৪২৫ নং- রাগের মাথায় আমি তাকে কি বলেছিলাম তা বলতে পারবো না। পরবর্তীতে আমার স্ত্রী বললো- তুমি এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক বলেছ। এ ঘটনার পর থেকে স্ত্রীর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এখন আমরা উভয়ই অনুতপ্ত। আমাদের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? বিস্তারিত জানিয়ে সুখী করবেন।

সুওয়াল - মাসিক মুঈনুল ইসলাম, সেপ্টেম্বর/৯৫ই সংখ্যায় নিম্ন বর্ণিত জিজ্ঞাসার সমাধান ছাপানো হয়- জিজ্ঞাসা - একদিন রাত্রে বন্ধুর বাসায় গেলে বন্ধু আমায় নেশা জাতীয় কিছু পান করতে দেয়। আমি তার অনুরোধ রক্ষার্থে পান করে ফেলি। কিন্তু তা পান করেও অস্বাভাবিক না হয়ে সম্পূর্ণ সুস্থাবস্থায় নিজেই গাড়ী ড্রাইভ করে বাসায় প্রত্যাবর্তন করি। আমার স্ত্রী কিন্তু এসব নেশা করা পছন্দ করেনা। তাই অদ্যকার অবস্থা টের পেয়ে ঝগড়া বাধিয়ে দেয়। ঝগড়ার সময় হিতাহিত জ্ঞান শুণ্য হয়ে আমি তাকে এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক বলে ফেলেছি। উল্লেখ্য যে, রাগের মাথায় আমি তাকে কি বলেছিলাম তা বলতে পারবো না। পরবর্তীতে আমার স্ত্রী বললো- তুমি এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক বলেছ। এ ঘটনার পর থেকে স্ত্রীর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এখন আমরা উভয়ই অনুতপ্ত। আমাদের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? বিস্তারিত জানিয়ে সুখী করবেন। 

সমাধান - পবিত্র কুরআন ও হাদীছ দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, খারাব কিংবা যদ্বারা নেশা হয়, তা পান করা হারাম। তাছাড়া কিতাবে একথাও উল্লেখ রয়েছে যে, নেশাখোরদের মৃত্যুর সময় ঈমান নসীব হয়না। হাবীবুল্লাহ হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কয়েকটি বস্তুর ব্যাপারে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে উম্মতকে সাবধান করে গেছেন। তম্মধ্যে একটি হচ্ছে- মাদক দ্রব্য। “তোমরা অবশ্যই মদ ও মাদক দ্রব্য হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে। কেননা সমস্ত বেহায়াপানা, নোংরামী ও অনিষ্টের মূল হচ্ছে এই মাদক দ্রব্য।” মহান আল্লাহ্ তায়ালা তিনি উম্মতে মুহাম্মদীকে এসব গর্হিত কার্যাদী হতে বাঁচিয়ে রেখে সঠিক বান্দা হিসাবে দুনিয়াতে জীবনযাপন করে পরকালের সফলতা অর্জন করার তাওফীক দান করুন। ইসলামী আইন মতে কোন লোক মাতাল হয়ে অজ্ঞান অবস্থায় তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করলে তালাক পতিত হবেনা। কিন্তু নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহণ করে একেবারে জ্ঞানশূণ্য না হয়ে শুধু মাতাল হয়ে তালাক প্রদান করলে তালাক পতিত হবে। প্রশ্নের বর্ণনা মতে, নেশা পান করে নেশাকারী স্বাভাবিক অবস্থায়া গাড়ী চালিয়ে বাসায় এসেছে। পরবর্তীতে ঝগড়া করার কারণে ক্রোধাদ্ধ হয়ে অস্বাভাবিক অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেছে। প্রশ্নের বর্ণনা যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে তার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়নি। অতএব পূর্বের ন্যায় উভয়ে স্বামী-স্ত্রীরূপে ঘর সংসার করতে পারবে। ভবিষ্যতে এ ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকা অবশ্যই জরুরী। (শামী ৩/২৪৪) এখন আমার কাছে উক্ত সমাধান সঠিক বলে মনে হয়না। তাই এর সঠিক জবাব দিয়ে বাধিত করবেন। 

জাওয়াব - মাসিক মুঈনুল ইসলামের তালাক সম্পর্কীয় উক্ত সমাধান সম্পূর্ণরূপে ভুল, বানোয়াট, অজ্ঞতামূলক ও কল্পণাপ্রসুত, যা সমাজে ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করবে। প্রশ্নে উল্লেখিত বর্ণনা মোতাবেক উক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর উপর তিন তালাকই পতিত হবে। কারণ ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে রাগের সাথে যত তালাকই দিক না কেন তাতে তালাক পতিত হবে। যেহেতু সে তিন তালাক দিয়েছে, কাজেই তিন তালাকই পতিত হবে। কারণ সে নেশা পান করার পর সম্পূর্ণ সুস্থাবস্থায় নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করেছে। পরবর্তীতে ঝগড়ার কারণে ক্রোধাম্বিত হয়ে তালাক দিয়েছে। আর রাগের বশবর্তী হয়ে তালাক দিলে তালাক পতিত হবে। খুশীর সাথে কেউই তালাক দেয়না। আর তালাক দেয়ার জন্য কেউ বিবাহ করেনা। মাসিক মুঈনুল ইসলাম কর্তৃপক্ষ উক্ত মাসয়ালা যথাযথভাবে বুঝতেই সমর্থ হয়নি। কারণ তাদের প্রাথমিক বক্তব্যের দ্বারা বুঝা যায় যে, উক্ত অবস্থায় তালাক পতিত হবে। কেননা তালাক দাতা নেশা পান করে জ্ঞানশূণ্য বা বেহুঁশ হয়নি। তাহলে সে গাড়ী চালিয়ে আসতে পারতো না। সে ইচ্ছাকৃতভাবেই নেশা পান করেছে ও তার পূর্বে ও পরে সম্পূর্ণই সুস্থ ছিল, যা তার বক্তব্য দ্বারাই বুঝা যায়। আর তালাক দাতার বক্তব্য যে, “রাগের মাথায় আমি তাকে কি বলেছিলাম, তা বলতে পারবো না।” এর জবাব হলো- সে যেহেতু ঝগড়া করে তালাক দিতেই বাধ্য হয়েছে। কাজেই ঝগড়াটা ছিল খুব মারাত্মক। আর একই সাথে অধিক সময় ঝগড়া করলে সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তিরাও বলতে পারেনা যে, সে কখন কি বলেছিল। আর তার স্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছে যে, স্বামী তাকে তিন তালাক দিয়েছে। অতএব, প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় উক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর উপর তিন তালাকই পতিত হয়েছে। কাজেই তার সাথে ঘর সংসার করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়েয হবে। (আলমগীরী, শামী, আইনুল হেদায়া, শরহে বেকায়া, বাহ্রুর রায়েক, কাজিখান, ফতহুল ক্বাদীর, দুররুল মোখতার, বেনায়া ইত্যাদি। 
আবা-২৭

0 Comments: