হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (গ)

হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (গ)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত  শরীফ উপলক্ষে বেহেশতের হুর-পরী, এমনকি কুল-কায়িনাতের সকলেই খুশি প্রকাশ করেছিলেন, এখনো করছেন এবং ভবিষ্যতেও করতে থাকবেন। অতএব জিন-ইনসানের উচিত তারাও যেনো  অনন্তকাল ধরে খুশি প্রকাশ করে-
অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হুকুম বাস্তবায়ন করলেন, যেমনটি আল্লাহ জাল্লা শানুহু তিনি হুকুম করলেন। এক জামায়াত ফেরেশতা উনাদেরকে মক্কা শরীফ-এর পাহাড়ে দায়িত্ব দিলেন। উনারা হারাম শরীফ-এর দিকে নজর রাখলেন। উনাদের পাখাসমূহ যেনো সুগন্ধিযুক্ত সাদা মেঘের টুকরা। তখন পাখিসমূহ তাসবীহ পাঠ করতে লাগলো এবং উন্মুক্ত প্রান্তরে বনের পশুগুলো সহানুভূতির ডাক, আশার ডাক দিতে লাগলো। এ সবকিছুই সেই মহান মালিক জলীল জাব্বার আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার আদেশ মুতাবিক হলো।
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তিনি চোখের পর্দা অপসারিত করলেন। আমি দেখতে পেলাম, শাম দেশের বছরা নগরীর প্রাসাদসমূহ। আমি দেখলাম, তিনটি পতাকা। একটি পতাকা পূর্ব প্রান্তে, আরেকটি পতাকা পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কা’বা শরীফ-এর ছাদে। আমি আরো দেখলাম, পাখিদের একটি দল, যে পাখিদের চক্ষুগুলো স্বর্ণাভ, ডানাগুলো বৈচিত্র্যময় রঙ-বেরঙের ফুলের মতো। সেগুলো আমার কক্ষে প্রবেশ করলো মণিমুক্তার মতো। এরপর উক্ত পাখিগুলো আমার চারপাশে আল্লাহ পাক উনার ছানা-ছিফত করতে লাগলো। আমি উন্মীলিত রইলাম এ অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর ফেরেশতাগণ আমার নিকট দলে দলে আসতে লাগলেন। আর উনাদের হাতে ছিল ‘আগরদান’ স্বর্ণাভ ও রৌপ্য নির্মিত। আর উনারা সুগন্ধির ধূম্র ছড়াচ্ছিলেন। সেই সাথে উনারা উচ্চ কণ্ঠে সম্মানিত ও মর্যাদাবান হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করছিলেন। উনাদের কণ্ঠে সৌজন্যতার ও মহানুভবতার ভাব স্পষ্ট ছিল।
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, চন্দ্র আমার মাথার উপর চলে এলো, তাঁবু মাথার উপর থাকার মতো। আর তারকারাজি আমার মাথার উপর সদৃশ মোমবাতির ন্যায়। সে অবস্থায় আমার নিকট ছিল দুধের ন্যায় শুভ্র সুগন্ধিময় পানীয়, যা ছিলো মধুর চেয়ে মিষ্ট এবং বরফের চেয়ে বেশি ঠা-া। তখন আমার খুব পিপাসা লাগছিলো। আমি তা গ্রহণ করলাম ও পান করলাম। এর চেয়ে অধিক কোনো সুপেয় পানীয় আগে কখনো পান করিনি। অতঃপর আমা হতে প্রকাশিত হলো এক মহিমান্বিত নূর। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত বর্ণনা থেকে প্রতিভাত হলো আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ কালে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হুকুম বা নির্দেশে খুশি প্রকাশ করেছিলেন ফেরেশতাকুল, খুশি প্রকাশ করেছিলেন জান্নাতের অধিবাসীগণ, এমনকি খুশি প্রকাশ করেছিলো বনের পশু-পাখিরাও। খুশি প্রকাশ করে ছানা-ছিফত বর্ণনা করা হয়েছিলো এবং পাঠ করা হয়েছিলো ছলাত-সালাম ও তাসবীহ-তাহলীল।
কাজেই, উম্মতের প্রতিও আল্লাহ পাক উনার সে একই নির্দেশ হলো, তারা যেনো হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে যথার্থভাবে খুশি প্রকাশ করে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا.
অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া, ইহসান ও রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে) উনার জন্য যথাযথ ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশ করো। (তোমরা যতো কিছুই করোনা কেনো) তিনিই হচ্ছেন সমগ্র কায়িনাতের জন্য সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম নিয়ামত।”  (সূরা ইউনুস : আয়াত শরীফ ৫৮)
উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং সর্বজনমান্য বিশ্বখ্যাত কিতাবসমূহের অসংখ্য দলিলের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে জান্নাত ও জান্নাতী হূর-গেলমান থেকে শুরু করে আসমান-যমীনসহ সমস্ত কায়িনাতকে অপরূপ বৈচিত্র্যে সাজিয়ে সমস্ত সৃষ্টিকে নিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন ও খুশি প্রকাশ করেছেন, করছেন ও অনন্তকাল ব্যাপী করতে থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে সেই মহান ঈদ বা খুশি পালন জিন-ইনসানদের জন্য কত বড় শ্রেষ্ঠতম ঈদ তথা খুশি! তা কস্মিনকালেও মাখলুকাতের পক্ষে বর্ণনা করে শেষ করা সম্ভব হবে না। কাজেই জিন-ইনসানসহ সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে অনন্তকালব্যাপী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর তথা সকল ঈদের সেরা বা শ্রেষ্ঠতম ঈদ হচ্ছে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা, উদযাপনে যথাযথ খুশি প্রকাশ করা যা কুল-মাখলুকাতের সকলের জন্য ফরযে আইন ও নাজাতের একমাত্র সোপান।
এ কারণেই বর্তমান যামানার মহান মুজাদ্দিদ, মুজ্জাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, গাউছে আ’যম, ফারূকে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি তাজদীদ করে ফতওয়া দেন যে, “সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর তথা সকল ঈদের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও সেরা ঈদ হচ্ছে- পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম; যা পালন করা ফরযে আইন সর্বোপরি নাজাত ও শাফায়াত লাভের সর্বোত্তম উপায়।”
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর যথার্থ শান-মান ও মর্যাদাকে অনুধাবন করে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে জীবনের সর্বশক্তি, সামর্থ্য, টাকা-পয়সা এবং জান-মাল দিয়ে খুশি প্রকাশ করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আক্বীক্বা মুবারক
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ৭ম দিন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি উনার আক্বীক্বা মুবারক-এর অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সমস্ত কুরাইশগণকে এই সুমহান আক্বীক্বা মুবারক-এ আসার দাওয়াত দিলেন। এবং স্বীয় আওলাদ হযরত সাইয়্যিদুনা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আওলাদ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক রাখার ফিকির করলেন হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কুরাইশগণ বললেন, হে আবুল হারিস হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম! আপনি এই হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক কিভাবে রাখার ফিকির করেছেন? যে নাম মুবারক আপনার পূর্ব পুরুষ কিংবা আপনার সম্প্রদায়ের কেউ কোন দিন রাখেননি? সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাম মুবারক আমার সম্মানিত পৌত্র উনার নাম মুবারক রাখার ফিকির করেছি এবং রেখেছি এজন্য যে, যাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত সৃষ্টি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত ও প্রশংসা করে। সুবহানাল্লাহ (ফতহুল বারী, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর পূর্বে একটি মুবারক স্বপ্ন দেখেন যা উনার এ নাম মুবারক রাখার একটি কারণ ছিলো। তিনি দেখেন যে, উনার পিঠ মুবারক থেকে একটি শিকল বের হয়েছে যার একটি মাথা আসমানে, একটি মাথা যমীনে, একটি মাথা পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত এবং আরেকটি মাথা পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই শিকলটি একটি বৃক্ষে পরিণত হলো। যার প্রতিটি পাতা সূর্যের আলোর চেয়ে সত্তরগুণ বেশি আলোকোদ্ভাসিত ছিলো। পূর্ব ও পশ্চিম তথা সমস্ত মানুষ ওই বৃক্ষের ডালের সাথে জড়িয়ে ছিলো। কুরাইশদের কিছু লোক তারা ডাল আঁকড়িয়ে ধরেছিলেন আর কুরাইশদের কিছু লোকজন ওই বৃক্ষটি কাটার ইচ্ছা করছিলো। তারা যখন এ উদ্দেশ্যে বৃক্ষের নিকটবর্তী হলো, তখন খুবই সুন্দর সুঠাম এক যুবক এসে তাদের সরিয়ে দিচ্ছেলেন।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা কারকগণ এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে, আপনার বংশ মুবারক-এ এমন একজন সুমহান রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করবেন, পূর্বপান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্ত তথা সমস্ত জ্বিন-ইনসান উনার অনুসরণ করবে এবং আসমান-যমীন তথা সমস্ত মাখলুক উনার ছানা-ছিফত করবে। এ কারণে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রেখেছেন। (সুবহানাল্লাহ) (মাদারিজুন নুবুওওয়াত, রউযুল উনূফ, যুরকানী, শরহে মুয়াত্তা ও সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আক্বীক্বা মুবারক
কাজেই, উক্ত স্বপ্ন মুবারক দেখার পর হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাখার ইচ্ছা পোষণ করলেন। পাশাপাশি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক রাখার ব্যাপারে স্বপ্ন মুবারক-এ বলা হয়েছিল যে, আপনি গোটা সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, যিনি উত্তম চরিত্র মুবারক-এর অধিকারী, যিনি সৃষ্টির মূল, সকলের সাইয়্যিদ উনাকে রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন। কাজেই উনার নাম মুবারক রাখবেন হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
فلما كان اليوم السابع ذبح عنه ودعا له قريشا، فلما أكلوا قالوا يا حضرت عبد المطلب عليه السلام : ما سميته؟ قال سميته محمدا صلى الله عليه وسلم، قالوا فما رغبت به عن أسماء اهل بيتك. قال اردت ان يحمده الله في السماء وخلقه فى الأرض.
অর্থ: অতঃপর বিলাদত শরীফ-এর সপ্তম দিনে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি আক্বীক্বার পশু যবেহ করলেন এবং কুরাইশদেরকে দাওয়াত দিলেন। খাওয়া-দাওয়া শেষে সকলেই জিজ্ঞাসা করলো, হে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম! এই সন্তান উনার নাম মুবারক কি রেখেছেন? তিনি বললেন, উনার নাম মুবারক রেখেছি হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তারা বললো পরিবারের নাম না রাখার কারণ কি? সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি চাই যে, আসমানে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং যমীনে জিন-ইহসান উনার ছানা-ছিফত ও প্রসংশা করুক।” সুবহানাল্লাহ! (খাছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ৮৫ পৃষ্ঠা, বাইহাক্বী, ইবনে আসাকীর)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নাম মুবারক হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা সৃষ্টির পূর্ব থেকেই নির্ধারিত ছিল। পবিত্র কুরআন শরীফ-এ হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শব্দটি উল্লেখ করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। সূরা আলে ইমরান ১৪৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ
وما محمد  الا رسول .... الخر
সূরা আহযাব-এর ৪০ নম্বর আয়াত শরীফ
ما كان محمد ابا احد من رجالكم .... الخر
সূরা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ২ নং আয়াত শরীফ
وما امنوا بما نزل على محمد.... الخر
সূরা ফাতহ ২৯ নম্বর আয়াত শরীফ
محمد رسول الله ..... الخر
কাজেই, হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লফয বা শব্দ মুবারক সৃষ্টির পূর্ব থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক হিসেবে মনোনীত ছিল।
স্মরনিয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের পূর্বে এই অনন্য নাম মুবারক-এর সন্ধান কেউ খুঁজে পায়নি। আহলে কিতাবধারীরা যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক সম্পর্কে তাদের আসমানী কিতাব থেকে অবগত হলো তখন তাদের মধ্যে কোন কোন গোত্রের কেউ কেউ তাদের সদ্যজাত শিশুর নাম ‘মুহম্মদ’ রাখতে শুরু করলো। তাদের আশা ছিল যে, তাদের হযরত ‘মুহম্মদ’ নামের সন্তানটি যেন হয় আখিরী নবী বা শেষ নবী। (মাদারিজুন নুবুওওয়াত)
উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লক্ষ কোটি নাম মুবারক রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ ও প্রধানতম নাম মুবারক হচ্ছে ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যা উনার দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি উনার বিলাদত শরীফ-এর সপ্তম দিন আক্বীক্বা করে আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করেছিলেন।
প্রসিদ্ধ ও বিশ্ব বিখ্যাত জীবনী মুবারক-এর কিতাব ‘মাদারিজুন নুবুওওয়াত’-এর মধ্যে রয়েছে, ‘আল্লাহ’ যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার জাতিবাচক নাম মুবারক তেমনই হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম নাম মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাতিবাচক নাম মুবারক। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতামহ উনার নাম মুবারক ছিলো আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। উনাকে বলা হতো ‘শিবাতুল হামদ’। ওই ‘শিবাতুল হামদ’ থেকেই হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাম মুবারক-এর উৎপত্তি। মূলত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক দিয়েছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। যা সৃষ্টির শুরু থেকে নির্ধারিত ছিল। তবে বিলাদত শরীফ-এর সপ্তম দিন সে নাম মুবারক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
আর বিশেষ করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতামহ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমেই সেই পবিত্র নাম মুবারক-এর আনুষ্ঠানিক আয়োজন হয়।
محمد (কালিমা) শব্দটির মূলবর্ণ-  حمد ‘হামদ’ শব্দটি প্রশংসনীয়, পছন্দনীয়, গুন সম্পন্ন, পরিপূর্ণ মর্যাদা সম্পন্ন, ফযীলতপূর্ণ এবং সৌন্দর্যম-িত ইত্যাদি অর্থে এসে থাকে আর تحميد মাছদার থেকে محمد (কালিমা) বা শব্দ মুবারক গৃহীত। বাবে تفعيل যার ব্যবহার কেবল পরিপূর্ণতা ও পুনরাবৃত্তির জন্য হয়ে থাকে। সুতারং محمد শব্দ মুবারক তাহমীদ শব্দের কর্মকারক বা مفعولফলে এর অর্থ হবে, ওই পবিত্র ও গুণসম্পন্নজাত, যার প্রকৃত, পরিপূর্ণতা এবং সৌন্দর্যের কারণে শ্রদ্ধা ও মুহব্বতের সাথে বারবার উচ্চারণ করা হয়।
اللهم صل على سيدنا محمد وعلى اله واصحابه وبارك وسلم
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করেই محمد হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উনাকে হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিতাবের ৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما قال لما اراد الله تعالى خلق المخلوقات قبض قبضة من نوره ثم قال لها كونى حبيبى محمدا صلى الله عليه وسلم فطاف نور محمد صلى الله عليه وسلم بالعرش قبل حضرت ادم عليه السلام بخمس مائة عام وهو يقول الحمد لله. فقال الله تعالى من اجل ذلك سميتك محمدا صلى الله عليه وسلم
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন মাখলুকাত সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষণ করলেন অর্থাৎ যখন আল্লাহ পাক উনার প্রকাশ হওয়ার ইচ্ছা করলেন তখন তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন। এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, হে আমার হাবীব! আপনি আমার হাবীব হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়ে যান। তখন হয়ে গেলেন। অতঃপর এই নূরে মুহম্মদী অর্থাৎ নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টির পাঁচশত বৎসর পূর্বে আরশে আ’যিমে তাওয়াফ করেছিলেন এবং বলেছিলেন الحمد لله সেই সময় উনার যিকির মুবারক ছিলো এটাই। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন,
من اجل ذلك سميتك محمدا صلى الله عليه وسلم
হে আমার হাবীব! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই জন্যইতো আমি আপনার নাম মুবারক হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রেখেছি। সুবহানাল্লাহ! (নুজহাতুল মাজালিস, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
উক্ত হাদীছ শরীফ ছাড়াও অনেক হাদীছ শরীফ রয়েছে যার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জাতী নাম মুবারক হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা উনার দুনিয়াতে আগমনের পূর্বেই প্রকাশ করা হয়েছে এমনকি এই নাম মুবারক সম্পর্কে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিস সালামসহ, ফেরেশতাকুল আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই অবগত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দু’খানা নাম মুবারক যা আসমানবাসী ও যমীনবাসী তথা কায়িনাতের সকলেরই জানা রয়েছে। এজন্য এক ছূফী কবি বলেন,
“আসমানেতে নাম রাখিলেন ছল্লু আলা আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
যমীনেতে নাম রাখিলেন  ছল্লু আলা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ‘আহমদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামে আসমানবাসী সকলেই উনাকে চিনেন। আর যমীনবাসী হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাম মুবারকে চিনে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হওয়ার কারণে এ নামের অনেক ফযীলত ও মর্যাদা-মর্তবা রয়েছে। মূলত আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে যে বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট হয়েছে তা কুল-কায়িনাতের সবকিছু থেকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান।
কাজেই হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাম মুবারক-এর বেমেছাল ফযীলত রয়েছে। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, দুনিয়াতে কেউ যদি ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ নাম রাখে তা হলে ওই ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন পোড়াবে না। অর্থাৎ সে জান্নাতী হবে। সুবহানাল্লাহ!
          যেমন, হাদীছ শরীফ-এর বিখ্যাত কিতাব “আল ফিরদাউস লিদ দায়লামী শরীফ”-এর ৫ম খ-ের, ৫৩৫ ও ৪৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عن حضرت انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يوقف عبدان بين يدى الله عز وجل يوم القيامة فيأمر بهما الى الجنة فيقولان يا ربنا بما استأهلنا منك الجنة ولم نعمل عملا يجازينا الجنة فيقولو الله عز وجل لهما عبدان ادخلا الجنة فانى اليت على نفسى ان لايدخل النار من اسمه احمد ومحمد.
অর্থ:- “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক উনার সামনে দু’বান্দাকে দাঁড় করানো হবে। (অর্থাৎ যাদের একজনের নাম ‘মুহম্মদ’ এবং অপর জনের নাম ‘আহমদ’) মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদেশ করবেন। উনারা উভয়ে বলবেন, ‘আয় আল্লাহ পাক! আমরা কি কারণে জান্নাত লাভ করলাম, আমরা তো জান্নাত লাভের উপযুক্ত কোনো আমল করিনি।’ অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদ্বয়কে বলবেন, হে আমার বান্দা! তোমরা দু’জনই জান্নাতে প্রবেশ কর। কারণ নিশ্চয়ই আমি আমার জাত পাক সম্পর্কে কসম করে বলছি, যে ব্যক্তির নাম ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ হবে সে কখনও দোযখে প্রবেশ করবে না।” সুবহানাল্লাহ! (যাহরুল ফিরদাউস ৪র্থ খ-, ৪২৭ পৃষ্ঠা)
          হাদীছ শরীফ-এ আরও ইরশাদ হয়েছে,
عن جعفر بن محمد ينادى يوم القيامة يا محمد فيرفع رأسه فى الموقف من اسمه محمد فيقول الله جل جلاله اشهدكم انى قد غفرت لكل من اسمه على اسم محمد نبى.
অর্থ:- “হযরত জাফর ইবনে মুহম্মদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। ক্বিয়ামতের দিন ‘ইয়া মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে অর্থাৎ ‘মুহম্মদ’ নাম ধরে ডাকা হবে। যে সকল ব্যক্তির নাম ‘মুহম্মদ’ তাঁরা সকলেই তাদের মাথা উত্তোলন করবে। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, তোমরা সাক্ষী থাক, যারা আমার নবী হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক নাম রেখেছে তাদের প্রত্যেককে আমি ক্ষমা করলাম।” সুবহানাল্লাহ! (ইনশাআল্লাহ চলবে)
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى امامة الباهلى رضى الله تعالى عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من ولد له مولود فسماه محمدا حبالى وتبركا باسمى كان هو ومولوده فى الجنة
অর্থ:- “হযরত আবূ উমামা আল বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তির ছেলে সন্তান হয় অতঃপর সে ব্যক্তি যদি আমার মুহব্বতে এবং আমার নামের বরকতের জন্য তার ছেলে সন্তানের নাম ‘মুহম্মদ’ রাখে তাহলে সে ব্যক্তি এবং তার ছেলে উভয়েই জান্নাতে যাবে।” সুবহানাল্লাহ!
          হাদীছে কুদছী শরীফ-এ আরো উল্লেখ আছে-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الله عز وجل وعزتى وجلالى لاعذبت احدا يسمى باسمك فى النار.
অর্থ: “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমার ইজ্জত ও জালালের ক্বসম করে বলছি যে, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার নাম মুবারক যাদের নাম রাখা হবে তাদের কাউকেই দোযখে শাস্তি দান করবনা।” (মুসনাদুল ফিরদাউস)       স্মরণীয় যে, যাদের নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ শুধু যে তারাই নাযাত পাবে তা নয় বরং যারা তাদের সন্তানের নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ রাখবে তারাও নাযাত পাবে।
          উপরোক্ত হাদীস শরীফসমূহের আলোকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তির নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ হবে সে ব্যক্তিকে কখনোই দোযখের আগুনে জ্বালানো হবে না। বরং সে ব্যক্তি জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি তার সন্তানের নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ রাখবে সে ব্যক্তিও জান্নাতী হবে।
          শুধু তাই নয় যে ব্যক্তির নাম মুহম্মদ বা আহমদ নয় বা সে কারো নাম মুহম্মদ বা আহমদ রাখেনি তবে উক্ত নামকে সম্মান করেছে সেও জান্নাতী হবে। যদিও তার আমলে ত্রুটি থাকুক না কেন।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, “বনী ইসরাইলের এক ব্যক্তি যে দুইশ বছর হায়াত পেয়েছিল। ওই ব্যক্তি তার এই দীর্ঘ হায়াতে কোন নেককাজই করেনি। আল্লাহ পাক উনার নাফরমানীতে পুরো জিন্দেগীটা কাটিয়েছে। যখন তার ইন্তিকাল হলো তখন তার প্রতিবেশী ও এলাকার লোকেরা ওই ব্যক্তিকে একটি আবর্জনাময় স্তূপে নিক্ষেপ করলো। তার গোসল কাফন-দাফনের ব্যবস্থা এলাকাবাসী না করে তাকে ফেলে রাখলো। এদিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই যামানার জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট ওহী করলেন, ‘হে আমার রসূল হযরত মূসা কালীমাল্লাহ আলাইহিস সালাম! অমুক এলাকায় অমুক গ্রামে একজন লোক মারা গেছে, এলাকাবাসী তাকে ফেলে দিয়েছে তার গোসল কাফন-দাফনের ব্যবস্থা কেউ করছে না। আপনি সেখানে যান গিয়ে ওই ব্যক্তির গোসল-কাফন দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’
হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সে এলাকায় গেলেন। এলাকাবাসীদেরকে বললেন, ‘এখানে নাকি একজন লোক মারা গেছে?’ এলাকাবাসী বলল, ‘হ্যাঁ- একজন লোক মারা গেছে, যে লোকটা দুইশ বছর হায়াত পেয়েছিল। কিন্তু সে কোন নেককাজ করেনি, আল্লাহ পাক উনার নাফরমানীতে মৃত্যু অবধি ইস্তিকামত ছিল।’
এই কথা শুনে হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার পরিচয় দিলেন যে, ‘আমি হলাম হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম।’
হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম যখন তিনি উনার পরিচয় দিলেন, তখন এলাকাবাসী সমস্ত লোক তারা আঁতকে উঠল। তারা বললো, ‘হে হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি এসেছেন এই ব্যক্তির গোসল, কাফন, দাফনের জন্য; অথচ আমরা তাকে পছন্দ করি না। কারণ সে একটা বড় বদকার, বড় নাফরমানবান্দা।’
হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আল্লাহ পাক উনাকে বললেন, ‘হে বারে ইলাহী! এই লোকটা আপনার নাফরমান বান্দা, বড় গোনাহগার। এলাকার লোকেরা তাকে পছন্দ করে না। কারণ, সে দুইশ বছর হায়াত পেয়েছিল কিন্তু সে কোন নেক কাজ করেনি। পুরা যিন্দিগীটাই নাফরমানীতে কাটিয়ে দিয়েছে।’
আল্লাহ পাক তিনি তখন বললেন, ‘হ্যাঁ- এলাকাবাসী সঠিক কথাই বলেছে। তবে সে এমন একটা আমল করেছে যার কারণে তার দুইশ বছরের গোনাহখাতা মাফ করে আপনার মতো একজন জলিলুল ক্বদর রসূল উনাকে তার গোসল, কাফন-দাফনের জন্য নির্দেশ করেছি।’
তখন হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘হে বারে ইলাহী! আপনি আমাকে দয়া করে সেই আমলটি জানিয়ে দিন। যে আমলের কারণে আপনি তাকে কবুল করেছেন। সেই আমল আমি নিজে করব এবং আমার উম্মতদেরকে শিক্ষা দিব।’
মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “হে আমার রসূল হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনাকে আমি সেই আমলটির কথা জানাব তা হচ্ছে, আপনার প্রতি নাযিলকৃত যে কিতাব ‘তাওরাত শরীফ’ অর্থাৎ তাওরাত শরীফ-এর একটা নোসখা এই লোকটা একদিন খুলেছিল, খুলেই দেখতে পেল, আমার যিনি হাবীব, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক; সেটা দেখার সাথে সাথে সেই বান্দাটা ওই ইসম বা নাম মুবারক চুম্বন করল, চোখে লাগাল এবং সাথে সাথে আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম তথা দরূদ শরীফ পাঠ করল। আমি তার এই আমলকে কবূল করে নিলাম। কারণ, আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার নাম মুবারককে যারা মুহব্বত করে উনার প্রতি দরূদ শরীফ, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করে, উনাকে তা’যীম-তাকরীম করে আমি তাদের গোনাহখতা ক্ষমা করে দেই এবং তাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেই। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই আমি তার এই ইবাদত কবুল করে দুইশ বছরের গুনাহখতা ক্ষমা করে আপনার মতো একজন জলিলুল ক্বদর রসূল উনাকে নির্দেশ দেই তার গোসল, কাফন-দাফনের জন্য। সুবহানাল্লাহ! আর আমি সত্তরজন জান্নাতী হুরের সাথে তার বিবাহ দান করি।” সুবহানাল্লাহ! (খাছায়িছুল কুবরা ১ম খ- ২৯ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আহমদ’ নাম মুবারক-এর তাহক্বীক হলো- উক্ত কালিমা বা শব্দ মুবারক ইসমে তাফদ্বীল-এর। তবে কালিমা বা শব্দটি ইসমে মাফউল বা ইসমে ফায়েল-এর অর্থজ্ঞাপক। ইসমে মাফউল-এর অর্থ গ্রহণ করলে অর্থ হবে তিনি সর্বাপেক্ষা প্রশংসাকারী। আর তিনিই সর্বাপেক্ষা প্রশংসাকারী এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনাকে সমস্ত সৃষ্টির উপর সর্বোচ্চ সম্মান হাদিয়া করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন একক খালিক মালিক্ব হিসেবে বেমেছাল প্রশংসিত অনুরূপভাবে মাখলুক মাঝে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একক। মাখলুক হিসেবে তিনি বেমেছাল প্রশংসিত। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার উম্মতগণ মহান আল্লাহ পাক উনার সবচেয়ে বেশি প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করেন। এজন্য পূর্ববতী হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের সুসংবাদ ‘আহমদ’ কালিমা বা শব্দ দ্বারা প্রদান করেছেন আর উনার উম্মতগণের পরিচয়ে ‘হাম্মাদিন’ বা প্রশংসাকারী লক্বব ব্যবহার করতেন। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উনার সম্মানিত দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশ তথা উপস্থিত সকলের সামনে প্রকাশ করলেন যে, আজ থেকে উনার নাম মুবারক হযরত ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উপস্থিত সকলেই খাওয়া-দাওয়া ও খুশি প্রকাশ করে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার নিকট বিদায় নিয়ে ঘরে ফিরে গেলেন। কুরাইশগণসহ সকলেই আনন্দিত ও খুশি যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার ফুটফুটে নুরানীময় সন্তান উনার নাম মুবারক রাখা হয়েছে হযরত মুহম্মদ তথা সর্বাপেক্ষা প্রশংসিত। অনেকেই মনে মনে ভাবলেন, নিশ্চয়ই এই সন্তানই মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ বান্দা তথা হাবীব। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, এই মুবারক আক্বীকার দিনে কুরাইশগণ তথা মক্কাবাসীরা খুশি প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এমন খুশি আনন্দ কোনো সন্তানের আক্বীকার বেলায় করা হয়নি। শুধু তাই নয় এই দিনে সমস্ত মাখলুকাতও খুশি প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

0 Comments: