সূর্য আপন কক্ষপথে বিচরণকালীন সময়ে কখনোই বিশ্রাম নেয় না বা ক্ষান্ত হয় না। বরং এটি নিয়মিত চলতে থাকে। তাই এটি এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয়, এভাবে চলতে থাকে। তাই এক স্থানে সূর্য অস্ত গেলেও একই সময়ে অন্য স্থানে উদিত হয়।

সূর্য আপন কক্ষপথে বিচরণকালীন সময়ে কখনোই বিশ্রাম নেয় না বা ক্ষান্ত হয় না। বরং এটি নিয়মিত চলতে থাকে। তাই  এটি এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয়, এভাবে চলতে থাকে। তাই এক স্থানে সূর্য অস্ত গেলেও একই সময়ে অন্য স্থানে উদিত হয়।

নাস্তিকদের আপত্তি : সূর্য আবর্তিত হয় তার জন্যে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত (অর্থাৎ সন্ধ্যা পর্যন্ত), অতঃপর সে থামে বিশ্রামের জন্যে এবং পরের দিন পুনরায় উদিত হয় পূর্বের জায়গা থেকে (Quran 13:2, 21:33, 31:29, 36:38-40, 18:86-90 Sahih Muslim 1:297 Sahih Bukhari 4:54:421, 9:93:520)!  এর থেকে কি এটাই বোঝা যায়না যে পৃথিবি নয় বরং সূর্যই ঘুরছে তার চারিদিকে?

খণ্ডন : সূর্য তার নিজস্ব কক্ষপথে চলতে থাকে, কখনোই থামে না বা ক্ষান্ত হয় না। তাই “সূর্য আবর্তিত হয় তার জন্যে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত (অর্থাৎ সন্ধ্যা পর্যন্ত), অতঃপর সে থামে বিশ্রামের জন্যে” এ বক্তব্যগুলো প্রলাপ বৈ কিছুই নয়। কেননা পবিত্র আয়াত শরীফ কিংবা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সূর্য নির্ধারিত সময় পর্যন্ত আবর্তিত হওয়ার পর বিশ্রাম নেয়ার কোন বর্ণনাই নেই। বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সূর্যের ক্ষান্ত না হওয়ার বা বিশ্রাম না নেয়ার বর্ণনা আছে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ هٰذِهِ الْـمَغَارِبُ مِنْ اَيْنَ تَغْرِبُ؟ وَهٰذِهِ الْـمَطَالِعُ مِنْ اَيْنَ تَطُلعُ؟ فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هى عَلٰى رَسِلهَا لَا تَبْرَحُ وَلَا تَزُوْل تَغْرُبُ عَنْ قَوْمٍ وَتَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ وَتَغْرُبُ عَنْ قَوْمٍ وتَطْلُعُ فَقَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ غَرْبَتَ وَقَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ طَلْعَتٌ.

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুওয়াল মুবারক করা হলো- সূর্য কোথায় অস্ত যায় এবং সূর্য কোথা থেকে উদিত হয়? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যুত্তরে ইরশাদ মুবারক করেন, এটি নিয়মিত চলতে থাকে, ক্ষান্তও হয় না আর অদৃশ্যও হয় না। এটি এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয়। আবার অন্য এক স্থানে অস্তমিত হয় আরেক স্থানে উদিত হয়, এভাবে চলতে থাকে। তাই কেউ বলে সূর্য অস্ত গিয়েছে (একই সময়ে) অন্যরা বলে সূর্য উদিত হচ্ছে।” (মুসনাদে ইমাম আবূ ইসহাক্ব হামাদানী)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে-

هى عَلٰى رَسِلهَا لَا تَبْرَحُ وَلَا تَزُوْل

অর্থ : “এটি নিয়মিত চলতে থাকে, ক্ষান্তও হয় না আর অদৃশ্যও হয় না।”

তাহলে সূর্যের বিশ্রাম নেয়ার প্রশ্নই আসে না। বরং এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয় এভাবে চলতে থাকে। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ  ۖ  كُلٌّ يَـجْرِىْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ

অর্থ : “আর সূর্য ও চাঁদকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে একটি নির্দিষ্ট কাল ধরে কক্ষপথে আবর্তন করছে।” (পবিত্র সূরা র’দ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.

অর্থ : “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَـجْرِي اِلٰى اَجَلٍ مُّسَمًّى

অর্থ : “আপনি কি দেখেন না যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চাঁদ ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِـي لَـهَا اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ.

অর্থ : “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া, আর রাত্রির পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; আর প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করছে।” (পবিত্র সূরা ইয়াসিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ চতুষ্ঠয় দ্বারা সূর্যের বিশ্রাম নেয়ার কোন বর্ণনাই নেই। এমনকি হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পৃথিবী পরিভ্রমণ সংক্রান্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যেও বিশ্রাম নেয়ার কোন বর্ণনা নেই।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ مَغْرِبَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنٍ حَمِئَةٍ وَوَجَدَ عِندَهَا قَوْمًا ۗ قُلْنَا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِمَّا أَن تُعَذِّبَ وَإِمَّا أَن تَتَّخِذَ فِيهِمْ حُسْنًا

অর্থ : “অবশেষে হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন সূর্যের অস্তাচলে পৌঁছালেন; তখন তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল আধারে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি (মহান আল্লাহ পাক) বললাম, হে হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)   

ثُـمَّ اَتْبَعَ سَبَبًا. حَتّٰى اِذَا بَلَغَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ لَّـمْ نَـجْعَل لَّـهُم مِّنْ دُوْنِـهَا سِتْرًا. 

অর্থ : “অতঃপর তিনি এক পথ অবলম্বন করলেন। অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌঁছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৯-৯০)

আর তাই এর থেকে এটা কখনোই বোঝা যায় না যে, পৃথিবী নয় বরং সূর্যই ঘুরছে তার চারিদিকে! কেননা পবিত্র আয়াত শরীফ বা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে পৃথিবীর চারদিকে সূর্য ঘোরার কোন ইঙ্গিতই নেই।

যেমন, হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পৃথিবী পরিভ্রমণ সংক্রান্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে বলা হয়েছে-  

الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنٍ حَمِئَةٍ

অর্থ : “সূর্যকে এক পঙ্কিল আধারে অস্ত যেতে দেখলেন।”

الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ

অর্থ : “সূর্যকে এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন।”

এখানে সূর্যের উদয় ও অস্ত বুঝানো হয়েছে। আর সূর্যের অস্ত যাওয়া বা উদিত হওয়া দিয়ে পৃথিবীর চারদিকে সূর্যের প্রদক্ষিণ বুঝায় না। সূর্য যদি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে বিচরণ করতো তাহলে সূর্যোদয়ের দেশ বলে কোন দেশ থাকতো না বরং একেক সময় একেক স্থানে সূর্যোদয় হতো।

পৃথিবীর প্রত্যেক স্থানে বা দেশে প্রতিদিনই সূর্য উদিত হচ্ছে ও অস্ত যাচ্ছে। তাহলে আলাদা করে সূর্যোদয়ের দেশ চিহ্নিত করার কারণ কি? সূর্যোদয়ের দেশ চিহ্নিত করার মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে সারাবছরই পৃথিবীর একই দেশ থেকে প্রথম সূর্যোদয় ঘটে থাকে। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘুরছে বলেই এমনটি ঘটে থাকে।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সূর্যের আবর্তন বিষয়ে বর্ণিত বিভিন্ন পবিত্র আয়াত শরীফ ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন হাদীছ শরীফ দ্বারা কখনোই প্রমাণিত হয় না যে, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য আবর্তিত হচ্ছে, বরং পৃথিবীর সূর্যের চারদিকে ঘোরার ইঙ্গিত রয়েছে।

এছাড়া এটাও প্রমাণিত হলো যে, সূর্য আপন কক্ষপথে বিচরণকালীন সময়ে কখনোই বিশ্রাম নেয় না বা ক্ষান্ত হয় না। বরং এটি নিয়মিত চলতে থাকে। তাই  এটি এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয়, এভাবে চলতে থাকে। তাই এক স্থানে সূর্য অস্ত গেলেও একই সময়ে অন্য স্থানে উদিত হয়।


0 Comments: