প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের
পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী,
দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও
বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী,
বাতিলের আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায়
বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায়
এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন।
অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব
লিখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক। তদ্রুপ
“মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”
হিজাব বা পর্দার শরয়ী আহকাম ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।
কেননা, প্রথমতঃ কিছু লোক “কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্ম” অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে
বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে।
যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে
যে, “....... মহিলারা মূখ বা চেহারা,
হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাঊযুবিল্লাহি
মিন যালিক) অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য
সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন শরীফ,
সুন্নাহ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা
মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ
বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে। মূলতঃ মহিলারা সমস্ত শরীর ঢেকে বা পর্দা করে
বের হবে এটাই শরীয়তের নির্দেশ। অতএব তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা
তরক করে কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। দ্বিতীয়তঃ কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, শাইখুল
হাদীস, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ
করে, ইফতার করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে
প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ) মূলতঃ
যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ‘ছূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে
আসছে। যেমন, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায়
উলামায়ে ‘ছূ’ আবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু
ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও
হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল। বর্তমান
যামানার উলামায়ে ‘ছূ’ তথাকথিত পীর,
আমীর, শাইখুল হাদীস, মুফতী, মুফাস্সিরে
কুরআন ও তার গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের
উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে
যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে
হাদীস শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।
যেমন হাদীস শরীফে ইরশাদ
হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من
الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ
হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা
তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা
কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে
এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না
এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।”
(মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী)
স্মর্তব্য যে, ঐসকল
দাজ্জালের চেলা নামক পীর,
আমীর, শাইখুল হাদীস, মুফতী, মুফাস্সিরে
কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক, বিভ্রান্তিতে
পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী
মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে?
অতএব, উল্লিখিত উলামায়ে ‘ছূ’দের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে
সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন
হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
অতএব, সকলেই
যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম
অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি
ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার
ভিতর আসতে পারে, তাই “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”
“হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”
দেয়া হলো।
আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে
প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন
দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা
প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায , (৩) যাকাত, (৪)
হজ্ব (৫) রমযানের রোযা।” অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর
মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন। কুরআন
শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য
ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে,
পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও
বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীস
শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ
করা হলো-
(পূর্ব
প্রকাশিতের পর)
লুগাতী বা আভিধানিক ও ইছতিলাহী
বা পারিভাষিক অর্থের দ্বারা
“হিজাব বা পর্দার” প্রমাণ
حجاب (হিজাব)
এর লুগাতী বা আভিধানিক অর্থঃ حجاب হিজাবুন ও حجابة হিজাবাতুন শব্দ দুটি اسم
مصدر (ইস্মে মাছদার)। শব্দটি واحد বা একবচন, جمع বা বহুবচন হলো حجب হুজুবুন।
শব্দটি حجب থেকেও এসেছে। এর লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলোঃ পর্দা, ঘোমটা, অবগুণ্ঠন, আবরণ, আচ্ছাদন, ছদ্মবেশ, যবনিকা, বিনয়, লজ্জা, দুই
বস্তুর মধ্যবর্তী আঁড়াল ইত্যাদি। ستر، عورة – فرج، غطاء শব্দগুলোও
ক্ষেত্র বিশেষে পর্দার অর্থ প্রদান করে।
কুরআন শরীফ থেকে حجاب
হিজাব’ এর লুগাতী বা আভিধানিক
অর্থ:
কুরআন শরীফে حجاب ‘হিজাব’ শব্দটি
কয়েক স্থানে এসেছে। যা বিভিন্ন অর্থ প্রদান করেছে। যেমন; পর্দা, অন্তরাল, আড়াল, প্রাচীর
ইত্যাদি। কিন্তু পর্দা অর্থেই বেশী ব্যবহৃত হয়েছে। নিম্নে কুরআন শরীফের আয়াত
উল্লেখ সহ ‘হিজাব’ শব্দের বিভিন্ন মুখী অর্থ আলোচনা করা হলো।
حجاب ‘হিজাব’ অর্থ প্রাচীর’
[৭৬]
মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র
কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
ونادى اصحب الجنة اصحب النار ان
قد وجدنا ما وعدنا ربنا حقا فهل وجدتم ما وعد ربكم حقا قالوا نعم فاذن مؤذن بينهم
ان لعنة الله على الظلمين. الذين يصدون عن سبيل الله ويبغونها عوجا وهم بالاخرة
كفرون. وبينهما حجاب وعلى الاعراب رجال يعرفون كلا بسيمهم ونادوا اصحب الجنة ان
سلم عليكم لم يدخلوها وهم يطمعون. واذا صرفت ابصارهم تلقاء اصحب النار قالوا ربنا
لا تجعلنا مع القوم الظلمين. (سورة الاعراف 44-47)
অর্থঃ- “জান্নাতীগণ
দোযখীদের ডেকে বলবেন,
আমাদের সাথে আমাদের রব যে ওয়াদা করেছিলেন, তা আমরা
সত্য পেয়েছি। অতএব,
তোমরাও কি তোমাদের রবের ওয়াদা সত্য পেয়েছ? তারা
বলবে; হ্যাঁ। অতঃপর একজন ঘোষক উভয়ের মাঝে ঘোষণা করবেন, মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত
জালিমদের উপর। যারা মহান আল্লাহ্ পাক উনার পথে বাঁধা দিত এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ
করত। তারা পরকালের বিষয়েও অবিশ্বাসী ছিল। উভয়ের মাঝখানে একটি প্রাচীর থাকবে। আ’রাফের
উপরে অনেক লোক থাকবে। তারা প্রত্যেককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনে নিবে। তাঁরা
জান্নাতীগণকে ডেকে বলবেন,
আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তাঁরা তখনও জান্নাতে প্রবেশ
করবেন না, কিন্তু প্রবেশ করার ব্যাপারে আগ্রহী হবেন। যখন তাঁদের দৃষ্টি দোযখীদের উপর
পড়বে, তখন বলবেন, হে আমাদের রব,
আমাদেরকে এ জালিমদের সাথী করবেন না।” (সূরা আ’রাফ
/৪৪-৪৭)
উল্লিখিত আয়াতে بينهما حجاب এর حجاب দ্বারা প্রাচীর, দেয়াল উদ্দেশ্য। যা জান্নাতী ও জাহান্নামীদের মাঝখানে দেয়া
হবে।
حجاب ‘হিজাব’ অর্থ ‘অন্তরাল, আড়াল
[৭৭]
মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ
করেন,
ووهبنا لداود سليمن نعم العبد
انه اواب. اذ عرض عليه بالعشى الصفنت الجياد. فقال انى احببت حب الخير عن ذكر ربى
حتى توارت بالحجاب. ردوها على فطفق مسحا بالسوق والاعناق. (سورة ص 30-33)
অর্থঃ- “আমি হযরত
দাঊদ আলাইহিস্ সালাম উনাকে হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম উনাকে দান করেছি। তিনি
একজন উত্তম বান্দা। তিনি ছিলেন প্রত্যাবর্তনশীল। যখন উনার সামনে অপরাহ্নে উৎকৃষ্ট
অশ্বরাজি পেশ করা হল,
তখন তিনি বললেন, আমার নিকট ঐ ঘোড়াগুলোর ভালবাসা
পছন্দ হলো আপন রব উনার স্মরণের কারণেই। এমনকি সেগুলো দৃষ্টির আড়ালে গেল। অতঃপর
নির্দেশ দিলেন, সেগুলোকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনো। অতঃপর তিনি সেগুলোর পায়ে এবং গলদেশে আদর করে
হাত বুলালেন।” (সূরা ছোয়াদ/ ৩০-৩৩)
[৭৮]
حم. تنزيل من الرحمن الرحيم.
كتب فصلت ايته قرانا عربيا لقوم يعلمون. بشيرا ونذيرا فاعرض اكثرهم فهم لايسمعون.
وقالوا قلوبنا فى اكنة مما تدعونا اليه وفى اذاننا وقر ومن بيننا وبينك حجاب فاعمل
اننا عملون. (سورة حم سجدة 1-5)
অর্থঃ- “হা-মীম।
এটা অবতীর্ণ পরম দয়ালু,
করুণাময় উনার পক্ষ থেকে। এটা কিতাব, যার আয়াত
সমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আরবী কুরআন শরীফ, বোধশক্তি সম্পন্নগণের জন্য।
সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, অতঃপর তাদের মধ্যে অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তা
শুনেনা। তারা (কাফির,
মুশরিকরা) বলে, আপনি যে বিষয়ের দিকে আমাদেরকে
দাওয়াত দেন, সে বিষয়ে আমাদের অন্তর আবরণে আবৃত, আমাদের কানে আছে বধিরতা এবং
আমাদের ও আপনার মাঝে আছে অন্তরাল। অতএব আপনি আপনার কাজ করুন, আমরা
আমাদের কাজ করি।”
(সূরা হা-মীম সিজদাহ ১-৫) উল্লিখিত আয়াত সমূহে حجاب ‘হিজাব’ শব্দটির
অর্থ অন্তরাল, আড়াল, আবরণ ইত্যাদি রূপে এসেছে।
حجاب ‘হিজাব’ অর্থ পর্দা
[৭৯]
মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ
করেন,
يايها الذين امنوا لا تدخلوا
بيوت النبى الا ان يؤذن لكم الى طعام غير نظرين انه ولكن اذا دعيتم فادخلوا فاذا
طعمتم فانتشروا ولا مستأنسين لحديث، ان ذلكم كان يؤذى النبى فيستحى منكم والله لا
يستحى من الحق، واذا سالتموهن متاعا فسئلوهن من وراء حجاب ذلكم اطهر لقلوبكم
وقلوبهن. (سورة الاحزاب 53)
অর্থঃ- “হে
ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের
অপেক্ষা না করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার গৃহে প্রবেশ করোনা। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, অতঃপর
খাওয়া সমাপনান্তে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়োনা।
নিশ্চয়ই এটা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন, কিন্তু মহান
আল্লাহ্ পাক সত্য কথা বলতে লজ্জা বোধ করেননা। তোমরা উনার আহলি হযরত উম্মুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাবে। এটা
তোমাদের অন্তরের জন্য এবং উনাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা
আহযাব/৫৩)
[৮০]
وماكان لبشر ان يكلمه الله الا
وحيا او من ورائ حجاب او يرسل رسولا فيوحى باذنه ما يشاء انه على حكيم. (سورة
الشورى 51)
অর্থঃ- “কোন
মানুষের জন্য এমন হওয়ার নয় যে, মহান আল্লাহ্ পাক উনার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু ওহী
মুবারক উনার মাধ্যমে অথবা পর্দার আড়াল থেকে অথবা তিনি কোন দূত (হযরত ফেরেশতা
আলাইহিস সালাম) প্রেরণ করবেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি যা চান, তিনি তা উনার
অনুমতিক্রমে পৌঁছে দিবেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বোচ্চ প্রজ্ঞাময়।” (সূরা
শুরা/ ৫১)
[৮১]
واذا قرأت القران جعلنا بينك
وبين الذين لايؤمنون بالاخرة حجابا مستورا. (سورة بنى اسرائيل-45)
অর্থঃ- “(হে আমার
হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি যখন পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করেন, তখন আমি
আপনার মধ্যে ও পরকালে অবিশ্বাসীদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন পর্দা ফেলে দেই।” (সূরা বণী
ইসরাঈল/ ৪৫)
[৮২]
واذكر فى الكتب مريم اذ انتبذت
من اهلها مكانا شرقيا. فاتخذت من دونهم حجابا فارسلنا اليها روحنا فتمثل لها بشرا
سويا. (سورة مريم 16، 17)
অর্থঃ- “(হে আমার
হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এই কিতাবে হযরত মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম
উনার কথা বর্ণনা করুন,
যখন তিনি উনার পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব দিকে
একস্থানে আশ্রয় নিলেন। অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য তিনি পর্দা করলেন।
অতঃপর আমি উনার কাছে আমার রূহ (হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম) উনাকে প্রেরণ করলাম, তিনি উনার
নিকটে পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্ম প্রকাশ করলেন।” (সূরা মারইয়াম/ ১৬, ১৭)
[৮৩]
كلا ان كتب الفجار لفى سجين.
وما ادرك ما سجين. كتب مرقوم. ويل يومئذ للمكذبين الذين يكذبون بيوم الدين. وما
يكذب به الا كل معتد اثيم. اذا تتلى عليه اليتنا قال اساطير الاولين. كلا بل ران
على قلوابهم ماكانوا يكسبون. كلا انهم عن ربهم يومئذ لمحجوبون. ثم انهم لصالوا
الحجيم ثم يقال هذا الذى كنتم به تكذبون. (سورة المطففين. 7-17)
অর্থঃ- “এটা
কিছুতেই উচিৎ নয়,
নিশ্চয়ই পাপাচারীদের আমল নামা সিজ্জীনে আছে। আপনি জানেন, সিজ্জীন
কি? এটা লিপিবদ্ধ খাতা। সেদিন মিথ্যারোপকারীদের দুর্ভোগ। যারা প্রতিফল দিবসকে
মিথ্যারোপ করে। প্রত্যেক সীমালংঘণকারী পাপিষ্ঠই কেবল একে মিথ্যারোপ করে। তার কাছে
আমার পবিত্র আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে সে বলে, পূর্বকালের উপকথা। কখনও না, বরং তারা
যা করে, তাই তাদের হৃদয়ে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে। কখনও না, তারা সেদিন তাদের রব-এর থেকে
পর্দার আড়ালে থাকবে। অতঃপর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এরপর বলা হবে; একেই তো
তোমরা মিথ্যারোপ করতে।”
(সূরা মুত্বাফ্ফিফীন/৭-১৭)
উপরোল্লিখিত লুগাত, হাদীস
শরীফ, হাদীস শরীফের শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও কুরআন শরীফে বর্ণিত “হিজাব” এর
লুগাতী ও ইছতিলাহী তাহক্বীক্ব দ্বারা এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ‘হিজাব’ মূলতঃ
পর্দা, অন্তরাল, আড়াল আবরণ ও ঢেকে রাখার নাম। অর্থাৎ একজন বেগানা মহিলা বেগানা পুরুষ থেকে
পর্দা করা বা তার দৃষ্টির আড়ালে থাকা বা তার সামনে নিজের সমস্ত শরীর ঢেকে বা আবরণ
ফেলে রাখা। মূল কথা হলো- মহিলাগণ ঘরের
ভিতর আবদ্ধ থাকবে,
প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে সমস্ত শরীর চেহারাসহ ঢেকে বের
হবে। লুগাতী ও ইছতিলাহী অর্থে এটাকেই হিজাব বা পর্দা বলে।
অতএব প্রমাণিত হলো যে, বেগানা
পুরুষের সামনে মহিলাদের সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা বা তাদের দৃষ্টির আড়ালে থাকার নামই
হচ্ছে- শরয়ী হিজাব বা পর্দা।
দ্বীন ইসলামে হিজাব বা পর্দা ফরয
হওয়ার পুর্বের অবস্থা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন,
নূরে মুজাস্সাম, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা শরীফ থেকে মদীনা শরীফে হিজরতের ৩য়, ৪র্থ বা
৫ম বছরে হিজাব বা পর্দার হুকুম নাযিল হয়। তবে অধিকাংশ ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণ-এর মতে প্রশিদ্ধ মত হচ্ছে- পঞ্চম হিজরীতে ‘যিলক্বদ
মাসে পর্দা ফরয হয়।
দ্বীন ইসলামে পর্দা ফরয
হওয়ার পূর্বে আরবের এবং বহির্বিশ্বের অবস্থা অত্যন্ত কালিমাময়, কলুষতাযুক্ত
ছিল। জিনা-ব্যাভিচার,
অশ্লিলতা, অপকর্ম, অশ্লীল-অশালীন কাজে গোটা সমাজ বেষ্টিত হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া
বণী ইসরাঈল যুগেও বিভিন্ন ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়েছিল এই পর্দা অনুপস্থিত থাকার
কারণেই। নিম্নে ‘হিজাব বা পর্দা ফরয হওয়ার পূর্ব অবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-
হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও হযরত সারা আলাইহাস্ সালাম সংশ্লিষ্ট একটি ঘটনা
ও বেপর্দার শাস্তি
হাদীস শরীফে উল্লেখ করা
হয়েছে,
[৮৪-৮৯]
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال
قال النبى صلى الله عليه وسلم هاجر ابراهيم عليه السلام بسارة فدخل بها قرية فيها
ملك من الملوك او جبار من الجبابرة فقيل دخل ابراهيم بامرأة هى من احسن النساء
فارسل اليه ان يا ابراهيم من هذه التى معك قال اختى ثم رجع اليها فقال لاتكذبى حديثى
فانى اخبرتهم انك اختى والله ان على الارض مؤمن غيرى وغيرك فارسل بها اليه فقام
اليها فقامت توضأ وتصلى فقالت اللهم ان كنت امنت بك وبرسولك واحصنت فرجى الا على
زوجى فلاتسلط على الكافر فغط حتى ركض برجله قال الاعرج قال ابو سلمة ابن عبد
الرحمن ان ابا هريرة قال قالت اللهم ان يمت يقال هى قتلته فارسل ثم قام اليها
فقامت توضأ تصلى وتقول اللهم ان كنت امت بك وبرسولك واحصنت فرجى الا على زوجى فلا
تسلط على هذا الكافر فغط حتى ركض برجله قال عبد الرحمن قال ابو سلمة قال ابو هريرة
فقالت اللهم ان يمت فيقال هى قتلته فارسل فى الثانية او فى الثالثة فقال والله ما
ارسلتم الى الا شيطانا ارجعوها الى ابراهيم واعطوها اجر فرجعت الى ابر اهيم عليه
السلام فقالت اشعرت ان الله كبت الكافر واخدم وليدة. (بخارى شريف كتاب البيوع باب
شراء المملوك من الحربى وهبته وعتقه، فتح البارى، عمدة القارى، ارساد السارى، شرح
الكرمانى)
অর্থঃ- “হযরত আবূ
হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত নবী
করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম
হযরত সারা আলাইহাস্ সালামকে সঙ্গে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন
যেখানে এক বাদশাহ ছিল অথবা (বললেন) এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হলো যে, হযরত
ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম এক পরমা সুন্দরী মহিলাকে নিয়ে (আমাদের এখানে) প্রবেশ
করেছেন। সে (অত্যাচারী শাসক) তাঁর (হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর) কাছে লোক
পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
হে ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম! আপনার সাথে এ নারী কে? তিনি
উত্তরে বললেন, আমার বোন। তারপর তিনি হযরত সারা আলাইহাস্ সালাম-এর কাছে ফিরে এসে বললেন, তুমি
আমার কথা মিথ্যা সাব্যস্ত করবে না। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি
আমার বোন। আল্লাহ্ তায়ালার শপথ! দুনিয়াতে (এখন) আমি আর তুমি ছাড়া কেউ মু’মিন নাই।
(সুতরাং আমি ও তুমি দ্বীনি ভাই-বোন)
তারপর হযরত ইব্রাহীম
আলাইহিস্ সালাম (বাদশার কথামত) হযরত সারা আলাইহাস্ সালামকে বাদশার কাছে পাঠিয়ে
দিলেন। বাদশাহ্ তাঁর দিকে অগ্রসর হলো। হযরত সারা আলাইহাস্ সালাম উযূ করে নামায
আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দোয়া করলেন, আয় আল্লাহ্ পাক! আমি আপনার উপর
এবং আপনার রসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ছাড়া সকল থেকে আমার আবরুকে
সংরক্ষণ করেছি। আপনি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিবেন না। তখন বাদশাহ্ বেহুশ হয়ে
পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগল। হযরত আ’রাজ
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
হযরত আবূ সালামা ইবনু আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু বলেছেন যে, নিশ্চয়ই হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, তখন হযরত
সারা আলাইহাস্ সালাম বললেন,
আয় আল্লাহ্ পাক! এ যদি মারা যায় তবে বলবে ঐ স্ত্রীলোকটি একে
হত্যা করেছে। তখন সে জ্ঞান ফিরে পেল। অতপর তাঁর দিকে অগ্রসর হলো। হযরত সারা
আলাইহাস্ সালাম উযূ করে ছালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দোয়া করলেন, আয়
আল্লাহ্ পাক! আমি আপনার উপর এবং আপনার রসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ছাড়া
সকল থেকে আমার আবরুকে সংরক্ষণ করেছি। আপনি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিবেন না।
তখন অত্যাচারী বাদশাহ্ মাটিতে বেহুশ হয়ে পড়ে পায়ের আঘাত করতে লাগল। হযরত আব্দুর
রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হযরত আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেছেন যে,
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সে সময়
হযরত সারা আলাইহাস্ সালাম বললেন, আয় আল্লাহ্ পাক! এ যদি মারা যায় তবে বলবে ঐ স্ত্রীলোকটি একে
হত্যা করেছে। তখন সে জ্ঞান ফিরে পেল। এভাবে দুইবার বা তিনবারের পর বাদশাহ্ বলল, আল্লাহ্
পাক-এর শপথ! তোমরা তো আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। (নাঊযুবিল্লাহ) তাকে হযরত
ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর কাছে ফিরিয়ে দাও এবং তাঁর জন্য হযরত হাজিরা আলাইহাস্
সালামকে হাদিয়া স্বরূপ দান কর। হযরত সারা আলাইহাস্ সালাম হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্
সালাম-এর নিকট ফিরে আসলেন এবং বললেন, আপনি জানেন কি আল্লাহ্ পাক
কাফিরকে লাঞ্ছিত,
লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক খাদিমা হাদিয়া হিসেবে
দিয়েছে।” (বুখারী শরীফ কিতাবুল বুয়ূ বাবু শিরাইল্ মামলূকি মিনাল্ হারবিয়্যি ওয়া হিবাতিহী
ওয়া ইত্ক্বিহী, ফতহুল্ বারী,
উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্
কিরমানী, তাহসীরুল্ বারী) অত্র হাদীস শরীফে হযরত সারা আলাইহাস্ সালাম-এর সততা, সংযমিতা, পর্দাশীলতা
ফুটে উঠেছে। অপরপক্ষে অত্যাচারী শাসক শাস্তি, লাঞ্চনা, অপমান
ভোগ করেছে, পর্দার বেঘাত করার কারণেই।
হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর মাতা হযরত মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম-এর পবিত্রতা, পর্দাশীলতা
আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে
ইরশাদ করেন,
[৯০]
واذاكر فى الكتب مريم اذ انتبذت
من اهلها مكانا شرقيا. فاتخذت من دونهم حجابا فارسلنا اليها روحنا فتمثل لها بشرا
سويا، قالت انى اعوذ بالرحمن منك ان كنت تقيا، قالت انى يكون لى غلم ولم يمسسنى
بشر ولم اك بغيا، قال كذلك قال ربك هوعلى هين ولنجعله اية للناس ورحمة منا وكان
امرا مقصيا، فحملته فانتبذت به مكانا قصيا. (سورة مريم 14-22)
অর্থঃ- “(হে আমার
নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই কিতাবে হযরত মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম উনার
কথা বর্ণনা করুন,
যখন তিনি উনার পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব দিকে
একস্থানে আশ্রয় নিলেন। অতপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য তিনি পর্দা করলেন।
অতপর আমি উনার কাছে আমার রূহ (হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম) উনাকে প্রেরণ করলাম, তিনি
উনার নিকটে পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্ম প্রকাশ করলেন। হযরত মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম তিনি
বললেন; আমি তোমার থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যদি তুমি মহান আল্লাহ্ ভীরু হও।
(জওয়াবে) তিনি বললেন,
আমি তো আপনার রব উনার পক্ষ থেকে প্রেরিত, যাতে
আপনাকে এক পবিত্র পূত্র দান করে যাব। হযরত মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম তিনি বললেন, কিভাবে
আমার পুত্র হবে, অথচ কোন মানব আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি কখনো সীমালঙ্ঘনকারীনীও ছিলাম না।
তিনি বললেন, এমনিতেই হবে। আপনার রব বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ সাধ্য এবং আমি
তাঁকে মানুষের জন্য একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই। এটাতো
এক স্থিরীকৃত ব্যাপার। অতঃপর তিনি রেহেম শরীফে সন্তান ধারণ করলেন এবং তৎসহ এক
দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন। (সূরা মারইয়াম/১৬-২২)
উল্লিখিত আয়াতগুলোতে
আল্লাহ্ পাক-এর কুদরত,
হযরত মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম-এর পবিত্রতা, বিনয়-
নম্রতা, পর্দাশীলতা ও ধৈর্যের প্রকাশ ঘটেছে।
হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর সততা, আত্মসংযম ও পর্দাশীলতা
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা যবীহুল্লাহ্, হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্
সালাম-এর যখন বিবাহের বয়স হয়ে গেল তখন আরবের সম্ভ্রান্তশীলা মহিলারা হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আব্বা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর কাছে
বিবাহ বসার প্রস্তাব দিল। কেউ কেউ রাস্তার মোড়ে মোড়ে তাঁকে দেখার জন্য দাঁিড়য়ে
থাকতে শুরু করল।
এমনকি যবীহুল্লাহ, হযরত
আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর সঙ্গে হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম-এর বিবাহ হওয়ার
পরেও ‘ফাতিমা বিনতে মূর আল খুছয়ামিয়া’ নামক এক মহিলা তাঁর সঙ্গে বিবাহ
বসার প্রস্তাব দিল এবং সোহ্বত এখতিয়ারের আকাংক্ষা পেশ করল। কিন্তু হযরত আব্দুল্লাহ
যবীহুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে সোজা বাড়িতে চলে গেলেন। এক কথায়
তিনি কোন মহিলার দিকে দৃষ্টি দিলেন না এবং কোন কৌতুহল প্রকাশ করলেন না। কারণ, তিনি
হবেন আখিরী রসূল,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানিত পিতা।
নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা
করা হলো-
[৯১-৯৪]
وروى ابو نعيم عن ابن عباس
مرفوعا لم يلتق ابواى قط على سفاح. (ابن العساكر، كنز العمال، البراهين القطعين فى
مولد خير البرية للكرامت على جونفورى رحمة الله عليه، نشر الطيب ص 13)
অর্থঃ- “হযরত আবূ
নুয়াইম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমা হতে মারফু’
সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,)
আমার সম্মানিত পিতা ও সম্মানিতা মাতাগণ কখনো অশ্লীল ও
অশালীন কাজে লিপ্ত হন নাই।”
(ইবনে আসাকির, কানযুল উম্মাল, আল্
বারাহীনুল্ ক্বাত্বইয়্যাহ্ ফী মাউলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ লিল্ কারামত আলী জৌনপুরী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
নশরুত্ ত্বীব ১৪ পৃষ্ঠা)
[৯৫-৯৮]
لم يزل الله ينقلنى من الاصلاب
الطيبة الى الارحام الطاهرة مصفا مهذبا لاتنشعب شعبتان الا كنت فى خيرهما.
(البراهين القطية فى مولد خير البرية، مواهب اللدنية ج1 ص13، سيرة حلبية ج1 ص31، نشر الطيب ص14-15)
অর্থঃ- “(হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,) সর্বদা আল্লাহ্ পাক আমাকে পবিত্র
পৃষ্ঠ মুবারক হতে পবিত্র রেহেম মুবারকে স্থানান্তরিত করতেছিলেন। (যা পূর্ব হতেই)
পবিত্র ও সুসজ্জিত ছিল। যখন দুটি শাখা বের হত তখন আমি এ দুই শাখার সর্বোত্তম
শাখায় থাকতাম। (অর্থাৎ যখন আমার নসবনামায় পিতা-মাতার মধ্যে কারো দু’সন্তান
হতেন, তখন আমি তাদের মধ্যে যিনি উত্তম হতেন তাঁর পিঠ মুবারক অথবা রেহেম শরীফে আসতে
ছিলাম।)” (আল্ বারাহীনুল কাত্বইয়্যাহ্ ফী মাউলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ, মাওয়াহিবুল
লাদুন্নিয়া ১ম জিঃ ১৩ পৃষ্ঠা, সীরাতে হালাবিয়া ১ম জিঃ ৩১ পৃষ্ঠা, নশরুত্
তীব ১৪,১৫ পৃষ্ঠা)
[৯৯-১০১]
قال فى "تحقيق المقام على
كفاية العوام" استدل بعضهم بقوله صلى الله عليه وسلم لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين
الى ارحام الطاهرات على ان جميع ابائه صلى الله عليه وسلم وجميع امهاته الى ادم
وحواء ليس فيهم كافر لانه لايوصف بالطهارة الا المؤمن. (تفسير الكبير ج 13 ص39، 40، البراهين القطعية فى مولد خير البرية، تحقيق المقام على كفاية العوام)
অর্থঃ- “তাহক্বীকুল্
মাক্বাম আলা কিফাইয়াতিল্ আওওয়াম’ নামক কিতাবে বলা হয়েছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন,
لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين
الى ارحام الطاهرات.
অর্থঃ- “আমি সদা
সর্বদা পবিত্র পুরুষগণের পৃষ্ঠ মুবারক হতে পবিত্র নারীগণের রেহেম শরীফে
স্থানান্তরিত হয়ে আসতেছিলাম।” এই মহা পবিত্র হাদীস শরীফ দ্বারা অধিকাংশ আলিম দলীল পেশ
করেছেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা ও পিতামহ আলাইহিমুস্
সালামগণ এবং মাতা ও মাতামহ আলাইহিন্নাস্ সালামগণ, হযরত আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস্
সালাম পর্যন্ত কেউ কাফির ছিলেন না। কেননা, ত্বহারাত বা পবিত্রতা মু’মিন ছাড়া
অন্য কারো জন্য ছিফত (গুন,
বৈশিষ্ট্য) হতে পারে না। (তাফসীরুল কবীর ১৩ জিঃ ৩৯, ৪০
পৃষ্ঠা, আল বারাহীনুল ক্বাত্বইয়্যাহ্ ফী মাউলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ, তাহক্বীকুল
মাকাম আলা কিফাইয়াতিল্ আওওয়াম)
উল্লিখিত দলীল ভিত্তিক
আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানিত
পিতা-মাতা এবং পূর্বতন কেউই ব্যভিচারী, বেপর্দা, কাফির, মুশরিক
এবং অশ্লীল ও অশালীন কাজে লিপ্ত ছিলেন না। বরং সবাই পবিত্র থেকে পবিত্রতম ছিলেন।
তাঁদের মধ্যে কেউ ছিলেন নবী, রসূল আবার কেউ ছিলেন ওলী আল্লাহ্।
[১০২-১০৫]
وروى ان عبد الله قد مر على
امراة من بنى اسد كانت قائمة عند الكعبة اسمها رقيقة بنت نوفل وفى رواية قتيلة
بالقاف مصغرتين كلتاهما، فلما نظرت الى وجه عبد الله عشقت لجماله الابهى وقالت على
ان اتيك بمائة من الابل قد نحرت منك اولا. فغلبت العفة والحياء على بعد الله فابى
ومضى. (البراهين القطعية فى مولد خير البرية. مواهب اللدنية ج1 ص19، سيرة ابن هشام، سيرة حلبية).
অর্থঃ- “বর্ণিত
আছে যে, নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম একদা বণী আসাদ গোত্রের
একজন মহিলার পাশ দিয়ে গেলেন, যে কা’বা শরীফের নিকটে দাঁড়িয়ে ছিল, তার নাম ‘রুক্বাইক্বা
বিনতু নাওফাল; অন্য বর্ণনায় ‘কুতাইলা’ উল্লেখ আছে। কুতাইলা ও রুক্বাইকা উভয় নামই তাছগীরের ছিগাহ্। যখন সে মহিলা হযরত
আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর চেহারা মুবারকের দিকে দৃষ্টি দিল, তখন তাঁর
চমকিত রূপের (নূরের) আশিকা (মাতোয়ারা) হয়ে গেল। আর বলতে লাগলঃ হে হযরত আব্দুল্লাহ
আলাইহিস্ সালাম আপনি যদি আমার দিকে আসতেন, আমি ওয়াদা করতেছি পূর্বে আপনার
জানের বিনিময়ে যে ১০০ উট কুরবানী করা হয়েছিল, আমি সেই ১০০ উট আপনার পক্ষ থেকে
পরিশোধ করে দিতাম। পবিত্রতা ও লজ্জাশীলতা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর মধ্যে
প্রবল হলো। তাই তিনি মহিলার কথা প্রত্যাখ্যাণ করলেন এবং সেখান থেকে চলে গেলেন।
(আল্ বারাহীনুল ক্বাত্ইয়্যাহ ফী মাউলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ, মাওয়াহিবুল
লাদুন্নিয়া ১ম জিঃ ১৯ পৃষ্ঠা, সীরাতু ইবনে হিশাম, সীরাতে হালাবিয়া)
[১০৬-১০৮]
مر يوما اخر على امرأة سميت
خثعمية كانت ماهرة فى الكهانة متمؤلة على درجة قصوى فارادة ان تخادع عبد الله
بالمال فقالت مثل ماقالت الاولى، فلم ينخدع عبد الله بقولها، واحتال لها بانى ارجع
الى منزلى وارمى الجمرات ثم اتيك بعدها فلما رجع بمنزله صحب امنة وانتقل النور
المحمدى من صلبه الطيب الى رحمها، فمر على خثعمية عبد الله فى ساعة اخرى فما وجدت
ذلك النور من وجهه لامعا، فقالت له هل صحبت امراة بعد ماذهبت عنى مسرعا، قال نعم
صحبت حليلتى امنة بنت وهب ليلا، فقالت الان مالى بك حاجة لانى كنت قد رايت اولا فى
جبهتك نورا فاردت ان يكون ذلك النورلى فصار لغيرى نصيبا. (البراهين القطعية فى
مولد خير البرية، مواهب ج1-ص19، نشر الطيب)
অর্থঃ- “এক দিনের
ঘটনা। হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম ‘খুছয়ামিয়া’ নামের
কোন এক বিখ্যাত গণৎকার মহিলার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ মহিলাটি অত্যাধিক সম্পদশালী
ও হুশিয়ার ছিল, সে প্রতারণামূলক ভাবে হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-কে মাল দেয়ার ইচ্ছা করল।
প্রথম মহিলাটি যা বলেছিল এ মহিলাটিও তাই বলল অর্থাৎ বিবাহের প্রস্তাব দিল। হযরত
আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম তার কথায় ধোকা খেলেন না। তিনি পাথর নিক্ষেপের ওজুহাত
দিয়ে বাড়ী চলে গেলেন,
এবং বললেন পরে আসব। হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম বাড়ী
এসে হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম-এর সাথে অবস্থান করলেন। এতে নূরে মুহম্মদী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পৃষ্ঠ মুবারক থেকে হযরত আমিনা আলাইহাস্
সালাম-এর পবিত্র রেহেম শরীফে চলে গেলেন। হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম হামেলা হলেন।
নূরনবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম-এর রেহেম শরীফে
আরামে বিশ্রাম করতেছিলেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম হঠাৎ একদিন উক্ত
খুছয়ামিয়া নামের মহিলাটির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন সেই মহিলাটি হযরত আব্দুল্লাহ
আলাইহিস্ সালাম-এর চেহারায় (কপালে) উক্ত নূর দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞাসা করল, হে হযরত
আব্দুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম! আপনি সেদিন আমার নিকট হতে দ্রুত যাবার পর কোন মহিলার
নিকটবর্তী হয়েছিলেন কি?
হযরত আব্দুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম জওয়াবে বললেন, হ্যাঁ।
রাতে আমার স্ত্রী হযরত আমিনা বিনতু ওহাব আলাইহাস্ সালাম-এর নিকটবর্তী হয়েছিলাম।
তখন খুছয়ামিয়া বলতে লাগলো,
হে আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম! এখন আর আপনার নিকট আমার কোন
প্রয়োজন নাই। কেননা,
প্রথমে আমি আপনার কপাল মুবারকে নূর দেখেছিলাম, তাই সেই
নূর মুবারক পাওয়ার আশায় তখন বলেছিলাম এখন তো সেই মুবারক নূর অন্য মহিলার ভাগ্যে
চলে গেছেন।” (আল্ বারাহীনুল্ ক্বাতইয়্যাহ ফী মাউলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ, মাওয়াহিব
১ম জিঃ ১৯ পৃষ্ঠা,
নশরুত্ ত্বীব)
[১০৯]
وفى روايةن التى عرضت نفسها على
عبد الله كانت هى اخت ورقة بن نوفل بن عم خديجة الكبرى وفى رواية اخرى كانت هى
امراة عدوية نسبا كان اسمها ليلى، ويمكن ان كلهن عرضن انفسهن عليه عشقا. (البراهين
القطعية فى مولد خير البرية.)
অর্থঃ- “অন্য এক
রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে,
যে মহিলাটি নিজেকে হযরত আব্দুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম-এর
সামনে পেশ করেছিল,
মহিলাটি ওয়ারাকা বিন নওফাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর
বোন ছিলেন। হযরত ওয়ারাকা বিন নওফাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত খাদীজাতুল্
কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর চাচাত ভাই ছিলেন। আর একটি সূত্রে বর্ণিত আছে
যে, উক্ত মহিলাটি আদাবিয়া বংশিয়া ছিল, তার নাম লাইলা।
মূলকথা হচ্ছে যে, হয়ত
উল্লিখিত বর্ণনাগুলিতে যে সমস্ত মহিলার উল্লেখ হয়েছে তারা প্রত্যেকেই পৃথক পৃথক
ভাবে হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর প্রতি আশিকা হয়ে নিজেদের প্রতি তাকে আহবান
জানিয়ে ছিল।” (আল্ বারাহীনুল ক্বাতইয়্যাহ্ ফী মাউলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ)
উল্লিখিত দলীল ভিত্তিক
আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা-মাতা
আলাইহিমাস্ সালাম এবং উর্ধ্বতন কেউ বেপর্দা, বেহায়া, ব্যাভিচারী
ইত্যাদি ছিলেন না।
মূলকথা হলো, ইসলাম
পূর্ব যুগেও যাঁরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর খাছ বান্দা ও বান্দি ছিলেন তাঁরা সকলেই
লজ্জাশীল, পবিত্রা ও পর্দাশীল ছিলেন। কেউই বেহায়া বা বেপর্দা ছিলেন না।
জাহিলিয়াত যুগে পুরুষ-মহিলারা বস্ত্রহীন হয়ে বেপর্দার সাথে বাইতুল্লাহ শরীফ
তাওয়াফ করত
জাহিলিয়াত তথা ইসলাম আগমনের পূর্ব যুগে পর্দা
বলতে কিছু ছিলনা। তখন পুরুষ-মহিলারা বস্ত্রহীন হয়ে বেপর্দার সাথে বাইতুল্লাহ শরীফ
তাওয়াফ করত। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
[১১০-১১৫]
ان ابا هريرة رضى الله عنه قال
بعثنى ابوبكر فى تلك الحجة فى مؤذنين يوم النحر نؤذن بمنى ان لا يحج بعد العام
مشرك ولا يطوف بالبيت عريان قال حميد بن عبد الرحمن ثم اردف رسول الله صلى الله
عليه وسلم عليا فامره ان يؤذن ببراءة. قال ابو هريرة فاذن معنا على فى اهل منى يوم
النحر لايحج بعد العام مشرك ولا يطوف بالبيت عريان- (بخارى شريف كتاب الصلوة باب
مايستر من العورة، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير
البارى)
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমাকে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু (যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ থেকে তাঁকে
হজ্জের আমীর বানানো হয়েছিল) কুরবানীর দিন ঘোষকগণের সাথে মিনায় এ ঘোষণা করার জন্য
পাঠালেন যে, এ বছরের পর কোন মুশরিক বাইতুল্লাহর হজ্ব করতে পারবে না এবং কেউ বস্ত্রহীন হয়েও
বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারবে না। হযরত হুমাইদ ইবনু আব্দির রহমান রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলেন, অতপর হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুকে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে প্রেরণ করেন আর
তাঁকে সূরা বারায়াতের (প্রথম অংশের) ঘোষণা করার নির্দেশ দেন। হযরত আবূ হুরাইরা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, তখন আমাদের সাথে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
কুরবানীর দিন মিনায় ঘোষণা দেন যে, এবছরের পর থেকে আর কোন মুশরিক হজ্জ্ব করতে পারবে না এবং কেউ
বস্ত্রহীন হয়েও আর তাওয়াফ করতে পারবেনা।” (বুখারী শরীফ কিতাবুছ্ ছলাহ্ বাবু
মা ইয়াস্তুরু মিনাল আওরাহ্,
ফতহুল বারী, উমদাতুল কারী, ইরশাদুস্
সারী, শরহুল্ কিরমানী,
তাহসীরুল্ বারী)
[১১৬-১২০]
عن ابن عباس رضى الله عنه قال
كانت المرأة تطوف بالبيت وهى عريانة فتقول من يعيرنى تطوأفا تجعله على فرجها
وتقول:
اليوم يبدو بعضه اوكله فما
بدامنه فلا احله فنزلت هذه الاية خذوا زينتكم عند كل مسجد. (مسلم شريف كتاب
التفسير باب فى قوله تعالى خذوا زينتكم عند كل مسجد، مسلم بشرح النووى، فتح الملهم
للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، المفهم)
অর্থঃ- “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহিলারা
বস্ত্রহীন আবস্থায় বাইতুল্লাহ্র তাওয়াফ করত এবং বলতো, কে আমাকে
একটি কাপড় ধার দিবে?
উদ্দেশ্য এর দ্বারা স্বীয় আবরু হিফাজত করাব। আর এও বলতো, আজ খুলে
যাচ্ছে কিয়দাংশ বা পূর্ণ অংশ। তবে যে অংশটা খুলে সেটা আমি আর কখনো হালাল করবো না।
তখন নাযিল হলো, “তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করবে।” (মুসলিম
শরীফ কিতাবুত্ তাফসীর,
মুসলিম বিশ্রহিন্ নববী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ
উসমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উসমানী, আল্ মুফহিম)
পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পূর্বে
উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুন্নাগণের অবস্থা
হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
[১২১-১৪৫]
عن انس رضى الله عنه قال بنى
على النبى صلى الله عليه وسلم بزينب ابنة جحش بخبز ولحم فارسلت على الطعام داعيا
فيجئ قوم فيأكلون ويخرجون ثم يجئ قوم فياكلون وخرجون فدعوت حتى مااجد احدا ادعو
فقلت يانبى الله ما اجد احدا ادعوه، قال ارفعوا طعامكم، وبقى ثلاثة رهط يتحدثون فى
البيت فخرج النبى صلى الله عليه وسلم فانطلق الى حجرة عائشة، فقال السلام عليكم
اهل البيت ورحمة الله فقالت وعليك السلام ورحمة الله كيف وجدت اهلك بارك الله لك
فتقرى حجر نسائه كلهن يقول لهن كما يقول عائشة، ويقلن له كما قالت عائشة ثم رجل
النبى صلى الله عليه وسلم فاذا ثلاثة من رهط فى البيت يتحدثون وكان النبى صلى الله
عليه وسلم شديد الحياء فخرج منطلقا نحو حجرة عائشة فما ادرى اخبرته او اخبر ان
القوم خرجوا فرجع حتى اذا وضع رجله فى اسكفة الباب داخلة واخرى خارجة ارخى الستر
بينى وبينه، وانزلت اية الحجاب. (بخارى شريف كتاب التفسير سورة الاحزاب، فتح
البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح
النووى، فتح الملهم، المفهم، تفسير القرطبى، تفسير الطبرى، تفسير المظهرى، الخازن،
تفسير البغوى، تفسير احكام القران للجصاص، احكام القران لابن العربى، تفسير ابن
كثير، تفسير شيخ زاده، حاشية الشهاب، تفسير السمر قندى، تفسير روح البيان، تفسير
روح المعانى، تفسير الماوردى، تفسير كمالين)
অর্থঃ- “হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত
যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এর ওলীমা উপলক্ষ্যে নবী করীম
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু রুটি গোশ্তের ব্যবস্থা করলেন। তারপর আমাকে
লোকদেরকে খাবার খাওয়ানোর জন্য ডেকে আনতে পাঠালেন। একদল লোক এসে খেয়ে বের হয়ে গেল।
তারপর আর একদল খেয়ে বের হয়ে গেল। এরপর আবার আমি ডাকতে গেলাম কিন্তু কাউকে আর ডেকে
পেলাম না। আমি বললাম,
ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর কাউকে
ডেকে পাচ্ছি না। তিনি বললেন, খানা উঠিয়ে নাও। তখন তিন ব্যক্তি ঘরে রয়ে গেল; তারা
কথাবার্তা বলছিল। তখন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হয়ে হযরত আয়িশা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর হুজরার দিকে গেলেন এবং বললেন, আস্
সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল বাইত্ ওয়া রহমতুল্লাহ। হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহা বললেন, ওয়া আলাইকা ওয়া রহমতুল্লাহ। আল্লাহ্ পাক আপনাকে বরকত দিন, আপনার
আহ্লকে কেমন পেলেন?
এভাবে তিনি পর্যায়ক্রমে সব উম্মুল মু’মিনীনগণের
হুজরায় গেলেন এবং হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে যেমন বলেছিলেন তাদেরও
অনুরূপ বললেন। আর তারা তাঁকে সে জবাবই দিয়েছিলেন যেমন হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা দিয়েছিলেন। তারপর নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে এসে
তিন ব্যক্তিকেই ঘরে আলাপে মশগুল দেখতে পেলেন। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম খুব লাজুক ছিলেন। তাই তাদের দেখে লজ্জা পেয়ে আবার হযরত আয়িশা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর হুজরার দিকে গেলেন। তখন, আমি
স্মরণ করতে পারছি না,
অন্য কেউ না আমি তাকে লোকদের বের হয়ে যাওয়ার খবর দিলাম।
তিনি ফিরে এসে দরজার চৌকাঠের ভিতরে এক পা মুবারক ও বাইরে এক পা মুবারক রেখে আমার ও
তাঁর মধ্যে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন এবং আল্লাহ্ তায়ালা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।” (বুখারী
শরীফ কিতাবুত্ তাফসীর সূরাতুল্ আহযাব, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল
ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী,
শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম
শরীফ, শরহুন্ নববী,
ফতহুল মুলহিম, আল্ মুফহিম, তাফসীরুল
কুরতুবী, তাফসীরুত্ তাবারী,
তাফসীরুল্ মাযহারী, তাফসীরুল্ খাযিন, তাফসীরুল
বাগবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাছছাছ, আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী, তাফসীরে
ইবনে কাছীর, তাফসীরে শাইখ যাদাহ্,
হাশিয়াতুশ্ শিহাব, তাফসীরুস্ সামরকান্দী, তাফসীরে
রূহুল্ বয়ান, তাফসীরে রূহুল্ মায়ানী,
তাফসীরুল মাওয়ারাদী, তাফসীরে কামালাইন)
[১৪৬-১৫১]
عن انس رضى الله عنه قال قال
عمر رضى الله عنه قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم يدخل عليك البر والفاجر،
فلوامرت امهات المؤمنين بالحجاب، فانزل الله اية الحجاب. (بخارى شريف كتاب التفسير
سورة الاحزاب، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير
البارى)
অর্থঃ- “হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার কাছে ভাল ও মন্দ লোক আসে। আপনি যদি উম্মাহাতুল্ মু’মিনীনগণকে
পর্দার আদেশ দিতেন তবে ভাল হত। তারপর আল্লাহ্ পাক পর্দার আয়াত নাযিল করেন।” (বুখারী
শরীফ কিতাবুত্ তাফসীর সূরাতুল্ আহযাব, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল
কারী, ইরশাদুস্ সারী,
শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী)
[১৫২-১৫৭]
عن عائشة رضى الله عنها ان
ازواج النبى صلى الله عليه وسلم كن يخرجن بالليل اذا تبرزن الى المناصع وهو صعيد
افيح فكان عمر يقول للنبى صلى الله عليه وسلم احجب نسائك فلم يكن رسول الله صلى
الله عليه وسلم يفعل فخرجت سودة بنت زمعة زوج النبى صلى الله عليه وسلم ليلة من
الليالى عشاء وكانت امرأة طويلة فناداها عمر الا قد عرفناك ياسودة حرصا على ان
ينزل الحجاب فانزل الله اية الحجاب. (بخارى شريف كتاب الوضوء باب خروج النساء الى
البراز، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى)
অর্থঃ- “হযরত
আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণ (উম্মুল মু’মিনীনগণ) রাতের বেলায় হাজত পূরণের
জন্যে খোলা মাঠে যেতেন। আর হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (প্রায়ই) নবী করীম
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতেন, “আপনার বিবিগণকে পর্দায় রাখা
দরকার।” কিন্তু হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা করেননি। একরাতে
ইশার সময় নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন
হযরত সাওদা বিনতে যাময়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হাজত পূরণে বের হলেন। তিনি
ছিলেন লম্বা মহিলা। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁকে ডেকে বললেন, হে হযরত
সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আমি কিন্তু আপনাকে চিনে ফেলেছি।’ এটা এ
আশায় বলেছিলেন, যাতে পর্দার হুকুম নাযিল হয়। অতপর আল্লাহ্ পাক পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল করেন।” (বুখারী
শরীফ- কিতাবুল্ উযূ বাবু খুরুজিন্ নিসা ইলাল্ বারায. ফতহুল বারী, উমদাতুল
ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী,
শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী) [১৫৮-১৮০]
عن عائشة رضى الله عنها قالت
خرجت سودة بعد ماضرب الحجاب لحاجتها وكانت امرأة جسيمة لاتخفى على من يعر فها
فرأها عمربن الخطاب فقال يا سودة اما والله ماتخفين علينا فانظرى كيف تخرجين، قالت
فانكفأت راجعة ورسول الله صلى الله عليه وسلم فى بيتى وانه ليتعثى وفى يده عرق،
فدخلت فقالت يارسول الله انى خرجت لبعض حاجتى فقال لى عمر كذا وكذا، قالت فاوحى
الله اليه، ثم رفع عنه، وان العرق فى يده ما وضعه فقال انه قد اذن لكن ان تخرجن
لحاجتكن قوله ان تبدوا شيئا او تخفوه فان الله كان بكل شئ عليما. لاجناح عليهن فى
ابائهن ولاابنائهن ولااخوانهن ولا ابناء اخوانهن ولاابناء اخواتهن ولانسائهن ولاما
ملكت ايمانهن واتقين الله ان الله كان على كل شئ شهيدا. (بخارى شريف كتاب التفسير
سورة الاحزاب، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير
البارى، مسلم شريف، شرح النووى، المفهم، فتح الملهم، احكام القران للقرطبى، تفسير
ابن كثير، تفسير المظهرى، تفسير الخازن، تفسير البغوى، تفسير مدارك التنزيل، تفسير
روح المعانى، تفسير السمر قندى، شيخ زاده، حاشية الجمل على الجلالين)
অর্থঃ- “হযরত
আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পর্দার
বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে
বাইরে যান। হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এমন স্বাস্থ্যবতী ছিলেন যে, পরিচিত
লোকদের থেকে তিনি নিজকে গোপন রাখতে পারতেন না। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে দেখে বললেন, হে হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা জেনে রাখুন,
আল্লাহ্ পাক-এর কসম, আমাদের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকতে
পারবেন না। এখন দেখুন,
কেমন করে বাইরে যাবেন? হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহা বলেন, (এ কথা শুনে) হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ফিরে আসলেন। আর এসময় হযরত
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে রাতের খানা খাচ্ছিলেন। তাঁর
হাতে ছিল টুকরা হাড্ডি। হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ঘরে প্রবেশ করে
বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে
গিয়েছিলাম। তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাকে এমন এমন কথা বলেছেন।
হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, এসময় আল্লাহ্ পাক তাঁর উপর ওহী
নাযিল করেন। ওহী অবতীর্ণ হওয়া শেষ হল, হাড় টুকরা তখনও তাঁর হাতেই ছিল, তিনি তা
রাখেননি। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্যই
প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যেতে অনুমতি দেয়া হয়েছে। (অপ্রয়োজনে নয়) আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ তোমরা কোন বিষয়
প্রকাশ কর অথবা গোপন রাখ,
আল্লাহ্ পাক সকল বিষয় জ্ঞাত। নবী পত্মীগণের জন্য কোন গুণাহ্
নাই, তাদের পিতা, পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, সাধারণ মহিলা,
এবং দাসীদের ব্যাপারে। তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই
আল্লাহ্ পাক সব কিছুর উপর দৃষ্টিবান।” (বুখারী শরীফ কিতাবুত্ তাফসীর
সূরাতুল্ আহযাব, ফতহুল্ বারী,
উমদাতুল্ ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্
কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী,
মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, আল্
মুফহিম, ফতহুল্ মুলহিম,
আহকামুল্ কুরআন লিল্ কুরতুবী, তাফসীরুত্ ত্ববারী, তাফসীরে ইবনে
কাছীর, তাফসীরুল্ মাযহারী,
তাফসীরুল্ খাযিন, তাফসীরুল্ বাগবী, তাফসীরে
মাদারিকুত্ তানযীল,
তাফসীরে রূহুল্ মায়ানী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরুল্
মানার, তাফসীরুস্ সামরকন্দী,
শাইখ যাদাহ, হাশিয়াতুল্ জামাল আলাল জালালাইন)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, উম্মুল মু’মিনীনগণ
পর্দা ফরয হওয়ার পূর্বেও পর্দা ও শালীনতাকে বজায় রেখেই চলাফেরা করতেন। আর পর্দা
ফরয হওয়ার পর তো বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকেই বের হতেন না। প্রয়োজনে বের হলেও সম্পূর্ণ
শরীর ঢেকে অর্থাৎ খাছ পর্দার সহিত বের হতেন। (অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment