৪৭৪ নং- সুওয়াল :- নাবালিকা শিশু যারা, শিশু অবস্থাতেই মারা যায় তারা কি সকলেই বেহেশতে যাবে?

 মাসিক রহমানী পয়গামের নভেম্বর ১৯৯৫ ঈসায়ী ১ম বর্ষ ১১শ সংখ্যার নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসার জবাব সম্পর্কে দ্বিধান্বিত হয়েছি, এ ব্যাপারে সঠিক উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।
জিজ্ঞাসা : নাবালিকা শিশু যারা, শিশু অবস্থাতেই মারা যায় তারা কি সকলেই বেহেশতে যাবে?
জবাব : মুসলমানদের নাবালেগ সন্তানদের বেহেশতে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই। এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, তারা বেহেশতে যাবে। তবে এতটুকু শর্ত আছে যে, তার মাতা-পিতা মৃত্যু ঈমানের সাথে হতে হবে।


জাওয়াব  (বাইয়্যিনাত) : উক্ত জবাবের একাংশ শুদ্ধ হয়েছে। অর্থাৎ মুসলমানদের নাবালেগ সন্তানদের বেহেশতে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই। কিন্তু দ্বিতীয় অংশে শর্ত আরোপ করা হয়েছে যে, মাতা-পিতার মৃত্যু ঈমানের সাথে হতে হবে। এটা মোটেও শুদ্ধ নয় বরং পবিত্র কুরআন শরীফ-এর হুকুমের পরিপন্থী ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বহির্ভুত।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
*
অর্থ :- “যে পথভ্রষ্ট হয়, সে নিজের জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। আর কেউ অন্যের (পাপের) বোঝা বহন করবে না।” (সূরা বনি ইসরাইল- ১৫)
এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে হযরতুল আল্লামা কাজি সানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
*
অর্থ :- “এ আয়াত শরীফ হতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, শিশুদের ও পাগলদের আযাব হবে না, যদিও তারা মুশরিকদের সন্তান হয়।” (তাফসীরে মাযহারী, ৩য় খ-)
হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে,
*
অর্থ:- “মুনামা বিন মুয়াবিয়া বিন মরিয়ম বলেন, আমার চাচা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সাইিিয়্যদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল! কে জান্নাতে যাবে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নবীগণ জান্নাতী, শহীদগণ জান্নতী, সদ্য ভুমিষ্ট শিশু জান্নাতী আর জাহিলী যুগে জীবিত কবর দেয়া বালিকারা জান্নাতী।”
এ হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিহ তিনি ‘মুসনদে আহমদ’ কিতাবে বর্ননা করেছেন।
হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ আছে,
*
অর্থ:- “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি দীর্ঘ স্বপ্নের হাদীছ শরীফ হযরত সামুরা বিন জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি গাছের নিচে এক বৃদ্ধের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, আর তার চতুর্পার্শ্বে ছোট শিশুরা ছিলো। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি হচ্ছেন হযর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আর এরা হচ্ছে মুসলমানরে সন্তান, তিনি বললেন, হ্যাঁ- মুশরিকদের সন্তানও।” (আছ ছহিহুল বুখারী)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদী শরীফ-এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে, মাতা-পিতার ঈমানের সাতে মুত্যু হওয়া ও ঈমানহীন অবস্থায় মৃত্যু হওয়া সন্তানের জান্নাতী না হওয়া নির্ভর করে না।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক আরো বলেন,
*
অর্থ: - “প্রত্যেক ব্যক্তি যা উপার্জন করে (গুনাহ করে) তা নিজের জন্যই করে, কেউ অন্যের বোঝা বহন করবে না।” (সূরা আনআম/১৬৪)
এর থেকে বুঝা যাচ্ছে, রাহমানী পয়গামের উক্ত শর্তযুক্ত জবাব মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের পরিপন্থী। (তাফসীরুল কবীর, রুহুল মা’আনী, ইবনে কাসীর, দুররুল মনসুর, আহকামুল কুরআন কুরতুবি, রুহুল বয়ান, আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস, তাফসীরুল মাযহারী, বুখারী শরীফ, ইবনু হিব্বান, মুস্তাদারিকে হাকিম, উমদাতুল ক্বারি ও ফতহুল বারী ইত্যাদি।)
আবা-২৯

0 Comments: