হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ২৭৬-৩৭৭) (ঘ)

হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ২৭৬-৩৭৭) (ঘ)

আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত প্রকাশ ও এতদসম্পর্কিত মু’জিযা শরীফ
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ আরো ইরশাদ করেন,
وإذا اخذ الله ميثاق النبين لما اتيتكم من كتاب وحكمة ثم جاءكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال أأقررتم وأخذتم على ذالكم إصرى قالوا اقررنا قال فاشهدوا وانا معكم من الشاهدين.
অর্থ: “স্মরণ করো, যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিলাম তার ক্বসম! আপনাদের নিকট যা কিছু আছে তার সমর্থকরূপে যখন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসবেন তখন নিশ্চয়ই আপনারা উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনার খিদমত করবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা কি স্বীকার করলেন? এবং আমার অঙ্গীকার কি আপনারা গ্রহণ করলেন? উনারা বললেন, আমরা স্বীকার করলাম। তিনি বললেন, তবে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ৮১)
বুখারী শরীফ-এ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি যত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রেরণ করেছেন, উনাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে এই অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, যদি সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন ঘটে আর তখন তিনি যদি জমিনে থাকেন যেনো অবশ্যই তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনয়ন করেন এবং উনার খিদমত করেন। আর প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেনো উনারা নিজ নিজ উম্মত থেকেও এ অঙ্গীকার নেন যে, যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন ঘটে আর তারা তখন জীবিত থাকে উনার প্রতি তারা যেনো ঈমান আনে এবং উনার খিদমত করে এবং উনার অনুসরণ করে।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
অত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপারে সুসংবাদ প্রদান করেছেন এবং উনার আনুগত্য করার জন্য স্বীয় উম্মতদের আদেশ-নির্দেশ দিয়েছেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ বাসীগণদের জন্য দো’য়া করেছিলেন, তাতে তিনি বলেছিলেন,
ربنا وابعث فيهم رسولا منهم يتلوا عليهم اياتك.
অর্থ: “হে আমাদের রব মহান আল্লাহ পাক আপনি তাদের মধ্যে একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করুন, যিনি আপনার আয়াতসমূহ তথা আপনার নিদর্শনসমূহ তাদের নিকট তিলাওয়াত করবেন (বা শিক্ষা দিবেন)।” (সূরা বাকারা : আয়াত শরীফ ১২৯)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আখিরী উম্মতের নবী ও রসূল হিসেবে আগমন করবেন তা মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন। যা পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবেই সৃষ্টি হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত মায়সারা আল ফাজর রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহা তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কখন থেকে নবী ছিলেন? জবাবে তিনি বললেন,
وادم بين الروح والجسد
অর্থ: “হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি যখন রূহ আর জিসম মুবারক-এর মধ্যে অবস্থান করছিলেন (আমি তখনও নবী)।” সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ, ৩০৭পৃষ্ঠা)
দালায়িলুন নুবুওওয়াত-এ’ এসেছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার জন্য নুবুওওয়াত সাব্যস্ত হয় কখন? জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
بين خلق ادم ونفخ الروح فيه.
অর্থ: “হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও উনার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেয়ার সময়ও আমি নবী ছিলাম।”
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
وادم منجدل فى طينته
আমি তখনও নবী যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টির উপাদান কাদা-মাটিতে ছিলেন।”
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত অপর এক হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে,
وإذ أخذنا من النبين ميثاقهم ومنك ومن نوح. الاخ
এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে বলেছেন,
كنت أول النبين فى الخلق واخرهم فى البعث.
অর্থ: “সৃষ্টির বেলায় আমি সর্বপ্রথম নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর দুনিয়াতে আগমনের দিক থেকে আমি সকলের শেষ নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে ছাবিত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টিই হয়েছেন নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে। তবে উনার আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত শরীফ-এর ঘোষণা হয়েছে দুনিয়াবী ৪০ বৎসর বয়স মুবারকে। সময়টি ছিলো ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি (সোমবার শরীফ)। বা ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ ‘আমূল ফীল’-এর ৪১তম বছরে। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত শরীফ কখন প্রকাশ হয় এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ ও বিশুদ্ধ তারীখ গ্রন্থে বিশদ উল্লেখ রয়েছে। আর প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ওহী নাযিলের সময়ের যে মু’জিযা শরীফ তা আমরা নি¤œ আলোচনা করছি।
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت عائشة عليها السلام قالت- اول ما بدىء به رسول الله صلى الله عليه وسلم من الوحى الرؤيا الصالحة فى النوم، فكان لايرى رؤيا إلا جاءت مثل فلق الصبح، ثم حبب إليه الخلاء فكان يأتى حراء فيتحنث فيه وهو التعبد الليالى ذوات العدد ويتزود لذلك، ثم يرجع إلى حضرت خديجة عليها السلام فتزوده لمثلها حتى قاجأه الحق وهو فى غار حراء، فأتاه الملك فقال (اقرأ) قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فقلت. ما أنا بقارىء فأخذنى فغطنى حتى بلغ منى الجهد، ثم ارسلنى فقال (اقرأ) فقلت ما انا بقارىء فاخذنى فغطنى الثانى حتى بلغ منى الجهد ثم ارسلنى

অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক ওহীর সূচনা হয় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে সমস্ত স্বপ্ন মুবারক দেখতেন তা ভোরের আলোর মতো সত্য হয়ে সামনে এসে যেতো। অর্থাৎ উনার কোনো স্বপ্ন মুবারকই অস্বচ্ছ ছিলো না। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর কিছুদিন পর উনার নিকট নিরিবিলি থাকা সবচেয়ে পছন্দনীয় বা প্রিয় হয়ে যায়। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কয়েকদিনের পানাহার সামগ্রী নিয়ে হিরা গুহায় একাকী নির্জনবাসী হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার বা ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হয়ে পড়তেন। মাঝে মাঝে উনার প্রিয়তম আহলিয়া সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট এসে দেখা-সাক্ষাৎ করে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে পুনরায় হিরা গুহায় ফিরে যেতেন। অবশেষে একদা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ওহী এসে গেলো।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিরা গুহায় অবস্থান করছিলেন, এমতাবস্থায় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম (যিনি উনার খাদিম ছিলেন) তিনি এসে উনার সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং সূরা আলাক-এর ৫ খানা আয়াত শরীফ পাঠ করে বললেন, হে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ‘ইক্বরা’ আপনি পড়–ন! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘মা আনা বিক্বরিয়িন’ আমি পাঠক নই। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ ব্যাতীত আমি পাঠ করবো না। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং আমার সন্তুষ্টির ফয়েজ গ্রহণ করলেন। অতঃপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন ‘ইকরা’ অর্থাৎ দয়া করে আপনি পাঠ করুন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘ওয়ামা আনা বিক্বরিয়িন’ আমি পাঠক নই। অর্থাৎ আপনার কথায় আমি পাঠ করতে পারি না। মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ ব্যতীত আমি পাঠ করবো না। তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি যে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে এসেছেন সেটা প্রমাণ করার জন্য পুনরায় মুয়ানাকা করলেন।
فقال (اقرأ) فقلت ما انا بقارىء قال فأخذنى فغطنى الثالثة، ثم ارسلنى فقال- اقرا باسم ربك الذى خلق- خلق الانسان من علق- اقرا وربك الاكرم- فرجع بها رسول الله صلى الله عليه وسلم يرجف فؤاده حتى فدخل على حضرت خديجة بنت خويلد عليها السلام، فقال زملونى زملونى فزلوه حتى ذهب عنه الروع، فقال لخديجة عليها السلام- واخبرها الخبر- لقد خشيت على نفسى فقالت حضرت خديجة بنت خويلد عليها السلام كلا والله لا يخزيك الله أبدا إنك لتصل الرحم، وتحمل الكل، وتكسب المعدوم، وتقرى الضيف، وتعين على نوائب الحق،

অতঃপর আবার তৃতীয়বার আমাকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ‘ইক্বরা’ আপনি দয়া করে পাঠ করুন! তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জবাবে বললেন, ‘ওয়া মা আনা বি ক্বারিয়িন’ আমি পাঠক নই। অর্থাৎ আপনার কথায় আমি পাঠ করতে পারি না, মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ ব্যতীত আমি পাঠ করবো না। তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি যে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে এসেছেন সেটা প্রমান করার জন্য আমার সাথে মুয়ানাকা করলেন এবং মুয়ানাকা শেষ করে বললেন, দয়া করে আল্লাহ পাক উনার সম্মানার্থে পড়–ন,
اقرا باسم ربك الذى خلق- خلق الانسان من علق- اقرا وربك الاكرم- الذى علم بالقلم- علم الانسام مالم يعلم-
 “আপনার রব উনার নাম মুবারকে পাঠ করুন, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলাক থেকে। পাঠ করুন (আপনার রব উনার নাম মুবারকে) কারণ আপনার রব তিনি সবচেয়ে সম্মানিত, দাতা, দয়ালু ও অনুগ্রহশীল। যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম বা লিখনি দ্বারা। মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তারা জানতো না। (সূরা আলাক্ব : আয়াত শরীফ ১-৫)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশেপাঠ করলেন এবং তিনি উনার হুজরা শরীফ-এ ফিরে আসলেন। ওহী-এর খুছুছিয়ত ও তাছীর উনার চেহারা মুবারকে ফুটে উঠলো তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট গেলেন এবং উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘জাম্মিলুনী, জাম্মিলুনী’ আমাকে কম্বল বা চাদর দ্বারা আচ্ছাদিত করুন। যখন আচ্ছাদিত করা হলো তখন তিনি ইতমিনান লাভ করলেন। আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন এবং আরো বললেন, আমি আমার বিষয়ে চিন্তিত। সব কিছু শ্রবণ করে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, চিন্তার কোন কারণ নেই, কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে সম্মানিত করবেন তারই বহিঃপ্রকাশ এবং এটাই আপনার একটা হাক্বীক্বত। কারণ আপনি আত্মীয়-স্বজনদের সাথে বেমেছাল সদাচরণ করেন। সদা-সর্বদা সত্য কথা বলেন অর্থাৎ কখনও বিন্দু থেকে বিন্দু মাত্র মিথ্যার আশ্রয় নেন না। আপনি দূর্বলদের মাল-সামানা বা বোঝা বহন করেন। অসহায় বা নিঃস্বদের অর্থ সম্পদ দান করেন। মেহমানদের সেবা-যতœ করেন। বিপদ-আপদ দূরীকরণে মানুষের সাহায্য-সহযোগীতা করেন।” অর্থাৎ আপনি সমস্ত নেক গুনের অধিকারী।
ثم انطلقت به حضرت خديجة عليها السلام حتى أتت به حضرت ورقت بن نوفل بن أسد بن عبد العزى رضى الله تعالى عنه ابن عم حضرت خديجة عليها السلام، وكان أمرء اتنصر فى الجاهلية، وكان يكتب الكتاب العبرانى فيكتب من الانجيل بالعربية ما شاء الله تعالى ان يكتب و كان شيخا كبيرا قدعمى، فقالت له حضرت خديجة عليها السلام يا ابن عم اسمع من ابن اخيك، فقال له حضرت ورقة رضى الله تعالى عنه يا ابن اخى ماﺫا ترى فأخبره رسول الله صلى الله عليه وسلم خبر ما راه، فقال له حضرت ورقة رضى الله تعالى عنه هذا الناموس الذى نزل الله على حضرت موسى عليه السلام ياليتنى فيها جذعا ليتنى اكون حيا إذ يخرجك قومك. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم- أو مخرجى هم قال نعم لم يأت رجل قط بمثل ما جئت به إلا عودى وإن يدركنى يومك انصرك نصرا مؤزرا ثم لم ينشب حضرت ورقة رضى الله تعالى عنه ان توفى.
অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বীয় চাচাতো ভাই হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল ইবনে আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট নিয়ে গেলেন। হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জাহিলিয়া যুগে খৃস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষায় একজন সুদক্ষ লিখক ছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া ইহসানে তিনি আরবী ভাষায় ইনযীল শরীফ তরজমা করতেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, হে আমার চাচাতো ভাই! আপনার সম্মানিত ভাতিজা উনার কথা আপনি শুনুন। হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে আমার সম্মানিত ভাতিজা, আপনি কী দেখেছেন, দয়া করে একটু বলবেন কি? আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা কিছু দেখেছেন তা বিবৃত করলেন। হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সমস্ত কিছু শুনে বললেন, তিনি তো সেই জিবরীল আলাইহিস সালাম যিনাকে হযরত মুসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট প্রেরণ করা হয়েছিলো।
হায়! আমি যদি আজ যুবক ও আমার শরীরে শক্তি থাকতো আমি যদি ওই পর্যন্ত জীবিত থাকতাম, যখন আপনার স্বজাতি আপনার সাথে ষড়যন্ত্র করবে এবং শত্রুতাও করবে এবং আপনি যখন হিজরত করে অন্যত্র চলে যাবেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তারা কি আমার সাথে ষড়যন্ত্র করবে এবং শত্রুতাও করবে? হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হ্যাঁ! আপনার সাথে ষড়যন্ত্র ও শত্রুতা করবে। পূর্ববর্তী নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম যখন উনারা উনাদের নুবুওওয়াত প্রকাশ করেছেন তখন উনাদের সবারই সঙ্গে শত্রুতা করা হয়েছে। আমি যদি সেই সময় জীবিত থাকতাম তাহলে আপনার খিদমতের আঞ্জাম দিতাম। এই ঘটনার পর হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আর বেশি দিন যমীনে অবস্থান করতে পারেননি। কিছুদিনের মধ্যেই বিছাল শরীফ লাভ করলেন।” (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫৫ ও ১৫৬ পৃষ্ঠা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, সীরাতুল হালাবিয়া, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তারীখুল ইসলামিয়া ইত্যাদি)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনি বয়স মুবারক যখন তেত্রিশ থেকে চৌত্রিশ তখন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে হিরা গুহা বা জাবালে নূরে যেয়ে মুরাকাবা-মুশাহাদা করতেন। সেখানে একাধারা কয়েকদিন পর্যন্ত অবস্থান করতেন। কখনও কখনও সাথে খাদ্য মুবারকও নিয়ে যেতেন। আবার কখনও খাদ্য মুবারক শেষ হয়ে গেলে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি স্বয়ং নিজেই খাদ্য মুবারক সেখানে পৌঁছে দিতেন। অতঃপর যখন যমীনি বয়স মুবারক চল্লিশ হলো তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নুবুওওয়াত শরীফ ও রিসালত শরীফ-এর কথা প্রকাশার্থে ‘সূরা আলাক’¡-এর প্রথম পাঁচখানা আয়াত শরীফ নাযিল করেন।
এই সূরা নাযিলের তরতীব সম্পর্কে বলা হয়, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে একখানা জান্নাতী কাপড় মুবারকে ‘সূরা আলাক্ব’-এর প্রথম পাঁচখানা আয়াত শরীফ লিখিত আকারে এনে পেশ করেন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আরজ করে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ‘ইক্বরা’ অর্থাৎ দয়া করে পাঠ করুন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জবাবে বললেন, ‘ওয়া মা আনা বি-ক্বারিয়িন’ অর্থ: ‘আমি পাঠক নই।’ অর্থাৎ আপনার কথায় আমি পাঠ করতে পারি না। তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ ও আদব হাছিলের উদ্দেশ্যে মুয়ানাকা করলেন। অতঃপর আবারো বললেন, আপনি দয়া করে পাঠ করুন। নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবারও জবাবে একই কথা বললেন, আমি তো পাঠক নই। অর্থাৎ আপনার কথায় পাঠ করতে পারি না। এভাবে তিনি তিনবার মুয়ানাকা করে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ ও আদব হাছিলের উদ্দেশ্যে বললেন। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠ করতে বলা হলে তখন তিনি পাঠ করলেন একাধারা পাঁচখানা আয়াত শরীফ। উপরোক্ত ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার ওহী ব্যতীত কারো কথা অনুযায়ী কোনো কাজ করেন না।
উল্লেখ্য, অনেকে বলে থাকে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ওহী নাযিলের শুরুতে মুয়ানাকার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নাকি ফয়েজ দিয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! আসলে এ কথাটা সঠিক নয়। বরং এর সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফ-এ অন্যত্র বলেন, “নিশ্চয়ই ইলম মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটে।” আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
اعطيت بجوامع الكلم
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলম হাদিয়া করেছেন।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত ইলম দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। কাজেই নতুন করে কোনো ইলম দেয়ার প্রশ্নই আসতে পারে না। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র বলেন, ووجدك ضالا فهدىআমি আপনাকে কিতাবহীন পেয়েছি, কিতাব দিয়েছি।” (সূরা আদ দ্বুহা : আয়াত শরীফ-৭) আর কিতাব দেয়ার জন্যই আনুষ্ঠানিকভাবে ওহী নাযিল করা হয়েছে। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাদিমের অন্তর্ভুক্ত। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা ও তা’যীম-তাকরীম করার কারণে অর্থাৎ এর ওসীলাতেই তিনি ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
অনেকে আরো বলে থাকে যে, ওহী নাযিল হওয়ার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েছিলেন। নাঊযুবিল্লাহ! এ কথাটিও সঠিক নয়। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে যে, যখন ওহী নাযিল হতো তখন রসূলুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি কোনো বাহনের উপর থাকতেন তখন সেই বাহনটি দাঁড়ানো থাকলে বসে যেত। কোনো শক্তিশালী উটের উপর বসা থাকলেও উটটি দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসে যেত ওহীর খুছূছিয়ত ও তাছিরের কারণে। হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা বলেন, যখন ওহী নাযিল হতো তখন উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক দেখে বুঝতে পারতেন যে, ওহী নাযিল হচ্ছে। কারণ উনার চেহারা মুবারকে ওহীর তাছির ফুটে উঠতো।
এখন কেউ বলতে পারে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হাবীুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি কোনো হালের অধীন ছিলেন? আসলে এটাও শুদ্ধ নয়। কারণ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কোনো হালের অধীন নন। কেননা উনারা ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আর ওহীর কারণে যে তাছিরটা ফুটে উঠতো এর লক্ষ-কোটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে, মানুষ যেন বুঝতে পারে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, উনার প্রতি ওহী নাযিল হয় এবং উনি ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
আরো বর্ণিত রয়েছে, যখন পাঁচখানা আয়াত শরীফ নাযিল হলো তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিরা গুহা থেকে হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ আনলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, ‘জাম্মিলুনী, জাম্মিলুনী’ অর্থাৎ আমাকে কম্বল বা চাদর দ্বারা আচ্ছাদিত করুন। যখন আবৃত করা হলো তখন তিনি ইতমিনান লাভ করলেন। এই ঘটনা বর্ণনা করেও অনেকে বলে থাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী নাযিলের কারণে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েছিলেন। নাঊযুবিল্লাহ! এটাও শুদ্ধ নয়। এ অবস্থা হওয়ার পিছনে লক্ষ-কোটি কারণ হিকমত নিহিত রয়েছে। তারমধ্যে একটি হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার ছূরতান এ অবস্থা সৃষ্টি করে উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে বুঝিয়ে দিলেন যে, নতুন কিছু সংঘটিত হয়েছে অর্থাৎ ওহী নাযিল হয়েছে এবং তিনি আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আরো বর্ণিত রয়েছে, এ অবস্থা দেখে উম্মুল মু’মিনীন হযরত খদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বিষয়টিকে হাক্বীক্বীভাবে সত্য বলে প্রচার করার জন্য উনার চাচাতো ভাই হযরত ওয়ারাকা বিন নওফেল বিন আসাদ বিন আব্দুল উযযা বিন কুশাই রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট নিয়ে যান। তিনি খৃস্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন। অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ ও অন্ধ ছিলেন। তিনি তাওরাত শরীফ, যাবূর শরীফ, ইনজীল শরীফ ও অন্যান্য আসমানী ছহীফা শরীফ সম্পর্কে অত্যন্ত মুহাক্কিক ও মুদাক্কিক আলিম ছিলেন। উনাকে যখন এই ঘটনা শুনানো হলো তখন তিনি খুশি ও বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, তিনি তো সেই ‘নামুসুল আকবার’ অর্থাৎ ওহী বহনকারী হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম যিনি হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিলেন। হায় আফসুস! এখন শক্তি সামর্থ্য অবস্থায় যদি থাকতাম! এরপর বললেন, আপনার সম্প্রদায় যখন আপনার বিরোধিতা করবে তখন যদি আমি জীবিত থাকতাম তাহলে আবশ্যই আমি আপনার খিদমত করতাম। এর অল্পকাল পরেই তিনি ইন্তিকাল করেন। এই ওয়াক্বিয়া বর্ণনা করে অনেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায় প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনারও লক্ষ-কোটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো উনার ওহী ও রিসালতের কথা বলবেনই। এ প্রসঙ্গে অনেকে চূ-চেরা করতে পারে, সেজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই যামানার বিখ্যাত মুহাক্কিক- মুদাক্কিক আলিম হযরত ওয়ারাকা বিন নওফেল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যবান মুবারক দিয়ে ওহী ও রিসালতের কথা জানিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (তরজমায়ে মুজাদ্দিদে আ’যম, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে ইবনে কাছীর ইত্যাদি)
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীনা মুবারক চাক কর হয় ৪ বার। প্রথমবার যখন তিনি স্বীয় দুধমাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার লালন-পালনে তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক ছিলো তিন থেকে পাঁচ বছর। দ্বিতীয়বার দশ থেকে চৌদ্দ বছর বয়স মুবারকে, তৃতীয়বার আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত শরীফ প্রাপ্তির সময় ‘হিরা গুহায় এবং চতুর্থবার মি’রাজ শরীফ-এর রাত্রি মুবারকে পবিত্র কা’বা শরীফ-এ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
الم نشرح لك صدرك
অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কি আপনার বক্ষ মুবারক প্রশস্ত (চাক) করিনি? অর্থাৎ আমি আপনার বক্ষ (সিনা) মুবারক চাক করেছি।” (সূরা আলাম নাশরাহ : আয়াত শরীফ ১)
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সত্য স্বপ্ন দেখতেন; যা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পেতো এবং বাস্তবে পরিণত হতো।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
أخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه، عن حضرت على بن الحسين عليه السلام قال إن اول ما أتى رسول الله صلى الله عليه وسلم الرؤيا الصالحة فكان لا يرى شيأ فى المنام إلا كان كما رأى.
অর্থ: “হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আলী ইবনে হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সত্য স্বপ্ন মুবারক আসতে থাকে। তিনি উনার স্বপ্ন মুবারকে যা কিছু দেখতেন তা, হুবহু তেমনিভাবে প্রকাশ পেত। অর্থাৎ এই স্বপ্ন মুবারকে কোনো প্রকার অস্পষ্টতা ছিলো না। সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫৭ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শীফ-এ আরো এসেছে,
أخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه، عن حضرت علقمة بن قيس رضى الله تعالى عنه قال إن أول ما يؤتى به الأنبياء فى المنام حتى تهدأ قلوبهم ثم ينزل الوحى بعد.
অর্থ: “হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মূসা ইবনে আলকামা ইবনে কায়িস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট যে বিষয়টা আসত তা হচ্ছে সত্য স্বপ্ন মুবারক। এতে উনাদের ক্বলব মুবারক ইতমিনান হতো। এরপর প্রকাশ্যে অহী নাযিলের ধারাবাহিকতা শুরু হতো। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫৭ পৃষ্ঠা)
অন্য বর্ণনায় এসেছে-
اخرج حضرت البيهقى رحمة الله عليه، و حضرت أبو نعيم رحمة الله عليه من طريق حضرت موسى بن عقبة رحمة الله عليه، عن حضرت ابن شهاب رحمة الله عليه قال بلغنا ان اول ما رأى النبى صلى الله عليه وسلم ان الله أراه رؤيا فى المنام فشق ذلك عليه فذكرها لخديجة عليها السلام، فقالت ابشر فان الله لن يصنع بك إلا خيرا ثم انه خرج من عندها، ثم رجع اليها فأخبرها انه رأى بطنه شق، ثم طهر وغسل ثم أعيد كما كان، قالت هذا والله خير فابشر ثم استعلن له جبرئيل عليه السلام وهو بأعلى مكة فأجلسه على مجلس كريم معجب كان النبى صلى الله عليه وسلم يقول أجلسنى على بساط كهيئة الدرنوك فيه الياقوت واللؤلؤ فبشره رسالة الله حتى اطمأن النبى صلى الله عليه وسلم، ثم قال له (اقرأ) فقال كيف اقرأ؟ فقال (اقرأ باسم ربك الذى خلق) إلى قوله (ما لم يعلم)- فقبل الرسول رسالة ربه وانصرف،
অর্থ: “হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত মূসা ইবনে উক্ববা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত ইবনে শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে যা দেখেছিলেন তা ছিলো নিদ্রাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে একটি স্বপ্ন মুবারক। যার মধ্যে বিন্দুমাত্র সংশয় বা সন্দেহের অবকাশ ছিলো না। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এক সুমহান স্বপ্ন মুবারক দেখান। আর সেই স্বপ্ন মুবারক উনার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে নিগুঢ় মুহব্বতের বহিঃপ্রকাশ। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই স্বপ্ন মুবারক এর কথা স্বীয় আহলিয়া সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে অবহিত করেন। সবকিছু শুনে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনার জন্য সুসংবাদ। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার সঙ্গে খুবই উত্তম ব্যবহার করেছেন এবং করবেন; অনন্তকাল ধরে করতেই থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট থেকে অর্থাৎ হুজরা শরীফ থেকে বের হলেন। কিছুক্ষণ পর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুনরায় সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ প্রবেশ করলেন এবং উনাকে সংবাদ দিলেন যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখেছেন উনার ছিনা মুবারক চাক বা বিদীর্ণ করা হলো অতঃপর উনার তথা আমার ক্বলব মুবারক এর পবিত্রা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হলো গোসল মুবারক-এর মাধ্যমে। তারপর আমার ক্বলব মুবারক যথাস্থানে রেখে দেয়া হলো। সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনার ছিনা মুবারক চাক হচ্ছে, এক সুমহান খাইর বা বেমেছাল কল্যাণময়। আর আপনি এ ব্যাপারে সুসংবাদ গ্রহণ করুন।
এরপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় ছুরত মুবারক নিয়ে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আগমন করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন পবিত্র মক্কা শরীফ-এর উপরিভাগে অবস্থান করছিলেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এমন এক সুমহান ও সম্মানিত আসনে বসালেন, যা ছিলো খুবই আশ্চর্যজনক। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে এমন এক দুধের ফেনার ন্যায় শ্বেত শুভ্র ফরাশে বসালেন, যাতে ইয়াকুত ও লু’লু’ বা মতি জড়ানো ছিলো। ফরাশে বসানোর পর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত শরীফ-এর সুসংবাদ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রিসালতের ঘোষণা করলেন।
তখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইতমিনান বা প্রশান্তি লাভ করলেন। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি পাঠ করুন। জাওয়াবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি তো আপনার কথায় পাঠ করতে পারবো না। তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি অনুগ্রহ করে পাঠ করুন।”
اقرا باسم ربك الذى خلق- خلق الانسان من علق- اقرا وربك الاكرم- الذى علم بالقلم- علم الانسان مالم يعلم-
অর্থ: “আপনার রব উনার নাম মুবারকে পাঠ করুন যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলাক থেকে। পাঠ করুন (আপনার রব উনার নাম মুবারকে) কারণ আপনার রব সম্মানিত, দাতা, দয়ালু, অনুগ্রহশীল। যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম বা লিখনি দ্বারা। মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তারা জানতো না। (সূরা আলাক্ব : আয়াত শরীফ ১-৫)
অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপন রব মাশুকে মাওলা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রিসালত কবুল করে চলে এলেন।
فجعل لا يمر على شجر ولا حجر إلا سلم عليه فرجع مسرورأ إلى أهله موقنا قد رأى أمرا عظيما فلما دخل على ام المومنين حضرت خديجة عليها السلام قال أرأيتك الذى كنت اخبرتك انى رأيته فى المنام، فانه حضرت جبرئيل عليه السلام استعلن لى أرسله إلى ربى فأخبرها بالذى جاءه من الله وما سمع منه، فقالت ابشر فو الله لايفعل الله تعالى بك إلا خيرا، فأقبل الذى جاءك من الله فانه حق، وأبشر فإنك رسول الله صلى الله عليه وسلم حقا، ثم انطلقت حتى أتت غلاما لعتبة بن ربيعة بن عبد شمس نصر انيا من أهل نينوى يقال له (عداس) فقالت له يا عداس- اذكرك بالله الا ما اخبرتنى هل عندكم علم من حضرت جبرئيل عليه السلام؟ فقال عداس- قدوس قدوس ما شأن حضرت جبرئيل عليه السلام بذكر بهذه الأرض التى أهلها أهل الأوثان، فقالت- اخبرنى بعلمك فيه. قال فانه امين الله تعالى بينه وبين النبيين، وهو صاحب حضرت موسى عليه السلام  و ام المؤمنين حضرت عيسى عليه السلام، فرجعت حضرت خديجة عليه السلام من عنده فجاءت  حضرت ورقة بن نوفل رضى الله تعالى عنه، فأخبرته، فقال لعل صاحبك النبى الذى ينتظر أهل الكتاب الذى يجدونه مكتوبا عندهم فى التوراة والانجيل، ثم اقسم بالله تعالى لئن ظهر دعاؤه وانا حى لأبلين الله فى طاعة رسوله وحسن مؤازرته فمات حضرت ورقة رضى الله تعالى عنه.

পথিমধ্যে প্রতিটি বৃক্ষ, গাছ-পালা ও পাথর তথা সকলেই উনাকে সালাম দিলো। অর্থাৎ এমন কোন গাছ-পালা, পাথর নেই যার পার্শ্ব দিয়ে তিনি অতিক্রম করেছেন কিন্তু উনার প্রতি ছলাত ও সালাম পেশ করেনি। কায়িনাতের সকলেই উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করছিলো। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইতমিনান বা হাসি মুখে ও আনন্দিত মনে উনার সম্মানিত আহলে পাক উনাদের নিকট ফিরে এলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সকল সুমহান বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ বা দেখলেন তা মূলত তিনি পূর্ব থেকেই জানতেন বা পূর্ণওয়াকিফহাল ছিলেন। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট এসে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি যে ঘটনাটি স্বপ্নে দেখেছিলাম এবং আপনার নিকট বর্ণনা করেছিলাম তা আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবে পরিণত হয়েছে। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি প্রকাশ্যভাবে আমার খিদমতে এসেছেন। আমার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে আমার খিদমতে প্রেরণ করেছেন। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যে পয়গাম বা সংবাদ এনেছিলেন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা কিছু শুনেছেন তা সাইয়্যিদাতুনা উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে শুনালেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম এই সুসংবাদ গ্রহণ করলেন এবং বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার সঙ্গে সর্বোত্তম ও খুবই সন্তোষজনক ব্যবহার করেছেন। আপনি তা কবুল করুন। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছেন। নিশ্চয়ই এটা হক্ব বা সত্য। আরো সুসংবাদ নিন, নিশ্চিয়ই নিশ্চয়ই আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম; যা হক্ব বা সত্য। অতঃপর উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি স্বীয় হুজরা শরীফ থেকে বের হয়ে উতবা ইবনে রবীয়াহ ইবনে আবদে শামস উনার গোলাম আদদাস-এর নিকট পৌঁছলেন। যিনি ছিলেন আদদাস নায়নুয়ার অধিবাসী এবং ধর্ম বিশ্বাসে খ্রিস্টান। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি আদদাসকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আদদাস! তুমি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে কিছু জানো কি?
আদদাস বললো, ‘কুদ্দুসুন’ ‘কুদ্দুসুন’ হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনার শান অনেক বেমেছাল। মূর্তি পূজারীদের দেশে উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করাও অনুচিত। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, হযরত জিবরীল আলাইহি উনার সম্পর্কে তুমি যা কিছু জানো তা বর্ণনা করো।
আদদাস বললো, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক ও হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে বিশ্বস্ত দূত ও বার্তাবাহক। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাদের উযির বা খাদিম।
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার কাছ থেকে চলে এলেন এবং হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট গিয়ে উনাকে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করলেন। হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সবকিছু শুনে বললেন, নিশ্চয়ই আপনার যিনি ছহিব, যাওজ বা সহধর্মী তিনি সেই প্রতীক্ষিত রসূল ও নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম; কিতাবধারীগণ উনার অপেক্ষায় রয়েছেন এবং উনার ছানা-ছিফত বা আলোচনা পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাত শরীফ ও ইনজিল শরীফসহ সমস্ত আসমানী কিতাবে রয়েছে।
অতঃপর হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম খেয়ে বললেন, যদি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ-এর দাওয়াত প্রকাশ পায় এবং সেই সময় আমি যদি যমীনে থাকি তবে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত বা অনুসরণ ও পূর্ণমাত্রায় উনার খিদমতের ব্যাপারে অবশ্যই আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবো। এর কিছুদিন পরই হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিদায় নিলেন বা ইন্তেকাল করলেন। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫৭ ও ১৫৮ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
ثم أخرج حضرت البيهقى رحمة الله و حضرت أبو نعيم رحمة الله عليه من وجه اخر، عن  حضرت عروة بن الزبير نحو هذه القصة وفى اولها بعد فشق عليه، ورأى انه بينما هو فى مكة أتى إلى سقف بيته فنزع شبحة شبحة حتى- إذا نزع أدخل فيه سلم من فضة نزل اليه رجلان قال رسول الله صلى الله عليه وسلم. فأردت ان استغيث فمنعت الكلام فقعد احدهما إلى رأسى والاخر الى جنبى، فأدخل احدهما يده فى جنبى فنزع ضلعين منه، فأدخل يده فى جوفى وأنا اجد بردها، فأخرج قلبى فوضعه على كفه، فقال لصاحبه- نعم القلب قلب رجل صالح، ثم أدخل القلب قلب مكانه ورد الضلعين، ثم ارتفعا ورفعا سلمهما، فاستيقظت فإذا السقف مكانه كما هو، فذكرها لخديجة عليها السلام، فقالت ان الله لن يفعل بك إلا خيرا ثم انه خرج من عندها ورجع فأخبرها ان بطنه شق ثم طهر وعيد إلى اخر ما تقدم، وزاد فيه ففتح حضرت جبرئيل عليه السلام عينا من ماء فتوضأ و حضرت محمد صلى الله عليه وسلم ينظر إليه فغسل وجهه ويديه إلى المرفقين ومسح برأسه ورجليه إلى الكعبين، ثم نضح فرجه وسجد سجدتين مواجهة البيت فغعل محمد كما رأى حضرت جبرئيل عليه السلام يفعل.
অর্থ; হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে অনুরূপভাবে বর্ণনা করেছেন। তবে এ বর্ণনার শুরুতে আরো বলা হয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ-এ অবস্থান কালে দেখতে পেলেন যে, এক ব্যক্তি উনার হুজরা শরীফ-এর ছাদ মুবারক-এর দিকে এলেন। ওই ব্যক্তি ঘরের ছাদ মুবারক-এর একটি কড়িকাঠ বের করতে লাগলেন। অবশেষে তিনি সমস্ত ছাদ খুলে ফেললেন। অতঃপর তাতে রূপার একটি সিঁড়ি লাগিয়ে দিলেন। সেই সিঁড়ি বেয়ে দু’ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে আগমন করলেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, উনাদেরকে দেখে আমি আমার খিদমতের জন্য কাউকে ডাক দিতে চাইলাম। কিন্তু উনারা আমাকে অনুরোধ করলেন কথা না বলতে। আগন্তুকদ্বয়ের একজন আমার মাথা মুবারক-এর দিকে এবং অপরজন আমার পার্শ্বে বসলেন এবং উনাদের একজন স্বীয় হাত আমার পার্শ্ব মুবারকে প্রবেশ করিয়ে পাঁজর মুবারক-এর দুটি হাড্ডি মুবারক বের করে নিলেন। অতঃপর তিনি আমার পেট মুবারক-এ হাত ঢুকিয়ে দিলেন। আমি উনার হাতের শীতলতা অনুভব করলাম। তিনি আমার ক্বলব মুবারক বের করে নিজের হাতের তালুতে রাখলেন। তিনি উনার সঙ্গীকে বললেন, এই সম্মানিত পুরুষ উনার ক্বলব মুবারক তথা হৃদপি- মুবারক কত পূতঃপবিত্র, বেমেছাল সুন্দর ও চমৎকার। এরপর তিনি আমার ক্বলব বা হৃদপি- মুবারক স্বস্থানে রেখে দিলেন এবং আমার পাঁজর মুবারক-এর হাড্ডি মুবারকও যথাস্থানে স্থাপন করলেন। এরপর উভয়ই প্রস্থান করলেন এবং সিঁড়ি তুলে নিলেন। আমি সজাগ হয়ে দেখতে পেলাম আমার হুজরা শরীফ-এর ছাদ মুবারক পূর্বের মতোই রয়েছে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সিনা মুবারক চাক-এর কথা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার ভালাই চান অর্থাৎ আপনার সন্তুষ্টি ছাড়া আর কিছু তিনি চান না।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখান থেকে বের হলেন এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বললেন, নিশ্চয়ই আমার বক্ষ মুবারক বিদীর্ণ তথা সিনা মুবারক চাক করার মাধ্যমে সুমহান মর্যাদাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে এবং পুনরায় আমার সিনা মুবারক পূর্বের ন্যায় করে দেয়া হয়েছে। এরপর এই হাদীছ শরীফ-এর পূর্বোক্ত ঘটনাবলী বর্ণিত হয়েছে। আরো উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি একটি ঝরনা খনন করেন এবং তাতে অযূ করলেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে অযূ করতে দেখলেন।
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম প্রথমত, উনার মুখম-ল ধৌত করলেন, দ্বিতীয়ত, উনার দু’ হাত মুবারক কুনুই পর্যন্ত ধৌত করলেন, তৃতীয়ত, মাথা মাছেহ করলেন এবং চতুর্থত, উভয় পায়ের টাখনুসহ ধৌত করলেন। অতপর পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ-এর দিকে মুখ ফিরিয়ে দু’রাকায়াত নামায আদায় করলেন। অতঃপর আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়িন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ও অনুরূপভাবেই অযূ মুবারক করলেন এবং নামায আদায় করলেন।” (খাছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫৮ ও ১৫৯ পৃষ্ঠা)
স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক সম্পর্কে গুমরা, বাতিল, ও নাহক্বপন্থীরা অনেকগুলি শরীয়তের খিলাফ আক্বীদা পোষণ করে থাকে তা উল্লেখ করে খন্ডন করা হলো। যেমন- (ক) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রথমবার সিনা মুবারক চাকের সময়, উনার ভিতর থেকে ক্বলব মুবারক বের করে তা ফেঁড়ে শয়তানের অংশ বের করে ফেলে দিয়ে ক্বলব মুবারককে পবিত্র করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ!
(খ) দ্বিতীয়বার সিনা মুবারক চাক-এর সময় উনার ভিতর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ!
(গ) নুবুওওয়াতের পরও উনার এই শয়তানীভাব দমিত না হওয়ায় আবার মি’রাজ শরীফ-এর রাত্রে সিনা মুবারক চাক করে পবিত্র করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ!
(ঘ) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত মুবারক থেকে আদৌ মা’ছুম ছিলেন না। সিনা চাক করে মা’ছুম (নিষ্পাপ) করা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!
এছাড়া আরো অনেক আপত্তিকর ও কুফরীমূলক বক্তব্য নাহক্ব ও বাতিলপন্থীরা প্রদান করে থাকে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হুসনুল খুলুক, আতইয়াবুল খুলুক, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উপরোক্ত বক্তব্য প্রদানকারী নাহক্ব গুমরাহ, বাতিলপন্থী ও মুনাফিকদের সম্পর্কেই ইরশাদ করেছেন,
عن ابى حضرت هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عيه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর পূর্ণ মিছদাক বা নমুনা হচ্ছে তারাই যারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অপবিত্র প্রমাণিত করার চেষ্টা করেছে বা করছে। তারা হচ্ছে কাফির, পথভ্রষ্ট, ফিতনাবাজ, দাজ্জালের চেলা, মুনাফিক ও বেয়াদব ইত্যাদি বদ স্বভাবের অধিকারী। এই পথভ্রষ্ট, কাফির ফিতনাবাজ, দাজ্জালের চেলা, মুনাফিক এবং বেয়াদবদের আপত্তিকর, কুফরীমূলক ও বেয়াদবীসূচক দলীলবিহীন বক্তব্যগুলো জবাব নিম্নে পেশ করবো ইনশাআল্লাহ-
ছহীহ ও বিশুদ্ধ মতে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক করা হয়েছিল চারবার। প্রথমবার যখন তিনি স্বীয় দুধ মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার লালন-পালনে, তখন উনার বয়স মুবারক তিন থেকে পাঁচ বছর ছিল। দ্বিতীয়বার দশ থেকে চৌদ্দ বছর বয়স মুবারকে, তৃতীয়বার আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত প্রাপ্তির সময় হিরা গুহায় এবং চতুর্থবার আনুষ্ঠানিকভাবে মি’রাজ শরীফ-এর রাতে কা’বা শরীফ-এ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি এ সম্পর্কে কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন,
الم نشرح لك صدرك
অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কি আপনার বক্ষ মুবারক প্রশস্ত (চাক) করিনি? অর্থাৎ আপনার বক্ষ (সিনা) মুবারক চাক করেছি। (সূরা আলাম নাশরাহ : আয়াত শরীফ ১)
(ক) কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, পথভ্রষ্ট, ফিতনাবাজ, বেয়াদব ও বাতিল ফিরক্বার লোকেরা বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রথমবার সিনা মুবারক চাকের সময়, উনার ভিতর থেকে ক্বলব মুবারক বের করে তা ফেঁড়ে শয়তানের অংশ বের করে ফেলে দিয়ে ক্বলব মুবারককে পবিত্র করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ!
তাদের এ বক্তব্য কুফরীমূলক, অজ্ঞতাসূচক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ইনকার ইহানত ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের নামান্তর।
কেননা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মতে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা সকল প্রকার খারাপ বিষয় এবং অপবিত্রতা থেকে সম্পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র; এমনকি পবিত্র থেকে পবিত্রতম। কিন্তু গুমরাহ লোকেরা হাদীছ শরীফের সঠিক অর্থ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এ সম্পর্কে কুফরীমূলক বক্তব্য প্রদান করে থাকে।      
ছহীহ মুসলিম শরীফ-এর ১ম জিলদ ৯২ পৃষ্ঠায়, মিশকাত শরীফ ৫২৪ পৃষ্ঠায় এবং মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবাহ ৪র্থ জিলদ ২১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
عن حضرت انس بن مالك رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم اتاه جبريل عليه السلام وهو يلعب مع الغلمان فاخذه فصرعه فشق عن قلبه فاستخرج القلب فاستخرج منه علقة فقال هذا حظ الشيطان منك ثم غسله فى طست من ذهب بماء زمزم ثم لامه ثم اعاده فى مكانه وجاء الغلمان يسعون الى امه يعنى ظئره فقالوا ان حضرت محمدا صلى الله عليه و سلم قد قتل فاستقبلوه وهو منتقع اللون، قال انس رضى الله عنه وقد كنت ارى اثر ذلك المخيط فى صدره.
অর্থ: “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এমতাবস্থায় আসলেন যে, তিনি বালকদের সাথে অবস্থান করছিলেন। তিনি (হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম) উনাকে ধরলেন এবং আদবের সাথে মাটিতে শোয়ার ব্যবস্থা করলেন। অতঃপর সিনা মুবারক চাক করে ক্বলব মুবারক বের করে উহার মধ্য থেকে একখ- পবিত্র গোস্ত মুবারক বের করলেন। অতঃপর হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
هذاحظ الشيطان منك اى من امتك
অর্থ: এটা শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়ার স্থান, (যা আপনার জন্য নয়, কারণ আপনি শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে সম্পূর্ণরূপে মাহফুয। আপনার উম্মতের এই স্থানে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে।) এরপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উহা স্বর্ণের পাত্রে যমযমের পানি দ্বারা ধুইলেন। এর মাধ্যম দিয়ে ক্বলব মুবারক উনার পবিত্রা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হলো এবং স্বর্ণ ও জমজম কুপ ও তার পানিকে আরো সম্মানিত করা হলো। তৎপর উহার অংশগুলো একত্রিত করে যথাস্থানে রেখে দিলেন। এ অবস্থা দেখে অন্যান্য বালকেরা উনার দুধমাতা উনার নিকট যেয়ে বললেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করা হয়েছে। তারা সকলেই এসে উনাকে উৎকৃষ্ট বর্ণে দেখতে পেলেন। রাবী হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন, আমি (পরবর্তীতে) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারকে সিলাই মুবারক-এর চিহ্ন দেখেছি।” সুবহানাল্লাহ!
উক্ত হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত هذاحظ الشيطان -এর সরাসরি শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করে তারা বলে থাকে যে, “ইয়া রসূলল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ অংশটি আপনার মধ্যে শয়তানের অংশ।” নাঊযুবিল্লাহ!
এখানে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা যাবে না, বরং তা’বীলী তথা ব্যাখ্যামূলক অর্থ করতে হবে। কারণ যে সকল শব্দের সরাসরী অর্থ করলে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের শান মুবারকের খিলাফ হয়; সে সকল শব্দের সরাসরি অর্থ করলে কুফরী হবে। বরং সেক্ষেত্রে তা’বীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থ করতে হবে। অনুসরণীয় ইমাম মুজতাহিদ উনারা সকলেই এরূপ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা’বীলী বা ব্যাখ্যামুলক অর্থ করেছেন।
সবস্থানে শব্দের সরাসরি শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা যাবে না। করলে কুফরী হবে। বরং সেক্ষেত্রে তা’বীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থ গ্রহণ করা ফরয। যেমন উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘সূরা বাক্বারা’-এর ৫৪নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
ومكروا و مكر الله و الله خير المكرين
এ আয়াত শরীফ-এর প্রকৃত বা সরাসরি অর্থ হলো- “আর কাফিরেরা ধোঁকাবাজী করলো, মহান আল্লাহ পাক তিনিও ধোঁকাবাজী করলেন, আর মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন উত্তম ধোঁকাবাজ।” নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক!
এরূপ অর্থ যে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত, এ ব্যাপারে কারোই কোনোরূপ দ্বিমত নেই। কারণ আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মতে মহান আল্লাহ পাক তিনি مكر “মকর” বা ধোঁকাবাজী হতে সম্পূর্ণই পবিত্র। অথচ দুনিয়ার সকল লুগাত বা অভিধানসমূহেই (مكر) “মকর” শব্দের অর্থ “ধোঁকাবাজী” বলে উল্লেখ আছে।
ইমামুল লুগাবী, আল্লামা মুহিব্বুদদ্বীন, আবুল ফাইজ সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুরতাজা আল হুসাইনী আল ওয়াসেত্বী আল যাবেদী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত আরবী লুগাত “তাজুল আরুস মিন জাওয়াহিরিল কামুস”-এর ৩য় জিলদ ৫৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
(المكر) الخديعة والاحتيال وقال الليث احتيال فى خفية .... وقال ابن الاثير مكر الله ايقاع بلائه باعدائه دون اوليائه.
অর্থ: مكر “মকর” শব্দের অর্থ হচ্ছে- ধোঁকাবাজী, প্রতারণা, ঠগবাজী। আবু লাইছ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, গোপন প্রতারণা। ..... হযরত ইবনুল আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি “মকর” করেছেন, একথার অর্থ হলো, তার শত্রুদের শাস্তি প্রদান করেছেন, বন্ধুদেরকে নয়।”
আব্দুস সালাম মুহম্মদ হারুন সংকলিত “মু’জামু মাক্বানীসুল লুগাত”-এর ৫ম জিলদ ৩৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(مكر) الميم والكاف والراء ..... الاحتيال.
অর্থ: “مكر শব্দের অর্থ হলো- প্রতারণা, ধোঁকাবাজী, ঠকবাজী।”
উপরোক্ত লুগাতী আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, مكرমকর” শব্দের একাধিক অর্থের মধ্যে একটি অর্থ হচ্ছে “ধোঁকাবাজী।”
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কাফিরদের ন্যায় মহান আল্লাহ পাক উনার শানেও (মকর) শব্দের উক্ত অর্থ গ্রহণ করা জায়িয হবে কি?
মুলত, তা কশ্মিনকালেও জায়িয হবে না। কারণ তা মহান আল্লাহ পাক উনার শান ও ছহীহ আক্বীদার সম্পূর্ণই খিলাফ। তবে মহান আল্লাহ পাক উনার শানে “মকর” শব্দের অর্থ কি হবে? এ ব্যাপারে অনুসরণীয় মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা যে অর্থ বা ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন তাই গ্রহণীয়।
অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ তথা মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা (مكر الله)-এর যে অর্থ ও ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, তা এখানে আলোচনা করা বা উল্লেখ করা একান্তই জরুরী। কারণ এর ফলে বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। তাই তাফসীরের কিতাবসমূহ হতে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
          ইমামুল মুফাসসিরীন, ফখরুল মানতাক্বীন, উস্তাজুল আসাতিজা আল্লামা ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে কবীর”-এর ৮ম খ-, ৬৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(ومكروا ومكر الله والله خير المكرين.) وفيه مسائل- (المسئلة الاولى) اصل المكر فى اللغة السعى بالفساد فى خفية .......... (المستلة الثانية) ما مكرهم بعيسى عليه السلام فهو انهم هموا بقتله واما مكر الله تعالى بهم ........ هو انه رفع عيسى عليه السلام الى السماء وذالك ان يهودا ملك اليهود. اراد قتل عيسى عليه السلام- (المسئلة الثالثة) المكر عبارة عن الاحتيال فى ايصال الشر والاحتيال على الله تعالى محال- فصار لفظ المكر فى حق من المتشبهات وذكروا فى تأويله وجونها- احدها ان تعالى سمى جازا المكر بالمكر-كقوله (وجزاء سيئة سيئة مثلها) وسمى جزاء المخادعة بالمخادعة وجزاء الاستهزاء بالاستهزاء ......... الثالثة ان هذا اللفظ ليس من المتشابهات لانه عبارة عن التدبير المحكم الكامل- ثم اختص فى العرف بالتدبير فى ايصال الشر الى الغير وذالك فى حق الله تعالى غير ممتنع.
অর্থ: “(مكروا) এ আয়াত শরীফ-এর অনেক মাসয়ালা বা ব্যাখ্যা রয়েছে।
(১ম) আরবী ভাষায় مكر “মকর” শব্দের অর্থ হচ্ছে- গোপনে ধ্বংসের তদবীর করা। ....
(২য়) তারা (ইহুদীরা) হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সাথে যে مكر বা ধোঁকাবাজী করেছে তাহলো- তারা গোপনে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার সংকল্প গ্রহণ করেছিল। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের সাথে যে مكر “মকর” করেছেন, তাহলো- ইহুদীদের সর্দার যখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে গোপনে আকাশে তুলে নেন।
(৩য়) مكر “মকর” শব্দটির প্রকৃত অর্থ হচ্ছে- প্রতারণা করা। আর “প্রতারণা” মহান আল্লাহ পাক উনার শান-এর সম্পূর্ণ খিলাফ। সুতরাং مكر “মকর” শব্দটি মহান আল্লাহ পাক উনার শানে “মুতাশাবেহাত”-এর অন্তর্ভুক্ত। তাই মুফাসসিরীনে কিরামগণ উনারা مكر শব্দের অনেক ব্যাখ্যা করেছেন। তন্মধ্যে ১ম ব্যাখ্যা হলো- “মহান আল্লাহ পাক তিনি مكر “মকর” বা ধোঁকাবাজীর বদলা مكر “মকর” শব্দ দ্বারাই উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি অন্যত্র سيِِِئة এর বদলা  سيئةদ্বারা উল্লেখ করেছেন।
আর مخادعة এর বদলা مخادعة বলে উল্লেখ করেছেন। তদ্রƒاستهزاء এর বদলা  استهزاء বলে উল্লেখ করেছেন। .........
(৪র্থ) مكر শব্দটি “মুতাশাবেহাত”-এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ مكر শব্দের অর্থ সূক্ষ্ম তদবীরও হয়। مكر শব্দটি কারো শাস্তি দানে সূক্ষ্ম তদবীর করা অর্থেও প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তাই এ অর্থে مكر “মকর” শব্দটি মহান আল্লাহ পাক উনার শানে ব্যবহার করা নিষেধ নয়।”
সুতরাং مكر الله শব্দের ছহীহ অর্থ হলো “মহান আল্লাহ পাক তিনি হিকমত বা কৌশল করলেন, সূক্ষ্ম তদবীর করলেন, ধোঁকাবাজীর সমুচিত শাস্তি বা জাওয়াব দিলেন ইত্যাদি। এ অর্থই ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা গ্রহণ করেছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার শানে ব্যবহৃত সব শব্দেরই প্রকৃত বা সরাসরি অর্থ গ্রহণযোগ্য নয়, বরং তার মাযাযী বা তা’বীলী অর্থ গ্রহণ করাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফরয-ওয়াজিব। যেমন উল্লিখিত ক্ষেত্রে গ্রহণ করা ফরয।
মহান আল্লাহ পাক তিনি “সূরা দুহা”-এর ৭নং আয়াত শরীফ-এ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন,
ووجدك ضالا فهدى
এ আয়াত শরীফ-এর সরাসরি বা প্রকৃত অর্থাৎ লুগাতী বা শাব্দিক অর্থ যদি করা হয় তবে এ আয়াত শরীফ-এর অর্থ দাঁড়ায়- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে গুমরাহ, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত পেয়েছেন অতঃপর হিদায়েত দিয়েছেন।” নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক!
অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মুতাবিক এ অর্থ যে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহের অবকাশ নেই এবং এ ব্যাপারে কারো মধ্যেই কোনো প্রকার দ্বিমত নেই। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ما ضل صاحبكم وماغوى.
অর্থ: “তোমাদের সঙ্গী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না কখনো গুমরাহ হয়েছেন না বিপথগামী হয়েছেন।” (সূরা নজম : আয়াত শরীফ ২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক-এ আরো ইরশাদ করেন,
ليس بى ضللة ولكنى رسول من رب العلمين.
অর্থ: “হে আমার ক্বওম! আমার নিকট গুমরাহী বলতে কিছুই নেই বরং আমি মহান রব্বুল আলামীন উনার প্রেরিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (সূরা আ’রাফ : আয়াত শরীফ ৬১)
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদাই হিদায়েতের উপর ছিলেন।
অথচ সমস্ত লুগাত বা আরবী অভিধানসমূহে ضال শব্দের অর্থ গুমরাহ, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত ইত্যাদি বলে উল্লেখ আছে।
যেমন বিশ্বখ্যাত আরবী লুগাত “তাজুল আরুস”-এর ৭ম খ-ের ৪১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(والضلل محركة قد الهدى) والرشاد وضال الراغب هو العدول عن الطريق المستقيم وتضاد هداية.
অর্থ: “الضلل বলা হয় হিদায়েতের বিপরীত বিষয়কে অর্থাৎ গুমরাহী, পথভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তিকে।”
আল্লামা রাগেব বলেন, “ضلل হচ্ছে- সরলপথ হতে বিচ্যুত হওয়া এবং হিদায়েতের বিপরীত বিষয়।”
উপরোক্ত লুগাতী আলোচনার পর এটাই ছাবিত হলো যে, “সূরা দূহায়” বর্ণিত ضالا শব্দের প্রকৃত বা লুগাতী অর্থ হলো- গুমরাহ, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত ইত্যাদি।
এখন প্রশ্ন হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে ضالا শব্দের প্রকৃত বা সরাসরি অর্থ গ্রহণ করা জায়িয হবে কি? মূলত, কশ্মিনকালেও তা জায়িয হবে না। বরং এরূপ অর্থ গ্রহণ করলে কুফরী হবে।
তাই অনুসরণীয় সকল মুফাসসিরীনে কিরামগণ উনারা উক্ত আয়াত শরীফ-এর সরাসরি বা প্রকৃত অর্থ না করে তা’বীলী অর্থ করেছেন। বিভিন্ন মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা বিভিন্নভাবে উক্ত আয়াত শরীফ-এর তা’বীল করেছেন। তন্মেধ্যে-
ووجدك ضالا فهدى
এ আয়াত শরীফ-এর সুন্দরতম তা’বীলী অর্থ হলো,
হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক আপনাকে কিতাবহীন পেয়েছেন, অতঃপর আপনাকে কিতাব হাদিয়া করেছেন।” এখানে ضالا শব্দটি কিতাবহীন অর্থে গ্রহণ করা হয়েছে।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ এরূপ অনেক আরবী শব্দ রয়েছে ক্ষেত্র ও ব্যক্তি বিশেষে উক্ত শব্দগুলোর সরাসরি বা প্রকৃত অর্থ গ্রহণ না করে তা’বীলী অর্থ গ্রহণ করা ফরয। যেমন, সূরা আলে ইমরানে বর্ণিত  مكر الله সূরা ত্বহা-এ বর্ণিত ادم عصى ও সূরা দুহা-এ বর্ণিত ووجدك ضالا  -এর ক্ষেত্রে সরাসরি বা প্রকৃত অর্থ গ্রহণ না করে তা’বীলী অর্থ গ্রহণ করা ফরয।
তাই উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহের তা’বীলী অর্থের মতো আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইমামগণের মতে
هذاحظ الشيطان منك
এ হাদীছ শরীফখানার সঠিক ও তা’বীলী অর্থ হলো
هذاحظ الشيطان منك اى من امتك
অর্থাৎ- “এটা শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়ার স্থান, যা আপনার জন্য নয়, কারণ আপনি শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে সম্পূর্ণরূপে মাহফুয। আপনার উম্মতের এই স্থানে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে।”
এ সঠিক অর্থের পিছনে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং তার শরাহ ও ইজমা-ক্বিয়াসের সঠিক ফায়ছালা নিম্নে পেশ করা হলো-
(১) মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ অমান্য করে চরম বেয়াদবীর কারণে ইবলিস যখন কাফির, মালঊন ও শয়তান হয়ে গেল, তখন সে মহান আল্লাহ পাক উনাকে বলেছিল, আমি আপনার বান্দাদেরকে বিভিন্নভাবে পথভ্রষ্ট করবো, কিন্তু আপনার মুখলিছ-একনিষ্ঠ, মাহবূব বান্দা উনাদেরকে গুমরাহ করতে পারবো না এবং উনাদেরকে ওয়াসওয়াসার জন্য কাছেও যেতে পারবো না।
যেমন, কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
الا عبادك منهم المخلصين
অর্থ: “আয় আল্লাহ পাক! কিন্তু যাঁরা আপনার মুখলিছ, একনিষ্ঠ বান্দা, উনাদেরকে আমি পথভ্রষ্ট করতে পারবো না।” (সূরা হিজর : আয়াত শরীফ ৪০)
এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে ‘তাফসীরুল খাযিন’-এর ৩য় জিলদ ৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
(الا عبادك منهم المخلصين) يعنى المؤمنين الذين اخلصوا لك التوحيد والاطاعة والعبادة.
অর্থ: “(কিন্তু আপনার মুখলিছ বান্দা উনাদেরকে আমি পথভ্রষ্ট করতে পারবো না) অর্থাৎ মু’মিন-মুসলমানগণ উনাদের মধ্যে যাঁরা তাওহীদ সম্পর্কে আক্বীদা শুদ্ধ করবে, সঠিকভাবে শরীয়তের ইত্তিবা করবে এবং ইবাদত-বন্দেগী ইখলাছের সাথে একমাত্র আপনার জন্য করবে আমি উনাদেরকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে পথভ্রষ্ট করতে পারবো না। অনুরূপ তাফসীরে বাগবী, মাদারিকুত তানযীল, মাযহারী, কুরতুবী, ত্ববারী, ইবনে কাছীর, জালালাইন, বাইযাবী, রূহুল মায়ানী, রূহুল বয়ান ইত্যাদি তাফসীরগুলোতে বর্ণিত রয়েছে।
(২) মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘সূরা হিজরের’ ৪২নং আয়াত শরীফ-এ শয়তানের সাথে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন,
ان عبادى ليس لك عليهم سلطان
অর্থ: (শয়তান তুই জেনে রাখ) নিশ্চয়ই আমার যাঁরা খাঁটি বান্দা, উনাদের উপর তোর কোন কর্তৃত্ব চলবে না।”
এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখায় “তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এর ২য় জিলদ ৮৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
اى الذين قدرت لهم الهداية فلا سبيل لك عليه ولا وصول لك اليهم.
অর্থাৎ “আমি যাঁদেরকে হিদায়াত দ্বারা শক্তিশালী করেছি, হে শয়তান! উনাদেরকে পথভ্রষ্ট করার এবং ওয়াসওয়াসা দেয়ার তোর কোনো রাস্তা নেই বা উনাদের কাছে পৌঁছারও তোর কোনো শক্তি নেই।” অনুরূপ তাফসীরে কবীর, তাফসীরে মুহিউদ্দীন ইবনে আরাবী, কুরতুবী, জাছছাছ, মাযহারী, খাযিন, বাগবী, মাদারিক, নাসাফী ও বাইযাবী ইত্যাদি তাফসীরের কিতাবসমূহে বর্ণনার তারতম্যসহ বর্ণিত রয়েছে।
উপরোক্ত দু’খানা আয়াত শরীফ এবং তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, যাঁরা মুখলিছ বান্দা উনাদেরকে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিতে পারবে না এবং গুমরাহ করতেও পারবে না।
তাহলে যাঁরা নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং বিশেষভাবে নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের সাইয়্যিদ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে কিভাবে শয়তানের অংশ বা ওয়াসওয়াসা থাকতে পারে? কারণ তিনি তো পরিপূর্ণভাবে ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
তাই বুঝা গেল, সিনা মুবারক চাকের উক্ত অংশের তাবীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থ করতে হবে। সরাসরি বা শাব্দিক অর্থ করলে কুফরী হবে।
(৩) প্রথমবার সিনা মুবারক চাক হয়েছিল ৩ থেকে ৫ বছর বয়স মুবারকের মধ্যে। আর সে সময় প্রত্যেক সন্তান معصوم মা’ছূম বা নিষ্পাপ থাকে। শয়তান তাদেরকে ওয়াসওয়াসা দিতে পারে না। যেমন, বুখারী শরীফ ২য় জিলদ ৭৯৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
ان القلم رفع عن ثلاث عن المجنون حتى يفيق وعن الصبى حتى يدرك وعن النائم حتى يستيقظ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই তিন প্রকার ব্যক্তির উপর থেকে শরীয়তের বিধান উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। (১) পাগল ব্যক্তি থেকে, যতক্ষণ সে জ্ঞান ফিরে না পায়, (২) শিশু থেকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে প্রাপ্ত বয়স্ক না হয় ও (৩) ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে জাগ্রত না হয়।”
তাহলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তো ওয়াসওয়াসা দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
(৪) হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে যে,
الشيطان جاثم على قلب ابن ادم اذا ذكر خنس واذا غفل وسوس.
অর্থ: “শয়তান- আদম সন্তানের ক্বলবের উপর বসে থাকে। যখন সে ব্যক্তি যিকির করে শয়তান পালিয়ে যায়, আর যখন গাফিল হয় তখন শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়।” (বুখারী শরীফ)
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির-ফিকির, মুহব্বত-মা’রিফতে মশগুল থাকেন। তাহলে কিভাবে বলা যেতে পারে যে, উনার মধ্যে শয়তানের অংশ ছিল, যা অপসারণ করা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!
(৫) هذا حظ الشيطان  -এর ব্যাখ্যায় ‘যারকানী আলাল মাওয়াহিবিল্লাদুন্নিয়া’ নামক কিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
هذا حظ الشيطان اى الموضع الذى يتوصل منه الى وسوسة الناس منك اى من بنى ادم.
অর্থ: “এটা শয়তানের অংশ অর্থাৎ ইহা ওই স্থান, শয়তান যেখানে পৌঁছে বা মিলিত হয়ে মানুষকে তথা আপনার উম্মতকে ধোঁকা দিয়ে থাকে। আপনার জন্য এই স্থানটি শয়তানের ওয়াসওয়াসার স্থান নয়। কারণ আপনি শয়তান থেকে সম্পূর্ণরূপে মাহফুয।” (‘হযরতের সিনা চাক’ ৭৭ পৃষ্ঠা মুছান্নিফ হাফিযুল হাদীছ হযরতুল আল্লামা রূহুল আমীন বশীরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি।”
(৬) খাদিমুল ইলমিশ শরীফ ফিল বিলাদিল হারাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ বিন সাইয়্যিদ আলুবী বিন সাইয়্যিদ আব্বাস মালিকী হাসানী উনার লিখিত “মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল ইনসানুল কামিল” কিতাব-এর ৩১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ,
هذا معنى الحديث ولم يكن للشيطان فيه حظ
অর্থাৎ- “বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এর মর্মার্থ হলো এই যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে শয়তানের কোনোই অংশ ছিল না।”
(৭) হযরত আল্লামা নিযামুদ্দীন হাসান বিন মুহম্মদ বিন হুসাইন নীশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত “তাফসীর ফী গারাইবিল কুরআন ওয়ার রগাইবিল ফুরক্বান” কিতাব-এর ৩০তম জিলদ ১১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
حتى لايرى الا الحق ولاينطق الا بالحق ولايفعل الا للحق، قال المحققون ليس للشيطان الى القلب سبيل ولهذا لم يقل الم نشرح قلبك.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সত্য ছাড়া কিছু দেখেন না, সত্য কথা ছাড়া কিছু বলেন না এবং মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য ছাড়া অন্য কারো জন্য কোনো ইবাদত করেন না। মুহাক্কিক ইমাম-মুজতাহিদ উনারা বলেন, উনার ক্বলব মুবারকে শয়তানের কোনো পথ বা স্থান নেই বা ছিল না। এ জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি  এভাবে বলেননি যে, “আমি কি আপনার ক্বলব মুবারক প্রশস্ত (চাক) করি নাই? বরং বলেছেন,
الم نشرح لك صدرك
অর্থ: “আমি কি আপনার বক্ষ মুবারককে প্রশস্ত (চাক) করি নাই?”
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে,
هذا حظ الشيطان منك
এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, আপনি ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অতএব, আপনার মধ্যে শয়তানের কোনো অংশ নেই। কারণ আপনি সম্পূর্ণরূপে মাহফুয ও মা’ছূম। বরং আদম সন্তানের এই স্থান থেকেই শয়তান তাদেরকে ওয়াসওয়াসা দেয়।
কাফির, মুনাফিক দাজ্জালের চেলা, পথভ্রষ্ট, ফিতনাবাজ, বেয়াদব, ওহাবী, খারিজীরা তারা বলে থাকে যে, দ্বিতীয়বার সিনা মুবারক চাকের সময় উনার ভিতর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ!
তাদের এ বক্তব্যও কুফরীমূলক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি চরম অপবাদ।
দ্বিতীয়বার সিনা মুবারক চাক করার দলীল-প্রমাণ :
(১) হযরত আহমদ আব্দুর রহমান আল বান্না রহমতুল্লাহি আলাইহি “আল ফতহুর রব্বানী লি তারতীবে মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল আশশাইবানী”-কিতাবের ২০নং জিলদ ১৯৫ পৃষ্ঠায়
باب شق صدره الشريف للمرة الثانية وهو ابن عشر سنين والشهر
নামক অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন,
- عن ابى بن كعب رضى الله عنه ان ابا هريرة رضى الله عنه كان جريئا على ان يسال رسول الله صلى الله عليه وسلم عن اشياء لايساله عنها غيره فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ما اول ما رأيت فى امر النبوة فاستوى رسول الله صلى الله عليه وسلم جالسا وقال لقد سألت ابا هريرة رضى الله عنه، انى لفى صحراء ابن عشر سنين واشهر واذا بكلام فوق رأسى واذا رجل يقول لرجل اهو هو؟ قال نعم فاستقبلانى بوجوه لم ارها لخلق قط وارواح لم اجدها من خلق قط. وثياب لم ارها على احد قط، فاقبلا الى يمشيان حتى اخذ كل واحد منهما بعضدى لا اجد لاحدهما مسئا، فقال احدهما لصاحبه اضجعه فاضجعانى بلا قصر ولا هصر، وقال احدهما لصاحبه افلق صدره فهوى احدهما الى صدرى ففلقها فيما ارى بلا دم ولا وجع، فقال له اخرج الغل والحسد فاخرج شيئا كهيئة العلقة ثم نبذها فطرحها، فقال له ادخل الرافة والرحمة، فاذا مثل الذى اخرج يشبه الفضة ثم هز ابهام رجلى اليمنى فقال اغد واسلم فرجعت بها اغدو رقة على الصغير ورحمة للكبير.
অর্থ: “হযরত উবাই বিন কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান খিদমতে সদা সর্বদা এমন সব বিষয়ে সুওয়াল করতেন, যে সমস্ত বিষয়ে অন্য কেউ জিজ্ঞাসা করেননি। অতঃপর তিনি আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত-এর প্রথম নিদর্শন কখন অবলোকন করলেন? সুওয়াল অবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসে ছিলেন; অতঃপর বললেন, হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞাসা করায় আমি বলছি, আমি দশ বছর বয়স মুবারকে ময়দানে গিয়েছিলাম, হঠাৎ আমার মাথা মুবারক-এর উপর আওয়াজ শুনতে পেলাম যে, একজন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বললেন, ইনি কি তিনিই? অপর ব্যক্তি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ ইনি তিনিই। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, উনারা দু’জন আমার সামনে আসলে আমি দেখলাম, উনাদের মতো সুন্দর-উজ্জল চেহারা কোনো দিন দেখিনি, উনাদের মতো উত্তম রূহ-আত্মাও কোনো দিন দেখিনি। (উনারা হচ্ছেন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ও হযরত মিকাঈল আলাইহিস সালাম)। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, উনারা দু’জন আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে এমনভাবে আদবের সাথে জড়িয়ে ধরলেন, তা আমি অনুভবই করতে পারলাম না। অতঃপর একে অপরকে বললেন, উনাকে শোয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, তাই আমাকে আদবের সাথে শোয়ানোর ব্যবস্থা করা হলো অর্থাৎ শোয়ানো হলো, এতে আমি কোনো কষ্ট ও ব্যথা অনুভব করলাম না। এরপর দু’জনের একজন উনার সঙ্গীকে বললেন, উনার বক্ষ মুবারক বিদীর্ণ করুন। তাই উনাদের দু’জনের একজন আমার বক্ষ মুবারক বিদীর্ণ করলেন, তাতে আমি কোনো রক্ত দেখলাম না এবং ব্যথ্যাও অনুভব করলাম না। তৎপর একজন বললেন,
اخرج الغل و الحسد اى اخرج مكان الغل والحسد امته
অর্থ : হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নয় উনি তা থেকে পবিত্র থেকে পবিত্রতম। কেননা তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুনান্বিত। তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের হিংসা ও বিদ্বেষের স্থান যার মধ্যে ইবলিস শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়ার চেষ্টা করে থাকে।
অতঃপর তিনি (ফেরেশতা) আলাক্বার মতো এক খ- পবিত্র গোশত মুবারক বের করে আলাদা করে চিহ্নিত করলেন। তারপর একজন বললেন, উনার মধ্যে দয়া ও রহমত প্রবেশ করিয়ে দিন। অতঃপর তিনি রূপার মতো কিছু বের করে তার উপর ছিটিয়ে দিলেন। (অতঃপর জোড়া লাগিয়ে দিয়ে) আমার ডান পা মুবারক-এর বৃদ্ধাঙ্গুলী ধরে (ক্বদমবুছী করে) উনারা বললেন, আপনি উঠুন এবং প্রশান্তিতে থাকুন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, এরপর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছোটদের প্রতি স্নেহ এবং বড়দের প্রতি রহমত স্বরূপ প্রকাশিত হলাম।”
(২) উক্ত হাদীছ শরীফখানা আবূ নাঈম ‘দালাইলুন নুবুওওয়াহ’-এর ৭৩ পৃষ্ঠায় একই রাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া উক্ত হাদীছ শরীফখানা হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত ‘দালাইলুন নুবুওওয়াহ’-এর ৭১, ৭২ পৃষ্ঠায় আছে।
(৩) ‘ত্ববাক্বাতে ইবনে সা’দ’ গ্রন্থে হাদীছ শরীফ খানা হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে।
মুলত, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক করে ক্বলব মুবারক বের করার সময় তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বলেছিলেন,
اخرج الغل والحسد اى اخرج مكان الغل والحسد امته.
অর্থ: “হিংসা-বিদ্বেষের স্থানটি বের করুন অর্থাৎ বণী আদমের জন্য এই স্থানটি হিংসা-বিদ্বেষের জায়গা। যা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যে নয়। কারণ তিনি এ সকল দোষত্রুটি থেকে সস্পূর্ণরূপে পবিত্র। কেননা তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণান্বিত।”
বদ মাযহাব ও বাতিল ফিরক্বার লোকেরা হাদীছ শরীফখানার সরাসরি শাব্দিক অর্থ করার কারণে কুফরী করে বসেছে। আসলে এখানে তাবীলী তথা ব্যাখ্যামূলক অর্থ গ্রহণ করতে হবে। তাবীলী অর্থ হচ্ছে।
هذا حظ الشيطان منك
এর তা’বীলী অর্থ যেমনিভাবে
هذا حظ الشيطان من امتك
 করা হয়েছে, তেমনিভাবে
 اخرج الغل و الحسد
এর অর্থ
اخرج مكان الغل و الحسد من امشه
এভাবে তা’বীল করে করতে হবে। তা নাহলে কাট্টা কুফরী হবে। এ বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহসহ আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি। কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, গুমরাহ, ফিতনাবাজ, বেয়াদব, ওহাবী, খারিজী ফিরক্বার লোকেরা বলে থাকে যে, নুবুওওয়াতের পরও উনার এই শয়তানী ভাব দমিত না হওয়ায় আবার মি’রাজ শরীফ-এর রাতে সিনা মুবারক চাক করে পবিত্র করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ!
বাতিল ফিরক্বা, ওহাবী ও খারিজীদের এ বক্তব্য হাদীছ শরীফ ও ইসলামী শরীয়ার খিলাফ হওয়ায় কুফরীমূলক হয়েছে।
মূলত, সঠিক বক্তব্য হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চারবার সিনা মুবারক চাকের উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহ পাক তিনি যে উনাকে অসীম-অফুরন্ত নিয়ামত হাদিয়া করেছেন তার প্রকাশ ঘটানো বা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা। পবিত্র করা, মা’ছূম করা, শয়তানী ভাব দূর করা বা হিংসা-বিদ্বেষ দূর করা কোনোটাই উদ্দেশ্য নয়। কারণ তিনি তো পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণান্বিত হয়েই সৃষ্টি বা পয়দা হয়েছেন।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেছেন,
الم نشرح لك صدرك ورفنا لك ﺫكرك
অর্থ: “(১) হে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কি আপনার সিনা মুবারক চাক করিনি? অর্থাৎ করেছি। (সূরা আলাম নাশরাহ : আয়াত শরীফ ১)
ورفنا لك ﺫكرك
অর্থ: (৪) আমি আপনার মর্যাদাকে (আলোচনাকে) বুলন্দ করেছি।” (সূরা আলাম নাশরাহ : আয়াত শরীফ ৪)
বাতিলপন্থী গুমরাহ লোকেরা যে বলে, ‘নুবুওওয়াতের পর উনার মধ্যে শয়তানীভাব দূর না হওয়ায় মি’রাজের সময় আবার সিনা মুবারক চাক করে পবিত্র করা হয়েছিল।’ নাঊযুবিল্লাহ! তাদের একথাটি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণ খিলাফ বা কুফরীমূলক।
কেননা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কোথাও উল্লেখ করা হয়নি যে, মি’রাজ শরীফ-এর সময় সিনা মুবারক চাককালে শয়তানী অংশ ফেলে দেয়া হয়েছে বা পবিত্র করা হয়েছে। বরং অসংখ্য বর্ণনায় এটাই বর্ণিত আছে যে, ঈমান, হিকমত, রহমত ইত্যাদি প্রবেশ করানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যদিও পূর্ব থেকেই মহান আল্লাহ পাক  তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত নিয়ামতে পরিপূর্ণ করেই পয়দা করেছেন। তার পরেও মহান আল্লাহ পাক দুনিয়াবী জিন্দেগীতে ক্ষেত্র বিশেষে অনুষ্ঠান করে করে সমস্ত কায়িনাতকে উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা ও মর্তবার কথা ঘোষণা করেছেন।
যেমন, হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বুখারী শরীফ-এর ১ম জিলদ ৫০ ও ৪৭১ পৃষ্ঠায়, মুসলিম শরীফ-এর ১ম জিলদ ৯২ পৃষ্ঠায় এবং নাসায়ী শরীফ-এর ১ম জিলদ ৭৮ ও ৭৯ পৃষ্ঠায় আর হযরত মালিক বিন ছা’ছা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বুখারী শরীফ-এর ১ম জিলদ ৪৫৫ ও ৫৪৮ পৃষ্ঠায়, মুসলিম শরীফ-এর ১ম জিলদ ৯৩ পৃষ্ঠায়, নাসায়ী শরীফ-এর ১ম জিলদ ৭৬ পৃষ্ঠায়, ছহীহ ইবনে হাব্বান ১ম জিলদ ১২৮ পৃষ্ঠায় এবং মিশকাত শরীফ-এর ৫২৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, মি’রাজ শরীফ-এর সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক করে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ যা করেছিলেন তার বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে,
فرج صدرى ثم غسله بماء زمزم ثم جاء بطست من ذهب ممتلئ حكمة وايمانا فافرغه فى صدرى ثم اطبقه ثم اخذ بيدى فعرج بى الى السماء.
অর্থ: “অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমার সিনা মুবারক চাক করলেন। তৎপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি সোনার তশতরি (পাত্র) আনলেন এবং এটা আমার সিনা মুবারকের স্পর্শ মুবারক-এ আনলেন। এনে ঈমান ও হিকমতকে সম্মানিত করলেন। অতঃপর চাক মুবারক বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর আমার হাত মুবারক ধরে আমাকে সঙ্গে নিয়ে আসমানের দিকে মি’রাজ শরীফ-এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন।”
এছাড়াও ‘তাফসীরে ইবনে কাছীরের’ ৫ম জিলদ ১৬ পৃষ্ঠায় সূরা আলাম নাশরাহ-এর তাফসীরে অনুরূপ হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে,
كان حضرت ابى بن كعب رضى الله تعالى عنه يحدث ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فرج سقف بيتى وانا بمكة فنزل جبرئيل فرج صدرى ثم غسله من ماء زمزم ثم جاء بطست من ذهب ممتلئ حكمة وايمانا فافرغها فى صدرى ثم اطبقة.
অর্থ: “হযরত উবাই বিন কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, আমি মক্কা শরীফ-এ ছিলাম, এমন সময় আমার ঘরের ছাদ ফাঁক হয়ে গেল এবং হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি নাযিল হলেন। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাাইহি ওয়া সাল্লাম আমার সিনা মুবারক চাক করলেন। তৎপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি সোনার তশতরি (পাত্র) আনলেন এবং এটা আমার সিনা মুবারকের স্পর্শ মুবারক-এ আনলেন। এনে ঈমান ও হিকমতকে সম্মানিত করলেন। অতঃপর চাক মুবারক বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর আমার হাত মুবারক ধরে আমাকে সঙ্গে নিয়ে আসমানের দিকে মি’রাজ শরীফ-এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন।”
অতএব, হাদীছ শরীফের বর্ণনা এবং তাফসীর শরীফ-এর বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মি’রাজ শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাকের উদ্দেশ্য পবিত্র করা ছিল না। বরং মর্যাদা-মর্তবার প্রকাশ ঘটানো; যা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে করা হয়।
কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, গুমরাহ, ভ-, ফিতনাবাজ, বেয়াদব, ওহাবী, খারিজী ও বদ মাযহাবের লোকেরা আরো বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ থেকে আদৌ মা’ছুম ছিলেন না। সিনা মুবারক চাক করে মা’ছুম বা নিষ্পাপ করা হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)
ওহাবী, খারিজী তথা বদ মাযহাব ও বাতিলপন্থীদের উপরোক্ত বক্তব্যও সম্পুর্ণ কুফরীমূলক।
মূল ফতওয়া হলো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা সৃষ্টিগতভাবে মা’ছুম বা নিষ্পাপ। এছাড়াও হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা সর্বাবস্থায়ই মা’ছুম বা নিষ্পাপ। নুবুওওয়াত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাপ্তির পূর্বে হোক বা পরে হোক না কেন, সর্বাবস্থায়ই উনারা নিষ্পাপ তথা মা’ছুম। এর উপর বিশ্বাস করা ফরযে আইন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের সাইয়্যিদ বা নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের রসূল। তাহলে তিনি কত উত্তমভাবে মা’ছুম, তা চিন্তা-ফিকিরের বাইরে।
যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ সূরা বাক্বারা-এর ১২৪নং আয়াত শরীফ-এ উল্লেখ করেছেন
قال انى جاعلك للناس امام قال ومن ذريتى قال لاينال عهدى الظلمين.
অর্থ: “রব্বুল আলামীন মহান আল্লাহ পাক (হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে) বললেন, আমি আপনাকে মানবজাতির ইমাম করব। তিনি আরজ করলেন, আমার বংশধর থেকেও! তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আমার অঙ্গীকার যালিমদের পর্যন্ত পৌঁছবে না।”
এই আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে “তাফসীরে আহমদিয়াহ’ কিতাবে উল্লেখ আছে,
انهم معصومون عن الكفر قبل الوحى وبعده بالاجماع.
অর্থ: সমস্ত মুফাসসিরীন তথা ইমাম মুজতাহিদগণ উনাদের ইজমা মতে, নিশ্চয়ই সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত প্রাপ্তির আগে ও পরে কুফরী (নাফরমানী) থেকে সম্পূর্ণরূপে মা’ছুম তথা পূতঃপবিত্র ছিলেন।
তাফসীরে আহমদিয়া’-এর মধ্যে উক্ত আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে আরো উল্লেখ করা হয়েছে,
لاخلاف لاحد فى ان نبينا عليه السلام لم يرتكب صغيرة ولا كبير طرفة عين قبل الوحى وبعده كما ذكره  حضرت ابو حنيفة رحمة الله عليه فى الفقه الاكبر.

অর্থ: “এ ব্যাপারে কারো ইখতিলাফ নেই যে, নিশ্চয়ই আমাদের যিনি নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নুবুওওয়াত শরীফ-এর আগে বা পরে এক মুহূর্তের জন্যও ছগীরা বা কবীরা তথা কোনো প্রকার গুনাহে লিপ্ত ছিলেন না। যেমনটি হযরত ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আল ফিক্বহুল আকবর’ কিতাবের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। ”

0 Comments: