ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া -পর্ব-৫
“ইসলামের
নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য হিজরী পঞ্চদশ
শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম,
আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতিষ্ঠিত ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত
যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত। এ পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়া
প্রকাশ বা পত্রস্থ করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার একমাত্র উদ্দেশ্য
মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও আমল পরিশুদ্ধ করা। এ জন্যেই মূলতঃ যুগে যুগে প্রেরিত
হয়েছেন এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস
সালাম। এবং সর্বশেষ নবী-রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
অতঃপর প্রত্যেক শতাব্দীর মাঝে প্রেরিত হয়ে আসছেন তাঁর খাছ নায়িব বা ওয়ারিছ তথা
যামানার মুজাদ্দিদগণ।
কাজেই, বান্দা ও উম্মত যদি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার ও সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, রহমত ও
নাজাত পেতে চায়,
হাক্বীক্বী বান্দা ও হাক্বীক্বী উম্মত হতে চায়, প্রকৃত মু’মিন,
মুসলমান ও মুত্তাক্বী হতে চায় তাহলে তার জন্য যামানার
মুজাদ্দিদের অনুসারী হওয়া ব্যতীত বিকল্প কোন পথ নেই। সেটা কাছে থেকে হোক কিংবা
দূরে থেকে হোক। কারণ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
واتبع سبیل من اناب الی.
অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তির পথ অনুসরণ করে চলো যিনি
আমার দিকে রুজু রয়েছেন” (সূরা লুক্বমান-১৫)
স্মরণীয় যে, আজকে মুসলমানরা তাদের আদর্শ-ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা, আচার-আচরণ গ্রহণে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের এই নাজুক অবস্থা কাটিয়ে ইসলামী
আদর্শে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আহবান করছেন যামানার মহান মুজাদ্দিদ মুদ্দা
জিল্লুহুল আলী। সুতরাং তাঁর মুবারক আহবানে সাড়া দেয়ার সময় এখনই। এ লক্ষ্যে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকাার পাঠক, গ্রাহক,
শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীগণ ‘মাসিক আল
বাইয়্যিনাত’-এর আকর্ষণীয় ও উলেّখযোগ্য
বিভাগ ‘সুওয়াল-জাওয়াব’ ও ‘ফতওয়া’ বিভাগে
ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্র্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা
জানার জন্য অসংখ্য সুওয়াল প্রেরণ করেন। যেহেতু আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন কালামে
পাকে ইরশাদ করেন,
فسئلوا اهل الذکر ان کنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- ‘যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিءেস করে জেনে নাও।’ (সূরা নহল-৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
তাই প্রেরিত সুওয়ালসমূহের
প্রেক্ষিতে ‘ইসলামের নামে গণতন্ত্র নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া’ ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ,
ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পেশ করা হলো।
প্রকৃত
বন্ধুর পরিচয়
মূলতঃ আমাদের সাথে কারো
যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের
খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ মুসলমানের
বন্ধুত বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে
ইরশাদ হয়েছে যে,
عن
ابی
هریرة
رضی
الله
تعالی
عنه
قال
قال
رسول
الله
صلی
الله
علیه
وسلم
من
احب
لله
وابغض
لله
واعطی
لله
ومنع
لله
فقد
استکمل
الایمان
অর্থঃ ‘হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
বস্তুতঃ মাসিক আল
বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লিখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া,
প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকায় ‘ইসলামের নামে গণতন্ত্র নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া’
দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো সত্যান্বেষী বা হক্ব
তালাশী মুসলমানগণের নিকট সঠিক বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই
তাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযতের মাধ্যমে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত
লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল
হওয়া স্বাভাবিক,
তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে বা শুধরিয়ে দেয়া ঈমানী দায়িত্ব। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن
ابی
هریرة
رضی
الله
تعالی
عنه
قال
قال
رسول
الله
صلی
الله
علیه
وسلم
المؤمن
مرأة
المؤمن
اذا
رأی
فیه
عیبا
اصلحه.
অর্থঃ- ‘হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ
পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে আয়না। যখন সে তার মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখবে তখন সে তাকে সংশোধন
করে দিবে।’
(বুখারী, আবূ দাউদ, মিশকাত)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের
আলোকে অসংখ্য,
অগণিত পাঠকগণের পূণঃপূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের
আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে ইসলামের নামে গণতৗনির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রদান করা হলো। যাতে করে
সত্যান্বেষী,
মুসলমানগণ এ সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী
ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ
থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
সুওয়ালকারীদের নাম-ঠিকানা
সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর
হুসাইন,
ঢাকা
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মুহম্মদপুর,
ঢাকা
মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম, চান্দিনা,
কুমিলّা
মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শালিখা,
মাগুরা
মুহম্মদ আফতাবুদ্দীন, কোনাবাড়ী,
গাজিপুর
মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, মাহিগঞ্জ,
রংপুর
শাফিয়ী আহমদ, রাজারহাট,
কুড়িগ্রাম
মুহম্মদ সদরুল আমীন
গোলাপগঞ্জ,
সিলেট
মুহম্মদ আশাদুজ্জামান, পলাশবাড়ী,
গাইবান্দা
মুহম্মদ আশফাকুর রহমান, সিংড়া,
নাটোর
মুহম্মদ ইছহাকুর রহমান, কসবা,
বি.বাড়িয়া
মুহম্মদ শফিকুছ্ ছালেহীন, মতলব,
চাঁদপুর
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রভাকরদী,
এন. গজ্ঞ
মুহম্মদ হারিছুর রহমান, রাজপাড়া,
রাজশাহী
মুহম্মদ কাওছার হুসাইন, বানারীপাড়া,
বরিশাল
মুহম্মদ হাদীউল ইসলাম, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, কুটিয়াদী,
কিশোরগজ্ঞ
মুহম্মদ আবুল কাশেম, আক্কেলপুর,
জয়পুরহাট
মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ, কালীহাতি,
টাঙ্গাইল
সুওয়াল:
বর্তমান সময় যে সমস্ত “সংসদ নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অন্যান্য দলগুলোর মতো নামধারী ইসলামী
দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে তথা প্রার্থী দেয়। ইসলামের নামে
যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তারা সাধারণতঃ প্রচার করে থাকে যে, গণতন্ত্র
আর ইসলাম একই বিষয় এবং তারা যে গণতন্ত্র করছে, সেটা
হচ্ছে ইসলামী গণতন্ত্র। তারা গণতন্ত্রের ভিত্তি ভোটকে আমানত, শুপারিশ,
উকিল নিয়োগ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলে প্রচার করে
থাকে।
কেউ কেউ আবার ইসলামী দলকে
ভোট দেয়া ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে। আরো বলে থাকে যে, ইসলামী
দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট
পাওয়া যাবে। যেমন জামাত নেতারা কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকারে
বলেছে,
ইসলাম ও গণতন্ত্র একই বিষয়।
বায়তুল মুকাররমের খতীব
ওবায়দুল হক বলেছে, “ভোট দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অর্থাৎ ফরয। আল্লাহ পাক
বলেন,
ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।” (দৈনিক সংগ্রাম ১লা জুলাই-২০০৬)
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক
মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান
সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের
সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে
নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা
বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে, ইসলামী
শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা
বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
অনুরূপ হাটহাজারী খারেজী
মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলামের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর’ ০৬ সংখ্যায়ও ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে, (ক)
গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার। (১) পাশ্চত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (২) ইসলামী
গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন (গ)
পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। (ঘ) কুরআন সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত,
সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি
অনেক ভুল তথ্য তারা উল্লেখ্য করেছে। পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র “আত্ তাওহীদ”
ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭, জুলাই-আগস্ট/৯৭
সংখ্যায় ভোট-নির্বাচন
এমনকি ভোট বেচা-কেনা করাকেও জায়িয ফতওয়া দিয়েছে।
আর উল্লিখিত বিষয়ে তাদের
নিকট দলীল তলব করলে তারা সাধারণতঃ মুফতী শফীর মা’য়ারিফুল
কুরআন ও ভোটের ইসলামী শরয়ী বিধান এবং শামসুল হক ফরীদপুরী ছাহেবের বক্তব্য তুলে ধরে
বলে থাকে যে,
তারা ভোটকে জায়িয বলেছেন। এখন আমাদের জানার বিষয় হলোঃ
.....১৪।
পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মুখপত্র আত তাওহীদ-এর
ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭ এবং জুলাই আগস্ট/৯৭ সংখ্যা সমূহে
ভোট নির্বাচন সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে যা লিখেছে:
(ক) শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে শাহাদাত বা
সাক্ষ্য।
(খ) বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন করা
ইসলামপন্থিদের জন্য একান্ত
কর্তব্য।
(গ) ভোট নাগরিক অধিকার, এ অধিকার
অর্জনে মা’জুর বশতঃ মহিলাদের জন্যও ছবি তোলা
জায়িয রয়েছে।
(ঘ) দ্বীন ইসলাম রক্ষার্থে ভোট বেচা-কেনা করাও
জায়িয রয়েছে।
পটিয়া-খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবদের
উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক ও শরীয়ত সম্মত।
১৫। আজকাল নামধারী প্রতিটি
ইসলামী দলকেই দেখা যায় বিভিন্ন দলের সাথে জোট বা চুক্তি করে থাকে। তাদেরকে এ
ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তারা এটাকে হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তুলনা করে থাকে।
হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তাদের উক্ত জোট বা চুক্তিকে তুলনা করা সঠিক ও শরীয়তসম্মত
কিনা?
১৬। যে সকল কথিত মাওলানা, মুফতী,
মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ, খতীব,
পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট,
নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে এবং ক্ষমতার লোভে বাতিলের সাথে আতাত করছে তারা
হক্কানী আলিম কিনা? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা? তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা
কি?
১৭। যদি ইসলামের দৃষ্টিতে
গণতন্ত্র,
ভোট, নির্বাচন নাজায়িয হয় তবে রাষ্ট্র
পরিচালিত হবে কিভাবে? এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে? রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা কি ফরযে আইন? আর এজন্য কি সশস্ত্র বিপ্লব বা বোমাবাজি, জিহাদ বা
জঙ্গী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যাবে?
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয়
দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করবেন বলে
আমরা আশাবাদি।
জাওয়াবঃ
ইসলামের নামে বা ইসলামের
দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র, ভোট, নিবার্চন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া, নিজ দলকে ভোট দেয়া ওয়াজিব ও
জান্নাতের টিকেট লাভের কারণ বলা এবং ভোটকে আমানত, সুপারিশ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ,
ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের চুড়ান্ত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ও পদপ্রার্থী হওয়া সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক, নিজামী,
আহমদ শফী, মাহিউদ্দীন, আমিনী ও আযীযূল হক- ওহাবী, দেওবন্দী ও জামাতীগংদের উপরোক্ত
বক্তব্য সম্পূর্ণ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও
ক্বিয়াসের খিলাফ বিধায় তা ভুল, অশুদ্ধ, জিহালতপূর্ণ
দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে সুওয়ালে উল্লেখিত তাদের
প্রতিটি বক্তব্যের খ-নমূলক জাওয়াব প্রদান করা হলো।
(১৩)
হাটহাজারী খারেজী মাদরাসার অখ্যাত মুখপত্র ‘মাসিক মুহীনুল
ইসলাম’ সেপ্টেম্বর ডিসেম্বর-০৬ সংখ্যাসমূহে গণতন্ত্র বা ভোট নির্াচন সম্পর্
প্রদত্ত বক্তব্যসমূহের খণ্ডনমূলক জবাব
হাটহাজারী খারিজী মাদরসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলাম
সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর/০৬ সংখ্যায় ভোট নির্াচন সমপর্ত আলোচনা দ্বারা হাটহাজারী মৌলভী
ছাহেবরা যা বুঝাতে চেয়ে তা হলো-
(ধারাবাহিক)
(খ)
খুলাফায়ে
রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন
এর জবাবে বলতে হয় যে, “হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ভোটের মাধ্যমে খলীফা
নির্বাচিত হয়েছেন।” হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য শুধু
অশুদ্ধ ও দলীলবিহীনই নয় রবং কাট্টা কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ তারা উক্ত বক্তব্যের
মাধ্যমে প্রথমতঃ এটাই প্রমাণ করেছে যে, হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ইসলাম বাদ দিয়ে ইহুদী-নাছারাদেরকে অনুসরণ করেছেন।
(নাঊযুবিল্লাহ) কেননা ভোট তথা নির্বাচনের উৎপত্তি কারক ও প্রবর্তক হচ্ছে
ইহুদী-নাছারা।
মূলতঃ নির্বাচন সম্পর্কিত
অজ্ঞতাই তাদেরকে এরূপ কুফরীমূলক বক্তব্য প্রদানে উৎসাহিত করেছে। নির্বাচনের ইতিহাস
ও সংজ্ঞা সম্পর্কে যদি তাদের সামান্যতম ইল্মও থাকতো তবে তারা কখনো এতবড় কুফরীমূলক
বক্তব্য প্রদান করতে পারতো না। তাই সংক্ষেপে প্রমাণসহ নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
নিম্নে তুলে ধরা হলো-
নির্বাচনের
উৎপত্তি কবে এবং কারা
এর
উৎপত্তি কারক?
প্রাচীন গ্রীসে
খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্বাচন প্রথা চালু ছিল। এছাড়া রোমান
সিনেটেও এ পদ্ধতি চালু ছিল।
তবে Election
সম্পর্কে ধর্ম,
মিথলজি বিষয়ক Encyclopedia Man, Myth’s Magic বলা হয়েছে- Election, the world is
derived fron the Greek word eloge (choice). The idea is basic to the
traditional structure of Christian theoloy. অর্থাৎ
ইলেকশন বা নির্বাচন শব্দটি উৎসরিত হয়েছে বা উৎপত্তি লাভ করেছে গ্রীক শব্দ eloge হতে যার অর্থ ছিল পছন্দ। নির্বাচনের ধারণা প্রাচীন খ্রীষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের
ব্যাখ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত।
এ ব্যাখ্যাটি এরূপ যে, তাদের God নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিবর্গ অথবা জাতিকে বিশেষ কোন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে
তার বিধান চালাতেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, The idea that God specially
choses certain individuals or nations for some peculiar role in the scheme of
his providence is khown as election.
উল্লেখ্য, খ্রীষ্টান ধর্মতত্ত্বে নির্বাচনের ধারণাটি অদৃষ্টবাদ থেকে এসেছে। এ সম্পর্কে
বলা হয়েছেঃ In
Christian theology the idea of election became associated with predestination, খ্রীষ্টানদের আরো ধারণা যে, তাদের খোদার পছন্দনীয় বা elected অবশ্যই স্বল্প হবে। Many are called but few are chosen (Mathew-22-14)
মূলকথা হচ্ছে, নির্বাচন খ্রীষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত একটি বিষয়। এ বিষয়ে Myth & Encyclopedia Maic, আরো বলা
হয়েছে,
However that the doctrine of
election found its most notable expression in Christlanity.
আধুনিক
কালের ভোট-নির্বাচন
তবে আধুনিক ভোটদান
ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে। ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে বিপ্লবের পর
রাজনৈতিক ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে চলে যায়। পার্লামেন্ট ১৮৩২ সালে প্রথম সংস্কার
আইনে সমস্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে ভোটাধিকার দেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৮৬৭ সালে
কারখানার শ্রমিকদের, ১৮৮৪ সালে কৃষি মজুরদের, ১৯১৮
সালে সীমিত সংখ্যক নারীদের এবং ১৯২৮ সালে সকল নারীদের ভোটাধিকার দেয়া হয়।
১৯১৮ সালের পূর্বে বৃটেনে
বিশ্ব বিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা সাধারণ কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র এ দু’টি কেন্দ্রের ভোটাধিকারী ছিল। পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে এ সকল পদ্ধতির
সমাপ্তি ঘটিয়ে একুশ বছর বা তদুর্ধ বয়সের সকল সম্প্রদায়ের জন্য সার্বজনিন ভোটাধিকার
দেয়া হয়।
অপরদিকে আমেরিকায় ১৮৭০
খৃষ্টাব্দে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয় যে, কোন
ব্যক্তিকে তার জাতি, ধর্ম অথবা পূর্ব দাসত্বের জন্য ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত
করা যাবেনা। ১৯৩৩ সালে সপ্তদশ সংশোধনীতে সিনেট সদস্যদের, জনগণের
প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯২০ সালে মহিলা ভোটাধিকার স্বীকৃত
হয়। ১৯৭১ সালে ভোটারদের বয়স সীমা কমিয়ে ১৮ বছরে আনা হয়।
ভোটের
প্রকারভেদ ও ব্যালট প্রথা
ইসলামের নামে ভোট প্রথাও
সম্পূর্ণ হারাম। কারণ ভোট হচ্ছে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার পদ্ধতি যাতে প্রত্যেক
ব্যক্তি পারে তার পছন্দনীয়কে চিহ্নিত করতে বা প্রকাশ করতে এবং যে পছন্দের সংখ্যা
বেশী হয়,
তাই গ্রহণযোগ্য হয়।
উল্লেখ্য, সংবিধানে ভোটদানের জন্য কিছু শর্ত-শারায়েত করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- দু’টি। (১) বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া, (২) ভোটদাতার বয়স আঠারো বছরের কম
নয়।
আর এক্ষেত্রে যে অযোগ্যতা, তা হলো- (১) কোন যোগ্য আদালত তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করেনি। (২) ১৯৭২
সালের বাংলাদেশে যোগসাজসকারী (বিশেষ ন্যায় পীঠ) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য
দন্ডিত হননি।
উল্লেখ্য, ভোট হলো দু’প্রকার- (১) প্রকাশ্য ভোটদান, (২) গোপনে ভোটদান।
প্রকাশ্য ভোটদান ব্যবস্থায়
ভোটদানকারীরা বিপরীত পক্ষীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে,
তাই এটি সর্বত্রই পরিত্যক্ত হয়েছে।
আর গোপনে ভোটদান ব্যবস্থায়
ভোটদানকারীরা কারো দ্বারা কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা, তারা তাদের ভাষায় নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে সার্বভৌমত্ত্ব বজায় রেখে ভোট প্রদান
করতে পারে। তাই ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট প্রথা প্রায় সর্বত্রই চালু রয়েছে।
ব্যালট
কাকে বলে
ব্যালট হচ্ছে একটি কাগজের
শীট, যার দ্বারা গোপন ভোট প্রদান করা হয়। Ballot শব্দটি এসেছে ইটালী ব্যালোটা Ballotia হতে। যার অর্থ হচ্ছে- ছোট বল। এটি এভাবে উৎপত্তি হয়েছে যে, প্রাচীনকালে এর দ্বারা ভোট গ্রহণ করা হতো এবং গ্রীসে এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল।
জনতার দরবারে অথবা আইন সভায় খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে এবং কখনো কখনো রোমান
সিনেটে এই পদ্ধতি চালু ছিল। সাধারণতঃ সাদা
এবং কালো বল হ্যাঁ এবং না বোধক ভোটে ব্যবহৃত হতো।
অপরদিকে আমেরিকায় উপনিবেশিক কালের শুরুতে সীম শস্যকণা ব্যালট হিসেবে
ব্যবহৃত হতো।
উল্লেখ্য, কোন কোন সংগঠন এখনো নতুন সদস্য গ্রহণে ভোটাভুটিতে সাদা এবং কালো বলের ব্যবহার
করে থাকে। বর্তমানে গণতান্ত্রিক দেশসমূহে কাগজের ব্যালট বা ব্যালট পেপার নির্বাচনে
ভোটারদের ছদ্মনাম হিসেবে কাজ করে এবং এভাবেই অধিকাংশ ভোটারের ইচ্ছা প্রকাশ পায়।
গোপন ভোটদানের পদ্ধতি
হিসেবে ব্যালট পেপার ব্যবহারের প্রথম প্রামাণিক ঘটনা ঘটে ১৬২৯ সালে আমেরিকার
চার্চে। অতঃপর আমেরিকান ঔপনিবেশে এই ব্যালট পেপারের প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে। এরপরে ধীরে
ধীরে ব্যালট পেপারের অনেক সংস্কার হয় এবং পরবর্তীতে একই কলামে বিভিন্ন দলের প্রতীক
সংযুক্ত হয়,
যা সাধারণতঃ বর্ণমালা অনুযায়ী সংযুক্ত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালের মধ্যে এই ব্যালট প্রথা প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
অতএব, প্রমাণিত হলো ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি রয়েছে তা ইহুদী থেকে উৎপত্তি ঘটেছে এবং ইহুদী ও
নাছারাদের দ্বারা প্রবর্তিত ও প্রচারিত এবং প্রসারিত হয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
স্মরণীয় যে, ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট
ইত্যাদি হারাম ও কুফরী হওয়ার আরো একটি বড় কারণ হলো, গণতন্ত্রের
মূল বিষয় বা ভিত্তিসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো সার্বভৌমত্ব জনগণের। অর্থাৎ জনগণই
হচ্ছে গণতন্ত্রের বা সার্বভৌমত্ত্বের মূল। অথচ আল্লাহ্ পাক বলেন, “সর্বভৌমত্ব স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর”। এ প্রসঙ্গে “সূরা মায়েদার” ১২০নং আয়াত শরীফে বলেন,
لله ملك اسموت واارض وما فيهن وهو على كل شيئى قدير.
অর্থঃ- “আসমান ও জমিন এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে, সমস্ত
কিছুরই মালিক আল্লাহ্ পাক। আর তিনিই সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে
এরশাদ হয়েছে,
هو الله
الخالق البارئ المصور له الاسماء الحسنى يسبح له مافى السموات والارض وهو
العزيزالحكيم.
অর্থঃ- “তিনিই আল্লাহ্ তায়ালা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা,
উত্তম নামসমূহ তারই। আসমান ও জমিন যা কিছু আছে সবই তাঁর
পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।” (সূরা
হাশর/২৪)
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
ق اللهم
ملك الملك تؤتى الملك من تشاء وتنزع الملك منن تشاء وتعز من تشاء وتدل من تشاء
بيدك الخير انك على كل شىء قدير.
অর্থঃ- “বলুন,
{হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম} আয় আল্লাহ্ পাক! সমগ্র রাজ্যের মালিক আপনি। আপনি রাজ্য যাকে ইচ্ছা প্রদাণ করেন
এবং যার হতে ইচ্ছা করেন রাজ্য ছিনিয়ে নেন। আর যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন আর যাকে
ইচ্ছা অপমানে পতিত করেন। আপনারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনি সর্ব
বিষয়ে ক্ষমতাশীল।” (সূরা আল ইমরান/২৬)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
ولله
ما فى اسموت وما فى الارض يغفر لمن يشاء ويعذب من يشاء والله غفور رحيم.
অর্থঃ- “আর যা কিছু আসমান ও জমিনে রয়েছে, সে সবই মহান আল্লাহ্ পাক-এর। তিনি
যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা আযাব দান করবেন। আর
আল্লাহ্ পাক হচ্ছেন, ক্ষমাকারী, করুণাময়। (সূরা আলে ইমরান/১২৯)
এছাড়া অনুরূপ আয়াত “সূরা আনয়াম/১৭,৫৭, সূরা ফাতির/১০, সূরা বাক্বারা/১১৭, সূরা শুরা/৭৩, সূরা আনয়াম/৯৫, সূরা মু’মিন/৬৮, সূরা আল
ফোরকান/২,
সূরা হাদীদ/৩, সূরা আস্সাফফাত/১৮০-১৮২, সূরা জাছিয়াত/৩৬-৩৭ সহ আরো অনেক আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক-এর সার্বভৌমত্বের
কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে।
কাজেই “সার্বভৌমত্ব জনগণের” একথা বলা ও মানা কুফরী। অবশ্য
যদিও কেউ কেউ বলে থাকে যে, “সার্বভৌমত্ব জনগণের” এটা আমরা মানিনা, অথচ তারা পূর্ণরূপেই ইসলামের নামে গণতন্ত্র মানে ও
করে। তাদের জন্য আফসোস, তারা এত অজ্ঞ যে, তারা গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের সাথে যে কি সম্পর্ক এবং
সার্বভৌমত্বই বা কাকে বলে সে বিষয়ে তাদের বিন্দুতম জ্ঞান নেই বললেই চলে।
কারণ গণতন্ত্রে জনগণকে যে
সার্বভৌমত্বের অধিকারী বলা হয়েছে, সে সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশই ঘটে
ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনগণ ভোট দেয়ার ব্যাপারে কারো মুখাপেক্ষী
নয় এবং সে ভোট কাকে দেবে বা দেবেনা, সে বিষয়েও কারো কাছে তাকে
জবাবদিহী করতে হয়না।
মূলত, যারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে বা তা সমর্থন করে, তারা
সার্বভৌমত্ব যে জনগণের, আল্লাহ্ পাক-এর নয়, তা ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায়ই হোক মেনে নেয় এবং ভোট দানের মাধ্যমে তার
বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে হাটহাজারী খারেজী মৌলবী
ছাহেবরা তাদের উক্ত বক্তব্যের দ্বারা কি এটাই প্রমাণ করলনা যে, হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ভোটা ভুটি করে এটাই প্রমাণ
করেছেন যে,
সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ পাক নন, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হচ্ছেন জনগণ। নাঊযুবিল্লাহ। তাদের বক্তব্য দ্বারা এটাই
সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। যা কাট্টা কুফরী।
অতএব, ভোট ও নির্বাচনের উপরোক্ত ইতিহাস থেকে এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ভোট ও নির্বাচনের উৎপত্তি কারক বা প্রবর্তক হচ্ছে, ইহুদী, নাছারা তথা বেদ্বীন-বদদ্বীনরা যাদেরকে অনুসরণ করতে ও বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে
আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
যেমন,
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
يايها
الذين امنوا لا تتخذوا ايهود والنصرى اولياء بعضهم اولياء بعض ومن يتولهم منكم
فانه منهم.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা। তারা
একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই
অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা মায়িদা-৫১)
বিশেষভাবে “সূরা ফাতিহাতে” বলা হয়েছে, “তোমরা দুয়া কর।” যা আমরা প্রতিদিন কম পক্ষে ৩২ বার- ১৭
রাকাত ফরজে ১৭ বার, ৩ বার বিতির নামাযে, ১২ বার
সুন্নত নামাযে সর্বমোট ৩২ বার পড়ে থাকি, বলে থাকি ও দুয়া করে থাকি অর্থাৎ নামাযের প্রতি রাকায়াতেই
বলে থাকি যে,
اهدنا
الصراط المستقيم.
অর্থঃ- “(আল্লাহ্ পাক) আমাদের সরলপথ প্রদর্শন করুন।” (সূরা
ফাতিহা-৫)
কোন সরল পথ? বলা হয়েছে-
صراط
الذين انعمت عليهم.
অর্থঃ- “যাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে তাঁদের পথ।” (সূরা
ফাতিহা-৬)
কাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক অন্যত্র বলেন,
انعم
الله عليهم من النبين والصديقين والشهداء والصلحين وحسن اولئك رفيقا.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক নিয়ামত দিয়েছেন যাঁরা নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালেহ্ তাঁদেরকে এবং তাঁরাই উত্তম বন্ধু বা সঙ্গী।” (সূরা নিসা-৬৯)
অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক
বান্দাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন তারা যেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালেহ্গণের পথ তলব করে এবং তাঁরাই সকলের জন্য উত্তম সঙ্গী বা বন্ধু।
এরপর আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা আরো বলো-
غير
المغضوب عليهم ولا الضالين.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে তাদের পথ দিবেন না, যারা
গযবপ্রাপ্ত ও পথহারা।” (সূরা ফাতিহা-৭)
অর্থাৎ বিশেষভাবে ইহুদী ও
নাছারা,
আর সাধারণভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী (অগ্নী উপাসক) কাফির, মুশরিক, বেদ্বীন, বদ্ দ্বীন,
বিদ্য়াতী, বেশরা, গোমরাহ্
ইত্যাদি সকল প্রকার পথহারা গযবপ্রাপ্ত লোকদের পথ আমাদের দান করবেন না।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক শুধু মাত্র নবী, ছিদ্দীক, শহীদ,
ছালেহ্গণের পথই তলব করতে বলেছেন এবং তাঁদেরকেই
অনুসরণ-অনুকরণ করে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে বলেছেন।
আর যারা ইহুদী, নাছারা,
হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী, কাফির,
মুশরিক বেদ্বীন, বদদ্বীন, বিদয়াতী, বেশরা,
গোমরাহ ইত্যাদি পথহারা ও গযবপ্রাপ্ত তাদের পথ থেকে পানাহ্
তলব করতে বলেছেন এবং তাদের মত পথ গ্রহণ না করার জন্য আদেশ করেছেন।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে
আরো সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر
رضى الله تعالى عنه ان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه اتى رسول الله صلى الله
عليه وسلم بنسخة من التورة فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم هذه نسخة من التورة
فسكت فجعل يقرأ ووجه رسول اله صلى الله عليه وسلم يتغير فقال ابو بكر ثكلتك
الثواكل ما ترى ما بوجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فنظر عمر الى وجه رسول اله
صلى الله عليه وسلم فقال اعوذ با لله من غضب الله وغضب رسوله رضينا بالله ربا
وبالاسلام دينا وبمحمد نبيا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم والذيى نفس محمد
صلى الله عليه وسلم بيده لو بدا لكم موسى عليه السلام فاتبعتموه وتر كتمونى ضللتم
عن سواء السبيل ولو كان حيا وادرك نبوتى لاتبعنى.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট তাওরাত শরীফের একটি কপি এনে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি তাওরাত শরীফের একটি কপি।
আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন। হযরত
উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তা পড়তে আরম্ভ করলেন। আর এদিকে হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক লাল হতে লাগলো। অর্থাৎ
অসন্তুষ্টির ভাব ফুটে উঠলো। এটা দেখে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বললেন,
হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার জন্য আফসুস! আপনি
কি দেখছেন না যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক কি রূপ ধারণ করছে। তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারকের দিকে তাকালেন
এবং অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করে বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর অসন্তুষ্টি
থেকে এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টি থেকে আল্লাহ
পাক-এর নিকট পানাহ চাচ্ছি। এবং আমরা আল্লাহ পাককে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে খুশী হয়েছি। তখন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন,
সেই আল্লাহ পাক-এর কছম! যার অধিকারে আমার প্রাণ মুবারক
রয়েছে,
এ সময় যদি তোমাদের নিকট হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম (যার উপর
তাওরাত শরীফ নাযিল হয়েছে) জাহির বা প্রকাশ হতেন আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসরণ
করতে তবুও তোমরা সরল পথ থেকে অবশ্যই বিচ্যুত অর্থাৎ গোমরাহ হয়ে যেতো। এমনকি তিনি
যদি এখন হায়াতে থাকতেন আর আমাকে পেতেন তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন।” (দারিমী,
মিশকাত, মিরকাত)
অতএব, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম-এর মত জলীলূল ক্বদর রসূলের প্রতি নাযিল কৃত তাওরাত
শরীফ হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মত ছাহাবী নিয়ে আসার পরও
যদি তা গ্রহণযোগ্য নাহয় এবং আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের অসুন্তুষ্টির কারণ হয় তবে
কাফির-মুশরিক বেদ্বীন-বদদ্বীন তথা মানব রচিত পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মতবাদ বা
তন্ত্র-মন্ত্র অর্থাৎ ভোট-নির্বাচন কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? আর তা গ্রহণ করা বা অনুসরণ করা কতটুকু
আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের অসন্তুষ্টির কারণ হবে? তা সহজেই
অনুমেয়।
যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে “খূলাফায়ে রাশেদীনগণ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন” হাটহাজারী
খারেজী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য কি করে
গ্রহণযোগ্য ও শরীয়ত সম্মত হতে পারে? তাহলে কি হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর আদেশ অমান্য করে ইহুদী-নাছারাদেরকে অনুসরণ করেছেন। মুলতঃ তাদের উক্ত
বক্তব্য দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয়তঃ “খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন” হাটহাজারী
খারেজী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য হযরত খুলাফায়ে রাশেদীনগণের প্রতি সুস্পষ্ট
মিথ্যারোপ ও তোহমতের শামিল। কারণ তারা উক্ত বক্তব্যের দ্বারা এটাই বুঝাতে চাচ্ছে
যে, হযরত খুলাফায়ে রাশেদীনগণ পদপ্রার্থী হয়েছিলেন। কেননা ভোটাভুটি বা নির্বাচনের
জন্য পদপ্রার্থী হওয়া আবশ্যক। অথচ ইসলামী শরীয়ত
পদপ্রার্থী হওয়াকে বা পদের আকাঙ্খা করাকে সম্পূর্ণ হারাম সাব্যস্ত করেছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
عن ابى
موسى رضى الله تعالى عنه قال دخلت عى النبى صلى الله عليه وسلم انا ورجلان من بنى
عمى فقال احدهما يا رسول الله امرنا على بعض ما ولاك الله وقال الاخر مثل ذلك فقال
انا والله لا نولى على هذا العمل احدا ساله ولا احدا حرص عليه وفى رواية قال لا
نستعمل على عملنا من اراده.
অর্থঃ- হযরত আবূ মুসা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি
ও আমার দু’জন চাচাত ভাই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট গেলাম। সে
দু’জনের একজন বললো, হে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
আল্লাহ পাক আপনাকে যে সকল কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন, আপনি
আমাদেরকে ওটার মধ্য হতে কোন একটির শাসক নিযুক্ত করুন এবং দ্বিতীয়জনও অনুরূপই বললো।
উত্তরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আল্লাহ
পাক-এর কসম! আমরা এ কাজে (শাসক পদে) এমন কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ করিনা, যে ওটার প্রার্থী হয় এবং ঐ ব্যক্তিকেও নিয়োগ করিনা, যে ওটার
লোভ বা আকাঙ্খা করে।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
শুধু তাই নয়, আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে
পদপ্রার্থী হতে বা পদের আকাঙ্খা করতে সরাসরি নিষেধ করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ
শরীফ ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد
الرحمن بن سمرة رضى الله تعالى عنه قال قال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم
لاتسال الامارة فانك ان اعطيتها عن مسئلة وكت ايها وان اعطيتها عن غير مسئلة اعنت
عيها.
অর্থঃ- হযরত আব্দুর রহ্মান
বিন সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, “(হে সামুরা!) তুমি নেতৃত্ব বা পদ চেওনা। কেননা, যদি
তোমাকে ওটা চাওয়ার কারণে দেয়া হয়, তবে ওটা তোমার উপর চাপিয়ে দেয়া
হবে। আর যদি ওটা তোমাকে চাওয়া ব্যতীত দেয়া হয়, তাহলে এ
ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করা হবে।” (মুয়াত্তা শরীফ)
মূলতঃ যারা দুনিয়ালোভী বা
নিকৃষ্ট তারাই পদপ্রার্থী হয় বা পদের আকাঙ্খা করে। উত্তম বা নেক্কার লোক কখনোই
পদপ্রার্থী হয় না। তাই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى
هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تجدون من خير
الناس اشدهم كراهية لهذا الامر حتى يقع فيه.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এই শাসনভারকে যারা কঠোরভাবে ঘৃণা করে, তাদেরকে
তোমরা উত্তম লোক হিসেবে পাবে, যে পর্যন্ত তারা তাতে লিপ্ত না
হয়।”
(মুয়াত্তা শরীফ)
উপরোক্ত ছহীহ বর্ণনাসমূহ
দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, স্বয়ং
আখিরী রসূল,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
পদপ্রার্থী হতে বা পদের আকাঙ্ঘা করতে নিষেধ করেছেন এবং যারা পদপ্রার্থী হয় বা পদের
আকাঙ্খা করে তাদেরকে তিরষ্কার করেছেন। তাই ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে পদপ্রার্থী
হওয়া বা পদের আকাঙ্খা করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয।
এখন কথা হলো যদি বলা হয় যে, “খুলাফায়ে
রাশিদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন বা পদপ্রার্থী হয়েছেন” তবে কি এটাই প্রমাণিত হয় না যে, খুলাফায়ে রাশিদীন তথা হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হাদীছ শরীফ অস্বীকার ও অমান্য করেছেন, তাঁরা রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ পালন করেননি।
তাঁরা দুনিয়া লোভী বা পদ লোভী ও নিকৃষ্ট ছিলেন। (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক) এটা
খুলাফায়ে রাশিদীন তথা ছাহাবায়ে কিরামগণের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপ, তোহমত ও বিদ্বেষ নয় কি?
আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণের প্রতি মিথ্যারোপ করা, তোহমত
দেয়া ও বিদ্বেষ পোষণ করা কাট্টা কুফরী। যারা এরূপ বলবে বা করবে তারা কাট্টা
কাফিরের অন্তর্ভুক্ত। কেননা, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ বেমেছাল মর্যাদার অধিকারী।
আল্লাহ পাক স্বীয় কালাম
পাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে ইশরাদ করেন,
عن عبد
الرحمن ن سمرة رضى الله تعالى عنه قال قال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم لاتسال
الامارة فانك ان اعطيتها عن مسئلة وكلت اليها وان اعطيتها عن غير مسئلة اعنت
عليها.
অর্থঃ- “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-এর রসূল এবং
তাঁর সাথী বা ছাহাবীগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের
মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহ পাক-এর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি
তাঁদেরকে রুকূ ও সিজদাবনত দেখবেন। তাঁদের মুখম-লে রয়েছে সিজদার চিহ্ন। তাঁদের এরূপ
অবস্থা তাওরাত শরীফে বর্ণিত রয়েছে। আর ইনজীল শরীফে তাঁদের অবস্থা এরূপ বর্ণিত
রয়েছে,
যেমন একটি চারা গাছ, যা থেকে
নির্গত হয় ডাল-পালা। অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং দৃঢ়ভাবে কা-ের উপর দাঁড়ায়, কৃষককে আনন্দে অভিভূত করে। অর্থাৎ, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণের সংখ্যা চারা গাছের অনুরূপ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। যেমন তাঁরা শুরুতে
অল্প সংখ্যক হবেন, এরপর তাঁদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং শক্তি অর্জিত হবে, যাতে তাঁদের দ্বারা কাফিরদের অর্ন্তজ্বালা বা হিংসার সৃষ্টি হয়। যারা ঈমান
আনয়ন করে এবং নেক আমল করে আল্লাহ পাক তাঁদেরকে ক্ষমা ও মহা পুরুস্কারের ওয়াদা
দিয়েছেন। অর্থাৎ সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণকে ক্ষমা ও মহা
পুরুস্কারের ওয়াদা দেয়া হয়েছে।” (সূরা ফাতহ্-২৯)
উল্লিখিত আয়াত শরীফে والذين
معه থেকে আয়াত শরীফের শেষ পর্যন্ত হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের গুণাবলী, শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশেষ লক্ষণাদি বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও নুযূল খাছ তবে
হুকুম হচ্ছে আম অর্থাৎ এতে সকল ছাহাবায়ে কিরামগণই দাখিল রয়েছেন।
অর্থাৎ সমস্ত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ছিলেন পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল আর
কাফিরদের প্রতি কঠোর। আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই আক্বাইদ, ইবাদত,
মুয়ামিলাত, মুয়াশারাত ও তাছাউফ ইত্যাদি সবই
করেছেন। তাই হাদীছ শরীফে হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের
অনুসরণ ও অনুকরণ এবং ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে বর্ণিত
রয়েছে,
عن عبد
الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال من كان مستنا فليستن بمن قدمات فان الحى
لانؤمن عليه الفتنة والئك اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم كانوا افضل هذه اامة
ابرها قلوبا واعمقها عما واقلها تكلفا اختارهم الله لصحبة نبيه ولا قامة دينه فاعر
فوالهم فضلهم واتبعوا على اثرهم وتمسكوا بما استطعتم من اخاقهم وسيرهم فانهم كانوا
على الهدى المستقيم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। “যে
ব্যক্তি শরীয়তের সঠিক তরীক্বা অনুসরণ করতে চায়, তার উচিত
যারা অতীত হয়েছেন, তাঁদেরকে অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের
অনুসরণ করা। তাঁরা উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম। আত্মার দিক দিয়ে তাঁরা অধিক পবিত্র।
ইল্মের দিক দিয়ে গভীর। তাঁরা লোক দেখানো আমল করা হতে মুক্ত। আল্লাহ পাক তাঁদেরকে
দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথী হিসেবে
মনোনীত করেছেন। সুতরাং, তাঁদের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত, শান-শওকত সম্পর্কে অবগত হও এবং তাঁদের কথা ও কাজের অনুসরণ
কর এবং যথাসম্ভব তাঁদের সিরত-ছূরত তথা মুবারক জীবনাদর্শকে গ্রহণ কর, কারণ তাঁরা হিদায়েত ও “ছিরাতুল মুস্তাক্বীম”-এর উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত।” (মিশকাত শরীফ পৃঃ ৩২)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
والسبقون
الاولون من امهجرين والانصار والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه واعد
لهم جنت تجرى تحتها الانهر خلدين فيها ابدا ذلك الفوز العظيم.
অর্থঃ- “মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগগণ, যাঁরা ঈমান আনয়নে অগ্রগামী ও প্রথম তাঁরা এবং তাঁদেরকে যাঁরা (ক্বিয়ামত
পর্যন্ত) উত্তমভাবে অনুসরণ করবে, তাঁদের উপর আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট
এবং তাঁরাও আল্লাহ পাক-এর উপর সন্তুষ্ট। তাঁদের জন্য আল্লাহ পাক এরূপ বেহেশ্ত
নির্ধারণ করে রেখেছেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে। তাঁরা সর্বদা সে
বেহেশ্তে অবস্থান করবেন। এটা তাঁদের বিরাট সফলতা।” (সূরা
তওবা-১০০)
আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাখ্যায় ইরশাদ করেন,
عن عمربن
الخطاب رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم سألت رتى عن
اختلاف اصحابى من بعدى فاوحى الى يامحمد ان اصحابك عندى بمنزة النجوم بعضها اقوى
من بعض لكل نور فمن اخذ بشيئ مما هم عليه من اختلا فهم فهو عندى على هذى فقال رسول
اله صلى اله عليه وسلم اصحابى كالنجوم فبا يهم اقتديتم اهتديتم.
অর্থঃ- হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার
বেছাল শরীফের পরে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইখতিলাফ
(মতবিরোধ) সম্পর্কে আমি আল্লাহ পাককে জিজ্ঞাসা করেছি।” আল্লাহ পাক আমাকে জানালেন, “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আপনার ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ আমার নিকট তারকা সমতুল্য। কারো আলোর চেয়ে কারো আলো বেশী, তবে প্রত্যেকেরই আলো আছে। সুতরাং, তাঁদের যে কোন ইখতিলাফকে যারা
আঁকড়ে ধরবে,
তারা হিদায়েত পেয়ে যাবে। কারণ তাঁদের ইখতিলাফগুলো আমার নিকট
হিদায়েত হিসেবে গণ্য।” অতঃপর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ প্রত্যেকেই তারকা সাদৃশ্য। তাঁদের যে কাউকে তোমরা
অনুসরণ করবে,
হিদায়াত প্রাপ্ত হবে।” (মিশকাত, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ, মিরকাত)
অর্থাৎ তাঁদের যে কাউকে, যে কোন ব্যক্তি, যে কোন বিষয়ে অনুসরণ করবে, সে
ব্যক্তি সে বিষয়েই হিদায়েত লাভ করবে বা হিদায়েতের উপর থাকবে।
অতএব, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, যাঁদের
প্রতি আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও
সন্তুষ্ট,
যাঁদেরকে আল্লাহ পাক জান্নাতী বলে কুরআন শরীফে ঘোষণা করেছেন, যাঁদের পথ ও মত অনুসরণকারীরাও নাজাতপ্রাপ্ত, যাঁদেরকে
আল্লাহ পাক অগাধ জ্ঞানের অধিকারী করেছেন, যাঁদের যুগকে সর্বোত্তম যুগ
হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যাঁদের অকল্পনীয় ত্যাগ ও কষ্টের
বিনিময়ে পরবর্তী উম্মত সহজেই পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলাম পেয়েছে। (সুবহানাল্লাহ)
সেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে অনেকেই বেখবর। অনেকেই
আবার তাঁদের সমালোচনায় মুখর। তারা তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে, তাঁদেরকে সত্যের মাপকাঠি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। উপরন্তু তাঁদেরকে নাক্বিছ
ও অপূর্ণ বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকে এরা সকলেই লা’নতগ্রস্ত
বা মালউন। (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক)
কারণ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতি মুহব্বত রাখা, তাঁদের
প্রতি সুধারণা পোষণ করা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ। তাঁদের ইত্তিবা বা অনুসরণ করা
ফরয-ওয়াজিব। আর তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাঁদেরকে
কষ্ট দেয়া,
সমালোচনা করা, নাক্বিছ বা অপূর্ণ বলা সম্পূর্ণই
কুফরী। এটাই আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বা বিশ্বাস। এর বিপরীত আক্বীদা
পোষণ করা কুফরী ও গোম্রাহীর নামান্তর।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক
ইরশাদ করেন,
ليغظ بهم
الكفار.
অর্থঃ- “একমাত্র কাফিররাই তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।” (সূরা
ফাতহ্-২৯)
এ আয়াত শরীফের
ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن مالك
بن انس رحمة الله عليه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من غاظ اصحاب محمد
صلى الله عليه وسلم فهو كافر.
অর্থঃ- “হযরত মালিক ইবনে আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ইরশাদ করেন, যে
ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ
করবে,
সে কাফির।” (নাসীমুর রিয়ায ফী শরহে শিফা লি
ক্বাযী আয়ায)
অতএব, প্রত্যেককেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতি সুধারণা পোষণ
করতে হবে,
তাঁদেরকে মুহব্বত ও যথাযথ তা’যীম-তাক্রীম
করতে হবে এবং তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, মিথ্যারোপ
করা, তোহমত দেয়া যাবেনা, তাঁদের কোনরূপ সমালোচনা ও
তাঁদেরকে নাক্বিছ বা অপূর্ণ বলা যাবেনা। কারণ তা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
যদি তাই হয়ে থাকে তবে একথা
বলা কি করে জায়িয বা শরীয়ত সম্মত হতে পারে যে, খুলাফায়ে
রাশিদীন বা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আখিরী রসূল
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নির্দেশ অমান্য করে
নির্বাচন করেছেন বা পদপ্রার্থী হয়েছিলেন (নাউযুবিল্লাহ)। এর দ্বারা কি এটাই বুঝা
যায়না যে,
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ
সর্বক্ষেত্রে বা সব বিষয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করেন
নাই। (নাউযুবিল্লাহ)
অথচ কুরআন শরীফ ও হাদীছ
শরীফ প্রমাণ করে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আখিরী
রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বক্ষেত্রে এবং সব
বিষয়ে সুক্ষ্মাতি সুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ অনুকরণ করেছেন।
উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি ঘটনা
নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, একদিন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না’লাইন শরীফসহ মসজিদে নামায পড়ছিলেন, এমন সময় হযরত জিব্রীল আলাইহিস্
সালাম এসে বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার না’লাইন শরীফে নাপাকি রয়েছে।” তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম না’লাইন শরীফ খুলে ফেললেন। সাথে সাথে উপস্থিত সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণও না’লাইন খুলে ফেললেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন,
“এ হুকুম তোমাদের জন্য নয়, এটা আমার
জন্যে খাছ।”
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যা করতে দেখতেন, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণও তাই করতেন। আর যা বর্জন করতেন, তাঁরা বর্জন করতেন,, কখনো কি ও কেন প্রশ্ন করতেন না।
যেমন,
হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,
ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
একটি স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতেন, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুগণও স্বর্ণের আংটি বানিয়ে ব্যবহার করা শুরু করলেন। যখন স্বর্ণ ব্যবহার
পুরুষের জন্য সম্পূর্ণ হারাম হওয়ার কারণে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আংটিটি খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, “আমি আর
কখনও এটা ব্যবহার করবো না।” তখন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুগণ সকলেই তাঁদের আঁংটিগুলো খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।
রোম সম্রাট একবার তার এক
দূতকে পাঠালেন মদীনা শরীফে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত করার জন্য। দূত সাক্ষাত করে ফিরে গিয়ে বললেন, হে সম্রাট! তাঁরা এমন এক জাতি, যাঁদের সাথে যুদ্ধ করে কখনো জয়লাভ
করা সম্ভব নয়। কারণ তাঁরা তাঁদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
কল্পণাতীতভাবে অনুসরণ-অনুকরণ, তা’যীম-তাকরীম
করেন। তাঁদেরকে যদি বলা হয় আগুণে ঝাপ দেওয়ার জন্যে, তাঁরা
তৎক্ষণাৎ আগুণে ঝাপ দেয়ার জন্য প্রস্তুত। তাঁদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম মুখ মুবারক থেকে থুথু ফেলার সাথে সাথে তাঁরা সেটা ধরে খেয়ে ফেলেন। ওযুর
কুলি করা পানি মাটিতে পড়ার পূর্বেই সেটাকে শরীরে মেখে ফেলেন। (সুবহানাল্লাহ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর ওফাত মুবারকের পর একদিন এক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হঠাৎ করে
মাথাটী নিচু করে দিলেন। উনার সঙ্গী-সাথীগণ বললেন, হুযূর!
আপনি মাথা নিচু করলেন কেন? এখানে মাথা নিচু করার তো কোন কারণ
দেখছিনা। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “আমি আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে এ
রাস্তা দিয়ে একদিন সফরে যাচ্ছিলাম। সফরে যাওয়ার পথে ঠিক এ জায়গায় একটি গাছ ছিল, গাছের একটি ডালা নিচু হয়ে রাস্তার উপর দিয়ে গিয়েছিল। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথা মুরকের সাথে ডালাটি লাগার সম্ভাবনা থাকায়, তিনি মাথা মুবারক নিচু করে ডালাটি অতিক্রম করেছিলেন। যদিও এখন সেই ডালাটি নেই, তথাপি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণের লক্ষ্যে আমি আমার
মাথা নিচু করে দিলাম। (সুব্হানাল্লাহ্)।
হযরত আনাস ইবনে মালিক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রথমে কদু খাওয়া পছন্দ করতেন না। একদিন তিনি হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে এক দর্জি ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু-এর বাড়ীতে দাওয়াত খেতে গেলেন। সেখানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর সম্মুখে এক পেয়ালা কদু মিশ্রিত গোশ্তের তরকারী দেয়া হলো। হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে পেয়ালা হতে কদুর টুকরোগুলো বেছে বেছে
খাচ্ছিলেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এভাবে কদু খেতে দেখে, তখন হতে কদুর প্রতি আমার মুহব্বত পয়দা হয়ে গেল। আমি জীবনে যতদিন হায়াত পেয়েছি, সবসময় কদু খাওয়ার চেষ্টা করতাম। (বুখারী শরীফ)
এটাই ছিল ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
অনুসরণের নমুনা। এ রকম হাজারো লাখো ঘটনার দ্বারা প্রমাণ করা সম্ভব যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ সর্ব ব্যাপারে হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন। কেবলমাত্র যেসব ব্যাপারে
নিষেধ করা হয়েছে তা ব্যতীত। তবে ঐ নিষেধ মানাও অনুসরণ-অনুকরণের অন্তর্ভুক্ত।
কাজেই, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা কি একটি ঘটনাও দেখাতে পারবে, যেখানে
নিষেধাজ্ঞা ব্যতীত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ-অনুকরণ করেননি?
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে হুকুম না দেয়া সত্বেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণের লক্ষ্যে সকলেই না’লাইন
শরীফ ও আংটি মুবারক খুলে ফেললেন। এটাই যদি হতে পারে, তবে
যেখানে হাদীছ শরীফে ইহুদী-নাছারাদের অনুসরণ করতে ও পদপ্রার্থী হতে সরাসরি নিষেধ করা হয়েছে, সে নিষেধ অমান্য করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কি করে
নির্বাচন করতে পারেন বা পদপ্রার্থী হতে পারেন?
অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, খুলাফায়ে রাশিদীন তথা হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কস্মিনকালেও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত
হন নাই বা পদপ্রার্থী হন নাই। আর যেহেতু হাদীছ শরীফে পদপ্রার্থী হতে কঠোরভাবে
নিষেধ করা হয়েছে। সেহেতু বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হাদীছ শরীফের প্রতিটি আদেশ-নিষেধ
গুরুত্ব সহকারে পরিপূর্ণভাবে পালন করেছেন। আর এ কারণেই খুলাফায়ে রাশিদীনসহ সকল
ছাহাবায়ে কিরামগণ উম্মতের জন্য অনুসরনীয়-অনুকরনীয় অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে অনুসরণ-অনুকরণ করা উম্মতের জন্য ফরয ওয়াজিব করে
দেয়া হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عرباض
بن سارية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم عليكم بسنتى
وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمشكوابها وعضوا عيها بانواجذ.
অর্থঃ- হযরত ইরবায বিন
সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ
পাক-এর হাবীবহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমাদের জন্য আমার সুন্নত এবং আমার খুলাফায়ে রাশিদীন (হিদায়েতপ্রাপ্ত ছাহাবায়ে
কিরাম) রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সুন্নত পালন করা অপরিহার্য। তোমরা তা মাড়ির
দাঁত দিয়ে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর।” (আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, মিশকাত, মাছাবহীস্ সুন্নাহ, মিরকাত)
মূলকথা হলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় ছোহ্বতে ধন্য হয়ে তাঁর অনুসরণ
-অনুকরণের মাধ্যমে আল্লাহ পাক-এর এমন সন্তুষ্টি হাছিল করেছেন যে, তাঁরা আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে মাহ্ফূয (সংরক্ষিত) এবং সর্ব প্রকার সমালোচনার
ঊর্ধ্বে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। কারণ তাঁদের অনুসরণ স্বয়ং
আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং স্বয়ং আল্লাহ
পাক-এরই অনুসরণের শামিল।
মূলতঃ ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য
ফতওয়া হলো হযরত খুলাফায়ে রাশেদীনগণ কস্মিনকালেও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হননি বরং
তারা মনোনীত হয়েছেন। নির্বাচন আর মনোনয়ন এক বিষয় নয়। অনেকে হযরত খুলাফায়ে
রাশেদীনগণের খলীফা হওয়ার সঠিক ইতিহাস না জানার কারণেই বলে থাকে যে, খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন। (নাউজুবিল্লাহ) তাই নিম্নে
সংক্ষেপে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীনগণের খলীফা মনোনীত হওয়ার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হলো-
খুলাফায়ে
রাশিদীন খলীফা মনোনীত
হওয়ার
সংক্ষিপ্ত ও সঠিক ইতিহাস
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেছাল শরীফের
পর এক ব্যক্তি এসে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সংবাদ দিলো
যে, হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর তত্ত্বাবধানে কয়েকজন আনছার ছাহাবী খলীফা
মনোনয়নের ব্যাপারে আলোচনা করছেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বিষয়টি অবহিত করলেন। হযরত আবূ
বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আবূ উবায়দা ইবনুল জাররা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সাথে নিয়ে সেখানে গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন যে, কি হয়েছে আপনারা কি আলোচনা করছেন। তারা বললেন, আমরা
খলীফা মনোনয়নের ব্যাপারে আলোচনা করছি। এ
ব্যাপারে আমাদের পরামর্শ হলো আনছারদের
থেকে একজন এবং মুহাজিরদের থেকে একজন খলীফা মনোনীত হোক। একথা শুনে হযরত আবূ বকর
ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন আমি নিজ কানে শুনেছি, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ যবান মুবারকে ইরশাদ
করেছেন,
الائمة
من قريش.
অর্থাৎ “খলীফা মনোনীত হবেন কুরাইশদের মধ্য হতে।” (আহমদ, তবারানী,
তারীখুল খুলাফা)
জবাবে হযরত আবূ বকর
ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমার ডান
পাশে রয়েছেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যার সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لو
كان بعدى نبى لكان عمربن الخطاب رضى الله تعالى عنه.
অর্থাৎ- “আমার পরে যদি কেউ নবী হতেন তবে নবী হতেন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু।”
(তিরমিযী, মিশকাত)
আর বাম দিকে রয়েছেন এমন এক
ব্যক্তি যার সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
امين
الله وامين رسوه حضرت ابو عبيدة بن الجراح رضى الله تعالى عنه.
অর্থাৎ- আল্লাহ পাক ও তাঁর
রসূলের বিশ্বস্ত ব্যক্তি হলেন হযরত আবূ উবায়দা ইবনুল র্জারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু। (বুখরী,
মুসলিম)
অতএব, এ দু’জনের একজনকে আপনারা খলীফা মনোনীত করতে পারেন। একথা শুনে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমার নিকট হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সমস্ত কথাই
মনপুত হয়েছে তবে শেষোক্ত কথাটি মনপুত হয়নি। কারণ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ন্যায় ব্যক্তিত্ব যাকে আল্লাহ পাক এক আয়াত শরীফে
তিনটি প্রশংসা করেছেন। যেমন,
ثانى
اثنين اذهما فى الغار اذ يقول لصاحبه لا تحزن ان الله معنا.
অর্থাৎ দুই জনের দ্বিতীয়, তাঁরা দুজন যখন গুহার মধ্যে ছিলেন, তাঁর সঙ্গী তাকে বললেন চিন্তা
করবেন না। আল্লাহ পাক আমাদের সাথে আছেন।” অর্থাৎ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হলেন, (১) দু’ জনের
দ্বিতীয়,
(২) আল্লাহ পাক-এর হাবীবের সঙ্গী, (৩)
আল্লাহ পাক উনার সাথে আছেন। (সূরা তওবা-৪০)
কাজেই, এরূপ ব্যক্তিত্ব উপস্থিত থাকতে অন্য কেউ খলীফা হতে পারেনা। একথা বলে হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বাইয়াত হওয়ার জন্য নিজ হাত মুবারক হযরত আবূ বকর
ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাত মুবারকে রাখলেন, এবং বাইয়াত করার জন্য অনুরোধ করলেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর দেখা দেখি সেখানে উপস্থিত সকলেই বাইয়াত গ্রহণ করলেন এবং
পর্যায়ক্রমে সকলেই হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাতে
বাইয়াত গ্রহণ করেন। এভাবেই হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
খলীফা মনোনীত হন।
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর খলীফা হবার যোগ্যতা পূর্বেই হযরত আবু বকর ছিদ্দীক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রকাশ করেছিলেন। আর হযরত উমর ইবনুল খত্তাব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যে দ্বিতীয় খলীফা হিসেবে মনোনীত হবেন তা হাদীছ শরীফেও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত
রয়েছে। তাই হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন বেশ অসুস্থ তখন
তিনি হযরত উছমান জুন্ নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলেন কাগজ কলম আনতে
যেখানে তিনি লিখে যাবেন। তার পরিবর্তে কে খলীফার দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু নাম
প্রকাশ করার পূর্বেই তিনি আবার বেহুঁশ হয়ে পড়লেন এবং নাম প্রকাশ করতে পারেননি।
কিন্তু ইতিমধ্যে হযরত উছমান জুন্ নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সে কাগজে খলিফা
হিসাবে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নাম মুবারক লিখে ফেলেন।
যেহেতু হাদীছ শরীফে তাঁর খলীফা হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীতে যখন হযরত আবু
বকর ছিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আবার কিছুটা সুস্থ হন তখন তিনি হযরত উসমান
জুন্ নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কাছে জানতে চান কার নাম মুবারক লিখা
হয়েছে। উত্তরে তিনি হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নাম প্রকাশ
করলে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ও হযরত ওছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্য
দুয়া করেন এবং জানান যে, হে হযরত ওছমান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু আপনি আমার অন্তরের কথাটাই লিখেছেন। এভাবে দ্বিতীয় খলীফা হিসাবে হযরত
উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মনোনীত হন।
আমীরুল মু’মিনীন,
খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত ওমর
ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহুকে শাহাদতের পূর্বে অর্থাৎ আহত অবস্থায় হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ আরজ করলেন, তাঁর
পরবর্তী খলীফা মনোনীত করার জন্য। তখন তিনি বললেন, আমি
ছয়জনের নাম ঘোষণা করে যাচ্ছি। এদের মধ্য হতে যে কোন একজনকে তিন দিনের মধ্যে খলীফা
হিসেবে মনোনীত করতে হবে।
উল্লিখিত ছয়জন হচ্ছেন- হযরত উসমান যিন্ নূরাইন
রদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত
ত্বালহা রদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত জুবাইর রদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ রদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ
রদিয়াল্লাহু আনহু।
স্মরণীয় যে, উপরোক্ত
ছয়জনই ছিলেন “আশারা-ই-মুবাশ্শারার” অন্তর্ভূক্ত। উল্লিখিত ছয়জনের নাম
ঘোষণা করে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ
রদিয়াল্লাহু আনহুকে দায়িত্ব দিলেন। তিনদিনের মধ্যে যে কোন একজনকে মনোনীত করার
জন্য। তাঁরা উল্লিখিত পাঁচজনের মধ্য হতে হযরত উসমান রদিয়াল্লাহু আনহুকে খলীফা
হিসেবে মনোনীত করেন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনোনীত হন হযরত আলী রদিয়াল্লাহু
আনহু। যার ফলশ্রুতিতে হযরত উসমান রদিয়াল্লাহু আনহু-এর শাহাদতের পর হযরত আলী
রদিয়াল্লাহু আনহু খলীফা হিসেবে খেলাফত লাভ করেন।
মুলতঃ পর্যায়ক্রমে উনাদের
খলীফা হওয়ার বিষয়টি হাদীছ শরীফে ব্যক্ত হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু-এর পর খলীফা মনোনীত হন হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি
প্রায় ছয় মাস খিলাফত পরিচালনা করার পর হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে
সরাসরি খিলাফত দান করেন বা খলীফা মনোনীত করেন।
স্মর্তব্য যে, উল্লেখিত খলীফাগণের কেহই খলীফা পদের অথবা খিলাফতের জন্য পদপ্রার্থী হননি বা
ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হননি। বরং তাঁরা খলীফা হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
উপরোক্ত বিস্তারিত ও
দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, “হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন,” হাটহাজারী
খারেজী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুহীনুল ইসলামে প্রদত্ত এ বক্তব্য
কাট্টাকুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ এ কথা বলার অর্থই হলো -
১. হযরত খুলাফায়ে
রাশেদীনগণ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের আদেশ-নিষেধ অমান্য করেছেন,
২. ইহুদী-নাছারা তথা
বেদ্বীন-বদদ্বীনদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন,
৩. তারা পদলোভী বা ক্ষমতার
লোভী ছিলেন বলে সাব্যস্ত করা। যা সর্বসম্মতিক্রমে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এ
ধরনের বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকা সকলের জন্যই ফরজ ওয়াজিব।
(অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment