শিলা আকাশে অবস্থিত মেঘমালা থেকেই নিক্ষিপ্ত হয়। তবে উপরের শীতল অবস্থার কারণে উক্ত মেঘ ঘনীভূত হয়ে বরফ/শিলার অবস্থা ধারণ করে এবং জমে জমে পাহাড় সদৃশ হয় বলে একে পাহাড় বা শিলাস্তুপ বলা হয়েছে। বস্তুত সেটা মেঘ।

  শিলা আকাশে অবস্থিত মেঘমালা থেকেই নিক্ষিপ্ত হয়। তবে উপরের শীতল অবস্থার কারণে উক্ত মেঘ ঘনীভূত হয়ে বরফ/শিলার অবস্থা ধারণ করে এবং জমে জমে পাহাড় সদৃশ হয় বলে একে পাহাড় বা শিলাস্তুপ বলা হয়েছে। বস্তুত সেটা মেঘ।

নাস্তিকদের আপত্তি ১২ : শিলা (Hailকি আকাশে অবস্থিত কোন শিলাস্তুপ (sky mountains/ heaven mountains থেকে নিক্ষিপ্ত হয় (Quran 24:43) ?

Hail forms in cumulonimbus clouds when supercooled water droplets freeze on contact with condensation nuclei. http://en.wikipedia.org/wiki/Hail#Formation

খণ্ডণ : শিলা আকাশে অবস্থিত মেঘমালা থেকেই নিক্ষিপ্ত হয়। তবে উপরের শীতল অবস্থার কারণে উক্ত মেঘ ঘনীভূত হয়ে বরফ/শিলার অবস্থা ধারণ করে এবং জমে জমে পাহাড় সদৃশ হয় বলে একে পাহাড় বা শিলাস্তুপ বলা হয়েছে। বস্তুত সেটা মেঘ।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُزْجِىْ سَحَابًا ثُـمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهُ ثُـمَّ يَـجْعَلُهُ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يـَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهٖ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مِن جِبَالٍ فِيْهَا مِنْ بَۢـرَدٍ فَيُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَاءُ وَيَصْرِفُهُ عَنْ مَّنْ يَّشَاءُ  ۖ  يَكَادُ سَنَا بَرْقِهٖ يَذْهَبُ بِالْاَبْصَارِ.

অর্থ : “আপনি কি দেখেন না যে (অর্থাৎ আপনি দেখেন যে), মহান আল্লাহ পাক তিনি মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন; অতঃপর আপনি দেখেন যে, তার মধ্য থেকে বৃষ্টি নির্গত হয়। আর তিনি আকাশস্থিত ঠা-ার পাহাড় থেকে শিলা বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা সরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎ ঝলক যেন তার দৃষ্টিশক্তিকে বিলীন করে দিতে চায়।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত جِبَالٍ ‘পাহাড় বা স্তুপ’ আকৃতিগত দিক দিয়ে পাহাড়ের মতো কিন্তু এই পাহাড় পাথর থেকে নয়; বরং তা পুঞ্জীভূত মেঘমালা ঠা-া হয়ে শিলায় পরিণত হওয়া শিলাস্তুপ বহন করে উলম্বভাবে উৎপত্তি লাভ করে।

পুঞ্জীভূত মেঘমালা ঠাণ্ডা হয়ে শিলায় পরিণত হচ্ছে আর সেই শিলাগুলো উলম্বভাবে জমা হচ্ছে বলেই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে جِبَالٍ فِيْهَا مِنْ بَۢـرَدٍ এমন পাহাড় যা ঠাণ্ডা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে আকাশে শিলাস্তুপ বা শিলার পাহাড় আগে থেকেই গড়ে উঠেছে আর সেখানে থেকে বৃষ্টির সময় শিলা নেমে আসে। যদি শিলাস্তুপ বা শিলার পাহাড় আগে থেকেই গড়ে উঠতো তাহলে সেখান থেকে বৃষ্টির সময় শিলা নেমে আসার কথা বলার কোন কারণ থাকতো না। বরং শিলা বৃষ্টির সময় ছাড়াও অন্যান্য যে কোন সময়েই নেমে আসার কথা।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, যমীনে যেমন পাথর জমে জমে পাহাড় সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনি বৃষ্টির পূর্বে ঠা-ায় মেঘ পুঞ্জীভূত হয়ে শিলা গঠনের পর, সেই শিলা জমে জমে পাহাড় আকৃতি সৃষ্টি হয় বিধায় তাকে جِبَالٍ শব্দ মুবারক দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ বাহ্যিক অবয়বের কারণে جِبَالٍ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তা পাহাড় নয়। যেমনিভাবে বালিয়াড়ি প্রকৃতপক্ষে কোন বালি বা বালুর পাহাড় নয়, বরং ক্ষণস্থায়ীভাবে তৈরী একটি অন্যতম ভূমিরূপ, যা বায়ুপ্রবাহ দ্বারা বালুকারাশি এক স্থান থেকে সরে গিয়ে অন্য স্থানে সঞ্চিত হয়ে কালক্রমে উচ্চ ও দীর্ঘ বালুকার স্তুপ সৃষ্টি হয়। মরু অঞ্চল ও সমুদ্র উপকুলে বালিয়াড়ি দেখা যায়। তাই বলে কেউই নাস্তিকীয় যুক্তি দিয়ে বলে না যে, মরু অঞ্চল বা সমুদ্র উপকুলের পাহাড়কে বালিয়াড়ি বলে।

আবার بَرَدٍ শব্দ মুবারক ‘ঠাণ্ডা বা শীতল’ অর্থে আরো ২ খানা আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যেও বর্ণিত রয়েছে-

قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ

অর্থ : “আমি বললাম, হে আগুন! তুমি হযরত ইবরাহীম আলাইহি উনার উপর শীতল ও শান্তিদায়ক হয়ে যাও।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৯)

لَّا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابًا

অর্থ : “তারা সেখানে শীতলতার স্বাদ গ্রহণ করবে না এবং পানীয় আস্বাদন করবে না।” (পবিত্র সূরা নাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)

এ ব্যাপারে তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে-

قال ابنُ عبَّاس أخْبَرَ اللهُ أنَّ فِي السَّمَاءِ جِبَالاً مِنْ بَرَدٍ ومفعولُ الإنزالِ محذوفٌ تقديرهُ وينَزِّلُ اللهُ من جبالٍ بَرَدَ فيها واستغنَى عن ذكرِ المفعول للدلالة عليه ومِن الأُولَى لابتداء الغايةِ لأن ابتداءَ الإنزالِ من السَّماء والثانية للتبعيضِ لأن ما يُنْزِلُهُ اللهُ بعض تلك الجبالِ التي في السَّماء والثالثةُ لتبيين الجنسِ لأن جنسَ تلك الجبالِ البَرَدَ كما تقولُ خَاتَمٌ مِن حديدٍ. تفسير القرآن العظيم الـمنسوب للإمام الطبراني

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সংবাদ দিয়েছেন আসমানে ঠা-ার পাহাড় আছে। এই বাক্যটি উহ্য মাফউল হয়েছে। যার ব্যাখ্যা হলো, মহান আল্লাহ পাক এমন পাহাড় হতে নাযিল করেন, যেখানে ঠা-ার পাহাড় আছে। এটা মাফউলের উপর দালালত করেছে। এটা শুরু থেকে শেষ এ কারণে যে এটা প্রথমে আসমান থেকে নাযিল করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত যেভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, ঐ সকল পাহাড় যা মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করেছেন। আর তৃতীয়ত ঐ সকল পাহাড় যা প্রাকৃতিকভাবেই ঠান্ডা। যেমনটা বলা হয়ে থাকে; লোহার আংটি।” (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম লি ইমামিত ত্ববারানী) 

সুতরাং মেঘমালা থেকে যেমন বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। তেমনি মেঘমালা যখন ঠাণ্ডায় আরো ঘনীভূত হয়ে শিলায় পরিণত হয়ে যায়, তখন সে শিলাগুলো জমে জমে একটি শিলাস্তুপের আকৃতি ধারণ করে। কিন্তু তাই বলে এই কথা বলার কোন যুক্তিই নেই যে, শিলা আকাশে অবস্থিত কোন শিলাস্তুপ থেকে নিক্ষিপ্ত হয়। বরং শিলাস্তুপ মেঘমালারই একটি শীতলায়িত রূপ। অর্থাৎ শিলা অধিক ঘনীভূত মেঘ থেকেই বর্ষিত হয়।


0 Comments: