সুওয়াল: সাম্প্রতিককালে কতিপয় ইসলামী দলের নেতারা ও তাদের সমর্থিত লোকেরা বাবরী মসজিদ
পুনঃনির্মানের লক্ষ্যে লংমার্চ করে এবং এই লংমার্চের ফলে কিছু লোক মারা যায়। তারা
লংমার্চকে হিজরত ও তাবুকের যুদ্ধের সাথে তুলনা করে থাকে। আবার কেউ কেউ তায়েফ
গমনকেও লংমার্চের সাথে তুলনা করে আর বলে থাকে, লংমার্চ করা অবশ্যই জায়েয যদিও
এটা মাওসেতুং কর্তৃক প্রবর্তিত। কারণ বিধর্মীদের আবিষ্কৃত সমরাস্ত্র যদি আমরা
জিহাদে ব্যবহার করতে পারি তাহলে তাদের নিয়মনীতি আমরা ব্যবহার করতে পারব না কেন? কেননা
দুশমনদের কাবু করার জন্য যেকোন পদ্ধতি অনুসরণ করা জায়েয যদিও তা বিধর্মী ও
বিজাতীয়দের প্রবর্তিত পদ্ধতি হয়।
এখন এই
লংমার্চ করা জায়েয কিনা,
লংমার্চ শব্দ ব্যবহার করা জায়েয কিনা? লংমার্চে
যারা মারা গিয়েছে তারা শহীদ হবে কিনা? এটাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হিজরত ও তাবুক উনার যুদ্ধের সাথে
তুলনা করা জায়েয কিনা?
বিধর্মীদের আবিষ্কৃত সমরাস্ত্র যদি আমরা ব্যবহার করতে পারি
তাহলে তাদের নিয়মনীতি আমরা ব্যবহার করতে পারব না কেন?
এছাড়া
সাম্প্রতিকালে পত্রিকায় ছাপা হয়েছে যে, জনৈক কথিত ইসলামী পার্টির নেতারা
সমাবেশ করেন, আর সমাবেশের পর রুশদীর কুশপুত্তলিকাসহ মিছিল করেন এবং মিছিল শেষে কুশপুত্তলিকা
দাহ করেন। এটা কতটুকু সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত সম্মত তা জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: মুসলমান মাত্রই প্রত্যেককে যে কোন কাজ করতে হলে পবিত্র
কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ,
পবিত্র ইজমা শরীফ এবং পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের ভিত্তিতে
করতে হবে। তাই লংমার্চ করা ইসলামী শরীয়ত সম্মত কিনা আর লংমার্চ শব্দ ব্যবহার করা
জায়েয কিনা তার সমাধান করতে হলে প্রথমে এর উৎপত্তি, ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে হবে এবং
তারপর পবিত্র কুরআন শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস
শরীফ উনাদের সাথে মিলাতে হবে, যদি মিলে তাহলে তা জায়েয আর যদি না মিলে তাহলে তা নাজায়েয।
এখন যেহেতু প্রথমে আমাদের ইতিহাস উৎপত্তি সম্বন্ধে জানতে হবে তাই লংমার্চের
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
লংমার্চ
:
১৯৩০-৩৪ সালের মধ্যবর্তী সময় তৎকালীন চীনের প্রেসিডেন্ট কমুনিস্টদের বিরূদ্ধে
বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি জার্মান সামরিক উপদেষ্টাদের সহযোগিতায়
কিয়াংসি প্রদেশে অবস্থানরত কমুনিস্টদের অবস্থানের প্রায় চতুর্দিকেই শক্ত ঘাটি ও
প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এর ফলে কমুনিস্টরা পালাতে বাধ্য হয়। পালানোর কৌশল হিসেবে তারা
চীনের দক্ষিণ-পূর্ব কিয়াংসি থেকে পশ্চিম দিক দিয়ে ঘুরে প্রায় (৬-৮) হাজার মাইল পথ
অতিক্রম করে চীনের উত্তর পশ্চিম সেনসি প্রদেশে পৌঁছে। পথে তাদের ১৮টি পাহাড়ের
সারি ও ২৪টি নদী অতিক্রম করতে হয়। মাওসেতুংয়ের নেতৃত্বে কমুনিস্টদের এই দীর্ঘ
বিপদসঙ্কুল পথ পলায়নের কাহিনীই ইতিহাসে লংমার্চ নামে অভিহিত বা মশহুর। ১৯৩৪ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রায় ১ লাখ ৩৫ জন
লোক নিয়ে মাওসেতুং এই পলায়ন অভিযান আরম্ভ করে। এদের মধ্যে ৮৫ হাজার ছিল কমুনিস্ট
সৈন্য, ১৫ হাজার বেসামরিক ব্যক্তি ও ৩৫ জন মেয়েলোক। পলায়নের সময় একদিকে নুতন সৈন্য
অন্তর্ভূক্তির ব্যর্থতা অপরদিকে সমরাস্ত্র, খাদ্য, চিকিৎসা
ইত্যাদির অভাবে তাদের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়ে। যার ফলে তারা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ
হয় এবং প্রায় ৮ হাজার লোক জীবিত অবস্থায় ১৯৩৫ সালের অক্টোবরে সেনসি প্রদেশে
পৌঁছে। উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের
পর আমরা লংমার্চ শব্দ ব্যবহার করা জায়েয কিনা তা তাহকীক করব। লংমার্চ শব্দ ব্যবহার
করা জায়েয নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
করেন,
يا يها الذين امنو الا تقولو ارا عناو قولو اانظرنا
واسمعوا ط وللكفرين عذاب اليم.
অর্থঃ- “হে
ঈমানদারগণ! তোমরা ‘রঈনা’ বলোনা ‘উনজুরনা’ বলো এবং শ্রবণ করো (বা শুনতে থাক) আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।”
এ পবিত্র
আয়াত শরীফ উনার শানে নযুলে বলা হয়, ইহুদীরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য ‘রঈনা’ শব্দ
ব্যবহার করত যার একাধিক অর্থ। একটি অর্থ হলো- আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন যা ভাল
অর্থে ব্যবহৃত হয়। আর খারাপ অর্থে- হে মূর্খ! হে মেষ শাবক! এবং হিব্রু ভাষার একটি
বদদোয়া। নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে ‘রঈনা’ বলে সম্বোধন করত ইহুদীরা। যাতে প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিলো খারাপ অর্থের
প্রতি ইঙ্গিত করা। অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ
উনারা ‘রঈনা’ শব্দের ভাল অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করলে তখন ইহুদীরা খারাপ
অর্থ চিন্তা করে হাসাহাসি করত। এটাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কষ্ট পেতেন তবুও কিছু বলতেন না। কেননা, মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ছাড়া কোন কথা বলতেন না। যেমন, পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
وما ينطق عن الهوى ان هو الاوحى يوحى
অর্থঃ- “তিনি
(নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী ব্যতীত নিজের থেকে
মনগড়া কোন কথা বলেন না।”
(পবিত্র সুরা নজম শরীফ, ৩, ৪ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
এর
ফলশ্রুতিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আয়াত শরীফ
নাযিল করে ‘রঈনা’ শব্দের বদলে ‘উনজুরনা’ শব্দ ব্যবহার করতে বললেন। কারণ ‘রঈনা’ শব্দ ভাল-খারাপ
উভয় অর্থে ব্যবহৃত হলেও ‘উনজুরনা’ শব্দ শুধুমাত্র ভাল অর্থেই ব্যবহৃত হত। তাই যে সকল শব্দ ভাল মন্দ উভয় অর্থেই
ব্যবহৃত হয়, সে সকল শব্দের পরিবর্তে উপরোক্ত আয়াত শরীফ মোতাবেক ওটার সমার্থক অর্থবোধক শব্দ
ব্যবহার করতে হবে,
যা শুধুমাত্র ভাল অর্থই ব্যবহৃত হয়। তাই লংমার্চ শব্দের দু’টি
অর্থঃ- আভিধানিক ও ব্যবহারিক। আভিধানিক অর্থে লংমার্চের অর্থ লম্বা সফর আর
ব্যবহারিক অর্থে নাস্তিকদের পলায়নের এক বিশেষ পদ্ধতিকে বুঝায় এবং এই অর্থেই এটা
অধিক মশহুর। তাই লংমার্চ যেহেতু ভাল ও মন্দ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়, তাই
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ অনুযায়ী এই শব্দ ব্যবহার
করা যাবে না। কারণ,
লংমার্চ সর্বপ্রথম বিধর্মী নাস্তিক্যবাদের ধারক ও বাহক
মাওসেতুং কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়। লংমার্চ
করাও জায়েয নেই। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক করেছেন,
ان الدين عند الله الا سلام
অর্থঃ-“নিশ্চয়ই
মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হলো ইসলাম।” (পবিত্র
সুরা ইমরান শরীফ,
১৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ)
আর এ
প্রসঙ্গেই মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
করেছেন,
ومن يبتغ غير الا سلام دينا فلن يقبل منه وهو فى
الاخرة من الخسرين.
অর্থঃ- “যে
ব্যক্তি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়ম-নীতি, অন্য
ধর্ম) তালাশ করে,
তা কখনই তার থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে
ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে।”
আর এ
আয়াত শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
وعن
جابر عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمر فقال: انا نسمع احاديث من يهود
تعجبنا افترى ان نكتب بعضها- فقاال امتهوكون انتم كما تهوكت اليهود والنصارى؟ لقد
جنتكم بها بيضاء نقيه ولو كان موسى حياما وسعه الا تباعى. (روأه احمد وبيهقى فى
شعب الايمان)
অর্থঃ- হযরত জাবের
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, একদিন
হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, আমরা
ইহুদীদের অনেক ধর্মীয় কাহিনী, কথাবার্তা, নিয়ম-কানুন ইত্যাদি শ্রবণ করে থাকি যা আমাদের নিকট ভাল
লাগে। আমরা এটার থেকে কিছু লিখে রাখতে পারবো কি? তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন- “আপনারাও
কি আপনাদের দ্বীন সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্থ বা বিভ্রান্ত রয়েছেন? যেভাবে
ইহুদী-নাসারারা বিভ্রান্ত রয়েছে? মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি আপনাদের নিকট সম্পূর্ণ
পরিষ্কার ও পরিপূর্ণ দ্বীন এনেছি। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম তিনিও যদি এখন থাকতেন, তাহলে
উনাকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” সুবহানাল্লাহ!
তাই আমরা দেখতে পাই, ইহুদী-খ্রিস্টান
তথা বিধর্মীরা যে সকল আমল করত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সে সকল জিনিস স্বয়ং নিজেও অনুসরণ করতেন না
এবং আমাদেরকেও কঠোরভাবে অনুসরণ না করার জন্য তাগিদ দিতেন। যেমন- ইহুদী নাছারারা
আশুরার একদিন রোজা রাখত,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাদেরকে দুইদিন রোজা রাখতে বললেন। ইহুদী-নাসারারা দেরী করে ইফতার করত এর
পরিপ্রেক্ষিতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ছাহাবী উনাদের তাড়াতাড়ি ইফতার করতে বলেন। আবার ইহুদীরা শুধুমাত্র পাগড়ী ব্যবহার
করত এর পরিপ্রেক্ষিতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি টুপি ছাড়া পাগড়ী পরতে নিষেধ করেছেন এবং
টুপীসহ পাগড়ী ব্যবহার করতে বলেছেন। দাড়ী ও মোচের ব্যাপারে মজুছী (অগ্নি উপাসক) ও
মুশরিকদের বিরোধিতা করতে বলেছেন। যেমন- তারা দাড়ি কাটতো ও মোচ বড় করত। তাই নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন তোমরা দাড়ী
বড় করো ও মোচ ছোট করো। ইত্যাদি প্রত্যেক বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার রসুল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুসলমানদের আস্তিক-নাস্তিক,
ইহুদী-নাসারা, মজুসি-মুশরিক তথা বিজাতীয়-বিধর্মীদের অনুসরণ না করে; খেলাফ করতে বলেছেন। কারণ
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
ولن
تر ضى عنك اليهود ولاالنصوى حتى تتبح ملتهم قل ان هدى الله هوالهدى ولئن اتبعت
اهواء بعد الذى جاءك من العلم مالك من الله من لا نصير.
অর্থঃ- “ইহুদী ও
নাসারারা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না আপনি তাদের ধর্মের (নিয়ম নীতির) যতক্ষণ
পর্যন্ত অনুসরণ না করবেন। বলে দেন নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার হেদায়েতই প্রকৃত
হেদায়েত। আপনার কাছে সত্য ইলম (অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম) আসার পরও যদি আপনি তাদের নফসের
বা মনগড়া নিয়ম-নীতির অনুসরণ করেন তবে আপনার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে
কোন অভিবাবক ও সাহায্যকারী নাই বা পাবেন না।” (পবিত্র সুরা বাকারাহ শরীফ, ১২০ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
উপরোক্ত
পবিত্র আয়াত শরীফ অনুযায়ী আমাদের কোন আমল করতে হলে বিধর্মী, বিজাতীয়
বা নফসের কোন অনুসরণ করা যাবে না বা তাদের থেকে কোন নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা যাবে না
এবং শুধুমাত্র পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস
শরীফ অনুযায়ী আমল করতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
من
تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- “যে
ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভূক্ত এবং তার
হাশর নশর তাদের সাথে হবে।”
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত ঘটনা উল্লেখ করা যায়- হিন্দুস্থানে একজন জবরদস্ত মহান আল্লাহ
পাক উনার ওলী ছিলেন। যিনি ইন্তেকালের পর অন্য একজন বুজুর্গ ব্যক্তি স্বপে¦ তাকে দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী, আপনি
কেমন আছেন?” তখন সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাতত আমি ভালই আছি কিন্তু আমার
উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে। যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার ইন্তেকালের
পর আমাকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মুখে
পেশ করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বলেন, “হে ফেরেশতাগণ!
আপনারা কেন তাকে এখানে নিয়ে এসেছেন”? হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ
উনারা বলেন, ‘আয় আল্লাহ পাক! আমরা তাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য
নিয়ে এসেছি।’ এটা শ্রবণ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, ‘তাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তার
হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেননা সে পূঁজা করেছে।’ এটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং
আমার সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগল। তখন আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজু পেশ
ক্বওলাম, ‘আয় আল্লাহ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো
সব সময় আপনার এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি এবং কখনো পুঁজা করিনি আর মন্দিরেও
যাইনি।’ তখন আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “তুমি সেইদিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূঁজা
হচ্ছিল। তোমার সামনে-পিছনে,
ডানে-বামে, উপরে-নীচে সমস্ত গাছ-পালা, তরু-লতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ
সবকিছুকে রঙ দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ যাচ্ছিল যাকে রঙ
দেয়া হয়নি। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে, তুমি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি
পানের রঙীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলে- হে গর্দভ! তোমাকে তো কেউ রঙ দেয়নি, এই হোলি
পূঁজার দিনে আমি তোমাকে রঙ দিয়ে দিলাম। এটা কি তোমার পূঁজা করা হয়নি?” তুমি কি
জান না-
من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- ‘যে
ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভূক্ত এবং তার
হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।’
সুতরাং তোমার হাশর-নশর
হিন্দুদের সাথে হবে।’
যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি এই কথা বললেন, তখন আমি
লা-জাওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে বললাম, ‘আয় আল্লাহ পাক! আমি এটা বুঝতে
পারিনি।’ কিছুক্ষণ পর মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ- তোমাকে অন্যান্য আমলের
কারণে ক্ষমা করা হয়েছে।’
বনী ইসরাঈল আমলের অনুরূপ আরও একটি ওয়াকেয়া তফসীরে উল্লেখ
করা হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস সালাম উনার উপর ওহী নাযিল
করলেন, হে আমার নবী আলাইহিস সালাম! আপনার উম্মতের মধ্যে এক লক্ষ লোককে ধ্বংস করে দেয়া
হবে, যার মধ্যে ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত (গুমরাহ)। তখন হযরত ইউশা বিন নুন
আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
“আয় আল্লাহ পাক! ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত তাই তাদের
ধ্বংস করে দেয়া হবে কিন্তু বাকী ৪০ হাজার লোককে ধ্বংস করা হবে কেন?” তখন মহান
আল্লাহ পাক তিনি বললেন,
“যেহেতু তারা তাদের সাথে মিলা-মিশা ও ওঠা-বসা করে এবং
সম্পর্ক রাখে আর গুণাহের কাজে বাধা দেয় না, তাই তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেয়া
হবে।”
উপরোক্ত
পবিত্র আয়াত শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং উনাদের ব্যাখ্যা মুবারক উনার দ্বারা
এটাই সাবেত হলো যে,
বিজাতীয় বিধর্মীদের কোন নিয়ম-নীতি, আমল-আখলাক
ও সীরত-সূরত কোনটাই অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবে না। যদি কেউ করে তবে তার থেকে সেটা
মহান আল্লাহ পাক তিনি গ্রহণ করবেন না বা কোন সওয়াবও দেবেন না এবং মহান আল্লাহ পাক
উনার তরফ থেকে কোন মদদ পাবেনা। যার ফলে সে ইহকালে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং পরকালেও তার
হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে যাদেরকে সে অনুসরণ করত। কাজেই লংমার্চ কোনমতেই জায়েয
নেই।
সমরাস্ত্র:
বিধর্মীদের আকিষ্কৃত সমরাস্ত্র মুসলমানদের জন্য
ব্যবহার করা জায়েয। কেননা কাফিররা হলো মুসলমানদের খাদেম, শুধু তাই
নয় সমগ্র মখলুকাতকেই সৃষ্টি করা হয়েছে মুসলমানদের ফায়দার জন্য। এ প্রসঙ্গে মহান
আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
هوالذى خلقلكم ما فى الارض حميعا.
অর্থঃ- “মহান
আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের (ফায়দার) জন্য দুনিয়ার সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন।”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
ان الدنيا خلقت لكم وانكم خلقتم للاخرة.
অর্থঃ-“নিশ্চয়ই
দুনিয়া তোমাদের (খেদমতের) জন্য তৈরী করা হয়েছে আর তোমরা সৃষ্টি হয়েছে পরকাল মহান
আল্লাহ পাক উনার জন্য।”
কাজেই
কাফিররা মুসলমানদের খাদেম। তারা অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে এবং করবে। যেমন (মাইক, টিভি, ভিসি আর, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশন)
ইত্যাদি। মুসলমানগণ যখন দেখেন কাফিরদের খেদমত সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার খেলাফ নয়, তখন তারা
ইচ্ছা করলে তা গ্রহণ করতে পারেন। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার খেলাফ হলে অবশ্যই
তা বর্জন করতে হবে। অবশ্য কোন মুসলমানও যদি সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার খেলাফ কিছু
আবিষ্কার করে তবে সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক
করেছেন,
تعاونوا على البر والتقوى ولا تعا ونوا على الا ثم
والعدوان. (المائده-২)
অর্থঃ- “তোমরা
নেকী এবং পরহেযগারীর মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। পাপ এবং শত্রুতার মধ্যে
পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করোনা।”
শুধু তাই
নয়, বরং কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা বা সমর্থনও করা যাবে না। তাই মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেছেন,
اذ
اعملت الخطيى فى الارض من شهدها فكرهها كان كمن غاب عنها ومن غاب فر ضيها كان كمن
شهدها.
অর্থঃ- “পৃথিবীতে
যখন কোন অন্যায় বা পাপ সংঘটিত হয়, তখন যে ব্যক্তি ঐ স্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ওটাকে ঘৃণা
করে, সে যেন সেস্থানে উপস্থিত ছিলনা। আর যে ব্যক্তি অনুপস্থিত থেকেও পাপের প্রতি
সন্তুষ্ট থাকে, সে যেন তথায় উপস্থিত ছিল।”
সমরাস্ত্র
ব্যবহার করা জায়েয,
যেহেতু প্রথমত তারা আমাদের খাদেম এবং এগুলি ব্যবহার করলে
তাদের অনুসরণ-অনুকরণ করা হয় না এবং আমলও গ্রহণ করা হয় না। পক্ষান্তরে লংমার্চ যা
তাদের বিশেষ আমল,
করলে তাদের নিয়ম-নীতি অনুসরণ-অনুকরণ করা হয় এবং তাদের আমলকে
গ্রহণ করা হয়। যা স্পষ্টতঃই সম্মানিত শরীয়তে নিষিদ্ধ ও হারাম।
সুতরাং
সমগ্র পবিত্র কুরআন শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস
শরীফ উনাদের কোথাও বিধর্মীদের জিনিসপত্র ব্যবহার করা নাজায়েয ঘোষণা করা হয় নাই
কিন্তু তাদের নিয়ম-নীতি,
আমল-আখলাক, অনুসরণ-অনুকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিধর্মীদের বহু জিনিসপত্র ব্যবহার করেছেন
কিন্তু তাদের নিয়ম-নীতি কখনও অনুসরণ-অনুকরণ করেননি। যেমন- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রুমী জুব্বা, মিশরীয় সূতী, ইয়ামানী
চাদর, যুদ্ধাস্ত্র,
শিরস্ত্রাণ ইত্যাদি বিধর্মীদের নানা প্রকার জিনিস ব্যবহার
করেছেন। কিন্তু তাদের নিয়ম-নীতি আমল-আখলাক কখনও অনুসরণ করেননি। তাই বিধর্মীদের
জিনিসপত্র যেমন সমরাস্ত্র মুসলমানদের জন্য ব্যবহার করা জায়েয কিন্তু তাদের
নিয়ম-নীতি যেমন, লংমার্চ মুসলমানদের জন্য অনুসরণ-অনুকরণ করা জায়েয নয়।
তায়েফ
গমন, হিজরত ও তাবুকের জেহাদ- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম
প্রচারের জন্য তায়েফ গমন করেছিলেন। এই প্রকার দ্বীনি সফর পূর্বেকার সমস্ত হযরত নবী
আলাইহিস সালামগণ উনারা কমবেশী করেছিলেন। সুতরাং এটাকে যদি লংমার্চ বলা হয়, তাহলে
বলতে হয় পূর্বেকার সমস্ত হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনারাই লংমার্চ করেছিলেন। আর
প্রথম লংমার্চ করেছিলেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি। যিনি সিংহল থেকে পবিত্র
মক্কা শরীফ গিয়েছিলেন। এটা হবে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের শানে মহা
অপবাদ। কারণ, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের শানে পবিত্র আকাইদ উনার কিতাবে উল্লেখ
করা হয়-
الانبياء عليهم ااسلام كلهم معصوم عن الصغائر
والكيائر والكبائح.
অর্থঃ- “সমস্ত
হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ উনারা কবীরা ও সগীরা গুণাহ হতে পবিত্র এমনকি সমস্ত
অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।”
কাজেই
হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের শানে লংমার্চ ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ, লংমার্চ
হলো নাস্তিকদের নাস্তিক্যবাদ রক্ষার জন্য পলায়নের মাধ্যমে তাদের প্রবর্তিত এক
বিশেষ পদ্ধতির নাম। যা পূর্ববর্তী কোন আসমানী কিতাব এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র
হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ এবং পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। আর
হিজরতের আভিধানিক অর্থ হলো ত্যাগ করা পৃথক হওয়া আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার
দৃষ্টিতে হিজরতের অর্থ হলো- পবিত্র ঈমান ও ইসলাম হেফাজতের জন্য ঘরবাড়ী, বিষয়-সম্পত্তি
ইত্যাদি সবকিছু ত্যাগ করে অন্যস্থানে প্রস্থান করা। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
অনুযায়ী পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র হিজরত মুবারক
করেছিলেন। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকে উনারই সন্তুষ্টির জন্য পবিত্র দ্বীন ইসলাম
কায়েমের উদ্দেশ্যে বিধর্মীদের সাথে যে যুদ্ধ করেছিলেন তাকেই দ্বীনি যুদ্ধ বা জেহাদ
বলা হয়। যেমন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
তাবুকে গিয়েছিলেন জিহাদ করার জন্য এবং গাজী হয়ে এসেছিলেন। কাজেই হিজরত এবং জেহাদ এ
দু’টি হলো পবিত্র শব্দ। যা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সাথে সম্পর্কিত। আর লংমার্চ
হলো নাস্তিকদের নাস্তিক্যবাদ রক্ষার জন্য- পলায়নের মাধ্যমে তাদের প্রবর্তিত এক
বিশেষ পদ্ধতির নাম। কাজেই তাদের দাবী অনুযায়ী লংমার্চকে যদি হিজরত এবং তাবুকের
হেজাদের সাথে তুলনা করা হয়,
তাহলে বলতে হয়- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে, “যারা জেহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করবে বা পালিয়ে আসবে, তাদের
তওবা কবুল হবেনা। আর আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে
হিজরত মুবারক উনার অর্থ হলো পবিত্র ঈমান ও ইসলাম হেফাজতের জন্য ঘর-বাড়ী, বিষয়-সম্পত্তি
ইত্যাদি সবকিছু ত্যাগ করে অন্যস্থানে প্রস্থান করা। আর হিজরতের ক্ষেত্রেও শরয়ী যে
কারণে কেউ হিজরত করবে সে বিষয় ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত পুণরায় সে সেখানে ফেরত আসতে
পারবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে বলেন-
وتعزروهو توقروه.
অর্থঃ- “তোমরা
আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে সাহায্য করো ও সম্মান করো।” আর পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে-
متخذت خليلا وحبيبا.
অর্থঃ- “মহান
আল্লাহ পাক তিনি বলেন আমি আপনাকে খলীল ও হাবীব হিসাবে গ্রহণ করেছি।” উপরোল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এবং এই প্রকার আরও পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনাদের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ হাবীব এবং উনার
প্রতি তা’যীম-তাকরীম করা আমাদের উপর ফরজ। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি যেমন তা’যীম-তাকরীম করা ফরজ তেমনি নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট
সকল বিষয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ফরজ। যেমন আকাঈদ উনার কিতাবে উল্লেখ করা হয়, ‘কদু
খাওয়া সুন্নত’ এবং এই সুন্নত মুবারক উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ফরজ। কেউ যদি এই কদু
খাওয়াকে অবজ্ঞা, অবহেলা, ইহানত করে তবে তা হবে কুফরী। তদ্রুপ তাবুকের জিহাদ ও হিজরত যেহেতু নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট
তাই এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ফরজ এবং কেউ যদি এটাকে অবজ্ঞা, অবহেলা
করে তবে তা হবে কুফরী। কাজেই লংমার্চ যেহেতু বিধর্মী, বিজাতীয়দের
প্রবর্তিত পদ্ধতি বা আমল তাই ওটাকে হিজরত এবং তাবুকের জেহাদের সাথে তুলনা করা, হিজরত
এবং তাবুকের জেহাদকে অবজ্ঞা, অবহেলা বা ইহানত করারই নামান্তর, যা
কুফরীর সমতুল্য। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ولا تلبس الحق بالباطل.
অর্থঃ- “তোমরা
সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করোনা বা হক্বকে নাহক্বের সাথে মিশ্রিত করোনা।” কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি কাফিরদের সম্বন্ধে ইরশাদ মুবারক ফরমান,
ان شر الدواب عندا الله الذين كفر وافهم لا يؤمنون.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট নিকৃষ্ট প্রাণী হলো কাফির, যারা
ঈমান আনবে না।” পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরও উল্লেখ
করা হয়েছে-
ان
الذين كفروا وماتوا وهم كفار فلن يقبل من احدهم مل ء الارض ذهبا ولوا فتدىبه ط
اولئك لهم عذاب اليم ومالهم من ناصرين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গেছে, তারা যদি পৃথিবী পরিপূর্ণ স্বর্ণ
তাদের কুফরীর কাফফারা বাবদ (বা মুক্তির বিনিময়ে) দান করে তবে তা কখনও গ্রহণ করা
হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তি এবং তাদের জন্য কোন
সাহায্যকারী নাই।”
(পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৯১)
আবার
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
انماالمشر كون نجس.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
মুশরিকরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট নাপাক।”
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা এটাই সাবেত হলো যে, কাফির-মুশরিকরা
মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট নিকৃষ্ট প্রাণী। তাদের কোন আমল কবুল করা হবে না, এমনকি
তারা মারা গেলেও তাদের রেহাই নেই; তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তি আর মৃত্যুর পরও
তারা যদি তাদের কুফরীর বিনিময়ে কোন কাফফারা দেয় তবে সেটাও তাদের থেকে গ্রহণ করা
হবে না। কাজেই লংমার্চ যেহেতু কাফিরদের আমল তাই এটাও কাফিরদের মতই মহান আল্লাহ পাক
উনার নিকট চরম অপছন্দনীয় এবং কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার
রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলে তিনি যা করেননি, তা উনার নাম মুবারক উনার সাথে
সংযোজন করে, যা করেছেন তা উনার নাম মুবারক উনার থেকে বাদ দেয় উভয়ই মিথ্যার শামিল। আর যে
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলে তাদের সম্পর্কে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
من كذب على متعمدا فاليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- “যে আমার
নাম মুবারক নিয়ে স্বেচ্ছায় মিথ্যা কথা বলে সে যেন দুনিয়ায় থাকতে তার স্থান
জাহান্নামে নির্ধারণ করে দেয়।”
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জীবনে কখনও
লংমার্চ করেননি আর পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র
ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের কোথাও লংমার্চ সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়নি।
সুতরাং কেউ যদি বলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লংমার্চ করেছেন, তাহলে
তার ওপরে উপরোল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হুকুম বর্তাবে। যেহেতু লংমার্চ-ই
নাজায়েয এবং এটা বিজাতীয় বিধর্মীদের প্রবর্তিত পদ্ধতি, তাই
এটাতে যারা যাবে তাদের শহীদ হবার কোন প্রশ্নই ওঠে না। একমাত্র দ্বীনি যুদ্ধ বা
জেহাদে যারা মারা যান তাদেরকেই শহীদ বলা হয়। আর অন্যান্য দুর্ঘটনায় যেমন পানিতে
পড়ে, ছাদ ধসে, বা সন্তান হবার সময় ইত্যাদি প্রকারে যারা মারা যান তারা শহীদী দরজা পায়। কাজেই নাজায়েয লংমার্চ করে যারা মারা যাবে
তারা শহীদ তো হবেই না বরং তারা ফাসাদকারী হবে। কেননা এটা দ্বারা ফেতনা ফাসাদের সৃষ্টি
হয়, যার কারণে লোক আহত এবং নিহত হয়। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ
উনার মধ্যে ফিৎনা-ফাসাদ করতে মানা করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন,
والفتنة اشد من القتل وفى ايا اخرى والفتنة اكبر من
القتل.
অর্থঃ- “ফিৎনা
কতলের চেয়েও ভয়াবহ আর ফিৎনা কতলের চেয়েও ভয়ঙ্কর।” আর যে ফিৎনা ফাসাদ কতলের চেয়েও
ভয়াবহ বা ভয়ঙ্কর তা দ্বারা কখনও শান্তি স্থাপন করা যাবে না। তদ্রুপ যারা লংমার্চ
এবং এই ধরণের সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার বিরোধী কাজ দ্বারা যমীনে ফিৎনা ফাসাদ
পয়দা করার পরও মনে করে যে,
তারা শান্তি স্থাপনকারী। মূলতঃ এটা তাদের জিহালত এবং তারা
শান্তি স্থাপনকারীর পরিবর্তে ফাসাদকারী হবে। যা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার নিম্নলিখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন,
واذا فيل لهم لا تفسد وافى الارض قالوا انما نحن
مصلحون.
অর্থঃ- “আর যখন
তাদেরকে বলা হয় তোমরা যমীনে ফিৎনা সৃষ্টি করোনা, তখন তারা বলে আমরা শান্তি
স্থাপনকারী।”
কুশপুত্তলিকার ইতিহাস :
কুশপুত্তলিকা
একটি সর্বজনস্বীকৃত হিন্দু ঐতিহ্য যা অন্যান্য দেশে প্রচলন লাভ করে। বিশেষ করে
প্রাচীনকালে হিন্দুরা মনে করত যে, তাদের মৃত ব্যক্তির শবদেহ দাহ না করলে শ্রাদ্ধাদি কার্য হতে
পারে না। নিখোঁজ মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তারা যখন শবদেহ পেত না তখন তারা কুশের বা
অন্য কিছুর দ্বারা মানবমূর্তি নির্মাণ করতঃ যাকে কুশপুত্তলিকা বলা হয়। আর এ
কুশপুত্তলিকা নির্মাণ করে দাহ করা হলে তাকে কুশপুত্তলিকা দাহ বলা হয়। ঐতিহাসিকগণ
বলেছেন যে, প্রায় ৩০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে হিন্দুদের মধ্যে এ কুশপুত্তলিকার প্রচলন চালু হয়।
১৫৩৯
সালে ফ্রান্সের জনগণ ভারতীয় হিন্দু কুশপুত্তলিকা সংস্কৃতির বিপরীত ভাবার্থে ঘৃণা ও
তিক্ততা প্রকাশের কৌশল হিসেবে কুশপুত্তলিকা সংস্কৃতির প্রচলন করে। ফ্রান্সের জনগণ
কোন ব্যক্তিকে তার প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ বা অসন্তোষ প্রকাশের জন্য তার অবিকল প্রতীক
বা প্রতিমূর্তি পোড়ানো বা ফাঁসীতে ঝুলানো হতো। তারা একথা বিশ্বাস করতো যে, একটি
প্রতিমূর্তির উপর শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা প্রকৃত ব্যক্তির উপর
যাদুক্রিয়া করবে। তারা যখন প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে পেত না তখন তারা প্রতিমূর্তিকে
ফাঁসী দেয়ার ব্যবস্থা করত।
আমেরিকার
ওহীও উইসকনসাইন এবং অন্যান্য স্থানেও এই ভারতীয় হিন্দুদের কুশপুত্তলিকা সংস্কৃতির
প্রচলন হয়েছিল। আর লংমার্চের মত কুশপুত্তলিকাও নির্মাণ করা এবং দাহ করা উভয়ই
বিধর্মী ও বিজাতীয়দের প্রবর্তিত পদ্ধতি। আর কুশপুত্তলিকা তৈরী করা প্রকৃতপক্ষে
মূর্তি নির্মাণ করারই নামান্তর। অথচ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে কঠোরভাবে
মূর্তি নির্মাণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। মশহুর ঘটনা যা কারো অজানা নেই পবিত্র মক্কা
শরীফ বিজয়ের সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার মধ্যে ৩৬০টি মূর্তি ধ্বংস করেছিলেন এবং বাইরে যে সকল মূর্তি ছিল
সেগুলিও ধ্বংস করার জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ
উনাদেরকে প্রেরণ করেছিলেন। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে,
يعثت لكسر المزا مير والاصنام
অর্থঃ-
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন “মহান
আল্লাহ পাক তিনি আমাকে বাদ্যযন্ত্র এবং মূর্তি ধ্বংস করার জন্য প্রেরণ করেছেন।”
এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে আরও বলা হয়েছে-
ان
الله بعثئى رحمة للعالمين وهدى اللمعالمين وامرنى ربى عزوجل بمحق المعازف والمزا
مير والا وثان والصليب وامر الجاهليه. (رواه احمد)
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন সমস্ত জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ এবং
হেদায়েতস্বরূপ। আর আদেশ মুবারক করেছেন বাদ্যযন্ত্র, মূর্তি, ত্রুশ ও
জাহেলী কাজসমূহ ধ্বংস করার জন্য।”
কাজেই যা
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি করতে নিষেধ করেছেন তা আজকালকার যেসব লোক করে
থাকে তারা কবীরা গুণাহে গুনাহগার হবে এবং তাদেরকে এর থেকে খালিছ তওবা করতে হবে। আর
যদি এটাকে হালাল মনে করে তবে তা কুফরী হবে।
সুতরাং
আমাদের কোন কাজ করতে হলে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র
ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ অনুযায়ী আমল করতে হবে তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম
উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হতে হবে।
মহান
আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يايهالذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة ولا تتبعوا
خطوت الشياطان انه لكم عدو مبين.
অর্থঃ- “হে
ঈমানদারগণ! তোমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও। শয়তানের
পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা কারণ শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।”
আর
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণ দাখিল হতে হলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ মুবারক, নিষেধ
মুবারক সম্পূর্ণরূপে মেনে চলতে হবে। যেমন- মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ
উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ما اتاكم الرسول فخذوه ومانهاكم عنه فنتهوا واتقوا
لله ان الله شديد العقاب.
অর্থঃ- “তোমাদের
রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যা এনেছেন তা আঁকড়ে ধর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ বিষয়ে
মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর। মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।”
যেহেতু
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নিষেধ,
অনুসরণ-অনুকরণের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করা (বা
মুহব্বত মুবারক লাভ করা) সম্ভব যা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে-
قل انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحبب كم الله ويغفر
لكم ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- “আমার
হাবীব, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
আপনি বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত কর (মুহব্বত চাও) তবে আমাকে অনুসরণ
করো তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন। তোমাদের গুণাহখাতা ক্ষমা
করবেন। আর তোমাদের প্রতি ক্ষমাকারী, দয়ালু হবেন। যার ব্যাখ্যায় নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
عن
مالك بن انس رضى الله تعلى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تر كت فيكم
امرين لن تضلوا ما تهما كتاب الله وسنتى.
অর্থঃ- হযরত মালেক ইবনে আস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি
তোমাদের মধ্যে দু’টো জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত তোমরা সে দু’টো জিনিস
আঁকড়ে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত গুমরাহ হবে না- একটি হলো মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব মুবারক ও অপরটি
হলো আমার সুন্নাহ শরীফ।
কাজেই
আমাদের সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পূঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসরণ ও
অনুকরণ করতে হবে এবং এর ব্যতিক্রম নিয়ম-কানুন, তর্জ-তরীকা, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা, আমল-আখলাক, সীরত-সুরত, মত-পথ ও
নীতি-আদর্শ ইত্যাদি কোনটাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে
অনুসরণ-অনুকরণযোগ্য নয়। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তিনিই
একমাত্র সর্বোত্তম আদর্শ,
যা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে-
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.
অর্থঃ- “তোমাদের
জন্য নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মধ্যে (চরিত্র মুবারক উনার মধ্যে) সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে।”
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই একমাত্র আদর্শ মুবারক এবং এ আদর্শ মুবারক
উনার খেলাফ কোন কাজ করা যাবে না। অথচ আজকাল মুসলমানদেরকে এ আদর্শ মুবারক উনার কথা
বললে তারা এ আদর্শ মুবারক উনার বিপরিত বাপ-দাদা, ওস্তাদ-মুরুব্বী, পূর্ব
পুরুষের নানা প্রকার আদর্শকে দলীল হিসেবে পেশ করে। তাদের উপর নিম্নলিখিত পবিত্র
আয়াত শরীফ উনার হুকুম বর্তাবে-
واذا
قيل لهم تعالوا الى ما انزل الله والى الرسول قالوا حسبنا ماوجدنا عليه اببا ئناط
اولو كان ابا ئهم لا يعلمون شيئا ولا يهتدون.
অর্থঃ- “এবং যখন
তাদেরকে বলা হয়, তোমরা মহান আল্লাহ পাক তিনি যা নাযিল করেছেন ওটার দিকে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে আসো (অনুসরণ করো) তখন তারা
বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে (ওস্তাদ-মুরুব্বী) যার উপর পেয়েছি তাই আমাদের জন্য
যাথষ্ট। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানে না এবং গুমরাহ।” (পবিত্র সূরা মায়েদা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৪, পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭০) মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন,
واذا
قيل لهم اتبعوا ما انزل الله قالوا بل نتبع ما الفينا عليه ابا ننا اولو كان ابا
ئهم لا يعقلون شيئا ولا يهتدون.
অর্থঃ- “এবং যখন
তাদেরকে বলা হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি যা নাযিল করেছেন তা অনুসরণ করো, তারা বলে
বরং আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে যার উপর পেয়েছি তাই অনুসরণ করবো। যদিও তাদের
বাপ-দাদারা আক্বলহীন ও গুমরাহ ছিল। সুতরাং তাদের এই বাপ-দাদা, ওস্তাদ-মুরব্বী
ইত্যাদিকে অনুসরণ করা তাদের নফসানিয়ত বা আকাঙ্খা ছাড়া আর কিছুই নয়। যেমন মহান
আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ومنهم اميون لا يعلمون الكتاب امانى وان هم
الايظنون.
অর্থঃ- “তাদের
মধ্যে অনেক মূর্খ লোক আছে যারা মিথ্যা আকাঙ্খা ছাড়া কিতাবের কিছুই বোঝেনা এবং তারা
শুধুমাত্র জল্পনা কল্পনা করে। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরও
বলেন,
وما
لهم به من علم- ان يتبعون الظن وان الظن لايغنى من الحق شيئا.
অর্থঃ- “এ বিষয়ে
তারা একবারেই মূর্খ,
তারা শুধু জল্পনা-কল্পনার অনুসরণ করে এবং সত্যের মোকাবেলায়
কল্পনা মোটেই ফলপ্রসূ নহে। (পবিত্র সূরা নজম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮) কাজেই যারা তাদের কাজের স্বপক্ষে বাপ-দাদা, ওস্তাদ-মুরুব্বী
ইত্যাদিগণের উদাহরণ পেশ করে তাদের সে কথা গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং লংমার্চ ও
কুশপুত্তলিকা দাহ করা,
শব্দ ব্যবহার করা, অনুসরণ, অনুকরণ, সমর্থণ
বা এর সংশ্লিষ্ট কোন কিছুতে জড়িত থাকা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। কারণ কোন
মুসলমানের কাজের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র
ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের দলীল পেশ করতে হবে। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ
উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে-
قل
هاتوا برها نكم ان كنتم صدقين.
অর্থঃ- “যদি
তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক,
তবে দলীল পেশ কর।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-১১১)
আবা-৯
0 Comments:
Post a Comment