মেয়েদের মাজুরতা, গর্ভধারনের কষ্ট এবং কম বুদ্ধিমত্তা থাকা গন্ধম ফল খাওয়ার সাজা থেকে প্রাপ্ত বলে কোন বর্ণনা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নেই। বরং এ ধরণের ইহুদী-নাছারা সহ নাস্তিকদের অপপ্রচার বৈ কিছুই নয়।

 
মেয়েদের মাজুরতা, গর্ভধারনের কষ্ট এবং কম বুদ্ধিমত্তা থাকা গন্ধম ফল খাওয়ার সাজা থেকে প্রাপ্ত বলে কোন বর্ণনা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নেই। বরং এ ধরণের ইহুদী-নাছারা সহ নাস্তিকদের অপপ্রচার বৈ কিছুই নয়।

নাস্তিকদের আপত্তি ৪ : ইসলাম ধর্ম মতে মেয়েদের ঋতুস্রাব, গর্ভধারনের কষ্ট এবং কম বুদ্ধিমত্তা থাকা 'হাওয়া' -র গন্ধম ফল খাওয়ার সাজা থেকে প্রাপ্ত (Al-Tabari vol-1 page 277-279, Sahih Bukhari 1:6:301) ! আদমের ক্ষেত্রে আল্লাহ এ ধরনের কোন সাজা দিলেন না কেন, যেহেতু ফল সেও খেয়েছিল?

খণ্ডন : মেয়েদের মাজুরতা, গর্ভধারনের কষ্ট এবং কম বুদ্ধিমত্তা থাকা হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনার গন্ধম ফল খাওয়ার সাজা নয়। বরং মেয়েদের মাজুরতা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আদম কন্যাদের জন্য নির্ধারিত বিষয়। অর্থাৎ গন্ধম খাওয়ার কারণে এ ধরণের কোন শাস্তি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে কাউকে প্রদান করা হয়নি।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَعِيْدٍ الْـخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ اَضْحًى اَوْ فِطْرٍ اِلَى الْمُصَلَّى فَمَرَّ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ فَاِنِّـىْ اُرِيْتُكُنَّ اَكْثَرَ اَهْلِ النَّارِ‏ فَقُلْنَ وَبِـمَ يَا رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ِقَالَ‏ تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيْرَ مَا رَاَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِيْنٍ اَذْهَبَ لِلُبِّ الرَّجُلِ الْـحَازِمِ مِنْ اِحْدَاكُنَّ‏.‏ قُلْنَ وَمَا نُقْصَانُ دِيْنِنَا وَعَقْلِنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلَيْسَ شَهَادَةُ الْمَرْاَةِ مِثْلَ نِصْفِ شَهَادَةِ الرَّجُلِ‏‏.‏ قُلْنَ بَلٰى‏.‏ قَالَ‏ فَذَلِكَ مِنْ نُقْصَانِ عَقْلِهَا اَلَيْسَ اِذَا حَاضَتْ لَـمْ تُصَلِّ وَلَـمْ تَصُمْ‏‏.‏ قُلْنَ بَلٰى‏.‏ قَالَ فَذَلِكَ مِنْ نُقْصَانِ دِيْنِهَا.

অর্থ : “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। একবার ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফিতরের নামায আদায়ের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে মহিলা সমাজ! আপনারা ছদাক্বাহ করতে থাকুন। কারণ আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে আপনারাই অধিক। উনারা সুওয়াল করলেন, কী কারণে, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা অধিক পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাকেন আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হন। বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে আপনাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি। উনারা বললেন, আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির ঘাটতি কোথায়, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, একজন মহিলার সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নন? উনারা উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এ হচ্ছে উনাদের বুদ্ধির ঘাটতি। আর মাজুর অবস্থায় উনারা কি নামায ও রোযা হতে বিরত থাকেন না? উনারা বললেন, হ্যাঁ। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এ হচ্ছে উনাদের দ্বীনের ঘাটতি।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুল হায়িদ্ব : হাদীছ শরীফ নং ৩০৪)

অত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মেয়েদের মাজুরতা, গর্ভধারনের কষ্ট এবং কম বুদ্ধিমত্তা থাকা হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনার গন্ধম ফল খাওয়ার সাজা (নাঊযুবিল্লাহ) থেকে প্রাপ্ত বলে কোন বর্ণনাই নেই। বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الـمُؤْمِنِيْنَ الثَلِثَتَا الصِّدِّقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامَ تَقُوْلُ خَرَجْنَا لَا نَرٰى اِلَّا الْـحَجَّ فَلَمَّا كُنَّا بِسَرِفَ حِضْتُ فَدَخَلَ عَلَىَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَنَا اَبْكِىْ قَالَ مَا لَكِ اَنُفِسْتِ قُلْتُ نَعَمْ‏.‏ قَالَ‏ اِنَّ هٰذَا اَمْرٌ كَتَبَهُ اللهُ عَلٰى بَنَاتِ اٰدَمَ فَاقْضِىْ مَا يَقْضِى الْـحَاجُّ غَيْرَ اَنْ لَا تَطُوْفِى بِالْبَيْتِ‏‏.‏ قَالَتْ وَضَحّٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ نِسَائِهِ بِالْبَقَرِ‏.

অর্থ : “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হজ্জ আদায়ের উদ্দেশ্যেই (পবিত্র মদীনা শরীফ হতে) বের হলাম। সারিফ নামক স্থানে পৌঁছার পর আমার মাজুরতা দেখা দিলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক নিয়ে আমাকে কাঁদতে দেখলেন এবং ইরশাদ মুবারক করেন, এ তো মহান আল্লাহ পাক তিনিই আদম কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং আপনি বাইতুল্লাহ শরীফ ত্বাওয়াফ ছাড়া হজ্জ আদায়ের বাকী সব কাজ করে নিন। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পক্ষ হতে গাভী কুরবানী করলেন।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুল হায়িদ্ব : হাদীছ শরীফ নং ২৯৪)

অত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে اِنَّ هٰذَا اَمْرٌ كَتَبَهُ اللهُ عَلٰى بَنَاتِ اٰدَمَ ‘মহান আল্লাহ পাক তিনিই আদম কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন’ উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনার জন্য নির্ধারণ করেছেন বলে তো উল্লেখ করা হয়নি। সত্যিই যদি তা হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনার থেকে নির্ধারিত হতো তাহলে সেটা স্পষ্ট করেই উল্লেখ থাকতো।

আর তাই নাস্তিকদের উল্লেখিত হাদীছ শরীফ (Sahih Bukhari 1:6:301 অর্থাৎ বুখারী শরীফ ১ম খ- ৬ষ্ঠ অধ্যায় উনার শুরুতেই-

باب كَيْفَ كَانَ بَدْءُ الْـحَيْضِ

অর্থ : “মাজুরতার ইতিকথা”

 এর অধীনে বর্ণনা করা হয়েছে-

وَقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هٰذَا شَىْءٌ كَتَبَهُ اللهُ عَلٰى بَنَاتِ اٰدَمَ وَقَالَ بَعْضُهُمْ كَانَ اَوَّلُ مَا اُرْسِلَ الْـحَيْضُ عَلٰى بَنِىْ اِسْرَائِيْلَ وَحَدِيْثُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَكْثَرُ‏.‏

 অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এটি এমন একটি বিষয় যা মহান আল্লাহ পাক তিনিই আদম কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কারো কারো মতে সর্বপ্রথম মাজুরতা শুরু হয় বনী ইসরাঈলী মহিলাদের। আবূ আবদুল্লাহ্ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফই গ্রহণযোগ্য।”

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, মেয়েদের মাজুরতা, গর্ভধারনের কষ্ট এবং কম বুদ্ধিমত্তা থাকা গন্ধম ফল খাওয়ার সাজা থেকে প্রাপ্ত বলে কোন বর্ণনা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নেই। বরং এ ধরণের ইহুদী-নাছারা সহ নাস্তিকদের অপপ্রচার বৈ কিছুই নয়।

আর গন্ধম খাওয়াকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে কোন অপরাধ হিসেবে উল্লেখও করা হয়নি। প্রথমত সম্মানিত জান্নাত কখনোই কোন পাপাচার সংঘটনের স্থান নয়। দ্বিতীয় হযরত আবুল বাশার ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম। আর প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনারা প্রত্যেকে সরাসরি ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই উনাদের দ্বারা কোন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কল্পনাও করা যায় না।


0 Comments: