হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ২৭৬-৩৭৭) (গ)
বংশ মুবারক পরিচিতি:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশ বংশের ছিলেন। উনার বংশ মুবারক-এ পরিচিতি হচ্ছে, উনার পিতার দিক থেকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম বিনতে খুয়াইলিদ ইবনে আসাদ ইবনে আব্দুল উযযা ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত কুসাই আলাইহিস সালাম বিনতে সাইয়্যিদুনা হযরত কিলাব আলাইহিস সালাম বিনতে সাইয়্যিদুনা হযরত মুররা আলাইহিস সালাম বিনতে সাইয়্যিদুনা হযরত কা’ব আলাইহিস সালাম বিনতে সাইয়্যিদুনা হযরত লুয়াই আলাইহিস সালাম বিনতে সাইয়্যিদুনা হযরত গালিব আলাইহিস সালাম বিনতে সাইয়্যিদুনা হযরত ফিহির আলাইহিস সালাম উনার মাতার ফাতিমা উনার দিক থেকে উনার নসব মুবারক হচ্ছে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম বিনতে ফাতিমা বিনতে যাইদা ইবনুল আসাদ ইবনে রাওয়াহা ইবনে হাজার ইবনে হাজার ইবনে আবাস ইবনে মাঈদ ইবনে আমির ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত লুয়াই আলাইহিস সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত গালিব আলাইহিস সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত ফিহর আলাইহিস সালাম। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাতা ফাতিমা উনার মাতা হালা, হালা বিনতে আবদে মানাফ ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছ আরঅইহিস সালাম ইবনে আমর ইবনে মুনফিয ইবনে আমর ইবনে মাঈস ইবনে আমির ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত লুয়াই আলাইহিস সালম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত ফিহির আলাইহিস সালাম। হালার মাতা ছিলেন, ক্বিলাবা বিনতে সুয়াইদ ইবনে সা’দ ইবনে সাহম ইবনে আমর ইবনে হুসায়স ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত কা’ব আলাইহিস সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত লুয়াই আলাইহিস সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত লুয়াই আলাইহিস সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত ফিহির আলাইহিস সালাম। অর্থাৎ সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতা ও মাতা সকলের দিক থেকে তিনি বনী ইসমায়ীল আলাইহিস সালাম উনার গোত্রে আগমন করেন তথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব-পুরুষগণ উনাদের বংশধর। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, ১ম খন্ড ১৩৯ ও ১৪০ পৃষ্ঠা)
স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ সর্বমোট ৭ জন সন্তান যমীনে আগমন করেন। উনাদের মধ্যে ছেলে সন্তান ছিলেন ৩ জন এবং মেয়ে সন্তান ছিলেন ৪ জন।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
আরবী
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সকল সন্তানগণ উনারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ থেকে যমীনে বিলাদত শরীফ লাভ করেন। উনারা হচ্ছেন-
এক. সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বায়িস আলাইহিস সালাম। আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আবুল ক্বাসিম’ উপনাম মুবারক উনার ছেলে সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বাসিম আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারকেই ছিলো। সুবহানাল্লাহ!
দুই. সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বইয়্যিব আলাইহিস সালাম।
তিন. সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বাহির আলাইহিস সালাম।
চার. সাইয়্যিদাতুনা হযরত জয়নাব আলাইহাস সালাম।
পাঁচ. সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম।
ছয়. সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুলছুম আলাইহাস সালাম।
সাত. সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম।
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আরাইহি তিনি বলেন,
আরবী
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছেলে সন্তানগণ উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বাসিম আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন সকলের বড়। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বাইয়্যিব আলাইহিস সালাম। তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বাহির আলাইহিস সালাম। আর মেয়েগণ উনাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম। অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত যয়নাব আলাইহাস সালাম। তার পর সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুলছুম আলাইহাস সালাম, অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম।
উল্লেখ্য যে, কিতাবুল আলক্বাব ২য় খন্ড ৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ্য রয়েছে, “আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বমোট সন্তান ছিলেন আটজন। চারজন ছেলে এবং চারজন মেয়ে। ছেলে সন্তানগণ উনার প্রত্যেকেই অল্প বয়স মুবারকেই বিছাল শরীফ লাভ করেন। উনারা হচ্ছেন-
এক. সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বাসিম আলাইহিস সালাম।
দুই. সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বইয়্যিব আলাইহিস সালাম।
তিন. সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বাহির আলাইহিস সালাম।
চার. সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।
আর মেয়েগণ উনার হলেন-
এক. সাইয়্যিদাতুনা হযরত যয়নাব আলাইহাস সালাম।
দুই. সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম।
তিন. সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুলছুম আলাইহাস সালাম।
চার. সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম।
স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহিম আলাইহাস সালাম উনার মাতা ছিলেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়ায়ে কিবতিয়া আলাইহাস সালাম।
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত মারিয়ায়ে কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ তাশরীফ আনেন। আলেকজান্দ্রিয়া-এর শাসক মুকাত্তকিস তিনি হযরত মারিয়ায়ে কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাদিয়া পাঠিয়ে দেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিকাহ করে নেন। সুবহানাল্লাহ! আর সেই ঘরেই আগমন করেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।
সৃষ্টির সূচনা থেকে শুরু করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক বয়স মুবারক ৩৫ বৎসর পর্যন্ত পবিত্র কা’বা শরীফ অনেকবারই পুনঃনির্মাণ করা হয়। সর্বপ্রথম সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি পুনঃনির্মাণ করেন। ‘দালায়িলে বাইহাক্বী শরীফ-এ’ বর্নিত রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণের নির্দেশসহ সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার নিকট হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে প্রেরণ করেন। যখন সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি কা’বা শরীফ-এর পুনঃনির্মাণ কাজ সম্পন্ন করলেন তখন আদেশ হলো, এই পবিত্র ঘরকে তাওয়াফ করুন। বলা হলো, আপনিই পৃথিবীর প্রথম মানব আর এই পবিত্র ঘরটি মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতের উদ্দেশ্যে প্রথম নির্মিত হয়েছে।” (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড ২৮৫ পৃষ্ঠা, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১ম খন্ড ১১২ পৃষ্ঠা)
‘কিতাবুল আম্বিয়া’য় উল্লেখ রয়েছে, সাইয়্যিদুনা হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার যামানায় যখন মহাপ্লাবন সংঘটিত হলো। তখন প্লাবন বা বন্যার ফলে পবিত্র কা’বা শরীফ-এর চিহ্নও অবশিষ্ট রইলো না। ফলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি দ্বিতীয়বার পবিত্র কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণের আদেশ প্রাপ্ত হন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি অবতরণ করে সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কা’বা শরীফ-এর ভিতরের সীমা চিহ্নিত করে দেন। এরপর সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সন্তান সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম উনাকে সঙ্গে নিয়ে কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণ শুরু করেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ان اول بيت وضع للناس للذى ببكة مباركا وهدى للعالمين- فيه ايات بينات مقام ابراهيم- ومن دخله كان امنا- ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا-
অর্থ: নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্মিত হয়েছে, তাতো বাককা অর্থাৎ মক্কা শরীফ-এ। তা বরকতময় এবং সারা বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়েত বা দিশারী। তাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে, যেমন মাক্বামে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। আর যে কেউ সেখানে প্রবেশ করবে সে নিরাপত্তা লাভ করতে। মানুষের মধ্যে যাদের সেখানে যাওয়ার সামর্থ রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ওই পবিত্র ঘরের হজ্জ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ৯৬, ৯৭)
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن حضرت أبى ذر رضى الله تعالى عنه قال قلت يا رسول الله أى مسجد وضع أول؟ قال- المسجد الحرام- قلت ثم أى؟ قال- المسجد الأقصى- قلت كم بينهما؟ قال- أربعون سنة-
অর্থ: হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কোন মসজিদ সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘আল মাসজিদুল হারাম’। পুনরায় আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর কোনটি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘আল মাসজিদুল আকসা’। আমি জিজ্ঞাসা কললাম, এই দু’য়ের মাঝে সময়ের ব্যবধান ছিলো কতটুকু? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ২৯৮ পৃষ্ঠা)
মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি ওহী করলেন যে, আপনি যমীনে আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পবিত্র ঘর বাইতুল্লাহ শরীফ পুনঃনির্মাণ করুন। মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ওহী লাভ করার পর সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার অন্তর মুবারক প্রসারিত হয়ে উঠল। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমত ও সাকীনা, তা হলো একটি মস্তক বিশিষ্ট প্রবল বায়ু প্রবাহ। এই বায়ু প্রবাহটি সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে আরব দেশে নিয়ে আসে। অতঃপর তা বায়তুল্লাহ শরীফ-এর স্থানে সাপের মত কুন্ডলী পাকায়। সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি সেই স্থানে পবিত্র কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণ করেন।
পবিত্র কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণ ও হাজরে আসওয়াদ স্থাপনে কুরাইশ সরদারগণের বিবাদ মীমাংসায় আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফায়ছালা
নির্মাণ শেষ পর্যায়ে ‘হাজরে আসওয়াদ’ স্থাপনের সময় তিনি স্বীয় পুত্র সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমায়িল আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, আমাকে একটি পাথর খুঁজে এনে দিন। পাথর খুঁজে শূন্য হাতে ফিরে এসে দেখতে পেলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ‘হাজরে আসওয়াদ’ যথাস্থানে স্থাপন করেছেন। পিতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই পাথরটি আপনি কোথায় পেলেন? জবাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আসমান থেকে এই পাথরটি নিয়ে এসেছেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ-এর পুনঃনির্মাণ কাজ সমাপ্ত করলেন।
হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এভাবে যুগযুগ অতিক্রান্ত হওয়ার পর অনেকের মাধ্যম দিয়েই আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণ করান তার মধ্যে আমালিকা সম্প্রদায়ও তা পুনঃনির্মাণ করেন। অতঃপর জুরহম গোত্র পুনঃনির্মাণ করেন। পর্যায়ক্রমে কুরাইশ সম্প্রদায়গণও তা পুনঃনির্মাণ করেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন ছিলেন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে যুবক বয়স মুবারক-এর। পুনঃনির্মাণ কাজের সর্বশেষে ‘হাজরে আসওয়াদ’ যথাস্থানে স্থাপন করতে গিয়ে কুরাইশগণ উনাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। শেষে উনারা সিদ্ধান্ত নেন যে, সকাল বেলা সর্বপ্রথম যিনি এখানে উপস্থিত হবেন, তিনি আমাদের মাঝে এই বিরোধের সমাধান দিবেন। আমরা সকলেই উনার সিদ্ধান্ত মেনে নিব। দেখা গেল, সকাল বেলা সর্বপ্রথম যিনি তাদের মাঝে উপস্থিত হলেন, তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের মধ্যে উদ্ভূত সমস্যার এভাবে ফায়ছালা প্রদান করেন যে, পাথরটিকে একটি চাদরে বসিয়ে উনাদের সব গোত্র প্রধান পাথরটিকে যথাস্থানে নিয়ে যাবেন। দেখা গেলো সকলেই এই ফায়ছালায় খুশি হলেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ২৯৯ পৃষ্ঠা)
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩০০ ও ৩০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
قال حضرت موسى بن عقبة رحمة الله عليه- وانما حمل قريشا على بنائها ان السيول كانت تأنى من فوقها، من فوق الردم الذى صفوه فخربها ان يدخلها الماء. وكان رجل يقال له مليح سرق طيب الكعبة. فأرادوا ان يشيدوا بنيانها وان يرفعو بابها حتى لايدخلها إلا من شاء وافاعد و الذلك نفقة وعمالا. ثم غدوا اليها ليهموها على شفق وحذر أن يمنعهم الذى ارادوا. فكان اول رجل طلعها وهدم منها شيئا الوليدبن المغيرة فلما رأو االذى فعل الوليد تتابعوا فوضعوها فأجبهم ذلك. فلما ارادوا أن يأخذوا فى بنيانها احضروا عمالهم فلم يقدر رجل منهم أن يمضى امامه موضع قدم فزعموا انهم رأوا حية قد أحاطت بالبيت رأسها عند ذنبها.
অর্থ: হযরত মূসা ইবনে উক্ববা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কুরাইশগণ উনাদের পবিত্র কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণের প্রতি উদ্বুদ্ধ হওয়ার পটভূমি এই যে, বিভিন্ন সময়ের প্লাবনের ফলে কা’বা শরীফ-এর দেয়াল কিছুটা খসে পড়ে। তাতে কুরাইশগণ উনাদের কাবা শরীফ-এর অভ্যন্তরে পানি ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা বোধ করেন। অপরদিকে ‘মালীহ’ নামের এক ব্যক্তি কা’বা শরীফ-এর সুগন্ধি চুরি করে নিয়ে যায়। তাই কুরাইশগণ উনারা কা’বা শরীফ-এর ভিত্তি আরো শক্ত করার এবং সাধারণ মানুষের প্রবেশ রোধ করার জন্য পবিত্র কা’বা শরীফ-এর দরজা মুবারক আরো উঁচু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এজন্য উনারা অর্থ ও শ্রমিক সংগ্রহ করেন। এবার উনারা পবিত্র কা’বা শরীফ ভেঙ্গে ফেলে পুনঃনির্মানের জন্য প্রস্তুতি নেন এবং এই বলে সতর্ক করে দেন যেনো কেউ এতে বাঁধা দিতে না আসে। ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা সর্ব প্রথম তিনি এগিয়ে আসেন এবং কা’বা শরীফ-এর কিয়দাংশ ভেঙ্গে ফেলেন। তার দেখাদেখি অন্যরাও তার অনুসরণ করেন। এতে কুরাইশগণ উনারা আনন্দিত হন এবং এর জন্য শ্রমিক নিয়োগ করেন। কিন্তু একজন শ্রমিকও এক পা অগ্রসর হতে পারছে না। তারা দেখতে পেলো একটি সাপ কা’বা শরীফ-এর ঘরটিকে জড়িয়ে আছে। সাপটির লেজ এবং মাথা একই জায়গায়।
فأشفقوا منها شفقة شديدة، وخشوا ان يكونوا قد وقعوا مما عملوا فى هلكة. وكانت الكعبة حرزهم ومنعتهم من الناس وشر فالهم. فلما سقط فى ايديهم والتبس عليهم امرهم قام فيهم المغيرة ابن عبد الله بن عمروبن مخزوم فذكر ماكان من نصحه لهم وامره إياهم ان لايتشاجروا ولايتحاسدوا فى بنائها. وأن يقتسموها ارباعا. وان لايدخلوا فى بنائها ملاحراما. وذكر انهم لما عزموا على ذلك ذهبت الحية فى السماء وتغيت عنهم ورأوا ان ذلك من الله عز وجل. قال- ويقول بعض الناس إنه اختطفها طائر والقاها نحوأجياد.
এতে তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। কুরাইশগণ বলেন, কা’বা শরীফ ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টার ফলেই এমনটি হয়েছে। অথচ পবিত্র কা’বা শরীফ ছিলো উনাদের জন্য হিফাযত ও মর্যাদা লাভের হেতু। কুরাইশগণ উনারা এবার কিংকর্তব্যবিমূঢ় বা হতবাক। এবার মুগীরা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে মাখযুম তিনি এগিয়ে আসেন। তিনি কুরাইশগণ উনাদের উদ্দেশ্যে উপদেশ প্রদান করেন এবং উনাদের আদেশ দেন যেনো তারা ঝগড়া-বিবাদ না করে এবং কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণে বিদ্বেষ পরিহার করে। উনারা যেনো কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণের কাজকে চারভাগে ভাগ করে নেন এবং এই মহান কাজে কোন হারাম সম্পদের মিশ্রণ না ঘটান। বর্ণনাকারী বলেন, এবার কুরাইশগণ উনারা মুগীরা ইবনে আব্দুল্লাহ উনার উপদেশ অনুযায়ী কাজ করার উদ্যোগ নিলে সাপটি আকাশে চলে যায় এবং অদৃশ্য হয়ে যায়। তাদের ধারণা তা আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেই হয়েছিলো। হযরত মূসা ইবনে উকবা তিনি বলেন, অনেকের ধারণা, একটি পাখি সাপটিকে ছোঁ মেরে ধরে নিয়ে আজইয়াদ স্থানের দিকে নিক্ষেপ করে।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩০১ ও ৩০২ পৃষ্ঠা)
وقال حضرت محمد بن اسحاق بن يسار رحمة الله عليه- فلما بلغ رسول صلى الله عليه وسلم خمسا وثلاثين سنة اجتمعت قريش لبناء الكعبة وكانوا يهمون بذلك ليقفوها ويهالون هدمها. وإنما كانت رضما فوق القامة. فأرادوا رفعها وتسقيفها وذلك ان نفرأ سرقوا كنز الكعبة. وانما كان فى بئر فى جوف الكعبة. وكان الذى وجد عنده الكنز دونك مولى لبنى مليح بن عمرو بن خزاعة فقطت قريش يده وتزعم قريش أن الذين سرقوه وضموه عند دويك. وكان البحر قد رمى بسفينة الى جدة لرجل من تجار الروم. فتحطمت. فخذوا خشبها فأعدوه لتسقيفها. قال حضرت الاموى رحمة الله عليه- كانت هذه السفينة لقيصر ملك الروم تحمل الات البناء من الرخام والخشب والحديد سرحها قيصرمع باقوم الرومى الى الكنيسة التى احرقها الفرس للحبشة فلما بلغت مرساها من جدة بعث الله عليها ريحا فحطمتها.
অর্থ: হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে ইয়াসার রহমুতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পঁয়ত্রিশ বছর বয়স মুবারকে উপনীত হলেন, তখন কুরাইশগণ উনারা কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণের জন্য প্রস্তুত হলেন। উনাদের এ আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো কা’বা শরীফ-এর ছাদ স্থাপন করা। আরেকটি কারণ, উনারা কা’বা শরীফ গৃহ ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। উল্লেখ্য যে, সে সময় কা’বা শরীফ-এর উচ্চতা একজন মানুষের উচ্চতার চেয়ে সামান্য বেশি উঁচু ছিলো। উনারা কা’বা শরীফকে আরো উঁচু এবং ছাদবিশিষ্ট করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ঘটনার পটভূমি নি¤œরূপ:
একদল লোক কা’বা শরীফ-এর একটি মূল্যবান সম্পদ চুরি করে। তা কা’বা শরীফ-এর মধ্যস্থলে একটি গর্তে পুতে রাখে। পরবর্তীতে তা বনু মালীহ ইবনে আমর ইবনে খূযায়া-এর দাবীক নামক জনৈক গোলামের নিকট পাওয়া যায়। ফলে কুরাইশগণ উনারা তার হাত কেটে দেন। কুরাইশগণ উনাদের ধারণা ছিলো, ওটি যারা চুরি করেছিলো তারাই তা দাবীক-এর নিকট রেখেছিলো।
অপরদিকে রোম দেশীয় এক বণিকের একটি জাহাজ সমুদ্রে ভেসে ভেসে জেদ্দায় এসে পৌছে এবং ভেঙ্গে যায়। কুরাইশগণ উনারা সেই জাহাজটির কাঠগুলো ক্রয় করেন। তা দিয়ে উনারা কা’বা শরীফ-এর ছাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। হযরত উমুবী বলেন, জাহাজটি ছিলো রোম স¤্রাট কায়সারের। জাহাজটি পাথর, কাঠ, লোহা ইত্যাদি নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে নিয়োজিত ছিলো। কায়সার বাকুম রুমীর সঙ্গে জাহাজটি সেই গির্জা অভিমুখে রওয়ানা করেছিলেন, যা পারস্যবাসীরা আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছিলো। জাহাজটি জেদ্দায় ঠেকে যাওয়ার পর মহান আল্লাহ পাক তিনি তার উপর দিয়ে প্রবল বায়ু প্রেরণ করেন। ইে বায়ুর ঝাপটায় জাহাজটি ভেঙে যায়।
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه- وكان بمكة رجل قبطى نجار فيها لهم فى أنفسهم بعض ما يصلحها. وكانت حية تخرج من بئر الكعبة التى كانت تطرح فيها ما يهدى اليها كل يوم. فنشرف على جدار الكعبة وكانت مما يهابون، وذلك أنه كان لا يدنو منها أحد إلا احزألت- وكشت وفتحت فاها، فكانوا يهابونها، فبينها هى يوما تشرف على جدار الكعبة كما كانت تصنع، بعث الله عليها طائرا فاختطعها فذهب بها. فقالت قريش- إنا لنرجو أن يكون الله تعالى قد رضى ما أردنا، عندنا عامل رقيق وعندنا خشب وقد كفانا الله الحية.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মক্কা শরীফ-এ একজন কিবতী ছূঁতার ছিলো। কা’বা শরীফ মেরামতের অনেক সরঞ্জাম সে প্রস্তুত করে দেয়। অপর দিকে একটি সাপ কা’বা শরীফ-এর কূপ থেকে বেরিয়ে এসে কিবতী প্রতিদিন যে কাজ আঞ্জাম দিতো তা ল-ভ- করে দিতো। ভয়ঙ্কর সেই সাপটি কা’বা শরীফ-এর দেয়ালে উঠে উঁকি ঝুঁকি মারত। কেউ তার নিকট অগ্রসর হলে সে মুখ হা করে ফণা তুলে তাকিয়ে থাকতো। এতে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়তো। এমনিভাবে প্রতিদিনের ন্যায় একদিন সাপটি কা’বা শরীফ-এর দেয়ালে উঠে উঁকি দিলে মহান আল্লাহ পাক তিনি একটি পাখি প্রেরণ করেন। পাখিটি সাপটিকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। ফলে কুরাইশগণ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, মহান আল্লাহ পাক আমাদের এই পরিকল্পনায় সন্তুষ্ট হয়েছেন। আমাদের আছে দক্ষ কারিগর, আছে কাঠ। আর সাপের সমস্যা থেকেও মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের মুক্তি দিলেন।
و حضرت حكى السهبلى رحمة الله عليه- عن حضرت رزبن رحمة الله عليه أن سارقا دخل الكعبة فى أيام جرهم ليسرق كنزها. فانهار البئر عليه حتى جاءوا فأخرجوه وأخذوا منه ما كان أخذه، ثم سكنت هذا البئر حية راسها كراس الجدى وبطنها أبيض وظهرها أسود فأقامت فيها خمسمائة عام وهى التى ذكرها حضرت محمدبن اسحاق رحمة الله عليه.
অর্থ: হযরত সুহায়লী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রাযীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, জুরহুমের আমলে এক চোর মসজিদুল হারাম শরীফ-এর গুপ্ত ভা-ার চুরি করার উদ্দেশ্যে কা’বা শরীফ-এ প্রবেশ করে। চুরি কারার জন্য লোকটি কূপে অবতরণ করলে কূপের পাড় তার উপর ভেঙ্গে পড়ে। সংবাদ পেয়ে কুরাইশগণ তাকে সেখান থেকে বের করে আনেন এবং চুরি করা সম্পদ উদ্ধার করেন। এরপর থেকে সেই কূপে একটি সাপ বসবাস করতে শুরু করে। সাপটির মাথা ছিলো একটি ছাগল ছানার মাথার মতো। পেট সাদা আর পিঠ কালো। সাপটি এই কূপে দীর্ঘ পাঁচশ’ বছর অবস্থান করে। এটাই ছিল সেই মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণিত সাপ। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩০১ পৃষ্ঠা)
قال حضرت محمد بن اسحاق رحمة الله عليه- فلما أجمعوا أمرهم لهدمها وبنيانها قام أبو وهب عمرو بن عايد بن عبد بن عمران بن مخزوم- وقال حضرت ابن هشام رحمة الله عليه عايدبن عمران بن مخزوم- فتناول من الكعبة حجرا فوثب من يده حتى رجع إلى موضعه. فقال- يامعشر قريش لاتدخلوا فى بنيانها من كسبكم إلا طيبا. لايدخل فيها مهر بغى ولا بيع ربا، ولا مظلمة أحد من الناس- والناس ينحلون هذا الكلام الوليد بن المغيرة ابن عبد الله بن عمرو بن مخزوم. ثم رجح حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه أن قائل ذلك أبو وهب بن عمرو- قال وكان خال أبى النبى صلى الله عليه وسلم وكان شريفا ممدحا.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কুরাইশগণ উনারা যখন পবিত্র কা’বা শরীফ-এর পুরনো ভিত্তি ভেঙ্গে নতুনভাবে ভিত্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন, তখন আবু ওয়াহাব আমর ইবনে আয়িদ ইবনে আবদ ইবনে ইমরান ইবনে মাখযুম হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে আয়িদ ইবনে ইমরান ইবনে মাখযুম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ-এর একটি পাথর খসিয়ে নেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পাথরটি উনার হাত থেকে লাফ দিয়ে স্বস্থানে ফিরে যায়। তা লক্ষ্য করে তিনি বলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়গণ! কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণে আপনারা আপনাদের উপার্জিত হালাল বা পবিত্র সম্পদ ব্যতীত অন্য কিছু মিশাবেন না। এতে কোনো গণিকার উপার্জন, সুদ এবং যুলুমের অর্থ যেনো না ঢুকে। অনেকের মতে, এই উক্তিটি ইবনে মুগীরা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে মাখযুম উনার। কিন্তু হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উক্ত ব্যক্তি আবু ওয়াহাব তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা উনার মামা। তিনি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও প্রশংসিত ব্যক্তি ছিলেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩০২ পৃষ্ঠা)
وقال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه- ثم ان قريشا نجزأت الكعبة. فكان شق الباب لبنى عبد مناف وزهرة، وما بين الركن الأسود والركن اليمانى لبنى مخزوم وقبائل من قريش انضموا اليهم. وكان ظهر الكعبة لبنى جمح وسهم. وكان شق الحجر لبنى عبد الدار بن قصى ولبنى أسد بن عبد العزى ولبنى عدى بن كعب، وهم الحطيم. ثم إن الناس هابوا هدمها وفرقوا منه. فقال الوليد بن المغيرة أنا أبدؤكم فى هدمها فأخذ المعول ثم قام عليها وهو يقول- أللهم لم ترع أللهم إنا لا نريد إلا الخير. ثم هدم من ناحية الركنين فتربص الناس تلك الليلة، وقالوا- فنظر فان أصيب لم نهدم منها شيئا ورددناها كما كانت وإن لم يصبه شئ فقد رضى الله ما صنعنا من هدمها. فأصبح الوليد غديا على عمله فهدم وهدم الناس معه- حتى إذا انتهى الهدم بهم إلى الأساس- أساس حضرت ابراهيم عليه السلام- أفضوا إلى حجارة خضر كالأسنة أخذ بعضها بعضا- ووقع فى صحيح البخارى عن يزيد بن رومان كأسنمة الابل-
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কুরাইশগণ উনারা কা’বা শরীফকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে নেন। দরজার অংশ নির্মাণের দায়িত্ব নেন বনূ আবদে মানাফ ও যুহরা গোত্রদ্বয়। রুকনে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী-এর মধ্যবর্তী স্থানের দায়িত্ব পান বনূ মাখযুম। আর কুরাইশগণ উনারা আরো কয়েকটি গোত্র তাদের সঙ্গে মিলে কাজ করেন। কা’বা শরীফ-এর পিছনের অংশ পান বনূ জামহ ও বনূ সাহম।
অপরদিকে বনূ আব্দুদ্দার ইবনে কুছাই, বনূ আসাদ ইবনে আবদুল উযযা ও বনূ আদী ইবনে কা’ব হিজর তথা হাতীম নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
কিন্তু মানুষ তা ভাঙ্গার ব্যাপারে ভয় পাচ্ছিল এবং প্রত্যেকেই গা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করছিলো। তখন ওলীদ ইবনে মুগীরা তিনি বলেন, ঠিক আছে, আমি আপনাদেরকে কা’বা শরীফ ভাঙ্গার কাজ শুরু করে দিচ্ছি। এই বলে তিনি হাতুড়ী বা গাঁইতি নিয়ে কা’বা শরীফ-এর সামনে গিয়ে দাঁড়ান এবং বলতে শুরু করেন, “হে আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের মন থেকে ভীতি দূর করে দিন। কল্যাণ বা সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কিছু তো আমাদের অভীষ্ট নয়।” তারপর তিনি দুই রুকনের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেন। সেই রাতের মতো এর ফল কি দাঁড়ায় তা দেখার জন্য লোকজন অপেক্ষা করেন এবং বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি। ওলীদ ইবনে মুগীরা যদি কোনো বিপদে পতিত হন, তাহলে আমরা কা’বা শরীফ-এর কোনো অংশই ভাঙতে যাবো না এবং যা ভাঙা হয়েছে, তাও পূর্বের মতো মেরামত করে দিবো। আর যদি উনাকে কোনো বিপদ স্পর্শ না করে তাহলে বুঝে নিবো, আমরা কা’বা শরীফ ভাঙার যে পরিকল্পনা নিয়েছি, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাতে সন্তুষ্ট আছেন। পরের দিন সকালে ওলীদ আবার কা’বা শরীফ ভাঙার কাজ শুরু করলেন। উনার সঙ্গে অন্যরাও ভাঙতে শুরু করেন। অবশেষে ভাঙার কাজ যখন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার ভিত্তি পর্যন্ত পৌঁছে, তখন উনারা একটি সবুজ পাথর দেখতে পান। পাথরটি দন্তসারির ন্যায়। যেন একটি অপরটিকে জড়িয়ে আছে। হযরত ইয়াযীদ ইবনে রুমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত ছহীহ বুখারী শরীফ-এর এক হাদীছ শরীফ كأسنمةالابل বলা হয়েছে। অর্থাৎ পাথরটি দেখতে উটের কুঁজের ন্যায়। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩০২ পৃষ্ঠা)
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه- فحدثنى بعض من يروى الحديث أن رجلا من قريش ممن كان يهدمها أدخل عتلة بين حجرين منها ليقلع بها أحدهما، فلما محرك الحجر اتفضت مكة بأسرها. فانهواعن ذلك الأساس.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র কা’বা শরীফ ভাঙার কাজে অংশগ্রহণকারীগণের একজন কা’বা শরীফ-এর দুইটি পাথরের মাঝে শাবল ঢুকিয়ে চাপ দেন। তাতে একটি পাথর নড়ে উঠলে সাথে সাথে সমগ্র মক্কা শরীফ নগরী কেঁপে উঠে। ফলে উনারা ওই অংশ ভাঙা থেকে বিরত থাকেন।
وقال حضرت موسى بن عقبة رحمة الله عليه- وزعم حضرت عبد الله بن عباس رضى الله تعالى عنه أن أولية قريش كانوا يحدثون أن رجلا من قريش لما اجتمعوا لينزعوا الحجارة إلى تأسيس ابراهيم واسماعيل عليهما السلام عمد رجل منهم إلى حجر من الأ ساس الأول فرفعه وهو لايدرى أنه من الأساس الأول، فأبصر القوم برقة تحت الحجر كادت تلتمع بصر الرجل، ونزا الحجر من يده فوقع فى موضعه وفزع الرجل والبناة. فلما ستر الحجر عنهم ما تحته إلى مكانه عدوا إلى بنيانهم وقالوا لا تحركوا هذا الحجر ولا شيئا بحذائه.
অর্থ: হযরত মূসা ইবনে উকবা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার মতে, কুরাইশগণ উনারা কতিপয় প্রবীণ ব্যক্তি বলতেন যে, কুরাইশগণ উনারা যখন পবিত্র কা’বা শরীফ-এর কিছু পাথর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনার ভিত্তির নিকট সরিয়ে নিতে সমবেত হন, তখন উনাদের একজন প্রথম ভিত্তির একটি পাথর সরাতে উদ্যত হন। অবশ্য উনার-এ কথা জানা ছিলো না যে, এটি প্রথম ভিত্তির পাথর।
সরানোর উদ্দেশ্যে লোকটি পাথরটি তুলে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকলে পাথরের নিচে বিদ্যুতের ঝলক দেখতে পান, যেন তাতে লোকটির চোখ ঝলসে যাওয়ার উপক্রম হলো এবং পাথরটি উনার হাত থেকে ছুটে গিয়ে যথাস্থানে বসে যায়। তা দেখে লোকটি নিজে এবং নির্মাণ শ্রমিকরা পুনরায় নির্মাণ কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং বলাবলি করেন কেউ এই পাথর এবং এই স্তরের অন্য কিছু সরানোর চেষ্টা না করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩০২ পৃষ্ঠা)
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه- وحدثت أن قريشا وجدوا فى الركن كتابا بالسر يانية فلم يعر فوا ماهو، حتى قرأه لهم رجل من يهود، فاذا هو أنا الله ذوبكت، خلقتها يوم خلقت السماوات والأرض، وصورت الشمس والقمر، وحففتها بسعة أملاك حنفاء لاتزول أخشباها- قال حضرت ابن هشام رحمة الله عليه يعنى جبلاها- مبارك لأهلها فى الماء واللبن.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, কুরাইশগণ উনারা রুকন-এ সুরিয়ানী ভাষায় লিখিত একটি লিপি পেয়েছিলেন। কিন্তু উনারা তার মর্ম উদ্ধার করতে পারেননি। পরে জনৈক ইহুদী উনাদেরকে লিপিটি পাঠ করে শোনান। তাতে লেখা ছিলো- “আমি মক্কা শরীফ-এর রব বা মালিক মহান আল্লাহ পাক। এই মক্কা শরীফকে আমি সেদিন সৃষ্টি করেছি, যেদিন আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করি এবং সূর্য ও চন্দ্রকে আকৃতি দান করি এবং তাকে আমি সাতটি রাজ্য দ্বারা আচ্ছাদিত করি। এর পাহাড় দুটি স্থানান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত এর কোনো নড়চড় হবে না। এর আহাল বা অধিবাসীগণ উনাদের জন্য এটি পানি ও দুধসমৃদ্ধ, বরকতময়। সুবহানাল্লাহ!
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه - وحدثت أنهم وجدوا فى المقام كتابا فيه- مكة الله الحرام، يأتيها رزقها من ثلاثة سبل، لايحلها أول من أهلها.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণিত হয়েছে যে, কুরাইশগণ উনারা মাক্বামে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এ একটি লিপি পান। তাতে লেখা ছিলো, ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র মক্কা শরীফ। এর তিন পথে এখানকার আহাল বা অধিবাসীগণ উনাদের জীবিকা আসে। এর অধিবাসীদের কেউ মর্যাদা ক্ষুণœ করতে পারবে না।
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه -وزعم ليث بن أبى سليم أنهم وجدوا فى الكعبة قبل مبعث النبى صلى الله عليه وسلم بأربعين سنة- إن كان ماذكر حقا- مكتوبأ فيه- من يزرع خيرا يحصدغبطة، ومن يزرع شرا يحصد ندامة. يعملون السيئات ويحزون الحسنات؟ أجل كما يحبتنى من الشوك العنب.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, লাইছ ইবনে আবী সুলায়ম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা মতে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লøাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর চল্লিশ বছর আগে কুরাইশগণ উনারা পবিত্র কা’বা শরীফ-এ একটি লিপি পান। তাতে লেখা ছিলো- “যে ব্যক্তি খইর বা কল্যাণের বীজ বপন করবে, তিনি আকাঙ্খানীয় ফসল তুলবেন আর যে ব্যক্তি অকল্যাণের বীজ বপন করবে, সে অনুতাপের ফসল তুলবে। মানুষ কাজ করে অসৎ আর প্রতিদান চায় সৎকাজের? এটা কাটাময় বৃক্ষ থেকে আঙ্গুর ফল লাভ করা ছাড়া আর কি? (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩০২ পৃষ্ঠা)
قال حضرت سعيد بن يحبى الأموى رحمة الله عليه- حدثنا حضرت المعتمر بن سليمان الرقى رحمة الله عليه عن حضرت عبد الله بن بشر الزهرى رحمة الله عليه- يرفع الحديث إلى النبى صلى الله عليه وسلم. قال- وجد فى المقام ثلاثة أصفح، فى الصفح الأول- إنى أنا الله ذوبكة، صنعتها يوم صنعت الشمس والقمر وحفقتها بسبعة أملاك حنفاء، وباركت لأ هلها فى اللحم واللبن وفى الصفح الثانى- إنى أنا الله ذوبكة، خلقت الرحم وشفقت لها من اسمى. فمن وصلها وصلته ومن قطعها بتته، وفى الصفح الثالث- إنى انا الله ذوبكة، خلقت الخير والشر وقدرته. فطوبى لمن أجريت الخير على يديه وويل لمن أجريت الشر على يديه.
অর্থ: হযরত সাঈদ ইবনে ইয়াহইয়া আল উমাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত মু’তামির ইবনে সুলাইমান আরআররক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বাশার আযযুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি মারফু সূত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, মাকামে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এ তিনটি লিপি পাওয়া যায়। এক পাতায় লেখা ছিলো- ‘আমি মক্কা শরীফ-এর খালিক্ব, মালিক ও রব আল্লাহ পাক। এটি আমি চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করার দিনই তৈরি করেছি এবং সাতটি রাজ্য দ্বারা তাকে আবৃত করেছি এবং তার আহাল বা অধিবাসীগণের জন্য গোশতে ও দুধে বরকত দান করেছি।’ সুবহানাল্লাহ!
দ্বিতীয় লিপিতে ছিলো-
‘আমি মক্কা শরীফ-এর মালিক রব বা আল্লাহ পাক। আমি রাহিম- আত্মীয়তার সম্পর্ক সৃষ্টি করেছি এবং আমার নাম মুবারক থেকে তার নামকরণ করেছি بيت الله )বাইতুল্লাহ শরীফ(।
অতএব, যে লোক তার হুরমত, সম্মান বজায় রাখবে আমি তাকে কাছে টেনে নিবো। আর যে তা ছিন্ন করবে অর্থাৎ এই মক্কা শরীফ তথা বাইতুল্লাহ শরীফ-এর সম্মান রক্ষা করবেনা, বেয়াদবী করবে আমিও তাকে ছিন্নভিন্ন করবো।’
তৃতীয় লিপিতে লেখা ছিলো-
‘আমি মক্কা শরীফ-এর খালিক্ব বা রব আল্লাহ পাক। আমি খাইর বা কল্যাণ অকল্যাণ ও তার ভাগ্যলিপি নির্ধারণ করেছি। সুতরাং সুসংবাদ সেই ব্যক্তির জন্য, যার দুই হাতে আমি অশেষ খাইর বা কল্যাণ চালু করেছি। আর ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য, যার দুই হাতে আমি চালু করেছি তাদের অপরাধের কারণে অকল্যাণ।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩০২ ও ৩০৩ পৃষ্ঠা)
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه- ثم إن القبائل من قريش جمعت الحجارة لبنائها، كل قبيلة تجمع على حدة. ثم بنوها حتى بلغ البناء موضع الركن-قاختصموا فيه كل قبيلة تريد أن ترفعه إلى موعمه دون الأخرى. حتى تحاوروا أوتحالفوا، وأعدوا للقتال فقربت بنو عبد الدار جفنة مملوءة دما. ثم تعاقدوا هم وبنوعدى ابن كعب بن لؤى على الموت، وأدخلوا أيديهم فى ذلك الدم فى تلك الجفنة. فسموا لعقة الدم. فمكثت قريش على ذلك أربع ليال أوخمسا ثم انهم اجتمعوا فى المسجد فتشاورو وتناصفوا. فزعم بعض أهل الرواية أن أبا امية بن المغيرة بن عبد الله بن عمرو بن مخزوم- وكان عامئذ أسن قريش كلها قال- يامعشر قريش اجعلوا بينكم فيها تختلفون فيه أول من يدخل من باب هذا المسجد يقضى بينكم فيه. ففعلوا.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, অতঃপর কুরাইশ গোত্রগুলো কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণের জন্য পাথর সংগ্রহ করেন। প্রত্যেক গোত্র স্বতন্ত্রভাবে পাথর সংগ্রহের কাজ সুসম্পন্ন করে। তারপর উনারা কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণ করেন। নির্মাণ কাজ রুকন (হাজরে আসওয়াদ)-এর স্থান পর্যন্ত পৌঁছলে উনারা বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়েন। প্রত্যেক গোত্রেই চাচ্ছিলেন যেন উনারাই হাজরে আসওয়াদ স্বস্থানে পুনঃস্থাপন করেন, অন্য কেউ নয়। উনাদের এই বিবাদ চরম আকার ধারণ করে। উনারা পরস্পর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। বনু আবদুদ্দার রক্ত ভর্তি একটি পাত্র উপস্থিত করেন। তারপর উনারা এবং বনু আদী ইবনে কা’ব ইবনে লুয়াই উনারা শাহাদাতের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং পাত্রের রক্তে হাত ঢুকান। এটাকে উনারা ‘লা’কাতুদ্দাম’ তথা রক্ত চুক্তি নামে আখ্যা দেন। কুরাইশগণ উনারা এই অবস্থায় চার কি পাঁচ দিন অতিবাহিত করেন। অতঃপর উনারা মসজিদে সমবেত হয়ে পরামর্শ করেন। কোনো কোনো বর্ণনাকারীগণ উনাদের মতে, সে সময়ে কুরাইশগণ উনাদের প্রবীণতম ব্যক্তি আবু উমাইয়া ইবনে মুগীরা (ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে মাখযুম) তিনি বলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়গণ! আপনাদের বিবাদের সমাধান আপনারা এভাবে করুন যে, মসজিদ (বাইতুল্লাহ শরীফ-এর) এই দরজা দিয়ে সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি প্রবেশ করবেন, উনার হাতে আপনারা এর সমাধানের ভার অর্পণ করুন। তিনি আপনাদের মাঝে এই বিবাদের সমাধান করবেন। এ প্রস্তাবে উনারা সম্মত হন।
فكان أول داخل دخل رسول الله صلى الله عليه وسلم. فلما رأوه قالوا- هذا الأمين رضينا، هذا محمد صلى الله عليه وسلم- فلما انتهى اليهم وأخبروه الخبر قال رسول صلى الله عليه وسلم- هلموا إلى ثوبا. فأتى به وأخذ الركن فوضعه فيه بيده ثم قال. لتأخذ كل قبيلة بناحية من الثوب. ثم ارفعوه جميعا. ففعلوا حتى إذا بلغوا به موضعه وضمه هو بيده صلى الله عليه وسلم. ثم بنى عليه. وكانت قريش تسمى رسول الله صلى الله عليه وسلم الأمين.
দেখা গেলো, যিনি সর্বপ্রথম মসজিদে প্রবেশ করলেন, তিনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখে উনারা সকলেই বলে উঠলেন, ইনি হচ্ছেন আমাদের ‘আল আমীন’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসেছেন। উনার সিদ্ধান্তে আমরা সকলেই রাজী। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের নিকটে গেলেন উনারা বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানান। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ‘আমাকে একটি চাদর (কাপড়) এনে দিন।’ চাদর বা কাপড় দেয়া হলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রুকন অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ নিজ হাত মুবারকে তুলে সেই চাদর বা কাপড়ের উপর রাখলেন। তারপর বললেন, প্রত্যেক গোত্র চাদর বা কাপড়ের এক একটি কোণা ধরুন। তারপর সকলে মিলে তা তুলে নিয়ে যান। উনারা তাই করলেন। তা নিয়ে তারা যথাস্থানে পৌঁছলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ হাত মুবারকে তা স্থাপন করে দেন। উল্লেখ্য যে, কুরাইশগণ উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইতঃপূর্বে ‘আল আমীন’ নামেই ডাকতেন। সুবহানাল্লাহ!
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه- وكانت الكعبة على عهد النبى صلى الله عليه وسلم ثمانى عشرة ذراعا وكانت تكسى القباطى. ثم كسيت بعد البرور. واول من كساها الديباج الحجاج بن يوسف.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমলে কা’বা শরীফ আঠার হাত লম্বা ছিলো। প্রথমে কা’বা শরীফকে মিসরীয় কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখা হতো। তারপর ‘বারূর’ বস্ত্র দ্বারা ঢাকা হয়। সর্বপ্রথম যিনি কা’বা শরীফ-এ রেশমী কাপড়ের গিলাফ পড়ান তিনি হলেন হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩০৩ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য যে, কুরাইশগণ উনারা কা’বা শরীফ থেকে হিজর (তথা হাতীম)কে বের করে ফেলেন। পরিমাণে তা উত্তর দিক থেকে কয়েক হাত। কা’বা শরীফ হুবহু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার ভিত্তির উপর পুনঃনির্মাণ করেন। তবে উনারা পূর্ব দিকে কা’বা শরীফ-এর একটি মাত্র দরজা রাখেন। আর তা স্থাপন করা হয় উঁচু করে। যাতে ইচ্ছা করলেই যে কেউ তাতে প্রবেশ করতে না পারে, যেন প্রবেশাধিকার তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩০৩ পৃষ্ঠা)
وقد ثبت فى الصحيحين عن ام المومنين حضرت عائشة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لها- ألم ترى أن قومك قصرت بهم النفقة. ولولا حدثان قومك بكفر لنقضت الكعبة وجعلت لها بابا شرقيا وباب غربيا، وادخلت فيها الحجر ولهذ لما تمكن ابن الزبير بناها على اشار اليه رسول الله صلى الله عليه وسلم وجاءت فى غاية البهاء والحسن والسناء كاملة على قواعد الخليل. لها بابان ملتصقان بالارضى شرقيا وغربيا. يدخل الناس من هذا ويخرجون من الاخر. فلما قتل الحجاج ابن الزبير كتب الى عبد الملك بن مروان- وهو الخليفة يومئذ- فبما صنعه ابن الزبير واعتقدوا انه فعل ذلك من تلقاء نفسه.
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ-এ উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বলেছিলেন, আপনি কি জানেন না যে, আপনার সম্প্রদায়গণ (হালাল) অর্থ সঙ্কটে ছিলেন। আপনার সম্প্রদায় ফিতনা সৃষ্টি না করলে আমি কা’বা শরীফকে ভেঙ্গে নতুনভাবে নির্মাণ করতাম। তখন পূর্বমুখী একটি দরজা মুবারক আর পশ্চিমমুখী একটি দরজা মুবারক রাখতাম। আর হিজর তথা হাতীমকে কা’বা শরীফ-এ অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম। এ কারণে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খলীফা হয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশনা মুতাবিক কা’বা শরীফকে পুনঃনির্মাণ করেন। তাতে কা’বা শরীফ পরিপূর্ণরূপে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার ভিত্তিতে ফিরে আসে। তিনি মাটি সংলগ্ন করে দুটি দরজা মুবারক তৈরি করেন। একটি পূর্বমুখী আর অপরটি পশ্চিমমুখী। একটি দিয়ে মানুষ প্রবেশ করতো, অপরটি দিয়ে বের হতো। তারপর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ হযরত ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শহীদ করে খলীফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের নিকট পত্র লিখে। তাতে সে হযরত ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কর্তৃক কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণের কথা উল্লেখ করে। তখন তাদের বিশ্বাস ছিলো, হযরত ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ কাজটি নিজের মর্জিমত করেছিলেন।
فامر باعدتها الى ما كانت عليه فصمدوا الى الحائط الشامى فحصوه واخرجوا منه الحجر ورصوا حجارته فى أرض الكعبة. فارتفع باباها وسدوا الغربى واستمر الشرقى على ما كان عليه فلما كان فى زمن المهدى- أوابنه المصور- استشار مالكا فى اعادتها على ما كان صنعه ابن الزبير. فقال حضرت مالك رحمة الله عليه- إنى اكره أن يتخذها لملوك ملعبة. فتركها على ماهى عليه. فهى الى الان كذلك. وأما المسجد الحرام- فاول من أخر البيوت من حول الكعبة عمر بن الخطان رضى الله عنه، اشتراها من أهلها وهدمها فلما كان حضرت عثمان رضى الله تعالى عنه اشترى دورا وزادها فيه. فلما ولى ابن الزبير أحكم بنيانه، وحسن جدرانه وأكثر ابوابه. ولم يوسعه شيئا اخر. فلما استبد بالأ مرعبد الملك بن مروان زاد فى ارتفاع جدراته وامر بالكعبة فكسيت الديباج. وكان الذى تولى ذلك بامره الحجاج بن يوسف.
তাই খলীফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান কাবা শরীফকে পূর্বের মতো করে নির্মাণ করার জন্য আদেশ দেয়। তখন উত্তর দিকের দেয়াল ভেঙ্গে হিজর (হাতীম)কে বের করে ফেলা হয় এবং তার পাথরগুলোকে কাবা শরীফ-এর মাটিতে সযতেœ পুঁতে রাখা হয়। দরজা দুটো উঁচু করা হয় এবং পশ্চিম দিককে বন্ধ করে দিয়ে পূর্ব দিক আগের মতো রাখা হয়। পরবর্তীতে খলীফা মানসুর কা’বা শরীফকে হযরত ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভিত্তির উপর ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতামত চাইলে তিনি বলেন, রাজা বাদশাহরা কা’বা শরীফকে তামাশার পাত্রে পরিণত করুক আমি তা পছন্দ করি না। ফলে হযরত খলীফা মানসুর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কা’বা শরীফকে পুর্বাবস্থায় রেখে দেন। এখনও তা সেই রূপেই বিদ্যমান।
কাবা শরীফ-এর আশপাশ থেকে সর্বপ্রথম ঘরবাড়ি সরিয়ে দেন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। মালিকদের নিকট থেকে ক্রয় করে তিনি সেগুলো সরিয়ে ফেলেন। পরে হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরো কয়েকটি বাড়ি ক্রয় করে সেগুলোও সরিয়ে ফেলেন। তারপর হযরত ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাসনামলে কা’বা শরীফ-এর ভিতরটা আরো মজবুত করেন। দেয়ালগুলোর সৌন্দর্য এবং দরজা মুবারক-এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করেন। তবে তিনি আর কিছু করতে পারেননি। তারপর আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান খলীফা হয়ে কাবা শরীফ-এর দেয়াল আরো উঁচু করেন এবং হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের মাধ্যমে কাবা শরীফকে রেশমী কাপড়ের গিলাফ দ্বারা আবৃত করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩০৩ ও ৩০৪ পৃষ্ঠা)
হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন কুরাইশগণ পবিত্র কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণ-এর কাজ মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে উনাদের ইচ্ছানুযায়ী পছন্দমতো শেষ করেন তখন যুবাইর ইবনে আব্দুল মুত্তালিব তিনি সকলকে সেই সাপটির কাহিনী শোনান। যার ভয়ে কুরাইশগণ কা’বা শরীফ-এর পুনঃনির্মাণের কাজ করতে পারছিলেন না। ঘটনাটি তিনি কাব্যাকারে পেশ করেন।
عجبت لما تصوبت العقاب- إلى الثعبان وهى لها اضطراب.
وقد كانت تكون لها كشيس- وأحيانا يكون لها وثاب.
إذا قمنا إلى التاسيس شدت- تهيبنا البناء وقد نهاب.
فلما أن خشينا الزجر جاءت- عقاب تتلئب لها انصياب.
فضمتها اليها تم خلت- لنا البنيان ليس لها حجاب.
فقمنا حاسدبن الى بناء- لنا منه القواعد والتراب.
غداة يرفع التاسيس منه- وليس على مساوينا ثياب.
اعزبه المليك بنى لوى- فليس لأصله منهم ذهاب.
وقد حسدت هنالك بنوعدى- ومرة قد تقدمها كلاب.
فبوأنا المليك بذاك عزا- وعند الله يلتمس الثواب.
অর্থ: “সে সাপটি কুরাইশদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো, একটি ঈগলপাখি কী নিখুঁত ও নির্ভুলভাবে তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলো, তা দেখে আমি আশ্চর্য বা বিস্মিত হয়েছি! সাপটি কখনও কু-লী পাকিয়ে কখনো ফনা তুলে ছোবল মারার ভঙ্গিতে থাকতো। যখনই আমরা পবিত্র কা’বা শরীফ সংস্কার বা পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি, তখনই সে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং তার স্বভাবসূলভ ভীতিপ্রদ ভঙ্গিতে ভয় দেখিয়েছে। আমরা যখন এই সাপটির ভয়ে অতিষ্ঠ হয়ে গেলাম, তখন ঈগলটি এসে আমাদেরকে রক্ষা করলো এবং কা’বা শরীফ সংস্কার বা পুনঃনির্মাণে আমাদের আর কোনো বাধা থাকলো না।
পরেরদিন আমরা সকালে লেবাস বা পোশাক পরে কাজে লেগে গেলাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি এ কাজটি করার সুযোগ দিয়ে বনু লুওয়াইকে অর্থাৎ আমাদেরকে গৌরবান্বিত করলেন। তবে উনাদের পরে বনু আদী এবং বনু মুররাও এ কাজে এসে একত্রিত হয়েছেন। বনু কিলাব ছিলেন এ কাজে সবার চেয়েও অগ্রণী।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে কা’বা শরীফ-এর নিকট বসবাসের সুযোগ দিয়ে সম্মানিত করেছেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এ সুমহান কাজের প্রতিদান পাওয়া যাবে।” ইনশাআল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩০৪ পৃষ্ঠা)
‘মাদারিজুন নুবুওওয়াত’-এ উল্লেখ রয়েছে, সর্বপ্রথম পবিত্র কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণ করেন সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত শীছ আলাইহিস সালাম। দ্বিতীয়তঃ কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণ করেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও উনার ছেলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমায়ীল আলাইহিস সালাম। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত, “সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কোহে হিরা, কোহে শাব্বীর, কোহে লুবনান, কোহে তুর ও কোহে জুদী এই পাঁচটি পাহাড়ের পাথর দ্বারা কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণ করেন। কোনো কোনো বর্ণনায় হিরা, কুবাইস, কুদুস, দারকান ও রিদবী এই পাঁচ পাহাড়ের কথা বর্ণিত রয়েছে। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা উল্লেখিত পাহাড়-পর্বত থেকে পাথর এনে দিতেন এবং পাথর উঠানোর কাজে সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমায়ীল আলাইহিস সালাম তিনি সহযোগিতা করতেন। অতঃপর আমালিকা ও জুরহাম গোত্রদ্বয় এই কা’বা শরীফ-এর পুনঃসংস্কার করেন।
আমালিকা ও জুরহাম গোত্রদ্বয়ের কে আগে সংস্কার করেছেন এতে মতভেদ রয়েছে। তবে আমালিকা সম্প্রদায়ের রাজত্বকাল জুরহামদের রাজত্বের পূর্বে ছিলো। অতঃপর হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পুনঃনির্মাণের পর কুসাঈ ইবনে কিলাব তিনি এর পুনঃনির্মাণ করেন। অতঃপর পুনঃনির্মাণ করেন কুরাইশগণ। কুরাইশগণ উনাদের পুনঃনির্মাণের কথা অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক বয়স মুবারক ছিলো ৩৫ বৎসর। পরবর্তীতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কা’বা শরীফ-এর পুনঃনির্মাণ করেন ৬৪ হিজরী সালে। অতঃপর ৭৪ হিজরীতে খলীফা আব্দুল মালিক-এর নির্দেশে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ ছাকাফী, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কর্তৃক পুনঃনির্মিত কাঠামো পরিবর্তন করেন। কাজেই কা’বা শরীফ অনেক বারই পুনঃনির্মিত হয়েছে তবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে অবস্থানকালীন সময় কুরাইশগণ পুনঃনির্মাণ করেন। কুরাইশগণ উনারা যখন নির্মাণের কাজ শেষ করেন এবং ‘হাজরে আসওয়াদ’ স্থাপন করবেন তখন উনাদের মাঝে দ্বন্দ্ব লেগে যায়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুনঃনির্মাণের সর্বশেষ কাজটি তথা হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের কাজটি নিজ হাত মুবারকে সুসম্পন্ন করেন এবং সমস্ত দ্বন্দ্ব বিবাদ মিটিয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ!
‘সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’-এর ১ম খ- ১৪৫ ও ১৪৬ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, ‘পবিত্র কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণের জন্য কুরাইশগণের শাখা গোত্রগুলো পাথর সংগ্রহ করলো। প্রতিটি গোত্রই পৃথক পৃথক পাথর সংগ্রহ করে তা পুনঃনির্মাণ করতে লাগলে ‘হাজরে আসওয়াদ’-এর স্থান পর্যন্ত দেয়াল নির্মাণ সুসম্পন্ন হলে ‘হাজরে আসওয়াদকে’ যথাস্থানে স্থাপন নিয়ে বিবাদ বেঁধে গেলো। হাজরে আসওয়াদকে তুলে নিয়ে যথাস্থানে স্থাপন করা দুর্লভ সম্মান, বিশেষ গৌরব ও ফযীলত লাভের বাসনা প্রত্যেকের মধ্যেই প্রবল হয়ে উঠলো। এ নিয়ে গোত্রগুলো সংঘবদ্ধ হতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত তারা পরস্পর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। প্রত্যেক গোত্রেরই ইচ্ছা আকাঙ্খা- যে করেই হোক হাজরে আসওয়াদকে উনারাই যথাস্থানে স্থাপন করবেন। অন্য কাউকে সে সুযোগ দিবেন না।”
দেখতে দেখতে বনু আবদুদদ্বার রক্ত ভর্তি একটি পেয়ালা বা পাত্র নিয়ে এলেন। উনারা ও বনু আদী ইবনে কা’ব মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়ার প্রতিজ্ঞা করলো। তারা সেই রক্তভরা পাত্রে হাত ঢুকিয়ে এ ব্যাপারে ক্বসম খেলো। সেই থেকে এই গোত্রের লোকজন ‘রক্ত পিপাসু’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এই অবস্থায় কুরাইশগণ ৪/৫ দিন কাটিয়ে দিলেন। অবশেষে কা’বা শরীফ-এর পার্শ্বে সমবেত হয়ে পরামর্শ করতে লাগলেন।
বর্ণিত রয়েছে, ওই সময় কুরাইশ বংশের সবচেয়ে প্রবীণতম ব্যক্তি আবূ উমাইয়্যা ইবনে মুগীরা কারো কারো মতে এই প্রস্তাব দানকারী ছিলেন। মুহশিম ইবনে মুনীরা উরফে আবূ হুযাইফা তিনি এই আহ্বান জানালেন যে, হে কুরাইশ সম্প্রদায়গণ! এই পবিত্র মসজিদ বা কা’বা শরীফ দিয়ে যে ব্যক্তি (আগামীকাল ভোরে) প্রথম প্রবেশ করবেন উনাকে বিবাদ মীমাংসার দায়িত্ব দিন। অর্থাৎ মসজিদুল হারাম শরীফ-এর যে দরজা মুবারক-এর কথা বলা হয়েছে তা ছিলো বাবু বনী শায়বা। এখন যাকে বলা হয় বাবুস সালাম। মতান্তরে যে ব্যক্তি প্রথম বাবুস সাফায় প্রবেশ করবেন উনাকেই আপনারা এই বিবাদ মীমাংসার পূর্ণ দায়িত্ব দিন। এ প্রস্তাবে সকলেই সম্মতি দিলেন। তারপর দেখা গেলো, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বপ্রথম সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেন। উনাকে দেখে সকলেই বলতে লাগলেন ইনিতো আমাদের আল-আমীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার ফায়ছালা আমরা সকলেই মেনে নিবো ইনশাআল্লাহ!
কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, এই সময় জনৈক প্রবীণ নজদী ব্যক্তির রূপ ধারণ করে ইবলিস শয়তান কুরাইশদের মধ্যে অবস্থান করছিলো। সে বলে উঠলো যে, আপনাদের মধ্যে এতো বিজ্ঞ প্রবীণ ব্যক্তি থাকতে এতো বড় এক সুমহান কাজটি একজন ‘ইয়াতীম যুবক’ উনার উপর সোপর্দ করতে আপনারা কিভাবে সম্মত হলেন? কিন্তু তার এ উদ্ভট বক্তব্যকে কুরাইশগণ কোনো গুরুত্বই দিলেন না। ফলে সেখান থেকে ইবলিস লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়ে পালিয়ে গেলো।
স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উপস্থিত বিশাল জন সম্মুখে সকলের সামনে তাশরিফ আনলেন তখন সকলেই উনাকে সবকিছুই জানালেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরাইশগণ ও সকল গোত্রদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন, নছীহত পেশ করলেন এবং বললেন, আপনারা আমার নিকট একখানা চাদর নিয়ে আসুন। চাদর নিয়ে আসা হলো, তিনি নিজে হাজরে আসওয়াদ বা পাথরখানাকে সেই চাদরের মাঝখানে রাখলেন। অতঃপর উনাদের উদ্দেশ্যে বললেন, প্রত্যেক গোত্রের প্রতিনিধিরা এই চাদরের চার কোনো ধরে এক সাথে পাথরটি উঁচু করে নিয়ে চলুন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক গোত্রের চাদরের পার্শ্ব ধরার স্থান নির্দিষ্ট করে দেন। চাদরের যে কোনোটি আবদে মানাফ-এর বংশ ধরার জন্য নির্দিষ্ট হলো তা ধরলো উতবা ইবনে রবীয়া, দ্বিতীয় কোনোটি ধরলো যাময়া। তৃতীয়টি আবূ হুযায়ফা ইবনে মুগীরা, চতুর্থটি কায়স ইবনে আদী। দেখা গেলো, কুরাইশগণ উনারা যুদ্ধের পথ ছেড়ে শান্তির পথ ধরলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফায়ছালার ভিত্তিতে।
হুবায়রা ইবনে আবূ ওয়াহাব মাখযুমি তিনি এ ঘটনা সম্পর্কে এক কবিতায় বলেন, “কুরাইশ সম্প্রদায়ের সকল গোত্র একটি কঠিন সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে বিবাদে লিপ্ত হলেন। প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্বেষে রূপান্তরিত হলো এবং ভয়ঙ্কর যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠলো। যখন আমরা দেখলাম, ঘটনাটা এক কঠিন পর্যায় পৌঁছেছে এবং তরবারি ছাড়া আর কোনো সমাধান নেই, তখন আমরা একমত হয়ে বললাম, এই পবিত্র মক্কা শরীফ-এর সমতলভূমি থেকে যে ব্যক্তি প্রথম আসবেন তিনিই হবেন মীমাংসাকারী তথা ফায়ছালাকারী। সকলকে অবাক করে আল আমীন সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথম ব্যক্তি হয়ে সকলের সাইয়্যিদ হয়ে আমাদের কাছে আসলেন। আর আমরা সকলেই এক বাক্যে বললাম, পরম বিশ্বস্ত সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফায়ছালার ব্যাপারে আমরা সকলেই সম্মত।” সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর যখন চার কোণা ধরে চারটি গোত্র প্রধানরা পাথরটিকে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছালেন, তখন স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ হাত মুবারকে পাথরটি ধরে যথাস্থানে স্থাপন করলেন এবং তার উপর গাঁথুনি দিলেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই ছিলেন কুরাইশদের কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণের মূল এবং উনার নেক দৃষ্টিতেই কুরাইশগণ কা’বা শরীফ-এর এই সুমহান কাজ করতে পেরেছেন এবং সার্বিক আঞ্জাম দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ-এর পুর্নঃনির্মাণের কাজ সর্বশেষে হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের মাধ্যমে সুসম্পন্ন হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত মাখলুকাত-এর মাঝে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তামাম আলম তথা গোটা মাখলুক সৃষ্টি হয়েছে। তবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বপ্রথম নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবেই সৃষ্টি হয়েছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত যত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম যমীনে আগমন করেছেন উনারা সকলেই সর্বপ্রথম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হিসেবে উনাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। উনাকে সকলেই মেনে নিয়েছেন। এজন্য দেখা গেছে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াত শরীফ তথা উনার ছানা-ছিফত পূর্ববর্তী সমস্ত কিতাবে বর্ণিত রয়েছে এবং উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ দুনিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পাবে এ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
الذين يتبعون الرسول النبى الامى الذى يجدونه مكتوبا عندهم فى التوراة والانجيل.
অর্থ: যারা অনুসরণ করেন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল যিনি উম্মী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, যাঁর (নুবুওওয়াত প্রকাশ ও ছানা-ছিফত-এর) উল্লেখ রয়েছে, তাওরাত শরীফ ও ইনযীল শরীফ যা তাদের নিকট মওজুদ আছে তাতে তারা লিপিবদ্ধ পায়।” (সূরা আ’রাফ : আয়াত শরীফ ১৫৭)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন,
وإذ قال عيسى ابن مريم يا بنى إسرائيل إنى رسول الله إليكم مصدقا لما بين يدى من التوراة ومبشرا برسول يأتى من بعدى اسمه أحمد.
অর্থ: “স্মরণ করুন, যখন সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের নিকট প্রেরিত মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল আলাইহিস সালাম এবং আমার আগমনের পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত শরীফ রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী এবং আমি এমন এক রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের সুসংবাদ দানকারী যিনি আমার পরে যমীনে তাশরীফ আনবেন। উনার নাম মুবারক হবে আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (সূরা সফফা : আয়াত শরীফ ৬)
অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
0 Comments:
Post a Comment