পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ঈমানী কুওয়্যত বৃদ্ধিকারী মুবারক মু’জিযা ও নিদর্শনসমূহ (১০)
-সাইয়্যিদুনা
হযরত শাফিউল উমাম আলাইহিস সালাম
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ
তাই
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও রয়েছে অসংখ্য নিদর্শন মুবারক।
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
اُعْطِيْتُ بِجَوَامِعِ
الْكَلِمِ
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বেশ কয়েকটি হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।
(১)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ
أَبِي هُرَيْرَةَ
رَضِيَ اللّهُ تَعَالى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ
اللّهِ صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ فِي الْإِنْسَانِ عَظْمًا لَا تأْكُلُهُ
الْأَرْضُ أَبَدًا فِيهِ يُرَكَّبُ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ، قَالُوا: أَيُّ عَظْمٍ هُوَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟،
قَالَ: عَجْبُ الذَّنَبِ
(২)
বুখারী শরীফ উনার অপর এক বর্ণনায় রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ
أَبِي هُرَيْرَةَ
رَضِيَ اللّهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
مَا بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ أَرْبَعُونَ
قَالُوا يَا أَبَا هُرَيْرَةَ
رَضِيَ اللّهُ تَعَالى عَنْه أَرْبَعُونَ يَوْمًا قَالَ أَبَيْتُ
قَالُوا أَرْبَعُونَ
شَهْرًا قَالَ أَبَيْتُ قَالُوا أَرْبَعُونَ سَنَةً قَالَ أَبَيْتُ
ثُمَّ يُنْزِلُ
اللَّهُ مِنْ السَّمَاءِ مَاءً فَيَنْبُتُونَ كَمَا يَنْبُتُ الْبَقْلُ
قَالَ وَلَيْسَ
مِنْ الْإِنْسَانِ
شَيْءٌ إِلَّا يَبْلَى إِلَّا عَظْمًا وَاحِدًا
وَهُوَ عَجْبُ الذَّنَبِ وَمِنْهُ
يُرَكَّبُ الْخَلْقُ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ
(৩)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ
أَبِـيْ سَعِيْدِ
الْخُدْرِيْ رَضِيَ اللّهُ تَعَالى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللّهِ صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ يَأْكُلُ
التُّـرَابُ كُلُّ شَـيء مِنَ الْإِنْسَانِ إِلَّا عَجب ذنبه قِيْلَ وَمَا هُوَ يَا رَسُوْلَ اللّهِ صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
؟ قال مِثْلُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْهُ يَنْشَئُوْنَ
অর্থ:
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। মাটি মানবদেহের সমস্ত
কিছু ভক্ষণ করবে একটা হাড় ব্যতীত- তার নাম হচ্ছে (عجب الذنب),
আজযুব্ যানাব। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি জিজ্ঞাসিত হলেন, এটি কি? ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বললেন, এটা সরিষা দানার মতো এবং এটা থেকে মানবদেহ পুনরায় সৃষ্টি করা হবে। (আল মুস্তাদরাক)
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপরোক্ত হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে এমন দুইটি তথ্য উল্লেখ করেছেন যা মানুষের চিন্তা-ফিকিরের উর্ধ্বে এবং
এ বিষয়টি অতি সম্প্রতি তথাকথিত বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পেরেছে।
(৪)
অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
أَبِي هُرَيْرَةَ
رَضِيَ اللّهُ تَعَالى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ
اللّهِ صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَكُلُّ
اِبْنِ آَدَمَ يَأْكُلُهُ التُّـرَابُ
إِلَّا عجب الذنب مِنْهُ خُلِقَ وَفِيْهِ
يُرْكَبُ
অর্থ:
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আদম
সন্তানের দেহের সবকিছুই মাটি খেয়ে ফেলে শুধু (عجب الذنب)
‘আজবুয্ যানাব’ ব্যতীত। যা হতে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং সেখান থেকেই তাকে (ক্বিয়ামতের
দিন) তোলা হবে। (বুখারী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
খালিক মালিক রব মহান
আল্লাহ পাক উনার মুবারক ইচ্ছায় ডিম্বানু নিষিক্ত হওয়ার ১৫ দিনের মাথায় এটি তৈরী হয়
এবং জরায়ুর দেয়ালে গেঁথে যায়। যখন এই বিশেষ সূত্রকটি স্থাপিত হয় তখনই অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
তৈরী শুরু হয়ে যায়। বিশেষভাবে ¯œায়ুতন্ত্র, মেরুদ- বা শির দাঁড়ার প্রাথমিক অংশবিশেষ এবং দেহের অন্যান্য
অঙ্গ-প্রতঙ্গ তৈরী হতে থাকে।
খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এই সূতার মতো অংশকে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন
যে, এইটি কোষ বিভাজন শুরু করতে পারে এবং এক অংশ থেকে আরেক অংশ আলাদা হয়ে প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পারে
এবং একই রকম টিস্যুগুলি জমা হয়ে একটি পরিপূর্ণ অঙ্গ তৈরী করতে পারে। যা একে অপরকে সহযোগিতা
করে দেহের সমস্ত কাজগুলি সম্পন্ন করে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনারই পুনরাবৃত্তি করে নোবেল
বিজয়ী তথাকথিত জার্মান ভ্রুণ তত্ত্ববীদ হ্যানস স্পেম্যানের এমব্রায়োনিক ইনডাকসন বা
ভ্রুণ তাত্ত্বিক আবেশন বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছে যা উপরের বর্ণনার সাথে মিলে যায়।
অন্য
কথায় পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে চুরি করে তা নিজেদের নামে প্রচার করে বেড়ায়।
ডিম্বানু
থেকে বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটা কোষ থেকে দুইটা, দুইটা থেকে চারটা এভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে
এমব্রায়োনিক ডিস্ক বা চাকতি গঠিত হয়। সেখানে দুইটি স্তর থাকে।
১. বাইরের এপিব্লাস্ট: এর মাধ্যমে ভ্রুণটি গর্ভাশয়ের দেয়ালে যুক্ত থাকে। যেখান থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিদ্রব্য গ্রহণ করে।
২.
আভ্যন্তরীন হাইপোব্লাস্ট: এ অংশটি থেকেই ১৫তম দিনে প্রাথমিক সূত্র দৃশ্যমান হয়। যার
একপাশে রয়েছে তীক্ষ্মপ্রান্ত আর অপরপাশে গ্রন্থি বা গিরা। এখান থেকেই সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ
তৈরী হয়। যেমন- (১) একটোডার্ম থেকে চামড়া এবং কেন্দ্রীয় ¯œায়ুতন্ত্র
তৈরী হয়। (২) মেসোডার্ম থেকে পেশী খাদ্য সংবহন তন্ত্র, হৃদপৃন্ড, রক্ত পরিবহন তন্ত্র,
হাড়, প্রজনন তন্ত্র, লিঙ্গ ইত্যাদি তৈরী হয়। (৩) এনডোডার্ম থেকে নিউক্লিয়াস পর্দা,
শ্বাস-প্রশ্বাস, পরিপাক তন্ত্র, ব্লাডার, থাইরয়েড, শ্রবণ যন্ত্র ইত্যাদি তৈরী হয়। চূড়ান্ত
পর্যায়ে প্রাথমিক সূত্রক এবং গ্রন্থি আলাদা হয়ে যায় এবং টেলইবোন বা পুচ্ছাস্থি গঠন
করে। অর্থাৎ টেইলবোন বা পুচ্ছাস্থি ধারণ করে প্রাথমিক সূত্রক এবং গ্রন্থি বা নোড আর
এরাই বৃদ্ধি পেয়ে উপরোক্ত ৩টি স্তরে মানবদেহ গঠন করতে সক্ষম। এই কারণে বৃটিশ কমিটি
ডধৎহবশ (যারা ভ্রুণনিষিক্তকরণ এবং বংশগতিবিদ্যার কর্মরত) যে সমস্ত ভ্রুণে প্রাথমিক
সূত্র থেকে মানবদেহ গঠন শুরু হয়ে গেছে সে সমস্ত ভ্রুণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে নিষেধাজ্ঞা
আরোপ করেছে।
পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَلاَ تَقُولُواْ
لِمَنْ يُقْتَلُ
فِي سَبيلِ اللّهِ أَمْوَاتٌ
بَلْ أَحْيَاء
وَلَكِن لاَّ تَشْعُرُونَ
পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَلاَ تَحْسَبَنَّ
الَّذِينَ قُتِلُواْ
فِي سَبِيلِ اللّهِ أَمْوَاتًا
بَلْ أَحْيَاء
عِندَ رَبِّهِمْ
يُرْزَقُونَ
যখন
মানুষ মারা যায় তখন পুরা দেহ ক্ষয় হয় (عجب الذنب) আজবুয্
যানাব’ অংশটা ছাড়া। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এভাবেই উল্লেখ আছে। মানুষকে পুনরায়
তৈরী করা হবে ঠিক যেমন বীজ থেকে চারা গজায়। এই প্রক্রিয়াটা ক্বিয়ামতের দিন ঘটবে। যখন
মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় আকাশ থেকে বিশেষ রকম বৃষ্টি বর্ষিত হবে।
ডা.
উসমান আল জিলানী এবং শেখ আব্দুল মাজিদ আযযানদানী উনারা এ আজবুয্ যানাব বা টেইলবোন এর
উপর ১৪২৪ হিজরী পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে (২০০৩ ঈসায়ী সনে) ইয়েমেনের সানা’আ শহরে আব্দুল
মাজিদ আযযানদানী উনার বাসগৃহে অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ৫টি টেইলবোনের ২টি ভারটিব্রা
এর ১টিকে গ্যাস প্রজ্জলিত অগ্নিশিখায় ১০ মিনিট পোড়ানো হয়েছিলো যতক্ষণ না পুরাটা আগুনে
দগ্ধ হয়। প্রথমে লাল আভা দেয় পড়ে কালো বর্ণ ধারণ করে। তারা পুরা অংশটুকুকে জীবানু নিরোধ
বাক্সে করে সানা’আ শহরের আল ওলাকি ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যান। ডা. সালেহ আল ওলাকি যিনি
সানা’আ ইউনিভার্সিটির হিস্টোলজি ও প্যাথলজি অধ্যাপক, তিনি এই টুকুরাগুলোকে পরীক্ষা
করে বের করেন যে, এই হাড়গুলির কোষগুলি কোনো প্রকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আগুনের শিখার
মাঝেও টিকে রয়েছে। শুধুমাত্র পেশী, চর্বি, অস্থিমজ্জা পুড়েছে কিন্তু টেইলবোনের কোষগুলো
কোনো প্রকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
সহজ কথায়, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এটা বলা
হয়নি যে, এই হাড়ের টুকরাটার কোনো পরিবর্তন হবেনা। বরং পবিত্র হাদীছ শরীফে এ বিষয়টিকে
জোর দেয়া হয়েছে যে, এ অংশটি তার গঠন বৈশিষ্ট্য সংরক্ষিত রাখে। যার মূল তত্ত্ব থেকে
মানবদেহ পুনর্গঠন করা হবে।
0 Comments:
Post a Comment