হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১০২-১১৪)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১০২)
মুবারক লাইলাতুর রগায়িব-এর গুরুত্ব ও ফযীলত ও এ মুবারক রাতে ইবাদত বন্দেগী করার ফযীলত ও আহকাম
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
انا اعطينا كالكوثر
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার হাদিয়া করেছি।” সুবহানাল্লাহ! (সূরা কাওছার : আয়াত শরীফ-১)
‘কাওছার’-এর ব্যাখ্যায় একাধিক অর্থ উল্লেখ করা হয় প্রথমতঃ ‘কাওছার’ বলা হয়েছে, হাউজে কাওছারকে। যা খাছভাবে আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন এবং এটা পান করলে জান্নাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পানির পিপাসা লাগবে না। সুবহানাল্লাহ!
দ্বিতীয়তঃ কাওছার-এর আরেকটি অর্থ হলো, খইরে কাছীর। অর্থ- যা অতি উত্তম, অনেক ভাল। অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যা কিছু হাদিয়া দিয়েছেন তা সর্বকালের জন্য, সর্বদিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম।
শুধু তাই নয়, এমনকি যা কিছু আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংস্পর্শে এসেছে সেটাও সবচেয়ে মহান ও সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে গেছে। যেমন, সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা একমত হয়েছেন অর্থাৎ ইজমা হয়েছে যে, যে মাটি মুবারক আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পা মুবারকে বা শরীর মুবারকে স্পর্শ করেছে তার মর্যাদা আরশে আযীম, কুরসী, লাহহে, ক্বলম এমনকি কা’বা শরীফ-এর চেয়েও লক্ষ কোটি গুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ!
প্রকৃতপক্ষে মাটির কোন ক্বদর বা মূল্য ছিল না। কিন্তু শুধুমাত্র আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শের কারণে মূল্যবান, ফযীলতপ্রাপ্ত ও সম্মানিত হয়েছে মাটি মুবারক। ঠিক একইভাবে ‘লাইলাতুর রগাইব’-এর ফযীলত বা শ্রেষ্ঠত্ব শবে ক্বদর, শবে বরাত ও অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ রাত্রের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণ হলো, ‘লাইলাতুর রগাইব’-এর সম্পর্ক সরাসরি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে।
পবিত্র ‘লাইলাতুর রগাইব’ হচ্ছে রজব মাসের পহেলা জুমুয়ার রাত্রি মুবারক। এই পবিত্র রাত্রিতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আম্মা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক রেহেম শরীফ-এ কুদরতীভাবে তাশরীফ নেন। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, পবিত্র ‘লাইলাতুর রাগায়িব’-এর মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত বেমেছাল। এই রাত্রি মুবারক-এর ইজ্জত-সম্মান মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং তিনি এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দিয়েছেন। এজন্য ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘লাইলাতুর রাগাইব’-এর মর্যাদা, ফযীলত শবে ক্বদর, শবে বরাত-এর চেয়েও অধিক। সুবহানাল্লাহ! (মাদারিজুন নুবুওওয়াত)
কাজেই, শরীয়তের ফতওয়া হলো, লাইলাতুর রগায়িব-এর মর্যাদা শবে বরাত, শবে ক্বদরের থেকেও বেশি। সুবহানাল্লাহ!
শুধু তাই নয় এ রাত্রি মুবারক নামায-কালাম, মীলাদ শরীফ-ক্বিয়াম শরীফ, দোয়া-ইস্তিগফার ও রাত্রি জাগরণ করার খাছ সময়। এই মুবারক রজনীতে নিশ্চিতভাবে বান্দার দোয়া কবুল করা হয়। তার পাশাপাশি এই দিনে রোযা রাখারও নির্দেশ ও ফযীলতের কথাও উল্লেখ রয়েছে। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই লাইলাতুর রগায়িব-এর ইবাদত বন্দিগীর ফযীলত বর্ণনা করেছেন।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১০৩)
মুবারক লাইলাতুর রগায়িব-এর গুরুত্ব ও ফযীলত ও এ মুবারক রাতে ইবাদত বন্দেগী করার ফযীলত ও আহকাম
এ সম্পর্কে গুনিয়াতুত ত্বলিবীন ১ম জিলদ ৩৩০ ও ৩৩১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
عن أنس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ”رجب شهر الله، وشعبان شهرى، ورمضان شهر أمتى، قيل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ما معنى قولك شهر الله؟ قال صلى الله عليه وسلم لأنه مخصوص بالمغفرة، وفيه تحقن الدماء، وفيه تاب الله تعالى على أنبيائه، وفيه أنقد أولياءه من يد أعدائه، ومن صامه استوجب على الله ثلاثة أشياء مغفرة لجميع ما سلف من ذنوبه، وعصمة فيما بقى من عمره، وأما الثالث فيأمن العطش يوم العرض الأكبر، فقام شيخ ضعيف فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم إنى أعجز عن صيامه كله، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم صم أول يوم منه وأوسط يوم فيه، واخر يوم منه، فإنك تعطى ثواب من صامه كله، فإن الحسنة بعشر أمثالها،
অর্থ: হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, রজব মহান আল্লাহ পাক উনার মাস। শা’বান আমার মাস এবং রমাদ্বান শরীফ আমার উম্মতের মাস। একজন ছাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শাহরুল্লাহ তথা আল্লাহ পাক উনার মাস-এর অর্থ কি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দিষ্ট করেছেন এই মাসকে মাগফিরাত বা ক্ষমার জন্য। এই মাসে ঝগড়া-বিবাদ করা হারাম। এই মাসে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদার প্রকাশ ঘটিয়েছেন এবং উনার আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে শত্রুদের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রেখেছেন। এই মাসে কেউ যদি রোযা রাখে মহান আল্লাহ পাক তাকে তিনটি বিষয় বা ফযীলত দান করেন। এক. ওই ব্যক্তির সমস্ত গুনাহখতা মাফ করে দেন, দুই. বাকি দিনগুলো ওই বান্দাকে পাপ কাজ থেকে হিফাযত করেন, তিন. হাশরের মাঠে সে পিপাসার্ত হবে না। একথা শুনে একজন বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি দুর্বলতার কারণে পূর্ণ মাস রোযা রাখতে অক্ষম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনি মাসের প্রথম, মধ্যে এবং শেষের দিন রোযা রাখুন। এতেই মহান আল্লাহ পাক আপনাকে পূর্ণ মাস রোযা রাখার ফযিলত দান করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি একে দশগুন দিয়ে থাকেন। ক্ষেত্র বিশেষে আরো অধিক।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১০৪)
মুবারক লাইলাতুর রগায়িব-এর গুরুত্ব ও ফযীলত ও এ মুবারক রাতে ইবাদত বন্দেগী করার ফযীলত ও আহকাম
ولكن لا تغفلوا عن اول ليلة جمعة فى رجب، فإنها ل ليلة تسميها الملائكة ليلة الرغائب، وذلك أنه أذا مضى ثلث الليل لا يبقى ملك فى جميع السموات والأرضين ألا ويجتمعون فى الكعبة وحواليها، فيطلع الله تعالى عليهم اطلاعة فيقول ملائكتى سلونى ما شئتم، فيقولون ربنا حاجتنا إليك أن تغفر لصوام رجب، فيقول الله تعالى قد فعلت ذلك-
অর্থ: অতঃপর (আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, স্মরণ রাখবে রজব মাসের প্রথম জুমুয়ার রাত গাফিল থেকো না। আর ফেরেশতাগণ এই রাত্রিকে ‘লাইলাতুর রগায়িব (তথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আম্মা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক রেহেম শরীফ-এ কুদরতীভাবে তাশরীফ নেয়ার পবিত্র রাত নামে অভিহিত করে থাকেন।) নিদ্রায় কাটাইও না। কেননা ওই রাত্রি মুবারকে আসমান ও যমীনের সমস্ত ফেরেশতাগণ কাবা শরীফ ও তার চার পার্শ্বে একত্রিত হন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই রাত্রি মুবারকে ফেরেশতাদের প্রতি লক্ষ করে বলেন, হে ফেরেশতারা! তোমাদের যা ইচ্ছা তা আমার নিকট আজকে আর্জি করো, চাও। তখন ফেরেশতা উনারা বলেন, হে আমাদের বারে ইলাহী! রজব মাসে যারা রোযা রাখে তাদের আপনি ক্ষমা করে দিন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হ্যাঁ আমি তোমাদের আর্জি পূর্ণ করলাম। অর্থাৎ এ মাসে যারা রোযা রেখেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। সুবহানাল্লাহ!
ثم فال رسول الله صلى الله عليه وسلم فما من احد يصوم الخميس اول خميس فى رجب، ثم يصلى فيما بين المغرب والعشاء العتمة- يعنى ليلة الجمعة- اثنتا عشرة ركعة يقرا فى كل ر كعة بفا تحة الكتاب مرة و. (انا انزلناه فى ليلة القدر...) ثلاث مرات. و(قل هو الله احد...) اثنتا عشرة مرة. يفصل بين كل ركعتين بتسليمة. فاذا فرغ من صلاته صلى على سبعين مرة يقول اللهم صل على محمد النبى الامى وعلى اله وسلم. ثم يسجد سجدة يقول فى سجوده سبوح قدوس رب الملائكة والروح سبعين مرة. ثم يرفع راسه فيقول رب اغفر وارحم وتجاوز عما تعلم. فانك انت العزيز الاعظم سبعين مرة. ثم يسجد الثانية فيقول فيها مثل ما قال فى السجدة الاؤلى. ثم يسال الله حاجته فى سجوده. فانها تقضى.
অর্থ: অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবারের দিন রোযা রাখে এবং মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী অর্থাৎ জুমুয়ার রাত্রে দু’রাকায়াত করে বারো রাকায়াত নামায আদায় করে এবং প্রত্যেক রাকয়াতে সূরা ফাতিহা শরীফ এর পর তিন বার সূরা ক্বদর এবং বারো বার সূরা ইখলাছ পাঠ করে নামায আদায় করে। অতঃপর নামায শেষে ৭০ বার এই দরূদ শরীফ পাঠ করে “আল্লাহুম্মা ছল্লিআলা মুহাম্মাদিনিন নাবীইয়ীল উম্মিয়ী ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লিম।” অতঃপর সিজদা করে ৭০ বার বলবে, সিজদার মধ্যে ‘সুব্বুহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ’। অতঃপর মাথা উত্তোলন করে ৭০ বার বলবে ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া তাজাওয়াজু আম্মা তা’লাম, ফা ইন্নাকা আংতাল আযীযুল আ’যম।’ অতঃপর অনুরূপভাবে দ্বিতীয় সিজদা করে দোয়া পাঠ করবে প্রথম সিজদার অনুরূপ। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আর্জি পেশ করবে সিজদার মধ্যে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ওই ব্যক্তির দোয়া কবুল করবেন।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১০৫)
মুবারক লাইলাতুর রগায়িব-এর গুরুত্ব ও ফযীলত ও এ মুবারক রাতে ইবাদত বন্দেগী করার ফযীলত ও আহকাম
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم والذى نفسى بيده ما من عبد ولا امة صلى هذه الصلاة إلا غفر الله له جميع ذنوبه ولو كانت مثل زبد البحر وعدد الرمل ووزن الجبال. وعدد قطر الامطار ووزن الا شجار. وشفع يوم القيامة فى سبعمائة من اهل بيته. فإذا كان اول ليلة فى قبره جاءه ثواب هذه الصلاة بوجه طلق ولسان ذلق. فيقوله يا حبيبى ابشر فقد نجوت من كل شدة. فيقول من انت؟ فوالله ما رأيت رجلا احسن وجها من وجهك. ولا سمعت كلاما احلى من كلامك. ولا شممت رائحة احلى من رائحتك. فيقول له يا حبيبى انا ثواب تلك الصلاة التى صليتها فى ليلة كذا فى شهر كذا فى سنة كذا. جئت الليلة لأقضى حاجتك. واؤنس وحدتك. وادفع عنك وحشتك. فإذا نفخ فى الصور أظللتك فى عر صات القيامة على راسك. فابشر فلن تعدم الخير من مولاك ابدا.
অর্থ: অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যার কুদরতী হাত মুবারকে আমর প্রাণ মুবারক উনার ক্বসম! আমার যে কোন উম্মত উপরোক্ত নিয়মে নামায আদায় করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই বান্দার জীবনের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন। যদি ওই ব্যক্তির পাপ সমূদ্রের ফেনা পরিমাণ, মরুভূমির বালুকণা পরিমান ও পাহাড়ের ওযনের অনুরূপ হয়, অগণিত বৃষ্টির ফোটা পরিমান হয় ও সমস্ত বৃক্ষের পাতারও সমান হয়। ক্বিয়ামতের দিবসে ওই ব্যক্তি ৭ শত ব্যক্তিকে তার পরিবারের মধ্য থেকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিতে পারবে। সে মারা গেলে ক্ববরে প্রথম রাতেই সেই নামায এসে বলবে, হে আমার বন্ধু! আপনার জন্য সুসংবাদ! নিশ্চয়ই আপনি সমস্ত বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তখন সেই ব্যক্তি বলবে, তুমি কে? মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম তোমার মতো এতো সৌন্দর্যবান ও মিষ্টভাষী লোক তো আমি আর কখনো দেখিনি। সে বলবে আপনি উমুক বৎসর উমুক সময় সেই নামায পড়েছেন আমি আপনার সেই নামাযের সাওয়াব। আজ আমি আপনার কবরের সাথী ও সাহায্যকারী। ক্বিয়ামতের মাঠে আমি আপনার মাথার উপর ছায়া দিয়ে আপনার সাথে উঠবো। (গুনিয়াতুত ত্বলিবীন ১ম জিলদ পৃষ্ঠা ৩৩১)
‘লাইলাতুর রগায়িব’ মূলত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সম্পৃক্ত আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে যে বিষয় যতোবেশি সম্পৃক্ত তার মর্যাদা-মর্তবা ততোবেশি। তা হোক সময়, দিন, রাত, বার, হোকনা অন্যকিছু। কাজেই লাইলাতুর রগায়িব-এর দিনে রোযা, রাখা, রাত্রিবেলা নামাজ, ইবাদত-বন্দেগী, দোয়া-দরূদ, মীলাদ শরীফ-ক্বিয়াম শরীফ, ছলাত-সালাম ইত্যাদি সবকিছুই বেমেছাল ফযীলতপূর্ণ, রহমতপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ। সুবহানাল্লাহ।
স্মরনীয় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকাহ মুবারক হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে সুসম্পন্ন হয় রজব মাসের শুরুতেই। আর ‘লাইলাতুর রগাইব’ তথা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ললাট মুবারক থেকে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ নেন রজব মাসের পহেলা জুমুয়ার রাত্রি মুবারকে। সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ওই (লাইলাতুর রগাইব) রাত্রি মুবারকে কুরাইশদের গৃহপালিত পশুগুলো নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলো যে, আজ সারা আলমের চেরাগ ‘নূর’ মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় হাবীব তিনি উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ কুদরত, সমগ্র পৃথিবীর প্রাণীকুলের মধ্যে সুমহান খুশির ঢেউ বহমান ছিলো। কিন্তু একমাত্র খুশি হতে পারেনি ইবলিস শয়তান। (আনওয়ারে মুহম্মদীয়া, নূর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, “ওই (লাইলাতুর রাগায়িব) রাত্রি মুবারকে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাকে স্বপ্ন মুবারকে বলা হলো, আপনি এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বকে ধারণ করেছেন। তিনি যমীনে তাশরীফ নিলে উনার নাম মুবারক রাখবেন ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (নূর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
স্মরণীয় যে, লাইলাতুর রাগায়িব হচ্ছে জিন-ইনসান তথা গোটা মাখলুকাতের এক স্মরণীয় ও বরণীয় রাত। এ রাত্রি মুবারক-এর সম্মান, ইজ্জত ফযীলত এতো বেমেছাল যা বলার অপেক্ষাই রাখে না।
কাজেই এই সুমহান রাত্রিকে যথাযথভাবে জানা, তা’যিম-তাকরীম করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী ও সমস্ত মাখলুকাতের জন্য ফরয-ওয়াজিব। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১০৬)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থানকালিন সময়ের অবস্থা
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
وما محمد الا رسول
অর্থ: নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ- ১৪৪)
মহান আল্লাহ পাক জাল্লাশানুহু তিনি আমাদের জন্য তথা সারা আলমের জন্য উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বোত্তম উসীলা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কেন্দ্রীয় অবস্থানে রেখে সারা আলমের সকল আয়োজন সুসম্পন্ন হয়েছে এখনো হচ্ছে, অনন্তকাল ধরে হবে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াতে তাশরীফ, সম্মানিত পিতা ও মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের মধ্যে অবস্থান সবই কিন্তু বান্দা ও মাখলুকাতের জন্য রহমত বরকতস্বরূপ। বিশেষ করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থান মূলত খাছ কুদরত এবং উনার সুমহান মু’জিযা শরীফ-এর অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ।
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ললাট মুবারক থেকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ তাশরীফ নেন, রজব মাসের পহেলা জুমুয়ার রাত্রি মুবারক-এ। যা ‘লাইলাতুর রাগায়িব’ নামে মুসলমান ও কায়িনাতবাসীর কাছে মশহুর।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, “পবিত্র লাইলাতুর রগাইব-এর রাত্রি মুবারক-এ আলমে মালাকুত বা ফেরেশতা জগতকে এই মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যে, সারা আলমকে পবিত্র নূর মুবারক দ্বারা আলোকিত করে দাও। পৃথিবী ও আসমানের ফেরেশতারা তথা সমস্ত ফেরেশতাগণ উনারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছিলো। জান্নাতের রক্ষী ফেরেশতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো জান্নাতুল ফেরদাউস নূরের আলোকে উন্মুক্ত করে দাও এবং সমস্ত জাহানকে সুরভি বা সুঘ্রান দ্বারা মোহিত করে দাও। আসমান যমীনের সকল স্তরে ও স্থানে এই সুসংবাদ ঘোষণা করে দাও যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম তিনি আজ মুবারক রাত্রিতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ তাশরিফ নিয়েছেন। সমস্ত খায়ের, বরকত, সম্মান, ইজ্জত, সৌভাগ্য, নূর ও রহস্যের উৎস এবং সমস্ত সৃষ্টির মূল- বনী আদম-এর মূলসমূহের মূল এ যমীনে শুভগমনের সময় সন্নিকটবর্তী। সুতরাং হে সৃষ্টিকুল! তোমরা সকলই সম্মাণিত ও আলোকিত হও। ঈদ বা খুশি প্রকার করো। (মাদারেজুন নুবুওওয়াত) । (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১০৭)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থানকালিন সময়ের অবস্থা
বর্ণিত রয়েছে, এই রাত্রি মুবারকে পৃথিবীর সকল মূর্তি বা প্রতিমা মাথা নত করে দিয়েছিলো। এই দিন হতে শয়তানকুলের জন্য আকাশের পথে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়। উল্টে গিয়েছিলো পৃথিবীর সকল রাজা-বাদশাদের সিংহাসন। পৃথিবীর সকল গৃহ হয়ে গিয়েছিলো আলোময়। এমন কোন স্থান তখন ছিলো না, যা উনার পবিত্র নূর মুবারকে উদ্ভাসিত হয়নি। এমন কোন প্রাণী ছিলো না যাকে বাকশক্তি দেয়া হয়নি। প্রাণীকুলের সকলেই উনার আগমনের সুসংবাদ ঘোষণা করেছিলো। পূর্বপ্রান্তের পাখিরা পশ্চিম প্রান্তের পাখিদের কাছে বলাবলি করছিলো উনার সুমহান আগমনের শুভসমাচার।”
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর পূর্বের বৎসর কঠিন দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়েছিলেন মক্কাবাসীগণ। একটানা খরায় শুকিয়ে গিয়েছিলো সকল গাছের পত্ররাজি। উনাদের পশুগুলো আহারের অভাবে কৃশকায় ও দূর্বল হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর বৎসরে মহান আল্লাহ পাক তিনি অশেষ রহমত বর্ষন করলেন। এতো বেশি বৃষ্টি বর্ষন করলেন যে, সকল গাছপালা ছেয়ে গেলো সবুজপত্র পল্লবে। চারিদিকে সজীবতা ও সতেজতা দেখে মক্কা শরীফবাসীগণ খুশিতে বাগবাগ হয়ে ওই বৎসরের নাম উনারা দিয়েছেন ‘সানাতুল ফাতহ ওয়াল ইবতিহাজ’ তথা আনন্দ ও খুশীর বৎসর। (মাদারিজুন নবুওওয়াত।)
প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ ছিলেন পুরো নয় মাস। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মা আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থানকালীন উনার মাতা অন্যান্য গর্ভধারিনী মহিলাদের মতো শারীরিক কোন অসুবিধাবোধ করেননি কোনো কষ্টও পাননি। কোন ক্লান্তি অবসাদ ও খাদ্য অরুচি ইত্যাদি কোনো কিছুই উপলব্ধি করেননি। হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেছেন আমার অনুভব হতো না যে আমার রেহেম শরীফ-এ কেউ অবস্থান করছেন। (মাদারিজুন নুবুওওয়াত) । (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১০৮)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থানকালিন সময়ের অবস্থা
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি যেদিন রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেন, সেদিন আনন্দে উতলা হয়ে গিয়েছিলো সকল প্রাণীকুল। তারা বলেছিলো, কাবা শরীফ-এর রব উনার ক্বসম! আজ সুমহান রাত্রি মুবারক-এ (লাইলাতুর রগাইয়িবে) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মা আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ তাশরিফ নিয়েছেন। তিনি হচ্ছেন, সারা আলমের ইমাম, গোটা সৃষ্টির সূর্য বা কেন্দ্রবিন্দু।’ অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ভূপৃষ্ঠের সকল চতুষ্পদ প্রাণী সেই মুবারক রজনীতে বাকশীল হয়ে গিয়েছিলো এবং তারা সকলেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মাতা আমিনা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফ-এ আগমণের সুসংবাদ প্রচার করছিলো। (আবূ নাঈম, মাদারিজুন নুবুওওয়াত)
সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার পবিত্র রেহেম শরীফ-এ অবস্থানকালীন একদা আমার জিসম মুবারক থেকে এমন এক নূর মুবারক-এর উদ্ভাসিত হলো, যার আলোতে সারা জাহান আলোকিত হয়ে গেলো। ওই নূর মুবারক-এর ঝলকে আমি দেখতে পেলাম বসরার বালাখানাসমূহ। সুবহানাল্লাহ! তবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর সময়ও এরকম মুবারক ঘটনা ঘটেছিলো। সাইয়্যিদুনা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাদের একজন মাত্র সন্তান, আদরের দুলাল, কলিজার টুকরা, চোখের মনি ছিলেন। আর তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! (মাদারিজুন নুবুওওয়াত)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তিনি উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থান করছিলেন তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন। হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ হয়েছিলো মদীনা শরীফ-এ। ব্যবসাসংক্রান্ত কাজে তখন তিনি সেখানে কুরাইশদের এক কাফিলার সাথে ছিলেন। ব্যবসা থেকে প্রত্যবর্তনের সময় ওই কাফিলা থেকে পৃথক হয়ে তিনি বনী নাজ্জার-এর নিকট থেকে যান। কাফিলার লোকজন যখন মক্কা শরীফ-এ ফিরে এলেন, তখন হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার খোঁজ করলেন। কাফিলার লোকজন বললেন, আমরা উনাকে অসুস্থ অবস্থায় মদীনা শরীফ-এ রেখে এসেছি। একথা শুনে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি উনার জ্যেষ্ঠ পুত্র হারিছকে মদীনা শরীফ-এ প্রেরণ করেন। হারিছ যখন মদীনা শরীফ-এ পৌঁছলেন, তখন হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতে চলে গেছেন তথা বিছাল শরীফ লাভ করেছেন। উনাকে ‘দারুন নাবাগায়’ সমাহিত করা হয়। (মাদারিজুন নবুওওয়াত)
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১০৯)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থানকালিন সময়ের অবস্থা । হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করে বলেন, হে রব্বুল আলামীন! আপনার প্রিয়তম হাবীব নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইয়াতীম হয়ে গেলেন? মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আমি উনার হিফাযতকারী, সাহায্যকারী ও জিম্মাদার। তোমরা উনার উপর ছলাত সালাম প্রেরণ করো। তোমাদের বরকত লাভের জন্য দোয়া করো।
صلوات الله تعالى وملائكته والنبيين والصديقين والشهداء والصالحين على سيدنا محمد بن عبد المطلب صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম, ছিদ্দীক্বীন বা ওলীআল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিম, শহীদ এবং নেককার বান্দাগণ উনাদের ছলাত বা দরূদ শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার প্রতি অর্থাৎ রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার প্রতি ছলাত বা দরূদ শরীফ।”
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থান কালিন সময়ের বর্ণনা এভাবে উল্লেখ করেছেন।
হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে,
عن الزهرى رحمة الله عليه قال قالت حضرت امنة عليها السلام لقد علقت به صلى الله عليه وسلم فما وجدت له مشقة حتى وضعته-
অর্থ: “হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন আমার রেহেম শরীফ-এ অবস্থান করেছেন তখন আমি কোনো প্রকার কষ্ট অনুভব করিনি।”
(সীরাতুল হালাবিয়ায়- ১ম খন্ড ৭৫ পৃষ্ঠা) । (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১১০)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থানকালিন সময়ের অবস্থা
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
روى ابن حبان رحمة الله عليه عن حضرت حليمة عليها السلام عن حضرت امنة ام النبى صلى الله عليه وسلم انها قالت ان لابن هذا شانا، انى حملت به فلم اجد حملا قط كان اخف على ولااعظم منه بركة-
অর্থ: হযরত ইবনে হাব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ মাতা হযরত হালীমা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার থেকে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমার সন্তান উনার এই সুমহান শান মুবারক ছিলো যে, নিশ্চয়ই যখন তিনি আমার রেহেম শরীফ-এ অবস্থান করেন তখন আমি কোন প্রকার কষ্ট অনুভব করিনি। আমার জন্য তিনি আরামদায়ক ছিলেন এবং উনার চেয়ে অধিক বরকতপূর্ণ কোন কিছুই ছিলো না। ” (সীরাতুল হালাবিয়াহ- ১ম খন্ড, ৭৮ পৃষ্ঠা)
স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে নয় মাস হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থান করেছেন ওই নয় মাসের প্রত্যেক মাসে একজন নবী-রসূল আলাইহিমু সালাম উনারা এসে হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম উনাকে সুসংবাদ দিয়ে যেতেন।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
قالت امنة عليها السلام لما حملت بحبيبى محمد صلى الله عليه وسلم فى أول شهر من حملى وهو شهر رجب الاصم بينما أنا ذات ليلة فى لذت المنام. اذ دخل على رجل مليح الوجه طيب الرائحة وأنواره لائحة. وهو يقول مرحبابك يا محمد صلى الله عليه وسلم قلت له من أنت؟ قال انا ادم ابو البشر عليه السلام.
قلت له ماتريد قال ابشرى يا امنة عليها السلام فقد حملت بسيد البشر وفخر ربيعة ومضر.
অর্থ: হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক পবিত্র রজবুল আছম মাসে ধারণ করলাম তখন এক রাত্রে-
প্রথম মাস-এ আমি ঘুমের ঘোরে দেখতে পেলাম আমার সামনে সুউজ্জল চেহারা মুবারক নিয়ে সীমাহীন সুঘ্রাণ ও নূরসহ এক সুপুরুষ হাজির হয়ে বললেন,
مرحبا بك يا محمد صلى الله عليه وسلم.
হে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে মারহাবা।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কে? উত্তরে আগন্তুক ব্যক্তি বললেন, আমি মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম। আমি বললাম আপনি কি জন্য এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনি সমস্ত মানবজাতির সাইয়্যিদ, রবীয়া ও মুদার গোত্রের ফখর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আপনার রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১১১)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থানকালিন সময়ের অবস্থা
ولما كان الشهر الثانى دخل على رجل وهو يقول السلام عليك يارسول الله صلى الله عليه وسلم قلت له من انت قال انا شيث عليه السلام قلت له ما تريد قال ابشرى يا امنة عليها السلام فقد حملت بصاحب التأويل والحديث.
অর্থ: যখন দ্বিতীয় মাস আগমন করলো তখন আমার নিকট এক ব্যক্তি আগমন করে বললেন-
السلام عليك يارسول الله صلى الله عليه وسلم.
হে আল্লাহ পাক উনার রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম।
অতঃপর আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কে? উত্তরে তিনি বললেন, আমি হযরত শীছ আলাইহিস সালাম। আমি বললাম আপনি কি জন্য এসেছেন? তিনি বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম, আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনি আপনার রেহেম শরীফ-এ ছহিবে তাবীল ও ছহিবে হাদীছ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
ولماكان الشهر الثالث دخل على رجل وهو يقول السلام عليك يانبى الله صلى الله عليه وسلم قلت له من انت قال انا ادريس عليه السلام قلت له ماتريد قال ابشرى ياامنة عليها السلام فقد حملت بالنبى الرئيس.
অর্থ: অনুরূপ যখন তৃতীয় মাস আগমন করলো তখন আমার নিকট এক ব্যক্তি এসে বললেন-
السلام عليك يانبى الله صلى الله عليه وسلم.
হে আল্লাহ পাক উনার নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সালাম।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কে? জবাবে তিনি বলেন, আমি হযরত ইদরীস আলাইহিস সালাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি জন্য এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনি সমস্ত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শিরমনি রসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আপনার রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
ولما كان الشهر الرابع دخل على رجل وهو يقول السلام عليك يا حبيب الله صلى الله عليه وسلم قلت له من انت قال انا نوح عليه السلام قلت له ما تريد قال ابشرى يا امنة عليها السلام فقد حملت بصاحب النصر والفتوح.
অর্থ: যখন চতুর্থ মাস আগমন করলো তখন এক ব্যক্তি এসে সালাম দিয়ে বললেন,
السلام عليك يا حبيب الله صلى الله عليه وسلم.
হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম।
অতঃপর আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কে? উত্তরে তিনি বললেন, আমি হযরত নূহ আলাইহিস সালাম। আমি প্রশ্ন করলাম আপনি কেন এসেছেন? তিনি বললেন, আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনি সর্বপ্রকার সাহায্য ও মহা বিজয়ের মালিক উনাকে ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১১২)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থানকালিন সময়ের অবস্থা
ولما كان الشهر الخامس دخل على رجل وهو يقول السلام عليك يا سفوة الله صلى الله عليه وسلم قلت له من انت قال انا هود عليه السلام. قلت له ماتريد قال ابشرى يا امنة عليها السلام فقد حملت بصاحب الشفاعة العظمى فى اليوم الموعود.
অর্থ: যখন পঞ্চম মাস আগমন করলো তখন একজন এসে বললেন,
السلام عليك يا صفوة الله صلى الله عليه وسلم.
হে আল্লাহ পাক উনার প্রিয় হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম।
অতঃপর আমি জানতে চাইলাম আপনি কে এবং কেন এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি হযরত হুদ আলাইহিস সলাম আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনি কিয়ামতের কঠিন দিনে শাফায়াতে কুবরার একমাত্র মালিক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
ولماكان الشهر السادس دخل على رجل هو يقول السلام عليك يا رحمة الله صلى الله عليه وسلم قلت له ماتريد قال ابشرى يا امنة عليها السلام فقد حملت بالنبى الجليل.
অর্থ: যখন ষষ্ঠ মাস আগমন করলো তখন এক ব্যক্তি আগমন করে সালাম দিয়ে বললেন,
السلام عليك يارحمة الله صلى الله عليه وسلم.
হে আল্লাহ পাক উনার রহমত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম।
অতঃপর আমি জানতে চাইলাম আপনি কে? কেন এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম। আপনাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য আগমন করেছি। হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম, আপনি নাবীইয়ূল জলীল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
ولماكان الشهر السابع دخل على رجل وهو يقول السلام عليك يا من اختاره الله صلى الله عليه وسلم قلت له من انت قال انا اسماعيل الذبيح الله عليه السلام قلت له ما تريد قال ابشرى يا امنة عليها السلام فقد حملت بالنبى الرجيح المليح.
অর্থ: আবার যখন সপ্তম মাস আগমন করলো তখন একজন আগন্তুক সালাম দিয়ে বললেন,
السلام عليك يا من اختاره الله صلى الله عليه وسلم.
হে আল্লাহ পাক উনার মনোনীত হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম।
অতঃপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কে এবং কেন এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম আপনাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য এসেছি। আপনি সকল নবীদের শ্রেষ্ঠ নবী উনাকে ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১১৩)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থানকালিন সময়ের অবস্থা
ولما كن الشهر الثامن دخل على رجل وهو يقول السلام عليك ياخيرة الله صلى الله عليه وسلم فقلت له من انت قال انا موسى بن عمران عليه السلام. قلت له ما تريد قال ابشرى يا امنة عليها السلام فقد حملت بمن ينزل عليه القران.
অর্থ: এবং যখন অষ্টম মাস আগমন করলো তখন একজন তাশরীফ এনে বললেন,
السلام عليك يا خيرة الله صلى الله عليه وسلم.
হে আল্লাহ পাক উনার সর্বোত্তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম।
অতঃপর আমি জানত চাইলাম, আপনি কে এবং কেন এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি হযরত মূসা ইবনে ইমরান আলাইহিমাস সালাম। আপনাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য এসেছি। আপনি এমন এক মহান ব্যক্তি উনাকে ধারণ করেছেন যাকে মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম কুরআন শরীফ দান করা হবে। সুবহানাল্লাহ!
ولما كان الشهر التاسع دخل على رجل وهو يقول السلام عليك ياخاتم رسل الله دنى القرب منك يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قلت له من انت قال انا عيسى ابن مريم عليهما السلام. قلت له ماتريد قال ابشرى يا امنة عليها السلام فقد حملت بالنبى المكرم والرسول المعظم. صلى الله عليه وسلم. وزال عنك البؤس والعنا والسقم والالم.
অর্থ: এবং যখন নবম মাস আগমন করলো তখন একজন তাশরীফ এনে বললেন,
السلام عليك يا خاتم رسل الله دنى القرب منك يارسول الله صلى الله عليه وسلم.
হে আল্লাহ পাক উনার রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে সর্বশেষ রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম। হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে নিছবত বা সম্পর্কের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী।
আমি উনাকে বললাম, আপনি কে এবং কেন এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিমাস সালাম। আপনাকে সুসংবাদ দিতে এসেছি। আপনি নাবীইয়ূল মুকাররাম ও রসূলুল মুয়াজ্জম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ করেছেন। (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম)
অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম আলমে আরওয়াহতে সংঘটিত সেই ওয়াদা বাস্তবায়নের জন্যই তথা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার জন্যই হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকটে আগমন করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১১৪)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থানকালিন সময়ের অবস্থা
এছাড়া “মাওয়াহিবুল লাদুননিয়া” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেদিন যমীনে তাশরীফ আনেন সেই রাত্রিতে অগণিত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম অবতরণ করেন এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এর দরজা মুবারক-এ দাঁড়িয়ে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করেন।”
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মাণিত মা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ তাশরিফ-এর পর কুল মাখলুক, সারা সৃষ্টি খুশি প্রকাশ করেছে। কিন্তু একমাত্র ইবলিস শয়তান ও তার চেলারা অসন্তুষ্ট হয়েছে, লাঞ্ছিত হয়েছে, পরাজিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ‘শাওয়াহিদুন নুবুওওয়াত’ গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে, যখন আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ললাট মুবারক থেকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ তাশরীফ নিলেন তখন যমীনের সমস্ত প্রতিমা মাথা নত করলো এবং সব শয়তানরা নিজ নিজ কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নিলো। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ইবলিসের সিংহাসনকে উপুড় করে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলেন এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত তাদের শাস্তি দিলেন। অবশেষে ইবলিস শয়তান সেখান থেকে পলায়ন করে সে আবূ কুবাইস পাহাড়ে এসে বিকট চিৎকার ও চেঁচামেচি শুরু করে তার সমস্ত চেলা-চামুন্ডারা এসে তার নিকট উপস্থিত হলো। ইবলিস চেলাদের উদ্দেশ্যে বললো, ভীষণ পরিতাপ ও আফসুসের বিষয় যে, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কিছুদিনের মধ্যেই বিলাদত শরীফ লাভ করবেন। ইবলিস তার চেলাদের বললো, তোমরা মনে রেখো, এরপর লাত, উজ্জা ও সমস্ত প্রতিমার ইবাদত বাতিল হয়ে যাবে অর্থাৎ সমস্ত কুফর, শিরক, বিদয়াত, বেশরাহ ও জাহিলিয়াত মিটে যাবে। আর সমস্ত যমীনে তাওহীদ ও রিসালতের নূর দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। ওই সময় সমস্ত কাফির, মুশরিক ও শয়তানসহ সকলেই অনুতপ্ত ও হতাশ হয়ে গেলো।
কাজেই আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ অবস্থান করা ছিলো সারা আলমের জন্য বেশুমার রহমত, বরকত, ছাক্বীনা হাছিলের কারণ। উনার উসীলায় সমস্ত মাখলুকাত পেয়েছে অশেষ নিয়ামত। পাশাপাশি কাফির, মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীন, ইহুদী, নাছারা তথা তাবত বিধর্মীরা উনাকে কষ্ট দেয়ার ফলে হয়েছে লাঞ্ছিত, পদদলিত, অপমানিত, সর্বশেষে জাহান্নামের ইন্ধন। সুতরাং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা রাখা উনাকে মুহব্বত করা এবং উনার জন্য হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম, হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাদের সকলকে মুহব্বত করা এবং বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা সারা কায়িনাতবাসীর জন্য ফরয ওয়াজিব।
0 Comments:
Post a Comment