সুওয়াল - আপনাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার গবেষণা বিভাগ থেকে “ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা হারাম” শিরোনামে একটি লিফলেট বিভিন্ন স্থানে যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, বাজার-বন্দরে বিলি করা হচ্ছে, তা আমরাও পেয়েছি এবং পড়েছি। তবে দয়া করে সেই লিফলেটটি হুবহু ছাপিয়ে সংক্ষেপে আরো একটু বুঝিয়ে দিলে আমরা উপকৃত হতাম। আর ইসলামের নামে যদি গণতন্ত্র হারামই হয়ে থাকে, তাহলে আমরা কি করবো?
জাওয়াব - আমরা আমাদের হ্যান্ডবিলের শিরোনাম দিয়েছি, “ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা হারাম” আর সেই সাথে “হারামকে হালাল জানা কুফরী এবং হারামকে হারাম জেনে করা ফাসেকী।” অর্থাৎ আমাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা জায়েয নেই। কারণ ইসলাম হচ্ছে মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে ওহীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি নাযিলকৃত দ্বীন, যা সম্পূর্ণ মহান আল্লাহ্ পাক উনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা ইত্যাদি সমস্ত কিছু মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে ফয়সালাকৃত। যার মধ্যে মানব রচিত কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন,
هوالذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله.
অর্থঃ- “সেই মহান আল্লাহ্, যিনি পাঠিয়েছেন উনার রসূল (ছল্লাল্লাহুহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে, হেদায়েত এবং সত্য দ্বীনসহ অন্য সমস্ত ধর্মের উপর প্রাধান্য দিয়ে।” (সূরা ফাতাহ্, আয়াত-২৮)
অর্থাৎ অন্যান্য সমস্ত ধর্ম বাতীল করে দিয়ে একমাত্র দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
আর গণতন্ত্র হচ্ছে, মানব কর্তৃক রচিত অর্থাৎ যার আইন-কানুন, নিয়ম-পদ্ধতি, তর্জ-তরীক্বা ইত্যাদি সমস্ত কিছুই মানব দ্বারা তৈরীকৃত। যা তার শাব্দিক অর্থ দ্বারাই বুঝা যায়। আর গণতন্ত্র শব্দের অর্থ আমরা হ্যান্ডবিলেই দিয়েছি। যার মধ্যে মহান আল্লাহ্ পাক পাক উনার তরফ থেকে ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত আইন-কানুন মানুষের অনুমোদন ব্যতীত কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ গণতন্ত্রে মহান আল্লাহ্ পাক উনার আইন-কানুন ইত্যাদি, মহান আল্লাহ্ পাক উনার আদেশ-নিষেধ মোতাবেক গ্রহণযোগ্য নয়। বরং মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে, তা গ্রহণ করা বা না করা। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
عسى ان تكر هوا شيئا وهو خير لكم وعسى ان تحبوا شيئا وهو شر لكم والله يعلم وانتم لا تعلمون.
অর্থঃ- “সম্ভবতঃ তোমরা যা খারাপ মনে করে থাক, অথচ সেটাই তোমাদের জন্য উত্তম, আর তোমরা যেটা ভাল মনে করে থাক, অথচ সেটাই তোমাদের জন্য খারাপ, মূলতঃ মহান আল্লাহ্ পাক তিনিই জানেন, তোমরা জাননা।”
অতএব, মানব রচিত গণতন্ত্র যত ভাল মনে করা হোক না কেন, তা কখনোই ভাল ও গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষের ভালোর জন্য মহান আল্লাহ্ পাক একমাত্র দ্বীন ইসলামকে মনোনীত করেছেন। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন,
من لم يحكم بما انزل الله فالئكهو هم الكافرون.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক যা নাযিল করেছেন (ইসলাম বা শরীয়ত), সে মোতাবেক হুকুম করেনা, সে কাফের। অর্থাৎ যে মহান আল্লাহ পাক উনার আইন-কানুন ব্যতীত মনগড়া আইন-কানুন মোতাবেক আদেশ-নিষেধ করে, সে কাফের। তাই আমরা হ্যান্ডবিলে লিখেছি যারা মানব রচিত গণতন্ত্র হালাল জানে, তারা কুফরী করে। আর যারা হারাম জেনে করে, তারা ফাসেক। কারণ শরীয়তের উসূল হলো- হারামকে হালাল জানা কুফরী, আর হারামকে হারাম জেনে করা ফাসেকী।
নিম্নে আমরা হ্যান্ডবিলটি হুবহু ছাপিয়ে দিলাম-
“ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা হারাম” “হারামকে হালাল জানা কুফরী আর হারামকে হারাম জেনে করা ফাসেকী”
আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর পক্ষ হতে-‘ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা হারাম’ শিরোনামে এই লিফলেট/হ্যান্ডবিল প্রকাশ করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক উনার দরবারে অশেষ শুকরিয়া। “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ” -প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল- ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে যে সকল দ্বীনী ইখ্তিলাফ বিদ্যমান, শরয়ী ফায়সালার মাধ্যমে তার অবসান করা এবং সকল বিদয়াত-বেশরা, হারাম ও নাজায়েয কাজের মূলোৎপাটন করে, মানুষের মধ্যে দ্বীনের সহীহ্ বুঝ পয়দা করে দেয়া। যেন প্রত্যেকেই সঠিক দ্বীন অনুসরণ করে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি ও মহব্বত হাসিলের মাধ্যমে দুনিয়াবী ও উখরভী কামিয়াবী লাভ করতে পারে। এ মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমরা ইতিপূর্বে- “মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তারাবীহ্ নামাযে বা অন্যান্য সময় কোরআন শরীফ খতম করে উজরত (পারিশ্রমিক) গ্রহণ করা জায়েয।” শিরোনামে তিনটি লিফলেট বা হ্যান্ডবিল প্রকাশ করেছিলাম। অবশ্য উল্লেখিত প্রত্যেকটি বিষয়েই আমাদের প্রকাশিত বহুল প্রচারিত, সত্যের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১১, ১৩ ও ২৩-২৪তম সংখ্যাগুলোতে অকাট্য নির্ভরযোগ্য ও অসংখ্য দলীল-আদিল্লা দ্বারা ফতওয়া দেয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও ইন্শাআল্লাহ্ এরূপ আরো ফতওয়া দেয়া হবে। যার ফলশ্রূতিতে মানুষ উল্লেখিত বিষয়ে শরীয়তের সঠিক ফায়সালা অবগত হয়ে, তাদের আমল ও আক্বীদা শুদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছে বা পাবে। বর্তমানে গণতন্ত্র নামক যে কুফরী মতবাদ সারা বিশ্বে বিরাজ করছে, সে কুফরী মতবাদের মূলোৎপাটনের প্রয়াসে প্রদত্ত ফতওয়ার অবতারণা।
ইসলামই একমাত্র পরিপূর্ণ দ্বীন
মহান আল্লাহ্ পাক সূরা ইমরানের ১৯নং আয়াতে বলেন, “নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহ্ পাক-এর কাছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন।”
উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর দ্বারা এই কথাই স্পষ্ট হচ্ছে যে, বান্দারা তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক প্রতি ক্ষেত্রেই ইসলাম মেনে চলবে। এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে, ‘হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহ্ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহুহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা ইহুদীদের নিকট থেকে কিছু কথা শুনি, যাতে আশ্চর্যবোধ করি। তার থেকে কিছু কি আমরা লিখে রাখব? তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,- “হে ছাহাবায়ে কিরাম! তোমরা কি ইহুদী-নাসারাদের মত (ইসলাম সম্পর্কে) দ্বিধাগ্রস্থ রয়েছ? নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ, উজ্জল দ্বীন নিয়ে এসেছি। এমন কি ইহুদীদের নবী হযরত মুসা আলাইহিস সালাম তিনিও যদি জীবিত থাকতেন, তবে উনার উপরও আমার দ্বীন মানা ওয়াজিব হতো।” (আহ্মদ, বায়হাক্বী) অতঃপর আল্লাহ্ পাক সূরা ইমরানের ৮৫নং আয়াত শরীফে বলেন, “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম বা নিয়ম-নীতি তালাশ (অনুসরণ) করে, তার থেকে তা কখনই গ্রহণ করা হবে না। এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভূক্ত হবে।” এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে, আল্লাহ্ পাক হযরত ইউশা বিন নূন আলাইহিস সালামকে জানালেন যে তাঁর ১ লক্ষ উম্মতকে ধ্বংস করা হবে। তার মধ্যে ষাট হাজার সরাসরি পাপে লিপ্ত। তখন হযরত ইউশা বিন নূন আলাইহিস সালাম জানতে চাইলেন বাকী চল্লিশ হাজার উম্মতকে কোন কারণে ধ্বংস করা হবে। জবাবে আল্লাহ্ পাক জানালেন তারা পাপীদের সাথে মিলামিশা করে ও পাপ থেকে নিষেধ করে না। এ বিষয়ে আল্লাহ্ পাক বলেন, “তোমরা নেকী ও পরহেজগারীতে একে অন্যের সাহায্য কর, পাপ ও সীমালংঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সাহায্য করো না এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে ভয় কর।” আর হাদীছ শরীফে আছে- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখবে, তার হাশর-নশর তার সাথেই হবে।” (আবূ দাউদ, মসনদে আহ্মদ)
উপরোক্ত কুরআন শরীফ-এর আয়াত ও হাদীছ শরীফের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিজাতীয় বা বিধর্মীদের (যেমন- ইহুদী, খ্রীষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, অগ্নি-উপাসক, রাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক) নিয়ম-নীতি অনুকরণ-অনুসরণ করা ও মানা নাজায়েয এবং হারাম।
গণতন্ত্র বিধর্মীদের প্রবর্তিত পন্থা
ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা হারাম। কারণ গণতন্ত্র বিধর্মীদের দ্বারা প্রবর্তিত পদ্ধতি, যা মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে ওহীর দ্বারা নাযিলকৃত নয়। বরং পূর্ববর্তী যামানায় মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে নাযিলকৃত আসমানী কিতাব বিকৃত হওয়ার অথবা নফসানিয়াতের দরুন বিকৃতি বা পরিত্যাগ করার পর বিধর্মীরা তাদের দেশ পরিচালনা করার জন্য, খোদায়ী আইনের পরিবর্তে নিজেরা যে সব আইন প্রণয়ণ করেছিল, পরবর্তী সময় সেগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গণতন্ত্র, যা খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রীসে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। গণতন্ত্রের ইংরেজী হচ্ছে উবসড়পৎধপ। যা এসেছে গ্রীক উবসড়ং এবং কৎধঃড়ং থেকে। উবসড়ং অর্থ জনগণ এবং কৎধঃড়ং অর্থ শাসন। আবার বাংলায় ‘গণ’ অর্থ জনগণ, আর ‘তন্ত্র’ অর্থ নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনগণের নিয়ম-কানুন বা পদ্ধতি অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা বা সরকার পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রেগণতন্ত্রের প্রবক্তা আব্রাহাম লিঙ্কনের উক্তি উল্লেখ্য। তার ভাষায়- উবসড়পৎধপু রং ধ এড়াবৎহসবহঃ ড়ভ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব, নু ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ধহফ ভড়ৎ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব যার অর্থ হলো- গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য।
গণতান্ত্রিক ধ্যান ধারণায় যে সব বিষয় সমূহকে মূল শর্ত হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, তা হচ্ছে -
(ক) সার্বভৌমত্ব জনগণের- জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস বা সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। অথচ আল্লাহ্ পাক সূরা মায়েদার ১২০নং আয়াত শরীফে বলেন, “আসমান ও যমীন এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে, সমস্ত কিছুরই মালিক মহান আল্লাহ্ পাক। আর তিনিই সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
(খ) জনপ্রতিনিধিরাই একমাত্র আইন প্রণেতা- জন প্রতিনিধিদের দ্বারা প্রণীত আইনই গণতন্ত্রের একমাত্র আইন। যার কারণে গণতান্ত্রিক আইন সভায় যদি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর অর্থাৎ কোন শরয়ী আইন পেশ করা হয়, আর যদি সেটা তাদের গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার খেলাফ হয় বা মনঃপূত না হয়, তবে সেসব শরয়ী আইন সেখানে উপেক্ষিত হয় বা আদৌ গৃহীত হয় না। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা আনআম-এর ৫৭নং আয়াত শরীফে বলেন, “নিশ্চয়ই হুকুম বা আইন একমাত্র মহান আল্লাহ্ পাক উনার।” এ আয়াত শরীফের দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, আইন প্রণেতা একমাত্র মহান আল্লাহ্ পাক তিনি। সেক্ষেত্রে জন প্রতিনিধিদেরকে আইন প্রণেতা হিসাবে গ্রহণ করা কুফরী। যা মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা মায়েদার ৪৪নং আয়াত শরীফে বলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক তিনি যা নাযিল করেছেন (শরীয়ত), সে অনুযায়ী যে হুকুম (আদেশ-নিষেধ) করে না, সে কাফির।”
অতএব উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা একথা স্পষ্টই ফুটে উঠে যে, মহান আল্লাহ্ পাক উনার আইনই একমাত্র আইন। এর বিপরীত কোন আইন বা নিয়ম-পদ্ধতি তালাশ করা জাহেলিয়াতের নামান্তর। যা মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা মায়েদার ৫০নং আয়াত শরীফ-এ বলেন, “তারা কি জাহেলিয়াতের আইন-কানুন তালাশ করে? মহান আল্লাহ্ পাক তিনি অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্য উত্তম আইন প্রনয়ণকারী কে আছে? অন্যত্র মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলেন, “সতর্ক হও! হুকুম একমাত্র মহান আল্লাহ্ পাক উনারই এবং তিনি অতি দ্রুত হিসাব গ্রহণ করবেন।” (সূরা আনআম, আয়াত-৬২)
(গ) কুরআন শরীফের আয়াত অস্বীকার- পুরুষ ও মহিলার ভোটের মান সমান বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ গণতন্ত্রে মহিলার স্বাক্ষ্য পুরুষের সমান বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ‘সূরা বাক্বারা’র ২৮২নং আয়াত শরীফে বলেন, “তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দু’জন স্বাক্ষী দাড় করাও, যদি দু’জন পুরুষ না পাওয়া যায়, তবে একজন পুরুষ, দু’জন মহিলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ কর।” অর্থাৎ ইসলামে দু’জন মহিলার স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের স্বাক্ষ্যের সমান। কিন্তু গণতন্ত্রে একজন মহিলার স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের স্বাক্ষের সমান।
(ঘ) বহুদলীয় ব্যবস্থা- গণতন্ত্রে বহুদলীয় মত-পথের অস্তিত্বকে আবশ্যকীয় শর্ত করা হয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে বলেন, “তোমরা সকলে মহান আল্লাহ্ পাক উনার রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর। পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা।” (সূরা ইমরান, আয়াত নং-১০৩) অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যে নিয়ম-নীতি প্রণয়ন করেছেন, মুসলমানদেরকে অবশ্যই সর্বাবস্থায় সেই নিয়ম-নীতির উপর সুদৃঢ় থাকতে হবে। কাজেই একাধিক দল-মত-পথ গঠন করা এবং তার সাহায্য সহযোগীতা করা কোন অবস্থাতেই জায়েয হবেনা।
গণতন্ত্রের মাধ্যমে খিলাফত প্রতিষ্ঠার
চেষ্টা করা গোমরাহী বৈ কি?
যারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র করছে, তাদের বক্তব্য হলো- তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় গিয়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করবে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা আ’রাফের ৫৮ নং আয়াত শরীফে বলেন, “যা নাপাকী বা খারাপ, তা থেকে নাপাকী বা খারাপ ব্যতীত কিছুই বের হয় না। কাজেই গণতন্ত্রের মাধ্যমে খেলাফত কায়েম করার চিন্তাধারা শরীয়ত বিরোধী ও অজ্ঞতামূলক।
যখন কাফিররা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রস্তাব দিয়েছিল যে, মিলেমিশে অর্থাৎ উভয় উভয়ের থেকে কিছু নিয়ম-নীতি গ্রহণের মাধ্যমে ধর্ম পালন করার জন্য। তখন আল্লাহ্ পাক সূরা কাফিরূন নাযিল করে জানিয়ে দিলেন- “হে হাবীব আপনি বলুন, হে কাফিরেরা! আমি যার ইবাদত করিনা, তোমরা তার ইবাদত কর। আর আমি যাঁর ইবাদত করি, তোমরা উনার ইবাদত কর না। তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আর আমার দ্বীন আমার জন্য।” মহান আল্লাহ্ পাক আরো বলেন, “তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করোনা।” (সূরা বাকারা, আয়াত নং-৪২)
অতএব, গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে খেলাফত কায়েম করার জন্য কোশেশ করা শরীয়ত বিরোধী। শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতেই খেলাফত কায়েম করার জন্য কোশেশ করতে হবে, চাই তা কায়েম হোক বা না হোক। কেননা হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে- “চেষ্টা বান্দার তরফ থেকে, পুরা করবেন আল্লাহ্ পাক।”
অনুসরণীয় কে?
এখন কেউ বলতে পারেন যে, বর্তমানে অনেক আলেম-উলামা, সূফী-দরবেশ, পীর-মাশায়েখ, শায়খুত-তাফসীর, শাইখুল হাদীছ, মুফতী-মুহাদ্দিছ ইত্যাদি নামধারী অনেক ব্যক্তিবর্গই ইসলামের নামে গণতন্ত্র করছে এবং অনেক দলমতও গঠন করছে, আর পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ লোকই গণতন্ত্র করছে, এটার ফায়সালা কি? এটার জবাব হলো, ইসলামী শরীয়ার মূল ভিত্তি হলো- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস। কাজেই কোন ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোককে ততক্ষণ পর্যন্ত দলীল হিসেবে গ্রহণ করা ও অনুসরণ করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও অধিকাংশ লোক উল্লিখিত শরীয়তের ভিত্তির উপর কায়েম না থাকবে। আর যারা গণতন্ত্র করে, তারা মূলতঃ গণতন্ত্রের প্রবর্তক ও চর্চাকারী ইহুদী, খ্রীষ্টানদের অনুসরণ করে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে বলেন, “বলুন নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক উনার হেদায়েতই প্রকৃত হেদায়েত। আপনার নিকট ইল্ম (ইসলাম) আসার পর যদি তাদের নফসের (মতবাদের) অনুসরণ করেন তাহলে আপনি মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে অলী (অভিভাবক) এবং সাহায্যকারী পাবেন না।” (সূরা বাকারা, আয়াত নং-১২০) সুতরাং যারা ইসলামের নামে হারাম গণতন্ত্র করছে, তাদেরকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে হারাম। যিনি বা যারা নুবুওওয়তের দৃষ্টিতে খেলাফতের জন্য কোশেশ করছেন, একমাত্র তিনিই বা তারাই অনুসরণীয়।
“হারামকে হালাল বলা কুফরী”
উপরোক্ত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা হারাম। অতএব, যারা এ হারামকে জায়েয বা হালাল মনে করবে, শরীয়তের উসূল মোতাবেক তারা মুরতাদ (কাফির) হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারামকে হালাল, আর হালালকে হারাম বলা কুফরী। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ বলেন, “যে কোন ব্যক্তি মহান আল্লাহ্ পাক এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাফরমানি এবং উনার সীমা অতিক্রম করে, তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে এবং তার জন্য সেখানে রয়েছে লাঞ্ছিত শাস্তি।” (সূরা নিসা, আয়াত নং-১৪)
আর এরূপ লোক ইমাম হলে, তার পিছনে নামায পড়া হারাম। আর যারা হারামকে হারাম জেনে আমল করবে, তারা ফাসেক বলে গণ্য হবে। এরূপ লোকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনাদের প্রতি কুফরীর তোহমত
অনেকে বলে থাকে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ, বিশেষ করে খোলাফা-ই-রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ গণতন্ত্রের ভিত্তিতে খলীফা হয়েছেন (নাউজুবিল্লাহ্ িমিন যালিক)।
মূলতঃ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ সম্পর্কে এরূপ মন্তব্য পেশ করা সম্পূর্ণ মূর্খতাসূচক ও কুফরীর তোহ্মত দেয়ার নামান্তর। যেখানে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর অকাট্য দলীল দ্বারা গণতন্ত্র হারাম ও কুফরী মতবাদ হিসেবে প্রমাণিত, সেখানে হযরত খোলাফা-ই-রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের পক্ষে কি করে গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে খলীফা হওয়া সম্ভব? এরূপ মূর্খসূচক মন্তব্য সে ব্যক্তিই করতে পারে, যে ইসলাম ও গণতন্ত্র সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ ও জাহেল। খোলাফা-ই-রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ কেউ সরাসরি খলীফার দ্বারা মনোনীত হয়েছেন, আর কেউ মজলিসে শুরার মাধ্যমে খলীফা মনোনীত হয়েছেন। মূলতঃ খোলাফা-ই-রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ নির্বাচিত হননি, বরং উনারা মনোনীত হয়েছেন। যার বিস্তারিত ইতিহাস পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে ইন্শাআল্লাহ্।
মোটকথা হলো- উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও সূন্নাহ্ শরীফ ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হলো যে, ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা, উহার সমর্থন করা, সাহায্য-সহযোগীতা করা, দল-মত গঠন করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আমাদের সকলকে ইসলামের নামে হারাম গণতন্ত্র করা থেকে হিফাজত করুন ও শরীয়তসম্মতভাবে কোশেশ করার তৌফিক দান করুন (আমীন)।
এই হ্যান্ডবিলটি প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে- মানুষের ঈমান-আক্বীদা হিফাজত করে মহান আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টি হাসিল করা। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন,
رضوان من الله اكبر.
অর্থঃ- “মহান আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়।”
অতএব, আমাদের এখন এটাই কর্তব্য হবে যে, মানব রচিত সমস্ত তন্ত্র-মন্ত্র ও মতবাদ ছেড়ে দিয়ে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর আলোকে নুবুওওয়াতের দৃষ্টিতে খিলাফত কায়েম করার জন্য কোশেশ করা।
[আমরা পরবর্তীতে আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় “গণতন্ত্র হারাম হওয়ার ফতওয়া এবং খিলাফত সম্পর্কে” বিস্তারিত আলোচনা করবো ইন্শাআল্লাহ্।] আবা-২৬
গণতন্ত্র হারাম ফতোয়া -
0 Comments:
Post a Comment