পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ঈমানী কুওয়্যত বৃদ্ধিকারী মুবারক মু’জিযা ও নিদর্শনসমূহ-৯

 

পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ঈমানী কুওয়্যত বৃদ্ধিকারী মুবারক মুজিযা ও নিদর্শনসমূহ (০৯)

-সাইয়্যিদুনা হযরত শাফিউল উমাম আলাইহিস সালাম

 মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

ﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﻗَﺼَﺼِﻬِﻢْ ﻋِﺒْﺮَﺓٌ ﻟِّﺄُﻭﻟِﻲ ﻟْﺄَﻟْﺒَﺎﺏِ

 অর্থ: পূর্ববর্তী উনাদের ঘটনাবলীর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। (সূরা ইউসূফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-১১১)

উছূল হলো-

قصاص  الاولين موعظة للاخرين

 অর্থ: পূর্ববর্তীদের ঘটনাবলী পরবর্তীদের জন্য নসীহত স্বরূপ।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে পূর্ববর্তীদের অনেক ওয়াক্বিয়া বা ঘটনা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে বর্ণনা মুবারক করেছেন। সেরকম দুইটি ঘটনা হচ্ছে মিশরের শাসক আযীয এবং ফেরাউনের ঘটনা। ঘটনা বর্ণনা এখানে আমাদের উদ্দেশ্য নয়, বরং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার বর্ণনার মাঝে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রত্যেকটি বিষয় অত্যন্ত নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এই বিষয়টি আলোকপাত করা।

মিশরে দুই সময়ে সম্মানিত দুই জন নবী আলাইহিমাস সালাম, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম ও হযরত মুসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাদের আগমনের কথা আমরা জানি। উনাদের সময়ে মিশরের যে শাসক ছিলো পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে তাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সময়ে মিশরের শাসককে আল মালিক (الْمَلِكُ) বা বাদশা এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে আল আযীয (الْعَزِيزِ)  নামে বা উপাধিতে উল্লেখ করা হয়েছে। আর হযরত মুসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সময়ের শাসককে ফেরাউন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ অন্যান্য প্রচলিত ধর্মগ্রন্থে এই পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না।

 পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মিশরের শাসক আযীযের বর্ণনা:

وَقَالَ نِسْوَةٌ فِي الْمَدِينَةِ امْرَأَةُ الْعَزِيزِ ذرَاوِدُ فَذاهَا عَن نَّفْسِهِ قَدْ شَغَفَهَا حُبًّا إِنَّا لَنَرَاهَا فِي ضَلاَلٍ مُّبِينٍ

 নগরে মহিলারা বলাবলি করতে লাগল যে  আযীয পতœী (امْرَأَةُ الْعَزِيزِ) স্বীয় গোলামকে নফসানিয়্যাতের জন্য স্খলিত করতে চেয়েছে। সে তার মুহব্বতে অধীর হয়ে গেছে। আমরা তো তাকে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি। (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৩০)

وَقَالَ الْمَلِكُ إِنِّي أَرَى سَبْعَ بَقَرَاذ سِمَانٍ يَأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَسَبْعَ سُنبُلاَذ خُضْرٍ وَأُخَرَ يَابِسَاذ يَا أَيُّهَا الْمَلأُ أَفْذونِي فِي رُؤْيَايَ إِن كُنذمْ لِلرُّؤْيَا ذعْبُرُونَ

 বাদশাহ (الْمَلِكُ) বললঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম, সাতটি মোটাতাজা গাভী-এদেরকে সাতটি শীর্ণ গাভী খেয়ে যাচ্ছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অন্যগুলো শুষ্ক। হে পরিষদবর্গ!  তোমরা আমাকে আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা বল, যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যায় পারদর্শী হয়ে থাক। (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)

قَالَ مَا خَطْبُكُنَّ إِذْ رَاوَدذنَّ يُوسُفَ عَن نَّفْسِهِ ۚ قُلْنَ حَاشَ لِلَّـهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ مِن سُوءٍ ۚقَالَذ امْرَأَذ الْعَزِيزِ الْآنَ حَصْحَصَ الْحَقُّ أَنَا رَاوَدذهُ عَن نَّفْسِهِ وَإِنَّهُ لَمِنَ الصَّادِقِينَ ﴿৫১ ذَٰلِكَ لِيَعْلَمَ أَنِّي لَمْ أَخُنْهُ بِالْغَيْبِ وَأَنَّ اللَّـهَ لَا يَهْدِي كَيْدَ الْخَائِنِينَ   ﴿৫২

 বাদশাহ (الْمَلِكُ) মহিলাদেরকে বললো,  তোমাদের প্রকৃত ঘটনা কি, যখন তোমরা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে আত্মসংবরণ থেকে স্খলিত করতে চেয়েছিলে? তারা বললোঃ আল্লাহ পাক মহান, আমরা উনার সম্পর্কে মন্দ কিছু জানি না। আযীয-পত্মী (امْرَأَذ الْعَزِيزِ) বললোঃ এখন সত্য কথা প্রকাশ হয়ে গেছে। আমিই উনাকে আত্মসংবরণ থেকে স্খলিত করতে চেয়েছিলাম এবং তিনি সত্যবাদী। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম বললেনঃ এটা এজন্য, যাতে আযীয (الْعَزِيزِ) জেনে নেয় যে, আমি গোপনে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বিশ্বাসঘাতকদের প্রতারণাকে এগুতে দেন না। (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫১-৫২)

ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻟْﻤَﻠِﻚُ ْﺘُﻮﻧِﻲ ﺑِﻪِ ﺃَﺳْﺘَﺨْﻠِﺼْﻪُ ﻟِﻨَﻔْﺴِﻲ ۖ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﻠَّﻤَﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻚَ ْﻴَﻮْﻡَ ﻟَﺪَﻳْﻨَﺎ ﻣَﻜِﻴﻦٌ ﺃَﻣِﻴﻦٌ ﴿ ৫৪ ﻗَﺎﻝَ ﺟْﻌَﻠْﻨِﻲ ﻋَﻠَﻰٰ ﺧَﺰَﺋِﻦِ ﻟْﺄَﺭْﺽِ ۖ ﺇِﻧِّﻲ ﺣَﻔِﻴﻆٌ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ﴿ ৫৫ ﻭَﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﻣَﻜَّﻨَّﺎ ﻟِﻴُﻮﺳُﻒَ ﻓِﻲ ﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻳَﺘَﺒَﻮَّﺃُ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺣَﻴْﺚُ ﻳَﺸَﺎﺀُ ۚ ﻧُﺼِﻴﺐُ ﺑِﺮَﺣْﻤَﺘِﻨَﺎ ﻣَﻦ ﻧَّﺸَﺎﺀُ ۖ ﻭَﻟَﺎ ﻧُﻀِﻴﻊُ ﺃَﺟْﺮَ ﻟْﻤُﺤْﺴِﻨِﻴﻦَ ﴿ ৫৬

 অর্থ: আর বাদশাহ (الْمَلِكُُُ) বললেন, (হযরত ইঊসুফ আলাইহিস সালাম) উনাকে আমার কাছে নিয়ে আসুন। আমি উনাকে আমার নিজের জন্য বিশেষভাবে গ্রহণ করবো। অত:পর, তিনি যখন বাদশাহর সাথে আলোচনা মুবারক করলেন, তখন বাদশাহ উনাকে বললেন, নিশ্চয়ই আপনি আজ আমাদের নিকট সুপ্রতিষ্ঠিত এবং চরম বিশ্বস্ত। (হযরত ইঊসুফ আলাইহিস সালাম) তিনি বললেন, আমাকে দেশের ধন-সম্পদের দায়িত্বশীল করুন। নিশ্চয়ই আমি হিফাযতকারী এবং অভিজ্ঞ। আর এইভাবে আমি  হযরত ইঊসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি। সেখানে তিনি উনার মুবারক ইচ্ছা অনুযায়ী দায়িত্ব মুবারক পালন করতেন। আমি আমার ইচ্ছা মুবারক অনুযায়ী রহমত মুবারক দ্বারা যে কাউকে মনোনীত করি। আর আমি মুহসিনগণ উনাদের আমলের প্রতিদান বিনষ্ট করি না। (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪-৫৬)

 পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ থেকে আমরা জানতে পারছি, হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম মিশরের শাসকের (الْمَلِكُُُ) স্বপ্ন তাবিড় বা ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং দুর্ভিক্ষের সময় দেশকে রক্ষা করেছিলেন।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে হযরত ইউসুফ আলাইহিসসালাম উনার সময়ে মিশরের শাসকের বিষয়টি আল মালিক (الْمَلِكُُُ) বাদশা হিসেবে এবং উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার বিষয়টি আল আযীয (الْعَزِيزِ),আযীয পত্নী (امْرَأَةُ الْعَزِيزِ)  এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও ফেরাউন বা হামান পদবি দিয়ে উল্লেখ করা হয়নি।

এ থেকে বুঝা যায়, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সময় মিশরের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছিল এবং এ বিষয়টি ইতিহাসে দেখা যায় হিকসস নামে বহিরাগত জাতি মিশর শাসন করছিল।

এ কারণেই হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার ওয়াক্বিয়া উল্লেখ করা হলে মুসলমান উনাদের মনে মিশরের শাসক আল মালিক (الْمَلِكُُُ) এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আযীযের (الْعَزِيزِ) কথা ভেসে উঠে। কিন্তু ফেরাউন বা হামানের কথা স্মরণ হয়না।

 পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মিশরের শাসক হিসেবে ফেরাউনের বর্ণনা:وَإِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِي الْأَرْضِ  ﴿يونس: ৮৩

ফেরাউন (فِرْعَوْنَ ) দেশময় কর্তৃত্বের শিখরে আরোহণ করেছিল। (পবিত্র সূরা ইউনুছ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৩)

ثُمَّ بَعَثْنَا مِن بَعْدِهِم مُّوسَىٰ بِآيَاذنَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَظَلَمُوا بِهَا فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِينَ ﴿الأعراف: ১০৩

 অতঃপর আমি তাদের পরে হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে পাঠিয়েছি নিদর্শনাবলী দিয়ে ফেরাউন (فِرْعَوْنَ) ও তার সভাসদদের নিকট। বস্তুতঃ ওরা উনার মোকাবেলায় কুফরী করেছে। সুতরাং  চেয়ে দেখুন, কি পরিণতি হয়েছে অনাচারীদের। (পবিত্র সূরা আরাফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩) وَقَالَ مُوسَىٰ يَا فِرْعَوْنُ إِنِّي رَسُولٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ ﴿الأعراف: ১০৪

 আর হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে ফেরাউন (فِرْعَوْنَ ), আমি বিশ্ব-পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত রসূল।  (পবিত্র সূরা আরাফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৪)

فَأَذبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ بِجُنُودِهِ فَغَشِيَهُم مِّنَ الْيَمِّ مَا غَشِيَهُمْ ﴿طه: ৭৮

অতঃপর ফেরাউন (فِرْعَوْنَ ) তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে উনাদের পশ্চাদ্ধাবন করলো এবং সমুদ্র তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করলো। (পবিত্র সূরা ত্বোয়া-হা: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৮)

ﻭَﺇِﺫْ ﻓَﺮَﻗْﻨَﺎ ﺑِﻜُﻢُ ﺍﻟْﺒَﺤْﺮَ ﻓَﺄَﻧﺠَﻴْﻨَﺎﻛُﻢْ ﻭَﺃَﻏْﺮَﻗْﻨَﺎ ﺁﻝَ ﻓِﺮْﻋَﻮْﻥَ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢْ ﺗَﻨﻈُﺮُﻭﻥَ ﴿ ৫০

 তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের জন্য সমুদ্রকে দুই ভাগ করলেন অর্থাৎ আপনাদের জন্য সমুদ্রের মাঝে রাস্তা তৈরী করে দিয়ে আপনাদেরকে মুক্তি দিলেন আর ফেরাউন ও তার ক্বওমকে (ﺁﻝَ ﻓِﺮْﻋَﻮْﻥَ) ডুবিয়ে মারলেন। আর এ বিষয়টি আপনারা দেখেছেন। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৫০)وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ وَمَا كَانُوا يَعْرِشُونَ ﴿الأعراف: ১৩৭

 আর ধ্বংস করে দিয়েছি সে সবকিছু যা তৈরী করেছিল ফেরাউন (فِرْعَوْنَ ) ও তার সম্প্রদায় এবং ধ্বংস করেছি যা কিছু তারা সুউচ্চ নির্মাণ করেছিল। (পবিত্র সূরা আরাফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৭)

 অন্যান্য গ্রন্থে মিশরের শাসকের উল্লেখ:

 ইহুদী এবং নাছারাদের কিতাবের মধ্যে এই দুই সময়ে মিশরের শাসকের উল্লেখ আছে। ইহুদীদের গ্রন্থ হচ্ছে হিব্রু বাইবেল। যা নাছাদের কাছে ওল্ড টেস্টামেন্ট নামে পরিচিত। এর মধ্যে ৫টি গ্রন্থ অন্তর্ভুক্ত-  জেনেসিস, এক্সাডাস, লেভিটিকাস, নাম্বারস ও ডিউটারোনমি। তবে নাছারাদের ওল্ড  টেস্টামেন্টে এমনকিছু অধ্যায় আছে যা ইহুদীদের হিব্রু বাইবেলে ছিলনা। অর্থাৎ নাছারারা আরো কিছু যোগ করে নিয়েছে।  আর নাছারাদের নিউ টেস্টামেন্ট হচ্ছে হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে উনার   অনুসারীদের লিখিত কিতাব। যাকে গসপেল বলা হয়। তার মধ্যে চারটি ক্যানোনিক (চার্চ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত) গসপেল প্রসিদ্ধ- ম্যাথিউ, মার্ক, লুক এবং জন।

 হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সময় মিশরের শাসক এর বিষয়ে বাইবেলের আদি পুস্তক জেনেসিসে উল্লেখ পাওয়া যায়। সে যে স্বপ্ন দেখেছিলো সে প্রসঙ্গে বলা (প্রচলিত বাইবেলে) আছে, “তখন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে ফেরাউন বললো, আমার স্বপ্নের মধ্যে আমি নীল নদীর তীরে দাঁড়িয়েছিলাম তখন নীলনদ থেকে সাতটা স্বাস্থ্যবান মোটা-সোটা গরু উঠে আসলো এবং নীলনদের তীরে বিচরণ করছিল। এদের পরে সাতটা রুগ্ন দুর্বল গরু নদী থেকে উঠে এসে নদী তীরে এদের পাশে অবস্থান নিলো। আমি মিশরের কোথাও এরকম গরু দেখিনি। তখন রুগ্ন গরুগুলো মোটাসোটা গরুগুলোকে ভক্ষণ করে ফেলেলো। কিন্তু তারা তাদের খাওয়ার পরেও, কেউ বলেনি যে তারা এই কাজ করেছে; তাদেরকে আগের মতোই কুৎসিত দেখাচ্ছিল। তখন আমি জেগে উঠি। (জেনেসীস (আদিপুস্তক) ৪১: ১৭-২১)

এখানে স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম উনার সময় মিশরের শাসক যে ছিলো তাকে বাইবেলে ‘ফেরাউন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ওই সময়ে মিশরের শাসককে আল মালিক (ﺍﻟْﻤَﻠِﻚُ) বাদশা হিসেবে এবং উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার বিষয়টি আল আযীয (الْعَزِيزِ), হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

 মিশরের বিভিন্ন শাসকের সময়কাল:

কার্বন ডেটিং বিশ্লেষণে প্রচলিত ইতিহাস অনুসারে, প্রথম অর্ন্তবর্তীকালে, বহিরাগত হিকসস জাতি মিশর শাসন করে। আগে ও পরে মিশরীয় অর্থাৎ কিবতি রাজারা শাসন করছিল। প্রচলিত ইতিহাস থেকে এটা সুবিদিত যে, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সময়ে মিশর বহিরাগত হিকসস জাতিরা জয় করেছিলো এবং তারা প্রায় ২০০ বছর রাজত্ব করে। পরে মিশরীয়রা তাদেরকে আবার পরাজিত করে।

 হিকসসরা সেমিটিক (আরবী) এবং এশীয় বংশের মিশ্র একটি জাতি যারা মিশরে আক্রমণ করে এবং নীল নদের অববাহিকায় প্রায় (শামসী তারিখ) ১৬৪০ খ্রিস্টপূর্ব বসতি স্থাপন করে এবং মিশরের ইতিহাসে তারা ১৫তম এবং ১৬তম রাজবংশ গঠন করে এবং (শামসী তারিখ) ১৫৩২ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত মিশরের একটি বড় অংশ শাসন করে। হিকসস জাতিরা যখন শাসন করতো তখন তাদের রাজাদেরকে ‘ফেরাউন বলা হতো না। ‘ফেরাউন উপাধি শুধুমাত্র মিশরীয় অর্থাৎ কিবতি রাজাদেরকে বলা হতো, বহিরাগত কোনো শাসকদের জন্য ব্যবহৃত হতো না। যখন হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিত পরিবার-পরিজন মিশরে আসেন তখন হিকসস শাসকরা মিশর শাসন করছিলো।

হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম ও উনার সম্মানিত পরিবার-পরিজন এবং বনী ইসরাঈলীরা হিকসসদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে মিশরে অবস্থান করতেন।

 কিন্তু পরবর্তীতে অনেক বছর পর মিশরীয়রা পুনরায় হিকসস জাতিদের পরাজিত করে ক্ষমতা দখল করে এবং ফেরাউন রাজত্ব পূনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তারা বনী ইসরাঈলীদের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। এই সময় হযরত মুসা কালিমুল্লাহ আলাইহসি সালাম তিনি আগমন করেন এবং ফেরাউনকে হক্বের দাওয়াত দেন।

পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ সম্বন্ধে কাফির-মুশরিকরা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকে যে, ইনযিল শরীফ ও তাওরাত শরীফ থেকে অনুসরণ করা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! তাদের এ মিথ্যা দাবির অসারতা মিশরের শাসক এর বিষয়টি থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।

বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় বাইবেলে হিকসস শাসকদেরকে ফেরাউন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ ভুল। কিন্তু পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম উনার সময় হিকসস জাতির শাসককে আল মালিক (ﺍﻟْﻤَﻠِﻚُ) বা বাদশা হিসেবে এবং উচ্চপদস্থ’ কর্মকর্তার বিষয়টি আল আযীয (الْعَزِيزِ) বলে সম্বোধন করেছেন। ফেরাউন বলে সম্বোধন করেননি। এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যেকটি বিষয় সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম নির্ভুল এবং তা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুযিযা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

0 Comments: