একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১


একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

হযরত আদম আলাইহিস সালামকে বেহেশ্ত থেকে দুনিয়ায় পাঠাবার সময় আল্লাহ্পাক বলেছেন, হে আদম আলাইহিস সালাম দুনিয়ায় নির্দিষ্ট কালের অবস্থিতি এবং সম্পদ ভোগ শেষে আপনাদেরকে ফিরে আসতে হবে। নশ্বর দুনিয়া থেকে মানুষের বিদায় নেয়াকে অবধারিত করে কালামুল্লাহ্ শরীফের অন্যত্র আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন, সকলকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আপন জনের বিয়োগ ব্যথায় মানুষ দুঃখ-ভারাক্রান্ত হয়। প্রিয়জনের বিদায়ে মানুষ শুন্যতা বোধ করে। এ শুন্যতার যাতনা অপরিসীম হলেও সময়ের অতিক্রান্তিতে মানুষ এক সময় তা ভুলে যায়। কিন্তু ওলীআল্লাহ্গণের ইন্তেকাল সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম।

        মৃত্যু আল্লাহ্পাক-এর সাথে মিলনের সেতু হিসেবে নির্ধারিত থাকায় ওলী আল্লাহ্গণ নিবিষ্ট মনে মৃত্যুর পরম প্রহরের প্রত্যাশায় নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে থাকেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর  পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুত্যু আল্লাহ্পাক-এর সান্নিধ্যে যাবার সেতুতিনি আরো এরশাদ করেছেন, মুমিনের উপঢৌকন হলো মৃত্যুজীবনে, মরনে এবং সকল অবস্থাতেই ওলী আল্লাহ্গণকে আল্লাহ্পাক কামিয়াবী দান করে থাকেন। যেমন- সুলতানুল হিন্দ গরীবে নেওয়াজ খাজা মুঈনুদ্দিন চীশতী সান্জারী আজমিরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ইন্তিকালের  অব্যবহতি পরে তাঁর কপাল মোবারকে সোনালী অক্ষরে স্পষ্ট ভাবে লেখা হয়েছিলঃ ইনি আল্লাহ্পাক-এর হাবীব, একান্ত ভাবে আল্লাহ্পাক-এর মহব্বতেই ইন্তিকাল করেছেন।

        ওলী আল্লাহ্গণের দুনিয়া থেকে বিদায় তাঁদের জন্য আনন্দের হলেও সমকালীন জীবিত মানুষের জন্য তা সীমাহীন ক্ষতি হিসেবে দেখা দেয়। কারণ তাঁদের শারীরিক অনুপস্থিতি মানুষের হিদায়েত, নসিহত, ফয়েজ, কামিয়াবী ও কামালত হাসিলের অন্তরায় সৃষ্টি করে। খালিছ হিদায়েত প্রত্যাশী মানুষের জন্য ওলী আল্লাহ্গণের ইন্তিকাল এক বিশেষ শূন্যতা এনে দেয় । আল্লাহ্পাক-এর এমন একজন মাহবুব ওলী আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা শাহসূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম  , আল হাসানী ওয়া লহুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী। দূরের ও কাছের সকলকে দুঃখের অথৈই সাগরে ভাসিয়ে ১৩-ই রবিউল আউয়াল শরীফ, ১৪১৯ হিজরী মোতাবেক ২৩ শে আষাঢ়, ১৪০৫ বঙ্গাব্দ, ৭ই জুলাই, ১৯৯৮ খ্রীষ্টাব্দ তারিখ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১.৩০ মিনিটে আল্লাহ্পাক উনার দিদারে পাড়ি জমিয়েছেন। (ইন্নানিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাহে রাজিউন)। রাজারবাগ শরীফের ৫নং আউটার সার্কুলার রোডে অবস্থিত তাঁর ক্ষনিকের আবাসস্থল এখন গভীর শোকে মুহ্যমান এক নীরব নিকেতন। তিনি ছিলেন একজন প্রজ্ঞা বান মানুষ, সুক্ষদর্শী আলেম, সত্য ও মিথ্যা পার্থক্য করার এক বলিষ্ঠ কন্ঠ স্বর এবং হক্ব প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠার এক অনন্য মহামানব । তাঁর প্রত্যয়ী ব্যক্তিত্বের প্রভায় মানুষ মিথ্যাকে ঘৃণা করতে শিখেছে, সত্যে ব্রতী হতে উদ্যোগী হয়েছে । আল্লাহ্পাক-এর মতে এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে দায়েম কায়েম হতে যিনি মানুষকে অনুপ্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছেন । তিনি ছিলেন মুজিবুদ্দাওয়াত,  অর্থাৎ তাঁর দোয়া আল্লাহ্পাক সব সময় কবুল করেছেন। তিনি ছিলেন কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ্। আজীবন সুন্নতের উপর পরিপূর্ণ রূপে অধিষ্ঠিত থেকে হক্ব প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অকুতোভয় ও আপোষহীন এক সিপাহ্সালার। জিকির- ফিকিরে, আল্লাহ্পাক-এর ধ্যান ও খেয়ালে, মোরাকাবা- মুশাহিদা ও ইবাদত-বন্দিগীতে তিনি মশগুল থেকেছেন সারা জীবন । সুন্নত অনুসরণ-অনুকরণে তিনি ছিলেন এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত । জীবন মোবারকের সময় গুলো তিনি অবিরাম ব্যয় করেছেন সত্য প্রতিষ্ঠার জ্বিহাদে। এজ্বিহাদ তিনি করেছেন কথায়, কাজে, আমলে ও আচরণে । জ্বালালী তবীয়তের মানুষ হওয়া সত্বেও অন্তরগত ভাবে তিনি ছিলেন জামালে পরিপূর্ণ । জালাল ও জামালের মাত্রানুপাত সমন্বয়ে আল্লাহ্পাক তাঁকে দান করেছিলেন এক অনুপম চরিত্র মুবারক। সুক্ষদর্শী মানুষ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে তাঁর কামালত পূর্ণ উদারতা, অন্তরের বিশালতা, চরিত্রের মাধুর্যতাঅন্তর দৃষ্টির গভীরতা, হৃদয়ের নির্মলতা, বদান্যতা, সৌজন্য ও শালীনতা উপলব্ধির উপায় ছিলনা । হিদায়েত পূর্ণ মানুষ ও সমাজ নির্মানের স্বপদ্রষ্টা এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ আচরনণ ও বিচরণে ছিলেন দৃঢ় চেতাব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এক কামিয়াব মানুষ।তিনি হক্কুল্লাহ্ ও হক্কুল ইবাদ যথাযথ আদায় করেছেন আজীবন।

দানশীল এই আল্লাহ ওলী ছিলেন ফুরফুরা শরীফের হযরত আব্দুল হাই সিদ্দিকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি -  এর এক অন্যতম সুযোগ্য খলীফা। অবশ্য তিনি আরো কয়েক জন মুর্শিদের কাছে বাইয়্যাত গ্রহণ করেছেন। আলোচনার অনুক্রম মোতাবেক যথাস্থানে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।

        তাঁর কামালত এবং অধিষ্ঠিত উচ্চমাকামের বিপুল ও বিশাল ক্ষেত্র এবং বিশেষতঃ তাঁর সামগ্রিক কামিয়াবী প্রকাশের যোগ্যতা আমাদের নেই। মূলতঃ তিনি তাঁর অবস্থান প্রচার ও প্রসারে একান্ত ভাবেই বিমূখথাকায় এবং আমাদের অযোগ্যতার কারণে কাছের ও দূরের আমরা অনেকেই তাঁকে সঠিক ভাবে চিনতে পারিনি । মানুষের অভিজ্ঞতা,কল্যাণ ও হিদায়েতের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনে এ মহান ওলী আল্লাহ বৈশিষ্ট্য পূর্ণ জীবন মুবারক এর বিপুল সম্ভার থেকে কিছু ঘটনা ও কারামত আলোচনায় তুলে ধরা অত্যাবশ্যক বলে আমরা মনে করি । আমাদের লক্ষ্য যে, এতে করে মানুষ এমন একজন ওলী আল্লাহকে জানার সুযোগ পেয়ে তাদের অনুভব ও উপলব্ধিকে শাণিত করতে উদ্যোগী হবে, সুন্নত অনুসরণে আগ্রহী হবে এবং ইবাদত-বন্দেগী পালনে মনোযোগী হবে।সর্বোপরি আগ্রহী মানুষেরা আখেরাতের যাত্রী হিসেবে ইখলাছ অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহ্পাক এবং তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হবে। বিশেষতঃ আল্লাহ্পাক-এর সন্তুষ্টি হাছিলের অনিবার্য প্রয়োজনে সহায়ক মনে করে তাঁর মুবারক জীবন পরিক্রমার তাৎপর্যপূর্ণ ও বৈশিষ্ট্য মন্ডিত কিছু বিষয় ও কারামত পর্যায়ক্রমে আমরা আলোচনা করব। (অসমাপ্ত

আবা-৬০

0 Comments: