আল্লাহ কোন প্রেক্ষিতে আয়াত তে দাবি করেছেন যে তিনি সকল ফল সৃষ্টি করেছেন দু দু প্রকারে (male and female)? যেহেতু প্রকৃত পক্ষে ফলের কোন যৌন বৈশিষ্ট্যই নেই! উক্ত আয়াত দ্বারা যদি ফলের গাছের কথা বোঝানো যায় তবুও দাবিটি ভ্রান্ত কেননা ফলদায়ী বহু সংখ্যক গাছ রয়েছে যা উভলিঙ্গ বৈশিষ্ঠ্য সম্পন্ন!

আল্লাহ কোন প্রেক্ষিতে আয়াত তে দাবি করেছেন যে তিনি সকল ফল সৃষ্টি করেছেন দু দু প্রকারে (male and female)? যেহেতু প্রকৃত পক্ষে ফলের কোন যৌন বৈশিষ্ট্যই নেই! উক্ত আয়াত দ্বারা যদি ফলের গাছের কথা বোঝানো যায় তবুও দাবিটি ভ্রান্ত কেননা ফলদায়ী বহু সংখ্যক গাছ রয়েছে যা উভলিঙ্গ বৈশিষ্ঠ্য সম্পন্ন! 

 নাস্তিকদের আপত্তি ২ : "আল্লাহ কোন প্রেক্ষিতে আয়াত 13.3  তে দাবি করেছেন যে তিনি সকল ফল সৃষ্টি করেছেন দু দু প্রকারে (male and female)? যেহেতু প্রকৃত পক্ষে ফলের কোন যৌন বৈশিষ্ট্যই নেই! উক্ত আয়াত দ্বারা যদি ফলের গাছের কথা বোঝানো যায় তবুও দাবিটি ভ্রান্ত কেননা ফলদায়ী বহু সংখ্যক গাছ রয়েছে যা উভলিঙ্গ বৈশিষ্ঠ্য সম্পন্ন! 

http://en.wikipedia.org/wiki/Plant_sexuality#Individual_plant_sexuality="

খণ্ডণ: মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْاَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَاَنْـهَارًا ۖ وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيْهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ ۚ اِنَّ فِىْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُوْنَ. 

অর্থ : “তিনিই যমীনকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড়-পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল-ফসল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্যে নিদর্শণ রয়েছে, যারা চিন্তা করে।” (পবিত্র সূরা র’দ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত الثَّمَرَاتِ ‘ছামারাত’ শব্দ মুবারক দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধুমাত্র ‘ফলবান গাছের ফল’ বুঝাননি। কেননা, الثَّمَرَاتِ ‘ছামারাত’ শব্দ কোন পুরষ্কার, প্রতিদান, ফলাফল, ফসল, গাছের ফুল, গাছের ফল ইত্যাদি প্রকাশার্থে ব্যবহৃত হয় আর শুধুমাত্র গাছের ফল বুঝাতে ব্যবহৃত হয় فَاكِهَة ‘ফাকিহাহ্’। যেমন ইংরেজীতে ফলাফল বুঝাতে Result ব্যবহৃত হয় আবার গাছের ফল বুঝাতে Fruit ব্যবহৃত হয়। গাছে নিষেকরণের পর Result  হিসেবে Fruit তৈরী হয় বটে। কিন্তু সকল Result-ই Fruit  অর্থাৎ গাছের ফল নয়।

সহজে বুঝার জন্য তাই বলা হয়-

كُلُّ فَاكِهَةٍ ثَـمَرَةٌ وَلَيْسَتْ كُلُّ ثَـمَرَةٍ فَاكِهَةٌ

অর্থ : “সমস্ত فَاكِهَة ‘ফাকিহাহ্’ই ثـمرة ‘ছামারাত’ কিন্তু সমস্ত ثـمرة ‘ছামারাত’ই فَاكِهَة ‘ফাকিহাহ্’ নয়।

আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে الثَّمَرَاتِ ‘ছামারাত’ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে ১২টি আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে আর فَاكِهَة ‘ফাকিহাহ্’ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে ১১টি আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে।

যে ১১টি আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে فَاكِهَة ‘ফাকিহাহ্’ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানে সুস্পষ্টভাবে গাছের ফল বুঝাতেই ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু যে ১২টি আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে الثَّمَرَاتِ ‘ছামারাত’ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানে সবক্ষেত্রেই ‘গাছের ফল’ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়নি। আর এমন একখানা আয়াত শরীফ হলো- পবিত্র সূরা র’দ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩। অত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা গাছের বৈশিষ্ট্য কিংবা ফুলের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা হয়েছে।

আবার অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ ‘জোড়ায় জোড়ায়’ দ্বারা কখনোই যৌন বৈশিষ্ট্যকে বুঝানো হয়নি। কেননা এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে এমন কোন বিশেষণ জুড়ে দেয়া হয়নি যার দ্বারা দু দু প্রকার বলতে নর ও মাদী বুঝাবে।

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيْهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ ‘প্রত্যেক প্রকারের গাছ বা ফুল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়’-এই জোড়া বলতে একদিকে যেমন-

* অপুস্পক উদ্ভিদ-সপুষ্পক উদ্ভিদ * গুপ্তবীজি উদ্ভিদ-নগ্নবীজি উদ্ভিদ

* একবীজপত্রী উদ্ভিদ-দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ * একবর্ষজীবি উদ্ভিদ-বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ

* চিরসবুজ উদ্ভিদ-পত্রঝরা উদ্ভিদ * স্থলজ উদ্ভিদ-পানিজ উদ্ভিদ

* স্বভোজি উদ্ভিদ-পরভোজী বা পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ

* অন্তঃপত্ররন্ধ বিশিষ্ট উদ্ভিদ-বহিঃপত্ররন্ধ বিশিষ্ট উদ্ভিদ

* মিঠা পানির উদ্ভিদ-লোনা পানির উদ্ভিদ ইত্যাদি বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যগুলোর জোড়া বুঝানো হয়েছে।

আবার-

* বড় ফুল-ছোট ফুল, * মিষ্টি গন্ধযুক্ত ফুল-ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত ফুল,

* রঙিন ফুল-বিবর্ণ ফুল, * একক ফুল-যৌগিক ফুল ইত্যাদি বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যগুলোর জোড়া বুঝানো হয়েছে।

এই জোড়া জোড়া বলতে যে, নর ও মাদী বুঝানো হয়নি তার প্রমাণ হচ্ছে নিম্নোক্ত আয়াত শরীফ-

وَالَّذِي خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا

অর্থ : “এবং যিনি সবকিছুর যুগল সৃষ্টি করেছেন।” (পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)

وَمِن كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

অর্থ : “আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম করো।” (পবিত্র সূরা জারিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৯)

সুতরাং উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, দু দু প্রকার বলতে নর ও মাদী বুঝানো হয়নি। যদি শুধু নর ও মাদী বুঝানো হয় তাহলে مِن كُلِّ شَيْءٍ ‘প্রত্যেক বস্তু’-এর মধ্যে জীব ও জড় সব কিছুই রয়েছে। আর উন্মাদ ছাড়া সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী ব্যক্তির জানা রয়েছে যে, জড় বস্তুর কোন যৌন বৈশিষ্ট্য নেই। তাহলে জড় বস্তুর নর ও মাদী বৈশিষ্ট্য হয় কেমন করে?

যেহেতু উদ্ভিদ এক প্রকার জীব। তাই এর মধ্যে নর ও মাদী বৈশিষ্ট্য থাকাটাই স্বাভাবিক। আবার নাস্তিকরা নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছে যে,“প্রকৃত পক্ষে ফলের কোন যৌন বৈশিষ্ট্যই নেই!” তাহলে তারাই আবার উক্ত আয়াত শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সকল ফল (নর ও মাদী) দু দু প্রকারে সৃষ্টি করেছেন দাবী করেছে কোন যুক্তিতে? নিরেট মূর্খরাই এ ধরণের দাবী উত্থাপন করে থাকে, উন্মাদও এ ধরণের দাবী করে না।

এছাড়াও উক্ত আয়াত শরীফ (১৩.৩) উনার দ্বারা যদি ফলের গাছের যৌন (নর ও মাদী) বৈশিষ্ট্যকেই ধরে নেয়া হয়, তাহলে উক্ত আয়াত শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, উদ্ভিদের প্রাণ রয়েছে। কেননা যৌন (নর ও মাদী) বৈশিষ্ট্যের জন্য জীব হওয়া শর্ত, প্রাণহীন কোন জড়বস্তুর ক্ষেত্রে যৌন (নর ও মাদী) বৈশিষ্ট্যের দাবী অবান্তর। আর বহু সংখ্যক উভলিঙ্গ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ফলদায়ী গাছের বর্ণনার ক্ষেত্রেও আয়াত শরীফখানা যথার্থ। কেননা আয়াত শরীফ (১৩.৩) উনার মধ্যে اِثْنَيْنِ ‘দুই’ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে, যা দ্বৈতবাচক বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে। আর তাই উভলিঙ্গ বললেও সেখানে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ- এই ২ লিঙ্গই থাকে, তৃতীয় আরেকটি লিঙ্গ এসে উপস্থিত হয় না। এমনকি উভলিঙ্গ গাছে পুরুষ এবং মহিলা অংশ আলাদা অবস্থায়ই থাকে।

আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত আয়াত শরীফ (১৩.৩) উনার শেষে স্পষ্টভাবেই ইরশাদ মুবারক করেছেন-

اِنَّ فِىْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُوْنَ.

অর্থ : “এতে তাদের জন্যে নিদর্শণ রয়েছে, যারা চিন্তা করে।” (পবিত্র সূরা র’দ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে নাস্তিকরা কখনোই চিন্তাশীল বা গবেষকদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাদের চিন্তা বা গবেষণা করারই যোগ্যতা নেই। তাই তারা তাদের সংকীর্ণ মানসিকতার দ্বারা উক্ত আয়াত শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করছে।


0 Comments: