১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-২৪ ( কৃতজ্ঞতায় বৃদ্ধি; অকৃতজ্ঞতায় ধ্বংস)



কৃতজ্ঞতায় বৃদ্ধি; অকৃতজ্ঞতায় ধ্বংস- পর্ব-২৪

হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম একদিন তূর পাহাড়ে মহান রব্বুল আলামীন উনার সাথে কথোপকথন করতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এক গরীব মহিলার সাথে উনার সাক্ষাত হলো। মহিলা উনার নিকট আরজু করলো, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমি খুব গরীব। অতি কষ্টে আমার দিন চলে। আপনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলবেন তখন আমার ব্যাপারে একটু জিজ্ঞেস করবেন যে, কি করলে আমি স্বচ্ছলতা লাভ করবো।' তিনি বললেন, ‘আচ্ছা’। তারপর আবার পথ চলতে লাগলেন। এরপর উনার সাথে এক ধনী মহিলার সাক্ষাত হলো। মহিলা উনার নিকট আরয করলো, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমি খুব ধনী। ধন সম্পদের হিসাব রাখতেই আমার দিন পার হয়ে যায়। আমি বেশি ইবাদত বন্দেগী করার সময় পাই না। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন যে কি করলে আমার ধন সম্পদ কমে যাবে।' তিনি শুনলেন তারপর আবার পথ চলতে লাগলেন। এবার উনার সাথে এক লোকের সাক্ষাত হলো, যার হাত পা কিছুই নেই। লোকটি উনার নিকট আরয করলো, ‘হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমার হাত পা কিছুই নেই। আমি কিছুই করতে পারি না, কোনো কাজেই আসি না। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন যে, তিনি কি উদ্দেশ্যে আমাকে তিনি সৃষ্টি করেছেন।' হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তার আরজিও শুনলেন।

এরপর তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাত করলেন, কথাবার্তাও বললেন। ফিরে আসার সময় ওই তিনজনের প্রশ্নের কথা উনার মনে পড়ে গেলো। তখন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রথম সেই গরীব মহিলার প্রশ্নটি পেশ করলেন। জানতে চাইলেন যে, সে গরীব মহিলা কি করলে স্বচ্ছলতা অর্জন করতে পারবে? জবাবে মহান আল্লাহ পাক বললেন, “আপনি তাকে বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করতে বলবেন।” তারপর ধনী মহিলার প্রশ্ন পেশ করলেন যে, কি করলে তার ধনসম্পদ কমে যাবে? মহান আল্লাহ পাক জবাবে বললেন, “আপনি তাকে বলবেন সে যেন আমার প্রতি শুকরিয়া আদায় না করে।” অতঃপর হাত-পা বিহীন লোকটির প্রশ্ন পেশ করলেন যে, কেন তাকে এমন ভাবে সৃষ্টি করা হলো? মহান আল্লাহ পাক উত্তর দিলেন, “আমি তাকে জাহান্নামের একটি ছিদ্র বন্ধ করার জন্য সৃষ্টি করেছি।”

সাক্ষাত শেষ করে প্রশ্নগুলোর জবাব নিয়ে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন ফিরে আসছিলেন, তখন প্রথমে হাত-পা বিহীন লোকটির সাথে সাক্ষাত হলো। তিনি তাকে মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা জানালেন। বললেন “তোমাকে দিয়ে মহান আল্লাহ পাক জাহান্নামের একটি ছিদ্র বন্ধ করবেন বলে সৃষ্টি করেছেন”। হাত-পা বিহীন লোকটি শুনেই বলে উঠলো, “আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে একটা কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন।” এটা বলার সাথে সাথেই লোকটির হাত পা গজিয়ে গেলো। সে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! তারপর সাক্ষাত হলো, ধনী মহিলার সাথে। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তাকেও মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা শুনালেন। বললেন, “মহান আল্লাহ পাক তোমাকে বলেছেন যে, তুমি যেন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি শুকরিয়া আদায় না করো।” শুনে ধনী মহিলা বলল, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! এটা কিভাবে সম্ভব? যিনি আমাকে এত ধন সম্পদ নিয়ামত দান করলেন আমি উনার শুকরিয়া আদায় করবো না! অবশ্যই আমি লক্ষ কোটি বার উনার শুকরিয়া আদায় করি, আরো বেশি বেশি যেন উনার শুকরিয়া আদায় করতে পারি।” এটা বলার সাথে সাথে মহিলার ধন সম্পদ আগের তুলনায় কুদরতিভাবে আরও বহুগুণে বেড়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! সবশেষে সাক্ষাত হলো সেই গরীব মহিলার সাথে। তাকে যখন মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা জানানো হলো যে, সে যেন মহান আল্লাহ পাক উনার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করে; এটা শুনে সে বললো, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! এটা আপনি কি বললেন? আমার ঘর-বাড়ি নেই, খাবার নেই, কোনো সম্পদ নেই! আমি কিসের জন্য শুকরিয়া আদায় করবো?” এটা বলার সাথে সাথে একটা জোর বাতাসের ঝাপটা এসে সেই মহিলা ও তার কিঞ্চিত যা কিছু ছিল সব সহ তাকে ধ্বংস করে দিলো। নাঊযুবিল্লাহ!

0 Comments: