ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার দৃঢ়তা-পর্ব-৪০
আমীরুল মু'মিনীন হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত কালে জেরুজালেম তথা বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ ইহুদীদের হাত থেকে মুক্ত করেন মুসলিম সেনাপতি বিশিষ্ট ছাহাবী, হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সেখানকার ইহুদী সম্প্রদায়দের আসমানী কিতাবে বর্ণিত ছিল আখিরী রসুল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতগণ বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ জয় করবেন। এমনকি সেই সময় যিনি আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন থাকবেন, তিনি কি অবস্থায় আগমন করবেন সেটাও সেখানে বর্ণনা করা ছিল। তাই মুসলমানদের বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ বিজয়ের পর ইহুদীরা ফিকির করলো তবে উনারাই কি সেই সম্মানিত ক্বওম? তাই তারা কিতাবের সাথে মিলানোর জন্য হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট প্রস্তাব দিল যে, 'আমরা সব কিছু আপনাদের বুঝিয়ে দিব। তবে শর্ত হলো আপনাদের যিনি আমীরুল মু'মিনীন হযরত ফারুকে আ'যম
আলাইহিস সালাম উনাকে এখানে তাশরীফ মুবারক আনতে হবে। তিনি যদি দয়া করে আসেন তবে আমরা উনার নিকট সব কিছু হস্তান্তর করবো।' তখন হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট এই বলে চিঠি লিখেন যে, 'বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ ইহুদীদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে, তবে তাদের ইচ্ছা বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনার চাবি যিনি আমীরুল মু'মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন উনার নিকট হস্তান্তর করবে। সুতরাং অনুগ্রহপূর্বক আপনি বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফে আসুন।'
চিঠি পেয়ে হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, তখন উনার পরিধানে কোনো নতুন বস্ত্র ছিল না। বরং উনার পরিধানে যে বস্ত্রটি ছিল তাতে তের থেকে চৌদ্দটি পট্টি ছিল। তার মধ্যে একটি পট্টি ছিল চামড়ার। দীর্ঘ সফরের কারনে তা ধুলায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি পোশাক মুবারক ধুয়ে পরিষ্কার করে নিলেন। হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম উনাকে স্বাগত জানানোর জন্য অনেকদূর এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি উনার পোশাক মুবারকের অবস্থা দেখে বললেন, 'হে আমীরুল মু'মিনীন! আপনি কি আপনার পরিধেয় বস্ত্রটি পরিবর্তন করে নিবেন?' জবাবে হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'না। আমরা তো এমন সম্প্রদায়, যাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। কাজেই আমাকে এরূপ অবস্থাতেই যেতে দিন।' সুবহানাল্লাহ!
হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম সম্পূর্ণ সফরেই পর্যায়ক্রমে নিজে একবার উটের উপর সাওয়ার হতেন, একবার উনার খাদিমকে সাওয়ার করাতেন ইনসাফের জন্য। যখন বাইতুল মুক্কাদ্দাস শরীফে পৌঁছলেন তখন তিনি ছিলেন উটের লাগাম ধরা অবস্থায় যমীনে আর উনার খাদেম ছিলেন উটের উপর সাওয়ার অবস্থায়। সুবহানাল্লাহ! ইহুদীরা তাওরাত কিতাবের বর্ণনার সাথে সবকিছু মিলাচ্ছিল। যখন দেখলো তাওরাত কিতাবের বর্ণনার সাথে সব মিলে গিয়েছে তখন তারা উনার নিকট বাইতুল মুক্কাদ্দাস শরীফ উনার চাবি হস্তান্তর করলো।
চাবি হস্তান্তরের পর ইহুদীরা আরয করলো, 'হে আমীরুল মু'মিনীন আলাইহিস সালাম! আপনি এতো দূর থেকে এসেছেন; আপনার সম্মানার্থে আমরা ইসলামী কায়দায় কিছু মেহমানদারীর ব্যবস্থা করতে চাই, যদি আপনি
সম্মতি মুবারক প্রকাশ করেন।' সম্মতি মুবারক পেয়ে ইহুদীরা মেহমানদারীর ব্যবস্থা করলো। আমীরুল মু'মিনীন হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম সকলকে নিয়ে যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হলেন। উনার সম্মুখে চামড়ার সুন্নতি দস্তরখানা বিছিয়ে দেয়া হলো এবং তাতে রুটি ও একটি পাত্রে গোশত দেয়া হলো। হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম দস্তরখানা থেকে রুটি নিয়ে গোশত দিয়ে খেলেন। খাওয়া শেষে দস্তরখানায় পড়ে থাকা রুটির টুকরোগুলো টুকিয়ে টুকিয়ে খাচ্ছিলেন। এটা দেখে কেউ একজন বললেন, 'হে আমীরুল মু'মিনীন! এখানে অনেক রাজা বাদশা, আমীর ওমরা উপস্থিত। আপনি যদি তাদের সম্মুখে এভাবে রুটির টুকরা টুকিয়ে টুকিয়ে খান, তবে কেমন দেখা যায়?' জবাবে আমীরুল মু'মিনীন হযরত ফারূক্কে আ'যম আলাইহিস সালাম সবাইকে লক্ষ্য করে বুলন্দ স্বরে বললেন, 'আমি কি এইসব আহমকদের (রাজা-বাদশা) জন্য আমার যিনি রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার সুন্নত মুবারক পরিহার করবো?' সুবহানাল্লাহ!
খাওয়ার পর দস্তরখানা বা প্লেট পরিষ্কার করে খাওয়া সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি সেই সুন্নত মুবারক যথাযথভাবে পালন করেছেন। তিনি সবসময় সবকিছুর উপর সুন্নত মুবারক অনুসরণকে প্রাধান্য দিতেন।
0 Comments:
Post a Comment