পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম পৃথিবী সৃষ্টি করে অতঃপর নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করেছেন বলে কোন দাবী করা হয়নি। আর যেহেতু এই ধরণের কোন দাবী করা হয়নি তাই উক্ত দাবী ভুল প্রমাণিত হওয়ারও কোন অবকাশ নেই। এর দ্বারা বরং মূর্খ নাস্তিকদের মূর্খতা ও মিথ্যাচারিতার মুখোশই উন্মোচিত হলো।
নাস্তিকদের আপত্তি : বিগ ব্যাং (The galaxies and the stars existed billions of years before the earth came out) বিষয়ে কি আপনার বিন্দুমাত্র ধারনা আছে? যদি থাকে তবে নিশ্চই কুরানের দাবি- আল্লাহ সর্ব প্রথম তৈরি করেছেন পৃথিবী এবং তারপর আকাশে বিদ্যমান অন্যান্য নক্ষত্র (তারকরাজি) (Quran 2:29, 41:9-12) ভুল প্রমানিত হচ্ছে?
খণ্ডন: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কোথাও বলেননি যে, তিনি সর্বপ্রথম পৃথিবী সৃষ্টি/তৈরি করেছেন, অতঃপর আকাশে বিদ্যমান নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন।
বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী প্রমাণিত যে, তখনও সপ্তাকাশ বিদ্যমান যখন যমীন সৃষ্টি হয়নি। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِىِّ بْنِ الْـحُسَيْنِ بْنِ عَلِىِّ بْنِ اَبِىْ طَالِبٍ رِضْوَانُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ اَجْـمَعِيْنَ عَنْ اَبِيْهِ عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ اللهَ تَعَالٰى بَعَثَ مَلَائِكَتَهٗ فَقَالَ ابْنُوْا لِـىْ فِى الْاَرْضِ بَيْتًا عَلٰى مِثَالِ الْبَيْتِ الْمَعْمُوْرِ وَاَمَرَ اللهُ تَعَالٰى مَنْ فِى الْاَرْضِ اَنْ يَّطُوْفُوْا بِهٖ كَمَا يَطُوْفُ اَهْلُ السَّمَاءِ بِالْبَيْتِ الْمَعْمُوْرِ وَهٰذَا كَانَ قَبْلَ خَلْقِ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ.
অর্থ : “ইমামুল খমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী ত্বালিব আলাইহিমুস সালাম তিনি উনার সম্মানিত পিতা ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার সূত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে এই কথা মুবারক বলে প্রেরণ করেন যে, আপনারা আমার জন্য দুনিয়ার যমীনে পবিত্র বাইতুল মা’মূর শরীফ উনার অনুরূপ একখানা পবিত্র ঘর মুবারক (পবিত্র কা’বা শরীফ) তৈরী করুন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমানবাসী (হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম) উনারা যেভাবে পবিত্র বাইতুল মা’মূর শরীফ তাওয়াফ করে থাকেন, পৃথিবীবাসী উনাদেরকে সেভাবে পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে তাওয়াফ করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! আর এটা ছিলো আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করার পূর্বের ঘটনা।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কবীর শরীফ ৮/২৯৬)
হযরত ইমাম আবূ বকর মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে মুনযির নীশাপূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ اِنَّ الْكَعْبَةَ خُلِقَتْ قَبْلَ الْاَرْضِ بِاَلْفَىْ سَنَةٍ وَّهِىَ قَرَارُ الْاَرْضِ اِنَّـمَا كَانَتْ خَشَفَةً اَوْ حَشَفَةً عَلَى الْمَاءِ عَلَيْهَا مَلَكَانِ مِنَ الْمَلائِكَةِ يُسَبِّحَانِ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ اَلْفَىْ سَنَةٍ فَلَمَّا اَرَادَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اَنْ يَّـخْلُقَ الاَرْضَ دَحَاهَا مِنْهَا فَجَعَلَهَا فِىْ وَسَطِ الْاَرْضِ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই যমীন সৃষ্টির ২০০০ বছর পূর্বে পবিত্র কা’বা শরীফ সৃষ্টি করা হয়। আর পবিত্র কা’বা শরীফই হচ্ছেন যমীনের অবস্থানস্থল। যা পানির উপর জমাটবদ্ধ পানি/বরফ অথবা ছোট দ্বীপ আকারে ছিলেন। পবিত্র কা’বা শরীফ উনার উপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে দু’জন সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনারা রাত-দিন একাধারে ২০০০ বছর সম্মানিত তাসবীহ পাঠরত অবস্থায় ছিলেন। অতঃপর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি যমীন সৃষ্টি করার ইচ্ছা মুবারক করেন, তখন পবিত্র কা’বা শরীফ উনার থেকে যমীনকে বিস্তার করেন। তারপর পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে করেন পৃথিবীর ওয়াসাত্ব তথা মধ্যস্থান।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে ইবনে মুনযির ১/২৯৪, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/১৪০)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
حدثنا أبو حازم عن ابن عباس رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم ان اٰدم عليه السلام أتى البيت ألف إتيه لـم يركب قط فيهن من الـهند على رجليه قال فحدثت بذلك مـحمد بن علي فقال صدق الأزرق وابن عباس فقال مـحمد حج من ذلك ثلاثـمائة حجة وسبعمائة عمرة وكان أول حجة حجها اٰدم عليه السلام وهو واقف بعرفة أتاه جبرئيل عليه السلام فقال بر نسكك أما إنا قد طفنا بـهذا البيت قبل أن تـخلق بـخمسمائة ألف سنة
অর্থ : “হযরত ইবনে খুযায়মা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ভারত থেকে পায়ে হেঁটে ১০০০ বার পবিত্র কা’বা শরীফ এসেছেন। কখনও কোন সওয়ারীতে আরোহণ করেননি। রাবী বলেন, হযরত আযরাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা সত্যই বলেছেন। মুহম্মদ হজ্জ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই ছফরের মধ্যে ৩০০ বার হজ্জের উদ্দেশ্যে এবং ৭০০ বার উমরার উদ্দেশ্যে। হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি প্রথম যে হজ্জ করেন তখন আরাফার ময়দানে দাঁড়িয়েছিলেন, এমতাবস্থায় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আসলেন। অতঃপর বললেন, আস্ সালামু আলাইকা হে হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার কুরবানী কবূল করুন। তবে আমরা এ ঘরকে আপনার সৃষ্টির ৫০০০০০ বছর পূর্ব থেকে তাওয়াফ করছি।” (আল আযমাত লি আবূ শাইখুল আছবাহানী)
অত্র হাদীছ শরীফত্রয় উনাদের সমন্বয়ে বলা যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সপ্তাকাশে বিদ্যমান পবিত্র বাইতুল মা’মূর শরীফ উনার অনুরূপ একখানা পবিত্র ঘর মুবারক- পবিত্র কা’বা শরীফ দুনিয়াতে পানির উপর নির্মাণ করতে আদেশ মুবারক করেছেন। আর পৃথিবী বা যমীন সৃষ্টি হয়েছে পবিত্র কা’বা শরীফ সৃষ্টি করার ২০০০ বছর পরে। সুতরাং পৃথিবীর মূল যে ভিত- যমীন বা মাটি সৃষ্টি হওয়ার ২০০০ বছর পূর্বে পানির উপরে পবিত্র কা’বা শরীফ সৃষ্টি করা হয়েছে সপ্তাকাশে বিদ্যমান পবিত্র বাইতুল মা’মূর শরীফ উনার আদলে। তাহলে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ (Quran 2:29, 41:9-12) উনাদের দোহাই দিয়ে কি করে বলা যেতে পারে যে, “আল্লাহ সর্ব প্রথম তৈরি করেছেন পৃথিবী এবং তারপর আকাশে বিদ্যমান অন্যান্য নক্ষত্র (তারকরাজি)”? নাঊযুবিল্লাহ! এই আয়াত শরীফ সমূহে প্রক্রিয়াধীন সৃষ্টির একটি অবস্থার বর্ণনা দেয়া হয়েছে মাত্র।
পবিত্র আয়াত শরীফসমূহে বর্ণিত ثُـمَّ اسْتَوٰى ‘ছুম্মাস তাওয়া’ অর্থ অতঃপর মনোযোগ দিলেন, এই ثُـمَّ শব্দ মুবারক কালক্ষেপনের জন্য ব্যবহৃত হয়নি বরং এই শব্দ মুবারক দিয়ে আসমান ও যমীন- এই দুই সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য নির্ণীত হয়েছে।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম পৃথিবী সৃষ্টি করে অতঃপর নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করেছেন বলে কোন দাবী করা হয়নি। আর যেহেতু এই ধরণের কোন দাবী করা হয়নি তাই উক্ত দাবী ভুল প্রমাণিত হওয়ারও কোন অবকাশ নেই। এর দ্বারা বরং মূর্খ নাস্তিকদের মূর্খতা ও মিথ্যাচারিতার মুখোশই উন্মোচিত হলো।
0 Comments:
Post a Comment