হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ২৭৬-৩৭৭) (খ)

হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ২৭৬-৩৭৭) (খ)


ফিজার জিহাদে’ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতী
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক যখন ১৪ মতান্তরে ১৫ বৎসর। ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইতি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক বয়স মুবারক যখন ২০ বৎসর তখন ফিজারের জিহাদ সংঘটিত হয়। এ জিহাদ বেঁধেছিলো দু’টি গোত্রের মধ্যে। একদিকে ছিলেন কুরাইশ ও কিনানা এবং অপর দিকে ছিলো কায়স আয়লান গোত্র। এই জিহাদে কুরাইশ ও কিনানা উনাদের নেতৃত্বে ছিলেন হারব ইবনে উমাইয়া।
ফিজার জিহাদের কারণ ছিলো এই যে, উরওয়াতুর রিহাল (ইবনে উতবা ইবনে জা’ফর ইবনে কিলাব ইবনে রবীয়াহ ইবনে আমের ইবনে ছা’ছা’য়া ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে বকর ইবনে হাওয়াযিন) তিনি নু’মান ইবনে মুনজিরের একটি ব্যবসায়ীক কাফিলাকে আশ্রয় দেন। এ খবর শুনে বানূ কিনানা গোত্রের বানূ দ্বামরা শাখার জনৈক ব্যক্তি বাররায ইবনে কায়েসকে বলে, কিনানার হক্ব নষ্ট করে তুমি নু’মানকে ব্যবসা করার অনুমতি দিলে? উরওয়াতুর রিহাল বললো, হ্যাঁ দিয়েছি। সকলের হক্ব নষ্ট হলেও। এ কথার পর উরওয়াতুর রিহাল চলে গেলো। এদিকে বাররাদ্ব প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে সুযোগের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লো। মক্কা শরীফ-এর উচু অঞ্চলের যী তিলাল নামক স্থানের দক্ষিণ দিকে পৌঁছে উরওয়াহ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং সুযোগ বুঝে বাররায-এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে হত্যা করে ফেলে। আর এই ঘটনাটি ঘটে হারাম বা নিষিদ্ধ মাসে। এ কারণে তা ফিজার বা ফুজজার নামে আখ্যায়িত করা হয়।
ফিজারের জিহাদ সম্পর্কে বাররায ইবনে কায়েস বলেন,
وداهية تهم الناس قبلى +
 شددت لها بنى بكر ضلوعى
هدمت بها بيوت بنى كلاب +
 وارضعت الموالى بالضروع
আমার আগে অনেক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, যা মানুষকে উদ্বিগ্ন করতো। আমি তাতে দৃঢ়ভাবে বানু বাকরের পক্ষ নিয়েছিলাম। তাদেরকে সাথে নিয়ে বানূ কিলাব-এর ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছি। আর তাদের মিত্রদেরকে চরম অবমাননা ও লাঞ্ছনার শিকার করেছি।”
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি কুরাইশগণদের নিকট এসে সংবাদ দিলো যে, বাররায সে উরওয়াকে খুন করে ফেলেছে। তাও আবার হারাম বা নিষিদ্ধ মাসে। অতএব, তোমরা হাওয়াযিন গোত্র যাতে টের না পায় সেভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাও। কিন্তু এর মধ্যে হাওয়াযিন ঘটনাটি জেনে ফেলে। তারা কুরাইশদের ধাওয়া করে। কুরাইশরা হারামে প্রবেশ করার পূর্বে হাওয়াযিনরা তাদেরকে নাগালে পেয়ে যায়। তখন সংঘর্ষ শুরু হয়। সারা দিন যুদ্ধ শেষে রাতের বেলায় কুরাইশরা হারামে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। ফলে হাওয়াযিনরা নিবৃত্ত হয়। পরদিন আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সংঘর্ষ কয়েকদিন অব্যাহত থাকে। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোক তাদের সরদার বা নেতাদের সাথেই যুদ্ধ করেন।
কুরাইশ ও কিনানার সব ক’টি গোত্রের নেতৃত্ব একজনের হাতে ছিলো। আর কায়েস-এর সবগুলো গোত্রের নেতৃত্ব অপর একজনের হাতে ছিল। স্মরনীয় যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন এ যুদ্ধে উপস্থিত হয়েছিলেন। উনার চাচাগণ উনাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
كنت انبل على اعمامى
আমি শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর উঠিয়ে আমার চাচাগণদের হাতে তুলে দিতাম।”
ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ফিজারের যুদ্ধ দীর্ঘকাল পর্যন্ত চলেছিলো।
হযরত সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আরব দেশে ফিজার সংঘটিত হয়েছিলো চারটি। এ যুদ্ধগুলোর সর্ব শেষ যুদ্ধ হলো এই ফিজারুল বারায। ফিজারুল বারাযের যুদ্ধ হয়েছে চার দিন। (তখনকার দিনের নাম অনুসারে) ১. শামতা, ২. আবলা। এই দুইদিনের লড়াই হয়েছে উকায-এর নিকট। ৩. আশ শুরব। চারদিনের মধ্যে এ দিনের যুদ্ধই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এ দিনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত ছিলেন। এ দিনে কুরাইশ ও বনু কিনানার দুই নেতা হারব ইবনে উমাইয়া এবং তার ভাই সুফিয়ান নিজেরা নিজেদেরকে শিকলে আটকে রাখে। যাতে বাহিনীর যোদ্ধারা পালিয়ে না যায়। এই দিনে কায়স গোত্র পালিয়ে যায়। তবে বানূ নাযর নিজেদের অবস্থায় অটল থাকে। ৪. হারীরা। এই দিনের যুদ্ধ হয়েছিলো নাখলার নিকট। তারপর বিবদমান উভয় পক্ষ আগামী বছর উকাযের নিকট যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। নির্দিষ্ট সময়ে তারা অঙ্গীকার পালণে লিপ্ত হলে উতবা ইবনে রবীয়া উটে সাওয়ার হয়ে ডাক দিয়ে বলে, ওহে মুদ্বার সম্প্রদায়! কোন যুক্তিতে তোমরা লড়াই করছো? জবাবে হাওয়াযিনরা বললো, আপনি কি প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন, বলুন। উতবা বললো, আমি সন্ধি করতে চাই। তারা বলল, সন্ধি কি শর্তে হবে বলুন? উতবা ইবনে রবীয়া বলল, আমাদের হাতে তোমাদের যে সব লোক নিহত হয়েছে, আমরা তোমাদেরকে তাদের রক্তপণ পরিশোধ করবো। তা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সম্পদ তোমাদের কাছে বন্ধক রাখব। আর তোমাদের নিকট আমরা যে রক্তপণ পাওনা আছি, তা মাফ করে দিব। শুনে হাওয়াযিনরা বলল, এই চুক্তির দায়িত্ব কে নিবে? উতবা বলল, আমি। হাওয়াযিনরা বলল, আপনি কে? উতবা বলল, আমি উতবা ইবনে রবীয়া। অবশেষে উক্ত প্রস্তাব অনুযায়ী সন্ধী স্থাপিত হয় এবং যুদ্ধরত লোকদের নিকট চল্লিশ ব্যক্তিকে প্রেরণ করা হয়। হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাদের একজন ছিলেন। যখন বনূ আমির ইবনে ছা’ছা’য়া দেখলো যে, বন্ধক তাদের হাতে এসে গেছে, তখন তারা তাদের রক্তপণের দাবি ত্যাগ করে এবং এভাবে ফিজার যুদ্ধের অবসান ঘটে। ঐতিহাসিক উমাবী ফিজার-এর যুদ্ধসমূহ এবং তার দিন-ক্ষণ সম্পর্কে ‘আছরাম’ সূত্রে বিস্তারিত আলোপাত করেছেন। হযরত আছরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হলেন হযরত মুগীরা ইবনে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৬ষ্ঠ জিলদ ২৮৯ ও ২৯০ পৃষ্ঠা, সীরাতুল নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম)
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফিজার যুদ্ধে তাশরিফ নেয়ার ফলে বানূ কায়স আয়লান গোত্র তথা ইহুদী, মুশরিক ও মুনাফিকরা চরমভাবে পরাজিত হয়। অপর দিকে বানূ কুরাইশগণ উনারা বিজয় লাভ করেন। হক্ব ও সত্যের প্রকাশ হয়। সুবহানাল্লাহ!
ইহুদী, নাছারা ও মুশরিকরা সর্বদাই এই ষড়যন্ত্র করতো যে, কিভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়া যায়, উনার আহাল ও ইয়াল অর্থাৎ পরিবারগণ উনাদেরকে শহীদ করা যায়। উনার বংশ মুবারককে ধ্বংস করা যায়। নাঊযুবিল্লাহ!
কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি হক্ককে অনন্তকাল পর্যন্ত দায়িম ক্বায়িম রাখবেন। যেটা মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা।
কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
قل جاء الحق و زهق الباطل ان الباطل كان زهوقا
অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, হক্ব এসেছে, বাতিল ধ্বংস হয়েছে। নিশ্চয়ই বাতিল ধ্বংস হওয়ারই যোগ্য।” (সূরা বানী ইসরাইল : আয়াত শরীফ ৮১)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হক্ব বা সত্য। তিনি বাতিল মিটানেওয়ালা। উনার মধ্যেই সর্বপ্রকার বিজয় নিহিত রয়েছে। আর উনার অসন্তুষ্টি ও বিরোধিতায় চির পরাজয়, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান, হালাকী ও ধ্বংস। কাজেই ফিজার যুদ্ধে হক্ব ও নাহক্বের পার্থক্য হয়ে যায়। আর হক্ব ও সত্যের বিজয়ের ঝা-া ক্রমান্বয়ে প্রকাশ পেতে থাকে। সুবহানাল্লাহ!


নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘হিলফুল ফুযুল’-এ তাশরীফ এবং অনুমোদন
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله و يغفرلكم ذنوبكم و الله غفور رحيم-
অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, তোমরা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি পেতে চাও, তাহলে তোমরা আমার অনুসরণ-অনুকরণ করো, তবেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন, তোমাদের গুনাহখতা মাফ করবেন আর আল্লাহ পাক তিনি অতিব ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ৩১)
হাদীছ শরীফ-এ আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجرمأة شهيد
অর্থ: “যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ফিতনা-ফাসাদের যামানায় একটি সুন্নতকে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে, সে একশত শহীদের ফযীলত পাবে।” (বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)
ফিযার জিহাদের অবসানের পর পবিত্র মক্কা শরীফ-এ শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে, মক্কা শরীফ-এর সম্ভ্রান্ত ও শান্তিপ্রিয় গোত্রসমূহ, অর্থাৎ বানু হাশিম, বানু মুত্তালিব, যুহরা, ইবনে কিলাব এবং বানু তায়িস উনারা ‘হিলফুল ফুযুল’-এর যে চুক্তিগুলো রয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত আগ্রহী হলেন, যেই চুক্তিগুলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের ২০ বৎসর পূর্বে যিলক্বাদ মাসে ফিজারের জিহাদের ৪ মাস পরে বাস্তবায়িত হয়েছিলো। যা আল্লাহ পাক উনার হাবীব আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিক নিদের্শনায় পরিচালিত হয়েছিলো। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ২৯১ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য যে, হিলফুল ফুযুল ছিলো আরবের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠতম শপথ, অঙ্গিকার বা চুক্তি। এ ব্যাপারে সর্বপ্রথম যিনি মুখ খুলেন এবং যিনি এর প্রস্তাব উত্থাপন করেন, তিনি হলেন যুবায়ির ইবনে আব্দুল মুত্তালিব। যিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ভাই।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن حضرت محمد بن جبير بن مطعم رضى الله تعالى عنه عن أبيه- قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم شهدت مع عمومتى حلف المطتبين فماأحب أن أنكثه - وإن لى حمر النعم-
অর্থ: “হযরত মুহম্মদ ইবনে যুবায়ির ইবনে মুত্বয়িম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতার নিকট থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, “আমি আমার চাচাদের সঙ্গে হিলফুল মুতাইয়িবীনে উপস্থিত ছিলাম। এখন তা আমি ভঙ্গ করতে পছন্দ করি না; এর বিনিময় যদি কেউ আমাকে বহু মূল্যবান লাল উটও দেয়।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ২৯১ পৃষ্ঠা, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ)
অর্থাৎ অত্র হাদীছ শরীফ-এ ‘হিলফুল মুতাইয়িবীন, বলতে হিলফুল ফুযুলকে বুঝানো হয়েছে। আর ‘হিলফুল মুতাইয়িবীন’ নাম রাখার কারণ হচ্ছে, এক সময় কুরাইশগন অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিলেন কুসাই-এর ইন্তিকালের পর। কুশাই কর্তৃক উনার পুত্র আব্দুদারকে, সিকায়া, রিফাদা, লিওয়া, নাদওয়া ও হিজাবার দায়িত্ব প্রদানকে কেন্দ্র করে বিরোধ ছিলো। এই সিদ্ধান্তে বানু আবদে মানাফের মধ্যে আপত্তি ছিলো। কুরাইশের সকল গোত্র এ ব্যাপারে সোচ্চার হয় এবং নিজ নিজ পক্ষের সহযোগিতা করার ব্যাপারে পরস্পর অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। এ খবর শুনে আবদে মানাফ গোত্রের লোকজন একটি পাত্রে সুগন্ধি মেখে তাতে হাত রেখে তারাও অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। মাজলিস থেকে উঠে সকলেই বায়তুল্লাহ শরীফ-এর খুঁটি মুবারকে হাত মুছে নেয়। এ কারণে তাদেরকে ‘মুতাইয়িবীন’ বা সুগন্ধিওয়ালা নাম দেয়া হয়। এ ঘটনাটি প্রাচীন আমলের। কাজেই আলোচ্য অঙ্গীকার দ্বারা ‘হিলফুল ফুযুল’কে বুঝানো হয়েছে। ‘হিলফুল ফুযূল’ সম্পাদিত হয়েছিলো আব্দুল্লাহ ইবনে জাদয়ানের ঘরে।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن حضرت محمد و عبد الر حمن ابن أبى بكر رضى الله تعالى عنهما قالا قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لقد شهدت فى دار عبد الله بن جدعان رضى الله تعالى عنه حلفا لو دعيت به فى الاسلام لأجبت- تحالفوا ان يردوا الفضول على اهلها وألايعد ظالم مظلوما-
অর্থ: “হযরত মুহম্মদ এবং আব্দুর রহমান ইবনে আবী বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনারা উভয়ে বর্ণনা করেন। উনারা বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আমি আব্দুল্লাহ ইবনে জাদয়ান-এর ঘরে একটি অঙ্গীকার মাজলিসে হাযির হয়েছিলাম। ইসলামের যুগেও যদি আমাকে তেমন অঙ্গীকারের প্রতি আহ্বান করা হতো আমি তাতেও সাড়া দিতাম।” হিলফুল ফুযুল-এর ব্যক্তিবর্গ নগরবাসীর উপর অত্যাচার ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করার শপথ নিয়েছিলেন।
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ২৯১ পৃষ্ঠা, সীরাতুল হালাবিয়াহ)
হিলফুল ফুযুল-এর চুক্তিগুলো ছিলো-
১. আমরা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবো।
২. আমরা বিদেশী মেহমানদের নিরাপদে রাখবো।
৩. আমরা গরীব দুঃখী ও অসহায় লোকদের সাহায্য সহযোগিতা করবো।
৪. আমরা দুর্বলদের অত্যাচারী সবলের হাত থেকে রক্ষা করবো। ইনশাআল্লাহ!
এই সমস্ত চুক্তিগুলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কর্তৃক অনুমোদিত ছিলো। সুবহানাল্লাহ!
যে পটভূমির উপর ভিত্তি করে এই চুক্তি বা অঙ্গীকার সম্পাদিত হয়েছিলো তা হচ্ছে, যাবীদ গোত্রের এক ব্যক্তি কিছু ব্যবসা পণ্য নিয়ে মক্কা শরীফ আসে। আছ ইবনে ওয়ায়িল তার থেকে কিছু পণ্য ক্রয় করে। কিন্তু পরে সে তার মূল্য পরিশোধ করতে অস্বীকার করে। অগত্যা যাবীদী তার পাওনা আদায় করার জন্য আহলাফ তথা আব্দুদ্দার, মাখযুম, জামহ, সাহম ও আদী ইবনে কা’ব-এর শরণাপন্ন হয়। কিন্তু তারা আস ইবনে ওয়ায়িল-এর বিপক্ষে তাকে সাহায্য করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয় এবং তাকে শাসিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে যাবীদী ভোরে আবু কুবায়স পাহাড়ে আরোহন করে উচ্চ স্বরে কাব্যাকারে তার অত্যাচারিত হওয়ার কথা প্রচার করে। কুরাইশগণ তখন কা’বা চত্বরে আলাপ-আলোচনায় রত ছিলেন। যুবাইর ইবনে আব্দুল মুত্তালিব বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেন এবং বলেন, ঘটনাটিকে এভাবে উপেক্ষা করা যায় না। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার। এবার হাশিম, যুহরা ও তায়ীম ইবনে মুররা উনারা আব্দুল্লাহ ইবনে জাদয়ান-এর বাড়িতে সমবেত হন। আব্দুল্লাহ ইবনে জাদয়ান মেহমানদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। এ মাজলিসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাস যুলকাদায় তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নামে এই মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন যে, তারা অত্যাচারিতের পক্ষে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন, যাতে করে জালিম মাজলুমের পাওনা আদায় করতে বাধ্য হয়। যতোদিন পর্যন্ত সমুদ্রে ঢেউ উত্থিত হবে, যতোদিন পর্যন্ত হেরা ও ছাবীর পর্বতদ্বয় আপন স্থানে স্থির থাকবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই অঙ্গীকার অব্যাহত থাকবে। আর জীবন যাত্রায় আমরা একে অপরের সাহায্য করব। কুরাইশগণ এই অঙ্গীকারকে ‘হিলফুল ফুযুল’ নামে নামকরণ করেন এবং বলেন, আমরা একটি নেক কাজে আত্মনিয়োগ করেছি। তারপর এই যুবকরা আস ইবনে ওয়ায়িল-এর নিকট গিয়ে তার থেকে যাবীদীর পণ্য উদ্ধার করে তাকে ফেরত দেন। যুবাইর ইবনে আব্দুল মুত্তালিব তিনি এ ব্যাপারে বলেন,
ان الفضول تعاقدوا وتحالفوا
ألايقيم ببطن مكة ظالم
أمر عليه تعاقدوا وتواثقوا
فالجار والمعتر فيهم سالم
অর্থ: “কয়েক মহান ব্যক্তি এই মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন যে, মক্কা শরীফ-এর বুকে কোনো জালিম পা রাখতে পারবে না; নগরবাসী ও বিদেশী সকলেই এখানে নিরাপদে অবস্থান করবে।”
হযরত কাসিম ইবনে ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, খাছয়াম গোত্রের এক ব্যক্তি হজ্জ কিংবা উমরাহ উপলক্ষে মক্কা শরীফ-এ আগমন করেন। তার একটি কন্যা তার সঙ্গে ছিলো। মেয়েটি ছিল অত্যন্ত রূপসী এবং তার নাম ছিল কাতূল। নাবীহ ইবনে হাজ্জাজ মেয়েটিকে তার পিতার নিকট হতে অপহরণ করে নিয়ে লুকিয়ে রাখে। ফলে খাছয়ামী লোকটি উনার মেয়েটিকে উদ্ধারের ফরিয়াদ জানায়। তাকে তখন বলা হলো, তুমি ‘হিলফুল ফুযুল’-এর শরণাপন্ন হও। লোকটি কাবা শরীফ-এর নিকটে দাঁড়িয়ে ডাক দিলো, ‘হিলফুল ফুযুল’-এর সদস্যগণ কে কোথায় আছেন, আমাকে সাহায্য করুন। সঙ্গে সঙ্গে ‘হিলফুল ফুযুল’-এর কর্মীগণ কোষমুক্ত তরবারি হাতে চতুর্দিক হতে ছুটে আসেন এবং বলেন, তোমার সাহায্যকারীগণ হাযির; তোমার কি হয়েছে? লোকটি বললেন, নাবীহ আমার কন্যার ব্যাপারে আমার প্রতি যুলুম করেছে। আমার কন্যাকে সে জোর করে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। অভিযোগ শুনে তারা লোকটিকে নিয়ে নাবীহ-এর গৃহের দরজায় গিয়ে উপস্থিত হলেন। নাবীহ বেরিয়ে আসলে উনারা বলেন, হতভাগা! মেয়েটিকে নিয়ে আয়। তুই তো জানিস আমরা কারা, কি কাজের শপথ নিয়েছি আমরা। নাবীহ বললো, ঠিক আছে, তাই করছি, তবে আমাকে একটি মাত্র রাতের অবকাশ দিন। উনারা বললেন, না, আল্লাহ পাক উনার কসম! কিছুতেই তা হতে পারে না। অগত্যা নাবীহ মেয়েটিকে উনাদের হাতে অর্পণ করে।
উল্লেখ্য যে, জুরহাম গোত্র ‘জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুমের সহায়তা দান’ বিষয়ক একটি অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেন, আলোচ্য অঙ্গীকারও জুরহামের সেই অঙ্গীকারের অনুরূপ বলে জুরহামের সেই অঙ্গীকার সম্পাদিত হয়েছিলো, তাদের প্রত্যেকেরই নাম ছিলো ফাযল ১. ফাযল ইবনে ফুযালা, ২. ফাযল ইবনে ওয়াদায়াহ, ৩. ফাযল ইবনে হারিছ। এটি হযরত ইবনে কুতায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য। অন্যদের মতে তিনজনের নাম হলো- ১. ফাযল ইবনে শুরায়া, ২. ফাযল ইবনে বুযায়া, ৩. ফাযল ইবনে কুযায়য়া। এটি হযরত সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা।
হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কুরাইশগণ-এর কয়েকটি গোত্র পরস্পর হলফ গ্রহণের আহ্বান জানান। এ উদ্দেশ্যে তারা মক্কা শরীফ-এর সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে জাদয়ানের ঘরে সমবেত হন। সেদিনকার সেই মাজলিসে বানূ হাশিম, বানূ আব্দুল মুত্তালিব, বানু আসাদ ইবনে আব্দুল উযযা, যুহরা ইবনে কিলাব এবং তায়িম ইবনে মুররা পরস্পর এই মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন যে, মক্কা শরীফ-এর বাসিন্দা হোক কিংবা ভিন দেশের লোকজন হোক যখনই কেউ অন্যের হাতে নির্যাতনের শিকার হবে, উনারা তার সর্বাত্মক সাহায্যে এগিয়ে আসবেন। যুলুমের প্রতিকার না করা পর্যন্ত তারা ক্ষান্ত হবেন না। কুরাইশগণ এই অঙ্গীকারকে ‘হিলফুল ফুযুল’ নামে অভিহিত করেন। আর এই ‘হিলফুল ফুযুল’-এর পরামর্শদাতা ও প্রধান ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।
হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত তালহা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত তালহা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আউফ যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
لقد شهدت فى دار عبد الله بن جدعان حلفا ما أحب أن لى به حمرا لنعم و لو دعى به فى الأسلام الأجبت
অর্থ: “আমি আব্দুল্লাহ ইবনে জাদয়ানের ঘরে এক অঙ্গীকার সভায় উপস্থিত ছিলাম। সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করার বিনিময়ে যদি আমাকে লাল উটও দেয়া হয় তবুও আমি তাতে সম্মত হবো না। আর ইসলাম আসার পর যদি তার প্রতি আহ্বান করা হতো আমি তাতেও সাড়া দিতাম।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে হারিছ আত তায়মী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বর্ণনা করেন যে, হযরত হুসাইন ইবনে আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম ও ওয়ালীদ ইবনে উতবা ইবনে আবু সুফিয়ান-এর মধ্যে যুল-মারওয়ার কিছু সম্পদ নিয়ে বিবাদ ছিল। ওয়ালীদ তখন মদীনার গভর্নর। তার চাচা হযরত মু’য়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাকে মদীনার গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। ক্ষমতার বলে ওয়ালীদ পাওনা আদায়ে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার উপর অবিচার শুরু করে। তখন হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক উনার নামে ক্বসম করে বলছি, তুমি হয় আমার প্রতি সুবিচার করো অন্যথায় তরবারী হাতে নিয়ে আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মসজিদে দাঁড়িয়ে ‘হিলফুল ফুযুল’-এর কর্মীদের আহ্বান করবো। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তখন ওয়ালীদের নিকট উপস্থিত ছিলেন। হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার কথা শুনে তিনি বললেন, আমিও আল্লাহ পাক উনার নামে ক্বসম করে বলছি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি যদি এরূপ আহ্বান জানান তাহলে আমিও আমার তরবারী হাতে উনার পাশে এসে দাঁড়াবো। হয় তিনি উনার ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন অন্যথায় আমরা একত্রে জীবন দিব।
বর্ণনাকারী তিনি বলেন, এ সংবাদ হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামার রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট পৌঁছলে তিনিও একই কথা বলেন। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে উসমান ইবনে উবায়দুল্লাহ আততায়মী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ উক্তি করেন। ওয়ালীদ ইবনে উতবা সব খবর পেয়ে অবশেষে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেয়। তাতে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি সন্তুষ্ট হয়ে যান। সুবহানাল্লাহ!
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ১৯১, ১৯২ ও ১৯৩ পৃষ্ঠা, সীরাতুল হালাবিয়াহ ১ম জিলদ ২১৩, ২১৪ ও ২১৫ পৃষ্ঠা)


আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা বিনতে খাওয়াইলিদ আলাইহাস সালাম উনার সুমহান নিকাহ মুবারক
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه وكانت حضرت خديجة بنت خويلد عليها السلام امرأة تاجرة ذات شرف ومال تستأجر الرجال على مالها مضاربة فلما بلغها عن رسول الله صلى الله عليه و سلم ما بلغها من صدق حديثه و عظم أمانته و كرم أخلاقه بعثت اليه فمرضت عليه أن يخرج لها فى مال تاجرا الى الشام وتعطيه أفضل ما تعطى غيره من التجار- مع غلام لها يقال له ميسرة. فقبل رسوالله صلى الله عليه وسلم منها وخرج فى مالها ذاك. وخرج معه غلامها ميسرة حتى
نزل الشام. فترل رسول الله صلى الله عليه وسلم فى ظل شجرة قريبا من صومعة راهب من الرهبان. فاطلع الراهب الى ميسرة. فقال: من هذا الرجل الذى نزل تحت الشجرة؟ فقال ميسرة هذا رجل من قريش من أهل الحرام فقال له الراهب ما نزل تحت هذه الشجرة الانبى. ثم باع رسول الله صلى الله عليه وسلم سلمته- عنى تجارته- التى خرج بها واشترى ماأراد أن يشترى. ثم اقبل قافلاالى مكة ومعه ميسرة.
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা বিনতে খাওয়াইলিদ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন একজন শরীফা, সম্ভ্রান্ত, অভিজাত নারী। লাভে অংশীদারিত্বের চুক্তিতে তিনি উনার ব্যবসা পরিচালনা করতেন। বস্তুত পক্ষে কুরাইশ বংশের অনেকেই ছিলেন ব্যবসায়ী। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা, সর্বত্তোম চারিত্রিক মহত্বের সুখ্যাতির কথা জানতে পেরে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার নিকট প্রস্তাব পাঠালেন যে, তিনি যদি ইচ্ছা করেন তাহলে আমার পণ্য সামগ্রী নিয়ে সিরিয়া সফর করতে পারেন। বিনিময়ে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্যান্যদের তুলনায় অধিক উত্তম সম্মানী তথা হাদীয়া উনার মুবারক খিদমতে পেশ করবেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার গোলাম মাইসারাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতের জন্য সঙ্গে দিতে চাইলেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার প্রস্তাব কবুল করলেন এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পণ্য সামগ্রী নিয়ে, গোলাম মাইসারাসহ সিরিয়া অভিমুখে সফর (বা রওয়ানা) করলেন। সিরিয়ায় পৌঁছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জনৈক পাদ্রী-এর গির্জার নিকটবর্তী একটি গাছের ছায়ায় অবস্থান করছিলেন।
পাদ্রী মাইসারাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, গাছের নিচে অবরতণকারী ব্যক্তি তিনি কে? মাইসারা বললেন, ইনি হারামবাসী কুরাইশী বংশের সম্মানিত একজন ব্যক্তি। পাদ্রী বললেন, এ যাবত এই গাছের নিচে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ব্যতীত কেউ অবস্থান করেননি। অতঃপর আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত পণ্যসামগ্রী বিক্রি করেন এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়ে উনার পছন্দমত অন্য মাল ক্রয় করলেন এরপর মাইসারাকে সাথে নিয়ে মক্কা শরীফ-এর দিকে প্রত্যবর্তন করলেন।
فكان ميسرة- فيها يزعمون- اذا كانت الهاجرة واشتد الحر. يرى ملكين يظلانه من الشمس وهو يسير على بعيره. فلما قدم مكه على حضرت خديجة عليها السلام بما لها باعت ما جاءٍ به فاضعف أوقريبا. وحدثها ميسرة عن قول الراهب وعما كان يرى من اظلال الملائكة اياة وكانت حضرت خديجة عليها السلام امرأة جازمة شريفة لبيبة مع ماأراد الله بهامن كرامتها. قلما أخبرها ميسرة ما أخبرها بعشت الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت له- فيما يزعمون- ياابن عم انى فد رغبت فيك لقرابتك وسطتك-
فى قومك ءأمانتك وحسن خلقك و صدق حديثك، ثم عرضت نفسها عليه وكانت أوسط نساء قريش نسبا وأعظمهن شرفا وأكثرهن مالا، كل قومها كان حريصا على ذاك منها لو يقدر عليه، فلما قالت ذلك لرسول الله صلى الله عليه وسلم ذكر ذلك لأ عمامه، فخرج معه عمه حمزة رضى الله تعالى عنه حتى دخل على خويلدبن أسد فخطبها اليه فتزوجها عليه الصلاة والسلام-
قال حضرت ابن هشام رحمة الله عليه : فأصدقها عشرين بكرة وكانت أول امرأة تزوجها ولم يتزوج عليها غيرها حتى ماتت-

ঐতিহাসিকগণ বলেন, মাইসারা লক্ষ্য করলেন যে, সূর্যের তাপ প্রখর হওয়ার সাথে সাথে দু’জন ফেরেশতা আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ছায়া প্রদান করছেন। তখন তিনি উটের পিঠে চড়ে এগিয়ে চলছিলেন। মক্কা শরীফ-এ এসে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে তিনি উনার পণ্য সামগ্রী বুঝিয়ে দিলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উক্ত পন্য-সামগ্রী দ্বিগুন বা প্রায় দ্বিগুন তথা অনেক মূল্যে তা বিক্রি করলেন। মাইসারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট পাদ্রীর বক্তব্য এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দু’জন ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনারা ছায়াদানের কথা ব্যক্ত করলেন। আর এদিকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন দৃঢ় সংকল্পকারীনী, সম্ভ্রান্ত, সম্মানীতা ও বুদ্ধিমতী।
মাইসারা ঘটনার ইতিবৃত্ত শুনালে সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উক্ত মু’জিযা শরীফসমূহের বিবরণ শুনে এতো অভিভূত হলেন যে, তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বার্তা পাঠালেন, প্রিয় ভাই! আপনার সুখ্যাতি, বিশ্বস্ততা, উত্তম চরিত্র মুবারক, সত্যবাদীতার যে সুনাম সুখ্যাতি রয়েছে তাতে আমি খুবই মুগ্ধ ও অভিভূত। এই বলে সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিকাহ বা শাদী মুবারক-এর প্রস্তাব পাঠান।
উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি কুরাইশ মহিলাগণের মধ্যে বংশগতভাবে অতিশয় সম্ভ্রান্ত, মর্যাদায় সকলের সেরা ও শ্রেষ্ঠা বিত্তবতী নারী ছিলেন। উনার গোত্রে এমন কোন পুরুষ ছিলেন না যে উনাকে সাধ্যে কুলালে বিয়ে করার অভিলাষ পোষণ করতেন না। আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই প্রস্তাবটি উনার চাচাগণ উনাদেরকে জানালেন। এসব শুনে উনার চাচা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে খুয়াইলিদ ইবনে আসাদ উনার সঙ্গে আলাপ আলোচনার পর সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকাহ মুবারক সুসম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহর হিসেবে উনাকে বিশটি উট প্রদান করেন। আর এটাই ছিলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রথম নিকাহ মুবারক। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর কোন আহলিয়া গ্রহণ করেননি বা নিকাহ মুবারক করেননি। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১ম জিলদ ২৯৩, ২৯৪ পৃষ্ঠা, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ ২য় জিলদ ৬৬ ও ৬৭ পৃষ্ঠা, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তারিখুল ইসলামী)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক যখন ২৫ বৎসর তখন তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ-এ ‘আল আমীন’ লক্বব মুবারক-এ সমাধিক পরিচিত ছিলেন। বুছরা নামক স্থানে যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরিফ নেন তখন ‘নাসতূর’ নামক পাদ্রী উনাকে দেখে চিনে ফেলে এবং বলেন, এ বৃক্ষের নিচে কখনও কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ছাড়া অন্য কেউ অবস্থান করেননি। এরপর পাদ্রী মাইসারাকে জিজ্ঞাসা করলো উনার উভয় চক্ষু মুবারক-এ নূর মুবারক জ্বলজ্বল করছে কি না? মাইসারা বললেন, হ্যাঁ উনার চক্ষু মুবারক-এ নূর মুবারক জ্বলজ্বল করছে আর এই নূর মুবারক কখনও হ্রাস হয় না। পাদ্রী বললো, ইনিই তাহলে প্রতিশ্রুত আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্রয়-বিক্রয় করতে লাগলেন। এদিকে এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে ঝগড়া করতে চাইলো যে, আপনি লাত ও ওযযার ক্বসম খান। নাঊযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওই ব্যক্তিকে বললেন, আমি কখনো লা’ত উযযার ক্বসম খাইনা। ঘটনাক্রমে এই প্রতিমাদ্বয়ের কাছ দিয়ে যেতে হলেও আমি আমার চেহারা মুবারক ফিরিয়ে নেই এবং পথের প্রান্ত ধরে চলে যাই। একথা শুনে লোকটি বললো, আপনার কথা মুবারকই সবই সত্য। অতঃপর সে মাইসারাকে বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নিশ্চয়ই ইনিই আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার সুমহান মর্যাদা-মর্তবা, ছানা-ছীফত ও গুনাবলী আমাদের আলিমগণ কিতাবাদীতে পাঠ করে থাকেন। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫৪ ও ১৫৫ পৃষ্ঠা, সীরাতুল হালাবিয়াহ)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه: وقد كانت حضرت خديجة الكبرى بنت خويلد عليها السلام ذكرت لورقة بن نوفل بن اسد رضى الله تعالى عنه - وكان ابن عمها وكان نصرانيا قد تتبع الكتب وعلم من علم الناس ما ذكرلها غلامها من قول الراهب وما كان يرى منه اذ كان الملكان يظلانه- فقال حضرت ورقة ابن نوفل رضى الله تعالى عنه: لئن كان هذا حقا يا حضرت خديجة الكبرى عليها السلام ان سيد المرسلين حبيب الله حضرت محمد صلى الله عليه وسلم لنبى هذه الامة، قد عرفت انه كائن لهذه الامة نبى ينتظر هذا زمانه- او كما قال- فجعل ورقة يستبطئ الامر ويقول حتى متى؟
وقال فى ذلك:
لججت وكنت فى الذكرى لجوجا + لهم طاما ما بعث النشيجا
ووصف من حضرت خديجة الكبرى عليها السلام بعد وصف+فقد طال انتظارى يا حضرت خديجة الكبرى عليها السلام
ببطن المكتين على رجائى + حديثك ان ارى منه خروجا
بما خبرتنا من قول قس + من الرهبان اكره ان يعوجا

অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, গোলাম মাইসারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট পাদ্রীর যে উক্তির কথা উল্লেখ করেছিলেন এবং ছফরে দু’ফেরেশতা কর্তৃক আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ছায়া প্রদান করতে দেখেছিলেন, তা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার চাচা হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল ইবনে আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সেই ঘটনা অবহিত করেন। শুনে হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম! এ ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তা হলে একথা নিশ্চিত যে, সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই উম্মত-এর নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর আমি নিজেও জানি যে, এই উম্মতের জন্য একজন নবী, যিনি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু তিনি অতিশিঘ্রই আগমন করছেন। এটাই উনার যমীনে তাশরীফ নেয়ার যুগ। এরপর থেকে ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিষয়টি সপ্রমানিত দেখার জন্য উদ্বেগও উৎকণ্ঠা প্রকাশ শুরু করলেন এবং নি¤œাক্ত পংক্তিগুলো আবৃত্তি করলেন।
আমি অতি আগ্রহের সাথে এমন একটি জিনিসকে বারবার বলে আসছি, যা দীর্ঘদিন যাবত অনেককে কাঁদিয়ে আসছে। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট থেকেও নতুন করে সে বিষয়ে নানাবিধ ছিফত মুবারকের বিবরণ পাওয়া গেলো। শুনুন হে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম! আমার আশা ও প্রতীক্ষা অনেক দীর্ঘ হয়েছে। আমার প্রত্যাশা, পবিত্র মক্কা শরীফ-এর উচ্চভূমি ও নি¤œভূমির মধ্যখান থেকে যেনো আপনার সে কথা মুবারক বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে দেখতে পাই, যে কথা আপনি পাদ্রী তথা খ্রিস্টান ধর্ম যাজকের সূত্রে জানালেন। বস্তুতঃ ধর্মযাজক তথা পাদ্রীর কথায় কোন হেরফের হোক, আমি তা চাই না।
بان محمد صلى الله علي وسلم سيسود قوما + ويخصم من يكون له حجيجا
ويظهر فى البلاد ضياء نور + يقوم به البرية ان تموجا
فيلقى من يحاربه خسارا + ويلقى من يسالمه فلوجا
فياليتى اذا ما كان ذا كم + شهدت وكنت اولهم ولوجا
ولوجا فى الذى كرهت قريش + ولو عجت بمكتها عجيجا
ارجى بالذى كرهوا جميعا + الى ذى العرش ان سفلوا عروجا
وهل امر السفالة غير كفر + بمن يختارمن سمك البروجا
فان يبقوا وابق يكن امور + يضج الكافرون لها ضجيجا
وان اهلك فكل فتى سيلقى + من الاقدار متلفة خروجا

সে প্রতীক্ষিত বিষয়টি এই যে, সাইয়্যিদুনা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অচিরেই সকলের তথা সকল কাওমবাসীর নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে উনাকে প্রকাশ করবেন এবং নিজের বিরুদ্ধবাদীদের তিনি পরাস্ত করবেন। পৃথিবীর সর্বত্র তিনি এমন হিদায়েতের নূর মুবারক ছড়াবেন, যা দ্বারা তিনি সমগ্র বিশ্বজগত তথা সারা আলমকে উদ্ভাসিত করবেন। যারা উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তারা পর্যুদস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত তথা ধ্বংস হবে। আর যারা উনার সঙ্গি হবেন উনার মুহব্বতে নিজেকে আবদ্ধ করে নিবেন উনারা হবেন স্থিতিশীল ও চির বিজয়ী। সুবহানাল্লাহ!
হায়! যখন এসব ঘটনা ঘটবে, তখন যদি আমি জীবিত থাকতে পারতাম, তা হলে আপনাদের সকলের আগে আমি উনার ছাহাবী তথা উনার দলভুক্ত হতাম। আমি সেই সম্মানিত দলের অন্তর্ভুক্ত হতাম। আর উনাকে কুরাইশদের অনেকেই অত্যন্ত অপছন্দ করবে। যদিও তারা উনার বিরুদ্ধে চিৎকার করে মক্কা শরীফকে প্রকম্পিত করে তুলবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তারা সকলেই অপছন্দ করবে, আমার প্রত্যাশা তিনি ‘আরশের মালিক’ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌঁছে যাবেন, যদিও তারা অধঃপতিত হবে। সবচেয়ে সম্মানিত ও উঁচু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আরোহনকারী উনাকে যারা গ্রহণ করেন না তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া এই অধঃপতনের আর কোন কারণ নেই।
কুরাইশরা যদি বেঁচে থাকে আর আমিও যদি জীবিত থাকি তবে সে দিন কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীরা চিৎকার করে তোলপাড় করবে। আর আমি যদি বিদায় নেই তাহলে যুবকরা দূর্ভাগ্যের কবল থেকে মুক্তির পথ প্রত্যক্ষ করবে।”
وقال حضرت ورقة بن نوفل رضى الله تعالى عنه ايضا فيما رواه حضرت يونس بن بكير رحمة الله عليه عن حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه:
اتبكر ام انت العشية رائح + وفى الصدر من اضمارك الحزن قادح
لفرقة قوم لا احب فراقهم + كانك عنهم بعد يومين نازح
واخبار صدق خبرت عن محمد صلى الله عليه وسلم + يخبرها عنه اذا غاب ناصح
اتاك الذى وجهت يا خير حرة + بغور وبالنجدين حيث الصحاصح
الى سوق بصرى فى الركاب التى غدت + وهن من الاحمال قعص دوالح
فيخبرنا عن كل خير بعلمه + وللحق ابواب لهن مفاتح
بان ابن عبد الله احمد مرسل + الى كل من ضمت عليه الاباطح
وظنى به ان سوف يبعث صادقا + كما ارسل العبدان هود وصالح
وموسى وابراهيم حتى يرى له + بهاء ومنشور من الذكر واضح
ويتبعه حيا لؤى وغالب + شبابهم والاشيبون الجحاجح
فان ابق حتى يدرك الناس دهره + فانى به مستبشر الود فارح
والا فانى ياخديجة فاعلمى + عن ارضك فى الارض العريضة سائح
হযরত ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত হযরত ইউনূস ইবনে বুকায়ির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা মতে হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরো বলেন, “কি সকাল কি সন্ধ্যা, আপনার অন্তরের ব্যাথ্যায় আমিও ব্যথিত। আমি আরো ব্যথিত সেই কাওম বা সম্প্রদায়ের বিরহে, যাদের বিরহ মূলত আমার কাম্য নয়। নিশ্চয়ই আপনিও দু’দিন পর তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। আমি আরো ব্যথিত সেই সত্য সংবাদের জন্য, যা আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে প্রকাশিত হয়েছে। উনার আগমনের পূর্বেই হক্ব কামনাকারীগণ উনার সম্পর্কে সত্য সংবাদ দিয়েছে।
ওহে নাজদ ও গাওর- এর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মানীতা নারী! ভারী মাল বোঝাই উটের আরোহী বণিক কাফেলার সঙ্গে বুসরা বাজারে আপনি যে সুমহান ব্যক্তিকে প্রেরণ করেছিলেন, এখন তিনি আপনার কাছে ফিরে এসেছেন। এখন তিনি আমাদেরকে সঠিক সংবাদ দিচ্ছেন সার্বিক কল্যাণ বা মঙ্গলের। সত্য প্রকাশের অনেক দরজা আছে, দরজা খোলার জন্য আছে অনেক চাবি। তিনি সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, এই প্রত্যন্ত মরু অঞ্চলের সকলের প্রতি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত সন্তান নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগমণ করেছেন।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তিনি হযরত হুদ আলাইহিস সালাম, হযরত ছালিহ আলাইহিস সালাম, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাদের ন্যায় সত্যবাদীরূপে যমীনে তাশরীফ আনবেন অচিরেই উনার খ্যাতি সারা কায়িনাতব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। দিকে দিকে দৃষ্টিগোচর হতে থাকবে উনার নূর মুবারক-এর ঔজ্জ্বল্য। আর উনার অনুসরণ করবে, লুওয়াই ও গালির গোত্রের তথা সমস্ত মাখলুকাত। আর উনার প্রকাশ পর্যন্ত যদি আমি বেঁচে থাকি, তবে উনাকে পেয়ে আমি বেশি আনন্দিত খুশি হব। অন্যথায় জেনে রাখুন হে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম! আপনার দেশ ত্যাগ করে আমি চলে যাব অন্য কোন প্রশস্ত ভূখন্ডে।”
وزاد حضرت الاموى رحمة الله عليه:
فمتبع دين الذى اسس البنا + وكان له فضل على الناس راجح
واسس بنيانا بمكة ثابتا + تلالا فيه بالظلام المصابح
مثابا لافناء القبائل كلها + تخب اليه اليعملات الطلائح
حراجيج امثال القداح من السرى + يعلق فى ارساغهن السرايح
ومن شعره فيما اورده حضرت ابو القاسم السهيلى رحمة الله عليه فى روضه:
لقد نصحت لاقوام وقلت لهم + انا النذيز فلا يغرركم احد
لا تعبدن الها غير خالقكم + فان دعوكم فقولوا بيننا حدد
سبجان ذى العرش سبحانا يدوم له + وقبلنا سبح الجودى والجمد
مسخر كل ما تحت السماء له + لا ينبغى ان يناوى ملكه احد
হযরত উমাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এর সঙ্গে যোগ করে আরো উল্লেখ করেছেন, “ফলে মানুষ অনুসরণ করবে সেই সম্মানিত ব্যক্তি উনার দ্বীনের, যিনি সব খায়ের-বরকতের কেন্দ্রবিন্দু, যিনি সারা মাখলুকাতের সবচেয়ে মর্যাদার অধিকারী। যিনি মক্কা শরীফ-এ নির্মাণ করেছেন সুদূঢ় এক ইমারত। সর্বত্র কুফরীর ঘনঘটা সত্ত্বেও যে ঘরে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে হিদায়েতের প্রদীপ। যে পবিত্র ঘর সকল গোত্রের কেন্দ্রবিন্দু, যে ঘরের দিকে চতুর্দিক থেকে ধেয়ে আসছে দুর্বল ও সবল উট।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত আবুল কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত সুহাইলী রহমতুল্লাহি আরাইহি উনার কর্তৃক উনার ‘আর রাউজুল উনুফ’ গ্রন্থে বর্ণিত হযরত ওয়ারাকা ইবনে নওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আরো কয়েকটি পংক্তি উল্লেখ করেন- “আমি অনেককে নছীহত ও উপদেশ দিয়েছি যে, আমি সতর্ককারী। অতএব কেউ যেন আপনাদের প্রতারিত করতে না পারে। আপনারা আপনাদের রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত-বন্দেগী করবেন না। যদি তারা আপনাদেরকে আহ্বান করে, তবে বলে দিবেন তোমাদের ও আমাদের মাঝে পর্দা বা প্রাচীর রয়েছে।
আমরা পবিত্রতা জ্ঞাপন করি আরশের রব মহান আল্লাহ পাক উনার। উনার পবিত্রতা জাতীগত ছীফত মুবারক আমাদের পূর্বে জুদী পর্বত আর জড় পদার্থরাজিও বর্ণনা করেছে। গোটা সৃষ্টির সবকিছুই উনার অনুগত। উনার মালিকানা বা সুমহান বণ্টনে হাত বাড়ানো কারো জন্য উচিত নয়।

لا شئ مما نرى تبقى بشاشته + يبقى الا له ويودى المال والولد
لم تغن عن هرمز يوما خزائنه + والخلد قد حاولت عاد فما خلدوا
ولاسليمان اذ تجرى الرياح به + والجن والانس فيما بينها مرد-
اين الملوك التى كانت لعزتها + من كل اوب اليها وافد يفد
حوض هنالك مورود بلا كذب + لا بد من ورده يوما كماوردوا
ثم قال هكذا نسبه ابو الفرج الى ورقة، قال وفيه ابيات تنسب الى امية بن ابى الصلت قلت: وقد روينا عن امير المؤمنين حضرت عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه انه كان يستشهد فى بعض الاحيان بشئ من هذه الايات والله اعلم-
আমরা যা কিছু দেখছি, তার কোনটিরই ঔজ্জ্বল্য অবশিষ্ট থাকবে না। থাকবেন শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। দুনিয়াবী সব সম্পদ-সন্তান-সন্ততী ধ্বংস হয়ে যাবে। মহা শক্তিধর হরমুয স¤্রাটের ধন-ভান্ডার তার কাজে আসেনি। আদ জাতি চিরদিন বেঁচে থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম যাঁকে বায়ূ বহন করে বেড়াতো তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার দিদারে চলে গেছেন। মৃত্যুর পরোয়ানা পায়ে পায়ে ঘুরছে জিন-মানব সকলের। সেই প্রতাপশালী রাজা-বাদশাহরা এখন কোথায়, যাদের কাছে চতুর্দিক থেকে দলে দলে মানুষ আগমন করতো?
মৃত্যু একটি কূপ। এই কূপে সব মানুষকে একদিন না একদিন অবতরণ করতেই হবে। যেমন অবতরণ করেছে অতীতের সমস্ত লোকজন।”
হযরত সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আবুল ফারাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ পংক্তিগুলো হযরত ওয়ারাকা ইবনে নওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বলে উল্লেখ করেছেন এবং আরো বলেন, এর মধ্যে কোন কোন পংক্তি হযরত উমাইয়া ইবনে আবি সালতের বলে উল্লেখ করা হয়। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মাঝে মাঝে এ সব কবিতার পংক্তি প্রমাণস্বরূপ আবৃত্তি করতেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
عن حضرت البيهقى رحمة الله عليه ان حضرت عمار ابن ياسر رضى الله تعالى عنه كان اذا سمع ما يتحدث به الناس عن تزويج رسول الله صلى الله عليه وسلم حضرت خديجة الكبرى عليها السلام وما يكثرون فيه يقول انا اعلم الناس بتزويجه اياها، انى كنت له تربا وكنت له الفا وخدنا- وانى خرجت مع رسول الله صى الله عليه وسلم ذات يوم حتى اذا كنا بالحزورة اجزنا على اخت حضرت خديجة الكبرى عليها السلام وهى جالسة على حضرت ادم عليه السلام تبيعها، فنادتنى فانصرفت اليها ووقف لى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت اما بصاحبك هذا من حاجة فى تزويج حضرت خديجة الكبرى عليها السلام ؟ قال حضرت عمار رضى الله تعالى عنه فرجعت اليه فاخبرته- فقال "بلى لعمرى" فذكرت لها قول رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت اغدوا علينا اذا اصبحنا، فغدونا عليهم قال فوجدناهم قد ذبحوا بقرة والبسوا ابا حضرت خديجة الكبرى عليها السلام حلة، وصفرت لحيته،

অর্থ: হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন যে, “হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখনই লোকজনদেরকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিকাহ মুবারক করা সংক্রান্ত আলোচনা করতে শুনতেন, তখন বলতেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিকাহ মুবারক করার বিষয়টি আমি সবচেয়ে ভালো জানি। কারণ, আমি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমবয়সী, অন্তরঙ্গ ছহিব ও খাদিম ছিলাম। একদিন আমি উনার সঙ্গে বের হই। হাযওয়ারা নামক স্থানে পৌঁছে আমরা দেখতে পেলাম যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার এক বোন বসে চামড়া বিক্রি করছেন। তিনি আমাদেরকে দেখে আমাকে নিকটে ডাকেন। আমি উনার নিকটে যাই আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে আমার অপেক্ষায় থাকেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বোন আমাকে বললেন, আচ্ছা আপনার এই সঙ্গী কি আমার বোন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিকাহ মুবারক করতে আগ্রহী নন? হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এ কথার কোন জবাব না দিয়ে আমি আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে গিয়ে উনাকে বিষয়টি অবহিত করি। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, অবশ্যই আমি আগ্রহী। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বোনকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ কথা মুবারক জানালে তিনি বললেন, আগামীকাল সকালে আপনারা আমাদের বাড়িতে আসুন। আমরা পরের দিন সকালে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বাড়িতে গেলাম। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা গিয়ে দেখতে পেলাম যে, উনারা একটি গাভী যবাই করেছেন এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতাসহ সকলেই উত্তম ও নতুন জামা-কাপড় পড়ে রয়েছেন। আর উনার পিতা তিনি দাড়িতে হলুদ রং মেখেছিলেন।
وكلمت اخاها، فكلم اباه ....... فذكر له رسول الله صلى الله عليه وسلم، ومكانه، وساله ان يزوجه فزوجه حضرت خديجة الكبرى عليها السلام و صنعوا من البقرة طعاما فاكلنا منه، ونام ابوها ثم استيقظ صاحيا- فقال ما هذه الحلة اهذه الصفرة، وهذا الطعام؟ فقالت له ابنته التى كانت قد كلمت عمارا هذه حلة كساها سيد المرسلين حبيب الله  محمد صلى الله عليه وسلم بن عبد الله صلى الله عليه وسلم ختنك، وبقرة اهداها لك، فذبحناها حين زوجته حضرت خديجة الكبرى عليها السلام، فانكر ان يكون زوجه، وخرج يصيح حتى جاء الحجر،
আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। তিনি উনার পিতার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলেন। .... সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ভাই উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে অবহিত করলেন এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিকাহ মুবারক দেয়ার প্রস্তাব পেশ করেন। তিনি তাতে সম্মতি দেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকাহ মুবারক দিয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনারা গাভীর গোশত রান্না করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিসহ সকলের মেহমানদারীর আয়োজন করেন। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা খাওয়া-দাওয়া করি। এর মধ্যে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতা তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে এই বলে হাক-ডাক দিতে থাকেন যে, আমার গায়ে এসব কিসের পোশাক? এসব হলুদ রং কেন? এ খানাপিনা কিসের? জবাবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বোন তিনি উনার পিতার সঙ্গে কথা বলছিলেন, যে মেয়েটি হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে পূর্বে নিকাহ মুবারক-এর ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করছিলেন। তিনি বললেন, আপনার মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ছহিব তথা আপনার জামাতা হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাকে এই পোশাক পরিয়েছেন। আর এই গাভীটি আপনার জন্য হাদিয়া এসেছিলো। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকাহ মুবারক উপলক্ষ্যে এই গাভীটি যবেহ করেছি। কিন্তু তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিকাহ মুবারক দেয়ার বিষয়টি গোপন করেন এবং উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা দিতে দিতে ঘর থেকে বেরিয়ে হিজরে ইসমাইল আলাইহিস সালাম তথা হাতীমে চলে আসেন।
وخرج بنو هاشم برسول الله صلى الله عليه وسلم، حتي جاءوه فكلموه فقال اين صاحبكم الذى تزعمون انى زوجته؟ حضرت خديجة الكبرى عليها السلام؟ فبرز له رسول الله صلى الله عليه وسلم، فلما نظر اليه، قال ان كنت زوجته فسبيل ذاك، وان لم اكن فعلت فقد زوجته-
এদিকে হাশিম গোত্রের লোকজন সকলেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসেন এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতার সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতা বললেন, আপনাদের মধ্যে যাঁর নিকট আমি আমার মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিকাহ মুবারক দিয়েছি বলে আপনারা ধারণা করেন, তিনি কোথায়? জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সামনে এসে উপস্থিত হলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতা তিনি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এক নজর দেখে বললেন, আমি যদি এই সম্মানিত ব্যক্তি ‘আল আমীন’ উনার নিকট আমার মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিকাহ মুবারক দিয়ে থাকি তা হলে ইহা সর্বোত্তম। তাই এখনই সম্মানিত ‘আল আমীন’ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে আমার মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিকাহ মুবারক দিয়ে দিলাম। সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ২৯৫ ও ২৯৬ পৃষ্ঠা, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ ২য় জিলদ ৭১ ও ৭২ পৃষ্ঠা, তারিখুল ইসলাম)
উল্লেখ যে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু ও হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাদের মতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতা খুয়াইলিদ তিনি ফিজার যুদ্ধের পূর্বেই ইনতেকাল করেছেন। তুববা বাদশাহ ‘হাজরে আসওয়াদ’কে যখন ইয়ামিন-এ নিয়ে যেতে চেয়েছিলো, তখন এই খুওয়াইলিদ উনার বিরোধিতা করেছিলেন। খুওয়াইলিদ-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলে ‘কুরাইশ’ গোত্রের একদল লোকজন উনার সঙ্গে যোগ দেন। অতঃপর তুব্বা একদা একটি ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে এই পরিকল্পনা ত্যাগ করেন এবং ‘হাজরে আসওয়াদ’কে যথাস্থানে বহাল রাখেন। তবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার চাচা আমর ইবনে আসাদ উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে নিকাহ মুবারক দিয়েছিলেন। যা হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘সীরত’ গ্রন্থের পরিশিষ্টে লিখেছেন।
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদের নিকাহ মুবারক-এর মজলিসে আবূ ত্বলিব তিনি খুতবা মুবারক পাঠ করেন। নিম্নে  পাঠকদের সামনে তার বাংলা অনুবাদ পেশ করা হলো।
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার, যিনি আমাদেরকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহিম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমায়িল আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বংশ মুবারক-এ পাঠিয়েছেন। এবং আমাদেরকে উনার ঘর ‘বাইতুল্লাহ শরীফ’-এর খাদিম ও ইমাম করে পাঠিয়েছেন। এর ঘর ‘কা’বা শরীফ’-এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করেছেন। চতুর্দিক থেকে জ্বিন ইনসান এই কা’বা শরীফকে যিয়ারত করতে ছুটে আসে। যে ব্যক্তি এই ‘বাইতুল্লাহ শরীফ-এ তাওয়াফ করতে আসে তার নিরাপত্তা দানের দায়িত্ব তিনি আমাদের উপর অর্পন করেছেন। আমাদেরকে তিনি সমস্ত মানুষের খলীফা হিসেবে মনোনিত করেছেন। অতঃপর আমার বলার বিষয় এই যে, নিশ্চয়ই হযরত সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমন এক অনন্য সুমহান যুবক, যাঁর তুলনা, মেছালের মেছাল বা সমকক্ষ কেউ নেই। আর তিনি মাখলুকাতের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রণী। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু আল্লাহ পাক নন, এতটুকু। এছাড়া যত মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত ও মাক্বামাত রয়েছে সবকিছুই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন।
আর আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ধন-সম্পদের মুখাপেক্ষীন নন। কিন্তু তিনি সর্বত্তোম চরিত্র মুবারক, সব নৈতিক গুনাবলীর অধিকারীতও অন্যন্ত সম্পদশালী। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমন এক সুমহান ব্যক্তিত্ব ও নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যাঁর ছানা-ছিফত বা মর্যাদা-মর্তবার কথা কারো নিকট নতুন করে বর্ণনা করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা।
আমি আমার সম্পদ থেকে আমার সম্মানিত ভ্রাতুস্পুত্র উনার শাহী নিকাহ মুবারক-মহর বাবদ ২০ টি উট নির্ধারণ করলাম। আর আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম দিয়ে বলছি, এই নিকাহ মুবারক-এর পর উনার মর্যাদা-মর্তবা মাক্বামাত ও ফযীলত আরো প্রকাশ পাবে।
রওজাতুল আহবাব’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, আবূ ত্বলিব তিনি যখন খুতবা মুবারক শেষ করলেন তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতৃত্যপুত্র (চাচাতো ভাই) হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একটি খুতবা মুবারক দিলেন যার সারমর্ম এরকম- “ওই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করছি, যিনি আমাদেরকে সেই সুমহান মর্যাদা দিয়েছেন যা আপনি বর্ণনা এতক্ষণ ধরে শুনেছেন। যে সমস্ত শান-মান, ফযীলতের কথা কোন আরববাসী তথা মাখলুকাত কখনও অস্বীকার করতে পারবে না। সুতরাং আমরা সমগ্র আরব তথা কায়িনাতের সকলের চেয়ে অগ্রবর্তী, সম্মানিত ও মর্যাদাবান। সুবহানাল্লাহ! তবে আমাদের সকলের আকাঙ্খা যে, এই নিকাহ মুবারক-এর মাধ্যমে আপনাদের সাথে নিসবত ও সম্পর্ক অধিকার গভীর ও নিবিড় হবে। ইনশাআল্লাহ!
হে কুরাইশ সম্প্রদায়গণ! আপনারা সাক্ষী থাকুন যে, আমি সাইয়্যিদাতুনা হযতর খাদীজাতুল কুবরা বিনতে খুয়াইলিদ আলাইহাস সালাম উনাকে চারশাত মিছকাল মহরের বিনিময়ে সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকাহ মুবারক দিলাম। তখন আবূ ত্বালিব তিনি বললেন, হে হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমি চাই যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতৃব্য (চাচা) আমর ইবনে আসাদ তিনিও খুতবা প্রদানে অংশ গ্রহণ করুক। এরপর আমর ইবনে আসাদ তিনি সকলের উদ্দেশ্যে একটি খুতবা দিলেন। হে কুরাইশগণ! আপনারা সাক্ষী থাকুন আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা বিনতে খুয়াইলিদ আলাইহাস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে নিকাহ মুবারক দিলাম। উভয় পক্ষের মধ্যে ইজার ও কবুল বিনিময় হলো। রওজাতুল আহবাব’ কিতাবে এরকমই বর্ণনা করা হয়েছে। ‘মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া’ কিতাবে কোন কোন বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিত হয়েছে। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহিস সালাম উনার নিকাহ মুবারক-এর মহর ছিলো সাড়ে বারো আওকিয়া। এক আওকিয়া সমান ৪০ দিরহাম। এক বর্ণনানুসারে এই নিকাহ মুবারক-এর মহর ছিলো ৫০০ দিরহাম। বর্ণনাদ্বয়ের সামঞ্জস্য সমাধানে বলা যেতে পারে যে, ওই সময় বিশটি উটের মূল্য ছিলো ৫০০ দিরহাম অথবা চারশত মিছকাল স্বর্ণ।
রওজাতুল আহবাব’-এ আরো উল্লেখ রয়েছে যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বাঁদীকে তিনি খুশি প্রকাশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুরোধ করলেন যে, আপনার পিতৃব্য আবূ ত্বালিব তিনি যেনো সেই উট হইতে একটি উট যবেহ করে লোকদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেন। যা হউক আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেও এই নিকাহ মুবারক-এ খুশি হলেন। আবূ ত্বলিব তিনিসহ সকলেই খুশি প্রকাশ করলেন। আবূ ত্বালিব তিনি আনন্দিত হয়ে বললেন,

আরবী

অর্থ: সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি আমাদেরকে সব বিপদাপদ দূর করে দিয়েছেন, আমাদের সকলের চিন্তা-ভাবনার অবসান ঘটিয়েছেন।” (মাদারিজুন নুবুওওয়াত ৬ষ্ঠ জিলদ ৮১ ও ৮২ পৃষ্ঠা)
কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
আরবী
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে অধিক আহাল-ইয়াল, পরিবার-পরিজন বিশিষ্ট পেয়েছেন অতঃপর আপনাকে গনী বা সম্পদশালীরূপে প্রকাশ করেছেন।” (সূরাতুত দ্বুহা : আয়াত শরীফ- ৮)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহাল-ইয়াত ও আওলাদগণের সংখ্যা অসংখ্য অগণিত আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্পদের দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমা তিনি ইসলামের অনেক খিদমত নিয়েছেন। মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির পূর্ব থেকে সবচেয়ে বেশি ধনী বা গণি। সুবহানাল্লাহ! কাজেই, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিকাহ মুবারক করার মাধ্যমে উনার সেই গণি বা ধনী ছীফতকে প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহ!

হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,

অর্থ: হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত সায়ীদ ইবনে জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই মক্কা শরীফ-এর নারীগণদের মধ্যে রজব মাসে ঈদ বা খুশির দিন সম্পর্কে মতভেদ দেখা দিলেও সকলেই এক মূর্তির নিকট উপস্থিত হয়, হঠাৎ এক মানব আকৃতি তারা দেখতে পান। আকৃতিটি আস্তে আস্তে তাদের নিকট তাদের সামনে এসে উচ্চস্বরে ঘোষণা করলো হে তায়মার নারীগণ! আপনাদের শহরে একজন নবী আগমন করবেন। যাঁর নাম মুবারক হবে সাইয়্যিদুনা হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নুবুওওয়াত ও রিসালত নিয়ে তাশরীফ আনবেন। অতএব যে নারীর মধ্যে নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাওজা বা সহধর্মীনী (আহলিয়া) হওয়ার যোগ্যতা আছে, তিনি যেনো উনার যাওজা বা আহলিয়া হয়ে যান। এই কথা শুনে কিছু মহিলাদের সেই লোকটির প্রতি কংকর ছুড়ে মারলো, ঠাট্টা, বিদ্রুপ করলো এবং কঠোর আচরণ প্রদর্শন করলো। কিন্তু সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম এরূপ ঘটনা শুনে কোন বিরূপ মন্তব্য করলেন না।” খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫৫ পৃষ্ঠা)
অর্থাৎ সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সৃষ্টির শুরু থেকে মনোনীত। যে কারণেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শুনে ফোন প্রকার চু-চেরা তিনি করেননি। বরং ওই ব্যক্তির কথাকে সমর্থন করেছেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি যে পূর্ব থেকে মনোনীত ছিলেন তার এটি একটি প্রমাণ। জাহিলিয়াত যুগেই সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে ত্বহিরা ও ত্বইয়্যিবাহ লক্বব মুবারক নিয়ে সকলেই সম্বোধন করতেন। সুবহানাল্লাহ!

0 Comments: