হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (ঙ)

হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (ঙ)


দুধমাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার ঘর মুবারক-এ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবস্থান ও কতিপয় মু’জিযা শরীফ

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
اخرج ابن اسحاق، وابن راهويه، وابو يعلى، والطبرانى، والبيهقى، وابو نعيم، وابن عساكر، من طريق حضرت عبد الله بن جعفر بن ابى طالب رضى الله تعالى عنه قال: حدثت عن حضرت حليمة بنت الحارث عليها السلام ام رسول الله صلى الله عليه وسلم التى ارضعته قالت: قدمت مكة فى نسوة من بنى سعد بن بكر نلتمس الرضعاء فى سنة شهباء، فقدمت على اتان لى ومعى صبى لنا وشارف لنا والله ما تبض بقطرة، وما ننام ليلنا ذلك اجمع مع صبينا ذاك لا يجد فى ثديى ما يغنيه، ولا فى شارفنا ما يغذيه، فقدمنا مكة، فوالله ما علمت منا امرأة الا وقد عرض عليها رسول الله صلى الله عليه وسلم فتأباه اذا قيل انه يتيم، فوالله ما بقى من صواحبى امرأة الا اخذت رضيعا غيرى،

অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে রাহওয়াইহি রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ ইয়ালা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর ইবনে আবূ তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি হযরত হালীমা বিনতে হারিছ আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, কোন এক দুর্ভিক্ষের বছর সা’দ ইবনে বকর উনাদের কয়েকজন মহিলার সঙ্গে আমি মক্কা শরীফ-এ পৌঁছলাম। (হযরত ইমাম ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সনদে উল্লেখ করেছেন যে, দুগ্ধ পোষ্য শিশু অন্বেষণকারী মহিলাদের সংখ্যা ছিলো মোট দশজন) আমি আমার গাধীর উপর সাওয়ার হয়ে আসলাম। আমার সাথে ছিলেন আমার স্বামী ও আমার একজন শিশু সন্তান। আরো ছিলো একটি বৃদ্ধা উটনী সেটি এক ফোঁটা দুধও দিতো না। আমার শিশুটির কারণে আমরা সেই রাত্রিতে একবিন্দুও ঘুমাতে পারিনি। কেননা আমার বক্ষ মুবারক-এ কোন দুধ ছিলো না। উষ্ট্রীও দুধ দিচ্ছিল না।
তবে আমরা এই সঙ্কট কাটিয়ে স্বচ্ছলতা লাভের দৃঢ় আশাবাদী ছিলাম। যা হোক, অতি দুর্বল গাধীটির পিঠে সাওয়ার হয়ে আমরা মক্কা শরীফ-এ পৌঁছলাম। দুর্বলতার কারণে গাধীটি আমাদের বহন করতে পারছিলো না। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম করে বলছি, আমাদের সঙ্গী সব ক’জন মহিলাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবতে এলেন উনার খিদমত করার জন্য কিন্তু মহান আল্লাহ পাক যেহেতু উনার দুধমাতা পূর্ব থেকে আমাকেই মনোনীত করেছেন এজন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোন মহিলাই ইয়াতীম মনে করে গ্রহণ করলো না। হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি আরো বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমার সঙ্গে যে সকল মহিলারা এসেছেন সকলেই দুধপান করানোর জন্য কোন না কোন শিশু নিয়ে নিলেন।
فلما لم اجد غيره قلت لزوجى، والله انى لاكره ان ارجع من بين صواحبى ليس معى رضيع لانطلقن الى ذلك اليتيم فلاخذنه، فذهبت فاخذته فما هو الا ان اخذته فجئت به رحلى فأقبل عليه ثدياى بما شاء من لبن، فشرب حتى روى وشرب اخوه حتى روى، وقام صاحبى الى شارفنا تلك فاذا انها الحافل، فحلب ما شرب وشربت حتى روينا وبتنا بخير ليلة، فقال صاحبى يا حضرت حليمة عليها السلام والله انى لاراك قد اخذت نسمة مباركة الم ترى ما بتنا به الليلة من الخير والبركة حين اخذناه، فلم يزل الله يزيدنا خيرا، ثم خرجنا راجعين الى بلادنا،

আমাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতের জন্য যেহেতু মনোনীত করেছেন সেহেতু আমি ছাড়া উনাকে নেয়ার কেউ ছিলো না। মহান আল্লাহ পাক উনার কি কুদরত! আমি উনাকে ছাড়া কোন শিশুও পেলাম না। এমতাবস্থায় আমি আমার স্বামী উনাকে বললাম. মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! কোন শিশু ছাড়াই খালি হাতে ফিরে যাওয়া আমি পছন্দ করি না। আমি অবশ্যই এই ইয়াতীম শিশু যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সঙ্গে নিয়ে যাবো। আমার স্বামী বললেন, ঠিক আছে উনাকেই নিয়ে নিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এর মধ্যে বেমেছাল ভালাই রেখেছেন। আমি স্বামী উনার সম্মতি পেয়ে শিশু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুকে তুলে নিলাম। উনাকে বুকে তুলে নিয়ে আমি বাহনের নিকটে গেলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, আমার বক্ষ মুবারক পর্যাপ্ত দুধে পরিপূর্ণ। অতঃপর শিশু হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ ভাই তিনিও খুব তৃপ্ত হয়ে আমার দুধ মুবারক পান করলেন। এরপর আমার স্বামী তিনি উটনির নিকট গেলেন। তিনি দেখতে পেলেন যে, উটনির স্তনও দুধে ভরে গেছে। তিনি উটনির দুধ দোহন করলেন। নিজে পান করলেন আমিও তৃপ্তিসহকারে পান করলাম। আমরা সকলেই তৃপ্ত হয়ে সুনিদ্রার মধ্যে রাত্রি অতিবাহিত করলাম। আমার স্বামী তিনি সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাকে বললেন, হে হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনি খুবই বরকতময়, সবচেয়ে সম্মানিত শিশু উনাকে গ্রহণ করেছেন। আপনি দেখেছেন তো আজ রাত্রিতে আমরা কত বেমেছাল বরকত, রহমত লাভ করলাম। অতঃপর আমরা সকাল সকাল স্বীয় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
فوالله لقطعت اتانى بالركب حتى ما يتعلق بها حمار حتى ان صواحباتى يقلن: ويلك اهذى اتانك الذى خرجت عليها معنا؟ فأقول نعم، والله انها لهى فيقلن والله ان لها لشأنا حتى قدمنا ارض بنى سعد، وما اعلم ارضا من ارض الله اجدب منها، فان كانت غنمى لتسرح ثم تروح شباعا لبنا فنحن وماشيتنا وما حولنا احد تبض لها شاة بقطرة لبن، وان اغنامهم لتروح جياعا حتى انهم ليقولون لرعائهم: ويحكم انظروا حيث تسرح غنم حضرت حليمة عليها السلام فاسرحوا معها، فيسرحون مع غنمى حيث تسرح فيروحون اغنامهم جياعا ما فيها قطرة لبن وتروح غنمى شباعا لبنا فلم يزل الله يرينا البركة ونتعرفها، حتى بلغ سنتين، فكان يشب شبابا لا يشبه الغلمان، فوالله ما بلغ السنتين حتى كان غلاما جفرا فقدمنا به الى امه ونحن اضن شىء به مما رأينا فيه من البركة.

মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমার গাধীটা আমাদের নিয়ে এতো দ্রুত পথ চললো যে, কাফিলার কোন গাধাই এর মোকাবিলা করতে পারছিলো না। এটা দেখে আমার সঙ্গিনী মহিলারা বললো, হে হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম! এটা কি সেই গাধী নয়, যার মধ্যে আরোহন করে আমাদের সাথে এসেছিলেন? আমি বললাম, হ্যাঁ! সেই গাধীই যাতে চড়ে আমি তোমাদের সঙ্গে এসেছিলাম। তারা বললো, নিশ্চয়ই এর বিশেষ কোন রহস্য (হিকমত) রয়েছে। আপনার এই বাহনটি দেখে বিশ্বয়কর মনে হচ্ছে। এভাবে আমরা বানু সা’দ-এর জনপদে ফিরে আসলাম। এই বনূ সা’দ-এর জনপদের চেয়ে অধিক শুষ্ক বা অনুর্বর কোন ভূমি ছিলো না। আমার ছাগলের পালগুলো সারাদিন সেখান থেকে সন্ধ্যায় পেট ভরে ও দুধে পরিপূর্ণ হয়ে ফিরে আসতে শুরু করলো। আমরা ইচ্ছামত দুধ দোহন করতে লাগলাম। অথচ অন্যদের ছাগলগুলো এক ফোঁটাও দুধ দিতো না এবং সন্ধ্যা বেলায় ক্ষুধার্ত অবস্থায় ফিরে আসতো। সকলেই আপন আপন রাখালকে বলতো, তোমরা সেই জায়গায় ছাগল চড়াও, যেখানে আবূ যুয়াইব-এর কন্যা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার বকরীর পাল চরে। আজ থেকে আমাদের বকরীগুলোও তোমরা সেখানেই চরাবে। এই কথা সকলেই তাদের রাখালদের বললো।
ফলে দেখা গেলো তারা তাদের ছাগলগুলো আমার ছাগলের পালের সঙ্গে চরাতে শুরু করলো। কিন্তু তার পরও তাদের ছাগলগুলো সেই দুধহীন ক্ষুধার্ত অবস্থায় ফিরতো আর আমার বকরী ফিরতো তৃপ্ত পেটে স্তন ভর্তি দুধ নিয়ে। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলায় এমনিভাবে আমাদেরকে বেশুমার বরকত-রহমত দিতে থাকেন। এভাবে দু’দুটি বছর কেটে গেলো।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এতো দ্রুতগতিতে বেড়ে উঠছিলেন, যে সাধারণতঃ কোন শিশুরা এরূপ বেড়ে উঠে না। যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্যান্য শিশু তথা মানুষের মতো ছিলেন না। দু’বছর বয়স মুবারকে তিনি অনেক বড় হয়ে গেলেন এবং খাওয়া-দাওয়া শুরু করলেন। আমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার সম্মানিতা মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমীনা আলাইহাস সালাম উনার কাছে নিয়ে গেলাম। অথচ উনার প্রতি মুহব্বত ও ছোহবত থেকে বঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কায় উনাকে ফিরিয়ে দিতে আমাদের মন চাচ্ছিলো না।
فلما رأته امه قلنا لها: يا ظئر دعينا نرجع بابننا هذه السنة الاخرى، فانا نخشى عليه وباء مكة فوالله ما زلنا بها حتى قالت: نعم فسرحته معنا، فاقمنا به شهرين او ثلاثة، فبينما هو خلف بيوتنا مع اخ له من الرضاعة فى بهم لنا جائنا اخو يشتد، فقال: ذاك اخى القريشى قد جاءه رجلان عليهما ثياب بياض، فاضجعاه فشقا بطنه فخرت انا وابوه نشتد نحوه، فنجده قائما منتقعا لونه، فاعتنقه ابوه وقال اى بنى ما شأنك؟ قال: جاءنى رجلان عليهما ثياب بياض فأضجعانى فشقا بطنى ثم استخرجا منه شيئا فطرحاه، ثم رداه كما كان، فرجعنا به معنا فقال ابوه: يا حضرت حليمة عليها السلام لقد خشيت ان يكون ابنى قد اصيب، فانطلقى بنا نرده الى اهله قبل ان يظهر به ما نتخوف. قالت حضرت حليمة عليها السلام: فاحتملناه حتى قدمنا به الى امه:
তাই আমরা উনার সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট আরজি করলাম, আপনি এই সম্মানিত শিশু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আরও একটি বছরের জন্য আমাদের কাছে রেখে দিন। আমরা মক্কা শরীফ-এ অনেকের অসুখ-বিসুখ দেখতে পাচ্ছি। কাজেই আমরা উনার অসুস্থতার আশঙ্কা করছি। আমি বার বার উনার নিকট আরজি পেশ করার পর তিনি সম্মত হয়ে বললেন, ঠিক আছে নিয়ে যান।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাথে নিয়ে আমরা বাড়িতে চলে আসলাম। দুই কি তিন মাস কেটে গেলো। একদিন তিনি উনার দুধ ভাই উনার সঙ্গে আমাদের বাড়ির পার্শ্বে বকরী চড়াতে গেলেন। কিছুক্ষণ পর উনার দুধভাই ফিরে এসে বললেন, আমার কুরাইশী ভাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে দু’জন সাদা পোশাক পরিহিত ব্যক্তি এসে উনাকে যমীনে শুয়ায়ে দিলেন এবং পেট মুবারক ফাড়লেন। অর্থাৎ উনার সিনা মুবারক চাক করলেন। খবর পেয়ে খুব দ্রুত দৌড়ে আমি ও উনার দুধ পিতা আমরা সেখানে পৌঁছলাম। আমরা দেখতে পেলাম তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কিন্তু উনার মুখমন্ডল মুবারক-এর নূর মুবারক পাল্টে গেছে। উনার দুধ পিতা হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে বক্ষ মুবারক-এ জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করলেন, বাবা! আপনার কি হয়েছে? তিনি জাওয়াব দিলেন, সাদা পোশাক পরিহিত দু’জন ব্যক্তি এসে আমাকে শুইয়ে দিলেন এবং আমার পেট ও বুক মুবারক বিদীর্ণ করলেন। এরপর আমার পেট মুবারক আগে যেমন ছিলো তেমনি করে দেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমরা উনাকে ঘরে নিয়ে আসলাম। উনার সম্মানিত দুধ পিতা হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ভয় পেলেন, যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাদের আমানতে রাখা হয়েছে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতের ত্রুটি হলো কি না এই ভেবে হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, আমার সম্মানিত সন্তান উনাকে কোন শয়তান ক্ষতি করতে চাচ্ছে হয়তো। কাজেই উনার কোনকিছু ক্ষতি হওয়ার আগেই উনার সম্মানিত পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দিয়ে আসি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে আমরা উনার সম্মানিতা মাতা হযরত আমীনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট ফিরিয়ে দিয়ে আসি।
فقالت: ما رد كما به، فقد كنتما عليه حريصين؟ قلنا: نخشى الاتلاف والاحداث، فقالت: ماذا بكما فاصدقانى شأنكما، فلم تدعنا حتى اخبرناها خبره، قالتاخشيتما عليه الشيطان كلا والله ما للشيطان عليه السبيل،  وانه لكائن لابنى هذا شأن الا اخبر كما خبره. قلنا: بلى. قالت: حملت به فما حملت حملا قط اخف منه فاريت فى النوم حين حملت به انه خرج منى نور اضائت له قصور الشام، ثم وقع حين ولدته وقعا ما يقعه المولود معتمدا على يديه رافعا رأسه الى السماء، فدعاه عنكما.

উনাকে নিয়ে আমরা উনার মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট গেলাম। আমাদের দেখে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা মাতা তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কি হয়েছে হে হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম? আমার পূত-পবিত্র সন্তান উনার প্রতি আপনাদের দু’জনের এতো মুহব্বত থাকার পরও কেন উনাকে ফিরিয়ে আনলেন? হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম এবং উনার স্বামী উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া ইহসানে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনের কোশেশ করেছি। এখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপারে আমরা অনেক চিন্তা পেরেশানী ও আশঙ্কায় রয়েছি। উনার কোন রকম ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায় কিনা? তাই আপনার প্রিয় সন্তান উনাকে আপনার নিকট ফিরিয়ে দিতে এসেছি। তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনারা কিসের আশঙ্কা করছেন? কি ঘটেছে তা আমাকে বলুন।
আমরা উনাকে সমস্ত ঘটনা শুনালাম। সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি সব কিছু শুনে বললেন, আপনারা কি উনার ব্যাপারে দুষ্ট জিন আসরের ভয় করছেন? কখনো নয়, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমার এই সন্তান উনার উপর শয়তানের কোন হাত নেই। আমার সন্তান উনার শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা বেমেছাল ও সুউচ্চ। আমি আপনাদেরকে উনার একটি ঘটনা শুনাবো কি? আমরা বললাম, অবশ্যই শুনবো। তিনি বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমার রেহেম শরীফ-এ ধারণ করে আমি সবসময় নিজকে অত্যন্ত হালকা আরামদায়ক পেয়েছি। সুবহানাল্লাহ!
ওই সময় আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম এক খ- নূর মুবারক আমার ভিতর থেকে উদয় হলো। ফলে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ আলোকিত হয়ে গেলো। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ নিলেন, তবে সাধারণভাবে সন্তানরা যেভাবে জন্মগ্রহণ করে, সেভাবে নয়। সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে। উনার পবিত্র হাত মুবারক মাটিতে রেখে তিনি আসমানের দিকে মাথা মুবারক উত্তলন করে যমীনে তাশরীফ নেন। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং আপনারা উনাকে নিয়ে কোন চিন্তিত হবেন না।
(খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ৯১, ৯২, ৯৩ পৃষ্ঠা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১ম জিলদ ২৭৩, ২৭৪, ২৭৫ পৃষ্ঠা)
          ‘মাওয়াহিবুল লাদুননিয়া’ ও ‘মাদারিজুন নুবুওওয়াত’-এ উল্লেখ রয়েছে, “হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে রাহওয়াইহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ ইয়ালা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবু নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা সকলেই বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেছেন, আমি বনী সা’দ ইবনে বকর গোত্রের অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে দুগ্ধপোষ্য শিশু গ্রহণের জন্য মক্কা শরীফ-এ গেলাম। তখন আরব দেশে দুর্ভিক্ষ চলছিল। বহুদিন ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল না। আমার একটি দুর্বল গাধা ছিল, যা ছিল প্রায় শক্তিহীন। আমার একটি উটনী ছিল যার দুধের বোঁটা ছিল কম। আমার সঙ্গে ছিলেন আমার শিশু সন্তান ও আমার স্বামী। আমাদের অসচ্ছলতা এ রকম ছিল যে, রাত কোনক্রমে কাটলেও দিন কাটতে চাইতো না। আমাদের গোত্রের অন্যান্য মহিলারা আগেভাগে তাড়াহুড়া করে মক্কা শরীফ-এ পৌঁছে দুগ্ধপোষ্য সকল শিশুদের নিয়ে নেয়। শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশিষ্ট ছিলেন। কারণ হচ্ছে- আমি হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার জন্য নির্দিষ্ট আর পাশাপাশি তিনি হচ্ছেন ইয়াতীম। আমি আমার স্বামীকে বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! কোন শিশুকে না নিয়ে মক্কা শরীফ থেকে ফিরে যাওয়া আমার নিকট ভালো মনে হচ্ছে না। আমি অবশ্যই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমার সঙ্গে নিবো এবং আমি উনাকে দুধ মুবারক পান করাবো তথা উনার আমি খিদমত করবো। আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার ঘর মুবারক-এ প্রবেশ করে দেখতে পেলাম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুধের চেয়েও শুভ্র খুবই সুন্দর রেশমী পোশাক মুবারক পেঁচানো অবস্থায় শুয়ে আছেন। উনার পবিত্র নূরানীময় দেহ মুবারক থেকে মেশক আম্বরের চেয়েও বেশি সুঘ্রাণ মুবারক বের হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। উনার শরীর মুবারক-এর নিচে বিছানা মুবারকে রয়েছে সবুজ রঙের খুবই সুন্দর রেশম কাপড়ে। তিনি পবিত্র নাক মুবারক ডেকে শব্দ করে ঘুমাচ্ছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র অভ্যাস মুবারক ছিল এমন তিনি যখন নিদ্রা মুবারক-এ যেতেন তখন উনার পবিত্রতম নাক মুবারক ধ্বনিত হতো। যা উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক-এর শেষ পর্যন্ত হয়েছে। সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন আমার ইচ্ছা হলো যে, উনাকে ঘুম থেকে উঠাই। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সৌন্দর্য মুবারক বেমেছাল। উনার সৌন্দর্য মুবারক দেখে আমি উনার প্রতি বিমুগ্ধ ও বিমোহিত হলাম। ধীরে ধীরে আমি উনার নিকটে গেলাম এবং উনাকে আমার কোল মুবারক-এ উঠায়ে নিলাম। আমি যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বক্ষ মুবারক-এ হাত রাখলাম তখন তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসলেন। আমি লক্ষ্য করলাম- উনার চক্ষু মুবারক থেকে একটি নূর মুবারক বের হয়ে আসমানের দিকে চলে গেলো। আমি উনার পবিত্র চক্ষু মুবারক-এর মধ্যবর্তী স্থানে চুমু খেলাম। আমার ডান স্তন মুবারক উনার মুখ মুবারক-এ লাগিয়ে দিলাম। তিনি ইতমিনানের সঙ্গে আমার দুধ মুবারক পান করলেন। অতঃপর বাম স্তন মুবারক উনার নিকট পেশ করলাম। কিন্তু তিনি তা মুখে নিলেন না। সুবহানাল্লাহ!
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ঠার ওহী করেছেন উনার আনুষ্ঠানিক শিশু বয়স মুবারক-এ। তাই তিনি উনার দুধমাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার দুধ মুবারক-এর একটি স্তনই পান করতেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন দুধভাই ছিলেন যাঁর জন্য অবশিষ্ট দুধ মুবারক তিনি রেখে দিতেন। কোন দিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত দুধ মুবারক-এ মুখ মুবারক দেননি। সুবহানাল্লাহ!
আমি উনাকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে নিয়ে আমি আমার স্বামীর নিকট ফিরে এলাম। আমার স্বামী উনাকে দেখে বিমুগ্ধ হলেন এবং খুবই খুশি হলেন উনার নূরানী চেহারা মুবারক দেখে এবং সমস্ত দুঃখ-কষ্ট ভুলে গেলেন। শুকরিয়াস্বরূপ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শাহী দরবারে সিজদা করলেন। এরপর আমার স্বামী তিনি উটনীটির দুধ দোহনের জন্য এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলেন উটনীর স্তন দুধে ভরপুর হয়ে রয়েছে। অথচ ইতঃপূর্বে সেটির স্তন ছিল দুধশূন্য। তিনি উটনীর দুধ দোহন করে নিজে পান করলেন এবং আমাকেও পান করালেন, আমরা সকলেই পরিতৃপ্ত হলাম। সেই রাত্রি মুবারক-এ আমরা খুবই ইতমিনানে রাত্রি জাগরণ করলাম। অনেক দিন ধরে আমরা এতো ইতমিনানে ঘুমাতে পারিনি। প্রায় সময়ই পেরেশানীর মধ্যে থাকতে হতো আমাদেরকে। আমার স্বামী হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে বললেন, হে আমার ছহিবা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম! আপনাকে অসংখ্য, অগণিত শুকরিয়া জানাই। কত না রহমতপূর্ণ ও বরকতপূর্ণময় সন্তান পেয়েছেন আপনি; যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নিশ্চয়ই আপনি দেখেছেন কত খায়ের বরকত নাযিল হচ্ছে, আমাদের উপর। আর উনার উসীলায় আজ আমরা সম্মানিত, ফযীলতপ্রাপ্ত, আমাদের এতো শান-মান। ইনশাআল্লাহ! আমরা এরূপ খায়ের, বরকত, সম্মান-ফযীলত সব সময়ই পেতে থাকবো। সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, এরপর আমরা কয়েক রাত ‘মক্কা শরীফ-এ কাটালাম।
 এক রাত্রি মুবারক-এ আমি দেখলাম, একটি উজ্জ্বল নূর মুবারক হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ঘেরাও করে রেখেছে। আরো দেখতে পেলাম একজন সবুজ পোশাক পরিহিত ব্যক্তি উনার শিয়র মুবারকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমি আমার স্বামীকে ঘুম থেকে জাগালাম। আমি বললাম, দেখুন কি আশ্চর্যজনক ঘটনা। তিনি বললেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালিমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম! আপনি একটু থামুন। এই সংবাদ কারো নিকট প্রকাশ করবেন না। আমি জানি ইহুদী সম্প্রদায় উনার শত্রু। এই সম্মানিত সন্তান যমীনে আগমন করার পর থেকে তাদের ধর্মযাজকরা পানাহার পরিত্যাগ করেছে এখন তাদের মনে শান্তি নেই।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালিমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, সমস্ত লোকজন বিদায় হয়ে গেলো। সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি আমাকে বিদায় দিলেন। আমরা উটনীতে সাওয়ার হয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোল মুবারক-এ নিয়ে মক্কা শরীফ থেকে রওয়ানা দিলাম। আমার উটনীটি ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন হয়ে গেলো। গর্দান টান করে দ্রুত সামনের দিকে চলতে লাগলো। আমরা যখন পবিত্র কা’বা শরীফ-এর সামনে এলাম তখন আমার উটনীটি তিনটি সিজদা করলো। তারপর আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে আওয়াজ করলো এবং আমার গোত্রের অন্যান্য সকল বাহনের আগে আগে দৌড়ে যেতে লাগলো। আমার উটনীর এরূপ দ্রুতগতি দেখে সমস্ত লোকজন আশ্চার্যিত হয়ে গেলো। আমার সঙ্গী মহিলারা আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, হে বিনতে যুওয়াইব আলাইহাস সালাম এটি কি আপনার সেই উটনীটি নয় যার উপর আরোহন করে আমাদের সঙ্গে এসেছিলেন? আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এটা তো সেই উটনীই যাতে আরোহন করে আমি পবিত্র মক্কা শরীফ-এ এসেছিলাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি এই সম্মানিত সুমহান সন্তান উনার উছীলায় এবং উনার বরকতে আমার বাহনকে শক্তিশালী করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সকলেই বললেন, তাহলে বাহনে আরোহিত এই সন্তান উনার শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা সারা কায়িনাতের মাঝে সবচেয়ে বেশি। সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আমি আমার উটনীকে বলতে শুনলাম, হ্যাঁ, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমার আরোহী উনার মর্যাদা-মর্তবা সত্যি সত্যিই সর্বোচ্চ। আমি তো মৃতপ্রায় ছিলাম। উনার সম্মান ও বরকতের কারণেই আমাকে শক্তিশালী করা হয়েছে। হে বনী সা’দ গোত্রের মহিলা! আপনারা এখনো অচেতন? আপনারা বুঝতে পারছেন না আমার পিঠ মুবারক-এ কাকে বহন করে নিয়ে চলছি? আমার পিঠ মুবারক-এ রয়েছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, খাইরুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, হাবীবে রব্বুল আলামীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
          সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি আরো বলেন, পথ চলতে চলতে আমি শুনতে পেলাম আমার ডান ও বাম থেকে কে যেন বলছে- হে হযরত হালীমাতুস সা’দীয়া আলাইহাস সালাম! আপনি এখন বিত্তবতী। বনী সা’দ গোত্রের মহিলাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিতা। আমি আমার বকরীর পালের সামনে দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম তখন বকরীগুলো আমার সামনে এসে বলতে লাগলো, হে হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম! আপনি কি জানেন, আপনার দুগ্ধ মুবারক পান করেছেন কে? উনি হচ্ছেন নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আসমান-যমীন তথা সমস্ত আলমের মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তিনি প্রেরিত নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ও সবচেয়ে সম্মানিত। সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, এরপর থেকে আমরা যেখানে তাশরীফ নিতাম সেখান থেকেও সরে যেতে লাগলো দুর্ভিক্ষ, খরা, অজন্মা ও সমস্ত অশান্তি। সমস্ত যমীন হয়ে উঠলো শস্যসজীব। আবার আমাদের নিজেদের এলাকায় দেখা দিলো সবুজ শ্যামলের সমারোহ। আমার বকরীগুলি সারাদিন মাঠে চরে ফিরে সন্ধ্যায় ঘরে আসতো পরিতৃপ্ত হয়ে। তাদের স্তনগুলো পরিপূর্ণ হয়ে থাকতো দুধে। আমার গোত্রের লোকজন তাদের রাখলদেরকে বলতো, সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুওয়াইব আলাইহাস সালাম উনার বকরীগুলো যে মাঠে চরানো হয় তোমরাও সেখানে তোমাদের বকরীগুলোকে ছেড়ে দিও। তারপর থেকে তাদের রাখালেরা আমার বকরীর সঙ্গে তাদের বকরীগুলোকে চরাতে শুরু করলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের বকরীগুলিতেও খায়ের বরকত দান করলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় আমাদের গোটা এলাকায় পরিপূর্ণ খায়ের বরকতে ভরে গেলো। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন কথা মুবারক বলা শুরু করলেন, আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম তিনি তখন বললেন,
الله اكبر الحمد لله رب العالمين و سبحان الله بكرة واصيلا
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার আল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আ’লামীন ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাওঁ ওয়া আছীলা।
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সবচেয়ে মহান। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। যিনি সারা আলমের রব বা প্রতিপালক এবং আমি সকাল-সন্ধ্যা তথা দায়িমীভাবে উনারই পবিত্রতা বর্ণনা করি।”
আর রাতের বেলা শুনতে পেতাম, উনার ক্বলব মুবারক থেকে আওয়াজ বের হতো-
لا اله الا الله قدوسا نامت العيون والرحمن لا تأخذه سنة و لانوم
উচ্চারণ: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু কুদ্দূসান নামাতিল উ’য়ূনু ওয়ার রহমানু লা তা’খুযুহু সিনাতাওঁ ওয়ালা নাউম।”
অর্থ: পরম দয়ালু মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যিনি চোখের ঘুম বা নিদ্রা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। আর উনাকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। (মাদারেজুন নুবুওওয়াত ৬ষ্ঠ খন্ড ৭১ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি আরো বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দোলনা মুবারকে শুয়ে চাঁদের সঙ্গে কথা বলতে শুনেছি এবং চাঁদের দিকে ইশারা করতে দেখেছি। তিনি যেদিকে ইশারা করতেন চাঁদ সেদিকেই হেলে যেতো। সুবহানাল্লাহ! আর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনার দোলনা মুবারক দুলিয়ে দিতেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো উনার পরিহিত লেবাছ মুবারক-এ ইস্তিঞ্জা মুবারক করেননি। উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক ছিলো পবিত্র থেকে পবিত্রতম এবং সুবাসযুক্ত। ইস্তিঞ্জা মুবারক করার জন্য উনার ছিলো নির্দিষ্ট সময়। সেই নির্দিষ্ট সময় তিনি তা সেরে নিতেন। আমি উনার মুখ মুবারক থেকে দুধ মুবারক ইত্যাদি মুছার পূর্বেই কে যেনো তা মুছে দিয়ে যেতো। উনার মুখ মুবারক তথা সমস্ত শরীর মুবারক থাকতো সদা সর্বদা পাক-সাফ। সুবহানাল্লাহ!
শরীর মুবারক থেকে লেবাছ মুবারক একটু সরে গেলেই তিনি নড়াচড়া এবং মৃদু আওয়াজ করতেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি উনার লেবাছ মুবারক ঠিক করে দিতাম। একটু বিলম্ব করলেই দেখতাম কে যেনো উনার লেবাছ মুবারক ঠিক করে দিয়ে গেছেন। সুবহানাল্লাহ!
উনার দুনিয়াবী বয়স মুবারক যখন কয়েক বৎসর হয়ে গেলো। তখন উনার মধ্যে খেলাধুলার কোনো লক্ষণই দেখা গেলো না। যেহেতু তিনি উসওয়ায়ে হাসানা তথা সর্বোত্তম আদর্শ। উনার আদর্শ মুবারকই সর্বশ্রেষ্ঠ। আর তিনি সদাসর্বদাই ক্রীড়ারত শিশু কিশোরদের থেকে দূরে থাকতেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলতেন, আমি খেল তামাশা করার জন্য যমীনে প্রেরিত হইনি। অনুরূপ হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম তিনিও বলতেন।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শারীরিক প্রবৃদ্ধি ছিলো ব্যতিক্রম ধরনের। যেহেতু তিনি কোনো মানুষের মতো নন। কাজেই অন্যান্য বালকরা একমাসে যতটুকু বাড়তো, তিনি ততটুকু (দুনিয়াবী দৃষ্টিতে) বাড়তেন একদিনে। আর তাদের এক বৎসরের বেড়ে ওঠার মতো ছিলো উনার একমাসে বেড়ে ওঠা। সেই বয়স মুবারকে মাঝে মাঝে সূর্যালোকের মতো কী যেনো উনাকে এসে জড়িয়ে ধরত। তখন উনার নূর মুবারক-এর ছোঁয়ায় সমস্ত কিছুই আলোকিত হয়ে যেতো।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, সাদা লেবাছ পরিহিত অবস্থায় দু’জন ব্যক্তি উনার ক্বমীছ মুবারক-এর গুটলীর ফাঁকা স্থান দিয়ে প্রবেশ করে অদৃশ্য হয়ে যেতো। তিনি কোনো দিন বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি করতেন না। সদা সর্বদা ভালো ও সুন্দর আচরণ সকলের সাথে করতেন। উনার আগমন থেকে শুরু করে বিছাল শরীফ পর্যন্ত তিনি এরূপই ছিলেন। যে কোনো কাজের শুরুতেই তিনি ‘বিসমিল্লাহ’ শরীফ পাঠ করতেন।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এরূপ সুউচ্চ মর্যাদা-মর্তবা, আখলাক্ব মুবারক দেখে আমার স্বামীকে আমার নিকট আসতে নিষেধ করতাম। আমি উনাকে বাড়ির বাইরে যেতে দিতাম না। একদিন আমি কাজ করতেছিলাম। এর মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার দুধ বোন-এর সঙ্গে বাড়ির বাইরে চলে গেলেন। আমার মেয়ে উনাকে খুবই আদর ¯œহ করতেন। ওই দিন খুবই গরম পড়ছিলো। আমি উনাকে বাড়িতে না পেয়ে খোঁজ করতে লাগলাম। খোঁজ করতে করতে বাড়ির বাইরে চলে গেলাম এবং উনাদের উভয়কেই পেয়ে গেলাম। আমি আমার মেয়েকে বললাম, এরূপ উত্তপ্ত গরমের মধ্যে আপনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে এসেছেন কেনো? আমার মেয়ে বললেন, কই! আমরা তো কোনো উত্তাপ ও গরম অনুভব করছি না। একখ- মেঘ আমাদেরকে সারাক্ষণ ছায়া দিয়ে রেখেছে। আমরা যেদিকে যাই মেঘটিও সেদিকে যায়। মেঘটি আমাদের ছায়া দিতে ব্যস্ত। এভাবে আমরা এখানে চলে এসেছি।
আরো উল্লেখ রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক করার মু’জিযা শরীফ সংঘটিত হয়েছে সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার বাড়িতে অবস্থানকালে। সেই মু’জিযা শরীফ হচ্ছে, একদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা দুধমাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, হে আমার সম্মানিতা মা! আপনি আমাকে ছাগল চরাতে যেতে দেন না কেন? আপনার ছাগলগুলো আমিই চরিয়ে আনতে পারি। একথা শুনে তিনি একদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ছাগল চরানোর জন্য মাঠে যেতে দিলেন। যাওয়ার পূর্বে উনার সম্মানিতা দুধমাতা তিনি উনাকে সাজিয়ে দিলেন সুন্দর করে। চুল মুবারক আঁচড়িয়ে দিলেন। নতুন পোশাক মুবারক পড়িয়ে দিলেন, চোখ মুবারকে সুরমা লাগিয়ে দিলেন। তারপর বদনজর থেকে হিফাযতের জন্য ইয়ামেনী কাঠের টুকরা উনার কাঁধ মুবারকে ঝুলিয়ে দিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে আমার সম্মানিতা মা জননী! আমি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব। মহান আল্লাহ পাক তিনিই আমাকে হিফাযত করবেন। তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা গ্রহণ করলেন না। অতঃপর তিনি সঙ্গী-সাথীদের সঙ্গে ছাগল নিয়ে মাঠের দিকে বেরিয়ে পড়লেন।
অর্ধদিবস অতিবাহিত হওয়ার পর পরই সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার সন্তানগণ উনারা হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এলেন। হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, হে আমাদের সম্মানিতা মা! আমাদের সম্মানিত ভাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য আমরা পেরেশান। উনার বড়ই বিপদ। তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে কোথা থেকে যেনো একটি লোক এসে আমাদের ভাইকে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে পাহাড়ের উপরে উঠে গেলো। উনার পিছু পিছু গিয়ে দেখলাম ওই লোকটি উনাকে যমীনে শোয়ায়ে পেট মুবারক তথা বুক মুবারক চিরে ফেলেছেন। উনাকে এরূপ দেখে আমরা ছুটে এসেছি। জানিনা এতক্ষণে তিনি জীবিত আছেন কিনা। সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম এবং উনার সম্মানিত স্বামী উনারা উভয়ে ভয় পেলেন এবং আশ্চার্যিত হলেন। খুবই তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেলেন চারণভূমির দিকে। পাহাড়ে উঠে দেখলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসমানের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। আমাদের উপস্থিতি দেখে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের দিকে দৃষ্টি ফেরালেন এবং আমাদের দেখে তিনি মুচকি হাসি মুবারক দিতে লাগলেন।” (এই মু’জিযা শরীফখানা বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্নভাবে উল্লেখ রয়েছে।) (মাদারিজুন নুবুওওয়াত)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
واخرج حضرت البيهقى رحمة الله عليه و حضرت ابن عساكر رحمة الله عليه من طريق حضرت محمد بن زكريا الغلابى رحمة الله عليه، عن حضرت يعقوب بن جعفر بن سليمان رحمة الله عليه، عن حضرت على بن عبد الله بن عباس رضى الله تعالى عنهم، عن ابيه، عن جده قال كانت حضرت حليمة عليها السلام تحدث انها لما فطمة رسول الله صلى الله عليه وسلم تكلم فقال: الله اكبر كبيرا والحمد لله كثيرا وسبحان الله بكرة واصيلا، فلما ترعرع كان يخرج فينظر الى الصبيان يلعبون، فيتجنبهم، فقال لى يوما يا اماه ما لى لا ارى اخوتى بالنهار؟ قلت فدتك نفسى يرعون غنما لنا فيروحون ليل الى ليل. قال: ابعثينى معهم، فكان يخرج مسرورا ويرجع مسرورا،

অর্থ: হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত মুহম্মদ ইবনে যাকারিয়া গুলাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ইয়াকূব ইবনে জা’ফর ইবনে সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আলী ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, তিনি উনার পিতা থেকে এবং তিনিও উনার সম্মানিত পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নিশ্চয়ই যখন আমার দুধ মুবারক পান থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিরত হলেন, তখন নূরে মুজাসসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাঠ করলেন,
الله اكبر كبيرا والحمد لله كثيرا و سبحان الله بكرة واصيلا-
অর্থ: “আল্লাহ পাক তিনি সবচেয়ে মহান, আল্লাহ পাক উনার জন্য বেশুমার প্রশংসা বা ছানা-ছিফত আমি সকাল-সন্ধ্যা তথা দায়িমীভাবে উনার পবিত্রতা বর্ণনা করি।”
যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াবী দৃষ্টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুটা বড় হলেন তখন অন্যান্য শিশুদেরকে খেলাধুলা করতে দেখেও তিনি নিজে তা থেকে পরিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকতেন। একদিন তিনি আমাকে বললেন, হে আমার সম্মানিতা মা! আমার ভাইকে দিনের বেলা বাড়িতে দেখিনা কেন? আমি জবাবে বললাম, হে আমার প্রিয় সন্তান! আমার জীবন আপনার খিদমতে কুরবান হোক। আপনার যিনি ভাই তিনি দিনের বেলায় ছাগল চড়াতে যান। তিনি সকালে গেলে সন্ধ্যায় ফিরে আসেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আগামীকাল থেকে আমার ভাইয়ের সাথে আমিও ছাগল চড়াতে মাঠে যাবো। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরের দিন থেকে খুবই আনন্দে মাঠে যেতেন এবং খুশি মনে বাড়িতে ফিরে আসতেন।
فلما كان يوما من ذلك خرجوا، فلما انتصف النهار اذا بابنى ضمرة يعدو فزعا وجبينه يرشح باكيا ينادى: يا ابت ويا امه الحقا اخى حضرت محمد صلى الله عليه و سلم، فما تلحقانه الا ميتا قلنا: وما قصته؟ قال: بينا نحن قيام اذ اتاه رجل، فاختطفه من اوساطنا وعلا به ذروة الجبل، ونحن ننظر اليه حتى شق من صدره الى عانته ولا ادرى ما فعل به، فاقبلت انا وابوه نسعى سعيا، فاذا نحن به قاعد على ذروة الجبل شاخصا ببصره الى السماء يبتسم ويضحك، فاكببت عليه وقبلت ما بين عينيه، وقلت، فدتك نفسى ما الذى دهاك؟ قال: خيرا يا اماه، بينا انا الساعة قائم اذ اتانى رهط ثلاثة بيد احدهم ابريق فضة، وفى يد الثانى طست من زمردة خضراء ملاى ثلجا، فاخدونى، فانطلقوا بى الى ذروة الجبل، فاضجعونى على الجبل اضجاعا ليطيفا، ثم شق احدهم من صدرى الى عانتى، وانا انظر اليه فلم اجد لذلك حسا ولا الما ثم ادخل يده فى جوفى فاخرج احشاء بطنى، فغسلها بذلك الثلج، فانعم غسلها، ثم اعادها،
এমনি একদিন সকাল সকাল উনারা মাঠের দিকে বের হলেন। যখন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে গেলো অর্থাৎ দুপুরের সময় আমার সন্তান ‘দ্বমরাহ’ তিনি ভীত-আতঙ্কিত অবস্থায় দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বাড়ি ফিরলেন। উনার কপাল ছিলো ঘর্মাক্ত। তিনি কেঁদে কেঁদে বললেন, হে আমার আব্বা! আমার মা! জলদি, আমার ভাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট চলুন। হয়তঃ উনার কাছে গিয়ে উনাকে বিছাল শরীফ অবস্থায় দেখতে পাবেন। আমরা উনাকে বললাম, কি ঘটনা ঘটেছে? তিনি বললেন, আমরা সকলে একস্থানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খুবই আদব-তমীজের সাথে কোলে করে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যান এবং আমরা দেখতে পেলাম ওই ব্যক্তি আমার ভাই উনার পবিত্র বক্ষ মুবারক বিদারণ করলো। এরপর কি হলো, তা আমার জানা নেই। যখন আমরা এই কথা শুনলাম তখন আমি এবং উনার সম্মানিত দুধ পিতা হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমরা খুব দ্রুত দৌঁড়ে সেই স্থানে পৌঁছলাম। অতঃপর আমরা দেখতে পেলাম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাহাড়ের চূড়ায় বসে আসমানের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন এবং মুচকি মুচকি হাসছেন। অতঃপর আমি উনাকে জড়িয়ে ধরলাম এবং উনার কপাল মুবারকে চুমু খেলাম। অতঃপর আমি বললাম, আমার প্রাণ আপনার খিদমতে কুরবান হোক, হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার কি হয়েছে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাওয়াব দিলেন, হে আমার সম্মানিতা মা! আমার কিছুই ক্ষতি হয়নিসবকিছুই ঠিকঠাক রয়েছে। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম এমন সময় তিনজন ব্যক্তি আমার নিকট আসলেন। উনাদের মধ্যে একজনের হাতে ছিলো রুপার পাত্র। দ্বিতীয়জনের হাতে ছিলো সবুজ রংয়ের যমরুদ-এর তসতরী তথা সবুজ পান্নার প্লেট, যা স্বচ্ছ বরফে পরিপূর্ণ ছিলো। উনারা আমাকে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় গেলেন। সেখানে আমাকে নিয়ে খুবই আদব- তমীজের সাথে শুয়ায়ে ছিলেন। অতঃপর উনাদের মধ্যে একজন আমার বক্ষ মুবারক বিদীর্ণ করলেন। আমি সবকিছুই অবলকন করতে থাকলাম। কিন্তু আমি বক্ষ মুবারক বিদীর্ণের কোন কিছু অনুভব করলাম না এবং কষ্টও অনুভব হলো না। অতঃপর ওই ব্যক্তি উনার হাত আমার পেট মুবারক-এর ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে ভিতরের সমস্ত কিছুই বের করে নিয়ে আসলেন। অতঃপর সবকিছুই স্পর্শ করলেন, বরফের ঠান্ডা পানির সাথে। অতঃপর সমস্ত কিছুই যথাস্থানে রেখে দিলেন।
وقام الثانى فقال للاول: تنح فقد انجزت ما امرك الله به، فدنا منى فادخل يده فى جوفى، فانتزع قلبى وشقه فاخرج منه نكتة سوداء مملوءة بالدم فرمى بها، فقال: هذا حظ الشيطان منك يا حبيب الله صلى الله عليه وسلم، ثم حشاه بشى، كان معه ورده مكانه، ثم ختمه بخاتم من نور، فانا الساعة اجد برد الخاتم فى عروقى ومفاصلى، وقام الثالث فقال: تنحيا فقد انجزتما ما امر كما الله به فيه، ثم دنا منى فامر يده من مفرق صدرى الى منتهى عانتى وقال: زنوه من امته بعشرة فوزنونى فرجحتهم، ثم قال: دعوه فلو وزنتموه بامته كلها لرجح بهم، ثم اخذ بيدى فانههضنى انهاضا لطيفا، فاكبوا على وقبلوا راسى وما بين عينى، وقالوا يا حبيب الله لن تراع ولو تدرى ما يراد بك من الخير فقرت عيناك وتر كونى قاعدا فى مكانى هذا، ثم جعلوا يطيرون حتى دخلوا حيال السماء،
 অতঃপর দ্বিতীয় ব্যক্তি দাঁড়িয়ে প্রথম ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আপনি সরে আসুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি যা আপনাকে আদেশ করেছেন, তা পূর্ণ করেছেন।’ অতঃপর ওই ব্যক্তি আমার নিকট আসলেন এবং উনার হাত আমার উদর বা পেট মুবারক-এর মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে আমার ক্বলব মুবারক বের করে ফেললেন। অতঃপর তা বিদীর্ণ করে তার মধ্যে একটি খুবই নূরানীময় রক্ত মুবারক ভর্তি অংশ মুবারক বের করে আলাদা করলেন। অতঃপর ওই ব্যক্তি বললেন, ‘আদম সন্তানের জন্য এই স্থানটাই হচ্ছে শয়তানের ওয়াসওয়াসা দেয়ার জায়গা। শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়ার স্থান। অর্থাৎ আদম সন্তানদেরকে শয়তান এই স্থানে প্ররোচনা বা ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে। তবে আপনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার এই স্থান শয়তানের ওয়াসওয়াসা দেয়ার জায়গা নয়। কেননা ইবলিশ শয়তানের পক্ষে আপনাকে ওয়াসওয়াসা দেয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না।’
 কোন ব্যক্তি যদি বলে বা ধারণা করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভিতর থেকে শয়তানের অংশ বের করে ফেলে দেয়া হয়েছে বা উনার ভিতরে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়েছে তা হলে সে কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী হবে।
ওই ব্যক্তি বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আদম সন্তানের এই অংশে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে। অতঃপর ওই ব্যক্তি নিজের কাছ থেকে একটি বস্তু দিয়ে সেটি ভরে দিলেন। অতঃপর তার উপর একটি নূরোজ্জ্বল মোহরও এঁটে দিলেন। যার শীতলতা আমি এখনও আমার শির মুবারকে অনুভব করছি। অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তি দন্ডায়মান হলেন এবং বললেন, আপনারা উভয়ে সরে যান। আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ পূর্ণ করেছেন।
এরপর ওই ব্যক্তি আমার নিকট আসলেন এবং আমার বক্ষ মুবারক-এর ফাটল থেকে নাভি মুবারক-এর ফাটল পর্যন্ত হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, উনাকে উনার উম্মতগণের দশ ব্যক্তির মোকাবেলায় ওজন করো। উনারা আমাকে ওজন করলেন; সেই ওজনে আমি অনেক অনেক ভারী হয়ে গেলাম। এরপর ওই ব্যক্তি বললেন, যা হোক যদি তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত উম্মত তথা সমস্ত মাখলুকাতের মোকাবিলায় উনাকে ওজন করো তবুও তিনি সকলের থেকে অনেক অনেক ভারি হবেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর তিনি আমার হাত মুবারক ধরে খুবই আদব-তমিজের সাথে আমাকে দাঁড় করালেন। উনারা সকলেই আমার প্রতি ঝুঁকে পড়লেন, আমার মাথা মুবারক ও কপাল মুবারক-এ খুশিতে চুম্বন করলেন।
অতঃপর উনারা বললেন, হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কোন মাখলুকাতকে ভয় করবেন না। আপনি জানেন যে, আপনার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার জন্য কতটুকু ভালাই চান তাই আপনার চক্ষু মুবারকদ্বয় সর্বদাই শীতল রয়েছে। অতঃপর উনারা আমাকে ওইভাবে বসা রেখে আসমানের দিকে উড়ে গেলেন।
قالت: فاحتملته فاتيت به منازل بنى سعد، فقال الناس: اذهبوا به الى الكاهن حتى ينظر اليه ويداويه، فقال ما بى شىء، مما تذكرون انى ارى نفسى سليمة وفؤادى صحيح، فقال لى الناس: اصابه لم أو طائف من الجن، فغلبوانى على رأيى فانطلقت به الى الكاهن، فقصصت عليه القصة قال: دعينى انا اسمع منه، فان الغلام ابصر بامره منكم تكلم يا غلام، فقص قصته من اولها الى اخرها، فوثب الكاهن قائما على قدميه ونادى باعلى صوته: يا للعرب من شر قد اقترب اقتلوا هذا الغلام واقتلونى معه، فانكم ان تركتموه وادرك مدرك الرجال ليسفهن احلامكم وليكذبن اديانكم وليدعونكم الى رب لا تعرفونه، ودين تنكرونه.

সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে বনু সা’দ-এর এলাকায় চলে আসলাম। লোকজন বলাবলি করতে লাগলো উনাকে পুরোহিত বা পাদরীর নিকট নিয়ে যান। উনাকে পাদরীরা দেখে শুনে চিকিৎসা করবে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আমার কিছুই হয়নি। আমার শরীর মুবারক তথা সবকিছুই সুস্থ রয়েছে। কিন্তু লোকজন আমাকে বলতে থাকলো যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর কিছু আছর করেছে। নাউযুবিল্লাহ! অবশেষে তারা আমার উপর প্রবল হয়ে গেলো এবং আমাকে জনৈক পাদরীর কাছে নিয়ে গেলো। আমার সম্মানিতা দুধমাতা তিনি পাদরীকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন, সে সবকিছু শুনে বললো, দয়া করে আপনি থামুন আমি উনার নিকট থেকে সবকিছু শুনে নেই। কেননা তিনি নিজের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত।
অতঃপর ওই পাদরী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে বললো, হে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার কী হয়েছে? আপনার কী ঘটনা সংঘটিত হয়েছে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার কিছু ঘটনা (মু’জিযা) শরীফ তাকে শুনালেন, যা শুনে ওই পাদরী একদম লাফিয়ে উঠলো এবং ডাকাডাকি করতে লাগলো, হে আরববাসীরা! এক মহা বিপদ সন্নিকটে। এই সন্তান হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করো এবং আমাকেও হত্যা করো। যদি তোমরা উনাকে ছেড়ে দাও তাহলে তিনি বড় হলে তোমাদের সবারই জ্ঞান বুদ্ধিকে পরাভূত করে দিবেন। তিনি তোমাদের ধর্মকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবেন। তোমাদেরকে এক অদৃশ্য সুমহান রব উনার দিকে ডাকবেন এবং এমন এক সত্য ধর্মের দিকে আহ্বান করবেন, যার সাথে তোমরা পূর্বে পরিচিত ছিলে না।
قالت: فلما سمعت مقالته انتزعته من يده وقلت: لانت اعته منه واجن ولو علمت ان هذا يكون من قولك ما اتيتك به اطلب لنفسك من يقتلك فانا لا نقتل محمدا صلى الله عليه وسلم، فاحتملته فأتيت منزلى فما اتيت به منزلا من منازل بنى سعد الا وقد شممنا منه ريح المسك، وكان فى كل يوم ينزل عليه رجلان ابيضان فيغيبان فى ثيابه ولا يظهران فقال الناس: رديه يا حضرت حليمة عليها السلام على جده واخرجى من امانتك، قالت: فعزمت على ذالك، فسمعت مناديا ينادى هنيا لك يا بطحاء مكة اليوم يرد عليك النور والدين والبهاء والكمال، فقد امنت ان تخذلى او تخزى ابد الابدين. قالت حضرت حليمة عليها السلام وحدثت حضرت عبد المطالب عليه السلام بحديثه كله، فقال يا حضرت حليمة عليها السلام ان لابنى هذا شأنا وددت انى ادرك ذلك الزمان.
সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, এরূপ পাগলামী কথা শুনে আমি ওই পাদরীর হাত থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমার দিকে টেনে নিলাম এবং তাকে বললাম, তুই উম্মাদ ও বদ্ধ পাগল। যদি জানতাম, তুই এমন কথা বলবি তবে তোর কাছে আমি আমার এই সম্মানিত সুমহান বরকতময় সন্তান উনাকে নিয়ে আসতাম না। নিজেকে হত্যা করার জন্য তুই নিজেই কাউকে ডেকে নিস। আমি কখনও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করাবো না। অতঃপর আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে নিজ হুজরা শরীফ-এ চলে আসলাম। পথিমধ্যে বনু সা’দ-এর যে সমস্ত ঘরের পার্শ দিয়েই তিনি গমন করতেন তা থেকে মেশক আম্বরের থেকে বেশি সুগন্ধি আসতো। আমি দেখেছি, প্রতিদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট (ছোহবতে) দু’জন সাদা ব্যক্তি আসতেন এবং উনার ক্বমীছ (পোষাক) মুবারক-এর মধ্যে গা ঢাকা দিতেন, এরপর আর আত্মপ্রকাশ করতেন না। লোকজন আমাকে বলতে লাগলো, হে সাইয়্যিদুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম! উনাকে উনার সম্মানিত দাদা উনার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসুন। ফলে আমি উনাকে ফিরিয়ে দিতে দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করলাম। যেহেতু তিনি আমার নিকট এক মহান আমানত সেই আমানতকে ফিরিয়ে দিবো এমতাবস্থায় আমি একজন আহ্বানকারীর আহ্বান শুনতে পেলাম যে, হে পবিত্র মক্কা শরীফ-এর কংকরময় যমীন! আপনাকে মোবারকবাদ! আজিকার দিনে আপনি আপনার নূর, আপনার ধর্ম, আপনার জ্যোতি ও আপনার পূর্ণতা ফিরে পাচ্ছেন। আপনি শান্তিময় হয়ে গিয়েছেন। আপনি কখনো লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবেন না।
সাইয়্যিদুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি মক্কা শরীফ-এ গিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবকিছু মু’জিযা বা ঘটনা খুলে বললে তিনি বললেন, “হে হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম! আমার এ সম্মানিত পৌত্রের সুমহান শান-মান প্রকাশ পাবে। আমি উনার সময় পাওয়ার বাসনা রাখি। সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ৯৩, ৯৪, ৯৫ নং পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
واخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه من طريق الواحدى رحمة الله عليه: حدثنى حضرت عبد الصمد بن محمد السعدى رحمة الله عليه، عن ابيه، عن جده قال: حدثنى بعض من كان يرعى غنم حضرت حليمة عليها السلام انهم كانوا يرون غنمها ما ترفع برؤوسها وترى الخضر فى افواهها وابعارها وما تزيد غنمنا على ان تربض ما تجد عودا تأكله، فتروح الغنم اغرث منها حين غدت، وتروح غنم حضرت حليمة عليها السلام يخاف عليهما الحبط- قالوا فمكث صلى الله عليه وسلم سنتين حتى فطم وكأنه ابن اربع سنين فقدموا به على امه زائرين لها وهم أحرص شىء على رده مكانه لما رأوا من عظم بركته،

অর্থ: হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ওয়াহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত আব্দুছ ছমাদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি উনার পিতা থেকে, তিনি উনার দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার ছেলেগণ বর্ণনা করেছেন যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার ছাগলগুলো মাঠে ঘাস খাওয়ার সময় তাদের মাথা তুলতো না। দেখা যেতো মাঠের সবুজতা যেনো তাদের মুখে আকৃষ্ট করেছে, অন্য কিছু তাদের দৃষ্টি গোচর হতো না। অর্থাৎ ওই সমস্ত ছাগলগুলো সবুজ ঘাস তথা খাবার পেট ভরে খেতো। অথচ অন্যান্যদের ছাগলগুলো বসে থাকতো। তারা কোনো ঘাস এমনকি তৃণখ- পর্যন্তও খেতে পেতো না এবং সন্ধ্যা বেলায় সকালের চেয়ে বেশি ক্ষুধা নিয়ে বাড়িতে ফিরতো।
বর্ণনাকারীগণ বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার বাড়িতে প্রথমতঃ দু’বছর অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি উনার সম্মানিতা দুধমাতা উনার দুধ মুবারক খাওয়া থেকে বিরত হন। যখন উনার চার বৎসর বয়স মুবারক হলো তখন উনাকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি উনার সম্মানিতা মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট নিয়ে গেলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লøাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল বরকত, রহমত ও ইহসান দেখে সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি উনাকে পুনরায় সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার আর্জি পেশ করলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট। সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার আর্জি কবুল করলেন।
فلما كانوا بوادى السدر لقيت نفرا من الحبشة فرافقتهم فسألوها فنظروا الى رسول الله صلى الله عليه وسلم نظرا شديدا، ثم نظروا الى خاتم النبوة بين كتفيه، والى حمرة فى عينيه، فقالوا: هل يشتكى عينيه؟ قالت: لا، ولكن هذه الحمرة لا تفارقه. قالوا: هذا والله نبى صلى الله عليه وسلم، فاتت به امه، ثم رجعت به معها فمرت يوما بذى المجاز وبه عراف يؤتى اليه بالصبيان ينظر اليهم، فلما نظر الى رسول الله صلى الله عليه وسلم والى الحمرة فى عينيه والى خاتم النبوة صاح: يا معشر العرب اقتلوا هذا الصبى فليقتلن اهل دينكم وليكسرن اصنامكم وليظهرن امره عليكم، فانسلت به حضرت حليمة عليها السلام وكانت لا تعرضه لاحد من الناس،
সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সঙ্গে নিয়ে সা’দ উপত্যকায় পৌঁছলেন তখন আবিসিনিয়ার কিছু লোকজন উনাদের সাথে মিলিত হয়। ওই সমস্ত লোকগুলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গভীর দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাঁধ মুবারকে মহরে নুবুওওয়াত এবং উনার চক্ষু মুবারক-এর লালিমা বা নূর মুবারক দেখে সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলো, এ সম্মানিত শিশু উনার চক্ষু মুবারকে কোন প্রকার অসুখ বা রোগ আছে কি? সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, উনার চক্ষু মুবারক-এর লালিমা বা নূর মুবারক কোন অসুস্থতা বা রোগের কারণে নয় বরং উনার বিলাদত শরীফ থেকেই এরূপ রয়েছে। তখন ওই সমস্ত ব্যক্তি বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নিশ্চয়ই তিনি আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অতঃপর আমরা উনার সম্মানিতা মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট উনাকে নিয়ে গেলাম। পুনরায় আমাদের আর্জি পেশ করার পর উনার সম্মানিতা মা তিনি আমাদের সঙ্গে উনাকে ফিরিয়ে দিলেন।
‘যুলমাজায’ নামক স্থানে এক ব্যক্তি বাস করতো। সে মানুষের মুখের ভাব দেখেই সবকিছু বলে দিতো। মানুষ তার নিকট শিশুদেরকে দেখানোর জন্য নিয়ে যেতো। সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে ওই ব্যক্তির নিকট গেলেন। এমতাবস্থায় সে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চক্ষু মুবারক-এর লালিমা (নূর) মুবারক ও মহরে নুবুওওয়াত মুবারক দেখে চিৎকার করতে লাগলো। সে বলতে লাগলো, হে আরববাসীরা! এই শিশু সন্তান উনাকে শহীদ করো! কারণ তিনি তোমাদের ধর্মকে ধ্বংস করবেন। তোমাদের এই মাটির তৈরি মূর্তিকে ভেঙ্গে ফেলবেন। তিনি তোমাদের সকলের সাইয়্যিদ ও মালিক হবেন। তোমাদের সকলের ওপর উনার বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা প্রকাশ করবেন। তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে সেখান থেকে দ্রুত চলে আসলেন। এরপর থেকে তিনি কখনও কারো কাছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখানোর জন্য নিয়ে যাননি। (খছায়িছুল কুবরা : ১ম জিলদ ৯৮ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
واخرج حضرت ابن سعد رحمة الله عليه و حضرت ابن الطراح رحمة الله عليه، عن حضرت اسحاق بن عبد الله رحمة الله عليه ان ام النبى صلى الله عليه وسلم لما دفعته الى السعدية التى ارضعته قالت لها: احفظى ابنى واخبرتها بما رات، فمر بها اليهود فقالت الا تحدثونى عن ابنى هذا، فاني حملته كذا ووضعته كذا ورأيت كذا كما وصفت امه، فقال بعضهم لبعض: اقتلوه، قالوا: ايتيم هو؟ قالت: لا: هذا ابوه وانا امه عليها السلام، فقالوا لو كان يتيما لقتلناه.
অর্থ: হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে তরাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি উনার প্রিয় সন্তান উনাকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমা সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার নিকট লালন-পালনের জন্য দিলেন তখন তিনি বললেন, আমার সন্তান উনাকে খুবই হিফাযতে রাখবেন এবং উনার খিদমত যথাযথভাবে করবেন। এরপর তিনি যা যা দেখেছেন সবকিছুই সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, কিছুদিন পর সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার বাড়িতে কয়েকজন ইহুদী আসলো। তিনি পরীক্ষার জন্যে ওই সমস্ত ইহুদীদেরকে বললেন, হে ইহুদীরা! তোমরা আমার এই সম্মানিত পুত্র উনার ভবিষ্যত সম্পর্কে যা জানো বলো। তিনি এভাবে উনার সম্মানিতা মা উনার রেহেম শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন এবং এভাবে যমীনে আগমন করেছেন। আমি এই এই বিষয়গুলো অবলকন করেছি। মোটকথা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি যা কিছু উনাকে বলেছিলেন, সব কিছুই তাদেরকে শুনালেন। সবকিছু শুনে ইহুদীরা একে অপরকে বলাবলি করতে লাগলো এই সন্তানকে শহীদ করতে হবে। নাউযুবিল্লাহ! এরপর তারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলো, তিনি কী ইয়াতীম? সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, না। আমার সম্মানিত স্বামী হচ্ছেন উনার সম্মানিত পিতা। আর আমি হচ্ছি উনার মাতা। তখন ওই সমস্ত ইহুদীরা বললো, তিনি যদি ইয়াতীম হতেন তাহলে আমরা অবশ্যই উনাকে শহীদ করতাম। নাঊযুবিল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ৯৯ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
واخرج حضرت ابن سعد رحمة الله عليه، عن حضرت الزهرى رحمة الله عليه قال: قدم وفد هوازن على النبى صلى الله عليه وسلم وفيهم عم له من الرضاعة ابو ثروان فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لقد رأيتك مرضعا فما رأيت مرضعا خيرا منك، ورأيتك فطيما فما رأيت فطيما خيرا منك، ثم رأيتك شابا فما رأيت شابا خيرا منك، وقد تكاملت فيك خلال الخير.
অর্থ: হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হাওয়াযিন নামক একটি প্রতিনিধি দল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আগমন করেন। তাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা আবূ ছারওয়ানও ছিলেন। তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে আপনার ‘আম্মাজান’ সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার দুধ মুবারক পান করার সময় দেখেছি। কিন্তু আপনার চেয়ে কাউকে আমি এতো অধিক উত্তম পাইনি। এরপর আপনার দুধ মুবারক ছাড়ার পরও দেখেছি কিন্তু কখনও আপনার থেকে কোন মাখলুককে এতো অধিক উত্তম পাইনি। এরপর আপনাকে আনুষ্ঠানিক যুবক বয়স মুবারক-এ দেখেছি, আমি তখনও আপনার থেকে এতো অধিক উত্তম পাইনি। নিশ্চয়ই আমি আপনার মধ্যে সবচেয়ে পরিপূর্ণতা; সবসময় আপনাকে খাইর বরকতের মধ্যেই দেখেছি। সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১০০ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت ابن الطراح رحمة الله عليه رايت فى كتاب الترقيص لابى عبد الله محمد بن المعلى الازدى رحمة الله عليه، ان من شعر حضرت حليمة عليها السلام مما كانت ترقص به النبى صلى الله عليه وسلم.
يا رب اذ اعطيته فابقه + واعله الى العلا وارقه
وادحض اباطيل العدى بحقه.
অর্থ: হযরত তরাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমি আবূ আব্দুল্লাহ মুহম্মদ ইবনে মুয়াল্লাল ইআযদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার পঠিত না’ত শরীফ দেখেছি। তিনি এই না’ত শরীফ পাঠ করতে করতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ঘুম পাড়াতেন।
“হে বারী তায়ালা! আপনি যখন উনাকে যমীনে পাঠিয়েছেন তখন উনাকে দায়িম-ক্বায়িম রাখুন। আপনি উনাকে সম্মান-ইজ্জতের সর্বোচ্চ স্থানে নিয়ে যান এবং উনাকে সবচেয়ে সুউচ্চ শান হাদিয়া করুন। উনার যাত বা রোব-এর মাধ্যমে সমস্ত শত্রুদের সকল মিথ্যাচার ধ্বংস করে দিন।”  (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১০০ পৃষ্ঠা)
‘মাদারিজুন নুবুওওয়াত’-এ উল্লেখ রয়েছে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘সীনা মুবারক চাক’-এর মু’জিযা শরীফ সংঘটিত হলো তখন আমার স্বামী এবং অন্যান্য সকলেই এ ব্যাপারে পরামর্শ করলেন। অনেকেই বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘সিনা মুবারক চাক’ হয়েছে। অতএব, এসব ঘটনা ঘটছে, নিশ্চয়ই উনার কোন ক্ষতি হতে পারে। তাই উনার কোন ক্ষতি হওয়ার পূর্বেই উনাকে উনার সম্মানিতা মা ও দাদা উনাদের নিকট ফিরিয়ে দিয়ে আসুন। কারণ এমতাবস্থায় উনাকে আপনার নিকট রাখা ঠিক হবে না। সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, এরপর আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ-এর দিকে রওয়ানা করলাম। মক্কা শরীফ-এর উপকণ্ঠে পৌঁছলে আমরা প্রাকৃতিক প্রয়োজন বশতঃ থামলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এক স্থানে বসিয়ে রেখে আমি একস্থানে চলে গেলাম। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে এসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আর সেই স্থানে পেলাম না। আমি অস্থির হয়ে উনাকে খুঁজতে লাগলাম। প্রাণপণ চেষ্টা করেও উনার অনুসন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলো না, কোন খোঁজ খবরও পাওয়া গেলো না! পরিশেষে আমি নিরাশ হয়ে ইয়া মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইয়া মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বলে ডাকাডাকি করতে লাগলাম। এমন সময় এক বৃদ্ধ লোক লাঠিতে ভর করে আমার নিকট এসে বললো, হে হযরত সা’দিয়া আলাইহাস সালাম! কী হয়েছে? এতো হাঁক-ডাক করছেন কেন? এতো কান্নাকাটি ও বিলাপ করছেন কেন? আমি বললাম যে, আমার সন্তান হারিয়ে গেছেন! হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দীর্ঘদিন আমার দুধ মুবারক পান করিয়েছি। উনাকে খুবই যতেœ লালন-পালন ও উনার যথাযথ খিদমত করার কোশেশ করেছি। আজকে উনার সম্মানিতা মা সাইয়্যিদাতুনা  হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম ও উনার সম্মানিত দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাদের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে এসেছি। কিন্তু আমার সন্তান নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোথায় চলে গেলেন, উনাকে কে জানি নিয়ে গেছে, তা তো আমার জানা নেই, তাই আমি কান্নাকাটি করছি! আমার কথা শুনে ওই বৃদ্ধ লোকটি বললো, আপনি কাঁদবেন না, দুঃখ পাওয়ারও কিছু নেই। আমার সঙ্গে চলুন। আপনার সন্তান কোথায় আছেন তার সন্ধান বলে দিবো। তবে যার কাছে আপনাকে নিয়ে যাবো, সে আপনাকে আপনার সন্তান যেখানে আছেন সেখানেই আপনাকে নিয়ে যাবে। আমি তাকে বললাম, আপনার জন্য আমার জীবন কুরবান হোক। অনুগ্রহ করে আপনি বলে দিন, সেই ব্যক্তি কে? বৃদ্ধ লোকটি বললো, ওই যে আমাদের প্রধান নেতা ‘হুবল’ (মূর্তি) তার মর্যাদা খুবই বড়। নাঊযুবিল্লাহ! সে জানে আপনার সন্তান কোথায় আছেন।
আমি বললাম, হে পাপিষ্ঠ! তোমার হালাক হোক, তোমার ধ্বংস হোক। তুমি কি জানো না, তুমি কি শুনোনি এই সম্মানিত সন্তান উনার বিলাদত শরীফ-এর রাত্রি মুবারক-এ সমস্ত মূর্তিগুলো ভূলুণ্ঠিত হয়েছিলো। যত বড় বড় মূর্তি ছিলো সেই সমস্ত দেব মূর্তিগুলোরও যে কি দুর্দশা হয়েছিলো। তবুও ওই নরাধম, শয়তান বৃদ্ধ লোকটি আমাকে জোর করে সেই হুবল মূর্তির নিকট নিয়ে গেলো এবং আমাকে মূর্তিকে প্রদক্ষিণ করতে বললো। সে মূর্তিকে লক্ষ্য করে আমার ঘটনাসমূহ বললো। সঙ্গে সঙ্গে ওই হুবল মূর্তিসহ সমস্ত মূর্তিগুলো তাদের মস্তক ভেঙ্গে মাটিতে উপুর হয়ে পড়ে গেলো। এ সমস্ত মূর্তির ভিতর থেকে উচ্চারিত হলো, হে বৃদ্ধা! তুই এখান থেকে দূর হয়ে যা। ওই সম্মানিত সন্তান নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক আর উচ্চারণ করিস না। উনার ওসীলায় আমরা ধ্বংস ও বিনাশপ্রাপ্ত হবো। আমাদের পূজারীরাও নিশ্চিহ্ন হবে উনার হাত মুবারক-এ। সুবহানাল্লাহ!
তিনি হচ্ছেন, মাহফুয ও চির সুরক্ষিত। কেননা উনার রব বা মাহবূব হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি। কাজেই তিনি উনার কোন ক্ষতি হতে দিবেন না। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর আমি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার নিকট খুবই ব্যথিত অবস্থায় উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বললেন, কি হয়েছে আপনার? আপনাকে চিন্তিত ও দুঃখিত দেখা যাচ্ছে কেন? আমার পৌত্র হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোথায়? তখন আমি বললাম, হে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম! আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে মক্কা শরীফ-এ আসতেছিলাম। আমি সদাসর্বদাই উনার প্রতি খুবই সতর্ক দৃষ্টি রাখতাম। কিন্তু মক্কা শরীফ-এ প্রবেশের পথে উনাকে এক স্থানে বসিয়ে রেখে প্রয়োজনে অন্যত্র গিয়েছিলাম, ইতোমধ্যেই তিনি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছেন। উনাকে অনুসন্ধানে আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে আপনার নিকট হাযির হয়েছি। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার নিকট থেকে সব কথা শুনে খুব দ্রুত ছাফা পর্বতে আরোহণ করলেন এবং খুব উচ্চ কণ্ঠ মুবারকে আহ্বান করতে লাগলেন, হে গালিবের বংশধরগণ! তোমরা খুবই দ্রুত আমার নিকট সমবেত হও। দেখতে দেখতে কুরাইশ গোত্রের সমস্ত লোকজন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মুখে হাযির হলেন। সকলেই বললেন, হে আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের আক্বা কি হয়েছে, দয়া করে আপনি বলুন। কেন আমাদের ডেকেছেন? সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমার প্রিয় পৌত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি ও সমস্ত কুরাইশগণ আপন আপন বাহনে চড়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়লেন। পার্শ্ববর্তী সকল পাহাড় উপত্যকা ও সমস্ত স্থান তন্ন তন্ন করে খুঁজেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোথাও পাওয়া গেলো না। যখন সকলেই ফিরে এলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না পেয়ে তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মসজিদে হারাম তথা পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সকলকে নিয়ে মুনাজাত করলেন। তিনি অনেক কান্নাকাটি করে দোয়া করলেন, হে বারে ইলাহী! আপনার হাবীব আমার প্রিয় পৌত্রকে আপনি দয়া করে ফিরিয়ে দিন, তিনি কোথায় আছেন তার অনুসন্ধান আমাকে জানিয়ে দিন। সকলেই ব্যথিত, দুঃখিত ও চিন্তিত ছিলেন। এমতাবস্থায় গইব থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম এবং কুরাইশগণ উনাদের উপর নেদা বা  ঘোষিত হলো, আপনারা কেউ চিন্তা করবেন না।
মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হিফাযতকারী। তিনি কখনও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হিফাযত প্রত্যাহার করবেন না। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে গইব ঘোষক! বলুন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোথায় অবস্থান করছেন? উত্তর এলো, তেহামার উপত্যকায় এক গাছের ছায়ার নিচে তিনি অবস্থান করছেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সঙ্গে সঙ্গে তেহামার প্রান্তরের দিকে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে হযরত ওয়ারাকা ইবনে নওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পেলেন। তিনিও উনাদের সাথী হলেন। অতঃপর উনারা তেহামা প্রান্তরে পৌঁছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেলেন। সত্যিই তিনি একটি খেজুর গাছের নিচে বসে তার পাতা নাড়ছেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনি কে? আপনি কার সন্তান? তিনি বললেন, আমি মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমার জীবন আপনার জন্য কুরবান হোক। আমিই আপনার দাদা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম।
অতঃপর তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বীয় বাহনের ওপর নিজের সম্মুখে বসিয়ে খুবই খুশি হয়ে মক্কা শরীফ-এ ফিরে এলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি শুকরিয়াস্বরূপ অনেক স্বর্ণ, রৌপ্য, অনেক উট ছদকা করলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি আমাকেও অনেক অর্থ-সম্পদ হাদিয়া দিলেন। আমি আমার সেগুলো নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসলাম। (মাদারিজুন নুবুওওয়াত)
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হাওয়াযিন গোত্রের সুমহান নারী সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার দুধ মুবারক পান করেন দু’বৎসর।
এরপর আরো কয়েক বছর তিনি উনার দুধ মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার বাড়ি মুবারক-এ অবস্থান করেন। এ সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বৎসরে একবার উনার সাক্ষাতে আসতেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘সিনা মুবারক চাক’ হলে সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি উনার সম্মানিতা মা তা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট ফিরিয়ে দেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন দুধ মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার ঘর মুবারক-এ অবস্থান করছিলেন তখন উনার পরিবার-পরিজন এমন কী সমগ্র হাওয়াযিন গোত্রের সকলের উপর বেশুমার বরকত, রহমত ও সাকীনা বর্ষিত হতো। সকলেই তা লাভ করতেন। পরবর্তীকালে যখন তাদের সঙ্গে মুসলমানগণের যুদ্ধ লেগে যায় তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাওয়াযিন গোত্রের অনেককে বন্দী করেন। তারা সেই দুধ মুবারক পানের দোহাই দিলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। এটি মক্কা শরীফ বিজয়ের এক মাস পরের ঘটনা। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
قال حضرت محمد ان اسحاق رحمة الله عليه فى وقعة هوازن عن حضرت عمرو بن شعيب رحمة الله عليه عن ابيه عن جده قال: كنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم بحنين فلما اصاب من اموالهم وسباياهم ادركه  وفد هوازن بالجعرانة وقد اسلموا، فقالو يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انا اهل وعشيرة وقد اصابنا من البلاء مالم يخف عليك، فامنن علينا من الله تعالى عليك. وقام خطيبهم زهير بن صرد فقال: يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ان ما فى الحظائر من السبايا خلاتك وحواضنك اللاتى كن يكفلنك، فلو انا ملحنا ابن ابى شمر، او النعمان بن المنذر ثم اصابنا منهما مثل الذى اصابنا منك رجونا عائدتهما وعطفهما، وانت خير المكفولين.
অর্থ: হাওয়াযিন-এর ওয়াক্বীয়া সম্পর্কে হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন যে, হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দাদা তিনি বলেছেন, ‘হুনাইনের জিহাদে’ আমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে ছিলাম। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের থেকে প্রাপ্ত গণীমতের মাল ও বন্দিদের নিয়ে রওয়ানা হলে হাওয়াযিন-এর একটি প্রতিনিধি দল জিরানাহ নামক স্থানে উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই সমস্ত ব্যক্তিগণ উনারা তখন ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেছেন। কাছে এসে উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি আমাদের উপর দয়া-ইহসান করুন। ‘যুহাইর ইবনে ছরফ’ নামক একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বন্দি মহিলাদের মধ্যে আপনার ওই সমস্ত খালাগণ আর বোনগণ উনারা রয়েছেন, যিনারা আপনাকে কোলে কাঁধে নিয়ে লালন-পালন করেছেন। এখন যদি আমরা সীমর-এর পুত্র কিংবা ‘নু’মান ইবনে মুনাযির’-এর পুত্রকে দুধ পান করাতাম এবং পরবর্তীতে যদি তাদের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি সেইরূপ মুসিবত চলে আসতো, যেমন আজ এসেছে, আপনার পক্ষ থেকে; তাহলে আমরা তাদের দয়া ও অনুগ্রহ প্রত্যাশা করতাম। অথচ আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ অভিভাবক।
ثم انشد:
امنن علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم فى كرم + فانك المرء نرجوه وندخر
امنن علينا بيضة قد عاقها قدر+
ممزق شملها فى دهرها غير
أبقت لنا الدهر هتافا على حزن+
على قلوبهم الغماء والنمر
ان لم تداركها نعماء تنشرها+
يا ارجح الناس حلما حين يختبر
امنن على نسوة قد كنت ترضعها+
اذ فوك يملؤه من محضها درر
امنن على نسوة ق كنت ترضعها+
واذ يزينك ما تأتى وما تذر
لا تجعلنا  كمن شالت نعامته+
واستبق منا فانا معشر زهر
انا لنشكر للنعمى وان كفرت+
وعندنا بعد اليوم مدخر
وقد رويت هذه القصة من طريق عبيد الله بن رماحس الكلبى الرملى عن زياد بن طارق الجشمى عن ابى صرد زهير بن جرول. وكان رئيس قومه. قال لما اسرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم حنين فينا هو يميز بين الرجال والنساء وثبت حتى قعدت بين يديه واسمعته شعرا، اذكره حين شب ونشأ فى هوازن حيث ارضعوه.
এই বলে তিনি কয়েকটি কবিতার পংক্তি আবৃত্তি করলেন।
“হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার দয়া-ইহসান ও মহানুভবতা দ্বারা আমাদের প্রতি অনুগ্রহ ও দয়া করুন। আপনিই আমাদের পছন্দনীয়, প্রত্যাশিত ও মনোনীত সুমহান ব্যক্তি।
* আপনি এমন সকল নারীগণের প্রতি ইহসান ও অনুগ্রহ করুন, তাকদীর যাদেরকে (স্বগোত্রের নিকট ফিরিয়ে যাওয়া থেকে) বিরত রেখেছে। যাদের হায়াত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং তাদের জীবন ধারায় এসেছে পরিবর্তন। যে আমাদের যুগ বা সময়কে বানিয়ে রেখেছে দুঃখে আর্তনাদকারী ওই সমস্ত লোক যাদের মধ্যে রয়েছে সীমাহীন মর্মবেদনা ও দুঃখের প্রচ- চাপ।
* যদি না আপনার পক্ষ থেকে সম্প্রসারিত বরকতময় হাত তাদের ক্ষতিপুরণ করে। হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু সহনশীল রসূল! যখন উনার সহনশীলতা প্রকাশ পায় তখন উনাকে পরীক্ষা করা হয়।
* আপনি সেই নারীদের প্রতি অনুগ্রহ ও দয়া করুন, যিনাদের দুধ মুবারক আপনি পান করেছেন। যখন আপনার ইতমিনান, সুখ উনাদের দুধ মুবারকে পূর্ণ থাকতো।
* অনুগ্রহ ও দয়া করুন সেই সব নারীদের প্রতি যখন আপনার বেমেছাল শোভনীয়তা প্রকাশ হতো। আপনি যা করেছেন এবং করবেন তা সব খুবই সুন্দর।
* আপনি আমাদের ওই ব্যক্তির ন্যায় ধ্বংস করবেন না, যে মৃত্যু বরণ করেছে। আপনি আমাদের যমীনে বাঁচিয়ে রাখুন। কেননা, আমরা একটি সমুজ্জ্বল সম্মানিত সম্প্রদায়।
* নিশ্চয়ই আমরা নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে থাকি, যদিও অন্যত্র তার না শুকরিয়া করা হয়। আমাদের এ কৃতজ্ঞতা আজকের দিনের পরও বহাল থাকবে।”
নিশ্চয়ই বর্ণনাকারী বলেন, আমি এই ক্বিসসা বা ঘটনাটি হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে রমাহাস আল কালবী আররমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত যিয়াদ ইবনে ত্বরিক্ব আল জাশমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আবু ছাদর যুহাইর ইবনে জুরাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন।
উল্লেখ্য যে, হযরত যুহাইর ইবনে ছারদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন উনার গোত্রের সরদার। তিনি বলেন, ‘হুনাইন জিহাদের’ দিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বন্দি করে যখন আমাদের নারী পুরুষদের আলাদা করছিলেন তখন আমি হঠাৎ উনার সম্মুখে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাই এবং কবিতার ছন্দে উনার হাওয়াযিন গোত্রে লালন-পালন হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করি।
فألبس العفو من قد كنت ترضعه+
من امهاتك ان العفو مشهر
انا نؤمل عفوا منك تلبسه+
هذى البرية اذ تعفو وتنتصر
فاغفر عفا الله عما انت راهبة+
يوم القيامة اذ يهدى لك الظفر
قال فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اما ما كان لى ولبنى حضرت عبد المطلب عليه السلام فهو لله ولكم فقالت الانصار. وما كان لنا فهو لله ولرسوله صلى الله عليه وسلم. وسيأتى انه عليه الصلاة والسلام اطلق لهم الذرية وكانت ستة الاف ما بين صبى وامرأة، واعطاهم انعاما وأناسى كثيرا. حتى قال ابو الحسين بن فارس فكان قيمة ما أطلق لهم يومئذ خمسمائة ألف ألف درهم. فهذا كله من بركته العاجلة فى الدنيا، فكيف ببركته على من اتبعه فى الدار الاخرة.

অন্য বর্ণনায় উক্ত পংক্তিগুলো ছাড়াও আরো কয়েকটি পংক্তি আছে, যা নিম্নরুপ-
* হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদেরকে নাজাত দেয়ার লক্ষ্যে আপনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ ও দয়া করুন। আপনিই আমাদের চির কাঙ্খিত ও চির প্রত্যাশিত ব্যক্তি। সুতরাং আপনি আপনার যে সম্মানিতা মায়ের দুধ মুবারক পান করতেন উনাকে আপনি ক্ষমার পোশাক পরিয়ে দিন। আপনার ক্ষমা চিরকাল খ্যাতি প্রসারের কারণ হয়ে থাকবে। আমরা আপনার নিকট ক্ষমা প্রত্যাশা করি, যা দ্বারা আপনি এই কয়েকটি জীবনকে আচ্ছাদিত করবেন।  অতএব, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। সর্বত্রই মহান আল্লাহ পাক আপনাকে এমনকি ক্বিয়ামতের দিনেও আপনার সুমহান মর্যাদাকে আরো প্রকাশ করবেন; যখন আপনার শান-মান প্রকাশিত হবে।
সমস্ত কিছু শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এই সমস্ত গণীমত ও বন্দিদের মধ্যকার যারা আমার ও বনু আব্দুল মুত্তালিব-এর ভাগে আসবে, তা আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য তা তোমাদেরকে দান করে দিলাম।
এ কথা শুনে হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও বললেন, তাহলে যা আমাদের ভাগে আসবে, আমরাও তা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে দান করলাম।
এ সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নারী এবং শিশুসহ ছয় হাজার লোককে মুক্তি দান করলেন এবং তাদেরকে বিপুল সংখ্যক পশু ও দাস-দাসী প্রদান করলেন। হযরত আবুল হুসাইন ইবনে কায়িস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ওই সম্পদের মূল্য ছিলো ৫০ কোটি দিরহাম। আর এ সম্পদ ছিলো তাদের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে নগদ বরকত ও ইহসান।
কাজেই; যারা যমীনে থাকতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ করবে, আখিরাতে তারা কি পরিমাণ বরকত, রহমত লাভ করবে তা বলার অপেক্ষাই রাখে না। অর্থাৎ তারা বেমেছাল রহমত, বরকত ও নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ২৭৭, ২৭৮, ২৭৯)

0 Comments: