একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭৪

 


ওলীয়ে মাদারজাত, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার স্বরণে- একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

  বেদনা-বিমুগ্ধ মানসিকতায় জীবন যাপনে নতুন  মাত্রা যোগ এবং অভীষ্ট লক্ষ্যে ক্রমবর্ধিষ্ণু উত্তরণ         ভেতর ও বাইরের সামগ্রিক নির্যাসের দীপ্তি যখন সহজ-সরলভাবে স্বভাবে সম্পৃক্ত হয়ে যায়, তখন মানুষের কাছে তাদুর্বোধ্য হয়ে উঠে। কাজেই আফযালুল ইবাদ, ফখরুল আউলিয়া, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার জামাল ও জালাল, অর্থাৎ কোমলকঠিনমিশ্রণ রূপান্তরে জামালে অর্থাৎ স্বাভাবিকতার আদলে সামগ্রিক জীবনে স্থিতি ও বিস্তারলাভে তিনি যতোটুকু প্রকাশিত হলেন, তার চেয়ে বেশী পরিমাণে অপ্রকাশিত থেকে গেলেন।

          কেবল উনার মুজাদ্দিদে আযম কিশোর পুত্র মুজাদ্দিদিয়াতসুলভ অনুসন্ধিৎসায় পিতাকে লক্ষ্য করেন। পিতার অতুলনীয় বুযূর্গী ও কামিয়াবী ওয়াকিফহাল হয়ে কিশোর পুত্রের চিন্তার সীমাহীন দিগন্ত অবারিত ও সম্প্রসারিত হতে থাকে। এটাই স্বাভাবিক ও সংগত। কারণ, বলা হয়ঃ

النبى نبيا ولو كان صبيا.

অর্থঃ- একজন নবী মূলতঃই নবী, যদিও তিনি শিশু হয়ে থাকেন।একই প্রক্রিয়ায় একজন মুজাদ্দিদে আযমও মূলতঃ মুজাদ্দিদে আযম, যদিও তিনি শিশু অথবা কিশোর হয়ে থাকেন।

          বাহ্যিক দৃশ্যমানতার অতল গভীরে পিতার ধ্যান-নিমগ্ন ব্যাপ্তি এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে অতুলনীয় জীবন ধারা পুত্রের দৃষ্টি এড়ায়না। পিতা-পুত্রের জানাজানির গভীরতা ক্রমান্বয়ে নিবিড় হতে থাকে। পিতা আগেই জেনে গেছেন, কামিয়াবীর পূর্ণতায় নিয়ামত সমৃদ্ধ মুজাদ্দিদে আযম পুত্রের তাজদীদে জগৎ আলোড়িত হবে এবং মানুষ দ্বীনের পথে ধাবিত হবে। আল্লাহ পাক-উনার অপার অনুগ্রহে এসবের শুরুর কাজ জীবদ্দশাতেই দেখে যেতে পারবেন, এমন অনাবিল প্রত্যাশায় পিতার মন প্রশান্তিতে ভরে উঠে।

          ওলীআল্লাহগণের প্রকৃতি ও কর্ম প্রয়াস এক নয়। উনাদের প্রত্যেকের অবস্থা, অবস্থান, কর্ম বিন্যাস এবং উত্তরণের পদ্ধতিও ভিন্নতর। কামিয়াবীর শীর্ষ ধাপে অবস্থানকারী অনেক মাহবুব ওলীও সাধারণের কাছে অচেনা থেকে যান। অথচ এমন ওলীআল্লাহগণের মাধ্যমেই উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় আল্লাহ পাক জগৎ-সংসার পরিচালিত করেন। এ মর্মে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

ان لله فى كل زمان سبعة اعبد يهم ينصرون وبهم يمطرون وبهم يرزقون لن ينالوا بكثرة صلوة ولابصوم ولابصدقة وانما نالوا بسلامة القلوب وسخاوة الانفس.

অর্থঃ- প্রত্যেক যামানায় আল্লাহ পাক-উনার এমন সাতজন বান্দা (সূক্ষ্মদর্শী ওলীআল্লাহ) থাকেন, যাদের দুআয় সৃষ্টি জগৎ সাহায্য পায়। উনাদের কল্যাণেই বৃষ্টি হয়। উনাদের বরকতে মানুষ জীবিকা পায়। নামায-রোযার দরুন উনারা এ মর্যাদা লাভ করেন না। বরং উনাদের অন্তরের প্রশান্তি এবং নফসের বদান্যতার জন্যই এটি অর্জিত হয়। নফসকে পরিপূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত করে রাখতে পাবার মধ্যেই কামিয়াবী নিহিত। নফসকে পুরোপুরি মেরে ফেলা মানুষের অসাধ্য। এটি কাম্যও নয়। জিহাদের ময়দানে প্রতিপক্ষ না থাকলে বিজয় লাভের দুর্নিবার কোশেশ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। সাফাল্য লাভের আয়াসসাধ্য আয়োজনের প্রয়োজনও আর থাকে না। 

          হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কঠিন রিয়াযত ও মুজাহাদায় একবার অত্যধিক দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। নড়াচড়া করার স্বাভাবিক ক্ষমতা প্রায় রহিত হয়েছিল। উনার চোখ মুবারক কোটরে বসে গিয়েছিলো। এমন অবস্থা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ

يا عبد الله ان لنفسك عليك حقا.

অর্থঃ- হে আব্দুল্লাহ! তোমার উপর তোমার নফসেরও হক্ব আছে।অর্থাৎ জীবন বিধ্বংসী এ প্রকার কঠোরতা করতে তিনি নিষেধ করে দিলেন। তা এজন্য যে, নফসকে পরিপূর্ণরূপে ধ্বংস কখনোই করা যায় না। নফসের মুজাহাদা হলো, নফসের মন্দ স্বভাবগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা।

অসমাপ্ত

আবা-১৩৩

0 Comments: