سرخ از غیر معصفر نیز خلاف است.
তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব উক্ত ইবারতের অর্থ করেছে এভাবে “উছফুর দ্বারা রঙানো কাপড়ের ক্ষেত্রে উলামাদের মত বিরোধ রয়েছে। ......... হানাফী মাযহাবের গ্রহণীয় অভিমত হলো উছফুর দ্বারা রঙানো কাপড় পরিধান করা (পুরুষদের) জন্য মাকরূহ তাহরীমী। .... অনুরূপভাবে উছফুর ছাড়া অন্য রং দ্বারা রঙানো লাল কাপড় সম্পর্কেও মতবিরোধ রয়েছে।” (আশিয়্যাতুল লুময়াত- ৩/৫৭৯)
অর্থাৎ তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব “আশয়াতুল লুময়াতের” উক্ত ইবারতকে কাটসাট করে এবং মনমত সাজিয়ে গুছিয়ে অর্থ করে এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, উছফুর দ্বারা রঙানো লাল কাপড়ই শুধু মাকরূহ। উছফুর ছাড়া রঙানো লাল কাপড় মাকরূহ নয়।”
অথচ তার উল্লিখিত কাট-সাটকৃত ইবারত দ্বারাও তা প্রমাণিত হয়না। কারণ উক্ত ইবারতের কোথাও একথা উল্লেখ নেই যে, শুধুমাত্র উছফুর দ্বারা রঙানো লাল কাপড়ই মাকরূহ। আর উছফুর ছাড়া রঙানো লাল কাপড় মাকরূহ নয়। বরং ‘আশয়াতুল লুময়াতের’ উক্ত ইবারতে উছফুর দ্বারা রঙানো ও উছফুর ছাড়া রঙানো সর্বপ্রকার লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করাকেই মাকরূহ তাহরীমী বলা হয়েছে। আশয়াতুল লুময়াতের সম্পূর্ণ ইবারতটি উল্লেখ করলে তা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হবে। সাথে সাথে তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের ইবারত কারচুপীর চেহারাটাও সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। যেমন- বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও হানাফী ফক্বীহ আল্লামা শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘আশয়াতুল লুময়াত” এর ৩য় জিঃ ৫৪২ পৃষ্ঠায় লিখেন,
[৩৫১]
ومختا. درمذھب حنفی کراھت تحریمی مت ونماز گزاردن باں مکروہ ودر زنگ سرخ ازغیر معصفر نیز خلاف ست وثیخ قاسم حنفی کہ از اعا ظم علماء متا خرین مصر وا ستاد فسطلا نی ست نحقیق نمودہ و فتوی دادہ کہ حرمت از بھت لون ست نہ صبغ پس ھر سرخ حرام ومکروہ باشد.
অর্থঃ- “হানাফী মাযহাবের মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতে. লাল কাপড় পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী এবং লাল কাপড় বা রুমাল পরিধান করে নামায পড়াও মাকরূহ তাহরীমী। উছফুর ব্যতীত লাল রংয়ের ব্যাপারেও মতভেদ রয়েছে। তবে শায়খ কাসেম হানাফী যিনি মিশরের মুতাআখখিরীন আলিমগণের মধ্যে একজন অন্যতম বড় আলিম এবং ইমাম কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উস্তাদ তিনি তাহক্বীক্ব করে ফতওয়া দিয়েছেন যে, লাল রংয়ের কাপড় শুধু মাত্র লাল রং এর কারণেই হারাম। উছফুর মিশানোর কারণে নয়। সুতরাং প্রত্যেক প্রকার লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করাই হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী হবে।”
তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব নিজের একটি বাতিল মতকে ছাবিত করতে গিয়ে অর্থাৎ লাল রুমালকে জায়িয প্রমাণ করতে গিয়ে ‘আশয়াতুল লুময়াত’-এর ইবারত নিয়ে কতবড় জালিয়াতি ও প্রতারণা করেছে তা আপনারা নিজ চোখেই অবলোকন করলেন।
মুলতঃ ‘আশয়াতুল লুময়াতের’ উক্ত বক্তব্যই তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের সমস্ত দলীল ও বক্তব্যকে রদ বা বাতিল বলে প্রতিপন্ন করে। তাই মূফতী (!) ছাহেব উক্ত ইবারতকে কাট-সাট করে নিজের পক্ষে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, “আশয়াতুল লুময়াতের” বক্তব্য হলো উছফুর দ্বারা রঙানো হোক অথবা উছফুর ছাড়া অর্থাৎ যে কোন প্রকার লাল রংই হোক না কেন তা মাকরূহ তাহরীমী বা হারামের অন্তর্ভুক্ত।
অতঃপর তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব তার জিহালতি জালিয়াতী ও প্রতারণার সবটাই উদগীরণ করেছে “ফতওয়ায়ে শামী” থেকে যাহিদীর মত উল্লেখ করে। যাহিদীর বক্তব্য হলো-
لايكره فى الراس اجماعا.
অর্থাৎ ‘আহমার রংয়ের কাপড় মাথায় ব্যবহার করা সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ নয়। (শামী/ ৩৫৮)
মূলতঃ যাহিদীর উক্ত বক্তব্যের কয়েকটি জবাব রয়েছে যা তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের জানা না থাকার কারণেই সে বিভ্রান্তিতে পড়েছে।
উক্ত বক্তব্যের প্রথম জবাব হলো- যাহিদী যদি সত্যি লাল রংয়ের ক্ষেত্রে একথা বলে থাকেন তবে তা অবশ্যই তার নিজস্ব মত বা বক্তব্য। হানাফী মাযহাবের অনুসরণীয় কোন ইমাম মুজতাহিদ বা ফক্বীহ থেকে এবং হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবেই এরূপ মত বা বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়না। বরং আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়াগ্রাহ্য ও মুখতার মতে মুতলক্বান বা সাধারণভাবেই লাল কাপড় পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী বা হারাম। চাই তা মাথায় ব্যবহার করুক বা অন্য কোথাও। সুতরাং যাহিদীর ব্যক্তিগত একটি মতকে ইজমা হিসেবে চালিয়ে দেয়া বা দলীল হিসেবে উল্লেখ করা জালিয়াতি ও জিহালতী নয় কি?
দ্বিতীয় জবাব হলো- যাহিদীর উক্ত বক্তব্যের অর্থ এটাও তো হতে পারে যে, ‘আহমার’ তথা গন্ধম বা সোনালী রংয়ের কাপড় মাথায় ব্যবহার করা সর্বসম্মতিক্রমে জায়িয।” অর্থাৎ গন্ধম বা সোনালী রংয়ের পোষাক পরিধান করা তো অবশ্যই জায়িয বরং তা মাথায় ব্যবহার করাও সকলের মতে জায়িয। যেহেতু আহমার শব্দের অর্থ গন্ধম বা সোনালী রংও হয়ে থাকে। আর হানাফী ফক্বীহগণ আহমার বৈধ হওয়া সম্পর্কিত বর্ণনাগুলোকে তা’বীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থে গ্রহণ করেছেন। যার প্রমাণ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, তা’বীলী অর্থে যাহিদীর উক্ত বক্তব্য সঠিকই রয়েছে। আর তা আমাদের পক্ষেই দলীল তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের পক্ষে নয়।
তৃতীয় জবাব হলো- আল্লামা শামী ‘ফতওয়ায়ে শামীতে’ আহমার রং সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে অনেকেরই মতামত বা বক্তব্য তুলে ধরেছেন এটা সত্য কথাই, কিন্তু তিনি কোথাও একথা বলেননি যে, সবগুলো মতই সঠিক বা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। বরং তিনি লাল রং সম্পর্কিত ফক্বীহদের ইখতিলাফ সমূহ বর্ণনা করার পর সবশেষে একটি মতের উপর রায় দেন। অর্থাৎ কোন মতটি সঠিক তা ‘ফতওয়ায়ে শামীতে” স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব জালিয়াতী ও প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে আল্লামা শামীর চুড়ান্ত রায়টিকে গোপন রেখেছে। যেমন- এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত “রদ্দুল মুহতার” এর ৯ম জিঃ ৫১৬ পৃষ্ঠায় আল্লামা শামী লাল রং সম্পর্কে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত উল্লেখ করার পর চুড়ান্ত ফায়ছালা দিয়ে বলেন,
[৩৫২-৩৫৭]
اقول ولكن جل الكتب على الكراهة كالسراج والمحيط والاختيار والمنتقى والذ خيرة وغيرها وبه افتى العلامة قاسم.
অর্থঃ- “(লাল রং সম্পর্কে যদিও অনেকে অনেক মত পেশ করেছে) কিন্তু আমি (আল্লামা শামী) বলছি, বড় বড় (হানাফী ফিক্বাহের) কিতাব যেমন সিরাজুল ওয়াহহাজ, মুহীত, ইখতিয়ার, মুনতাক্বা, জখীরাসহ আরো অন্যান্য কিতাব সমূহে মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারেই ফতওয়া দেয়া হয়েছে। আর (হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফক্বীহ) আল্লামা কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি এটার উপরই ফতওয়া দিয়েছেন।”
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, আল্লামা শামীর মতে, ‘লাল’ কাপড় মাথায় ব্যবহার করা সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ নয়’ যাহিদীর এ মতটি সঠিক নয়। বরং বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে মাকরূহ তাহরীমী।
কাজেই তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব আল্লামা শামীর চুড়ান্ত অভিমতকে বাদ দিয়ে বা গোপন রেখে মাঝখান থেকে যাহিদীর একটি মতকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে চরম জালিয়াতি ও প্রতারণা করেছে।
(অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment