রাত-দিন ছিল সেহেতু সূর্যও ছিল। আর সূর্য থাকা মানে আসমান থাকার প্রমাণ বহন করে। তাহলে প্রমাণিত হচ্ছে যে, “পুরো ইউনিভার্স সৃষ্টির আগেই পৃথিবি তৈরি করা হয়েছে বা বর্তমান ছিল” কথাটি একটি ডাহা মিথ্যাচার ও নাস্তিকীয় প্রতারণা। আর এটিও ধ্রুব সত্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনোই কোন ভুল তথ্য সরবরাহ করেন না।
নাস্তিকদের আপত্তি : "কুরানের আয়াত 21:30, 41:9-11 এবং 2:29 থেকে বোঝা যায় যে পুরো ইউনিভার্স সৃষ্টির আগেই পৃথিবি তৈরি করা হয়েছে বা বর্তমান ছিল! কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বিগব্যাং সংগঠিত হওয়ার মুহুর্তে কোন ম্যাটারেরই অস্তিত্ব ছিলো না, আর পৃথিবিও তৈরি হয়েছে বহু পড়ে (about 9 billions later)! আল্লাহ কেন এমন ভুল তথ্য সরবরাহ করলেন?
http://en.wikipedia.org/wiki/BigBang"
খণ্ডন : পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কোন আয়াত শরীফ দ্বারাই বুঝানো হয়নি যে, পুরো ইউনিভার্স সৃষ্টির আগেই পৃথিবী তৈরি করা হয়েছে বা বর্তমান ছিল। মূর্খ ও মিথ্যাবাদী নাস্তিকরা তাদের আপত্তিতে উল্লেখকৃত পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ثُـمَّ اسْتَوٰى ‘ছুম্মাস তাওয়া’ উনার যথাযথ অর্থ অনুধাবনে ব্যর্থ হওয়ার কারণে এমন মিথ্যাচার করছে। বস্তুত ثُـمَّ اسْتَوٰى ‘ছুম্মাস তাওয়া’ উনার শাব্দিক অর্থ যদিও “অতঃপর মনোযোগ দিলেন” কিন্তু এখানে এই ثُـمَّ শব্দ মুবারক কালক্ষেপনের জন্য ব্যবহৃত হয়নি বা ধারাবাহিকতা অর্থে ব্যবহৃত হয়নি বরং এই শব্দ মুবারক দিয়ে আসমান ও যমীন- এই দুই সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য নির্ণীত হয়েছে।
যদি আসমান সৃষ্টির আগে যমীনই সৃষ্টি হতো তাহলে নিম্নোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হতো না-
اَاَنْتُمْ اَشَدُّ خَلْقًا اَمِ السَّمَاءُ ۚ بَنَاهَا. رَفَعَ سَـمْكَهَا فَسَوَّاهَا. وَاَغْطَشَ لَيْلَهَا وَاَخْرَجَ ضُحَاهَا. وَالْاَرْضَ بَعْدَ ذٰلِكَ دَحَاهَا.
অর্থ : “তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন? তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এর সূর্যোলোক প্রকাশ করেছেন। যমীনকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।” (পবিত্র সূরা নাযিয়াত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭-৩০)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِىِّ بْنِ الْـحُسَيْنِ بْنِ عَلِىِّ بْنِ اَبِىْ طَالِبٍ رِضْوَانُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ اَجْـمَعِيْنَ عَنْ اَبِيْهِ عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ اللهَ تَعَالٰى بَعَثَ مَلَائِكَتَهٗ فَقَالَ ابْنُوْا لِـىْ فِى الْاَرْضِ بَيْتًا عَلٰى مِثَالِ الْبَيْتِ الْمَعْمُوْرِ وَاَمَرَ اللهُ تَعَالٰى مَنْ فِى الْاَرْضِ اَنْ يَّطُوْفُوْا بِهٖ كَمَا يَطُوْفُ اَهْلُ السَّمَاءِ بِالْبَيْتِ الْمَعْمُوْرِ وَهٰذَا كَانَ قَبْلَ خَلْقِ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ.
অর্থ : “ইমামুল খমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী ত্বালিব আলাইহিমুস সালাম তিনি উনার সম্মানিত পিতা ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার সূত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে এই কথা মুবারক বলে প্রেরণ করেন যে, আপনারা আমার জন্য দুনিয়ার যমীনে পবিত্র বাইতুল মা’মূর শরীফ উনার অনুরূপ একখানা পবিত্র ঘর মুবারক (পবিত্র কা’বা শরীফ) তৈরী করুন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমানবাসী (হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম) উনারা যেভাবে পবিত্র বাইতুল মা’মূর শরীফ তাওয়াফ করে থাকেন, পৃথিবীবাসী উনাদেরকে সেভাবে পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে তাওয়াফ করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! আর এটা ছিলো আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করার পূর্বের ঘটনা।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কবীর শরীফ ৮/২৯৬)
হযরত ইমাম আবূ বকর মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে মুনযির নীশাপূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ اِنَّ الْكَعْبَةَ خُلِقَتْ قَبْلَ الْاَرْضِ بِاَلْفَىْ سَنَةٍ وَّهِىَ قَرَارُ الْاَرْضِ اِنَّـمَا كَانَتْ خَشَفَةً اَوْ حَشَفَةً عَلَى الْمَاءِ عَلَيْهَا مَلَكَانِ مِنَ الْمَلائِكَةِ يُسَبِّحَانِ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ اَلْفَىْ سَنَةٍ فَلَمَّا اَرَادَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اَنْ يَّـخْلُقَ الاَرْضَ دَحَاهَا مِنْهَا فَجَعَلَهَا فِىْ وَسَطِ الْاَرْضِ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই পৃথিবী সৃষ্টির ২০০০ বছর পূর্বে পবিত্র কা’বা শরীফ সৃষ্টি করা হয়। আর পবিত্র কা’বা শরীফই হচ্ছেন যমীনের অবস্থানস্থল। যা পানির উপর জমাটবদ্ধ পানি/বরফ অথবা ছোট দ্বীপ আকারে ছিলেন। পবিত্র কা’বা শরীফ উনার উপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে দু’জন সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনারা রাত-দিন একাধারে ২০০০ বছর সম্মানিত তাসবীহ পাঠরত অবস্থায় ছিলেন। অতঃপর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করার ইচ্ছা মুবারক করেন, তখন পবিত্র কা’বা শরীফ উনার থেকে যমীনকে বিস্তার করেন। তারপর পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে করেন পৃথিবীর ওয়াসাত্ব তথা মধ্যস্থান।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে ইবনে মুনযির ১/২৯৪, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/১৪০)
যেহেতু আসমানকে আগে সুবিন্যস্ত করার পর পানির উপরে যমীনকে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার নিচ থেকে বিস্তৃত করেছেন। যদিও সৃষ্টিগতভাবে আসমান ও যমীন একত্রে একত্রীভূতভাবেই সৃষ্টি করে পরবর্তীতে উভয়কে একে অপরের থেকে বাতাস প্রবাহের মাধ্যমে আলাদা করেছেন। যমীনকে বিস্তৃত করার পরে যমীন টলমল করছিল তখন যমীনকে স্থির করার জন্য তাতে পাহাড় স্থাপন করে দেন। এর পরে আসমান থেকে যমীনের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। আর এ জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
অর্থ : “কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আসমানসমূহ ও যমীনের মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ “এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম”- এ কথার অর্থ হচ্ছে আসমান ও যমীন একত্রীভূত অবস্থা থেকে পরস্পর পৃথক করার পরে বৃষ্টি/পানি বর্ষণ করা হয়েছে। আর এই পানি থেকেই প্রাণবন্ত সবকিছু সৃজিত হয়েছে। যেহেতু পানি ছাড়া কোন জীবই জীবন ধারন করতে পারেন না। বস্তুত সে দিকেই ইঙ্গিত করে প্রাণবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃজিত বলা হয়েছে। আর প্রাণবন্ত সব কিছুর মধ্যে উদ্ভিদও অন্তর্ভুক্ত।
আবার পবিত্র সূরা নাযিয়াত শরীফ উনার ২৯-৩০ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاَغْطَشَ لَيْلَهَا وَاَخْرَجَ ضُحَاهَا. وَالْاَرْضَ بَعْدَ ذٰلِكَ دَحَاهَا.
অর্থ : “তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এর সূর্যোলোক প্রকাশ করেছেন। যমীনকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।”
একই বর্ণনা তাফসীরে ইবনে মুনযির ১/২৯৪, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/১৪০ উনাদের মধ্যে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও রয়েছে-
مَلَكَانِ مِنَ الْمَلائِكَةِ يُسَبِّحَانِ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ اَلْفَىْ سَنَةٍ فَلَمَّا اَرَادَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اَنْ يَّـخْلُقَ الاَرْضَ دَحَاهَا مِنْهَا فَجَعَلَهَا فِىْ وَسَطِ الْاَرْضِ.
অর্থ : “পবিত্র কা’বা শরীফ উনার উপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে দু’জন সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনারা রাত-দিন একাধারে ২০০০ বছর সম্মানিত তাসবীহ পাঠরত অবস্থায় ছিলেন। অতঃপর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করার ইচ্ছা মুবারক করেন, তখন পবিত্র কা’বা শরীফ উনার থেকে যমীনকে বিস্তার করেন। তারপর পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে করেন পৃথিবীর ওয়াসাত্ব তথা মধ্যস্থান।”
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে যেমন অন্ধকার/রাত এবং সূর্যোলোক/দিন প্রকাশের পরে যমীনকে বিস্তৃত করার বর্ণনা রয়েছে। তেমনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও “রাত-দিন একাধারে ২০০০ বছর” বর্ণনার পর যমীনকে বিস্তৃত করার বর্ণনা রয়েছে।
সূর্য যদি তখন নাই থাকে তাহলে সূর্যোলোক আসলো কোথা থেকে আর রাতই বা হলো কিভাবে? নাস্তিক সম্প্রদায়ের এ ব্যাপারে জবাব কি?
যেহেতু রাত-দিন ছিল সেহেতু সূর্যও ছিল। আর সূর্য থাকা মানে আসমান থাকার প্রমাণ বহন করে। তাহলে প্রমাণিত হচ্ছে যে, “পুরো ইউনিভার্স সৃষ্টির আগেই পৃথিবি তৈরি করা হয়েছে বা বর্তমান ছিল” কথাটি একটি ডাহা মিথ্যাচার ও নাস্তিকীয় প্রতারণা। আর এটিও ধ্রুব সত্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনোই কোন ভুল তথ্য সরবরাহ করেন না।
0 Comments:
Post a Comment