“হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” শুরু করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ খালিছ হক্ব মত-পথ তালাশ করা বা ছহীহ ও সুন্নতী আমলের মাধ্যমে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেজামন্দি বা সন্তুষ্টি হাছিল করা। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের ছহীহ আক্বীদা লাভ ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক। প্রসঙ্গতঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। স্মর্তব্য যে, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা মায়িদা’র’ ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذ ين امنوا اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ-“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।” বিশেষতঃ বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- উলামায়ে ‘ছু’। উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট বাতিল মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। যেমন, তারা প্রচার করছে- ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদয়াত ও হারাম, নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা শিরক, কদমবুছী করা নাজায়িয ও শিরক, মাযহাব মানার কোন প্রয়োজন নেই, পীর-মুরীদী শরীয়ত বিরোধী প্রথা, ঈদে মীলাদুন্ নবী পালন করা বিদ্য়াত, মীলাদ ক্বিয়াম করা র্শিক-বিদ্য়াত। শবে বরাত পালন করা বিদ্য়াত। তারাবীহ নামায জরুরী কোন নামায নয়, আট রাকায়াত তারাবীহ পড়লেই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাঊযুবিল্লাহ) অথচ উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা শরীয়তসম্মত এবং তন্মধ্যে কোনটা সুন্নত আবার কোনটা ফরয। পক্ষান্তরে উলামায়ে ‘ছূ’ তথা দুনিয়াদার মাওলানারা ইসলামের নামে ছবি, টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, নোবেল, হরতাল, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা, ভোট দেয়া, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, মহিলাদের জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া, মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত ও মুখ খোলা রাখা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র ও ভোট-নির্বাচন করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবী করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি নাজায়িয কাজগুলোকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ) অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে সরিয়ে, ইবাদত থেকে সরিয়ে অনৈসলামিক ও হারাম কাজে মশগুল করে দিয়ে বেঈমান করে দেয়া। উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট, বাতিল মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা উল্লিখিত বিষয়গুলোর ন্যায় ‘লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল’ সম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, ‘পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান বা ব্যবহার করা জায়িয।’ (নাউযুবিল্লাহ) অথচ অসংখ্য, নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীলের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হানাফী মাযহাবের মুখতার বা গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম তথা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ সম্পূর্ণটা লাল হলে হারাম, অধিকাংশ লাল হলে মাকরূহ তাহরীমী ও কম লাল হলে মাকরূহ তানযীহী। আর যেহেতু হানাফী মাযহাব মতে লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা পুরুষের জন্য হারাম। তাই এখন যারা তা পরিধান করবে তারা দায়িমীভাবেই হারাম কাজে লিপ্ত থাকবে। অর্থাৎ তারা হারাম কাজ করার গুণাহে গুণাহ্গার হবে। সাথে সাথে ‘সাদা রংয়ের রুমাল ব্যবহার করা খাছ সুন্নত” এ মহান সুন্নতের আমল থেকে সম্পূর্ণ মাহরূম হয়ে যাবে। অথচ সুন্নতের ইত্তিবাই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র মাধ্যম। অতএব, যারা লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল সম্পর্কে ভুল, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর ফতওয়া দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আমল ধ্বংস করছে তাদের সেই ঈমান-আমল বিধ্বংসী ফতওয়া থেকে সাধারন মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাজতের লক্ষে ও লাল রুমাল সম্পর্কিত সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়া হলো। যাতে করে লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল সম্পর্কিত সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা অবগত হয়ে সে অনুযায়ী আমল করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। সাথে সাথে যারা লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছে তারা বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে হক্বের উপর দায়িম-ক্বায়িম থাকতে পারে। হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক নিষিদ্ধ হওয়ার প্রমাণ ও সিলেট খারিজী মাদ্রাসার ‘তথাকথিত মুফতী!’ ছাহেবের মনগড়া বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব “আমাদের হানাফী মাযহাব মতে, পুরুষের জন্য সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ লাল রংয়ের রুমাল বা কাপড় পরিধান করা হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী, আর লালের ভাগ কম হলে মাকরূহ তানযীহী”- বাতিলের আতঙ্ক, যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর এ ফতওয়াই ছহীহ, গ্রহণযোগ্য, দলীলভিত্তিক ও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত। বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত থেকে সংকলিত ফতওয়াটিই ছহীহ যা গ্রহণযোগ্য, দলীলভিত্তিক। অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত। কারণ উক্ত ফতওয়ায় নিজস্ব কোন মত পেশ করা হয়নি। বরং মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর বক্তব্যই হুবহু সংকলন করা হয়েছে মাত্র। পক্ষান্তরে সিলেট কাসেমুল উলূম খারিজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) ‘লাল রং’ সম্পর্কিত উক্ত ফতওয়াটি খণ্ডন করতে গিয়ে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও জিহালতপূর্ণ হয়েছে। কথিত মুফতী ছাহেব ক্ষেত্র বিশেষে নিজের মনগড়া মতকে ছাবেত করার লক্ষ্যে কোন কোন হাদীছ শরীফ ও কিতাবের ইবারতের মনগড়া ও ভুল তরজমা ও ব্যাখ্যা দিয়েছে। অর্থাৎ তথাকথিত উক্ত মুফতী ছাহেব তার উক্ত ফতওয়ার মাধ্যমে ধোকা ও প্রতারণার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মূলত: তথাকথিত উক্ত খারিজী মুফতী (!) ছাহেব লাল রং সম্পর্কিত আরবী শব্দের সঠিক অর্থ ও তাহক্বীক্ব সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারণে এবং হাদীছ শরীফ ও কিতাবের ইবারতসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা ও মর্ম অনুধাবনে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই লাল রং সম্পর্কে এরূপ অশুদ্ধ ও বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রদান করেছে এবং আল বাইয়্যিনাতে প্রদত্ত লাল রং সম্পর্কিত ছহীহ ও দলীলভিত্তিক ফতওয়াটি হৃদয়ঙ্গম করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। (পূর্ব প্রকাশিতের পর) এবার আমরা তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের প্রদত্ত প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খণ্ডনমূলক আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। সিলেট খারেজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবেরঞ্জবক্তব্য সমূহের দলীলভিত্তিক খণ্ডনমূলক আলোচনা তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের ১ম বক্তব্যঃ তথাকথিত মুফতী (!)ঞ্জছাহেবের বক্তব্য হলো, “আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) এর হাদীসে উল্লিখিত ثوبان احمران (দুটি লাল কাপড়) দ্বারা সর্ব প্রকার লাল রং উদ্দেশ্য নয়। বরং বিশেষ প্রকারের লাল রং উদ্দেশ্য। আর তাহলো عصفر (উসফুর) (রং এর কাজে ব্যবহৃত এক প্রকার উদ্ভিদ) দ্বারা রঙানো লাল কাপড়। তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের ১ম বক্তব্যের খণ্ডনমূলক জবাবঃ সিলেট খারেজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!)ঞ্জছাহেব হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণিত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা সম্পূর্ণই মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন। মূলত: উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা শুধু ‘উছফুর’ মিশ্রিত লালকে নিষেধ করা হয়নি বরং আমভাবে সর্বপ্রকার লালকেই নিষেধ করা হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, [১৫৪-১৫৭]
عن عبد الله بن عمرو رضى الله عنه قال مر رجل وعميه ثوبان احمر ان فسلم على النبى صلى الله عليه وسلم فلم يرد عليه النبى سلى الله عليه وسلم السلام. هذا حديث حسن. غريب من هذا الوجه. (ترمذى شريف ابواب الادب عن رسول الله صلى الله عليه وسلم باب ما جاء فى كراهية لبس المعصفر للر جال. ابو داؤد شريف كتاب اللباس باب فى الحمرة. المشكوة المصا بيح كتاب اللباس الفصل الثا نى. نيل الاوطار كتاب اللباس باب نهى الر جال عن المعصفر وما جاء فى الاحمر)
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লাল বর্ণের দু’টি কাপড় (ইযার ও চাদর) পরিহিত এক ব্যক্তি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে সালাম দিল। কিন্তু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের জাওয়াব দেননি। হযরত আবূ ঈসা তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদীছ শরীফখানা হাসান এবং উপরোক্ত সনদে গরীব। (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, নাইলুল আওতার) অত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা আমাদের হানাফী মাযহাব মতে উছফুর মিশানো ছাড়াই সকল প্রকার লাল পোশাককে পুরুষের জন্য হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে। যা হাদীছ শরীফের শরাহ বা ব্যাখ্যা গ্রন্থ সমূহে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ‘আবূ দাঊদ শরীফ’-এর ২য় জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে, [১৫৮-১৬০]
قوله ثو بان احمر ان الخ قد وقع فى هذا الحديث الا حمران مطلقا من غير قيد المعصفر.
অর্থঃ- ‘দু’টি লাল কাপড়’ এ হাদীছ শরীফে দু’টি লাল কাপড়’ পরিধানের নিষেধাজ্ঞা ‘মুয়াছ্ফার’ তথা উছফুর রং মিশানোর শর্ত ছাড়াই ‘মুতলাকান’ বা সাধারণভাবে সকল প্রকার লাল কাপড় নিষেধ। (অনুরূপ ‘আশয়াতুল লুময়াত’ ও ‘বযলুল মাজহুদ’ কিতাবে আছে) উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ ৮ম জিঃ ৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৬১-১৬২]
احتج بهذا الحديث القائلون بكراهة لبس الا حمر.
অর্থঃ- এই হাদীছ শরীফকে ভিত্তি করে উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, সকল প্রকার লাল কাপড় পরিধান করা মাকরূহে তাহরীমী। (অনুরূপ ‘নাইলুল আওতার’-এ আছে) [১৬৩-১৬৪]
والمختار من المذهب ان الكر اهة انما هى لا جل اللون لا لمعصفر بخصو صه. كذا حققه الشيخ قاسم الحنفى احد اعاظم علماء مصر من المتا خرين معا صر الشيخ ابن حجر العسقلانى ১২ لمعات.
অর্থঃ- আমাদের হানাফী মাযহাবের ‘মুখতার’ তথা গ্রহণযোগ্য মতে; লাল পোশাক মাকরূহ তাহরীমী, ইহা লাল রংয়ের কারণে, খাছভাবে উছফুর রং মিশানোর সাথে শর্তযুক্ত নয়। অনুরূপ তাহক্বীক্ব করে ফয়সালা দিয়েছেন আল্লামা শাইখ ক্বাসিম আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি উলামায়ে মুতায়াখ্খিরীনগণের মধ্যে মিশর এলাকার একজন উচ্চ দরজার আলিম ছিলেন। যিনি আল্লামা শাইখ ইবনে হাজার আসক্বালানী (শাফিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সমসাময়িক ছিলেন। ‘লুময়াত’ কিতাবে এটা বর্ণিত আছে। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হাদীছ শরীফে বর্ণিত احمران দ্বারা হানাফী মাযহাব মতে, উছফুর রংয়ের শর্ত ছাড়াই সকল প্রকার শুধু লাল রং পুরুষের জন্য মাকরূহ তাহরীমী। তবে অন্য হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে উছফুর রং মিশানোর শর্তেও মাহরূহ তাহরীমী হবে। [১৬৫]
وقال على القارى فى المر قاة فهذا اى قو له صلى الله عليه وسلم فلم يرد عليه دليل صر يح على تحر يم لبس الثوب الا حمر للر جال. وعلى ان مر تكب المنهى حال التسليم لا يستحق الجواب والتسليم. وروى الطبرا نى عن عمران ابن حصين مر فوعا اياكم والحمرة فا نها احب الز ينة الى الشيطان.
অর্থঃ হযরত আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখা মিশকাত শরীফের শরাহ ‘মিরক্বাত শরীফে’ বলেছেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীঃ তিনি লাল পোশাক পরিহিত ব্যক্তির সালামের জাওয়াব দেননি।” এই হাদীছ শরীফখানা এই মাসয়ালার স্পষ্ট নির্ভরযোগ্য দলীল। মাসয়ালা হচ্ছে, পুরুষদের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা হারাম। নিশ্চয়ই সালামের সময় হারাম কাজে মশগুল ব্যক্তি সালামের জাওয়াব পাওয়ার ও সালাম পাওয়ার হক্বদার নয়। হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে ‘মারফু’ সনদে বর্ণনা করেছেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা লাল রং থেকে বেঁচে থাক। কেননা নিশ্চয়ই ইহা শয়তানের কাছে অধিক পছন্দনীয় পোশাক। অত্র ইবারত থেকে প্রমাণিত হলো, (১) পুরুষদের জন্য পুরা লাল পোশাক হারাম (২) লাল পোশাক পরিধানকারী ব্যক্তিই হারাম কাজে মশগুল (৩) “লাল পোশাক শয়তানের পছন্দনীয়” সম্পর্কিত হাদীছ শরীফখানা মারফু। ইহা ছহীহ হাদীছ। যঈফ নয়। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় আবূ দাঊদ শরীফের শরাহ ‘বযলুল মাজহুদ’ ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১১৬৬]
وعند الاخر ين مطلق الجمرة سواء كان من العصفر اوغيره مكر وه.
অর্থঃ- “অপরাপর সকল উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে, মুতলাক বা সাধারণভাবে সকল প্রকার লাল পোশাক পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। চাই তা উছফুর মিশানো লাল হোক অথবা নাই হোক।” [১৬৭]
وعلى ان للر جال لبس الا حمر على تحريم صريح، وهذا دليل.
অর্থঃ- “আর এরই উপর ফতওয়া যে, নিশ্চয়ই পুরুষদের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা ষ্পষ্ট হারাম। অত্র হাদীছ শরীফখানাই তার দলীল। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ ‘মিরক্বাত শরীফ’ ৮ম জিঃ ২৫৭, ২৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৬৮]
فهذا دليل صيريح على تحريم لبس الثوب الا حمر للر جال.
অর্থঃ এ হাদীছ শরীফখানা এ মাসয়ালার স্পষ্ট দলীল যে, পুরুষের জন্য লাল পোশাক পরিধান করা হারাম। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ‘আত্ তা’লীকুছ ছবীহ’ ৪র্থ জিঃ ৩৯১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে, [১৬৯]
هذا الحد يث دليل صريح على تحريم لبس الثوب الا حمر للر جال.
অর্থঃ এ হাদীছ শরীফখানা এ মাসয়ালার স্পষ্ট দলীল যে, পুরুষের জন্য লাল কাপড় হারাম। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ ‘আশয়াতুল লুময়াত’ ৩য় জিঃ ৫৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৭০]
احمر درين حد يث مطلق واقع شده مقيد بمعصفر نه.
অর্থঃ ‘দু’টি লাল কাপড়’ এ হাদীছ শরীফে ‘দুটি লাল কাপড়’ পরিধানের নিষেধাজ্ঞা মুয়াছফার তথা উছফুর রং মিশানোর শর্ত ছাড়াই মুতলাকান বা সাধারণভাবে লাল পোশাক পরিধান করা নিষেধ তথা হারাম। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় আবূ দাঊদ শরীফের শরাহ ‘আউনুল মা’বুদ’-এর ৪র্থ জিঃ ৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৭১]
احتج بهذا الحديث القا ئلون بكراهة لبس الاحمر.
অর্থঃ- “এই হাদীছ শরীফকে ভিত্তি করে উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, পুরুষের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। স্মর্তব্য যে, লাল কাপড় পরিহিত ব্যক্তির সালামের জবাব না দেয়া এটাই প্রমাণ করে যে, লাল কাপড় পরিধান করা হারাম বা নিষিদ্ধ। কেননা মুহাদ্দিছগণ উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যখ্যায় হারাম কাজে লিপ্ত ব্যক্তির সালামের জবাব না দেয়াকে সুন্নত বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় তিরমিযী শরীফের ২য় জিঃ ১০৪ পৃষ্ঠায় ৩নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে, [১৭২]
قوله فلم يرد عليه النبى صلى الله عليه وسلم فيه دلالة على ان من كان مر تكبا منهيا فى وقت تسليمه لا يمتحق جواب السلام ويستحب ان ينبه على ذلك، قاله الطيبى.
অর্থঃ- “হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার (লাল কাপড় পরিহিত ব্যক্তির) সালামের জাওয়াব দেননি।” এর দ্বারাই প্রামাণিত হয় যে, সালামের সময় নিষেধকৃত বা হারাম কাজে মশগুল ব্যক্তি সালামের জাওয়াব পাওয়ার হক্বদার নয়। তার সালামের জাওয়াব না দেয়াই সুন্নত। আল্লামা ত্বীবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহা বলেছেন। এ ইবারতে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে, পুরুষদের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা নিষেধ বা হারাম। আর হারাম কাজে মশগুল এমন ব্যক্তির সালামের জাওয়াব তরক করাও সুন্নত। কেননা, সে এর হক্বদার নয়। [১৭৩-১৭৪]
وفى الحد يث جواز ترك الرد على من سلم وهو مر تكب لمنهى عنه رد عاله وزجرا عن معصيته.
অর্থঃ- অত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা ছাবিত হয় যে, নিষেধকৃত বা হারাম কাজে রত ব্যক্তির সালামের জাওয়াব তরক করা জায়িয। তার গুনাহ তথা নাফরমানী মূলক কাজের উপর তিরস্কারের জন্য সালামের জাওয়াব তরক করা জায়িয। (অনুরূপ ‘নাইলুল আওতার’ কিতাবে আছে) [১৭৫-১৭৬]
قال ابن ر سلان ويتحب ان يقول المسلم عليه انا لم ارد عليك لا نك مر تكب لمنهى عنه.
অর্থঃ- হযরত ইবনু রসলান রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, মুস্তাহাব হল, কোন মুসলমান ব্যক্তি যদি কাউকে সালাম দেয় তখন সে ব্যক্তি বলবে, আমি তোমার সালামের জাওয়াব দিবনা। কেননা তুমি নিষেধকৃত তথা হারাম কাজে রত আছ। (অনুরূপ ‘নাইলুল আওতার’ কিতাবে আছে) [১৭৭-১৭৮]
وكذ لك يستحب تر ك السلام على اهل البدع والمعاصى الظاهرة تحقيرالهم وزجرا.
অর্থঃ অনুরূপভাবে প্রকাশ্য বিদয়াতী ও নাফরমান তথা গুনাহগার ব্যক্তিদেরকে সালাম দেয়া থেকে ফিরে থাকা মুস্তাহাব সুন্নত। তাদেরকে হেয় ও তিরষ্কার করার জন্য। (অনুরূপ ‘নাইলুল আওতার’ কিতাবে আছে) উপরোক্ত দলীল ভিক্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, হাদীছ শরীফে উছফুর মিশানোর শর্ত ছাড়াই আমভাবে লাল লংয়ের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ আমভাবে সর্বপ্রকার লাল রংই নিষিদ্ধ। অবশ্য অন্য হাদীছ শরীফে সাধারণ লাল রংয়ের ন্যয় উছফুর মিশানো লাল রংয়ের ব্যপারেও নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মুলকথা হলো লাল রং উছফুর মিশানো হোক অথবা উছফুর মিশানো না হোক সর্বাবস্থায় যত প্রকার লাল রং রয়েছে, সর্ব প্রকার লাল রংই পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ বা হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়। কাজেই তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব যে লিখেছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফ দ্বারা শুধুমাত্র উছফুর মিশানো লালকেই নিষেধ করা হয়েছে। তার এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, দলীলবিহীন ও জিহালতপূর্ণ বলেই প্রমাণিত হলো। তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের ২য় বক্তব্য: সিলেট খারেজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব তাঁর ভ্রান্ত মতকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষে আরেকটি বিভ্রান্তিকর ও জিহালতপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেছে এই বলে যে, ثوبان احمران দ্বারা যে, উছফুর মিশানো লালকে বুঝানো হয়েছে তা হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত অপর দু’টি হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত হয়। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضى الله عنه قال رانى رسول الله صلى الله عليه وسلم وعلى ثوب مصبوغ بعصفر موردا فقال: ما هذا فا نطاقت فا حر قته فقال النبى صلى الله عليه وسلم ما صنعت بثو بك؟ فقلت: احر فته قال افلا كسو ته بعض اهلك رواه ابو داؤد: ২০৯১২
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضى الله عنهما قال: راى رسول الله صلى الله عليه وسلم على ثو بين معصفرين (مصبوغين با لعصفر: مر قاة ১৩৫১৮) فقال: ان هذه من لباس الكفار فلاتلبسهما" رواه مسلم (مشكوة كتاب اللباس، رقم الحديث ২৩২৭)
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বলেন, আমাকে একদা রসূল (সাঃ) উসফুর দ্বারা রঙানো লাল কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখলেন। তখন (আপত্তির সূরে) বললেন এটা কি? আমি চলে গেলাম। এবং কাপড়টি জ্বালিয়ে ফেললাম। অতঃপর নবীজী আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কাপড়টি কি করেছ, আমি বললাম জ্বালিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেন- না, জ্বালিয়ে তোমার পরিবারের কোন মহিলাকে পরিয়ে দিলে না কেন? (আবূ দাঊদ: ২/২০৬) আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবীজি (সাঃ) আমার শরীরে উসফুর দ্বারা রঙানো দুটি লাল কাপড় দেখলেন, তখন বললেন, এটা কাফেরদের পোশাক, তাই তুমি এটা পরবেনা। (মুসলিম, মেশকাত, লেবাস অধ্যায়, হাদীছ নং ৪৩২৭) তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের ২য় বক্তব্যের খণ্ডনমূলক জাওয়াবঃ সিলেট খারেজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু জিহালতপূর্ণই নয় বরং বিভ্রান্তিকর ও প্রতারণামূলকও বটে। কারণ তার উল্লিখিত এ হাদীছ শরীফ দু’খানার সাথে ثوبان احمران এ হাদীছ শরীফের কোনই সম্পর্ক নেই। বরং ثوبان احمران দ্বারা আমভাবে লাল রংকে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর পরবর্তী দু’হাদীছ শরীফ দ্বারা উছফুর দ্বারা রঙ্গানো লাল, হলুদ, কুসূম ও গোলাপী লাল রংকে পুরুষের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেননা, উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয়ে عصفرموردا ও معصفرين শব্দ উল্লেখ আছে। উক্ত শব্দগুলোর লুগাতী আলোচনা দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, عصفر ও ورد শব্দের অর্থ হলো- লাল, হলুদ, কুসূম ও গোলাপী রং। সুতরাং “উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয় দ্বারা শুধুমাত্র ‘উছফূর মিশানো লাল রংকেই বুঝানো হয়েছে”- তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের এ দাবী সম্পূর্ণই মিথ্যা। মূলত: তথাকথিত উক্ত মুফতী (!) ছাহেব উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয়ের মনগড়া তরজমা করার কারণে এবং তার সঠিক ব্যাখ্যা না জানার ও না বুঝার কারণেই মূলত: এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিতে পরেছে। তাই নিম্নে উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয়ের সঠিক তরজমা ও ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো। আর তাতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয়ের সাথে ثوبان احمران হাদীছ শরীফের কোনই সম্পর্ক নেই। ১ম হাদীছ শরীফের সঠিক তরজমা ও ব্যাখ্যাঃ [১৭৯-১৮৩]
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضى الله عنه قال رانى رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ابو على اراه وعلى ثوب مصبوغ بعصفر موردا فقال ما هذا فا نطلقت فحر قته فقال النبى صلى الله عليه وسلم ما صنعت بثو بك فقلت اخر قته قال افلا كسو ته بعض اهلك. قال ابو داؤد ر واه ثور عن خالد فقال موردا وطاؤس قال معصفر. (ابو داؤد شريف كتاب اللباس باب فى الحمرة المجلد الثا نى ص ২০৭، مشكوة شريف كتاب اللباس الفصل الثانى ص ৩৭৬. مسند احمد بن حنبل، ابن ما جة شريف كتا اللباس باب كراهية المعصفر للر جال ص ২৯৫، نيل الا وطار كتاب اللباس باب نهى الرجال عن المعصفر وما جاء فى الا حمرج ২ ص ৯৭)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখেন। হযরত আবূ আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (যিনি হযরত আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ছাত্র) বলেন, তাঁকে দেখেন এ অবস্থায় যে, (তিনি বলেন,) তখন আমার পরিধানে উছফুর রংয়ে রঞ্জিত গোলাপী লাল রংয়ের একখানা কাপড় ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি? তৎক্ষনাৎ আমি ফিরে গিয়ে তা আগুনে জ্বালিয়ে ফেলি। এরপর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তোমার কাপড়টি কি করেছ? আমি বললাম, আমি তা জ্বালিয়ে ফেলেছি। তখন তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কেন এটি তোমার পরিবারস্থ কোন মহিলাকে পরিধান করালেনা। হযরত আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত ছাওর রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত খালিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে مورد শব্দের এবং হযরত ত্বাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি معصفر শব্দের বর্ণনা করেছেন। (আবূ দাঊদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, ইবনু মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ, নাইলুল্ আওতার) অত্র হাদীছ শরীফের মধ্যে উছফুর রংয়ে রঞ্জিত গোলাপী লাল রংকে নিষেধ করা হয়েছে। উছফুর রং হচ্ছে কুসূম ও হলুদ রং আর ‘মুওয়াররাদ’ হচ্ছে গোলাপী লাল রং। এগুলো সর্বসম্মতিক্রমে পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ। এ হাদীছ শরীফ দ্বারা গোলাপী লাল ও কুসুম রংকে পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেহেতু এগুলো হচ্ছে লাল রংয়ের প্রকার। নিম্নে হাদীছ শরীফ খানার ব্যাখ্যা লক্ষ্য করলে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় আবূ দাঊদ শরীফ ২য় জিঃ ২০৭ পৃষ্ঠার ৯ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে, [১৮৪-১৮৬]
قوله موردا بسثد يد الراء المفتو حة قال التورپشتی .... والمورد وما صبغ علی لون الورد. ویحتمل ان یکون نصبہ علی الا ختصاص.
অর্থঃ- موردا ‘মুওর্য়ারদান’ শব্দটি ‘রা’ বর্ণে যবরের সাথে তাশদীদ যোগে পড়তে হবে। হযরত তুরপুশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ......... যা গোলাপী লাল বা কুসুম রং দ্বারা রঞ্জিত করা হয় তাকে ‘মুওয়াররাদ’ বা গোলাপী রং বলে। এখানে গোলাপী দ্বারা গোলাপী লাল রং বা কুসুম রংকেই খাছ করা হয়েছে। (অনুরূপ মিরকাত, আউনুল মা’বুদে আছে) উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় আবূ দাঊদ শরীফের শরাহ ‘বযলুল মাজহুদ’ ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৮৭]
ومعنا هما متقاربان ولكن لفظ المعصفر اصرح واوضح.
অর্থঃ- مورد ‘মুওয়াররাদ’ ও معصفر ‘মুয়াছফার’ শব্দ দু’টির অর্থ কাছাকাছি। অর্থাৎ এ দু’টির অর্থ গোলাপী রং ও কুসুম রং উভয়েই হয়ে থাকে। কিন্তু ‘মুয়াছফার’ শব্দটি অধিক স্পষ্ট ও পরিস্কার। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় আবূ দাঊদ শরীফের শরাহ ‘আউনুল মা’বুদ’ ৪র্থ জিঃ ৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৮৮]
وعلى ثوب (مورد) وعند مسلم فى صحيحه من طريق محمد بن ا براهيم بن الحارث عن خالد بن معدان عن جبير بن نفير ان عبد الله ابن عمرو بن العاص اخبره قال راى رسول الله صلى الله عله وسلم على ثوبين معصفرين فقال ان هذه من ثياب الكفار فلاتلبسها.
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমার পড়নে ছিল কাপড় যা (গোলাপী লাল রংয়ের)। হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘ছহীহ মুসলিম শরীফে’ বর্ণনা করেছেন। হযরত মুহম্মদ ইবনে ইব্রাহীম ইবনে হারিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খালিদ ইবনে মা’দান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত জুবাইর ইবনে নুফাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর কাছে বর্ণনা করে বলেন যে, একদা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পরনে দুটি উছফুর (বা কুসুম রং) তথা গোলাপী রংয়ের কাপড় দেখে বললেন, নিশ্চয়ই ইহা কাফিরদের পোশাক, তাই তুমি ইহা পরিধান করো না। অত্র ইবারতে গ্রন্থকার উছফুর দ্বারা গোলাপী লাল রংকে বুঝিয়েছেন। লক্ষ্য করুন, হাদীছ শরীফ খানার কোন ব্যাখ্যাতেই শুধু উছফুর মিশানো লালকে বুঝানো হয়নি। বরং উছফুর রংয়ে রঞ্জিত গোলাপী লাল বা কুসুম রংকেই বুঝানো হয়েছে। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ‘মিশকাত শরীফ’-এর ৩৭৬ পৃষ্ঠায় বাইনাস সুতূরে উল্লেখ আছে, [১৮৯]
صبغ على لون الورد.
অর্থঃ- গোলাপী রং দ্বারা যে কাপড়কে রং করা হয় সে কাপড়কে ‘মুওয়াররাদ’ বলে। যাকে উছফুর বা কুসুম রংয়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ ‘শরহুত্ ত্বীবী’ ৮ম জিঃ ২২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৯০-১৯২]
والموردماصبغ على لون الورد.
অর্থঃ গোলাপী রং দ্বারা যে কাপড়কে রং করা হয়, সে কাপড়কে মুওয়াররাদ বা গোলাপী কাপড় বলা হয়। (অনুরূপ ‘আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, মিরকাত কিতাবে আছে) উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ ‘আত্ তা’লীকুছ ছবীহ’ ৪র্থ জিঃ ৩৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৯৩-১৯৪]
ويحتمل ان يكون نصبه على الا ختصاص.
অর্থঃ- এখানে গোলাপী রং দ্বারা গোলাপী রং বা কুসুম রংকেই খাছ করা হয়েছে। (অনুরূপ মিরকাত শরীফে রয়েছে) উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ ‘মিরক্বাত শরীফ’ ৮ম জিঃ ২৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৯৫]
(فقال ماهذا فعر فت ما كره) اى من الثياب المنكر لو نه.
অর্থঃ- (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি? তাঁর এ প্রশ্ন থেকে আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি উহাকে অপছন্দ করেছেন।) তিনি সে কাপড়ের রংকে অপছন্দ করেছেন। রংটি হচ্ছে উছফুর বা কুসুম ও গোলাপী লাল। যা লাল রংয়ের একটি প্রকার। [১৯৬]
وهو صريح فى تحر يم الحمرة على الرجال.
অর্থঃ উপরোক্ত উছফুর বা কুসুম ও গোলাপী লাল রংয়ের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ থেকে স্পষ্ট ফতওয়া হচ্ছে, পুরুষদের জন্য লাল পোশাক হারাম। এখানে উছফুর বা কুসম রং ও গোলাপী রংকে লাল রং হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেহেতু এদু’টি রং লাল রং-এরই একটি করে প্রকার। তাই লাল রং হারাম অর্থঃ কুসুম লাল, গোলাপী লাল, যাফরান লাল, সাধারণ লাল অর্থাৎ সর্ব প্রকার লাল পোশাকই হারাম। হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা শাইখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখা মিশকাত শরীফের শরাহ ‘আশয়াতুল লুময়াত’ ৩য় জিঃ ৫৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৯৭]
موردا. بر نگ گل سرخ.
অর্থঃ- “গোলাপী রংয়ের পোশাক অর্থাৎ লাল গোলাপী রংয়ের পোশাক। যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপছন্দ করেছেন।” এ ইবারত থেকেও বুঝা যায় যেকোন লাল পোশাক পুরুষদের জন্য হারাম। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ‘মুন্তাকাল আখবার’ কিতাবের শরাহ ‘নাইলুল্ আওত্বার’ ২য় জিঃ ৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৯৮]
وفيه د ليل على جواز لبس المعصفر للنساء.
অর্থঃ- উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা উছফুর দ্বারা রঙ্গানো লাল বা কুসুম রং মহিলাদের জন্য জায়িয প্রমাণিত হয়েছে।” [১৯৯]
والحد يث يدل على المنع من لبس الثياب المصبوغة بالعصفر.
অর্থঃ- উছফুর লাল রং বা কুসুম রং দ্বারা রঞ্জিত কাপড় পুরুষদের জন্য নিষেধ তথা হারাম, অত্র হাদীছ শরীফ থেকে এটাই প্রমাণিত হয়। উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহ থেকে প্রমাণিত হলো যে, ওর্য়াদ রং বা গোলাপী রং হারাম হওয়ার অর্থই হল লাল রং হারাম হওয়া। কারণ, উছফুর বা কুসুম ও ওর্য়াদ বা গোলাপী রং ইত্যাদি আহমার তথা লাল রংয়েরই এক একটি প্রকার। আরো প্রমাণিত হলো যে, ثوبان احمران এ হাদীছ শরীফ ও উল্লিখিত দু’টি হাদীছ শরীফের বর্ণনাকারী যদিও একজন, কিন্তু এর প্রয়োগ আলাদা আলাদা। احمران হাদীছ শরীফ দ্বারা আমভাবে সর্বপ্রকার লাল রংকে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর عصفر উছফুরের হাদীছ শরীফ দ্বারা আলাদাভাবে উছফুর হারাম উদ্দেশ্য। এমনকি এ উছফুর যদি আহমার-এর সাথে মিশানো হয়, সেটিও লাল হিসেবে হারাম। যেহেতু আমভাবে সমস্ত লাল হারাম। ২য় হাদীছ শরীফের সঠিক তরজমা ও ব্যাখ্যাঃ [২০০-২০৪]
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضى الله تعالى عنه قال راى رسول الله صلى الله عليه وسلم على ثو بين معصفرين فقال ان هذه من ثياب الكفار فلا تلبسها. (مسلم شريف كتاب اللباس باب النهى عن لبس الر جل الثوب المعصفر الجلد الثا نى ص ১৯৩، مسند احمد بن حنجل، نسا ئى شريف كتاب الز ينة باب ذكر النهى عن لبس المعصفر المجلد الثا نى ص ২৯৭، مشكوة شريف كتاب اللباس الفصل الاول ص ৩৭২، نيل الاوطار كتاب اللباس باب نهى الرجال عن المعصفر وما جاء فى الا حمرج ২ ص ৯৬)
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পরিধানে উছফুর তথা কুসুম রংয়ের দু’খানা কাপড় দেখে বললেন, নিশ্চয়ই ইহা কাফিরদের পোশাক। তাই তুমি এটা পরিধান করোনা। (মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ, নাইলুল্ আওতার) নিম্নে হাদীছ শরীফ খানার ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো, যাতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মুসলিম শরীফের শরাহ ‘শরহুন্ নববী’ ৭ম জিঃ ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২০৫]
واختلاف العلماء فى الثياب المعصفرة وهى المصبو غة بعصفر.
অর্থঃ- উছফুর বা কুসুম রংয়ের কাপড়ের ব্যাপারে উলামায়ে কিরামগণ ইখতিলাফ করেছেন। উহা উছফুর বা কুসুম রং দ্বারা রঞ্জিত কাপড়। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মুসলিম শরীফের শরাহ ‘শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী’ ৭ম জিঃ ২২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২০৬]
وكره بعضهم جميع الو ان الحمرة.
অর্থঃ উলামায়ে কিরামগণের অনেকেই সকল প্রকার লাল রংকে মাকরূহ তাহরীমী বলেছেন। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মুসিলম শরীফের শরাহ ‘আল মুফহিম’ ৫ম জিঃ ৩৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২০৭]
المعصفر: المصيوغ بالعصفر. وهو صبغ احمر.
অর্থঃ উফছুর দ্বারা রঙিন করলে মুয়াছফার রং হয়। আর তা লাল রং। [২০৮]
يدل: على ان علة النهى عن لبا سهما التشبه با لكفر
অর্থঃ উছফুর বা কুসুম রং নিষেধ বা হারামের কারণ হচ্ছে, যেহেতু উছফুর বা কুসুম রংয়ের কাপড় পরিধানে কাফিরদের সাথে তাশাব্বুহ বা সাদৃশ্য হয়। [২০৯]
وكره ما اشتدت حمرته.
অর্থঃ অধিকাংশ লাল রংয়ের পোশাক মাকরূহ তাহরীমী। [২১০]
وكره بعض اهل العلم جميع الوان الحمرة.
অর্থঃ অধিকাংশ উলামায়ে কিরামগণ সকল প্রকার লাল রংকে মাকরূহ তাহরীমী বলেছেন। [২১১]
وانما المكروه المعصفر للر جال. والمز عفر لنهى صلى الله عليه وسلم عن ذلك للرجال
অর্থঃ- মুয়াছফার বা কুসুম রং পুরুষদের জন্য মাকরূহ তাহরীমী। তেমনীভাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিষেধবানীর কারণে যাফরানী রংও পুরুষদের জন্য মাকরূহ তাহরীমী। [২১২]
وكره المعصفر بعض اهل العلم.
অর্থঃ “মুলতঃ উলামায়ে কিরামগণের অনেকের মতে, মুয়াছফার বা কুসুম রং মাকরূহ তাহরীমী।” [২১৩]
وانما علة الكرا هة فى ذلك: انه صبغ النساء، وطيب النساء. وقد قال صلى الله عليه وسلم: طيب الر جال ما ظهر ريحه وخفى لو نه، وطيب النساء ماظهر لو نه وخفى ريحه. ر: ৫১ التر مذى والنسا ئى.
অর্থঃ- “উছফুর বা কুসুম রং ও যাফরান মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার কারণ হলঃ কেননা তা মহিলাদের সজ্জা ও মহিলাদের সুগন্ধি। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পুরুষদের সুগন্ধি যার ঘ্রাণ ছড়ায় কিন্তু রং গুপ্ত, আর মহিলাদের সুগন্ধি যার রং প্রকাশ্য কিন্তু ঘ্রাণ শূন্য। ইমাম তিরমিযী ও নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হাদীছ শরীফ খানা বর্ণনা করেছেন।” উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মুসলিম শরীফের শরাহ ‘ফতহুল মুলহিম লিত্ তকী উছমানী’ ৪র্থ জিঃ ১১৩, ১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২১৪]
قوله "ثوبين معصفرين" يعنى مصبو غين بعصفر.
অর্থঃ ‘ছাওবাইনি মুয়াছফারাইনি’ অর্থাৎ উছফুর দ্বারা রঞ্জিত দুটি কাপড়।” [২১৫-২১৭]
والحديث نص على منع الثوب المعصفر للرجال، والمختار عند الحنفية كراهته تحريما للرجال دون النساء كما فى الدر المختار ৫: ৩৫১ واشعة اللمعات ৩: ২৯৪. والمشهور عن الشافعى ابا حته، وكذ لك نقل النووى عن ابى حنيفة ولكن المختار عند الحنفية الكراهة كما ذكرنا.
অর্থঃ- “অত্র হাদীছ শরীফখানা পুরুষদের জন্য উছফুর বা কুসুম রংয়ের কাপড় নিষেধ সংক্রান্ত দলীল। আর হানাফী ইমামগণের গ্রহণযোগ্য মতে, কুসুম (লাল ও হলুদ) রংয়ের কাপড় পুরুষদের জন্য মাকরূহ তাহরীমী, মহিলাদের জন্য মাকরূহ তাহরীমী নয়। যে রকম ‘আদ্ দুররুল মুখতার’ ৫ম জিঃ ৩৫১ পৃষ্ঠায় ও আশয়াতুল লুময়াত ৩য় জিঃ ২৯৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে। কিন্তু ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাশহুর মতে মুবাহ বা জায়িয। অনুরূপ হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। তবে হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য মতে উছফুর বা কুসুম রংয়ের কাপড় মাকরূহ তাহরীমী। যেমনটি আমরা বর্ণনা করেছি। [২১৮]
واجاديث الباب صريحة فى المنع فالمنع ارجح.
অর্থঃ- “অত্র পরিচ্ছেদের হাদীছ শরীফখানা উছফুর বা কুসুম রং নিষেধ হওয়ার স্পষ্ট দলীল। আর নিষেধ সম্পর্কিত মতটিই অধিক প্রাধান্য প্রাপ্ত।” উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের ৩৭৪ পৃষ্ঠায় ‘বাইনাস সুতূর’-এ উল্লেখ আছে, [২১৯]
ان هذه من ثياب الكفار: الذين لايميزون بين الحلال والحرام.
অর্থঃ- উছফুর বা কুসুম রংয়ের কাপড় নিশ্চয়ই ইহা কাফিরদের পোশাকঃ আর যারা হালাল ও হারামের মধ্যে ব্যবধান মনে করেনা তারাই কাফির। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ ‘শরহুত্ ত্বীবী’ ৮ম জিঃ ২১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২২০-২২১]
لان المعصفر وان كان مكروها للر جال فهو غير مكروه للنساء.
অর্থঃ-নিশ্চয়ই উছফুর বা কুসুম রং পুরুষদের জন্য মাকরূহ তাহরীমী, মহিলাদের জন্য মাকরূহ নয়। (অনুরূপ ‘মিরকাত শরীফে’ আছে) [২২২]
قال البيهقى: وقد جائت احاديث تدل على النهى على العموم.
অর্থঃ- হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অত্র হাদীছ শরীফ খানা প্রমাণ করে যে আমভাবে সর্বপ্রকার লাল রং নিষেধ তথা হারাম। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ ‘আত্ তা’লীকুছ ছবীহ’ ৪র্থ জিঃ ৩৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২২৩]
معصفرين بفتح الفاء اى مصبو غين بالعصفر.
অর্থঃ معصفرين শব্দটির ‘ফা’ বর্ণে যবর সহ পড়তে হবে। অর্থাৎ উফছুর বা কুসুম রং দ্বারা রঞ্জিত দু কাপড়কে ‘মুয়াছফারাইন’ বলে। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ ‘মিরকাত শরীফ’ ৮ম জিঃ ২৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২২৪]
(ثوبين معصفرين) بفتح الفاء اى مصبو غين بالعصفر.
অর্থঃ (দুটি কুসুম রংয়ের কাপড়) মুয়াছ্ফার শব্দটির ‘ফা’ বর্ণে যবর সহ পড়তে হবে। অর্থাৎ উছফুর বা কুসুম রং দ্বারা রঞ্জিত দু’কাপড়কে ‘মুয়াছফারাইন’ বলে।” [২২৫]
(فقال ان هذه) اشارة الى جنس الثياب المعصفرة.
অর্থঃ- “(হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই ইহা) এর দ্বারা মুয়াছফার তথা ‘উছফূর’ রংয়ের সর্বপ্রকার কাপড়কে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ কুসূম ও হলুদ রং বিশিষ্ট সর্বপ্রকার কাপড়ই নিষিদ্ধ বা হারাম।” [২২৬]
(من ثياب الكفار) اى الذ ين لايمتزون بين الحرام والحلال. ولايفرقون فى اللباس بين النساء والر جال.
অর্থঃ- “(উছফুর বা কুসুম রংয়ের কাপড় কাফিরদের পোশাক) অর্থাৎ যারা হারাম ও হালালের মধ্যে পার্থক্য করেনা এবং মহিলাদের পোশাক ও পুরুষদের পোশাকের মধ্যে ব্যবধান মনে করেনা তারাই কাফির।” [২২৭]
(فلا تلبسهما) قال ابن الملك وانما نهى الر جال عن ذلك لما فيه من التشبه بالنساء.
অর্থঃ- “(তাই তুমি এ দুটি পরিধান করবে না) হযরত ইবনুল্ মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উছফুর বা কুসুম রংয়ের কাপড় পুরুষদের জন্য নিষেধ হওয়ার পিছনে কারণ হল, কেননা এতে মহিলাদের সাথে তাশাব্বুহ তথা সাদৃশ্য হয়।” [২২৮]
وفى فتاوى قاضيخان يكره للرجال ان يلبس المصبوغ بالعصفر والزعفران والورس.
অর্থঃ- “ফতওয়ায়ে ক্বাযীখানে আছেঃ পুরুষদের জন্য উছফুর বা কুসুম রং দ্বারা রঞ্জিত, যাফরান দ্বারা রঞ্জিত ও ওয়ারস্ দ্বারা রঞ্জিত লাল পোশাক মাকরূহ তাহরীমী।” [২২৯-২৩১]
وسيا تى مايدل على تحريم الاحمر. قال وفى الصحيحين عن ابن عمر قال رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يصبغ بالعصفر. قلت لادلالة له فيه على جواز لبس المعصفر للرجال.
অর্থঃ অতিশীঘ্রই লাল রং হারামের ব্যাপারে দলীল পেশ করা হবে। ছহীহাইন তথা বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি যে, তিনি উছফুর দ্বারা রং করতেছেন। আমি বলি, পুরুষদের জন্য উছফুর রং জায়িয হওয়ার পক্ষে তাদের (শাফিয়ী মাযহাবের) জন্য এতে কোন দলীল নেই। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ ‘আশয়াতুল্ লুময়াত’ ৩য় জিঃ ৫৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২২৯-২৩১]
ومختاردر مذہب حنفی کراہت تحریمی ست ونماز گزاردن بان مکروہ و ہ در نگ سرخ ازغیر معصفر نیز خلاف ست و شیخ قاسم حنفی کہ ازاعاظم علما ے متا خرین مصر واسئاذ فسطلانی سن تحقیق نمودہ وفتوی دادہ کہ حرمت ازبھت لون ست نہ سبغ پس ہر سر خ حرام ومکروہ باثد.
অর্থঃ হানাফী মাযহাবের মুখতার তথা অধিক গ্রহণযোগ্য মতে, লাল কাপড় পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। নামাযেও পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। লাল রং উছফুর মিশানোর শর্ত ছাড়াই হারাম। ইহা আল্লামা শাইখ ক্বাসিম হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি উলামায়ে মুতায়াখ্খিরীনগণের মধ্যে মিশর এলাকার একজন উচ্চ দরজার আলিম ছিলেন এবং কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উস্তায ছিলেন, তিনি তাহক্বীক্ব করে ফতওয়া দিয়েছেন যে, লাল কাপড় লাল রংয়ের কারণেই হারাম উছফুর মিশানোর কারণে নয়। সুতরাং সর্বপ্রকার লাল কাপড়ই হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী।” অতএব, দ্বিতীয় হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, হাদীছ শরীফে বর্ণিত عصفز শব্দের অর্থ হচ্ছে কুসূম বা হলুদ রংয়ের পোশাক। যা পরিধান করা পূরুষের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ। সুতরাং উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা কুসূম ও হলুদ রং যে পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ তাই বুঝানো হয়েছে। লাল রং জায়েয হওয়ার বা ‘উছফূর’ মিশানো লাল-এর কোন কথাই উক্ত হাদীছ শরীফে উল্লেখ নেই। মূলকথা হলো, সিলেট খারেজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব যে দাবী করেছে, “হাদীছ শরীফে শুধুমাত্র ‘উছফূর’ দ্বারা রঙ্গানো লাল পোশাককেই নিষেধ করা হয়েছে অন্য কোন লালকে নিষেধ করা হয় নাই”- তার এ দাবী সম্পূর্ণই মিথ্যা ও দলীলবিহীন প্রমাণিত হলো। কারণ সে তার দাবীর স্বপক্ষে যে দু’খানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে তাতে ‘উছফূর’ দ্বারা রাঙ্গানো লাল পোশাকের কথা মোটেও উল্লেখ নেই। বরং উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয়ে عصفر موردا ও ثوبين معصفرين দ্বারা যথাক্রমে গোলাপী লাল ও কুসূম বা হলুদ রংয়ের পোশাকের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ ثوبان احمران দ্বারা আমভাবে লাল রংয়ের পোশাককে আর উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয় দ্বারা আলাদাভাবে গোলাপী লাল ও কুসূম বা হলুদ পোষাককেও পুরুষের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং সিলেট খারেজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের দ্বিতীয় বক্তব্যও ভুল, অশুদ্ধ, মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও জিহালতপূর্ণ বলে সাব্যস্ত হলো। (অসমাপ্ত) পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন
0 Comments:
Post a Comment